বসন্তদূত গান গায় কদম্ব ডালে
দ্বিভুজে জড়িয়ে বাঁধা প্রেমডোরে
দু’নয়নে এঁকে যায় স্বপ্নের পারাবার
ইন্দুপ্রভা ছুঁয়ে যায় নিলয়ের এপার ওপার।
আমি কতটা বোকা?
চারিদিকে স্বার্থপর বুদ্ধিমানদের ভীড়
স্বপ্ন কুড়িয়ে এনেছিলাম
গাঁথব বলে ভালোবাসার নীড়।
ফণাধর লুকিয়ে থাকে পুষ্প বনে
হিতৈষী নক্ষত্রগুলো ছেড়ে যায় একে একে
মেঘের কান্নার মত ঝরে পরাতেই সুখ
ব্যথা ভরা চোখে শুধু ভেসে উঠে সেই মুখ।
এম. হুমায়ূন কবির এর সকল পোস্ট
প্রতারিণী
মুখে ছিল খলিশা ফুলের মধু
চোখে ছিল মায়াবী যাদু
অন্তর ভরা ছিল হেমলক
জীবনটা করে গেল নরক
শরীরের ঘ্রাণ গেছে নিয়ে
হৃদয়ের গহীনে ছুঁয়ে দিয়ে
ব্যাকুল করে মিছে ভাবনা
ছিল না প্রেম ছিল কামনা।
মন নিয়ে খেলেছে নিঠুর খেলা
এখন অবেলায় কেন অবহেলা
গোধূলির পরে ডুবে যায় বেলা
আলোর আশায় মোম জ্বালা।
নিভে গেল মোমের সলতে
নেমে এলো তিমির বাটীতে
শূন্য ঘরে একা রাত কাটে
দুঃস্বপনের ঘুম অন্ধকারে।
কমল কাঁটা
তুমি এলে মোর কমল বনে
কমল নিলে কাঁটা গুলো রেখে
কন্টকে মোর হৃদয় গাঙে
রক্ত কমল ফুটে।
কমল যদি নিয়ে গেলে কাঁটা কেন ফেলে
স্বপ্ন গুলো হারিয়ে গেছে ভালোবাসা টুটে।
বউকথা কও আর ডাকে না বকুল শাখে
মন পুড়েছে তোমার আগুন আঁচে
কাঁদে বেশি সে-ই বিচ্ছেদের কালে
যে জন যত বেশি ভালোবাসে
কাঁদনি তুমি ভেসে আঁখি জলে
ছিল না কি প্রেম তব হিয়া তলে।
তোমার আঙিনায় সুরের ঝংকার
আমার উঠোন জুড়ে শুধু হাহাকার
বাজপাখির মতো বদলে যেতে পারিনি
নখ ঠোঁট ডানা ক্ষিপ্রতায় গরবিনী।
পোশাক বদল করার মত বদলে নিয়ে মন
কতো সুখে আছে তোমার নতুন জীবন
সুখের পায়রা গুলি উড়ে গেছে দূর দিগন্তে
ছেড়ে গেছে ওরা ভুল ভাবনার প্রান্তে।
আশা-হারা ভাষা-হারা ভালোবাসার হাটে
কেউ দেখেনি পথিকের দিন কেমনে কাটে।
বিশ্বাসে ভালোবাসা
ভালোবাসা ভালোলাগা এক সাথে গাঁথা
বিশ্বাসে টিকে থাকে ভালোবাসার বাসা
বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে ভালোবাসা থাকে না
থাকে শুধু মেনে নেয়া জৈবিক কামনা
যারে ভালোবাসি তারে ভালো লাগে না
মিছে মায়ায় সন্ন্যাসীও হতে পারি না।
যত পূজা পূজো তারে তার মন ভরে না
পূজা পেয়ে অকৃতজ্ঞ প্রতিদান দেয় না
এরা লোভী এরা পাপী এরা কিছু বুঝে না
স্বার্থপর স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছু খুঁজে না।
জোয়ারের পানিতে বালির বাঁধ টিকে না
বালুচরে বাঁধা বাসা ঝড় এলে থাকে না
ভালোবাসার মন নিয়ে খেল খেলো না
এই মন ভেঙ্গে গেলে জোড়া কভু লাগে না
প্রিয় জন্মভূমি
কূল ভেঙ্গে যমুনায় জাগে চর
কাশ ফুলে শুভ্র ঢেউয়ের ঝড়
নক্ষত্রের আলো জ্বলে নিশিতে
জুঁই চামেলি ভিজে শিশিরে।
নদীর স্রোত সাগরে তলায়
জীবনের ক্ষণ মহাকালে হারায়
গগনচুম্বী দালান ধ্বসে যায়
উঠে রবি নতুন সভ্যতায়।
তোমার অশ্বত্থের পাতার বাতাস
জুড়িয়ে দেয় ক্লান্ত পথিকের পিয়াস
দিয়েছো কত স্নেহ কত অনুদান
কিছুই দিতে পারিনি তার প্রতিদান
একদিন আর থাকব না আমি
তুমি থেকো চিরদিন প্রিয় জন্ম ভূমি
তোমার আকাশে উঠে জ্যোৎস্না
যত দেখি যেন সাধ মিটে না।
ঘুমিয়ে যাবো চিরন্তন সুখে
ঠাই দিও মা তোমার বুকে
আমার ১০০ ব্রিলিয়ন দেহকোষ
তোমাতে মিশে হয়ে যাবে নিঃশেষ।
অভীক বগা
সুখে-দুঃখে মায়া ভাগে
ছিল বগা নির্বিবাদের নীড়ে
অমূল্য নিধি লাভের সাধে
ধরা পড়ে শিকারির ফাঁদে
উড়ো ঝড়ে ভেঙে যায় বাসা
নোঙ্গর ছিঁড়ে তরণীর ভাসা
সাথী হারা বগীর শূন্যগৃহ
হারিয়ে গেছে বাঁচার মোহ
অভিশপ্ত এই বেঁচে থাকা
হয় না কেন ধরিত্রী দ্বিধা
এক পাপের সাজা দুজন
ব্যথার অনলে পুড়ে সুজন
চতুর বগার হলো মরণ
কেউ দেখেনি বগীর কাঁদন।
ফিরে যাও
প্রেমের অনলে পোড়া দগদগে ক্ষত
জ্বলন্ত হৃদয়ে শূন্য হাহাকার
তুমি এলে এক পশরা বৃষ্টি নিয়ে
আমার কি আছে তোমাকে দেবার?
খাঁচা ভেঙ্গে পাখি গিয়েছে উড়ে
ভাঙ্গা খাঁচায় থাকবে কেমন করে
চারিদিকে শুধু ধুধু মরীচিকা
আলো নয় আলেয়ার খেলা
প্রেমাহত পথিকের নিরাশার নীড়
নিশি এলে খেলা করে দুঃস্বপ্নের ভীড়।
হেথা তুমি জাগাতে ঝরা ফুলের ঘুম
মরুভূমিতে ফলাতে চাও শস্যের ধুম
তোমার কামনা হিমবিলাস ফাগুন
রূপালি জোছনা স্নানে শ্রান্ত প্রান
মৃত সভ্যতায় গড়তে প্রেমেরমহল
সকল প্রয়াস হলো আজ বিফল।
রিক্তহাতে ফিরে যাও ওগো প্রেয়সী
শূন্য বাগানে নিঃস্ব তব স্বপ্নের প্রেমী।
চিরচেনা
চিরচেনা
শহরের কোলাহলে কত লোকের ভীড়ে
শুধু একটি মুখ বারবার চোখে ভাসে
মনে হয় ছুটে চলে যাই অশরীরী হয়ে
দূর দিগন্তে স্বপ্নের সীমানা ছাড়িয়ে
আলতো পরশে তোমার চিবুক ছুঁয়ে
আল্পনা এঁকে দেই কপল জুড়ে।
পারিনা কারন আমি তো নই অশরীরী
আমি মানুষ রক্ত মাংসের শরীরী
তুমিও মানুষ তবে একটু আলাদা
তোমার স্বপ্ন, ভালোবাসা সবই আলাদা
তোমার আকাশেও মেঘের ভেলায়
জোছনার পালকি আসে নতুন প্রভায়
গোলাপের জলসায় শুভ্র জবার ভীড়ে
সবুজ ঘাসের উপর ভোরের শিশিরে
নির্জন গোধূলির পরে সন্ধ্যা বেলায়
আছো তুমি কবির কল্পনায়
রোজ নিশিতে ময়ুর পালঙ্ক সাজাই
জুঁই চামেলি মাধবী মালতী ফুলে
অষ্ট আঙ্গুল বাশের বাঁশি বাজাই
বাউল মনের উদাস সুরে।
কত কাল কত বেদনায় রইবো
হৃদয়ের রক্ত ক্ষরণ কত সইবো
গাঁয়ের বধু ছড়িয়ে মধু উঠোন আঙ্গিনায়
আবর্জনা ঝেড়ে মুছে ফেলে দেয়।
ময়লা কাপড় পোশাক যেমন
ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে যায় ধোয়া
তেমনিভাবে হৃদয়ের যত ব্যথা
সাবান দিয়ে যেত যদি ধোয়া
একটাই জীবন হতো আবার সুখ গাঁথা
ঘুচে যেতো জড়া, সূর্য স্নানে শুদ্ধ হতো ধরা।
ক্ষনিকের প্রশান্তি
ক্ষনিকের প্রশান্তি
(বাংলা সনেট)
পৃথিবীর পথেই হেঁটে ক্লান্ত পথিক
কোথাও খুঁজে পায়না ঠিকানার দিক
দিনের পর রাত ছুটে অসার প্রাণ
শান্তির বারতা নিয়ে এলো না অঘ্রাণ।
দূর দিগন্তে আকাশ মিশে গেছে নীলে
হতাশার কালোমেঘ অন্তরের তলে
ক্ষনিকের তরে এসো গো নদীর তটে
স্নিগ্ধ সমীরণে আঁকাবাকা বয়ে চলে।
মধুকরীরা খেলা করে কলমি ফুলে
বকের সারি উড়ে চলে সুদূর প্রান্তে।
বুকের বেদনা টুটে পুলকিত হতে
চলে এসো হে পথিক অরন্যউদ্যানে
হেথা সবুজের সমারোহ ফুলের হাসি
অন্তর জুড়িয়ে দেয় বিহগের বাঁশি।
(বাংলা সনেটের প্রবর্তক মাইকেল মধুসুদন দত্ত অনুসরণে)
আত্মগ্লানি
আকাশের সব নীল এনে
রাখিনু যার চোখে
বাতাসের যত সুর সেধে
গীতিকা রচিনু যার তরে।
ছলনায় ভুলিয়ে মোরে
সে কেন প্রতারনা হানে।
প্রেম অনল জ্বলে বুকে
হৃদয় পোড়া যায় না দেখা
অশ্রু ছল ছল আখিনীড়
মলিন মুখে কালো ছায়া।
ঘৃনা করি নিজেকে প্রচন্ড
হৃদয়টাকে উপড়ে ফেলি
হিংস্র নখের থাবায়
তবু যদি অনল নিভে যায়।
তোমার প্রতীক্ষায়
তোমার যাবার বেলায় চেয়ে দেখনি
এলোমেলো কলাপাতা গুলি
বাতাসের ভরে না না বলে কেপেছিল
শিমের আড়ালে দোয়েলটি কেঁদেছিল।
পৌষের আকাশে জমেছিল কালমেঘ
ঝরেছিল অশ্রুবারি ক’ফোটা
গ্রামের ছড়ানো ছিটানো বাড়িগুলোতে
নেমেছিল শুনশান নীরবতা
থমকে গেল উত্তরের হিমেল হাওয়া
কেউ মেনে নিতে পারে নি এ যাওয়া
মেঠোপথের দুর্বা পাপোষের শিশিরেরা
তোমার পদধুয়ে বলেছিল চলে যেওনা।
তুমি চলে গেলে নিয়ে অভিমান
শুনতে চাওনি এই হৃদয়ের টান।
আশাহত পাখির নিঃস্বপ্ন ঘুম
কেড়ে নিয়ে গেল সব সুখের ধুম।
পথপানে চেয়ে রয় ক্লান্ত এ হৃদয়
ভুল ভেঙ্গে যদি ফিরে আসা হয়
বসন্ত আসে বনে কত ফুল ফুটে
মনের আকাশ সাজে কত রঙ্গে
কত ফাল্গুনী রাত বয়ে চলে যায়
কেটে যায় বেলা তোমার ভাবনায়।
তোমার শহরে আজ আলো ঝলমল
চাঁদ তাঁরাদের প্রমোদ হাসিতে টলমল
মম গগনে থইথই করে গাঢ় অন্ধকার
নিস্তব্ধত রাত পিচঢালা পথ নির্বিকার
হুতুমপেঁচাটা সারা রাত পাহারায়
জেগে রয় শুধু তোমার প্রতীক্ষায়।
প্রৌঢ় বেলার কাব্য
বাতের ব্যথাটা বেড়েই চলছে অহর্নিশ
নিরাময়ে লাগানো হচ্ছে মলম মালিশ
কোমরের জোড়া হাঁটুর গিরান
যেন ঘুন পোকাদের প্রমোদউদ্যান
জমিদারির পাগলা কারাগার
অত্যাচারের চাবুকাঘাতে জর্জার
বিছানার চাদর জুড়ে মালিশের গন্ধ
কিছুতেই হচ্ছে না এ অনাচার বন্ধ।
জীবনের বৈকাল বেলায় মনে পড়ে যায়
কত কথা কত স্মৃতি বেদনায়
ভোরের শিশিরের মতোই ফুরায়
সোনালী দিনের সুখের মেলায়।
তখন বিছানার চাদরে ছিল সুবাস সুগন্ধির
কিছু দিন যেতে না যেতেই বড় হলো সংসার
বাচ্চাদের প্রস্রাবের উৎকট গন্ধে ভরপুর
ছিলো সেই সুরভিত বিছানার চাদর।
রোদ্দুরে চিলের ডানার কুয়াশা শুকায়
কত দ্রুত হারিয়ে গেল মধ্যাহ্ন হায়
বাচ্চারা এখন আর এখানে থাকে না
বড় হয়েছে, ওরা তো এখন আর বাচ্চা না।
নিঃসঙ্গ অবেলায় শুধু ভয়
জীবনের সন্ধ্যা বেশি দূরে নয়
গোধূলির পরে ডুবে যায় বেলা
নীড়ে ফিরে পাখি সাঙ্গ করে খেলা
সিথানে পৈথানে জ্বলবে আগরবাতি
কেমনে থাকিব ঘরে নামবে যখন রাতি।
স্বপ্নচারিণী
ঘুমঘোরে এলে ওগো স্বপ্নচারিনী
মনে পরে তোমায় ভুলতে পারিনি
খুঁজেছি তোমায় মেঘের ফাঁকে
দেখেছি সন্ধ্যা তাঁরায় লুকিয়ে।
বসন্ত বাতাসে মাধবী মালতী
যেমন করে সৌরভ ছড়ায়
নিবিড় বনের শ্যামল ছায়ায়
পেয়েছি তোমায় শ্রাবণ ধারায়।
অধরের কোনে লাজুক আভা
কপোলের টোল যে মনোলোভা
চৈত্রের ক্ষড় নিঃশ্বাসে পোড়ালে
হরিণীর মতো চেরা চোখ তুলে।
পেয়েছি তোমায় পাশাপাশি বসে
খড় কুটা দিয়ে গড়া পাখির নীড়ে
নীল ময়ূরীর বেদনার গন্ধ মুছে
ঝাউ বনে কুয়াশার অন্ধকারে।