জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর সকল পোস্ট

একটি দূর্বাঘাসের কবিতা

একটি দূর্বাঘাসের কবিতা

যেদিন হৃদয় থেকে একটি জ্যান্ত চাঁদ খসেছিলো
সেদিন-ই তো আমি কিছু বলিনি…..
আর আজ যে দাবি করছে
সে করেছে আমার সাথে বানিয়াতির চাষ,
হলফ করে বলতে পারি, সে ছিলো বড়জোর
শেকড় বিহীন একটা দূর্বাঘাস!

তবুও আমি
তাকে করেছিলাম নক্ষত্রসম দামি
চোরা সময়ের খাঁজ কেটে হাট বসিয়েছিলাম
রসায়ন,
আর এখন যখন খেলা ভেংগে গেলো অকারণ
পাথর কি গণিত জানে না,
জানে না তার উটকো পথের ব্যাকরণ….?

হৃদয় থেকে একটি জগদ্দল পাথর খালাস
করা ছাড়া এ কোনো কবিতা নয়,
কেউ একজন একটি ইট ছুড়ে মেরেছিলো
নিথর,নীরব গাছের বেল;
তাই
আমিও দিলেম একটু খানি নীরস পাটকেল!!

রাত বিয়ানোর গল্প

রাত বিয়ানোর গল্প

রাত বিয়ানোর পূর্বেই রোজ রোজ আমার
একটি কবিতা বিয়ানো চাই….
ডিকশনারি ঘেটে-ঘুটে কিছু কঠিন শব্দের
দলা পাকানো চাই!

কবিতার শরীর কতোটা নরম হলো কী
শক্ত হলো….
পরাধীন হলো কী স্বাধীন হলো
কতো পাঠক মরে বেঁচে গেলো
অথবা
কতো পাঠক বেঁচে মরে গেলো… এসব আমার
ভাবনায় বিলকুল নাই!
আমার ভাষায় আমি বলি… আর কিছু হোক
অথবা না হোক
কিছু দাঁতপড়া শব্দের, বেখাপ্পা উপমার বিজয়
তো হলো!!

আজকাল একেই আমি ভালোবাসা বলি
আজকাল একেই আমি কবিতা বলি
আজকাল আমি আমাকেই কবিও বলি!

জোছনা বমি

জোছনা বমি

একটা অশরীরী ভালোবাসার কথা না বললেই নয়
আজ আমার ২য় বারের জোছনা বমি হবে
অথবা
হয়েছে!
রোড় টু ময়মনসিংহের ইঞ্চি ইঞ্চিতে ভূমিতে…….
সে জোছনার দাগ লেগে আছে!

অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন
আমি কেবল জীবন ঘনিষ্ঠ কবিতা লিখি, ভালোবাসার
কবিতা লিখি না
জীবনের সামিয়ানা গলে বেরিয়ে আসা আকস্মিক
জোছনা বমির কথা বলি না!

আসলে আমি এখনও ভালোবাসার সংজ্ঞাটি বুঝি না!

একদিন একজন ভালোবাসার মানুষকে বলেছিলাম,
আমি তোমার ঝিলিক ঝিলিক শহরের চেয়ে
আমার লেংটা গ্রামকেই বেশি ভালোবাসি, ভালোবাসি
আমার ভালোবাসা সেদিন আমাকে গেঁয়ো বলে উপহাস
করেছিলো
সেদিনই আমার প্রথম জোছনা বমি হয়েছিলো!

ভা লো বা সা

ভা লো বা সা

একদিন সে তেলাপোকার মতো হেঁটে যেতো
আমার একঘর থেকে আরেকঘর….
অথচ আজ বালুচরের মতো সে আমার পর
সেদিনও কি সে ছিলো আমার তেমনি নগর?

কিছু হাড়গিলা সত্য আছে দূর্গন্ধযুক্ত আতর
আমিও এখন হেঁটে যাই পচা শামুকের ভেতর
পচা শামুকে আমার পা কাটার কথা…
অথচ আমার কাটে হাত, কাটে চুলের ফিতা..
উল্কার মতো আমিও তখন শুন্যে পতিত চাঁদ
ভালোবাসা, কে জানতো…..
স্বর্গ-নরক সবকিছু কেবলি তোমার ফাঁদ—?

আমি জানি ছায়ানটে যা কিছু, সবকিছু মেকি
তবুও আমি জোয়ার জলের দিবাস্বপ্ন দেখি
শুন্য গোয়ালঘরে অভুক্ত আশা বেঁধে রাখি
একটার পর একটা কলংক দিয়ে কলংক ঢাকি!!

তবুও ছায়ামুখের মতো আমিও খুঁজি নগণ্য সুখ
যে বৃক্ষ……
আঁতুড়ঘরে বেঁচে মরে আছে, তার কিসের দুখ?

সে আসে ধীরে

সে আসে ধীরে

সে এখন আসে বৈকাল হৃদ ধীরে ধীরে
খানিকটা উবু হয়ে –
মিটাতে চায় প্রথম জন্মের ঋণ,
আমি বলি, যে শোধিতে চায় পিতৃ-মাতৃ ঋণ
তার মতো কে আছে রে
এ জগতে অর্বাচীন?

যে বাতাস হাঁটে আমার ভাংগা খাটে
অথবা দৌড়ায় ব্রহ্মপুত্রের তীরে…
তেলাপোকা, টিকটিকির মতো কিছু মানুষের ভিড়ে,
সেও মাঝে মাঝে সুরের স্পর্শ টের পায়
তৃতীয়া নারীর মতো আনমনে গান গায়!

তখন অদৃশ্য গতরে গতর লেপ্টে থাকে
পাহাড়ের মতো খাড়া নাকে দোতারার সুর তোলে
সেও মহাকালকে ডাকে……..!
মৃত্যুর আগে যে মানুষ মরে
আমার বাংলা ভাষায়…
সে-ই কাপুরুষ, সে-ই আসে ধীরে ধীরে…!!

ইশ এবং বিষের গল্প

ইশ এবং বিষের গল্প

কিছু কিছু ছেঁড়া ভালোবাসার কথা বলি…
কিছু কিছু মানুষের মুখে মধু অন্তরে বিষ
আমাকে বলে,
আমি তোমাকে কতো ভালোবাসি ইশ!!
অথচ আমি যতোটা জানি,
এমনি মানুষের মুখেই মধু, অন্তরে বিষ!!

তাদের মুখ এবং মন কোনোদিন এক না
তারা সব সময় দুই নৌকায় দিয়ে রাখে পা!

আমার “ভণ্ড” উপন্যাসের কিয়দংশ

আমার “ভণ্ড” উপন্যাসের কিয়দংশ

নীল,
কেমন আছো জিজ্ঞেস করছি না। এই অবস্থায় তুমি ভালো থাকবে এমন কোনো কথা অথবা ভবিষ্যৎ বাণী পৃথিবীর কোনো পাঁজিতে লেখা নেই। লেখা হবে এমনটাও আমি আশাকরি না। তোমাকে কতো নামে যে ডেকেছি তার কোনো গাছ পাথর নেই। এই সমস্ত নাম থেকে একটি নাম বাছাই করে তোমাকে সম্বোধন করা আমার জন্য হিমালয় পর্বত ভাংগার চেয়েও সুকঠিন কাজ। পৃথিবীর আর কেউ না বুঝলেও তুমি অন্তত তা বুঝবে। তবুও আমি তোমাকে সম্বোধনের জন্য “নীল” নামের বিশেষ্য পদটি বেছে নিলাম। এর হাজারো কারণ থাকতে পারে। তবে আমার কাছে এই মুহূর্তে একটিই কারণ নীল মানে আকাশের নীল। যে নীল কেবল দেখা যায়, ছোঁয়া যায় না! দূর থেকে ভালোবাসা যায়, হাতের মুঠোয় পুরে আদর করা যায় না।

আসলে কি জানো? মানুষের জীবন হলো সমুদ্রের ফেনার মতো। ফেনার যেমন নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই। ইচ্ছা-অনিচ্ছা নাই, বাতাস যেদিকে তাকে তাড়িয়ে বেড়ায় সেও সেদিকে যায়। মানুষ ও তেমনি। প্রকৃত পক্ষে মানুষেরও কোনো ক্ষমতা নাই। মানুষ যেমন কোনোকিছু সৃষ্টি করতে পারে না, তেমনি কোনোকিছু ধ্বংসও করতে পারে না। মানুষ তাই করে, সৃষ্টকারী মানুষকে দিয়ে যা করায়। সৃষ্টিকর্তার এজেন্ডা বাস্তবায়নে মানুষ একতিল সময় দেরি করতে পারে না। একটি চুল পরিমাণ এদিক-সেদিক করতে পারে না।

তোমার-আমার সম্পর্কটিও এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। সৃষ্টিকর্তার যতোদিন ইচ্ছা পানপাতা দুটিকে একসাথে করে রেখেছেন, জবাফুলের মতো ফুটিয়েছেন, কামিনীর মতো সুগন্ধ ছড়িয়েছেন। যেমন খুশি খেলেছেন। এখন আবার তাঁর ইচ্ছা হয়েছে খেলা ভেঙে দিবেন। এখানে কারো কিছু যেমন করার নেই, তেমনি কিছু বলারও নেই। কোনো মানুষের এমন ক্ষমতা তিনি দেননি যে, তাঁর সাথে লড়বে। তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করবে। উপরন্তু আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে, তিনি যা কিছু করেন, করেছেন এবং করবেন —–তাতে আমাদের জন্য কোনো না কোনো কল্যাণ নিহিত করে রেখেছেন। অন্ধকারের ভেতরে যেমন আলো থাকে, পরাজয়ের ভেতরে যেমন জয় থাকে ঠিক ঠিক তেমন।

আর একটি কথা না বললেই নয়, সরষের ভেতর যেমন ভুত থাকে তেমন ভাবিও না। কারণ সরষের ভেতর তেলও থাকে। তোমার পত্র পড়ে যতোটা বুঝলাম, এ ঠেকানো আমার পক্ষে কেবল কঠিনই নহে। দুঃসাধ্য বলা চলে। তবুও আমাকে ক্ষমা করার দরকার নেই। বিধাতার বিধান অলংগনীয় বলে জানিও।

ইতি
তোমার একদা অচল

পুনশ্চঃ একদিন খুব খায়েশ করে তোমার নামের সাথে মিলিয়ে আমার নাম রেখেছিলাম “অচল”। কে জানতো.. আমার এই মিথ্যে নামটাই একদিন সত্যি হয়ে উঠবে!!

একটি সাধারণ রাতের অসাধারণ গল্প

একটি সাধারণ রাতের অসাধারণ গল্প

সে রাতের কথা বলি
যে রাত একটি সার্থক কবিতার সমান,
সে বুকের ভালোবাসার কথা বলি
যে বুক নিজেই একটি পুরো আসমান!

আমি কোথাও খুঁজতে বাকি রাখিনি
সরোবর, বৃক্ষ, তৃণাদি
কোথাও তার কোনো উপমা নেই,
যে ধীবর সারাদিন জাল ফেলে দিনশেষে
একটি মাত্র মাছ পায়,
সেও বুঝি আমার সেই… আমার সেই!!

নিজেকে তিনি হেসে হেসে কৃষ্ণকলি বলেন
টম এবং জেরির মতো চঞ্চল পথ চলেন
আমি জানি, তিনি আদুরী
আমি জানি, তিনি মাধুরী
আমি জানি, একটি গল্প হাজার গল্পের সমান
যদি সমস্ত বুক ভরা থাকে, তাঁর মতো
ভালোবাসার সামান!!

রাত বিয়ানোর গল্প

রাত বিয়ানোর গল্প

রাত বিয়ানোর পূর্বেই রোজ রোজ আমার
একটি কবিতা বিয়ানো চাই….
ডিকশনারি ঘেটে-ঘুটে কিছু কঠিন শব্দের
দলা পাকানো চাই!

কবিতার শরীর কতোটা নরম হলো কী
শক্ত হলো….
পরাধীন হলো কী স্বাধীন হলো
কতো পাঠক মরে বেঁচে গেলো
অথবা
কতো পাঠক বেঁচে মরে গেলো… এসব আমার
ভাবনায় বিলকুল নাই!
আমার ভাষায় আমি বলি… আর কিছু হোক
অথবা না হোক
কিছু দাঁতপড়া শব্দের, বেখাপ্পা উপমার বিজয়
তো হলো!!

আজকাল একেই আমি ভালোবাসা বলি
আজকাল একেই আমি কবিতা বলি
আজকাল আমি আমাকেই কবিও বলি!

তন্ত্র-মন্ত্র

তন্ত্র-মন্ত্র

তবুও ভাবি ট্যারাচোখ তুলে কিছু আলো আসবে…
নিদানকালে সমস্ত আকাশ-পাতাল দু’হাতে তুলে
আমায় ভালোবাসবে!
ছিন্নশেকড় যে তৃণলতা ছন্নছাড়া বাতাসে ভাসে
যে পাগল সারাদিন একলা একলা মুচকি হাসে
তারেও তো
কেউ না কেউ কোনো না কোনোদিন ভালোবাসে!

আমি কিছু অপ্রকাশিত মূক পঙক্তির কথা বলছি
কবি হওয়ার মতো
এমনি কিছু অজাতশত্রু দুঃস্বপ্নের কথা বলছি!

তবুও….
রাত গভীরে কবিতা নামের অবলা মেয়েটিকে ভাবি
ভাঙা ভাঙা হাতে জাতেওঠা শব্দদের কথা ভাবি!

তবুও কিছু কেউটে সময় উড়ু মনে কেটে যায় দাগ
যেই পৃথিবীর জনগণ কেবল মন্ত্র বুঝে,
তন্ত্র বুঝে না
সেই পৃথিবীর মাটিতে কি ফুটে না ফুলের পরাগ?

দলকানা

দলকানা

মাঝেমাঝে ছায়ানটে পথ হাঁটি একা
ক্লান্তির পথ আর ফুরোয় না!

তবুও বারংবার শপথের ডানা ভাঙি
অলীক আভিজাত্যে ভিজাই মন, মনন
পীড়িতের রাত সহজে কাটে না!

তবুও দেউরির ফাঁকতালে ছায়াপথ দেখি
পেছনে পড়ে থাকে এ জীবনের অশিষ্ট দেনা
যে বলেছিল ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা
যায় কেনা,
আমি বলি তারচেয়ে বড় আর কেউ নেই
তালকানা……দলকানা!!

এ কোনো কবিতা নয়

এ কোনো কবিতা নয়

একটা প্রেমপত্র এককল্প বছরে লিখেছিলাম
অতঃপর ছিঁড়ে যেতে লেগেছে এক ন্যানো সেকেণ্ড
অথবা তারচেয়েও কিছুটা কম ……!!

সম্পর্কের গতিসূত্র আবিষ্কার করতে যাবো…
আমি এতোটা আক্কেল অথবা বেকুব নই….
শুধু এতোটুকু বলতে পারি, যে সম্পর্ক যদি, তবে, তথাপি
এসব আঁকড়ে বাঁচে, এ কোনো সম্পর্ক নয়!

এই যেমন পাখির সাথে জলের সম্পর্ক
অথবা
মাছের সাথে আকাশের সম্পর্ক এমনতর!

তবুও অস্বীকার করছি নে, ভালোবাসা হলো হালের
বলদের মতো….
আস্তে হাঁটলেও দোষ
জোরেশোরে হাঁটলেও দোষ
আবার না হাঁটলেও দোষ!

একটি ভোগ এবং দূর্ভোগের কবিতা

একটি ভোগ এবং দূর্ভোগের কবিতা

অতঃপর দেখি…
অগভীর অরণ্যে সিংহের গর্জন শোনার মতো
রাত্রির নীরবতা ভেংগে একটি কবিতা সমুদ্র থেকে উঠে আসে
উঠে আসে আমার কাছে….
তার চোখে ছানি পড়েছে
তবুও সে ইতিহাস খুউব খুউব ভালো বুঝে!!

সাপ আর নেউলের গল্পটি একটু আগেই আমার
পড়া শেষ হয়েছে
এখন সিংহ মামা সদল বলে হাঁটে ছাতা হাতে
রৌদ্দুরে…..
বৃষ্টিতে ………!!

মূহুর্তেই কিষাণীর বুকের ধুঁক ধুঁক থেমে যায়
বলে, বাবারে তুমি ভালা থাকলেই আমরা হগলে ভালা থাকি!
লজ্জায় আমার কান এতোটুকু লাল হয়নি
তবুও কেন জানি বলতে পারিনি,
মাগো, আমিই তোমার সূর্যসন্তান মধ্যস্বত্বভোগী……….!!

যে কবিতার কোনো লিঙ্গ নেই

যে কবিতার কোনো লিঙ্গ নেই

ভাবছি রুপকের মোড়কে একটা কবিতা লিখবো
যে কবিতার কোনো লিঙ্গ নেই
না পুংলিঙ্গ
না স্ত্রীলিঙ্গ
এমন কী সর্বজন শ্রদ্ধেয় উভয়লিঙ্গ এবং ক্লীবলিঙ্গ ওরাও!

যে কথা বিশ্বাস করি, সেকথা লিখবো না
যে কথা বিশ্বাস করি না, সেকথা লিখবো!

একটি দূর্বাঘাসের কবিতা

একটি দূর্বাঘাসের কবিতা

যেদিন হৃদয় থেকে একটি জ্যান্ত চাঁদ খসেছিলো
সেদিন-ই তো আমি কিছু বলিনি…..
আর আজ যে দাবি করছে
সে করেছে আমার সাথে বানিয়াতির চাষ,
হলফ করে বলতে পারি, সে ছিলো বড়জোর
শেকড় বিহীন একটা দূর্বাঘাস!

তবুও আমি
তাকে করেছিলাম নক্ষত্রসম দামি
চোরা সময়ের খাঁজ কেটে হাট বসিয়েছিলাম
রসায়ন,
আর এখন যখন খেলা ভেংগে গেলো অকারণ
পাথর কি গণিত জানে না,
জানে না তার উটকো পথের ব্যাকরণ….?

হৃদয় থেকে একটি জগদ্দল পাথর খালাস
করা ছাড়া এ কোনো কবিতা নয়,
কেউ একজন একটি ইট ছুড়ে মেরেছিলো
নিথর,নীরব গাছের বেল;
তাই
আমিও দিলেম একটু খানি নীরস পাটকেল!!