রিয়া রিয়া এর সকল পোস্ট

রবি ঠাকুর

DcpR

তিনটি শালিক খেলছে নরম রোদে।
ভাঙছে যত খুচরো অভিমান
সহজ পাঠেই সময় থমকে আছে।
ধুলো মেখেই করছে তারা স্নান।

শান্ত পায়ে দাঁড়ায় এসে কবি
নোবেল জিতে ফেরেন তিনি দেশে।
কবি তো নয়, স্নিগ্ধ ঋষি যেন
জন্মদিনে ভাবছি এসব শেষে

মুখ মুখোশে মানুষ চেনা দায়
শহর জুড়ে বিছিয়ে রাখা ফুল
প্রকৃতি আজ উদার হস্ত খুব
পায়ের কাছে রাখছে হৃদয় মূল

ছাতিমতলা সাজছে নতুন সাজে
তোমার সুরে গাইবে সবাই গান
গানে গানেই তোমায় ফিরে পাওয়া
জন্মদিনের রাখতে হবে মান!

আমার পুজো কোথায় রাখি বলো
যুদ্ধে এখন শত্রু মহামারী
জন্মদিনে পায়েশ ও ফুল নেই
হৃদয় ভরা প্রণাম দিতে পারি।

টুকরো কিছু শব্দ

18276_n

কত অখাদ্য, কুখাদ্য, হাবিজাবি লিখি যে! অর্থবহুলতা কিংবা অর্থহীনতার শব্দের একরাশ মালা গাঁথা। কখনো যাপিত জীবনের ক্লান্তি! কখনো দীর্ঘশ্বাসের উত্তপ্ততায় বাতাসকে উষ্ণ করে দেওয়া! আমি কি আদৌ কখনো নৈবেদ্য সাজিয়েছি? অর্থ বহুল, অর্থহীন স্বপ্নের জাল বুনে ছড়িয়ে দিতে পেরেছি ক্যানভাসে?

জানি, জীবনের ক্যানভাস বেশিরভাগ বেরং থাকে, কিংবা কোনো শ্যেড মেলেনি। মিলবেও না জানি। রঙ তো আর ইচ্ছে নদী নয়, বয়েই যাবে ইচ্ছেমত। রঙ দিয়ে জীবন রাঙায় ঠিকই, তবে রঙ তো থাকতে হয়। লাল আর হলুদ মিলে এক তীব্র আগুন রং হয়। তাতে কারো হৃদয় শীতল হয় কি?

শব্দেরা যেমন অদ্ভুত, এলোমেলো কিংবা অচেনা। রং গুলোও তেমন। কারো হয়ত বৈচিত্র্যে জীবন ভরে যায়। তবে, সেগুলো নেহাতই ক্ষণস্থায়ী। সমস্ত কিছু কে বুঝতে চায়? সমস্ত কিছু বুঝতে পারেই বা ক’জন? কেউ পারেনা। পৃথিবীতে খুব কমই বুঝতে পারে বা বুঝতে চায়। অদেখা একটা পৃথিবীতে বাস এই পৃথিবীর মাঝেই।

কোথাও যেমন সবকিছু স্পষ্ট। আবার কোথাও সবই অস্পষ্ট, ধোঁয়াটে, অজানা। জীবন আমাদের স্পষ্ট আর অস্পষ্ট এই দুই নিয়েই বহমান। কারো জীবন থেমে থাকেনা অজানা জানতে না পারায়, কারো জীবন থেমে থাকে না ভীষণ আঘাতে জর্জরিত হওয়ায়। “শুধু যাওয়া আসা, শুধু স্রোতে ভাসা”। নিয়মের নির্নিমেষ অদ্ভুত খেয়াল।

শব্দকে জঞ্জালের মতন লাগে মাঝে মাঝে। অথবা জালের মতন? কী অদ্ভুত এক ইন্দ্রজাল এই শব্দগুলোতে। জাল এবং জঞ্জাল, শুধু ‘জন’ মিলেই দু’টি আলাদা শব্দ করে দিলো, আলাদা অনুভূতি, আলাদা সম্পর্ক। মানুষও অনেক সময় জালের মতন, শুধুই আটকে থাকতে চায় মোহে আর মায়ায়। আবার ক্ষুদ্র কিছু ‘জন’ মিলেই তাকে হয়ত জঞ্জালে পরিণত করে দেয়।

প্রায়ই খোলা আকাশের দিকে চেয়ে ভাবি, এভাবে আকাশ দেখতাম ছেলেবেলাতেও, হয়ত অনেক বছর আগেও। অথচ সেই আকাশ আর এই আকাশ বদলে গেছে কতই। বুকের ভাষা, চোখের ভাষা, হৃদয়ের অনুভূতি বদলে গেছে অহর্নিশ। কে মাপতে পারে তা?

জানি থাকবো না একদিন। তবু এত মায়ায় জড়ানো, এত ঘৃণায় জড়ানো এই জীবনের প্রতি অনিচ্ছাকৃত ভাবেও তাকিয়ে অবাক লাগে। কত না বলা শব্দ, কত উত্তর না জানা প্রশ্নগুলো জমে থাকবে আইসবার্গ এর মতো মৃত্যুবধি। আচ্ছা, যদি আমি নাই হয়ে যাই? এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে, সত্যিই কি কেউ মনে রাখবে আমায়? জানি কেউ মনে রাখবে না। তবে সবসময় সবকিছু জানতে নেই।

মাঝে মাঝে কিছু আড়ালে থাকাই ভালো।

শুভ নববর্ষ ১৪২৮

173720

বৈশাখ মানেই বাংলার বৈশাখ, বাঙালির বৈশাখ। নতুন বছর উৎসবে আনন্দে প্রাণের বন্যায় আমাদের হৃদয়ে ঝড় তোলে।

আজ আবার একটা নতুন বছর। এই নতুন বছর কতটা শুভ বার্তা নিয়ে আসছে আমাদের জীবনে জানি না। কালের নিয়মে দিন যায় দিন আসে, এই প্যানডেমিকের সময় ভীষণ সংকটের মুখে আমরা। তবুও বছরটিকে শুভ বলতে চাই।

নতুন বছর, হৃদয়ের অন্তঃস্তল থেকে বলতে চাই শুভ হোক –
সব শুভ হোক।
সব অন্ধকার মুছে গিয়ে আলো আসুক। সবার ভালো হোক। পৃথিবী প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিক, বাতাস রোগ মুক্ত হোক। সুন্দর হোক। আরোগ্য আসুক, এই প্রার্থনা করি।

শুভ হোক নতুন বছর।
শুভ হোক আগামী।

সব বাঁধা কাটিয়ে ম্যাজিকের মত জনজীবনে শান্তি নেমে আসুক। স্বস্তি স্থায়ী হোক। জয় হোক মানবের, জয় হোক মানবতার, জয় হোক সমগ্র অনিয়মের উপর নিয়মের। জয় হোক সবলের উপর দুর্বলের। জয় হোক অশিক্ষার উপর শিক্ষার। জয় হোক নিরানন্দের উপর আনন্দের।

রাত জাগা পৃথিবী

7496_n

আজ আবার নির্ঘুম রাত। গানে গানে কেটে যাচ্ছে আর সঙ্গে রঙ তুলি। পৃথিবী চলেছে নিজের গতিতে। নদী চলছে নিজেকে পৌঁছে দিতে সাগরে। আজ তবে পৃথিবীর জরিমানা হোক। কেন সে সব নদীর হাত নিয়ে, সাগরের হাতে দেয়? কেন সব মন চুরি করে মেঘ হয়ে উড়ে যায় আকাশে? আর কেনই বা ঘাসেদের সব রঙ চুঁইয়ে চুঁইয়ে ঢেলে দেয় শিশিরে? তাই আজ পৃথিবীর জরিমানা হোক।

দূরে কোন রাত পাখির ডানার আওয়াজ। উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকটা রাতে এসে মগজে ঘুরপাক খায় ভুলে যাওয়া কষ্টেরা। চলতে চলতে চেনা হয় আরেকটা অচেনা পথ। পুরনো পৃথিবীকে ঘিরে নেয় নতুন এক গান।

পৃথিবীর যত সব আবদার, দাবি কেড়ে নেওয়া হোক। সব তারা কেন আকাশের চুলে সাজায় ? আর সব কষ্ট ভুলে গিয়ে কোন ফাঁকে মন খুঁড়ে, ভালোলাগা পুঁতে যায়? ঘাসেদের ফুলে ফুলে আলগোছে রামধনু কেন রং ছেপে দেয়? তাই আজ পৃথিবীর যত সব আবদার কেড়ে নেওয়া হোক।

চারিদিকে জলপাই আলোর মিছিলে শীতের আমেজ। আর রয়েছে নরম তুলোর বলের মতো আদুরে ইন্তি-বিন্তি বেড়াল ছানা। কুচিকুচি চোখ তুলে নিমেষে আদরের আবদার। ঘোলাটে দৃশ্যে দিন শুধু বেড়ে যায়। বড্ডো বেশি ভিড় যেন চারিদিক, নিঃশ্বাসে ভরে যায় বাতাস, উত্তাপ।

তবে পৃথিবীর মজলিশ বেঁধে দেওয়া হোক। রোজ কেন ভোর হলে পাখিদের কাকলিতে বাঁশি সুর ঢালা চাই? আকাশের কোণ ধরে রোজ রোজ কেন সোনালি রঙে আঁচল ছড়ায়? হাওয়ার কানে কানে বৃষ্টির ডাক-কেন লিখে দেয়? তাই আজ পৃথিবীর মজলিশে বাধা দেওয়া হোক।

ইতিহাস ঘুরে ঘুরে আসে, আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি হারে। মনে হয় এই বুঝি ফাঁকি দিয়ে এগিয়েছে অনেকটা পথ, মুহূর্তে ভুল ভাঙে। আরবার ফিরে আসা একই বিন্দুতে, বৃত্তের কেন্দ্রে। ব্যাসার্ধ ছোট থেকে বড় হয় অথবা বড় থেকে ছোট। লুকিয়ে রাখে সবটুকুই। এই লুকানো একলা পৃথিবীকে কেউ বুঝে নিক আবরে সবরে, গল্পে, গল্পে। যদিও গ্রহণের শেষে সবটুকুই ক্ষয়।

পৃথিবীর সব ভালো মুঠো মুঠো ছাই হয়ে যাক। কেন রোজ ভোর পাখিদের পালক চিনে হাওয়ায় ভেসে আসে? মাঝে মাঝে চিনচিনে ব্যাথা হয়ে কেন তারা জ্বালে সাঁঝ আকাশে? কেন জলপরী ডুব দেয় সাগরের ঢেউ ঘেঁষে? তাই আজ পৃথিবীর সব ভালো মুঠো মুঠো ছাই হয়ে যাক।

পৃথিবী ক্লান্ত হয়ে স্থির হয়ে থাক। কেন আকাশ ধুয়ে জল নামে পৃথিবীর চোখে? চোয়ালের কোণা ঘেঁষে বড় বেশি জেদ স্থির হয়। মগজের কোষে কোষে জন্ম নেয় মেঘ। জন্মান্তরের দোষে পুড়ে যায় শরীর। সন্ধ্যের নরম আলোয় চোখে পথে নামে রক্তিম আভা। পৃথিবী এখন ক্লান্ত ভীষণ। আজ নাহয় পৃথিবী পথ ভুলে যাক।

(বহু পুরোনো, প্রকাশিত লেখা)

স্বপ্ন

OLYMPUS DIGITAL CAMERA

স্বপ্নদের কোনো ডানা নেই, তারা উড়তে পারে না। তাদের তাড়িয়ে নিতে হয় পুব থেকে পশ্চিমে। মুখোমুখি ডুবতে চাওয়া সূর্যের দিকে অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে, একঝাঁক চড়ুইয়ের মতো ব্যস্ততা নিয়ে।

চিবুকের চিঠিতে রাখা আছে এক কল্প ছবি। স্বপ্নরাজ্যে মেঘ-বাতাসের ভেজা শিমূলের ছোঁয়ায় কেঁপে ওঠে উপোসী অধর। ডানা ভাঙ্গা পাখির মতো স্রোতহীন চোখ গুনে যায়, সাগর জলে ঢেউয়ের পরে ঢেউ। অপেক্ষায় থাকে, হয়তো একদিন, ডুবতে চাওয়া সূর্যের দিকে অপলক তাকিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াবে স্বপ্নেরা।

অপেক্ষার রঙ নীল। অপেক্ষা বুক জুড়ে, উঠোন জুড়ে।

6491_o

অবলম্বন

আজকাল আর নিজের কাছেই পৌঁছোয় না নিজের পাঠানো চিঠিগুলো। আজকাল আর সেই ছোট্ট, শৈশবমাখা মনও নেই। বড্ডো বড় আর কঠিন গদ্য হয়ে গেছে। আজকাল সবকিছু সামলাতে সামলাতে বড় ক্লান্ত।

শীত শেষে বসন্তের ঝরাপাতার গন্ধমাখা হাওয়ায় খবর পেয়ে যাই কালবৈশাখীর। ছাদে এসে দাঁড়ালেই শব্দ পাই বাতাসের। আজকাল দিনগুলো বড্ডো অচেনা, ক্রমশঃ সরছি নিজের থেকে দূরে।

কতদিন হয়ে গেলো ঘাসের ওপরে শিশির দেখিনি। কতদিন হয়ে গেলো গোধূলির রাখালের ঘরে ফেরা দেখিনি। কত গল্প জমে যায় মনের আনাচে কানাচে।

কত কত সময় মনে মনে খুঁজে বেড়াই নিজেকে। বড় অসহায় লাগে যখন দেখি স্বাবলম্বী হয়েও অবলম্বন হয়ে আছি নিজের কাছেই।

এলো মেলো

159795

আজকাল স্বপ্নেও পালাই। কোথায়? সেইসব নদী পাহাড় উপত্যকার কাছে, আমার স্বপ্নের সেই ছোট্ট গ্রামের কাছে। যেতে আর পারি কই? সেসব স্বপ্নও কোথায় চলে গেছে ভেসে। একটা বাড়ি। তারমধ্যে মধ্যে একটা ঘর। খানকতক আসবাব, কিছু দরকারি–অদরকারি জিনিস।

কখনো মনে হয় একটা সোজা রাস্তা ধরে চুপচাপ হেঁটে যাই একা একা। এ যেন সেই ছোটবেলার খেলার মতন। একটা ব্যাগে একটা জামা, আরও কিছু জিনিস ভরে একটা চেয়ারকে ট্রেন মনে ভেবে, কু ঝিক ঝিক। কোথায় কোথায় চলে যেতাম।

কি যে হল, বড় হয়ে গেলাম। এ খুব অন্যায়। ভাল করে চেটেপুটে সবকটা চকলেট জমিয়ে নেওয়ার আগেই দেখি কোন ফাঁকে বিতিকিচ্ছিরি বিদঘুটে রকমের বড় হয়ে গেছি। সেদিন শপিংমল থেকে এক প্যাকেট টক-ঝাল-মিঠে লজেন্স কিনে এনেছি। এনে সামনের টেবিলে রেখে দিয়েছি। এদিক সেদিক ঘুরছি-বসছি-পড়ছি-গান শুনছি- ভ্যাবলা হয়ে তাকাচ্ছি-আনতাবড়ি ভাবছি-আর ফাঁকে ফাঁকে একটা করে লজেন্স টুপটাপ করে মুখে পুরে দিচ্ছি। আর রাংতা গুলোকে জমিয়ে রাখছি একটা কৌটোতে, লাল-নীল-সবুজ-সোনালি- রুপোলী-চকচকে রাংতা সব। সেই ছোট্ট বেলার মতো।

ভালো লাগে মাঝে মাঝে কিছু নিয়ম ভেঙে ফেলতে।

ফিনিক্স যাত্রার শেষে

পুরনো জীবনকে ঝেড়ে মুছে,
বিশ্বাসের চাদরে মুড়ে নতুন করে বাঁচতে চাওয়া-
আফ্রোদিতির আর ফিনিক্স হওয়া হল না।
একলা ভেসে যাওয়া দ্বীপের মতো
অকুল সাগরে ভাসতে ভাসতে
বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি নিজের থেকে,
অবিশ্বাস আর উপেক্ষার আগাছায়
ক্রমশ বন্ধ হয়ে আসছে নিঃশ্বাস।

নির্ভরতার পালতোলা নৌকো ছেড়ে গেছে মাঝ সাগরে,
ভেঙে যাওয়া নোঙর আর শুকিয়ে যাওয়া মুখের লালা নিয়ে
দেখেছি ভালবাসার চলে যাওয়া।
পুড়ে যাওয়া জীবনের ছাই মেখে
যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে অনায়াসেই চলে যেতে পারি
মৃত্যুর হাত ধরে
চির শান্তির ঘুমের দেশে।

আমার ভাষা আমার অহংকার

28061699_1

“বিদ্যাপতি, চণ্ডী, গোবিন, হেম, মধু, বঙ্কিম, নবীন
ঐ ফুলেরই মধুর রসে বাঁধলো সুখে মধুর বাসা।।
আ মরি বাংলা ভাষা!”

বাংলা আমার মাতৃভাষা। এই মাতৃভাষা নিয়ে আমি গর্বিত, কেননা এই ভাষার রয়েছে গৌরবময় ঐতিহ্য। জনসাধারণের কথ্য ভাষা থেকে এই ভাষার জন্ম। বাংলা ভাষার ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায়, এটি জন্মলগ্ন থেকেই কথ্য ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে এ ভাষা প্রথম ব্যবহৃত হয়। বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন ‘চর্যাপদ’। লিখিত সাহিত্য ছাড়া প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা লোকসাহিত্য তথা প্রবাদ প্রবচন, ছড়া, রূপকথা, পাঁচালী, লোকগাঁথা ইত্যাদিতে বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। মূলত সাহিত্যের বাহন হিসেবে বাংলা ভাষা প্রাচীন, মধ্য এবং আধুনিক যুগে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৪৭ এর দেশভাগের সময় অবিভক্ত বাংলা পূর্ব ও পশ্চিম ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি ভারত অপরটি পাকিস্তানের অংশ হয়ে উঠে।

ফাগুনের এমনই শিমুল, পলাশ ফোঁটা দিনে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে শহীদ হয়েছেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার এবং নাম না জানা আরো অনেকে। বাঙালির রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল। সেই অমর শহীদদের স্মরণে আমাদের প্রাণে বারবারই বেজে ওঠে গানের একটি কলি …
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কী ভুলিতে পারি।”

সাধারণভাবে ভাষা আন্দোলন বলতে আমরা ১৯৫২ সালের আন্দোলনকে বুঝি; যা শুরু হয়েছিল ১৯৪৮ সাল থেকে। এই ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে অনেক কবিতা, গল্প-উপন্যাস, নাটক এবং প্রবন্ধ-নিবন্ধ। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে সর্বপ্রথম কবিতা রচনা করেন চট্টগ্রামের ‘সীমান্ত’ পত্রিকার সম্পাদক মাহবুবুল আলম চৌধুরী। তার কবিতার নাম…

“কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি।”

ঢাকায় পুলিশের গুলি চালানোর খবর একুশে ফেব্রুয়ারির বিকালে চট্টগ্রামে পৌঁছালে এই কবিতাটি সন্ধ্যার মধ্যেই রচিত হয়। সেই রাতেই কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেসে কবিতাটি ছাপানো হয়। পরের দিন বাইশে ফেব্রুয়ারি লালদীঘির ময়দানে আয়োজিত বিশাল প্রতিবাদ সভায় ওই ‘কাব্যপুস্তিকা’ বিলি করা হয় এবং কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনানো হয়। সেই সময়ের সরকার এক আদেশবলে কবিতাটি প্রায় সাথে সাথে বাজেয়াপ্ত করে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-
“বাংলা শিক্ষা যখন বহুদূর অগ্রসর হইয়াছে তখন আমরা ইংরেজি শিখিতে আরম্ভ করিয়াছি।”

কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন-
“আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি এমনই হউক, যাহা আমাদের জীবন শক্তিকে ক্রমেই সজাগ, জীবন্ত করিয়া তুলিবে।”

শৈশবে স্বপ্ন দেখেছি যে ভাষায় কৈশোরে কল্পনার মায়াজাল বুনে এই পৃথিবীকে রঙিন করে দেখেছি যে ভাষার আলেখ্যে, সে ভাষা আমাদের বাংলা। স্মরণ করি তাদের, যারা আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের জন্য জীবন দিয়ে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। পরিশেষে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই তাদের যারা বহুদুরে থেকেও বাংলা ভাষার দাবীতে অনড় থেকেছেন। ক্যানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালী রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব এর কাছে ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিনটি জাতিসংঘের সদস্যদেশ সমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শুধু আমার ভাষাকেই নয়, পৃথিবীর সমস্ত মাতৃভাষাকেই শ্রদ্ধা জানাই…

ইচ্ছে

1515226

মাঝে মাঝে
ইচ্ছে করে
বৃষ্টি হয়ে
ঝরে পড়ি
সবুজ ঘাসে।

হলদে পাখির
ডানায় চড়ে
ছুঁয়ে আসি
বনপলাশী
এক নিমেষে।

ফাল্গুনী এই
অবুঝ বেলায়
গান গেয়ে যায়
একলা চাতক
মন উদাসী।

শুকনো পাতা
ঝরার বেলায়
হেসে বলে
গাছকে ডেকে
এবার আসি।

ফাগুন বেলা

ফাগুন বেলা

এমন এক পলাশ রাঙা পথে
ফাগুন এলো আগুন রঙা রথে
কুয়াশা এসে ভিজিয়ে দিলো ধুয়ে…..

আজও নাকি তেমনই এক দিন
উঠবে রেঙে যা কিছু রঙহীন
আমিই শুধু আমায় আছি ছুঁয়ে…..

আমার মন উদাসের দিনে
সুখের দামে দুঃখগুলো কিনে
কষছি হিসাব সেই পুরনো খাতা …

রক্ত মাখা আলভোলা এক ক্ষণে
মেঘ জমছে মনের কোণে কোণে
বানভাসি তাই দু চোখেরই পাতা..

নতুন ভাবে ভাবতে হবে আবার
নতুন খেলা ভাঙা কিংবা গড়ার
ফিরছে পাখি দিনের শেষে নীড়ে …

অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল যত
লুকিয়ে রাখি শতছিন্ন ক্ষত
বাঁধন আমার কবেই গেছে ছিঁড়ে…

ভ্যালেন্টাইন ইশপেশাল … প্রেমের দিন

149721994_4

আজ পৃথিবীময় প্রেমের গন্ধ। আমার শহরে ভালোবাসার পুজোর আছে ছন্দ। তর্কে জানি হারাবো আমি, ভালোবাসার দিন! সে আবার কী? তবে বাকি দিন সব মেকি নাকি? অথচ আজকের দিন আজই থাকে, কাল কি হবে জানিনা। অতো হিসেব বুঝিনা আমি, কোনো নিয়ম মানিনা। কিছু হিসেব না মিললেই ভীষণ ভালো লাগে ! কিছুটা সময় মনের মাঝে এমনই দোলা লাগে।

মনের কোনে মেঘ জমেছে কদিন ধরেই বেশ, বর্ষণও হয়েছে অঝোর, চোখ জানলায় রেশ।সকাল থেকেই হিমেল হাওয়া, শিরশিরানি ঘাসে। খাটের পাশে জানলা খোলা বৃষ্টি যদি আসে! কদিন ধরেই, কেউ জানে না, চুপ থেকেছি, মেঘ মেখেছি আর, বরফ গন্ধ শিরায় শিরায়, ওরে ফাগুন একটুখানি স্বপ্ন দিবি ধার?

আমি কিন্তু হাসতে পারি, কষ্ট মেখে মুখে। চলতে পারি তালে তালে সুখে ও অসুখে। মাঝেমধ্যে রোদ ঝলমল আকাশের কোণে, বন্ধ রাখি মন জানালা, অতি সঙ্গোপনে। এখন আমার একলা আকাশ মেঘের সামিয়ানা, আর আছে এক রূপকথার দেশ, কাউকে বলতে মানা। মেঘের পরে মেঘ জমে। মেঘ গুঁড়িয়ে নদী। পাহাড় চিরে নামতাম ঠিক, আগুন হতাম যদি!

আজ দিনটা ভালোবাসার। আজ দিনটা প্রেমের। আজ দিনটা ফাগুন বেলার, সত্যি মিথ্যে গেমের। ওই আকাশ, নদী, মেঘ ফাগুনের প্লাবন দিয়েছে ডাক। লবণ জলে মুখ ধুয়েছি; চোখের পাতা ভেজাই না হয় থাক।

গহন কুসুম কুঞ্জ মাঝে

148666617_403

কখনো দেখেছ রাতের তারাদের বদলে যাওয়া? কখনো বদলে যেতে দেখেছো আকাশের চাঁদ কে? কিংবা চলতে ফিরতে কখনো খেয়াল করেছো চারপাশের দৃশ্যপটগুলো কিভাবে বদলে যায়? সন্ধ্যায় আগে পাশের বাড়ির আমগাছে রোজ কত পাখি এসে বসতো। কত পাখি বাসা বানাতো, সংসার পাততো, সেই গাছটাই যে এখন আর নেই, নতুন ফ্ল্যাট তোলার জন্য কেটে ফেলেছে। পাখিদের বাসাগুলোও আর নেই। সেই যেখানে পাখিরা ডাকতো, ঠিক সেখানটায় এখন ফ্ল্যাটের একটা রুম হবে। হয়তো ড্রয়িং রুম হবে। সেখানকার দেওয়াল জুড়ে থাকবে পাখির ছবি। বড় কোনো অয়েল পেইন্টিং। কিংবা সেই জায়গায় একটা বেডরুম হবে। হয়তো একটা বিছানা থাকবে আর সেই ফ্ল্যাটের কেউ মোবাইলে পাখির ডাক রিংটোন করবে।

বদলে যাওয়াই তো নিয়ম। আমরা নিজেরাও তো বদলে যাই, আমাদের বন্ধুরাও কি বদলে যায়না? আমাদের আশেপাশেই তো অজস্র পরিবর্তন। আমাদের পছন্দও কি বদলে যায় না? আমাদের মন? আমাদের ভালোবাসা? আমাদের হৃদয়ও তো বদলে যায়! বদলে যায় আমাদের চারপাশটা। বদলে যায় বলেই তো মানুষ। বদলে যাওয়াই এই সৃষ্টিজগতের একমাত্র স্থির নিয়ম। আর সবই বদলায়। সবকিছুই বদলায়।

মানুষ খুব ভুলে যায়, তাইনা? যায় তো! মানুষ ভুলতে পারে বলেই বেঁচে থাকতে পারে। নইলে ভীষণ হৃদয় ধ্বংস করা বেদনাদের বয়ে নিয়ে বেড়াতে হতো আমৃত্যু। পারতো মানুষগুলো বয়ে বেড়াতে? এতো কষ্ট ? এতো যন্ত্রণা? ভুলে যায় বলেই আবার নতুন করে গড়তে পারে, স্বপ্ন দেখতে পারে। বিশাল বিশাল ক্ষতগুলো আবার সেরে ওঠে। এটা তো শিখতে হয়, প্রচণ্ড আগুনে যেমন সোনা খাঁটি হয়, তেমনি কষ্টের মধ্যে দিয়েই মানুষের মন খাঁটি হয়। তখন নিজেকে ছেড়ে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে থাকতে হয়। তখন মনকে বুঝতে হয়। নিজের মনকে।

চিঠি

143129359_40028

জানিস চিঠি আমার বড্ডো প্রিয় আজও। যদিও জানি সমস্ত প্রিয় জিনিস, প্রিয় সম্পর্ক হাতের মুঠি থেকে বেরিয়ে গেছে। একা দাঁড়িয়ে থাকি আর তাদের চলে যাওয়া দেখি। তবুও এই আধো আলো ভোরে, মনে মনে চিঠি লিখি তোকে। তোকেই ইচ্ছে করে লিখতে। ভীষণ ইচ্ছে এই চিঠি খুঁজে পেতে হাওয়ার নদী পথ সাঁতরিয়ে শুধু যাক তোর কাছে। অন্তত এই চিঠি পাক তোর ছোঁয়া। আমার এই এলোমেলো আবদারে আলো বেশে ভালোবেসে কাছে টেনে নিস এইতো, এইটুকুই তো চাওয়া। আর আমার চোখ আঁকুক জলছবি মনে মনে।

যখন হঠাৎ ঝড়ে গুটিয়ে নিই নিজেকে, তুই এলে একরাশ রামধনু রোদ হয়ে। ফুলে ফুলে ভরে গেলো চারপাশ। গুঁড়ো গুঁড়ো মেঘ চুরি করে রাখি তোর জন্য। এক বুক সকাল যদি পাই, জড়ো করে নেবো এক মাঠ কাশ ফুল।পূর্ণিমার রাতে চাঁদ থেকে চুঁয়ে পড়ে দুধ নদী পেরিয়ে স্বপ্নদেখা তারা গুনি। আমার হাত রেখে দেখ দেখি। এ হাত বড় জেদি, ছাড়বোনা, বুঝে নিস ছোঁয়াতে।
ছোঁয়াছুঁয়ি-কানামাছি, কুমির ডাঙ্গা বিকেল। কত দিন হয়ে গেল,খেলি না। দূর থেকে ডাক আসে ঝিরঝির জলনদী মেঘেদের, আয় আজ ভিজে যাই দুজনেই। এই সব ফোঁটা ফোঁটা রঙের আদর শুধু থাক তোর আর আমার। এই স্নিগ্ধ সকাল থেকে গাঢ় নীল সন্ধ্যেতে আলো মেখে, ভালো থাক তুই।

এলোমেলো

13_n

মাঝে মাঝে বিষণ্ণ নদীর ধারে পাহারায় বসি রাতচরা পাখির মতো। ঘুমিয়ে পড়া মেঘেদের দিকে আক্ষেপ ছুঁড়ে দিতে দিতে রেখে যাই, এক টুকরো বিশ্বাস। তখনও কিছুটা জল থেকে তুলে নেওয়া বাকি, এই হিমহিম কুয়াশার ঝিমলাগা দুপুরে আঁচল পেতে কুড়িয়ে নিই সেই চেনা গন্ধ।

মনে মনে ভাবি, স্বর্গ বুঝি এমনই। বড্ডো অহংকারী। অজানা কোন এক গরবে গরবিনী। মাঝে মাঝে অজস্র ক্রিস্টালের মতো বৃষ্টি নামে। মাঝে মাঝে একটুকরো আকাশ এসে দাঁড়ায়, আমার বুক জুড়ে আমার উঠোন জুড়ে। নিঃশ্বাস জুড়ে সেই স্বপ্নছোঁয়া গন্ধ। দক্ষিণাবর্তের আগে পৃথিবীর অক্ষরেখা ধরে, ধিকিধিকি জ্বলে থাকা কুয়াশা আগুনের তাপ নিয়ে, ডুব দিই অনন্ত সাগরে। জোনাকিদের আলোঘুমে অচেতনে অবচেতনে, অপেক্ষা সেই অপরূপ ছায়াময় চোখের।