খেয়ালী মন এর সকল পোস্ট

টুকরো টুকরো কথা

টুকরো টুকরো কথা

সময়ের রং ভাসিয়ে নিয়েছে সকল অনালোকিত রঙ
এখন বিবর্ণ প্রজাতির প্রজাপতি লাল নীল গোলাপ খুঁজে পায় না
বিরান বাগানে কেউটে সাপের কেতকী নাচ গিলে খেতে চায় সামাজিক দর্পণ।
তোমার ভালোবাসার মোহ মোমের মত ক্ষয়ে ক্ষয়ে অন্ধকারের নির্ভরতায় দাঁড়িয়েছে।
তোমাকে আর সেই রঙে খুঁজে পাই না।
যুগল ডানায় যে আকাশে উড়ে বেড়ানোর কথা ছিলো সেই আকাশ মেঘের কাছে বন্ধী,
ভিজে যাওয়া ঝড়ে যাওয়া ডানা শুধুই সময়ের ক্ষত আর ভবিতব্য নিয়ে
চুপচাপ বসে থাকে
আমি আর নীল আকাশ দেখতে পারি না।

সম্ভাব্য যা কিছু স্বপ্ন বাকি আছে,
সেথায় আঁকিবুকির লাঙ্গল চালায় নবীন কৃষকের ক্ষুরধার মগজের ক্ষুধা।
আমি আর আগামীর স্বপ্ন বুনতে পারি না।
তোমাকে দেবার মত কিছুই আর বাকি নেই,
তোমার কাছ থেকে নেবার মতও কিছু কি আছে বাকি;
তাই চল যাই নিভর্রতার সুখে,
দুজন দুজনকেই নিয়ে বাঁচি।

এটাই কি প্রেম ?

আমার নেই কোন শৈশব কৈশোর নেই যৌবনের খুব প্রিয় কোন স্মৃতি,
নেই রমণীয় কোন আস্পর্ধা।
নেই যোগ্যতা নিঃশব্দের দেয়াল ভাঙ্গার।
প্রিয় ভালোবাসার শরীরে রোদ মেলে ধরা,
এত এত শূন্যতা নিয়ে কি ভাবে বলি গৃহখানি দাও ..
তোমার ছায়া টুকু দাও।

প্রিয় আমার …
তোমার প্রার্থনা গুলো শস্য বীজের মতন ছড়িয়ে দিয়েছি,
এঁকেছি প্রিয় মুখ অস্পষ্ট বর্ণময় রঙ্গিন বিষাদে।

এই যদি হয় ভালোবাসা,
তবে বুঝে নিলাম কারা তবে খুব সুখী হয় !
আকাশে ওড়ায় ফানুস ! মৃত্যুকে থামিয়ে দেয়,
হৃদয়ের রাত ছিঁড়ে রোদ আনে, হারানো প্রাণের কাছে পুনরায় হয় নতজানু,
এটাই কি প্রেম ?

আবার যখন বর্ষা পাবো

আবার যখন বর্ষা পাবো

সময় খুব জ্বালাতন করে
অসময়ে এসে
সময়ের খরস্রোতে
জীবন গেলো ভেসে।

ভালোবাসার বৃক্ষগুলোর
শেকড়টা বেশ হালকা থাকে
পথের বাঁকে পথ ফুরালে
কে আর কাকে মনে রাখে।

হয়নি জানা সত্যি কিছুই
বাতায়নে একলা একা
ভালোবাসার রংধনু রং
চোখে কারো যায় না দেখা।

তুমিও বেশ গভীর ভাবে
রাস্থা দেখে পথ চলে যাও
গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা
মানুষটাকে ম্লান বানাও ।

এখন আমি পাহাড় হলাম
আমার বুকের ঝরনা তুমি
একদিন এক বৃক্ষ হবো
তুমিই হবে আমার ভূমি।

কিংবা এক পৃথিবীতে
তুমি কোন সাগর হবে
সূর্য হবো আমি সেথায়
উদয় এবং অস্তরাগে ।

যুগল ডানার স্বপ্ন দেখে
যতই আমি জাল বুনে যাই
তরল বিষের লাক্ষা বুকে
তিলপরিমাণ শান্তনা নাই।

ভাবছি বসে সময় গেলে
আবার যখন বর্ষা পাবো
আষাঢ় শেষের বৃষ্টি হয়ে
শুষ্ক ঘাসের গা ভিজাবো।

বৃষ্টিজলে ভিজে যখন
আচ্ছাদন এক খুঁজবে তুমি
গ্রীল ধরে দাড়িয়ে থাকা
বৃক্ষ মানুষ তুমি ভূমি।
১৭/১০/১১
———————–

বাবা এবং আমি ব্যবধানে এপার ওপার

বাবা এবং আমি ব্যবধানে এপার ওপার

বহুদিন বাদে স্বপ্ন দেখলাম
আমার মৃত বাবা খুব আদরে সোহাগে
আমায় কাছে ডাকছে,
আয় খোকা আমার কাছে এখানে কোন দুঃখ নেই,
অতিরিক্ত দামে পণ্য কেনার ঝামেলা নেই
নোংরা রাজনীতি নেই, আমলা নেই,
ময়লা ডাস্টবিন নেই, যানজট নেই,
রোড এক্সিডেন্টে লাশ বিকৃত হবার ভয় নেই,
নারী বা শিশু নির্যাতন নেই, বিষাক্ত খাবার নেই
প্রখর সূর্যতাপ নেই, হরতাল নেই,
কারফিউ নেই, মানসিক রোগ নেই,
রাজাকার নেই, বুলেট নেই সব থেকে বড় কথা
এখানে মরে যাবার ভয় নেই।

আমি কেমন ঘামতে থাকি স্বপ্নের মাঝে
চিৎকার করে বলি বাবা ওখানে আলো নেই
অন্ধকার, শুধুই অন্ধকার
আমি অন্ধকারকে ভীষন ভয় পাই বাবা।
বাবা হাসেন
হেসে বলেন তুই কি খুব আলোর মধ্যে আছিস!
এই অন্ধকার থেকে তোর বেঁচে থাকার
অন্ধকার আরো বেশী ভয়ানক।
বাবা ওখানে ফুল নেই পাখি নেই
বাবা আবার হাসেন বলেন
তোর শহরে কি ফুল ফোটে পাখি গান গায়!
বাবা তোমার কাছে কোন অনুভূতি নেই
মৃত মানুষ সকল অনুভূতি বিহীন।

এই বার বাবা অট্ট হাসি দিয়ে বলেন
তোরা যারা এখনো বেঁচে আছিস
সেই তোদের কি অনুভূতি আছে !?
তাহলে আমাদের কি আছে ?
তোদের যা আছে তা হলো শুধু দেখে যাবার আর
সয়ে যাবার ক্ষমতা যাকে শুধু পশুদের জীবনের
সঙ্গে তুলনা করা চলে।

সুরঞ্জনার জন্য

সুরঞ্জনার জন্য

সুরঞ্জনা কোন সে সূতার টানে
বারে বারে আসো ফিরে
জীবনের ঐ ক্ষণে
কোন মোহ আজ তোমায় টানে
যায় কি তাকে কেনা
কেনার জন্য জীবনে আজ
বাড়ুক কিছু দেনা

কোন কথাতে ভুলে থাকো
সময় কিংবা লাজ
সমীকরণ মেঘের মাঝেও
থাকে কিন্তু বাজ
উল্টো ধারার জীবন যখন
খুব জমে যায় মৌ
পুতুল খেলার পুতুল গুলো
হয়না কিন্তু বউ

ফিরে আসার পথটাতে আজ
শ্যাওলা যদি জমে
খুব উচাটন মন কি বলো
মিষ্টি কথায় দমে।

নির্মীলন মন

নির্মীলন মন

বাতায়নে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁয়ে যাই
দু হাত বাড়িয়ে।
কিছুটা সময় পার;
আঙিনায় বাষ্প জমে যায়
হয়তো হৃদয়েও,
তারপর আমার হিম শীতল
অবশ দেহ ঢুকে পরে
স্মৃতির খোয়ারে।

অবরুদ্ধ জানালায় কত নিয়ন আলো
তবু আমি তমিস্র যানের যাত্রী হয়ে
উপভোগ করি আটপৌরে পরাধীনতা;
দূরে বরষায় শেষে বিরান সবুজের মাঠ
ফসলি জমি জোয়ারের জলে থৈ থৈ
প্রতীতি সুখের ভঙ্গুর সময়
আমার চিন্তার পায়রা গুলো
ফিরে যায় সবুজ ঘাসে,
ঘাস ফড়িং এর পাখায়
কিংবা কাশ ফুলে।

ধানুকী হয়েও আমি
শাকান্নতে সাবলীল,
তবুও জীবন আমার পরবাসে
ক্ষয়ে যেতে যেতে ধূপের মত
গন্ধ বিলাতে পারে না।

পরাজয় মেনে আক্রান্ত মানুষ

পরাজয় মেনে আক্রান্ত মানুষ

নিঝুম দুপুরের চিন্তামগ্ন মন
সন্ধ্যার পর জলৌকা হয় শরাবের সাথে
জাঁতা পরা জাঁদরেল বহ্নি;
ঠুংরি বাজায়, পরস্মৈপদী ফুটানি;
তবুও মধুমেহ মহাজন
মধু খোঁজে ব্যাধিনীর মৈনাকে।

শঙ্কর লোক এই যুগে মুখে দিয়েছে ঠুসি
চতুরঙ্গ সেনা সাজানো মুসকিল
ঘুণপোকার দল যত্রতত্র ভণ্ডুল করে
সংমিশ্রণ সংস্থাপনা;
বিবেক তাড়নায় সঙ্কোচিত হতে হতে
শ্যাওলা ধরে যায় বুদ্ধির মানচিত্রে।

তারপর একদিন
আমার সবুজ চেতনা প্রশ্ন বিদ্ধ হয়
আমারই পরবর্তী প্রজন্ম এর কাছে
তারপর তারপর
অসীম ক্লান্তি মনে সেই পরাজয় মেনে নিয়ে
নিশ্চুপ চিন্তার দাবা খেলা
নিজের সাথে।

কেউ দেখেনি

কেউ দেখেনি

বুঝেও না ফিরে তাকানো মাঝে একটা ভালো লাগা থেকে যায়;
স্মৃতিপথ রামধনু হয়ে বৃদ্ধ বয়সে ঘোর লাগা ঘোলাটে চোখে কষ্টের ভার লাঘব করে।
ঘরের মধ্যে যে যন্ত্রণার কারাগার থাকে, তা থেকে রেহাই পেতে বাজারের থলে হাতে কিংবা রান্নাচড়ানো।
সবটাই তোমার শেখানো পিতামহ আমারা শুধুই বহন করি আর গন্তব্যলোকে পৌছে দেই।
আমার ভার বহন করার ক্ষমতা না থাকলে তোমাদের বড় হতে দিতাম না, তোমরা ভার বহন করার হারিয়ে
আমাকে বুড়ো হতে দেবে না। আমার অপরাধ আমি ছেড়ে দেইনি, তোমার অপারগতা তুমি বুঝতে পারনি কিংবা বোঝাতে পারনি।
কাকে কাকের মাংস খায় না বলে জানতাম
আমি কাকে দোষ দেবো
সময়?

না সে তো নিয়মে খাঁচায় আটকানো উড়াল পাখি
যে সত্য বিধানের বাইরে জায়গা করে নেয় একদিন সেই দাম্ভিকতা নিজেকেই খেয়ে নেয় অজগরের মত।
নিয়ম ভাঙ্গার নিয়মরক্ষায় যে খেলা চলছে তার কতটা হিসাব রাখে জগতের হিসাব রক্ষক
বুঝেও চোখ বুজে বসে থাকা ছাড়া কারো কিছু করার ইচ্ছে নেই।
বুঝেও না ফিরে তাকানোর মধ্যে একটা ভালো লাগা থেকে যায়, কাকের চোখ বুঝে খাবার গুজে রাখার মত একটা ভালো লাগা।

শকুন খাদ্য ঘাতক ৭১

শকুন খাদ্য ঘাতক ৭১

আমায় তোর যতই বল শকুন
দুঃখ থেকেও অনেক খুশি হই
যখন ভাবি দৃষ্টি আমার মরা পচার দিকে
আয় ছিড়ে খাই গাত্র তোদের
ঘাতক ৭১।

আমায় তোর যতই বল শকুন
দুঃখ থেকেও অনেক খুশি হই
শূন্যে থেকেও নজর চরে মাতৃভূমির বুকে
আয় ছিড়ে খাই কণ্ঠ তোদের
ঘাতক ৭১।

আমায় তোর যতই বল শকুন
দুঃখ থেকেও অনেক খুশি হই
যখন ভাবি দলবেঁধে যাই খাবার অন্বেষণে
আয় ছিড়ে খাই বুকটা তোদের
ঘাতক ৭১।

আমায় তোর যতই বল শকুন
দুঃখ থেকেও অনেক খুশি হই
যখন ভাবি আমার নখে রক্ত ঘাতকের
চোখ দুটো তার উপ্রে নিয়ে
কাঁড়াকাঁড়ি করি
দেশটা আমার হবে নাতো
ফেরিওয়ালার ফের।

আমি মুক্তির পথে যেতে চাই

আমি মুক্তির পথে যেতে চাই

ভাঙ্গাচোরা দেয়ালের মাঝখানে দাঁড়িয়ে
বিবেকের তাড়নায় মুক্তির পথ খুঁজি।
আকাশে, মাটিতে কিংবা নদীতে দাদাদের চলাচল
কেউ ধনী, কেউ দূর্বল কেউ বা হতাশ;
এক উন্নয়নশীল দেশে আমার আবাস,
তবু কি উন্নয়নে পাই স্বাভাবিক জীবন!

চোরদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে অধিক
সব মানুষ কি সামাজিক জীব ?
সমাজের কোঠরে অসামাজিক কাজ,
বেশ্যার দেহে দেবতার সাজ আজ গড়িয়েছে যারা,
ধিক্ তাদের ধিক্।
শূন্য বোধে জাগ্রত জাতিসত্ত্বা
নজরুল হতে পারে না
বিদ্রোহের একটা ধরন চাই;
শুধু মানব বন্ধন বা বান্ধব
প্রক্রিয়াকে করে না সচল।
শানিত মানস সন্মানিত সমাজ
সুশীল গৌণতা আবার সেই যাঁতাকল।

সমাজ দুলতে থাকে, নেশাখোরের
দৃষ্টিতে যেমন দোলে এপিটাফ।

এক জোড়া পাখির যুদ্ধে
ঝড়ে পরে অগনিত ফুল
দেয়ালে, কার্নিশে, রাজপথে,
বিশ্ববিদ্যালয়, অফিসে, রেল লাইনে,নদীতে, মন্দিরে, মসজিদে, গির্জায়,
মায়ের বুকে, বাবার কাধে, বোনের চোখের জলে
এমনি কি সাত বছরের শিশু এর থেকে বাঁচতে পারে না।

নিজেকে কুঠার করতে পারিনা বলেই
বিবেকের তাড়নায় মুক্তির পথ খুঁজি।
________________________

আমাদের সব কিছু

আমাদের সব কিছু

আমাদের সব সম্ভাবনায় অসম্ভবের ভার
চেনা জানা সরল পথে জমে আছে ক্ষার।
আমাদের সব নগ্ন ছবি চার দেয়ালের কাছে
আটকে থাকে কাঠের ফ্রেমে যুক্তি বিহীন ছাঁচে।

আমাদের সব দুঃখ গুলো তাঁতীর তাতে বোনা
দিন রাত্রি ঘটাং ঘটাং শব্দ যাবে শোনা।
আমাদের সব ভাবনা গুলো আকাশ কুসুম ভয়ে
জ্বলে থাকে আকাশেতে দূরের তারা হয়ে।

আমাদের সব ভালোবাসা ব্যাংকে ডিপোজিট
কথার ফাঁকে আটকে থাকে শক্ত কোন গিট।
আমাদের সব সুখ গুলো আজ উড়াল পাখির ডানায়
ঘুরতে বের হয় আকাশ নীলে দূরের অজানায়।

আমাদের সব উচ্ছলতা তপ্ত বালুর বুকে
পায়না ভাষা নীরবতায় দু’জনারই মুখে।
আমাদের সব অবহেলা বারো বছর পরে
একই সাথে বসত করে তোমার আমার ঘরে।
_____________________________

** নীচের লাইন থেকে উপরে অথবা উপর থেকে নীচে …
… যে ভাবেই পড়েন কথা কিন্তু একই।
_____________________________

তোমার অভিমান গুলো

তোমার অভিমান গুলো

তোমার অভিমান গুলো বড় বেশী ভালোলাগে।
মাঝে মাঝে তাকে গির্জার কোরাস ভেবে
ভুল মনযোগে কাটে সময়;
ঝরে যাওয়া ফুলের পাপড়ি ভেবে
সযতনে তুলে রাখি বইয়ের পাতার ভাঁজে।

কখনো বা নতুন টাকার মত
আমার ব্যাংকে জমা করে রাখি;
ভবিষ্যতে খরচ করবো ভেবে।
তোমার অভিমান গুলোকে তুমি
আমারই মত তুলে রেখো আমার জন্য,
শুধু মাঝে মধ্যে একটু ঝিলমিল রোদে
তাকে শুকাতে দিও, আমাদের জন্য।
এখন আর এর বেশী প্রয়োজন নেই
এখন তুমি বড় বেশী আর্দ্র
এখন আমি ভিজতে চাই না তোমার অভিমানে
কারণ আমি অনৈতিকতাকে বড় বেশী ভয় পাই
সীমা রেখার বাইরে যেতে পারিনা বলেই ।
—————————-

শেকড়ের ভিতরে বেঁচে থাকা

শেকড়ের ভিতরে বেঁচে থাকা

পুরাতন হৃদয়ের দেয়ালে খসে পড়া আস্তরন
একদিন এক বটবৃক্ষ কুঁড়ি মেলে আকাশের দিকে
তার পর ধীরে ধীরে বড় হয়, অনেক বড়
আর আমার দেয়ালটাকে শেকড় দিয়ে আঁটকে রাখে
অক্টোপাসের মত।
কিন্তু হায় তবু কি বেঁচে থাকার সুখ খুঁজে পাই;
বরং মনে হয় শেকড়ের গভীরতায় কখন যেন
খসে পরে আতি যত্নে লালিত ভাঙ্গাচুরা দেয়াল।

তবুও সেই প্রথম জন্মনেয়া দুটি পাতা
আমাকে আজো রংধনুর রং দিয়ে যায়
গতানুগতিক জীবনের বাইরে এসে।
আজো স্মৃতিরা মালা গাঁথে জোনাকির আলোয়
আজো পিছন ফিরে দেখা গোধূলি সময়;
বিচার বিহীন সময় হত্যা করে পথ চলা
আজো আমাকে কাঁদায়
শুধু পাল্টাতে পারিনি বলেই।
একদিন সবাই যেমন পুরাতন বাড়ী ভেঙ্গে
নতুন ইমারত তৈরী করে আমি তেমন পারিনা,
তাই বুকের মাঝে বটের শেকড় নিয়ে বেঁচে থাকি
যার কারন জানি না, তবুও কেন পাখিরা ঘর বাঁধে না
আমার সেই বৃক্ষের ডালে।

আমি তো বৃক্ষই, কে না জানে
পুরাতন দালান কোঠা যদি ঢেকে যায় শেকড়ের
আস্তরনে তখন দালানই বৃক্ষ।
এখন শুধু ভয় ঝড়ে নিরুদ্দেশ হবার।
প্রকৃত ঝড় তার চিহ্ন রেখে যায়,
কিসের চিহ্ন থেকে যাবে যদি আসে
কোন লণ্ডভণ্ড ঝড়
শেকড়ের লাবণ্যের না দালানের জীর্ণতার।

বসন্ত দিন আসবে বলে

বসন্ত দিন আসবে বলে

বসন্ত আসবেই সুখের ঘরে
খেলার ছলে। শীতের এমন
শক্তি কিবা শক্ত করে
জাপটে ধরে, বসন্ত ফুল
ফুটবে যখন তোমার
আমার সুখের ঘরে।

আসবে বলে সাজিয়ে রাখি
আমার ঘরের গৃহস্থালি,
ফুল দানিতে রং এর বাহার
খাবার ঘরে অনেক আহার,
দোলনাটাতে মাদুর বিছাই
দেয়াল জুড়ে আকাশ সাজাই,
চুলগুলিকে দুই বেনুনী,
মাঝ কপালে চাঁদের ফোঁটা
ঠোঁটের ভাজে রং এর ছটা,
চোখের কোনে কাজল আঁকা,
গলার খাজে সাতনড়ি হার

হাতের মাঝে চুড়ির বাহার।
আসবে বলে সাজিয়ে রাখি
অনেক দিনের কষ্ট জমাট,
একলা থাকা বিছানো খাট,
তোষক,বালিশ, লেপের কভার
আর বুকের মাঝের কিছুটা ভার।
আসবে বলে ফুলকে তুলি
ফুলগুলোকে সুতোয় বুনি
ভুলগুলো সব হাওয়ায় ওরে
রাত্রি শেষে অনেক ভোরে।
খুশির তোরে মনকে নাচাই
কুয়াশা সব সরিয়ে দিয়ে
পেঁজা তুলোয় আকাশ ভাসাই।
আসবে বলে একলা থাকি
একলা হাঁটি বিরান পথে
হাতের মাঝে হাত খুঁজে যাই
বসন্ত দিন আসবে বলে।

সার্কেল

সার্কেল

বিবর্ণ দিনের শেষে পথ গুলো আর খুঁজে পাইনা,
অনন্তকাল ধরে পথ হাঁটবো বলে যে পথে নেমেছিলাম,
সেই পথে চলতে গিয়ে দেখি পথের সরল রেখা বিলুপ্ত হয়ে শূন্যপথ। পথ হারাবো জন্য আজ পথের খোঁজ মেলে না।
বসে থাকাই অবধারিত, ট্রেন চলে গেছে ঝুমঝুম বাজনা বাজিয়ে চোখের সামনে দিয়ে। গন্তব্য না জানার জন্য টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়াতে পারিনি।
সময়ের ক্ষয় হতে হতে দিনের আলো গোধূলি, তার ও পরে গাঢ় অন্ধকার, একাকিত্বের ভয় সবথেকে যন্ত্রণাময় সেই গভীরতা সরিয়ে দেখে যাই রাতের আঁধারে, দূরে আরো দূরে কেউ একজন মশাল জ্বালিয়ে হেটে যায়, আমি তার কাছে যাবার রাস্থা খুঁজে পাই না তাকে সঙ্গী করার বাসনা নিয়ে যতটা লম্বা পা ফেলি দেখি সে ততটাই দূরে মিলিয়ে যায়। দিকভ্রান্ত হয়ে পারাপার এর মাঝে পক্ষকাল বসে থাকি, জেগে উঠতে গিয়ে দেখি হেমন্তের দিন শেষে কুয়াশার চাদরে জড়ানো শীত এসে গেছে, আবার তাই সকালের কাঁচা রোদে শরীর জরাবো বলে পথের পাশেই বসে থাকি।

এভাবেই থেকে থেকে চলে যায় বসন্ত, বর্ষা, গৃহতল, আচ্ছাদন, খসে পরে বসন ভূষণ,সৌখিন স্বাধ আর পকেটের ফুটো থেকে খসে পরা খুচরো পয়সা গড়িয়ে চলে যায় লোকালয়ের কাঁচা বাজারে।
নতুন করে বুঝতে পারি পায়ের মাঝে শেকড়বাকড় গুলো আরো গভীরতা চায়।
আমি বৃক্ষজাত মানুষ হয়ে নতুন জন্ম লাভের আশায় ডালপালা মেলে ধরবার চেষ্টা করি, চেষ্টা করি পাখিদের গৃহ গুলো সৌখিনতায় ভরে দিতে, ভাবনায় আসে একটি ছায়াতল তৈরি করে পথিকের পথের দিশা হবো।
ভাবনা গুলোর ডালপালা শুকিয়ে উনুনের উত্তাপ বাড়ায়, আমি পা বাড়াতে পারিনা।
এর পর চলে যায় দিন, মাস, বছর
যেমন আগে গিয়েছে যেমন আগামীতেও যাবে।

আর আমি সেই পথিক হয়েই থেকে যাবো যেমন আগেও ছিলাম;
আমার আর অনন্তকাল চলা হবে না যেমন আগেও হয়নি
আমার আর পথ হারানো হবে না
কারণ পথ হারাবার জন্য আর কোন পথ অবশিষ্ট নেই।

* এটা কোন কবিতা না কেউ তেমন কিছু ভাবলে সেটা তার ভাবনা, তবে ছবিটা আমার তোলা।