হাসনাহেনা রানু এর সকল পোস্ট

বিকেলের রোদ রঙের সোনালী মায়া

অরণ‍্যের নির্জনতায় বিকেলে ফুটেছে এক কোটি লাল শাদা বিষণ্ন গোলাপ
প্রকৃতির উষ্ণ ঠোঁটে কিছুটা শীত ছিল
হালকা শরতের ইমেজ ছিল,
এটাই কি বিষণ্নতার কারণ ?
তখনো শরৎ বিদায় নেয়নি।
প্রস্তুত ছিল শীত মৌসুম
তবু সব কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছে
গোলাপ আর উজ্জ্বল হল না
কিসের অভাব ছিল ওদের?
ওহ্! ভোরের শিশির মর্মঘাতী হল কেমন
বিকেলে ফুটেছে প্রিয় গোলাপ
শিশিরের স্পর্শ পাইনি ওরা
ওদের চোখে এক আকাশ অভিমানী নীল বেদনার বৃষ্টি হয়ে ঝরছে;
থামাও এই গোলাপ বৃষ্টি
কত আসবে এমন শিশির ভেজা ঘাস ভোর
অবশ্য তখন তো আর এই এক কোটি গোলাপ ফুটবে না
মৃতপ্রায় মৃতসার এককোটি গোলাপ
শোকেভরা পৃথিবী, মৃত‍্যুহিম শীতল পাটিতে গোলাপ শব নীল হয়ে গেছে
জীবনের ভোর থেমে গেছে।

নীল বেদনার গোলাপ বুকে স্বপ্ন ভঙ্গের ছাপছাপ সবুজাভ হলুদ কষ্ট!
অতঃপর হৃদয়ের রাত ছিঁড়ে নেমে এলো দৃঢ় বিশ্বাসের এক বিকেলের রোদ রঙের সোনালী মায়া
তখনো ফসলের ক্ষেতে অধর ছুঁয়েছে শিশির
এটুকু কেবল সুখময় সুখোকর সুখের গল্প এককোটি গোলাপের জন্য।
এ গোলাপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কষ্টের ব‍্যথা – সুখ!

কুয়াশা শাদা রাত

শব্দের আঁচলে মখমল সময়
একবার যে চোখ তাকিয়ে দেখে বাইরের সুন্দর দৃশ্য …
তাকে আমি কি করে অন্ধ বলব ?
অন্ধ তো সেই ,যে জেগে ঘুমায় –
জেগে জেগে রঙিন স্বপ্ন দেখে:
সন্ধ্যার আবরণে লুকিয়ে আছে কুয়াশার শাদা রাত;
বাইরে নিলাম হচ্ছে ঝকঝকে দিন —
দিনের স্বপ্ন ঘুমে রাত বাড়ে,
এভাবেই বেঁচে ফেরে তারা একে অন্যের বিপরীতে –
একটা গোলাপ ফোঁটার অদম‍্য নেশায় দিন কেটে গেছে
অভিলাষী রাত বৃক্ষের সবুজ পাতার মানে খোঁজে,
একদিন গহীন অরণ্যের শেষ পথে
ছেঁড়া পাতার স্বপ্নও জোড়া লাগবে।

কবিতা অঞ্চল

cd62f

অষ্টাদশী চাঁদ সুন্দর মেয়ে, মেঘের কোলে কোমল রোদ মেখে বসে আছে
মসৃণ কপাল ছুঁয়ে আছে কুয়াশার শুভ্র কাশফুল টিপ
চাঁদ মেয়ে তোমার শহরটা কেমন জ‍্যোৎস্নাহীন …
আঁধার ভালবেসেছে গাঢ় সবুজ রাত্রি
মাধবীলতার মত বিষণ্ন সুন্দর ;
তীক্ষ্ণ ঠোঁটে একবার বলো কোন শহরটা তোমার
মঙ্গল গ্রহের মেঘ শূন্য ব‍্যালকনিতে ঝুলে থাকা লোনাভেলা সমুদ্র নাকি –
কামিনী শব্দের ধবধবে ফর্সা দুপুর
শুনেছি লোনাভেলা সমুদ্রে মাঝরাতে দুধ জ‍্যোৎস্নার ঢেউয়ে রৌদ্র আগুন ঝরে
আর কামিনী শব্দের ধবধবে ফর্সা দুপুরে গভীর রাত্রির নিস্তব্ধতা ভেঙে আকাশ নিচে নেমে আসে
তখন সব নীল অদৃশ্য হয়ে যায়,
সে নাকি দেখার মত সব দৃশ্য
আমি অবশ্য কখনো এমন দৃশ্য দেখিনি
কেবল মন্ত্রমুগ্ধের মত স্তব্ধ হয়ে শুনেছি।

এ সব তোমার শহর নয় –
তোমার শহর অন্য রকম
ওহ্! কবিতা অঞ্চল;
তোমার শহরে কি কবিতার চাষাবাদ হয়
তোমার “কবিতা অঞ্চল” শহর জানার জন্য
আমার যে বড় কৌতুক হল জাগে !
বলো চাঁদ নকশার মেয়ে ঠিক কবে তুমি বিবর্ণ স্বপ্ন ঘুম ভেঙে জাগবে?

সংসার স্বপ্ন

229285new-730

আমার ৬ষ্ট ইন্দ্রিয় সুখের স্নায়ুতন্ত্রের সকল ইচ্ছে দিয়েই
আমি স্বপ্ন দেখি
মানুষ স্বপ্ন দেখে
সুন্দর সব স্বপ্ন,
স্বপ্ন’র রঙ মেঘের পালকে মোড়ানো রংধনু
কখনো থোকা থোকা কামিনী
কৃষ্ণচূড়ার ঠোঁটে সবুজ রঙ
ধবধবে শাদার মধ্যে গোলাপি রং মাধবীলতা —
নীল কুয়াশায় প্রজাপতি ডানায় রৌদ্রের ঝিলিমিলি।

স্বপ্ন এঁকে যাই আকাশে ধোঁয়া ধোঁয়া মেঘের বুকে —
জ‍্যোৎস্নার আঁচলে নক্ষত্র’র ফুল ফুটেছে
স্বপ্ন সে তো জীবনের গল্প।
ছোট্ট পাখির চোখে স্বপ্ন আছে
অনন্ত আকাশে উড়বে
হোক সে ছোট পরিসরে,
পাখিরাও মানুষের মত জীবনের অন‍্যরকম মানে খোঁজে —
শুধু কি মানুষ স্বপ্ন দেখে ?
পাখির চোখে সোনালী আকাশে উড়ন্ত স্বপ্ন ,
ফুল কি স্বপ্ন দেখে ?
হয়তো দেখে , হয়তো না
ফুল ফোটে ফুল ঝরে যায়
এটাই স্বাভাবিক: ফুলের ও বেঁচে থাকার দৃঢ় প্রত্যয়ের স্বপ্ন থাকে —
সবুজ পাতার স্বপ্ন অনিশ্চিত এক জীবনের
শুকনো পাতা ঝরার কান্না বাতাসে উড়ে
নদীর স্বপ্ন সমুদ্রগামী অথৈ স্রোতে ভেসে যাওয়ার…
সমুদ্রের অবাধ বিচরণ এক পৃথিবী থেকে অন্য প্রান্তে,
এটাই সমুদ্রের স্বার্থকতা।

চাঁদ হীন জ‍্যোৎস্না ভাল লেগেছে কবে কার ;
জীবনের সবুজাভ নিসর্গ উদ‍্যানে ঝরেছে অঝোরে বৃষ্টির মত প্রিয় বকুল।
বেদনার দীর্ঘ নীরব নীল রাত্রি শেষে
সঘনের পূর্ণ চাঁদ জ‍্যোৎস্নার আরক ছড়িয়েছে
আকাশের গায়ে মেঘ দুপুরের রৌদ্রে এঁকেছিলাম মুগ্ধতার এক সংসার অরণ‍্য
সে আমাদের দারুচিনি দ্বীপের স্বপ্ন- ধোঁয়া এক অচেনা দ্বীপ
সংসার স্বপ্ন।

বৃষ্টির জলঘুড়ি

raye

আকাশ পাখি সমুদ্র অরণ্য পৃথিবী জ‍্যোৎস্না নিবিড় রাত্রি
সবাই কেমন একা আমি বসে ভাবি,
মেঘলা আকাশ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আমার ভীষণ প্রিয়!
তোমাকে আমি শরৎ সন্ধ্যার গাঢ় ভাঁজ খুলে বলেছিলাম, আমাকে একটা আকাশ দাও –
নীল শূন্য, মেঘ শূন্য ধবধবে শুভ্রতার এক আকাশ হবে।
আকাশ কত দূর ;
নতুন জোয়ারের জলের স্রোতে ভাঙব দেয়াল এ হাতে
দীর্ঘ সময় পড়ে আছে সন্মুখে।

একদিন শিশির ভেজা ভোরের ডানায় উড়ে উড়ে মেঘ ভর্তি আকাশ ছোঁব
নক্ষত্র ছোঁব, এই হাতে নীল নক্ষত্র খুলে খুলে বড্ড বেশি ক্লান্ত হব !
আমার প্রিয় জ‍্যোৎস্না ছোঁব
হোক না যতই নিকোষ কালো রাত্রি :
আমাকে পাখি বিহীন শূন্য একটা আকাশ দাও–
স্বপ্নের সিন্দুকে সে আকাশ বন্দি করব
সমুদ্রের ঢেউ এ নীল আকাশ ছুঁয়ে যাবে।
সুনীল আকাশের কাছে দুহাত পেতে বৃষ্টি চেয়েছি কবে
আকাশ আমার এ হাতে হেমলক তুলে দিয়েছে,
আমার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে একবার।

অতঃপর কেটে গেছে অগুনতি দিনরাত্রি –
সরিষা রঙ মেঘ ফুল ঝরে গেছে
আমার ভীষণ মন খারাপ; স্বপ্ন ভেঙেছে গত শ্রাবণে
এ মন আমার পুড়েছে অন্ধকার আগুনে ,
একটা দীর্ঘশ্বাস খসে পড়ুক সন্ধ্যার আকাশ থেকে
আমার এ চোখে অস্পষ্ট চাহনি : দহনে ও জল খুঁজি
থাকতে আমার নিজস্ব এক সমুদ্র ;
গভীর রাত্রির দীর্ঘশ্বাসের শূন্যতা খসিয়ে
হৃদয়ে নামে আকাশ ভাঙা শ্রাবণ বৃষ্টি,
বৃষ্টির বুনো স্রোতে ডুবে যাই আমি;
ভেসে যায় আমার আজন্ম লালিত স্বপ্ন
মধ‍্যরাতে বৃষ্টির জলঘুড়ি উড়ছে সীমাহীন আকাশে
আর আমি, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি শুভ্র ভোরের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত!

সর্বগ্রাসী সিডোর

062_n

যা কিছু আশ্রয় সব নদী হয়ে গেল
যা কিছু সঞ্চয় সব ভেসে গেল
দৃষ্টির গোচরে কি বাহিরে সব জল হয়ে গেল
জলের তাণ্ডব খেলা শুরু হল,
সারাদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
রাত গভীর হল সাথে দমকা হাওয়া ভারী বৃষ্টি
শুরু হল প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডোর:
চারিদিক প্রচণ্ড ঝড় আর জল
ঝড় ভাঙছে বৃক্ষ ঘর বাড়ি,
জল সব খাচ্ছে ধান ঘাস জীবজন্তু আর ভালবাসা
দূরে চিৎকার করছে বাঁচাও —– বাঁচাও
আমার বুকের মানিক ভেসে যাচ্ছে জলের স্রোতে ;
আমার মানিকের কাছে আমিও যাব
প্রবল স্রোতের তোড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক সর্বহারা মা
মুহুর্তে নেই কোন সাড়া, স্তব্ধ হয়ে গেল সব
বাবা আর্তনাদ করে উঠল
আমার ঘর নেই, প্রিয় মানুষটা নেই
আমার প্রিয় সন্তানেরা নেই
আমার পাশে কেউ নেই,
নৃশংস মৃত্যুর কাছে আপোষ মানলো সব
জলের রাক্ষুসে ক্ষুধা, সব একাকার হল
মানুষের আশা স্বপ্ন ভালবাসা সব ভেসে গেল
সবুজ আর মাছেরা মানুষের কাছাকাছি চলে এলো।

(২০০৭ — এর ১৬ ই নভেম্বর প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় )

স্পর্শ

kobita-1280x720

ও কবিতা, তুমি ঝিনুক হবে ? নাকি সমুদ্র…
তুমি ঝিনুক, আমি
মুক্তা
থাকব আমি তোমার
মাঝে
জানবে না কেউ সে
কথা,
তুমি আমায় এক সমুদ্র জল
দাও-
বেঁচে থাকার জন্য এক মুঠো হলুদ বিশ্বাসের দুঃখ
দাও
সুখ দিও না, সে আমি নিতে পারব না
সুখে আমার অনেক ভয় !
ভয়কে আমার জয় করার ইচ্ছে নেই
সুখকে আমি এড়িয়ে যাই;

হিম হিম বেদনার বিষ বালুতে
ঝিনুক বুকে,
মুক্তা হব বরং আমি
খুব গোপনে…
তোমার মন যমুনার বালুচরে স্মৃতির মলাটে
এটুকুই কেবল
সুখের গল্প…
আছড়ে পড়ে এক সমুদ্র নোনা জলে।

কাটপিস মোমের পুতুল

নীল চোখের পাতায় সবুজ পাতার কাজল
একজোড়া কাঁকন পরা নিটোল হাত,
আলতা রাঙা নূপুর পরা দু’টি পা
চুলের খোঁপায় গোলাপ কৃষ্ণচূড়ার এলোমেলো থোকা,
শাদা হাতের অনামিকায় নীল স্টোনের আংটি ।
সে এক রাত্রির মত মেয়ে
মেয়েটি গভীর রাতে সমুদ্র থেকে ওঠে এসেছে :
ওকে সমুদ্র মেয়ে বলা যায়
ও সমুদ্র মেয়ে;
মাথার উপরে একটা আকাশ ছায়া ফেলেছে!
ঢিলেঢালা আকাশ নীল পোশাকে মেয়েটি অসম্ভব সুন্দরী,
ওর জন্য আশেপাশে কোন উজ্জ্বলতা নেই
ওকে ঘিরে সব সৌন্দর্য;
বড় বেশি বিষন্ন প্রকৃতি
ধূসর ছাই রং রোদ,
নীল রং আকাশে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ছিল ।

মেয়েটি অন‍্য রকম লাবণ‍্যময় লাস‍্যময়ী ;
কবিতা ভীষণ ভালবাসে
অথচ মেয়েটি নিজেই একটি কবিতা —
একটিও অতিরিক্ত শব্দ নেই এখানে
মেয়েটি গভীর রাত্রি হবে?
নাকি সমুদ্র’ই রাত্রি মেয়ে ?
এমন কবিতার মেয়েটি বিনম্র —
শান্ত আর অন্ধকারের চেয়ে ও নিভৃত
জলমগ্ন কবিতার মেয়েটা জনপ্রিয় কবির মত।

অনামিকা

মনে কর তুমি জনপ্রিয় কোন কবি
আমি তোমার কবিতা,
বুকের গাঢ় ভাঁজে লেখ আমার নাম অনামিকা ;
দক্ষিণে উত্তাল বঙ্গোপসাগর –
পশ্চিমে দিগন্ত জোড়া সবুজ পাহাড়
উত্তরে টিপটিপ বৃষ্টি পাহাড়ি ঝর্ণায় ঝরছে –
আমি মেঘ পাহাড়ি ঝর্ণায় ঝিরিঝিরি শুভ্র তুষারপাতে বৃষ্টি বিলাসী হব :
তোমার সমুদ্র ভীষণ প্রিয়!
আজ বরং বৃষ্টি হোক
তুমি বৃষ্টি ভেজা সকাল তুলে নিও কবিতায় ;

মনে কর তুমি সীমাহীন আকাশ
আমি দহনের নীল কষ্ট,
নীল থেকে ঘন কালো মেঘ ভাল
মেঘের ঠোঁট গলে বৃষ্টি আমায় ভেজাবে।
আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টিতে প্রেমের বকুল ফুটেছে —
আসছে শ্রাবণের শুভ্র ডানায় থোকা থোকা কামিনী ভালবাসা ফুটবে।

আর নয় কোন আত্মহত্যা

নারী! তুমি পাথর হইও না
ফুটন্ত গোলাপ হও,
যৌবনের ভাঁজে ভাঁজে রুপ রসে
মেলে দাও গোলাপ পাপড়ি,
হায়! কত বখাটের বিবর্ণতায় ঘনিয়ে আসে
তোমার জীবনে ঘোর অমানিশা:
অথচ নারী, তুমি কি রুখতে জাননা ওদের পথ ?
ওই সব নরপিশাচদের
তোমার ছলে বলে কৌশলে,
মানুষ রুপি নরপশুদের ঘায়েল করতে পারনা ?
কেন তুমি আত্মহত্যা করো ?
নিজের সুন্দর জীবন ধ্বংস করছো
তোমার নাকি চোখে প্রেম,
বুকে প্রেম
মুখে প্রেম
ছলায় বলায় প্রেম
মনেতে প্রেম
তোমার চাহনিতে প্রেম
অঙ্গে প্রেম
ঢঙ্গে প্রেম
তোমার নাকি সর্বত্রই প্রেমের খেলা চলে।
এত প্রেমের ফাঁদে
বখাটেদের আটকাতে পারনা?
মরতে হয় ওরাই মরুক
তোমরা কেন ঠাস ঠাস মরতে যাবে ?
তোমাদের যাদুর কৌশল দিয়ে
বখাটেদের লটকে দাও ফাঁসিতে।
ওই সব বখাটেদের অঙ্গার করে দাও
ওরা ভীষণ ভয় পেয়ে যাক
ওদের কঠিন শিক্ষা হোক,
তাহলে বেঁচে যাবে অসংখ্য শিশু সহ অনেক মেয়ের জীবন।
ওরা দেখুক তোমরা কতটা ভয়ংকর হতে পার নারী!
জগত দেখুক,
কতখানি বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে নারী।

ভালবাসার নীল গোলাপ

আজ সন্ধ্যা বেলায় নীল গোলাপ মুখস্থ করেছি
কয়েকটা সবুজ পাতায় শরতের জ‍্যোৎস্না লেগেছিল :
হেমন্তের বিকেলে পাপড়ি গুলো শিশির সিক্ত ছিল …
পাপড়ির ভাঁজে ভাঁজে শিশির মোনালিসা হাসির ছলে খেলা করছিল।

গোলাপের কাঁটা বুকে বিঁধে গেল বড় —
এ মন আমার কষ্টের দহনে নীল বেদনায় রক্তাক্ত হলো !
অভিমানের গাঢ় নীল গোলাপ :
নীল ভালবাসায় সিক্ত হয়ে
গোপনে কপোলে টিপ হয়ে ছিল !

আকাশ যেন কাঠ গোলাপ ভালবাসা

গোলাপের ভেতরে আমি সেই তাকে খুঁজি
যে আমায় দুই শতাধিক বছর আগে কষ্ট দিয়েছিল,
মাঝখানে কেটে গেছে অগুনতি দিনরাত্রি:
অথচ এখনো মনে হয় এই তো সেদিনের কথা
সে আমায় ভুলে গেছে ;
এটাই তো স্বাভাবিক —
আজ ও দক্ষিণা হাওয়ায় গোলাপ ঘ্রাণ ভেসে আসলে তার কথা মনে পড়ে।
প্রিয় গোলাপ ঘ্রাণের মত
কতখানি সেও প্রিয় ছিল;
সময়টা ১৮২০ খ্রীষ্টাব্দ ছিল —
আর আজ ২০২০ খ্রীষ্টাব্দের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছি।
সময়ের খেয়াযানে দুই শতাব্দী কেটে গেছে ;
বড়ই বিস্ময় !

সেই প্রথম দিন সে আমার হাতে গোলাপ তুলে দিয়েছিল,
এখনো সেই স্পর্শ আমার এই হাতে লেগে আছে
অনেক ভাললাগা অনুভূতি থেকে ভালবাসায় জড়ানো ছিল
সেই সুন্দর মুহূর্ত: আর গোলাপ ও; সে গোলাপ ভালবাসা হয়ে গিয়েছিল শেষে।
আজ ও অতি যত্নে গোলাপটা আছে আমার ডায়েরির ভাঁজে,
যেখানে কবিতারা স্বপ্ন বোনে
গোলাপ আছে; কবিতার থরে থরে চিরকাল গোলাপ থাকে
শুধু তুমি নেই; মহাকালের স্রোতে তুমি হারিয়ে গেছ সময়ের অচেনা স্রোতে –
আমি তোমাকে ভুলিনি।

জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে অন্ধকারে ডুবতে ডুবতে
এ জীবন এখন মৃত্যুর কাছাকাছি চলে এসেছে,
সে কথা তুমি জানবে না কোনদিন
তোমার মনে আছে মেঘ অরণ্য আকাশ ‌… ..
এক বিকেলের নির্জনতা ভেঙে সমুদ্র বুকে রং বদলানো
রং ধনু মেঘের বৃষ্টি ছুঁয়ে ছিলাম আমরা ;

তোমার ফেলে যাওয়া গোলাপ আমার একাকীত্ব জীবনে কাঠ গোলাপ হয়ে ফুটেছে। শুভ্র মেঘের আড়ালে কাঠ গোলাপ আকাশ ভালবাসা’র আঁচল ছড়িয়েছে।

স্বপ্নের গ্রেভিয়ার্ড

দীর্ঘ নীরবতার পাড় ভেঙে
শব্দরা আছড়ে পড়ে
নিঃসঙ্গ সমুদ্র বুকে,
কষ্ট ছুঁয়েছে আকাশ
পরাজয় জেনেও নীল মেঘের কাছে ধরা দেয়নি।

সূর্য কেমন রোদ আগুন পুষেছে বুকে
জ‍্যোৎস্না রাত্রির অবশিষ্টাংশ ছিল,
অথচ রজনীগন্ধা বন ভরে ছিল হলুদ কুয়াশায়
গোলাপ এক বিন্দু শিশির পায়নি
শুধু শীতের হলুদ পাতারা কষ্ট মেখেছিল গায়ে।
অরণ্যে একটা বিকেল গাঢ় সন্ধ্যার আবীরতায় ডুবেছিল ক্রমশই:
সেই শেষ বিকেলে কিছু বেলি ফোঁটার কথা ছিল
সে জন্য চাঁদ অবাধ জ‍্যোৎস্না বিলিয়ে ছিল
চাঁদের শাদা মায়া সেদিন নীরবতা ভেঙে কথা বলেছিল,
জ‍্যোৎস্নার চোখে ফোঁটা ফোঁটা জল;

একটা রাত সাধারণ কষ্টের কথা ভুলতে পারেনি আজও
রোজ এখনো চোখ ভিজে যায়,
কিছু ফুল বিমর্ষ হয়েছে
ফুলের বিমর্ষতায় প্রজাপতির বুক কেঁপেছিল;

অতঃপর শাদা ভোরের ঠোঁট বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা অভিমানী জল ঝরেছে,
ঠিক ততখানি নিস্তব্ধ হয়েছে বিষাদ মাখা রাতের আকাশ!

রচনা কাল: 26.08.2020

মৌনতা শব্দ ভাঙে

এক বিকেলে পৃথিবীর সব ঘাস শিশিরে ঢেকেছে
এক রাত্রে চোখের জলে নীল সমুদ্র বয়ে গেছে,
এক সকালের আকাশ ছিল
একটু বেশি অন‍্যরকম সোনালী :
তুমি জান কি ?
মধ‍্য দুপুর তোমার দীর্ঘ অপেক্ষায় থেকে বিরামহীন কেঁদেছে ;
তাকে তুমি শ্রাবণ মেঘের বৃষ্টি বলো
আসলে সে একাকিত্বের বিষাদ ক্লান্ত
কিম্বা আকাশের বৃষ্টির ঘ্রাণ !
রাতের নিদ্রা স্বপ্নে তুলে রেখেছ গোপন গোলাপ স্পর্শ।

গোলাপ সময়

তুমি আলতো হাতের স্পর্শে মুছে দাও আমার সুখের অনুভুতি গুলো
রোদবর্তী দিনের কোলাহল,
কিম্বা জলমগ্ন শ্রাবণ বিকেল আমার অনেক ভাললাগার
বলতে পার প্রিয় ও ;
মেঘের ভ্রুণ ছিঁড়ে নামুক শ্রাবণের কুমারী বৃষ্টি —-

এক বৃষ্টিতেই শত গোলাপ ফুটবে
আমি ঘ্রাণ নেব সবুজের, বৃষ্টির জল:
সবুজ পাতা আর কড়া গোলাপের;
আকাশ মেলেছে নীল মেঘের ডানা
সন্ধ্যার আকাশে আবির রঙের উষ্ণতা
আবিরতার গহন রক্তে জেগে উঠেছে গোলাপ —
লাল গোলাপ; বাতাসের গন্ধে মিশেছে ধূসর গোধূলি।

শ্রাবণের জল খামে শিশির স্নানে রেখে দেব গোলাপ উত্তাপ
অতঃপর সুস্থির গোলাপ,
প্রিয় গোলাপ সময় ———-