কাজী রাশেদ এর সকল পোস্ট

হারিয়েছো শান্তির নিরবিচ্ছিন্নতা

তোমার কাছেই হলো না যাওয়া,
তোমার কাছেই বারে বারে হেরে যাওয়া,
আমার লোভ, আমার না পাওয়ার হিংসা,
প্রতি ক্ষন তোমাকেই পেতে চাওয়া,
প্রতিক্ষন তোমার কাছেই ফিরে যাওয়া।

তুমি তো অন্য কারো! অন্য ভুবনের,
তোমার মনে কখনোই হয়তো ছিলো না,
কোন গান, ছিলো না কোন ছায়া,
এই লোভী এক মানুষের জন্য,
এই স্বার্থপর এক দানবের জন্য।

তুমি কখনো কোন এক বিষন্ন মনে,
ভুলে অথবা প্রসন্ন চিত্তে,
মায়া অথবা দয়ালু ভাবনায়,
তাকিয়েছো কখনো সখনো,
আমি লোভে আক্রান্ত এক মানুষ,
ভাবনায় নিয়েছি তোমাকে,
হাত দিয়েছি বাড়িয়ে এক বিভ্রান্ত চিন্তায়।

ভুল আর লোভে ভরা এই আমি,
ভালোবাসা আর ভালো লাগার মোহে,
পথ চলি এক দীর্ঘ পথ,
ভুল বুঝি প্রতি পদে পদে,
তোমাকেও করেছি বিব্রত আর দিশেহারা,
এই দিশেহারা, এই বিব্রতবোধে,
প্রতিদিন এক পাপবোধে আছন্ন তুমি,
হারিয়েছো নিজের শান্তির নিরবিচ্ছিন্নতা।

তোমার ছেড়ে যাওয়া

তুমি ছাড়া আষাঢ়ের এই দিন,
বৃষ্টিস্নাত রাত অথবা ভোরের ভেজা ভেজা
প্রহর, সবকিছুই কেমন ফিকে ম্লান হয়ে,
বার বার তোমাকেই মনে করে দেয়।

আমাদের কখনো দেখাই হয় নি,
সামনা সামনি আসাও হলো না কখনো,
অথচ কি সুন্দরভাবে ছেড়ে যাওয়ার
আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নিলে নিজে নিজে।

আমাদের মনঃপথচলা বা আলাপাচারিতা
কখনো কখনো হয়েছে অবিরাম, কখনো
সখনো বিরতির পর বিরতিতে কেটে গেছে
অপেক্ষার নিদারুণ কষ্ট আর বেদনায়।

তুমি তো ছিলে এই ছিলো শুধু মনে,
তুমি থেকে যাবে চিরন্তন, এমন
আশাও মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে গেছে,
অন্ধের দেখে রাখার নিরন্তর চেষ্টায়।

ঘাতকের বুলেট খুঁজে ফিরে তোমাকে

তেতাল্লিশ বছর ধরে ঘাতকের নিশানা,
ঘুরে ফিরে খুঁজে ফেরে,
খুঁজে ফেরে আনাচ কানাচ,
সভা সমাবেশ অথবা চলার পথ,
লক্ষ্য একটা, শুধু একটা।
বেঁচে যাওয়া দুই বাঘের বাচ্চা,
বেঁচে যাওয়া দুই বাংলার কন্যা।

দুটি প্রাণ বেঁচে যায় পঁচাত্তরের নারকীয়তায়
দুটি প্রাণ বেঁচে যায় উনিশ পদক্ষেপেও,
বেঁচে যাওয়া দুই নারী যেনো গোটা বাংলাদেশ,
বেঁচে যাওয়া দুই নারী যেনো শত্রুর ঘুম হারাম।

তেতাল্লিশ বছর যাপিত জীবন এক,
তেতাল্লিশ বছর মৃত্যুর মুখোমুখি,
তেতাল্লিশ বছর মৃত্যু নিয়ে বেঁচে থাকা,
শত্রুর মুখে বার বার ছাই দিয়ে
জীবন কে জিতে নেওয়া।

জীবনের বাহাত্তরে এসেও তাই তোমাকেই
দাঁড়াতে হয় নিরন্ন মানুষের মাঝে,
এখনো বার বার বাংলা এসে তোমাতেই
মিশে যেতে যায় পরম নির্ভরতায়,
জায়নামাজ এর জমিনে তোমার দৃঢ় দাঁড়ানো,
সৃষ্টিকর্তার ধ্যানে তোমার একাগ্রতা,
সবকিছু মিলে শত্রুর অপপ্রচার পায়,
মিথ্যার আর ভন্ডামীর আস্ফালন।

আযান বন্ধ করে উলুধ্বনি উঠা,
শান্তিচুক্তির নামে দেশ ইন্ডিয়া,
মিথ্যে অপবাদে ক্ষমতা দখল,
আর জংগীগোষ্টীর উত্থান,
হলি আর্টিজানের নির্মম হত্যা,
সব মিলে এক ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠা,
সেই পুরানো শকুন, সেই পুরানো ঘাতক।
দখলে নিতে চায় প্রিয় স্বদেশ,
রক্তের হোলিখেলায় মাততে চায় আবার।

আকাশের মন ভালো নেই

আজ আকাশের মন ভালো নেই,
মেঘে মেঘে ছেয়ে থাকা সমস্ত নীল,
আকাশের মন আজ সত্যিই ভালো নেই!!

কালো মেঘের জড়াজড়ি,
আকাশে চিলের উড়াউড়ি,
সোনালীর ডানার চিলের পাখায় আজ,
বিষাদের কালো ছায়ার মাখামাখি।

বিষন্ন সময় গ্রাস করে ধীরে ধীরে,
সমস্ত চরাচর,
সমস্ত জানাশোনা,
দুঃখের তিমিরে এক গভীর দুঃখবোধ,
জীবনের সমস্ত জমিন নিয়েছে দখলে,
আশা ভরসার পথ গুলো চলেছে বেপথে।

ঈশানের এক খন্ড কালো মেঘ,
সকল সম্ভাবনার দুয়ারে তালা দিতে দিতে,
ছেয়ে ফেলে সারা আকাশ,
ছেয়ে ফেলে জীবনের সব আলো,
আশা ভরসার ভাব – ভালোবাসা,
একে একে নিভে যাওয়া সময়।

ভুল করে ভুল সময়ে

বড্ডো ভুল করে ভুল সময়ে চলে আসা,
ভুল পথে হেটে আসা এ জীবন
কখন থমকে যাওয়া,
কখনো ব্রেক করে বসা,
এমন ভাবনায় কাটিয়ে দেওয়া এক জীবন।।

ফেসবুক, হোয়াটস আপ, ভাইবার অথবা
উইচাটের দুনিয়ায় বড্ডো অসময়ে এসে পরা
এক মানুষ প্রতি পদে হোচট খেতে খেতে,
বাধা পেতে পেতে এগিয়ে চলা।।

পরিচয়ের সাদামাটা গন্ডি থেকে একটু
একটু এগিয়ে চলা মানুষ, হয়ে যায়
পরিচিতের সীমানা ছাড়ানো অনেক মানুষ,
অনেক ঠিকাণা, অনেক ভালোলাগা।।

ভুল সময়ে এসে পরা এক মানুষ,
চলতে চলতে হোচট খাওয়া মানুষ,
দিশেহারা মানুষ, জীবনের অর্থ
খুজে ফিরে অন্তর্জালের মিথ্যে
জগত আর রংগের নেশায়।।

বিশ্বাস কর

বিশ্বাস কর!!
আমি চলে যেতে চাই জীবনের ওপারে,
চলে যেতে চাই তোর সীমানার বাহিরে,
প্রতিটা সকাল আসে, মনে হয়
আরো কিছুটা সময়,
যন্ত্রনা দিয়ে তোকে কষ্টে রাখা,
আরো কিছুটা সময়,
তোর সুখের বাগানে তোলপাড়,
আরো কিছুটা সময়,
তোর অপেক্ষার দীর্ঘ যন্ত্রনা।

বিশ্বাস কর!!
সন্ধ্যা নামার ক্ষন থেকে আমার অপেক্ষা
রাত যতো দীর্ঘ হতে হতে যতো গভীরতা,
সব কিছু ছাপিয়ে আমি অপেক্ষায় থাকি
আমি অপেক্ষায় থাকি এক সুন্দর প্রস্থানের,
আমি অপেক্ষায় থাকি তোর থেকে দূরে যাবার,
অনেক দূরে, দূর সেই বহুদুরের যাত্রার।

বিশ্বাস কর!!
আমি জানি, আমার অস্পৃশ্য ছায়া,
তোকে প্রতিদিন,
প্রতিক্ষনে করে দেয় তিক্ত বিরক্ত,
তোর সুন্দর অবসর,
কখনো কোন ক্লান্তিকর অবসাদ,
তোর ভীষন আড্ডায় মেতে উঠার মুহুর্ত,
অথবা কারো ধ্যানে মগ্ন হওয়া আবেগী সময়,
সব কিছু নষ্ট হয়ে যায়, সব কিছু এলোমেলো,
শুধু এক অপাংতেয় আর অসময়ের এক মানুষের
লোভ আর হিংসার ভালোবাসার প্রতিহিংসায়।

বিশ্বাস কর!!
তোকে মুক্তি দিয়ে চলে যাবো অচিরেই,
কোন এক সকালে, ঘুম না ভাঙ্গা সকালে।

তোমাকে ফিরে পাওয়া

আমি তোমার চোখেই দেখতে চেয়েছি
ঘাস, ফুল- ফল আর আসমুদ্র হিমাচল,
সাগরের লোনা জলের নোনা স্বাদ,
জীবনের হেরে যাওয়া যুদ্ধের প্রতিশোধ,
লোভ দ্বেষ আর হিংসার অনলে
আমার রক্তের ভিতরে উঠা ঝড়।

সেই ঝড়, সেই আকুলতা, সেই উগ্রতা
মুহুর্তেই থামিয়ে দিতে চেয়েছি
তোমার কোমল সুরে গাওয়া মিষ্টি সুরে।

তোমাকে না পাওয়ার বেদনা আমার
ভিতরের ঝড়ে,
আমার বেদনার রঙ নীল হতে হতে
নীলাম্বরী বিষে,
আমার দুঃখ রাতের একাকী বিষন্ন
অন্ধকারে,
আমার সত্বাকে কাপিয়ে দিয়ে অশ্রুঝরা
হাহাকারে,
সব কিছু মিলে মিশে আমাকে শুধু তোমার
কাছেই সমর্পিত করে যায়।

ঝিনুকের ভিতরে বালুকনা জমে জমে
যে মুক্তা,
বিষধর সাপের মাথায় আলোকিত করা
যে মনি,
কয়লার নিকষ অন্ধকারে জন্ম নেওয়া
যে হীরা,
মাটির গভীরে কোটি বছরের লুক্কায়িত
যে তরল সোনা
আমি নিমিষেই বিলিয়ে দিতে পারি শুধু
তোমার জন্যে,
শুধু তোমাকে ফিরে পাবার জন্যে।

মানুষ আর প্রকৃতি

একেক সময় একেকটা সকাল,
সামনে দাঁড়ায়,
কখনো আকাশ ফুটো হওয়া অবিরাম বৃষ্টি, কখনো রৌদ্রজ্জ্বল পরিস্কার,
কখনোবা কুয়াসায় মোড়ানো এক রহস্য নারীর মতো আধো ফোটা,
আধো ঢাকা লাজে রাংগা নতুন বউ।
আমাদের এই আটপৌরে জীবনের ঘাটে ঘাটে, নানা রংগের সকাল দুপুর রাত,
তাকে মেনে নিয়েই প্রকৃতির এই রূপ।

প্রকৃতির এই হাসি,
এই কান্না,
এই রুদ্র রূপ,
হঠাত হঠাত বদলে যাওয়া,
আমাদের জীবনের পরতে পরতে
দোলা দেয়,
দোলা দেয়,
নানা রঙ বেরংগে।

কেজানে কোন অদৃশ্যের কোন মায়াবল,
জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত
মিলিয়ে দিয়ে যাওয়া মানুষ আর প্রকৃতি।

প্রকৃতির রুদ্ধশ্বাস ভাংগা গড়ার খেলা,
মানুষ হয়েছে শুধু পুতুল,
মানুষ হয়েছে প্রকৃতির লীলাখেলা।

আবার মানুষও হয়েছে উদ্ধত,
ভাংগতে চেয়েছে প্রকৃতি,
ভাংগতে চেয়েছে সকাল,
ভাংগতে চেয়েছে প্রচলিত সব
নিয়ম কানুনের বেড়া।

সম্পর্কহীন সম্পর্ক

জীবনের পরতে পরতে কিছু মানুষ এসে
ভালো লাগায় ভরিয়ে দিয়ে যায় কিছুটা সময়,
কিছুটা দিন নতুন করে স্বপ্ন দেখায় বাচার।
কোন গভীরতা বা ভালোবাসার প্রশ্নই আসে না,
নেই কোন চাওয়া পাওয়া বা লেনদেনের হিসেব নিকেশ,
কোন স্বার্থ বা চুক্তির নামান্তরও নেই কখনো,
তবু সেই মানুষ থেকে যায় হৃদয়ের এক কোণায়,
থেকে যায় প্রতিদিনের প্রাত্যাহিক ভাবনার অন্তঃপুরে।

এইসব সম্পর্ক থেকে যায় ,
ভালো লাগার গভীরতায়,
প্রতিদিনের চলাফেরার নিত্য উঠাবসায়,
জড়িয়ে থাকা জীবনের লেনদেনবিহীন
এক জোবেদা খাতায়, লিখে যায় যতো
বেদনাবিদুর উপকথা, লিখে যায় ভালো
না বেসেও ভালোবাসার এক সহজ উপ্যাখ্যান।

সংকট আর বিহ্বলতার এক ঘুর্ণিপাকে
জীবন যখন নিম তিতা
মন যখন কষ্টের বাড়ী
বাড়ী ফেরি করে দুঃখবোধ,
এই সব সম্পর্কহীন,
সম্পর্ক গুলো এনে দেয় প্রশান্তির এক ছায়া,
এনে দেয় বিরামহীন দুঃখের বসতিতে,
শর্তহীন সুখের অনাবিল ঠান্ডা হাওয়া।

ফেরাতে না পারা ভালোবাসা

জীবনের রঙ পালটে যাওয়া এক
বিষন্ন বিকেলে,
তোমার খোঁজ পেতেই
বদলে যাবার ভাবনা পেয়ে বসে আমাকে,
এক ভালো লাগা সময়কে কেন্দ্র করে,
প্রাণপনে ঠেকাতে থাকি ঘনিয়ে আসা সন্ধ্যা। অন্ধকারাচ্ছন্ন এই জীবনকে ভরিয়ে দিতে ছুটে যেতে চাই মধ্য দুপুরের তেজী আলোর আলোকছটায়।

আমাদের নিত্যদিনের চলাফেরায়,
আমাদের নিত্যদিনের টানাপোড়েনের
এক ক্ষয়ে যাওয়া সময়কে পেরিয়ে,
ব্যর্থতার গ্লানি ভরা হতাশ সময়কে ছাড়িয়ে, হাতছানি দিয়ে ডাকা তোমার শেষ বিকেলের আহবান,
নিয়ে যেতে চায় সোনালী প্রভাতের অরুন আলোয়।

আমি বিভ্রান্তির বেড়া ডিংগিয়ে,
অন্ধকারকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে,
এগিয়ে যাওয়ার আলোকিত পথে পা বাড়াই,
তুমি নিয়ে এলে নানা সর্তের বেড়াজাল,
অথবা চোখের মাঝে আংগুল দিয়ে,
দেখিয়ে দিলে আমার জন্যে রাখা তোমার সীমান্তের সীমন্তরেখা।

আমি ফিরে আসি আমার সেই শেষ
বিকেলের সন্ধ্যা নামা ক্ষনে।
শুধু ফেরাতে পারি না আমাকে,
ফেরাতে পারি না তোমাকে
দেয়া আমার ভালোবাসা।।

নিঃশব্দ কথামালা

এ এক ভীষন ভালো লাগার কথা,
এ এক ভীষন ভালো না লাগার কথা।
না বলা সব কথা জাবর কাটার মতো
ঘুরে ঘুরে আসে, যাওয়া আসা নিত্যদিন।

আমার এই ভালো লাগা আর না লাগা
আমার এইসব দিনরাত্রির হাবিজাবি ভাবনা,
আমার বলা, না বলা কথামালা সব মিলে যায়
এই কবিতার খেরোখাতায়।

বুকের খাঁচায় আটকে রাখা কিছু কথা
বুকের গভীরে জমা রাখা কিছু গান,
বুকের অলিন্দে থেকে যাওয়া কিছু রাগ,
বুকের ভিতরেই থেমে থেমে বিদ্রোহ।

কতো টা সময় পেরিয়ে গেলে
কতোটা পথ দুজনে পেরুলে
কতোটা ভালবাসা বিলিয়ে দিলে
বলা যাবে সব কথা, সব গান, সব দুখ।

একটি শালিক, কখনো দুই, তিন, চার
আমার জানালায় এসে বলে যায় সুখ-দুখ,
গেয়ে যায় কিচির মিচির নানা গান,
সুর মিলাই সুরে সুরে, গানে গানে।

আমার না বলা ভালো লাগা, না লাগা,
আমার সব না বলা কথা মালা, গান,
আমার জেগে থাকা, আমার হাসি,
আমার দ্রোহ, সব কিছু আজ শালিকের সাথে

অক্ষমতায় হেরে যাওয়া

আমি নিজে উপরেই রেগে যাই বার বার,
আমি নিজের উপরেই বীতশ্রদ্ধ শতবার,
নিজের না পারা, নিজের সব অক্ষমতা,
নিজের কাছেই ধরা পরে যাওয়া,
নিজের কাছেই নিজের বিহবলতা।

আমাদের চাওয়া পাওয়া গুলো
কখনো সখনো মিলে যায় হঠাৎ,
আমাদের ইচ্ছে অনিচ্ছের পরীগুলো
ডানা মেলে উড়ে চলে একই আকাশে,
আকাশের ওই বিশালতাও হার মানে
আমাদের কল্পনার ডানা মেলা ক্ষন।

আমি সেই ইচ্ছে অনিচ্ছের পরী হয়ে
ভুলে যাই নিজের বাস্তবতা, ভুলে যাই
পৃথিবীর সব হিসেব নিকেশ।
সীমারেখার সীমানা পেরিয়ে,
চলে যেতে যেতে হিসেব হারিয়ে,
হারিয়ে ফেলে তোমার আমার এক
অলিখিত পাওয়া না পাওয়ার চুক্তিমালা,
নিজের দোষেই তোমার সাথে হয়ে যায়
এক যোজন যোজন দুরত্ব গাঁথা।।

তারপরো ভালোবাসা

পথে পথে ঘুরে ঘুরে,
যেতে যেতে ফিরে ফিরে,
পুরানো সব কথামালা
পুরানো সব হাসি খেলা,
ভীড় করে, ভীড় করে
হৃদয়ের মন্দিরে।

সেইদিন সেই ক্ষন
সেই স্মৃতি সেই মন,
ঘুরে ফিরে পাক খায়
যায় যায় দিন যায়,
একদিন দুই দিন
এভাবে প্রতিদিন।

একা আসা একা যাওয়া,
মাঝখানে পোড় খাওয়া,
চেনা অচেনা মাখামাখি,
মনে মনে কাছাকাছি,
দুদিনের হাসা কাঁদা,
দুদিনের মিছে আশা।

তারপরো ভালোবাসি
তারপরো তুমি আমি,
তারপরো নীড় বাঁধা
তারপরো ভালোবাসা।

সুখ বিলাসী এক মন

আমি এক সুখ বিলাসী মানুষ, শয়নে,
স্বপনে সুখকে ধরতে চেয়েছি অবিরাম,
সেই সুখের সাথে আমার আজ আড়ি,
আমার সুখ গুলো ধীরে ধীরে দুঃখ হয়ে যায়,
সুখের বাগানে চাষ করা সব লাল গোলাপ
দুঃখের ভারে নুয়ে যায় প্রতিটা ক্ষনে,
তোমার প্রতিটা প্রত্যাখ্যানে।

যেটুকু পাই, যতটুকু তুমি দাও এই আমাকে,
সেখানেই এসে দুঃখ বাসা বাধে,
আরো না পাওয়ার বেদনায়,
আরো ভীষনভাবে তোমাকে পাওয়ার
এক অন্তহীন স্বপ্নের আঁধারে।

প্রতিদিন এক সকাল আসে,
প্রতিদিন এক অসীম প্রতীক্ষায় শুরু হয়,
প্রতিদিন তোমাকে পাওয়ার এক তীব্রতা
আমাকে উজ্জীবিত করে তুলে সারাদিন, সারা সময়,
তুমি হঠাত হাওয়ার মতো এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাও,
আমি স্নান করি সেই মাতাল হাওয়ায়,
আমি ডুবে যাই সেই ক্ষনকালের মদিরতায়,
এরপরেই নেমে আসে বরাবরের দুঃখবোধ,
তোমার চলে যাওয়া ক্ষন আবার বিষন্নতায় ডুবিয়ে,
প্রতিটা প্রাপ্তিই ধীরে ধীরে চলে যায়
দুঃখের সাজানো গোছানো এক অবিরাম দুঃস্বপ্নে।

তসলিমা নাসরিন

(প্রিয় মানুষের জন্মদিনে)

পঞ্চাশেরও বেশী আগে আমার আসা,
পঞ্চাশের বেশী আমার বেঁচে থাকা,
আমার আমি হয়ে উঠেছিলাম,
তোমাদের মতো করে,
তোমাদের সব ভাবনাগুলো নিয়ে।

আমার মেয়েবেলা, আমার ছোটবেলা,
আমার বেড়ে উঠায় ঘটে যাওয়া হেলাফেলা, দিনে রাতে মানুষের
আদিমতার শিকারে লন্ডভন্ড হওয়া,
সবকিছু তুলে দিয়ে লিখেছিলাম
লজ্জা আর আমার মেয়েবেলা।

লিখেছি প্রতিদিনের পথচলা,
নষ্ট হাতের কারুকাজে নষ্ট হওয়া মন, আপনজনের দুর্বৃত মনের শিকার,
নিজের প্রতি ধিক্কারে বলে যাওয়া
সত্য উচ্চারণ, সত্য ভাষন,
বার বার আমাকে করেছে ভ্রষ্টা নারী।

নিজেদের ন্যায় আর নীতির বলিষ্ঠ
পুরুষ বানিয়ে আমাকে করেছে দোষী,
তাদের চোখে হয়েছি পথহারা,
দেশহারা এক নষ্টা নারী।
আমি হয়েছি ধর্মবিরোধী এক বিদ্রোহী,
আমি হয়েছি নিজ দেশ থেকে দেশান্তরী।

এক দেশ হতে এক দেশ,
মহাদেশ থেকে মহাদেশ ঘুড়ে,
সংগে নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ আর
মানুষের নানা বিদ্রুপ মেখে,
পথচলা আমার থামে নি এখনো।

আমার কথা, নারীদের কথা,
প্রতিদিনের নোংরা মনের,
নোংরা ভাবের, বিকার পুরুষের
বিকার ভাবনার কথা,
লিখে যাই,
লিখে যাবো,
দুহাতে সরাবো যতো অন্যায়,
মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা,
নিজের মতো করে, নিজের ভাবনায়।।