জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর সকল পোস্ট

সুবেহ সাদিক

সুবেহ সাদিক

যখন কিছু পাপ, লাফ দিয়ে আমার শরীর ছেড়ে যায়
তখন নগ্ন আকাশে একটি জলজ্যান্ত চাঁদ উঠে…
কিছুকিছু নক্ষত্র সে চাঁদের দিকে নিষ্পত্তির চোখে তাকায়
আমি তখনও সর্বৈব নিষ্পৃহ!!

অথচ প্রতিদিন সুবেহ সাদিক আমায় ডেকে ডেকে
ক্লান্ত হয়ে ফিরে যায়
পাপের ভারে আমি সহজে শীতনিদ্রার মায়া কাটাতে
পারিনা
আগন্তুক সময় আমাকে নিয়ে চামচিকার মতো খেলে!

তবুও আমি শীতের সকালে কফির পেয়ালায় প্রথম দীর্ঘ
চুম্বনের মতো বিছানায় অচেতন পড়ে থাকি
আমি আমার ভেতর ছেড়ে বাইরে আসতে পারি না
আমার তখন পা কাটা শামুকের কথা মনে হয়
যার সাথে মাঝে মাঝে ভিন্নজগতে আমার কথা হয়!!

তবুও আমার নিশ্বাস আর প্রশ্বাসের মাঝখানে উদয়াস্তের
নিরন্তর নিঠুর খেলা চলে
তবুও আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না
যে আমার, আমি যাঁর; তাঁর কথা আমি কীভাবে যাই ভুলে??

দ্বিপদী কাহিনী

দ্বিপদী কাহিনী

আজকাল অধিকাংশ সময়েই কিছু বিচ্ছিন্ন ভাবনারা
মনের আনাচে কানাচে দলা পাকায়…
কুণ্ডলী পাকানো কেঁচোর মতো কিংবা স্নেক আইল্যান্ডের সাপের মতো….
জড়ানো নিশ্বাসে কেবল অবিশ্বাসের দানা বাঁধায়!

আমিও সাক্ষী গোপালের মতো কেবল চেয়ে থাকি
বলতে আমার কিছুমাত্র লজ্জা নেই
একটা শব্দের বারোটা, তেরোটা বাজিয়ে আরেকটি শব্দের লজ্জা ঢাকি!
তবুও ভালোবাসা বলতে আমি এখনো নিজেকেই বুঝি
তবুও ভালোবাসা বলতে আমি এখনও দ্বিপদী কাহিনীকেই বুঝি!

অবশ্য এতে করে কারো কিছু আসে যায় না
কেবল দেনার দায়ে আমার কিছু ভালোবাসা অবিক্রীত
থেকে যায়!

নীরব মুখের ভাষা

নীরব মুখের ভাষা

আমি চাই কিছু কিছু বর্ণমালা শব্দ হয়ে উঠুক
আমি চাই কিছু কিছু শব্দ সার্থক বাক্য হোক
আমি চাই কিছু কিছু নৈঃশব্দ্য ভাষা হয়ে ফুটুক!

তবুও আমি বিশ্বাস করি,
নীরবতার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ভাষা আর পৃথিবীতে নেই
যেমনি প্রকৃতির চেয়ে শক্তিশালী আর কেউ নেই
তেমনি নীরব মুখের ভাষা ঠিক ঠিক সেই…সেই!!

পাহাড় নীরব থাকে, তাই বলে সে কতোটা দূর্বল?
যে কুকুর সদা ঘেউ ঘেউ করে, সে কি মানুষের
চেয়ে সবল?
বোড়া সাপের কামড়কে যেমন কেউ…
ছোবল বলে না…ছোবল
নীরবতার ভাষাও তেমনি নয়, ততোটা দূর্বল….!!

পরবাসের গল্প

পরবাসের গল্প

চেনা বিকেলগুলো অনেক আগেই অচেনা হয়েছে
মুখ লুকিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছে আমার আজন্ম
ভালোবাসার হরিদ্রা দুর্বাঘাস
আমিও সর্বভূমে ঠিক ঠিক মরে বেঁচে আছি
এ যে স্বীয় অন্তর্ভূমে কী চমৎকার নালায়েক পরবাস!

তবুও চৈতি হাওয়ায় চৈতন্য ফিরে পেতে কে না চায়!
সবার মতো আমিও যে তাই চাই… তাই চাই
হাজারবার, কোটিবার নয়.. আর একবার…
শুধু আর একটিবার
যেখানে পোঁতা আছে পোতাশ্রয়, হাজার রাজার ধন
সেখানেই খুঁজে ফিরি আশ্রয়, আমার এমনি জংলী মন!

যেখানে যাত্রার সূচনা আছে, শেষ ঠিকানা জানা নাই
আপনা মাঝে আমিও তাই বারবার হারায়ে যেতে চাই!!

ভেদ এবং অভেদের গল্প

ভেদ এবং অভেদের গল্প

মাটিতে হাঁটতে হাঁটতে যখন মহাশুন্যে ভাসতে থাকি
তখন আমি কারো অধীনস্থ নই, নই পরাধীন…
তখন আমার কোনো শরীর থাকে না
একুরিয়ামের মাছেদের মতো আমিও হই চেতনা স্বাধীন!

আমি কবিতায় ডালিমকুমার আর কঙ্কাবতীর রুপকথার অনুবাদ করি
খসড়া চলার পথে যাকে পাই, তারই হাতে পায়ে ধরি
আমি সবার কাছে আমার সন্ধান চাই
স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল. কোথাও যেনো আমি আর নাই!

ভেদ আর অভেদ সম্মুখে এসে দু’হাত জোড় করে দাঁড়ায়
যেভাবে বিত্তশালী জমিদার বাবুর সামনে কৃষক করজোড়ে
দাঁড়াতো এসে সাহা পাড়ায়
ঠিক ঠিক সেভাবে!
তবুও আমি আমার মতো শর্তহীন ক্যারাভানের একমাত্র যাত্রী
নিজেকে যদি কখনো ফিরে পাই
তখন আমিও হবো উদ্দেশ্যেহীন নৌকার সহযাত্রী…!!

আলাপে আলাপে প্রলাপ

আলাপে আলাপে প্রলাপ

যে গাছ নুঁয়ে পড়ে ফলের ভারে
আর
যে বৃক্ষ শুয়ে পড়ে পথের ‘পরে!
আমি আমার কবিতায় একটি বৃক্ষ এবং একটি গাছের পার্থক্য খুঁজি!

আমি সূর্যকে সবিতা বলতে রাজি নই
ছেলেবেলায় বগলদাবা করে স্কুলে নিয়ে যেতাম যে পুস্তক;
সে পুস্তক নয়, সে আমার বই…!

আমি আজও কিছু কিছু মানুষকে মানুষ বলতে রাজি নই
কড়াইয়ে চাল বাজলে যেমন খই হয়… খৈ
ইদানিং প্রেম ছাড়াও তিরতির করে উঠে যায় মই
আমি দু’কড়ির লেনাদেনা শিশিরকণায় ভেস্তে যেতে দেখি
ইতিহাস বলে, যে বৃক্ষ আর গাছের পার্থক্য বুঝতে চায় না
সে-ই সবচেয়ে বড়ো মেকি . ….!!

তবুও ইদানিং আমি আলাপে আলাপে প্রলাপের গন্ধ শুঁকি!!

আকাল

আকাল

তারাদের থেকে কিছু মিটিমিটি আলো ধার
নেওয়ার স্বপ্ন দেখি
আজ-টা আমার কাছে রেখে আগামীকালটা
দুঃস্বপ্নে মুড়িয়ে রাখি!

তফাত শুধু এই যে, ভালোবাসা আর ভালো.. বাসা!
একজন স্বেচ্ছায় শ্রম দেয়
আর একজন টাকার বিনিময়ে শরীর নেয়!

যে হাত পাথরে কিল, ঘুষি দেয়
ঘামের দামে ভালোবাসা কিনে নেয়
আজকাল হেমন্তের বড় বেশি আকাল!

শিরোনাম চাই

শিরোনাম চাই

আমার ইচ্ছেগুলো ইচ্ছে নয়
বাঘের খাঁচায় বন্দি
উড়াল পাখিটা উড়াল দেয়
তার সাথেই যে সন্ধি!

পাখিটা আমার ভাষায় পটু
রুপে অবাক করা
তার রুপেতে মজে আছে
বিশাল এই ধরা!

আমার মতো টিকটিকি যারা
তার কি নাগাল পায়?
সেই পাখিটার জন্যে আমি
শিরোনাম একটা চাই!!

কালাজ্বর

কালাজ্বর

নদীকে বলেছিলাম, ইদানিং আমার শরীরে জ্বর যেনো লেপ্টে থাকে
যেভাবে নিমপাতার সাথে সা-রস লেপ্টে থাকে
যেভাবে ঘৃণার সাথে ভালোবাসা লেপ্টে থাকে ঠিক সেভাবে..
নদী খানিকটা সময় কোথা থেকে যেনো উড়ে আসলো
অতঃপর আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললো,
আমি যদি তোমার শরীরের কালাজ্বর হতাম…………!

আমি একলাফে মাটি থেকে মহাকাশে উড়াল দিলাম
ডুবোজাহাজের মাস্তুল ধরে ভালোবাসার নিশান হাতে স্বর্গ, মর্ত্য, পাতালপুরী ঘুরে এলাম…
তবুও নদী আর যদি’র রহস্যের কিনারা করতে পারলাম না!

পুরাকালে পথ পথিকে পদ্মজলে নাইতে নিয়ে যেতো ….
আর এখন পথিক পথকে কাঁধে করে বেড়াতে নিয়ে যায়
আমি পুঁথির প্রতাপ খুব একটা জানি না
আমি গাজি, কালু আর চম্পাবতীকে চিনি না
আমি যদি বলতে কেবল নদীর ভালোবাসাকেই বুঝি….
আমি ভালোবাসা বলতে কেবল আমার নদীর কালাজ্বরকেই খুঁজি!!

চুরি

অনেকদিন হয় ঝিনুক দেখি না, শামুকও…
তবুও আজকাল পঁচা শামুকে পা কাটে…..
হাত কাটে।
হৃদয় কেটেকুটে রক্তের নদী হয়….
ওরাও আজকাল ইতরপ্রাণির মতো কথা কয়!

আগে মুক্তোর খুঁজে রনিয়া বিলের চিল হয়েছি
আর এখন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরি…….
সবাই মানুষ….
এক মানুষ করে আরেক মানুষের কবিতা চুরি!

হৃদয়ের কাঁটাতার ভেংগে যে করে হৃদয় চুরি
সে কি তবে চোর নয়?
মধ্যরাত্রির দেয়াল ভেদ করে যে আমার সাথে
বাঁকা চোখে কথা কয়..
সেকি তবে কোনো সার্থক কবিতা নয়……..??

আপন পর এবং অতঃপর

আপন পর এবং অতঃপর

এতোদিন পর… যে নিত্য ছাড়ে আপন ঘর
সে যেনো স্বর্গীয় লাবণ্যের ছিঁটেফোঁটা পায়
আমার উঠোনের মাঝ বরাবর,
কামিনী ফুলের যে গাছটি অনেকদিন হয়…
কেবল নাচে আর গায়
সে যেনো আর বেঁচে নাই….. বেঁচে নাই ..!!

কেউ ভাবতে পারো …. অতঃপর
একদিন সাধের কামিনী ফুল, হবে সর্বৈব ভুল
শেকড় ছিঁড়ে শিখর ছোঁয়ার পর
ভুলে যাবে আমার লাবণ্যহীন বৃক্ষের মূল?

মাঝপথে পার হয় কতো কতো রুপের নগর
ইট, পাথর, ঢালাই লোহার তৈরি দালান ঘর
মাছির চোখ ঘুরানোর মতো কিঞ্চিৎ সময় পর
কে জানতো সে নিত্য হবে আমার পর!!

আমি চেয়ে থাকি…. ছেঁটে ফেলা মাথায় চুল
ক্ষমা করো, যদি গো হয় কিছু বেসামাল ভুল
তবুও তুমি, আমার প্রাণের স্বামী..
আমি অধম..আর কতোটা হতে পারি নির্ভুল!!

আসন্ন শীতের উপকথা

আসন্ন শীতের উপকথা

আসন্ন শীতে আমার কোনো শব্দের যোগাড়-যন্ত্র নেই
বুকের ভেতর মাঝে মাঝে দু’একটি টিকটিকি হাঁটে
একবার বলতে চাই, আর দশবার করে পিছিয়ে যাই….

“তুই কি আমার কাঁথা হবি?
ডুবসাঁতারে পাড়ি দিবি….
৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷ রাতের সমুদ্দুর?

পাহাড় কাটার গন্ধ নিবি
সোনার চামচ মুখে দিবি
৷৷৷৷৷৷৷৷৷ হাসবে যে রৌদ্দুর!

আমি নিখিল শকুনের মতো দূরবীণ চোখ বন্ধ করে হাসি..
তবুও গ্রীষ্মের চেয়ে আসন্ন শীত আমি বড়ো ভালোবাসি!

তবুও বলতে চাই…
তুই কি আমার আধেক খানি শীত নিবি
নাকি
সবার মতো তুইও তেলা মাথায় তেল দিবি?

পরিজন

পরিজন

রাক্ষুসে ক্ষিধেটার সাথে আমার আজন্মের পরিচয়
আকাশ খাই, বাতাস খাই, খাই পাতাল, ধানের চাতাল
এসব কিছু যখন যা পাই সবকিছু দেদারছে খাই……
আমার রাক্ষুসে ক্ষুধা মিটানোর কোনো নাম, গন্ধ নাই!

মাঝে মাঝে অন্ধকারের সাথে অন্ধকার যোগ করি
সাথে কিছু বারোয়ারি তৈলাক্ত আলোর হাতে পায়ে ধরি
কোনো কিছুতেই কিছু হয় না…
শব্দের সোনারঙ অদ্ভুতনদী আমার সাথে কথা কয় না!!

তবুও আমি কাউনের মিহিদানার মতো শুন্যে চোখ রাখি
এক আঙুল থেকে আরেক আঙুলের সমান ব্যবধানে তাকে কাছে ডাকি.…
অথচ
আমার দু’আঙুলের মাঝখানে বিষন্নতার সমুদ্র বয়ে যায়
সভ্যতার পর সভ্যতা গড়ে উঠে, তার কোনো সন্দেশ নাই!

অথচ সর্বলোকে তার কোনো শিরোনাম নেই………
আছে কেবল সর্বগ্রাসী খিদে মেটানোর ব্যর্থ আয়োজন
তবে কি আমিই তার একমাত্র অতিসন্নিকট পরিজন?

জোছনা বমির পর এবং অতঃপর

জোছনা বমির পর এবং অতঃপর

জোছনা বমির পর এবার সূর্যবমির কথা বলি
জল স্বর্গে যাওয়ার পর বল এসেছে
জমির বদলে নদীগর্ভে থিতু হচ্ছে সভ্যতার পলি!

আমি এখন গেরাম ছেড়ে নগর ভালোবাসি
একটু পরপর যক্ষ্মা রোগীর মতোন খুকখুক কাশি
তবুও আমি ফেলে দেওয়া আবর্জনার মতো হাসি!

আগে আমার কবিতারা মাটির কথা বলতো
বাপ-দাদার পৈতৃক ভিটায় সদর্পে পথ চলতো
এখন তারা ইট-পাথরের সাথে করে কানাকানি
জুঁই, বেলি, শিউলি, টগর…
ওদের নিয়ে এখানে কেউ করে না টানাটানি!!

আমিও বেশ আছি, বাসি সূর্য আর চাঁদ কাছাকাছি
কথায় কথায় কাব্যেরা হারায়
কুকুরের লেজ পিঁপড়ে নাড়ায়
তবুও আমি ভালোবাসার নামে করি নাচানাচি..!!

একটি শব্দের জন্য যে কবিতা কাঁদে

একটি শব্দের জন্য যে কবিতা কাঁদে

কয়েক হাজার বছর ধরে যে শব্দটির প্রসব বেদনা ছিলো
যে রোজ কয়েকবার বুক থেকে মুখের কাছে আসছিলো
আবার মুখ থেকে বুকের দিকে লজ্জায় নেমে যাচ্ছিলো…
আজ অবশেষে সেই শব্দটি আচানক ভূমিষ্ঠ হলো……!!

বসন্ত ঋতুর মতোন খুবসুরত শব্দটির গভীরতা মাপার
যন্ত্র পৃথিবীতে নেই
উচ্চতায় এভারেস্ট থেকে যোজন যোজনের চেয়ে একটু বেশি…হলেও
হাতের আঙুলের মাপে মাত্র চার আঙুল সেই….!!!!

ইদানিং রাত গভীর হলেই আমি শব্দটির লাবণ্য খুঁজি
যদিচ শব্দটির ঢেউ সহসাই বুক থেকে মুখে এসে লাগে
অবশেষে বুঝে গেছি শব্দটি বলতে আমি তোমাকেই বুঝি!

যে লেংটা তার যেমন বাটপারের কোনো ভয় নেই
আজ আর বলতে দ্বিধা নেই.. আমিই সেই, আমিই সেই!
একদিন যে শব্দটিরে খুঁজতে গিয়েছিলাম সূদুর চণ্ডীপাশা
সেই শব্দটি আর কেউ নয়, মাত্র চার বর্ণের ভালোবাসা!!