ট্যাগ আর্কাইভঃ আত্মচিন্তন

ব্যর্থতা, জীবন এবং অন্যান্য!

FB_IMG_1687356295959

জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে কাঁধে হাত দিয়ে ভরসা দেবার মত মানুষের দরকার পড়ে। মানুষটা যখন নিজেকে আর বিশ্বাস করতে পারে না, নিজের ভেতরে অবিশ্বাসের সুতো জাল বুনতে শুরু করে করে তখন এমন একজন মানুষের দরকার পড়ে। মানুষটা হতে পারেন আপনজন কেউ কিংবা অপরিচিত কেউও। বয়ঃসন্ধিকাল পার করে যৌবনে পদার্পণ করার সময়টা বড্ড খারাপ। ক্রমশঃ জীবনের সমস্যাগুলো ঘনীভূত হতে শুরু করে কিন্তু তখন আর বাবা-মাকে সেগুলো বলা যায় না।

সে সময়টাতে যখন আর কারো সাথে শেয়ার করবার মত উপায় থাকে না কিংবা শেয়ার করবার মত মানুষ পাওয়া যায় না তখনই মনের মধ্যে দানা বাঁধতে শুরু করে আত্মহননের পথ বেছে নেবার চিন্তা। যান্ত্রিকতা মানুষকে সামাজিকভাবে কাছে আনার চেষ্টা করলেও মানুষকে সেভাবে আপন করে তুলতে শেখাতে পারেনি।বিশ্বাস করতে শেখায়নি। অবিশ্বাসের জালে আবদ্ধ করে রেখেছে সবকিছু। এসময়ে এসে কারো মনের দুঃখ কিন্তু মনের আক্ষেপ শোনার মত মানুষ খুঁজে পাবার চেয়ে ডুমুরের ফুল খুঁজে বের করাটা বোধ হয় সহজ!

জীবনের একটা পর্যায়ে এসে হাল ছেড়ে দেবার প্রবণতা মানুষের নতুন কিছু নয়। খেই হারিয়ে ফেলা জীবনটাকে আবার নতুন করে তুলে ধরতে দরকার হয় তেমনই কিছু মানুষের। কাঁধে হাত রেখে আশ্বাসের দরকার হয়। নতুন করে বাঁচবার প্রেরণা যোগাতে এমন কিছু মানুষের একটু কথা শোনা কিংবা তাকে কিছুটা সময় দেওয়াটাই অনেকটাই যথেষ্ট। প্রতিবার পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে কিংবা এডমিশন টেস্টের পর এভাবে নতুন করে চেষ্টার সাহস দেওয়া মানুষের অভাবে অনেক জীবন বিপথে চলে যায় কিংবা আত্মহননের পথেও এগিয়ে যায়।

সাফল্য ব্যর্থতা মিলিয়েই জীবন। সাফল্যের সময় পাশে থাকার চাইতে ব্যর্থতার সময় পাশে থাকাটা প্রেরণা যোগায় নতুন সফলতার পথে হাঁটতে! ব্যর্থতার জন্য তিরস্কার নয়, একটু পাশে দাঁড়ান মানুষটার। হাজার রাত জাগার রাতের চেষ্টার পরেও যখন মানুষটা ব্যর্থ,তখন তার কষ্টটা আপনি কখনোই বুঝতে পারবেন না। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা লাগাবার মতো মানুষের অভাব নেই। কিন্তু ক্ষত সারিয়ে তোলার মানুষটার এ সমাজে বড্ড অভাব!

বেতন বিড়ম্বনা

Simple cartoon of a boss chucked out his employee of his office, business, fired, angry boss concept

সব কিছু ঠিক আছে ঠিক নেই শুধু বেতনটা
তিন মাসে এক মাস দেয় তবু ছয় মাস পরে।
তাই বুঝি ভুলে যাই চাকরিটা করেছিলাম কবে
গিন্নী বলে ঘরে এনো চাল মাছ ভাব যদি তবে।
আরও কত ভুলি নিজের নাম সহ নামটা ছেলের
সবই কি দোষ আমার নেই কিছু ভুলের?
বস বলে অফিস হবে ঠিক, বেতন কি দেইনা আমি
পেটে কত মনে কত ক্ষুধা জমে জানে অন্তর্যামী।
বেতনের কথা আনেনা মুখে ভাবেননা তারা
কেরানিরা পায় কিনা খেতে, কেমনে জোগায় ভাড়া!
এইভাবে চলছেতো চলছে দিন মাস বছর ব্যাপী
সাহেব ভাবে যা করার করুক ওরা আমিতো হ্যাপী।।

ঘুমন্ত যাত্রী

ঘুমন্ত যাত্রী আমি এই মহাবিশ্ব যানে!
একটু পরেই নামবে তোমারা সামনের ঐ স্টেশনে।।

দুচোখ আমার বাড়ী ফেরার স্বপ্নে ভরা!
জাগাও আমায় জেগে আছো তোমরা যারা।।

নইলে রয়ে যাবো আমি এই মহাবিশ্ব-যানে!
হয়তো হারিয়ে যাবো কোনও এক নিস্তব্ধ অজানার পানে।।

হয়তো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে
ফিরবো আবার এ পথেই!
হয়তো বাড়ি ফেরার স্বপ্ন আমার
রয়ে যাবে শুধু স্বপ্নেই!

উঠবে কতো নতুন যাত্রী!
হবে কতো নতুন মৈত্রী!
রেযোয়ান আর সাবিত্রী!
ছেড়ে যাবে অনেকেই ধরিত্রী!
শুধু রয়ে যাবো আমি ঘুমন্ত এক যাত্রী।।

হয়নি যখন সৃষ্টি বায়বীয়-তরল-কঠিন!
হয়নি সৃষ্টি কিছুই বাঁধেনি জমাট
ছিল শুধুই শূন্য – মহাশূন্য চারিধার।।

আবার শূন্যতার আগেও যে ছিল আঁধার!
সে আধাঁরেরও আগে!
সেই যে সময় শুরু হওয়ার আগে থেকে!
চলেছি শুধুই ঘুমিয়ে থেকে।।

মহাজগৎ ঘুরে ঘুরে!
জন্ম-মৃত্যুর স্টেশন পেরিয়ে!
শুরু আর শেষের বৃত্ত ভেঙ্গে!
বৃত্তের বাহিরের বৃত্ত ছাড়িয়ে!
জন্ম থেকে জন্মান্তরে!
চক্র থেকে চক্রান্তরে!
যাত্রার মাত্রায় সিক্ত আমি ঘুমন্ত এক যাত্রী।।

সহস্র জীবন ধরে ধাবমান এ যাত্রা শেষ করে!
ফিরে যেতে চাই আমার অস্তিত্বের উৎস-মন্দিরে।।

দুচোখ আমার বাড়ী ফেরার স্বপ্নে ভরা!
জাগাও আমায় জেগে আছো তোমরা যারা।।

আত্মচিন্তন-১১ (ভাবভঙ্গি)

ভাবভঙ্গি !!!

বর্তমান ভাবের এই ভুবনে ভাবুকেরা আর ভাব দেখায় না। যারা ভাবে চলে তাদের ভাবের অভাব থাকলেও ভঙ্গির অভাব নেই। ভাবনার দৈন্যতায় ভাবের ভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে গেছে ভীষণ ভাবে। কিন্তু ভাবুকদের ভাবের সাথে ভঙ্গির অভাবে ভুল ভাবে ভাবের সংজ্ঞা প্রতিষ্ঠিত করতে ভাব নেয়া ভাবুকদের কোন বৈরী ভাবের মুখে পড়তে হয় না। ভাবভঙ্গিতে যে যত এগিয়ে, ভাবের দুনিয়া তার ততোটাই আয়ত্বে। তাই প্রকৃত ভাবুকদের ভাবনা ও ভাব নিয়ে এই ভাবভঙ্গির ভবে টিকে থাকাও আয়ত্বের বাইরে চলে যাচ্ছে দিনকে দিন। এখন ভাবুকদেরও ভাবতে হচ্ছে, তারা কি নিজেদের ভাব নিয়ে থাকবে নাকি ভঙ্গি ধারন করে যুগের উপযোগী ভাবুক হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যে অনেক ভাবুককেও ভাব বিসর্জন দিয়ে ভঙ্গিতে মাততে দেখা গেছে। স্বভাবে ভঙ্গিবাজ না হওয়ার কারনে তারা ভাবও ছাড়তে পারেনি আবার ভঙ্গিও শিখতে পারেনি ভালোভাবে। এরা ভাব ও ভঙ্গি দুই দিকেই ব্যার্থ। যারা সার্থক তারা ভাবুক হিসেবে ভণ্ড হলেও ভঙ্গিবাজ হিসেবে যথার্থ। এই ব্যর্থতা ও সার্থকতার হিসেবে ভাবুক সমাজ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। অগভীর ভাবুকেরা আজ “ভাব বড় না ভঙ্গি বড় ?” সেই হিসেব মেলাতে ব্যাস্ত। প্রকৃত ভাবুকদের এই সব ভাবভঙ্গিতে কোন আগ্রহ নাই। তারা আজ আত্মসম্মান বাঁচাতে নিশ্চুপ। এই সুযোগে ফায়দা লুটছে ভাবভঙ্গিতে ভাবের চেয়ে ভঙ্গি বেশী ধরনের ভাবুকেরা। এই হচ্ছে আমাদের সমাজের বর্তমান ভাবভঙ্গি !

আত্মচিন্তন শিরোনামের অন্যান্য লেখাঃ

আত্মচিন্তন-১
আত্মচিন্তন-২
আত্মচিন্তন-৩
আত্মচিন্তন-৪
আত্মচিন্তন-৫
আত্মচিন্তন-৬
আত্মচিন্তন-৭
আত্মচিন্তন-৮
আত্মচিন্তন-৯
আত্মচিন্তন-১০

আত্মচিন্তন-১০

সময়ের স্রোত

বহু জ্ঞানী গুনী মহারথীকেও দেখা যায় স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে ! ভেবে অবাক হই যে স্রোত সবাইকেই কোন না কোন সময় ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে ভাটিতে ! স্রোতের প্রতিকুলে এমনকি অনুকুলেও কারো শক্তিই সকল পরিস্থিতিতে পরিক্ষীত নয় ! উহা আপেক্ষিক !!!

আত্মচিন্তন-৯

আত্মচিন্তন-৯

সমগ্র বিশ্বে একই সাথে যুক্তি, প্রযুক্তি, অযুক্তি আর কুযুক্তি সমান তালে বেড়ে চলেছে। যে পক্ষের জোড় যত বেশি তারা ততোটা আধিপত্য বিস্তার করবে আর অপর পক্ষ নিষ্পেষিত হবে। যে কোন এক পক্ষ অবলম্বন করলে পড়তে হয় অপর পক্ষের রোষানলে। এমতাবস্থায় মধ্য পন্থা অবলম্বন করা বুদ্ধিমানের কাজ মনে হতে পারে, কিন্তু বিবেকবানের কাজ নয়। আমরা নিজেরা কে কোন পক্ষ অবলম্বন করবো তা শুরুতেই বোঝাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা পক্ষ এবং পক্ষপাতিত্ব কখনো কখনো ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ থেকে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে তৈরি। আবার কখনোবা একই মতাদর্শের ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংগঠনের দ্বারা একই বা বিভিন্ন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য তৈরি। আমরা না বুঝেই এই রকম এক বা বিভিন্ন আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে আত্মবিসর্জন দিতে সচেষ্ট হই। তাতে প্রকারান্তরে আসলে আমরা অন্যের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার হই মাত্র। ফলাফল আসলে সময়, মেধা, শ্রম, অর্থ এবং অনেক সময় জীবনের অপচয়।

আমাদের সীমাবদ্ধতা, আমরা বুঝিনা যে আদর্শের কোন বিকল্প হয় না। একই আদর্শের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যাও হয় না। আদর্শ একক এবং আদর্শ।

আত্মচিন্তন-৮

পথ ও পথিক

একমতে একসাথে একপথে সবাই দলবদ্ধভাবে চলতে শুরু করলেই তাতে চলার পথ সঠিক হয়ে যায় না । পথের শেষে গন্তব্য ভূল প্রমানিত হলে তা পথিকের জন্য যেমন বিপদজনক তেমনি পথের শুরুতেই পথ চেনা পথিকের একার জন্যও তা কম কষ্টের নয় । কারন পথ চেনা পথিককে চলতে হয় একা । ভুল হোক আর সঠিক হোক মানুষ একা চলতে পারে না । মানুষের চলার পথ বড়ই বন্দুর ! নিঃসঙ্গ মানুষ বড় অসহায় !

পথ বড় না পথিক বড় ? এ প্রশ্নের উত্তর জটিল মনে হলেও অনিস্পন্ন নয় । পথিকই বড় । কেননা পথিক যেমন অগ্রপথিকের অবদানে পূর্বে রচিত পথ দিয়ে চলে নির্ঝঞ্জাট, তেমনি কোন কোন পথিকই আবার জীবন বাজি রেখে নতুন পথের রচনা করে পরবর্তী পথিকদের জন্য । নিজেই হয় অগ্রপথিক । পথিক বিনা পথ নিরর্থক, যেন জনহীন অরণ্য । কিন্তু পথ বিনা পথিক নয়, কেননা পথিকই পথ তৈরি করে ।

শুধুমাত্র পরিচিত পথে হাঁটলে জীবনকে যেমন জানা হয় না, তেমনি চেনা হয়না নিজেকেও । নতুন পথ আবিস্কারের সব প্রচেষ্টাই সার্থক হয় না । যে পথিক নতুন পথের রচনা করে পরবর্তী পথিকদের জন্য তাকে বিসর্জন দিতে হয় আত্মস্বার্থ, কখনো কখনো সমস্ত জীবন । কিন্তু তবুও পথের বুকে পদ চিন্হ একে একে চলা দূর্বার, দূর্দম পথিক এগিয়ে চলে গহীন অরণ্যে দিক নির্ণয়ের নেশায় । একদিন অন্ধকারের শেষে আলোকিত পথের দিশা পাবে বলে অহোরাত্রি এই ছুটে চলা !

ভালোবাসা উৎসরিত নৈতিকতা

ভালোবাসা উৎসরিত নৈতিকতা

অত্যন্ত সহজ ভাবে বললে, ভালো’কে ভালো এবং খারাপ’কে খারাপ বলতে পারা বা চিহ্নিত করতে পারাই নৈতিকতা। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে বিষয়টা আপেক্ষিক। শুধু মাত্র আপাত ভালো’কে ভালো মানুষ আর খারাপ’কে খারাপ মানুষ বলাটা যথাযথ নৈতিকতার পরিচয় বহন করে না। দরকার মানুষকে বোঝা।

প্রত্যেকটা মানুষের সাথে জড়িয়ে আছে কিছু দায়িত্ব। সে দায়িত্ব ভালোর জন্য ভালোর, খারাপের জন্য ভালোর, ভালোর জন্য খারাপের এবং খারাপের জন্য খারাপের যে কোন রকম হতে পারে। এই দায়িত্ব বোধ ও আবার ভালো খারাপ দু’রকমই হতে পারে। অথবা হতে পারে দুইয়ের মিশ্রণ। মানুষের সব রকম কর্মকাণ্ড প্রকাশ্য নয়। প্রকাশ্যে ভালো মানুষ হতে পারে অন্তরালে খারাপ অথবা অন্তরালে ভালো কাজ করা একজন ও প্রকাশ্যে খারাপ হিসেবে পরিচিত হতে পারেন।

একজন মানুষ আসলে কতটা ভালো অথবা কতটা খারাপ তা তার নিজের চেয়ে ভালো কারো জানা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে কোন মানুষের পক্ষেও খুবই রহস্যময় এবং জটিল বিষয় এটা বোঝা যে তিনি আসলে কতটা ভালো বা কতটা খারাপ। কারন ভালো বা খারাপ মানুষ মূল্যায়ণের আদর্শ মাপকাঠি যে আদর্শে তৈরি তা সব মানুষের কাছে আদর্শ নয় এবং কোন নির্দিষ্ট আদর্শ সব মানুষের কাছে সুনির্দিষ্টও নয়। আর তাই নৈতিকতার সংজ্ঞাও সব মানুষের কাছে এক নয়।

মানুষের ক্ষেত্র ব্যাতিত অন্য সকল বিষয়ের নৈতিকতাও মানুষের উপরেই নির্ভরশীল কেননা তা মানুষেরই সৃষ্টি। মানুষ নিজেদের জন্য যথাযথ আদর্শ স্থির করতে না পারলেও পারিপার্শ্বিক সকল কিছুর মূল্যায়নের জন্য একাধিক বা বহুবিধ আদর্শ তৈরী করতে সমর্থ হয়েছে যা তারা নিজেদের জন্য সুবিধাজনক ভাবে প্রয়োগ করতে সচেষ্ট।

এই ব্যক্তি আদর্শ এবং বস্তু বা বিষয়ের আদর্শের এই ব্যবধানই তৈরী করেছে মানুষের সাথে মানুষের বৈষম্য ও দ্বন্দ্ব। তাই আদর্শের প্রকৃত অর্থে সর্বজন স্বীকৃত কোন আদর্শ মানদণ্ড নেই।

কিন্তু এ জগতে মাত্র একটাই বিষয় চিরন্তন আর তা হচ্ছে ভালোবাসা। কারন ভালোবাসা সর্বজন স্বীকৃতির মুখাপেক্ষী নয় বরং নিজেই সর্বজনীন। মানুষ ভালোবাসা ব্যতীত মৃত।

নৈতিকতার জন্ম হোক মানুষের প্রতি মানুষের এবং আপনজনের, পরিবারের, সমাজের, দেশের, পৃথিবীর তথা মহাবিশ্বের প্রতি মানুষের ভালোবাসা থেকে।

ভালোবাসা উৎসরিত নৈতিকতাই শাশ্বত !

সংযম, ত্যাগ, আনন্দ (ঈদ) ও সুখ

সংযম, ত্যাগ, আনন্দ (ঈদ) ও সুখ

রোজা বা শাওম শব্দের অর্থ সংযম তথা বিরত থাকা। সংযম এবং ত্যাগ শব্দ দুটি একে অপরের পরিপূরক এবং ত্যাগের প্রাথমিক স্তর হচ্ছে সংযম সাধনা।

ঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ এবং আনন্দ ও সুখ শব্দ দুটি একে অপরের পরিপূরক। আনন্দ হীন জীবন কখনই সুখের নয়। সুখি হওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে আনন্দিত হওয়া।

এ থেকে আমরা ত্যাগ ও সুখের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক খুঁজে পাই।

ত্যাগ দুই প্রকার হতে পারে, মানুষের সুখের জন্য ত্যাগ ও সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের জন্য ত্যাগ। তবে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে ত্যাগের পূর্বে আমাদের অবশ্যই সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ত্যাগ তথা সৃষ্টির সেবা করতে জানতে হবে অন্যথায় সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভ সম্ভব নয়।

মানুষের জন্য ত্যাগ মোটেই সহজ সাধ্য ব্যাপার না। আত্ম স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে অন্যের জন্য ত্যাগের মধ্যে সত্যিকারের সুখ আছে বলেই ত্যাগ স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। ত্যাগী ব্যাক্তি মুখাপেক্ষী নয় কোন প্রতিদানের।

কিন্তু অনেক সময় ত্যাগ করা যতটা কঠিন তার চেয়ে বেশী কঠিন হয়ে ওঠে ত্যাগার্থে স্বীয় ক্ষয় ক্ষতি মেনে নেয়া।

ত্যাগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ত্যাগী ব্যাক্তি ঠিকই বুঝবেন তিনি কার জন্য, কি এবং কেন ত্যাগ করছেন কিন্তু যার জন্য ত্যাগ করা হচ্ছে তিনি কোন দিনই বুঝবেন না তার জন্য সত্যিকার অর্থে কি ত্যাগ করা হয়েছে এবং তা কতটা কষ্ট সাধ্য ছিল।

ত্যাগের ফল ত্যাগীর জন্য কষ্টের হলেও ভোগীর জন্য সব সময়ই মিষ্টির। তাই ত্যাগীর সারা জীবনের কষ্টের দান অস্বীকার করতে ভোগীর এক মুহূর্ত সময় ও ভাবনার প্রয়োজন হয় না।

ভোগী কর্তৃক ত্যাগীর ত্যাগের এই অস্বীকৃতি কখনও কখনও ত্যাগী ব্যাক্তির নিকট ত্যাগের সুখের চেয়েও বহুগুন কষ্টের হয়ে উঠতে পারে। আর তখনই ত্যাগ হারায় তার মহিমা ও সার্থকতা।

প্রকৃত ত্যাগ তো সেটাই যা সত্যিকার অর্থেই কোন রকমের কোন প্রতিদান প্রত্যাশা করে না। মানুষের অগোচরে মানুষের জন্য ত্যাগই যথার্থ ত্যাগ। নিরবে নিভৃতে প্রতিনিয়ত এই ত্যাগীদের জন্যই পৃথিবী এত সুন্দর ও সুখের।

রোজার সংযমের ও ত্যাগের শিক্ষা এবং ঈদের আনন্দ আমাদের জীবনে বয়ে নিয়ে আসুক অফুরন্ত সুখ ।
এই কামনায় –

“সবাইকে ঈদ মোবারক”

আত্মচিন্তন-৭

আত্মচিন্তন-৭

এই যে আমরা, আমাদের কি সত্যি কোন অস্তিত্ব আছে ?

বোধ করি অস্তিত্ব এবং অস্তিত্ব হীনতার এ প্রশ্ন প্রমাণ নির্ভর নয়। কেননা অতিশয় নগন্য এ অস্তিত্ব উপেক্ষণীয় এই সুবিশাল কর্মযজ্ঞে। কিন্তু সেই মহা শক্তিতে একাত্ম এই সকল কিছুই সর্বদা বিরাজমান। বর্তমান অবস্থান ক্ষনিকের রুপান্তরিত অবস্থা মাত্র। অস্তিত্ববান সকল কিছুই দৃশ্যমান নয়। তবুও অস্তিত্বই চিরন্তন সত্য। অন্যথায় অস্তিত্ব হীনতা থেকে অস্তিত্বের সৃষ্টি সম্ভব কি ? অসীম অসংজ্ঞায়িত ∞

আত্মচিন্তন-৬

আত্মচিন্তন-৬

জীবনের প্রত্যেকটি ঘটনার পেছনে অসংখ্য ছোট বড় ঘটনা থাকে যা আমরা কোনদিনই সব জানতে পারি না । ঘটনা ঘটার আগেই বা ঘটার সময় বুঝতে পারলে জীবন এত ঘটনা বহুল হতো না নিশ্চয়ই !
তবুও, এতসব ঘটনা ঘটে বলেই হয়তো জীবন এত সুন্দর !!!
তাই নয় কি ?

আত্মচিন্তন‬-৫

জীবন অনিশ্চিত এবং এই অনিশ্চয়তাই জীবনের সৌন্দর্য। কিন্তু জীবনের এই সৌন্দর্য সবসময় সুখকর হয় না। সুখ এবং সৌন্দর্যের এ দ্বন্দ্ব চিরকালের। সুখকে সৌন্দর্যপূর্ণ করে তোলা এবং সৌন্দর্যকে সুখময় করে তোলাই মানুষের চিরন্তন প্রত্যাশা। এ প্রচেষ্টার সফলতাই জীবনের সার্থকতা। কিন্তু সে পথ বড়ই দুর্গম !

ব্লগ ভাবনা

আমি লক্ষ করেছি আমাদের এই শব্দনীড়ে এমন একজন লেখক আছেন যিনি ব্লগে খুব বেশী পুরাতন নন। ইতিমদ্ধে তার অনেকগুলো লেখা প্রকাশিত হয়েছে, তিনি অনেক লেখকের মন্তব্য পেয়েছেন কিন্তু নিজে কখনো কোন লেখককে মন্তব্য করেননি। এমনকি কারো মন্তব্বের প্রতিউত্তর ও করেননি একবারের জন্যও। কিন্তু তার লেখা বহুল পঠিত। কেন ? কারন তিনি ভালো লেখেন।

আমার মনে হয় একটা ব্লগকে জনপ্রিয় এবং একটা আদর্শ মানে উন্নিত করার জন্য ভালো লেখার কোন বিকল্প নাই। এ ব্যাপারে সবাই একমত হবেন এতে আমার কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু আমার মনে হয় এটাকে যদি একটু ঘুরিয়ে বলি যে ভালো লিখা প্রকাশিত হওয়ার কোন বিকল্প নাই তাহলে কি ভুল বলা হবে ?

ভালো লিখতে আমরা সবাই চাই, কিন্তু আমরা ভালো লিখি কি না এটা আমরা বুঝতে পারি যখন কেউ আমাদের লিখা পড়ে মন্তব্য করেন। আমরা মন্তব্য করি কম। এর মানে হয় আমরা পড়ি কম, নয়তো ভালো না লাগলে মন্তব্য করি না।

শব্দনীড়ে দেখে আসছি সকল মন্তব্য সবসময় ইতিবাচক। সবসময় ইতিবাচক মন্তব্য করতে হবে এমন কোন নিয়ম কি ব্লগ নীতিমালার কোথাও আছে ? একটা ব্লগ তখনি জমে উঠতে পারে যখন সেখানে প্রকাশিত লিখা নিয়ে আলোচনা হয়, সমালোচনা হয়, আড্ডা হয়। আমরা শুধু একটু প্রসংশা বাণী লিখেই কর্তব্য শেষ করি কিন্তু তাতে নিজেও আনন্দ পাই না, অন্যকে আনন্দ দিতেও পারি না। কিন্তু আমার মনে হয় লেখক ও পাঠকের আনন্দ ছাড়া ব্লগ জমে না।

সুপ্রিয় লেখক, একবার ভাবুন তো ভালো লিখেও যিনি খুব একটা মন্তব্য পান না তিনি কোন অনুপ্রেরণায় আরও ভালো লিখবেন ? কি ভাবেই বা নিজেকে যাচাই করবেন ? অন্যদিকে অনেক ভালো লেখকদের মত অতটা ভালো না লিখেও যিনি একই রকম মন্তব্য পান তিনি কি করে নিজের লেখার ছোট ছোট ভুল ত্রুটি সংশোধন করে লেখার মান উন্নয়ন করবেন ? তাহলে আমরা কি নিজেরাই ভবিষ্যতের একজন সম্ভাবনাময় লেখকের ক্ষতি করছি না ? যা আমাদের কারই কাম্য নয়।

শব্দনীড়ে কবিতা বেশী লিখা হয় এ নিয়ে আমার কোন বিরোধ নেই। একটা ভালো কবিতা একজন দার্শনিকের জন্ম দিতে পারে। জন্ম দিতে পারে একজন দেশপ্রেমিকের। এবং মানব অনুভুতির যে কোন দিক উঠে আসে বলে একটা কবিতা যে কোন একজন মানুষকে সঠিক উপলব্ধি দিয়ে যে কোন সময় একজন অতিমানবে রুপান্তর করতে পারে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে সাহিত্যের অন্য সকল শাখাও কোন দিক দিয়ে কোন অংশে কম যায় না। আমাদের অন্যান্য সকল বিভাগকেও লিখা দিয়ে সচল রাখতে হবে। নাকি ধরে নিবো বাংলা সাহিত্য এই প্রযুক্তির যুগে এসে ইউনিডিরেকশনাল হয়ে যাচ্ছে ? আমার বিশ্বাস আপনি যেহেতু ভালো কবিতা লিখেন, সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় আপনার কলমের রেখা বাংলা সাহিত্যকে কবিতার সাথে সাথে আরও অনেক ভালো কিছু দিতে পারবে।

কিছু ভাবছেন ? হ্যাঁ, তাহলে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল এর কথাই ভাবুন।

শেষ কথা, আমার মনে হয় আমাদের শব্দনীড় শুধু লেখকরাই পড়ে না, নিবন্ধিত লেখক ও পাঠকের বাইরেও অনেক অনিবন্ধিত পাঠকও আছেন প্রতিনিয়ত আমাদের সাথে। তাদের ভালো লাগা ও শব্দনীড়ের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হলে আমাদের শব্দনীড়ে শুধু মাত্র শিল্প উত্তীর্ণ লিখাই প্রকাশিত হওয়া উচিত। তা না হলে লেখক পাঠক সবাই আগ্রহ হারাবে। তখন ?

কিন্তু কিভাবে শুধুমাত্র শিল্প উত্তীর্ণ লিখা পাওয়া যেতে পারে বা প্রকাশিত হতে পারে ? সেই প্রসঙ্গে আরেকদিন !!!

আমি আমার এই লেখাতেও আপনাদের তীব্র সমালোচনা আশা করছি। তার আগে যে কোন রকম অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য সকলের কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থী !