মোঃ সফি উদ্দীন এর সকল পোস্ট

জীবনের জন্য পঙ্ক্তিমালা – একুশ

।।পুড়ছে একাত্তর।।

বান-বন্যায় ভেসে গেছে সোনালি ধান-
ঝড়ঝঞ্চায় উড়ে গেছে লাঙল-জোয়াল
রৌদ্রখরায় পুড়ে গেছে ফসলের মাঠ,
পালান, নদী ও নদীর অববাহিকা;
ধূসর জনপদের কোথায়ও শস্যজল নেই-
আর কত ক্ষুধার্ত নিরন্ন বেঁচে থাকা!
পেটের ভিতরে পুড়ছে একাত্তর-
পুড়ছে বিজয়, পুড়ছে স্বাধীনতা,
পুড়ছে ছাব্বিশে মার্চ,
পুড়ছে ষোলই ডিসেম্বর।

জীবনের জন্য পঙ্ক্তিমালা – ঊনিশ

।এর চেয়ে ঢের ভালো ঘরে ফেরা।

আর কত লবণাক্ত পিচ্ছিল পথ,
অহরহ শৈত্য প্রবাহ,
হুল ফোটানো মন্দ বাতাসঃ
এসব তো আমার জন্য নয়,
হয়তো তোমার জন্যও নয়-
তবে কেন অস্থি মাংশ চামড়ায়
শুধু শুধু বয়সের ছাপ ফেলা?
এর চেয়ে ঢের ভালো ঘরে ফেরা।

আর কত ছিন্ন-ছেঁড়া আকাশ,
ন্যাড়া বন, বিপন্ন বিরূপ চাঁদ,
বরফবন্দী নদী অন্ধ জানালাঃ
এসব তো আমার জন্য নয়,
হয়তো তোমার জন্যও নয়-
তবে কেন স্বপ্নকে মেরে ফেলে-
শুধু শুধু জীবনন্মৃত বেঁচে থাকা?
এরচেয়ে ঢের ভালো ঘরে ফেরা।

আর কত নিরানন্দ জীবন,
বার, ক্যাসিনো, পাব,
মদের আড্ডা, যৌননৃত্য, জুয়া-
এসব তো আমার জন্য নয়,
হয়তো তোমার জন্যও নয়-
তবে কেন শুধূ শুধু
আত্মাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাওয়া?
এর চেয়ে ঢের ভালো ঘরে ফেরা।

আর কত হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ,
কর্মহীন দিনক্ষয়, বিরূপ ভ্রূকুটি,
সূর্যের তাপদাহ, অরণ্যে রোদন-
এসব তো আমার জন্য নয়,
হয়তো তোমার জন্যও নয়;
তবে কেন শুধু শুধু
উদ্দেশ্যবিহীন পথ চলা?
এর চেয়ে ঢের ভালো ঘরে ফেরা।

জীবনের জন্য পঙতিমালা – ৪৮

।বংশীর তীরে খড়কুটোর নীড়ে।

ফেলে আসা সোনালি দিনেরা
বাজায় প্রাণে একতারা;
গাঙের কিনারে মেঠো পথ,
ধীরে চলে স্মৃতির রথ।
উদাসী দুপুরে দখিনা হাওয়ায়
এ মন আমার ভেসে যায়,
এ মন আমার ভেসে যায়রে
বংশীর তীরে খড়কুটোর নীড়ে।

ফেলে আসা প্রিয় মানুষেরা
বুকের ভিতরে দেয় নাড়া;
চার দেয়ালে আপন সংসার,
রক্তস্রোতে আবেগ বারংবার।
উদাসী দুপুরে দখিনা হাওয়ায়
এ মন আমার ভেসে যায়,
এ মন আমার ভেসে যায়রে
বংশীর তীরে খড়কুটোর নীড়ে।

ফেলে আসা জোনাকি রাতেরা
চোখের প্রাঙ্গণে দেয় পাহাড়া;
হৃদয়ে প্রথম মাটি সারাৎসার,
শৈশব ফিরে আসে আবার।
উদাসী দুপুরে দখিনা হাওয়ায়
এ মন আমার ভেসে যায়,
এ মন আমার ভেসে যায়রে
বংশীর তীরে খড়কুটোর নীড়ে।

ভালোবাসার কাব্য – তেতাল্লিশ

।আমার আকাশে কোন সূর্য নেই।

আমার আকাশে কোন সূর্য নেই,
তুমি কি আমার সূর্য হবে!
আমার শরীরে কোন রক্তস্রোত নেই,
তুমি কি আমার রক্তস্রোত হবে!
আমার চোখে কোন স্বপ্ন নেই,
তুমি কি আমার স্বপ্ন হবে!
আমার হৃদয়ে কোন ভালোবাসা নেই,
তুমি কি আমার ভালোবাসা হবে!

ভালোবাসার কাব্য – বিয়াল্লিশ

কাছে দূরে যেখানেই থাকি
চলো স্বপ্ন নিয়ে বাঁচি।
দুঃখ শোকে যতই কাঁদি
চলো তবু আশায় ভাসি।
দিনে রাতে যখনই ভাবি
চলো জীবন মন্ত্রে হাসি।
আসুক মৃত্যু অথই সর্বগ্রাসি
চলো তবু একটু ভালোবাসি।

Wherever I Go

Wherever I go…
I can see you in the blue sky
Where golden eagles tirelessly fly.

Wherever I go…
I can see you on the dancing river
Where silvery fishes swim forever.

Wherever I go…
I can see you in the melodic rain
Where injured hearts pacify pain.

Wherever I go…
I can see you in the sunshine
Where billions breathe to refine.

Wherever I go…
I can see you in the twinkle star
Where avatars gather to spar.

ভালোবাসার কাব্য – একচল্লিশ

আমি তোমার ঘুম হবো
কোন নির্ঘুম ক্লান্ত রাতে,
যদি তুমি চাও।

আমি তোমার স্বপ্ন হবো
কোন আঁধার কালো রাতে,
যদি তুমি চাও।

আমি তোমার আনন্দ হবো
কোন বেদনা বিধূর দিনে,
যদি তুমি চাও।

আমি তোমার পথ হবো
কোন বিষন্ন ঊষর দিনে,
যদি তুমি চাও।

জীবনের জন্য পঙ্ক্তিমালা – ছাব্বিশ

রাইফেল।
(উৎসর্গঃ ফিদেল কাস্ত্রো)

আমি নেই
এর মানে এই নয়
আমার রাইফেলটিও নেই।

সময়ের অভিজ্ঞানে
তোমাদের মধ্যে কেউ একজন
আমার রাইফেলটি
কাঁধে তুলে নিবে আবার।

আমি নেই
এর মানে এই নয়
আমার রাইফেলটিও নেই।

সময়ের প্রয়োজনে
কোন এক কমরেডের হাতে
আমার রাইফেলটি
একদিন গর্জে উঠবে দুর্নিবার।

আমার রাইফেলটি
আবার নিশ্চয় অগ্নি ঝরাবে
আরেকটি বিপ্লবের জন্যে।

/ ড. মোঃ সফি উদ্দীন

জীবনের জন্য পঙ্ক্তিমালা – আঠারো

|এর চেয়ে ঢের ভালো ঘরে ফেরা|

আর কত লবণাক্ত পিচ্ছিল পথ,
অহরহ শৈত্য প্রবাহ,
হুল ফোটানো মন্দ বাতাসঃ
এসব তো আমার জন্য নয়,
হয়তো তোমার জন্যও নয়-
তবে কেন অস্থি মাংশ চামড়ায়
শুধু শুধু বয়সের ছাপ ফেলা?
এর চেয়ে ঢের ভালো ঘরে ফেরা।
আর কত ছিন্ন-ছেঁড়া আকাশ,
ন্যাড়া বন,বিপন্ন বিরূপ চাঁদ,
বরফবন্দী নদী অন্ধ জানালাঃ
এসব তো আমার জন্য নয়,
হয়তো তোমার জন্যও নয়-
তবে কেন স্বপ্নকে মেরে ফেলে-
শুধু শুধু জীবনন্মৃত বেঁচে থাকা?
এরচেয়ে ঢের ভালো ঘরে ফেরা।
আর কত নিরানন্দ জীবন,
বার, ক্যাসিনো, পাব,
মদের আড্ডা, যৌননৃত্য, জুয়া-
এসব তো আমার জন্য নয়,
হয়তো তোমার জন্যও নয়-
তবে কেন শুধূ শুধু
আত্মাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাওয়া?
এর চেয়ে ঢের ভালো ঘরে ফেরা।
আর কত হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ,
কর্মহীন দিনক্ষয়, বিরূপ ভ্রূকুটি,
সূর্যের তাপদাহ, অরণ্যে রোদন-
এসব তো আমার জন্য নয়,
হয়তো তোমার জন্যও নয়;
তবে কেন শুধু শুধু
উদ্দেশ্যবিহীন পথ চলা?
এর চেয়ে ঢের ভালো ঘরে ফেরা।

/ ড. মোঃ সফি উদ্দীন

জীবনের জন্য পঙ্ক্তিমালা – সতেরো

|তবু কবিতার ভাষায় বলতে চাই|

আমি কবি নই
তবু কবিতার ভাষায় বলতে চাইঃ
তোমার চোখে ডুবে যায় যেন
এটম বোম আর হিরোশিমা-নাগাসাকির ক্ষত।
আমি কবি নই
তবু কবিতার ভাষায় বলতে চাইঃ
তোমার চুলের বিদিশার নিশায় হারায় যেন
এ জগতের কালো অন্ধকার যত।
আমি কবি নই
তবু কবিতার ভাষায় বলতে চাইঃ
তোমার দেহের সবুজ উপত্যকায়
তামসিক সন্ত্রাসীরা যেন
করজোড়ে নতজানু দাঁড়িয়ে যায়
নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনায়।
আমি কবি নই
তবু কবিতার ভাষায় বলতে চাইঃ
তোমার পদপদ্ম তলে গুলশান ট্র্যাজেডি
মিশে যেন যায় শতাব্দীর নীরবতায়।

/ ড. মোঃ সফি উদ্দীন

জীবনের জন্য পঙ্ক্তিমালা – ষোল

|তবু কবিতা তোমাকেই ভালবাসি|

কবিতার চেয়ে প্রিয় আজ দুর্বৃত্ত,
আজ ‘হত্যা’ সর্বাধিক উচ্চারিত শব্দ;
তবু কবিতা তোমাকেই ভালবাসি
দুর্বৃত্ত কিম্বা হত্যাকারীকে নয়।

/ ড. মোঃ সফি উদ্দীন

জীবনের জন্য পঙ্ক্তিমালা – পনের

|জোনাকির আলো জ্বেলে চোখে|

এক।
বেদনা মুছে দিয়ো নাকো
আজ রাতে সকরুণ অশ্রূজলে,
শুধু দূঃখ ছুঁয়ে থাকো
হৃদয়ের গহন অতল তলে।

দুই।
আজ রাতে নিভৃতে জেগে রই
মম চিত্তে কেবলি তব কথা কই;
আজ এই ঘন কালো তমসায়
ছেড়েছি গৃহকোণ শুধু তব ভরসায়।

তিন।
জোনাকির আলো জ্বেলে চোখে
দিবে কী স্বপ্ন কিছু বিপন্ন বিস্ময়ে
আমার সকল স্বপ্ন বংশীর বুকে
নীরব নক্ষত্রের মত গেলে ক্ষয়ে।

/ ড. মোঃ সফি উদ্দীন

জীবনের জন্য পঙ্ক্তিমালা – চৌদ্দ

একটু ঘৃণা একটু ভালোবাসা।

একটু কাছে একটু দূর,
এভাবেই চলছি আমরা বহুদূর।
একটু রাগ একটু অনুরাগ,
এভাবেই করছি জীবনের গুণভাগ।
একটু হাসি একটু বিষাদ,
এর মাঝেই সদ্য কিন্নরনিনাদ।
একটু ঘৃণা একটু ভালোবাসা,
এর মাঝেই নিত্য কাঁদা-হাসা।

/ড. মোঃ সফি উদ্দীন