|তিমিরনন্দিনী গেল ক্ষয়ে|
ঝড়া পাতা ঝরে যায়
ঝড়া পাতার গানে,
অর্কটা হারালে তমসার প্রাণে
দিন মরে যায় বিস্ময়ে।
জোনাকীরা জ্বলে যায়
ঝিকিমিকি রাত্রির আঁচলে,
ভালোবাসা ছিলো না বলে
তিমিরনন্দিনী গেল ক্ষয়ে।
/ড. মোঃ সফি উদ্দীন
|তিমিরনন্দিনী গেল ক্ষয়ে|
ঝড়া পাতা ঝরে যায়
ঝড়া পাতার গানে,
অর্কটা হারালে তমসার প্রাণে
দিন মরে যায় বিস্ময়ে।
জোনাকীরা জ্বলে যায়
ঝিকিমিকি রাত্রির আঁচলে,
ভালোবাসা ছিলো না বলে
তিমিরনন্দিনী গেল ক্ষয়ে।
/ড. মোঃ সফি উদ্দীন
|শূন্যতায় জীবনের পারাপার|
যেতে পারি,
কিন্তু কেন যাবো!
চলতে পারি,
কিন্তু কেন চলবো!
বলতে পারি,
কিন্তু কেন বলবো!
লিখতে পারি,
কিন্তু কেন লিখবো!
এভাবে ভাবতে ভাবতে
ভাবনাই হলো সাড়;
বয়স কাটতে কাটতে
শূন্যতায় জীবনের পারাপার।
/ড. মোঃ সফি উদ্দীন
| ভাঙচুর |
ভাঙে দরজা ভাঙে জানালা,
ভাঙে ক্লাশ ভাঙে পাঠশালা;
ভাঙে পথ ভাঙে বাস,
ভাঙে মেঘ ভাঙে আকাশ;
ভাঙে মল ভাঙে গাড়ী,
ভাঙে নর ভাঙে নারী;
ভাঙে পার্ক ভাঙে মাঠ,
ভাঙে পাড় ভাঙে ঘাট;
ভাঙে পালান ভাঙে ভাঁড়ার,
ভাঙে টিলা ভাঙে পাহাড়;
ভাঙে গাছ ভাঙে বন,
ভাঙে নদী ভাঙে মন;
ভাঙে মাটি ভাঙে ইতিহাস,
ভাঙে স্বপ্ন ভাঙে অভিলাষ।
আর কত হবে ভাঙচুর?
আর কত খেলবে অসুর!
কবে হবে সেই সকাল?
মুছে যাবে সব অ-কাল!
/ড. মোঃ সফি উদ্দীন
|বালুঘর ভেঙে যায়|
বালুঘর ভেঙে যায়
সমুদ্রের নোনা জল;
তবু জলে লিখি কবিতা,
আঁকি জীবনের পরিমন্ডল।
ক্যানভাস ভেঙে যায়
বৈশাখের কালো ঝড়,
তবু ঝড়ে আনি সবিতা,
গাহি প্রভাতি নিরন্তর।
/ড. মোঃ সফি উদ্দীন
|বিপ্লবী আত্মার বুদ্বুদ|
ক্যামেরার ফ্লাশলাইটে যাদের দেখছেন
অপেক্ষায় রয়েছেন গুটিসুটি চুপচাপ,
চোখে নেই কোন আপাত উত্তাপ,
বিছিন্ন তন্দ্রায় শুধু ঢুলুঢুলু ভুগছেনঃ
এঁরা চিরকাল চিরবিপ্লবী-
যদিও এখন নীরব নিথর,
তবু হতে পারেন স্বপ্নভঙ্গ নির্ঝর,
ছড়াতে পারেন জীবন-মন্ত্রের দুন্দুভি।
এঁরা বুলেটের ভিতরে নির্জনে
লুকিয়ে থাকা উন্মত্ত বারুদ,
প্রয়োজনে অনিবার্য সত্তায় তোলেন
বিপ্লবী আত্মার অফুরন্ত বুদ্বুদ।
/ড. মোঃ সফি উদ্দীন
|বলো কোথায় যাবো বন্ধু|
চার দেয়ালের শক্ত কাঠামোতে
বন্দী ক্লান্ত শ্রান্ত প্রাণ;
কখনো নক্ষত্র দেখি নাকো-
করি নাকো জোস্নায় স্নান।
জানালা খুললেই-
ইটের পর ইট;
দরজা খুললেই-
ভিটের পর ভিট;
পা বাড়ালেই-
কংক্রিটের পর কংক্রিট।
চোখ ফেরালেই-
চারিদিকে তপ্ত হাওয়া ধু-ধু,
ইট পাথরের এই শহরে
বলো কোথায় যাবো বন্ধু!
/ড. মোঃ সফি উদ্দীন
|ক্ষমাহীন ক্লান্তি|
বেদনার স্ফটিকে জীবনের দীপ্তবাণী
খুঁজে পাবো একদিন জানি;
যত পারো সূর্যের মতো তীব্র হাতে
ছুঁড়ো অগ্নীবাণ, যত পারো
আমারে ছিন্নভিন্ন করো
সময়ের নিষ্ঠুর সংঘাতে।
তবু জানি হৃদয়ের শান্তি গেলে ক্ষয়ে
জোনাকির শরীর থেকে জন্ম ল’য়ে
সবুজ সতেজ নীলাভ শান্তি
মুছে দিবে জীবনের ক্ষমাহীন ক্লান্তি।
/ড. মোঃ সফি উদ্দীন
|আর কোনদিন ফিরে আসিবে না সে|
আর কোনদিন ফিরে আসিবে না সে
এই বুড়ী বংশীর তীরে,
ভরিবে না ধূসর কলস তাঁহার রূপোলী জলে।
আর কোনদিন সাঁতার কাটিবে না সে হায়
হংসমিথুনদের সাথে,
অপরূপা মীনকন্যাদের সাথে সে যে
হারায়ে গিয়েছে জলের অন্ধকারে।
ধূলো-বালি-কাঁদা মাখা বাংলার মেঠো পথে
আর কোনদিন হাঁটিবে না সে,
বাজিবে না ঘুঙুর তাঁহার করুন শঙ্খের মতো সুরে।
কলমির দামে কচুরিপানার ভীড়ে
আর কোনদিন নামিবে না সে,
আর কোনদিন বাজিবে না হাতের কঙ্কন তাঁহার
জলাঙ্গীর বিরোচিত প্রাণে।
পেঁচার ডানায় অন্ধকার নেমে এলে
নরম নক্ষত্রের আলোয়
খুঁজে তাঁরে ক্লান্ত চিলের সোনালী চোখ।
/ড. মোঃ সফি উদ্দীন
অন্ধকার দেহ দ্রোহে।
দয়া দিলে যদি
প্রভু এ মনে,
তবে কেন চলি
ঘৃণা ল’য়ে বুকে!
আলো দিলে যদি
প্রভু এ চোখে,
তবে কেন দেখি
অন্ধকার দেহ দ্রোহে!
/ড. মোঃ সফি উদ্দীন
|থেমে যাবে রক্তের কোলাহল|
পৃথিবীর এলোমেলো পথে অভ্যস্ত জীবন
ব্যস্ত সময়ের অভিঘাতে হচ্ছে ক্ষয়;
জীবনের শেষ বেলায় হলুদ পাতার মত সঙ্গিন
হয়ে আসে ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, সুস্থবোধ ও প্রত্যয়;
নষ্ট হয়ে আসে ক্রমশ ত্বকের নক্সা-মাংশের কারুকার্য;
মুখের ক্যানভাসে থাকে শুধু বুড়ো বয়সের ভাষ্যঃ
হয়তো একদিন ঘড়ির কাঁটা অবসরে
নিয়ে যাবে জীবনেরে…
থেমে যাবে রক্তের কোলাহল
অলিন্দের অন্ধকারে…
/ড. মোঃ সফি উদ্দীন
|ফিরে আসবো বলে|
বন্ধুরা!
কখনো ভেবো না-
আমি চলে গেলাম;
কখনো মনে করো না-
আমি আর আসবো না;
আসলে আমি চলে গেলাম,
আবার তোমাদের মাঝে
ফিরে আসবো বলে।
বন্ধুরা!
যে এক টুকরো অনন্য আলো
প্রজাপতির পাখায়
খোলা ছাদের কাছে এসেছিলো,
তাকে ধরবো বলে
আমি ডানা মেলে দিয়েছিলাম।
সে আলো আমি ধরতে পারিনি-
দীপ্তিহীন নক্ষত্র তারে নিয়ে গেছে
নিজে জ্বলবে বলে-
আর আমি মৃত রাজহংসীর মতো…
বন্ধুরা!
কখনো ভেবো না-
আমি আর আসবো না;
সহস্র ব্যস্ততার ভীড়ে
আলোর প্রজাপতি হয়ে
আমি নিশ্চয় ফিরে আসবো।
কোন একদিন-
সূর্য যখন অন্ধকার সরিয়ে
তোমাদের জাগাবে,
দেখবে আমারও ঘুম ভেঙে গেছে…
অথবা ঝাঁঝালো দুপুরে
কোকিলের ঠোঁটে অমরাবতীর গানে
শুনবে আমারই কণ্ঠস্বর…
কিম্বা কৃষ্ণচূড়া যখন আগুন ছড়াবে,
দেখবে হুডখোলা রিক্সায়
আমি ছুটছি ‘প্রথম আলো’র দিকে…
বন্ধুরা!
তোমরা কি করে ভাবলে
আমার রক্ত ঘামে ভেজা
পবিত্র এই শহর ছেড়ে
আমি কখনো চলে যাবো!
আসলে আমি চলে গেলাম,
আবার তোমাদের মাঝে
ফিরে আসবো বলে।
/ড. মোঃ সফি উদ্দীন
| আশা |
ক্ষণিকের আশা
খুঁজে পেলো ভাষা;
ক্ষণিক তারে
এঁকেছিনু চোখে,
স্বপ্ন ভঙ্গ হলে
দেখিনু সে কিছু নহে।
এই শেষ নয়
জীবনের হলো শুধু ক্ষয়,
হায়! মরণের ক্ষণে
আশা তবু রয়।
/ড. মোঃ সফি উদ্দীন
\বেদুঈন জীবন/
শিমুলের ফুল থেকে ফল,
ফল ফেটে ভ্রাম্যমাণ তুলো;
আমার যে নেই শিকড়ের বল
আমি বেদুঈন পথের ধুলো।
ঝড় উঠে, উড়ে চলে
ধুলো-বালি-মাটি;
হাওয়ায় ভাসমান এ জীবন
পেলো নাকো ঘাটি।
/ড. মোঃ সফি উদ্দীন
আর কত দূর গেলে …
আমার দুঃখগুলো মুছে যাবে,
চোখের দ্বীপে জ্বলবে জোনাক,
বুকের প্রান্তরে খেলবে ঘাসফড়িঙ নিরলস।
আর কত কাল গেলে …
তোমার হাতে ফুটবে সহস্র গোলাপ,
নিশ্বাসে ঝরবে রজনীগন্ধা,
প্রতিদিন হবে উচ্ছল ‘ভালোবাসা দিবস’।
/ড. মোঃ সফি উদ্দীন