মোঃ খালিদ উমর এর সকল পোস্ট

মোঃ খালিদ উমর সম্পর্কে

কুয়াশা ঢাকা মানুষের মন বুঝতে চেষ্টা করি কিন্তু পারিনা!

বুদ্ধিমান সন্তান পেতে কী করবেন

সব মায়েরাই প্রত্যাশা থাকে, তার সন্তান যেন বুদ্ধিমান ও মেধাবী হয়। আর এটা অনেকটাই নির্ভর করে মায়ের সঠিক খাদ্যাভ্যাসের ওপর। যদি কোনও মা পুষ্টিকর খাবার না খান যেমন : ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন ডি, লোহা ইত্যাদি তাহলে তার শরীরে কিছুটা ঘাটতি থেকে যাবে। আর এর প্রভাব পড়বে সন্তানের ওপর।

মায়ের সঠিক খাবারের অভাবে শিশুর মানসিক বিকাশে সমস্যা দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় মা কী খায় সেটা সন্তানের শারীরিক ও মানসিক গঠনে বড় ভূমিকা পালন করে। গর্ভাবস্থায় আপনি এমন কিছু খাবার খেতে পারেন যা আপনার বাচ্চার আইকিউ (ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট) বাড়াতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনার সন্তান যখন জন্মগ্রহণ করে ওর মস্তিষ্কের মাপ যে কোনও পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ২৫% হয়। ২ বছর বয়সে সেটা বেড়ে হয় ৭৫% যা স্বাভাবিক মস্তিষ্ক। প্রথম দুই বছর সন্তানের জন্য দরকার মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ।

তাহলে দেরি কেন? আসুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার খেলে আপনি বুদ্ধিমান সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন।

মাছ : স্যালমন, টুনা, ম্যাকারেল ইত্যাদি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিড সমৃদ্ধ। এগুলো বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুবই জরুরি। একটা গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মায়েরা গর্ভাবস্থায় সপ্তাহে দুবারের বেশি মাছ খায় তাদের সন্তানের বুদ্ধি বা আইকিউ বেশি হয়।

ডিম : ডিম এ্যামিনো এ্যসিড কোলিন সমৃদ্ধ,যাতে মস্তিষ্কের গঠন ভাল হয় ও স্মরণশক্তি উন্নতি হয়। গর্ভবতী নারীদের দিনে অন্তত দুটো করে ডিম খাওয়া উচিত যার থেকে কোলিনের প্রয়োজনের অর্ধেক পাওয়া যায়। ডিমে থাকা প্রোটিন ও লোহা জন্মের সময় ওজন বাড়িয়ে দেয়।

দই : সন্তানের স্নায়ু কোষগুলো গঠনের জন্য আপনার শরীর প্রচুর পরিশ্রম করে। এ জন্য আপনার বাড়তি কিছু প্রোটিন লাগবে। আপনাকে প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে যেমন : দই। দইয়ে ক্যালসিয়াম আছে যেটা গর্ভাবস্থায় লাগে।

আয়রন : আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যা আপনার সন্তানকে বুদ্ধিমান হতে সাহায্য। এই খাবারগুলো গর্ভাবস্থায় অবশ্যই খাওয়া উচিত। আয়রন আপনার গর্ভের সন্তানের কাছে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শে আপনার আয়রনের সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত।

ব্লুবেরি : ব্লুবেরির মত ফল, আর্টিচোক (ডাটা গাছ), টমেটো ও লাল বিন্সে এ্যান্টি ওক্সিডেন্ট থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় এই ফলগুলো আপনার সন্তানের মস্তিষ্কের টিস্যুকে রক্ষা করে ও বিকাশে সাহায্য করে।

ভিটামিন-ডি : এটা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুব দরকার। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মায়েদের ভিটামিনের মাত্রা প্রয়োজনের চেয়ে কম থাকে তাদের বাচ্চার মস্তিষ্ক দুর্বল হয়। ডিম, চিজ, বিফ, লিভার ইত্যাদি খাবারে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এছাড়া ভিটামিন-ডি এর ভাণ্ডার সূর্য্যের আলো তো আছেই।

আয়োডিন : আয়োডিনের অভাব, বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহে সন্তানের আইকিউ কম করে দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় আয়োডিনযুক্ত লবণ খান। এছাড়া সামুদ্রিক মাছ, শামুক, ডিম, দই ইত্যাদি খেতে পারেন।

সবুজ শাক-সবজী যেমন – পালং শাক, ডাল ইত্যাদি ফলিক এ্যাসিড সরবরাহ করে। এছাড়াও ফলিক এ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট ভিটামিন বি-১২- এর সঙ্গে খাওয়া উচিত।

মস্তিষ্কের কোষ গঠনে ফলিক এ্যাসিড খুব প্রয়োজনীয়। একটা গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারীরা গর্ভাবস্থায় সন্তান প্রসবের চার সপ্তাহ আগে ও আট সপ্তাহ পর অবধি ফলিক এ্যাসিড নিয়ে থাকে তাদের ৪০ শতাংশ অটিস্টিক সন্তান জন্ম দেয়ার আশংকা কম থাকে।

সূত্রঃ অজানা থেকে সংগৃহিত।

মা বাবা


আমার বাবা-মা এর রেখে যাওয়া আমি।

আমার পিতার কথা লিখতে গেলে এক পুথি বা রামায়ণ হয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
কি নিয়ে লিখব আর কি লিখব না সে কথা ভাবতেই পারছি না। কোথা থেকে শুরু করব তাও বুঝতে পারছি না। যাকে পিতা বলে জেনে এসেছি তাকে যে কোন শ্রেণীর মানুষ হিসেবে ফেলা যায় তাই আমি এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। কখনও ভেবেছি তিনি অতি উদার ও মহৎ শ্রেণীর আবার কখনও মনে হয়েছে তিনি অতি রাগি এবং মেজাজি মানুষ। আবার কখনও যে তাকে ধীর স্থির শান্ত প্রকৃতির মনে হয়নি তেমন করেও ভাবার সুযোগ হয়নি। কখনও মনে হয়েছে বাবা খুব অস্থির এবং ছটফটে মেজাজের মানুষ। তবে তিনি যে ধরনের মানুষই হোক না কেন তিনি যে একজন সফল পিতা তাতে কোন সন্দেহ নেই। সফল বলেই হয়ত তার সন্তানেরা আজ পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এবং বেশ সুনাম ও মর্যাদার সাথেই রয়েছে। তার মেঝ ছেলে বিলাতের নেইলসওয়ার্থের ডিসট্রিক্ট কাউন্সিলর এবং অবাক হতে হয় যে সেখানে বাংলাদেশী তো দূরের কথা এশিয়ান বলতে মাত্র তিন ঘর বাসিন্দা। এই ইংরেজ অধ্যুষিত এলাকায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে বেশ সুনাম ও দক্ষতার সাথে তার মেয়াদ উত্তীর্ণ করেছে।

ছোট বেলায় মার্টিন রোড এলাকায় যখন আমরা থাকতাম তখন আমার বাবাকে ভলি বল খেলতে দেখেছি এবং এখনও মনে পড়ে ওই এক বিকেলে আমার মা কি যেন বানিয়েছিল আর আমি তাই হাতে নিয়ে খেতে খেতে বাসার বাইরে আব্বার খেলা দেখার জন্য কোটের বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম আর তাই আব্বার নজরে এলে তিনি খেলা রেখে আমাকে চিলের মত ধরে উঁচু করে বাসায় আমার মার কাছে দিয়ে গিয়েছিলেন। বাইরে কিছু খেতে হয় না একথা আমার মাকে ভাল করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এবং পরে এ নিয়ে বেশ অনেকক্ষণ হৈ চৈ করেছিলেন। সেই সাথে আমার মনেও ওই কথাটা এমন ভাবে গেঁথে গিয়েছিল যে আজ আমিও আমার মেয়েদের সেই শিক্ষা দিতে পেরেছি। যদিও সে শিক্ষা এখন আমি রাখতে পারছিনা। বিলাতে থাকার সময় ওদের দেখা দেখি এবং সময়ের মূল্য দিতে গিয়ে হাটতে হাটতে বাগেট বা পিজা বা কেক খেতে খেতে বাস স্ট্যান্ড কিংবা টিউব স্টেশনে গিয়েছি।
আমার পিতাকে কিছু কিছু বাজার করতে দেখেছি সরাসরি আড়ত থেকে। যেমন সবজি, আলু পিয়াজ এই সব বাজার তিনি সপ্তাহ বা কোন ক্ষেত্রে মাসের জন্য এমনকি পুরো বছরের জন্য করে রাখতেন। যে কোন ফলের সিজনে কোন ফল তাকে সের দরে কিনতে দেখিনি, আঙ্গুর, আপেল, আম এবং পেশোয়ায় কাবুল তেহরানে উৎপন্ন নানান জাতের সুস্বাদু ফলমূল তিনি ও দেশের প্রচলিত খেজুর পাতার আস্ত ঝুরি ধরেই কিনতেন এবং বাড়িতে আনার পর আমার মা সেগুলিকে অত্যন্ত যত্নের সাথে নিপুণ হাতে সুন্দর করা সাজিয়ে রাখতেন। আমার মা বাবার সন্তান বলতে গেলে তখন একমাত্র আমিই ছিলাম সবে ধন নীলমণি কাজেই সঙ্গত কারণে আমাকেই ওই সব ফল নামের যন্ত্রণা গিলতে হতো। যদিও আজ ভাবি ইসসস তখন কি আর জানতাম এই সব ফল ফলাদিগুলোকে এক সময় আমাদের দেশে ভিসা নিয়ে যেতে হবে!

আমরা যখন আবিসিনিয়া লাইনে থাকতাম ওই এলাকার কাছেই ছিল করাচী শহরের কসাই খানা। প্রতিদিন দেখতাম শত শত গরু, মহিষ, ভেড়া, দুম্বা আর ছাগল নিয়ে কসাই খানায় যেত আর ওখানে ওগুলি জবাই হয়ে ড্রেসিং হয়ে পৌরসভার সিল লাগিয়ে ভ্যানে করে সমস্ত করাচী শহরে সেগুলি পৌঁছে দিত। সে কি বিশাল কসাই খানা! আমরা বন্ধুরা মিলে মাঝে মাঝেই ঐ কসাই খানা দেখতে যেতাম আর পাঠান দারোয়ান আমাদের ভিতরে যেতে দিতে চাইত না। বলত রক্ত দেখে তোমরা ভয় পাবে। আমরা বলতাম আমরা কি আর তোমার মত ভয়ের ডিপো? আমরা কিছুতেই ভয় পাই না। তাই নাকি? হ্যাঁ, দেখনা আমরা বড় হয়ে গেছি! পাঠান ব্যাটা একটু হেসে আর একজনকে বলে দিত এই ওদের নিয়ে একটু দেখিয়ে আন। সত্যিই কি বীভৎস সে দৃশ্য! বিশেষ কায়দার এতো বড় বড় শিং ওয়ালা গরু মহিষগুলো বিশাল মুছ ওয়ালা দুই জন কসাই ধরে বেল্টের উপর ফেলে বিশাল ছুরি দিয়ে জবাই করে ফেলত। পাশে দেড় ফুট গভীরতার নর্দমা দিয়ে কল কল শব্দ করে রক্তের স্রোত বয়ে যেত। জবাই হয়ে গেলে বেল্ট টেনে নিয়ে যেত চামড়া ছাড়াবার জন্য। একের পরে চলছে এভাবে। ওদিকে চামড়া ছাড়ানো হয়ে গেলে আবার মেশিনে ওগুলো ড্রেসিং হয়ে পাতলা কাপড়ে ঢেকে কভার্ড ভ্যানের হুকে ঝুলিয়ে রাখত। এলাহি কাণ্ড। এখন সেই দৃশ্য মনে ভয়ই করে। আমার বাবা এখান থেকে প্রায়ই একটা রান কিংবা মাথা কিংবা তার পছন্দ মত কোন বড় এক টুকরা নিয়ে গেয়ে নিজেই ছোট ছোট টুকরা করে কেটে কুটে বানিয়ে আমার মার হাতে দিতেন আর মা সেগুলি খুব যত্ন করে কিছু রেখে দিতেন আবার কিছু তখনই রান্না করতেন যেদিন এমন কিছু রান্না হতো সেদিন আমার মা আটা মাখিয়ে একটা থালায় নিয়ে মার হাতে বানান সুন্দর কাপড়ের তৈরি ঢাকনা দিয়ে আমার হাতে দিয়ে বলতেন যা ওই দোকান থেকে রুটি বানিয় নিয়ে আয়। ও দেশে সবাই রুটি খায় বলে রুটি বানাবার দোকান আছে যারা শুধু রু|টি বানিয়ে দেয়। তন্দুরের রুটি। এই দোকানে দেয়ার জন্য আটা মাখাবার ভিন্ন কৌশল আছে। আমার মনে আছে আমার মা বাংলাদেশি বলে ওই কৌশল তার জানা ছিল না তাই দোকানদার আমাকে দেখেই বুঝতে পেরেছিল আর তাই আমার থালা নিয়ে ঢাকনা খুলে বলে দিয়েছিল এটা নিয়ে বাসায় যাও আর তোমার মাকে বল এ ভাবে আটা মেখে দিতে। ঘরে ফিরিয়ে এনে মাকে বললাম। মা তাদের দেখান কৌশলে আবার আটা মেখে দিলে নিয়ে গেলাম। দোকানি তন্দুরের রুটি বানিয়ে দিল। বাসায় এসে সেই কসাই খানা থেকে আনা মাংস রান্না দিয়ে বাবা আমি আর মা কি মজা করে খেয়েছি। আমি নাকি ওদের দেখাদেখি আলু পরটা, মুলা পরটা, মেথি শাক খেতে শিখছিলাম। মার কাছে শুনেছি।

এখনও স্পষ্ট মনে আছে ছোট বেলায় তখন আমরা ফেডারেল এরিয়ায় থাকতাম। দেখেছি বাবা অফিসে যাবার পোশাক পরে বের হতেন আর মা দরজাটা বন্ধ করে তিনতলা বাসার বারান্দায় এসে আমাকে ধরে দাঁড়াতেন। বাবা সিঁড়ি দিয়ে নেমে ডান দিকের রাস্তায় যেখানে বাসের অন্যান্য যাত্রীরা কিউতে দাঁড়াত সেখানে গিয়ে কিউতে দাঁড়াতেন। মা আমাকে দেখিয়ে দিতেন ওই যে দেখ তোমার বাবা। আমি এবং মা বাবার পথের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। দেখতাম বাবা এক সময় পিছনে ফিরে দেখে কিউতে দাঁড়াতেন। এই দিন গুলির কথা একটু একটু ঝাপসা ঝাপসা মনে পড়ে। সম্ভবত এর মধ্যে আরও কিছু বড় হয়েছি তখন ওই তিন তলার বাসার এলাকায় থাকতাম না। সে দিনের কথা এখনও স্পষ্ট মনে আছে। আমি তখন বেশ হাটতে পারি। বাবা আমাকে নিয়ে মার্টিন রোড নামে এক আবাসিক এলাকায় এলেন বাসা দেখার জন্য। আগের ওখানে সব দিক দিয়েই ভাল ছিল। খোলা মেলা এলাকা তিন তলা সব দালান। বেশ ফাঁকা এলাকা কিন্তু বাবার অফিস অনেক দূর হয়ে যায় বলে এই মার্টিন রোড এলাকায় বাসা দেখতে এসেছেন।
ছোট বেলার একটা কথা আমার সবসময় মনে পড়ে। বাবার কথা বলতে হলে এই কথাটি সবসময় মনে হয়। করাচী শহর সমুদ্রের পাড়ে হলেও এখানে ভীষণ শীত। একদিন এমনি এক শীতের সন্ধ্যায় আমার বয়সী এক বিকলাঙ্গ ছেলে শীতে কাঁপতে কাঁপতে ভিক্ষা করছে। ছেলেটি আমাদের বাসায় নক করলে বাবাই দরজা খুলে দেয় এবং ছেলেটিকে এভাবে কাঁপতে দেখে ওকে বাসার ভিতর নিয়ে এসে চুলায় আগুন জ্বেলে ওকে আগে গরম করে নিয়ে আমার মাকে বলে দুধ গরম করিয়ে ওকে খাইয়ে তারপরে আমার মায়ের বানানো নতুন কফি কালারের ফুল হাতা সোয়েটারটা আমার গায়ে থেকে খুলে ওকে দিয়েছিল। লক্ষ করে দেখেছি আমার মেয়েগুলি হয়েছে এমন। ওরা প্রচণ্ড গরমে বা শীতে যে রিকশায় করে বাইরে থেকে বাড়িতে ফিরে সেই রিকশা চালককে আগে বাড়ীতে পৌঁছে কিছু খাইয়ে নেয় হাতের কাছে থাকলে কাপড় চোপর কিছু দিয়েও দেয় আবার ভাড়া দেয়ার সময় কিছু বেশিই দিয়ে দেয়। দেখি আর ভাবি জেনেটিক ধারা বোধ হয় একেই বলে।
বড় হবার পর যেদিন আমাকে আমার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রেখে আসেন সেদিন বাবার এই আশ্চর্য চেহারা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। বাবা চাননি আমি এই সময়ে কাজ শুরু করি কিন্তু তখনকার দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতির কারণে নিরুপায় বাবা এই ব্যবস্থা বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছিলেন এবং তাতে কতটা ব্যথা পেয়েছিলেন সে দেখলাম যখন তিনি আমাকে রেখে ফিরে আসছিলেন। যে বাবাকে কোনদিন কাঁদতে দেখিনি সেই বাবার চোখ দিয়ে টল টল করে পানি ঝরছিল এবং সে চোখের পানি আমার চোখে ধরা পরার ভয়ে তিনি ঘুরে দাড়িয়ে কিছু না বলে সামনের দিকে হাটা সুরু করেছিলেন। ছোট বেলায় জ্বর হলে দেখেছি সারা রাত জেগে পাশে বসে থেকে আবার সকালে যথারীতি অফিসে চলে যেতেন। একটু বিশ্রাম নিতে দেখিনি। তখন ভাবতাম আমাকে এভাবে রেখে বাবা কেন অফিসে যায়? ছোট বেলায় আমি প্রায়ই নানান অসুখে ভুগতাম আর হেটে যেতে পারব না বলে বাবা আমাকে কোলে নিয়েই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতেন।

ঈদের সময় মনে আছে অফিস থেকে ফিরে রোজা রেখে আমাদের জামা ক্লথ মার্কেটে নিয়ে যেতেন। নিজের পছন্দ মত পোশাকের কাপর, খেলনা নানা কিছু কিনে দিতেন। জিজ্ঞেস করতেন দেখ তোমার কোনটা পছন্দ হয়। মা আবার সেই কাপড় কেটে নিজেই জামা প্যান্ট সেলাই করে দিতেন। ঈদের দিন আবার নিজের ইচ্ছে মত খরচ করার জন্য নামাজ পড়ে এসে কিছু টাকাও দিতেন। দেয়ার আগে জিজ্ঞেস করতেন কত দিতে হবে। তখন যদিও টাকার হিসাব বুঝতাম না বলে কিছু বলতাম না। আমার একটা নেশা ছিল কলম হারাবার। এখনকার মত তখন পাঁচ টাকায় কলম পাওয়া যেত না বা সস্তা কলমও বাবা কিনতেন না কিন্তু আমি আমার নিয়ম অনুযায়ী একদিনের বেশি সে কলম রাখতে পারতাম না হারিয়ে ফেলতাম। একবার আমার জন্য, মায়ের জন্য এবং তার নিজের জন্য একসাথে তিনটা খুব সুন্দর কলম এনেছিলেন এবং বন্ধুদের দেখাবার জন্য বিকেলে খেলতে যাবার সময় ওই তিনটা কলমই এক সাথে পকেটে নিয়ে গিয়েছিলেম এবং ফলাফল গতানুগতিক। হারিয়ে ফেলেছিলাম। বাসায় ফিরে আসার পর বাবা কিছুই বললেন না দেখে অবাক হলাম বাবা কিছুই বল না? একটু নয় বেশ অবাক হয়ে কিছুতেই বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না। কয়েক দিন পরে মাকে সে কথা জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা আম্মা আমি যে সেদিন কলম হারিয়ে ফেললাম আব্বা যে কিছু বলল না! মা বললেন তুমি যে হারাওনি তাতেই তোমার বাবা খুশি তাই কিছু বলেনি। তেমনি করে আমার মেয়েরাও যখন ছোট বেলায় কিছু হারিয়ে ফেলত বা ভেঙ্গে ফেলত তখন ওরা অনুতপ্ত হয়ে কেঁদে ফেলত আর আমি ওদের কোলে নিয়ে বা বুকে টেনে নিয়ে বলতাম কি হয়েছে মা এতে কাঁদতে নেই তুমি যে ভাল আছ এই আমার জন্য যথেষ্ট। বড় মেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান পরীক্ষা খারাপ দিয়েছিল আর সেদিন আমি ওর এই পরীক্ষা খারাপ হবার জন্য আইসক্রিম কিনে দিয়েছিলাম যাতে সে মন খারাপ করে পরের পরীক্ষা খারাপ না করে। সেই বাবাকে বড় হয়ে বিদেশ থেকে অন্যান্য জিনিসের সাথে একটা ছাতা এনে দিয়েছিলাম আর তিনি সে ছাতা হারিয়ে এসে খুব বিষণ্ণ মনে মাকে জানিয়েছিল সে ঘটনা। আমি যে ছেলের ছাতা হারিয়ে আসলাম! ও যখন জানতে চাইবে তখন কি বলব? শুনে আমার ছোট বেলার সেই সব দিনের কথা মনে হলো যখন আমি এক সাথে তিন কলম হারালেও বাবা কিছু বলেনি। আমি বলেছিলাম কি হয়েছে তাতে একটা ছাতা হারিয়েছেন আমি দশটা ছাতা কিনে দেব। আপনার চেষ্টায় আপনাদের দোয়ার বলেই আমি এই যোগ্যতা অর্জন করেছি আর আমার বাবার চেয়ে কি একটা ছাতার দাম বেশী হয়ে গেল? কথাটা সুনে আমার মা আমাকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করে বলেছিলেন এইতো একেবারে বাবার মত কথা বলতে শিখেছে আমার বাবা! বাবা মায়ের এই দোয়া কি বিফলে যেতে পারে?

হজে যাবার আগে ভিসার আবেদন করার সময়ে নেয়া ছবি। মায়ের মৃত্যুর পরে বাবা মায়ের দুটি ভিন্ন ছবিকে একত্রে এনলার্জ করে বাঁধান ছবি থেকে নেয়া ছবি। এমন দেয়ার মত ছবি নেই যা আছে সে স্ক্যান করা ছাড়া দেয়া যাবে না।
আমি তখন দেশে চাকরি করি। একবার বাসার স্প্রিং ও রেক্সিনের সোফা মেরামত করালাম বেশ দামি রেক্সিন দিয়ে। সরকারি চাকরি জীবীদের হিসেবে বেশ অনেক টাকা খরচ হয়েছিল। যেদিন মেরামত শেষ হলো সেদিন মিস্ত্রিরা কাজ শেষ করে বলল দেখেন স্যার আমাদের কাজ শেষ এখন আমাদের বিদায় দেন। ওদের প্রাপ্য টাকা গুনে দিলাম ওরা সিরি দিয়ে নেমে চলে গেল। ভাবলাম দেখি কেমন হলো। ভিতরে এসে দেখি একটা সিঙ্গেল সোফার সিটের মাঝ খানে অনেক খানি কাটা। দেখেই আমার প্রাণ শুদ্ধ চমকে উঠল। কি ব্যাপার নতুন মেরামত করা সোফা এমন হলো কি করে? ভাবছি এমন সময় রুমের বাইরের বারান্দায় শুনলাম খচ খচ শব্দ হচ্ছে। দরজা দিয়ে দেখলাম ছোট মেয়ে কি করছে। আব্বু বলতো সোফাটা এমন হলো কি করে? আব্বু তুমি জান না ওটা আমি করেছি!
কেন?
দেখলাম কাটে নাকি!
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
মেয়ে বলে কি? কেন কাটলে?
দেখলাম কাটে না কি!
কি দিয়ে কেটেছ?
ব্লেড দিয়ে!
অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়েই রইলাম। কিছুই বললাম না। ভাবলাম ও সত্যি কথা বলেছে এবং সত্যি বলার সাহস ওর আছে। কাজেই একে কিছুই বলা সঙ্গত হবে না। শুধু জিজ্ঞেস করলাম কাজটা কি ভাল করেছ?
না আব্বু, আমি ভাবতে পারিনি যে ওটা কেটে যাবে!
এই মেয়েকে কি কিছু বলা যায়? রেক্সিনের টুকরো দিয়ে আঠা লাগিয়ে ওটা মেরামত করে নিলাম। আমার বাবাও আমাদের এমন কোন কাণ্ড ঘটলেও কিছু বলতেন না। তাই আমিও ওকে কিছু বলতে পারলাম না।

আবিসিনিয়া লাইনের বাসর ভিতরে বাগানে একটা বিশাল সজনে গাছ ছিল বারান্দায় খেতে বসলে ওই গাছের ছায়া পরত। গাছের ডালে নানা জাতের পাখি এসে বসত দেখতে খুব ভাল লাগত। খেতে বসলে আমি অনেক হাঙ্গামা করতাম কিছুতেই খেতে চাইতাম না। খাবার প্রতি আমার খুবই অনীহা ছিল। আমি এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত মায়ের রান্না ছাড়া কারও রান্না খেতে চাইতাম না। যাই হোক যা বলছিলাম মা প্লেটে যা দিতেন তার থেকে একটু খেয়েই রেখে উঠে যেতাম, আর ভাল লাগছে না মা আর খাব না। বাবা তখন প্লেটটা নিজের কাছে নিয়ে বলতেই দেখি কি ভাল লাগে না! আমার কাছে আস, দেখত ঐ ডালে কি সুন্দর পাখি বসেছে! যেই পাখির দিকে তাকাতাম আর অমনি বাবা তার প্লেট থেকে কিছু মাখান ভাত আমার প্লেটে দিয়ে বলতেন ঠিক আছে খেতে না চাইলে খেয়ো না কিন্তু এই যতটা ভাত মাখিয়েছ সেটুক খেয়ে ফেল। আচ্ছা খাচ্ছি। এই করতে করতে দেখতাম আমার প্লেটের ভাত শেষ হচ্ছে না। তখন মা বাবা দুইজনের হাসি দেখে অনুমান করতাম কোন চালাকি হয়েছে কিন্তু কি হয়েছে তখন বুঝতাম না। পরে একদিন আব্বা যেদিন ধরা পরে গেলেন সেদিন বুঝলাম।

ঈদের দিন সকালে মা গোসলের পানি গরম করে দিলে বাবা আমার সব ভাই বোনদের একে একে গোসল করিয়ে দিতেন। সে প্রক্রিয়া রীতি আমার মেয়েদের বেলায় আমিও করেছি। তখন বাবার কথা মনে হতো। আবার এমন অনেক কাজ যা তিনি আমার জন্য করেছেন আমিও আমার সন্তানদের জন্য তেমন করেই করার চেষ্টা করেছি। এইতো সেদিন ৬ই জুন তারিখে বাবাকে এগিয়ে আনার জন্য এয়ারপোর্ট গেলাম। এয়ারপোর্টে ১ নম্বর টার্মিনালে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম এই এয়ারপোর্টে আমার বাবা এক সময় আমাকে রিসিভ করার জন্য আসতেন আর তাকে নেয়ার জন্য আজ আমি এসেছি আমার স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে। আমার বাবা ইংল্যান্ড আর কানাডায় তার সফল ছেলেদের কাছে থেকে আসলেন প্রায় এক বছর। আমার স্ত্রী জিজ্ঞেস করল কি ভাবছ? তখন তাকে বললাম সেই যেবার গ্রিস হয়ে এসেছিলাম তখন বিমানের ফ্লাইট দুই দিন দেরি করে এসেছিল এবং আমি কোন ভাবেই বাসায় জানাতে পারছিলাম না ফ্লাইট কখন পৌঁছাবে। কাজেই আমার বাবা বিমানের প্রতিটা ফ্লাইটে এসে এয়ারপোর্ট থেকে বিমানের প্যাসেঞ্জার লিস্ট দেখে ফিরে ফিরে গেছে। আর আজকে আমার বাবার একটু দেরি হচ্ছিল বলে আমার কেমন বিরক্ত লাগছে। যদিও মেয়েকে ভিতরে পাঠিয়ে আমরা বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। একটু পরে পরেই মেয়ে মোবাইলে খবর দিচ্ছিল না আব্বু দাদাকে দেখছিনা ওদিকে ভিড় কমে আসছে। শেষ পর্যন্ত একসময় দেখলাম হুইল চেয়ারে করে আমার মেয়ে তার দাদাকে নিয়ে বেরিয়ে আসছে।

আমার বইটি যখন প্রকাশ হয় তখন তিনি কানাডার টরন্টোতে ছিলেন। ওখানে আমার ছোট ভাইয়ের বৌ সোহানা তার শ্বশুরকে জিজ্ঞেস করেছিল “আব্বা দাদার বই বের হয়েছে আজ, এ কথা জেনে আপনার কেমন লাগছে?” ” কেমন লাগবে ছেলের বই প্রকাশ হলে কোন বাবার ভাল না লাগে বল!” ওখানে থাকতে আমার ব্লগে লেখা কিছু কিছু গল্প সোহানা এবং লন্ডনের সেঝ ভাইয়ের বৌ সোমা পড়ে শোনাত এবং সেগুলি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। দেশে ফিরে আসার পর বইটা বাবার হাতে দিয়ে একটা আশ্চর্যের বিষয় লক্ষ করলেম যে যে বাবাকে কেবল মাত্র ধর্মীয় বই ব্যতীত ভিন্ন কোন বই পড়তে দেখিনি সেই তিনি তার ছেলের বইটি দুই দিনের মধ্যেই শেষ করে ফেললেন! তার পাঠ প্রতিক্রিয়া বুঝলাম ‘ আর কিছু লিখেছিস? হ্যাঁ আব্বা লিখেছি এবং লিখছি, এখন এটাই আমার একমাত্র নেশা। সামনে কি আর কোন বই প্রকাশ হবে? সবাই বই প্রকাশ করলে সাধারনত দেখা যায় সাহিত্য অঙ্গনে কোন নামি ব্যাক্তিত্ব বা কোন মহাজন কিংবা কোন মন্ত্রি-নেতাদের দিয়ে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান করে কিন্তু আমি করেছি আমার বাবা আর স্ত্রীকে দিয়ে (তখন আমার মা জীবিত ছিলেননা)। স্ত্রীকে করিয়েছি এইওজন্য যে, সে আমাকে লেখার ব্যাপারে সকল রকমের সহযোগিতা না করলে আমি কোনদিনই কিছু লিখতে পারতামনা। লেখার সময় সে কোনদিনই কোন কাজের কথা বলেনি দরকার হলে সে নিজে বাজারে গিয়ে বাজার করে এনেছে কিন্তু আমাকে বিরক্ত করেনি।

এই বাবাকে নিয়ে লিখলে অনেক লিখা যায় কিন্তু বাবার কথা কি আর এমন পরিসরে লিখা যায়? বাবার ভাল মন্দ কত কি আছে কত কি নিয়ে একজন মানুষ বাবা হয়। একজন মানুষ মন্দ হলেই যে সে মন্দ বাবা হবে এমন কেউ বলতে পারে কি? এক জন মন্দ স্বামী হতে পারে, মন্দ মানুষ হতে পারে কিন্তু কক্ষনো মন্দ বাবা হতে পারবে না! আজ নিজে বাবা হয়ে বুঝতে পারছি একজন বাবা তার সন্তানের জন্য কতখানি ত্যাগ আর পরিশ্রম করেন। আমি যেদিন বাবা হলাম সেদিন আমি দেশ থেকে অনেক দূরে। প্রায় একমাস পরে বাবা হবার খবরটা জানতে পেরে মনে হচ্ছিল তক্ষুনি ছুটে আসি, মনে হচ্ছিল আমার কেন এক জোড়া পাখনা নেই, কেন আমি আজ উড়ে যেতে পারছি না? কেন আমার এত ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া আমার প্রথম সন্তানকে দেখতে পারছি না? যেদিন দেশে ফিরে এসেছি পরে আমার সন্তানের মা পাশে বসে তাকে আমার কোলে তুলে দিল তখন মেয়ে একবার ওর মায়ের দিকে আবার আমার দিকে দেখছিল তখনই বুঝলাম এই ছয় মাসের শিশু বুঝতে পেরেছে সে তার কোন ঘনিষ্ঠ একজনের কোলে এসেছে। একটুও কাঁদেনই, বা আমার কাছে থাকতে একটুও আপত্তি করেনি। মায়ের কোলে যেমন ছিল তেমনি বাবার কোলে শুয়ে রইল বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে। আমরা কেবল মায়ের কথাই ভাবি কিন্তু বাবার অবদান যে কতখানি সে কেবল একজন বাবাই বুঝে। আমার মনে হয় মা কিংবা বাবা কেউ কিছুতে কম না। সারা দিন আপ্রাণ চেষ্টা করেও যে মহিলা তার স্বামী, শ্বশুর শাশুড়ি বা এই বাড়ির আর কারো মন জোগাতে পারেনি শুধু পেয়েছে অবহেলা, অবজ্ঞা আর নির্যাতন সেই মহিলা তার সন্তানের কাছে মহারানীর সম্মান পেয়ে ধন্য হয়েছে, আনন্দে আপ্লুত হয়েছে।

তবুও বলব সন্তানের জন্য বাবার চেয়ে মায়ের প্রয়োজনটাই বেশি। আমিও একদিন আমার স্ত্রীকে লন্ডনের হিথরো এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম তুমি দেশে ফিরে যাও। আমাদের মেয়েদের জন্য আমার চেয়ে তোমার প্রয়োজনটাই বেশি। আবার একথাও ভাবি যে একজন সন্তান ঈদের আগে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে ঈদের পোশাকের চাহিদা জানাবার মধ্যে যে তৃপ্তি পায় সে তৃপ্তি আর কারো কাছে পায় না। বাবাও তার ছেলে মেয়েদের চাহিদা মিটিয়ে সন্তানের মুখে হাসি দেখে যে তৃপ্তি পায় সে তৃপ্তি পৃথিবীর আর কিছুতে পায় না। যে সংসারে মা বাবার মধ্যে সু সম্পর্ক আছে সে সংসারের সন্তানেরা একটা স্বর্গীয় সুখ নিয়ে বেড়ে উঠে। আরও একটা কথা জেনেছি, পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃস্ব পিতাও তার সন্তানকে যেমন ভালবাসে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর এবং ধনী পিতাও তার সন্তানকে ততটাই ভাল বাসে শুধু প্রকাশ ভঙ্গির তারতম্য হয়, এ ছাড়া বাকী সবই এক।

যে খাবারগুলো রক্তনালীর ব্লক প্রতিরোধ করে

রক্তনালী ব্লক হওয়া স্বাভাবিক কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। এবং শুধুমাত্র এই কারণে হৃদপিণ্ডের নানা সমস্যায় ভুগতে দেখা যায় অনেককে। এমনকি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হন অনেক রোগীই। কিন্তু রক্তনালী ব্লক হওয়ার এই সমস্যা থেকে খুবই সহজে মুক্ত থাকা যায় চিরকাল। এর জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে না একেবারেই। খুবই সহজলভ্য কয়েকটি খাবার রক্তনালীর সুস্থতা নিশ্চিত করবে।

যে খাবারগুলো রক্তনালীর ব্লক প্রতিরোধ করে :

ব্রকলি
ব্রকলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘কে’ যা দেহের ক্যালসিয়ামকে হাড়ের উন্নতিতে কাজে লাগায় এবং ক্যালসিয়ামকে রক্তনালী নষ্ট করার হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। ব্রকলির ফাইবার উপাদান দেহের কোলেস্টেরল কমায় এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

তৈলাক্ত মাছ
তৈলাক্ত মাছ বিশেষ করে সামুদ্রিক তৈলাক্ত মাছের ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমিয়ে হৃদপিণ্ডকে চিরকাল সুস্থ ও নীরোগ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

দারুচিনি
দারুচিনির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্ডিওভ্যস্কুলার সিস্টেমের সার্বিক উন্নতিতে কাজ করে থাকে। এছাড়াও গবেষণায় দেখা যায় প্রতিদিন মাত্র এক চামচ দারুচিনি গুঁড়ো দেহের কোলেস্টেরল কমায় এবং রক্তনালীতে প্লাক জমে ব্লক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

কমলার রস
গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন দুই কাপ পরিমাণে শুধুমাত্র বিশুদ্ধ কমলার রস পান করলে রক্ত চাপ স্বাভাবিক থাকে। এবং কমলার রসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তনালীর সার্বিক উন্নতিতে কাজ করে। ফলে রক্তনালী ড্যামেজ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়।

আপেল
আপেলে রয়েছে পেকটিন নামক কার্যকরী উপাদান যা দেহের খারাপ কোলেস্টেরল কমায় ও রক্তনালীতে প্লাক জমার প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়। গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিদিন মাত্র একটি আপেল রক্তনালীর শক্ত হওয়া এবং ব্লক হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ৪০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়।

তিসীবীজ
তিসীবীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড যা উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং রক্তনালীর প্রদাহকে দূর করতে সহায়তা করে এবং একই সঙ্গে রক্তনালীর সুস্থতা নিশ্চিত করে।

গ্রিন টি
গ্রিন টিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যাচেটিন যা দেহে কোলেস্টেরল শোষণ কমায় এবং হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। প্রতিদিনের চা কফির পরিবর্তে গ্রিন টি পান করলে দেহের সুস্থতা নিশ্চিত হয়।

স্বাস্থ্য তথ্য সংগ্রহ করা।

মৌণ সঙ্গীত (ঢাকা মহানগরী)

ছবি কথা বলে আবার মাঝে মাঝে নীরবে গানও শোনায়। ঢাকা শহরের তেমনি কিছু সঙ্গীতের সাথে দেখুন তার বিভিন্ন সময়ের কিছু রূপ। আমার বিশ্বাস যা সে নিজেই বলতে পারবে।

1._lead_photo_nawabpur_road_in_1954

1-2

2._pilkhana_area_1880

3._elephant_road_1905

4-2

5-2

6._air_port_area_kurmitola_1964

6-2

7-2

15._bsmmu-_the_then_shahbagh_hotel_1954

21._dhaka_street_in_1975

46._nawab_bari_boat_race_year_unknown

50._paltan_maidan_1950s

1000 Rupee Note-1938

amiruddin-darogahs-mosque-near-to-babubazar-ghat-on-the-bank-of-buriganga-1912

baitul-mukarram-1967-web

book-fair-1987

buriganga-1974

buriganga-from-ahsan-manzil-1974

chawkbazar-iftar-market-1974

dacca-1933-shantinagar-british-army-barrak

Dhaka 1975

Dhaka college-1

Dhaka college-2

dhaka-1887-after-the-tornado

Dhaka-1947 (1)

Dhaka-1947 (3)

Dhaka-1947 (4)

dhaka-1961-people-gathered-in-ramna-race-course-to-see-queen-elizabeth-ii

dhaka-club-1890

dhaka-race-course-1890s

dhaka-stadium-1950

Dhanmondi 1960

Dhanmondi 1960-

dhanmondi-1966-bridge-on-road-7-8

dhanmondi-rd-29-1964

dholai-khal-1870

Dholair khal Lohar pul

dilkhusha_1970s

dilkusha-bhulbhulaiya-garden-1880

eid-in-paltan-maidan-1954-2

eid-prayer-paltan-maidan-1954

farmgate-in-1979

farrukh-siyars-mosque-now-lalbagh-shahi-jaame-mosque-1880

Fulbari Rail Stn- 1947

Gulistan dacca-1963-hall

gulistan-1957

kamlapur-railway-station-1966

Kazi Nazrul Islam in Dhaka

mirpur-1966-gabtoli-haat

motijheel-shapla-chattar-1980s

nawabs-shahbagh-garden-modhur-canteen-dhaka-university-1904

new-bedford-buses-were-launched-dhaka-1966

pallabi-housing-society-mirpur-dhaka-1960s

Picture1

Picture2

Postal in 1947

Race-course-and-ramna-kali-mandir-from-bardhaman-house-bangla-academy-1960

race-course-dhaka-1890

Ramna gate-Now Doel Chattar-1904

sadarghat-area-dhaka-1965

sadarghat-august-1962

sodorghat-1962

stadium-area-bangabandhu-avenue-1960

st-gregory-high-school-1882

tejgaon-1880

Village (1)

Village (2)

Village man

Village

Z1000 (1)

Z1000 (2)

Z1000 (3)

দূর পাহাড়ের গান

দূর পাহাড়ের পাশে
আকাশ হলো মেঘলা
একটু পরে নামল ধীরে
তুহিন মাখা বাদলা।।

এমন দিনে পথের পরে
কে চলে গো একলা,
বৃষ্টি নামে রিম ঝিমিয়ে
পথ চলে সে গুন গুনিয়ে,
একা একা যায় সে কোথায়
খানিক আঁচল উড়িয়ে মাথায়।।

ভিজল আঁচল পা যে পিছল
কলসি নিয়ে কাঁখে
যায় কি নদীর ঘাটে
আহা যায় কি নদীর ঘাটে।

বৃষ্টি ভেজা পথের ধারে এদিক ওদিক চায়
মন যে তার উড়িয়ে নীল পাগলা হাওয়ায়,
সবুজ মাঠে শারীতে মিশে
মনটা ভরেছে হিমেল বাতাসে,
কখনও ভাবেনি পিছনে দেখেনি
আকাশ কাল মেঘে ছেয়ে গেছে ঢেকে।।

www.youtube.com/watch?v=WTD02smk7Z0&feature=youtu.be

সন্ধ্যা বেলার কামিনী

স্বপন সঘন বিরহ মগন
সন্ধ্যা বেলার কামিনী
দিলাম তোমায় উপহার আমি
সাজাতে বাসর যামিনী।

লিখেছি আমার বিরহ লিপি
বরষা মগন দু’চোখে
তবুও তোমায় বাঁধতে পারিনি
দিয়েছ ব্যাথা এ বুকে।

কত নিশি যায়, রাত ভোর হয়
বরিষণ হয় সারা
শূন্য এ বুকে ফিরে তো আসো না
নয়ন অশ্রু হারা।

চঞ্চল বসন্ত

মন আমার দোদুল দোলে কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে
দোলে ওই চঞ্চল বসন্তে।।

ভ্রমরের গুঞ্জনে কোকিলের গানে গানে
ভুলায়ে আপন ভোলা দখিনা দেয় যে দোলা
মৌ বনেরই প্রান্তে।।

রিনি ঝিনি কাঁকন বাজে গোধূলির রঙ্গিন সাঁঝে
কে আমায় মাতাল হৃদয় যে হারাল নূপুরেরই ছন্দে।।

www.youtube.com/watch?v=1zEkUxvkwXs&feature=youtu.be

তাল গাছের ভূত

কয়েক দিন হলো মেরাজ মামা বাড়ি বেড়াতে এসেছে। ক্লাস এইট থেকে নাইনে উঠেছে এমন দিনে স্কুল বন্ধ হলে মামা বাড়ি হলো আসল ছুটি কাটাবার জায়গা, সারা দিন আড্ডা আর টো টো করে ঘুরে বেড়ালে কেউ নিষেধ করে না। এ ডাল থেকে ঘুঘুর ছানা নিয়ে আসা ওই ঝোপের আড়াল থেকে পাকা টস টসে হলুদ গাব পেড়ে আনা মানে একেবারে স্বাধীন জীবন। কেউ নিষেধ করে না। কি মজা! এত স্বাধীনতা রেখে কি আর নিজের বাড়িতে বাবার ধমকানি মায়ের হুকুম এত কিছু সহ্য করা যায়? সবাই জানে মেরাজের খুব সাহস। মেরাজ নিজেও এ কথা খুব জোর দিয়েই বলে বেড়ায়। আসলে সাহসের প্রশ্ন এলেই মেরাজের উদাহরণ দেয়া হয়। মোট কথা মেরাজ খুব সাহসী ছেলে একথা এ গায়ের সবাই জানে। আর সবাই মোটামুটি অপেক্ষায় থাকে মেরাজ কখন আসবে। মেরাজ আসলে তাকে দিয়ে কিছু দুঃসাহসিক কাজ করিয়ে রাখতে হবে যা এ গায়ের ছেলেদের দিয়ে হচ্ছে না! এই গায়ের নাম গালা আর মেরাজদের বাড়ি এই গ্রাম থেকে মাইল পাঁচেক দূরে উত্তর দিকে তাড়াইল গ্রামে, ঢাকা আরিচা রোডের ধারে। মেরাজের বন্ধু যারা আছে তারা হলোঃ মাজেদ মানে মেরাজের মামাত ভাই ওর সাথে ওই দোপ চকের বিলে ফাঁদ পেতে বক শিকার করতে মেরাজের বেশ ভাল লাগে। আরও আছে সেলিম ও পাড়ার কুদ্দুস, শিপলু আর বিজয় নগরের নরেন।

গত কয়েক দিন ধরে তাল তলা দিয়ে যাতায়াতের সময় অনেকেই ভয় পাচ্ছে। মাজেদদের এই তালগাছ থেকে ওই ও পাড়ার কুদ্দুসদের বাড়ি যেতে যে তাল গাছ ওই গাছে দুই পা রেখে কোন এক ভূত দাঁড়িয়ে থাকে। শুধু দাঁড়িয়ে থাকে না রীতিমত সবাইকে হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে। আবার ওই ধুসুরিয়ার চৌরাস্তার বট গাছেতো রীতিমত এক ভূত থাকে যে কিনা সন্ধ্যার পরে পরেই গাছের মাথায় নাচের অনুষ্ঠান শুর করে দেয়। সেখানে রীতিমত আশে পাশের যত মেটে ভূত, লম্বা ভূত, মোটা ভূত, শাঁকচুন্নি, মেছো ভূত আছে সবাই মিটিং করে। এই এলাকার লোকজনেরা খুব চালাক হয়ে গেছে ওই ঢাকি জোড়ার হরি দাস ওঝাকে দিয়ে সব বাড়ির সীমানায় কাঠি পুতে রেখেছে বলে এরা আর সহজেই সব জায়গায় অবাধে যাতায়াত করতে পারে না। কাজেই ওরা এখন সবাই এ পাড়ার লোকদের নানা ছুতা ধরে নানা সাজ ধরে নানান উপায়ে ডর ভয় দেখাতে ব্যস্ত। অমাবস্যা, সকাল সন্ধ্যা, ভর দুপুরে কাউকে একা পেলেই হলো। এইতো সেদিনও মাজেদের বাবাকে কি হেস্ত নেস্তই না করেছিল! ঝিটকার হাট থেকে খালইতে করে মাছ নিয়ে সন্ধ্যার একটু আগে একা ফিরে আসছিল তাল তলা দিয়ে। আর পিছন থেকে মাছের খালই ধরে টানাটানি।

সেদিন দুপুরে পশ্চিমের ওই শুনা ভিটার পাশে বিশাল তেঁতুল গাছের নিচে হালটের কিনারায় বসে এই নিয়েই আলাপ হচ্ছিল। মামার কথা শুনে মেরাজ ক্ষেপে গিয়ে বলে উঠল
মামার এই অবস্থা করেছে? আসলে তোরা সবাই ভীতুর ডিম কারো একটুও সাহস নেই! আমি হলে মজা দেখিয়ে দিতাম!

তাহলে আর বলছি কি? তুই কি পারবি রাত দুপুরে ওই তালগাছের নিচে দিয়ে একা যেতে?
পারব। কিন্তু বল যদি পারি তাহলে কি দিবি?
কি আবার দিব! আমরা বুঝব তোর সাহস আছে!
না এমনিই হবে না, বল কি দিবি তাহলে একটু দেখিয়ে দিতাম!
নরেন বলল আচ্ছা তুই এপাশের রাস্তা থেকে তালগাছের নিচে একটা খুটি পুতে দিয়ে ওই ওপাশের রাস্তা পর্যন্ত যাবি তাহলে তোকে ঝিটকার হাটের দিন হাটে নিয়ে আমাদের দোকান থেকে পেট ভরে রসগোল্লা খাওয়াব। যাবি? পারবি?
হু, পারব, কবে যেতে হবে?
আজই চল, দেখিয়ে দে
আচ্ছা ঠিক আছে
পাকা কথা?
হ্যাঁ, কথা পাকা!
ঠিক আছে। তাহলে আজ সবাই মাজেদদের বাড়ি আসবি ওখান থেকে শুরু হবে ঠিক রাত ১২টায়, কি ঠিক?
হ্যাঁ ঠিক
সবাই একটু এগিয়ে মেরাজের পিঠ চাপরে বলল সাবাস মেরাজ! আজই দেখা যাবে
এ চুক্তির পরে সবাই যার যার মত চলে গেল। মাজেদ আর মেরাজ বাড়িতে আসার পথে মাজেদ বলল মেরাজ তুই কিন্তু ভুল করছিস, আমার মনে হয় তুই পারবি না
আরে ধুর কি বলছিস মাজেদ, দেখ না কি হয়
আচ্ছা ঠিক আছে দেখব!
রাতের খাবার খেয়ে সবাই একে একে এসে হাজির। নরেন, কুদ্দুস, রহিম, জসীম, শিপলু সবাই এসে হাজির। এটা সেটা নানান হাবিজাবি গল্প। এই এলাকায় যত ভূতের কাহিনী আছে তাই নিয়েই রসালো আলাপ চলছে। ওদের মধ্যে সবার চেয়ে ভিতু শিপলু বলল
তোরা যাই বলিস না কেন আমার মনে হচ্ছে মেরাজ একটা ঝামেলা বাঁধাবে!
শিপলুর এই কথায় কুদ্দুসও সায় দিয়ে বলল
আমারও তাই মনে হচ্ছে।
আবার নরেন বলল নারে
আমার মনে হয় ও পারবে! আচ্ছা ঠিক আছে দেখা যাক না কি করে! এইতো আর একটু পরেই দেখা যাবে।

সে রাতে খেতে বসে মেরাজ মাছের তরকারি নেয়নি, মামি বারে বারে জোর করছিল। শত হলেও মামা বাড়ি বেড়াত এসেছে ভাল করে না খাওয়ালে মামির বদনাম হবে। না মেরাজ কিছুতেই মাছের তরকারি নিবে না। মাজেদ ওর দিকে তাকাল কিন্তু দুই ভাইয়ের মধ্যে কি কথা হলো কে জানে শেষ পর্যন্ত মাজেদ বলল
থাক না মা ও খেতে চাইছে না শুধু শুধু জোরা জুরি করে কি হবে!

মামি আশ্বস্ত হয়ে কিছু বলল না। কোন ভাবে কিছু গিলে মেরাজ আর মাজেদ বৈঠক খানায় এসে দেখে প্রায় সবাই এসেছে। ওদের সবাইকে দেখে মামা বাড়ির রাখাল বরকত জানতে চাইল,
কি খবর সব সাহেব দেখি হাজির, কোন মতলব আছে?
না বরকত ভাই এমনিই মেরাজ এসেছে তাই গল্প করতে এসেছি
না আমি ভাবছিলাম মেরাজ এলেইতো তোমরা কিছু না কিছু একটা কাণ্ড ঘটিয়ে বস কিনা কাজেই জানতে চাইলাম।
না বরকত ভাই আপনি একটুও ভাববেন না।
ঠিক আছে ভাবতে না হলেই ভাল
বরকত তার ঘরে যেয়ে শুয়ে পরল।
গল্প চলছে আর ঘড়ি ঘুরতে ঘুরতে রাত বাড়িয়ে চলেছে, সাথে বাড়ছে অন্ধকার। শীতের রাত এমনিতেই সন্ধ্যা লাগার সাথে সাথেই প্রায় গভীর হয়ে যায়। তারপরে চারিদিকে থাকে কুয়াশার চাদর। একটু দূরেও দেখা যায় না।

ঘড়ি দেখে নরেন বলল চল তাহলে এখন যেতে হয়। চল। সবাই উঠে বাড়ির বাইরে নেমে এসে পুকুর পাড় হয়ে আইলের পাশে দাঁড়াল। মেরাজ শোন, তুই এখান থেকে যাবি আর ওই তাল গাছের নিচে মাজেদদের জমিনে যে কলই বুনেছে ওই ক্ষেতের কোণায় এই খুঁটিটা পুতে রেখে আসবি তাহলে আমরা বুঝব হ্যাঁ সত্যিই তুই ওখানে গিয়েছিলি, ঠিক আছে? বলেই হাতের ছোট একটা খুঁটি আর খুঁটি পোতার জন্য একটা ছোট মুগুর মেরাজের হাতে ধরিয়ে দিল।
তাহলে শুরু কর, তোর অবশ্য ভয়ের কিছু নেই আমরা এখানেই থাকব যদি মনে হয় নিতান্ত ভয় পাচ্ছিস তাহলে আমাদের ডাকবি।
মেরাজ পরনের লুঙ্গি ভাল করে পরে নিল, গায়ের চাদর ভাল করে গায়ে জড়িয়ে খুঁটি আর মুগুর নিয়ে চারিদিকে একবার দেখে নিয়ে সোজা হেটে চলল।

এখানে ওরা সবাই দাঁড়িয়ে রইল। ঘাসের উপরে বসার উপায় নেই কুয়াশা পড়ে ভিজে গেছে। মেরাজের যেতে মিনিট পাঁচেক লাগবে কাজেই এর মধ্যে চুপচাপ থাকাই ভাল। ওখানে গিয়ে যখন খুঁটি পুঁততে থাকবে তখন মুগুরের শব্দ হবে। শব্দ হলেই বুঝব মেরাজের মিশন পূর্ণ হতে চলেছে।
সময় আর যেতে চাইছে না। প্রতিটা সেকেন্ড এক ঘণ্টার মত মনে হচ্ছে। নরেনের ঘড়ির কাটা ঘুরতে চাইছে না। সবাই অস্থির। শুধু পায়চারি করছে কিন্তু কেউ কথা বলছে না। শীতের রাতে নিস্তব্ধ গ্রামের মাঠে একটু শব্দ হলেই অনেক দূরে শোনা যায়। ওদের কথার শব্দ পেলে মেরাজের সাহস বেরে যাবে ও কোন ভয়ই পাবে না, শুধু শুধু এত গুলি মিষ্টি খরচ হবে। না বাবা তার কোন সুযোগ দেয়া যাবে না। কতক্ষণ পরে ঠক ঠক শব্দ
ভেসে এলো তালগাছের নিচে থেকে। ওরা সবাই এ ওর দিকে তাকাচ্ছে। অন্ধকারের যে আলো আছে তাতে

দেখার চেষ্টা করছে কার চেহারা কেমন দেখাচ্ছে। ওইতো মেরাজ ঠিক পৌঁছে গেছে এবং সফল ভাবে খুঁটি পুঁতছে।
শব্দ শুনে নরেনের মুখ শুকিয়ে গেল তাহলে মিষ্টি খরচ করতেই হবে মানে বাবার কাছে আবদার করে চাইতে হবে, বাবা আমার বন্ধুরা এসেছে কিছু মিষ্টি দাওনা! বাবা যদি ভালয় ভালয় দিয়ে দেয় ত ভাল নয়তো ভিন্ন পথ
ধরতে হবে! আরে ধুর আমি এসব কি আবোল তাবোল ভাবছি! আগে ও আসুক তখন ভাবলেও হবে! ভেবেছিল মেরাজ এই কাজ করতেও পারবে না কাজেই ওর মিষ্টির ব্যবস্থাও করতে হবে না কিন্তু ছেলেটা যে এমনি করে রাজী হবে বুঝতেই পারে নি। ভয়তো কম দেখানো হয়নি। একটুও ভয়তো পেলই না উলটো রাজি হয়ে গেল।

কয়েকটা ঠক ঠক শব্দ হয়ে শব্দ থেমে গেল। ওরা বুঝে গেল খুঁটি পোতা হয়ে গেছে। মানে খুঁটি পোতা হয়ে গেছে এবার নিশ্চয়ই মেরাজ বীরের মত ফিরে আসছে! কিন্তু একি! হঠাৎ মেরাজের এক চিৎকার! মাজেদ আমি গেলাম! আর কোন শব্দ নেই। কি হলো? এই চল ও নিশ্চয়ই ভয় পেয়েছে। সবাই দৌড়ে যাচ্ছে। হন্ত দন্ত হয়ে ওখানে পৌঁছে দেখে মেরাজ কাত হয়ে কলই ক্ষেতে পড়ে রয়েছে গায়ে চাদর নেই, চাদরটা কয়েক হাত দূরে পড়ে রয়েছে। এই কি হয়েছে কি হয়েছে? ডাকা ডাকি করে কোন জবাব না পেয়ে বুঝল বেহুঁশ! দুই জনে ধরে কাঁধে উঠিয়ে পুকুর পাড়ে নিয়ে গেল অন্যরা চাদর উঠবার জন্য টান দিয়ে দেখে গায়ের চাদর খুঁটির সাথে মাটিতে পুতে গেছে। খুঁটি তুলে চাদর বের করে পাশে পড়ে থাকা মুগুর নিয়ে ফিরে এলো। ওকে পুকুর পাড়ে এনে শুইয়ে দিল। পুকুর থেক আঁজলা ভরে পানি এনে চোখে মুখে ছিটিয়ে দিল একটু পরেই মোটামুটি হুশ ফিরে এলো। চোখ মিট মিট করে তাকাতে দেখে জিজ্ঞেস করল, কিরে এখন কেমন লাগছে? এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে ওর সব বন্ধুরা ওকে ঘিরে রেখেছে। আশ্বস্ত হয়ে বলল, ভাল।
কি হয়েছিল?

আমি খুঁটি ঠিক মতই পুঁতেছি কিন্তু খুঁটি পুতে দাঁড়াবার সময় আমাকে কে যেন টেনে ধরল কিছুতেই ছাড়ে না। দৌড় দিলাম কিন্তু তবুও দেখি পিছে থেকে টানছে, আর কিছু বলতে পারব না, কিছু মনে পরছে না। ওরা তখন সবাই মিট মিট করে হাসছিল। বলতো কে ধরেছিল কিছু দেখেছিস? বললাম তো কিছুই দেখিনি। আরে বোকা এই দেখ তুই তোর গায়ের চাদর সহ খুঁটি পুঁতেছিলি এই দেখ মাটি লেগে রয়েছে। আমরা খুঁটি তুলে তবে তোর চাদর বের করেছি। এই কথা বলে বলল চল সবাই বাড়ি যাই আজ অনেক হয়েছে আবার কাল দেখা হবে। মাজেদ মেরাজকে নিয়ে বাড়ির পথে হাটা শুরু করল।
নরেন বলে উঠল, কিরে মেরাজ মিষ্টি খাবি?

স্বপ্নের খেয়া


দিগন্তে মেলে ডানা হারিয়ে যেতে নেই মানা।।

নীল সাগর তিরে
এই মায়াবী রাতের আঁধার
চুপি চুপি আমায় ডেকে যায়।।

এই ঘুম ঘুম নিশি রাতে
উদাসী বালুকা বেলায়
ঝিরি ঝিরি হাওয়া
গুন গুন গান গেয়ে
যেন হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়।।

ওই দূর দিগন্ত পাড়ে
মিলন বাসর সাজানো
তারার মিটি মিটি
ঢেউ এর কানা কানি
যেন স্বপ্নের দেশে নিয়ে যায়।।

www.youtube.com/watch?v=crZtvYj0Wxw&feature=youtu.be

সুর ও কণ্ঠঃ শতদল হালদার, দিগরাজ, বাগেরহাট।
________________________________

ইন্টারাপ্টার


সত্যি কথাই বলছি। আমাকে কিন্তু আপনারা কেও চিনতে পারবেন না। আপনাদের সাথে আমার তেমন করে আলাপ পরিচয় হয়নি তবে আমার নানা ভাইয়াকে আপনারা ভাল করেই জানেন, তার সাথে আপনাদের বেশ সখ্যতা আছে আমি জানি। যখন তিনি ল্যাপটপ দিয়ে আপনাদের জন্য গল্প লেখেন আবার এখানে পোস্ট করেন তখন আমি কাছে এলেই তিনি তার যত রকমের বাধা দেয়ার কৌশল জানা আছে সবই করেন। আমাকেও যে ল্যাপটপে কাজ করতে দিতে হবে তা তিনি কিছুতেই বুঝতে চান না। তিনি অবশ্য তার একটা ল্যাপটপ আমাকে দিয়েছেন কিন্তু এটার মনিটরে কোন আলোতো জ্বলেই না, কী বোর্ড বা মাউস প্যাডের সাথে কুস্তী করেও কিছু হয় না, পরে বুঝলাম ওটা তার বাতিল নষ্ট ল্যাপটপ।

তবুও কিছু কথা আপনাদের না জানালে আমি অস্বস্তি বোধ করছি, কথাগুলি আমার পেটের ভিতর শুধু টগবগ করে ফুটছে কিছুতেই আটকে থাকতে চাইছে না। আমিওতো আপনাদের সাথে পরিচিত হতে চাই, শব্দনীড়ের জন্য কিছু লিখতে চাই। আমার নানা আমাকে শোনান “ থাকবোনাকো বদ্ধ ঘরে দেখব এবার জগতটাকে” কিন্তু যখনই আমি নানার সাথে ঘরের বাইরে যেতে চাই তখনই তিনি বিরক্ত হন। কোমরে ব্যথা, পায়ে ব্যথা এমনি নানা রকম অজুহাত দাড় করেন। তবুও কখনও বাইরে নিয়ে গেলে আমি যখন চারিদিকের নানা কিছু দেখে সব কিছু জানতে চাই তখনও তিনি বিরক্ত হন। এইতো সেদিন আমাকে কোলে নিয়ে বাড়ির কাছে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন তখন শুনলাম রাস্তার মাঝের ম্যান হোল থেকে শব্দ আসছে। আমি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে জানতে চাইলাম এটা কিসের শব্দ? নানা ভাই আমাকে বুঝিয়ে দিলেন এটা ম্যান হোল, এখান দিয়ে প্রতিটি বাড়ির নোংড়া পানি সহ বৃষ্টির পানি নিষ্কাসিত হয়, একটু আগে যে বৃষ্টি হয়েছে সেই পানি যাচ্ছে বলে শব্দ হচ্ছে।

আবার ছাদে যেয়ে যখন টবে পানি দেয়ার বালতি হাতে পানির ট্যাংক এর কাছে যেতে চাইলাম তখন বাধা দিয়ে বললেন না না তোমাকে এ কাজ করতে হবে না। আচ্ছা ঠিক আছে করলাম না। তার পরে ছাদের একটা চেয়ার টেনে আম গাছটার নিচে নিতে চাইলাম তাতেও তার নিষেধাজ্ঞা, বলে কিনা “এই পণ্ডিত ওটা ধরবে না ব্যথা পাবে”। আচ্ছা বলতে পারেন এতসব বাধা বিপত্তি এড়িয়ে আমি কেমন করে সত্যিকারে পণ্ডিত হতে পারি?
সেদিন নানা ভাই ইনসুলিন নিচ্ছিলেন। আমি তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে তার কাছে গিয়ে মাত্রই ইনসুলিনের বাক্সটা ধরেছি আর ওমনি তিনি চ্যাচিয়ে আমার মাকে ডেকে বললেন ওকে ধর। কিন্তু আমিও নাছোড় বান্দা, না আমার হাতে ওই বাক্স দিতেই হবে, না তিনি তা দিলেন না। এর মধ্যে ইনসুলিন নিয়ে আমার হাতে তুলার টুকরা দিয়ে বললেন যাও এটা বিনে ফেলে দাও, যাক এতেই আমি খুশি কিন্তু তাকে ইনসুলিন দিতে না পারার একটু দু:খ মনের কোণে রয়েই গেল।

আর একদিন সিঁড়ি দিয়ে উঠে ছাদে যেতে চাইছিলাম তখন আমাকে দেখেই ভাইয়া দৌড়ে এসে বাধা দিলেন, বলে কিনা আমি নাকি পরে গিয়ে ব্যথা পাব! এমনি যখন যাই করতে চাই সব কিছুতেই আমাকে interrupt করেন। সেদিন দেখলাম মা রান্না ঘরে চুলা জ্বেলে কি যেন রান্না করছিল, মা তখন সিংকে কি ধোয়ার কাজে ব্যস্ত। ভাবলাম আমার একটু গরম পানি দরকার তাই আমার পানির ফিডারটা নিয়ে মাত্রই চুলার উপরে ধরতে গেছি আর অমনি ভাইয়া এসে আমাকে চিলের মত ছো দিয়ে নিয়ে এলো। জ্বলন্ত চুলার উপরে আমার ফিডারটা ধরতেই পারলাম না, মা পিছনে ঘুরে দেখে অবাক হয়ে আমার দিয়ে তাকিয়ে রইল।

নানা ভাই অফিস থেকে ফিরলেই আমি তার জুতা মুজা খুলে রাখার জায়গা দেখিয়ে আবার ঘরে স্যান্ডেল কোথায় আছে তাও দেখিয়ে দেই তারপরে তার কোলে উঠে হাতের ইশারায় গেট দেখিয়ে বলি আমাকে নিয়ে এখন একটু বাইরে চল।

কয়েকদিন আগে নানা ভাই পাশের রেজা ভাইয়ের দোকান থেকে মসুর ডাল, সাবান, চিনি এরও কত কি আনতে গেল সাথে আমাকে কোলে নিয়ে গেল, সবকিছু মিলিয়ে প্যাকেটটা অনেক বড় হয়ে গেল তাই আমি ভাবলাম অন্তত মসুর ডালের প্যাকেটটা আমার হাতে নিই নানা ভাইয়ের কোলে বসে মসুর ডালের প্যাকেট হাতে করে এনে নানুর হাতে দিলাম, আর নানু যে কী খুশি হলো তা আর বলার নয়। আমার যে সংসারের অনেক কাজ করতে ইচ্ছা হয়, মনে হয় আমি সারাদিন ব্যস্ত থাকি। সারাদিন কি আর পড়াশুনা এবং খেলাধুলা করা যায়? যদিও নানা ভাইয়া আমাকে অনেক বই আর খেলনা কিনে দিয়েছেন। কিন্তু কিছু করতে গেলেই তিনি আমাকে ভীষণভাবে interrupt করেন তাহলে আমার জ্ঞান, অভিজ্ঞতা বাড়বে কেমন করে? আমার বয়স এখন দেড় বছর, এখন থেকেই যদি এই ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর সবকিছু এক এক করে শিখে না নেই তাহলে আমি সত্যিকারে শিক্ষিত হব কি করে? আমার নানা ভাই এ কথা কেন বুঝতে চায় না বুঝি না!

আপনারা একটু আমার নানা ভাইয়াকে বলে দিবেন তিনি যেন আমার ইন্টারাপ্টার না হন।

মেছো ভূত

আমার বাবা যখন ঝিটকা হাইস্কুলের শেষ ক্লাসের ছাত্র তখন কোন এক শীতের বিকেলে আমার দাদি বলেছিল হ্যারে বাদশা, কয়টা মাছ মাইরা আনলে রাইন্ধা দিতাম, রাইতে ভাত খাবি কি দিয়া, ঘরে কিছু নাই। মাতৃ ভক্ত আমার পিতাজি মায়ের আদেশ পেয়ে ভাবল এখন যেয়ে কাজ নেই রাতে ওই ভুসকুরার বিলে যাব। ওখানে পুকুরে অনেক কৈ মাছ আছে। মাছ ধরার জন্য ধর্মজাল আর মাছ রাখার জন্য একটা খালই রেডি করে রাখল। বেলা ডোবার সাথে সাথে রওয়ানা হলে সন্ধ্যার অন্ধকার হবার পরপরেই অল্প সময়ে বেশি মাছ পাওয়া যাবে। কাউকে সাথে নেবার দরকার নেই শুধু শুধু ঝামেলা। বেহুদা কথা বলবে। যদিও ওখানে পুকুর পাড়ের পুরনো শেওড়া গাছে ভূতের বাসা এ কথা সবাই জানে। দিন দুপুরেও ওই পথে পারতপক্ষে কেউ যেতে চায় না। থাক ওতে কি হবে আমিতো আর ভূতের ভাগের মাছ আনতে যাব না! তাছাড়া ওরাতো প্রতিদিনই খায়।

বাড়ির এই কাজ ওই কাজ টুকি টাকি সারার আগেই বেলা তলিয়ে গেল আর বাবাও জাল খালই আর দিয়াশলাই, শাল পাতার বিড়ির প্যাকেট কোমরে গুজে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। বাড়ির পুব দিক দিয়ে নেমে সামনেই একটা মস্ত তেঁতুলগাছের নিচে দিয়ে তিন চার মিনিট সামনে এগিয়ে সৈয়দ আলির বাড়ি ডানে রেখে এগিয়ে গেলেই খোলা চক। চকের ভিতর দিয়ে আইল ধরে মনের আনন্দে গান গাইতে গাইতে এগিয়ে চলল। ভুসকুরা এসে পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখে নিল তার আগে আর কেউ এসেছে কিনা। দৃষ্টিটা একবার শেওড়া গাছের দিক থেকেও ঘুরে এলো। না আর কেউ নেই। এর মধ্যেই অন্ধকার হয়ে এসেছে। ভালই হয়েছে। দেখা দেখি আর কেউ আসবে না। অন্ধকার যত গভীর হোকনা কেন তার একটু আলো থাকে। আকাশের তারা গ্রহ নক্ষত্র তাদের আলো ছড়িয়ে দেয় তারই কিছু এসে পড়ে এই পৃথিবীর উপর তাতে অন্ধকারের মাঝে কিছুক্ষণ থাকলেই ওই আলো দেখা যায় চোখ সেটা খুঁজে নিতে পারে। সেই আলোতে যতটা দেখা গেল বিশাল পুকুর বোঝাই কচুরি পানা, পাড় দিয়ে ছিটকি, মটমটি, ভাট পাতা এবং নানান হাবিজাবি আগাছায় ভরা। এর মধ্যেই একটু ফাঁক খুঁজে নিয়ে হাঁটু পানিতে নেমে জাল পাতার মত কচুরি সরিয়া কিনারায় উঠে একটা বিড়ি জ্বালিয়ে ঘন ঘন কয়েক টান দিয়ে কচুরি পানা পরিষ্কার করা ফাকা জায়গায় জাল ফেলল।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে এক টান দিল আর জাল তুলেই আমার পিতৃদেবের মন খুব খুশি হলো না। জালে কোন মাছ নেই। পরে ২য় টানেও কোন মাছ নেই। পরের টানে জাল খালি ওঠেনি, বেশ কয়েকটা কৈ চার/পাঁচটা হবে উঠেছে। এগুলি ধরে খালইতে রেখে আবার জাল ফেলে দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময় তার মনে হলো কেউ পিছন থেকে খালই ধরে টানছে। খালইটা ডান হাতে টেনে পিছন থেকে সামনে এনে গামছা দিয়ে ঢেকে রাখল যাতে মাছ লাফিয়ে বেরিয়ে না যায়। কিছুক্ষণ পরে পরেই জাল তুলছে। ভাগ্য ভাল কোন টানেই জাল খালি আসেনি কম হলেও ৩/৪টা করে মাছ এসেছে তবে সব গুলি কৈ না, কয়েকটা ফলি এবং ট্যাংরা পুঁটিও আছে। এ ভাবে বেশ অনেকক্ষণ মাছ মেরে চলেছে। হঠাৎ পুকুরের ওপাড়ে দৃষ্টি গেল আর দেখে এক টুকরা আলো মনে হচ্ছে কে যেন হারিকেন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবল তার মত কেউ মাছ মারতে এসেছে। মারুক আমার কি! এত্ত বড় পুকুর। একটু পরে লক্ষ করে দেখল জাল ফেলার কোন শব্দ নেই। এবার ডাকল এই কে, ওপাড়ে কে? না কোন জবাব নেই! বেশি ডাকাডাকি করল না। কথা বললে তার নিজেরই ক্ষতি। কিন্তু কোন

জাল ফেলার শব্দ হচ্ছে না অথচ এখানে হারিকেন নিয়ে কি করছে লোকটা! এ পাড় আর ও পাড়ের মধ্যে দূরত্ব একেবারে কম না, ভাল দেখা যাচ্ছে না আর তা সম্ভবও না। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একি? যে বাতিটা দেখা যাচ্ছিল সেটা কেমন করে কচুরি ভরা পুকুরের ওপর দিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে, প্রায় মাঝ বরাবর এসে আবার পুকুরের কচুরি পানার ওপর দিয়েই ওই ডানে শেওড়া গাছের দিকে চলে গেল! ও আচ্ছা! থাক তোর মত তুই থাক!

এবারের টানের মাছ রাখতে যেয়ে মনে হলো খালইতে মাছ কম লাগছে! কি ব্যাপার? এতক্ষণে খালই প্রায় অর্ধেক হয়ে যাবার কথা! মাছ যায় কোথায়? দিয়াশলাই জ্বেলে দেখে হ্যাঁ তাইতো ফলি মাছ একটাও নেই পুটী মাছও নেই। তলা হাতিয়ে দেখে না কোথাও ভাঙ্গা নেই তাছাড়া ভাল খালই দেখেই এনেছে। উপরে গামছার ঢাকনি দেয়া হয়েছে। একটু পরে আবার খালই ধরে টানাটানি। এবার এক টানে পিছনে নিয়ে গেল।
কিরে খালই ধরে টানছিস কে?
নাকি সুরে, মাছ দে!
তোকে দেয়ার জন্য মাছ ধরছি? লাগলে ধরে খা
নাকি সুরে, মাছ দে তা না হলে কিন্তু পুকুর পাড়ের কাদায় পুতে রাখব!
কি পুতে রাখবি?
নাকি সুরে, তোকে

রাখ দেখি! আয় সামনে আয়! পিছনে লুকিয়ে রয়েছিস কেন?
বলেই জালের বাঁশ ছেড়ে বাবা ঘুরে দাঁড়ালেন
কিরে কোথায় গেলি আয়! মাছ নিবি না? আমাকে পুতে রাখবি না?
নাকি সুরে, ভালয় ভালয় কয়টা মাছ দিয়ে দে, তারপরে বাড়ি ফিরে যা
বাড়ি যাব, আমি কি তোদের মত শেওড়া গাছে থাকি?
নাকি সুরে, তাহলে মাছ দে
মাছতো নিয়েছিস, ফলি পুটী সব কে নিয়েছে? আর কত নিবি?
নাকি সুরে, না আরও কয়েকটা পুটী আছে ওগুলি দিয়ে দে
নারে, পুটী মাছ ভাজা খুব মজা, তুই যদি চাস তাহলে আমার সাথে বাড়ি পর্যন্ত চল মা ভেজে দিলে তখন নিবি
নাকি সুরে, ধুর, আমি কাচা খাব
পুটী পাবি না নে একটা কৈ নে
নাকি সুরে, না কৈ মাছে মেলা কাটা
দেখ রাত হয়ে গেছে বিরক্ত করিস না আমাকে আমার কাজ করতে দে
নাকি সুরে ধমক দিয়ে, কি দিবি না?

এই চ্যালেঞ্জের মুখে বাবা এতক্ষণে ভয় পেলেন। আশে পাশে কেউ নেই, গ্রাম বেশ দূরে, আধা মাইলতো হবেই। এর মধ্যে অনেক সাহসের কাজ করে ফেলেছি আর না এবার বাড়ি যাই কিন্তু এটাকে সরাই কি করে? বাবার মনে হঠাৎ বিড়ির কথা মনে হলো আর কোমরের ট্যাঁক থেকে বিড়ি বের করে ঠোটে ধরে দিয়াশলাই জ্বালাবার মুহূর্তেই হাতে কি যেন এক ঝাঁকুনি লেগে দিয়াশলাই পানিতে পড়ে গেল। বাবা আগেই ভয় পেয়েছিল একটু। এবার ভাবছে কি করা যায়! অনেক মাছ! কিন্তু ভূতের নজর লাগা মাছ নিয়ে গেলে নিশ্চয়ই মা এই মাছ রান্না করবে না, ফেলে দিতে হবে। তার চেয়ে দুই একটা দিয়ে দিবো! না থাক দেখি কি করে! একটু ভেবে, না থাক, বাড়ি ফিরে যাই যা ধরা হয়েছে যথেষ্ট হয়েছে।

বাবা জাল গুটিয়ে কোমর থেকে খালই খুলে হাতে নিয়ে বাড়ির পথে হাটা শুরু করল। কিছুদূর যাবার পর মনে হলো সেই আগের মত খালই টেনে ধরেছে। থেমে পিছনে ঘুরে দাঁড়াল। না কেউ নেই। আবার হাঁটছে। একটু পরে আবার সেই একই কাণ্ড। এক হাতে খালই ধরে হাঁটছে। এভাবেই প্রায় বাড়ির কাছের তেঁতুল গাছের নিচে আসতেই হঠাৎ করে পিছন থেকে হ্যাঁচকা টানে বাবার হাত থেকে খালই ছুটে পরে গেল। জায়গাটা গ্রামের ভিতর বলে দুই পাশে বাঁশঝাড়, অন্যান্য বড় বড় গাছপালা ঝোপঝাড় বোঝাই তাই বেশ অন্ধকার। পিছনে ঘুরে দাড়াতেই মনে হল কে যেন গালে একটা চড় মারল। কে করল এই কাজ? আশেপাশে খুঁজে দেখার আগেই কে যেন সাড়াশির মত জাপটে ধরল, প্রচণ্ড চাপ সাথে কাচা মাছের বিকট গন্ধ। অনেকক্ষণ ধ্বস্তা ধ্বস্তি কিন্তু বাবা কিছুতেই সুবিধা করতে পারছিল না একে তো কাচা মাছের অসহ্য গন্ধ তারপর আবার প্রতিপক্ষের শরীর অসম্ভব রকমের পিচ্ছিল। কাঁধ থেকে জাল পরে গেছে আগেই, তুমুল জড়াজড়ি ধ্বস্তা ধস্তি হচ্ছে কিন্তু বাবাকে কাবু করতে পারছে না। অনেকক্ষণ চলছে এই কাণ্ড। হঠাৎ কাছের বাড়ি থেকে কে যেন আলো নিয়ে বের হয়ে ঝোপ ঝাড়ের শেষ প্রান্তে সৈয়দ আলির বাড়ি যাবার জন্য এগিয়ে গাব তালয় এসে শুনতে পেল ঝোপের লতা পাতা নাড়াচাড়া হবার শব্দ হচ্ছে। ভাবল হয়ত কারো গরু ছুটেছে আর একটু এগিয়ে হারিকেনের আলোতে দেখে কে যেন কার সাথে কুস্তি লড়ছে। এই কি হয়েছে কি হয়েছে? এই কে কী করছিস? থাম! থাম! আর একটু এগিয়ে দেখল শুধু লুঙ্গি পড়া খালি গায়ে বাদশা ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেল। কাছে এসে দেখে অজ্ঞান হয়ে বাদশা পড়ে আছে।
এই কি হয়েছে তোর? কি হয়েছে? কোন সাড়া না পায়ে জোড়ে চেঁচিয়ে ডাকল এই বাদশার মা তাড়াতাড়ি আস দেখ তোমার ছেলের কি অবস্থা!
একটু দূরেই জালটা পরে রয়েছে তার পাশে একটা খালই।
দাদি সারা দিয়ে জিজ্ঞেস করল
ও ফজর ভাই কি হইছে!
তাড়াতাড়ি আইসা দেখ কি হইছে
একটা কুপি বাতি হাতে চিৎকার করতে করতে দাদি এসে দেখে আমার পিতাজি বাড়ির পাশের ঝোপের মধ্যে পড়ে রয়েছে আর তার পাশে ফজর আলি দাঁড়ানো,
কি হইছে ফজর ভাই? হঠাৎ ছেলের দিকে চোখ পড়তেই, ওরে বাদশা কি হইল তর?

দাদি চিৎকার করে কান্না শুরু করল আর ফজর আলি ডেকে আরও দুই চারজনকে এনে বাবাকে ধরে বাড়ি নিয়ে এলো তখনই ধরতে গিয়ে দেখে সমস্ত শরীর পিচ্ছিল এবং মাছের আঁশটে গন্ধ।
ও ভাবি, পুলা কি ভুসকুরা গেছিল মাছ মারতে?
মাছ মারতে বাইর হইল জাল খালই নিয়া কিন্তু কোথায় গেছিল তা তো জিজ্ঞেস করি নাই!
বুঝছি ওই ভুসকুরাই গেছিল আর ওই পেত্নীর পাল্লায় পরছিল। দেখছ কেমন মাছের গন্ধ আর পিছলা!
বাড়িতে এনে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরে এলো। কিরে কোথায় গেছিলি?
চাচা ভুসকুরা গেছিলাম, মাছও পাইছিলাম কিন্তু একটা ঘটনা ঘটল যা এর আগে দেখি নাই
হ তোমার কওন লাগব না আমরা তাই কইতেছিলা্ম বাদশা ভুসকুরা গেছিল, আমি তোমার পাশে জাল দেখছিলাম আর ওই দিকে ভুসকুরা ছাড়া আর কই যাইবা তাও বুঝছিলাম
গরম পানি সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে আগুনে ছেকে কাঁথা গায়ে মা শুইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল। পরদিন ওই যেখানে বাবাকে পেয়েছিল ওখানে দেখে জালটা পড়ে আছে, পাশে খালই আর আশেপাশে কয়েকটা মাছের শুধু মাথা পড়ে আছে লেজের দিকে কিছুই নেই। খালইতে তখনও বেশ কয়েকটা কৈ মাছ। পাড়ার মুন্সি বাড়ি থেকে তাবিজ এনে বাবার গলায় দেয়া হলো।

ভিন্ন স্বাদের ইন্দোনেশিয়ান রাইস “নাসি গরেং”

ইন্দোনেশিয়ান খাবার বলতে নাসি গরেং রাইসটাই সবাই এক নামে চেনেন। এতকাল কেবল রেস্তরাঁতেই খাওয়া হয়েছে এই খাবার? তাহলে আজ চলুন জেনে নিই ঘরেই দারুণ এই খাবার তৈরির রেসিপি।

যা লাগবে
রান্না করা ভাত ২ কাপ
পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ
আদা বাটা ১ চা চামচ
রসুন বাটা ১ চা চামচ
লেবুর রস ২ চা চামচ
সয়াসস ১ টেবিল চামচ
ওয়েস্টার সস ১ চা চামচ
ফিস সস ১ চা চামচ
লাল মরিচ পেস্ট হাফ চা চামচ ( ঝাল না চাইলে না দিলেও হবে )
পেঁয়াজ পাতা কুচি অল্প
২ টা ডিম-এর ঝুরি ( হালকা তেলে ফেটানো ডিম ভেজে ঝুরি করে নেয়া )
চিংড়ি মাছ খোসা ছাড়ানো হাফ কাপ
সেদ্ধ মটরশুটি অল্প
সেসেমি অয়েল / যে কোনো তেল ১ টেবিল চামচ
লবণ স্বাদমত

প্রনালি
-প্রথমে প্যানে তেল দিয়ে পেঁয়াজ দিন।
-হালকা লাল হলে এতে আদা-রসুন বাটা , চিংড়ি মাছ দিয়ে রান্না করুন ৩ মিনিট।
-এখন এতে লাল মরিচ পেস্ট আর লেবুর রস দিয়ে রান্না করুন ২ মিনিট।
-এখন রান্না করা ভাত দিয়ে এতে একে একে সয়া সস, ওয়েস্টার সস , ফিস সস, ডিমের ঝুরি , সেদ্ধ মটরশুঁটি , পেঁয়াজ পাতা কুচি আর লবণ স্বাদমত দিয়ে নেড়েচেড়ে রান্না করুন ৬ থেকে ৭ মিনিট।
যিনি এই রেসিপি দিয়ে রান্না করবেন তিনি আমার জন্য বেশী না মাত্র এক প্লেট পাঠিয়ে দিবেন নইলে……………………………………………।
সহজ রেসিপির সুত্রঃ

শীতে খেজুর খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা

খেজুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। বিশেষ করে যদি শীতের দিনে প্রতিদিন খাওয়া যায়। এতে রয়েছে- ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম, ন্যাচারাল গ্লুকোজ এবং আঁশ। শীতে কেন খেজুর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো সেই বিষয়গুলো জেনে নেয়া যাক।

শরীর উষ্ণ রাখে
ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফাইবার, ভিটামিন ও ম্যাগনেসিয়ামের চমৎকার উৎস খেজুর। আর খেজুরের এসব উপকরণ শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে।

ঠাণ্ডা নিরাময়ে সাহায্য করে
ঠাণ্ডার সমস্যায় ভোগলে দুই-তিনটি খেজুর, কয়েকটি গোলমরিচ এবং এক-দুইটি এলাচ পানিতে দিয়ে সিদ্ধ হতে দিতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে দ্রবণটি পান করলে ঠাণ্ডা থেকে নিরাময় পাওয়া যাবে।

অ্যাজমা নিরাময়ে
অ্যাজমা এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যা শীতের সময় বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় ১-২ টি খেজুর খেলে অ্যাজমা সমস্যা বৃদ্ধি পায় না।

শক্তি বর্ধক
খেজুরে প্রাকৃতিক চিনি থাকে বলে তাৎক্ষণিকভাবে শরীরে শক্তি যোগায়। শক্তি বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক কয়েকটি খেজুর খেয়ে নেয়া যেতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য
খেজুর আঁশযুক্ত খাবার। একগ্লাস পানিতে কয়েকটি খেজুর সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে ভেজানো খেজুরগুলোকে পিষে নিতে হবে। এবং সিরাপ বানিয়ে খালি পেটে পান করতে হবে। এই সিরাপ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করবে।

হৃদপিন্ডের জন্য ভালো
খেজুর আঁশযুক্ত খাবার বলে হৃদপিন্ডকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। এটি হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে থাকতে সাহায্য করে বলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি প্রতিরোধ হয়। বিশেষ করে শীতকালে।

আরথ্রাইটিসের জন্য ভালো
খেজুরে প্রদাহরোধী উপাদান আছে। এজন্য খেজুর খেলে আরথ্রাইটিসের ব্যথা কমে যা শীতের সময় খুব সাধারণ একটি বিষয়। তাই প্রতিদিন কয়েকটি খেজুর খাওয়া যেতে পারে।

ব্লাড প্রেশার কমায়
খেজুর ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম সমৃদ্ধ। এই দুটি উপাদান রক্তচাপ কমতে সাহায্য করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন পাঁচ-ছয়টি খেজুর খাওয়া যেতে পারে।

ইত্তেফাক/সালেহ্

টিফিনে ঝটপট দই স্যান্ডউইচ


সকালের নাস্তা হোক কিংবা বিকেলের স্ন্যাক্স, অথবা বাচ্চাদের টিফিন বা অফিসের লাঞ্চে স্যান্ডউইচ
খাবারটি বেশ প্রচলিত। বাচ্চাদের টিফিন নিয়ে মায়েদের চিন্তার শেষ নেই। ঝটপট টিফিন হিসেবে তৈরি করে দিতে পারেন দইয়ের এই স্যান্ডউইচটি। স্বাস্থ্যকর এই খাবারটি খেতে পছন্দ করবে যে কেউ। চলতে পারে অফিসের হালকা লাঞ্চেও। স্বাস্থ্যকর দই স্যান্ডউইচ। ছবি: সংগৃহীত
উপকরণ:
৩/৪ কাপ ঘন টকদই (গ্রিক ইয়োগার্ট)
১/৪ কাপ মেয়নিজ
১/২ চা চামচ গোলমরিচের গুঁড়ো
১/৪ কাপ গাজর কুচি
লবণ
১/৪ কাপ বাঁধাকপি কুচি
১/৪ কাপ ক্যাপসিকাম কুচি
১/২ চা চামচ আদা কুচি
১/৪ কাপ কর্ন
৬ টুকরো পাউরুটি
২ চা চামচ মাখন
১ চা চামচ তিল
প্রণালী:
১। একটি পাত্রে ঘন টকদই, মেয়নিজ দিয়ে ভালো করে মেশান।
২। এরপর এতে গোল মরিচের গুঁড়ো, লবণ, গাজর কুচি, বাঁধাকপি কুচি, ক্যাপসিকাম কুচি, কর্ন, আদা কুচি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
৩। এবার পাউরুটির দুইপাশ কেটে নিন। পাউরুটির মাঝে টকদইয়ের মিশ্রণটি দিয়ে সমান করে ছড়িয়ে দিন। এর উপর আরেকটি পাউরুটি দিয়ে ঢেকে দিন।
৪। প্যান বা তাওয়ায় মাখন দিয়ে দিন। মাখন গলে আসলে এতে কিছু তিল দিয়ে দিন। এর উপর পাউরুটি হাত দিয়ে নাড়ুন। পাউরুটির একপাশে মাখন এবং তিল লেগে যাওয়া পর্যন্ত (ভিডিও অনুযায়ী) নাড়তে থাকুন।
৫। এরপর আবার মাখন এবং তিল দিয়ে দিন। এর উপর পাউরুটির অন্যপাশ দিয়ে নাড়ুন।
৬। ব্যস তৈরি হয়ে গেলো দই স্যান্ডউইচ। হুটহাট অতিথি বলুন কিংবা বাচ্চাদের টিফিনে ঝটপট তৈরি করে পারেন দই স্যান্ডউইচ।

নিগার আলম – ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, সময়-১১:৪৫,
সূত্রঃ (প্রিয়.কম)
সূত্র: হিব্বারস কিচেন
সূত্রঃ সম্পাদনা : রুমানা বৈশাখী
বিভাগ: লাইফ রেসিপি খাবার