রিয়া রিয়া এর সকল পোস্ট

ইচ্ছেঘুড়ি

8036_o

পরিযায়ী পাখিরা ডানায় ডানায় বয়ে আনে পশমিনা সকাল। নদীর কোল থেকে কাঁকড়ারা বয়ে আনে নোনতা সমুদ্র। হিম হিম কুয়াশায় অফুরান আলো নিয়ে নিঃশ্বাসে, ঝরে পড়বে একটা একটা পাতা। আর আমি! আমি তখন এক এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দেবো আমার ইচ্ছে-ঘুড়ি।

কুয়াশারা হাত ধরাধরি করে মুছে দেবে মন খারাপি সাঁকো। বুকে ভরে নেবো মাটির আতর।ঠিক তক্ষুনি, গভীর চোখের মেয়েটাকে দেখে, নিষ্পাপ মনে হেসে ফেলবে কেউ। ঠিক তক্ষুনি, হঠাৎ দেখা টলটলে হাসির মেয়েটাকে অজান্তে ভালোবেসে ফেলবে কেউ।

দূর্গা

eptemb

তোমার দূর্গা কাশের মাঠে, শিশির মাখছে গায়
আমার দূর্গা পথের ধারে খাবার খুঁটে খায়।
তোমার দূর্গা অকালবোধন, হিমালয়ের মেয়ে
আমার দূর্গা শুয়ে আছে কিচ্ছুটি না খেয়ে।
তোমার দূর্গা শপিং মলে, পিৎজা হাটে ঘোরে
আমার দূর্গা ভিক্ষা করে চৌ রাস্তার মোড়ে।
তোমার দূর্গা ডিস্কো থে‌ক, ফ্যাশন প্যারেড করে
আমার দূর্গা স্বামীর হাতে লাঞ্ছনাতেই মরে।
তোমার দূর্গা হাসি খিলখিল ভালোবাসায় ঘেরা
নখের আঁচড়ে আমার দূর্গার কাপড় খানাই ছেঁড়া।
তোমার দূর্গা দশভূজা সিংহবাহিনী রূপ
অত্যাচারে দূর্গা আমার নির্বাক, নিশ্চুপ!
স্বপ্ন দেখি তোমার দূর্গা আমার দূর্গা হবে!
আকাশ জুড়ে মাতবে শরৎ আগমনী উৎসবে।

পুজোরগল্প

ria9039

সারাটা বছর ধরে অপেক্ষায় থাকি শরত কালের। আনমনে ইতিউতি ওড়াউড়ি করে পুজো পুজো গন্ধ। মেঘে, ঘাসে, ফুলে, রোদ আর জল নিয়ে প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়ে তোলে। নরম রোদ ধরে রাখে আলো।

আজ বেশ কয় দিন হল আকাশে, বাতাসে একটা সাজো সাজো রব, চারিদিকে একটা ঝলমলে ভাব। মাঝে মাঝেই ভাবছি কতকিছু কেনা হয় নি, কতকিছু বাকি রয়ে গেলো। এদিকে রাস্তায় বেরোলেই বোঝা যায় চারিদিক ছাতিম ফুলের সুবাসে ভরে আছে।

পুজো আসছে তাই ঘর দোর পরিস্কার করতে হবে। আর যেদিন পরিস্কার করা হয় সেদিন সক্কাল হতে না হতেই ঝুল ঝাড়ু, ঝ্যাঁটা, ঝাড়ন ইত্যাদি নিয়ে লেগে পড়ি। চেয়ার নাড়াচ্ছি-টেবিল সরাচ্ছি-টেবিলের ওপরে চেয়ার তুলে ঘরের সিলিং অবধি উঠে বসছি-খাট ঘোরাচ্ছি-ইত্যাদি। বাড়ির বাকিরা অবশ্য বেশ অবাক হয়ে যায়। ঘরে ঢুকতে গিয়ে বারুইপুর স্টেশন ভেবে, জিজ্ঞেস করেই ফেলে “বনগা লোকাল কটায়?” আমি কিন্তু এরই মধ্যে মুনি ঋষির মতন নির্বিকার-অটল অনড় কাজ করেই চলি। কাঁধে ঝাড়ন আর হাতে ঝুল ঝাড়ু নিয়ে ঘেমে নেয়ে ধুলো মেখে হাঁপিয়ে বসে একটু যখন একটু বিশ্রাম নিচ্ছি, হঠাৎ করে শিউলি গন্ধ ভেসে আসে, সাথে নিয়ে আসে ঝকঝকে একফালি রোদ আর শিরশিরানি বাতাস আমার কানে কানে এসে ঠিক তক্ষুনি বলে যায়, “এই মেয়ে জানিস তো, দুর্গা আসছে।” যেই না শোনা ওমনি আমার মনের মধ্যে ঢাকে কাঠি পড়ে, “ঢ্যাং কুরাকুড় তাকুড় নাকুড়” আমাকে চমকে দিয়ে মন বলে ওঠে, “দুর্গা আসছে, আমার ঘরে, এক বছরের কত্তো গল্প নিয়ে, আমার কাছে।'

প্রেমের পদাবলী

থাকুক বিষাদ এসো এখন জীবন কথা বলি।
দিনের আভাস রাতের শেষে
আঁধার যখন আলোয় মেশে
আবছা হওয়া স্বপ্ন গুলো
মেলছে দু’চোখ উড়িয়ে ধুলো
আলতো করে সাজিয়ে রাখি প্রেমের পদাবলী।

প্রিয় কবি ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কির কবিতা

আজ আন্তর্জাতিক অনুবাদ দিবস। সেই উপলক্ষে আমার বহু আগে প্রকাশিত একটা অনুবাদ কবিতা বন্ধুদের জন্য। আমার অত্যন্ত প্রিয় কবি মায়াকোভস্কির কবিতা “past one o’clock” থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখার চেষ্টা।

Past one o’clock
By Vladimir Mayakovsky (1930)

রাত একটা বেজে গেছে
অনুবাদ : রিয়া চক্রবর্তী।

রাত একটা বেজে গেছে, তুমি হয়তো ঘুমোচ্ছো।
আকাশ গঙ্গার স্রোত বেয়ে নিশাচর পাখির ডানার মতো রাত্রি নামে পৃথিবীর চোখে;
তোমার বুকে যে বিষাদ ঘুমিয়ে আছে-
আকস্মিক বার্তায় তাকে আমি জাগাবো না।
আমার কোন ব্যস্ততা নেই।

যেমন সবাই বলছে ,আমাদের বিচার পর্ব শেষ।
ভালবাসার নৌকা বিষাদ স্রোতে ক্ষতবিক্ষত।
সময় এসেছে আমাদের ছাড়াছাড়ির,
প্রয়োজন নেই অতীতের দুঃখ,
যন্ত্রণা ও ক্ষতগুলো ব্যবচ্ছেদের।
বরং চুপ করে থাকো আর শোন
নিঃশব্দে ঝরে পরা পৃথিবীর রাত।

রাত একটা বেজে গেছে, তুমি হয়তো ঘুমোচ্ছো।
নিশব্দ গভীর রাতে, কারা যেন,
অশান্ত পৃথিবীর বুকে গোপনে কান পাতে;
কে যেন জেগে থেকে কথা বলে ওঠে,আর –
বুকের শেষ প্রেমটুকু ,রাত ছড়াল মহাকাশে!

এমন মায়াবী আলোয়, ইতিহাসের গল্প
শুনতে শুনতে চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে;
রাত অনেক হলো, হয়তো তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো।

উৎসব

শরৎ মানেই পেঁজা মেঘের
নীল আকাশে ঢেউ।
শরৎ মানেই শিউলি,ছাতিমে
সাজছে দেখো কেউ।

শরৎ মানেই পাড়ায় পাড়ায়
পুজো পুজো মেলা।
শরৎ মানেই ঢাকের তালে
ধুনুচি নাচের খেলা।

শরৎ মানেই প্যান্ডেল হপিং
নতুন নতুন সাজ।
শরৎ মানেই নিয়ম গুলো
থাক-না বন্দী আজ।

শরৎ মানেই ক্যালরি বাড়ুক
কুছ পরোয়া নেহী।
শরৎ মানেই অঞ্জলি আর
রূপং, যশং দেহী।।

ভালোলাগা

পৃথিবীটা বড় সুন্দর মনে হয়,
স্পর্শ করা মুহূর্তের অনুভূতিগুলো,
রোদ হয়ে ঢালুপথ বেয়ে নেমে আসে।
এই ভালো থাকা,ভালো লাগা,
আলো মেখে রাখা,
বড় সুন্দর মনে হয়।

তুমি সন্তর্পনে, লুকিয়ে থেকো আমার অন্তরে …

মনখারাপের বৃত্ত পেরিয়ে

পৃথিবীর প্রতিটি আবর্তনের সাথে
আয়নোস্ফিয়ারের তরঙ্গ ভেদ করে জন্ম নিচ্ছে
কিছু প্রলয়ঝড়ের মেঘ, ঢেকে দিচ্ছে সব তরঙ্গ
মনের ভেতরের ও বাইরের
কাছের মানুষটাকে ঠেলে দিচ্ছে বহুদূর,
ঘটে যাচ্ছে কোন তারার বিস্ফোরণ,
ব্ল্যাকহোল হয়ে গ্রাস করে নিচ্ছে সম্পর্কগুলো।

ব্ল্যাকহোলের খুব কাছাকাছি গিয়েও
অবিকৃত ভাবে ফিরে এসেছি শুধুই তোমার কাছে –
যে তুমি অপেক্ষা করছিলে একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে শুধুই আমার জন্য।
পৃথিবীই কেন আকাশের সব তারাগুলোও জানে
আমি বার বার তোমার ভালোবাসার কাছে মাথানত করেছি,
গ্রহগুলোও তো জানে যে তোমার নিষ্পলক চাহনিতে
আমার পুনর্জন্ম হয়েছে।

আমার এই নিঃশ্বাস- প্রশ্বাস সবই যে আজ তোমার
নামেই জেগে ওঠে;
একমাত্র তুমিই যদি থামিয়ে দাও…
থেমে যাবে কোন সংকোচ না করেই –
জীবন কে বলে যাবে বিদায়…।

শ্যামরাই

কেশবের বাঁশি ডাকে যমুনার তীরে..
রাই কিশোরী, জলকে চলে
প্রেমিক শ্যাম, মন মাতালে
মেঘের রঙ, আবীর ফাগ
ব্যাকুল রাধা, অলক্ত রাগ
লজ্জাবতী হাসি যেন কাঁচকাটা হীরে…

রঙে রঙে বনে বনে এসেছে ফাগুন …
কিশোরী রাই, চমকি উঠি
ব্রজ রাখাল, আসছে ছুটি,
দামাল ছেলে, নন্দের দুলাল
পিচকারিতে, নিয়ে গুলাল
আকাশে বাতাসে আজ প্রেমের আগুন…

রাধা রাগে দেখো আজ সাজে শ্যামরায়…
হৃদয় চিরে, মন ঘিরে
প্রেম রঙ, ব্রজ নীড়ে
মন উদাস, আবীর দিন
শ্যামরায়, রাই বিহীন
চমকিতে সচকিতে প্রেমের গভীরে…

পূর্বরাগে রেঙে ওঠে বসন্ত বাহার
ঠুমরি, গজল, নুপুর কিঙ্কিনি
শ্যামের রাই, চলে রিনিঝিনি
অলস দুপুর, দিচ্ছে ডাক
গানেই জীবন, বেঁচে থাক
ফাগেই রবীন্দ্রনাথ, গজলে আখতার।

______________
#হোলি_স্পেশাল

আমার ভুলে থাকা মন

ভালোবাসা ঠিক কি তা বোঝা হল না আমার। আবার ভালোবাসার অভিনয়ও রপ্ত করতে পারলাম না। বন্ধুরা আমাকে অবশ্য বলতো “তোর যা অহংকার! শেষে কারো ভালবাসা পেলে হয়।” আমি তো হেসেই উড়িয়ে দিতাম তাদের কথা। প্রিয় বান্ধবী শম্পা অবশ্য আমাকে প্রায়ই বলতো আর কাউকে নয়, তুই ভালোবাসাকে ভালোবেসে বসে আছিস রে, কি জানি এর কি মানে! তবে মনে হয়, যদি সত্যিই পারতাম মনের মতো করে ভালোবাসতে ; শান্ত-নরম-গভীর-আস্ফালনহীন-নিস্তব্ধ-নিঃস্বার্থ-নিঃশর্ত-অথচ দৃঢ়। কিন্তু আমাকেও তো কেউ ভালোবাসবে। আচ্ছা আমাকে কি সত্যিই ভালবাসা যায়? কি জানি? আমি কিন্তু গাছ, পাখি, পাহাড়, নদী খুব ভালোবাসি, আর যা যা কিছু আছে আরো খানিকটা দূরে সেখানেও ভালোবাসা আছে। তবে ঠিক কতদূরে? স্বপ্নের কাছাকাছি গিয়ে বোধ হয়। যেখানে গিয়ে থেমে যায় ভালোবাসা। কতদূরে বলত, ঠিক কতদূরে, অনেকটা দূরে কি? সেই আকাশ মাটির সাথে মেশে, তার থেকেও কি দূরে? মাঝে মাঝে স্বপ্নে চুপচাপ শুয়ে থাকি সেই না দেখা দিগন্তের মধ্যে, তাকিয়ে দেখি ঝিরঝিরে হাওয়ার তুলিতে আলো আঁকে মেঘের ক্যানভাসে। ঠিক তক্ষুণি সে আলো- বাতাস- আর আকাশ, মেঘটাকেও ভালোবেসে ফেলি। স্বপ্ন পেরিয়ে আসার পরেও বুকের মনিকোঠায় চুপ থাকে বেঁচে থাকা। কিংবা সেই যে নদীটা, যাকে খুঁজেছি কতবার আমার স্বপ্নে, সেই যে পাহাড়, যেই পাহাড়ের কোলে ছোট্ট সেই গ্রাম, সেইখানে আমার ছোট্ট স্বপ্নে আঁকা যে ঘর! যা প্রায়ই আসে আমার স্বপ্নে। যেখানে থেকে যেতে চাই কোন বৃদ্ধাশ্রমে একা। তাকেও তো ভালোবাসি। ভালোবাসি আমার সেই নির্বাসন জীবনকে। তবুও কেন জানি না কখনও কখনও এইসব কিছু অসহ্য হয়ে ওঠে, মনে হয় আগুন জ্বেলে ছাই হয়ে যাই, নিঃশব্দে। চলে যাই মেঘের দেশে।

আগুনেতো শুধু নিজেকেই পোড়াতে চেয়েছি। পুড়িয়েছি বারবার। দাদু বলতেন, “আত্মাকে কষ্ট দিওনা কখনও”, আত্মা কে তা তো জানি না আমি, তবে তাকে কি ভালোবাসতে ভুল হয়ে গেল? তার কষ্টে আজ তাই এ দূর্বিষহ প্রায়শ্চিত্ত? একটা একটা করে খুলে ফেলেছি আভরণ, একটু একটু করে মুছে গেছে চাওয়া, তিল তিল করে জমানো অভিমান, আজ পাহাড় প্রমাণ। নিজের অহংকার বিসর্জন দিয়ে, সব ভুলে আমি আবার প্রাণপণে সেই স্বপ্নের কাছে গেছি, যদি স্বপ্ন ভুল করে একবার ফিরে চায়! না, ভুল যে স্বপ্নদের হয় না। মন, সবটুকু ঠিক, তোর বেঠিকটাও যে ঠিকই; তবে কি তুই স্বৈরাচারী? আমি তাই চুপ থেকে আরো বেশি নিস্তব্ধতায় ডুবি। আলো চেয়েছিলাম, যাতে ভুলে থাকি যন্ত্রণা। আলো, এতো অভিমান! নির্বাসন দিস আমাকে। বেশ তবে,অন্ধকার গাঢ় হয়ে আসুক। এ শুধু আমার প্রায়শ্চিত্ত, তাই আমি সহ্যের পরীক্ষা দিই। শুধু মাঝে মাঝে যন্ত্রণায় জ্ঞান হারাবার আগে আজও দাদুকেই খুঁজি অভ্যেস বশে।

ঠিক ছোটবেলায় অসহ্য যন্ত্রণায় যখন অজ্ঞান হয়ে যেতাম দাদুই তো ছুটে আসতো। এইসব স্বপ্ন-আর আমার ঘোর-যন্ত্রণা আর প্রায়শ্চিত্ত নিয়ে আছি আজও বেঁচে। মাঝে মাঝে ওই দূরের দিগন্তে হারিয়ে যাই, তারপর আবার ফিরে আসি আমারই কাছে। আর রাত্রি আবারো এক আকাশ তারা ছড়িয়ে দেয়, একটা একটা করে রোজ গুনে তুলে রাখি আমার মনের মনি কোঠায় আর অপেক্ষা করি আমার সেই অমোঘ মুহূর্তের যেখানে আমি সেই পছন্দের তারাদের সাথে মিশে যাবো।

অভিমান

নীল আকাশের চাঁদটার থেকে অভিমান তুলে নিয়ে, যদি ইচ্ছে করে মন উড়ে যাই হাওয়া পথ ধরে! সেই যে কবে ভেসে গেছে বৃষ্টির ফোঁটা জলে মিশে আর নিয়ে গেছে সবটুকু আলো, আমাকে অন্ধকারে রেখে। এখন ছায়া শুধু ভিড় করে অবরে সবরে। মেঘেদের কাছ থেকে বৃষ্টি নেবো চেয়ে। আর আনমনে মেখে নেবো এই দুই চোখে, ভীষণ প্লাবনে ভেসে গেছে যে মেঘমন। তাকে খুঁজে নেবো। যার বিচরণে আমার নিঃশ্বাস, প্রশ্বাস। জানি, এ চোখের মেঘ সারাবার আমার বৃথাই প্রয়াস।

ইচ্ছে করে গাছেদের শিরা থেকে সবুজের ঢেউটাও নিতে। হৃদয় মাঝে ফুল সাজে রেখো দেবো তোর জন্য মন। আর যদি হৃদি-নদে তালে তালে নাও খানি ভাসে
সেই ভাসানের গানে গানে যদি আমার চিতায় ছাই ওড়ে, তবে উড়ে যাক, পুড়ে যাক সব দীর্ঘশ্বাসে। বিসর্জনের ঢাক বাজুক নাহয় আবার। আর মন, তুই শুধু রাত হলে খুঁজে নিস জোনাকির আলো।

আমার ভুলে থাকা মন – ২

আমার ভুলে থাকা মন – ২

অনেকদিন হয়ে গেল হাসিনি আগের মতন, সেই ছোট্টবেলার মতো, যেমনটি এই কয়েক বছর আগেও পারতাম। এখনও মনে আছে। আমি তখন ১২ ক্লাসে পড়ি বোন ১১ ক্লাসে আমরা দুই বোন একসাথেই বাড়ি ফিরতাম। খাবার টেবিলে রাখা থাকতো আমি ও আমার বোন বাড়ি ফিরে হাত, মুখ ধুয়ে যখন খেতে বসতাম তখন শুরু হত আমাদের যত গল্প আর হাসি। আমরা আস্তে হাসতে পারতাম না, জোরে জোরে শব্দ করে হাসতাম। তখন আমার কাকিমনি বলতেন পাড়ার মানুষেরা বুঝতে পারছেন আমাদের বাড়ির দুই মেয়ে বাড়ি ফিরে খেতে বসেছে।

জানিস মন সেই দিনের অভাব আজ খুব বুঝতে পারি রে। কত কিছু আলাদা হয়ে গেছে। যখনই তাকাই চারিদিকে দেখি সব কিছু অচেনা, হারিয়ে গেছি জানিস এই সব অচেনাদের ভিড়ে। আমার আমি কে আজ আর কোথাও খুঁজে পাই না। হারিয়ে যাওয়া খুব ভালো হত রে মন যদি তোর মতন হারিয়ে মিলিয়ে যেতে পারতাম আলোতে। তাই আর তাকাই না ফিরে, দেখি না কিচ্ছুটি। কারোর দিকে তাকাই না এখন, ভাললাগে না রে। অথচ দেখ কি ভিড় চারিদিকে। দম বন্ধ হয়ে আসে।

জানিস বুকের নিচের সেই চোরাবালিটা আজও বালি ভাঙে। একটা বালি খোরার যন্ত্র দিতে পারিস আমাকে মন ? তাহলে একটা কবর খুঁড়ে বালিতে সেই কবরে শুয়ে থাকি চিরজীবনের মতো, আর সমুদ্র ঢেউ মুছে দিয়ে যাক আমার কবরের শেষ দাগটুকু। যাতে কেও কোনোদিন আমাকে খুঁজে না পায়। সেদিন দেখবি আবার আমি আমার আমিকে খুঁজে পাবো। আবার আমরা কত মজা করবো, তুই আর আমি এক সাথে।

জানিস মন আমি এখন খানিকটা মাটি খুঁজছি উর্বর, পুঁতে দেবো আমার প্রিয় ফুলের বীজ। যেদিন ফুলে ফুলে ভরে যাবে আমার সেই গাছে, সেদিন আমি ঘুমবো এক শান্তির ঘুম, যে ঘুম ভেঙ্গে আমি আর উঠবো না কোনো দিন।

জীবন যেমন

দেখেছ কি কখনো
নিজের ভেসে থাকা
নিজেরই রক্তের নদীতে।
এও এক চরম অভিজ্ঞতা

সময়ের নিষ্ঠুর খেলায়।
জীবনের সাথে জীবনের
অপ্রত্যাশিত ভয়ংকর
নিষ্ঠুর সাক্ষাৎকার।

ফিরে পেয়েছ কি
তোমার তৃষ্ণা,
তোমার চাওয়া,

খিদের জ্বালায় যে শিশুটি
আবর্জনায় এক টুকরো
রুটি খুঁজে বেড়ায়, সজল চোখে,
দিয়েছো কি তাকে রুটি?

দেখেছো কি নিজের মৃত্যু
একটু একটু করে?
অনেক সময় হল …
অনেক সময় …

হে পরিতৃপ্ত মানুষজন।।

সম্পর্ক

হাজার বছরের পুরনো মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে
স্পষ্ট শুনতে পারছি পুর্বপুরুষদের আর্তনাদ।
সারি সারি মৃত দেহের ওপরে এক রাজা
বানিয়েছেন তার অহংকারের রথ।
অবাক হয়েছিলাম সেই অহমিকার নিদর্শনে
খুব ধীরে ধীরে পরম মমতায় ছুঁয়ে দিচ্ছিলাম
সেইসব মৃত পাথরের শরীর।

হঠাৎ কিছু শব্দ তীব্র ভাবে এগিয়ে এল!
ওই দূরে সারি সারি গাছেদের কান্না,
ডানা ভাঙ্গা পাখির ডানা মেলে ওড়ার চেষ্টা,
স্পষ্ট দেখতে পেলাম একজোড়া দাম্ভিক,
অনিচ্ছুক, তীব্র চোখ আমার দিকে এগিয়ে আসছে
আদিম যন্ত্রনায় অথবা প্রচণ্ড রাগে আগ্নেয়গিরির
লাভার মতো এগিয়ে আসছে।

আমি একটু একটু করে সরে যাচ্ছি
মৃত্যুর উপত্যকার দিকে।
ভালরাখা ও মন্দরাখা, আমার
রক্তের প্রতিটি কণার সাথে মিশে গেছে।
যাবতীয় ইচ্ছেদের, গুছিয়ে এনে,
মন্দিরের হাড়িকাঠে বলি দিয়েছি।
সন্ধ্যের আয়োজনে পোর্সেলিনের টুকরোয়,
ছেঁড়া সম্পর্কের কিছু দাগ থেকে যায়।

পারিজাত

পারিজাত

আজকাল মনখারাপের দিনগুলোতে
আমায় ঘিরে থাকে সেই রাতচরা পাখি,

নীল চাঁদের দিকে ইচ্ছে ডানায়
উড়ে যেতে যেতে রেখে যায়,
এক টুকরো বিশ্বাস, ভালবাসা।

তখনও চোখ থেকে জল মুছে নেওয়া বাকি,
গ্রীষ্মের ঝিমলাগা দুপুর আঁচল পেতে
চেনা গন্ধ মেখে নিতে নিতে, মনে মনে ভাবি,
বর্ষা এখনো অনেক দূর।

মন খারাপেরা তবুও ফেরেনা বাড়ি।
একটুকরো মেঘ কার্নিশে এসে দাঁড়ায়,
পারিজাত হতে চেয়ে।

অজস্র ক্রিস্টালের মতো বৃষ্টি নামে,
আমার বুক জুড়ে, উঠোন জুড়ে।
কখনও অনেকটা সাগর যদি পাই,
তোকে আনবো, কোল পেতে, দেখিস।

তারপর,সাগরের বাতাস নিয়ে
মায়ের ওমের মতন মনের মাঝে,
ফুটে উঠবে ভোরের পারিজাত।