জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর সকল পোস্ট

পালাবার কোনো পথ নেই

পালাবার কোনো পথ নেই

কয়েকটা মাছি ওড়াউড়ি করছে রেলস্টেশন, নদীঘাট, হাটবাজার
পৃথিবীর মতো ওদেরও মাথার চারদিকে চোখ, তবে কি ওরাও পৃথিবী?
তবে কি ওরাও নিসিন্দার নীল নীল লেলিহান চোখ?
তবে কি ওরাই এখন স্তন্যপায়ী পৃথিবীর ভুমিকার মুখ?
অনেকদিন কবিতা লিখি না, কবিতাই আমাকে লিখে গল্পের ছল
অস্থিরতা এসেছিলো প্রবাদ পুরুষ, সেও ফিরে গেছে রক্তকবরী
সময়ের দর্পণ ক্ষমা করেনি
চেতনা বিক্রির চোরাবালি
কেউ খোঁজ রাখেনি জোছনাবন্দি খসড়া রচনাবলি!
এখনও থামেনি যমুনার ভাঙন, দশাসই বদন;
জ্যোতির্ময় আত্মা ঘুরেফিরে আসে, বড় রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে
থাকে, ফুটপাত ধরে হেঁটে যায় গাঁজাখুরি গল্প
সময়ের প্রয়োজন পূরণ হয়েছে, এখন তিনিও কেবলই একটি
স্মারক গ্রন্থ!
মাঝে মাঝে অসংলগ্ন চিন্তা ভর করে, আমিও তখন জোয়ান পুরুষ;
স্মৃতিরাও তখন ইথিলিন হয় প্রথম স্ত্রী দ্বিতীয় বিবাহ, সেই মাছির
মতো সারা পৃথিবীময় চোখ, আমার শরীর হিম হয়ে আসে বাস্তুহারা,
কেউ যোগাযোগ করেনি কার্যকারণ, ইছামতির বুক জুড়ে বিষাদসিন্ধু;
আমার পালাবার কোনো পথ নেই!!

একটি দায় এবং সাঁয়ের কবিতা

একটি দায় এবং সাঁয়ের কবিতা

কোনো ভাবনাযুক্ত না করেই বলে দেওয়া যেতো
আমার ভেজাহাতে এক নিমিষেই হতে পারতে……..
একটি দায় এবং সাঁয়ের কবিতা
অতঃপর এখন… আর কোনো সম্ভাব্যতা নেই!

যে মেঘ পথিকে ছায়া দেয়
পথিক কি জানে না, সে মেঘে বজ্র লুকায়িত থাকে?
যে ব্যাঙ কুঁয়োয় বসে সাগরকে ডাকে
নির্মম মহাকাল তারও সহাস্যে বিধাঁয় বড়শি নাকে!

যে বাউলের হাতে একতারা শোভা পায়
সে বাউল কি কোনোদিন দায়হীন হতে পারে?
হতে পারে সরল দোলকের মতো সাঁয়বাজ?
যে কালাজ্বরের গোত্রহীন উঠানামা বুঝে না…..
সে তবে কিসের কবিরাজ?

তবুও আমি আজ বেবাক ভুলে.. বাক, অবাক
হতবাক….
দিনের আলোতে যে চিকামারা দেখে ভয় পায়
দ্বিচারিণী রাত্রির অন্ধকার নামতে না নামতেই
সপাটে চিকামারা তার কতোটা শোভা বাড়ায়?

তবুও একসিদ্ধ চালের ভাতের মতো চারদিকে
ওড়ে এ জীবনের ফেনা
তবুও কবিতার কাছে বাড়ছে কিছু অনাদায়ী দেনা
প্রথম জালে উঠা চাপিলা মাছের মতো আমি
জলে যার জীবন চলে
এতো লাবণ্যময় ভুপৃষ্ট তার কাছে কতোটা দামি?

ম নো বে দ না

ম নো বে দ না

ভেতরে ভেতরে কতো মামলা নগদ জট পাঁকিয়ে আছে
আমার প্রিয়তমা নগরীর আখাম্বা যানজটের মতো বিরক্তিকর
তবুও আমি কি কোনোদিন তোমাকে কিছু বলেছি? বলিনি।।
যেভাবে গাড়ীগুলো কখনও পথের ভালোবাসা ভুলেনা,
ভুলতে পারে না;
গন্তব্যের আশায় মন্তব্য করে না, ভুলে থাকে প্রভারণা প্রতারণা
আমিও তেমনি বারবার ভুলে থাকি তোমার আশ্বাসের বেদনা!
যে পাখির কোনো ডানা নেই, তার কি উড়ার সাধ হয় না?
যে হতভাগা কারো ভালোবাসা পায়নি
তারও কি ভালোবাসা পাওয়ার ইচ্ছা হয় না?
যে সাগরে জল নেই, কেউ বুঝুক, না বুঝুক
তারও কি হতে পারে না মনোবেদনা!!
ভালোবাসা যদি আমায় কৈবর্ত্য পাড়ার মতো নিঃস্ব করে……. করুক না!
যে নদী জানে, একদিন সে সাগরে খুঁজে পাবে ঠিকানা
বেদনা তারে…. কতোটা বেদনা দিতে পারে, তুমি বলোনা?

ডুবসাঁতার

ডুবসাঁতার

ইদানিং সারাদিন সরস শৈল্পিক গালিগালাজের মধ্যেই
মুখথুবড়ে পড়ে থাকি
কানে কম শোনার নিরলস অধ্যবসায় করি, করতেই থাকি
সুখ আর অসুখের পার্থক্যও খুব একটা বুঝি না
বুঝতে চাইও না
কেবল
এক টুকরো আকাশ চিলেকোঠায় পুনঃপুনঃ মুদ্রিত করি
সেখানেই কোনোমতে দিন গুজার চলে অংশীদারী কারবার
সেখানেই নিয়ত চলতে থাকে ভালো থাকার ডুবসাঁতার!
এর বাইরে আরো কিছু প্রাগৈতিহাসিক ইতিহাস আছে
বারোয়ারী চাহিদা পুরণের টানাপোড়ন আছে
আয় এবং ব্যয়ের মিটিং মিছিল, শ্লোগান আছে
নিজে ব্যতীত বাকি সবাইকে সুখী করার দাসখত আছে
মৃত্তিকার মতো মুখে তালা লাগানোর রেওয়াজ আছে!
তবুও নাট্যমঞ্চের নায়কের মতো আমিও কিছু নায়কোচিত
সংলাপ আঞ্জাম দেওয়ার কথা ভাবি
সাতপাঁচ ভেবে পারি না
কেউ কি বলতে পারো…… কোনো সুহৃদ
আমার সাতপুরুষ যা পারেনি, তা আমি কিভাবে পারবো?
এরচেয়ে বরং
যেভাবে চলছে ডুবসাঁতার, সেভাবেই ডুবসাঁতার চলতে থাকুক।।

পালানোর কোনো পথ নেই

পালানোর কোনো পথ নেই

কিছু কিছু নষ্ট কষ্ট বুক থেকে আলগোছে তুলে আনি
ছেঁড়া শার্টের বুক পকেটে সযতনে জাগ দিই
ওরা জাবরকাটে, আমি সে শব্দ শুনতে শুনতে নিদ্রার কথা ভাবি,
মাঝেমাঝে প্রসন্ন হয় ঘুম, আলতো করে দিয়ে যায় চুম!
বাকিটা সময় আশপাশ করি, কোলবালিশে জড়াজড়ি;
ঘৃণাদের দূরদেশে রফতানির কথা ভাবি
দারুচিনি দ্বীপ থেকে সুগন্ধি এলাচ, কস্তুরী আমদানির কথা ভাবি
কষ্টগুলোকে অষ্টধাতুর আংটি পড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবি
দোঁআশ, বেলে দোঁআশ, এটেল জমিটা চাষের কথা ভাবি…!!
তবুও সান্ত্বনার পালে হাওয়ার খরপোশের কথা ভাবতে থাকি
কষ্টগুলো তখন আরো নষ্টা হয়
বিগত যৌবনা পিয়ারীর মতো ট্যারা চোখে চেয়ে থাকে
তবুও তারা ভরা বরষার জলের মতো নগদ স্বপ্ন দেখে
মন না বুঝে কেবল গতর চায়, অশরীরী শরীরের ছবি আঁকে!
আমি প্রাগৈতিহাসিক গুহা ছেড়ে পালানোর কথা ভাবি
পালানোর কোনো পথ পাই না
চারপাশ ঘিরে কষ্টদের পৈশাচিক নর্তন-কুর্দন দেখি
আমি তখন অন্য আমি’র কথা ভাবি
আমার গেঁয়ো কষ্টদের কষ্টের দিনলিপির কথা ভাবি!!

অবরোধ

অবরোধ

সব ছেড়ে ছুঁড়ে এখন আমার খুব খুব ইচ্ছে করে
তোমার মতো একটা কবিতা লিখি জীবনের নুক্যাম্প,
কবিতায় ঝরে যাওয়া ফুলগুলোর কথা বলি
কবিতায় সদ্যমৃত জলসিঁড়ি নদীটার কথা বলি
যে আর কোনোদিন ফিরে আসবে না সকালের
সোনা রোদ, এই ডাঙা ছেড়ে একবার তাকে দিয়ে
আসি প্রবোধ,
কে তুমি দেশ-মহাদেশ?
আমাকে করে রেখেছো . আজন্ম. অবরোধ?

শতাব্দী আমাকে কথা দিয়েছিলো পলাতক অশ্বারোহী,
মকরসংক্রান্তির রাতে সে আমাকে কিছু কলম ও
কালি দেবে, আমার সেই প্রণয়ের রাত আজও আসেনি;
আবহমান প্রকৃতি ঘিরে আছে দীর্ঘশ্বাস, আমার দিব্য
চোখের সামনে সকলেই আদিম মানুষ, অথচ আমি
এখনও মানুষ হতে পারিনি!

আমার এখন খুব খুব ইচ্ছে করে সব ছেড়ে ছুঁড়ে
তোমার মতো একটা কবিতা লিখি, একটা ক্লান্ত-
পরিশ্রান্ত শীতের রাতের কবিতা; যে শহর, যে নগর,
যে মাটি দাঁত কপাটি দিয়ে অচেতন পড়ে আছে
তার জন্য একটা কবিতা লিখি— অন্ততঃ একটা
কবিতা ——!!

প্রেমহীন প্রণয়

প্রেমহীন প্রণয়

একদিন শরীর কথা বলেছিলো
মন কথা বলেনি
আর একদিন মন কথা বলেছিলো
শরীর কথা বলেনি!
প্রেমহীন প্রণয় তবুও বৃক্ষের দিকে তাকিয়ে থাকে
ঝরাপাতার নগ্ন উল্লাসে পতিত নক্ষত্ররাও রাগবিমোচনে যোগ দেয়
দেহের দেশে বিজাতীয় সংস্কৃতির নামতার পাঠ হয়
উড়ুক্কু পাখির কথা সবাই ভাবে,
নিরাক পড়া ভালোবাসার কথা কেউ ভাবে না।
একদিন পাথর প্রেম জেগে উঠেছিলো
কে জানতো….
সেদিন সা রে গা মা পা ভুল ছিলো,
শেকড় না চিনেই যে শিকড় চিনে
কেউ বলতে পারো, তার মুল কতোটা গভীর ছিলো?

মধ্যরাত্রির কিছু ছেঁড়া অংশ

মধ্যরাত্রির কিছু ছেঁড়া অংশ

রাতের কিছু ছেঁড়া অংশ জোড়াতালি দিয়ে একটি
আহত কবিতার বীজ বুনতে চেয়েছিলাম
কিছুক্ষণ আগে তিনি বললেন, অল ডিলিটেড!

এখন হাত-পা ভেংঙে আমি আচানক দাঁড়িয়ে আছি
আমার চারপাশে মাথাব্যথা
খুচরা যন্ত্রাংশের মতো দু’একটি ভালোবাসার কথা!

আমি কিছু বলিনি অর্ধেক ছল
একবার কসমসের কথা বলেছিলাম
দুর্বাসা মুনির কোপানল!

এতো টিনি সাগরজল তবুও এতোটুকু কাঁপেনি
আমার তখন বেহাত দশা
দু’হাতের অঞ্জলি ভরা মারণনেশা!

চিলে কোঠায় দাঁড়িয়ে

একপায়ে দাঁড়িয়ে আছি সন্ধ্যা অবধি, আশেপাশে কুয়াশার
ঘাতক ফোঁটা; রাত্রির পথ ক্রমেই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর,
শবের মিছিলে এ তবে কিসের শোরগোল ?

কাদাজলে জড়াজড়ি পিচ্ছিল পায় কখনও গড়াগড়ি,
লজ্জাবতীর মত দু’চোখের পাতাও স্পর্শ কাতরতায়
একটানা চেয়ে আছে মাটির দিকে,
কখন সমান্তরাল রেললাইন মিলবে কোনো এক ফ্ল্যাটফরমে !
কখন বধির কর্ণকুহরে ঢুকবে আজব বাঁশির হুইসেল!

বুলেট বিদ্ধ লাশগুলি একটা একটা করে জেগে উঠবে?
মার্চ ফার্স্ট করতে করতে সারিবদ্ধ ভাবে এগিয়ে যাবে
বকুল তলায়, ঝাউয়ের বনে
রাস্তার উপর সটান শুয়ে আছে বেওয়ারিশ গাছের গুঁড়ি;
এই রাত শেষ হবে কবে….?

কোনদিন নেমে আসবে স্বর্গ থেকে ভোরের হাওয়া
অক্সিজেনের কোমল ছোঁয়ায় বেঁচে যাবে জিনপরী !
অতঃপর ফুটপাতে আবার বসবে হকারের বেসাতি
সত্য-মিথ্যার ইট পাথর ।
ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকারে তেলাপোকাগুলো বেজায় খুশি হবে
আবার দশহাত ভরে গলধঃকরণ করবে দেবীর প্রসাদ !

আমি চিলে কোঠায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখব
অন্ধকার রজনীর প্রহরের পর প্রহরের আসা-যাওয়া
তবু প্রতীক্ষার সীসা ঢালা প্রাচীরে বুক বাঁধা চলবেই
একটি ভোরের প্রতীক্ষিত প্রত্যাশা চলতে থাকবেই!!

গুরু-শিষ্যের কথোপথন

গুরু-শিষ্যের কথোপথনঃ

শিষ্য গুরু লেখালেখি বাদ দিতে চাই।
গুরুঃ সাধু! সাধু! কেনো বাদ দিবে?
শিষ্যঃ কী হবে লিখে গুরু! কোনো হিসাব ইতো-ই মিলে না।
গুরুঃ সাধু! সাধু! যদি তুমি এতোদিন মানুষের জন্য লিখে থাকো, তাহলে এখনো তাদের জন্য লিখে যাও।
আর যদি এতোদিন নিজের জন্য লিখে থাকো, তাহলে এখনি লেখালেখি ছেড়ে দাও!!
শিষ্যঃ খুব কঠিন কথা গুরু। আমাকে ভাবতে হবে।
গুরুঃ সাধু! সাধু!!

রোড় টু ময়মনসিংহ

রোড় টু ময়মনসিংহ

লক্করঝক্কর বাসে বসে আমি যখন একটি কবিতার কথা
ভাবি
তখন সদ্য ফুটন্ত গোলাপের মতো দেখতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম
মেডিকেল কলেজের সামনে আসতে না আসতেই শুরু হয়
ভানুমতির খেল
লারা সামনে….লারা সামনে
আমি তখন ব্রায়ান লারার ক্যারিশমেটিক ব্যাটিংয়ের দর্শক
কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না লারার উপাচার
রোগীদের আনাগোনা দেখে একটু পরেই রচিত হলো
আমার বে-আক্কেল ভাবনার উপসংহার!

নিজেকে রোগী ভাবতে ভাবতে আমি তখন লারার মোক্তার
প্রথম প্রেমের ফুটফুটে ফসল ঘরে তুলতে না পারার
আক্ষেপে ভুগি
বুকের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা পুরোনো ব্যথা টের পাই
লারা কি হতে পারবে আমার সেই ডাক্তার?

আমি তখন একটি জীবন্ত ফসিলের কথা ভাবি
তার হাড়ের উপর সুগন্ধিযুক্ত আব, আতশ, খাকের
ভিটেমাটির কথা ভাবি
বাসের চাকার খসখস শব্দ আমাকে করে পরিহাস
তবুও জীবনের শেষ গোঙানির মতো জানাতে চাই অভিলাষ

শাবক

শাবক

(পৃথিবীর সকল মায়ের মহান চরণে নিবেদিত)
—————————————————

শতবর্ষী বট গাছটির শীতল ছায়ার নিচে বসে
এখনও আমি নিজেকে বাঁচাই রোদ, বৃষ্টি, ঝড় থেকে
এখনও অহর্নিশি ছাতার মতো আগলে আছেন
আমাকে, অংকুর থেকে চারা, চারা থেকে কুঁড়ি
অতঃপর ফুল, ফসল ।

সদ্য পোয়াতি পাখি যেমন মেলে রাখে ডানা
অসহায় ছানাগুলো যেখানে খুঁজে পায় ঠিকানা
দিনে দিনে বড় হয়, মেলে দেয় দুরন্ত পাখনা
আমিও তেমনি আজন্ম সারস শাবক
আমারও আছে অঢেল স্নেহের ছায়া
আমাকে জড়িয়ে আছে কপোত-কপোতীর অশেষ মায়া।।

আমাকে একটুকরো সুখ দিবে বলে কতো অঞ্জলি
এখানেই এসেই বুঝিবা সার্থক হয়েছে গীতাঞ্জলি!

মুখ দেখেই বলে দেয় হৃদয়ের রঙ
আমার সুখ বটিকার তরে শত জোড়াতালি
আর মিছে সাজা সঙ
তবুও রক্তের ঋণ, শোধিতে পারিনি কোনোদিন
বেলা যায়, যৌবন গায় নতুনের গান
ঝরা আর ব্যাধি ঝেড়ে ফেলে দেয় বটের মূল!

জানি একদিন সবাইকে ছুঁয়ে দিবে হিমশীতল মরণ
আমি যেনো আমৃত্যু ভালোবেসে যেতে পারি…
আমার মায়ের সুচরণ!

কবিতার কথা আর কাকে বলি

কবিতার কথা আর কাকে বলি

কবিতার কথা আর কাকে বলি…..
সবাই মুখ লুকিয়ে নেয় দ্বিপান্তর;
যতোটা প্রকাশক, ঠিক ততোটাই ঘাতক পাঠকের অন্তর!
তবুও আমি সস্তা ভালোবাসার লোভে শব্দদাহ করি
চেরাপুঞ্জি থেকে ঘাড়ধরা করে নিয়ে আসি
অসুর্যস্পর্শা রমণীর মতোন কিছু সুডৌল বাক্য; কী হয় তাতে?
কবিতা আমাকে যন্ত্রণা দেয়, মন্ত্রণা দেয়
পোড়ায় লক্ষীন্দরের বাসর
আমি কি পাঠকের অন্তর, কিঞ্চিৎ দিতে পেরেছি মন্তর?
পারিনি।
ডুমুর শাখায় বসে থাকা, নাম-গোত্রহীন পাখিটির মতো আমিও এখন নির্জীব একা।
পাশ ঘেঁষে রাজকীয় কাকেদের মতো কতোজন হেঁটে যায়
কতো কতো পাখি খুঁজে নেয় সুখের আবাসন
আকাশ থেকে খসে পড়ে চটকদার কিছু বিজ্ঞাপন
সবাই জানে আমিও তাদের মতো কবি হতে চাই…..
আমিও হতে চাই অধুনা তাঁতকলের মাকুর
অথবা
একটি প্রভুভক্ত শিকারি কুকুর!!!

উড়াল পাখির গল্প

উড়াল পাখির গল্প

আজকাল নিজেকে ছুঁয়ে দিতে না পারার কষ্টে ভুগি
কোনটা ভোগ আর কোনটা সম্ভোগ ঠাহর পাই না
সেঞ্চুরির পর ডাবল, ট্রিপল না পাওয়ার আক্ষেপ নেই
তবুও কাজি অফিসে দস্তখতের কথা ভাবি!

পাথরে আদর ঘষে যখন বুঁদবুঁদ উঠে
আকাশের ঠোঁটে যখন আগুনের ফুলকি ফুটে
সেদিন কি বৃষ্টিতে পোড়া.. সান্ধ্যজল ঘুমায়?
সেদিন কি কেউ বিরহের তরী ডাঙায় ভিড়ায়?

আমি অন্ধচোখের প্রতাপশালী রেটিনার কথা ভাবি
যে আকাশে মেঘ নেই
তা কতোটা আকাশ?
খাদহীন স্বর্ণে যেমন গহনা গড়ানো যায় না, তেমনি
যে প্রেমে খাদ নেই, সেই প্রেম কতোটা হয় প্রকাশ?

যে নিজেকে উড়াল পাখির মতো ধূর্ত ভাবে, ভাবে
আকাশের নিচের সমুদয় নদীজল তার;
বলতে পারো, তার ভালোবাসা কোন প্রকার?

আমি কৈলাশের মুনিদের ধ্যান ভঙ্গ হোক, বলছি না
কিছু উড়াল পাখির আড়াল প্রেমের কথা বলছি!!

আজ আর বেদনা লুকোবো না

আজ আর বেদনা লুকোবো না

সবাইকে বলেছি আজ আর কোনো বেদনা লুকোবো না
রাত্রি আর আমি ডানপিটে শীতের পেটে যমজ চামচিকা হবো
পুনর্বার পুনর্বাসনে পাঠিয়ে দেবো আধুলি দিনের শেষভাগ
আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করবো চৈত্র অথবা বৈশাখ!
অতঃপর পৌষ পার্বণের নামে বেদনা গিলে খাওয়ার উৎসব নামে
ঘিয়ে ভাজা শন পাঁপড়ির বদলে ডালডার মচ্ছব হবে
বাউলের একতারার পরিবর্তে ব্যান্ডের নাকাড়া হবে
আমার আর রাত্রির, রাত্রির আর আমার…
প্রেমের নামে শিথান -পৈথানের ময়দান জুড়ে সমুদ্রঝড় হবে!
পেছনে পড়ে থাকবে বাপ-দাদা-পরদাদার উত্তরাধিকার
যে অবোধ শিশুটি আজ অথবা কাল জন্ম নেবে
কেউ কি ভেবেছো কোনো এক কিঞ্চিৎ প্রহর …..
কে তাকে বুঝিয়ে দেবে এই অদ্ভুত জন্মের অধিকার……?