মোঃ খালিদ উমর এর সকল পোস্ট

মোঃ খালিদ উমর সম্পর্কে

কুয়াশা ঢাকা মানুষের মন বুঝতে চেষ্টা করি কিন্তু পারিনা!

বিলাতি ভূত

সাউথ ওয়েলস এর কার্ডিফ শহর থেকে প্রায় চল্লিশ মাইল উত্তরে নিভৃত কিন্তু বেশ নামি ও বনেদি আবারগাভানি এলাকায় একটা রেস্টুরেন্টে কাজ করতে এসেছি ২/৩ দিন আগে। জায়গাটা বেশ সুন্দর। পিছনে পাহাড়, সামনে কার্ডিফ থেকে আসা রাস্তা চলে গেছে দুই মাইল দূরের আবারগাভানি শহর কেন্দ্রে। আবার ওখান থেকে ওই রাস্তা দিয়ে হেরিফোর্ড যাওয়া যায়। উত্তরেও একটা আভ্যন্তরীণ রাস্তা এঁকে বেঁকে চলে গেছে পাহাড়ের দিকে। বেশ পুরনো রেস্টুরেন্টটা দোতলা। নিচতলায় বার, ওয়েটিং লাউঞ্জ, টয়লেট আর হলরুম। উপরে খাবার টেবিল আর ছোট্ট একটু বার মানে উপরে যারা খাবার খেতে আসে তাদের ড্রিংকস দেয়ার জন্য আর বারএর পিছনে টয়লেট। একদিন দুপুরে লাগাড়ের পাইপ লাইন পরিষ্কার করতে হবে বলে পুরনো যারা আছে তাদের একজনকে জিজ্ঞেস করলাম লাগাড়ের ব্যারেল কোথায়? এমরান বলল নিচতলার বারের পিছনে নিচের সেলারে। সেলার হলো চাষ বাস কিংবা বাগানের যন্ত্রপাতি কিংবা যার যা প্রয়োজন তেমন ধরনের মালামাল রাখার জন্য আন্ডারগ্রাউন্ডের স্টোর। বাইরের দিকে একটা ম্যান হোলের মত দরজা আছে যার চাবি বিয়ার সাপলাইয়ার এবং লন্ড্রির ড্রাইভারের কাছেও একটা করে থাকে যাতে করে তারা তাদের সুবিধা মত সময়ে এসে পুরনো খালি ড্রাম বা ময়লা কাপড়ের বান্ডিল নিয়ে যেতে এবং নতুন ভর্তি ড্রাম, মদের অন্যান্ন কার্টুন এবং ধোয়া কাপড় রেখে যেতে পারে।

খুঁজে দেখলাম পাশেই সেলার রুমের সুইচ। সবগুলি সুইচ অন করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলাম।, ওরে বাবা এত ঠাণ্ডা! তাড়াতাড়ি পাইপ ওয়াশ করার ব্যবস্থা করে কানেকশন দিয়ে উপরে উঠবো এমন সময় পাশে একটা বন্ধ দরজায় চোখ পড়ে গেল। দেখলাম দরজাটা শিটকিনি এঁটে বন্ধ এবং একটা হ্যাচবোল্ট লাগিয়ে তালা দেয়া এবং তার পরেও দুইটা লম্বা কাঠের বাতা দিয়ে আড়াআড়ি করে তারকাটা দিয়ে ভাল করে আটকান। মনে একটু প্রশ্ন এলো এই দরজা বন্ধ করার জন্য এত ব্যবস্থা কেন? সাধারণ শিটকিনি হলেই যেখানে হয়ে যায় সেখানে এই ত্রিমুখী ব্যবস্থা কেন? না, আমি কাউকে কিছু না জানিয়ে ওটা খোলার কোন ইচ্ছা পোষণ করিনি। তা ছাড়া ওটা খোলার মত চাবি বা আনুষঙ্গিক কোন যন্ত্রপাতিও আমার কাছে নেই তার পরে এত সময়ও নেই হাতে। শুধু মাত্র একটু কৌতূহল নিয়েই উপরে উঠে এলাম। দুইটা বাজার আগে বিয়ারের লাইন পরিষ্কার করতে হবে। উপরে এসে লাইন চালু করে দিলাম আর গত এক সপ্তাহের যত গাদ জমেছিল তা একটু একটু করে ক্যামিকেল মেশান পানির সাথে পাইপ দিয়ে সিংকে বেরিয়ে যাচ্ছে। ক্যামিকেল দিয়ে ধোয়া হলে পরে আবার সাদা পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। কার্লসবার্গ, সাইডার, কোবরা এবং ফস্টারের মোট চারটা লাইনে পরিষ্কার করতে অন্তত দেড় ঘণ্টা লেগে যাবে। ডান দিকে কুট করে একটু শব্দ হলো দেখি এমরান টেবিল সেট করছে।
এই এমরান শুনছ?
বলেন দাদা
আচ্ছা সেলারে ওই দরজাটা এত যত্ন করে বন্ধ কেন?
কি জানি আমি কাউকে জিজ্ঞেস করিনি
কেন?
কি দরকার দাদা? কাজ করতে এসেছি কয়দিন থাকব আবার চলে যাব কাজেই কোন দরজা বন্ধ আর কোন দরজা খোলা তাতে আমার কি আসে যায়? তাই কিছু জানতে চাইনি।
ঠিক বলেছ এমরান
ব্যাস এই পর্যন্তই রইল এ প্রসঙ্গে।

একদিন আমার ছুটি ছিল। সারা দিন আবারগাভানি শহরের লাইবেরি, বাজারর এ জাগায় ও জাগায় টো টো করে ঘুরেছি বাইরেই দুপুরে ইংলিশ লাঞ্চ করেছি। সারাদিন বাইরেই চা খেয়েছি। এদেশে সন্ধ্যার পরে এইরকম ছোট শহরে সব কিছু বন্ধ হয়ে যায় তাই বেশি দেরি করিনি। তবুও ফেরার পথে আস্ক নদীর উপর দিয়ে ব্রিজটা পার হয়ে এসে এপারে ড্যাফোডিলের ঝোপের ধারে অনেকক্ষণ নদীর দিকে মুখ করে বসেছিলাম। রেস্টুরেন্ট বন্ধ হবে রাত এগারটায়। এখন গিয়ে কি করব, তাই যতক্ষণ থাকা যায় বসে থাকব ভাবছিলাম। বসে বসে ঢাকায় ফোন করলাম কয়েকটা। তারপরে যখন শীত বেড়ে গেল তখন উঠে এসে রেস্টুরেন্টের পিছন দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে কাপড় বদলে নিজের বিছানায় শুয়ে পরলাম। ঘুমিয়ে পরলাম। যখন ঘুম ভাঙল উঠে টয়লেটে যাব আর ক্ষুধা লেগেছিল বলে কিছু খেতেও হবে ভাবলাম। এখানে সাধারণত এগারটা বারটা বেজে যায় কাস্টমর সবাই চলে যেতে। তারপরে ধোয়া মুছা, গুছানর কাজ শেষ করে খেয়ে দেয়ে বিছানায় যেতে যেতে প্রায় দুইটা আড়াইটা বেজে যায়।

কর্মচারীদের টয়লেট আর উপরের কাস্টমারদের একই টয়লেট বলে উপরের রেস্টুরেন্টে ঢুকতে হবে। নিজেদের রুম ছেড়ে যেই রেস্টুরেন্টে ঢুকেছি তখন ভিতরের সব বাতি নেভান হলেও বাইরের লাইট পোস্ট থেকে বেশ যথেষ্ট আলো আসছিল আর তাতেই দেখলাম কে একজন একটু মোটা মহিলা আমার আগে আগে টয়লেটের প্যাসেজ ধরে যাচ্ছে। ভাবলাম হয়ত কোন কাস্টমর এখনও রয়ে গেছে! সে বের হলে আমি টয়লেটে যাব। একটা চেয়ার টেনে বসলাম। হঠাৎ মনে হলো কাস্টমর রয়ে গেছে তাহলে আমাদের লোকজন কেউ নেই কেন? এদিক ওদিক তাকালাম কিন্তু না কেউ কোথাও নেও। ও তাহলে আমি ভুল দেখেছি। উঠে টয়লেটে যেতে চাইলাম কিন্তু সেই প্যাসেজের মাথায় টয়লেটের দরজা দিয়ে আবার কে যেন ভিতরে ঢুকল তার সম্পূর্ণটা দেখিনি তবে কাপড়ের কিছু অংশ দেখেছি। আবার দাঁড়ালাম কিছুক্ষণ। কিন্তু এবারও সেই একই ধরন কেউ বের হচ্ছে না বা ভিতর থেকে কোন শব্দ হচ্ছে না এবং কোন বাতিও জ্বলছে না। এগিয়ে গেলাম, টয়লেটের বাতি জ্বালালাম। টয়লেটের কাজ সেরে কিচেনে এসে মাইক্রোওয়েভে ভাত আর একটু ভেড়ার মাংস গরম করে খেয়ে কিচেনে বসেই একটা বিড়ি বানিয়ে টেনে আবার এসে শুয়ে পড়লাম। কিছুই অস্বাভাবিক মনে হয়নি। যা দেখেছি নিজের চোখের ধা ধা মনে করে উড়িয়ে দিলাম। কাউকে কিছুই বলিনি বা বলার মত কোন ঘটনা বলে মনেও করিনি।

এই ঘটনার প্রায় সপ্তাহ দুয়েক পরে একদিন আমি বারে ছিলাম আর কোন একটা বিয়ার শেষ হয়ে গেলে চট করে নিচে সেলারে যাবার জন্য নিচের বার এর পিছনে গিয়ে সেলারের সবগুলি সুইচ অন করে যেই নিচের দিকে তাকিয়েছি সিঁড়িতে পা দেবার আগে দেখলাম কে যেন একজন সেই দিনের মত মোটা মহিলা সাদা স্কার্ট আর সাদা ব্লাউজ গায়ে নিচে নেমে গেল আমি পিছন থেকে এক্সকিউজ মি এক্সকিউজ মি, টয়লেট এদিকে নয় বলে নিচে নেমে দেখি কেউ নেই! লাগাড়ের পাইপ খালি ড্রাম থেকে নতুন ড্রামে বদলিয়ে উপরে উঠে এলাম।
এদিনও নিজের চোখের ভুল মনে করলাম। তারা হুরর মধ্যে কি দেখতে কি দেখে ফেলেছি এ কথা কাউকে বললে নিঃসন্দেহে কিছু বাক্য শুনতে হবে বলে চেপে গেলাম। এইযে দুই দিন দেখলাম এর মধ্যে কোনদিন কোন চেহারা দেখিনি শুধু পোশাক দেখেছি মাত্র কাজেই বিষয়টা নিয়ে আমিও আর তেমন ভাবলাম না।
পরদিন শুনলাম নাজমুল নামের কিচেনের এক জন এখানে কাজ করবে না বলে মালিককে ফোনে জানিয়ে দিল। তা এ দেশে কে কোথায় কাজ করবে বা না করবে সে সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যাপার এ নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। তাই কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। কিন্তু দুপুরে খাবার পর একটু শুয়েছি তখন এমরান বলল
দাদা জানেন কিছু?

কি জানব?
নাজমুল কেন যাচ্ছে?
না ভাই আমাকে কেউ কিছু বলেনি আমিও কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি!
রেস্টুরেন্টে ভূত আছে এবং নাজমুল তাই দেখেছে সেইজন্যে চলে যাচ্ছে, এখানে নাকি কোন স্টাফ বেশী দিন থাকতে পারে না এ জন্যে
বল কি!
তাই শুনলাম
কে বলল?
আগে এক ম্যনাজার ছিল তার সাথে আমার আলাপ পরিচয় আছে সেই বলল আজ একটু আগে
বল কি! তখন আমার দুই দিনের অভিজ্ঞতার কথা বললাম
এমরান বিশ্বাস করল
এমরানের কথা শুনে আমিও আবার ভাবনায় পড়ে গেলাম। নাজমুলের অনেক চেনাজানা আছে সে কোথাও না কোথাও কাজ পেয়ে যাবে কিন্তু আমার যে সে অবস্থা নেই!
দিন যায়, সপ্তাহ যায় মাসও যায়
মালিক বেতনটা দিয়ে দেয় রবিবারে, নিয়মটা বেশ ভাল। দেখতে দেখতে ছয় মাস হয়ে গেল কিন্তু এর মধ্যে সেই মোটা মহিলার আর কোন দেখা নেই। ভাবলাম তার সাথে দেখা না হওয়াই ভাল। এমনি হঠাৎ করে একদিন ওই সেলারের বন্ধ ঘরের কথা মনে হলো আর সাথে সাথেই এমরানকে বললাম আচ্ছা এমরান ওই নিচে সেলারের যে দরজাটা বন্ধ ওই ঘরের সাথে কি এসবের কোন যোগসূত্র আছে?
কি জানি সে কথা আমি জানি না তবে থাকতেও পারে, আশ্চর্যের কিছু নেই।

যেদিন এই সব আলাপ হলো সেই দিন রাতে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে কাজ সেরে সবাই রুমে চলে গেছে আমি টয়লেটে যাব। দেখলাম টয়লেট ভিতর থেকে বন্ধ কিন্তু ভিতরে লাইট জ্বলছে না। দরজার উপরে একটু কাচের দেয়াল আছে ভিতরের আলো ওখান দিয়ে দেখা যায়। আশ্চর্য ব্যাপার। ভিতরে এসে একটু বসে থেকে আবার একটু পরে দরজা ধরে ধাক্কা দিতেই ওটা খুলে গেল।
শুক্র শনি বারে বেশী ভিড় হয় বলে দুই দিনের জন্য বিকেলে অতিরিক্ত দুইজন মানুষ আসে। এর কয়েকদিন পরে শুক্রবারে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে কাজের পরে সবাই এক সাথে রাতের খাবার খেয়েছি। এর মধ্যে ওই যে যে দুইজন এসেছে তাদের একজন নাদির কি জন্যে যেন সিঁড়ি দিয়ে নিচে যাচ্ছে। আমি দেখেছি ওকে নিচে যেতে।

সবার খাওয়া দাওয়া হয়ে গেল এবার যারা কার্ডিফ থেকে এসেছিল তাদের মধ্যে লতিফের গাড়ি আছে এবং সে নাদিরকে খুঁজছে। এই নাদির চল বাসায় যাই কিন্তু কোথায় নাদির! নাদির উপরে কোথাও নেই। আমি বললাম আমি একটু আগে নাদিরকে নিচে যেতে দেখেছি। লতিফ উঠে নিচের সিঁড়ির কাছে দাড়িয়ে বলল ও দাদা নিচে দেখি অন্ধকার! ঠিক আছে লাইট জ্বালিয়ে দেখ। লাইট জ্বালিয়ে দেখা গেল কোথাও নাদির নেই। টয়লেট, বার কোথাও নেই। কি জানি হয়ত আবার উপরে উঠে এসেছে আমি দেখিনি! উপরের সমস্ত জায়গায় খুঁজে দেখা হলো! কিন্তু না, কোথাও নেই! কি হতে পারে? সবারই এক প্রশ্ন! রেস্টুরেন্টের মালিককে ফোন করা হলো। কুদ্দুস ভাই, নাদিরকে পাওয়া যাচ্ছে না! কুদ্দুস ভাই দূর থেকে আর কি সমাধান দিতে পারে? সব জায়গায় খোজা হয়েছে কেবল নিচের ঐ সেলার বাকী রয়েছে। চলেন সেলারটা

দেখে এসে পুলিশকে জানাতে হবে। হ্যাঁ চলো দেখি সেলারটা দেখে আসি। কয়েকজন মিলে সেলারে নেমে দেখে ওই বন্ধ দরজার পাশে লন্ড্রির কাপড়ের উপরে শুয়ে নাদির নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে! সবাই এই দৃশ্য দেখে অবাক! এমন হলো কি করে? নাদিরকে ডেকে ডেকে জাগান হলো। মনে হলো অনেকক্ষণ পরে ঘুম থেকে জাগল। কি ব্যাপার নাদির তুমি এখানে শুয়েছিলে কেন? নাদিরও জেগে উঠে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চারিদিকে তাকিয়ে দেখে কি ব্যাপার আমি এখানে কেন আর আপনারাই বা এমন করছেন কেন? সে প্রশ্ন তো আমাদেরও! কি হয়েছিল বল। তুমি খেয়ে দেয়ে নিচে গিয়েছিলে আমি দেখেছি তারপরে কি হলো তাই বল। আমার কিছুই মনে পরছে না! কিন্তু আমি এখানে কেন? এই প্রশ্নের কোন উত্তর পাওয়া গেল না। তবুও কাছের পুলিশ স্টেশনে ফোন করা হলে ওরা দুইজন আসল এবং সব কিছু লিখে নিলো। কারো কিছু ক্ষতি হয়েছে কিনা বারবার জানতে চাইল। না কারো কোন ক্ষতি হয়নি। লতিফ নাদিরকে নিয়ে রাত দুইটায় কার্ডিফ চলে গেল।

পরদিন কুদ্দুস ভাই আসল তার একটু পরে দুইজন পুলিশ আসল। কাল রাতে যে দুই জন এসেছিল তারা নয় এরা একটু বয়স্ক। ওরাই বলল যে এই বাড়ির নিচের সেলারে একটা রুম কি সিল করা আছে? হ্যাঁ আছে! বেশ ভাল। ১৯৬০ সালে ওখানে একজন মহিলা নিজের মাথায় গুলি করে সুইসাইড করেছিল এবং তার পরে তার আত্মা অনেকদিন পর্যন্ত এখানেই ঘোরাঘুরি করত বলে ওই দরজাটা কাউন্সিল থেকে সিল করে দেয়া হয়েছিল। এই পুরো বাড়িটা ১৯২০ সালে যখন তৈরি হয় তখন থেকেই এটা সম্ভ্রান্ত পাব ছিল এবং ১৯৫৫ সাল থেকে ওই মহিলা এখানে গান গাইত আর তার সাথে যে অর্কেস্ট্রা বাজাত ওই ছেলেটার সাথে ওর প্রেম ছিল কিন্তু কেন যে মেয়েটা সুইসাইড করল কেউ বলতে পারেনি, আজও অজানা।
এই ঘটনার পর আমি ওখানে আর বেশি দিন থাকিনি, ওয়েলস ইংল্যান্ড ছেড়ে একেবারে স্কটল্যান্ড চলে গিয়েছিলাম।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্য সমাধান?

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এক দুর্ভেদ্য রহস্যের নাম। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে বিশ্ব অনেক দূর এগিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত এ রহস্যের কিনারা করতে পারেনি কেউ। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্যের সমাধান করার বিষয়টি উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নরওয়ের গবেষকেরা উত্তর মেরুর ব্যারেন্টস সাগরের তলদেশে বেশ কিছু বড় গর্তের সন্ধান পেয়েছেন। আর্কটিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এই গর্ত বা আগ্নেয়গিরির মুখগুলোর ব্যাস ৩ হাজার ২৮০ ফুট ও গভীরতা ১৩১ ফুট হতে পারে। থ্রিডি সিসমিক ইমেজিং পদ্ধতিতে এই গর্তগুলো শনাক্ত করেছেন তাঁরা। গবেষকেরা বলছেন, তেলের খনি থেকে সৃষ্ট উচ্চ চাপের মিথেন গ্যাসের উদগীরণে এ গর্ত সৃষ্টি হতে পারে।
ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই আবিষ্কারের ঘটনা বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নামের বিতর্কিত ওই এলাকায় জাহাজ ও বিমানের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে পারে। এর আগে ২০১৪ সালে সাইবেরিয়ান টাইমসকে দেওয়া রাশিয়ার গবেষক ভ্লাদিমির পোতাপভের এক সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়েছে ডেইলি মেইল। পোতাপভের তত্ত্ব অনুযায়ী, মিথেন গ্যাসের উদগীরণ সমুদ্রকে উত্তপ্ত করে। মিথেনযুক্ত পানির কারণে জাহাজ ডুবে যায়। এ ছাড়া বায়ুমণ্ডলেও বিশেষ পরিবর্তনের ফলে বিমান দুর্ঘটনা ঘটে।
এরকম বড় গর্ত থাকতে পারে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্য সমাধান?
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল ক্যারিবীয় সাগরের এক কল্পিত ত্রিভুজ এলাকা হলো বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। ত্রিভুজের তিন বিন্দুতে আছে ফ্লোরিডা, বারমুডা আর প্যুয়ের্তো রিকো। অবশ্য এই বিন্দু নির্ধারণ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। সে যা-ই হোক, এ অঞ্চলটিকে মারাত্মক রহস্যময় এলাকায় পরিণত করেছে কিছু খবর। বলা হয়, এ ত্রিভুজ অঞ্চলে অদ্ভুতভাবে হারিয়ে গেছে মানুষ, জাহাজ আর উড়োজাহাজ। রেখে যায়নি কোনো ধ্বংসাবশেষ। এসব ‘উড়ো’ খবর নিয়ে গবেষণা হয়েছে, ডকুমেন্টারি বানানো হয়েছে। শেষমেশ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় সব রহস্যের অসারতা প্রমাণ হয়েছে। কিন্তু রহস্যপ্রিয় মানুষ এতে বিশেষ খুশি হতে পারেননি। তাঁরা এখনো বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে রহস্যের গন্ধ পান।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময় চরিত্র প্রথম নিয়ে আসেন ই ভি ডব্লিউ জোনস। ১৯৫০ সালের বার্তা সংস্থা এপি প্রকাশিত একটি নিবন্ধে জোনস অভিযোগ করেন, এ এলাকায় বেশ কিছু উড়োজাহাজ ও নৌযান বেমালুম উধাও হয়ে গেছে, যেগুলোর কোনো সন্ধান আজ পর্যন্ত মেলেনি। দুই বছর পর ফেট ম্যাগাজিনের একটি নিবন্ধে দাবি করা হয়, ১৯৪৫ সালে ফ্লাইট-১৯ নামের মার্কিন নৌবাহিনীর পাঁচটি বোমারু বিমানের একটি বহর উধাও হয়ে গেছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে। এই বহর থেকে শেষ বার্তা ছিল, ‘সবকিছুই খুব অদ্ভুত লাগছে। আমরা জানি না, কোন দিক পশ্চিম। সাগরকেও স্বাভাবিক দেখাচ্ছে না। আমাদের মনে হচ্ছে আমরা…’।

এরপর একের পর এক খবর গত শতকের শেষ পর্যন্ত তুমুল হইচই তুলেছে। যার মধ্যে আস্ত ডিসি বিমান, যাত্রীবাহী জাহাজ পর্যন্ত উধাও হয়ে যাওয়ার খবর ছিল।
তবে এসব খবরের পাশাপাশি ব্যাখ্যাও চলেছে। বিজ্ঞানীরা নানা ধরনের প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, এর সবই স্বাভাবিক ঘটনা। রং চড়িয়ে বলা হচ্ছে। আবার বলা হয়েছে, দুনিয়াজুড়ে দুর্ঘটনার যে হার, এতে বারমুডায় মোটেও বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে না। কখনো কখনো বারমুডা-সংক্রান্ত খবর তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে, খবরটাই ভুয়া। রং চড়িয়ে লেখা হয়েছে ট্যাবলয়েডগুলোতে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এখনো এক রহস্যের নাম। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্য সমাধান?

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে কিছু তথ্য
অনেকের মতে, ক্রিস্টোফার কলম্বাসের কাছ থেকে সর্বপ্রথম এলাকাটির বিষয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা জানা যায়। কলম্বাস লিখেছিলেন, তাঁর জাহাজের নাবিকেরা এ অঞ্চলের দিগন্তে আলোর নাচানাচি এবং আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন। এ ছাড়া তিনি কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক নির্দেশের কথাও বর্ণনা করেছেন।
অনেকে আবার মনে করেন, নাবিকেরা যে আলো দেখেছেন, তা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নৌকায় রান্নার কাজে ব্যবহৃত আগুন এবং কম্পাসে সমস্যা হয়েছিল নক্ষত্রের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে। ১৯৫০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) সাংবাদিক ই ভি ডব্লিউ জোনস সর্বপ্রথম এলাকাটি নিয়ে খবরের কাগজে লেখেন। অনেকে মনে করেন, ওই অন্তর্ধানের কারণ নিছক দুর্ঘটনা, যার কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা চালকের অসাবধানতা। তা ছাড়া এই ত্রিভুজের ওপর দিয়ে মেক্সিকো উপসাগর থেকে উষ্ণ সমুদ্রস্রোত বয়ে গেছে। এর তীব্র গতি অধিকাংশ অন্তর্ধানের কারণ।

তথ্যসূত্র: ডিসকভারি, দ্য গার্ডিয়ান।

ভূতের আছর

সে অনেক অনেক দিন আগের কথা। যখন নানান জাতের ভূতের বসত বাড়ি ছিল গ্রাম গঞ্জের বিভিন্ন তাল গাছে এবং বট গাছে, বিলের মাঝে ভূতদের খেলার মাঠ ছিল। মাছের পুকুরে ভূতদের রান্নাঘর ছিল, যখন হাট থেকে ইলিশ মাছ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ভূতদের রাঁধুনিরা ইলিশ মাছ ছিনতাই করার জন্য হাটুরেদের পিছে পিছে যেত। আবার শ্মশান ঘাটের পাশে নরমুন্ডু দিয়ে ভুতেরা ভলিবল খেলত আর পথিক দেখলেই তাদের সাথে হাডুডু খেলার জন্য টানাটানি করত এবং বাড়ির পিছনের বাঁশ ঝাড়ের পাশে ভূতদের হাট বসত সেই তখনকার কথা বলছি।

জোছনা নামে একটা মেয়ে ছিল। মেয়েটা ছিল খুবই শান্ত শিষ্ট, নরম মেজাজের। কারো সাথে কোনদিন উঁচু স্বরে কথা বলত না, কারো বিরুদ্ধে তার কোন নালিশ ছিল না। তার বিরুদ্ধেও কারো কোন নালিশ ছিল না। একা আনমনে মাটির দিকে চেয়ে নীরবে হেটে যেত আবার নীরবেই ফিরে আসত। মোট কথা ওকে নিয়ে ওর মা বাবার কোন দুশ্চিন্তা ছিল না। ছোট বড় ভাই বোন নিয়ে ওদের সুখের সংসার। গ্রামের এক পাশে ওদের খুবই সাধারণ গোছের বাড়ি। বাড়ির উত্তর পাশে গহীন জঙ্গল আবার জঙ্গলের পরেই মেঠো পথ, পশ্চিমে বাড়ির সীমানা ঘেঁসে রাস্তা এবং তারপরে তেপান্তরের মাঠ কিন্তু দক্ষিণে আর পুবে পাড়ার অন্যান্য শরিক বাড়ি। বাড়িতে চার ভিটায় চারটা টিনের কাচা ঘর। উত্তর ভিটায় যে ঘরটা ওই ঘরে জোছনা ওর দাদির সাথে থাকত।

জোছনা তখন ক্লাস নাইনে পড়ে। একদিন, সারাদিন বেশ ভালই গেছে। সেদিন বিকেলে দিব্যি সুস্থ মেয়ে স্কুল থেকে ফিরে এসে কাপড় বদলান হাত মুখ ধোয়া এবং খাওয়া দাওয়া সব ঠিক ভাবেই করেছে। কিন্তু ঝামেলা হলো রাতে খাবার সময় থেকে। ছোট বড় ভাই বোন সবাই খেতে বসেছে মা খাবার দিচ্ছে।
কইরে জোছনা আয় খেয়ে যা।
মা আবার ডাকলেন কইরে জোছনা শুনছিস না? আয়, তাড়া তাড়ি আয়!
জোছনার কোন জবাব নেই।
বিরক্ত হয়ে মা উঠে এসে দেখে খাটে বসে উত্তর দিকের খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।
কিরে ডাকছি শুনছিস না?
কোন জবাব নেই।
মা রাগ করে কাছে এসে একটু ধাক্কা দিতেই মেয়েটা টুক করে খাটে পড়ে গেল।
সাথে সাথে মায়ের চিৎকার। এই তোমরা আস দেখ আমার জোছনার এ কি হলো! জোছনা কথা বলে না কেন?

সবাই এসে এই অবস্থা দেখে কিসের খাওয়া দাওয়া। সব ওভাবেই পড়ে রইল। দাদা এলেন, দোয়া কালাম পড়ে ঝাড়ফুঁক দেয়া হলো, মাথায় পানি দেয়া হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই জোছনা স্বাভাবিক। এর পরে আস্তে আস্তে মা ওই বিছানায় বসে বসেই কিছু ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিল। পরদিন সন্ধ্যার পর থেকে জোছনা কেমন যেন অস্বাভাবিক আচরণ করছে অস্বাভাবিক কথা বলছে। নাকি সুরে বড় ভাইকে বলল এক চড় দিয়ে ওই তাল গাছের মাথায় উড়িয়ে দিব, আমার সাথে বাঁদরামি হচ্ছে? মাকে বলল ক্ষুধা লেগেছে খেতে দাও। দিচ্ছি মা একটু অপেক্ষা কর। মাকেও সেই বড় ভাইয়ের মত নাকি সুরে বলল কেন, অপেক্ষা করব কেন? দুই সের পুঁটি মাছ এনেছে হাট থেকে সেগুলি রাঁধতে পারনি এখনও? যাও তাড়া তাড়ি রেঁধে নিয়ে এসো তবে আমার জন্যে কয়েকটা মাছ কাচা এনো ভর্তা বানিয়ে খাব। কাচা মাছের ভর্তার কথা শুনে মা তো অবাক। এই ভাবেই কয়েকদিন গেল। দাদা সকাল বিকেল ঝাড়ফুঁক করছে কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। আজ এর মুণ্ডু চিবিয়ে খাবে কাল ওকে বাড়ির উত্তরে জঙ্গলে নিয়ে বেধে রেখে আসবে অমাবস্যার সময়। এই সব নানান উলটো পালটা কথা বার্তা। এমনিতেও খেতে দিলে আগের মত খায় না একটু খানি খেয়েই উঠে যায়। এই সব

আবোল তাবোল কথা আর কাণ্ড কারখানায় বাড়ির সবার মধ্যে একটু দুশ্চিন্তার ছায়া দেখা গেল সবার মধ্যে বিশেষ করে বড়দের মধ্যে। এমন সেয়ানা মেয়ের মধ্যে এই লক্ষণ কোন ভাবেই সুখের নয়। কোথা থেকে কি হলো কে জানে! নিশ্চয়ই কোন অশরীরী কিছু ভর করেছে নইলে যে মেয়ে কোনদিন একটু মুখ তুলে কথা বলে না সেই মেয়ে করছে কি এইসব! সবাই আশ্চর্য! এ আমাদের জোছনার কাজ নয় জোছনার কথা নয়। ওর উপরে কিছু ভর করেছে সেই এসব করছে। স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। কিসের স্কুল? অ্য, আমি কি করব স্কুলে যেয়ে, ওখানে কি হয়? আশে পাশের শরিকেরা আসছে যাচ্ছে নানা কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করছে। কি হলো কখন থেকে হলো, কোথাকার ভূত? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন। বেশি কিছু কথাও বলতে পারছে না। কিছুক্ষণ বলেই হঠাৎ করে সেদিনের মত খাটে শুয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন মাথায় পানি ঢেলে নানা কিছু করে আবার জ্ঞান ফিরে আসে।

মা আর কতক্ষণ নিয়ে বসে থাকতে পারে? এই ভাবেই প্রায় সপ্তাহ দুয়েক চলে গেল। সবাই বলাবলি কানাকানি করছে। একজনে বলল নিশ্চয় ভূতের আছর হয়েছে, এটা নিশ্চয় কোন বজ্জাত ভূত সম্ভবত ওই ওদের স্কুলে যাবার পথে ধুসুরিয়ার বট গাছে যে ভূতটা আমি দেখেছিলাম ওটাই হবে! এ কথা শুনে একজনে বলল তাহলে তুই যখন দেখেছিলি তো তোর উপরে ভর না করে এই নিরীহ মেয়েটার উপর কেন আছর করল? আমি হলে তোর উপরেই আছর করতাম। আর একজনে বলল আরে না আমার মনে হয় ওদের বাড়ির ওপাশের গাব গাছে যেটা থাকে সেইটা। এই রকম নানান কথার সাথে এ পাড়া ও গ্রাম করে রাষ্ট্র হয়ে গেল এবং তার সাথে নানান হিতাকাঙ্ক্ষী নানান জায়গা থেকে এমন একটা ভাল মেয়ের জন্য তাবিজ মাদুলি, পানি পড়া, তেল পড়া, কাইতেন পড়া, চিনি পড়া, কলা পড়া, কড়ি পড়া গামছা পড়া, মিষ্টি পড়া ইত্যাদি নানা কিছু পাঠাতে শুরু করল। এখন জোছনার ওজন ওর নিজের ওজনের চেয়ে অনেক বেশি, প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেল। কিন্তু জোছনার অবস্থার কোন পরিবর্তন নেই।

এই অবস্থার মধ্যে চিন্তায় বাড়ির সবার মুখ যখন শুকিয়ে কাল হয়ে গেছে তখন হঠাৎ একদিন মহাদেব পুর থেকে হরিহর দাস নামে এক ওঝা নিয়ে আসল জোছনার এক শরিক চাচা। খুবই জাঁদরেল এবং অভিজ্ঞ ওঝা। অন্তত গোটা দশেক ভূত ছাড়িয়েছে। আশেপাশে অনেক সুনাম। যে কোন ভূত এর নাম শুনেই ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়ে যায় এবং রুগী ফেলে দুই মিনিটের মধ্যে পালিয়ে যায়।
দেখি রুগী কোথায়?
ওইতো ওই ঘরে, চলুন
ঘরে ঢোকার আগেই দরজার চৌকাঠ এবং ঘরের গন্ধ শুকে ওঝা বলল
আপনারা খুব খারাপ জিনিসের হাতে পরেছেন
কি রকম?
চলুন আগে রুগী দেখে নিই
ঘরের ভিতরে যেয়ে বলল এইতো রুগী
ওঝাকে দেখা মাত্র জোছনা কেমন যেন উসখুস করতে লাগল, এই ওকে ঘরে ঢুকতে দিও না, ওকে তারাও
কিরে তুই আবার এসেছিস এখানে? তুই না সেদিন বলেছিলি এই এলাকা ছেড়ে চলে যাবি!
বললাম ওকে এখান থেকে তাড়াও
আচ্ছা আমাকে তারাতে হবে না, তুই থাক, আমি আজ তোকে কিছু বলব না

জোছনার বাবাকে বলল চলেন আমার যা দেখার দেখেছি, বাইরে চলেন। আমি যা অনুমান করেছিলাম ওই চৌকাঠে যে চিহ্ন দেখেছি তাই। ঠিক আছে অসুবিধা নেই শনি/মঙ্গল বারে মহাযজ্ঞ দিয়ে আসর বসাতে হবে তবেই এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। আজ হলো মোটে রবি বার কাজেই পরশু মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর আসর বসবে।

এর মধ্যে একটা বড় খেজুর পাতার পাটি, এক ঝাঁকা নারকেলের ছোবা, আধা কেজি ধুপ, এক পোয়া জৈন, এক পোয়া শুকনা মরিচ, দুইটা নতুন মাটির ঢাকনা একটা ছোট একটা বড়, একটা গরুর লাঠি, গোয়াল ঘড়ের একটা পুরানো ঝাড়ু, একটা চিমটা, একটা নতুন গামছা, এক পোয়া খাঁটি তিলের তেল, একটা প্রদীপ আর সলতে, অল্প কিছু সিঁদুর চন্দন আর এক মুঠ তিন রাস্তার মাটি। এই মাটি সংগ্রহ করতে হবে এশার নামাজের পর গোসল করে ভিজা চুলে একা যেতে হবে কিন্তু কোন অবস্থায় কক্ষনো পিছনে ফিরে দেখা যাবে না। এই সব জিনিস গুছিয়ে রাখবেন। আমি মধ্যাহ্নের পরে এসে যা করতে হয় করব সব কিছু । তবে লক্ষ রাখবেন আমি এসে যেন শুনি না এটা আনা হয়নি ওটা আনতে হবে। বুঝেছেন? মানে হলো সব কিছু আগে থেকেই জুগিয়ে রাখবেন। সাথে টুকি টাকি কিছু পরামর্শ দিয়ে চলে গেল।

ওঝা মহাশয় যাবার পর শুরু হলো জোছনার ভিন্ন মূর্তি। অসম্ভব রকমের উগ্র হয়ে গেল। একে মারে ওকে ধমকায় ছোট বড় কাউকে মানে না। রীতিমত এখন রশি বেধে রাখা হলেও বাধন খুলে ফেলে। শেষ পর্যন্ত শিকল দিয়ে বেধে তালা লাগিয়ে রাখা হলো। কিন্তু দাপাদাপি করে শিকল খোলার চেষ্টা করাতে পায়ে ঘা হয়ে গেল। কিছু খাওয়াতে পারছে না। মুখ দিয়ে অনবরত ফেনা বের হচ্ছে। কথা জড়িয়ে যায়, চিৎকার করে কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিস্তেজ হয়ে ঝিমিয়ে পড়ে। আশেপাশে দিনরাত কাউকে থাকতে হয় একা রাখা যাচ্ছে না।

যথারীতি সব কিছু আনিয়ে ফর্দর সাথে মিলিয়ে গুছিয়ে রাখা হলো। মঙ্গলবারে বেলা দ্বিপ্রহরের একটু আগেই বাবরি চুলের ওঝা শ্রীমান হরিহর মহাশয় গেরুয়া রঙের থান পরে খালি গায়, গলায় একটা বড় সিমের বীজ, কি কি সব কিছুর হাড়, এ গাছ ও গাছের শিকর বাকর একটা ঝুনঝুনির মত কি যেন এবং এমন কিছু আজগুবি ধরনের বস্তু দিয়ে গাথা মালা একহাতে ত্রিশূল আর কাঁধে অদ্ভুত দেখতে একটা থলে ঝুলিয়ে সাথে একজন শিষ্য নিয়ে হাজির। রাস্তা থেকে জোছনার বাবাকে ডাকতে ডাকতে বাড়ি চলে এলো। জোছনার কয়েকজন শরিক চাচার সাথে বাবা পথের পাশেই বসে নারকেলের হুক্কা টানছিল আর এই নিয়েই আলাপ আলোচনা করছিল। সবার মুখ গম্ভীর।
কেমন আছেন দাদা?
আমি ভাল আছি কিন্তু রুগীর কি অবস্থা?
না ভাই কোন পরিবর্তন নেই এখন আরও খারাপ হয়েছে!
এইতো, আর চিন্তা করবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে! আচ্ছা সেদিন যা লিখে দিয়েছিলাম সেগুলি কি সব আনা হয়েছে?
হ্যাঁ আনা হয়েছে, কখন লাগবে বলেন বের করে দিতে বলি
এখনই দেন আর এক ঘটি জল দিবেন সাথে
সব কিছু ঠিকঠাক মত গুছিয়ে আনা হলো।
দেখি সব কি ঠিক আছে? সিঁদুর, হ্যাঁ ঠিক আছে। ধুপ কোথায়? ও এইতো ধুপ। গামছা? ও হ্যাঁ এইযে গামছা হ্যাঁ সব ঠিক আছে। আচ্ছা গণেশ এসো, এগুলি নিয়ে এসো। উঠোনের মাঝখানে নিয়ে আসন পেতে নাও।

পান-অনুপান, আচার অনুষ্ঠানের জন্য যা যা আনতে বলেছিল সেগুলি সব নিয়ে জোছনাদের উঠানের ঠিক মাঝখানে জোছনার ঘরের দিকে মুখ করে খেজুর পাতার পাটি বিছিয়ে আসন পাতা হলো। এক পাশে একটা জল চৌকি পাশে এক ঘটি পুকুরের জল, বড় ঢাকনায় করে নারকেলের ছোবায় ধুপ জ্বালান হলো মাঝে মাঝে এর সাথে জৈন দেয়া হচ্ছে আর ছোট ঢাকনায় চন্দন সিঁদুর রেখে তার পাশে চারটা পান একটা খোসা সহ সুপারি, (এই পান সুপারি ওঝার নিজের থলে করে আনা) তিলের তেল দিয়ে প্রদীপ জ্বালান হলো। অন্যান্য সব জিনিষ পত্র জায়গা মত রেখে শিষ্য গুরুকে ডেকে দেখাল। গুরু মশায় আসন আর যজ্ঞ পেতেছি দেখুন ঠিক আছে কিনা। গুরু মশাই এসে দেখে কাঁধের ঝোলা থেকে কি যেন এক মুষ্টি বের করে ধুপের সাথে মিশিয়ে দিলে ভুর ভুর করে ধোয়া উঠল এবং চারিদিকে কেমন যেন একটা ভুতুড়ে ভুতুড়ে গন্ধ ছড়াল। আগে থেকেই ওতে ধুপ জ্বলছিল তার সাথে কি মেশাল কে জানে!

দর্শনার্থীরা যাতে কাছে না আসে সেজন্য পাটির চারিদিকে একটা চাড়া দিয়ে দাগ দেয়া হয়েছে। আসন থেকে জোছনার ঘড় পর্যন্ত দরজা সমান করে দুইটা দাগ দেয়া হয়েছে যাতে ঘড় থেকে জোছনাকে নিয়ে সোজা এই আসনে আনতে পারে এবং কেউ যেন এই দাগের মধ্যে না আসে। একটু একটু করে ধুপ আর জৈন পোড়ান হচ্ছে। একটু পরে পরে একটা করে শুকনা মরিচ দেয়া হচ্ছে আর সেই সাথে গুরু ওঝা তার থলে থেকে কি যেন বের করে ছিটিয়ে দিচ্ছে। এতেই প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। পাড়ার প্রায় সমস্ত মানুষ এবং গ্রামের অনেকেই তামাসা দেখার জন্য হাজির। সন্ধ্যার আলো মিলিয়ে যাবার একটু আগে যখন লালিমা প্রায় নিভু নিভু হয়েছে তখন গুরু ওঝা আর এক দফা ধুপ ধুনা দিয়ে প্রচুর ধোয়া তুলে রুক্ষ স্বরে জোছনার এক চাচাকে বলল মেয়েকে নিয়ে আসেন। খবরদার রাস্তায় যেন কোন বাঁধা না থাকে, এই দাগের মধ্যে কেউ যেন আসে না, খবরদার!
চাচি আর বড় বোনেরা মিলে জোছনাকে ধরে এনে গুরুর পাশে নির্দিষ্ট আসনে বসিয়ে দিল। সে কি আর বসে থাকতে চায়? এদিকে ছুটে ওদিকে ছুটে রীতিমত যুদ্ধ করে বসান হয়েছে। দুইজনে ধরে রেখেছে। গুরু তখন ওই বড় ঢাকনা যেটায় ধুপ জ্বলছে সেটা উঁচু করে জোছনার মুখের দিকে ধরে ফু দিল আর সমস্ত ধুয়া জোছনাকে ঘিরে ফেলল। তখন জোছনার বাম হাতের করে আঙ্গুল চেপে ধরে জিজ্ঞেস করল, বল তুই কে?
ছেড়ে দে ছেড়ে দে আমি চলে যাব
আগে বল তুই কে?
আমি হরিহর চরণ
আমি তোকে চিনতে পেরেছি আমার কাছে মিথ্যে বলছিস কেন? সত্যি বল এরা সবাই শুনবে
বললাম তো আমি হরিচরণ
আবার মিথ্যে!
এই কথা বলেই আবার আঙ্গুলে চাপ দিল আর ধুপ দানিতে একটা মরিচ ছেরে দিল আর সেই আগের মত ওর দিকে ধোয়া ছড়িয়ে দিল
কান্না জড়ান কণ্ঠে, এবার বলল বলছি বলছি, আমার নাম জগাই দাস
হুম এবার সত্যি বলেছিস, আচ্ছা এবার বল, তুই কোথায় থাকিস?
ওই শিবালয়ের স্কুলের পাশে যে বট গাছ ওখানে থাকি
এদিকে কেন এসেছিলি? এ্রই ভাল নিরীহ মেয়েটার উপরে কেন ভর করলি?

আমি কি করব, সেদিন এই ঘড়ের পিছনের জঙ্গলের পুরনো গাবগাছে আমার দোস্ত থাকে তার কাছে একটু বসেছিলাম দুই বন্ধু মিলে ভুসকুরার বিলের পুকুরে মাছ খাবার জন্য যেতে চাইছিলাম কিন্তু যাবার সময় দেখি ও জানাল দিয়ে চুল বেড় করে রেখেছে তাই দেখে লোভ হলো আর ওমনি চুল বেয়ে এসে পরলাম।
তোর এই দোস্তের নাম কি?
ওর নাম ঝন্টু দাস
ও এখন কোথায়?
ওইতো গাব গাছে বসে আছে আমার দিকে তাকিয়ে! ওখানে আরও অনেকেই এসেছে
ও বুঝেছি সব গুলিকেই বোতলে ভরতে হবে!
না না ওদের বোতলে ভরিস না ওরাও এখান থেকে চলে যাবে
সেতো তুইও বলেছিলি, মাত্র গতমাসে তোকে শিবালয়ের কাছের এক গ্রাম থেকে তাড়ালাম তখন তুই বলেছিলি এই তল্লাটে আর থাকবি না কিন্তু এই কয়েকদিনের মধ্যেই আবার কেন এসেছিস, দূর হয়ে গেলি না কেন? আজ তোকে আমি প্রথমে গোয়াল ঘরের ঝাড়ু দিয়ে ঝেরে পরে পুড়িয়ে মারব! দেখেছিস কি এনেছি? এই ধুপ দানিতে পোড়া দিব!
দেখেছি দেখেছি, আমি আর থাকব না, আমাকে আজকের মত ছেড়ে দে, জন্মের মত চলে যাব
এমন কথা তুই আগেও কয়েকবার বলেছিস, তোকে আর বিশ্বাস করি না, এই গণেশ দে গোয়ালের ঝাড়ুটা দিয়ে ওকে একটু ধোলাই না দিলে কাজ হবে না ধোলাই দে
না না আমি সত্যিই বলছি এখান থেকে চলে যাব
চোপ
জোছনা নাকি সুরে কান্না করতে লাগল আর সেই সাথে কত বিচিত্র ঢঙ্গে ছেড়ে দেয়ার জন্য কাকুতি মিনতি, কিন্তু কোন কান্নাই হরিহর দাসের কানে ঢুকছে না।
কিরে এমনি কান্না করলে চলবে? কখন যাবি বল!
বলছি তো যাব এখনই যাব
তাহলে যাচ্ছিস না কেন? তোর দোস্তদের যেতে বল
তুই যে আমার আঙ্গুল ধরে রেখেছিস কেমনে যাই? আঙুলটা ছেড়ে দে! ব্যথা লাগছে
তোর আবার ব্যথা! বলেই আরও জোরে চাপ দিল আর অমনিই জোছনা চিৎকার করে উঠল
এই চিল্লাবি না, তুই হরিহর দাসকে এখনও চিনতে পারিসনি। দাঁড়া চেনাচ্ছি। এই গণেশ লাগা ঝাড়ু
অমনিই গণেশ ঝাড়ু দিয়ে জোছনার পিঠে ঝট ঝট করে পেটানো শুরু করল, আর ওঝা মশাই ধুপ দানিতে শুকনা মরিচ সহ প্রচুর ধোয়া বানিয়ে এক হাতে ধরে জোছনার নাকের কাছে এনে ফু দিচ্ছে আর এক হাতে সেই আঙ্গুলে চাপ দেয়া শুরু করল
আর মারিস না আমাকে, আমাকে ছেড়ে দে, ছেড়ে দে আমাকে আমি চলে যাব
তোর জন্যে যা যা আনা হয়েছে তার কিছুইতো দিলাম না কেমনে যাবি? এগুলি নিয়ে যাবি না?
তোর পায়ে ধরি আমাকে ছেড়ে দে, আর কোন দিন তোর এলাকায় আসব না
বেশ! কথা ঠিক? সত্য বলছিস?
হ্যাঁ ঠিক, সত্যি বলছি, এখন থেকে গাছে গাছেই থাকব আর কারো দিকে চোখ নিব না, কিন্তু আমি কি করব কেউ যদি অমন করে এগিয়ে আসে তাহলে আমি কি করে লোভ সামালাই? ভরা সন্ধ্যায় চুল ছেড়ে বাইরে এলিয়ে দিবে,

শোন শোন তোর এই গীত শোনার জন্য আমি আসিনি। বল তুই যাবার সময় কি চিহ্ন রেখে যাবি? এখানে লোকজন আছে সবাই দেখবে তুই চলে যাচ্ছিস
কি করলে তুই বিশ্বাস করবি বল
ওই যে পশ্চিম দিকে নিম গাছ ওই গাছের একটা ডাল ভেঙ্গে দিয়ে যাবি, পারবি?
হ্যাঁ আমায় ছেড়ে দে আমি এখনই যাচ্ছি
না গেলে কি করব বল
কিছু করতে হবে না আমি যাবই
আচ্ছা দেখি যা তো, নে ছেড়ে দিলাম। ওদিকে গণেশকে ইশারা করল আর গণেশ ঝাড়ু দিয়ে পেটানো বন্ধ করে গুরুর হাত থেকে ধূপদানি সরিয়ে রাখ

ওঝা বলল মেয়েটাকে ভাল করে ধরেন ও কিন্তু এখন পড়ে যাবে। চাচি আর ছোট বোন জোছনাকে ভাল করে ধরে রাখল।
এবার ওঝা আস্তে আস্তে তার ধরা কড়ে আঙুলটা ছেড়ে দিল আর সত্যিই জোছনা এলিয়ে পড়ে গেল। ওখানে ওকে শুইয়ে দেয়া হলো। ওদিকে সাথে সাথেই একটা ঝরের মত শব্দ হলো আর নিম গাছের ওই উপরের একটা ডাল ভেঙ্গে পড়ে গেল মাটিতে। আগত দর্শনার্থীরা সবাই দেখল। ঘটি থেকে মুখে মাথায় পানি ছিটিয়ে দিতে দিতে এক সময় জোছনা উঠে বসল। শরীর অত্যন্ত দুর্বল। মা, মা কোথায়?
এই যে মা আমি এইতো, বলেই জোছনার মা এসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরল।
ঘটির অবশিষ্ট পানিতে মন্ত্র পড়ে ফু দিয়ে বলল যান এবার ওকে গরম পানির সাথে এই পানি মিশিয়ে গোসল করিয়ে ঘরে নিয়ে যান আর কিছু খেতে দেন, ও যা চায় তাই দেন। কয়েকটা তাবিজ দিয়ে নানা নিয়মকানুন বলে দিলো কি ভাবে কখন এগুলি গলায় বা হাতে পরতে হবে। আগামী অমাবস্যা পর্যন্ত এগুলি পড়ে থাকতে হবে। ঘটির পড়া পানি দিয়ে সাতদিন গোসল করাতে হবে।
এই আচার অনুষ্ঠানের মেয়াদ শেষ হবার পর আস্তে আস্তে জোছনা সুস্থ হয়ে উঠল তবে শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে বেশ কয়েক মাস সময় লেগেই গেল।

মোজা নিয়ে মজার কিছু তথ্য

শীতের সঙ্গে মোজার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। আর মোজা বিভিন্ন সময়ের প্রতীকী চিহ্নও। তবে এবার মোজা সম্পর্কে জানা যাক বেশ কিছু মজার তথ্য।

শিশু সৈন্যদের স্মরণে
জার্মানি এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ৬ হাজার মোজা বোনা হয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ষাট হাজার ইউরো। শিশু সেনা বন্ধের প্রতীক হিসেবে এই অর্থ প্রদান করা হবে শিশুসেনা বিরোধী একটি সংগঠনকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যে সব শিশু সৈন্য অংশ নেয়, তাদের কথা স্মরণেই এই সাহায্য।

ময়লা মোজার গন্ধ!
একটি গবেষণার ফলাফলে জানা গেছে, ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী মশা মানুষের শরীরের গন্ধে আকৃষ্ট হয়েই কামড় বসায়। বিজ্ঞানীরা তা কাজে লাগিয়েই মশা নিধনের যন্ত্র বের করেছেন, যাতে মোজার গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে ঐ যন্ত্রে পা দিলেই মশা যায় মরে। এই গবেষক দলের প্রধান কেনিয়ার বিজ্ঞানী ফ্রেদ্রোস ওকুমু। এই গবেষণায় অর্থ সাহায্য দিয়েছে বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।

মোজার প্রদর্শনী
জার্মানির ব্রেমেন শহরে মোজা বিষয়ক একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে একজন মানুষ তাঁর জীবনে কতগুলো মোজা ব্যবহার করেন, তার একটা হিসেব দেওয়া হয়েছে। তবে বলা বাহুল্য, এই তথ্য জার্মানির মতো শুধু শীতপ্রধান দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

নীল রং-এর মোজা
জার্মানদের বিয়েতে ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে কনেকে একটা নতুন জিনিস, একটা পুরনো, একটা কাছের মানুষদের কাছ থেকে ধার করা এবং একটা নীল রং-এর জিনিস পরতে হয়। একে সৌভাগ্যের প্রতীক বলেই মনে করা হয়। আদতে এই ঐতিহ্যের শুরু অ্যামেরিকায় হলেও, এখন সারা ইউরোপেই তা ছড়িয়ে গেছে।

নারীদের ফ্যাশন মোজা
মোজা শুধু শীত নিবারণের জন্য নয়, পায়ের সৌন্দর্য্য চর্চায়ও লম্বা মোজা ব্যবহার করা হয়। তবে একথা ঠিক যে, এ সব মোজা সাধারণত শীতপ্রধান দেশের মেয়েরাই বেশি পরে থাকেন। এ ধরণের মোজা পায়ের সৌন্দর্য্য অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়, অর্থাৎ পা দুটোর ত্বক অনেক বেশি মসৃণ, চকচকে এবং আকর্ষণীয় লাগে। তাছাড়া মোজা শীত থেকে খানিকটা হলেও যে রক্ষা করে!

মোজা নিয়ে গবেষণা
বোরিস গ্রুনভাল্ডের নামের এক ব্যক্তি জার্মানির ম্যুন্সটার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাফিক ডিজাইনের ওপর ডিপ্লোমা করেছেন৷ তিনি ‘থিসিস’ বা গবেষণা-কর্মে এক জোড়া মোজার একটি প্রায়ই খুঁজে পাওয়া যায় না কেন-এই মজার বিষয়টিও স্থান পেয়েছে।

দুর্গন্ধহীন মোজা
বার্লিনের এক প্রকার মোজা পাওয়া যায় যার শতকরা ১ ভাগ বিশুদ্ধ রূপা। আর সেই মোজা পায়ে দিলে দুর্গন্ধ তো হবেই না, বরং এ মোজা পরে ৯০ মিনিট ফুটবল খেলার পরও মোজা থেকে কোনো গন্ধ বের হবে না।

সূত্র: ডয়চে ভেলে, সম্পাদনা: গোরা, বিভাগ: ফ্যাশন।
মিঠু হালদার – ২০ ডিসেম্বর ২০১৬, সময়-১৮:২৮,

রেশমি

১।
ভরা ভাদ্র মাস। নদী নালা খাল বিল জলে থৈ থৈ করছে। ইছামতী নদীও তেমনি থৈ থৈ করছে। ছলাত ছলাত বৈঠা বেয়ে কত নৌকা চলে যাচ্ছে, কোনটা পশ্চিমে মালচি, বাল্লার দিকে আবার কোনটা পুবে হরিণা, হরিরামপুরের দিকে।
কোনটায় আবার লাল নীল রঙ বেরঙের পাল তুলে মাঝি শুধু পাছা নায় হাল ধরে ভাটিয়ালি সুর তুলে দূরের কোন গায়ের নাইয়রি নিয়ে যাচ্ছে, ছৈয়ের সামনে পিছনে একটু খানি কাপড় দিয়ে পর্দা দেয়া। জনাব আলি নদীর পাড়ে বসে বিড়ি
টানছে আর তাই দেখছে।

দেড় দুই মাস হলো এই ইছামতীর পাড়ে ঝিটকা বাজারের ঘাটে তারা লগি গেড়েছে। নদীর পাড়ে বাজারের পরেই ইউনিয়ন অফিস তারপরে হাইস্কুল। হাইস্কুলের পাশেই প্রাইমারি স্কুল। হাই স্কুলের সামনে নদীর পাড়ে বিশাল এক কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচেই জনাব আলি বসে আছে অনেকক্ষণ ধরে।
দেখতে দেখতে পশ্চিম আকাশ লাল হয়ে আসছে, সূর্যটা কিছুক্ষণের মধ্যেই ডুবে যাবে। এর মধ্যে তাদের বহরের কোন কোন নৌকায় হারিকেন ঝুলিয়ে দিয়েছে। বাজারের ঘরে ঘরে বাতি দিয়ে দিয়েছে। দুই পাড়ের গ্রামেও দুই একটা বাড়িতে আলো দেখা যাচ্ছে। আর একটা বিড়ি জ্বালাল। কিছুতেই উপযুক্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না।
অন্ধকার হয়ে আসার আগেই ছোট মেয়ে কলি ডাকতে এলো
খেপতে, (বাবা) নায় যাইবা না? এহানে আর কতক্ষণ বইসা থাকবা? চল নায় চল আমরি (মা) চিন্তা করতেছে, ভাত খাইবা চল।

বলেই হাত টেনে উঠিয়ে দিল। মেয়ের পাশে পাশে হেটে এসে পা ধুয়ে নৌকায় উঠল। নৌকার এক পাশে ব্যবসার বিক্রির জিনিস পত্র আর এক পাশে সংসারের জিনিস পত্র। মাঝে শোবার জায়গা। পিছনে গলুইর কাছে রান্নার আয়োজন। জনাব আলির বহরের অধিকাংশই বেচাকেনা করে। হরেক রকম চুরি, আলতা, মেন্দি, মালা, কানের দুল, মাথার ক্লিপ, মুখ দেখার ছোট আয়না, চিরুনি, উকুনের চিরুনি, কপালের টিপ, কাজল, বাচ্চাদের খেলনা এমনি কত কি! আবার কেও কেও শিঙ্গা লাগানো, দাঁতের পোকা বের করা, তাবিজ কবচ ঝাঁর ফুকের কাজও করে। সাপ ধরা, সাপের খেলা দেখান, সাপের ব্যবসা করা, সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা, জাদু দেখানো, মাছ ধরা, বানর খেলা দেখানো, পাখি শিকার ইত্যাদি। এদের মধ্যে দুই একজন যে এদিক সেদিক কিছু করে না সে কথা বলা যায় না। নানা জনে নানা রকম ফন্দি ফিকির করে তবে তা জানাজানি না হলে কেও আর ও নিয়ে মাথা ঘামায় না।

ঝিটকা বাজারের পুঁটি মাছ আর করল্লা দিয়ে চচ্চড়ির মত করেছে। জনাব আলি কি খাচ্ছে সেদিকে তার মন নেই। খেতে বসেও ভাবছে দেখে জয়নব বেগম তাড়া দিল
কি হইছে, এমনে ভাবলেই হইব? মাইয়ারেতো আর গাঙ্গে ফালাইয়া দিতে পারুম না। আমি কই কি চল আমরা এহান থিকা চইলা যাই। অনেক দিনতো হইল, আর কত দিন এই ঘাটে থাকুম?
বলেই স্বামীর মুখের দিকে তাকাল কিন্তু তার মুখের কোন ভাবান্তর দেখতে না পেয়ে একটু হতাশ হলো।
জনাব আলি শুধু জিজ্ঞেস করল
রেশমি কনে?
আছে ওই নায়
কি করে?
কি আর করব, হুইয়া রইছে
খাইছে?
হ, তুমি আহার আগেই খাইয়া গেছে।

২।
জনাব আলির নৌকার বহর ইছামতী নদী দিয়ে যাচ্ছিল, ওদের ধারনা ছিল হরিরামপুর যাবে কিন্তু পথে রাতে অমাবস্যার অন্ধকারে পথ দেখতে না পেয়ে ঝিটকার কাছে দিয়ে যাবার সময় কি মনে করে এই ঘাটেই ভিড়িয়ে দিল।
কি হইল জনাব ভাই, থামলা কেন?
ভিড়া, এই ঘাটেই দেইখা যাই।

এইতো, সেই থেকে তারা এখানেই আছে আজ প্রায় দুই মাস। বেদেরা সাধারণত কোন ঘাটে এত দিন থাকে না কিন্তু এখানে ভাল ব্যবসা হচ্ছে বলে কেমন করে যেন রয়ে গেল। ঘাটে বাধার পরের দিন সবাই যার যার ঝাঁকা নিয়ে গ্রামে বের হলো ফেরি করার জন্য। জনাব আলির মেয়ে রেশমি। দেখতে সুন্দরী। বেদের ঘরে এমন মেয়ে দেখা যায় না। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সবই যেন বিধাতার নিপুণ হাতে বানানো। কাচা হলুদের মত গায়ের রঙ, মাথায় লম্বা কাল কুচকুচে গোসলে (চুল), বাড়ন্ত গড়ন, হরিণের মত গোঙকুরি (চোখ), সদা ধবধবে সুন্দর খোঁজ কুই (দাঁত), থুতনির বাম পাশে কাল তিল, অর্ধ প্রস্ফুটিত গোলাপ। যৌবনের পথে পা দিয়েছে কিন্তু এখনও গন্তব্যে পৌছাতে পারেনি, এগিয়ে যাচ্ছে। রেশমি অন্য নেমারিদের (মেয়ে) মত নামড়াদের (ছেলে) দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সাজগোজ করে না। ওকে সাজতে হয় না। সুফি সবসময়ই বলে ঈশ আমাগো যে আল্লায় কি দিয়া বানাইছে! তর মত একটুখানি পাইলেই আমাগো আর কিছু লাগত না। রেশমির চোখে কাজল কিংবা কপালে টিপ কিংবা খোপায় ফুল গুজতে কেও কখনও দেখেনি তবুও রেশমি যেখান দিয়ে যায় পথের কেও এক নজর না তাকিয়ে পারে না। পথে যেতে যেতে চোখ যেন এমনি এমনিই আটকে যায়। সেদিন দলের আগে আগে রেশমি আর বাকিরা সবাই ওর পিছনে। অন্য সব বেদেনীর মত গোড়ালির উপরে তোলা লাল পাড় হলুদ শারী, লাল ব্লাউজ, গলায় পুতির মালা, হাত ভরা প্লাস্টিকের লাল চুরি, কোমরে আঁচল জড়ান মাথায় চুরির ঝাঁকা গলায় গানের সুর ‘মোরা এক ঘাটেতে রান্ধি বাড়ি আরেক ঘাটে খাই মোদের ঘরবাড়ি নাই’ আরও গাইছে ‘আমরা হেলায় নাগেরে খেলাই নাগেরই মাথায় নাচি’ সবাই ওর সাথে সাথে গলা মেলাচ্ছে।
অনেকেই অনেক কিছু বিক্রি করলেও জনাব আলির পরিবার মেয়েদের এই সব সাজ প্রসাধনী জিনিষ পত্র ছাড়া আর কিছু বিক্রি করে না। তবে দলের মধ্যে পারুল, সুফি, হিরা এবং অনেকের কাছেই তাবিজ কবচ, গাছ গাছড়ার তৈরি ঔষধ এবং ঝুরির মধ্যে সাপ নিয়েই প্রথম দিন নদীর ওপাড়ে গোপীনাথপুর গ্রামে গেল। সারাদিন ঘুরে ঘুরে ভালই বেচা কেনা হয়েছে। সন্ধ্যার আগে আগে আবার দল বেধে সবাই ঘাটে ফিরে এসেছে। পা ধুয়ে নৌকায় উঠে মাথার ঝাঁকা নামিয়ে বাবার প্রিয় মেয়ে আগে বাবার সাথে দেখা না করে কিছুই করবে না। বাবার সাথে দেখা হলো। আজকের এই নতুন এলাকা কেমন এই সব নিয়ে কথা হলো। এবার রেশমি আগা নায়ে এসে মুখ হাত ধুয়ে আগামী কালের জন্য কিছু মালামাল ঝাঁকায় ভরে মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করল মা কিছু রানছ?
রানছি
কি রানছ?
তর বাপে ইচা মাছ আর পুই শাক আনছিল তাই আর ডাইল রানছি
দেও মা খিধা লাগছে। এহ! সারাদিন যা ঘুরছি পাও এক্কেবারে টনটন করতেছে।

৩।
বেদেদের সমাজ ব্যবস্থা দেশের আর দশটা সমাজের মত নয়, এদের সমাজে ভিন্ন নিয়ম শৃঙ্খলা। এদের না আছে কোন ঠিকানা না আছে বাড়ি ঘর। নৌকায়ই এদের জন্ম, নৌকায়ই এদের জীবন, সুখ-দুঃখ, সংসার, উৎসব আনন্দ বেদনা আবার নৌকায়ই মৃত্যু। ঝর তুফান, শীত গ্রীষ্ম, বর্ষা সারা বছর নৌকায় ভেসে এক ঘাটে এসে লগি গারে। কোথাও আবার দল বেধে বাজার ঘাট বা স্কুল কলেজের পাশে পতিত জমি বা খাস জমিতে পলিথিন, বাঁশের চালি বা সস্তা হোগলা পাতা খেজুর পাতা দিয়ে ছৈয়ের মত বানিয়ে তার নিচেই বসবাস করে তবে এটাও অস্থায়ী। যাযাবর এই দল কোন এক জায়গায় স্থায়ী হতে পারে না। রক্তেই এদের যাযাবরের নেশা। কারা এদের পূর্ব পুরুষ সে ইতিহাস এরা জানে না। দাদা দাদি বা বংশ পরস্পরায় যা শুনে এসেছে এর বেশি আর যেতে পারে না। মাস খানিক এক জায়গায় থেকে অস্থির হয়ে যায়, নৌকার বহর নিয়ে বা ছৈ গুটিয়ে ছুটে চলে ভিন্ন কোন ঘাটের উদ্দেশ্যে। সর্দারই এদের নেতা। পরের গন্তব্য কোথায় হবে, কে মারামারি বা ঝগড়া ঝাটি করল, কার বিয়ে হবে, কাদের ছাড়াছাড়ি হবে এসব সালিস বিচার সর্দারই করে। স্থায়ী কোন নিবাস না থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দীক্ষা এদের নেই তবে শিশুকাল থেকেই বেঁচে থাকার জন্যে এদের পেশাগত নানান শিক্ষা দেয়া হয়। লতা (সাপ) ধরা, সাপের খেলা দেখান, সাপে কাটা রুগীর চিকিৎসা করে বিষ নামান, পোক্কর (পাখি) শিকার করা ছেলেদের শেখান হয় আবার তেমনি করে মেয়েদেরও নানা ভাবে সেজে গুজে হাটে বাজারে পসরা সাজিয়ে বিক্রি করা বা গাওয়ালে (গ্রামে) যেয়ে ফেরি করা শিক্ষা দেয়া হয়। ছেলে মেয়ে ১০/ ১২ বছর বয়স হলেই মাথায় ঝাঁকা দিয়ে বা যে যেভাবে পারে তাকে সে ভাবে নিজে রোজগারের পথে নামিয়ে দেয়। ছোট ছেলেরা বনে জঙ্গলে ঘুরে রান্নার কাঠ খড়ি কুড়ায় আবার সুযোগ পেলে পাখি টাখি শিকার করে, মাছ ধরে।

মেয়েরা সাধারণত মাথায় ঝাঁকা নিয়ে গ্রামে বা মহল্লায় ঘুরে ঘুরে ফেরি করে আবার কখনও হাটে বাজারে পসরা সাজিয়ে বসে। পুরুষেরা নৌকা নিয়েই গ্রামে গ্রামে ঘুরে ফেরি করে সাথে বয়স্ক মহিলা যারা ঘুরে ফেরি করতে পারে না তারা নৌকায় থাকে। কখনও পুরুষেরা বনে জঙ্গলে ঘুরে সাপ ধরে, নৌকায় বসে বসে বড়শি দিয়ে মাছ ধরে। বেদেনীরাও সাপ ধরতে পারে। ঢোঁরা, লাউডগা, কালনাগিনী এমন সব বিষাক্ত সাপ। তবে সবাই সাপ ধরতে পারে না। হিংস্র মেজাজের এবং ভয়ঙ্কর বিষাক্ত দাঁড়াশ, শঙ্খিনী, গোখরো, কাল কেউটে জাতের সাপ নিজেরা ধরতে না পারলে অন্য বেদের কাছ থেকে কিনে নেয়। কালনাগিনী বেদেনীদের ভীষণ পছন্দের সাপ, তাই হয়ত বেদেনীদের হাঁটা চলাফেরা বা স্বভাব অনেকটা সাপের মত। লক্ষ করলে দেখা যাবে হাঁটার সময় এদের পা ফেলার ভঙ্গিও ভিন্ন রকম, এরা এক পায়ের পর আরেক পা ফেলতে সোজা করে ফেলে। সাপ খেলা দেখানোর সময় হিংস্র বিষাক্ত সাপকে বেদেনী বাহুতে কিংবা গলায় পেঁচিয়ে বাঁশী বাজিয়ে সুরেলা গলায় এই চির চেনা গান গেয়ে পথচারী বা দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে
‘খা খা রে খা, বক্ষিলারে খা,
কিপটারে খা, কঞ্জুসরে খা।
গাঁইটে টাকা বাইন্দা যে
না দেয় বেদেনীরে,
মা মনসার চেড়ি তাদের
খা খা করে খা।
খা খা খা ওই বক্ষিলেরে, কিপ্পিনেরে খা
গাঁইটে পয়সা বাইন্দা যে
না দেয় বেদেনীরে
তার চক্ষু উপড়াইয়া খা’।
এমন অনেক গান প্রচলিত আছে যা বিশেষ করে বেদেদের মুখে মুখে বেঁচে আছে। সমাজ এদের অবহেলা করে স্বীকৃতি না দিলেও এদের নিয়ে অনেক মনে দোলা দেয়া কাহিনী রচনা করেছে। অনেক সিনেমা তৈরি করেছে যেমন মহুয়া, বেদের মেয়ে, মনসামঙ্গল, সাপুড়ে, বেহুলা লখিন্দর, নাগিনী কন্যার কাহিনী, নাগিনী, সর্প রানী, সাপুড়ে মেয়ে, নাচে নাগিনী, বেদের মেয়ে, রাজার মেয়ে বেদেনী, বেদের মেয়ে জোসনা।

এদের স্বামী স্ত্রীতে ঝগড়া হলে কেউ কারো গায়ে হাত দেয়ার সুযোগ পায় না, নিয়ম নেই। নৌকার সামনের গলুইতে একজন আর পিছনের গলুইতে একজন বসে উত্তেজিত হয়ে গালাগালি করে, লগি বৈঠা এ ওর দিকে ছুড়ে দেয়। হুলুও (বিয়ে)এদের নিজেদের মধ্যেই হয়। ছেলে বা মেয়ের বয়স হবার সাথে সাথেই কোন অনাকাংখিত ঘটনা ঘটার আগে বিয়ে দিয়ে দেয়। মেয়েদের ১৪/১৫ বছর বয়স হলেই বিয়ে দেয়া হয়। স্ত্রী গাওয়ালে গেলে স্বামী রান্না বান্না সহ নৌকার গোছগাছ করে রাখে আবার সন্তানের দেখাশোনাও করে। নারী শাসিত এই সমাজে নারীরাই পেশায় মুল ভূমিকা পালন করে। পুরুষেরা সাধারণত অলস হয়, তবুও স্বামীকে বশে রাখার জন্য স্ত্রীরা নানা রকম তাবিজ কবচ তন্ত্র মন্ত্র করে যাতে পুরুষ ভিন্ন নারীতে আসক্ত না হয়। বেদেনীরা স্বামীদের আঁচলে বেঁধে রাখতে তুলনাহীন। পুরুষ বশে রাখতে তারা শরীরে সাপের চর্বি দিয়ে তৈরি তেল ব্যবহার করে, স্বামীর শরীরে এই তেল নিয়মিত মালিশ করে। কোনও পুরুষের পক্ষে বেদেনীর এই কৌশল উপেক্ষা করা সম্ভব হয় না। বেদেনীর মায়াজালে পড়লে কোন পুরুষ বেদেনীকে ছেড়ে যেতে পারে না। স্বামী বেদে স্ত্রীদের কাছে দেবতার মত, যাবতীয় ঝুট ঝামেলা বিপদ আপদ থেকে তাকে আগলে রাখার জন্য স্ত্রী আপ্রাণ চেষ্টা তদবির করে।

৪।
ঠিকানা হীন ভাসমান জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে বেদেরা ইসলাম ও হিন্দু উভয় ধর্মই মেনে চলে তবে তারা নিজেদেরকে মুসলমান দাবি করে এবং অনেকেই ওয়াক্তিয়া নামাজ সহ জুম্মার নামাজ এবং ঈদের নামাজ মসজিদে
আদায় করে কিন্তু রোজা রাখার ব্যাপারে এদের অনীহা। উপার্জনের মৌসুম শেষ হলে বেদে পরিবারে বিয়ের আয়োজন করে। বিয়ে শাদীর সময় হিন্দু রীতিনীতি পালন করে, বিয়ের পরদিন সূর্য ওঠার আগে কনের মাথায় সিঁদুর দেয়া হয় যদিও বিয়ে পড়ানো হয় ইসলামি মতে মওলানা দিয়ে। মেয়ে যে পুরুষকে পছন্দ করবে সে পুরুষের সম্মতি থাকলে সে বিয়ে হবে। বিয়ে করতে হলে কনেকে যৌতুক দিতে হয়। যার যেমন সামর্থ্য, সে তাই দেয়। এ অর্থ বেদেনীর কাছে জমা থাকে শত বিপদ আপদেও খরচ করতে চায় না। বিয়ে এবং তালাক উভয়ই হয় কনের ইচ্ছায়, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনও কারণে ছাড়াছাড়ি হলে সম্পত্তি সহ ছেলে-মেয়েও ভাগাভাগি হয় এবং তালাকের সময় স্বামীর দেয়া যৌতুকের অর্ধেক স্বামীর পরিবারকে ফেরত দিতে হয়। বিয়ের রাতে স্বামীকে সন্তান পালনের জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হয়। যতদিন স্ত্রী উপার্জনের জন্য বাইরে থাকে, ততদিন স্বামী-সন্তানের প্রতিপালন করে। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর নৌকায় যায়। স্ত্রীর নৌকাই স্বামীর নৌকা।

ঈদের চেয়ে এরা বিয়েতেই বেশি আনন্দ করে তবে বিয়েতে আপ্যায়ন বা উপহার দেয়ার কোন রীতি নেই। এমনিই নাচ গান করে এই আনন্দ করে। বিয়েতে বর কনেসহ উপস্থিত সবাইকে নাচগান করতে হয়। বাইরের কেউ এলে তাকেও নাচতে হয়। এসব নাচ গান একান্তই বেদে সম্প্রদায়ের নিজস্ব সংস্কৃতি। অবিবাহিত মেয়েরা আকর্ষণীয় জমকালো সাজ গোঁজ করে কোমর দুলিয়ে নেচে গেয়ে নিজেদের শারীরিক সৌন্দর্য তুলে ধরে অন্য যুবকের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। তরুণ-তরুণীরা এভাবেই বিয়ের অনুষ্ঠানে নিজেদের সঙ্গী খুঁজে নেয়। ভিন্ন সমাজের কোনও যুবক উপস্থিত থাকলে তাকেও বেদে নারীরা বিয়ের জন্য প্রলুব্ধ করে এবং সে তরুণ যদি বেদে তরুণীকে বিয়ে করে, তাহলে তাকেও বেদেদের গোত্রভুক্ত হতে হয় নতুবা তাদের সমাজচ্যুত করা হয়। মৃত্যুর পর ইসলামি নিয়ম অনুযায়ী দাফন করে এবং চল্লিশা বা কুলখানির আয়োজন করে। আবার সর্প দংশন থেকে বাঁচতে মা মনসার পূজা করে এবং শিব, ব্রহ্মাও বিশ্বাস করে।

৫।
ঝিটকা আসার আগে শিবালয় ঘাটে যখন ছিল তখন থেকে লক্ষ করছে আসা যাওয়ার পথে নৌকায় বা ঘাটে বসে কেমন করে চোখ বাকিয়ে জসীম তাকিয়ে থাকে। ইশারায় ইঙ্গিতে কিছু বলতে চায়, একা থাকলে এটা সেটা কিনে দিতে চায় কিন্তু রেশমি পাত্তা দেয় না তবে মনে মনে বসন্তের আনাগোনা অনুভব করে। ইশারার তোয়াক্কা না করে সেদিন বলেই ফেলল চল না ওই গাছের নিচে একটু বসি! রেশমি কোন জবাব না দিয়ে চলে এসেছিল। সমবয়সী ফুলির বিয়ের সময় নাচতে নাচতে কখন যেন জসীম কাছে এসে হাতটা ধরে ফেলল।
কি হইলো আমার কাছে আসছস না কেন?
চমকে উঠে বলল, হাত ছাড় কইলাম, তুই আমারে ছুবি না
কেন, কি হইছে আমি কি তোর যোগ্য না?
আগে হাত ছাড় পরে অন্য কথা
হাত ছাড়ার জন্যে ধরছি মনে করছস?
হাত ছাড় নইলে সবাইরে ডাক দিমু আমি

দলের নিয়ম অনুযায়ী জোর করে প্রেম হয় না। নালিশ হলে কঠিন শাস্তি। তাই ভয়ে হাত ছেড়ে দিল কিন্তু ওর কথা ভেবে দেখার এবং অনেক যৌতুক দেয়ার লোভ দেখাল।
সারা জীবন তোর গোলাম হয়ে থাকব রে রেশমি তুই শুধু আমার কথা একটু ভেবে দেখবি।
তুই আমার দিকে তাকাবি না, আমার কাছে আসার চেষ্টা করবি না
সেদিনের মত ছাড়া পেল কিন্তু তার পরে থেকেই রেশমি বুঝতে পারে তার মনে জোয়ার এসেছে, পরিপূর্ণ টইটুম্বুর জোয়ার টলমল করছে। গায়েও তেমনি নতুন জোয়ারের ঢেউ এসে দোলা দিয়েছে। বাড়ন্ত গড়নের জন্য মায়ের কড়া নির্দেশে অনেকদিন আগেই ফ্রক ছাড়তে হয়েছে। শারীর আঁচল দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখতে শিখিয়েছে মা। বসন্তের সদ্য ফোটা কৃষ্ণচূড়ার থোকা থোকা লাল ফুলের আবেশ ছড়িয়ে যাচ্ছে রেশমির দেহে মনে। চারদিকে যা দেখে সব কিছু রঙ্গিন মনে হয়। রেশমি বুঝতে পারে সে এখন বড় হয়েছে। পনের থেকে ষোলয় পা দেয়া রেশমি জসীমকে নিরস্ত করতে পেরেছে কিন্তু তার মনে রঙ ধরাবার মত কাওকে দেখা যাচ্ছে না! কে আসবে তার কাল নাগ হয়ে? যে ছোবল দিতে জানে! এমন কাওকে দেখছি না! আমাদের এই দলে এমন কেও নেই। এই ঘাট ছেড়ে অন্য ঘাটে গেলে খুঁজতে হবে। জসীম একটা ঢোঁরা সাপ! ওর মধ্যে কিছু নেই ওর ডাকে সারা দেয়ার চেয়ে গলায় কলশী বেঁধে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়া অনেক ভাল।

৬।
গোপীনাথপুর থেকে ফিরে আসার পরের দিন রেশমি দলের সাথে বের হয়েছে। আজ তার পরনে সবুজ পাড়ে কুসুম রঙ শারী, হলুদ ব্লাউজ, গলায় আগের মত পুতির মালা, হাতে লাল চুরিতে দারুণ মানিয়েছে। জরিনা বলেই ফেলল
তরে আইজ খুউব সুন্দর লাগতেছেরে রেশমি, তুই যে আজ কারে পাগল করবি কে জানে! দেখিস সাবধানে থাকবি নাইলে কিন্তু সর্দার দল থিকা বাইর কইরা দিবনে।
এই শুনে সুফি বলল
দেখস না একটু কাজল দেয় নাই কপালে একটা টিপও নাই তাও কি সুন্দর লাগতেছে!
হিরা খিল খিল করে হেসে বলল
অরে আবার দল ছাড়া করব কেরা ওতো সর্দারের মাইয়া!
এমনি হাসি আনন্দে এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে ওপাড়ে যাব না চল ওইদিকে যাই বলে ঝিটকা স্কুল ছাড়িয়ে পুব দিকে গেল। যেতে যেতে হুগলাকান্দি এসে পৌঁছল। গ্রামে ঢুকে হাঁক দিল
চুরি নিবেন চুরি! রেশমি চুরি বেলোয়ারি চুরি আরও আছে ফিতা, কাটা, আলতা, কাজল!
মাঝে মাঝে সুরেলা গলায় গান গাইছে
সঙ্গীরা নানা দিকে ছড়িয়ে গেল। এক সাথে থাকলে কে বেচবে কে দেখবে তাই এদের এই রীতি। এক সাথে বের হয়ে পরে যার যার সুবিধা মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। আবার বেলা শেষে এক জায়গায় জড় হয়ে এক সাথে ঘাটে ফিরে আসে।
গ্রামের ভিতরের দিকে একটু এগিয়ে যেতেই এক বাড়ি থেকে ডাকল
এই বাইদানী!

রেশমি শব্দ অনুসরণ করে বাড়ির উঠানে ঢুকে মাথার ঝাঁকা নামিয়ে ডাকল
কইগো বিবি সাবেরা আহেন
বাড়ির মেয়েদের একে একে তার পণ্য সম্ভার দেখাচ্ছে। বাড়ির মেয়ে মহিলা সহ বুড়িরা পর্যন্ত সবাই ঘিরে ধরেছে। পাশের বাড়ি থেকেও বৌ ঝিরা এসেছে।
রতন এই বাড়ির ছেলে, ঝিটকা প্রাইমারি স্কুলে মাস্টারি করে। স্কুলে যাবার জন্য বের হয়ে দেখে উঠানের মাঝখানে মা বোন এবং ভাবিদের জটলা। কি ব্যাপার এরা সবাই কি দেখছে? পায়ে পায়ে কাছে এগিয়ে এক বোনকে সরিয়ে দাঁড়াল। বেদেনীর মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক স্তব্ধ হয়ে গেল। আগেও অনেক বেদেনী দেখেছে কিন্তু তারা শুধুই বেদেনী আর কিছু নয়। কিন্তু এ যেন ভিন্ন কেও, এ কি আসলেই বেদেনী? এত সুন্দর! মানুষ এত সুন্দর হতে পারে? অবাক চোখে ওর মুখের দিকে তাকিয়েই রইল। বোন ভাবিরা নানা কিছু কেনা কাটা করছে কিন্তু রতনের কোন দিকে হুশ নেই। স্কুলের দেরি হচ্ছে সেদিকেও মন নেই। হঠাৎ করেই এক ভাবির চোখে রতনের কাণ্ড ধরা পরল। সে আবার বড় জা কে দেখাল। কিরে রতন বাইদানীরে এত দেখার কি আছে? মনে ধরেছে নাকিরে রতন? ভাল করে দেখ, পছন্দ হলে বল, কি সুন্দর বেদেনী! সবাই এদিকে রতনের অবস্থা দেখে অনেকক্ষণ হাসাহাসি। ওরাও বলাবলি করছিল মেয়েটা খুব সুন্দর। আহারে, কি জন্যে যে এই মেয়ে বাইদার ঘরে জন্মেছে! এই রূপ নিয়ে কি গাও গেড়ামে ঘুরে ফেরি করা যায়? কবে কি হবে কে জানে! রতন বুঝতে পেরে স্কুলের পথে পা বাড়াল। কিন্তু বাড়ি ছেড়ে আসার পরেই তৃষ্ণার্ত মন আবার ফিরিয়ে নিয়ে গেল।

বাড়িতে ওঠার পথের পাশে বড় জাম গাছের নিচে বেদেনীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইল। বেচা বিক্রি করে বেদেনী বাড়ির বাইরে এসে জাম গাছের নিচে রতনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে
কি গো বাবু, তুমি যে কিছু নিলা না?
কি নেব, আমার কিছু কি তোমার কাছে আছে?
কি যে কও, কত কি আছে, বিবি সাবের জন্যে চুরি নেও খুশি হইব, কও কি নিবা বলেই মাথার ঝাঁকা আবার নামাল
আচ্ছা নেব, আগে বল তোমার নাম কি?
আমরা হইলাম ছোট জাত, আমার নাম দিয়া কি করবা
তোমরা কোন ঘাটে থেমেছ
ওইতো ঝিটকা বাজারে
বল না তোমার নাম কি?
কইলামতো আমার নাম দিয়া কি করবা? আমারে বিয়া করবা?
আহা! বল না!
রেশমি। কইলামতো এহন কি নিবা কও
রতন বিপদে পড়ল। এখন কি করে? বোনেরা তাদের সব নিয়ে নিয়েছে। কার জন্যে নিবে?
নিরুপায় হয়ে ছোট বোনকে ডাকল
এই ঊষা
ঊষা বাইরে এসে ভাইকে দেখে অবাক, দাদা তুই স্কুলে যাসনি?
তোরা কি কি নিয়েছিস? আর কিছু নিবি?
তুই কিনে দিবি?
দেখ আর কি লাগবে
ঊষা সুযোগ পেয়ে আরও অনেক কিছু কিনে বাড়ির ভিতরে চলে গেল।
রতন পকেট থেকে টাকা বের করে বেদেনীর হাতে দিতে দিতে বলল
কাল কোন গ্রামে যাবে?
কি যে কও বাবু! আমাগো কি কোন ঠিক ঠিকানা আছে যেদিন যেদিকে মনে চায় সেদিকেই যাই, কেন? আবার কি নিবা?
আশেপাশে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নিয়ে সাহস করে রতন বলেই ফেলল
আর কি নিব? আমি তোমাকেই নিতে চাই
কি কইলা বাবু?
আমতা আমতা করে রতন আবার কথাটা বলল, আমি তোমাকে নিতে চাই।

রেশমি অবাক চোখে বাবুর আপাদমস্তক দেখল। বাবুর ঠাট আছে, শরীরতো নয় যেন এক্কেবারে কেউটে সাপ! দাতে বিষ আছে! এরেই কয় পুরুষ মানুষ। পুরুষ হইলে এমনই হইতে হয়। এর আগে গাওয়ালে এমন কথা কেও বলেনি। তবে ঠারে ঠারে চাউনি দেখেছে, পুরুষ মানুষের চাউনির মানে রেশমি বুঝতে শিখেছে। নানান প্রস্তাব শুনেছে, ইতর প্রস্তাব। ওকে দেখে কোথাও কোথাও আবার শীষ দেয়, গানের কলি আওড়ায়। এই বাবু তেমন বাবু না। মনে ঘোর লেগে আসছিল, বসন্তের টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়ার বনে কে যেন উঁকি দিতে চাইছিল কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
ছি! ছি বাবু! তোমরা হইলা গেল খেনুস (ভদ্রলোক মানুষ), তুমি এইডা কি কইলা? কইলাম না আমরা ছোট জাত আমাগো দিকে নজর দিতে নাই। আমার বাবা আমাগো দলের সর্দার, লোকে জানলে বাবা আমারে আস্ত থুইবো না, কাইটা গাঙ্গে ভাসাইয়া দিব।
বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে কে যেন যাচ্ছিল তাকে দেখে রতন থেমে গেল। বলল
আচ্ছা ঠিক আছে এখন যাও
রেশমি খুচরা টাকা বাবুর হাতে দিয়ে ঝাঁকা গোছান শুরু করল আর রতন স্কুলের পথে পা বাড়াল।

৭।
বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে খেয়ে দেয়ে প্রতিদিনের মত বের হলো। ঝিটকা আসবে, বন্ধুরা মিলে রাজার চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়। রাত আটটা নয়টা বাজলে যার যার বাড়ির পথ ধরে। আজও বের হলো। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে
বেলা ডোবার পরেপরেই আমার কাজ আছে বলে আড্ডা থেকে বেরিয়ে এসে বেদের ঘাটে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক খুঁজছে। ২০/২৫ টা নৌকার মধ্যে রেশমি কোন নৌকায় রয়েছে কে জানে! নৌকার ভিতরে মিট মিট করে হারিকেন জ্বলছে, সবাই খাওয়া দাওয়া নিয়ে ব্যস্ত, কেও আবার শুয়ে পড়েছে। কি করেই বা কাকে জিজ্ঞেস করবে? অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে না পেয়ে হঠাৎ মনে হলো রেশমি বলছিল না ওর বাবা ওদের দলের সর্দার? সর্দারের নৌকা খুঁজে পেতে আর এমন কি!

একজনকে পাছা নৌকায় বসে বিড়ি ফুকতে দেখে তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করল
এই যে শুনছেন
আমারে কইলেন?
হ্যাঁ হ্যাঁ আপনাদের সর্দারের নৌকা কোনটা?
কেন? সর্দাররে দিয়া কি হইব?
কাজ আছে, একটু ডেকে দিবেন?
ওই যে ডাইনের তিন নাও বাদের নাও
রতন এগিয়ে গেল নৌকার কাছে। বুক ঢিব ঢিব করছে, কি বলবে? এতক্ষণ ভাবেনি! কিছু না ভেবেই হঠাৎ ডাকল
সর্দার নায় আছে?
কে ডাকে?
বলতে বলতে লুঙ্গি পরা ফতুয়া গায়ে মাঝ বয়সী এক লোক ছৈয়ের ভিতর থেকে বেরিয়ে রতনকে দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল। আপনে, কি হইছে, কি চান?
আপনে কি এই দলের সর্দার?
হয়, কি হইছে?
আপনার কাছে দাঁতের পোকা বের করার ওষুধ আছে?
আছে, কার জন্যে?
আমার ভাতিজার
ও! কাইল সকালে বেলা ওঠার আগে নিয়া আইতে পারবেন?

বাবার কথার শব্দ শুনে রেশমি আর তার মা বাইরে এসে দেখে কে একজনের সাথে সর্দার কথা বলছে। রেশমি চিনতে পারল সকালে যার সাথে কথা হয়েছে সেই লোক। একটু অবাক হলো। কি ব্যাপার? এর মধ্যে নায়ে এসে হাজির! বসন্তের সেই টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়া আবার উকি দিতে চাইল কিন্তু আকাশ কুসুম ভেবে নিজেকে বোঝাল। লোকটা না হয় ভাবের মোহে পইড়া মনে যা আইছে কইয়া ফালাইছে আবার এই খানেও আইসা পরছে কিন্তু যা সম্ভব নয় তারে প্রশ্রয় দিতে নাই। আমরা বাইদার জাত আমাগো এত স্বপ্ন দেখতে নাই।
আপনের বাড়ি কোন গ্রামে?
এই ফাঁকে রতন দেখল ছৈয়ের ভিতর থেকে বের হয়ে রেশমি বোকার মত আগা নায়ে তার দিকে চেয়ে বসে আছে। আল আধারিতে আরও বেশি সুন্দর লাগছে
না আনা যাবে না, আপনারা বাড়ি যেতে পারবেন না? বেশি ফি দেব! যাবেন না?
আপনের বাড়ি কনে?
কাছেই, হুগলাকান্দি, এই রাস্তা দিয়ে সামনে গেলে যে গ্রাম পড়বে সেখানে রতন মাস্টারের বাড়ি বললেই দেখিয়ে দিবে। আমি এই যে এই প্রাইমারি স্কুলে মাস্টারি করি।
বুঝলাম
যাবেনতো?
আইচ্ছা, আমি যামু না তয় আর কেউরে পাঠাইয়া দিমু।

৮।
রতন সে রাতের মত আশ্বস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এলো। সর্দারের কথায় বুঝতে পারল না কাকে পাঠাবে। যাকেই পাঠাক রেশমির আস্তানা চিনতে পেরেছে। দেখা যাক, এখন সকালের অপেক্ষা। রেশমির স্বপনে মগ্ন হয়েই কোথা দিয়ে যেন সারা রাত চলে গেল কিছুই বুঝতে পারল না। কি মায়া ভরা চোখ! এই চোখ দিয়ে যাকে দেখবে সেই ধন্য হয়ে যাবে। বারবার বাম থুতনির নিচের তিলের কথাও মনে হচ্ছিল। মনে মনে সমস্ত চেহারা দেখে এসে ওই তিলেই চোখ আটকে যায়। ভোরে যখন মোরগের বাগ শুনে উঠে বাড়ির বাইরে এসে পথের দিকে চেয়ে আছে কে আসে, কখন আসে! পুব আকাশ লাল হয়ে গেছে একটু পরেই বেলা উঠবে। রতনকে বলে দিয়েছে বেলা ওঠার আগেই দাঁতের পোকা বের করতে হবে। পথ থেকে দৃষ্টি সরছে না। হঠাৎ চমকে উঠল কালকের ওই শারী পরে রেশমি হাতে একটা থলে নিয়ে দুই পাশের ধান ক্ষেতের মাঝের রাস্তা দিয়ে ভোরের আলো হয়ে এদিকেই এগিয়ে আসছে। কাছে এলে দেখল মাথার এলো চুল আলতো করে খোঁপা বাধা। গলায় মালাও নেই হাতেও চুরি নেই। এই নিরাভরণ দেহে সত্যিই ভোরের আলোর মতই মনে হচ্ছে। জাম গাছের নিচে রতনকে দেখে রেশমি চমকে দাঁড়াল!
বাবু, আপনার ভাতিজা কোথায় ওরে নিয়া আসেন, সময় বেশি নাই, বেলা উঠার আগেই সারতে হইব।

তুমি আসবে আমি ভাবতেও পারিনি
দেরি কইরেন না, তাড়াতাড়ি নিয়া আসেন
কাকে আনব? আমার কোন ভাইই নেই তো ভাতিজা আসবে কোথা থেকে?
তাইলে যে রাইতে কইয়া আসলেন!
বলেছি শুধু তোমাকে দেখার জন্য
বাবা যদি মায়েরে পাঠাইত তাইলে কি করতেন?
একটা কিছু বলে দিতাম আর সে ফিরে যেত
কামডা ভাল করেন নাই, বাবা শুনলে রাগ করবো। একটু ভেবে, তাইলে আমি যাইগা?
যাবার জন্যেতো তোমাকে আসতে বলিনি!
তাইলে কি করুম?
আস, এই খানে একটু বসি। ডর নাই বাড়ির মানুষ উঠতে দেরি আছে। এতক্ষণ তোমার সাথে গল্প করি।

রতন ওর হাত ধরে টেনে এগিয়ে গেল বাংলা ঘরের পাশে খড়ের গাদার আড়ালে যাতে সামনের রাস্তা থেকে ওদের দেখা না যায়।
বাবু, আপনে কামডা ভুল করতেছেন, দেহেন আমরা নিচা জাতের বাইদা আমাগো কেও মানুষ বইলা মনে করে না। আমাগো কোন ঠিক ঠিকানা নাই আমাগো সাথে এত মেলামেশা ভাল দেখায় না। আপনে আর এমন কাম কইরেন না, আমাগো নায়েও আর যাইবেন না।
তাহলে তোমার সাথে দেখা হবে কেমন করে?
কইলামতো আপনে এই পথে পাও বাড়াইয়েন না। মনে যা আইছে মুইছা ফালান
বললেই কি তা হয়?
কেন হইব না? আপনে জানেন এর ফল কি হইতে পারে? আপনের কিছু হইব না কিন্তু আমার মরণ ছাড়া কোন উপায় থাকবো না। আমার বাবারে কেও সর্দার বইলা মানব না, বাবার মান সম্মান থকব না
রেশমি, তুমি কি বল! দরকার হলে আমি তোমাকে নিয়ে দূরে অনেক দূরে কোথাও চলে যাব
তাই কি হয়? আপনের ঘর আছে ঠিকানা আছে সংসার আছে সমাজ আছে, আপনে শিক্ষিত মানুষ
আমার কি আছে কোন? না জানি লেখা পড়া না আছে ঘর, ঠিকানা, সমাজ কিছুই নাই। খড় কুটার মত গাঙ্গের জলে ভাইসা বেড়াই। তেলে জলে কি কোনদিন মিশ খায়?

ভয়ে রেশমির গলা শুকিয়ে এসেছে, মুখ শুকিয়ে গেছে, দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে, হাঁপাচ্ছে, বুক ওঠা নামা দেখে বোঝা যাচ্ছে। কথা বলার সময় ঠোট কাঁপছিল, বাবু আমি যাই
বলেই পিছনে ঘুরে দাঁড়াল
কি হলো কোথায় যাচ্ছ? বলে আঁচল টেনে ধরল
নায়ে যাই
টাকা নিয়ে যাবে না?
না
তাহলে সর্দারকে কি বলবে?
একটা কিছু কমুনে
না শোন তোমার সাথে আবার কখন কোথায় দেখা হবে?
বসন্তের টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়ার ছায়া উদয় হয়ে আবার সঙ্গে সঙ্গে সমাজ নামের পাহাড়ের আড়ালে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। এ পাহাড় ডিঙ্গানো তার পক্ষে সম্ভব নয়। এই বসন্ত তার মত বাইদার মেয়ের জন্যে নয়। যে পুরুষের দাতে সাপের মত বিষ আছে, যে পুরুষ কাল নাগের মত ফণা তুলতে পারে তেমন কাল কেউটেইতো সে চেয়েছিল। তার অপেক্ষায় সে দিন গুনে জসীমকে প্রত্যাখ্যান করেছে, কিন্তু! বাবু, আপনে আমারে বিপদে ফালাইয়েন না, আপনের পায়ে ধরি
বলে সত্যি সত্যি রেশমি নিচু হয়ে রতনের পা ধরে বলল
বাবু আপনে এই পাগলামি কইরেন না, আমারে রেহাই দেন
রতন রেশমির বাহু ধরে টেনে তুলে বলল
না রেশমি আমি পাগলামি করছি না, আমি তোমার আশায় থাকব
জীবনে এই প্রথম কোন পুরুষের ছোঁয়া কয়েক মুহূর্তের জন্য রেশমিকে অনেক দূরের ঝর্ণা ধারার তান শুনিয়ে দিল কিন্তু রেশমি হাত ছাড়িয়ে পিছনে ঘুরে দৌড়ের মত ছুটে পালাল
রতন ওর পথের দিকে চেয়ে রইল। আবার দেখা পাবার সুযোগ খুঁজছিল মনে মনে। নৌকার কাছাকাছি থাকলেই হবে। সকালে গাওয়ালে যাবার সময় কিংবা সন্ধ্যায় যখন ফিরে আসবে তখন পেতেই হবে।

৯।
প্রায় দৌড়েই নৌকায় ফিরে এলো। নৌকার সামনের গলুইতে বাবাকে দেখে বুকের ধড়ফড়ানি বেড়ে গেল। কি বলবে বাবাকে? এতক্ষণ কিছু ভাবেনি দৌড়ে পালিয়ে এসেছে। কাছে এসে বাবাকে দেখে আপনা আপনি গতি কমে গেল। একটা বুদ্ধি এসেছে মাথায়!
কি রে কি হইছিল?
না বাবা রুগীরে পাই নাই, কাইল বিকেলে মামা বাড়ি গেছেগা, ফিরা আইলে খবর দিব কইছে
ও, ঠিক আছে যা দেখ রান্ধনের যোগার দেখ তর মায়ের জ্বর আইছে
ডিম, ডাল ভাত রান্না করে সঙ্গীদের নিয়ে আবার বের হলো গাওয়ালে।
ওই, আইজ কুন দিকে যাবি?
চল আইজ ওই তাল গাছ দেহা যায় ওই দিকে যাই।
চল।

বাজারের শেষ প্রান্তে বড় তাল গাছের নিচে দিয়ে ডিসট্রিক্ট বোর্ডের বাঁধানো রাস্তা ধরে পশ্চিমে মালচির দিকে চলে গেল। রেশমি হাঁটছে আর সকালের ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ঘটনার স্রোতে ভাসছে আবার কখনও ডুবেও যাচ্ছে। জীবনের প্রথম বসন্তের স্পর্শ! ষোল বছরের রেশমির মনে ঘোর লেগে আসছে। তাদের বহরে এই বয়সেই ফুলি দুইজনের মা হয়েছে। মাস্টার বাবুর মুখ কিছুতেই দূরে সরিয়ে দিতে পারছে না। অন্যমনস্ক ভাবে কয়েকবার হোঁচট খেল দেখে প্রিয় বান্ধবী সুফি জিজ্ঞেস করল
কিরে আইজ তর কি হইছে মুখে কথা নাই আবার হাঁটতে হাঁটতে উস্টা খাইলি কয়বার। ওই ছেমরি গান ধর!
রেশমির মুখে কোন কথা নেই। স্বপ্নের ছায়া তরী মন যমুনায় ঘোরা ঘুরি করছে কিন্তু কিছুতেই কোন ঘাটে ভিড়াবার ঠাই খুঁজে পাচ্ছে না। এ কি সম্ভব? মাস্টার বলেছে দূরে কোথাও চলে যাবে! কোথায় যাবে? এতদিনে আশেপাশের পুরুষদের চাউনি দেখে রেশমি তার রূপের কথা বুঝতে পেরেছে কিন্তু এই রূপ যৌবনের মোহ কয়দিন থাকবে? মোহ ফুরিয়ে গেলে! তখন সে কোথায় দাঁড়াবে?
সেদিনের মত সন্ধ্যায় বাইদানীর দল ফিরে এসেছে। আসার পথে মাস্টারকে দেখল বাজারে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে। এক পলকের জন্য চোখাচোখি হলো।

১০।
পরের দিন বিকেলের আড্ডা বাদ দিয়ে নদীর পাড় থেকে বাজারের ও মাথা পর্যন্ত এদিক ওদিক ঘোরা ঘুরি করছিল আর রেশমি কোন পথে ফিরে আসে দেখছিল। তাদের গ্রামে যাবার পথে না যেয়ে উত্তরে গেলে কৌড়ি যেতে পারে, তাদের গ্রাম ছাড়িয়ে চালা, মানিক নগর, আবার ঝিটকা থেকে উত্তরে গেলে কান্দা লংকা, ধুসুরিয়া, গালা, পশ্চিমে মালচি, বাল্লা যেতে পারে। আজ কোন দিকে গেছে? রাজার চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে এক কাপ চা হাতে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে আর পথ পাহারা দিচ্ছে। বেলা ডোবার আগে তাল গাছের নিচে দিয়ে ঝাঁকা মাথায় ওদের আসতে দেখল। সামনে দিয়ে যাবার সময় থামিয়ে জিজ্ঞেস করতে চাইল সর্দারকে কি বলেছে কিন্তু ভারী দল দেখে নীরব রইল। শুধু এক পলকের জন্য একটু দৃষ্টি বিনিময় হলো।
আবার প্রতীক্ষা। কাল সকালে স্কুলে না গিয়ে ইউনিয়ন অফিসের সামনে ঝাউ গাছের নিচে দাঁড়িয়ে রইল। আজ যেদিকেই যাক পিছনে অনুসরণ করবে। বেলা নয়টা দশটার দিকে একে একে দলের সবাই নৌকা থেকে নেমে এসে উত্তর দিকে যাচ্ছে। একটু দূরত্ব রেখে রতন পিছু নিল। ওরা কান্দা লংকার পথে যাচ্ছে। রতন ঘুরে বাস স্ট্যান্ডের সামনে দিয়ে, গার্লস স্কুলের সামনে দিয়ে কান্দা লংকার পথে গরু হাটের বট গাছের নিচে দাঁড়াল। ওরা এখনও আসেনি। হ্যাঁ ওইতো দেখা যাচ্ছে। সামনেই রেশমি।

ও বাইদানী, কি আছে তোমাদের কাছে?
ওরা ওর সামনে এসে থামল। রেশমি বাবুকে দূর থেকেই দেখেছে। মনের ভিতর উথাল পাথাল শুরু হয়েছে কিন্তু সামনে এসে কাওকে কিছু বুঝতে না দিয়ে একটু হেসে জিজ্ঞেস করল
কি গো বাবু কি নিবা? বৌর লিগা নিয়া যাও, পুতির মালা আছে, কাজল আছে, কপালের টিপ আছে
বলে মাথার ঝাঁকাটা বট গাছের নিচে পথের পাশে নামিয়ে বাবুর সামনে মেলে ধরল। দলের ওরা সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বলল রেশমি তর ভাগ্য ভাল, আইতে না আইতেই কাস্টমার পাইলি। তুই বাবুরে সামলা আমরা যাই। ওরা এগিয়ে গেল।
আপনেরা না কইছি আমার পিছ ছাড়েন! এইহানে খারাইয়া রইছেন কেন?
কেন দাঁড়িয়ে আছি তুমি বুঝ না?
বুঝি দেইখাইতো না করি। এইটা সম্ভব না মাস্টার বাবু, আমরা নিচু জাতের আমাগো দিকে নজর দিতে নাই
বলেছিতো তোমাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাব কেও কিছুই জানবে না। আমাদের ঘর হবে, সংসার হবে তুমি বৌ হবে
কিন্তু
কিন্তু বলেই রেশমি থেমে গেল। মনের মাঝ দরিয়ায় উত্তাল ঢেউ উঠেছে সে ঢেউ কিছুতেই সামাল দিতে পারছে না। মুখে কোন কথা নেই। এমন সময় রাস্তা দিয়ে লোকজন বাজারের দিকে আসছে দেখে রেশমিকে বলল দাও দেখি আজ কি দিবে! যন্ত্রের মত রেশমি কিছু চুরি বের করে দিল আর রতন তার দাম দিয়ে বলল কাল আবার দেখা করব। রতন দেখল টুপ করে রেশমির চোখ দিয়ে এক ফোটা জল পড়ল।

১১।
সূর্য তার প্রতিদিনের উদয় অস্তের সাথে রতন রেশমির সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর করে প্রায় দুটি মাস কেমন করে কোথায় নিয়ে গেছে ওদের কেও বুঝতে পারেনি। কেও কাওকে একদিন না দেখে থাকতে পারে না। নানা রকম ফন্দি করে অন্তত একবার হলেও দেখা হতেই হবে। রেশমি তার এত দিনের সমস্ত ভয় দূরে ঠেলে দিয়ে নির্ভয় হতে পেরেছে। স্বপ্ন দেখতে পারছে। মাস্টার বাবুর উপর আস্থা রাখা যায়, সে ওকে ঠকাতে পারে না। মাস্টার বাবুর মত মানুষ শুধু রেশমি কেন কাওকেই ফাঁকি দিতে পারে না। বসন্তের টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়া এত দিনে হাতের কাছে এসে ধরা দিতে চাইছে।
এদিকে যেমন ধীরে ধীরে চাঁদটা পূর্ণতা পেয়েছে, পূর্ণিমার চকচকে জোসনার আলোতে দুইজনে স্নান করছে ওদিকে তেমনি বাজারের ঘাটের বেদের বহরের এক উঠতি বয়সের বেদেনীর সাথে রতনের মাখামাখির কথা ছড়িয়ে গেছে। রতনের বাড়ি, স্কুল এবং বেদের বহরও বাদ পড়েনি। জনাব আলির কানেও কথাটা গেছে। স্কুলের অন্যান্য মাস্টার, বাজার কমিটি জনাব আলিকে ডেকে ইউনিয়ন পরিষদের এক রুমে বসে সালিশ করেছে। জনাব আলিকে তিন দিনের মধ্যে এখান থেকে তার বহর নিয়ে চলে যেতে বলেছে।

অতি আদরের মেয়ে রেশমির সম্পর্কে এমন একটা সিদ্ধান্ত শুনে জনাব আলি হতভম্ব হয়ে গেছে, নির্বাক হয়ে গেছে। দলের কাছে মুখ দেখাবে কেমন করে? পরিষদ থেকে বের হয়ে এসেই নদীর পাড়ে বসে ছিল। দুপুরে খেতেও আসেনি। কি চেয়েছিল আর কি হলো তাই ভাবছে। কোন কুল কিনারা পাচ্ছে না। কারো সাথে পরামর্শ করার নেই কারণ সে যে এই দলের সর্দার সে কার সাথে আলাপ করবে? সে নিজে সবাইকে বুদ্ধি দেয় কিন্তু তাকে কে দিবে? সেদিনের মত শুয়ে পরল। যা হয় কাল সকালে দেখব। ঘুম আসেনা তবুও শুয়ে থাকতে হয়। এতদিন এই ঘাটে থাকাটাই মস্ত ভুল হয়ে গেছে। এর আগে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি বলে এদিকটা জনাব আলির মাথায় আসেনি তাই নিশ্চিন্তায় ছিল।
রেশমি এবং রতনও সালিশের রায় সাথে সাথেই জানতে পেরেছে। এখন কি হবে? পরদিন স্বাভাবিক ভাবে যখন রেশমি সঙ্গীদের সাথে গাওয়ালে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিল তখন বাবা বলে দিল আইজ থিকা এই ঘাটে যদ্দিন আছি তর আর গাওয়ালে যাওন লাগব না।
কেন বাবা?

জানস না কি করছস? এত বড় সর্বনাশ কইরাও তর হুশ হয় নাই?
বাবা, ওই মালচির কয়ডা বাড়িতে কিছু পাওনা আছে হেগুলি আইজ নিয়া আসি তারপরে আর যামু না
জানসনা আমরা বাইদার জাত, যে কোন সময় ঘাট ছাইড়া যাওন লাগে তুই বাকি থুইয়া আইছস কেন?
ভুল হইছে বাবা, আর থুমু না
যা, তয় ঝাঁকা নেওন লাগব না, পাওনা যা আছে দিলে দিব না দিলে আইসা পরবি
ঝাঁকা নিয়া গেলে কি হইবো, নিয়া যাই?
একটু ভেবে জনাব আলি সম্মতি জানাল, আইচ্ছা যা, তাড়াতাড়ি আইবি
আচ্ছা বলে ঝাঁকা নিয়ে রেশমি বেরিয়ে পড়ল।
ঘাটে নেমে একটু আড়ালে যেয়ে এদিক ওদিকে দেখল, রতন যে দোকানে চা খায় ওখানে দেখল কিন্তু সে কোথাও নেই। চায়ের দোকানের সামনে পাতা বেঞ্চে বসে পরল। এক কাপ চায়ের অর্ডার দিল। অনেকক্ষণ ধরে চা খেল কিন্তু এর মধ্যেও রতনের দেখা নেই। দোকানি একটু ইয়ার্কি করল,
কি বাইদানী আইজ যে বড় চা খাওনের ইচ্ছা হইছে?
শরীরডা ভাল না একটু জ্বর জ্বর লাগতেছে তাই

১২।
ওদিকে রতন ঘাটে আসার পথে দেখে বেদেনীরা আজ ওদের পথে সম্ভবত চালার দিকে যাচ্ছে কিন্তু দলের সাথে রেশমি নেই। মুখোমুখি হলে একটু দাঁড়াল।
কি গো নাগর কারে খুঁজ? আইজ তুমার রেশমি আসে নাই
সবাই একসাথে খিল খিল করে হেসে উঠল
কেন? আসে নাই কেন?
ওর বাবায় অরে আইতে দেয় নাই, আমরা কাইল এই ঘাট ছাইরা যামু তাই রেশমি আইজ পাওনা আদায়ের জন্যে মালচি গেছে
কথাটা শুনেই রতন এক মুহূর্ত দেরি না করে হন হন করে হেটে মালচির পথে পা বাড়াল। বাজারের উত্তর দিক দিয়ে এসে বাজারের পশ্চিম পাশের তাল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে রইল।

১৩।
অনেকক্ষণ বসে থেকে মাস্টার বাবুর দেখা না পেয়ে মনে মনে অনেক কিছু ভাবছে কিন্তু আর কতক্ষণ বসে থাকবে? এক সময় উঠে পড়ল। কোথায় যাবে? বাবাকে বলে এসেছে মালচি যেতে হবে। যাই একবার মালচি থেকে ঘুরে আসি। মনে করেই উঠে এগিয়ে চলল মালচির দিকে। বাজার ছাড়িয়ে দূর থেকে তাল গাছের নিচে রতনকে দেখে স্বস্তি পেল। কাছে এসে মাথার ঝাঁকাটা এক পাশে নামিয়ে লোকজনকে দেখাবার জন্য বোচকা খুলে জিনিসপত্র নারা চারা করে একটা হাতে নিচ্ছে আবার সেটা নামিয়ে আর একটা দেখাচ্ছে আর এর ফাঁকে ফাঁকে কথা বলছে।
মাস্টার বাবু সবতো হুনছ, এখন কি করবা? বাবা আইজ থিকা আমারে গাওয়ালে আসা বন্ধ কইরা দিছে আমি বুদ্ধি কইরা পাওনা আদায়ের কথা কইয়া বাইর হইছি। আমারে একশ টাকা দেও আগে, বাবারে দেওয়া লাগব
শোন, এটা সহজে কেও মেনে নিবে না তাই আমি তোমাকে আগেই বলেছি আমরা দূরে কোথাও চলে যাব
কেমনে যাইবা, কোথায় যাইবা? তুমি আমারে কিসের মধ্যে জড়াইলা মাস্টার বাবু, আমি এখন কি করুম? বাবার মুখের দিকে দেখতে আমার ডর করতেছে। ওদিকে বাবা সবাইরে কইয়া দিছে আমরা কাইল এই ঘাট ছাইড়া চইলা যামু
কোথায় যাবে জান?

না, কেউ জানে না, বাবাও জানে না
চিন্তার বিষয়, কি করা যায় বলতো, যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। চল আমরা আজ রাতেই পালাই!
রাইতে কেমনে পলাইবা? রাইতে তুমি বাইর হইতে পারবা কিন্তু আমি কেমনে নাও থিকা বাইর হমু?
তাহলে? বলেই রেশমির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল
একটু ভেবে রেশমি বলল
একটা বুদ্ধি পাইছি, পারবা তুমি আমারে উদ্ধার করতে? খুব কঠিন কাজ! পারবা?
কি করতে হবে বলই না!
পলাইতে হইব দিনে দুফুরে
দিনে? বল কি!

হ্যাঁ দিনের বেলা। আমি যখন গোসল করতে গাঙ্গে নামুম তখন তুমি একটা নাও নিয়ে চালা যাইয়া বইসা থাকবা আর আমি ডুব দিয়া অনেক খানি যাইয়া তারপরে সাঁতরাইয়া স্রোতের সাথে ভাটিতে চালা পর্যন্ত যাইয়া কিনারে উঠুম। পারবা আমারে উদ্ধার করতে?
বল কি? এত দূর সাঁতরে যাবে? পারবে? আর ডুব দিয়েই বা কতদূর যাবে?
শুনে রেশমি হো হো করে হেসে উঠল, কি যে কও মাস্টার বাবু! আমরা বাইদা না? ডুব দিয়া আমরা গাং পার হই, পানিতে আমাগো বসবাস আর এইটুক সাঁতরাইয়া যাইতে পারুম না? কি যে কও! তুমি আমারে উদ্ধার করতে পারবা নাকি তাই কও
আমার ভীষণ ভয় করছে রেশমি
কিসের ভয়?
তোমাকে এত দূর সাঁতরে যেতে কি করে বলি? কিছু হয়ে গেলে?
কইলামতো এইডা আমাগো জন্যে কিছুই না, আমি পারুম, তুমি পারবা নাকি তাই কও
ঠিক আছে তাহলে এই কথাই ফাইনাল! কি বল
হয়, কাইল দুফুরে, এখন আমারে একশ টাকা দিয়া তুমি বাড়ি যাও।

১৪।
পরদিন বাড়ি থেকে টাকা পয়সা যা কাছে আছে পকেটে নিয়ে সকাল সকাল নাস্তা খেয়ে রতন মালচির পথে রওয়ানা হলো। ওখান থেকে নৌকা ভাড়া করতে হবে। ঝিটকা থেকে কোন নৌকা নেয়া যাবে না, এখানকার মাঝিরা সবাই চেনা। মালচি এসে বাজার থেকে একটা শারী, পেটিকোট, ব্লাউজ, গামছা আর এক জোড়া স্যান্ডেল কিনে জিজ্ঞেস করে দূর এলাকার মাঝি দেখে হরিরামপুর যাবার জন্য একটা নৌকা ভাড়া করল। রেশমির কথামত ঝিটকা বাজার এবং বেদেদের বহর পার হওয়া পর্যন্ত ছৈয়ের ভিতরে বসে রইল। রেশমি কি ওর প্ল্যান মত ডুব দিতে পেরেছে? সাঁতরে অত দূরে যেতে পারবেতো? ভয়ে চিন্তায় রতন ঘামছে। ওদের পার হয়ে বেশ কিছুটা দূরে এসে নিরাপদ মনে করে ছৈয়ের বাইরে বসে নদীর দিকে চোখ রেখে এগুচ্ছে। চালার কাছে এসে দেখে সত্যিই এক মেয়ে ভাদ্র মাসের ভরা গাঙ্গের মাঝ গাং দিয়ে সাঁতরে সামনে যাচ্ছে। মাঝিকে ইশারা করে ওই মেয়ের কাছে যেতে বলল। মাঝি মেয়েটার কাছে যেতেই দেখল রেশমি। নৌকায় তুলে একটু শান্ত হলে গামছা এবং সদ্য কেনা কাপড়ের প্যাকেট এগিয়ে দিল।

উহ্! আমি যে কি দুশ্চিন্তায় ছিলাম, কি ভয়েই ছিলাম তুমি আসতে পারবে কি না!
এখন কোথায় যাইবা?
আগে হরিরামপুর তারপর ওখান থেকে সোজা ঢাকা।
দুইজনেই চুপচাপ। কারও মুখে কোন কথা নেই। ঘণ্টা খানিক পরে নৌকা হরিরামপুর ঘাটে এসে ভিড়ল। নৌকার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে দুইজনে বাস স্ট্যান্ডে এসে ঢাকা গামী বাসে উঠে পিছনের দিকে সুবিধাজনক সীট নিয়ে বসার অল্প পরেই ওদের নিয়ে বাস ছুটে চলল ঢাকার পথে।

[চলেন আমরাও অগো সাথে ঢাহা যাই, বিয়ার দাওয়াত খাওন লাগবোনা?]

আমাদের শাহানশাহ এর জন্মদিন


দিগন্তে মেলে ডানা কোথাও আজ হারিয়ে যেতে নেই মানা।


ভাইয়ার সাথে একটু আড্ডা হচ্ছে।

আজ ৩০/১০/২০১৮ আমার শাহানশাহ জনাব মোহাম্মদ রিজভান রিহান সাহেবের জন্মদিন। আমার সকল বন্ধুদের কাছে তার জন্য দোয়া ও শুভকামনা আশা করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে এবং আমাকেও।

বেগুনের পানি পানে মেদ উধাও


নিয়মিত বেগুনের পানি পানে বহুমাত্রিক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। এই পানিকে ‘মিরাক্যল ওয়াটার’ও বলা হয়ে থাকে। এই পানি শরীরের ওজন ও মেদ কমতে সহায়তা করে। পাশাপাশি শরীরে শক্তিও যোগাবে। কনস্টিপেশনের সমস্যা থাকলেও নিয়মিত বেগুনের পানি পানে কার্যকরী ফল পাওয়া যায়।

প্রস্তুত প্রণালী
একটা মাঝারি মাপের বেগুন ভালো করে ধুয়ে চাকা চাকা করে কেটে নিতে (খোসাসুদ্ধ) হবে। একটা কাঁচের জারে বেগুনের টুকরোগুলো পরপর সাজিয়ে রেখে এতে এক লিটার পানি ঢেলে দিতে হবে। একটা মাঝাপি মাপের পাতিলেবু নিংড়ে পুরোটা রস এরমধ্যে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার চামচ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে সারারাত এই পানি ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। পরের দিন সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও রাতের খাবারের আগে এক কাপ করে এই পানি পান করতে হবে।

ইত্তেফাক/সালেহ্

শিশির ভেজা বসন্ত

তোমাকে জানতে চেয়েছি
পৌষের হিমেল বাতাসে
চৈতী খর দহনে
বৈশাখী ঝড় জলে
আর শরতের সুনীল আকাশে।

তোমাকে দেখতে চেয়েছি
জ্যোৎস্না রাতে ধবল চাঁদের পাশে
কাজল মেঘের গহনে
অবাক বিস্ময় বিহ্বলে
পাপড়ি ছড়ানো পথের দেশে।

স্বপনের সুদূরে সোনালী নদী
ওপাড়ে বয়ে চলে ঝিলিমিলি শান্তি
মরু প্রান্তরে, কাটে অমানিশা!
পথ ভোলা পথিকের পথের দিশা
প্রতীক্ষার জ্বলন্ত অগ্নিগিরি নিয়ে বুকে
বসে আছি, দেখব শিশির স্নাত তোমাকে।

কুমড়োর বিচির এত গুণ!

সামান্য এই কুমড়োর বিচির আছে হাজারো গুণ।
বেলা ১১টা নাগাদ পেটে ছুঁচো নাচে? কিংবা বিকেল বেলায় কুড়মুড়ে মুচমুচে কিছু খেতে ইচ্ছে করে? আর সে ক্ষুধা—হোক না সেটা পেট কিংবা মনের, মেটাতে গেলা হয় গুচ্ছের শিঙাড়া-সমুচা না হয় ওরকমই কিছু একটা। কাল থেকে এ অভ্যাস বদলে ফেলা যাক, এখন থেকে নাশতায় সঙ্গী হোক কুমড়োর বিচি।

ভুল শোনেননি, আসলেই নাশতা হিসেবে কুমড়ার বিচি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে নিতে পারেন। ১০০ গ্রাম কুমড়ার বিচি থেকে ৫৬০ ক্যালরি পাওয়া যায়, তার মানে ক্ষুধা মেটানোর কাজটা ভালোই পারে এ বস্তু। আর সামান্য এই খাবারে পুষ্টিও গিজগিজ করছে। প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানের ‘পাওয়ার হাউস’ মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে আছে ভিটামিন বি, ম্যাগনেশিয়াম, প্রোটিন ও আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব খাদ্য উপাদান।

ভারতের ডি কে পাবলিশিং হাউসের একটি বই ‘হিলিং ফুডস’-এ বলা হয়েছে, কুমড়ার বিচি (বীজ) ভিটামিন বি, ম্যাগনেশিয়াম, লোহা ও প্রোটিনের ভালো একটি উৎস। বিচিগুলোতে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড উচ্চমাত্রায় রয়েছে। এই ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তে অস্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।

ওজন কমানো, চুলের বৃদ্ধিসহ কুমড়োর বিচির নানা গুণ জেনে নেওয়া যাক—

১. ‘হৃদ্‌যন্ত্র’ ভালো রাখতে
কুমড়োর বিচিতে আছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় চর্বি, ফাইবার এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সবই হৃদ্‌যন্ত্রের জন্য উপকারী। এতে আছে ফ্যাটি অ্যাসিড, যা খারাপ রক্তের কোলেস্টেরল কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়। ম্যাগনেশিয়ামের উপস্থিতি ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

২. ভালো ঘুম
কুমড়োর বিচিতে আছে সেরোটোনিন। স্নায়ু নিয়ন্ত্রক এই রাসায়নিক বস্তুকে প্রকৃতির ঘুমের বড়ি বলা হয়। ট্রাইপটোফ্যান নামের অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরে গিয়ে সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়, যা ঘুম নিশ্চিত করে। ঘুমানোর আগে মুঠভর্তি কুমড়োর বিচি এনে দেবে পুরো রাত্রির শান্তি।

৩. জ্বালাপোড়ার অনুভূতি কমায়
পেশির জ্বালাপোড়ার অনুভূতি কমানোর ক্ষমতা আছে কুমড়োর বিচির। এ ছাড়া বাতের ব্যথাও কমায় এটি। অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাতে এর তেলও ভালো কাজে দেয়।

৪. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
প্রচুর পরিমাণে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যাল শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া ভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় এটি।

৫. ভালো রাখে প্রোস্টেট
কুমড়োর বিচিতে আছে জিংক। যা পুরুষের উর্বরতা বাড়ায় ও প্রোস্টেটের সমস্যা প্রতিরোধ করে। এতে আছে ডিএইচইএ (ডাই-হাইড্রো এপি-অ্যান্ড্রোস্টেনেডিয়ন), যা প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।

৬. ডায়াবেটিসেও উপকারী
শরীরে নিয়মিত ইনসুলিন সরবরাহ করে এবং ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ চাপ কমায়। এ ছাড়া হজমে সাহায্য করে এমন প্রোটিনও সরবরাহ করে কুমড়োর বিচি, ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৭. ওজন কমাতে সাহায্য করে
ওজন কমাতেও সাহায্য করে কুমড়োর বিচি! ছোট্ট এই খাবারেই পেট পূর্ণ থাকে অনেকক্ষণ। আর আশজাতীয় খাবার বলে হজমেও সময় লাগে। ফলে ক্ষুধা পায় না, শুধু শুধু বাড়তি খাবার শরীরে ঢোকার সুযোগ পায় না।

৮. দীর্ঘ চুলের নিশ্চয়তা
এতে আছে কিউকুরবিটিন, এমন এক অ্যামিনো অ্যাসিড যা চুলের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ভিটামিন সিও আছে কুমড়োর বিচিতে, যা চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়।

কীভাবে খাবেন কুমড়োর বিচি
১. কাঁচা খেতে পারেন কিংবা একটু টেলে নিয়েও খাওয়া যায়।
২. কুমড়োর বিচি দিয়ে কেক, স্যুপ ও সালাদ বানিয়েও খেয়ে নিতে পারেন। তথ্যসূত্র: এনডিটি

কুমড়োর বিচির এত গুণ!
অনলাইন ডেস্ক
১০ আগস্ট ২০১৭, ১১:২০

নেই যেখানে ইতি

এখনও ইচ্ছে করে কোন পূর্ণিমা রাতে
রবি ঠাকুরের জোছনা ভেজা পথে
রজনীগন্ধা সুবাস নিয়ে
মানসীর স্বপ্ন রাঙ্গা হাতে হাত রেখে
চলে যাই অনেক দূরে-
যেখানে জল আসবে না চোখে
আর থাকবে না সুকান্তর ঝলসানো রুটি।

এখনও ইচ্ছে করে ঝর ঝর বাদল দিনে
সুকুমার ছন্দে পায়ে পায়ে হারিয়ে যাই
মেঠো পথ প্রান্তরে,
নয়ত যেখানে থরে থরে সাজানো
সরষে ফুলের পাশে হলুদ আচলে বিছানো মায়া ঘিরে
জসীম উদ্দিনের মটর সুটি।

এখনও ইচ্ছে করে শিমুল পলাশের ফাগ মেখে
জোনাকি প্রদীপ হাতে নিয়ে বসন্ত রাতে
জয়নুলের ছবি হয়ে
জীবনানন্দের ধানসিঁড়ি নদীর বুকে পাল তুলে
স্বপ্নের দেশে যাই ছুটি।

দুরন্ত ইচ্ছে গুলো রেখেছি বেধে।
চক্ষুহীন ঘুণে ধরা সমাজে নিষেধের বেড়া
ভেঙ্গে পারে না মেলতে ডানা দূর নীলিমায়,
শুধু গুমরে ফিরে অন্ধ নীল কারাগারে।

তাই ইচ্ছে করে শিকল ভেঙ্গে
হৃদয়হীন সমাজের অন্ধ শাসন ভেঙ্গে
নজরুলের বিদ্রোহী আগুন জ্বেলে
ছিনিয়ে আনি প্রিয়তমার
মেহেদী রাঙ্গা হাত দুটি।।

মানবদেহের যে বিষয়গুলো আপনার জানা জরুরি

মানবদেহ যে উপায়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বা পরিবর্তিত হয় তা খুবই রহস্যময় ব্যাপার। আপনার মস্তিষ্কের ৮০% পানিতে তৈরি। যা দিয়ে একটি ১০ ওয়াটের বাল্ব জালানো সম্ভব। আপনার পাকস্থলীর ভেতরের আবরণ প্রতি তিন থেকে চারদিন পরপর পরিবর্তিত হয়। এখানে মানবদেহ সম্পর্কে এমন কিছু বিষয়ের উল্লেখ করা হলো, যেগুলো আপনাকে বিস্মিত করবে:

১. আপনার ত্বক ঝরে পড়ে!
আপনি যদি ভেবে থাকেন যে, শুধু আপনার পোষা প্রাণিটিরই এই ত্বক ঝরে পড়ার সমস্যা রয়েছে তাহলে এটি জেনে আপনি বিস্মিত হবেন। মানবদেহের ত্বক থেকে প্রতি ঘন্টায় ৬ লাখ কণা ঝরে পড়ে! এই পদ্ধতিতে আপনার ত্বক নিজেকে প্রতিনিয়ত নতুন করে গড়ে তুলছে এবং মরা কোষগুলো ঝেড়ে ফেলছে।

২. ঘ্রাণ শক্তির ক্ষমতা
আমাদের ঘ্রাণশক্তি হয়তো কুকুরের মতো অতটা শক্তিশালি নাও হতে পারে। তথাপি আমাদের নাক ৫০ হাজার ধরনের সুগন্ধি স্মরণে রাখতে পারে।

৩. আপনার ত্বক কি পরিষ্কার?
আপনি কত অল্প সময় পরপর আপনার মুখ পরিষ্কার করেন তাতে কিছুই যায় আসে না। এতে ৩ কোটি ২০ লাখ আছে। তবে ভয় পাবেন না। এসব ব্যাক্টেরিয়ার বেশিরভাগই ক্ষতিকর নয়।

৪. আপনার হাড়গুলো পুনরায় গুনুন
আপনি যখন ছোট্ট শিশুটি ছিলেন তখন আপনার দেহে ৩৫০টি হাড় ছিল। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকগুলো হাড় একটি আরেকটির সঙ্গে মিশে গেছে। ফলে শেষমেষ মানবদেহে সবমিলিয়ে মাত্র ২০৬টি হাড় থাকে।

৫. পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি
আমাদের দেহ না খেয়েই কয়েক সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে না ঘুমালে আপনার প্রাণহানিও ঘটতে পারে। আপনি যদি টানা ১১দিন ধরে না ঘুমান তার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে।

৬. পাকস্থলীর ভেতরের আবরণ নিজে নিজেই বদলায়
প্রতি তিন থেকে চারদিন পরপর মানবদেহের পাকস্থলির ভেতরের আবরণ পরিবর্তিত হয়। আর পাকস্থলির দেয়ালের এই নতুন আবরণের সাহাজ্যেই আমরা এমনকি শক্তিশালি এসিডও হজম করতে পারি।

৭. পায়ের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ?
আমাদের পায়ে দুর্ঘন্ধ সৃষ্টি হয় অনবরত ঘামের কারণে। আমাদের পায়ে ৫০ হাজার ঘাম গ্রন্থি রয়েছে!

৮. হাঁচি দিন সাবধানে
আপনি কি জানেন যে, মানুষের হাঁচি থেকে বের হওয়া বাতাস ঘন্টায় ১০০ মাইল বেগে ধাবিত হয়। আর এ কারণেই হাঁচির সময় আমাদের চোখ দুটো বুজে আসে। আর নয়তো চোখগুলো বের হয়ে আসবে।

৯. আপনার দেহে উৎপাদিত লালা ৫৩টি বাথটাব পূর্ণ করবে
হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। একজীবনে একজন মানুষের দেহ থেকে ২০ হাজার লিটার লালা বের হয়। যা দিয়ে দুইটি সুইমিং পুল পূর্ণ করা যাবে।

১০. আপনার ছোট আঙ্গুলের শক্তি
আপনার হাতের সবচেয়ে ছোট আঙ্গুলটি আপনার হাতের শক্তির ৫০ শতাংশের যোগান দেয়!

১১. আপনার মস্তিষ্কের আকার
জন্মের সময় আমাদের মাথার আকার থাকে আমাদের দেহের চারভাগের একভাগ। কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হতে এর আকার আমাদের দেহের আট ভাগের একভাগে নেমে আসে।

১২. লোম বৃদ্ধি
দেহের আর যে কোনো অংশের লোমের চেয়ে আমাদের মুখমণ্ডলের অবাঞ্ছিত লোমগুলো অনেক দ্রুত গতিতে বাড়ে। দুর্ভাগ্যক্রমে, মুখমণ্ডলের অত্যধিক বৃদ্ধিতে আক্রান্ত নারীরা এই ধরনের লোম বৃদ্ধির কুফল ভোগ করেন বেশি।

১৩. মস্তিষ্কের ৮০ শতাংশই পানি
মস্তিষ্কের টিস্যুটি হলো একটি গোলাপি, নরম এবং জেলির মতো অঙ্গ। এর কারণ সম্ভবত এটাই যে মস্তিষ্ক মূলত উচ্চ পরিমাণ পানি ধারণ করে। সুতরাং সুস্থ দেহ ও সুস্থ মনের জন্য সবসময়ই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।

১৪. আপনার চোখের রঙ
জন্মের সময় আপনার চোখের রঙ ছিল নীল। এরপর পর্যায়ক্রমে চোখের মেলানিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার চোখের রঙও পরিবর্তিত হতে থাকে।

__________________________
কালের কণ্ঠ অনলাইন
১৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ১১:০৮, কালের কণ্ঠ।

বাংলার রূপ

মেঘনা যমুনা পদ্মার সঙ্গমে
দেখেছি বাংলার রূপ
নীল শাড়ী পরা গায়ের বধূ
জ্বালায় সুগন্ধি ধূপ
সাঁঝের বেলা দেখো মাটির ঘরে।

মেঘনা নদীর মোহনায় দুপুরে
রেখেছে ঘিরে বালুচরে মেঘের ছায়ায়
ঢেউ জাগে ঝিকিমিকি উত্তাল সাগরে।

এখানে পাখি ডাকে নদীর তীরে
দামাল ছেলে মাখে পথের ধুলা
সাম্পান মাঝী গান গেয়ে ভিড়ে
কভু যায় কি তাকে ভোলা।

নীলিমা সুদূর সীমানায়
সোনালী সূর্য উকি দেয়
রাঙ্গা মাটির ওই পাহাড়ে
দেখ ভাই নবীন সাথী ঘুম থেকে জেগে।

তারুণ্য ধরে রাখতে

তারুণ্য বা যৌবন ধরে রাখতে কে না চায়। নারী-পুরুষ সবাই নিজের সৌন্দর্য ও স্মার্টনেস ধরে রাখতে চেষ্টা করেন। বিশেষ করে নারীরা এ বিষয়ে বেশি আগ্রহী। চাইলেই কী হবে? বয়স বাড়ে আপন গতিতে। সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে নিজেকে তরুণ দেখানোর জন্য কত ধরনের চেষ্টা না মানুষ করে চলেছেন যুগ যুগ ধরে।
কেউ কেউ জিম সেন্টার বা স্লিম পয়েন্টে দৌড়াচ্ছেন। কেউবা আবার ডাক্তারের পিছু পিছু ছুটছেন। কেউ সফল হচ্ছেন। কেউ হরদম চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যারা মন থেকেই তারুণ্য ধরে রাখতে চান তাদের জন্য কিছু পরামর্শ : এ প্রসঙ্গে ডায়েটিশিয়ান সেলিনা বদরুদ্দিন বলেন, তারুণ্য ধরে রাখা সহজ নয়। তবে অসাধ্যও নয়। তারুণ্য ধরে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং খাবার তালিকায় নিচের খাবারগুলো যোগ করুন।

১. মাছ, ওমেগা-৩ ফ্যাট আর আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি করে মাছ খায় তারা দীর্ঘজীবন পান। এ ছাড়া তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কম থাকে।

২. জলপাই তেলে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনল যা বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। জলপাই তেল হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও কমায়। এ ছাড়া জলপাই তেলে থাকা ভিটামিন ‘এ’ ও ভিটামিন ‘ই’ ত্বকের কুঁচকে যাওয়া রোধ করে।

৩. দইয়ে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম হাড়ের ক্ষয়রোধ করে। এ ছাড়া দইয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া হজমের জন্য ভালো। ব্যাকটেরিয়া বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। দইয়ের গুণের কথা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ত্বকে দই মাখালে ব্রণের উপদ্রব থেকে রেহাই পাওয়া যায়। নিয়মিত দই মাখলে ত্বক কোমল থাকে, অকালে বুড়িয়ে যাওয়া ভাব, রোদে পোড়া ভাব ও শুষ্ক ভাব দূর হয়। এ ছাড়া দইয়ে আছে ল্যাকটিক অ্যাসিড যা ত্বকের মরা চামড়া দূর করে।

৪. কোকো দিয়ে তৈরি ডার্ক চকলেটে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। ডার্ক চকলেটে আছে ক্যাটেচিন, এটেচিন ও প্রোসাইনিডিনের মতো পলিফেনল। এ সব শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্ত প্রবাহ সচল রাখে।

৫. বাদামে আছে অসম্পৃক্ত চর্বি, প্রচুর ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এ ছাড়া, বাদামে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ওমেগা-৩ মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও বাড়াতে সাহায্য করে।

৬. বয়স ধরে রাখার একটি সেরা অস্ত্র হল টমেটো। টমেটোতে আছে লাইকোপেন যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। লাইকোপেন কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ও ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে। লাইকোপেন প্রাকৃতিক সানব্লক হিসেবে কাজ করে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে। ত্বকের শুষ্ক ও কুঁচকানো ভাব দূর করে ত্বককে রাখে সতেজ।

৭. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, বেশি পরিমাণ পানি পান তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নিজের প্রতি আস্তা রাখুন, সব সময় পজেটিভ ধারণা পোষণ করুন। জীবনের সব ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি মেনে চললে সুখ ও সৌন্দর্য আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
সূত্রঃ যুগান্তর

স্বাগতম হে সুদূরের পথিক

আমার এ চিঠি লিখে রেখে যাই
তোমাদের জন্য
অনন্ত শতাব্দীর প্রান্তে দাঁড়িয়ে, পথিক-
এ চিঠি পড়ে যদি পার আমায় করো ধন্য।
এ যুগের গান লিখে রেখে যাই
পাখির কূজনে উত্তর ফাল্গুনে,
জানি তুমি সেদিন জানবে না আমায়,
রাখবে না মনে।

হেমন্তে বসন্তে জানিনা সেদিন
বইবে কি দখিনা বাতাস
গাইবে কিনা কোকিল, পাপিয়া
ফুটবে কিনা কুমুদ কুড়ি
লতায় পাতায় মঞ্জরীবে কি
সে দিনের সেই অরণ্য,
গ্রীষ্ম বর্ষা শরতের শিশির ভেজা ঘাস
বকুলের গন্ধে
উথলিয়ে উঠবে কি কবির মন
যুগের বিবর্তনে সেদিন বইবে কি বৈশাখী ঝড়,
আষাঢ় গগনে মেঘের গর্জনে
হবে কিনা বিরহী উন্মন।

বড় সাধ জাগে পথিক-
তোমার দেখা যদি পেতাম সেদিন
কানে কানে শুধাইতাম কেমন আছ?
কেমন আছ আজ এই
নব শতাব্দীর প্রান্তে?
ঘুম থেকে জেগে উঠে
যান্ত্রিক কলরবে রোবটের কলতানে
বরণ করবে তুমি অনাগত সাল
আমার এ বারতা
রয়ে গেল তোমাদের জন্য।

পরাধীনতার ক্ষুধিত কারায়
বন্দী ছিল বিগত মানুষ
ফোটেনি আলো চোখে
দলিত হয়েছে কুসুমের গান
পাষাণে ভেঙ্গেছে শত প্রেম
তবুও করেছি বাসনা
রেখে যেতে কিছু সঞ্চয়
অন্তহীন আকাশ, কিছু বাতাস।

তরল অনলে ঝলসাবে না রমণীর মুখ
বুলেটে ছিন্ন হবে না কোন পুরুষের বুক।
নারী পুরুষে পাশাপাশি সেদিন
বাধবে সুখের বাসর
ধরণীতে এসেছিল যারা
সাজাতে সোনালী আসর।
একই ধরনে বরণে গড়া
একই হাসি কান্না
আনন্দ বেদনা মোহ মায়া
উভয়েই যেন উভয়েরই ছায়া
কেহ নয় নারী কেহ পুরুষ
সকলেই হবে মানুষ
বিধাতার বাসনা সে দিন হবে পূর্ণ।

গ্রহান্তরে করবে তুমি মধুচন্দ্রিমা
পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশে
কল্পনা যেখানে মিশেছে আধার
আলপনা আঁকা ওই সুদূরে
আমরা যেখানে দেখেছি অসীম শূন্য।

ক্ষেপণাস্ত্র, মিগ টুয়েন্টি নাইন,
হাইড্রোজেন, মিশাইল, টর্পেডো, মাইন-
চির বিদায় নিবে পৃথিবী থেকে
সাথে ক্ষমতা হিংসা লোভ।
এই পৃথিবী চেয়ে আছে
সেই অনাগত শতকের পানে
ওহে! সুদূরের পথিক,
জানি না কোন দিন পূরণ হবে কি না
আমার এ গহীন স্বপন।