মোঃ খালিদ উমর এর সকল পোস্ট

মোঃ খালিদ উমর সম্পর্কে

কুয়াশা ঢাকা মানুষের মন বুঝতে চেষ্টা করি কিন্তু পারিনা!

সন্তানদের যেসব তথ্য অবশ্যই জানতে হবে

সন্তান জন্মের পরই শুরু হয় বাবা-মায়ের নতুন অধ্যায়। শুরু হয় সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা। আর এ চেষ্টা তো সহজ কাজ নয়। এতে অনেক কাঠখর পোহাতে হয়, দিতে হয় ধৈর্যের পরীক্ষাও।কিন্তু
তারপরও বাবা-মায়ের চেষ্টা থেমে থাকে না।
প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদে কখন যে সময় পার হয়ে যায়, সেটা বোঝা বড় দায়। আর আপনাদের এই বলিদানের উপরই স্থাপিত হবে আপনার সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষৎ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সন্তান লালনে বাবা-মাকে অবশ্যই কিছু বিষয় জানতে হবে। এ দূর পথ পাড়ি দিতে তারা যেন কোনও অসুবিধার সম্মুখিন না হন। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কিছু পরামর্শ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
সব সময় চোখ খোলা রাখুন : সন্তান যখন ছোট থাকে, তখন কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল তা বোঝার মতো ক্ষমতা তাদের থাকে না। তাই বাবা-মায়েদের সব সময় চোখ খোলা রাখতে হবে, যাতে তাদের সন্তান কোনও অসুবিধায় জড়িয়ে না পরে। মনে রাখবেন, আপনার সন্তান খুব চুপচাপ হয়ে গেলেই জানবেন সে কিছু বলতে চায়। তখন তাকে সময় দেয়াটা জরুরি।
স্বাধীনচেতা করুন : ছোট থেকেই সন্তানদের স্বাধীনভাবে চিন্তায় অনুপ্রাণিত করুন। এমনটা করলে তাদের মনোবল বৃদ্ধি পাবে, সেই সঙ্গে জীবন সম্পর্কে অনেক ভুল ধরণাই তাদের মনে বাসা বাঁধতে পারবে না।
সন্তানের শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ : আপনার সন্তান কিন্তু অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়। তাই শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটা খুব প্রয়োজন। এমনটা করলে সন্তান সম্পর্কে এমন অনেক কিছু জানতে পারবেন যা সে বাড়িতে একেবারেই বলে না। মনে রাখবেন, বাবা-মায়েদের সঙ্গে যদি শিক্ষক হাত মিলিয়ে একসঙ্গে শিশুর পাশে থাকে তাহলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়।
সামাজিক হতে হবে : সন্তানকে সবার সঙ্গে মিশতে দিন। এমনটা ভাববেন না যে স্কুলে তো অনেকটা সময়ই সে বন্ধুদের সঙ্গে কাটায়, তাহলে আলাদা করে আবার এসবের কী প্রয়োজন আছে! এটা একেবারেই ভুল ধরণা। কারণ বাচ্চার সার্বিক বিকাশের জন্য সামাজিক হওয়াটা একান্ত কাম্য।

সূত্রঃ যুগান্তর, প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ১০:৫৭:৫৫ | অাপডেট: ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ১০:৫৯:১৩

আম বাগানের ভূত

ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জের পথে ধামরাই ছাড়িয়ে একটা বাস স্টপেজ আছে নাম সুতি পাড়া। এই সুতি পাড়া দিয়ে প্রায় মাইল তিনেক দক্ষিণে এগিয়ে গেলে নান্নার ছাড়িয়ে হাতের বাম দিকে কাছেই রৌহা গ্রাম আর ওই রাস্তা ধরে আরও কিছুটা এগিয়ে গেলে সুয়াপুর বাজার। নান্নার এলাকায় আগের দিনের জমিদারদের বসবাস ছিল। তাদের কেউ এখন নেই। দেশ ভাগের পর প্রায় সবাই ভারতে চলে গেছে। তাদের দালান কোঠা বিনা যত্নে জীর্ণ শীর্ণ হয়ে ভেঙ্গে পরি পরি অবস্থায় এখনও দাঁড়িয়ে আছে। এক সময় কি ছিলনা ওখানে? বৈঠক খানা ছিল, রংমহল ছিল তাতে ঝাঁর বাতি ছিল, নাচ গান জলসা হতো। পাশেই মন্দির ছিল, কালি ঘর ছিল। বার মাসে তের পাবন, পূজা, মেলা ইত্যাদি নানা ধরনের উৎসব লেগেই ছিল। নানা নানীর কাছে গল্প শুনেছি। সে এক মহা আনন্দের দিন ছিল তখন। হিন্দু মুসলমান মিলে নানা আনন্দ উৎসব উল্লাসে তাদের দিন মাস বছর কেটে যেত। তারা চলে গেছে বলে তাদের দেখিনি তবে তাদের রেখে যাওয়া দালান কোঠার অবশিষ্ট আমিও দেখেছি।

আমরা সেবারে মানিকগঞ্জের পশ্চিমে আমাদের গ্রাম ঝিটকা থেকে গরু গাড়ি করে সবাই আম কাঁঠাল খাবার জন্য মামা বাড়ি বেড়াতে গেছি। পথে মার সে কি আনন্দ! কতদিন পর বাবার বাড়ি যাচ্ছে। সারাটা পথে মা আমাদের ভাই বোনদের একটুও বকা বকি করেনি, এ মা যেন ভিন্ন মা! মানিকগঞ্জে এসে বাবা দোকান থেকে পরটা হালুয়া কিনে আনলেন গাড়োয়ান কোন এক কুয়ো থেকে এক কলস ভরে পানি ভরে আনল তাই দিয়ে দুপুরের খাবার হলো। বাড়ি থেকে দাদিও কিছু খাবার দিয়ে দিয়েছিল। সারা পথে সেগুলি খেয়েছি। সন্ধ্যার একটু আগে পৌঁছেছি। সে রাতে অন্ধকার হয়ে এলো তাই আর কিছু দেখার ছিল না। নানা বাড়ি পৌঁছে সারাদিনে পথের কাপর চোপর বদলানো, মুখ হাত ধোয়া, খাওয়া দাওয়া করতে করতেই মনে হলো রাত দুপুর হয়ে গেছে। মামা খালা, মামাত ভাই বোনদের সাথে এটা সেটা গল্প করে সারা দিনের ক্লান্তি নিয়ে মায়ের পাশে শোবার সাথে সাথেই ঘুম। এর আগেও মামা বাড়ি এসেছি কিন্তু তখন মনে হয় ছোট ছিলাম বলে সেসব দিনের কথা বিশেষ কিছু মনে পড়ছে না। এবারের কথাই মনে আছে।

মামা বাড়ির পশ্চিমে দুই এক বিঘা জমির পরেই খেলার মাঠ, পুবে আর এক বাড়ি, দক্ষিণে বিশাল চক, চকের ওপাশে ডিসট্রিক্ট বোর্ডের রাস্তা আর রাস্তার সাথেই নান্নার জমিদার বাড়ি দেখা যায়। উত্তরে এক ভিটা বাড়ি, আগে হিন্দুদের বসতি ছিল। তারা এ সব বিক্রি করে ওপাড়ে চলে গেছে। ওদের আবার বাড়িতেই একটা মন্দির ঘর ছিল তাতে নানান দেব দেবীর মূর্তি ছিল এবং বছর বছর নতুন মূর্তি গড়ার সময় পুরনো গুলি পিছনের ডোবায় ফেলে দিত। নানা নিজের বাড়ি সংলগ্ন বলে সম্ভবত ভবিষ্যতের কথা ভেবে ওই বাড়ি কিনে নিয়েছিলেন। পরে ঘর দরজা অন্যত্র সরিয়ে ওই বাড়িতে যে সব ভাল ভাল গাছ গাছালি ছিল সে গুলিই শুধু রেখে দিয়েছিলেন। খুব ভাল জাতের সাত আটটা আম গাছ ছিল। এক এক গাছের ভিন্ন ভিন্ন নাম ছিল, চাপিলা, ঝুনকি, লম্বা, দক্ষিণের গাছ এমনি কিছু। নানী আবার ওই ভিটা বাড়িকে আমবাগান বলে ডাকত।

আমরা যখন গেলাম তখন ছিল ঝড়ের সময়। কাল বৈশাখীর শেষের দিক। পরদিন বিকেলের একটু আগে হঠাৎ করে ঈশান কোণে কাল মেঘ করে ঝড় উঠে এলো। ঝড় বয়ে গেল প্রচণ্ড বেগে। থেমে থেমে বেশ

অনেকক্ষণ ধরে, সাথে বৃষ্টি। মেঘলা ঝড়ো আকাশে একটু তারা তাড়ি সন্ধ্যা নেমে এলো। ঘরে ঘরে হারিকেন বা কুপি বাতি জ্বালিয়ে দেয়া হলো। এর একটু পর পরই ঝর বৃষ্টি থামলে সম বয়সী ছোট মামা রাজীব, মামাত ভাই সাহেদ আর মামাত বোন শেফালি বলল চল আম কুড়িয়ে আনি। দেখলাম ওরা ছোট ছোট ঝুরির মত নিয়ে যাবার জন্য রেডি। জিজ্ঞেস করলাম কোথায়? শেফালি হাতে ইশারা করে দেখিয়ে বলল ওই আম বাগানে, চলনা ভাইয়া! ‘চল’ বলে আমিও ওদের পিছনে পিছনে গেলাম। বেশ আম কুড়চ্ছি। মাকে দেখলাম একটু পরে বাড়ির পাশে এসে আমাদের দেখে গেল। শেফালিকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিল
কি রে শেফালি আম আছে?
হ্যাঁ ফুফু অনেক আম পড়েছে,
কুড়িয়ে নিয়ে আয়।
ফুফু তুমিও আস
না আমি যাব না, তুই দেখিস তোর ভাই যেন ওদিকে যায় না
আম কুড়াতে কুড়াতে ছোট মামা আর সাহেদ পুবের ওই বাড়ির ছেলে মেয়েদের সাথে ওদিকে চলে গেল শেফালি আর আমি এই ভিটায় রয়ে গেছি। আমরা জানি না যে ওরা ওদিকে চলে গেছে। আমরাও আস্তে আস্তে ভিটার উত্তর দিকে চলে এসেছি যেখানে পুরানা মূর্তি ফেলা হতো। মূর্তির ব্যাপারটা আমাদের কেউ জানতাম না। বেশ অন্ধকার, একটু ভয় ভয় করছে। আমি কিছু দেখছিনা বলে কিছুই কুড়াতে পারছি না।

শেফালি চল বাড়ি যাই, ভীষণ অন্ধকার আমার ভয় করছে।
দূর ভাইয়া তুই কি বোকা, ওইতো বাড়ি এখানে ভয় কি?
শেফালির কথা শেষ না হতেই লক্ষ করলাম আম গাছ থেকে সাদা দব দবে পোশাক পড়া কে যেন নেমে শেফালির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে লম্বা লম্বা পা ফেলে। শেফালিকে ডাকলাম কিন্তু লক্ষ করলাম শেফালি কিছু শুনছে না, ওকে আমের নেশায় পেয়ে বসেছে। এর মধ্যেই দেখলাম পাশের গাছ থেকে আরও একজন নেমে এলো। শেফালিকে ডাকছি কিন্তু ও শুনছে না। একটু পরেই বুঝলাম ভয়ে আমার গলা দিয়েই কোন শব্দ বের হচ্ছে না। হঠাৎ আমার পায়ের সাথে কিসের এক ডালে লেগে যেন একটু শব্দ হলো তাতেই শেফালি এবার পিছনে তাকিয়ে দেখে দুই ভূত শূন্যে ভর করে ওর দিকে যাচ্ছে। থমকে থমকে এক অচেনা ভঙ্গিতে হাঁটছে। সম্ভবত ওদের দেখেই শেফালি এক চিৎকার দিয়ে আমার দিকে দৌড় দিল। আমি দেখছি ও সমানে হাত পা ছুড়ছে কিন্তু কিছুতেই এগুতে পারছে না ওর মুখ দিয়ে কেমন যেন গোঙ্গানির মত শব্দ হচ্ছে শুধু। একটু পরেই লক্ষ করলাম আমিও আর হাটতে পারছি না। সামনের ডান দিক থেকে কাল কুচকুচে চেহারার মাথা ছাড়া কি যেন আমার দিকে ফাঁত ফাঁত শব্দ করে ঝোপ ঝাঁর ভেঙ্গে এগিয়ে আসছে। মাথা নেই শুধু বুকের উপর একটা চোখ। কি করি এখন, কিছু ভাবার মত সুযোগ নেই। চিৎকার দেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। মা বলে এক চিৎকার দিলাম। ব্যাস এই পর্যন্তই মনে আছে।

হঠাৎ চোখে মুখে পানির ঝাপটা পেয়ে চেতনা ফিরে এলে দেখলাম নানুর বড় ঘড়ের বারান্দায় পাতা পাটিতে আমি মায়ের প্রায় কোলে কোন ভাবে পরে আছি আমার পাশে শেফালি তার মায়ের পাশে বসে আছে।

পরে সবার কাছে যা শুনেছি:
আম কুড়িয়ে ছোট মামা আর সাহেদ বাড়িতে ফিরে আসার সময় শেফালির আর আমার চিৎকার শুনে আম বাগানে যেয়ে দেখে আমি আর শেফালি দুই জনেই ওখানে যে ডোবা তার ধারে পরে রয়েছি, শেফালির পা ডোবায় জমা বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে সমস্ত শরীর কাদায় মাখান এবং শরীরে ভীষণ দুর্গন্ধ। তখন সাহেদ চিৎকার করে তার দাদি এবং আমার নানীকে ডাকলে বাড়ি থেকে লাঠি আর হারিকেন নিয়ে যেয়ে আমাদের উদ্ধার করে আনে।
নানী খুব রাগ করল আমাদের এই আম কুড়ানোর অভিযাত্রার জন্য।
কেন কাল সকালে আম আনা যেত না? এই রাতে কেন গেল? আমার মাকেও খুব বকাবকি করল তুই দেখলি ওরা ওখানে রয়েছে তা ওদের ফিরিয়ে আনলি না কেন বা তুই ওখানে থাকলি না কেন?
মা যতই বলছে আমি কি জানি এমন হবে?

নানু ততই বলছে জানতে হবে কেন, ওই ভিটার কথা তোর মনে নেই? আমি যে এখানে বসে পান খাবার সময় কত কি দেখতাম সেগুলির কথা এত তারা তাড়ি ভুলে গেলি কেমনে? কত নাচ, কত কি দেখেছি! সবতো বলেছি তোদের। তখন জানলাম আমি যেটা দেখেছি মাথা ছাড়া তার নাম ওখানকার স্থানীয় ভাষায় নিস্কাইন্ধ্যা। মানে যার কাঁধ নেই মাথা নেই বুকের উপরের দিকে একটাই চোখ এমন এক দেহ।

আপনার শিশুটি কি অতি চঞ্চল?

চঞ্চলতা শিশুর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু কেউ কেউ দুষ্টুমি আর চঞ্চলতায় অতিষ্ঠ। স্কুল, প্রতিবেশীর কাছ থেকে নিত্য অভিযোগ আসে। লজ্জায় মুখ দেখানোর জো নেই মা-বাবার। তার মানে কি শিশুটি অসুস্থ?
শিশুর অতি চঞ্চলতা আর অমনোযোগিতা তার দৈনন্দিন কাজকে যখন বাধাগ্রস্ত করে, লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটায়, তখন এই প্রবণতাকে বলা হয় এটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (এডিএইচডি)। এটি শিশুর একধরনের আচরণজনিত সমস্যা।
বাবা-মা বা স্কুলের শিক্ষক সবার আগে এ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারেন। যেমন কোনো কিছুর প্রতি বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা, সারাক্ষণ ছোটাছুটি করা, চিন্তাভাবনা না করে হঠাৎ কিছু করে ফেলা, স্থির বসে থাকতে না পারা, বই-কলম প্রায়ই হারিয়ে ফেলা, লাফিয়ে উঁচুতে উঠে যাওয়া, প্রশ্ন শোনার আগেই জবাব দেওয়া, পড়ালেখা এমনকি খেলাধুলাতেও মনঃসংযোগ রাখতে না পারা। বড়দের কাজ বা কথার মাঝে ক্রমাগত বাধা দিতে থাকে। একসঙ্গে অনেক কিছু করার চেষ্টা করে, কিন্তু কোনোটাই শেষ করে না।
তবে শিশুর সাধারণ চঞ্চলতাকে যেন ‘এডিএইচডি’ মনে করা না হয়। শিশুমাত্রই কিছুটা দুষ্টুমি করবে, বড়দের মতো মনঃসংযোগ ও ধৈর্য শিশুদের মধ্যে আশা করা ঠিক নয়। কিন্তু অতি চঞ্চলতার এই লক্ষণগুলো যদি একটি সাত বছরের কম বয়সী শিশুর মধ্যে কমপক্ষে ছয় মাস ধরে দেখা যায় এবং এ কারণে তার পড়ালেখা বাধাগ্রস্ত হতে থাকে, তখনই সেটাকে এডিএইচডি বলা হয়।
কোনো আত্মীয় বা প্রতিবেশীর কথায় নিজের শিশুকে অযথা রোগী ভাববেন না। যদি শিশুর মধ্যে এসব লক্ষণ থাকে তবে একজন মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিন। এ ধরনের শিশুর বাবা-মায়েদের কিছু নির্দেশনা মেনে চলা উচিত:
* শিশুর জন্য একটা রুটিন তৈরি করুন। বাড়ির সবাই নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলুন। যেমন ঠিক সময়ে ঘুমানো, খাবার সময় হলে টেবিলে বসা, খেলার সময় খেলা ইত্যাদি।
* শিশুকে কোনো নির্দেশ দিলে তা বুঝিয়ে বলবেন। রূঢ় আচরণ করবেন না। বকাবকি, মারধর সমস্যার সমাধান নয়।
* শিশুর ভালো কাজকে প্রশংসা করুন, কখনো পুরস্কার দিন।
* শিশুর খাদ্যতালিকায় কৃত্রিম রং আর মিষ্টির পরিমাণ কমিয়ে তাজা ফলমূল যুক্ত করুন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা

ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ | আপডেট: ০২:৩৬, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬ |

পরিহাস

ভারত ছেড়ে ইংরেজদের চলে যাবার পর ঢাকিজোড়ার হান্নান সাহেব মোকিমপুরের এক মামার বন্ধু সিংগাইরের গনি মুন্সির বাইন্ডিং কারখানায় পেটে ভাতে কাজ শেখার জন্য একটা চাকরি পেয়েছিলেন। বছর দুয়েকের মধ্যে বেশ একজন ভাল বাইন্ডার হবার পর শুধু ভাবেন এন্ট্রান্স পাশ দিয়ে সারাজীবন এই বাইন্ডিং কারখানায় পরে থাকতে হবে? পাশের গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার সাথে আলাপ করে জানতে পারল মন্ত্রি সাহেবের কাছে জানাতে পারলেই সরকারি চাকরি নিশ্চিত। যেমনি ভাবা অমনি কাজ। পরের সপ্তাহেই ঢাকায় নিজের পাশের সোনাকান্ত গ্রামের খাদ্য মন্ত্রির বাসায় গিয়ে আর্জি জানাতেই তার সুপারিশে সরকারি অফিসে কেরানিগিরির একটা চাকরি পেলেন।

সরকারি চাকরি হয়েছে। ৯টা ৫টা অফিস করতে হবে। কে ভাত রেধে দিবে, কে ঘর দরজা গুছিয়ে রাখবে ভেবে অস্থির। বিয়ে করে সংসারি হলেই সব ঝামেলা মিটে যায়। কিন্তু……………। গ্রাম সম্পর্কের এক চাচা ইয়ার আলির ঘটকালিতে সাটুরিয়া গ্রামের আরমান বেপারি নামে এক ব্যবসায়ীর মেয়েকে বিয়ে করে হান্নান সাহেব যেন ধন্য হয়ে গেলেন। হবেন নাইবা কেন? সারা জীবন বিধবা মায়ের অনেক কষ্টের চেষ্টায় স্কুলের গন্ডী পেরুনো হান্নান সাহেব এর চেয়ে বেশি আর কিইবা আশা করতে পারেন?
শ্যালক শালিকারা চাকুরে দুলাভাই পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। দুলাভাইও শ্যালক শালিকা বলতে অজ্ঞান। তাদের নিয়েই মেতে থাকেন, তাদের সমস্ত শখ আহ্লাদ সাধ্যমত মিটিয়ে দেন।

দিন যায় বছর যায় হান্নান সাহেবের ছেলে মেয়েরা বড় হয়। ছেলে ভাল রোজগার করে। ওদিকে দুলাভাইয়ের প্রশ্রয়ে শ্যালক হাবিবুল্লাহ বেশ খরচের হাত পাকিয়ে বসেছে। বাবার আয়ের চেয়ে তার খরচের হাত অনেক বড়। দুলাভাই শশুরের সাথে সাথে শ্যালকর হাত খরচের জোগান দেয়। গ্রামের স্কুলে ভাল পড়াশুনার সুযোগ নেই তাই মানিকগঞ্জে হোস্টেলে থেকে মানিকগঞ্জের স্কুলে পড়াশুনা করে। বাবাকে চিঠি লেখে ব্লটিং পেপার কিনতে ২০০ টাকা লাগবে আর মুর্খ বাবা তাই পাঠিয়ে দেয়। এভাবেই হাবিবুল্লাহ আয়ের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যয় করা আয়ত্ব করে নেয়। তবে মাথা ভাল থাকায় স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে ভাল চাকরিও জুটিয়ে নেয়। কিন্তু হলে কি হবে? স্বভাব যার …………………তার কি আর সীমিত বেতনের টাকায় চলে? তার যে প্রয়োজনের তালিকা বিশাল, সীমাহীন পাহার ছোয়া। কয়েক বছর পর অফিসের বড় কর্তা হবার সুযোগে অনেক টাকা কেমন করে যেন উধাও হয়ে যায়। তবে মনে হয় হাবিবুল্লাহ সাহেব কিছু জানেন না কিন্তু অফিস কি আর তা মেনে নেয়? মেনে নেয়নি। হাবিবুল্লাহ সাহেবকে ছাটাই করে দিলেন।

এখন হাবিবুল্লাহ সাহেব তার শ্বেত হাতির খরচ কোথায় পাবে? এসে উঠলেন দুলাভাই এবং বোনের কাধে। দুলাভাইকে তেল মাখিয়ে রাজী করালেন ভাগ্নে যখন বিদেশ থেকে টাকার পাহার না হোক অন্তত টাকার টিলাতো নিয়ে আসছে, আমাকে সেই টাকাগুলি দিলে একটা বানিজ্য করে ওই টাকা ফিরিয়ে দিব। বোনের ছেলে তখন মাত্র রোজগার শুরু করেছে। ভাগ্যক্রমেই হোক আর বাবার সারা জীবনের সততার গুণেই হোক ছেলে বেশ অনেক রোজগার করে এনে মায়ের হাতে তুলে দিল। ভাগ্নে আসার সাথে সাথেই তার মামা দুলাভাই আর বোনকে মনে করিয়ে দিল যে ভাগ্নে টাকা নিয়ে এসেছে এখন টাকাগুলি আমাকে দিয়ে দাও। মা বাবা ছেলের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে বর্তমানে শ্যালক এর হাতে তুলে দিলেন।
মামা ব্যবসা করে টাকা ফিরিয়ে দিবে, তবুও মনে একটা সংশয় থেকেই যায়। মামার যে স্বভাব তাতে কি এই টাকা কোনদিন ফিরিয়ে দিতে পারবে! মা বাবা ভেবেই নিয়েছিল ছেলে এমনি করেই সারা জীবন টাকার বস্তা এনে দিবে আর তারা সেই টাকা ভাইকে তুলে দিবে। কিন্তু ভাবলেই কি আর তাই হয়? হয়নি।

কয়েকবার এমনি করে টাকা দেয়ার পর ভাগ্নে বিদেশের ওই চাকরি বদলে দেশে একটা চাকরি পেল কিন্তু এখানে আগের মত টাকার বস্তা হয় না।
এভাবে অনেকদিন চলে গেল কিন্তু মামার ব্যবসাও আর হয়না ভাগ্নের টাকাও আর ফিরিয়ে দেয়া হয় না। ওদিকে আবার অফিসের তহবিল গরমিলের অপরাধে অফিসের দায়ের করা মামলা পরিচালনার খরচতো আছেই। কিন্তু মামলা চালিয়েও কোন লাভ হলো না, আদালতের রায়ে জেল হয়েই গেল। ব্যবসার নামে ভাগ্নের কাছ থেকে আনা টাকা দিয়ে মামলা চালানোর জন্য উকিলের ফি, ঢাকা ক্লাবের মদের বিল, তার নিজের ছেলেমেয়েদের স্কুল কলেজের খরচ মিটিয়েই একদিন ইহুজগত ছেড়ে বিদায় নিয়ে চলে গেল ওপারে। যাবার আগে ভাগ্নের কাছ থেকে আনা টাকার কথা কাউকে জানাবার প্রয়োজন মনে করেনি ফলে যা হবার তাই হলো ওই টাকার কথা স্ত্রী কিছুটা জানলেও সন্তানেরা কিছুই জানতে পারল না। মৃত্যুর পর স্ত্রী রহিমা বেগম জেনেশুনে একেবারে অস্বীকার করে ভাগ্নেকে তাড়িয়ে দিলেন। আর ছেলেমেয়েরা নিশ্চিন্তায় বাবার আনা পরের টাকায় পড়াশুনা করে ভাল স্বচ্ছল হয়ে গেল। সবার ব্যাংকেই কোটি কোটি টাকা জমা হচ্ছে কিন্তু ভাগ্নের ছেলেমেয়েরা টাকার অভাবে পড়াশুনায় তেমন আগাতে পারলনা।

এভাবে বেশ কিছুদিন যাবার পর বোন আর দুলাভাইও ওপারে চলে গেলেন। মামার অন্য ভাইয়েরা এই টাকা দেয়ার কথা জানলেও তার সন্তানেরা তার কথায় কান দিতে রাজী ন্য। ভাগ্নে যখন নিরুপায় হয়ে মামার সন্তানদেরকে জানাল তোমাদের বাবার রেখে যাওয়া ঋণ পরিশোধ করা তোমাদের জন্য অতিব জরুরী কারণ আমি এখন নিরূপায় কিন্তু মায়ের প্ররোচনায় তারা সে টাকার কথা মানতে রাজী নয়।

সন্তানের বন্ধুটি কেমন কৌশলে জেনে নিন

বাবা-মায়ের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পত্তি তাদের সন্তান। সন্তানের কল্যাণের জন্য নিজের জীবন তুচ্ছজ্ঞান করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না তারা। তাই তো
সন্তানদের নিয়ে বাবা মায়েদের চিন্তার কোনও শেষ নাই।

আর যদি সন্তান হয় টিনএজার তাহলে তো কোনও কথায় নেই। বয়ঃসন্ধিকাল শৈশব ও কৈশোরের মধ্যবর্তী একটি মানসিক ও সামাজিক ক্রান্তিকাল।

এসময় কিশোর-কিশোরীরা শরীরের ভেতরকার পরিবর্তনকে একটু একটু করে উপলব্ধি করতে শেখে। নিজের মধ্যে বাস করা আরও একটি সত্তার অস্তিত্ব আবিষ্কার করে।আর এই সময়টাতেই বড় ধরণের ভুলগুলো করে থাকে ছেলে-মেয়েরা।

কখনও তারা না বুঝে নিজের অগোচরে ভুল করে, আবার কিছু ভুল করে বন্ধুদের সংস্পর্শে এসে। তাই এসময়টা বাবা-মাকে খুব সাবধান থাকতে হয়।

এসময় সন্তানের ভুলগুলো শুধরে দেয়ার পাশাপাশি তাদের পারিপার্শিক পরিবেশ বা বন্ধদের সম্পর্কে জানতে হবে। পরখ করতে হবে সারা দিন আপনার সন্তান যে বন্ধুটির সঙ্গে মিশছে সে আসলে কেমন? জনেন তো ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’, তাই আপনার সন্তানের বন্ধুটি কেমন তা কৌশলে অবশ্যই জেনে নিন।

এখন কথা হলো, কীভাবে জানবেন আপনার সন্তানের বন্ধুটি আসলে কেমন? কীভাবে বুঝবেন আপনার সন্তানের বন্ধুটি আপনার সন্তানের উপযুক্ত কিনা?

এ নিয়ে এতো চিন্তার কিছু নেই, বিশেষজ্ঞরা সন্তানের বন্ধুকে পরখ করতে কিছু উপায় বাতলে দিয়েছেন নিম্নে তা আলোচনা করা হলো:

* আপনার সন্তান যদি ভাইবোনের সঙ্গে হাসি মুখে খেলা করে বা তার সব কথা শেয়ার করে, তাহলে আপনার সন্তান ভাল বন্ধুদের সংস্পশেই আছে। সন্তানের এ রকম আচরণে বুঝবেন সে তার বন্ধুদের কাছে ভালো কিছু শিখছে।

* একজন ভাল বন্ধু কখনই আপনার পরিবার নিয়ে নেতিবাচক কথা বলবে না। সন্তানের মতো তার বন্ধুটিও আপনার পরিবার সংস্কৃতি, বিধি, প্রত্যাশাকে আপন করে নেবে। একজন ভাল বন্ধু এমন কোনও কাজ করবে না যা আপনার পরিবারের ঐতিহ্যকে কটাক্ষ করে।

* ভালো বন্ধু পরিবারের বিপদে বা যেকোনও সম্যসায় আপনার সন্তানের পাশে থাকবে। আপনার সন্তানের বিপদে বন্ধুটিকে যদি পাশে পান, তবে বুঝে নেবেন সে ভালো বন্ধুর সঙ্গেই রয়েছে।

* ভাল বন্ধু কখনই আপনার সন্তানের সাফল্যে হিংসা করবে না। বরং তার সাফল্যে সেও খুশি হবে।

* হঠাৎ করে যদি আপনার সন্তান খুব বেশী মিথ্যা কথা বলা শুরু করে তখনি বুঝে নেবেন সে খারাপ সঙ্গী বা বন্ধুর পাল্লায় পড়েছে। এসময় তাকে বুঝিয়ে কার সঙ্গে মিশছে জেনে নিন। কারণ শুরুতেই সাবধান হতে হবে। পরে সন্তান খারাপ সঙ্গে মিশে গেলে তাকে ফেরানো কষ্ট হবে।

* আপনার সন্তান হঠাৎ জেদি হয়ে গেছে। সে আপনার কথা শুনছে না। আপনি না বলার পরও একই কাজ বার বার করছে? তবে বুঝে নেবেন সে এই কাজগুলো অন্য কারোর কাছ থেকে শুনে বা দেখে করছে।

* যদি আপনি বুঝে যান সন্তানের বন্ধুটি খারাপ, তবে তাকে তা বুঝিয়ে বলুন। কখনোই তাকে বন্ধু ছাড়াতে বাধ্য করবেন না। এতে ভাল হওয়ার চেয়ে খারাপ হওয়ার আশংকাই বেশী থাকে।

সন্তানকে সবার সঙ্গে মেশার স্বাধীনতা দিন। তাকে পছন্দ মতো বন্ধু বেছে নেয়ার সুযোগ দিন। শুধু আপনি সাবধান থাকুন! কৌশলে তার পছন্দের বন্ধুটিকে চিনে নিন।

আপনার যতো ব্যস্ততাই থাক না কেন? সন্তানের কথা ভেবে এতোটুকু পরিশ্রম তো করতেই পারেন, কারণ সন্তানটি আপনার খারাপ সঙ্গে পড়ে গেলে আপনারই ক্ষতি।
সূত্রঃ যুগান্তর

মুক্তি যুদ্ধের শেষ রাত

ঝাউতলা স্কুলে আমাদের ট্রুপের ডিউটি থাকে, গত একমাস যাবত এখানেই ডিউটি চলছে। তবুও ডিউটিতে আসার আগে কমান্ডারের কাছ থেকে ডিউটি স্টেশন কোথায় জেনে আসতে হয়। আজ বিকেলেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। কমান্ডার ভাই বললেন আজ রাতে কিন্তু সবাই সাবধানে থাকবে আর সন্দেহ হলে ব্রাশ ফায়ার করতে দ্বিধা করবে না।

সেদিন ছিল ১৯৭১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর। বেশ কনকনে শীতের বিকেল। গায়ের চাদরের নিচে স্টেনগানটা ঢেকে ঝিটকা থেকে আমরা ৫ জন রওয়ানা হলাম। সন্ধ্যার মাগরিবের আজানের পরেপরেই নির্ধারিত ঝাউতলা স্কুলে এসে যার যার পজিশন নিয়ে বসে রইলাম। শীত থেকে রক্ষা পাবার জন্য আমরা প্রথম রাতেই পাশের ধান কাটা জমি থেকে নারা এনে বিছিয়ে নিয়েছিলাম।

আমাদের ডিউটি ছিল রাতের একটা নির্দিষ্ঠ সময়ের পরে এই পথে কে কে চলাচল করে তাদের সনাক্ত করে পরদিন কমান্ডারের কাছে রিপোর্ট করা এবং পাকিবাহী কনভয় আসতে দেখলে একজন দৌড়ে কমান্ডারের কাছে সংবাদ পৌছে দেয়া এবং বাকী ৪ জন প্রথমে ডিনামাইট দিয়ে কলতার ব্রিজ উড়িয়ে দেয়া আর ব্রাশ ফায়ার করে কনভয় থামিয়ে দেয়া। সঙ্গে অনেক হ্যান্ড বোমা থাকত দরকার হলে অন্তত চারজনে চারটা গাড়ি উড়িয়ে দেয়া। কাজটা বেশ ঝুকিপূর্ণ কিন্তু তখন আমাদের মাথায় ঝুকি বলে কোন শব্দ কাজ করতনা। যা করত তা হলো পাকি শেষ কর আর দেশ স্বাধীন কর! আর কিছুই আমাদের ভাবনায় আসত না।

তবে আমাদের মানিকগঞ্জ-ঝিটকা রাস্তায় রাতে আক্রমনের জন্য কোন কনভয় আসেনি। যা আসার তা দিনের বেলায়ই আসত, আমরা তখন নিজ বাড়িতে গভীর ঘুমে থাকতাম। জানতে পারতাম বিকেলে ডিউটি স্টেশন জানতে যেতাম তখন।
সেদিন রাতে কেন যেন হঠাত করেই আমাদের মনে একটা নির্ভয় ভাব এলো। সবাই যার যার চোখ কলতা ব্রিজের ওদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে আড্ডায় মেতে উঠলাম, সবাই বেসুরো গলায় এক লাইন করে গান গাইছিলাম। আজ সৃ্স্টি সুখের উল্লাসে, কারার ঐ লৌহ কপাট এমনি নানা গান কিন্তু কেন যে আজ ভয়ের জায়গায় আনন্দ উল্লাসের জোয়ার বইছে কিছুতেই আবিষ্কার করতে পারছিলাম না।
সারারাত জেগেও লক্ষ্য করার মতি কিছুই দেখলাম না। যথারিতি সকালে ফজরের আজান শুনে আবার স্টেনগান চাদরে ঢেকে যারযার বাড়ির পথে চলে যেতাম শুধু মাসুদ কমান্ডারের বাড়ির পাশ দিয়ে যাবার সময় তাকে সারারাতের রিপোর্ট দিয়ে যেত।

সেদিন ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১। লোকজনের হৈ হৈ চিতকার শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল। চমকে উঠলাম এত শব্দ কিসের? কী হয়েছে, বিছানা ছেড়ে উঠে ঘরের বাইরে এসে শুনি রেডিওর খবর শুনে সবাই এমন উল্লাস করছে। আমাকে দেখেই আমার চাচাত ভাই বলল, শুনেছিস পাকিরা আত্মসমর্পণ করবে, রেসকোর্সে সব রেডি হচ্ছে। ঢাকায় যাবি?

নারে তোরা যা আমার কাজ আছে আমি পরে যাব। দেশ স্বাধীন হলো। পাকিস্তানিরা মিত্রবাহিনী ভারতীয় সৈন্যদের কাছে আত্মসমর্পণ করল। রেডিওতে খবর শুনে সবাই একে একে জড়ো হলো আমাদের কমান্ডার এর বাড়িতে। বিজয় পতাকা ওড়াতে হবে। আনন্দ হবে, উৎসব হবে, স্বাধীনতার উৎসব। বাসি স্বাধীনতার উৎসব নয়। স্বাধীনতা বার্ষিকী নয় একেবারে জীবন্ত স্বাধীনতা। সদ্য স্বাধীনতার উৎসব। এর কি কোন তুলনা আছে না কারো সাথে এর তুলনা করা চলে! কয়জনের ভাগ্যে এই উৎসব জোটে? এই দেশে আরও কত কোটি কোটি মানুষের জন্ম হবে কত কি হবে কিন্তু আজকের এই দিনের স্বাদ কজনে দেখবে? কমান্ডার বাবু আমার হাতে এক টাকার একটা নোট দিয়ে বললেন যাও ঝিটকা থেকে বাংলাদেশের পতাকা কিনে আন। কোন রকম টাকাটা হাতে নিয়েই দৌড়। দেড় মাইল পথ প্রায় দৌড়েই এ্লাম। একটা মুহূর্ত নষ্ট করার উপায় নেই। উল্লাস কমে যাবে, আনন্দের গতি ধীর হয়ে যাবে। সুখের স্রোতে ভাটা পরে যাবে। পতাকা কিনেই তা বগল দাবা করে আবার দৌড়।

বাজার থেকে বেড় হয়ে এসে গ্রামের মেঠো পথের পাশে সবুজ গম খেতের গমের শীষে বেধে কখন যে পতাকাটা আটকে রয়ে গেছে তা বুঝতে পারিনি। বাড়ির কাছে এসে যখন দেখে বগলের পতাকা নেই, কি হলো? আবার উলটো দৌড়। বেশ খানিকটা পথ এসে দেখি গমের শীষের সাথে পতাকা ঝুলছে। নিয়ে আবার দৌড়। বাড়িতে এসে দেখি বিশাল আয়োজন। সমস্ত এলাকার মানুষ চলে এসেছে। সবুজের মাঝে রক্ত লাল আর তার মাঝে দেশের মানচিত্র আঁকা পতাকা বাঁশের তৈরি মাস্তুলের মাথায় বেধে ওড়ানো হলো। হারমোনিয়াম তবলা রেডি ছিল, পাশে দাঁড়িয়ে সবাই স্বাধীন ভাবে, মনের উচ্ছ্বাসে চিৎকার করে এক সুরে “‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি” গাইল। সে যে কি শান্তি, কি উল্লাস তা কি আর ভাষায় বলা যায়? সে শুধু অনুভূতি দিয়ে অনুভবের। জাতীয় সঙ্গীতের পর আরও দেশাত্মবোধক গান হলো। কে যেন কলতা বাজার থেকে মিষ্টি এনেছিল। গানের পরে মিষ্টি বিলানো হলো। সুশীল কাকার বাড়িতে খেজুরের গুড় দিয়ে ক্ষীর রান্না হয়েছিল কলাপাতায় করে সে ক্ষীর বিলানো হলো। হৈ চৈ শেষ করে গভীর রাতে শিহাব এবং মইন চাচার সাথে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলাম। রাতে বাড়ি ফিরেই আবার রেডিওর পাশে বসলাম। ঢাকার খবর জানতে হবে।

গোলাপ ফুলের ভেষজ গুণ

গোলাপ ফুল এটি সবজি বা ফলের ক্যাটাগরিতে পড়েনা। কিন্তু এটি বিভিন্ন ধরণের রান্নায় বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও ব্যথা সারাতে, বমি বমি ভাব, অবসাদ ভালো করতে সাহায্য করে গোলাপ ফুল। কারণ এতে এস্ট্রিঞ্জেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে।
সৌন্দর্য থেকে শুরু করে প্রাচীনকাল থেকেই সাস্থ্য সচেতনায় গোলাপের চর্চা হচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশেই গোলাপ ফুল খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। গোলাপের পাঁপড়ি হোক বা কুঁড়ি-সবই খাদ্যগুণে ভরপুর।

গোলাপের পাঁপড়িতে ৯৫% পানি আছে। তাই এর ক্যালোরি কাউন্ট অত্যন্ত কম। এছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন সি। প্রাচীণকালে চীনদেশে বদহজমের সমস্যায় গোলাপের পাঁপড়ি খাওয়া হত। নারীদের ঋতু সমস্যাতেও গোলাপের পাঁপড়ি উপকারী। গোলাপের মনমাতানো গন্ধ অ্যারোমা থেরাপির কাজ করে। গোলাপ ফুল খেলে শরীর ভেতর থেকে তরতাজা মনে হবে।
সূত্রঃ
ইত্তেফাক/সালেহ্
অনলাইন ডেস্ক০৪ মার্চ, ২০১৭ ইং ১০:৪৮ মিঃ

মামা বাড়ির আবদার

“মামার বাড়ির আবদার” এই প্রবাদ বাক্য আমরা কেবল শুনেই এসেছি কিন্তু বাস্তবে কোনদিন প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাইনি যদিও আমাদের উপযুক্ত ৪ জন মামা ছিলেন যাদের ৩ জন এখনও বর্তমান আছেন। দেশ স্বাধীন হবার পরে আমার SSC পরীক্ষার পর আমার বাবা যখন ঢাকায় আমার পড়ালেখা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন তখন এক মামার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড এর বাসায় থেকে আমাকে পড়াশুনা চালিয়ে যাবার জন্য পাঠিয়ে দিলেন।

সেখানে একদিন বাথরুমের বাল্ব বদলাবার সময় হাত থেকে পরে একটা বাল্ব ভেঙ্গে গিয়েছিল তখন এক মামা বেশ ভাল করেই বকুনি দিয়েছিলেন যা এখনও মনে আছে। মামি কোনদিন ভাগ্নে হিসেবে আমাকে খাবার সময় ভাত বেড়ে দেয়ার সময় পায়নি। একদিন দুপুরে খাবার সময় তখন মামা বাড়ির সফুরা নাম্নী এক কাজের মহিলার কাছে কোন একটা তরকারি চেয়ে নিয়েছিলাম বলে পরে মামিকে বলতে শুনেছি ‘এরা দেখি সব লুট করে খেয়ে ফেলছে’ এ কথা এখনও আমার মনে জ্বল জ্বল করে জ্বলছে।
মামা একটা বড় বিদেশি কোম্পানিতে চাকুরীর সূত্রে প্রায়ই ঢাকার বাইরে যেতেন। একবার রাজশাহী থেকে ফিরে এলে গাড়ি ভরে আম, লিচু, মিষ্টি এবং বেশ কিছু কাপড় চোপর এনেছিলেন। সন্ধ্যার পরে তার ছোট দুই মামা বাক্স ঝাকা খুলে সবাইকে দিচ্ছিলেন আর মামা পাশের খাটে আধ শোয়া অবস্থায় দেখছিলেন। কয়েকটা জামা শহীদ, কামরুল এবং অন্যান্য কাওকে দিলেন কিন্তু পাশেই যে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম সেই আমার প্রতি কারো দৃষ্টি পড়েনি, তবে হ্যাঁ কয়েকটা লিচু আর একটু আমের ভাগ পেয়েছিলাম। এ কথাও ভুলে যাবার মত নয়।

একদিন আমার বাবা আমাকে বিষন্ন মুখে দেখে জিজ্ঞেস করলেন কিরে কি হয়েছে? না আব্বা কিছু হয়নি! শত হলেও বাবার মন সে কি কিছু আচ করতে পারে না? আবার জিজ্ঞেস করলেন তখন কেদে দিয়ে বললাম আমি আর এখানে থাকব না! কেন? তখন এই কয়েকটা কথা আব্বাকে জানালাম শুনে তিনি আমাকে আবার গ্রামে ফিরে যাবার কথা বললেন। ফিরে গেলাম গ্রামের বাড়িতে। এর কিছুদিন পরেই আব্বা গাবতলিতে একটা ছোট্ট বাসা ভাড়া নিয়ে আমাদের সবাইকে নিয়ে এলেন আর আমি ভর্তি হলাম মিরপুরের বাংলা কলেজে। আমার আর মামার বাড়ির আবদার দেখা হলো না। এমন অবহেলার ভাগ্নেই ছিলাম আমরা। তখন এমনি অবহেলার ভাগ্নে হলে কি হবে আমার কদর বেড়ে গেলে তখন, যখন আমি বিদেশি জাহাজ থেকে আমার প্রথম সমুদ্র যাত্রা শেষ করে দেশে ফিরে এসেছি। দেশে আসার আগে মামা তার চাকুরী থেকে তার দুর্ভাগ্য বা যে ভাবেই হোক টার্মিনেট হয়ে ঢাকায় এসে আমাদের মিরপুরের বাসায় থাকছেন। দেশে আসার পরে আমাদের এজেন্ট চিটাগাং এর জেমস ফিনলে থেকে আমার সমুদ্র যাত্রা এর টাকা নিয়ে আসতেই সব টাকা আমার মা বাবা মামার হাতে তুলে দিলেন। জীবনে টিকে থাকার জন্য মামার তখন কি এক ব্যবসা করার জন্য টাকার অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। মামা আমাকে বললেন আমার ব্যবসা হলে তোর টাকা ফিরিয়ে দিব চিন্তা করিস না। এর পরের সমুদ্র যাত্রা গুলির টাকাও একই ভাবে মামার কাছেই চলে যায়। তখন থেকেই মূলত আমি নিতান্ত টাকা রোজগারের মেশিন হতে পেরে আমার কদর বেড়ে গেল, আমিই মামার প্রিয় ভাগ্নে হয়ে গেলাম যদিও বিনিময়ে আমি বঞ্চনা ব্যতীত আর কিছুই কোনদিন পাইনি। সে টাকাও আর কোনদিন ফিরে পাইনি এভাবেই একদিন হঠাত শুনি মামা ইন্তেকাল করেছেন। আমাদের দুই ভাইয়ের সেইসব টাকা আর কোনদিন উদ্ধার হবে কি?

তবে হ্যাঁ এ কথাও ভুলি নাই, গাবতলির বাসায় আসার পরে একদিন আম্মাকে বলেছিলাম “আম্মা সিল্কের পাঞ্জাবী আবার কেমন“? সেই কথা আম্মা আবার মামাকে বলেছিলেন। তারপরে একদিন দেখি মামা আমাদের বাড়িতে এসেছেন এবং আমার হাতে একটা প্যাকেট দিলেন, খুলে দেখি ওতে একটা পাঞ্জাবী। মামা বললেন ‘গায়ে দিয়ে দেখ তোর লাগে নাকি, এটাই সিল্কের পাঞ্জাবী’। এই কথা আমি যতদিন বেচে থাকব ততদিন আমার মনে নক্ষত্রের মত উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। এ ছাড়া আমরা মামাদের আর কোন কিছু কোন দিন পাইনি। আমাদের মামিরাও আমাদের জন্য কোনদিন কিছু রান্না করার প্রয়োজন মনে করেনি। তেমনি আমরাও জানিনা কোন মামির রান্না কেমন!

পরবর্তীতে আমি দেশে একটা চাকুরী পেয়ে আর জাহাজে যাওয়া হয়নি তখন আমার রোজগার কমে গেল আবার এদিকে দাঁড়াল আমার মেঝ ভাই কাদের, সে চলে গেল বিলাত। এখন থেকে যে কাদেরকে কেও চিনত না সেই কাদেরই নতুন করে সবার প্রিয় হয়ে গেল। এতদিন যে টাকার যোগানদাতা ছিলাম আমি তা বর্তাল কাদেরের উপর।
এসব কথা বলতে গেলে অনেক হয়ে যাবে তাই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আর কিছু লেখা অর্থহীন। মনের কথা মনেই থাক। ভঙ্গুর এই জীবনে কতজনের কত কিছুই ঘটে তার হিসাব কে রাখে!
তবুও ভাল মামারা আমাদের তাদের বাড়ি থেকে ঘার ধরে তাড়িয়ে দেয়নি, এতেই আমরা খুশি। আমার ধারনা যারা নিতান্ত পরিস্থিতির চাপে মামা বাড়ি থাকে তাদের সবাইকে না অন্তত অনেককেই এমন যাতনা সইতে হয় হয়ত।

বিঃ দ্রষ্টব্য- মুরুব্বী মহাশয়ের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমার এই ছোট গল্প লেখার প্রথম প্রচেষ্টা। যদি আপনাদের ভাল লাগে তাহলে সমস্ত কৃতিত্ব মুরিব্বী সাহেবের আর খারাপ লাগলে পূর্ণ ব্যার্থতা আমার বিধায় মতামত জানাতে আলসেমি করিবেননা জনাব/জনাবা।

লেবু সৃষ্টিকর্তার এক অপার নিয়ামত

আপনার হাতের কাছেই আছে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের অপার কৃপা ভেষজ ও প্রাকৃতিক নানা উপাদান। ফলদ, বনজ ও উদ্ভিজ্জ নানা ফলমূল, সবজি। তেমনি একটি ফলের নাম হচ্ছে লেবু বা লেমন। আর সব সময় পাওয়া যায় এই লেবুতে রয়েছে আশ্চর্যসব গুণ। লেবুতে রয়েছে পলি ফেনলস, ভিটামি সি, ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট সাইট্রিক এসিডসহ নানা উপাদান।

বিশেষজ্ঞগণ গবেষণায় দেখেছেন, প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস লেমন ড্রিংক বা লেবুর শরবত পানে পেতে পারেন অন্তত ১২টি উপকার। এসব উপকারের মধ্যে রয়েছে, লেবুর শরবত ওজন কমাতে সাহায্য করে, শরীরের ইম্যিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, ভিটামিন সি-এর অভাব দূর করে শরীরকে সতেজ করে, লিভার ফাংশন সঠিক রাখে বা লিভারকে সুস্থ রাখে, শরীরের অতিপ্রয়োজনীয় পটাশিয়াম লেভেল ঠিক রাখে, কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করে, কিডনীর পাথর সৃষ্টিতে বাধা দেয়, শ্বাস-প্রশাস নির্মল করে, বিপাকীয় কার্যক্রম বা মেটাবলিজম এবং ডাইজেশন ঠিক রাখে এবং সর্বপরি ভিটামিন সি তথা লেমন জুস বা লেবুর শরবত ত্বক মসৃণ ও কোমল রাখে। ত্বক লাবণ্যময় করে। তাই লেবুর শরবত পান করুন। আর সুস্থ থাকুন।

প্রতিদিন একগ্লাস পানির মধ্যে একটি লেবুর এক চতুর্থাংশ থেকে অর্ধেকটা লেবুর রস দিয়ে শরবত তৈরি করুন। তবে যাদের এসিডিটি আছে তাদের লেবুর শরবত আহারের পর পান করা উচিত
ডা. মোড়ল নজরুল ইসলাম০৪ মার্চ, ২০১৭ ইং ০৯:২৩ মিঃ
লেখক : চুলপড়া, এলার্জি, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ
সূত্রঃ ইত্তেফাক

মৌন পাহাড়

সবুজের প্রান্ত দাঁড়িয়ে আকাশের নীলিমা ছাড়িয়ে
কুয়াশা চাঁদর গায়ে মৌন পাহাড় রয়েছ ঘুমিয়ে।
হৈমন্তী প্রভাতে দেখিনা তোমার মুখ খানি
কে যেন রেখেছে ঢেকে তার আঁচলে জড়িয়ে।

আঁকাবাঁকা সারিতে উঁচুনিচু সঙ্গী সাথে
নিশ্চল ছায়া ছায় কায়া নিয়ে নির্জনে রয়েছ দাঁড়িয়ে।

সভ্যতার চঞ্চলতা দেখিতেছ তুমি
আদি অনন্ত কালের নীরব সাক্ষী
অতীত ভবিষ্যৎ বিস্তৃত পরিধি
ওহে যুগের পরে যুগ যুগান্ত রক্ষী।

সাধ কি জাগে মনে উড়ে যেতে আকাশে
পৃথিবী ছেড়ে চাঁদের দেশে সুদূর তিমিরে হারিয়ে?
পাখা মেলে দিগন্তে মৃদুমন্দ বাতাসে
কোলাহল মুখরিত বিভীষিকা জড়িত বাঁধন ছাড়িয়ে।

শিশুকে ভদ্রতার অনুশীলন করাবেন যেভাবে

বাবা-মা উভয়কেই নিতে হবে শিশুকে ভদ্রতা শেখানোর দায়িত্ব। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়! তাদেরকে ছোটবেলা থেকে যেমন শেখানো হবে তারা তেমনই ব্যবহার
করবে। অভিভাবকেরা শিশুদের দাঁত ব্রাশ করানো, সময়মত স্কুলে পাঠানো সর্বোপরি বাহ্যিক সজ্জাকে পরিপাটি করতে যতটা মনোযোগ দেন ততটা দেন না আভ্যন্তরীণ বিকাশে। শিশুদের ভদ্রতা শেখানো বলতে আমরা বুঝি, মিথ্যে বললে বকা দেওয়া, দুষ্টুমি করলে নিষেধ করা, বড়দের সালাম বা আদাব দেওয়া। বড়দের সম্মান করা বা কারো সাথে দূর্ব্যবহার না করার কথাগুলো আমরা মোটা দাগে শেখানোর চেষ্টা করি, গভীর অর্থে নয়। এর ফলে বড় হয়ে পরিবারের গন্ডির বাইরে বিশাল পৃথিবীতে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয় তাদের। না চাইতেও ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে পারেন না অনেকে। তাই যত্নের সাথে শিশুকে শিষ্টাচারের দীক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। জেনে নিন কীভাবে-
অন্যের সাহায্য নিন।

আপনার সন্তান বলে তাকে সকল আদবকায়দা আপনাকেই শেখাতে হবে এমন কোন কথা নেই। অনেক সময় শিশুরা বাবা-মাকে সবসময় দেখে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে তাদের কথা শুনতে চায় না। দেখা যায়, পরিবারে এমন অন্য কেউ রয়েছে যে কোন কথা বললে শিশুটি গুরুত্ব দিয়ে শুনছে। এতে ঈর্ষান্বিত বা হীনমন্য বোধ করার কিছু নেই।
ভাষায় আনুন ইতিবাচকতা। আপনি যখনই শিশুর সাথে কথা বলছেন তখনই ইতিবাচক উপায়ে কথা বলুন। শব্দচয়নে এড়িয়ে চলুন নেগেটিভ শব্দ। সোজাসুজি ‘না’ বলবেন না। ‘এটা করো না, ওটা করো না’ না বলে বলুন ‘এভাবে করো’। আপনি যত এই অনুশীলন করবেন দেখবেন শিশুর আচরণেও এর ভালো প্রভাব পড়ছে। শুধু শিশুদের সাথে কথা বলার সময়ই নয়, অন্যদের সাথে কথা বলতেও অনুশীলন করুন এটি। কারণ আপনার সন্তান সারাক্ষণই আপনাকে অনুকরণ করছে।
থ্যাংক ইউ, সরি এবং প্লিজ।

আপনি অপরিচিত একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার নাম কী?’ এই প্রশ্নটি ঘুরিয়ে বললেন, ‘আপনার নামটা কী জানতে পারি প্লিজ?’ প্রশ্ন করার কোন ধরণটি আপনার কাছে বেশি বিনয়ী মনে হচ্ছে? নিশ্চয়ই ২য়টি। প্রয়োজনুসারে থ্যাংক ইউ, সরি এবং প্লিজের ব্যবহার ভাষার দিক থেকে ভদ্রতার সমস্যার সমাধান করে দেয় সহজেই।
মজা করে শেখান। আপনার সন্তান যদি আদেশের সুরে আপনার সাথে কথা বলে তাহলে ভেংচি কেটে তার কথার ধরণটি তাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলুন অনুরোধ করে না বললে কাজটি করবেন না আপনি। নিজেও শিশুকে কিছু করতে বলার ক্ষেত্রে আদেশের ভঙ্গি এড়িয়ে চলুন।
প্রতিটি সময়কেই গুরুত্ব দিন।

শিশুকে বাইরে নিয়ে যাওয়া, রেস্টুরেন্টে খাওয়া সকল ক্ষেত্রেই তার আচরণের দিকে লক্ষ্য রাখুন। কীভাবে খাবার অর্ডার করতে হয়, অর্ডার বদলাতে হলে কী করতে হয়, শান্তভাবে খাওয়া কেন জরুরি বা কোনকিছু কিনতে গেলে আগে কী কী খেয়াল করতে হবে এই সববিষয় আপনি যেভাবে করবেন সেভাবেই সে করবে।
সব কিছুই বলে শেখানো যায় না। বরং শিশুদের ক্ষেত্রে বলে শেখানোর পদ্ধতিটি সবচেয়ে ভুল পদ্ধতি। এতে তারা বিরক্ত হয় এবং কিছুদিন পর আর কোন কথা শোনে না। তাই তাকে বলার চেয়ে নিজে ভদ্রতার চর্চা করুন। নিজের কাজের জন্য অপরের ঘাড়ে দোষ না চাপিয়ে দায়িত্ব নিন। অপরের ব্যাপারে নাক না গলিয়ে, অপরকে হেয় না করে নিজের কাজে মনোযোগ দিন। আপনার শিশু আপনাআপনি এমন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠবে।

সূত্র: প্যারেন্টস
সম্পাদনা: কে এন দেয়া
(প্রিয়.কম) বিভাগ: লাইফ জীবন চর্চা সম্পর্ক,
আফসানা সুমী – ১৪ জানুয়ারি ২০১৭, সময়-০৯:৩৯
প্রিয়.কম, https://www.priyo.com/articles/how-to-teach-kids-good-manners-2017114

বিকেল বেলার বৃষ্টি

১।
ক্লাস শেষ করে রবিনসন লাইবেরি থেকে কয়েকটা বই নিবে বলে রেজার সাথে বের হলো। দুই বন্ধু একসাথে ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। শীতের দুপুরে ফুটপাথের পাশে ন্যাড়া পপলার গাছের নিচে দিয়ে হাঁটতে ভালই লাগছিল।

জেসমন্ড রোডের বায়েই লাইবেরিটা। বাম দিকে ঘুরে আবার ওপাশের ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছে, যেদিকে জেসমন্ড রোড গেছে। কিছু দূর যাবার পর হঠাৎ কি মনে করে মাহমুদ থেমে গেল।
কিরে থামলি কেন?
তুই যা, আমি একটু সিভিক সেন্টারে যাব!
কেন?
ওখানে কাল একটা বই দেখেছি, কার্ড ছিলনা বলে নিতে পারিনি আজ নিয়ে আসছি, তুই যা।
আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসবি, আমি অপেক্ষা করব। এক সাথে বাসায় যাব মনে রাখিস। আমাকে ফেলে আবার চলে যাবি না সেদিনের মত
ঠিক আছে তুই যা আমি বই নিয়েই চলে আসছি
আবার পিছনে ঘুরে সিগন্যালের কাছে এসে রাস্তা পাড় হবার জন্য অপেক্ষা করছে।

ডান দিকে একটু এগিয়ে গেলে ডানে হে মার্কেট আর বাম দিকে এগিয়ে নিউ ক্যাসেল রেল স্টেশনের পথ। সিভিক সেন্টারের ডানে হে মার্কেট স্কয়ার, পাশেই হে মার্কেট মেট্রো স্টেশন।
রাস্তার ওপাড়েই অনেকটা জায়গা নিয়ে সিভিক সেন্টার। পাশে মেইন রোড থেকে গেট দিয়ে ঢুকলেই হাতের বায়ে একটা দেয়ালে যারা যুদ্ধে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে কাল পথরে খোদাই করা তাদের বেশ কয়েক জনের ভাস্কর্য। ডানে সেন্ট থমাস গির্জা। মাঝে রাস্তার দুই পাশে দিয়ে সাইকলো গাছের সাড়ি। সমস্ত চত্বরটাই সাইকলো, পপলার, ওক, কয়েকটা পাইন এই রকম নানান গাছ গাছালিতে ভরা। গির্জার পিছনে জুনিপারের ঝোপ। শীত বলে গাছ দেখে আর গাছের মত মনে হয় না। সব পাতা ঝরে গিয়ে শুধু কতগুলি কাঠির স্তূপ দাঁড়িয়ে রয়েছে মনে হয়। তবুও দেখতে বেশ লাগে। গায়ে শীতের ভারী কাপর, নাক দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে বের হওয়া জলীয় বাষ্প দেখে মনে হয় শরীরের ভিতরের যত আবর্জনা ছিল সব বের হয়ে যাচ্ছে। হাতের গ্লোভস খুলে সিগারেট টানতে গিয়ে হাত প্রায় জমে যাওয়ার অবস্থা এমন শীত।

২।
মেইন রোড পার হবার আগেই ওপাড়ের সিগনালে দাঁড়িয়ে মাহমুদ দেখল একটা মেয়ে সিভিক সেন্টার থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। মাত্র কয়েক ধাপ সিঁড়ি। নেমে গেটের দিকে এগিয়ে আসছে। এর মধ্যে মাহমুদ রাস্তা পাড় হয়ে সিভিক সেন্টারের গেটের ভিতরে ঢুকে পরেছে। এগিয়ে ভিতরে ঢোকার সময় মাহমুদের পা এগুচ্ছে কিন্তু চোখ দুটি দূর থেকেই থেমে গেল। সামনে এক দীর্ঘাঙ্গী এক হারা গড়নের ফর্সা এক মেয়ে। পরনে নীল জিনসের প্যান্ট, গায়ে ফুল স্লিভ লাল টি সার্টের উপরে কাল নেটের হালকা বুননের সোয়েটার। দেখে মাহমুদ অবাক হয়ে গেল। এই শীতে এই পোষাকে কেন মেয়েটা? এদেশের নয় যে এই আবহাওয়ায় মানিয়ে নিয়েছে, দেখতে এশিয়ান মনে হচ্ছে, কাল চুল। কিছু কৌতূহল, কিছু বিস্ময় এবং কিছু ঘোর নিয়ে মেয়েটা সামনে আসার আগেই থেমে মেয়েটার দিকে এক পা এগিয়ে গ্লোভস পরা ডান হাত এগিয়ে বলল আমি নেয়ামত উল্লাহ মাহমুদ ফ্রম ইরান। মেয়েটা সামনের এই আগন্তুকের কাণ্ড আর চেহারা দেখে থমকে দাঁড়িয়েছিল। সম্বিত ফিরে পেয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে হাত না বাড়িয়ে আস্তে করে এক পা পিছিয়ে বলল আমি সাবিহা খানম, ফ্রম ইন্ডিয়া।
সাবিহা খানম মানে মুসলিম?
হ্যাঁ, তুমিও তো মুসলিম, মাহমুদ!

হ্যাঁ। তুমি কি এখানে নতুন এসেছ?
কেন?
আজকের আবহাওয়ার খবর তুমি জান?
কেন, কি হয়েছে?
বলছ কি! ওই দেখ,
বলে ডান দিকের মনুমেন্ট টাওয়ারের ওপাড়ে একটা বিল্ডিঙের ছাদে লাগান ওয়েদার বোর্ড দেখিয়ে বলল
দেখেছ আজকের তাপমাত্রা কত? -৫ ডিগ্রি, এখন আমরা অপেক্ষা করছি কখন স্নো পরবে আর তুমি বিদেশিনী হয়ে এই পোষাকে! জান তোমাকে এই পোষাকে দেখে আমি ভয়ে আঁতকে উঠেছিলাম!
মাহমুদের এই কথা শোনার পর গোলাপের মত মুখে অনেকগুলি পিয়ানোর পঞ্চমী সুরের ঝংকার তুলে হাসিতে ফেটে পরার উপক্রম হলো।
ওহ! এই জন্য তুমি আমাকে থামিয়েছ? কিন্তু আমি একটুও শীত বোধ করছিনা!

সাবিহা যখন এমন প্রাণ খুলে হাসছিল তখন আরও সুন্দর লাগছিল। যেন নিষ্পাপ কোন শিশুর স্বর্গীয় হাসি! এত সুন্দর! মাহমুদ চমকে যায়। ক্যামেলিয়ার মত চোখ, গোলাপের মত মুখ, প্রিমরোজের পাপড়ির মত ঠোট, বাহরাইনের মুক্তার মত দাঁত, নাক আর হালকা কোঁকড়ান কাল কুচকুচে রেশমি চুল। ইরানেও এমন অনেক সুন্দরী দেখেছে কিন্তু এ যেন তাদের সবার চেয়ে অনেক বেশী! কথা বলছে যেন সেতার বাজছে। সুন্দর হলেই কি এত সুন্দর হবে! অবাক হয়ে চেয়ে থাকে।
তুমি এখনও কিছু বুঝবেনা কারণ তুমি সবে মাত্র সিভিক সেন্টারের হিটার থেকে বের হয়েছ! কয়েক মিনিট যেতে দাও তখন বুঝবে!
তবে আমি মাত্র গত সপ্তাহে এখানে এসেছি একথা সত্য। এখনও এদেশের কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি।
বেশ, তাহলে চল ওই হে মার্কেটের একটা কফি শপে বসে তোমার সাথে আলাপ করি!
বলেই সাবিহার মুখের দিকে তাকাল। একটু রাজী আর নিমরাজি দুয়ের ছায়াই দেখে বলল
ভয়ের কিছু নেই, আমি
পিছনে দেখিয়ে
এই নিউক্যাসেল ইউনিভার্সিটিতে চিফ মেট পরীক্ষা দিতে এসেছি। ম্যারিটাইম ডিপার্টমেন্টে। তুমি?
আমি সবে বার করার ইচ্ছা নিয়ে মাস্টার্সে এডমিশন নিয়ে এসেছি!
কোথায় থাকছ?
বাম দিকে দেখিয়ে
ওইতো ওই দিকে ওয়েস্ট গেট রোডে
কোথায়?

ওখানে একটা পিজা শপ আছে তার ওপরে
এশিয়ান পিজা শপ, হিন্দু রাম মন্দিরের বিপরীতে?
হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি চেন?
চিনি মানে যেতে আসতে চোখে পরে, যাইনি কখনও। চল যত দেরি হবে ঠাণ্ডা তত বাড়বে।
আবার একটু আমতা আমতা করে
বেশ চল
আবার গেট দিয়ে বের হয়ে বাম দিকে ঘুরে ফুটপাথ ধরে দুই জনে কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেল। মার্কেটের কাছে এসে সাবিহা বল ও, ভীষণ শীত!
যাক, এতক্ষণে বুঝতে পেরেছ এই জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ!

৩।
হে মার্কেট স্কয়ার পাড় হয়ে একটা কফির দোকানে ঢুকে টেবিলের পাশে এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে মাহমুদ ইশারায় সাবিহাকে বসতে বলল। সাবিহা বসার পর মাহমুদ জিজ্ঞেস করল কফির সাথে আর কিছু খাবে কিনা। না না শুধু কফি। মাহমুদ এগিয়ে কাউন্টারের কাছে গিয়ে দুই কাপ কফির কথা বলে এসে টেবিলের এদিকে বসে বলল
দেখেছ কি ভয়ংকর ঠাণ্ডা! এই টুক আসতেই সবকিছু কেমন জমে গেছে মনে হচ্ছে!
হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ। আমি বুঝতেই পারিনি ঠাণ্ডা এত ভয়ংকর! তুমি কি এদেশে অনেক দিন ধরে আছ?
মোটেই না, তবে এর আগে কয়েক বার এসেছি। সেকেন্ড মেট করার সময়, তা ছাড়া অন্যান্য সময়ে জাহাজ নিয়ে এসেছি তবে নিউক্যাসেলে নয়, লন্ডন এবং ব্রিস্টলে।
তাহলে তুমি অনেকবার এসেছ?
তা বলতে পার। আমিতো সিম্যান। আমার কাজই এমন, জাহাজ যখন যেখানে যায় আমিও জাহাজের সাথে সেখানে যাই।

তুমি বললে তুমি ইরান থেকে এসেছ। ইরানের কোথায়, আই মিন, কোন শহরে?
আবাদান রিফাইনারির নাম শুনেছ?
না
ও! তা ওই আবাদানেই আমার বাড়ি। আবাদান রিফাইনারি থেকে ২/৩ মাইল উত্তরে এগিয়ে গেলেই
তোমাদের ইন্ডিয়া অনেক বড় দেশ, তুমি কোথা থেকে?
আমার বাড়ি কলকাতা
আরে আমি কলকাতা গেছি! ডায়মন্ড হারবার তাই না?
হ্যাঁ হ্যাঁ আমার বাড়ি আলিপুরে ডায়মন্ড হারবার রোডের ধারে।

৪।
এর পর একে অপরের সাথে পরিচিত হতে যা আলাপ হয় তেমন অনেক কিছু। টুকিটাকি আলাপ করে কফি শেষ করে বলল তোমার কি কিছু গরম কাপর দরকার?
হ্যাঁ এখানে এত শীত বুঝতে পারিনি তাই কেনা হয়নি
এখনই কিনে ফেল, চল তোমাকে কেনাকাটায় একটু হেল্প করি! এই সব কেনা কাটার জন্য সোজা প্রাইমার্কে চলে যাবে, ওদের বিশাল কালেকশন আর দামও খুবই কম। আমরা স্টুডেন্ট বলে আমাদের অত বিলাসিতা করা চলে না, তাই না?
এখন কিনতে বলছ?
নিতে হবে ব্যাস নিয়ে নাও!
কিন্তু আমি যে এখনো কিছু চিনি না
তাতে কি? বললাম না আমি হেল্প করব, চল উঠি
বের হবার সময় মাহমুদ কফির দাম দিয়ে বের হয়ে এক সাথে সোজা হে মার্কেটের ভিতরে যে প্রাইমার্কের আউট লেট রয়েছে সেখানে চলে এলো।
যা যা প্রয়োজন এক এক করে অনেক কেনা কাটা করে ফেলল। পোষাকের প্যাকেট নিয়ে বের হয়ে এলো।

৫।
তুমি হেঁটে যাবে তাই না?
হ্যাঁ কাছেই
চল তোমাকে এগিয়ে দিচ্ছি, এত প্যাকেট নিয়ে একা কি করে যাবে!
তুমি এগিয়ে দিবে?
চল, আমার কোন তাড়া নেই
দুইজনে ওয়েস্ট গেট রোড ধরে হাঁটতে হাঁটতে ওয়েস্ট গেট রোড এবং বাম দিক থেকে ল্যাংকেস্টার রোড যেখানে মিশেছে তার মাথায় পিজা শপের নিচে দিয়ে উঠে দোতলায় চলে এলো। সাবিহা পকেট থেকে চাবি বের করে ঘরের তালা খুলে প্রথমে নিজে ঢুকে মাহমুদকে আসতে বলল। সাবিহার বাসাটা মোটামুটি। সামনে বিশাল গোরস্তানের পাশ দিয়ে ওয়েস্ট গেট রোড পশ্চিম দিকেই চলে গেছে, গোরস্তানে অনেক বড় বড় পুরনো গাছ। ডাইনে রাম মন্দির এবং তার একটু পরেই শিখদের গুরু দিওয়ারা, বায়ে ল্যাংকেস্টার রোড দক্ষিণে চলে গেছে। বাসার নিচেই চৌরাস্তার ওপাড়ে বাস স্ট্যান্ড। হাতের প্যাকেটগুলি সোফায় নামিয়ে রেখে সাবিহা জিজ্ঞেস করল
চা খাবে?

আরে না না মাত্র কফি খেয়ে এসেছি না! এখনই চায়ের কি দরকার?
এই প্রথম আমার বাসায় কেও এসেছে তোমাকে এখন কি দিয়ে আপ্যায়ন করি তাহলে?
ফর্মালিটি করতে চাইছ?
মন্দ বলনি, শত হলেও আমি ইন্ডিয়ান। ঘরে অতিথি এলে কি খালি মুখে বিদায় দেয়া যায়?
হ্যাঁ তুমিও যেমন ইন্ডিয়ান আমিও তেমনি পারসি! এখন আমাদের পরিচয় হচ্ছে আমরা এখানে স্টুডেন্ট, কাজেই নো ঝামেলা, বুঝেছ? তারচেয়ে আমি এখন উঠি পরে আবার আসব।
প্রথম প্রথম একজন অজানা পুরুষের সংস্পর্শে সাবিহা একটু উপমহাদেশীয় দ্বিধার মধ্যেই ছিল এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। তাই বিশেষ জোরাজুরি না করে বলল
উঠবে? তুমি কোথায় থাক যেন?
আমি থাকি সাউথ শিল্ডে, ওই যে আমরা যেখান থেকে শপিং করেছি তার একটু সামনে এগিয়ে গেলেই নিউ ক্যাসেল রেল স্টেশন থেকে মেট্রোতে যেতে হয়।
অনেক দূর?

না না মিনিট বিশেক লাগে, একদিন যেয়ে দেখবে। ছোট্ট শহর কিন্তু বেশ সুন্দর। এই এলাকায় কাছাকাছি পাঁচ টা শহর
তাই নাকি?
হ্যাঁ, এইতো নিউক্যাসেল, ডারহাম, সাউথ শিল্ড, সান্ডারল্যান্ড আর ডার্লিংটন তবে নিউ ক্যাসেলই সবচেয়ে বড়
সুযোগ মত সব জায়গায় যাব।
হ্যাঁ যাবে।
উঠতে উঠতে বলল দরকার হলে আমিও যাব তোমার সাথে। আচ্ছা তাহলে আমি এখন আসছি, কাল দেখা হবে।

৬।
নেয়ামত উল্লাহ মাহমুদ বেরিয়ে যাবার পর সাবিহা বাইরের পোষাক বদলে ফ্রেশ হয়ে এসে জানালার পর্দা সরিয়ে টিভি অন করে সোফায় বসল। টিভি দেখা হচ্ছে না। ভাবছে। ছেলেটা খুব ভাল। যেমন সু পুরুষ তেমনি আচার ব্যবহার। হাসি খুশি। এই টুক সময়ের মধ্যেই কেমন আপন করে নিয়েছে। মনে হচ্ছে কত চিনের চেনা। সত্যিই, এই শীতের মধ্যে উপযুক্ত পোষাক না নিয়ে মস্ত ভুল করে ফেলেছিল। আর কখনও এমন হবে না। মন চলে গেল কলকাতার আলিপুরে। নাদিম পরিষ্কার বলে দিয়েছে ওর জন্য সে অপেক্ষা করতে পারবে না। সাবিহা অনেক বোঝাবার চেষ্টা করেছে, মাত্র দুইটা বছর! কিন্তু নাদিম মানতে রাজি হয়নি। আসলে সে অন্য কিছু চেয়েছিল যা সাবিহা বিয়ের আগে দিতে রাজি হতে পারেনি।
লখনো থেকে আসা নাদিম ছাত্র হিসেবে ব্রিলিয়ান্ট। যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সেরা ছাত্র। সাবিহা কলকাতার মানুষ হলে কি হবে ওদের বাড়ির ভাষা উর্দু। বাংলা বুঝতে বা বলতে পারলেও মাতৃভাষা উর্দু। কলকাতার অন্যান্য অভিজাত মুসলমানদের যেমন। নাদিমেরও তাই।
ইংল্যান্ডে আসার আগের দিন মুষলধারে বৃষ্টির বিকেলে বেহালার এক কাফেতে বসে টেবিলে কফির পেয়ালা আর সামনের বড় রাস্তার দিকে চোখ রেখে বলেছিল
চল না আজ আমরা সেলিবরেট করি!
বৃষ্টির শব্দে প্রথমে শুনতে পায়নি বলে জিজ্ঞেস করেছিল কি বললে?
আবার একটু আমতা আমতা করে একই কথা বলেছিল
কি সেলিবরেট করব?
কেন আজকের এই বৃষ্টি ভেজা মধুর বিকেলটাকে আরও মধুর করে রাখি! একটা স্মৃতি হয়ে থাক, কি বল?
কি করে?

তুমি কি কিছুই বুঝতে পারছ না?
মনে মনে রেগে গেলেও নাদিমকে কিছু বুঝতে দেয়নি। এত দিনের সম্পর্কের এই পরিণতি চাইছে নাদিম? তাহলে এই কি তোমার আসল রূপ! অবাক হয়ে গিয়েছিল সাবিহা। সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়েছিল
এইতো আর মাত্র দুইটা বছর, আমি ইংল্যান্ড থেকে ফিরে আসি বিয়ের পর সবইতো পাচ্ছ কাজেই এত অস্থির হবার কি আছে? এত উতলা হলে চলে?
না উতলা হচ্ছি না, তুমি অনেকদিনের জন্য চলে যাচ্ছ তাই ভাবছিলাম!
দেখ, তুমি আমি দু’জনেই অত্যন্ত রক্ষণশীল পরিবার থেকে এসেছি, আমরা এত খোলামেলা হতে পারি না।
ইচ্ছে করলে পারা যাবে না কেন? তুমি ইচ্ছে করলেই হয়
তোমার এই কেনর উত্তর আমি দিতে পারছি না
বলেই সাবিহা উঠে চলে এসেছিল।

পরদিন সন্ধ্যায় ফ্লাইট। দমদম থেকে মুম্বাই হয়ে নিউক্যাসেল। নাদিমের এয়ারপোর্টে যাবার কথা ছিল কিন্তু মা বাবা ভাই বোনদের মাঝে থেকে সাবিহা ওকে আর খুঁজে দেখেনি। গিয়েছিল কিনা তাও জানা হয়নি বা জানার ইচ্ছেও হয়নি। আসার পর ফোনও করেনি। ওর সাথে কথা বলার মত আর কোন স্পৃহা নেই। দেখা যাক। নাদিম এই পুরুষ জাতিকে সহজে বিশ্বাস করার কোন উপায় রাখেনি। বিগত পাঁচটি বছরের এই সম্পর্ক তার এই পরিণতি ভেবে নিয়েছিল? অথচ সে এই সম্পর্ককে কতই না পবিত্র বলে ভেবে এসেছে এতদিন! অবাক কাণ্ড! সবই কি তাহলে ছলনা? বিশ্বাস বলতে যা বোঝায় তা নাদিম ভেঙ্গে ফেলেছে। হতে পারে এটা নর নারীর আদিম সত্য কিন্তু তাই বলে এমন করে তা হবে? সাবিহা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। অনেক রাত হয়ে গেল। এবার উঠে ফ্রিজ খুলে কিছু খাবার বের করে মাইক্রোওয়েভে গরম করে খেয়ে রুম হিটার চেক করে শুয়ে পরল। অরিয়েন্টেশন হয়ে গেছে। পরদিন ক্লাস আছে ঘুমাতে হবে।

.৭।
মাহমুদ সাবিহার রুম থেকে বের হয়ে হেঁটেই স্টেশনে চলে এলো। হাঁটছিল আর ভাবছিল মেয়েটা কি সুন্দর! লম্বা, গোলগাল চেহারা, দারুণ ফর্সা, ডান গালের ঠিক মাঝখানে একটা বড় তিল যাকে বলে বিউটি স্পট। পেশায় সে নাবিক, অনেক দেশেই গেছে কিন্তু এমন সুন্দর চোখে পড়েনি। কথা বলার ভঙ্গি তার চেয়েও সুন্দর। তাদের ইরানেও কি কম সুন্দরী আছে! কিন্তু তাদের কারো সাথেই এর কোন তুলনা হয় না। কি পড়ছে যেন বলল? ও হ্যাঁ, আইন এর ছাত্রী। ভাবতে ভাবতে কেমন যেন ঘোর লেগে এসেছে। রেজার কথা ভুলেই গেছে। বাসায় এসে দেখে রেজা সোফায় বসে টিভি দেখছে।
কি রে, তুই আমাকে লাইবেরিতে বসিয়ে রেখে আবার কোথায় ডুব দিয়েছিলি?
সংক্ষেপে সাবিহার কথা জানাল। শুনে রেজা বলল তুই পরীক্ষা হলেই এখান থেকে চলে যাবি আর তাছাড়া সে ইন্ডিয়ান কাজেই কি হবে তার কথা ভেবে?
পরীক্ষার কথা বলছিস কেন? পরীক্ষা হয়ে গেলে এখানে থেকে যাব আর সে ইন্ডিয়ান তাই কি হয়েছে? এমন বিয়ে হয় না? দরকার হলে এখানেই সেটল করব!

কি জানি ভাল করে ভেবে দেখ। একদিন একটুখানি দেখেই এমন হুট করে সিদ্ধান্ত নেয়া কি ঠিক হবে আর তুই এক তরফা ভাবলেইতো হবে না। সে কে কি এগুলি জানতে হবে না? তার সম্মতির প্রয়োজন নেই ভেবেছিস? ওভার সিজ বিয়ে বড় কঠিন বিয়ে জানিস না? অনেক হাঙ্গামা পোয়াতে হয়! তবে একটা ব্যাপার তোর পক্ষে আছে, সে মুসলিম।
দেখ আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি, ওর সম্মতি পেলে আমি ওকে নিয়ে দরকার হলে এখানেই সেটল করব।
তুই কি পাগল হয়ে গেলি?
কেন হব না বল? তুই যদি ওকে দেখতি তাহলে তুইও তাই হতি!
যাক বাবা না দেখে ভালই হয়েছে। এখনও আমার অনেক কাজ বাকি আছে। তাছাড়া হয়ত তোর সাথে কাড়াকাড়ি লেগে যেত। এখন চল খাবো, তোর জন্যে বসে আছি।

৮।
সকালে ঘুম থেকে উঠে চটপট কর্ণ ফ্লেকস আর দুধ দিয়ে নাশতা সেরে পায়ে হেঁটেই ক্লাসে চলে গেল। গত সন্ধ্যার কথা মনে করে সদ্য কেনা নতুন পোষাক পরেই বের হয়েছে। হাতের গ্লোভস, গলায় স্কার্ফ নিতে ভুলেনি। ক্লাস শেষে রুম থেকে বেরিয়ে আসার পথে মালয়েশিয়ার নাজিয়ার সাথে আলাপ হলো। করিডোর ধরে হাঁটছে আর কথা হচ্ছে। নাজিয়া এখান থেকেই গ্রাজুয়েশন করেছে। ওর বার করার ইচ্ছে নেই মাস্টার্স হলেই দেশে চলে যাবে।
কেন, চলে যাবে কেন?
আমার হবু বর সময় দিতে চাইছে না।
ও, আচ্ছা এই ব্যাপার! যাক তবুও তোমার সাথে একটা বছর কাটাতে পারব। আমি নতুন এসেছিতো তাই মনে একটু ভয় কাজ করছে।
ঠিক হয়ে যাবে এসব ভয় কয়েকদিন থাকে মাত্র। একদিন দেখবে তুমিই নতুনদের পরামর্শ দিচ্ছ।
চল কফি খাই!
হ্যাঁ খেতে পারি, উফ! যা শীত পড়েছে! এখানে কি এমন শীত পড়ে?
এইতো নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় এমনই থাকে। নিউ ক্যাসেলে প্রায় সারা শীত জুরেই স্নো থাকে, স্নো না হলে বৃষ্টি। বিশ্রী আবহাওয়া। এপ্রিলে স্প্রিং তখন অনেকটা কমে যায় আর সেই সাথে কাপড় চোপরের বোঝাও হালকা হতে থাকে।

৯।
কথা বলতে বলতে ওরা ক্যাফেটেরিয়াতে এসে জানালার পাশে বসল। আজ ভীষণ শীত পড়েছে গতকালের চেয়েও বেশি। বারে ঢুকে দুইজনে দুই কাপ কফি নিয়ে একটা টেবিলে বসতে বসতে বাইরের দিকে তাকিয়ে নাজিয়া বলল
দেখবে আজ স্নো পড়বে।
আমি কলকাতায় বড় হয়েছি তাই কখনও স্নো দেখিনি
স্নো দেখতে ভারি সুন্দর লাগে, আমাদের দেশেও স্নো হয় না এমনকি ওখানে তেমন শীতই পড়ে না
আমাদের দেশে কাশ্মীর, অরুণাচল প্রদেশেও স্নো পড়ে কিন্তু আমি ওদিকে কখনও যাইনি, ভাল হয়েছে এবার দেখব
সাবিহার কথা শেষ হবার আগেই বাইরে বাতাসের ঝাপটা শুরু হলো আর তার সাথে সাদা তুলোর মত স্নো ভেসে ভেসে পড়ছে দেখে নাজিয়া বলল
দেখ, বলতে না বলতেই শুরু হয়ে গেল। কতদিন থাকবে কে জানে!
সাবিহা ঘুরে দেখল।
বাহ! বেশ সুন্দরতো! আমার মনে হচ্ছে বাইরে যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। উঠে জানালার পাশে দাঁড়াল। জান আমরা কলকাতায় বৃষ্টিতে ভিজতাম। ঝুম বৃষ্টি হলে বাড়ির সবাই ছাদে চলে যেতাম, এখানে যেতে পারব?
বলে নাজিয়ার মুখের দিকে তাকাল
না না খবরদার, ভুলেও কখনও এমন কাজ করবে না, নির্ঘাত মারা পড়বে! তবে তুমি ছাতা মাথায় পথে হেঁটে যেতে পারবে। ভাল কথা! তুমি কি থার্মাল জুতা কিনেছ? এখানে কিন্তু গরম জুতা ছাড়া স্নোর উপরে হাঁটবে না।
হ্যাঁ, কালই কিনেছি।
তুমি থাকছ কোথায়?
এখানেই, ওয়েস্ট গেট রোডে
এখানে কিন্তু ভাড়া বেশি! কত দিতে হবে?
সপ্তাহে ৫০ পাউন্ড
বল কি! আমি দেই মাত্র ২০ পাউন্ড!
কোথায়, কেমন করে?
আমি এখানে থাকি না, সাউথ শিল্ডে থাকি ওখানে এক রুমের একটা ঘর নিয়েছি তাতে আমি আর নেপালের জয়া দুইজনে মিলে থাকি তাতে আমাদের ২০ পাউন্ড করে চল্লিশ পাউন্ড হলেই হয়ে যায়। তুমি নতুন এসে এখানে নিয়ে নিয়েছ এটা ঠিক আছে কিন্তু পরে দেখে শুনে কাউকে পেলে সাউথ শিল্ডে থাকার ব্যবস্থা করতে পার এতে তোমার অনেক সেভ হবে। ওখানে কম দামে জিনিস পত্র পাবে, পাশেই আবার আজদা সুপার স্টোর আছে, খুব সহজেই সব কিছু হাতের নাগালেই পাবে।
সাবিহা একটু ভেবে দেখল, মনে হলো কাল মাহমুদও বলছিল ও সাউথ শিল্ডে থাকে।
হ্যাঁ তাহলেতো ভালই হয়, তুমিও একটু দেখবে কাওকে যদি পাও
হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই দেখব।

১০।
ওরা কফি খাচ্ছে এমন সময় কয়েকটা ছেলে এসে ঢুকল তাদের সাথে নেয়ামত উল্লাহ মাহমুদও ছিল। প্রথমে সাবিহাকে লক্ষ করেনি। বারের সামনে যেয়ে সবাই এক সাথে হৈ চৈ করতে করতে যার যার কাপ নিয়ে এসে বসার
জায়গা খুঁজছে এমন সময় হঠাৎ করে সাবিহার দিকে চোখ গেল।

আরে! সাবিহা তুমি?
হ্যাঁ এইতো
মাহমুদ নিজের কাপ নিয়ে সাবিহাদের টেবিলেই বসে পড়ল
তারপর বল কেমন চলছে
এইতো চলছে আরকি, ও হ্যাঁ! এ হলো আমার ক্লাস মেট নাজিয়া
আমি মাহমুদ
যাক আজ তাহলে রেডি হয়ে বেরিয়েছ!
হ্যাঁ, আসলে আমি আগে বুঝতেই পারিনি, এই নিয়েই নাজিয়ার সাথে আলাপ করছিলাম
ওদিক থেকে একজন মাহমুদকে ডাকল
মাহমুদ সরি, আসছি বলে উঠে গেল
নাজিয়া জিজ্ঞেস করল, আগে চিনতে?
না, এইতো মাত্র গতকাল আলাপ হলো।
কফি শেষ হলে নাজিয়া বলল আমাকে একটু বের হতে হবে, আমি উঠি?
হ্যাঁ চল, বলে সাবিহাও উঠে এলো। বের হবার আগে পিছনে তাকাল। মাহমুদ ওদের বেরিয়ে যাওয়া দেখছে, ওকে ইশারায় কি যেন বলে গেল।

১১।
এভাবে বেশ কয়েকদিন আসতে যেতে এখানে ওখানে প্রায়ই দেখা হয়। হাই! হ্যালো! ব্যাস, এই পর্যন্তই। দুইজনেই মনে মনে আলাপ করার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে কিন্তু সে সুযোগ আর হয়ে উঠছে না। একদিন রবিবারে ঝুর ঝুর করে স্নো ঝরা দুপুরে জানালার পাশে সোফায় বসে রাস্তার ও পাশে গোরস্তানের বিশাল ওক গাছের দিকে তাকিয়ে ভাবছিল। নাদিমের কথা মনে আসছিল কিন্তু ইচ্ছে করেই চেপে রাখার চেষ্টা করছে। কাছে ভিড়তে দিতে চাইছে না। নাদিমকে যা ভেবেছিল আসলে সে তা নয়। সাবিহা কিছুতেই ভেবে পায় না এমন একজনের সাথে সে কেমন করে জড়িয়ে পড়ল! এখানে চলে এসে ভাল হয়েছে। নয়ত কখন কোন অসতর্ক মুহূর্তে কোন ঝামেলায় জড়িয়ে যেত কে জানে? মানুষ কি সবসময় সতর্ক থাকতে পারে? মান সম্মান, পরিবারের মর্যাদা সব ধুলায় মিলিয়ে যেত। পরিণতি কি হোত ভাবতেও শিউড়ে উঠছে। কলকাতায় ফেলে আসা দিনের কথা যতই দূরে সরিয়ে রাখতে চায় কিন্তু কেন যেন বারবার জানালায় এসে উঁকি দেয়। এত দিনের সঞ্চিত কত স্মৃতি, কত কথা, কত মান অভিমান, সব কি ইচ্ছে করলেই মুছে ফেলা যায়? নানা ভাবে নানা দিক দিয়ে ভেবে এক সময় সোজা হয়ে দাঁড়াল। না, আমাকে সে সব দিনের কথা ভুলে যেতেই হবে! ভাবতে ভাবতেই কখন যেন মাহমুদ সামনে এসে দাঁড়াল। মনের দরজা আপনা আপনিই খুলে গেল। এতদিন তুমি কোথায় ছিলে? তাহলে কি তোমার জন্যেই আমি কলকাতা ছেড়ে এখানে এসেছি? সব চেয়ে ভাল লাগে মাহমুদের প্রাণ খোলা হাসি আর ছোট্ট শিশুর মত সরলতা। না হলে কি কেও প্রথম দেখায় এমন করে কোন অচেনা মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলতে পারে? না না এ আমি কি ভাবছি? যাকে চিনি না, যার কিছু জানি না তাকে একদিন মাত্র দেখে এভাবে প্রশ্রয় দেয়া যায় না। স্নো ঝরার গতি আস্তে আস্তে বাড়ছে। দেখি, উঠে জানালার পাশে দাঁড়াল। রাস্তায় স্নো জমে সাদা হয়ে গেছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে জীবনের প্রথম স্নো দেখছে। আশেপাশের গাছগাছালির ডালে স্নো জমেছে। বাড়ি ঘরের ছাদও সাদা হয়ে গেছে। ভীষণ ভাল লাগছে দেখতে। কিন্তু মাহমুদকে নিয়ে আর ভাববে না মনে করলেও মন থেকে কিছুতেই মাহমুদকে দূরে সরাতে পারছে না। বারবার মাহমুদই সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। এমন হচ্ছে কেন?

১২।
প্রথম দেখার দিন থেকেই মাহমুদ সাবিহাকে এক মুহূর্তের জন্যেও ভুলতে পারছে না। সেদিন ক্যাফেটেরিয়াতে দেখা হলে ভেবেছিল সঙ্গীদের বিদায় করে কিছুক্ষণ আলাপ করবে কিন্তু তার আগেই উঠে গেল। এর পরে দেখা হয়েছে কিন্তু সে কয়েক পলকের জন্য শুধু চোখের দেখা। কথা বলার জন্য মনটা ভীষণ উদগ্রীব হয়ে রয়েছে কিন্তু কোথায় কেমন করে? জীবনের প্রথম ভাল লাগা! সাধের সাজান বাগানের প্রথম গোলাপের প্রথম কলি! কত ভাবেই যে দেখতে ইচ্ছে করে তার কি কোন সীমা আছে? না আছে কোন স্বতঃসিদ্ধ! দেখতে কেমন, সুবাস কেমন কত কি মনে হয়। পাপড়িগুলি একটু হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে ইচ্ছে করে। কেন এমন হয়? কিছুতেই কোন ব্যাকরণ কিংবা থিউরিতে ফেলতে পারছে না। গত ছাব্বিশটা বসন্ত কোথা দিয়ে কেমন করে কেটেছে কখনও ভেবে দেখেনি, ভাবার মত তেমন সুযোগও আসেনি। এত দিন লেখা পড়া নিয়েই ব্যস্ত ছিল। এর বাইরে যে আরও কিছু আছে সে কোনদিন চোখ মেলে দেখেনি। পৃথিবীটা যে এত সুন্দর তা কোনদিন তাকিয়ে দেখেনি। এর আগে এমন কেও এসে তার মনে দোলা দিতে পারেনি, তেমন কোন সুযোগও আসেনি। হয়ত কেও এসেছিল কিন্তু সে বুঝতেই পারেনি! আজ মনে হচ্ছে সাবিহা তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিয়েছে, তার চোখ খুলে দিয়েছে। যে চোখ দিয়ে সে দেখতে পাচ্ছে এই সুন্দর পৃথিবী। পৃথিবী এখন অনেক সুন্দর লাগছে। চারিদিকে কত গান, কত সুর, কত রঙ যেন মন ভরে আছে! তবে কি সে সাবিহার প্রেমে পড়েছে? এই কি তাহলে প্রেম? প্রেম কি এমন হয়? একদিন একটুর জন্যে না দেখলেও মন কেমন করে! শীতের ন্যাড়া পপলার গাছ গুলিও এখন সুন্দর লাগছে, সাউথ শিল্ড থেকে আসার পথে মেট্রো ট্রেনের ইঞ্জিনের শব্দ এখন গানের মত মনে হয়, আকাশটাও যেন অনেক বেশি নীল মনে হয়, মনে হয় যেন সারা বছর ধরেই সোনালী বসন্তের চেরি ফুল ফুটে রয়েছে।

১৩।
কয়েকদিন পরে দুপুরে ক্লাস শেষ করে সাবিহা সিভিক সেন্টারে গেল। ভিতরে ঢুকে দেখে মাহমুদ বইয়ের সেলফে কি যেন খুঁজছে। সাবিহার পায়ের শব্দ পেয়ে ঘুরে থমকে দাঁড়াল।
তুমি? ভাল আছ? অনেক দিন দেখি না!
অনেক দিন কোথায়? এইতো মাত্র কয়েক দিন!
কি বল? আমার মনে হচ্ছে কত দিন দেখা হয় না তোমার সাথে!
কি যে বল, প্রতিদিনইতো ক্লাসে আসছি, কই আমিওতো তোমাকে দেখি না, কোথাও গিয়েছিলে?
না না কোথায় যাব? ক্লাস চলছে না? সামনে পরীক্ষা
কবে?
সেপ্টেম্বরে
সাবিহা হেসে ফেলল। যেন এক সাথে অনেকগুলি পিয়ানোর তারের ঝংকার সারা ঘর জুরে অনুরণিত হচ্ছে। এমনিতে ঘরে শুধু কয়েকটা রুম হিটারের মৃদু গুঞ্জন ছাড়া আর কোন শব্দ নেই।
ও! সেতো অনেক দূর! এর মধ্যেই পরীক্ষার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছ?
মাহমুদ অবাক হয়ে সাবিহার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। মানুষ এমন সুন্দর করে হাসতে পারে!
কি হলো, কি দেখছ
সত্যি বলব?
হ্যাঁ তাইতো বলবে, শুধু শুধু মিথ্যে বলবে কেন?
সত্যি কথা বললে বলতে হয় আমি তোমার হাসি দেখছিলাম। তুমি এত সুন্দর করে হাসতে পার? এত সুন্দর হাসি জীবনে এই প্রথম দেখলাম তাই অবাক হয়ে দেখছিলাম।
কি যে বল! তুমিও কিন্তু সুন্দর করে হাসতে পার। আচ্ছা, বল কি খুঁজছিলে?
একটা রেফারেন্স খুজছিলাম, একটু বসবে? চল একটু বসি!

এখানে? একটু ভেবে বলল, চল
দুই জনেই পাশের ওয়েটিং লাউঞ্জে গিয়ে একটা সোফায় পাশাপাশি বসল। সময় যাচ্ছে কিন্তু কেও কিছু বলছে না। মাঝে মাঝেই এ ওর দিকে শুধু তাকাচ্ছে, চোখে চোখ পড়লেই আবার চোখ সরিয়ে নিচ্ছে। নীরব। আপ-অন-টাইন নদী দিয়ে যেমন পানি গড়িয়ে যাচ্ছে তেমনি সময়ও বয়ে যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে কারো কোন খেয়াল নেই। এক সময় সাবিহা একটু হেসে জিজ্ঞেস করল
কি হলো, কিছু বলছ না তাহলে এখানে আসলে কেন?
তাইতো! বলত কি বলব? এখানে কেন এসেছি?
তুমিই না এখানে নিয়ে আসলে!
তাই নাকি?
কি হলো ভুলে গেলে? তুমি কি কিছু ভাবছ?
হ্যাঁ অনেক কিছু ভাবছি!
কি ভাবছ?
তোমার কথাই ভাবছি
আমার কথা আবার কি ভাবছ?
আচ্ছা, একটা কথা বলব?
কি বলবে বল
What is love?
সাবিহা আবার হেসে উঠল। আবার পিয়ানোর তারে ঝংকার বেজে উঠল। মাহমুদ আবার অবাক হয়ে সাবিহার মুখের দিকে তাকিয় রইল।
আবার কি দেখছ অমন করে?
কই, আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না?

সাবিহা হঠাৎ করেই যেন কোথায় হারিয়ে গেল। অনেকদিন ধরে যে কাল মেঘ তার মনের আকাশে ছেয়ে আছে সেই মেঘের ছায়া ছড়িয়ে গেল চোখে মুখে। সে মাহমুদের এই প্রশ্নের কি জবাব দিবে?
কি হলো কিছু বলছ না?
কি বলব বল?
সাবিহা জানালা দিয়ে বাইরে ঝুর ঝুর করে ঝরা তুষারের দিকে তাকিয়ে উদাস কণ্ঠে বলল
আসলে প্রেম এক এক জনের কাছে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ধরা দেয়। কেও দুমড়ে মুচরে আছরে ফেলে, আবার কেও অনন্ত কাল ধরে এর তপস্যা করে আবার কেউ এটাকে গোলাপের মত সুন্দর করে সাজিয়ে রেখে মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকে। এর কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। যে যে ভাবে নেয় তার কাছে তাই।
যেমন?

যেমন! সাগরের অশান্ত ঢেউয়ে কোন নাবিক তার জাহাজ রক্ষা করতে পারে না জাহাজটা ডুবে যায় আর নিরুপায় নাবিক তার অক্ষমতার ফল চেয়ে চেয়ে দেখে তেমনি, আবার কখনও নীরবে বয়ে যাওয়া শান্ত নদীর মত আবার কখনও শিশির সিক্ত গোলাপের মত স্নিগ্ধ। তোমরা জোসনা দেখ? ভরা পূর্ণিমার জোসনা দেখেছ কখনও? শীতের কুয়াশা ভেজা জোসনা! দেখেছ কখনও?
মাহমুদের মুখে কোন কথা নেই।
এক নাগারে কথা গুলো বলে সাবিহা মাহমুদের দিকে তাকাল। মাহমুদ অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিল ওকে শান্ত সুবোধ কোন অবুঝ শিশুর মত দেখাচ্ছিল। সাবিহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে। আবার কারও মুখে কোন কথা নেই। আবার নিস্তব্ধ। অনেক, অনেক দূর থেকে ভেসে আসা অচেনা কোন সুরের মূর্ছনায় উভয়েই মগ্ন। উভয়ের মনই দুরন্ত গতিতে ছুটছে অজানা কোন নিরুদ্দেশের পথে। কে কোথায় যাবে?

এবারও সাবিহা প্রথমে কথা বলল
চল অনেক হয়েছে, এবার উঠি।
সাবিহা উঠে দাঁড়াল। মাহমুদও উঠে দাঁড়াল। যে কথা কোনদিন কাওকে বলতে পারেনি, বলা হয়নি এমনিকি এমন কথা কাওকে বলা যায় তাও কোন দিন ভেবে দেখেনি। এক মুহূর্ত ভেবে সংগে সংগে টেবিলের এ পাশ থেকে হাত বাড়িয়ে সাবিহার হাত ধরে বলল
Sabiha, I am in love with you! এই মাত্র যে গোলাপের কথা বললে আমি তোমার মুখে তাই পেয়েছি, তুমিই সেই গোলাপ
সাবিহা চমকে উঠে ধপাস করে বসে পরল। মাহমুদের হাতে ওর হাত যেভাবে ছিল তেমনিই রইল। সাবিহা ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করল না।
মুহূর্তের জন্য চুপ থেকে বলল, চল আজকে উঠি
মাহমুদ আবার বসে বলল, তুমি কিছু বলবে না?
কালকে আবার দেখা হবে।
কোথায়?
অনেক, অনেক দূর থেকে ভেসে আসা অচেনা কোন সুরের মূর্ছনায় উভয়েই মগ্ন, নিশ্চুপ। শুধু এ ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে। সাবিহা কথা বলল
এখানেই।

১৪।
পরের দিন বিকেলে ক্লাস শেষ হতে চাচ্ছে না। সময় যেতে চায় না। মনে হচ্ছে সময় যেন স্থির হয়ে আছে, ঘড়ির কাটা কে যেন বন্ধ করে দিয়েছে। তবুও এক সময় ঘড়ির কাটার হিসেব করে সাবিহার ক্লাস শেষ হলো।
মাহমুদের ক্লাস দুপুরেই শেষ করে দুইটার মধ্যে সিভিক সেন্টারে এসে দরজার দিকে মুখ করে বসে আছে। রাস্তার মাঝ খানে ইঞ্জিন বিকল হয়ে রেল গাড়ি যেমন থেমে থাকে কোন দিকে যেতে পারে না তেমনি মনে হচ্ছে আজকের দিনটাও থেমে আছে। স্নো পড়ছে বলে সূর্যের দেখা নেই কয়েকদিন থেকেই। হে মার্কেটের টাওয়ারের ঘড়িটাও কি কেও বন্ধ করে রেখেছে নাকি? তাহলে বিকেল হচ্ছে না কেন? অপেক্ষা অত্যন্ত ভয়ংকর। সেটা যদি হয় কোন প্রিয়জনের জন্যে তাহলে আরও বেশি ভয়ংকর। বুক ঢিব ঢিব করার শব্দ কাছের যে কেও শুনতে পায়, ঘন ঘন গলা শুকিয়ে আসে আর কেমন যেন এক অচেনা অনুভূতি হয়। কোথাও স্থির হয়ে বসার উপায় থাকে না, বারবার উঠছে আবার বসছে। উঠে জানালা দরজার কাছে দিয়ে ঘুরে এসে আবার বসছে, হাতের ঘড়ি দেখছে, কিছুই ভাল লাগছে না। প্রতিবারে দরজা খুলে যেই ঢুকছে তাকেই দেখছে। প্রতীক্ষার উৎকণ্ঠায়, উত্তেজনায় চোখ, ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে তখন দরজা খোলার শব্দ পেয়ে তাকাল। দেখল এক ইয়া মোটা মহিলা রুমে ঢুকছে এবং পিছনে তার প্রতীক্ষিত সাবিহা মাথার টুপি খুলতে খুলতে রুমে ঢুকছে। মাহমুদ বিশাল এক হাফ ছাড়ল।
সময় হলো তোমার?

কি করব বল সাড়ে চারটে পর্যন্ত ক্লাস ছিল টিচার বের হবার সাথে সাথেই এক দৌড়ে চলে এসেছি, তুমি কখন এসেছ?
সে কথা আর বলো না, সেই দুইটা থেকে বসে আছি
বল কি, তোমার ক্লাস ছিল না?
ছিল, দেড়টায় শেষ হয়েছে
তাই বলে এতক্ষণ ধরে বসে ছিলে? আশ্চর্য! চল বসি
কোথায় বসবে?
কেন কাল যেখানে বসেছিলাম
না আজ এখানে নয়, এখানে ফিস ফিস করে কথা বলতে হয়, চল সেই কফি শপে যাই
চল। সাবিহা মাথার টুপি পড়ে হাতের গ্লোভস পড়তে পড়তে মাহমুদের পিছনে চলল।
বাইরের রাস্তা পাড় হয়ে সেদিনের সেই কফি শপে গিয়ে বসল। কয়েকদিন থেকেই অনবরত স্নো পড়ছে। রাস্তায় বরফ জমে গেছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় লোকজন তেমন বাইরে নেই। দোকান প্রায় ফাকা। সুবিধা মত জানালার পাশে একটা টেবিলে দুইজনে মুখোমুখি বসল।
কফির সাথে আর কিছু খাবে?
হ্যাঁ ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে
আমারও। মাহমুদ উঠে বারে গেল।

সাবিহা ভাবছিল, ঝোঁকের মাথায় কাল বলে দিয়েছি আজ দেখা হবে কিন্তু এখন ওকে কি বলব? একটু পরেই জিজ্ঞেস করবে। এমনও হতে পারে কফি নিয়ে এসে বসার আগেই জিজ্ঞেস করবে। তখন? সাবিহা এত ভাবলে কি হবে? স্নো পড়ে রাস্তায় জমে বরফ হবার আগে যেমন ঝুর ঝুরে দানার মত হয় তেমনি করেই সাবিহার মনেও মাহমুদের ছায়া দানা বাধতে শুরু করেছে। হয়ত কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটা জমে স্নিগ্ধ শীতল নীলচে আভা মেশান স্বচ্ছ বরফ হয়ে যাবে। তবুও ভাবছে, কি বলব, কি করব এখন?
সত্যিই, একটু পরেই দুই হাতে দুই ট্রে নিয়ে মাহমুদ টেবিলের কাছে এসে ট্রে নামাবার আগেই জিজ্ঞেস করল
তুমি এখনও বললে না?
কি বলব?
কাল যে আমি বললাম, আমার কথার জবাব দিবে না?
আজই বলতে হবে?
আজ নয় এখনই
আমাকে একটু ভেবে দেখার সময় দিবে না?
না। বলেই মাহমুদ একটু এগিয়ে সাবিহার হাত ধরে বলল
জান, আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি শুধু তোমার জবাবের অপেক্ষায় প্রহর গুনেছি। যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছি সেদিন থেকেই আমার সব কিছু ওলট পালট হয়ে গেছে।

সাবিহা অনেকক্ষণ চুপ করে আছে কোন কথা বলছে না। সামনে টেবিলে স্যান্ডউইচ আর কফি ঠাণ্ডা হচ্ছে। আচ্ছা ঠিক আছে আগে খেয়ে নাও, চল শুরু কর বলে একটা স্যান্ডউইচ সাবিহার হাতে তুলে দিল।
উভয়েই চুপচাপ খাচ্ছে। এবার কফির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে মাহমুদ সাবিহার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
আমার জবাব কিন্তু এখনও পেলাম না! আমি আর দেরি করতে পারছি না, প্লিজ কিছু বল সাবিহা, চুপ করে থেক না
তোমার জবাব শোনার আগে যে তোমাকে আরও কিছু শুনতে হবে!
বল, তুমি যাই বলবে আমি শুনব
আমাকে আর কয়েকটা দিন একটু ভাবার সময় দাও
না না, সময় দেয়া যাবে না, তোমাকে এখনই বলতে হবে। প্লিজ সাবিহা তুমি বোঝার চেষ্টা কর
আস্তে আস্তে সাবিহা কফির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে বলল
তুমি জান আমি কে?
এটা আবার কেমন কথা বললে? তুমি সাবিহা খানম, ফ্রম ইন্ডিয়া
হ্যাঁ সে কথা ঠিক কিন্তু আমার একটা ইতিহাস আছে সে ইতিহাস তুমি জানবে না?

আমি কিছুই শুনতে চাই না। ইতিহাস আবার কিসের? ইতিহাস জেনে কি হবে? আমি ইতিহাস চাই না আমি তোমাকে চাই
এ কথা না জানালে তোমাকে প্রতারণা করা হবে আর আমি সেটা পারব না। শোন মাহমুদ, কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে যে তোমাকে সব জানতে হবে! আমার পিছনের কাহিনী কোন সরল সোজা কাহিনী নয়
কফির পেয়ালা এক পাশে সরিয়ে রেখে বলল, বল তাহলে কি বলতে চাইছ। তোমার মত মেয়ের এমন আর কি কাহিনী থাকতে পারে বল শুনি
এর মধ্যে সাবিহা কফি শেষ করে টেবিলের এক পাশে খালি পেয়ালা সরিয়ে রেখে একটু প্রস্তুতি নিয়ে বলতে শুরু করল। একে একে নাদিমের সাথে পরিচয় থেকে শুরু করে দীর্ঘ পাঁচ বছরের কথা সব বলল। এমনকি এখানে আসার আগের বিকেলে বেহালার কফি শপের কথা সব খুলে বলল। সব কথা বলা হলে সাবিহা ক্লান্ত হয়ে বলল আর একটা কফি আনবে?

মাহমুদ সঙ্গে সঙ্গে উঠে গেল। একটু পরে কফি নিয়ে এসে বলল
দেখ সাবিহা, এতক্ষণ তুমি যা বলেছ আমি তার প্রতিটি বর্ণ শুনলাম কিন্তু তুমি এটাকে আমাদের মাঝে টেনে আনছ কেন? তুমিতো সে ইতিহাস মুছে ফেলেছ! আর তাছাড়া সে এখন অতীত। অতীত নিয়ে কি ভবিষ্যৎ বা বর্তমান চলে? অতীততো এক সময় এমনি এমনিই মুছে যায়, সে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যে ভাবেই হোক। এমন করে ভেবে নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছ? চল, এখন থেকে তুমি একা নও আমি তোমার সাথে আছি, এভাবেই নিজেকে বুঝিয়ে নাও। আমরা দুজনে মিলে এগিয়ে যেতে পারব না?

সাবিহা চুপ করে ওর কথা শুনল। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। কি করবে কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। অনেক, অনেক দূর থেকে ভেসে আসা অচেনা কোন সুরের মূর্ছনায় মগ্ন। কি বলবে?
কি হলো, কিছু বল, পারব না?
কয়েক মুহূর্ত নীরব থেকে সাবিহা মাথা নিচু করে আস্তে বলল, পারব।
কি বললে একটু জোরে বল
এবার সাবিহা মাথা উঁচু করে ওর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, পারব
মাহমুদ চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে উঠে সাবিহার দুই হাত ধরে চিৎকার করে বলল
ওহ! সাবিহা! তুমি আমাকে বাঁচিয়েছ!
মাহমুদের চিৎকার শুনে বার থেকে মেয়েটা বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল
এনি প্রবলেম?
নো নো এভরি থিং অলরাইট! নো প্রবলেম!
শোন, আমি আজই বাড়িতে ফোন করে জানাব। তোমার ছবি পাঠাব।
পকেট থেকে মোবাইল বের করে সাবিহার কয়েকটা ছবি নিয়ে নিল।
আমি মাকে সব জানাব। তোমার কথা সব বলব।
মাহমুদের দিকে তাকিয়ে বলল
চল, তাহলে এবার উঠি
চল।

১৫।
সাবিহাও বাড়িতে বাবাকে জানিয়েছে কিন্তু প্রথমে বাবা সাবিহার মার সাথে আলাপ করে মৃদু অসম্মতি জানিয়েছিল।
কেন, ইন্ডিয়াতে কি ছেলের অভাব? ভাল ছেলে কি এখানে নেই?
আছে বাবা! তুমি না বলেছিলে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিল! তাহলে?
তারা এসেছিল তেহরান থেকে আর এ হলো আবাদানের
তাতে কি? দেশ জাততো একই!
তাই বলে কি তুই আমাদের ছেড়ে দেশ ছেড়ে যাবি?
তা কেন হবে বাবা? ও বলেছে আমার বার করা হয়ে গেলে তত দিনে ও মাস্টার ম্যারিনার হয়ে যাবে আর তখন আমরা বিয়ে করে এখানেই সেটল করব। মাঝে মাঝে কি আর ছুটিতে ইন্ডিয়া বা ইরানে যাব না? তোমরাও কি এখানে আসবে না? তুমি আমাকে না দেখে কয়দিন থাকতে পারবে বাবা? তুমিতো এখানেই আসতে দিতে চাইছিলে না!
বাবা মায়ের সাথে এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, অনেক যুক্তি তর্ক হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাবা মা উভয়েই সম্মতি দিয়েছে।

১৬।
একদিন মাহমুদ সাথে নিয়ে ওদের বাসায় গিয়ে রেজার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। রেজা ইয়ার্কি করে মাহমুদকে বলল তুই সত্যি কথাই বলেছিলি! আমি ওকে আগে দেখলে সত্যিই পাগল হয়ে যেতাম হয়ত পিছে পিছে ঘুরে মরতাম।
সাবিহা না বুঝে জিজ্ঞেস করল এর মানে কি?
তখন রেজা মাহমুদের প্রথম দেখার গল্প শোনাল।
ও! এই কথা!
আচ্ছা সাবিহা বলত তুমি কাকে বেছে নিতে?
যাকে বেছে নেয়ার তাকেই পেয়েছি, তোমার কি কোন সন্দেহ আছে?
যাক খারাপ করনি, অন্তত আমার বন্ধু একজন উপযুক্ত সঙ্গী পেয়েছে এতেই আমি ধন্য। তোমরা একটু বস আমি চা নিয়ে আসছি, আর কিছু খাবে?
না, তুমি বস আমি নিয়ে আসছি, তোমরাতো প্রতিদিনই নিজেরা করে নাও আজ না হয় আমি করি
না না তাই কি হয় তুমি হলে মেহমান, আমিই যাচ্ছি, বল আর কিছু খাবে?
না, শুধু চা হলেই চলবে।

মাহমুদ এখন সাবিহাক নিয়ে তার নতুন পাওয়া সুন্দর পৃথিবীতে প্রজাপতির মত ঘুরে বেড়াচ্ছে। নানা রকম রঙ্গিন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সাবিহাকে ফোন করে জেনে নেয় আজকে তার কি প্রোগ্রাম। মাঝে মধ্যে নাদিম এসে সাবিহার মনে বৃশ্চিকের মত দংশন করে, সাবিহা ভুলে থাকার চেষ্টা করলেও মনকে বুঝিয়ে উঠতে পারে না। তবে কি সে মাহমুদকে ঠকাচ্ছে, তার সংগে প্রতারণা করছে? নানা চিন্তা এসে ভিড় করে। নিজে কোন দিশা না পেয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা করে মাহমুদকে জানাল। শুনে মাহমুদ হো হো করে হেসে উঠল।
কি যে বল তুমি! যেই আসুক তাতে হয়েছেটা কি? এখন থেকে শুধু তুমি আর আমি, এর বাইরে আর কিচ্ছু নেই আর কিছুই ভাববে না।
কিন্তু ও যে আমার পিছু ছাড়ছে না!
তাতে কি হলো? তোমাদের দেশে ছেলেরা মেয়েদের পিছু নেয় না? অবশ্য শুধু তোমাদের দেশের কথা বলছি কেন সব দেশেই মেয়েরা বড় অসহায় সবসময় নিরাপত্তাহীণতায় ভুগে। ছেলেরা সব সময় মেয়েদের পিছু নিয়েই থাকে। এখন থেকে ওসব নিয়ে মোটেই ভাববে না, forget it forever!
দেখি, চেষ্টা করব তুমি যা বলছ তাই হবে
শোন, একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে
সাবিহা চমকে জিজ্ঞেস করল কি সমস্যা?

এখন বাড়িতে ফোন করলেই অর্ধেক সময় কেটে যায় তোমাকে নিয়ে। মা এটা সেটা নানা কিছু জিজ্ঞেস করে, সাবিহা কি করছে, কেমন আছে, কোথায় থাকে, তুই দেখবি, সবসময় লক্ষ রাখবি, ওর বাড়িতে মা বাবা কেমন আছে এই সব। আমি বলেছি তোমাকে ওর নম্বর দিয়ে দিব তোমার যখন ইচ্ছে হবে তখন তুমি নিজেই ফোন করে নিও। তোমার নম্বর দিব?
এ কথা আবার আমাকে জিজ্ঞেস করতে হবে?
পকেট থেকে মোবাইল বের করে ইরানের আবাদানে মাহমুদের বাড়ির লাইন পেয়ে
হ্যালো মা!
কিরে, কেমন আছিস?
ভাল আছি মা। এই দেখ তুমি যার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলে তাকে নাও। বলেই মোবাইলটা সাবিহার হাতে দিয়ে দিল।
হ্যালো,
হ্যালো, কে সাবিহা?
এর পর থেকেই প্রায় প্রতি রবিবারে নিয়মিত ভাবে মাহমুদের মা সাবিহাকে ফোন করে তার কুশলাদি জানতে চায়, আরও নানা কথা হয়। আমার ছেলে তোমাকে ভালবেসেছে আমি যে কত নিশ্চিন্ত হয়েছি মা তা বোঝাবার নয়। তুমি আমার বৌ হবে, আমার বাড়ির লক্ষ্মী হবে আমি খুউব খুশি। তোমার বাড়ির ফোন নম্বর দিও আমি তোমার বাবা মার সাথে কথা বলব।

১৭।
এর মধ্যে নাজিয়া আর জয়া সাউথ শিল্ডে ওশেন রোডের পাশেআজদা সুপার মার্কেটের সাথেই একটা বাসায় সাবিহার সাথে কলকাতার বাঙালি মেয়ে মৌ মিতার থাকার ব্যবস্থা করেছে। বাসাটা পাবার জন্য মাহমুদ হন্যে হয়ে লেগে ছিল।
ইউক্রেনের এক কাপল বাসাটা প্রায় নিয়েই নিয়েছিল লেটিং এজেন্টের সাথে অনেক জোরাজুরি করে তবে সাবিহাদের পাইয়ে দিয়েছে। এতে করে আসা যাবার পথে মাহমুদের সাথে দেখাতো হয়ই বেশির ভাগ দিনে যেদিন কাছাকাছি সময়ে দুই জনের ক্লাস থাকে বা ক্লাস থেকে ফিরে আসে তখন এক সাথেই আসা যাওয়া করে। এভাবেই দিন মাস গড়িয়ে যায় আর সাথে বয়ে নিয়ে যায় নিউ ক্যাসেলের পাশে দিয়ে বয়ে যাওয়া আপ-অন-টাইন নদীর পানি উত্তর সাগরে। আর সেই সাথে সাবিহা এবং মাহমুদের কাহিনী গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে। ধীরে ধীরে শীতের আমেজ কেটে যাচ্ছে গাছে গাছে নতুন পাতা দেখা যাচ্ছে, কোন কোন গাছে ফুল ফুটেছে, পথের পাশে হলুদ ডেফোডিল ফুটে বসন্তের আগমনী বার্তা জানিয়ে দিচ্ছে, প্রকৃতি তার আপন মহিমায় সেজে উঠছে। শীতের ভারি পোষাকের বোঝা কমছে ছুটির দিনে দুই জনে নানা জায়গায় বেড়াতে যায়। রঙ্গে রঙ্গে অনেক প্রতীক্ষিত সময় গুলো ভরিয়ে দিতে চায়।
সাবিহা একদিন জিজ্ঞেস করল
আচ্ছা তোমার পরীক্ষা হয়ে গেলে অক্টোবরে তুমি এখান থেকে চলে যাবে তখন কি হবে?
কেন? আমি কি আর আসব না ভেবেছ? ব্রিটেন রুটে চলে এমন ইরানি জাহাজ না পেলে দরকার হলে আমি এই দেশের জাহাজেই চাকরি নেব! এতে ভাবনার কিছু নেই। তারপরে আবার যখন মাস্টার ম্যারিনার এর জন্য পরীক্ষা দেব তখন এখানেই আসতে হবে। তোমাকে ছেড়ে কি আমি বেশি দিন থাকতে পারব ভেবেছ? তুমি যে আমার স্বপ্ন, আমার জীবন, যে গোলাপ আমি সারা পৃথিবী খুঁজে পাইনি তুমি যে আমার সেই গোলাপ। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব কি নিয়ে? তুমি আমাকে যেপৃথিবী দেখতে শিখিয়েছ, ভাল লাগতে শিখিয়েছ সে পৃথিবী মিথ্যে হয়ে যাবে না?
একদিন নিউ ক্যাসেল মেট্রো শপিং মলে কেনাকাটা করার সময় দোতলার এক কফি শপে বসে আলাপ করছিল। সাবিহা কথায় কথায় বলল জান মাহমুদ
আমার পূর্ব পুরুষেরা কিন্তু তোমাদের ইরান থেকে ভারতে গিয়েছিল!
তাই নাকি? বল কি? এত দিন বলনি কেন? তাহলে তুমিও ইরানি! তাহলে তোমাকে ইরানে যেতেই হবে। যে গোলাপ ইরান থেকে তুলে নিয়ে ভারতে রোপণ করেছিল কোন দিনের কোন এক মহা পুরুষ আমি সেই গোলাপ আবার ইরানে ফিরিয়ে নিয়ে যাব, ইরানের সম্পদ ইরানেই ফিরে যাবে।

১৮।
ক্যালেন্ডারের পাতায় একদিন সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখ এসে উপস্থিত হলে মাহমুদের পরীক্ষা শুরু হলো এবং দেখতে দেখতে একদিন শেষও হয়ে গেল। এবারে শুরু হলো প্রতিদিন ক্যাফেটেরিয়াতে বসে সাবিহার ক্লাস শেষ হবার অপেক্ষা। প্রতি দিন এসে ক্যাফেটেরিয়ার একটা জানালার পাশের এক টেবিলে বসে থাকে কখন সাবিহা আসবে। সাবিহা আসার সাথে সাথেই উঠে যায়। কিছুক্ষণ কোথাও বসে গল্প করে যার যার মত বাসায় ফিরে আসে। সে গল্প গুলা কোন গতানুগতিক গল্প নয়। কোথা থেকে কোথায় যায় তার কিছুই ঠিক ঠিকানা থাকে না। সামনের দিনগুলো কেমন করে কোথায় কাটবে কি করবে এমনি সব নানা স্বপ্নের কথা, কে কবে কি স্বপ্ন দেখেছে এই সব। কোন দিন রাত দুপুরও হয়ে যায়। সময় সম্পর্কে কারো কোন হুশ থাকে না।

আমার পরীক্ষা আপাতত শেষ কিন্তু তোমার এখনও দেরি আছে তোমাকে ভাল করে পড়াশুনা করে এক বারেই পাশ করে যেতে হবে। ভাল রেজাল্ট না হলে কিন্তু বার করার সুযোগ পাবে না। রেজেল্ট বের হবার আগে ইচ্ছেমত কয়েকদিন ঘোরাঘুরি করল। আশেপাশে যা যা ছিল সব এক এক করে দেখা হল। সান্ডার ল্যান্ড, ডারহ্যাম, ডার্লিংটন সব দেখল কিন্তু এভাবেই একদিন তার যাবার সময় হলো।
তুমি চলে যাবে? তুমি চলে গেলে আমি থাকব কেমন করে? এখানে কোথাও কাজ পাবে না?
হ্যাঁ, না গেলে, চাকরি না হলে যে এক্সপেরিয়ান্স দেখাতে পারব না আবারপরের পরীক্ষাটাও দেয়া হবে না। আর এখানে কাজ পাবার মত এখনও উপযুক্ত হয়ে উঠিনি পরের মাস্টার ম্যারিনার পরীক্ষাটা দিলে তখন পারবো।
আবার কবে আসবে? এত দিন তোমাকে না দেখে থাকব কেমন করে?
আরে পাগল, এত উতলা হলে কি চলবে? আমাদের উভয়ের ভবিষ্যতের জন্য যে এটুক ধৈর্য ধরতেই হবে! মাত্র দুইটা বছর। বলছিতো এর মধ্যে তোমার বার হয়ে যাবে আবার ওদিকে আমার মাস্টার ম্যারিনার পরীক্ষায় এপিয়ার করার সি টাইম হয়ে যাবে। এর মধ্যে জাহাজ এদিকে এলে কি আমি এখানে আসব না?
যদি জাহাজ না আসে?
দেখে শুনে এমন জাহাজ বেছে নিব যে জাহাজ এদিকে আসবে। কখনও এমন হতে পারে জাহাজ লন্ডন কিংবা ব্রিস্টল কিংবা অন্য কোন পোর্টে আসবে তখন তোমাকে আগে থেকে জানিয়ে দিব তুমি সেখানে চলে যাবে।

১৯।
মাহমুদ পাশ করেছে। টিকেট নেয়া হয়েছে। আস্তে আস্তে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছে আর সাবিহার মন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে। নাওয়া খাওয়া অনিয়মিত হচ্ছে, এটা সেটা ভুলে যায়। এসব দেখে মৌ মিতা বুঝতে পেরে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করে।
তোমার মত এমন স্মার্ট মেয়ে এত বোকা কেন বলত?
সে কথা তোমাকে বোঝাব কেমন করে? ওর যাবার কথা শুনে আমার কিচ্ছু ভাল লাগছে না। মনে হয় আমিও সব ছেড়ে চলে যাই
কোথায় যাবে? চলে গেলেই কি এর সমাধান হবে ভেবেছ? তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে, সহ্য করতে হবে এবং সবার পরে পরিস্থিতি মেনে নিতেই হবে।
চেষ্টা করতে চাই কিন্তু পারছি কোথায়? কিছুতেই মন মানতে চায় না
দেখ তুমি খুবই ভাগ্যবতী, মাহমুদ ভাইয়ের মত ছেলেকে পেয়েছ। ওর জন্য তোমাকে মানিয়ে নিতেই হবে,
তুমি যত সহজে বলতে পারছ আমি অত সহজে পারছি না মিতা
তুমি যে কি বল বুঝি না, এমন ছেলের জন্য সারা জীবনও অপেক্ষা করা যায়। কি, মিথ্যে বললাম?
না, সত্যিই বলেছ আমিও বুঝতে পারি কিন্তু মনকে বোঝাতে পারি না ও চলে যাবে মনে হলেই আর কিছু ভাল লাগে না
তাহলে পারবে না কেন বলছ, পারতে তোমাকে হবেই, এমন ছেলে কয়টা মেয়ের জীবনে আসে বলতে পার?

২০।
সকাল দশটায় ফ্লাইট। মাহমুদ রেজার গাড়িতে উঠে সকালেই সাবিহার দরজায় এসে থেমে সাবিহাকে নিয়ে এয়ারপোর্টে গেলো। রেজা গাড়ি চালাচ্ছে আর মাহমুদ এবং সাবিহা পিছনের সীটে। সাবিহা রেজার হাত ধরে শুধু কেঁদেই চলেছে, কিছুতেই থামছে না। মাহমুদ বোঝাচ্ছে কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। এয়ারপোর্টের টিকেট ইত্যাদির কাজ সেরে আসলে রেজা একটু দূরে সরে দাঁড়াল। মাহমুদ সাবিহার পাশে এসে দাঁড়াল আর সাবিহা আবার ওর হাত চেপে ধরল কিছুতেই মাহমুদের হাত ছাড়তে চাইছিল না। জোরে চেপে ধরে রেখেছে যেন
ছুটে না যায়। ইরানীয়ান এয়ারলাইন্সের ডেস্ক থেকে বারবার যাত্রীদেরকে প্লেনে বোর্ড করার জন্য ঘোষণা দিচ্ছিল কিন্তু সে ঘোষণা সাবিহার কানে আসতে পারছিল না। এক সময় মাহমুদ ভেজা কণ্ঠে বলল
ছাড়, যেতে দাও।
না, আমি তোমাকে যেতে দিব না
পাগলামি করে না, আমি যেয়েই ফোন করব। তোমাকে ছাড়া আমার কেমন কাটবে তুমি জান না?
সাবিহা অনবরত কেঁদেই চলেছে কিছুতেই থামছে না। টিসু দিয়ে মাহমুদ বারবার চোখ মুছে দিচ্ছে। সাবিহার কান্না মাহমুদের মধ্যেও সংক্রমিত হলো। মাহমুদও নিজেকে সামাল দিতে পারল না। তার চোখ দিয়েও কয়েক ফোটা জল সাবিহার হাতে পড়ল। তাই দেখে সাবিহা উতলা হয়ে উঠল। একি! তুমি কাঁদছ কেন? ছি! পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই বলে স্কার্ফের আঁচল দিয়ে মাহমুদের চোখ মুছতে মুছতে বলল প্রতিদিন ফোন করবে। বিদায়ের আগে মাহমুদের বুকে, তার পৃথিবীর বুকে মাথা রেখে পৃথিবীর উষ্ণতা অনুভব করতে চাইল কিন্তু তার অবচেতন মন তাকে থামিয়ে দিল। এত দিনের সংস্কার আর বিশ্বাস সাবিহাকে এগিয়ে যাবার সায় দিতে পারল না, সে সময় এখনও আসেনি। এবার শেষ ঘোষণা শুনে মাহমুদ শক্ত হলো। সাবিহার কানের কাছে মুখ এগিয়ে বলল এবার যেতে দাও!
সাবিহা অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে হাতটা ছেড়ে দিল। শুধু বলতে পারল সাবধানে থেকো। মাহমুদের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল চোখে জল টলমল করছে।
মাহমুদ আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল সিকিউরিটি গেটে। রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে শুধু কাঁদছে। রেজা পাশে এসে বুঝিয়ে শুনিয়ে পাশে দাঁড়িয়েই রইল। এক সময় হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সাবিহা রেজার সাথে বাসায় ফিরে এলো। রেজা ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে কাঁদতে নিষেধ করে চলে গেল। মাহমুদ উড়ে চলল ইরানের আবাদান বিমান বন্দরের পথে।

২১।
আবাদান নেমে দেখে বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে মা অপেক্ষা করছে। গাড়িতে উঠে বসার আগে সাবিহার নম্বরে ফোন করে মায়ের হাতে ফোনটা দিয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

ফোনটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, কে?
দেখ কে!
হ্যালো,
মাহমুদের মায়ের কণ্ঠ শুনে সাবিহা নিজেকে সংযত করতে চাইল। ক্ষীণ কণ্ঠে হ্যালো বলে জিজ্ঞেস করল মা বলেন আপনি কেমন আছেন, আপনার ছেলে পৌঁছেছে?
সাবিহার ভারি কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারল ও কাঁদছিল। হ্যাঁ ও পৌঁছেছে কিন্তু তুমি কাঁদছ কেন মা?
এ পাশে নিশ্চুপ। শুধু মাঝে মাঝে সাবিহার ফুঁপানির শব্দ শুনতে পারছিল।
আমি এখন কি করে থাকব? এখানে আসার পর থেকেই ও আমাকে কোনদিন কিছু করতে দেয়নি। সব কিছু ওই করে দিয়েছে। আমার ভারি একা লাগছে মা, অসহায় মনে হচ্ছে!
না না এমন করে ভেঙ্গে পড়তে নেই, তোমাকে শক্ত হয়ে ওর জন্য প্রস্তুত হতে হবে, তুমি না মায়ের জাত! তুমি ভেঙ্গে পড়লে ওকে কে দেখবে? ও কাকে নিয়ে জীবন কাটাবে। ও যে তোমাকে ভীষণ ভালবাসে!
হ্যাঁ মা আমাকে শক্ত হতেই হবে।

২২।
মাস ছয়েক পরে একদিন সাবিহা সকালে যথারীতি ক্লাসে এসেছে। দুপুরে মৌ মিতা ফোন করে বলল
সাবিহা তুমি কোথায়?
লাইবেরিতে
তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আস
কেন, কি হয়েছে?
ডান্ডি থেকে তোমার এক রিলেটিভ এসেছে
সাবিহা অবাক হয়ে বলল, ডান্ডি থেকে?
হ্যাঁ, তাইতো বলল
কিন্তু ডান্ডিতে আমার কেও আছে বলে কখনও শুনিনি, নাম বলেছে?
না নাম বলেনি শুধু বলল সাবিহাকে একটু তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে বল।
নামটা জিজ্ঞেস করবে না? আচ্ছা আসছি।
বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতেই মাহমুদ দরজা খুলে সাবিহার দিকে তাকিয়ে দাঁড়াল আর তার পিছনে মৌ মিতা মিটমিট হাসছিল। সাবিহা অবাক হয়ে ওকে দেখছে। যেন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। অস্ফুট কণ্ঠ বেরিয়ে এলো, তুমি!
ম্যাডাম কি আমাকে চিনতে পারছেন না? আসুন ভিতরে আসুন! আমি নিয়ামত উল্লাহ মাহমুদ, আসুন!
কোথা থেকে কেমন করে এলে? আমাকে আগে জানাওনি কেন?
তুমিই বল আগে জানালে কি তোমার এই চেহারা দেখতে পেতাম? আস, ভিতরে আস
হঠাৎ কোথা থেকে কেমন করে এসেছ?
পরশু আমাদের জাহাজ ডান্ডি এসেছে আর আজ দুপুরের ডিউটি সেরে সোজা এখানে চলে এলাম। তোমাকে চমকে দেব বলে আগে কিছু জানাইনি, বুঝলেন ম্যাডাম? এবার বল তুমি কেমন আছ?
পরশু এসে একটা ফোন করলে না কেন? আবার পরশু এসে আজ কেন এলে?
বললামতো ইচ্ছে করেই ফোন করিনি আর ছুটি পাচ্ছিলাম না বলে আগে আসতে পারিনি, দয়া করে ক্ষমা করা যাবে না? এর আগে ইজিপ্ট থেকে যখন ফোন করেছিলাম তখন থেকেই ভেবে রেখেছি এবার তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেব তাই আমাদের নেক্সট পোর্টের কথা তোমাকে বলিনি
মৌ মিতা ওদের একা থাকার সুযোগ করে দিয়ে বসতে বলে চা আনতে গেল।
কত দিন থাকবে?
কালই যেতে হবে, জাহাজ আন লোড হচ্ছে ছুটি পাবার উপায় নেই। আগামী পরশু সেইল করে সাউথ আফ্রিকা যাব
রাতের খাবারও মৌ মিতাই রান্না করল।
প্রায়ই ফোনে কথা হচ্ছে তবুও মনে হচ্ছে কত কথা জমে আছে। কত কি বলার আছে। অনেক রাত পর্যন্ত কথা বলে মৌ মিতা সহ এক সাথে রাতের খাবার খেয়ে মাহমুদ কাল সকালে আবার দেখা হবে বলে রেজার বাসায় চলে গেল।
বের হবার আগে বলে দিল, সকালে কিন্তু এখানে এসে খাবে।

২৩।
বিভিন্ন বন্দরে থাকার সময় ফোনে আলাপ, জাহাজ যখন সাগরে থাকে তখন ই মেইলে পত্রালাপ আর দুজনে দুজনার স্বপ্ন দেখে দিন গুলি চলে যাচ্ছিলো। মাহমুদের মাও নিয়মিত ফোন করে হবু পুত্র বঁধুর খোজ খবর নেয়। সাবিহার মা বাবা এক বার এসে মেয়ের কাছে প্রায় মাস খানিক থেকে বেড়িয়ে গেছে। এক ভয়েজে জাহাজ মুমবাই গিয়েছিল সেখান থেকে কলকাতা গিয়ে আলিপুরে ডায়মন্ড হারবার রোডে সাবিহাদের বাড়িতে হবু শ্বশুর শাশুড়ির সাথেও দেখা করে জামাই আদর পেয়ে আবার পরের দিনের ফ্লাইটে মুম্বাই ফিরে এসেছে। মাহমুদও আর একবার লন্ডনে এসেছিল তখন সাবিহা লন্ডনে যেয়ে ৩/৪ দিন থেকে দেখা করে এসেছে। সাবিহা এমএতে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে। এমনিতেও ছাত্রী হিসেবে সাবিহা খুবই ভাল। সাবিহা এখন ব্যারিস্টার হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। লেখাপড়ার ভীষণ চাপ। যে করেই হোক তাকে এবারই শেষ করতে হবে, সময় নেয়া যাবে না। এত সময় হাতে নেই। যত দিন যাবে মাহমুদের সাথে তাদের মিলনের দিনও তত পিছিয়ে যাবে। নিতান্ত নিরুপায় হয়ে যোগাযোগের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। আগের মত ইচ্ছে করলেই ফোন নিয়ে বা মেইলে লিখতে বসতে পারে নে। মাহমুদ মনে মনে কষ্টে থাকলেও নিজেই মনকে প্রবোধ দেয়, এইতো আর একটা বছর একটু ধৈর্য ধরতেই হবে। সাবিহাকেও তেমনি সান্ত্বনা দেয়। সামনে প্রচুর সময় পাব। সাবিহার বার হয়ে গেলে ওকে নিউ ক্যাসেল বা লন্ডনে এফিলিয়েট করে রেখে আগে অন্তত একটা বছর এক সাথে ভয়েজ করব। দুজনে এক সাথে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াব তারপরে নিউ ক্যাসেলে সেটল করব। সাবিহা এক বার ব্যারিস্টারি শুরু করলে ওকে নিয়ে যখন তখন বের হতে পারব না।

বিরহ বড়ই কঠিন যন্ত্রণা। হৃদয়ের অলিতে গলিতে কাটার মত বিধতে থাকে। এক পলকের জন্যেও ভুলে থাকতে দেয় না, অনবরত দহন হতেই থাকে। তুষের আগুন যেমন শিখা না তুলে ধীরে ধীরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে জলে তেমনি করে। এ আগুনে যে একবার হাত দিয়েছে তার আর কোন উপায় থাকে না। ফিরেও আসতে পারে না আবার সহ্য করাও কঠিন। এত কিছু সহ্য করে একসময় মাহমুদের চিফ মেট হিসেবে দুই বছর এক্সপেরিয়েন্স হয়ে গেলএবার নিউ ক্যাসেলে এসে মাস্টার ম্যারিনার পরীক্ষার জন্য রিফ্রেশর কোর্স করতে হবে। মাস ছয়েকের ব্যাপার। এদিকে সাবিহার ফাইনাল পরীক্ষার সময়ওঘনিয়ে আসছে। মাহমুদ আবার সাবিহাকে ফিরে পেয়েছে। ঠিক তেমনি করেই সব ব্যবস্থা করে নিয়েছে যেমনটি আগে ছিল। এসে আগের মতই রেজার বাসায় উঠেছে। রেজা মাহমুদের মত ম্যারিনার নয় সে স্পেস সাইন্সের ছাত্র। ওর শেষ হতে এখনও দেরি আছে।

২৪।
পৃথিবীর পথ পরিক্রমায় দিন থেমে থাকে না। সময়ের ঘড়ি চলতেই থাকে। অনেক আনন্দ বেদনা, সুখ দুঃখ, হাসি কান্না আর সাবিহার চোখের জল নিয়ে মাহমুদের হিসেব অনুযায়ী দুইটা বছর চলে গেছে। দুই জনেরই পরীক্ষা হয়ে গেছে এবং দুইজনেই পাশ করেছে। সাবিহা এখন ব্যারিস্টার সাবিহা খানম হয়েছে, তার একটা সাধ পূর্ণ হয়েছে আবার মাহমুদও ক্যাপ্টেন মাহমুদ হয়েছে। এত দিনের পরিকল্পনা অনুযায়ীপ্রতীক্ষার অবসানের জন্য এবার বিয়ের পালা। নিউ ক্যাসেল, আবাদান এবং কলকাতার টেলিফোন লাইন অনেক সময় ধরে ব্যস্ত থাকছে। নানা কথা বার্তা, জল্পনা কল্পনা আলাপ আলোচনা ইত্যাদিতে অনেক ফোন বিল পাচ্ছে লাইন প্রোভাইডার। কিন্তু এরা উপযুক্ত কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। এদিকে সাবিহা এবং মাহমুদ একরকম ভাবছে, ওদিকে আবাদানে মাহমুদের মা এক রকম ভাবছে আবার কলকাতায় সাবিহার মা বাবা আর এক রকম ভাবছে। ওরা চাইছে নিউ ক্যাসেলেই বিয়ে হবে, এতে ঝামেলার মধ্যে শুধু কোন হল ভাড়া করে হোম অফিসের পারমিশন নিয়ে বর কনের ধর্ম মতে বিয়ে হবে। তারপরে এদেশে থাকার অনুমতি চেয়ে হোম অফিসে আবেদন করতে হবে। আবার মাহমুদের মা ভাবছে কনে আবাদান যাবে বিয়ে সেখানে হবে কিন্তু সাবিহার মা বাবা বলছে বিয়ে কলকাতায় হবে। এই নিয়ে বেশ কিছুদিন পর্যন্ত আলাপ আলোচনা চলে এক সময় কুয়াশায় ঢাকা পড়ে গেল। কবে রোদ উঠে এই কুয়াশা কাটবে?

২৫।
মাহমুদ এবং সাবিহা চোখে মুখে অন্ধকার দেখা ছাড়া আর কোন পথ দেখছে না। কিন্তু এতদিন ধরে অপেক্ষা করে যে পরিকল্পনা চলে এসেছে তাতে পথ দেখা না গেলে চলতে পারে না। যে করেই হোক একটা বিহিত করতেই হবে। সাউথ শিল্ড মেট্রো স্টেশনের পিছনে লম্বা মাঠের মত আছে তার এক পাশে বেঞ্চে বসে কথা হচ্ছিল।
সাবিহা মাহমুদকে তাগিদ দিচ্ছে, কি করবে এখন? বাবা যে কড়া মেজাজের মানুষ তাকে বশ করা কঠিন ব্যাপার। আমি কিছু ভাবতে পারছি না, কি হবে? তুমি কিছু করছ না কেন? তুমি জান না সব সময় বর পক্ষ কনের বাড়ি যেয়ে বৌ নিয়ে আসে? তাহলে মাকে বোঝাচ্ছ না কেন?
আবার মাহমুদ বলছে তুমি কলকাতা চলে যাও বাবার সাথে আলাপ করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে এসো
না, আমি একা যাব না, যেতে হলে তোমাকে নিয়েই যাব
তার চেয়ে চল আমরা ইরান চলে যাই
না আমি এখন বিয়ের আগে ইরান যাব না
তাহলে চল আমরা এখানেই বিয়ে করে ফেলি
বিয়ে করে ফেলি বললেই হলো?
আমার মা বাবা তোমার মা এদের কি হবে? আচ্ছা এক কাজ করা যায় না?
কি কাজ?
তুমি যাও মাকে বুঝিয়ে মাকে নিয়ে কলকাতায় চলে আস
তাহলে চল দুইজনে এক সাথেই যাই
সাবিহা একটু ভাবল। দাও দেখি ফোনটা দাও
আবাদানের নম্বরে ডায়াল করে অপেক্ষা করছে, হ্যালো
মা আমি সাবিহা
বল মা কেমন আছিস? মাহমুদ কেমন আছে
মা আমরা ভাল আছি, আমরা আবাদান আসছি
তাই নাকি? যাক তোদের মত বদলেছে তাহলে, খুব ভাল হয়েছে আয় মা কবে আসবি?
না মা তুমি যা ভাবছ আসলে তা নয়, আমি যেতে পারি কিন্তু একটা শর্তে
সে আবার কি কথা? কি শর্ত?
আমি আর তোমার ছেলে এক সাথে তোমার কাছে যাব আর তোমাকে নিয়ে কলকাতা যাব এবং সেখান বিয়ে হবে, তুমি যদি এই শর্ত মেনে নাও তাহলে আমরা আজই টিকেট বুকিং দিবো।
না মানলে কি করবি মা?
কি আর করব, সারা জীবন তোমার অপেক্ষায় থাকব, তুমি যেদিন নিজে এসে নিয়ে যাবে সেদিনই যাব তার আগে নয়
পারবি মা তুই আমার ছেলেকে আগলে রাখতে পারবি, আমি এমন মেয়েই খুজছিলাম। আয়, তোরা কবে আসবি? আমি তোর সব শর্ত মেনে নিলাম
এখনই ট্রাভেল এজেন্টের অফিসে যাব, যেদিন টিকেট পাই ওই দিনেই চলে আসব। তুমি কলকাতা যাবার জন্য রেডি হয়ে থাকবে কিন্তু
আচ্ছা বাবা আমি রেডি হয়েই থাকব।
তাহলে এখন রাখছি।

২৬।
ফোন রেখে মাহমুদের হাত ধরে উঠিয়ে কাছে মেট্রো স্টেশনের পাশের একটা ট্রাভেল এজেন্টের অফিসে গেল।
আবাদানের দুইটা টিকেট কবে পাব?
কাউন্টারে বসা লোকটা কম্পিউটারে দেখে বলল
আগামী পরশুর আগে কোন ফ্লাইট নেই।
ঠিক আছে তাই দাও
মাহমুদ পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে কার্ড দিয়ে পেমেন্ট দিয়ে টিকেট নিয়ে সাবিহার বাসায় এলো।
নাও এবার গোছগাছ করে রেডি হও
রেডি আবার কি! যেমন আছি তেমনিই চলে যাব
তাহলে অন্তত কলকাতায় একটা ফোন করে বলে দাও
হ্যাঁ তা করতে হবে, কিন্তু আমাকে বলছ কেন তুমি বলতে পারছ না?
আমি বলব?
হ্যাঁ তুমি বল, মাকে নিয়ে আসছি আপনারা বিয়ের ব্যবস্থা করেন।

২৭।
সময় মত আবাদান পৌঁছে দেখে বাইরে মা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। এই প্রথম সাবিহাকে দেখে মা মুগ্ধ হয়ে হা করে ওর মুখের দিকে চেয়ে রইলো। মাহমুদ যা বলেছে, ছবিতে যা দেখেছে তার চেয়েও অনেক বেশি সুন্দরী এই মেয়ে। কিছুক্ষণ হতভম্বের মত চেয়ে থেকে সম্বিত ফিরে পেয়ে আয় মা বলে সাবিহাকে বুকে চেপে ধরল। মায়ের বুকের উষ্ণতা পেয়ে সাবিহা ছোট্ট বাচ্চার মত অনেকক্ষণ ওই ভাবেই রইলো।
আমি তোমার কাছে এসেছি মা, এবার তুমি আমার সাথে যাবে
যাব মা নিশ্চয় যাব
মাহমুদ তাগিদ দিল, কি হলো বাড়ি যাবে না?
হ্যাঁ হ্যাঁ চল, বলে সবাই গাড়িতে উঠে বসলো।

সাবিহা বাড়ি এসে দেখে মা রীতিমত বধূ বরণের আয়োজন করে রেখেছে। সাবিহা অবাক হয়ে শুধু এই সব কাণ্ড দেখছিল। জার্নির ধকল কাটিয়ে পরদিন সকালে মাহমুদকে নিয়ে গাড়ি বের করে আবার আবাদানের এক ট্রাভেল এজেন্টের অফিসে গেল এবং যথারীতি আবাদান-কলকাতা-আবাদানের তিনটা টিকেট নিয়ে ফিরে এসে মাকে জানাল
মা, আমরা সামনের বুধ বারে কলকাতা যাচ্ছি, ফেরার কনফার্মেশন ওখানে গিয়ে করবো।
আচ্ছা তাহলে এখন চল তোর মা বাবার জন্য কিছু নিয়ে আসি, সময়তো বেশি নেই
না কিছু নিতে হবে না তুমি এমনিই চল
আরে আমার পাগলী মেয়ে বলে কি! এক দেশ থেকে আর এক দেশে নতুন আত্মীয়ের বাড়ি কি এমনি এমনি যেতে আছে, কিছু উপহার নিয়ে যেতে হয়।

মাহমুদের মা বেয়াইনের সাথে দেখা হবার সাথে সাথেই তার মেয়ের প্রশংসা করে কোন কুল পাচ্ছে না। বেয়াইন সাহেব আপনি একজন সার্থক মা, এমন মেয়ে জন্ম দিয়েছেন বলে আপনাকে আগেই আমার সালাম এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সত্যিই এমন মেয়ে আমার চোখে পড়েনি। প্রথম দিনে টেলিফোনেই ও আমার মন জয় করে নিয়েছে। আমি সেই থেকে এমন মেয়ের মাকে দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে ছিলাম, আজ মনে হচ্ছে আমার এখানে আসা সার্থক হয়েছে। আমিতো এখানে আসতে চাইনি কিন্তু মেয়ের কথায় আমাকে আসতে হয়েছে। মেয়ে বলে কিনা তুমি যতদিন নিজে এসে আমাকে নিয়ে না যাবে দরকার হলে ততদিন আমি অপেক্ষা করবো। শুনেছেন মেয়ের কথা? এই কথা শুনে কোন মা বসে থাকতে পারে? তাই চলে আসলাম।

আপনার ছেলের মত ছেলেও কিন্তু সচরাচর চোখে পড়ে না। খুব ভাল ছেলে, আমাদের খুবই ভাল লেগেছে। এই মেয়ে কিন্তু এখন আপনার আপনি ওদের জন্য দোয়া করবেন যাতে ওরা সুখী হয়।
হ্যাঁ বেয়াইন ওরা সুখী হলেইতো আমরা সুখী।

২৮।
মাহমুদের মা আয়েশা আক্তার এই প্রথম ভারতে এসেছে। প্রথমত ভাষা নিয়ে সমস্যা হবে ভেবেছিল কিন্তু এখানে এসে দেখে এরা উর্দু ভাষায় কথা বলে। আয়েশা আক্তার এর বাবার বাড়ি ইরান পাকিস্তানের সীমানার কাছে তাই সেও মোটামুটি উর্দু বলতে এবং বুঝতে পারে। কোন সমস্যা হচ্ছে না বলে ভারি খুশি। এদের চালচলন, আচার আচরণ, খাবার দাবার এবং বাড়ির রীতিনীতি দেখে অবাক হলো। প্রায় তাদের মতই, ভাবতেই পারছে না সে ভিন দেশের কোন বাড়িতে এসেছে। মনে হচ্ছে ইরানেই রয়েছে। রাতে খাবার পরে সাবিহার মা সাজান পানের বাটা এগিয়ে দিল কিন্তু ইরানে পান খাবার প্রচলন নেই তাই টেবিলে বসে এসব নিয়েই আলাপ হচ্ছিল। আলাপে আলাপে এই প্রথম জানতে পারল এদের পূর্ব পুরুষ ইরান থেকেই এসেছিলো। অবাক হলো, কই ওরাতো এ ব্যাপারে কেও আমাকে কিছু বলেনি!

এ বাড়ির বিয়ের আয়োজন দেখছিল আর ভাবছিল ইরানে যে ভাবে বিয়ে হয় তেমনি সব আয়োজন চলছে। মাঝে মধ্যে কিছু এ দেশিয় আচার অনুষ্ঠান রয়েছে তবে বেশির ভাগই তাদের মত। তাহলে মাহমুদ সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে, কোন ভুল করেনি!

মহা ধুমধামের সাথে জাঁকজমক করেবিয়ে হলো। বিয়ের পরে আবাদান ফিরে যেতে আরও তিন দিনের আগে কোন ফ্লাইট পাওয়া যায়নি বলে এখানেই বাসর সাজান হয়েছে।
অনেক প্রতীক্ষা, অনেক দিনের চাওয়া, অনেক চোখের জল ফেলে আজ সাবিহা এবং মাহমুদের বাসর হবে।
সাবিহা আগে থেকেই পালঙ্কে বসে ছিল। মাহমুদ ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে যখন পালঙ্কের পাশে এসে দাঁড়াল সাবিহাও পালঙ্ক থেকে নেমে মাহমুদের সামনে দাঁড়াল অনেক, অনেক দূর থেকে ভেসে আসা সেই অচেনা সুরের মূর্ছনায় উভয়েই মগ্ন, নিশ্চুপ। কারো মুখে কোন কথা নেই শুধু এ ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে। অনেকক্ষণ এভাবে থেকে সাবিহা মাহমুদের বুকে মাথা রেখে আলিঙ্গন করল। এ আলিঙ্গন শুদ্ধ পবিত্র ভাল বাসার আলিঙ্গন, এ আলিঙ্গন আপনজনকে কাছে পাবার আলিঙ্গন। প্রিয়জনের হাত ধরে চলার আলিঙ্গন, এ আলিঙ্গন সাবিহা খানম থেকে সাবিহা মাহমুদ হবার আলিঙ্গন। এ আলিঙ্গনে রয়েছে প্রিয়জনের বুকে নিজেকে সঁপে দেয়ার তৃপ্তি। প্রিয় জনকে কাছে পাবার, একান্ত আপন করে পাবার সীমাহীন বাধ ভাঙ্গা নির্মল পবিত্র স্বর্গীয় আনন্দ।
ওরা যেদিন আবাদানে ফিরবে সেদিন বাড়িতে বঁধু বরণের আয়োজন করে রেখেছে, বাড়ি ভরা আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব পাড়া পড়শি আনন্দ করছিল। সাবিহা যখন মাহমুদের হাত ধরে বঁধু বেশে গাড়ি থেকে বাড়ির ল্যান্ডিঙ্গে নামল তখন মাহমুদের মা বলল,
তোমরা শোন, আজ আমার বাড়িতে অনেকদিন পরে বিকেল বেলা বৃষ্টি এসেছে ওকে বরণ করে ভিতরে নিয়ে চল।

[ওরা কিন্তু আমাকে বলে দিয়েছিল ওদের বৌ-ভাতে আপনাদের সবাইকে নিমন্ত্রণ করতে। আসতে ভুলবেননা কিন্তু]

ভ্রমণ খুলে দেবে শিশুর মনের জানালা

যখন শিশুদের পড়ালেখার চাপ কম তখন অনেকেই বেড়াতে বের হন। এতে বড় হতে হতে একটি শিশু আশপাশের নানা কিছু থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। ভ্রমণ শিশুদের মনে আগ্রহ জাগায়, নতুনকে জানতে, আবিষ্কার করতে। দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তনও আনে। এখন অনেক
মা-বাবা দিনে কর্মস্থলে ব্যস্ত থাকেন, বাড়ি ফিরেও মোবাইল, কম্পিউটার কিংবা টিভি দেখে সময় কাটান। তাই বাচ্চাদের সত্যিকারভাবে সঙ্গ দেওয়ার আদর্শ উপায় হতে পারে ভ্রমণ।

সন্তানকে নিয়ে যেতে পারেন গাছগাছালিতে ভরা কোনো গ্রামে। নিজের গ্রাম হলে তো আরও ভালো। এতে সে গ্রামের সঙ্গে পরিচিত হবে। প্রকৃতি ও গ্রামের মানুষের সংগ্রামী জীবন তার মনে দাগ কাটবে। সে যদি চোখে দেখে, শহরে আমরা যে সবজি বা ভাত খাই, তা উৎপাদন করতে বা চাষ করতে কৃষকেরা কী কষ্ট করে, তখন পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে তার স্বচ্ছ ধারণা জন্মে। এ ছাড়া খাবার প্রতিও আগ্রহ জন্মে, খাবার নিয়ে বায়না কমবে। দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতে এবং ইতিবাচক ধারণা পেতেও সাহায্য করবে এই ভ্রমণ। বেড়াতে গেলে ভিন্ন মানুষ, ভিন্ন বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি দেখে অতিকেন্দ্রিকতা ও জড়তাও দূর হয়।

অনেকে ভাবেন, শিশুদের নিয়ে বেড়ানো ঝামেলা। বেড়াতে গেলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়বে। রুটিন যাবে ভেঙে। কেউ ভয় পান খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম হবে। আসলে বেড়াতে গেলে মুক্ত হাওয়ায় তাদের শরীর আরও সুস্থ হয়ে ওঠে। ছোটাছুটি আর শারীরিক কসরতে তাদের হাড়ের গঠন শক্ত হয়। রোদের আলোতে পাবে ভিটামিন ডি। আর মনোজগতেও আসে পরিবর্তন। রুটিন ভাঙা কখনো কখনো জরুরি।

বেড়াতে যাওয়ার সময় কিছু বিষয় লক্ষ রাখবেন। আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যথেষ্ট জামাকাপড় নেবেন। যেখানেই যান, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করবেন। রাস্তাঘাটে খোলা খাবার কখনোই শিশুকে দেবেন না, আবদার করলেও না।

ভ্রমণে শিশু বমি করলে প্রয়োজনীয় ওষুধ খাইয়ে নিতে পারেন। সঙ্গে ওর স্যালাইন, প্যারাসিটামল ইত্যাদি জরুরি কিছু ওষুধপথ্য রাখুন। বেড়াতে গিয়েও এটা কোরো না, ওখানে যেয়ো না—এসব শৃঙ্খলে শিশুকে বেঁধে রাখবেন না। তাকে অবাধে খেলতে ও ছুটতে দিন। দেশের বা গ্রামের পথঘাট, অপরিচ্ছন্নতা বা নেতিবাচক বিষয় নিয়ে ওর সামনে বিরক্তি বা ক্রোধ প্রকাশ করবেন না। সব জায়গায় সব পরিবেশে মানিয়ে নিতে সাহায্য করুন। এই ভ্রমণ পথের শিক্ষা তাকে পরে সহনশীল ও উন্নত জীবন গড়তে সাহায্য করবে।
সূত্রঃ
শিশু বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ডা. আবু সাঈদ | প্রথম আলো

নিশীথিনী

ঝিল্লী ডাকা জোনাক জ্বলা নিশি রাতে
জোছনা চাদর গায়ে পৃথিবী ঘুমায়,
শিশির কণা মুক্তা হয়ে ঝরে মেঠো পথে
তমাল তরু শুধু ঘুম পারানি গান গায়।

দূর আকাশের তারাগুলি মিটিমিটি হাসে
সুরেলা বাঁশরি এলোমেলো বাতাসে ভাসে।
সুদূর নীহারিকা চেয়ে দেখে সুপ্ত মশাল জ্বেলে
কাজল কলঙ্কে নিশীথিনী মনের ছবি আঁকায়।

শিশির বিছানো আঁচলে হেমন্ত গায় নিশি রাগিণী
নিঝুম স্বপনে মগ্ন মোহনীয় মধু যামিনী।
তিমির কুহেলিকা বসে থাকে বসন্তের পথ চেয়ে
নীরবে কে যেন মনে সুর ঝড়িয়ে শিহরণ জাগায়।।

এই পথ চাওয়া

রাতের আকাশে ফোটেনি তারা
শুধু তুমি ছিলে না বলে
এখনও বহেনি বসন্ত বাতাস
শুধু তুমি আসনি বলে
ঝরে গেছে সব না ফোটা বকুল
তুমি ছিলে না বলে।।

আমিতো সুদূর পানে চেয়ে রয়েছি
তোমার পথ চেয়ে
হৃদয় সাগরে তেমনি করে
সোনার তরী বেয়ে
কখনও ভুল করে আবার
যদিবা তুমি আস ফিরে।।

বুঝিবা আজ মিছে হল
শুধু এই পথ চাওয়া
একা একা বসে থাকা
আর গুন গুন গান গাওয়া
ঝরে গেল হায় আমার
না বলা কথার মুকুল।।