নাজনীন খলিল এর সকল পোস্ট

সসেমিরা সময়

সসেমিরা সময়

গোপন কোঠরে চুপচাপ বসে থাকি ;
আমার চারপাশে গল্প তৈরি হয়
গাছের, ছায়ার, ঝরাপাতা আর শামুকের।
অঙ্গন
তার ছায়ার ভেতরে টেনে নিয়েছে,
একটি গাছ
ডালপালাসহ পাখির ছোট্ট ঘর।
পাতার উপরে পাতা ঝরে গেলে
আধো আধো নূপুরধ্বনি বাজে ;
যেন
তবলার বোলের অপেক্ষায় তৈরি নাচের মেয়েরা
আনমনা টুকছে
অস্থির আলতো পায়ের ঘুঙুর।
বৃক্ষের এই ছায়ামগ্ন বিলাসের মাঝখানে
আমারো কী কোথাও একটুখানি প্রাপ্য ছায়া
পড়ে আছে?

গল্পপাঠে – সাদা পৃষ্ঠায় নিবন্ধ উৎসুক চোখ ;
পাপড়ির নীচে জমা
হাজার বছরের প্যাপিরাসকথা,
এক অতল অন্ধকার
টানেল বিভ্রান্ত পথিকের গল্পটিও।

ক্যামেরায় ত্রস্ত শাটার টিপে
প্যানোরামার ভেতরের রহস্য রক্তিম এক ছবি
তুলতে গেলে
সমস্ত চিত্রপট উধাও, ঘোরলাল মেঘের আড়ালে।
দৃশ্য কি নিজেই নিজেকে লুকোয় আগুনের আঁচে?

জলভারে নত হয়ে আছে সসেমিরা ঘড়ির সময়।

একবার কড়া নাড়লেই

একবার কড়া নাড়লেই

আছি
এক মায়াবী স্বপ্নের কোলাহলে।

একবার কড়া নাড়লেই
আবার খুলবে দরোজা
বেজে যাবে সুর;
ধ্রুপদী গানগুলো মনে পড়ে যাবে।

সেই বিকেল
সেই গুনগুন
রবীন্দ্রনাথ।

দৃশ্যের ভেতরে ঢুকে পড়বে
গলির সমস্ত হৈ চৈ সহ দুষ্টু বালক- বালিকা,
কর্কশ কাকগুলো ডেকে ডেকে উড়ে যাবে,
দানা খুটে খেতে ঘাসে নামবে শালিখের পাল,
দেওয়ালে জিমন্যাস্টের মতো হাঁটবে
পাশের বাড়ির বেড়ালটা,
আচমকা ভেসে আসা বেলির সুবাস,
হর্ণ বাজানো গাড়ি,
ব্যালকনির রকিং চেয়ার।

তুমুল আলাপচারিতা।

সব।

অবিকল।

একবার কড়া নাড়লেই
আবার ছলকে ওঠবে চাঁদনি।

————–

বেঁচে থাকি অন্য জগতে

বেঁচে থাকি অন্য জগতে

স্বপ্নের ভুল?
স্বপ্নের আবার ভুল-শুদ্ধ কি?

থাক তবে এমনি অন্ধকার লোডশেডিং য়ের এই রাত।
জ্বালবোনা মোমদানে কোন বাতি
ক্ষয়ে ক্ষয়ে মোম কেন এমন ব্যাকুল কেঁদে যাবে?
দূরে কোথাও বেজে যায়
চেনা-অচেনার দোলাচলে হু হু করা এক সুর
আমাকে খুঁজতে দাও সেটা কোন গান।
আলোর ঝলক দিয়ে দেখতে চাইনা কোন মুখ
আমি জেনে গেছি,
মানুষের মুখগুলো কেমন মুখোশ ঢাকা থাকে;
কত ছবি আঁকতে চেয়েছি,
কখনো যায়না আঁকা মুখের গোপন রেখাগুলো।

কেন যে এতো নুন ধরে রাখে মহাজলধর!
তৃষ্ণার্ত ছিলাম তাই
সমুদ্রের নোনাজলে আঁজলা ভরেছি।

যদি ভাবো এই আমি এখানেই আছি,
ভুল।
বেঁচে আছি স্বপ্নের আবর্ত আর নিজস্ব নক্ষত্রে।
দেখি
আকাশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে
স্বপ্ন বুনতে বুনতে উড়ে যায় লালফড়িং য়ের ঝাঁক,
পাখায় স্বপ্নের আবীর মাখা প্রজাপতি,
মধু-স্বপ্নে বিভোর মৌমাছি গুলো।

পালক জমা রাখি তাদের ডানায়।

নদীর প্রকৃত নাম

পাশ থেকে খুব সন্তর্পণে উঠে চলে গেলে কেউ ;
ধুলোয় কেবল একটুখানি পদচিহ্ন আঁকা থাকে,
কোন পদধ্বনি বাজেনা।

একটা হাহাকার গড়িয়ে গড়িয়ে নামে জলের তারল্যে
তবু পাথরের কাঠিন্যে হাত রেখে বসে আছি।
ছায়াটাকে দু’ ভাগ করে,
এক খন্ড যত্রতত্র বিলিয়ে দিয়েছি
বাকীটা নাহয় থাকলো আমার কাছে।

সব খেলার একটা শৈশব থাকে ; পুতুল এবং ঘুড়ির সময়কাল।
হয়তো কোনদিন কোথাও লেখা হবে ঘুড়ি ও পুতুলের গাঁথা।

পদ্মা, পিয়াইন যে নামেই ডাকোনা কেন
নদীর একটাই নাম ; তরঙ্গবিলাসী। শুধু ঢেউয়ের ভাঙ্গন।

বন্ধ্যা কমলাগাছটির গান : ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা

বন্ধ্যা কমলাগাছটির গান–ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা

বাংলা অনুবাদ : নাজনীন খলিল

কাঠঠোকরা,
আমাকে বিচ্ছিন্ন করো আমার ছায়া থেকে ,
এই নিস্ফলা যন্ত্রনা থেকে
মুক্ত করো আমাকে ।
কেন জন্ম নিলাম আমি প্রতিবিম্বের মাঝে ?
দিন আবর্তিত হয় আমাকে ঘিরে ।
রাত তার প্রতিটি তারায়
অনুকরণ করে আমাকে ।
আমি থাকতে চাই প্রতিফলনহীন,
এবং তারপর আমাকে রেখো এমন স্বপ্নের ভেতরে
যেন ওই পিঁপড়েগুলো এবং কাঁটাবীজ
আমার পত্রপল্লব এবং টিয়াপাখি ।

Song of the Barren Orange Tree
(translated by W.S. Merwin)
Woodcutter.
Cut my shadow from me.
Free me from the torment
of seeing myself without fruit.
Why was I born among mirrors?
The day walks in circles around me,
and the night copies me
in all its stars.
I want to live without seeing myself,
and I will dream that ants
and thistleburrs are my
leaves and my birds.

কিচ্ছু যায় আসেনা

কিচ্ছু যায় আসেনা

বারান্দায় কুকুরের লেজের মতো বাঁকা একটা ছায়া পড়ে আছে।
ক্লীব হয়ে যাচ্ছি। কিছুতেই যায় আসেনা কিছু।

সময়কে পাখির মতো খাঁচায় ঝুলিয়ে রাখি
খেয়াল খুশীমতো দোল খেয়ে যাক।

কিছুই যায় আসেনা।

উঠোনে ঝুলিয়ে রাখি পোড়ালাশ, সার্কাসের ক্লাউনের মতো।
লাশের কি আসে যায় মানুষের বীভৎসউল্লাসে ?

কি দরকার এতো প্রাযুক্তিক উৎকর্ষের হৈ চৈ ;
মায়ের ছেলে যদি মাঝনদীতেই হারিয়ে যায় বাড়ী ফেরার পথে ?

সময় হেঁটে যাচ্ছে তমসাচ্ছন্ন জঙ্গলের দিকে,
সভ্যতার পোশাক আশাক খুলে ফেলে,
আদিম গুহার পথে হাঁটছে মানুষ।
অথবা
আস্ত একটা অন্ধকার বনই উঠে এসেছে জনপদে। পশুর অভয়ারণ্য।

লাল টেলিফোন পাশে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছো শীতাতপ ঘরে ?
গহনঅরণ্য থেকে হা-মুখ অজগর আসছে ছুটে।
শুনতে পাচ্ছো ? কিচ্ছু যায় আসেনা ?

এখানে জীবন যেন জলে ভাসা তুচ্ছ খড়কুটো
যেমন তেমন ভেসে যাক বাতাসের তোড়ে
হা-ঘরে মানুষগুলো বাঁচুক মরুক ; কিচ্ছু যায় আসেনা।

চাইনা বৃষ্টি … আগুন চাই

চাইনা বৃষ্টি—আগুন চাই

দিওনা বৃষ্টি।
নিভতে চাইনা
গাইছি আগুনের স্তব। সাগ্নিক।

শুধু শুধু জড়ো করি আসর-ভাঙ্গা জলসাঘরের দীর্ঘশ্বাসগুলো
যাবার নিয়মে চলে যায় রূপকথা বলা সবুজ টিয়াটি। তার
অনিচ্ছার একটি পালক শুধু পড়ে থাকে। পুড়াই।
মুছে ফেলি পেলব ঘাসের সবুজ-মমতা।

মুঠোতে মেখেছি জ্যোৎস্না আর
চাঁদের গরলটুকু নিঃশেষে করেছি পান;
দেখেছি হৃৎপিণ্ডের নীল রং। তীব্র।

ভাল আছি।
ঝিনুকের খোলের ভেতরে গুটানোর ভব্যতাটুকু রপ্ত হয়ে গেলে
সবাই ভালই থাকে। এভাবেই।

ঈশ্বর

আকণ্ঠসূরার ভারে
টলতে টলতে কোথায় যাচ্ছে এ শহর!

আমাদের ঘরে কোন ঈশ্বর আসেননা।
মেঘ ছিঁড়ে ঝুম বৃষ্টি নামলেই,
আধোঅন্ধকার ঘরে
থোবড়ানো বিয়ারের ক্যান হাতে কেবলই ঝিমান।
আমরা দিনরাত্রি তার তপস্যায় থাকি
প্রার্থনারত হাতগুলো থেকে মাঝেমধ্যে ‘আহা’ ধ্বনি বাজে।

মাত্র আধহাত দূরে পানপাত্র রেখে
যে লোকটা অসীমধৈর্যে বসে আছে
ঠোঁটে ছোঁয়ালেই শেষ হয়ে যাবে ভয়ে ;
সেই সুস্থির লোকটাকেই ঈশ্বর মনে হয়।

এই যে এখন টালমাটাল পায়ে
হেঁটে যাচ্ছে একজন ঘোরমাতাল
যদি ঠিকঠাক দরোজায় ঠোকা দেয়
সেও তো ঈশ্বর হয়ে যেতে পারে…..

আমার ক্ষেত্র নয় রণভূমি

আমার ক্ষেত্র নয় রণভূমি

দ্রোহ?

অবিচল নিষ্ঠায় শানাচ্ছো তরবারি
শূন্যগর্ভ বাতাসে ঘুরাচ্ছো
সাঁই সাঁই শব্দে পরখ করে নিচ্ছো ধার
ঝালিয়ে নিচ্ছো হাতের নিপুণতা।

জানোনা,
প্রবল থেকে প্রবলতমে উত্তরণের লোলুপতা
কিভাবে ক্ষুদ্রতায় নিয়ে যায়।

যুযুৎসু প্রতিপক্ষ নই। আমার ক্ষেত্র নয় রণভূমি।

আমি যেন অবিকল
‘কাফকা’র সেই নায়কের মতো
রূপান্তরিত বিচ্ছিন্ন এক তেলাপোকা।

দুই হাতে আগুনের ফুলদানী
আঁকড়ে বসে আছি
অসম্ভব যন্ত্রণার কাতরতা শুষে নিচ্ছে
অন্তর্গত এক অনন্ত ঔদাসীন্য।
দেখিনা কিভাবে খসে পড়া মাংসখণ্ডগুলো
ভাগাভাগি করে খায় কাক ও কুকুরেরা।

বর্ণমালা লিখে যাচ্ছে প্রতিদিন
আমার ব্যর্থতা ও আর্তনাদের দলিলগুলো
আর
আমি ক্রমশঃ
নির্বাসিত হয়ে যাচ্ছি অন্তর থেকে অন্তরতমে।

এক ঘোরবর্ষায় আমি নীলপদ্ম হতে চেয়েছিলাম

এক ঘোরবর্ষায় আমি নীলপদ্ম হতে চেয়েছিলাম
মুক্তগদ্য।

এক শ্রাবণে –
তখনো ভোর তার সবগুলো দরোজা খুলেনি ; সূর্য কেবল মিটি মিটি হাসিমুখ দাঁড়িয়ে আছে, আকাশের এক কোণে; চুপচাপ ; অপেক্ষায় আছে কখন মেঘ, আলগা করবে তার নীল আঁচলের ঘোমটা। জলার ধারে এক পায়ে দাঁড়ানো ঘুমন্ত বক। মাত্রই ডানার আড়মোড়া ভাঙ্গছে গাঙ্গশালিক, মাছরাঙ্গা, ফিঙ্গে, পানকৌড়ি। প্রবল হাতছানিতে খুব ডাকছিল জলাশয়ের মাঝখানে ফুটে থাকা লালনীলসাদা পদ্মগুলো।

পাখায় তীব্ররঙের ঘোরলাগা প্রজাপতিটিকে দেখে আমার যে কী ভীষণ ইচ্ছা হলো-প্রজাপতি হয়ে যাই’।

বৃষ্টি যখন পদ্মপাতায় বাজাবে জলতরঙ্গের সিম্ফনি ; কত্থকের বোলে বোলে আমার দু’পায়ের ঘুঙুর বেজে যাবে— ঝমঝমাঝম। পাপড়ির ভাঁজে ভাঁজে শুষে নেবো বিজলীচমকের সবটুকু আলোকরশ্নি।

এই নীলমত্ততার ভেতরে বুনেছি নীলকমলের বীজ।

কত কিছু যে হতে চেয়েছি এক জীবনে ! পাখী, ফড়িং, প্রজাপতি, মেঘের ভেলায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো লালঘুড়ি, পাতার বাঁশী, মেলার কাঠের ঘোড়া।

সাপ হবার কোন ইচ্ছা কখনো ছিলনা; তবুও দেখি হাসির আড়ালে লুকিয়ে আছে বিষদাঁত ; রপ্ত হয়ে গেছে খোলস বদলের কলাকৌশল। অজান্তে জীবন কি তবে বদলে গেল অন্য কোন জীবনের সাথে ! দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকি।

“একদিনেরই জীবন হলেও ফুল হয়ে যে জন্ম নেবো …..”

হ্যাঁ ফুলইতো হতে চেয়েছি। একটি উজ্জ্বলউচ্ছল কুমুদকুসুম। কোন অনামিকায় জড়ানো বৈদুর্যমণিরআংটির মতো; দীপ্তি ছড়ানো। কথিতবাক্যে শুনি, সবার সহ্য হয়না নীলা। কারো দুর্ভাগ্যের প্রতীক হয়ে থাকে। তবু কেউ না কেউ চড়া দামে একখণ্ড নীলকাচের অভিশাপ কিনে বাড়ী ফেরে।

খোয়ারি ভাঙ্গার পরে দেখি আমিও সিন্ধুক ভরেছি কত ভুল পণ্যে !
পিযুষপাত্র ভেবে কিনে এনেছি বিষের পেয়ালা।

চাঁদ ডুবে গেলে

চাঁদ ডুবে গেলে

আমাদের একটা ছায়াঘর ছিল-
খুব রোদ্দুরের দিনে চুপচাপ পাতাঝরার শব্দ শোনার জন্য

তখন–
আবছাম্লান নীহারকণার মতো স্বপ্নেরা উড়ে উড়ে যেতো চারপাশে।

আমি রাতকে বলেছি আরো কিছুটা সময় থেমে যেতে ;
নীলজোনাকীরা যেটুকু সময়—
সোনালীআগুন জ্বালিয়ে রাখে মুঠোর ভেতরে।
ঝিঁঝিপোকারা কথা দিয়েছিল কণ্ঠে তুলে দেবে গুনগুন গুঞ্জরণের
ঝিনিকিঝিনি সুর।
খুব ভীরুতায় রাত বললো–
সেও থাকতে পারেনা চাঁদের পাহারা ছাড়া ;
চাঁদ ডুবে গেলে
সেও চলে যাবে।

থেমে গেল নক্ষত্রের সব কোলাহল।

চাঁদ ডুবে গেলে রাত নিভে যায় ।
কেন যে …

আকাশ বাড়ির চিঠি

আকাশ বাড়ির চিঠি

আকাশের পকেটে কোন ডাকবাক্স আছে?

চিঠি উড়ে যাচ্ছে একটা প্রগাঢ় নীল অভিযাত্রার দিকে
শূন্যের সাথে শূন্যের দ্বন্দ্বজ কোলাহলে কে বেশী বেগবান
নির্ধারিত হোক।
হিপনিক জার্কসে ঘুম ভেঙ্গে গেলে
বুকের মাঝখান থেকে এক জোড়া সারস উড়ে যায়
অন্তহীন মেঘের বাড়ির পথে…….
একটি প্রবল ঘুম দ্রুত পতনোন্মুখ
অভ্রংলিহ পাহাড়ের চূড়া থেকে নিতল গহ্বরে।
আহা স্বপ্ন! সূর্যমহলের সিংহদুয়ারে আটকে পড়া স্বপ্নগুলো!
মনোশরীরবৃত্তে বন্ধী ঘুম অথবা স্বপ্নের প্রতি
তর্জনী তাক করা ; অভিষঙ্গবাহুল্য। মনে হলো এমন।

রাত বেয়ে নেমে আসে কাঁকরভেজা এক পথ
শিথানে চুলের গোড়া থেকে ঝরে পড়ছে মেডুসার সাপ……

বিদায়

বিদায়

কোথাও যাবার কথা হলেই আমার ট্রেনের কথা মনে হয়
এবং টিকেট চেকারের বিষাদমগ্ন আঙ্গুলে ধরা টিকেটের কথা।
এক কামরাভরা যাত্রী,
সদ্য স্বজন ফেলে আসা বিরহব্যথা;
ইঞ্জিনের ঝিক ঝিক ঝিক বাজনার মন আনচান করা কোরাসে সম্মিলিত বিষণ্নব্যাথা বেজে ওঠে।
পূর্বতন ভ্রমণের নস্টালজিক স্মৃতিমন্থনের সাথে দুলতে দুলতে আমরা এক নিরূপিত গন্তব্যের দিকে ছুটে যাই।

শেষ হুইসেল বেজে ওঠার সাথে সাথে
আসন্ন একাকীত্বের যন্ত্রণাব্যাকুল প্লাটফরমের হৃদয়মথিত দীর্ঘশ্বাসের কথা মনে হয়।

রঙ

রঙ

কারো গাঢ় নীল চোখ
বেজে যাচ্ছে বেদনার্ত সেতারের মতো ;
যেন ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে এক খন্ড আকাশ,
যেন এক্ষুণি জন্ম নেবে এক নতুন সমুদ্র।
অথবা মনে করো
এক বিভোর উদ্যানে অপরাজিতা ফুটেছে অনেক
যেন নীল নীল ভোরের আধখোলা জানালায়
সবুজ ঝালরের ফাঁকে উঁকিঝুঁকি দেয়া সকালের দূত।
আকাশ অথবা সমুদ্রের এই প্রগাঢ় রঙ
আনন্দ নাকি যন্ত্রণার এই প্রশ্ন ভুলে
এক মনোরম ল্যান্ডস্কেপে বিমুগ্ধ,
তাকিয়েই থাকি।
মাঝেমাঝে
দুঃখ ও সুখের সব রঙ বুঝি এমনি একাত্ম!

এখনো দুই হাতে বিবর্ণ ধূসরতা মাখা,
ছায়াটাকে আততায়ী ভেবে নিয়েছি সন্ন্যাস ;
রঙিন ফানুশ ওড়ানো কালে
এই চিত্রকল্প খুব বেমানান মনে হয়।

চোখের ব্যাথা দেখি,
অথবা নীলকণ্ঠ ফুলের সুন্দর
কথাতো একটাই
আমার বিবর্ণ ধুসর হাত নীল ছুঁয়ে থাকে।
মনে হয়
এইসব রঙের বিপরীতে ভিন্ন কোন রঙ নেই,
ছিলোনা কোথাও।

দৌড়

দীর্ঘশ্বাসগুলো জমা রাখিনা;
ভোর হলেই মুঠো খুলে ছড়িয়ে দেই।

সিঁড়ি উঠতে গিয়ে দেখি, প্রথম ধাপেই
শুয়ে আছে সতর্ক ডোবারম্যান পিনশার
কানখাড়া, গুটান লেজ
মুহূর্তেই হামলে পড়তে পারে;
ভঙ্গিমায় একথা সুস্পষ্ট।
সেই থেকে সিঁড়িঘরে গিয়েছি আটকে;
সিঁড়িপথ ভুলে গেছি।

কেউ কেউ, খোলাচোখ আকাশে নিবদ্ধ
মুক্তকচ্ছ
রণপায় দৌড়ায়।
বলতে ইচ্ছা হয়—
থামো, এতো দ্রুততার কিছু নেই।
পিছলালে তোমারই পতন।

কোন দৌড়াকাঙ্ক্ষীকে কখনো
‘ধীরে চলো’ একথা বলতে নেই।