নাজনীন খলিল এর সকল পোস্ট

ছবিটা নিখুঁত হয়না

আবারো সেই হিমগন্ধের বিভীষিকা, নিঃশ্বাস আগলে রাখা কালো হাত।

মেঘের প্যাস্টেলে আঁকা বহুবর্ণ ছবিগুলো উলটে পালটে দিয়ে
ছুটে যাচ্ছে উন্মাতাল এক মৃত্যুরং ঘোড়া ;
কিংকর্তব্যবিমূঢ় লাগাম-

সময় কখনো ইজেরের কোমরে বাঁধা ইলাস্টিক ফিতে নয় যে
চাইলেই – দীর্ঘ অথবা হ্রস্ব হবে।
তবু
তীব্র জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে কখনো বা ভেসে যাচ্ছে সময়ের কাঁটা।

হতাশ্বাসের বিষবাষ্পে ক্রমশ বিবর্ণ হচ্ছে সবুজ পত্রপুষ্পশাখা।

হয়ত নিখুঁত আকাশের ছবি চাইছে এক বিফল চিত্রকর।

চন্দ্রাহত

চন্দ্রাহত

প্রতিটি উড়ালের আগে পাখিকেও শিখতে হয় আকাশের ভাষা।

শিল্পিত আঁচড়ের টানে
আঁকা হোক বা না হোক নাম
কি আসে যায়?
আকাশে কেউ লিখে হা-হুতাশ,
জলের গোপনে হাত রেখে
কেউ খোঁজে পাথরের নুড়ি।

স্মৃতি থেকে তুলে আনছি কেবলই খড়কুটো;
যদি বাসা বোনা যেতো কোন
পাখির আদলে!

বালি-পাথরের হৃৎপিন্ডে রক্তক্ষরণ হচ্ছে,
লুনাটিক হয় কেন কল্পবিলাসী মানুষ?

কিছু আচ্ছাদন থাক

কিছু আচ্ছাদন থাক

প্যাস্টেল পটচিত্রে মোড়ে যাক
দেয়ালের বুদবুদ ওঠা নোনাক্ষতগুলো।

বেজে যাক যুথবদ্ধ নান্দনিক শব্দের ম্যাজিক
উঠুক করতালে ঝমাঝম ধ্বনি
চকচকে ব্লেডের ধারে কাটা আঙ্গুলের ডগা
ধ্রুপদী তালের কিছু রাগরংয়ে ঢাকা পড়ে থাক।
শোণিতস্রোতের ফল্গু বয়ে যাক গোপনে গোপনে।

প্যাডলকে হাত রেখে চাবি খুঁজে না পাওয়ার মতো
অনুচ্চারে আটকে যাওয়া কথাগুলো
বাতিল পাপড়ির মতো শার্সির বাইরে দিয়েছি তো ফেলে!
তবু কেন যে কখনো কখনো
বাতাসের তোড়ে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে ;
জলতরঙ্গ বাজানোর আহ্লাদ-ইচ্ছায়
জলের নুড়িতে পিতলের মুদ্রা ছুড়ে দিলে
যেমন ভোঁতা একটা টং শব্দ বাজে
বেজে ওঠে তেমনি অস্ফুট এক স্বর শুধু ;
যথার্থ সরব নয়।
কথার শূন্যমাঠে কিছু অনুচ্চারিত হাহাকারের
চিহ্নই কেবল জমা হয়।

বাজুক তুমুল কোলাহলের অর্কেস্ট্রা ;
নীরবতার হীনজীর্ণ মাৎস্যন্যায় ভেঙ্গে
কত্থকের বোলে বেজে যাক এক জোড়া প্রবল ঘুঙুর।

সেই আমিইতো আছি

প্রবল ঘুর্ণাবর্তে
সবুজ পাতারা উড়ছিল
উড়ছিল ঘাস
উড়ছিল খড়কুটো
সুদূর অতীত থেকে————
সবুজ ঘাসগুলো ধুসর খড়কুটোগুলো
জড়ো হচ্ছিল চারপাশে স্তুপ থেকে স্তুপাকারে।

পৃথিবীটা ঠিক তেমনি তো আছে আজো
রোগাক্রান্ত মানুষের বিষাক্ত নিঃশ্বাস
আজো বুকে টেনে নেয় সবুজ পাতারা।
সেই আনন্দে উল্লসিত হওয়া আছে
প্রতীক্ষার ব্যাকুলতা আছে
ক্ষণে ক্ষণে যন্ত্রনাক্ত হওয়া আছে।

সব ঠিক তেমনিতো আছে।

সময় কি মুছে দেয় সবকিছু?
প্রখর অ স্তিত্ব কি মুছে ফেলা যায়?
কিছুই কাড়েনা কাল
কিছু মাত্রা যোগ করে যায় শুধু।

এই আমিইতো ছিলাম এখানে
এখানেই থাকি
এখানেই থাকব–আমূল অস্তিত্বে।

চোখের পাথর

মাঝখানে কাঁচের দেওয়ালজোড়া অভিমান;
কে কাকে ফেরায়?

হাঁটতে হাঁটতে অবিসংবাদিত একটা গোলচক্কর
চারদিকে চারপথ ; কুহকীমায়ার ইশারা।
বেখেয়াল নাজুক হাতের বন্ধন খুলে
কে যে কোন পথ ধরে চলে গেলো!
রেখে যায়নি কোন পদছাপ।

এক ঘোরলাল কৃষ্ণচূড়া দুপুর
দূর গোধূলির পথে বেঁকে যেতে যেতে
পিছু ফিরে একবার দেখে নেয়
আর কতো বাকী আছে
রংয়ের প্রলেপ মাখা মধ্যাহ্নের ছায়া।
অস্তমিত বিকেলের পথ জুড়ে রক্তাভ পাপড়ি,
লালগালিচা বিছানো পথে একটি সন্ধ্যা নেমে আসে
আকাশের শামিয়ানায় গুড়ো গুড়ো ছড়ানো
আবীর আবীর কিছু রাগরং;
চৌরাশিয়ার বাঁশিতে কাঁদে ইমনকল্যাণ,
উলোঝুলো পথেপ্রান্তরে বাজছে সায়াহ্ন।

ভরসন্ধ্যার খাতা খুলে দেখি
তরঙ্গের ধ্যানমগ্ন মুদ্রার বিন্যাস,
যা কখনো শেখোনি তুমি জোয়ারভাটিতে;
অগাধ জলের শিথানে চোখ রেখে
দেখে গেছো শুধু মাছেদের কেলি
শেখোনি মাছের প্রকারভেদ,
কানকোর ভিন্ন গঠনপ্রকৃতি।
নোনাজল দেখেছো শুধু,
দেখোনি নিষিক্ত চোখের পাথর।

ঢেউয়ের উল্লাস কাঁদে

মাছের জলসাঘরে নিকিরির আনাগোনা রোজ;
চিকন সুতার ফাঁদ লুঠ করে জলের বিলাস।

দুপুরের আগুনরঙে জ্বলে ওঠে পদ্মার বুক
তরঙ্গের উচ্ছ্বাসে নাচে রূপালি ইলিশ

ধরা পড়ে কৈবর্তের হাতে বোনা জালে

ছটফটে কাতরতা নাচে
জালের ভেতরে।

ডাঙায় প্রাণ নেই
প্রাণের ব্যাকুল মায়া রাখা তার নদীর ভেতরে

নিকিরিবধুর বেলোয়ারীচুড়ির চকিত স্বপ্ন-সাধ
শিষ দিয়ে ওঠে শুধু
একান্ত গোপনে;

ঢেউয়ের উল্লাস কাঁদে ধীবরের ঘরে।
মহার্ঘ পসরা সাজে ক্ষুধার বাজারে।

(বিষাদের প্রখর বেলুনগুলো)

কখনো আমি কেউ ছিলাম না

আমি কেউ নই। কখনো আমি কেউ ছিলাম না।

সমুদ্রের ফেনায়িত মদে ভাঙ্গে প্রবাল-প্রাচীর
আমি তার কিয়দংশ;
মৃত;
ভঙ্গুর;
সামান্য।

রক্তস্রোতের মাঝে আদিমতম যাযাবর নেশা
তরঙ্গ-স্পন্দনে শিরায় শিরায় মাদলের বোল বেজে ওঠে; তবু
নিবিড় সমুদ্র-দর্শনে ব্যর্থ
তিন ঢেউ পেরুনো হয়না
প্রবল জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে বালুকাবেলায় ফিরে আসি
বার বার।
ছুটে চলা কেবল গন্তব্যে পৌঁছানো নয়; অভ্যস্ত পদক্ষেপ।
মধ্যাহ্নের খররোদে অনায়াস-রপ্ত পদযাত্রা শেষে
ছায়াবীথি
অশ্বত্থের মূলে ঠান্ডা ঘাস
তরুছায়ে বৃন্তচ্যুত দু’একটি বর্ণগর্বী পারিজাত;

কেউ অপেক্ষায় থাকেনা।

আমি কিছু নই। কিছুই হতে চাইনি।
না বাজীর রেসের ঘোড়া
না ইতিহাসের পাতায় লেখা এক নাম
লোকশ্রুত-কিংবদন্তী; কিছু নয়।

একক-বিশুদ্ধ আমাকে চেয়েছি
আমি
শুদ্ধতম-বিশুদ্ধতায় আমি

কোনটি সত্য ছবি-
লহর-মগ্ন জলের অস্থির কারুকাজ?
দর্পণের ক্ষীণ দোদুল্যমানতা?
নাকি দেয়ালের ফ্রেমে ঈষৎ হাসিমাখা স্থিরচিত্রের উদ্ভাস;
দ্বন্দ্ব ঘুচেনা…..

আমি নেই……..
না আয়নায়;
না জলে;
না স্থিরচিত্রে…………।

.
(বিষাদের প্রখর বেলুনগুলো, ২০০৯)

ঝরো, অন্যসময়ে

না থাকাই ভালো ছিল এতোটা আগুন
মলাটের গোপনে
পাতা জুড়ে থাকে বিশাল প্রান্তরমাঠ,
আগুন?
আগেই বলেছি।

বুকের ভেতরে কেউটের বাস
তবু
তোমাদের বাগানে ফোটে বসরাই গোলাপ, ব্ল্যাকপ্রিন্স।

আর এখানে
এক বুক আগুন নিয়ে ক্লিষ্ট বসে থাকি
জ্বলতে পারিনা ;
গাছের বাকলে শুধু লিখে রাখি,
‘দহন, দহন’।

আজ আর এখানে এসোনা
মেঘমল্লারে মন নেই
দেখো ডানার ছায়া কেমন মুছলো আকাশ।

এখন জারুল ঝরার বেলা;
ঝরো তুমি
অন্য সময়।

ঈশ্বর

ঈশ্বর

আকণ্ঠসূরার ভারে
টলতে টলতে কোথায় যাচ্ছে এ মাতাল শহর!

আমাদের ঘরে কোন ঈশ্বর আসেন না।
মেঘ ছিঁড়ে ঝুম বৃষ্টি নামলেই,
আধোঅন্ধকার ঘরে
থোবড়ানো বিয়ারের ক্যান হাতে কেবলই ঝিমান।
আমরা দিনরাত্রি তার তপস্যায় থাকি
প্রার্থনারত হাতগুলো থেকে মাঝেমধ্যে ‘আহা’ ধ্বনি বাজে।

মাত্র আধহাত দূরে পানপাত্র রেখে
যে লোকটা অসীমধৈর্যে বসে আছে
ঠোঁটে ছোঁয়ালেই শেষ হয়ে যাবে ভয়ে;
সেই সুস্থির লোকটাকেই ঈশ্বর মনে হয়।

এই যে এখন টালমাটাল পায়ে
হেঁটে যাচ্ছে একজন ঘোরমাতাল
যদি ঠিকঠাক দরোজায় ঠোকা দেয়
সেও তো ঈশ্বর হয়ে যেতে পারে…..

ইল্যুসন

ইল্যুসন

হ্যাঁ তোমাকেইতো!
যুগ যুগ ধরে খুঁজেছি তোমাকেই।
শুধু যুগ? অনন্ত মহাকাল নয় কেন?
চেনাঅচেনা সমস্ত মুখের ভীড়ে তোমার আদল….
ব্যস্ত সড়ক পার হতে হতে
প্রতিটি পথিকের দিকে খরচোখে তাকিয়েছি।
তুমি কোথাও ছিলেনা। হয়তো থাকোইনা।
তুমি যে থাকোনা — তুমি যে অলীক
কেউ বললোনা সে কথা। অনেকেই জানে।
হয়তো বড়রাস্তার ওই যে পাগলটা
মাঝেমাঝে মুখোমুখি হয়ে গেলে
সন্ত্রস্ত সতর্কতায় দ্রুত সরে যাই, সেও জানে।
হয়তো কাউকে একদিন এমন করে সেও খুঁজেছিল।
সে জানে! আমি জানিনা!

শেষপর্যন্ত জেনেছি আমি
‘তুমি’ এলকোহলের ঘোরে তৈরি এক ইল্যুসন
খোয়ারি ভাঙ্গার পরেই যা মিলিয়ে যায়।
এই অনর্থক বোধের জন্য মানুষ কতোপথ
অহেতুক হেঁটে গেছে!
কেউ কোনদিন তাকে পায়নি।

পায়না।

বিষ নিঃশ্বাস

বিষ নিঃশ্বাস

কোথাও নতুন আরেক চোরকুঠুরি তৈরি হলো ;
কোথাও জমাট বাঁধে আরো কিছু গাঢ় অন্ধকার।

স্থির হও। স্থির
চরকির বংশদন্ডের মতো।
যখন তোমার চারপাশে হাওয়ার তালে তালে ঘুরবে
রংগীন কাগজের ঘুর্ণাবর্ত ; পৃথিবীর উল্লাস,
তোমার মনে হবে —
আহা! যদি হতাম ইন্দ্রধনুডানার শিতিকণ্ঠ পাখি,
কেউ না কেউতো কুড়িয়ে নিতো আনন্দের একটি পালক !

তোমার আকাশ দেখা জানালায় কুরুশবুননের রেশমিজাল
বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে দীর্ঘশ্বাসের প্রতিধ্বণিগুলো।
তুমি জানো
সবাই ময়ুর নয়,
কেউ কেউ ফুল ও পাতা ঝরানো কষ্ট বুকে নিয়ে
বৃক্ষ হয়েই বেঁচে থাকে।

কবে
কত যুগ আগে যেন
তোমার জানা হয়েছিল ‘নিঃসঙ্গতা’ একটি হিংস্র ময়াল
তার কিলবিলে স্পর্শে বারবার বিবমিষা এবং শ্বাসরুদ্ধকর ভয়।

চাঁদের ঘোরলাগা দেয়ালে
হুট করে একটি ধুসর টিকটিকি নেমে আসে,
পতঙ্গভুক বীভৎসতা দেখতে চাওনি ;
বিচ্ছিন্ন করেছো সোনালি কারুকাজের দেয়াল।

পাখির কাছে ধার করেছো যে দু’টো ডানা,
আভারনাসের বিষবাষ্পে তারও পালক পুড়ে গেছে।

(পুরনো লেখা)

কিছু আচ্ছাদন থাক

কিছু আচ্ছাদন থাক

প্যাস্টেল পটচিত্রে মোড়ে যাক
দেয়ালের বুদবুদ ওঠা নোনাক্ষতগুলো।

বেজে যাক যুথবদ্ধ নান্দনিক শব্দের ম্যাজিক
উঠুক করতালে ঝমাঝম ধ্বনি
চকচকে ব্লেডের ধারে কাটা আঙ্গুলের ডগা
ধ্রুপদী তালের কিছু রাগরংয়ে ঢাকা পড়ে থাক।
শোণিতস্রোতের ফল্গু বয়ে যাক গোপনে গোপনে।

প্যাডলকে হাত রেখে চাবি খুঁজে না পাওয়ার মতো
অনুচ্চারে আটকে যাওয়া কথাগুলো
বাতিল পাপড়ির মতো শার্সির বাইরে দিয়েছি তো ফেলে!
তবু কেন যে কখনো কখনো
বাতাসের তোড়ে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে ;
জলতরঙ্গ বাজানোর আহ্লাদ-ইচ্ছায়
জলের নুড়িতে পিতলের মুদ্রা ছুড়ে দিলে
যেমন ভোঁতা একটা টং শব্দ বাজে
বেজে ওঠে তেমনি অস্ফুট এক স্বর শুধু ;
যথার্থ সরব নয়।
কথার শূন্যমাঠে কিছু অনুচ্চারিত হাহাকারের
চিহ্নই কেবল জমা হয়।

বাজুক তুমুল কোলাহলের অর্কেস্ট্রা ;
নীরবতার হীনজীর্ণ মাৎস্যন্যায় ভেঙ্গে
কত্থকের বোলে বেজে যাক এক জোড়া প্রবল ঘুঙুর।

রঙ

কারো গাঢ় নীল চোখ
বেজে যাচ্ছে বেদনার্ত সেতারের মতো ;
যেন ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে এক খণ্ড আকাশ,
যেন এক্ষুণি জন্ম নেবে এক নতুন সমুদ্র।
অথবা মনে করো
এক বিভোর উদ্যানে অপরাজিতা ফুটেছে অনেক
যেন নীল নীল ভোরের আধখোলা জানালায়
সবুজ ঝালরের ফাঁকে উঁকিঝুঁকি দেয়া সকালের দূত।
আকাশ অথবা সমুদ্রের এই প্রগাঢ় রঙ
আনন্দ নাকি যন্ত্রণার এই প্রশ্ন ভুলে
এক মনোরম ল্যান্ডস্কেপে বিমুগ্ধ,
তাকিয়েই থাকি।
মাঝেমাঝে
দুঃখ ও সুখের সব রঙ বুঝি এমনি একাত্ম!

এখনো দুই হাতে বিবর্ণ ধূসরতা মাখা,
ছায়াটাকে আততায়ী ভেবে নিয়েছি সন্ন্যাস ;
রঙিন ফানুশ ওড়ানো কালে
এই চিত্রকল্প খুব বেমানান মনে হয়।

চোখের ব্যাথা দেখি,
অথবা নীলকণ্ঠ ফুলের সুন্দর
কথাতো একটাই
আমার বিবর্ণ ধুসর হাত নীল ছুঁয়ে থাকে।
মনে হয়
এইসব রঙের বিপরীতে ভিন্ন কোন রঙ নেই,
ছিলোনা কোথাও।

(মেমোরি)

মধুর অনুযোগের সনেট /ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা

মধুর অনুযোগের সনেট /ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা
অনুবাদ- নাজনীন খলিল।

আমাকে কখনো হারাতে দিওনা এই বিস্ময়
তোমার স্ট্যাচুর মতো চোখের, অথবা এই স্বরসঙ্ঘাত
তোমার নিঃশাসের স্বতন্ত্র গোলাপ
যা রাত্রে স্থাপিত হয় আমার কপোলে।

আমি তটস্থ থাকি, এই সৈকতে
এই শাখাহীন গুঁড়ি, যা আমার তীব্র অনুতাপ
পুষ্পহীনতা, শাঁস অথবা মৃত্তিকা
আমার উদ্যমহীনতার জীবাণুর জন্য।

তুমি যদি হও আমার গুপ্তধন
তুমি যদি হও আমার দুর্দশা, আমার বিষণ্ন যন্ত্রণা
যদি আমি হই সারমেয়, তুমি একাকী আমার প্রভু।

কখনো হারাতে দিওনা যা পেয়েছি আমি ,
এবং সাজিয়ে দেবো তোমার নদীর শাখা
আমার বিচ্ছিন্ন শরতের পত্র-পল্লবে।
___________________________

Never let me lose the marvel
of your statue-like eyes, or the accent
the solitary rose of your breath
places on my cheek at night.

I am afraid of being, on this shore,
a branchless trunk, and what I most regret
is having no flower, pulp, or clay
for the worm of my despair.

If you are my hidden treasure,
if you are my cross, my dampened pain,
if I am a dog, and you alone my master,

never let me lose what I have gained,
and adorn the branches of your river
with leaves of my estranged Autumn.

Sonnet Of The Sweet Complaint–Federico Garcia Lorca

ইনকগনিটো

ইনকগনিটো

সবাই সতর্ক খেলছে। চেস, ট্রাম্পকার্ড, হাউজির খেলা।
ছায়ার অন্তর্গত ভিন্ন ছায়াবাজির খেল ;
ইন্দ্রজাল আর ছদ্মবেশের চৌকাঠে
পা আটকে যাচ্ছে বারবার।

হয়তো-
তোমার পিংক বাথটাবের কানাভর্তি স্বচ্ছতার
আড়ালে আছে কোন প্রাণঘাতী দাহক ;
উপুড় অডিকোলনের শিশি ঢাললেই
রুদ্ধ হবেনা তার জ্বলনস্বভাব।
বিপরীতে –
গায়ে ভীতিকর রোঁয়া ফুলিয়েফাঁপিয়ে
ভয় দেখাচ্ছে যে হতকুৎসিত শুঁয়াপোকা ;
সে-ও একদিন ঠিক মধুবর্ণী প্রজাপতি হবে।

কোনটা যে কার আসল রূপ!
কে যে কোন আড়ালে লুকোনো!

কখনওবা আবরণও মনোহর
চরকির ফ্যাঁকাসে কাগজে
চড়ারঙের প্রলেপ মাখানো ঘুর্ণনে বুঁদ হয়ে থাকি।

একটি গাঢ় রাত যখন তিমিরাশ্রয়ী আরেকটা রাতকে
আবরণ খুলতে বলে ;
অন্যরাত অবজ্ঞায় পাশ ফিরে শোয়।
যেন সে বধির। যেন সে স্পর্শস্পন্দনহীন।

দেয়াল এঁকে যাচ্ছে ঝড়মন্দ্র বাতাসের করতাল
ফুটে ওঠে একটা হাঙ্গরভয়ের ছায়া
ঝরে যাচ্ছে সব আচ্ছাদন………

আড়াল ভালোবাসি আমিও তো।