জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর সকল পোস্ট

নদীটি নারী হয়ে উঠেনি

নদীটি নারী হয়ে উঠেনি

কতকাল ভেবেছিলাম আমার নদীটা নারী হয়ে উঠবে
হয়ে উঠতে উঠতেও আর হয়ে উঠেনি
একেবারে কানের লতির পাশ ঘেঁষে যেমন বন্দুকের গুলিটা চলে যায়
তেমনি সেও কিছু বনষ্পতির অন্তরালে মিলিয়ে গেলো!

আমি তখন মেঠো পথে হাঁটতে হাঁটতে আকাশ দিয়ে উড়ছিলাম
আমি তখন কোন অভাগা ব্যাকরণ লিখেছিলো, তার কথা ভাবছিলাম!
সে ভাবনা গুলো অনুনাসিক বর্ণের মতো গভীর ছিলো
সে ভাবনা গুলো উড়ন্ত চিলের ডানার মতো দুরন্ত ছিলো!

অতঃপর আমি আর নদীর কথা ভাবি না
ছলাৎ ছলাৎ শব্দ শেষে ঘুম ভাঙার স্বপ্ন দেখি না
পিপীলিকার মতো সেই ভাঙা সড়ক পথে নিঃশব্দে হাঁটি
সে আর আসে না!

পাশের ডোবার কিছু কুচুরিপানারা খুচুরখুচুর করে
তবুও…
আমার দু’চোখে নদীটা নারী হয়ে উঠার অজাত স্বপ্নেরা
মরে যায় না
তবুও যদি চলে নদী প্রাগৈতিহাসিক দুঃস্বপ্নের মাঝে
ওরা এখনও পুকুর চোখ মেলে আমার নদীটি খোঁজে!

রাজপথ থেকে গলিপথ

রাজপথ থেকে গলিপথ

সমুদ্রের মতো অসীম উদার রাজপথ জুড়ে…..
সারাদিন পিপীলিকার মতো মানুষ পিলপিল করে
হাঁটে, ছুটে; দৌড়ে..
অংক কষে লাভালাভের লকলকে জিব
মাটি কুঁড়ে গর্ত করে, বেদনাভারে কাঁদে পৌরাণিক
দুমুর্খ কলমের নিব!

জিনেরা মরণ কামড় বসায়, পান্থজনও থাকে
আশায় আশায়!
লৌকিক থেকে অলৌকিক যতো পথ আছে, সবখানে…..
আগুনের ফুলকির মতো শান্তির বাণী শোনায়!

ইতিহাসের চিলেকোঠা ভেদ করে আচানক ফিরে আসে
কাল মার্কস, মাও সে তুং, লেলিনের তটস্থ আত্মা
পুঁজিপতিদের স্বর্গোদ্যানে ওদের কারো নেই
প্রবেশাধিকার,
তবে কেনো সবাই ভুলে যাবে না
রাজপথ, গলিপথ ওদেরও আছে কিছু অধিকার?

আমি সড়কে অহরহ লাশের গন্ধের কথা বলছি না
কবরের, মহাশ্মশ্বানের প্রাগৈতিহাসিক নীরবতার কথাও তুলছি না
অকালে শুকিয়ে যাওয়া কিছু রক্তকরবীর কথা বলছি!

এখন হরহামেশাই চোখের গঙায় আকাশ ভিজে
যার কোনো বেদনা নেই, সে কি বুঝে বেদনা কি যে!
তথাকথিত কিছু শব্দ আর বিচ্ছিন্ন বাক্যাংশরা বড়ো হয়
কে জানে না…?
পুঁজিবাদের ঘাড়ে বসা সোনার হাঁস কারো নয়!!

তবুও কি মাথার উপর মাছির মতো ঘুরঘুর করবে
আজন্ম লালিত পাপ?
তবুও কি রাজপথ থেকে গলিপথ আর কোনোদিন
ঘুচবে না পুঁজিবাদের জলজ্যান্ত অভিশাপ?

কবিতার কথা আর কাকে বলি

কবিতার কথা আর কাকে বলি

কবিতার কথা আর কাকে বলি…..
সবাই মুখ লুকিয়ে নেয় দ্বিপান্তর;
যতোটা প্রকাশক, ঠিক ততোটাই ঘাতক পাঠকের অন্তর!

তবুও আমি সস্তা ভালোবাসার লোভে শব্দদাহ করি
চেরাপুঞ্জি থেকে ঘাড়ধরা করে নিয়ে আসি
অসুর্যস্পর্শা রমণীর মতোন কিছু সুডৌল বাক্য; কী হয় তাতে?
কবিতা আমাকে যন্ত্রণা দেয়, মন্ত্রণা দেয়
পোড়ায় লক্ষীন্দরের বাসর
আমি কি পাঠকের অন্তর, কিঞ্চিৎ দিতে পেরেছি মন্তর?

পারিনি।
ডুমুর শাখায় বসে থাকা, নাম-গোত্রহীন পাখিটির মতো আমিও এখন নির্জীব একা।
পাশ ঘেঁষে রাজকীয় কাকেদের মতো কতোজন হেঁটে যায়
কতো কতো পাখি খুঁজে নেয় সুখের আবাসন
আকাশ থেকে খসে পড়ে চটকদার কিছু বিজ্ঞাপন
সবাই জানে আমিও তাদের মতো কবি হতে চাই…..
আমিও হতে চাই অধুনা তাঁতকলের মাকুর
অথবা
একটি প্রভুভক্ত অশিক্ষিত শিকারি কুকুর!!!

ঘু ম ভা ঙা র গা ন

ঘু ম ভা ঙা র গা ন

আকাশ থেকে পতনের পর আমি এখন কোথায়?
প্রতাপশালী সূর্য ডোবার পর.. যেখানে দিন যায়…..
আমিও কি আছি তেমনি কোনো জন্মান্ধ কোঠায়?

আজকাল প্রায় প্রায় নীরবতারা ভাষা খুঁজে পায়
ভাসমান হালকা মেঘের মতো আমিও ভাসি, চোখ-মুখ
বেবাক বন্ধ রেখে শৃগালের মতো হাসি;
বলতে কোনো ঢাক ঢাক গুড় গুড় নেই
তবুও আজকাল শুন্যতাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি।

প্রিয়তমা নরসুন্ধা এখন আমার সদ্যমৃত প্রেমিকার
অগভীর সিঁথি পথের মতোন,
আজকাল কেউ কাউকে আর যতন করে না যতন
সবাই পান্থপথে রতন খোঁজে রতন.
আজকাল কবিরাও সবার মতোন
সবাই যা দেখে কবিরাও তাই দেখে নয়নে… নয়ন!

তবে কি আর কোনো সম্ভবনা নেই ডাঙার ঘুম ভাঙার?
জেগে জেগে যে ঘুমায় সে কুম্ভকর্ণ নয় কোনোদিন,
আমি ভাবি অন্যকৃত…..
কবিরাও কি আজকাল ফরমালিন?

প্রথম প্রশ্নের মতো আজও এ আমার শেষ প্রশ্ন…!!

হৃদয় পোড়া গন্ধ

হৃদয় পোড়া গন্ধ

যেভাবে উড়ছে, মহাকাশ ছাড়ছে..এ জীবনের সুদ
তবুও আমি ভাংগি না, তবুও আমি গড়ি না
বেখেয়ালে ফিরে ফিরে আসছে এ হৃদয়ের বুঁদবুঁদ!

আজ আমার অনেক কাজ আছে.. শোধ এবং বোধ
কিছু কিছু পরিমিত ভালোবাসা তাই
দীনহীন বেশে দশ হাত বাড়িয়ে চাই
তবুও হয় না বুঝি, দিনের প্রকৃত দেনার পরিশোধ!

হা পিত্যেস করি, দূর্বাসা মুনির হাতে পায়ে ধরি
স্বপ্নহীনা তবুও আমায় স্বপ্ন দেখায়, সে হয় মনচোর;
একলাফে পৃথিবীর তাবৎ পরিধি ঘেঁটে আসি
তবুও আমার কাটে না স্বপ্নঘোর!

তবুও আমি আর নিরুদ্দেশ যাত্রার কথা ভাবি না
স মু দ্র সমতটে একা দাঁড়িয়ে আসমুদ্রহিমাচল দেখি
মাথার উপর ডানা বিস্তৃত করে পাখি ওড়ে.. পাখি
তখন আমি, আমার পাখি ডাকা সুগন্ধি ভোরের
দেরাজ স্বপ্ন আঁকি!

কাল ছেড়ে মহাকাল আসে, কী অনিষিক্ত মর্মন্তুদ;
আমি ছাড়া, ওরা বাকি সবাই হাসে কী অদ্ভুত!
আমিও এখন, করে নেবো দুর্নিবার মুক্তিপণ..
শিরোনামহীন জলের সাথী হবো, একদিন বিষম
কালান্তর
ততোদিন না হয়, হৃদয় পোড়া গন্ধে পুড়ুক অন্তর!!

ব্যাখ্যা

ব্যাখ্যা

বরুণের চায়ের স্টলে যখন কথারা ওড়ে
আমি তখন নীরবতার কাছে সাক্ষাৎ দীক্ষা নিই
বৃক্ষের গুণাগুণ ব্যাখ্যা দিই
আশেপাশে মশা ওড়ে, মাছি ঘুরে
শত-সহস্র আলোকবর্ষ দূুরে!!
বিশদ ব্যাখ্যার কোনো অপেক্ষা রাখে না
এক সময় কথারা প্রলয় হয়
সবাই জানে, শরীরী প্রেম সব সময়
বেশি কথা কয়!
মাঝে মাঝে নিজেকে নিজেই বলি
অমন করে ভেবো না,
জীবন মানেই সংগমে-সংগ্রামে শিরোনামহীন
দিনে দিনে কেবল বাড়তে থাকে প্রেমহীন ঋণ!
কখনো তেতুলপাতা
কখনো আঙুরলতা!!

নেইআকঁড়ার প্রেম

নেইআকঁড়ার প্রেম

কে জানে না? সে আমায় ভালোবেসেছিলো…….
তার ভালোবাসা মাঘী পূর্ণিমার ভরা জোছনার
মতো কিশোরী ছিলো
তার ভালোবাসা আষাঢ়ে বৃষ্টির মতো চঞ্চল ছিলো!

তবে কি আমি মোটেই ভালোবাসতে জানি না?
তালপাটালির প্রেমের মতো আমিও মৌসুমী গায়ক?
উড়োমেঘের ছাইয়ের মতো আমিও তেমনি নায়ক?

সে ফিরতে চায়নি…….
এমন কোনো নিষ্ঠুর কবিতা পৃথিবীর কোথাও নেই
তবে কি…… যে ভালোবাসা কিছুই বুঝে না
আমিই সেই!

তবুও সবাই বলে থাকেন সংগোপন
সে ছাড়া আমার আর কে আছে প্রাণের আপন?

তবুও আমি বলতে ছাড়ি না….
নেইআঁকড়ার মতো আমার কোনোও আবেগ নেই
বহতা নদীর মতো অকৃপণ সুর নেই
পাহাড়ি ঝর্ণার মতো সেই চাঞ্চল্যও নেই
দাম দিয়ে ভালোবাসা কেনার মতো মুরদও নেই!!

নোঙর

নোঙর

এক সমুদ্র অন্ধজলে ডুবতে ডুবতেও ….
সজনে গাছের শাখাটা এখনো মাথা উঁচু করে আছে,
কেউ দেখেনি…..
বরকত, সালাম, রফিক, জব্বার, শফিউর দেখেছে!
আমি উপসর্গের কথা ভাবি
আমি অনুসর্গের কথা ভাবি
শহীদ মিনারের পাদদেশস্থ পরিত্যাক্ত ফুলেদের কথা ভাবি।
ছেঁড়াদ্বীপ থেকে কিছু কিম্ভুতকিমাকার দীর্ঘশ্বাস ভেসে আসে
আমি তাদের কথা ভাবি!
অথচ কতো নৌকোর মাঝি এপথ দিয়ে আসে-যায়
কেউ এখানে নোঙর ফেলে না
বর্ণমালার বাস্তুভিটায় কেবল চড়ুই উড়ে, ঘুঘু উড়ে
কেবল বলাকা উড়ে না
কেবল নৈঃশব্দের বাতিঘরে অন্ধকার পাস্তুরিত হয়
দীঘল রাতের সাথে পাল্লা দিয়ে দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘায়িত হয়!
আমি সেই অলিখিত অন্ধত্ব বিমোচনের কথা ভাবি
নিষিক্ত জলের সশব্দ পতনে অন্ধকার ভেসে যাওয়ার কথা ভাবি
দৈব- দুর্বিপাকে সমস্ত পাপ-পংকিলতা উড়াল হওয়ার কথা ভাবি
আমি মাঘী পূর্নিমায় স্নাত হওয়ার কথা ভাবি!
যে পথিক সেন্টহেলেনা দ্বীপে নোঙর ফেলে বসে আছে
কাল থেকে কালান্তর……
যে একবার চোখের জলে ভিজিয়ে দিয়েছিলো অন্তর
আমি তার কথা ভাবি…..আমি তার কথা ভাবি…!!

__________________________________
আমার এই কবিতাটি জাতীয় কবি পরিষদের ৪৪ তম প্রতিযোগিতায় সেরা নির্বাচিত হয়েছে।।

গল্পটা চাওয়া-পাওয়ার

গল্পটা চাওয়া-পাওয়ার

এক জীবনে কতোকিছুই তো পেয়েছি.. কতোকিছু
আকাশ, বাতাস, মাটি, জল
রাবণের চিতার মতো চিরবিরহের অনল!
আজ আর আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই
নেই কোনো আক্ষেপ, বিক্ষেপ, ভ্রুক্ষেপ
শামুকের মতো বেছে বেছে আর দিই না পদক্ষেপ
পা কাটে কাটুক
হাত কাটে কাটুক
যতো খুশি বাড়তে পারে, বাড়ুক এ হৃদয়ের ক্ষত
আমি জানি,
চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ সুদূর পরাহত!
এখনো আমার…
প্রতিটি ভোরেই একটি করে জবরদস্তি সূর্য উঠে
ছাদের টবে মেকি ভালোবাসার নামি-দামি ফুল ফুটে
তবুও আলোক সভা, আমার ভাষায় ক্ষণিক প্রভা
খড়ম পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে
মহাশুন্য, পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর ঠেলেটুলে
সেও সুন্দরি ময়ূরীর মতো পেখম মেলে…..
সেও চালতা পাতার আলতা রাঙা পা-য়
জিন্দেগির দাসখত থেকে মুক্তির মিছিলে যোগ দিতে চায়!
সবার মতো সেও যতিচিহ্নের খবর জানে,
তবুও অস্তিত্বের জানান দিতে কে না ভালোবাসে?
কিষাণী যেমন উঠতি ধানের শীষের দিকে তাকিয়ে
তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে…
প্রজাপতি যেমন তারে সহাস্য প্রণতি জানায়
তেমনি…..
ভোরের সে আলো তার কপালে লালটিপ দিয়ে যায়!
আমি ভাবি, তার মতো আমার কপাল কই?
আলো কই আমার জন্য……..
আমি অন্য
আমি বন্য বন্য
তবে বলো দেখি কে আমি সই
মাটির কড়াইয়ে স্নেহভাজা বিন্নি ধানের খই..?
অন্ধকার দূর্গের ভেতর আমি এখন থাকি একা একা
কেউ জানে না
কেবল জানে কবিতা
চাওয়া-পাওয়ার সাথে আমার চিরদিনই সূর্যের শত্রুতা!!

তোমাকে খুব মনে পড়ে

তোমাকে খুব মনে পড়ে

মনে পড়ে ভেন্না পাতার ছানি? ইলশে গুঁড়ি দিন?
কখনও ঝড়ো মাতাল হাওয়া বাড়িয়ে দিতো সূর্য মনের ঋণ!
কর্দমাক্ত পিচ্ছিল উঠোন বেলার একপাশে টুনটুনি ঘর
সোনা ব্যাঙের ডাক, তারছেঁড়া দলিত বাতাস আমায় করে দিতো পর!
ছিন্ন ভিন্ন তালপাতা, পুতুল রাণীর বিমর্ষ তুলতুলে মুখ
তোমার মিথ্যে অভিমান বাড়িয়ে দিতো আমার বুকের ধুঁকধুঁক!
ডাকসই মাঠে হঠাৎ মাথায় মাথায় মিছে টক্কর
শিং গজানোর অজানা আশংকায় দু’মাথার চক্কর !
অতঃপর আলতো ছোঁয়ার সবুজ শিহরণ ।
তোমার অধরের কোণে জমাট বিন্দু বিন্দু হাসি,
চোখ বন্ধ করেই আমি বলে যেতাম ভালোবাসি, ভালোবাসি।
আর তোমার কম্পিত হাত, লাজরাঙা গোলাপ মুখ,
আমার অন্তরের অন্তর
স্বপ্ন মুখর, মুক্ত বিহঙ্গের মতো রচনা করতো কল্প বাসর !
মনে পড়ে পশ্চিম বিলে লাল শালুকের হাট?
,নীলনীল,সাদাসাদা শাপলা !
তপ্ত দুপর বেলা, ছাগল চরানোর ফাঁকে ফাঁকে পুতুল পুতুল খেলা !
তোমার অকারণ হাসি, আমার কৃত্রিম শাসানি !
ঘাসের মাথায় বিলি কাটা, দাদুর পান খাওয়ার আদলে তোমার জাবর কাটা !
আরমানের বাঁশির সুর, সারারাত জাগা বউচি ভোর?
মনে পড়ে বারেক স্যারের কোল? আবুল, লালু, মিলার টিপ্পনী !
মাঠের একধারে শতবর্ষী বটের মাতৃছায়া, রাশিদ ভাইয়ের চানাচুর !
দেবেশ স্যারের কানমলা, ধানের ক্ষেতের আল গড়িয়ে ঘোড়ার বেগে চলা?
আমার গণিত বইয়ের ভিতর তোমার কচি হাতের প্রথম পত্র লেখা
দিন যায়, আমিও নাই, তুমিও নাই, আর কি কভু হবে দেখা ?

উড়ু ছাই

উড়ু ছাই

আজকাল উড়ু ছাইয়ের মতো কথারাও উড়ে
এসব দেখে কবি উড়ুক্কু পাখির নাম ভুলে যায়
যে ছবিতে ছিলো মোনালিসার মতো ভাষা
কবি ভাবে, আমি এখন সে ছবি কোথায় পাই?

যেদিন গুলো পঁচাবাসি হয়েছে হালের বলদের
মতো,
এমনি করে শব্দেরাও কবিতায় পঁচে শতে শতো
তবুও কবির চোখে ফাগুনের যেনো কমতি নেই,
কবি ভাবে….. সত্যে আর সুন্দরে যে ফিরবে…
গণমানুষের প্রাণের কবি হবে বুঝিবা সেই….!!

উড়ু ছাই, কবি তাই………
ভাসামেঘের যাওয়া-আসার মতো বারবার ভুলে যায়!

শব্দ পোড়া গন্ধ

শব্দ পোড়া গন্ধ

তবুও থেমে নেই চাল-চুলোহীন নিপাতন জলের পতন
যদিও আমার দুরবিন চোখ একলা হাঁটে নিস্তেজ প্রান্তর
মাঝে মাঝে কেবল শব্দ পোড়া গন্ধে আকুল হয় অন্তর
তবুও ডানাভাঙা পাখিরা কেউ থেমে থাকে না
দেদার চলছে কেনাবেচা……
অশুদ্ধ হাতের শিরা কেটে কেটে..ভালোবাসার উল্কি আঁকা;
পার্কের ব্যস্ত টুলে বসে টোলপড়া গালে বাদমের যবনিকা!
যেখানে কোনোদিন কোনো অন্ধকার দ্রবীভূত হয় না
সবাই জানে সেখানেও জীবন থেমে থাকে না
ভুলভাল জল পতনের অশরীরী শব্দ খুঁজে নেয় ঠিকানা
তবুও….
ভালোবাসার নামে কথা বলে সুখেন পাথরের কংক্রিট
তবুও…..
কবিতার শব্দে শব্দে নদী পোড়ায় জীবনের হার্টবিট!
অথচ কতো কাজলনদী, কতোদিন জল চোখে দেখে না
রাংতার কাজল মেখে ভুল চোখে জীবনের গন্ধ শুঁকে,
আমি নিপাতন জলের শব্দে
কৈলাশ পর্বতে ধ্যানস্থ মুনিঋষিদের ধ্যান ভাঙানোর কথা ভাবি
স্বগৃহে নির্বাসিত আমার মহাজাগতিক নির্বাণের কথা ভাবি
আমার বায়ুশূন্য অবস্থানে সামুদ্রিক সাইক্লোনের কথা ভাবি!
এতোকিছুর পরেও.. আমি এখন আর একা নই
এখন আমার শব্দ পোড়া গন্ধ আছে, নৈঃশব্দের বাতিঘর আছে
সেখানে নিপাতন জলের উর্বশী পাতন আছে
কাকতাঁড়ুয়ার মতো একলা দাঁড়িয়ে থাকার ফুরসৎ আছে
আমি সেই শব্দ পোড়া গন্ধে বুঁদ হয়ে থাকার কথা ভাবি
শ্বাপদসংকুল অরণ্যে কবিতার একাকিত্ব বিমোচনের কথা ভাবি!!

আমার এই কবিতাটি জাতীয় কবি পরিষদ এর ৪১ তম প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
————————————————————————-

রাত্রির কথা ভাবছি

রাত্রির কথা ভাবছি

রাত্রির কথা ভাবছি
অনেকদিন আকাশে উড়ন্ত বলাকা দেখি না
দৃষ্টিসীমায় অন্ধকার তিতু হয়ে ফিরে আসে
তবুও এ পোড়ামাটি ভালোবাসার কথা ভুলে না!
চিরহরিৎ বৃক্ষরা কেমন আছে?
সবাই জানে, কেউ জানে না!
শিকারি চোখ তাবিজ -কবজ মানে না
পত্ররেখা গলে যেটুকু আলোক আলাভোলা হয়
সবাই কেবল সেটুকুর খবর রাখে,
পেছন বাড়িতে ডাহুকের পদচিহ্ন বাকি রেখে
সবাই নগদ কারবারি হয়
আমি একবার লালপুরের কথা ভাবি
আমি আরেকবার লালখানের কথা ভাবি
বর্ণমালারা ভালো নেই, সে কথা কাউকে বলি না
বলতে পারি না….!!
ঝিঙে ফুলগুলো এখন আর আমাকে কটাক্ষ করে না!!

আমার সবুজ মেয়েটা ভালো থাকুক

আমার সবুজ মেয়েটা ভালো থাকুক

আমার সারাটা নিশি যখন ক্লান্তিহীন ফিরে ফিরে আসে
আসে সদ্যজাত কান্নার নতুন নতুন উপগত উপকরণ
তখন আমি আমার চিরচেনা সবুজ মেয়েটার কথা ভাবি
আমার সবুজ মেয়েটার আজন্মলালিত স্বপ্নিল
বাসরঘরের গাঢ় লাল বুটিদার জমিনযুক্ত শাড়িটার কথা ভাবি
ভাবি কিভাবে সবাই….
সবাই ভালোবাসার ঘাসফড়িং হয়, মায়াবতী প্রজাপতি হয়
আমার সবুজ মেয়েটার দিকে তাকিয়েও দেখে না;
দেখার ফুরসৎ পায় না!
তার মুখের কালশিটে গুলো এখন জেব্রাক্রসিং এর মতো স্থায়ী
তার চোখের কোণ ভিজতে ভিজতে গভীর ক্ষতগুলো
এখন হালের কৃষ্ণগহবর
অথচ সবাই
মিছিল-মিটিং,সভা, সেমিনারে ভালোবাসার বারুদ ফুটায়
সেইসব শব্দ শোনতে শোনতে সে মহাত্যাক্ত-বিরক্ত আছে
তার মুখেচোখে আর কোনো রা নেই
ফ্যালফ্যাল করা চকিত চাহনিতে সুস্পষ্ট ঘৃণার পদচিহ্ন আছে!
আমারও তেমন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই
আমি কেবল জানি
সাপের বিষদাঁত ভেংগে ফেলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অথবা
সাপ থেকে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই
ভালোবাসা, আকাশ আর সমুদ্র এই তিন, আমার আজন্ম ঋণ
তবুও আমার সামান্যমাত্র চাওয়া…….
আমার সবুজ মেয়েটা ভালো থাকুক
সে আমাদের সবাইকে ভালো রাখুক।