নূর ইমাম শেখ বাবু এর সকল পোস্ট

নূর ইমাম শেখ বাবু সম্পর্কে

রোজ কবিতা রচি কবিতার মাঝে বাঁচি, কিন্তু আমি বসত করি মৃত্যুর কাছাকাছি!

ফিরে যেতে চাই

আমি শিশু হতে চাই
আবার কিশোর হতে চাই,
যৌবন আমায় আদর স্নেহ
সব কেড়েছে ভাই।

আমার প্রিয় মায়ের কোল
আর দোলনায় খাওয়া দোল,
ঘর্মাক্ত এই যৌবন বেলায়
স্মৃতির কোলাহল।

আজ শব্দ করে আর
কান্না করা বেজায় ভার,
আর্তনাদে বুক ফেঁটে যায়
কে খোঁজ রাখে তাঁর?

বাবা করেন না আর আদর
মা ভুলেই গেছেন স্নেহ,
কোথায় আছি কেমন আছি
খবর নেয়না কেহ।

আমি শিশু হতে চাই
আবার কিশোর হতে চাই,
আবার আমি মায়ের কোলে
চাই পেতে চাই ঠাঁই।

ও মেয়ের মন বড় বিচিত্র

ও মেয়ের মন বড় বিচিত্র, কখনো যুদ্ধে মারনাস্ত্র,
হতে পারে রেগে কুরুক্ষেত্র, শুধু নয় রণসাজ সশস্ত্র।
ও মেয়ের হাত হতে পরিত্রাণ, পাবেনা সে হোক যত বুদ্ধিমান,
সব ব্যপারেই সে সন্দিহান, সেই এই জগতের স্পন্দন।
নিজেকে করতে জানে সমর্পণ, দিতে পারে সব সুখ বিসর্জন,
বুক জুড়ে থাকে তার আস্ফালন, কষ্ট সয়েও করে সমর্থন।

ও মেয়ের ছোঁয়াতে স্বর্গবাস, অভিশাপে হতে পারে সর্বনাশ,
কখনো করোনা তাকে উপহাস, হতে পারে নিষ্ঠুর পরিহাস।
ও মেয়ে করে শুধু প্রহসন, রাজ্য না চায় শুধু সিংহাসন,
ভালোবেসে করো তারে সম্বোধন, সে ছাড়া একাকী নির্বাসন।
ও মেয়ে সব কাজে অন্তরায়, বিচ্ছেদে যায় বুক ভেংগে যায়,
তার প্রিয় হওয়া কভু সস্তা নয়, নির্ভয়ে প্রাণ বাজি রাখতে হয়।

ও মেয়ের গর্ভে জন্ম সবার, সে ছাড়া পৃথিবী অন্ধকার,
স্বপ্ন থাকে যদি স্বর্গে যাবার? খুঁজে পাবে যেন পার তলে তার।
ও মেয়ের আত্মার আত্মীয়, খুঁজে পাবে মহাসুখ স্বর্গীয়,
হতে পারে সে অতি নমনীয়, দিতে পারে যন্ত্রণা অসহনীয়।
ও মেয়ের জন্যই ধ্বংসলীলা, যুদ্ধ বিগ্রহ আর বিশৃঙ্খলা,
সত্য লুকিয়ে রেখে মিথ্যে বলা, আমরণ সয়ে যাওয়া অবহেলা।
ও মেয়ে ঘৃনা করে দারিদ্র্য, আর ভালোবাসে সৎ চরিত্র,
ও মেয়ে মার জাত পবিত্র, ও মেয়ের মন বড় বিচিত্র।

সন্দেহের সংসার

প্রিয় মানুষটি অন্য কারো সাথে অন্তরঙ্গ সময় কাটাচ্ছে, সেটা আপনি কখনই মেনে নিতে পারেন না। কিন্তু সেই আপনিই যখন পছন্দের কারো সাথে ভালোলাগা মুহূর্তগুলো উপভোগ করেন, তখন কি একবারও আপনার মনে হয় আপনার সেই প্রিয় মানুষটির কথা, যাকে আপনি একচেটিয়া ভাবে সন্দেহ করে যাচ্ছেন? আমি জানি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে কেউই প্রস্তুত নন। আমরা মানুষ। আমাদের চরিত্র বিচিত্র রকমের। আমরা নিজের বেলায় শুধু ষোল আনা বুঝি। অন্যকে বুঝতে চাই কম। আর গোলমালের সূত্রপাত এখানেই।

একবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন, আপনি সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকেন। হোক সে অফিসে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। দেশে বা দেশের বাইরে। সময় কখন বয়ে চলে যায় স্রোতের মত টেরও পান না। কিন্তু আপনার প্রিয়জন বাসায় কিভাবে সময় কাটান, একবারও কি ভেবেছেন? যারা চাকরী করছেন বা ব্যবসা সামলাচ্ছেন তাঁদের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু অন্যরকম। সেখানে দুজনের সন্দেহের মাত্রাটা দুজনের প্রতি সমান। আপনার প্রিয়জন যদি গৃহিণী হয়ে থাকেন তবে টিভি দেখে, পত্রিকা পড়ে বা ইন্টারনেট ঘেঁটে সময় কাটান। তিনি যখন অনলাইনে আসেন তখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হাজারো মুখের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন। তাঁর মানে এই নয় যে, তিনি আপনার থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। যদি ব্যতিক্রম কিছু ঘটে সেটার জন্য আমি আপনাকেই দায়ী করব।

ইন্টারনেটে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে তোলাটাকে আপনি যদি সহজভাবে না নিতে পারেন তবে অবশ্যই আপনি তাকে পর্যাপ্ত সময় দিবেন। আর তা যদি না পারেন তাঁর সময় কাটানোর জন্য বন্ধুদের সাথে অনলাইনে সময় কাটানোটাকে সহজভাবে মেনে নিন। প্রাণ খুলে গল্প করার সময় আপনি দিবেন না, আবার কারো সাথে করতেও দিবেন না, তাহলে ঐ মানুষটা আর একজন কারাবন্দীর মধ্যে পার্থক্য কোথায় বলুন? মানুষ কারো সাথে গল্প করলে কখনই তাঁর হয়ে যায় না। প্রাণ খুলে গল্প করার মাঝে নারীরা এক ভিন্ন ধরনের আনন্দ খুঁজে পায়।

সামান্য খুটিনাটি বিষয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভয়ানক ঝগড়ার সৃষ্টি হতে দেখেছি আমি। এর পেছনে মূল কারণ সন্দেহ। স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে প্রাইভেসি বলে কিছু নেই। এই প্রাইভেসির দেয়াল আমরা নিজেরাই তৈরি করি ভুল বোঝা বা সন্দেহের কংক্রিট দিয়ে। যা শেষ পর্যায়ে ছাড়াছাড়িতে পতিত হয়। আর যাদের সন্তানাদি আছে তাঁরা বেড়ে ওঠে কুরুক্ষেত্রের মতন সংসারে। যা তাঁদের মানসিক বিকাশে বাঁধ সাধে। আপনার প্রিয়জনের যদি আপনাকে ভালো না লাগে তাহলে সে এমনিতেই আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে। আপনি ঠেকাতে পারবেন না। বেশীরভাগ পুরুষ মনে করেন আমার স্ত্রীর অন্য কারো সাথে দৈহিক সম্পর্ক আছে। ভালোবাসার মানুষটি সম্পর্কে এমন ভাবনা প্রত্যেক পুরুষই অন্তরে পুষে রাখেন।

একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন, কোন নারীই স্বামী ব্যতীত অন্য কারো সাথে দৈহিক মেলামেশা করতে আগ্রহী নন। অবশ্য যারা চারিত্রিক ভাবে ছোটবেলা থেকে অন্যরকম তাঁদের কথা আলাদা। মেয়েরা ঘুরতে বেশী পছন্দ করেন। পছন্দ করেন গল্প করতে। দৈহিক চাহিদা নয় বরং হৈচৈ করে সময় কাটাতে তাঁরা বেশী পছন্দ করেন। তাঁদের মন অতি কোমল। তাঁর প্রতি অশ্লীল সন্দেহ পোষণ করেন এটা যদি সে ঘুনাক্ষরেও টের পায় তাহলে সর্বনাশ। তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করুন। বেশী বেশী সময় দিন। মনে দাগ কাটে এমন আচরণ করবেন না। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখার ব্যাপারে তাকে স্বাধীনতা দিন। কেউ যদি পাপ করার আশা পোষণ করে, তাকে মানুষের পক্ষে পাহারা দিয়ে থামানো সম্ভব নয়।

নিজে ধর্মের হুকুম আহকাম মেনে চলুন। প্রিয়জনকেও উৎসাহিত করুন ধর্ম পালনে। যারা পাপকর্মে লিপ্ত তাঁদের পরকালের করুণ পরিনতির কথা বার বার বিভিন্ন উপায়ে স্মরণ করিয়ে দিন। সব কাজে তাঁর মতামতকে প্রাধান্য দিন। দূরে থাকলে দিনে একাধিকবার খোঁজ খবর নিন। নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তাঁর সাথে শেয়ার করুন। তাঁর থেকে অভিনয় করে হলেও বুদ্ধি নেবার চেষ্টা করুন।

দেখবেন তাঁর জগতে আপনি ছাড়া আর কেউ নেই। আপনি যখন তাঁর থেকে দূরে সরে যান তখনই সে মলিন মুখে অন্যের পানে তাকায় মনের কষ্ট গুলোকে শেয়ার করার জন্য। বাড়তে থাকে দূরত্ব। আপনি নিজের চোখের যেমন যত্ন নেন, একটা ধূলি কণার আঘাতও লাগতে দেন না, প্রিয় জনের ঠিক তেমন যত্ন নিন। শান্তিময় জীবন যাপন করুন। হাসি খুশীর মাঝে বেড়ে ওঠা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পৃথিবীকে উপহার দিন।

সর্বহারা বার্ধক্য

অর্থ বিত্তে জীবন যখন ছিল অনেক সুখের,
চারিপাশে ছিলনা অভাব তোষামোদ করা লোকের।
বেদনাসিক্ত অন্তর আমার পুড়ে হয়েছে ছাই,
অসহনীয় সে যন্ত্রনা দেখার কেহ নাই।

যেদিন থেকে বার্ধক্য কাঁধে করেছে ভর,
বন্ধু বান্ধব শুভাকাঙ্ক্ষী সব হয়েছে পর।
দিনরাত্রি একত্র করে লালন করেছি যাদের,
একটি পলক চেয়ে দেখার সময় নেই আজ তাদের।

পরিচর্যার ফলবান গাছ আগাছা হয়েছে আজ,
তাইতো শুধু আমার বেলায় ব্যস্ততা আর কাজ।
সহযোগিতা চাইতে আসা প্রিয় বন্ধু গুলি,
সবাই একই পথের পথিক কেউ গিয়েছে চলি।

জীবন সাথী স্বার্থ নিয়ে গেছে পরবাসে,
একলা ফেলে নিঃস্ব আমায় শেষ বয়সে এসে।
বার্ধক্য যাঁতাকলে মারছে আমায় পীষে,
আমার কষ্টে জমানো টাকায় আমায় ওরা পোষে।

দোয়া করি সবার জন্য এমন যেন হয়,
বার্ধক্য ছোঁয়ার আগে মরণ ভাগ্যে রয়।
শেষ প্রান্তে ঘরের কোনে পড়ে আছে যারা,
বার্ধক্যই বলে দিচ্ছে তারা সর্বহারা।

স্মৃতি

দূরন্ত আমার ছুটন্ত মন
তোমায় খুঁজে ফেরে সারাক্ষণ
তুমি অচীন পূরে,
ফুটন্ত ফুল যাচ্ছে ঝরে
দেখে এলাম জগৎ ঘুরে
মনের মতন করে।

প্রান্তর জুড়ে তোমার স্মৃতি
উজ্জীবিত মোহ প্রীতি
হৃদয় উথাল পাথাল,
দূর আকাশের তাঁরার মাঝে
তোমায় খুঁজি সকাল সাঁঝে
স্তব্ধ মহাকাল।

ভাবনার ভূল যাতনার তীরে
নোঙর ফেলে যাচ্ছে ফিরে
ডাকছে পীছু কেহ,
মনের জ্বালা মনই বোঝে
কল্পলোকে তোমায় খোঁজে
কঠিন প্রীতির মোহ।

দুঃখ দেখায় বড্ড বিনয়
কারণ ছাড়াই হয়নি প্রণয়
স্বপ্ন ছায়ায় থেকে,
ব্যথার স্রোতে অবগাহন
সুখী হতে যেন বারণ
স্মৃতি আগলে রেখে।

সামনে এলে দুর্বলতা
জাগে তোমার কোমলতা
আমার ভুবন জুড়ে,
আমার কষ্টে আমি সাজি
কি যাতনা আমিই বুঝি
হৃদয়ে রাখা মুড়ে।

মেড ইন জিনজিরা

মাল হলে জাপানী, ভালো হয় তা জানি,
করে যারা ব্যবহার, বলে তারা এ খবর।
হলে ভারতীয় মাল, নকল কিংবা আসল,
প্রতিবেশী দেশ বলে, মেনে নেই প্রাণ খুলে।

ইন্দোনেশিয়া হতে, যা আসে হাতে হাতে,
ঘরে রাখে সাজিয়ে, অতীব খুশীর সাথে।
মালএশিয়ার মাল, ভালো চলে কিছুকাল,
তারপর হয়ে যায়, ভাঙ্গাড়ি বা জঞ্জাল।

মেড ইন পাকিস্তান, কম মেলে সন্ধান,
ভালো মান হলেও, খারাপের সমমান।
সিঙ্গাপুর হতে আসা, মাল নাকি হয় খাসা,
এক্সচেঞ্জ করলেও, করা যায় কিছু আশা।

আর ভাই চায়না, ধরে শুধু বায়না,
অনেকেই ছোয় না, ফ্রিতেও নেয়না।
না টিকলে কিছুক্ষণ, টিকলে আজীবন,
ঝকমকে আবরণ, গুণাবলীটা এমন।

হেবী মাল কোরিয়ান, মিলছেনা আর এখন,
কপি পেস্ট সারাক্ষণ, চাইছে যে যেমন।
মেড ইন জিনজিরা, আইডিয়া ধার করা,
হয়েছে পাগল পারা, কিনেছে যে বা যারা।

ফেসবুক কলোনি

রোজ রোজ রাত জেগে ফেসবুক করো না,
মধ্য বয়সের আগে বুড়ো ভাম হয়ো না।
টগবগে যুবকের পীঠ কেন কুজো হয়?
পনেরয় ডাক্তার চশমা লাগাতে কয়!

টেনশানে আয়ু শেষ আহহারে ফেসবুক,
দাদু নানুদের মত চোয়ালটা ভাঙা মুখ।
পেজে পেজে ঘোরাফেরা কেন আজ কি কারন?
এলো এলো এই বুঝি এলো নোটিফিকেশন!

হলো বুঝি ভাইব্রেট চেক করা বারেবার
ভয়ানক আসক্তি বলেছেন ডাক্তার।
কমোডেও বসে বসে চলছে ভিডিও চ্যাট
নাওয়া খাওয়া ঠিক নেই এ যে বড় সংকট।

ক্লাস শেষে কলেজে অফিসেও যেতে লেট,
বাথরুম চেপে রেখে স্ট্যাটাস আপডেট।
পোস্ট দিয়ে বসে থাকা হা করে সারাক্ষণ,
লাইক পেলে হাসি ফোটে কমেন্টে ভরে মন।

দু-জনার একই ঘর নামে এক বিছানা,
দিন যায় মাস যায় হু হা ছাড়া কথা না।
ঘরে ঘরে অশান্তি প্রাইভেসি নিয়ে আজ,
কত ঘর ভেঙে গেল বলতেই লাগে লাজ।

দুই দিকে মুখ করে প্রতি রাত কেটে যায়,
কথা কাটাকাটি শুধু কে কার দোষ পায়।
খুব সাবধানে হাটো অনলাইন সরণী,
প্রয়োজন ছাড়া নয় ফেসবুক কলোনি।

আবার দেখা হবে

আবার কথা হবে, ফাগুনের উৎসবে
প্রাণের কলরবে, দেহের অনুভবে।
ঘন হবে নিঃশ্বাস, বেড়ে যাবে বিশ্বাস
তুমি দিও আশ্বাস, করে যাবো উল্লাস!

করো গো সমর্পণ, দাও গো বিসর্জন
প্রাণের আস্ফালন, তোমার আমার উত্তরন!
এতো নয় অন্যায়, তবে কেন সংশয়?
বেড়ে যাবে প্রত্যয়, কেন করো অনুনয়?

আবার এসো ফিরে, আরো কাছে ধীরেধীরে
মিশে যাও শীরেশীরে, মিলে যাও অন্তরে।
দৃঢ় করো বন্ধন, করে যাও আলিঙ্গন
দাও ক্লান্তি বিসর্জন, কষ্ট সমূল উৎপাটন!

যাও কামনায় মেতে, চাওনা কাছে পেতে
আহা আজকে রাতে, নয় কাল প্রভাতে!
আবার পেছন ফিরে, আরো আপন করে
থাকো রাত্রি ভরে, বুকে আগলে ধরে!

যাওনা কথা বলে, আজকে পরান খুলে
প্রাণের দোলায় দুলে, লজ্জা যাওগো ভুলে।
এই ফাগুনের উৎসবে, নরম কোমল অনুভবে
দূরত্ব ঘুচে যাবে, আবার দেখা হবে।

মডার্ন লাইফ

মামার সামনে মামী ডাকে
একলা পেলে ভাবী,
চারিদিকে কত কিছু
ঘটছে হাবিজাবি।

মামী কিন্তু কম যায়না
যখন একা হয়,
কুটুস করে ভাগ্নের ফোনে
মিস কল মেরে দেয়।

কি যে হল এই সমাজে
ভাবতে অবাক লাগে,
চামড়া ঝুলে গেছে তবু
আটা ময়দা মাখে।

বাহান্ন আটান্ন বয়স
হয়ে গেছে যার,
খালা বলে ডাকলে তাকে
মান থাকেনা আর।

বাধ্য হয়ে আপু কিংবা
ম্যাডাম ডাকতে হয়,
লোকজনে এটাকে নাকি
মডার্ন লাইফ কয়।

রিক্ত হস্তে সিক্ত নয়নে

রিক্ত হস্তে সিক্ত নয়নে, বিষণ্ণ প্রাণে মলিন বদনে,
উগ্রপন্থার নিষ্পেষণে, আত্মঘাতী আক্রমণে!
জঘন্যতম নৃশংসতা, মানবিকতার বিপন্নতা,
রক্তারক্তির আধিক্যতা, রক্ষাকারীর আদিখ্যেতা!

বর্বরতার শীর্ষে মানব, অন্তরালে হিংস্র দানব,
ধ্বংসলীলায় স্বয়ং সরব, উচ্চারণে মহানুভব!
অত্যাচারী এই পাষণ্ড, চিন্তামগ্ন ক্ষণিক দণ্ড,
অস্তিত্ব বিলীন পণ্ড, পূণ্যের নামে লণ্ডভণ্ড!

উম্মাদনার আকাঙ্ক্ষাতে, বিগ্রহে মত্ত সংঘাতে,
ধ্বংসযজ্ঞের এ শংকাতে, স্বতন্ত্র হয় রোজ প্রভাতে!
বিষণ্ণতার ক্রান্তিকালে, উগ্রবাদ উৎপত্তিস্থলে,
সংকীর্ণতার আস্তাবলে, প্রলয়ঙ্করী অগ্নি জ্বলে!

শৃঙ্খলা আজ নির্বাসনে, নিষ্ঠা মৃত্যুর সময় গোনে,
ভাণ্ডারে রত্নে আর ধনে, বলিষ্ঠ লোক স্বসম্মানে!
দীক্ষা কানুন জলাঞ্জলি, বিরক্তিকর গৃহস্থালী,
হুঙ্কার ছাড়ে সম্পদশালী, ঘৃণ্য সত্ত্বার পদাবলী!

অধীনস্থের রক্তে নেয়ে, শান্তনার বক্তব্য দিয়ে,
নৈরাজ্যতার সমন্বয়ে, দৃষ্টি বিভ্রাট কি বিস্ময়ে!
রিক্ত হস্ত সিক্ত নয়ন, মৃত্যুর ভয়ে এ সমর্থন,
মৃত্যুদূতের শুভাগমন, নিষ্ঠুরতম কষ্টে মরণ!

এক ফোঁটা অশ্রু

এক ফোঁটা জল দাও এ চোখে তুলেছি দুটি হাত,
কবুল করো মূর্খ অধম বান্দার মোনাজাত।
নির্বোধ আমি করে ফেলেছি পাহাড় সমান পাপ,
মহীয়ান তুমি শ্রেষ্ঠ প্রভু করে দাও মোরে মাফ।

আমার সীমার প্রাণে জাগাও পরকালের ভয়,
জানি আমার অশেষ গুনাহ ক্ষমার যোগ্য নয়।
খেয়ানত করেছি কতো অফুরান সে ঋণ,
সেই হিসাব চেওনা প্রভু রোজ হাসরের দিন।

আমার দিলে খোদা তুমি মারিওনা মোহর,
এই দু চোখে জল এনে দাও তুমি নৈশ প্রহর।
অধম আমি নফসের উপর করেছি অত্যাচার,
তওবা করছি খাছ দিলে পাপ করবো না গো আর।

তুমি আল্লাহ্‌ দয়ার সাগর পাথর হৃদয় আমার,
নরম কোমল শীতল করো নেবার আগে কবর।
সকল গুনাহ মাফ করে দাও বানাও খাঁটি মুমিন,
এই চোখে জল দাও এনে দাও আল্লাহুম্মা আমীন।

ক্ষমা করার ক্ষমতা তো একমাত্র তোমার,
তোমার মাবুদ অজানা নয় ভুলের স্বভাব আমার।
কুরআনের আয়াতে করো আমার অন্তর শীতল,
মোনাজাতের সময় আমার চোখ ভরে দাও জল।

মহাবিপদ আসন্ন

মানবতা বিপন্ন, মহাবিপদ আসন্ন
দিনে দিনে নগন্য, হয়ে উঠছে বরেণ্য!
অত্যাচারীর অত্যাচার, সইবে মানুষ কত আর?
নির্যাতিতদের চিৎকার, নিত্য ভাঙে অঙ্গীকার!

নামেই শুধু প্রসিদ্ধ, বিজ্ঞাপনে বিশুদ্ধ
নরাধমের সান্নিধ্য, বিবেক নীতির বিরুদ্ধ!
পুঁজিবাদীর সমন্বয়, সাধারণের বিপর্যয়
সমাজ রাষ্ট্রের অবক্ষয়, রয়ে যাবে কি দুর্জয়?

কেউ তো মানেনা আজ্ঞা, নিত্য করে অবজ্ঞা
উচ্চারিত প্রতিজ্ঞা, অদৃশ্য নিষেধাজ্ঞা!
হাসি মুখের অলংকার, উত্তেজনায় অহংকার
ক্ষুদ্র বলে তিরষ্কার, স্বার্থ লোভে অস্বীকার!

অত্যাচারী তো দাম্ভিক, প্রতিবাদী কি নির্ভীক?
ছুটে চলা দিগ্বিদিক, রক্তারক্তি আকস্মিক!
অশ্রু ঝরে তরঙ্গ, ন্যায় বিচার বিকলাঙ্গ
পুন্য নামের বিহঙ্গ, অসম্মানে উলঙ্গ!

মনে ময়লার আস্তরণ, ব্যভিচারের বিস্ফোরণ
ঘরে ঘরে আন্দোলন, প্রাণের ভয়ে সম্বোধন!
নীতি নিষ্ঠায় জঘন্য, প্রাণে চিত্তে নগন্য
অবিচার অসামান্য, মহাবিপদ আসন্ন!

এমন বন্ধু চাই

আমার এমন বন্ধু চাই, যার মনে হিংসা নাই,
এমন আপন হবে, যেন মায়ের পেটের ভাই।
বুঝবে আমার প্রাণের ব্যথা, বলবে খুলে মনের কথা,
তার পরিচ্ছন্ন মনে, নেই মিথ্যা আদিখ্যেতা।

দেখলে অন্যায় অপরাধ, সে করবে প্রতিবাদ,
যাকে পেলে নিজের কাছে, দূর হবে অবসাদ।
যে মানুষ ভালোবাসে, দু হাত ভরে করে দান,
সৃষ্টিকর্তার প্রার্থনায়, কাঁদে সে মানুষটার প্রাণ।

করে বড়দের সম্মান, আর ছোটদের আদর,
দরিদ্রদের ভালোবাসে, করে অধিক সমাদর।
যার মনে ঘৃণা নাই, আছে শুধু ভালোবাসা,
যে পর হবেনা কভু, তুফান এলেও সর্বনাশা।

সে নয়তো স্বার্থপর, আলোয় ভরবে সবার ঘর,
সদা দেশ ও দশের সেবায়, নিয়োজিত নিরন্তর।
দুঃখ চেপে হাসতে জানে, সুখের বার্তা বয়ে আনে,
জ্ঞান আর বুদ্ধিমত্তার জোরে, তার বিচরণ সবখানে।

তার পরিচ্ছন্ন মন, আর সততা তার ধন,
সে পরের জন্য পারে, দিতে জীবন বিসর্জন।
সবার মুখে হাসি ফুঁটায়, আর নিজের খুশী বিলায়,
তাকে পেলে মনে হবে, হল নতুন রবির উদয়।

সে মিথ্যা ঘৃণা করে, প্রাণে রাখে সত্য ভরে,
তার নম্রতাকে দেখে, আকাশ লক্ষ তাঁরায় ভরে।
তার বিদ্যা শিক্ষা অনেক, নেই বিন্দু অহংকার,
মেধা বুদ্ধি নিষ্ঠা বিবেক, আর আত্মা পরিষ্কার।

সে সবার কথা শোনে, সবার আদুরে সৎ গুণে,
জ্ঞান অর্জনে সচেষ্ট, কথা বলে বুঝে শুনে।
সব খানেই খুঁজে যাই, যার অহমিকা নাই,
সুখের সুখী দুঃখের দুঃখী, এমন বন্ধু চাই।

সর্বনাশা বাবা

পায়ে হেঁটে ফিরত বাড়ি, হঠাৎ শুনি তিনটি গাড়ি
কদিন আগেও পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানদার,
কলার ধরে তিরিশ টাকা, আদায় করল চোখে দেখা
বল্ল আরো- যারে ব্যাটা, পাবি না বাকী আর।

ঘরে তিনটি ছেলে মেয়ে, দিন কেটে যায় খেয়ে না খেয়ে
বউটা করে বাসায় বাসায় বুয়াগিরির কাজ,
আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ সে, বনানীতে বাড়ি আছে
যার তাঁর সাথে কথা বলার সময় নেই তাঁর আজ।

ফোনের পরে ফোন বারেবার, মনে হচ্ছে আজব কারবার
ছেলে মেয়েরা চড়ে বেড়ায় পৃথক পৃথক গাড়ি,
শুনছি নাকি আগামী মাসে, গুলশান দুইয়ের লেকের পাশে
কিনতে যাচ্ছে আরও একটি বিলাশ বহুল বাড়ি।

সবাই বলে ব্যাপার আজব, পাড়ার লোকে ছড়ায় গুজব
আলাদিনের চেরাগ ছাড়া কেমনে এত টাকা?
নামি দামী হোটেলে সে, কি জানি কি মিটিং করে
পাড়ার মোড়ে ভুলেও তারে, যায়না যে আর দেখা।

সে দিন দেখি কাগজ জুড়ে, অনেক লেখা তাকে নিয়ে
বিখ্যাত আজ হয়ে গেছে ছিল হাবা গোবা,
পেপার পড়েই জানা গেল, এত টাকার উৎস ছিল
যুব সমাজ ধ্বংসকারী সর্বনাশা বাবা।

আত্মঘাতী ইভটিজার

লোকাল বাসের রডে ঝুলে,
মেলায় গেলো ঠেলে ঠুলে।
মাল এক খান তুল তুলে,
পাছাটা বেশ আছে ফুলে।

সাংঘাতিক ভীড় মেলায় এবার,
ব্যপক চেষ্টা সামনে যাবার।
মালের দিকেই নজর তাহাঁর,
ইচ্ছে সামনা সামনি দেখার।

বাতাসে তার উড়ছে চুল,
মালটা সদ্য ফোঁটা ফুল।
আজ বুঝি সে করবে ভূল,
দুই কানেতে ঝুলছে দুল।

মেলা লোকে লোকারণ্য,
মালের নেশায় সে তো বন্য।
শুধু একবার ছোবার জন্য,
চেষ্টা অশেষ হবে ধন্য।

হেলেদুলে হাঁটছে কেমন,
পাছাটায় হাত বুলায় যখন।
ঘুরে সামনে দাঁড়ায় তখন,
চেয়ে দ্যাখে নিজেরই বোন।