এম. হুমায়ূন কবির এর সকল পোস্ট

এম. হুমায়ূন কবির সম্পর্কে

কবিতা প্রেমি। কবিতা পড়তে এবং লিখতে ভালোলাগে। জন্ম:৩০জুন ১৯৮২, নাটোর জেলায় অন্তর্গত বড়াইগ্রাম উপজেলার খিদিরপুর গ্রামে। পড়াশোনা: এস এস সি-নিশ্চিন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়, এইচ এস সি & স্নাতক - বড়াই গ্রাম ডিগ্রী কলেজ, নাটোর। স্নাতকোত্তর-এডওয়ার্ড গভঃ কলেজ, পাবনা। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ পোড়া গোধূলি।

কালার বাঁশি

(বাংলা সনেট)
গগনেতে সন্ধ্যাতারা মিটিমিটি জ্বলে
ওপারে মেঘের ভেলা পাল তুলে চলে
দিগন্ত ছুঁয়ে যায় হেমন্তের শিশির
আকাশ জুড়ে কতই রঙের আবীর।
আধফালি চাঁদ যেন হেসে কুটি কুটি
বাগিচার গন্ধপুষ্প সুবাসিত ফুটি
নিশিজাগা পাখিরা গাইছে সুরে সুরে
হরিল হিয়া, বাজিল কার বাঁশি দূরে?

বসে কালা বৃন্দাবনে যমুনার বাঁকে
বাজায় বাঁশি আমার নাম ধরে ডাকে
কুলমান হারা করেছে যাদুর বাঁশি
ছল করে কালা পড়ালো প্রেমের ফাঁসি।
যাও গো সখি বল তারে সে যেন আসে
ময়ূরী সাজে প্রেয়সী রাধা আছে বসে।

অব্যক্ত কাব্য

বুকটা যেন বাক্যের কারাগার
কত কথা বন্দী হেথা
হয়নি বলা সে ব্যথা
বয়ে চলছে কষ্টের পারাবার।
আঁখি তুলে দেখলে না
মনের ভাষা বুঝলে না
বিষ বৃক্ষের মত সয়ে গেলাম
আশার দুয়ারে কিছু না পেলাম!
শ্রাবণের আকাশ দুটি আঁখি
জেগে কাটায় প্রতীক্ষার রাতি
পাহাড়ের কান্না ঝর্ণা হয়ে বয়
সাগরের মোহনায় মিশে রয়।
আগ্নেয়গিরি সুপ্ত এ বুকে
যায় চলে দিন ধুঁকে ধুঁকে
আসবে কি সেই আলোর প্রভাত?
তিমির রজনীর হবে নিপাত।

পাপের পতন

যুগে যুগে কত শিমার খেলেছে রক্ত হলি
ক্ষমতার জোরে কতজনকে দিয়েছে বলি!
ভয়-ভীতি, আতংক ছড়িয়ে হয়েছে বর্বর;
নিজেকে ভেবেছে মহাশক্তিধর আকবর।

পাপের ধনে গড়েছে মহল
শূন্য গৃহ  সময়ের অতল
নিপিড়ীত হৃদয়ের আর্তক্রন্দন
কেঁদেছে আকাশ কেঁদেছে পবন।
সময়ের হাওয়া বদলে যায়
অত্যাচারী হলো অসহায়
পাপের পতন হয়রে নিশ্চয়
যুগে যুগে হয়েছে পূণ্যের জয়।
অট্টহাসি হেসেছে জল্লাদ
শরাবে মত্ত আনন্দে আহলাদ
ক্ষনিকের পৃথিবী নয় অনন্ত
সাঙ্গ হয় জীবনের দুরন্ত।

অভিসার

ধূসর বিকেলে ধুলিমাখা মেঠোপথে
হাত ধরে হারিয়ে যাবো দূরে
অজানা কোনো গায়ে যাবো দু'জনে
পাখিরা হারায় যেমন নীল গগনে।

কত রাত আমি নির্ঘুম জেগেছি
আঁখি জলে তোমার ছবি এঁকেছি!
শয়নে ভেবেছি স্বপনে পেয়েছি
নিশীথের জাগরণে তোমায় হারিয়েছি।

হৃদয়ের ভাঁজে ভাঁজে লিখেছি কবিতা
নয়নের জলরঙে তোমার ছবি আঁকা
নীল ময়ূরীর পেখম মেলা নৃত্য খেলা
দুলবো দু’জন অরন্যের ঝুলনা।

যে কথাটি মনে রেখেছি জমিয়ে
শুনবে কি তুমি নিশীথে গোপনে?
ছুঁয়ে যাবে হৃদয়ের নীল বন্দরে
প্রণয়ের লেনাদেনা গোপন অভিসারে।

দুঃখ বিলাস

কষ্টরা পাখা মেলে আকাশের নীলে
বেদনার রংধনু রয় নিস্তব্ধ চাঁদ ঘিরে!
শরৎ রাতের ঝরা জ্যোৎস্না ;
পোড়া মনে এ ব্যথা সয় না।
মেঘের ফাঁকে আলোছায়ার খেলা
ভুলে যেতে চাইলেই ভোলা যায় না।
সবুজ মাঠে স্নিগ্ধ অনিলের ঢেউ
কষ্টরা ছাড়া আজ পাশে নেই কেউ!
ব্যথা নিরাশা শূন্য অন্ধকারে ;
জোনাকিরা সাথী হয়ে জাগে নিশীথে।
সময়ের ঝরাপাতা হলো অভিশপ্ত
না বলা কত কথা রয়ে যায় সুপ্ত
লুণ্ঠিত হৃদয়ের দুঃখবিলাস
শূন্যে খুঁজে আদি অভিলাষ।

বিলাসিনী

হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ঝরে ঝর্ণা হয়ে
স্মৃতির নদী হারায় কোন সাগরে;
দেখেছি চোখের কোনে মুক্ত বারি
তুমি তো সুখে নেই জেনেছি আমি!
কোন জ্যৈষ্ঠের ঝরে ভেঙ্গেছে মন?
জীবনের বৈকাল বেলায় ক্লান্ত এখন।
একমুঠো নতুন স্বপ্ন গড়তে
ছুঁয়ে ছিলে মেঘ আকাশের নীলে।
বকুলের গাঁথা মালা পড়ালে যারে
সে এখন কুঞ্জ সাজায় অন্য বাসরে।
সেদিন তুমিও হয়েছিলে পাষাণী
শরতের রাতে হলে কার ঘরণী?
কাটাবে সুখে দিন হয়ে বিলাসিনী;
আজ কেন আঁখি জলে বিরহিণী?
শ্রাবণের বারিধারা এখন তোমার সাথী
স্মৃতির জোনাকির সাথে জাগো রাতি।

শূন্যে একা

শূন্য শাহারায় জেগে কাটাই তিমির রজনী
কাঠফাটা রোদে চিলের মত গগনে উড়ি
একা শুধু একা!
দিব্যচোখে খুঁজি শূন্য অন্ধকারে
ভাই-বন্ধু-পুত্র স্বজন ত্যাজি
তোমারই সন্ধান করি
আছো তুমি কত দূরে দেখতে নাহি পারি।
দেখা দাও প্রভু নিরাকার
তোমার করুণা মাঙি;
এই ভবসাগরে ভাসি অকুলে
ডুবু ডুবু তরী মোর ভীড়াও কিনারে।
তোমার প্রেমানলে পোড়া মন
মন্দ বলে আপনজন
বাউল মনের জ্বালা বুঝবে কোন জনা
অন্তরের আগ্নেয়গিরি শীতল কেন হয় না?
তুমি যেথা বসত কর
তারে কি মনে লয় না?
আমার মাটির দেহে সহে না
দয়াল তুমি দেখা কেন দাওনা?

স্মৃতির জীর্ণ পাতা

আজও স্মৃতির জীর্ণ এক পাতায়
মনে পড়ে লেখা সব নীল বেদনায়!
শরতের কাশফুলের নরম পরশ
রাতজাগা জ্যোৎস্না ঢালা আকাশ
হংসমিথুনের মতো সমুদ্র স্নান
মুছে যায় নি, হয়নি তো ম্লান।
বুনো শালিকের নীড়ে ফেরার পিয়াস
গোধূলির রঙ মুছে ফুরিয়ে যায় আশ
হৃদয়ের দূর আকাশে সন্ধ্যা তাঁরা
এনেছো নয়নে শ্রাবণের বারিধারা।
ফাগুনের ফুল ফুটালে মনে
কেড়ে নিলে প্রাণ কোকিলের গানে
নিশীথের অন্ধকারে হারিয়ে গেলে
যাতনা দিয়ে অবশেষে কি সুখ পেলে?
চৈত্রের তাপে পোড়া এ অন্তর
সুখে থেকো, শুভকামনা নিরন্তর।

চিঠি নয় কবিতা

বহুদিন পরে লিখেছ চিঠিতে অভিমানে
আমি যেন না লিখি চিঠি তোমাকে
তাই লিখে যাই সব কথা কবিতা,গানে
যে বাঁশরির সুর বেজেছে মোর প্রাণে।
আমার নয়নে তোমার স্বপন
তোমার বাসনা জুড়ে অন্য স্বজন
তোমার চাহনিতে হৃদয়ে কাঁপন
হলে নাহি এ জীবনে আপন।
তাই লিখি আজ বিরহের কবিতা
লাগবে না জানি তোমার ভালো তা
ফুল ফুটে ঝরে যায় ধুলায়-নহে অভিশাপ
কারোর কবরীতে ঝরা কি তার পাপ?
কন্টক ভুলে নিয়ে যাও কমল
তোমায় অঞ্জলি দিয়েই সুখী শতদল
পথের মানুষ আমি পথে পথেই বাস
পোড়াবে না তোমায় আমার দীর্ঘ শ্বাস
চলে যাব যে দিন দূর নক্ষত্রের দেশে
দুফোঁটা অশ্রু দর্পন দিও অবশেষে।
খুশিতে সেদিন উল্কাফুল হয়ে
ঝরে পড়ব তোমার ময়ুর পেখম কেশে
চাইনা তোমায় পেয়েছিগো পেয়েছি হেথা
রক্তনদী বুকে ঝর্ণার মত বয়ে চলে যেথা।

ছুঁতে পারিনি

আকাশের গায়ে কত নীলের মেলা
পাল তুলে উড়ে চলে মেঘের ভেলা
ছোঁয়া হয়নি নীল,ছোঁয়া হয়নি মেঘ
ছুঁয়েছি শ্রাবণ ছুঁয়েছি বৃষ্টি
বর্ষার হৃদয় ছুঁয়ে করেছি বৃষ্টিস্নান
করিনি সাকির হাতে শরাব পান।
হৃদয়ে হৃদয়ে প্রনয় মাখামাখি
ক্লান্ত প্রতীক্ষায় তৃষিত আঁখি
নয়নে নয়ন ছুঁয়ে যায় হৃদয়ে হৃদয়
ছুঁয়ে দেখা হয় নি তোমায়।
আমি তোমায় আজও ছুঁতে পারিনি
তুমিও কোন দিন আমায় ছুঁয়ে দেখোনি।
শূন্য দিগন্তের ওপারে সব নীল
দূর আকাশে হারিয়ে যায় চিল
ঝরা পালকেরা ছুঁয়ে যায় শিশির
আমি ছুঁতে পারিনি একান্তে নিবিড়।
আলোকবর্ষ মাইল দূরে নক্ষত্রের বাস
রাতের আকাশে সাজানো পাশাপাশি
একে অপরের ছোঁয়ার অভিলাষ
ছুঁয়ে দেখা হয় নি কোনও দিন বা নিশি।
তোমার আমার পথ রেললাইনের মত
পাশাপাশি তবু ছুঁতে পারিনি চেষ্টা শত।

ইচ্ছে বিলীন

কবি নীরব, নেই বর্ণ গাঁথা কথা
তবে কি সব কথা শেষ?
কথা শেষ হয় না
ইচ্ছে গুলোই নিঃশেষ
যে কথা বলা হলো না
বুঝে নিও অবশেষ।

স্বপ্ন হারায় না
হারিয়ে যায় স্বপ্ন দেখার সাধ
ইচ্ছে নদী ছুটতে ছুটতে
বিলীন হয়ে যায় মরুতে
মন বলাকা মুক্ত আকাশে
উড়তে উড়তে ঠিকানা হারায়
ডানাভাঙা বিহগের ছটফট
বন্দী কোনো মায়াবী পাড়ায়।

ফাগুনের ছোঁয়ায় ফুল ফুটে
ফুলের ডাকে অলি আসে
সব দেখে নীরব কেন কবি
আঁকবে না কি নব ছবি?
গাঙচিলেরা উড়ে গেছে দূরে
তারই ছবি ভাসে স্নিগ্ধ আঁখি জুড়ে
সমুদ্রের শুভ্র পাথর আজ মলিন
ইচ্ছে গুলো হয়েছে বিলীন।

মায়ের কাছে চিঠি

মাগো,
শত কোটি পূজা তোমার চরণকমলে
জন্ম নিয়েছি তোমার মায়াময় কোলে।
কত যত্নে স্নেহে বুকে দিয়েছো মা ঠাঁই
ধূলির ধরায় কোথাও যে তা নাই।
ক্লোনাজিপাম খেয়েও যখন নিশীথ রাতে।
ঘুম আসেনা শুকনো আঁখি পাতে
চেয়ে রই দূর আকাশ পানে
স্মৃতির বেদনায় তোমার মুখখানি ভাসে।
আশার ছলনে ভুলে রইলাম দূরে
কি পেয়েছি কি পাইনি সে কথা পরে
তুমি কেমন আছো মা জানতে ইচ্ছে করে
এই পরবাসে তোমার কথা মনে পড়ে।
যে মাধবীলতার তলে বেঁধেছিনু ঘর
সে ছিল মায়াবী ভূবণ হয়ে গেল পর
তোমার ছেলে আজ হয়েছে সন্ন্যাসী
হতে পারিনি মা তোমার চরণদাসী।
ছোট্ট বেলায় কেউ দুঃখ দিলে মনে
তোমার কাছে জুড়াতাম প্রাণ কেঁদে
হাতুরির আঘাতে কাস্তে বানায় কামার
তেমনি আঘাতে হৃদয় ভেঙেছে আমার।
থাক এসব কথা শুনলে তুমি পাবে ব্যথা
তার চেয়ে ভালো তোমার কথা বলো
পারবে কি মা ক্ষমা করতে আমায়
ছিলাম অবাধ্য আজ বড় অসহায়।

শ্রাবণ রাত

শ্রাবণ রাতে বারিধারা ঝরে বাহিরে
ঘুম নেই জলে ছলছল আঁখি পাতে
নিশীথ স্বপনে হেরিলাম তব মুখ খানি
জাগরণে খুঁজে কোথাও পাইনি
আঁচলের গাঁথা মালা শুকালো তুমি হীন
হিয়া মাঝে সেই প্রেম হয়নি তো বিলীন।
স্মৃতির ছবি হৃদয়ের ভাঙ্গা আয়নায়
কাব্যের অন্তরা কবির কল্পনায়
বিরহের বৃষ্টি ঝরে মোহনায়
ভেসে যায় মন পাল ছেঁড়া নৌকায়।
তুমি তো পাথরে গড়া মূর্তির মতো
হৃদয়ে তোমার জমেছে কঙ্কর কতো
মরুউদ্যানে করেছি ফুলের চাষ
ফুটেনি ফুল পেয়েছি শুধুই দীর্ঘশ্বাস।

দহন

ধুপের আগুন যায় না দেখা থাকে শুধু ধোঁয়া
  গন্ধ নেই অন্তর পোড়ায় থাকে শুধু জ্বালা
    ধুপের আগুন লাগিয়ে দিলে এই মনে
সেই আগুন জ্বলছে নিশিদিন এই প্রাণে।
     বনে বনে দাবানল নাচে তালে তালে
     পুড়ে কত স্বপ্ন সবুজের ডালে ডালে
  আকাশের নক্ষত্রগুলো অবাক চেয়ে রয়
কোথাকার পাগলা হাওয়া উজান ধেয়ে বয়।
    দেবদাসের মত ঢালিনী শরাবের জল
প্রেমানল বুকে কত জ্বলতে পারিস জ্বল
  হেরিলাম পোড়া চোখে তোমার যত ছল
  সেই যাতনায় এই বুকে ফুটে রক্তকমল।
       আমি তো নির্বাক পৃথিবীর আবহ
       সয়ে যাই কোটি চৈত্রের দাবদাহ
  মরুর ধূসর অন্ধকার ধূলিঝড়ের উৎপাত
       জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত।
    শ্রাবণের মেঘগুলো ঝরে পরে কান্নায়
   পাহাড়ের বিরহ কবিতা দেখেছি ঝর্ণায়
তুমি তো দেখেছ জ্যোৎস্নার রং কত মধুময়
আমি দেখেছি কত বেদনায় ভরা শশীর ক্ষয়।

হৃদয়ের কথা

কত ব্যথা কত কথা বুকে এসে থেমে যায়
মুখ ফুটে বলা যায় না।
বলবো তোমায় নির্জন গোধূলির পরে
মুখোমুখি বসে কোনো এক কফি হাউজে।
শহর থেকে একটু দূরে
নরম ঘাসের উপর বসে মেঠোপথের ধারে
শঙ্খচিল উড়ে যাবে নীড়ে
নিস্তব্ধ সন্ধ্যা ঘিরে দিয়ে অস্ত যাবে সূর্য
চাঁদের জ্যোৎস্নায় দেখবো তোমার চাঁদ মুখ
তৃষিত হৃদয় জুড়িয়ে দিবে সুখ
হাত ছুঁয়ে বলবো সব
যত ব্যথা যত কথা কাব্য গাঁথা।
এলায়িত কেশে দিয়ে হাত
কাটিয়ে দেব বিদিশার রাত
শুনবে তুমি সব কথা হৃদয়ের সব ব্যথা
শেষ হবে অন্ধকার ফুরাবে না হৃদয়ের কথা