এম. হুমায়ূন কবির এর সকল পোস্ট

এম. হুমায়ূন কবির সম্পর্কে

কবিতা প্রেমি। কবিতা পড়তে এবং লিখতে ভালোলাগে। জন্ম:৩০জুন ১৯৮২, নাটোর জেলায় অন্তর্গত বড়াইগ্রাম উপজেলার খিদিরপুর গ্রামে। পড়াশোনা: এস এস সি-নিশ্চিন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়, এইচ এস সি & স্নাতক - বড়াই গ্রাম ডিগ্রী কলেজ, নাটোর। স্নাতকোত্তর-এডওয়ার্ড গভঃ কলেজ, পাবনা। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ পোড়া গোধূলি।

প্রিয়ার অবহেলা

প্রিয়া তোমার এক বিন্দু অবহেলা
জীবন করে দেয় দিক-দিশেহারা।

তুমি তো বয়ে চলা নদীর মতো
ছুটে চলেছো আপন খেয়ালে
কারও খাঁচায় বন্দি পাখির মতো
থাকতে চাওনি প্রেমের দেয়ালে।

বুকের ভূমিতে করি পুষ্প রোপণ
জল ঢেলে করেছি কতটা যতন
তুমি মাড়িয়ে গেলে পাষাণ চরণ
বুঝলে না আমার মলিন বদন।

যাবে যদি ছিঁড়ে প্রেমের শিকল
যাও চলে যাও হোক প্রেম বিফল।
প্রিয়া তুমি তো মুক্ত নভশ্চর
হলাম না হয় আমিই তোমার পর।

প্রিয়া তুমি এলে

im

যে মরুতে ছিল শুধু বালি পাথর
শুকনো নদী ছিল নিরব নিথর
যেথায় শুধু বইতো বালির ঝড়
তুমি নিয়ে এলে বৃষ্টির পসর।

তুমি এলে সাজে স্বপ্নের দোসর
ঘাস ফুল গাছ পাখিদের বাসর
তুমি এলে চাঁদের জোৎস্না হাসে
নক্ষত্র জ্বলে মিটিমিটি আকাশে।

বসন্ত ছড়িয়ে যায় চারিদিকে
সুরের মূর্ছনায় কোকিল ডাকে
মুখরিত জঙ্গলবাড়ি কলেজ ক্যাম্পাস
সজিব হয় ঈষা খা’র নিরব আবাস।
প্রিয়া তুমি এলে অমৃত স্বাদে ধানসিঁড়ি
তোমায় নিয়ে বাকি জীবন দেবো পাড়ি।

তুমি মুক্ত প্রিয়া

আগ্নেয়গিরির তপ্ত শীশা জ্বলে জ্বলে
এক সময় হয়ে যায় জমাট শীলা
নীলকণ্ঠী মন শত বিষ কন্ঠে নিয়ে
বেঁচে আছে সয়ে কত ব্যথার জ্বালা।

হৃদয় যেখানে খুঁজেছে তোমার প্রেম
তুমি খুঁজেছো সর্বদা আমার ভ্রম
আমি পেলাম না ভালোবাসার মন
তুমি খুঁজে পেয়েছো আমার অগুণ।

নিরবে সয়ে যাবো বিষবৃক্ষের মত
আমার দোষের সাজা দিবে তুমি যত।
ভালোবাসার পাখি তুমি মুক্ত গগনে
তোমার ছবি এঁকে রেখেছি এই মনে।

আমার হয়ে থাকো যদি আসবে ফিরে
কোন দিন ছিলেনা যদি না আসো নীড়ে।

ফিরিয়ে দিলে প্রিয়া

তোমাকে ভালোবাসি বলে
ফিরিয়ে দিয়েছিলাম তারে
জানিনা আজ কোন ভুলে
তুমি ফিরিয়ে দিলে মোরে।
এখন আমি মুক্ত বিহগ শূন্য গগনে
উড়তে পারি দিকবিদিক দিগন্তে।
ঘরছাড়া পাখির মতো নেই পিছু টান
আজ হলো ভালোবাসার অবসান।

জোর করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না

জোর করে যায় না পাওয়া ভালোবাসার মন
জোর করে যায় না হওয়া কারও আপন জন
তোমার মনের ঘরে হয়নি ঠাই
কষ্ট গুলো একা সয়ে যাই
ক্ষমো মোর অপরাধ
মিটবে না জানি সাধ
চলে গেলাম বহু দূরে
ডাকবো না আর সুরে সুরে!
সুখে থেকো চিরদিন
আসবে না ফিরে কোনদিন?
জীবনের অবেলায় যদি চাও
নাম ধরে ডেকে নাও
আশার প্রদীপ জ্বেলে বুকে
রইবো তোমার প্রতীক্ষাতে।
ছোট্ট ছোট্ট খুশির দিন
মনে রবে চিরদিন।
তোমার অধরের গোলাপ হাসি
স্মৃতির রাতে ছড়াবে শশী
পাইনি বলে জীবন সাথী
স্মরণে তোমায় কাটাবো রাতি।
আমি চলে যাব অনেক দূরে
জ্বালা হয়ে কোন দিন আসবো না ফিরে
সুরে গাঁথা হৃদয় বীণার তারটি গেছে ছিঁড়ে
লাগবে না জোড়া রাঙ্গা গোধূলির পরে?

বিরহ গীতিকা

ভুলের বনে ফুল ফুটাতে চেয়েছিলাম
ভুলের আঁধারে আমি হারিয়ে গেলাম।।

ভুল করে ছিলাম আমি তোমায় ভালোবেসে
এখন আমার দিন রজনী কাটে কেঁদে কেঁদে।।
সুখের আশা করে আমি
দুঃখ শুধু পেলাম
ভুলের আঁধারে আমি হারিয়ে গেলাম।

ভুলের বনে ফুল ফুটাতে চেয়েছিলাম
ভুলের আঁধারে আমি হারিয়ে গেলাম।।

ভুল করে বালুচরে বেঁধে ছিলাম বাসা
অচেনা মরুর ঝড়ে ভেঙ্গে দিল আশা।।
ফুলের আশা করে আমি
কাঁটা শুধু পেলাম
ভুলের আঁধারে আমি হারিয়ে গেলাম।

ভুলের বনে ফুল ফুটাতে চেয়েছিলাম
ভুলের আঁধারে আমি হারিয়ে গেলাম।।

স্বপ্ন চারিণী হয়ে দেখালে স্বপন
ভেবে ছিলাম তুমি আমার কতনা আপন।।
জীবন নামের পরীক্ষাতে
শূন্য খাতা পেলাম।
ভুলের আঁধারে আমি হারিয়ে গেলাম।

বর্তমান

একদিকে চেতনাবাজদের মিথ্যের ভেলা
অন্য দিকে ধর্মের নামে আবেগ নিয়ে খেলা
মানচিত্রের দখল নিতে করে কাড়াকাড়ি
তরুণ ছেলেটা রক্তাক্ত লাশ হয়ে ফিরে বাড়ি।

লোনা জলের ঝর্ণা মিশে সাগরতলি
এতো জল চারিদিকে পিপাসার্ত নুড়ি
পুঁজিবাদের পাহারায় অস্ত্র হাতে পুলি
শ্রমিকের অধিকারের বুকে চলে গুলি।

ভাত চাই কাপড় চাই রাজপথে দাবি
এই দেশে শান্তি আসবে কবে ভাবি
প্রতিদিন লাল সূর্য উঠে আশার আলো নিয়ে
জীবন মোদের পূর্ণ হবে আলোর ছোঁয়া পেয়ে।

তারাবির সালাত

তারাবিতে দেখে এলাম কোরআনের বুলবুল
তেলাওয়াতের সুরে সুরে মন করে আকুল
হৃদয় ছুঁয়ে যায় করুণ আর্তনাদ
প্রভুর কাছে পানাহ চেয়ে করি ফরিয়াদ।

বুক কাঁপে ভয়ে প্রভু যবে জানতে চান
ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা তুকাযযিবান
জলে ছলছল আঁখি নীড় বুকে ব্যথাভার
ধ্যানে মগ্ন তারাবির সালাতে দাড়িয়ে আবার
কান পেতে রই তরুণ হাফেজের সুরে
সুরের মূর্ছনায় হারিয়ে যাই কোন দূরে?

সিয়াম সাধনার মাসে পড়ি তারাবির সালাত
চোখের জলে দু’হাত তুলে করি মুনাজাত।
ক্ষমা করে দাও প্রভু আমি গুনাহগার
তুমি বিনে কে তরাবে এই পারাবার
বিচার চাই না প্রভু, মাঙি তোমার করুণা
কবুল কর মোর নাজাতের বাসনা।

একটা মিছিল হবে

একটা মিছিল হবে রাজপথে আবার
দাবি নিয়ে মানুষের অধিকার
ভাতের অধিকার ;কথা বলার অধিকার
নিরাপদে চলার,বেঁচে থাকার অধিকার।

একটা  মিছিল হবে রাজপথে আবার
যে মিছিলের অগ্রভাগে থাকবে
সালাম বরকত রফিক জব্বার
একটা  মিছিল হবে রাজপথে আবার।

এ মিছিল নয় কোন ব্যক্তিস্বার্থের পয়গাম 
এ মিছিল মানুষের অধিকারের সংগ্রাম।
আকাশ বাতাস প্রকম্পিত স্লোগানে 
পিচ ঢালা পথ হবে রঞ্জিত শহীদের লালে
একটা মিছিল হবে রাজপথে আবার
বায়ান্নর চেতনা ফিরে আসবে বারবার।

সেই মিছিল ছড়িয়ে যাবে সবখানে
ছড়িয়ে যাবে মাঠে ঘাটে বন্দরে
নারী পুরুষ মুখরিত স্লোগানে
ছড়িয়ে যাবে টিভি মিডিয়া ফেসবুকে।
আকাশের নক্ষত্রগুলো অবাক চেয়ে রইবে
বেদনার রং মুছে দক্ষিণা মলয় বইবে
নিশীথের আঁধার ভেদি ফুটিয়ে স্বর্ণকমল
আসবে সুদিন দেশ হাসবে ঝলমল।

পূর্ব দিগন্তে উঠবে রক্তিম রবি
গ্লানি ভুলে আঁকবে লাল সবুজের ছবি।

ফাগুনের দুপুর

ফাগুনের আগুনে উদাস দুপুর
মেঘের ফাঁকে সোনালী রোদ্দুর
বাসন্তী শাড়ীতে সেজেছে আমের মুকুল
ঝরা পাতার বেদনা মুছে ফুটেছে ফুল।
নির্জন উপত্যকায় সখি আর সখা
একদিকে পাহাড় সবুজে ঘেরা
অন্য দিকে নীল সরোবর বয়ে চলে
দূরে দিগন্ত ছুঁয়ে আকাশ গেছে মিলে।
সরস্বতীর বন্দনায় সেজেছ রঙ্গিন সাজ
প্রনয়ের অনলে পুড়ে নিঃশেষ লাজ।
শিমুলের বনে লেগেছে হাওয়া
মাতাল করে এই কাছে পাওয়া।
কালোপাখিটির কুহু কুহু গান
কেড়ে নেয় বাউল মন ভরে যায় প্রাণ।

ধূসর গোধূলি

ভুলের বনে ফুল ফুটাতে চেয়েছিলাম
ভুলের আঁধারে আমি হারিয়ে গেলাম
ভুল করে ছিলাম আমি তোমায় ভালোবেসে
এখন আমার দিন রজনী কাটে কেঁদে কেঁদে।
বুকের জমানো ব্যথা গুমরে কাঁদে
আঁখি জলে ভেসে যায় ঝর্ণা হয়ে।
ভুলের বালুচরে বেঁধে ছিলাম বাসা
অচেনা মরুর ঝড়ে ভেঙ্গে দিল আশা
কেন যে এমন হলো কেউ জানে না
হৃদয়ের বোবা ব্যথা কেউ দেখে না।
স্বপ্ন চারিণী হয়ে দেখালে স্বপন
ভেবে ছিলাম তুমি আমার কতনা আপন
মরিচীকা হয়ে গেল ভালোবাসা নীড়
চারিদিকে শুধু আমার দুরাশার ভীড়
বিষাদে ভরে যায় ধূসর গোধূলি
নীলাভ মেঘে ঢেকে দিল আকাশ সোনালী।

অনুভবে তুমি

তুমি সূর্যোদয়ের ভোরের আলো
তোমায় বড্ডবেশি বাসিভালো
ঘাসের ডগায় শিশিরের স্নানে
স্নিগ্ধ গোলাপ তুমি ভেজা কেশে।
তোমার চোখে স্বপ্ন এঁকে শুরু হয় দিন
কল্পলোকে ভাসাই সাম্পান কূল হীন
কেটে যায় বেলা নিঃসঙ্গ দুপুর
বিকেলটা থাকে বেদনায় ভরপুর।
দূর দিগন্তে অন্ধকার নিয়ে আসে সন্ধ্যা
তুমি হীনা শূন্য গৃহ একেবারে বন্ধা
নিশুতিরাতে রাতজাগা পাখি ডাকে বনে
জেগে কাটাই নিশি কাঁদি একা মনে।
এমনি করে কেটে যায় দিবানিশি
দূর নক্ষত্রের মত তোমায় ভালোবাসি
না পাওয়া প্রেম বেঁচে আছে অনুভবে
গড়েছে মহল এক হৃদয়ের বন্দরে।

বেশ তো আছি

বেশ তো আছি নিজেকে নিয়ে
একাকিত্বের মাঝে খুঁজে পাই নিঃসঙ্গ আকাশ
বেদনায় কেটেছে কত রাত
একা শুধু একা!
চাঁদ একাই ঘুরে পৃথিবী ঘিরে
এইতো মাটির প্রতি ভালোবাসার টান।
বৃষ্টির সাথে দোসর হয়ে কাঁদি একা
কাউকে কান্নার দোসর বানাইনি।
অশ্বত্থ গাছটি একাই দাড়িয়ে আছে
অবজ্ঞা অবহেলার শতবর্ষ পিছে ফেলে
অশ্বত্থের কাছে বাঁচতে শিখেছি
একা শুধু একা!
আগ্নেয়গিরি জ্বলে একা
নিজেকে পুড়িয়ে শুদ্ধ করে ধরা।
আগ্নেয়গিরির কাছে জ্বলতে শিখেছি
হৃদয় টাকে শূন্য করেছি পুড়ে
নেই কারও বাস হেথা।
বিষন্ন আকাশে একাই উড়ে চলে মেঘ
সন্ন্যাসী মনপাপিয়া উড়ে বেড়ায়
একা শুধু  একা!
বেশ তো আছি নিজেকে নিয়ে
সব ভালোবাসা শ্মশানের চিতায় ঢেলে।

দেখা হবে দু’জনায়?

অজান্তে উঁকি দিয়ে যায় কত কথা
স্মৃতিরা মেলে মায়াবী পাখনা
যে কথাটি মনে রেখেছি জমিয়ে
শুনবে কি তুমি নিশীথে গোপনে?
হৃদয়ের ভাঁজে ভাঁজে লিখেছি কবিতা
নয়নের জলরঙে তোমার ছবি আঁকা
নীল ময়ূরীর পেখন মেলা নৃত্য খেলা
দুলবো দু’জন অরন্যের ঝুলনা।
মিলবো দুজন বাধভাঙ্গা মোহনায়
যেখানে নদী অবাধে বয়ে যায়
পাল তুলে নৌকা চলে অজানায়
হাল ভেঙে নাবিক পথ হারায়।
শূন্যতায় ভাসে বিবাগীর সুর
ছুঁয়ে যায়, নিয়ে যায় বহু দূর।
হৃদয়ের দগ্ধ ব্যথা জেগে রয়
অন্ধকারে লক্ষী-প্যাঁচা পাহারায়।
বেলা বয়ে গেল প্রতীক্ষায়
গোধূলির পরে হবে দেখা দু’জনায়?

অনিবার প্রেম

(বাংলা সনেট)

যে ডালে ঘুঘুর বাসা সে ডালেই সাপ
যে নিগমে লীলা নৃত্য সে পথেই পাপ
যতনে গাঁথা কুসুম হার হলো বাসি
যারে পরিলে গলে এতটা ভালোবাসি।
কত জন হলো সাথী জীবনের পথে
বিদায় বেলায় কেউ রইল না সাথে!
জমালে কতধন করে পুকুর চুরি
কাফনের থাকলে পকেট নিতে ভরি।
শূন্য হাতে যেতে হল নিয়ে শূন্য খাঁচা
অসার হলো সব এই ভুবনে  বাঁচা।
আনন্দ কাননে মন যদি যেতে চাও
সর্বস্ব ত্যাগ করে প্রভুর কাছে যাও
জীবের হক মিটিয়ে লেনাদেনা চুকে
এক স্রষ্টার প্রেম লালন কর বুকে।