নাজনীন খলিল এর সকল পোস্ট

আগুনের অবশেষ

ড্যান্সহলে অগ্নিহোত্রী। তবলচী বৈশ্বানর।

কী করে ছড়ালো পাখির চোখঝলসানো এতোটা দাহক?
পুড়ল প্রজাপতিডানা।
পেখমের ভাঁজ খুলে দূরান্তে পালালে ময়ূর।

দাবানল থেমে যাবে ঠিক।তার আগে
পাতা পুড়বে। বুনোফলফুল।
বৃক্ষপল্লবাদি কাঠকয়লা হবে।
আরো বহুক্ষণ
কড়কড়াৎ ধ্বনিতে
বনপোড়ানো রণভেরীর হুহুংকার শোনা যাবে।

ধীরে ধীরে স্তিমিত হবে আগুনের লেলিহান জিভ
বাতাসের হোসপাইপ ধুয়ে নেবে সব জঞ্জালধোঁয়া।
অবশেষ থাকবে
কিছু গাছের কংকাল
বহুদিন উড়বে কিছু ছাই।

কবিতা

করতলে একটি কুয়াশা-মাখা ভোর ছিল
আঙ্গুলের ফাঁকে কখন যে ঝরে গেছে বুঝতে পারিনি।

কষ্ট পাই
বর্ণাঢ্য-জলসায় অচেনা মুখের ভীড়ে একা হয়ে গেলে
ক্রমশঃ কুঁকড়ে যাই নিজের ভেতরে।

হারতে চাইনা।বারবার হেরে যাই।
নিজের প্রলম্বিত ছায়াটুকু ক্রমাগত নিজেকে অতিক্রম করে যায়।
কষ্ট পাই।

বিস্মরণের আজন্ম-স্বভাবে ঠিকানা-বিভ্রাট;
এ গলি ও গলি খুঁজতে খুঁজতে
তোমার গলির একদম পাশ দিয়েই
আনমনে এক ভুল বাড়ীতে ঢুকে যাই

সে এক ঐন্দ্রজালিক বাড়ী
গোলকধাঁধা…………………..

আমি ঘুমোতে চেয়েছি

আমিতো ঘুমোতে চেয়েছি
গাছের ছায়ায় ঢাকা নিমগ্ন ঘাসের মতো নিরিবিলি
চাঁদটাই তার প্রখর জ্যোৎস্নাউচ্ছ্বাসে ঘুমোতে দেয়নি ,
চাঁদনি প্রাবল্যে ঢেলে দিল আজীবন অনিদ্রাঅসুখ।

ঘোর চন্দ্রিমার সোনালি আগুনে
কেন যে তীব্র এক হা-হুতাশ বাঙময় হয়ে গেল !
হাহাকারের শব্দগুলো এতোটাই প্রবল ছিল
যেন নিঃশ্বাসের শব্দ বেজে যাচ্ছে
কামারশালার নেহাইয়ে হাপরস্পন্দনের মতো।

স্রোতে টলমল ডিঙ্গির শোকে সমুদ্র যখন ফেলল দীর্ঘশ্বাস
আরো প্রবল থেকে প্রবলতর ঢেউ উঠলো
গিলে নিলো আস্ত ডিঙ্গিটাকেই।

গুপ্তধানুকী এবং মাংসবিক্রেতা

সারারাত মুঠোর ভেতরে জোনাকির আলো নিয়ে বসে থাকি
ভোর হলেই তারা সব মৃতদেহ;
হাওয়ায় উড়ছে দীপাধারের শব।

মানুষ টের পায় ঠিক।
আর মৃত্যুর গন্ধ যত বেশি কাছাকাছি হয়;
তীব্র ধাবিত হয় জীবনের দিকে

এবং নিজের অজান্তেই মৃত্যুবাসরের জন্য তৈরি করে এক
অনিন্দ্য ফুলের বাগান।

এখনো জীবন্ত ফেনার চিহ্ন লেগে আছে মৃত ঘোড়াদের নালে,
পিঠে এখনো বাঁধা আরোহীর স্যাডল।
পালিয়ে গেল যেসব ঘোড়সওয়ার
তাদের প্রাণহীন অশ্বগুলোকে পরিত্যক্ত ফেলে
তারা জানত না প্রতিটি ঘোড়সওয়ারকেই হতে হয় দক্ষ তীরন্দাজ?
তারা কেন অস্ত্রহীন গিয়েছে
সেই জঙ্গলের পথে
যেখানে ওৎঁ পেতে আছে গুপ্তধানুকী এবং মাংসবিক্রেতারা?

কাঠের ঘোড়া

আমারও যদি থাকতো একটা ‘টিন ড্রাম’ অস্কারের মতো! এমনকি প্রত্যেকটি মানুষেরই দরকার একটি টিনড্রাম অথবা ট্রাম্পেট জাতীয় কিছু একটা বাস্তবতার যাবতীয় অনাকাঙ্খিত কষাঘাত থেকে পালিয়ে বেড়ানোর জন্য।

থাকলে বেশ হতো। নেই। তাতে কি? আমারতো আছে একটি কাঠের ঘোড়া। যখন তখন পালিয়ে বেড়ানো যায় দেশ থেকে দেশান্তরে, তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে, সাত সাগরের তীর পেরিয়ে খেয়ালখুশীর বাড়িটিতে ঢুকে পড়া যায়। এটাই আমার আজীবনের সঙ্গী। আমার মুক্তি।

খট্‌ খটা খট্‌। বর্তমান থেকে অতীত, অতীত থেকে অনাগতের স্বপ্নে ঢুকতে একটুও দেরী হয়না। জানি একদিন আচমকা শুরু হবে ফুরিয়ে যাবার বেলা। ঘোড়া থেমে গেলেই শুরু হবে সেই চিরন্তনের খেলা। সেদিনটি কবে ? জানিনা।

মুক্তগদ্য
৭ম সংখ্যা, বইমেলা ২০১৭।

হ্যালুসিনেশন

কুয়াশার চাদরে মোড়া ওই বনভূমি, ওই নদী, হরিণের জলপানের ওই দৃশ্য ; এক বিশাল ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো। মনে হয় ওই দৃশ্য কোথাও ছিলনা। অথবা ছিল। তারপরেও ওই দৃশ্যটাকে নেহাতই একটা রং-তুলিতে আঁকা ছবি বলেই ধরে নেই। কিন্তু এখনো সেই জলের গন্ধ, সেই পিপাসার্ত হরিণের ব্যাকুল ছুটে আসার আনন্দ-উল্লাস একদম টাটকা—-জীবন্ত।

কুয়াশামগ্ন জল-জঙ্গলের ভেতরেই কি ছিল সে স্বপ্নের কুটির?

আমরা যা সত্যি বলে ধরে নেই তার অনেকটাই হয়তো স্বপ্ন অথবা হ্যালুসিনেশন। এই হ্যালুসিনেশনেরও একটা স্মৃতি থাকে। রঙ্গীন অথবা বিষাদাচ্ছন্ন। স্মৃতিবন্দি মানুষের পরাধীনতার কষ্ট অন্যরকম। অনুতাপ। নিজেকে এক মস্ত তোরঙ্গে বন্দি করে ফেলে নিজে নিজেই। তারপর সেই সিন্দুকের চাবি হারিয়ে ফেলে। আজীবন পিছুটানের পঙ্গুত্ব। এমনি হয়।

অন্ধকার

আমার আঁধার ভালো। রাত্রিকে কেন ঢেকে দাও নকল আলোর বন্যায় ? শোন গন্ধরাজের সৌরভের সাথে কেমন হু হু বেজে যাচ্ছে
আঁধারের নিজস্ব সুর, আপন কোলাহল।

এ আগুন ফিরিয়ে নাও। ভুলে যাও পাথরে পাথর ঘষা সভ্যতার এই উন্মেষ। যুগযুগ সাধনালব্ধ কৃত্রিম আলোর এই ফোয়ারার উদ্ভাস ভুলে যাও। রাতকে থাকতে দাও তার নিজের মতো। রাতের এই স্বতস্ফুর্ত নিজস্বতাকে আড়াল করতে জ্বালিওনা কোন প্রদীপ অথবা ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব। রাতচরা পাখিগুলোকে উড়তে দাও তাদের প্রিয় আকাশে।

মুছতে চাইনা নকল আলোর উৎসবে অন্ধকার রাতের এই চাকচিক্য। আঁধারের নিজস্ব সুরটুকু শুনতে চাই, দেখতে চাই তমসার একান্ত আপন সৌন্দর্য। আরো আরো আরো গাঢ় হোক তমিস্রা। শ্লেটের কালোর মতো। হতাশার মতো। সারারাত অন্ধকার দেয়ালের গায়ে একের পর এক ফুটে উঠুক ছবি। অতীত। দীর্ঘশ্বাস। এভাবেই একসাথে জেগে থাকবো আমি ও আমার অন্ধকার। সারারাত।

যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও -পাবলো নেরুদা

মূল কবিতা : If You Forget Me
– Pabolo Neruda
অনুবাদক: নাজনীন খলিল

আমি তোমাকে
একটি কথা জানাতে চাই

তুমি জানো তা কেমন করে :
যদি তাকিয়ে থাকি স্ফটিক চাঁদের দিকে
আমার জানালায় ধীর শরতের লালিম শাখায়,
যদি স্পর্শ করি
আগুনের পাশে
স্পর্শাতীত ছাই
অথবা জরাজীর্ণ কাঠের গুঁড়ি,
সব কিছু আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যায়,
যেন সবই অস্তিত্বময়,
সুরভীটুকু,আলো,ধাতুগুলো,
ছোট্ট নৌকাগুলোর
পাল ছিল
আমার প্রতীক্ষারত তোমার দ্বীপগুলোর দিকে।

বেশ,এখন,
যদি একটু একটু করে থামিয়ে দাও আমাকে ভালোবাসা
আমিও অল্প অল্প করে রুদ্ধ করে দেবো তোমাকে ভালোবাসা।

যদি আকস্মিক,
তুমি আমাকে ভুলে যাও
আর খুঁজোনা আমাকে
কারণ এরমাঝেই আমি ভুলে যাবো তোমাকে।

যদি তুমি এটা দীর্ঘ এবং মাতলামো ভাবো,
বৈজয়ন্তী বায়ুপ্রবাহের ভেতরে বয়ে যায় আমার জীবন,
এবং তোমার সিদ্ধান্ত
আমাকে ছেড়ে যাওয়া সেখানে
হৃদয়ের যে তটরেখায় আমার অধিষ্ঠান,
মনে রেখো
সেটা সেই দিন
সেই প্রহর
আমি আমার বাহুদ্বয় উত্থিত করবো
এবং আমার শেকড় উঠবে অন্য ভূমির সন্ধানে।

কিন্তু
যদি প্রতিদিন,
প্রতি ঘন্টা,
তুমি অনুভব করো তুমি এগিয়ে আসছো আমার দিকে
তোমার অপ্রশম্য মধুরতা সহ,
যদি প্রতিদিন একটি পুষ্প
তোমার ওষ্ঠদ্বয়ে আরোহণ করে আমার সন্ধানে,
আহ আমার প্রেম, আহ আমার আপন,
আমার মাঝে পুন: প্রজ্বলিত হয় সে সব আগুন
আমার মাঝে কিছুই নি:শেষ হয়নি অথবা হয়নি বিস্মৃত।
আমার ভালোবাসা শুষে নেয় তোমার প্রেম, প্রিয়,
এবং যতদিন বেঁচে থাকবে তুমি তোমার বাহুডোরে থাকবে
আমাকে না ছেড়ে।

আগুনের পাখি : ফিনিক্স

ভস্মস্তুপ থেকে আবার এসেছে উঠে, অবিনশ্বর আগুনের পাখি; ফিনিক্স।

প্রতিবন্ধী এক ঈশ্বরকে যূপকাষ্ঠে বলি দেবার পরে
যারা সন্ন্যাসীর বাঘছাল দিয়ে বানিয়ে নিয়েছিল ট্রাম্পেট
আর সেই প্রচন্ড ঢাকের শব্দ ছড়িয়ে দিয়েছিল বাতাসের পরতে পরতে
তারাও কি পথ ভুলে নেমে গেল কালো এক অন্ধকার গুহার দিকে?
ভুল করে বন্ধ গুহার ঘুলঘুলি খুলে গেলে
অবাঞ্চিত রোদ
রবাহুত শব্দের হৈচৈ ওঠে।
বন্ধ গুহাই নিরাপদ। বন্ধই থাক।

যুগে যুগে মানুষ কেবল শুনেছে
আগুন উগরে দেওয়া পাহাড়ের কথা।
লারারিয়ায় এখনো অঙ্কিত আছে ভিসুভিয়াসের সাপ।

তীব্র হুইসেলের শব্দে দুলে ওঠে জলসাঘরের ঝাড়বাতি;
অস্থির আলোর রেখাপথ ধরে আত্মবিনাশকামী পতঙ্গ ওড়ে।

অগ্নিরহস্যসন্ধানী পতঙ্গেরা
বারবার সে রহস্য জানতে চেয়েছে
কী এমন ক্ষোভে ভলকানোর আচমকা এমন তীব্র ফোঁসে ওঠা!

অবশেষে
সমস্ত জমাট বরফ গলে গেলে দেখা গেল
রক্তমাংস নয় – রঙিন পোশাকেমোড়া কঙ্কাল।

জানালার পাশে ছাইবর্ণ মেঘ
ঈশানকোণের বার্তা নিয়ে আসে-
ছায়াপথ ধরে আবার আসবে ফিরে কফিনবন্ধী ঘুঙুরগুলো;
যারা এখনো খোলেনি নাচের পোশাক,
ভোলেনি কত্থকের ‘তেরে কেটে’ মুদ্রার বোল
একে একে ফিরবে সব নাচঘরের বেলোয়ারী আলোর বাসরে।
আবারও
অদ্ভুত জোনাকীর আলো থেকে আসবে উঠে সেই নৃত্যপটীয়সী ময়ূরগুলো
যারা অবারিত জলনৃত্যের শ্রান্তিতে রঙিনপালক ঝরিয়ে দিয়ে
উড়ে গিয়েছিল অচেনা মেঘপথের উজান সন্ধানে।

আবারও নতুন আঁচড়ে আঁচড়ে বিক্ষত হবে সোনালি ডানার রেখাচিত্রগুলো;
পালকে জলের ভার অসহ হয়ে গেলে
আবারও জন্মান্তরের পথে ফিরে যাওয়া?

মাত্র একটি শব্দ-উচ্চারণের হেরফের

তেমন করে যাওয়া হয়না।
কোন সীমাহীনেই তো হারিয়ে যেতে চেয়েছিলাম—-
গন্তব্যবিহীন এক ট্রেনের হুইসেল যখন বেজে ওঠে,
বলি–একটু থামো।ভেবে দেখি আর আমার নেবার মতো কিছু বাকী আছে কিনা।

নিতান্ত প্রকৃতির খেয়ালে বেড়ে ওঠা অশ্বত্থ–কতদূর তার শিকড় ছড়ায়
কেমন রাশি রাশি নেমে আসা ঝুরি-জটাগুলো ঘিরে রাখে তার সমস্ত অবয়ব!

এওতো সত্যি–সম্পর্কগুলো কুরুশ-কাঁটার বুননে নকশী-ফুলের মতো
মনে করো –অনবধানে শেষ গিঁট খুলে গেছে
তখন আর কোথায় নকশা
কোথায়ইবা মনোলোভা কারুকাজ!
পরিত্যাজ্য-প্রায় কুঁচকানো অতি-সাধারণ একখন্ড সুতো।
তবু কি তার মাহাত্ম্য!
দ্রৌপদীর অন্তহীন আঁচলের মতন–কেবলই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর, দীর্ঘতম…….

কোন পথে গেছে অমৃত-উদ্যান
কোনটি অতলান্ত-অন্ধকার টানেলের পথ

মাত্র একটি শব্দ-উচ্চারণের হেরফের বদলে দেয় আমূল জীবন;
মাত্র একটি——হ্যাঁ
অথবা———-না।

দাগ

থাক্‌।

এই দাগ। বোতল উপচে পড়া তরল আনন্দচিহ্ন।
বাতাসে মিলিয়ে গেলে ঘ্রাণ
তলানিতে স্মৃতিঅভিজ্ঞান ফুটে থাক
আরো কিছুটা সময়।

ফুল টেনে নিচ্ছে প্রাণপণ গন্ধ, বাতাসের।
মলয়ার অনুতে অনুতে ভিন্ন সুর বেজে গেলে
রঙ বদলে যায় বারবার
তা কি জানে বোকাপুষ্প?

রঙ পেন্সিল হাতে দাঁড়িয়েছি নোনাদেয়ালের পাশে।

দুই ফোঁটা নুন

কালরাতে
মেঘমল্লার বেজে বেজে উঠেছিলো
অঝোর কেঁদেছিলো আকাশ;
চাতকেরা বৃষ্টি ছোঁয়নি
বৈরাগ্য–ছুঁয়ে ফেলেছিল তাদের।

সেই অবিরল ধারার ভেতরে অনায়াসে ঠেলে দিয়ে
হাসতে হাসতে বললে–
‘তোমাকে ঘিরে আছে আজন্ম খরা
একমাত্র জলের ভেতরেই সুন্দর তুমি’।

তুমি ভিজো নি।শুধু
তোমার দু’চোখে দুই ফোঁটা নুন জমেছিলো।

মেঘমল্লার বাজে

বাজে
মৃদঙ্গ। মেঘমল্লার। ময়ুর পেখম।

কাম্যবৃষ্টি ঝরে।
বাঁশীতে বাঁধা ছিল মেঘমল্লারের সুর ;
তুই চাইলি বলে—
হাজার একর আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নামিয়ে দিলাম।
তুই কেন ভিজলিনা তবু?

হায় পিপাসার্ত মানুষ!
বরফের চাঁই ভেবে আগুন জ্বালায় সাদা পাথরের নীচে ;
পাথরে পাথর ঘষে।
আর কখনো কখনো
এই পাথুরেধোঁয়া থেকেই ছড়িয়ে পড়ে ধুপসুগন্ধীঘ্রাণ
উড়ে আসে গন্ধবিভোর চকোরেরা ;
আগুনের আঁচে ছাই হয়।

খরার উজানে যেতে যেতে ছুঁয়ে ফেলি সমুদ্রের ঢেউ।
নোনাজলে গোড়ালি ডুবে গেলে,
চাইলাম— আকাশ আবার ফিরিয়ে দিক
সাগরের শুষে নেয়া জলকণারাশি।

আমার বাঁশীটা দিয়ে দিলে —
তুই কি এমন বৃষ্টি নামাবি?

আমার ক্ষেত্র নয় রণভূমি

দ্রোহ?

অবিচল নিষ্ঠায় শানাচ্ছো তরবারি
শূন্যগর্ভ বাতাসে ঘুরাচ্ছো
সাঁই সাঁই শব্দে পরখ করে নিচ্ছো ধার
ঝালিয়ে নিচ্ছো হাতের নিপুনতা ।

জানোনা ,
প্রবল থেকে প্রবলতমে উত্তরণের লোলুপতা
কিভাবে ক্ষুদ্রতায় নিয়ে যায়।

যুযুৎসু প্রতিপক্ষ নই।আমার ক্ষেত্র নয় রণভূমি।

আমি যেন অবিকল
‘কাফকা’র সেই নায়কের মতো
রূপান্তরিত বিচ্ছিন্ন এক তেলাপোকা।

দুই হাতে আগুনের ফুলদানী
আঁকড়ে বসে আছি
অসম্ভব যন্ত্রণার কাতরতা শুষে নিচ্ছে
অন্তর্গত এক অনন্ত ঔদাসীন্য।
দেখিনা কিভাবে খসে পড়া মাংসখন্ডগুলো
ভাগাভাগি করে খায় কাক ও কুকুরেরা।

বর্ণমালা লিখে যাচ্ছে প্রতিদিন
আমার ব্যর্থতা ও আর্তনাদের দলিলগুলো
আর
আমি ক্রমশঃ
নির্বাসিত হয়ে যাচ্ছি অন্তর থেকে অন্তরতমে।

(২০০৮)

আবার ফিরে আসবো, সাগর

সমুদ্র এমন গোঙায় কেন সারারাত
সেকি আরিথিউসার অপমানের কান্না?

প্রবল জলের ভেতর সূর্যাস্তের আকাশ
কেমন নি:শেষে ঢেলে দেয় তার সোনার থালা ;
সমুদ্রে।
নিস্তব্ধ দাঁড়িয়ে থাকি সৈকতে
সামুদ্রিক পাখি আর ঈগলের চিরায়ত প্রতিশোধ প্রতিশোধ খেলা দেখি।
সাগরের বুকের গহনে খুঁজি আরেক আকাশ।
অস্থির ঢেউগুলো দেখতে দিলোনা।
কতোবার!
কতোবার!
ফিরে গেছি।

জলধির কী যে টান ধীবরেরা জানে।