ড্যান্ডি লায়নের পাপড়ি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়
কদমের রেণু ঘাসের ওপর ঝরে ঝরে পড়ে
রোদেলা আকাশে মেঘদের নৌকো ভেসে চলে
পাহাড়ের মাথায় সবুজের আঁকিবুঁকি
তেরছা আলো ঝুঁকে আছে দোরের আনাগোনায়
দূরে একটি ফড়িং পাতার চৌখুপিতে উঁকিঝুঁকি মারে
বনশালিক কিছু মাথা নাড়িয়ে বচসায় রত
ছবির মত বাড়িগুলি নদীর ওপারে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে
জলে কিছু নৌকো অল্প হাওয়ায় ঢেউয়ের দোলায়
কচিপাতার ফাঁক দিয়ে উড়ে যায় প্রজাপতিদের পাখা।
ইন্দ্রাণী সরকার এর সকল পোস্ট
বৈরাগী ঘুঙুর
বিগতযৌবনা পৃথিবীকে সোমত্ত সকাল
কুর্ণিশ জানিয়ে বিদায় নেয়।
মধ্যবয়স্ক সূর্য্য এসে পৃথিবীর হাত ধরে
সুন্দরী বিকেল আলোছায়ায় নৃত্যরত
যুবতী রাত অপেক্ষায় থাকে সকালের
বৈরাগী ঘুঙুর শোনার অপেক্ষায়।
আশা
খুবই একঘেঁয়ে কিছু জীবনে আনন্দ এসে যাক
যেখানে স্বপ্ন মানে শৌখিনতা, রোমান্টিকতা নয়।
দেখো ওই সোনালী আলোয় ভরা আকাশ
মুক্তির শপথ নিয়ে উড়ে যাওয়া পাণ্ডুলিপি
বাঁশপাতার ফাঁকে কিছু মেঘলা বাতাস
অপূর্ব সব রমণীরা অপরূপ বেশে সজ্জিতা
প্রাসাদের খিলানে খিলানে ফুলের তোড়া
নদীর ধারে ফেরিবোটের ভীড়, একরাশ মানুষ
খেয়ে পারাপারে ভেসে আসে অজস্র গানের সুর
শিশুদের কলতান, প্রেমিক প্রেমিকাদের হাসি।
সন্ধ্যামালতী
সন্ধ্যা হয়ে এল তবু সন্ধ্যা এল না
সাঁঝের প্রদীপখানি আজ জ্বলল না
পথের শেষ নেই তবু পথ ফুরায়
আট দশকের সেই সুর বুঝি বা স্তব্ধ
তাঁর মধুকণ্ঠী স্বর আর বাজবে না
সন্ধ্যা রোজ ফিরে ফিরে আসবে
কিন্তু সন্ধ্যামালতী আর ফুটবে না
না ফেরার দেশে চলে গেছে যে
তাকে কি আর ফেরানো যায় ?
এমনি কিছু কথা, কিছু মধুর সুর
সে তবু সবার হৃদয়ে রেখে যায়,
চতুর্দশীর চাঁদে ভাসে তার ছায়া।।
অনুবাদ কবিতা : আহ্বান
ওগো আমার সুন্দর তুমি বড় কম আসো !
কত দিন কত রাত তুমি আমায়
একা ফেলে চলে যাও।
তুমি চলে যাবার পর আমার
দিন আর রাতগুলো শুধু কষ্টেই কাটে।
কেমন করে আমি তোমায়
আবার ফিরে পাবো ?
তুমি কেমন করে সব কষ্ট
ঝেড়ে ফেলে দাও।
মিথ্যে তুমি ! যারা তোমায় চায় না
তুমি শুধু তাদেরই মনে রাখো।
যেমন করে একটি সরীসৃপ কাঁপা কাঁপা
পাতার ছায়ার রূপ ধরে,
তুমি তেমনি সব কিছুতে মিলেমিশে
সব দুঃখ ঝেড়ে ফেলে দাও।
একটু দুঃখের নিঃশ্বাসও তোমায়
স্পর্শ করে না বা তুমি শোনোও না।
আমার হতাশার গানটা আবার আনন্দে বেঁধে নি,
যাতে তুমি আবার ফিরে আসো।
তুমি যা যা ভালোবাসো আমিও ত্’ তাই ভালোবাসি।
সুন্দর সবুজ পৃথিবী, তারাখচিত আকাশ,
শরতের বিকেল আর সোনালী কুয়াশায় ভরা সকাল।
আমি তুষার ভালোবাসি আর তার হিরন্ময় দ্যুতি।
আমি ঢেউ, বাতাস, ঝড় সমস্ত প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য্য খুব ভালোবাসি।
আমি শান্ত একাকীত্ব ভালোবাসি,
আর তার সাথে জড়িত নীরবতা, জ্ঞান; সব !
তোমার আমার মাঝে তবে কি তফাৎ ?
আমি যা খুঁজি তা তোমাতেই পাই।
আমি ভালোবাসাকে ভালোবাসি —
যদিও তার ডানা আছে আর আলোর বেগে উড়ে যায়,
কিন্তু সবার চেয়ে ওগো সুন্দর আমি তোমায় ভালোবাসি —-
তুমি আমার ভালোবাসা ও আমার জীবন !
ফিরে এস আরও একবার তুমি আমার হৃদয়ে স্থান নাও।।
.
(My translation in Bengali from
“Invocation” by P. B. Shelley)
আহ্বান
পি. বী. শেলী
(অনুবাদ – ইন্দ্রাণী সরকার)
অন্তর্লীনা মেঘকন্যা
অন্তর্লীনা মেঘকন্যা
স্বপ্নের তোরণ পেরিয়ে
নির্জনতার পাড়ে একা
আঙুলে আঙ্গুল জড়িয়ে
তোমার কানে কানে বলা যে চুপকথা
স্মৃতির আদলে শুনে নিও কোনোদিন
চোখের কাজলে লেখা থাকে নিঃশ্চুপ প্রেম
তোমার শান্ত চোখের পাতায় রাত নেমে আসে
চাঁদের নরম আলোয় ভেসে যায় মুখ
আমি চুপ কথা দিয়ে ভালোবাসা এঁকে রাখি
তোমার খোলা বুকে
তারাভরা আকাশের নীচে
ভেসে যায় জ্যোৎস্নার অবসাদ
ভাবনার স্বরলিপি প্রজাপতির পাখায়
তোমার ঠোঁট ছুঁয়ে যায়
রাতভোর তোমায় দেখি অবাক চাওয়ায়
মন্ত্রমুগ্ধ আমি রঙের বন্যা ছড়িয়ে পড়ে
মেপল পাতা কুড়োনোর ছলে
কুড়িয়ে নিই হাজার স্বপ্ন ।
মায়াকাজল
কবে থেকে মায়ায় জড়িয়েছিস
তোর প্রথম প্রেম হলাম যেদিন জানলা বেয়ে
চুল খুলে দিলাম আর তুই সেই বেয়ে উঠে এলি
ঘুরে ঘুরে পায়ে পায়ে জড়ানো তোর কথা
ঝাপসা চোখে ছেড়ে যেতে যেতে ফের ফিরে আসা
সেই থেকে তোর মায়াবতী হলাম
অতসী ফুলের মত গায়ের রং দেখে তুই মুগ্ধ হস
তোর চোখে এঁকে দিই মায়াকাজল
যার কোল আঁচলে তুই ঘুমিয়ে পড়িস
বৃষ্টির আদলে ভরে যায় তোর হাতের পাতা
কাশফুলের হাসিতে ভরে যায় মুখ
বাসন্তী রঙে তোর উঠোন ভরে ওঠে।
অনুবাদ কবিতা: বসন্তকালে এক প্রার্থনা
বসন্তকালে এক প্রার্থনা
– রবার্ট ফ্রস্ট
আজ ফুলে ফুলে আমাদের আনন্দ দাও;
আর আগত ফসলের আগমনকে অনিশ্চিত করে রেখো না;
বসন্তের সমাবেশে আমাদেরও স্থান দাও।
আমাদের শুভ্র ফলের বাগানের সৌরভে আমোদিত করো,
সুখী মৌমাছিদের সাথে তাদের ঘূর্ণাবর্তে সামিল করো।
উড়ন্ত পাখিদের কলতানে আনন্দ দাও,
ধূমকেতুর তীক্ষ্ণ সুচের মত পতনের
ও বাতাসে একাকী ফুলের সাথে সখ্যতা করে দাও।
কারণ এটাই ভালোবাসা, অন্য কিছুই ভালোবাসা নয়,
যা কি না ঈশ্বরের জন্য সংরক্ষিত,
যা আমাদের অনুভবে জড়িয়ে নেয়।
.
My translation from “A Prayer in Spring” by Robert Frost (1915)
তুমি দেখে নিও
নীরবতার সরঞ্জাম ছেড়ে
তোমার কাছে এসেছি,
ফিরিয়ে দিও না
ভালোবাসা একই রেখো।
যে ভালোবাসায় কান্না ধোয়া জল
অমনি সাগরে গিয়ে মেশে,
এক পশলা বৃষ্টি হয়ে
সেই ভালোবাসায় ভরিয়ে রেখো।
একদিন সব জল বাষ্প হয়ে
মেঘে মিলিয়ে যাবে আর তারপর
ঝর ঝর করে মাটিতে ঝরে পড়বে,
তখন কান্না বলে আর কিছু থাকবে না।
তুমি দেখে নিও।
নিশি জাগা বালিকাকে
মরে যাই তার বিষাদমাখা মুখ
প্লাবিত জোছনায় সে হারিয়েছে সুখ
দূরে দাঁড়িয়ে বালিকা একাকিনী প্রতীক্ষায়
বেশ্ভুষা, পরিজন আদি সবই দিয়েছে বিদায়
চাঁদনী মুখ তার ভাসে অপার্থিব প্রেমের প্রত্যাশায়
নিশিজাগা পাখিরা বিষন্ন তার নিশি রাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়
আকাশে ভাঙা গড়া চাঁদ মেঘের তোরণে ভেসে ভেসে যায়
টুপটাপ শব্দে ঝরা পাতারা জলের ঢেউয়ে নৌকা যত ভাসায়
বালিকা জেনে রেখো, যদি সে কোনদিনও দিয়ে থাকে কথা তোমায়,
চোখে রেখে চোখ তোমার ব্যথায়, ফিরে আসবেই তোমার চোখের পাতায়।।
তোমার সুষমায়
ঘুমন্ত নগরীর প্রান্তে একাকিনী গাছ
নদীজলে ঢেউ খেলে যায় চুপিচুপি
সাঁঝের তারারা মিছিল-শ্লোকে ব্যস্ত
বাতাসে মিশে যায় তাদের কথকতা
বুক ফাটা জলে তার করুণ মুখশ্রী
কে যেন বলে গেল, তুমি বাঞ্ছিত
তোমার সুষমায় ভরে উঠেছে চাঁদ
পদ্মপাতায় ঝরে পড়ে শিশিরকণা
তুমি যেও না, পৃথিবী তোমায় চায়
পাথরের গায়ে আঁচড় কেটে দেখো
তারও গা দিয়ে নির্গত তরলধারা
মিশে যায় তোমার চোখের ধারায়।
প্রতিচ্ছবি
উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের মত তার
প্রতিচ্ছবি আমার আত্মায় জুড়ে থাকে
তার হাসি আতসবাজির মত আকাশে
আঁকা হয়ে যায় বিরল কোনো প্রতীক্ষার মত।
তার রাজকুমারী এসে সামনে দাঁড়ায়
হাতে প্রগাঢ় চুম্বন এঁকে তাকে সুদৃশ্য রথে তুলে নেয়।
আমার অবাক আর অশ্রুময় চোখের
সামনে দিয়ে তারা ক্রমাগত:
দৃশ্যবহির্ভূত হয়ে দিগন্তে মিলিয়ে যায়।
ক্রমশঃ আমার পা দুটি পাথরের মত শক্ত হয়ে আসে।
রাতের আকাশে যখন গাঢ় কমলা রঙের চাঁদের পাশে
একটা মেঘের টুকরো অনবরত: সোহাগে জড়ায়,
তখন আমি জানি সে আর তার রাজকুমারী
অনন্ত ভালোবাসায় মগ্ন দুটি জ্বলজ্বলে তারা।
বিমুগ্ধ
চাঁদের আলো মেখে মেয়েটি
তার প্রিয় মানুষটির তরে
প্রেমের কবিতা লেখে
তারা খচিত সামিয়ানা
নীল আলোয় ভোরে ওঠে
তার নেভি ব্লু গাউন আর
লেসের কারুকার্যে ভরা ব্লাউজে
তাকে ঠিক রাজকুমারীর মত দেখায়
তার দীর্ঘ সোনালী চুল ঘাড় বেয়ে
কোমরের কাছে এসে পড়েছে
মাথাটা ওপর নীল ওড়না
সে তার কবিতায় সুর দিয়ে
তার প্রিয় মানুষের উদ্দেশ্যে
একটার পর একটা গান গেয়ে যায়
সে ঠিক আসবে, তার পাশটিতে বসে
তার অপূর্ব গানগুলি মুগ্ধ হয়ে শুনবে।
দুর্বোধ্য
এখন আমার কেউ নেই এই পৃথিবীতে
তোমার আমার সহজ সরল কথাগুলি
চাপা পড়ে গেছে এলোমেলো তথ্যজটে
ধীরে ধীরে আমরা একদিন উহ্য হয়ে যাব
তোমার কিছু বলার থাকবে না আমারও না
তবু মনের যোগাযোগ অবিচ্ছিন্ন রয়ে যাবে
হয়তঃ অন্য কোনো পৃথিবীতে দেখা হবে
তোমার আয়ত চোখ, মুচকি একফালি হাসি
ফিরে ফিরে আসবে রঙিন মেঘেদের ভিড়ে
জটিল আর দুর্বোধ্য সম্পর্ক থেকে মুক্তি হবে
ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি ধু ধু এই প্রান্তরে
দারুণ উচাটনে, বিকল্প সমাধানের আশায়।
সকাল
বেপথু বধূর মত পাইনের মাথা কাঁপে
শীতের ঝড়ো হাওয়া তাদের দোলায়
বাইরে এখন ঝলমলে সকালের রোদ
বরফ শুভ্র মাঠ ভরে আলতো ছোঁয়ায়
দূর আকাশে সন্ন্যাসীর শান্ত নীরবতা
কিছু কিছু শীতপাখি ক্বচিৎ উড়ে যায়
এক অদ্ভুত স্তব্ধ শহরে মানুষেরা ব্যস্ত
নিজেদের দৈনন্দিন আপন জীবিকায়