এইচ আই হামজা এর সকল পোস্ট

এইচ আই হামজা সম্পর্কে

আমি একজন ছাত্র। সমাজ পরিবর্তনের দায়িত্ব থেকে সমাজ বদলের স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আছি। কলাবাগান থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে বর্তমানে পালন করছি। পাশাপাশি লেখালেখির মধ্য দিয়ে নিজেকে বিকশিত করার চেষ্টায় ব্রত আছি।

শেখের বেটী শেখ হাসিনার এক চালেই সব কুপোকাত

দৃশ্যপট ১. চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হবেন শেখ হাসিনা, ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন, (শেখ হাসিনার সময়োচিত অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রশংসায় ব্লুমবার্গ। দ্যা ডেইলিস্টার ০১-০৪-২৩)
দৃশ্যপট ২. বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল: মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
(বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল: মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী,
দেশ রূপান্তর ০১-০৪-২৩)

যে আমেরিকা বাংলাদেশের জন্মকে অস্বীকার করে সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম তথা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। এবং কি এখনও আমেরিকা নিজের স্বার্থের জন্য ক্রমাগত বাংলাদেশের বিরদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র লিপ্ত, সেই খোদ আমেরিকার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন বাংলাদেশ বাকী বিশ্বের কাছে এখন মডেল। এটা ভেবে আনন্দিত হচ্ছি যে আজ আর আমাদের নিজেদের প্রচার করতে হচ্ছে না।

এই বিশ্বায়নের যুগে দেশ, বিদেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি হতে যাচ্ছে। শুধুই অর্থনীতি? না। সামাজিক নিরাপত্তা, সুশাসন থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে আজ বাংলাদেশ অদম্য ও অপ্রতিরুদ্ধ। আর এর স্বীকৃতি দিচ্ছে খোদ বিশ্ব মোড়ল ও তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, জাইকা, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গ। ওরা নিজ থেকে বলছে শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ বাকী বিশ্বের কাছে এখন উন্নয়নের মডেল। আর বাংলাদেশে পাকি রাজাকারের সাবেক ছানা, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর বলছে, পাকিস্তান আমল নাকি ওদের কাছে ভালো ছিল। ছি, ছি, ছি ধিক তোমাদের দেশপ্রেমকে। লজ্জা পাই তরুণ প্রজন্মের একজন নাগরিক হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের এতগুলো বছর পরেও এসে কতিপয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের মুখে শুনতে হচ্ছে সেই মুসলিম লীগ, জামাতিদের তোতা পাখির বুলি। আর এর নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি জামাতের ছাপোষা কতিপয় বুদ্ধিজীবী, তাঁদের দোসররা। ওরা বারবার একই ভাঙ্গা ঢোল বাজিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ শ্রীলংকা হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। অথচ তাঁদের পেয়ারে পাকিস্তান এখন দেউলিয়ার পথে। বাক্ স্বাধীনতার নামে যেসব কুলাঙ্গার এই দেশে বসে দেশবিরোধী কথা বলে, স্লোগান দেয়, সাংবাদিকতার আড়ালে অপপ্রচার ও অপসাংবাদিকতার মাধ্যমে ক্রমাগত মিথ্যাচার করে যাচ্ছে তাঁদের জন্য করুণা হয়।

ওরা ভোট ও জনগন ভুলে এখন বিদেশীদের তাবেদারি শুরু করেছে। দেশে বিদেশে বসে নালিশ দিয়ে দেশকে বিশ্বের কাছে অকেজো রাষ্ট্র হিসেবে দেখাতে চায়। কিন্তু বিধিবাম যাকে বলে উল্টো মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওদের মুখে কষে চপেটাঘাত করেছে। ব্লমবার্গ বলেছে আবার টানা চতুর্থবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হতে যাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামীলীগ।

এখানে হুবহু তুলে ধরছি ব্লুমবার্গের রিপোর্টের কিয়দংশ-
‘তিনি (শেখ হাসিনা) টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’ একই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে পুরো তহবিল পেতে আরও সংস্কার করতে হবে বলেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে সম্ভাব্য জয়ী হওয়ার কারণ এটা নয় যে, তার অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছেন বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন। নিবন্ধে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সাফল্যের কারণেই তার চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হওয়া ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত।

আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির সময়োপযোগী সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ প্রাপ্তির পটভূমিতে ব্লুমবার্গ দু’টি উপ-শিরোনামসহ ‘বাংলাদেশ লিডার বেটস আইএমএফ-ম্যান্ডেটেড রিগর উইল পে অফ ইন পোলস’ শিরোনামের এই নিবন্ধটি প্রকাশ করে।

এতে বলা হয়, পুরো তহবিল পেতে শেখ হাসিনাকে আরও সংস্কার করতে হবে। নির্বাচনে তিনি টানা চতুর্থবারের মতো জয়ী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ব্যালট বাক্সে পরাজিত হওয়ার ভয়ে বিশ্বজুড়ে সরকারি দলের নেতারা প্রায়শই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে সম্মত সংস্কার বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের মতো নন।”

কি ভাবছেন শেখ হাসিনা কি সরাসরি বলবেন আমি আজ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী? না শেখ হাসিনা জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। দেশের মানুষ শেখ হাসিনার আমলে ভালো আছে বলেই, তাঁরা আবার ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনবে। এটা যেমন দেশের সাধারণ নাগরিকরাও বুঝেছে এবং তাঁরা মুখিয়ে আছে নৌকার পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য। অন্যদিকে বিশ্ববাসীও দেখছে এবং প্রকাশ্যে তাঁরা বলছেন। সে জন্য তাঁরা শেখ হাসিনার বিরদ্ধে এখন আর উচ্চবাচ্য করছে না।

কারণ এদেশের মালিক জনগন, তাঁরা যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় আসবে। তাই আমেরিকা, বিশ্ব ব্যাংক ষড়যন্ত্র বন্ধ করে বাংলাদেশকে নিয়ে, শেখ হাসিনাকে নিয়ে এখন দ্বিতীয়বার ভাবতে বসেছে। বাংলাদেশের পাশে থাকার চেষ্টা করছে। আর এটাই শেখের বেটির রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রমাণ। এটাই শেখ হাসিনার সফল রাজনৈতিক ও কূটনীতির জয়। এখানেই খালেদা,তারেক, মান্না, রব, অলি, বাম-ডানের পরাজয়। তোমরা দেশে, বিদেশে বসে যতোই ষড়যন্ত্র করো না কেন শেখের বেটির এক চালেই হবে সব কুপোকাত। তোমরা শেখ হাসিনার কাছে রাজনীতির মাঠে এখনো দুধভাত। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েছেন, এখন ইতিহাস সৃষ্টি করে আবার ৪ চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

জয়তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক,
এইচ আই হামজা
সাংগঠনিক সম্পাদক
কলাবাগান থানা ছাত্রলীগ।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ।

এই দেশের বুকে

শরীরে শরীর খেলা করে উন্মাতাল ঢেউয়ের ছন্দে।
হৃদয়ে হৃদয় খেলা করে মন খুশিতে নাচে,
মাছরাঙ্গা ডুব দিয়ে যায় মাছ পালিয়ে যায় জলে।
কলমি পাতা ছুঁয়ে প্রজাপতি বসে শর্ষেফুলের বুকে,
নদীর ঢেউ ছলাত ছলাত বৃষ্টিঝড়ে রিমঝিমিয়ে।
ডিমের কুসুমের মতো লাল সূর্য ডুব দেয় সাগরের বুকে,
মায়াবী জোছনায় আকাশ সেজেছে দারুণ।

সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে যেন রংতুলিতে আলপনা আঁকে,
সলতের মতো আলো এসে ঠিকরে পরে প্রেয়সীর গালে।
এই মাঠ সেই মাঠ ঘুরে, এই ফুল সেই ফুল খেয়ে,
মৌমাছি উড়ে এসে বসে মধু দেয় চাকে।
বুনো শিয়াল ডেকে ডেকে চারপাশ কাঁপিয়ে,
জানান দিয়ে যায় রাত হয়েছে ঢের।

রাজত্ব এখন তাদের ঝোপঝাড়ে,
রাত গত হয়ে আবার দিন ফিরে আসে।
বাঁশঝাড়ের মাথা ডিঙ্গিয়ে প্রভাতের সূর্যটা হাসে,
দীঘির জলে রোদ নামে পানকৌড়ি ডাকে গলা উঁচিয়ে।
গরুর পাল লয়ে রাখাল ছুটে চলে ধুলো মাড়িয়ে …

সংস্কৃতিকগত শিক্ষাই মৌলবাদ মুক্তির একমাত্র ঔষধ

“মানুষের পশু বৃত্তিকে ধ্বংস করে নান্দনিক সৌকর্যকে ঋদ্ধ করার ক্ষেত্রে সংস্কৃতির কোন বিকল্প নেই। সংস্কৃতি সংস্কারের বাহন, সংস্কৃতি হলো আদর্শ জাতি গঠনে অপরিহার্য উপাদান”
সংগৃহীত।

আধুনিক তুরস্কের জনক, তুরস্কের জাতির পিতা কামাল আতাতুর্ক পাশা’র রাজনৈতিক দর্শনকে আমরা ধর্তব্যে নিতে পারি। কামাল পাশা তাঁর রাজনৈতিক দর্শনকে কাজে লাগাতে গিয়ে শক্ত হাতে মৌলবাদকে দমন করে তুরস্ককে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। আজ আধুনিক তুরস্ককে সকলে চেনে সংস্কৃতির ধারক বাহক হিসেবে।

আমাদের উচিত সংস্কৃতিগত পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেওয়া। অন্যথায় জাতিগত বিভাজন, ধর্মীয় উগ্রতা থেকে মুক্তি অসম্ভব। কেননা একমাত্র সুশিক্ষা এবং সংস্কৃতিগত শিক্ষায় প্রকৃত শিক্ষা। এই যে আমরা বারবার সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান দেখছি, এই সমস্যার একমাত্র পথ্য বা ঔষধ হলো প্রত্যেক ইউনিয়ন, উপজেলায় একটি করে সরকারিভাবে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও পাঠাগার গড়ে তোলা। এবং অনান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহকে পেট্রোনাইজ করে একটি সাংস্কৃতিক আবহ তৈরি করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ সমাজ তথা সুন্দর পরিবেশ উপহার দেওয়া।

ছায়ানট, উদীচী, খেলাঘর বা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ অপরাপর সংগঠনগুলোকে কাজ করার যৌথ পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া। এবং যতোটুকু সম্ভব ধর্মীয় প্রভাব বলয় থেকে রাষ্ট্রকে বিরত রাখা। বর্তমান আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থাপক যারা তাদের এই বিষয়ে এখনই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে এর ফল আমরা অতীতে যেমন ভোগ করেছি, এখনো করছি, হয়তো অদূর ভবিষ্যতেও বড় ধরণের মাশুল দিতে হবে। যেকোনো ধর্মীয়
মৌলবাদ একটি জাতির সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পথ চলার অন্তরায়।

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হাঙ্গামা গুলো মূলত অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও আলস্য পূর্ণ এবং রাষ্ট্রীয় বাঁধাহীন, অবাধ নিয়ম নীতিহীন ব্যবস্থার কারণে সংগঠিত হয়। রাষ্ট্র একক কোনো ধর্মকে উৎসাহ বা প্রমোট করবে না। যদিও করে তাহলে সব ধর্মকে সমান গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা, তবে আমার মতে কোনো ধর্মকেই রাষ্ট্র কোনো প্রভাব বিস্তার করতে দিবে না। এই প্রসঙ্গে বলা যায়,

“ধর্ম থাকুক অন্তরে মুসলমান নামাজ পড়ুক,
হিন্দু যাক মন্দিরে”

কেননা বাংলাদেশ একটি ধর্মণিরপেক্ষ জাতিরাষ্ট্র। এই দেশ গঠনে মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে অসংখ্য,অগণিত প্রাণ। তাঁরা কোনো ধর্ম পরিচয়কে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধে যায়নি। হিন্দু, মুসলিম,বৌদ্ধ,খ্রিস্টান, আদিবাসী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতপাত ভুলে ছাত্র, যুবক, শ্রমিক কৃষক, কামার, কুমার, তাঁতি, জেলে সর্বস্তরের আপামর জনগণ এই দেশমাতৃকার টানে অকাতরে প্রাণ দিয়েছে। অতএব এই দেশ সবার। এই দেশ কোন মুসলিম বা হিন্দুর দেশ নয়। এই দেশ কোন ধনিক শ্রেনীর রাজা-বাদশার নয়। আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক।

এ ছাড়াও আরেকটি বিষয় নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। প্রত্যেক স্কুলে বাধ্যতামূলক নৈতিক শিক্ষা ও প্রগতিশীলতার চর্চা করানো। বড় বড় মনীষী যেমন প্লেটো, রুশো, সক্রেটিস, লালন সাঁই,রাধারমণ, হাছন রাজা, গৌতম বুদ্ধ,রাজা রামমোহন রায়, বেগম রোকেয়া, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, কামাল আতাতুর্ক বা কর্মক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিত্বের জীবনী সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া। মহান মানুষের বাণী সম্বলিত বুকলেট তৈরি করে ক্লাস ওয়ান থেকে এইচএসসি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করা। বা এই মনীষীদের জীবনী পড়ানো যেতে পারে।

আর এসএসসি /এইচএসসি শেষে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে সেনাবাহিনীর অধীনে নিয়ে ৩ মাসের কমান্ডো ট্রেনিং করানো। এতে একদিকে যেমন সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ এবং মানসিকভাবে দায়িত্ববোধ আপনি থেকে জেগে উঠবে। অন্যদিকে ভূমিকম্প,জলোচ্ছ্বাসসহ রাষ্ট্রের যেকোনো দূর্যোগ বা দুর্বিপাকে ও জরুরী প্রয়োজনে যেন তারা দেশ,সমাজ তথা আর্ত মানবতার কাজে আসে সেভাবে তৈরী করা। না হলে ধীরে ধীরে আমরা এই বনসাই মৌলবাদীদের মতো অজস্র অন্ধকারের জীব পাবো।যারা সমাজে উগ্রতাকে উস্কে দেয়, অন্ধত্ব কে আঁকড়ে ধরে, গোঁড়ামিকে শ্রেয় মনে করে আমাদেরকে নিয়ে যাবে সেই আরব্য অন্ধকার যুগের আইয়েমে জাহিলিয়াত যুগের সন্নিকটে।

তাই সংস্কৃতির উন্নয়নের বিকল্প নেই। সমাজবিজ্ঞানের জনক ম্যাক্স ওয়েবার বলেছিল
“মানুষ যা তাই তার সংস্কৃতি”
আমরা এমন মানুষ দেখতে চাই,এমন সমাজ চাই যারা সমাজে হিংসা, বিদ্বেষ ছড়াবে না, নিজেরা হিংস্র হয়ে নিজেদের জ্ঞাতি ভাইদের উপর হামলে পড়বে না। জ্ঞান,মেধা ও মননে হবে মনুষ্যত্বের প্রতীক।গৌরব থাকলেও অহংবোধে ভুগবে না জৌলুস থাকলেও প্রচার করবে না।

পরিশেষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর মানুষ কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে উক্ত লেখাটির সমাপ্তি আনতে চাই।
“মূর্খরা সব শোনো, মানুষ এনেছে ধর্ম,
ধর্ম আনেনি মানুষ কোনো ”

এইচ আই হামজা
সাংগঠনিক সম্পাদক
কলাবাগান থানা ছাত্রলীগ।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ।

যুদ্ধ মানে সভ্যতা ধ্বংসের খেলা

সাজানো ঘরে স্বপ্নরা বেড়ে ওঠে,
বেড়ে ওঠে প্রজন্ম, গড়ে তোলে মায়াজালের সংসার।
মায়ার জঞ্জালে পূর্ণ এ ঘরে হঠাৎ আঁচড়ে পড়ে ক্ষেপণাস্ত্র!
মুহুর্তে বিষাদের কাল ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় আকাশ,
অমাবস্যার মধ্যরাতে আকাশের চাঁদ যখন কালঘুমে
সাঁজোয়া পদাতিক তুমুল গর্জনে রাইফেল, কামান সমেত ছুটে চলে।

ওরা গড়তে নয় ভাঙ্গতে আসে,
বাঁচাতে নয় মারতে আসে।
ওরা কাড়ে শিশুর উদ্যোম হাসি, মায়ার বন্ধন
ভূমিহীন করে বানায় শরনার্থী।

তোমরা একে যুদ্ধ বলে নিন্দা জানিয়ে কর্তব্য পালন করো,
ওরা অস্ত্র বিক্রির ডলারে আধিপত্য কায়েম করে সভ্যতা ধ্বংসের খেলায় মাতে।
সাজানো ফুলের বাগানে বাংকার খুঁড়ে ক্ষতবিক্ষত করো আমাদের স্বপ্ন,
আমাদের বেঁচে থাকার সম্বল, আমাদের ঘর স্বজন।
কোলের শিশু ভয়ার্ত শব্দে যখন জেগে ওঠে
তখন ঈশ্বরের কাছে ঘৃণার নালিশ জানায়।

বেকুব ঈশ্বর নীরবতার ভং ধরে ঊর্ধ্ব গগনে বসে শান্তির গান শুনিয়ে আমাদের আফিমে মজিয়ে রাখে,

পাশার ঘর অথবা প্রার্থনালয়

রাত দ্বিপ্রহর নিরব, নিস্তব্ধ।
হতাশার চাদরে ঢাকা আভিজাত্যের এ শহর
এখনো জেগে আছে পানশালা,
নর্তকীর আহ্বানে পুলকিত ধনীর দুলাল মেতেছে শরাবের মোহে।
কেউ কেউ জেগে আছে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে।
ফ্লাস্ক হাতে চাওয়ালা, গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে কাগজ কুড়ানো মেয়েটির জীর্ণ শরীরে শীর্ণ পোশাক,
রিক্সার প্যাডেল চলছে অবিশ্রান্ত,
ডিউটি শেষে ফিরছি কোন এক অভাগা সন্তানের পিতা।

লাশকাটা ঘরে পড়ে আছে আদরের ধন,
নিথর অথবা উলঙ্গ দেহ চাদরে মোড়ানো।
প্ল্যাটফরমে শুয়ে থাকা ভবঘুরে, শীতের যন্ত্রণায় আধঘুমে গুটিসুটি।
অথচ দামি কার্পেট, চোখ ধাঁধানো ঝাড়বাতি, মোজাইক শোভিত ক্ষণিকের প্রার্থনালয়!
মৃত্যু আত্মার বোবা আর্তনাদে অদ্ভুত এক অভিশাপ আমাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে!

এ অভিশাপ আজ সরকারী প্রেসনোটে মিথ্যের বেশাতি
এ অভিশাপ আমলাতন্ত্রের হেঁয়ালি পাশার ঘরে
এ অভিশাপ ধর্মের জিকিরে বিভক্ত চারপেয়ে অদ্ভুত এক জন্তুর আঁতুড়ঘর।
কলম হাতে নীরব কবি, বুদ্ধিজীবী কেনার হাট বসে প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামে!
বুলেটপ্রুফ গাড়িতে মদ, বিয়ারের চালান যায় আর আসে অভিজাত বা্রে।
দালালিতে ব্যস্ত কবি ও সম্পাদক,
আদালতের হুলিয়া যেন আজ ডাকবাক্সের মতোই বিলুপ্ত।

চেতনার মগজে শাণ দাও হে শাণ দাও,
বজ্রের বেগে আঘাত করো, তাসের ঘর একদিন ভাঙবেই ভাঙবে।
তৈরী হও তৈরী হও, তৈরী হও, জোট বাঁধো, জোট বাঁধো, তৈরী হও!

মায়ের মন

রোজ এক বা তারও বেশি
ফোন দেই, খোঁজ নেয়।
কদিন ফোন দেওয়া হয়নি, আজ উল্টো ফোন পেলাম,
প্রথম শব্দ পাঁচশ টাকা পাঠায়?
নির্বাক মনের অন্ত শিরায় যেন মৃদু ভূকম্পন।
বললাম লাগবে না, আজ রাতেই বেতন দেবে ওরা।
মা কি করে বুঝো দেড় শত মাইল দূর থেকে?
এ কদিনের জমানো সমস্ত কথায় আমাদের না বলা সব কথার উপাখ্যান!
কবে আসবি? ছোট বোনের স্কুলের মাইনে বাকী, দোকান খরচও ঢের!
আসছি মা, কালই ফিরব অপেক্ষা কর।

ধার্মিক হওয়ার আগে মানুষ হও

সঙ্গমের আহ্বান, ফুলের সৌন্দর্য, মাতৃস্নেহকে তুচ্ছ করে একদিন চলে যাবে।
পড়ে থাকবে ঘর, স্বজন নিত্য ব্যবহার্য অথবা প্রিয় জিনিস।
কেউ কাঁদবে বিষাদের করুণ সুরে
হয়তো আড়ালে কেউ হাসবে।
যদি শঠতার বাহক, বা হৃদয়হীন হও!
জমির জায়গায় জমি থাকবে মালিকানা পরিবর্তন হবে শুধু।
অর্থ অথবা সম্পদ একদিন সব তুচ্ছ হবে।
স্বজন হারানোর বেদনা ভুলে যাবে স্বজন।
সুউচ্চ মিনার বা স্মৃতির ফলকে থাকবে না নাম।
যদি হৃদয়াঙ্গম হতে পারো
থেকে যাবো মানুষের হৃদয়ে।
ধার্মিক হওয়ার আগে মানুষ হও।
প্রেমিক হওয়ার আগে একজন পুরুষ হও।
প্রেম ও মনুষ্যত্বের মহিমায় ত্যাগীর নাম
আলিমুল গায়েব লিখে রাখে সোনার অক্ষরে!

লাল পিঁপড়ে

অজস্র প্রাণের নিরলস শ্রমে গড়া বালুঘর।
সব আয়োজন,উৎসবের সকল রসদে পূর্ণ!
রাজা-রানী,মন্ত্রী-সামন্ত কোলাহলে মুখরিত প্রাসাদ!
এক মানুষের পদপিষ্টে মুহূর্তেই এলোমেলো সব,
তছনছ সাজানো সোনার সংসার।
হায় পিঁপড়ে!হায় লাল টুকটুকে পিঁপড়ে!

প্রতিটি বাঙালি এক একটি ভাস্কর্য

নিন্দা জানানোর সময় শেষ।
এবার মাঠে নামো বাংলাদেশ,
বঙ্গবন্ধু মানে একটি চেতনা, লাল সবুজের গর্ব অহর্নিশ।
বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ নত চিত্তে করি তাঁরে কুর্ণিশ,
চির অমর, অক্ষয় অঙ্গুলিতে যার এসেছে কোটি জনতার জয়।
দেখো কোটি মুজিব এক মুজিবের বাংলায় অহর্নিশি জেগে রয়
মুজিব মানে একাত্তর বিজয়ের রক্ত পতাকা।
মুজিব মানে বাংলাদেশ রক্ত দিয়ে লেখা,
মুজিব মানে বাংলার রক্তস্নাত গৌরব ঐশ্বর্য।
মুজিব মানে প্রতিটি বাঙালি এক একটি ভাস্কর্য!
এক মুজিব ঘুমিয়ে আছে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে
দেখো লক্ষ মুজিব জেগে আছে কোটি বাঙালির অন্তরে।

ভুলের মানুষ অথবা মানুষের ভুল

মানুষ চিনতে ভুল করে মানুষ
প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়ে নেয় নিজের মতো।
সময় ক্রমশ ধাবমান,
জোয়ার মানে না বাঁধা বাতাস তার যোগ্য সঙ্গী হয়।
পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র ভাবায়, ভাবতে বাধ্য করে
প্রতিটি বস্তু নিয়ত পরিবর্তনশীল।
নতুনকে বরণ করার দুঃসাহসী মানুষের অভাবে প্রগতির পথ আজ রুদ্ধ।
মানুষ চিনতে ভুল করে মানুষ
প্রেমিকা, চলে যায়
ঘরণী তালাক দেয়
স্বজন হারায় স্বজন
বন্ধু লুটে নেয় বন্ধুত্বের সকল বিশ্বাস।
আশরাফুল মাখলুক এক আজব চিজ,
মদ, জমি, জুয়া ধর্ম এক মায়াবী জালের আজব খেলায় নিত্য মত্ত।
মানুষ চিনতে ভুল করে মানুষ
ঠিক যেমন কোকিল কাকের বাসায় ডিম দেয়
তেমনি করেই মানুষ ভুল করে, ভুলের ফাঁদে পড়ে।
আবেগের প্রেমে ভেসে ভুলকেই শ্রেষ্ঠ বলে মানে
দর্শন অথবা সৌন্দর্যের কদর বুঝে না,
প্রেম ও ফুলের রূপ বুঝে না
ওরা শুধুই জাত, ধর্ম নিয়তিকেই বরণ করে।

ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলন বর্তমান প্রেক্ষাপট ও আমাদের দায়

“আমাদের গেছে যে দিন একেবারেই কি গেছে — কিছুই কি নেই বাকি?’
একটুকু রইলেম চুপ করে; তারপর বললেম, ‘রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে।’
উপরোক্ত কবিতাটি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত “হঠাৎ দেখা” কবিতার কিয়দংশ। এখানে বলে রাখা ভালো এই কবিতার বিষয়বস্তু হঠাৎ দেখা সাবেক প্রেমিকার সাথে প্রেমিকের কিছুটা নস্টালজিক, কিছুটা মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা পুরনো প্রেমের হঠাৎ আলোড়ন।

এবার আসি মূল বিষয়ে, বর্তমান বাজারে ব্যাপক আলোচিত বিষয়, বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা আন্দোলন। আবরার এক টগবগে তরুণ। অনেক স্বপ্ন ও আশা নিয়ে বুয়েটের মত প্রতিষ্ঠানে এসেছিল পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ার হবে বলে। কিন্তু হঠাৎ অমানিশার মত এক কাল বৈশাখী ঝড়ে যেন সব এলোমেলো। কিন্তু এই ঝড় কেন এলো? যারা আবরারকে নৃশংসভাবে মারল তারাও তো মেধাবী? তারাও সেই একই স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল বুয়েটে। ইঞ্জিনিয়ার হবে। দেশের প্রয়োজনে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে হয়তো নব উদ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সামনের দিকে। তাহলে কেন ওরা খুনি হল? এর দায় কি শুধুই খুনিদের? আপাত দৃষ্টিতে বলা যায় খুনিদের কিন্তু, সামগ্রিক অর্থে এ দায় খুনিদের একার নয়। এ দায় আমাদের এই নষ্ট সমাজকেও নিতে হবে। নিতে হবে রাজনীতির নামে যারা অপরাজনীতি করে আসছে তাদেরও। এমন না যে বুয়েটে এই প্রথম কোন ছাত্রকে মারা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগেও বহু ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে।

“স্বাধীনতার পর দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১৫১ জন শিক্ষার্থী খুন হয়েছেন বলে পত্রিকায় খবর এসেছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৪ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ২ জন করে, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং হজরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জন করে শিক্ষার্থী খুন হন।”
১৯৭৪-২০১৯ লাশ ও খুনি তৈরি করা ছাত্ররাজনীতি
“সোহরাব হাসান” প্রথম আলো।”

“১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল সূর্য সেন হলের ৬৩৫ নম্বর কক্ষ থেকে ছাত্রলীগের নেতা কোহিনুরসহ চারজনকে ‘হ্যান্ডস আপ’ করিয়ে নিয়ে আসেন মুহসীন হলের টিভিরুমের সামনে। অস্ত্রধারীদের আরেকটি দল ৬৪৮ নম্বর কক্ষ থেকে আরও তিনজনকে একই কায়দায় সেখানে নিয়ে আসেন। রাত ২টা ১১ মিনিটে ওই সাতজন ছাত্রকে লক্ষ্য করে ‘ব্রাশফায়ার’ করেন তাঁরা। এরপর অস্ত্রধারীরা ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।”
১৯৭৪-২০১৯ লাশ ও খুনি তৈরি করা ছাত্ররাজনীতি
“সোহরাব হাসান” প্রথম আলো।”

“মুহসীন হলে যাঁরা খুন হলেন এবং যাঁরা খুন করলেন, তাঁরা সবাই ছাত্রলীগের। নিহত শিক্ষার্থীরা আওয়ামী যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণির সমর্থক ছিলেন। প্রতিপক্ষ গ্রুপের উসকানিতে শফিউল আলম প্রধান এ কাজ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। পরদিন হত্যার বিচারের দাবিতে যে মিছিল হয়, তাতেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিন দিন পর প্রধান গ্রেপ্তার হন। হত্যাকারীদের মধ্যে যাঁরা রাজসাক্ষী হয়েছিলেন, তাঁদের বর্ণনায় উঠে আসে খুনের ভয়ংকর বিবরণ। আওয়ামী লীগ শাসনামলেই মুহসীন হলের সাত হত্যার বিচার হয়। বিচারে প্রধানের যাবজ্জীবন শাস্তি হয়। কিন্তু জিয়াউর রহমান তাঁকে ১৯৭৮ সালে মুক্তি দিয়ে আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনীতিতে মাঠে নামান। এরপর ক্যাম্পাসে শুরু হয় ছাত্রদলের তাণ্ডব। মেধাবী ছাত্রদের জিয়া হিজবুল বাহারে নিয়ে গিয়ে কী তালিম দিয়েছিলেন জানি না। কিন্তু গোলাম ফারুক অভিসহ অনেক মেধাবী ছাত্রই সন্ত্রাসীতে পরিণত হন।”
১৯৭৪-২০১৯ লাশ ও খুনি তৈরি করা ছাত্ররাজনীতি
“সোহরাব হাসান” প্রথম আলো।”

একটি বিষয় এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৭৪ সালে মুহসিন হলে যে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সরকার তার বিচার করেছিল এবং তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সফিউল আলম প্রধানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রধান করেছিল, কিন্তু ৭৫ পটপরিবর্তন প্রধানকে জেল থেকে জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে মুক্তি দিয়ে আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনীতিতে মাঠে নামান। সেই থেকে শুরু ছাত্ররাজনীতির কাল মেঘের ঘনঘটা। কিন্তু ইতিহাস তো বলে ছাত্রদের পক্ষে। বাংলাদেশের ইতিহাস তো প্রকারন্তরে ছাত্রদেরই গৌরবের ইতিহাস। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু ৫৪ যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯ আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলন, ৭০ নির্বাচন ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ মধ্য দিয়ে রক্তক্ষয়ী তুমুল গণযুদ্ধের আজকের বাংলাদেশ। ৯০ স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দ্বিতীয় জীবন লাভ করেছিল। ২০১৩ শাহবাগের উত্তাল গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন এ সবই সম্ভব হয়েছিল ছাত্রদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে। এই যে সোনালি ইতিহাস, এ ইতিহাস আপনি অস্বীকার করবেন কি করে? ইতিহাসকে অস্বীকার করা যায় না।

আর যদি কেউ করেও থাকে তাকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হয়। আজকে আবরার ইস্যুকে কেন্দ্র করে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের একটি হুজুগে দাবী উঠেছে। হুজুগে বললাম এই কারণেই, মাথা ব্যথা হলে মাথা কাটতে হবে কেন? সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধান করাই মুখ্য কাজ। আর এটা করতে হবে জাতীয় নেতৃত্বকেই। কেননা এর দায় তারা এড়াতে পারে না। আজ যারা জাতীয় নেতা তাঁরাই একদিন ছাত্রনেতা ছিল। সাবেক রাষ্ট্রপতি এডভোকেট জিল্লুর রহমান, সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজুলুল হক মণি, কমরেড ফরহাদ, আ,স,ম আবুর রব, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, আব্দুল কুদ্দুস মাখান, শাহজান সিরাজ, নুরে আলম সিদ্দিকী, কাজী আরেফ, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ছাত্ররাজনীতি করেই আজ তাঁরা জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপে এসেছেন।
একেকজন যেন একটি জ্বলন্ত ইতিহাস।

কিন্তু একটি কথা মাথায় বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে, তাহলো ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে কেন? এটা কি সামগ্রিক দেশের মানুষের কথা? নাকি যারা রাজনীতির নামে ধর্মকে পুঁজি করি একটি উগ্র মৌলবাদী রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে তাদের কথা? প্রগতিশীল মহল থেকে শুরু করে সুস্থ ধারার রাজনীতি যারা করেন তাঁরা অন্তত এটাই মনে করে। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে ঐ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীরই লাভ হবে প্রকারন্তরে। তাহলে ক্যাম্পাসে তারা অবাধে বিচরণ করে মৌলবাদী রাজনীতির বীজ বপন করতে পারবে নিরাপদে। সাধারণ মেধাবী ছাত্রদের মগজধোলাই করে দেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার সেই হীন চেষ্টায় স্বাধীনতার পর থেকে বারবার করে আসছে। তাই আজ দাবী তুলেছে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ কোন সমাধান নিয়ে আসবে না। আগেই বলেছি সমস্যার ভিতরে গিয়ে সমাধান করতে হবে।

আগে তো অনেক ছাত্রকে প্রাণ দিতে হয়েছে তাহলে, আবরার হত্যাকে কেন্দ্র করে কেন এই “বিরাজনীতিকরণ”-এর আন্দোলন? কোথায় এমন কোন আন্দোলন তো আগে চোখে পড়েনি, তাহলে শুধু আবরার ইস্যুকে কেন্দ্র করে কেন এই আন্দোলন? ভেবে দেখার সময় এসেছে, কারা ও কেন এই দাবী তুলছে এবং কেন ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে চায়।

শুরু করেছিলাম কবি গুরুর কবিতার কিয়দংশ দিয়ে।
রবীন্দ্রনাথের ঐ “হঠাৎ দেখা” কবিতার মতোই বলতে ইচ্ছে করছে, যেদিন গেছে একেবারেই কি গেছে আমাদের? কিছুই কি নেই বাকী? না যায়নি, এখনো অনেক বাকী। আমি নিজে একজন ছাত্র রাজনীতির কর্মী হিসেবে বলছি, ছাত্র রাজনীতির অনেক ইতিবাচক দিক আছে। এবং সেই ইতিবাচক দিকটিই আমাদের গ্রহণ করতে হবে। যা কিছু অন্যায় তাকে বর্জন করতে হবে। তাহলেই আমরা অতীতের মতোই ছাত্র রাজনীতির সুফল ঘরে তুলতে পারবো। ছাত্র রাজনীতির কল্যাণেই আজকে বঙ্গবন্ধু ও আজকের বাংলাদেশ।

ছাত্র রাজনীতির কল্যাণেই বাংলা ভাষা আজ বিশ্বের অন্যতম মর্যাদা সম্পন্ন ভাষা। বাংলাদেশের ইতিহাস ছাত্র রাজনীতিরই ইতিহাস। এ ইতিহাসকে আপনি কীভাবে অস্বীকার করবেন?

কবিতা কি কবি কে?

কবি সেই ব্যক্তি বা সাহিত্যিক যিনি কবিত্ব শক্তির অধিকারী এবং কবিতা রচনা করেন। একজন কবি তাঁর রচিত ও সৃষ্ট মৌলিক কবিতাকে লিখিত বা অলিখিত উভয় ভাবেই প্রকাশ করতে পারেন। একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট, ঘটনাকে রূপকধর্মী ও নান্দনিকতা সহযোগে কবিতা রচিত হয়। কবিতায় সাধারণত বহুবিধ অর্থ বা ভাবপ্রকাশ ঘটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধারায় বিভাজন ঘটানো হয়। কার্যত যিনি কবিতা লিখেন, তিনিই কবি।

তবে বাংলা ভাষার প্রধানতম আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, “সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি।” অর্থাৎ কবিতা লিখলেই বা কবি অভিধা প্রাপ্ত হলেই কেউ “কবি” হয়ে যান না। একজন প্রকৃত কবির লক্ষণ কী তা তিনি তাঁর কবিতার কথা নামীয় প্রবন্ধ গ্রন্থের বিভিন্ন প্রবন্ধের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। সেই অনাদিকাল থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত যুগ-যুগ ধরে কবিরা তাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনাগুলোকে মনের মাধুরী মিশিয়ে সৃষ্টি করে চলেছেন নিত্য-নতুন কবিতা। কবিতাগুলো একত্রিত করে তাঁরা কবিতাসমগ্র বা কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। কখনো কখনো কাব্যগ্রন্থটি বিরাট আকার ধারণ করে সৃষ্টি করেন মহাকাব্য। প্রায় সকল ভাষায়ই কবিতা রচিত হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভিন্ন ভিন্ন সময়কে উপজীব্য করে রচিত হওয়ায় এগুলোর আবেদন, উপযোগিতা এবং ভাবও সাধারণতঃ ঐ সময়ের জন্য উপযোগী।

তবে কতকগুলো কবিতা কালকে জয়ী করেছে বা কালজয়ী ভূমিকা পালন করেছে। প্রত্যেক সমাজ-সভ্যতা ও নির্দিষ্ট ভাষায় রচিত হওয়ায় কবিরা বহুমাত্রিক, বিচিত্র ভঙ্গিমা, সৃষ্টিশৈলী প্রয়োগ করেছেন তাদের কবিতায় যা কালের বিবর্তনে যথেষ্ট পরিবর্তিত,পরিমার্জিত হয়ে বর্তমান রূপ ধারণ করেছে। পরবর্তীকালে এই প্রায়োগিক বিষয়াদিই ঠাঁই করে নিয়েছে বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসের পর্দায়। সাহিত্যের ইতিহাসে উৎপাদিত এই বৈচিত্র্যময় শিল্প শৈলীই বর্তমান সাহিত্যকে যথেষ্ট সমৃদ্ধ করেছে।

কবি শব্দটি ‘কু’ ক্রিয়ামূলের বংশে প্রসূত একটি শব্দ। ‘কু’ অর্থ’ অ-সাধারণ (নবরূপে উত্তীর্ণ) কারী। এতেই বোঝা যায় কবি সেই মানুষ যিনি সাধারণ অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি অথবা প্রচলিত শব্দকে নতুন রূপে উত্তীর্ণ করতে সক্ষম। ইংরেজী শব্দ ‘পয়েট’ (poet), ল্যাটিন ভাষার প্রথম শব্দরূপ বিশেষ্যবাচক পুংলিঙ্গ ‘পয়েটা, পয়েটে’ (‘poeta, poetae’) (আক্ষরিক অর্থ ‘কবি, কবি এর’) থেকে সংকলিত হয়েছে। ফরাসি কবি আর্থার রিমবোঁদ “কবি” শব্দের লিখিতভাবে সারাংশ প্রদান করেছেন,

“একজন কবি দর্শনীয় মাধ্যম হিসেবে নিজেকে অন্যের চোখে ফুটিয়ে তোলেন। তিনি একটি দীর্ঘ, সীমাহীন এবং পদ্ধতিবিহীন, অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় সকলের দৃষ্টিগ্রাহ্যতার বাইরে অবতীর্ণ হয়ে কবিতা রচনা করেন। সকল স্তরের ভালবাসা, দুঃখ-বেদনা, উন্মত্ততা-উন্মাদনার মাঝে নিজেকে খুঁজে পান তিনি। তিনি সকল ধরণের বিষবাষ্পকে নিঃশেষ করতে পারেন। সেই সাথে পারেন এগুলোর সারাংশকে কবিতা আকারে সংরক্ষণ করতে। অকথ্য দৈহিক ও মানসিক যন্ত্রণাকে সাথে নিয়ে তিনি অকুণ্ঠ বিশ্বাসবোধ রচনা করে যখন, যেমন, যেখানে খুশী অগ্রসর হন। একজন অতি মানবীয় শক্তিমত্তার সাহায্যে তিনি সকল মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত হন। একজন বড় ধরণের অকর্মণ্য ব্যক্তি থেকে শুরু করে কুখ্যাত অপরাধী, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অভিসম্পাতগ্রস্ত ব্যক্তি, এমনকি সর্বশ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক হিসেবেও তিনি অভিহিত হতে পারেন! যদি তিনি অজানা, অজ্ঞাত থেকে যান কিংবা যদি তিনি বিকৃত, উন্মত্ত, বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন – তারপরও শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের দৃষ্টিভঙ্গীর মাধ্যমে সেগুলো দেখতে পাবেন। তাই, কি হয়েছে যদি তিনি উৎফুল্লে ভেসে অ-শ্রুত, নামবিহীন অজানা বিষয়াদি ধ্বংস করেনঃ অন্যান্য আদিভৌতিক কর্মীরা তখন ফিরে আসবে এবং তারা পুনরায় সমান্তরালভাবে রচনা শুরু করবে যা পূর্বেই নিপতিত হয়েছিল!”

অবশ্য, এটি পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অনেক কবিকূলের মধ্যে একজন কবি যিনি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী প্রকাশ করেছেন মাত্র। বুদ্ধদেব বসু তাঁর সম্পাদিত কবিতা পত্রিকার একটি প্রবন্ধ সংখ্যার (১৩৪৫, বৈশাখ) পরিকল্পনা করেছিলেন মূলতঃ কবিদের গদ্য প্রকাশের উদ্দেশ্য নিয়ে। এরই সূত্রে জীবনানন্দ তাঁর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধটি লিখেছিলেন যার নাম ‘কবিতার কথা’। এ প্রবন্ধের শুরুতেই আছে “কবি” সম্পর্কে স্বীয় ধ্যান-ধারণার সারকথাঃ
সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি;
কবি কেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার সারবত্তা রয়েছে, এবং তাদের পশ্চাতে অনেক বিগত শতাব্দী ধরে এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্যবিকীরণ তাদের সাহায্য করেছে। কিন্তু সকলকে সাহায্য করতে পারে না; যাদের হৃদয়ে কল্পনা ও কল্পনার ভিতরে অভিজ্ঞতা ও চিন্তার সারবত্তা রয়েছে তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত হয়; নানারকম চরাচরের সম্পর্কে এসে তারা কবিতা সৃষ্টি করবার অবসর পায়। উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ একবার কবিদের কাজ সম্বন্ধে বিবৃত করেছিলেন যে,
“গানের বিষয়বস্তুকে আনন্দের সাথে তুলে ধরা
বাইরে নির্গত হয়ে আমার আত্মাকে ঐদিন পরিশোধিত করবে
যা কখনো ভুলে যাবার মতো বিষয় নয় এবং এখানে লিপিবদ্ধ থাকবে। (দ্য প্রিলুড বুক ওয়ান)”
ম্যারিয়েন মুরে কর্তৃক কবিদের কাজ সম্পর্কে বলেছেন যে,
“তারা প্রকৃতই সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেন। (পয়েট্রি)”

অন্যান্য অনেক কবি যেমনঃ ‘এইনিডে’ ভার্জিল এবং ‘প্যারাডাইজ লস্টে’ জন মিল্টন বর্ণনা করেছেন যে, ‘গ্রীক পুরাণে বর্ণিত কাব্য ও সঙ্গীতাদির দেবীরা তাদের আবেগিক কর্মকাণ্ড প্রয়োগের মাধ্যমে কবিদের কাজে সহায়তা করেন’। কবির বেদনা-বিদ্ধ হৃদয়ই কবিতার জন্ম-ভূমি। অর্থাৎ, সময়-বিশেষে কোন একটি বিশেষ সূত্রকে অবলম্বন করে কবির আনন্দ-বেদনা যখন প্রকাশের পথ পায়, তখন জন্ম। কবি বেদনাকে আস্বাদ্যমান রস-মূর্তি দান করেন। ব্যক্তিগত বেদনার বিষপুষ্প থেকে কবি যখন কল্পনার সাহায্যে আনন্দমধু আস্বাদন করতে পারেন, তখন বেদনা পর্যন্ত রূপান্তরিত ও সুন্দর হয়ে উঠে। বেদনার যিনি ভোক্তা, তাঁকে এটি দ্রষ্টা না হতে পারলে তাঁর দ্বারা কাব্য-সৃষ্টি সম্ভব নয়। কবির বেদনা-অনুভূতির এ রূপান্তর-ক্রিয়া সম্বন্ধে ক্রোচে তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন এভাবে –
“Poetic idealisation is not a frivolous embellishment, but a profound penetration in virtue of which we pass from troublous emotion to the serenity of contemplation.”

কবিতা বা পদ্য শব্দের ছন্দোময় বিন্যাস যা একজন কবির আবেগোত্থিত অনুভূতি, উপলব্ধি ও চিন্তাকে সংক্ষেপে এবং উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রকল্পের সাহায্যে উদ্ভাসিত করে এবং শব্দের ছন্দায়িত ব্যবহারে সুমধুর শ্রুতিযোগ্যতা যুক্ত করে। কাঠামোর বিচারে কবিতা নানা রকম। যুগে যুগে কবিরা কবিতার বৈশিষ্ট্য ও কাঠামোতে পরিবর্তন এনেছেন। কবিতা শিল্পের মহত্তম শাখা পরিগণিত।

পাঠক এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে যা পড়েছেন, তা আমার লেখা নয়। এতো সুন্দর উপস্থাপনা, বিশ্লেষণ, এবং বিশেষণ এর কোনটা আমার না। অনলাইন থেকে সংগ্রহ করেছি। তবে নিজে দু এক লাইন লেখি বলে বা লেখার চেষ্টা করি বলে এর সাথে আরও কিছু নিজস্ব ধারণা, যা একান্তই আমার নিজের। তা যুক্ত না করে পারলাম না। ইদানীং অনেক নতুন কবির কবিতাই চোখে পড়ে। পড়ার চেষ্টা করি। অনেক কবি দেখা যায়। কিন্তু কে কবি আর কোনটা কবিতা সেটা বোঝা মাঝে মাঝে সংশয় দেখা দেয়। নিজেও লেখি আর ভাবি আমি কি সত্যিই কোন কবিতা লিখেছি? বা যা পড়ছি তা কি আসলেই কবিতা? প্রশ্ন থেকে যায় সমাধান খোঁজার চেষ্টা করি। এতোটুকু বয়সে যতোটুকু পড়েছি বা জানার চেষ্টা করেছি, বুঝেছি তার মাত্র সামান্যই। আর যা বুঝেছি তাই আপনাদের মাঝে দুই লাইন লেখার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করার দুঃসাহস দেখাচ্ছি। প্রিয় পাঠক, আমার আমি নিতান্তই ছোট সবে মাত্র ২০ ঘরে পা দিয়েছি মাত্র। আর পড়েছি যৎসামান্যই। নিজের পড়াশোনা, সেই সাথে রুটি রুজির সংগ্রামেই পরে থাকতে হয়। তার মাঝে সাহিত্যর রূপ, রস, গন্ধ, উপমা, অলঙ্কার খোঁজার মধ্য দিয়ে চেষ্টা করি সাহিত্যর মননে নিজেকে প্রকাশ করার। আমি ব্যর্থ বা সফল এ কথা এখনই বলার কোন কারণ নেই। পাঠক উপরের লেখার মাধ্যমে যা বলতে চেয়েছি হয়তো বা বয়সের দোষে বা অপরিপক্কতার কারণেই পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারিনি। এর দায়ভার আমি নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছি। আর আপনাদের প্রতি আহ্বান রইলো যে আপনারা যথাসম্ভব বেশি গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে আমার এই জানা এবং জানানোর প্রয়াসকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিবেন।

পাঠক এবার আমি আমার নিজের মতামত ব্যক্ত করবো কবিতা কি আর কবি কে এই বিষয়ে। পাঠক আগেই বলেছি সাহিত্য বিষয়ে আমার পড়াশোনা যৎসামান্যই। তবুও বলছি, কবিতা হল ব্যক্তি মানুষের সেই চিন্তার প্রকাশ যা সে কল্পনা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাস্তবতার নিখুঁত চিত্র তুলে আনে। যেখানে উঠে আসে চাওয়া,পাওয়ার গড়মিলে হিসাব। দেওয়া না দেওয়ার মর্মবেদনা। চিন্তা- চেতনার সৃজনশীল প্রকাশের মাধ্যমে কবিতা হয়ে উঠে সার্বজনীন এক আঁধার। যেখানে লুকায়িত থাকে বিরহ, প্রেম, দেশ ব্যক্তি,যুদ্ধ,বিগ্রহ। আর কবি হল সেই যিনি আঁধার থেকে আলো কুড়িয়ে দীপ্ততা ছড়ায় সর্বময়। কবির কাছে নির্দিষ্ট কোন দেশ থাকে না। নির্দিষ্ট কোন ধর্ম থাকে না। কবি সকলের এবং স্থান কাল পাত্র ভেদে কবি একজন সার্বজনীন পয়গম্বর। তিনি তার দার্শনিক দৃষ্টিতে কলমের খোঁচায় সত্যকে নির্মমভাবে উপস্থাপন করেন মূলত তিনিই কবি। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি সত্য, সুন্দর, ও মঙ্গলের পূজারী না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি আর যায় হোক কবি বলে অভিধা প্রাপ্ত হতে পারে না। কবি রাষ্ট্র আর ব্যক্তির মাঝে যে দন্ধ, এবং দন্ধের মাঝে যে বিকাশ তাই একজন কবির লেখনির মাধ্যমে আঘাত করবে ব্যক্তি মানসের অন্তরে। যেন মানুষ মনে করি আরে আমি তো এটাই ভাবছিলাম। এটা তো আমিই বলতে চেয়েছিলাম। অর্থাৎ কবির হবে মানুষের। কবি হবে মানবতার। কবি হবে সত্য ও সুন্দরের পূজারী। আর কবিতা হবে এই অমোঘ সত্যর নির্দেশক।

আমাদের বাংলা সাহিত্যে অন্যতম প্রধান কবি যিনি আমার প্রকৃতির এবং রূপসী বাংলার কবি বলে খ্যাত তিনি যেমন কবিতার সাথে প্রকৃতির সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন, আবার নজরুল সুকান্ত মানবতার জয়গান গেয়েছেন অবিশ্রান্ত। অন্যদিকে রবি ঠাকুর হয়েছেন সাহিত্যর প্রবাদপ্রতিম পুরুষ। ঐতিহাসিক যেমন ইতিহাসের নিদর্শনকে বিশ্লেষণ করে ইতিহাসকে করেন পূর্ণাঙ্গ, ঠিক তেমনিই একজন কবি হয়ে উঠেন সার্বজনীন আলোর উৎস। তাই কবিতাকে বলা হয় দর্পণ, আর কবিকে বলা যায় সভ্যতা গড়ার অন্যতম সারথি।

ফড়িং সিনেমা এবং আমার ছবি দেখার অভিজ্ঞতা

এই কোরবানির ঈদে ছুটি একেবারেই নেই। নেই বললে ভুল হবে ছিলই না। যারা সরকারি চাকরি করেন তারা ভালো বুঝেছেন নিশ্চয়। প্রথমত, ঈদ পড়েছে সরকারি ছুটির দিন শনিবার। মাঝে রবিবার ছুটি, সোম থেকে আবার শুরু অফিস, আদালতের দাপ্তরিক সকল ব্যস্ততা। এই যে, আমি দু-এক লাইন লেখতে বসেছি এটার মূল কারণ কিন্তু ঈদের ছুটি নিয়ে নয়। আসল কারণ হল এই ঈদে আমি কি করেছি বা কি দেখেছি মূলত সেটা। ভাবছিলাম আমাদের বাংলা সিনেমায় যার একছত্র আধিপত্য। সেই নায়ক রাজ রাজ্জাকের অভিনীত সেরা কিছু সিনেমা দেখে এইবারকার ঈদ কাটাবো। যেই ভাবা সেই কাজ।

শুরু হল রংবাজ দিয়ে আর শেষ হল ছুটির ঘণ্টা দিয়ে। কিন্তু শেষ হয়েও যে হল না শেষ। এই শেষ না হওয়ার কারণ কিন্তু নায়ক রাজ রাজ্জাক নয়। ইউটুবে কোন সিনেমা সার্চ দিলে প্রাসঙ্গিক আরও কিছু সিনেমার লিস্ট দেখা যায়। চোখ ঘুরতে ঘুরতে আটকে গেল ভারতীয় একটি সিনেমার দিকে। ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ফড়িঙের পোষ্টার। অভিনয় করেছেন ছবিটির মূল চরিত্রে চৌদ্দ বছরের এক বালক যার নাম আকাশ অধিকারী। অভিনেত্রী সহনী সরকার, অভিনেতা শঙ্কর দেবনাথ। ছবির শুরুতে দেখা যায় এক স্বল্পবসনা শিক্ষিকা ক্লাসরুমে। ফড়িং একা তার সামনে। শিক্ষিকা জানায় ফড়িং পরীক্ষায় সব বিষয়ে ফেল করেছে। শিক্ষিকা ফড়িংকে ডাকে কাছে আয়। ফড়িঙের দৃষ্টিতে শিক্ষিকার উন্মুক্ত শরীর। ঘুম ভেঙ্গে যায় ফড়িঙের। প্যান্টের ভিতরে হাত দিয়ে টের পায় যে তার স্বপ্নদোষ হয়েছে। ছুটে যায় বাথরুমে। এক চৌদ্দ বছরের কিশোরের বয়ঃসন্ধিকালের নানা ঘটনা এবং কিশোরের স্কুল শিক্ষিকার সাথে সম্পর্ককে ঘিরে আবদ্ধ হয়েছে এই কাহিনীচিত্রের। যদিও কেউ কেউ এটিকে যৌনতা বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা চালিয়েছেন। আমি এখানে অবশ্য যৌনতার কোন বালাই দেখিনি। যদিও কিশোর মনে ছেলেটি শিক্ষিকাকে ঘিরে যৌনতার কিছু দৃশ্য দেখা যায় যার একটিতে দেখা যায় সে তার শিক্ষিকার বাথরুমে গিয়ে শিক্ষিকার প্যানটি এবং সে ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করে। আবার একটিতে দেখা যায় সে শিক্ষিকাকে কল্পনার কামুক চোখে দেখে হস্ত মৈথুন করে।

কিশোর মনের কৌতূহল, শিক্ষিকার উদার মানসিকতার মধ্যে দিয়ে ছাত্রকে গড়ে তোলার এক অনুপম চিত্র হিসেবেই দেখতে চাই আমি। কিশোর আকাশ অধিকারী ক্লাস পরীক্ষায় দুটো বিষয়ে ফেল করেছে। এতে খেপেছে তার বাবা। তার সহপাঠী, শিক্ষকরা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেছেন এই ফেল করাকে। আর সেই শিক্ষিকা দেখেছেন যে পাশের মধ্যে বাহাদুরি নেই ফেল করা ছাত্রের মাঝেও লুকিয়ে থাকে অন্য এক ছাত্র। যে ন্যাশনাল জিওগ্রাফী, ডিসকভারি, এনিমেল প্ল্যানেট দেখে জীবজগৎ থেকে বা এই বিচিত্র পৃথিবীর অনেক কিছু জানা যায়। যা অন্য অনেক ছাত্র জানে না। কারণ তারা শুধু পাঠ্য বইয়ে নিজেদের সীমাবদ্ধ করে রাখে। ধীরে ধীরে শিক্ষিকার সাথে গড়ে ওঠে মধুর এক সম্পর্ক। যা কিশোর মনকে সঙ্গত কারণেই নাড়া দিয়ে যায়। শত কৌতূহল। শত প্রশ্ন, হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খায় কিশোরের মনে। কিশোরের জন্মদিন উপলক্ষে শিক্ষিকা একটি মোবাইল গিফট করে ছেলেটাকে। ঘটনার সূত্রপাত মূলত এখান থেকেই । মোবাইল হাতে পেয়ে সে একের পর এক ছবি তুলতে থাকে শিক্ষিকার। সেই সাথে শিক্ষিকার অগোচরে করে ভিডিও।যেখানে দেখা যায় কোকাকোলা খেয়ে শিক্ষিকা ঘরের মাঝে আপন মনে নেচে চলছে। এই ভিডিও কিশোরের অগোচরে লুকিয়ে দেখে ফেলে তার এক সহপাঠী যার নাম লাড্ডু। সেখান থেকে সে মোবাইল কৌশলে নিজের মোবাইল নিয়ে নেয়। এভাবেই এক মোবাইল থেকে অন্য মোবাইলে অতঃপর স্কুল, পারা প্রতিবেশী অবিভাবক, থেকে এক কান দুকান অতঃপর ছড়িয়ে পড়ে অপবাদ। চাকরি যায় শিক্ষিকার। ছাত্রকে স্কুল ছাড়তে দেওয়া হয় কতিপয় শর্ত। এরই মাঝে সেই শিক্ষিকার বন্ধুর লুকিয়ে রাখা কিছু অবৈধ অস্ত্র, সরঞ্জাম দেখে ফেলে সেই লাড্ডু আর কিশোর অভিনেতা আকাশ অধিকারী। এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় সেই শিক্ষিকা আর তার বন্ধু অভিনেতা শঙ্কর দেবনাথ। পুলিশ এসে উদ্ধার করে অবৈধ অস্ত্র। ছাত্রটি খোঁজতে থাকে তার শিক্ষিকাকে। যার কাছে সে পেয়েছে মায়াময় স্নেহ আর অগাধ ভালোবাসা। সেই অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা আবার প্রচারিত হয় সংবাদ চ্যানেল। যেখানে শিক্ষিকাকেও বলা হয় যে স্মাগ্লার। অথচ সেই শিক্ষিকা এর কিছুই জানত না। ছেলেটি শিক্ষিকার সন্ধানে একলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে। ছুটে যায় কোলকাতায়। এখানে সেখানে ঘুরে ফেরে। কাজ নেয় এক হোটেলে। চলতে থাকে অমানসিক সংগ্রাম। কাজের ফাঁকে ফাঁকে খোঁজতে থাকে তার প্রিয় শিক্ষিকাকে।

একদিন সেই হোটেলের মালিক খবরের কাগজ পড়তে থাকে পত্রিকার পাতায় চোখ আটকে যায় কিশোরের। জানতে পারে সেই শিক্ষিকা আর তার বন্ধু আটক হয়েছে কোলকাতার পুলিশ তাদের আদালতে তুলবে। কিশোরটি ছুটে যায় আদালত প্রাঙ্গণে। দেখে প্রিয় শিক্ষিকার সেই চিরচেনা মুখ। যাকে সে হন্য হয়ে খোঁজে চলছে অবিরাম। চলছে বেঁচে থাকার জীবন সংগ্রাম। ছুটে যায় পুলিশের কাছে আবদার করে তার সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে। অনেক চেষ্টার পরে সে সফলকাম হয়। সাক্ষাৎ হয় দুজনের, কথা হয়। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে শিক্ষিকা। একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে। কিভাবে সে এখানে, কেন, বাবা-মাকে ছেড়ে এসেছে কেন। সুবোধ বালক সব প্রশ্নের উত্তর দেয় তার স্বাভাবিক ভঙ্গীতে। শিক্ষিকার জন্য নিয়ে আসে টিস্যু। যা সে দিতে চায় শিক্ষিকাকে কিন্তু জেলে তা নেওয়া যাবে না বলে প্রথমে সে ফেরত দিতে চায় কিন্তু ছেলেটি একটি টিস্যু মুড়িয়ে জেলের রডের ছিদ্র দিয়ে দিয়ে দেয়। শিক্ষিকা প্রশান্ত মনে মুছে চলে চোখ মুখ। এবং কিশোরকে বলে গ্রামে ফেরত যেতে অঙ্গিকার করে যে প্রতিনিয়ত সে চিঠি লিখে সে জানাবে তার অবস্থা এবং সে নিজেও চিঠি পাবে বলে আশা করে ছেলেটির কাছে। ছেলে যথারীতি ফিরে যায় গ্রামে। সেই স্কুল বন্ধু লাড্ডু। বাবা মা, বাজারের দোকানদার পাড়া প্রতিবেশী সবাই খুশি হয় ছেলেটি ফেরত আসায়।

শেষ হয় সিনেমা। থেকে যায় পরিচালকের এক অনুপম হাতের কাহিনীচিত্র। দুটি প্রাণের সরল সম্পর্কের মাঝে সামাজিকতার সকল দেয়াল হয়ে উঠে অবান্তর। বাস্তবতার দারুণ চিত্র এঁকেছেন অভিনেতা,অভিনেত্রীসহ সকল কলাকুশলী। যা আমার দেখা এই পর্যন্ত সেরা ছবি।

(চলবে)