রোদেলা নীলা এর সকল পোস্ট

কবিদের ভাবনা

সাড়ে তিন’শো কিলোমিটার দূরবাসে
হাত বাড়ালে অন্ধকার উঠে আসে ;
প্রচ্ছন্ন তার অবয়ব,
আমি চিনতে পারলেও না চেনারা
ভীষন আগ্রহে জানিয়ে দেয়–
নীরব দূরত্বে থাকো রমনী।
আমি দূর থেকে আরো দূরে বিলীন হতে থাকি ;
যতোটা দূরত্বে রোদ আলো দিতে না পারে,
একমুঠো ঝলমল হাসিকে করতলে মাখিয়ে
হারিয়ে যাব নিষিদ্ধ উপত্যকায়।
তোমাদের কাছে আমার নিকটে পৌঁছাবার
আর কোন সূত্র পাঠাবো না আমি !
ভালো থেকো জল
ভালো থেকো মেঘ
ভালো থেকো পাহাড়
ভালো থেকো আমার নিতান্ত ভালোবাসারা।
______________________

বাইরে থেকে দরজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত –
– নির্মলেন্দু গুণ
একা একা মশারী টানাতে টানাতে আমি এখন ক্লান্ত
– রোদেলা নীলা
__________

এক টুকরো চাওয়া

এক টুকরো চাওয়া

মন বলেছে আজ দু’জনে বৃষ্টি বাড়ি যাব;
ছুটতে ছুটতে অনেকটা পথ,
জলধরাতে মেশে।
গল্পে গল্পে ভরা আষাঢ় ক্ষণিক পাওয়া মন;
ডাকলো বুঝি তেপান্তরে,
অরণ্য পথ ঘেষে।
সোনালী রঙ আঁকলো চোখে গভীর নিমন্ত্রণ;
ঘামে ভেজা তোমার শরীর,
চাইছে অনিমেষে।।

থামো পথিক, অন্ধকারে চলতে মানা

বৃষ্টি নামছে নামুক;
কার কী তাতে!
এলেবেলে সময় কথন মনে পড়ছে,
বৃষ্টি বুঝি এমন করেই কাঁদতে জানে?
বৃষ্টি বুঝি এমন করেই ভাসতে জানে?
জানুক।
কার কী আসে !

এলেবেলে সময় কথন বুকের ভেতর
থেমে থেমে বাজছে বুঝি, বাজুক।
স্বর্ণলতা স্মৃতির বোঝা ঘাপটি মেরে
জড়িয়ে থাকে ব্যস্ত পথে , থাকুক।
যার না ফেরার,
স্বচ্ছ্ব আকাশ হাতছানিতে যতোই বলে –
থামো পথিক, অন্ধকারে চলতে মানা।

পথিক হাসে; আমিতো এই আমার মতোই
নিজের মনে চলতে জানি,
যে ডাকার সে পেছন থেকে ডাকবে জানি,
ডাকুক!
বৃষ্টি; তোর যেমন খুশি হাসতে পারিস,
কাঁদতে পারিস, ঝরতে পারিস।
লোকে যদি মন্দ বলে, কটু কথায় বিদ্ধ করে,
করুক!
লোকের মুখে যা আসে তাই বলুক !!

ঝমঝম বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়ে গেল সমস্ত অবয়ব

অন্ধকার স্পর্শ করে আছে শুভ্রতার আলোকবর্তিকা ;
তীব্র দাবদাহে অসহ্য আকাশ বুঝি কেঁদে ফেললো আচমকাই।
গোটা শহর জুড়ে তখন জৈষ্ঠ্য বাতাসের তুমুল আক্রমণ।
আকণ্ঠ অপেক্ষারত সময় অযথাই মুঠোফোনে চোখ রেখে রেখে ব্যস্ত ;
কেও আসতেও পারে নাও পারে নিশ্চয়তা ছিল না এতোটুকুন।
দ্বিধার সমুদ্রে ডুব সাঁতার দিতে দিতে যখন হারিয়ে ফেলেছি অতল জলাধারে,
ঝমঝম করে বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়ে গেল সমস্ত অবয়ব।
আকাশ হেসে ওঠে, মোড়ের ধারে ক্লান্ত মুদির দোকানীর মুখে হাসি খেলে যায়।
তিন চাকার হুড নামাতেই মুখোমুখি এক মুঠো শ্রাবণ।
দীর্ঘ বেলার খরাভূমিতে এক ফোটা জল বিছিয়ে দিল অবশেষে।।

কখনো বলিনি ভালোবাসো আমায়

কখনো বলিনি ভালোবাসো আমায়

কখনো বলিনি ভালোবাসতে আমা্কে ;
শুধু চেয়েছি আলতো হাতে ছুঁয়ে দিও উন্মক্ত কপোল,
খুব বেশী হলে একটি চুম্বন চিহ্ন দিও বিস্তীর্ণ ললাটে।
বলিনি ভালোবাসতেই হবে ;
ঠাণ্ডায় জল হতে থাকা স্বল্প চিনির চা খেতে খেতে বলো –
“উফ, এক কাপ অমৃত পান করলাম “অথবা
লবনহীন কারী মুখে নিয়ে হেসে বলো –“অসাধারন।”

তোমাকে কখনোই বলিনি ভালোবাসতেই হবে;
শুধু অফিস যাবার পথে একবার পিছন ফিরে চেও,
দেখবে কেও একজন বারান্দার কোন ঘেঁসে দাঁড়িয়ে আছে ;
রাস্তার শেষ বাঁকটিও আড়াল হয়না যেখানে।
তোমাকে কখনোই বলিনি মিনিটে মিনিটে ফোন দিও ;
শুধু একবার জিজ্ঞেস করে নিও দুপুরে কী রান্না করেছি।

কখনো বলিনি বসুন্ধরায় প্লট কিনতে,
শুধু চেয়েছি তোমার বুকের জমিন ;
যেখানে নিরাপদে নিশ্চিন্তে ঘুমায় অতৃপ্ত আত্মা।
আমি কখনোই বলিনি ভালোবাসো আমাকে ;
শুধু এলো চুলগুলো আঁচড়ে দিও অনভ্যস্ত হাতে।

কখনোই বলিনি ভালোবাসতে আমাকে
কেবল নীল শাড়ি পড়ে তোমার সামনে এলে বলো–
“তোমার টিপটা কিন্তু বাঁকা হয়েছে।”
বলিনি ভালোবাসতেই হবে আমাকে —
অফিস থেকে ফিরে ল্যাপটপে মুখ গুঁজে না থেকে বলতে পারো –
“চলো শিল্পকলায় নাটক দেখে আসি।”

বলিনি আমাকে ভালোবেসে দেখাও ইউরোপ -আমেরিকা ;
শুধু বলেছি –নিয়ে চলো সেই নীল পাহাড়ের দেশে –
উড়ন্ত মেঘের সাথে খেলবো সারাক্ষণ আর
দু’চোখ ভরে দেখে নেব বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গ।

অজানাতে প্রয়োজন নেই আমার

অজানাতে ঘুরে আসবার কোন প্রয়োজন নেই আমার,
যাবার ইচ্ছেও নেই ইউরোপ কী আমেরিকা।

কেবল তোমার হাতে হাত রাখলেই দেখে আসতে পারি ট্রয় নগরী;
কচু পাতার মধ্যে আবিষ্কার করি সীমাহীন মুখরতা।

তোমার চোখের সীমানায় আবার উপলব্ধি করি-আমার দেশ
শান্ত জলাশয়, ভেসে বেড়ানো পাখিদের কিচির -মিচির ডানা।

ভাঙ্গা-চোড়া কাঠ সেতুকেও মনে হয় নিরেট শুঠাম ওভারব্রীজ;
নিরাপদ কাঁধযুগল ভুলিয়ে দেয় ফেলে আসা সকল নিঃসঙ্গতা।

দরজা খোলাই আছে, সুনামী হয়েই এসো …

দরজা খোলাই আছে, সুনামী হয়েই এসো …

মাঘের শেষ দমকা হাওয়া গায়ে জুড়ে তোমার আগমন ;
এই ধরনীতে –আমার পৃথিবীতে।
পাহাড় সমান উষ্ণতা নিয়ে ঘুরে বেড়াও যাদুর শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ;
ঘূর্ণিপাকের ঘূর্ণি তুমি –আজীবন অধরাই থেকে যাও।

ওম ছড়ানো ঠোঁটে খেলা করে অনাবিল হাসির মুগ্ধতা,
ডুব দিয়ে ঘুরে আসি প্রত্যন্ত জলাশয়।
সেখানে কোন কিনারা নেই, তল নেই, ঠাঁই নেই ;
ক্রমশ ডুবতেই থাকি যেন।

শফেদ কোমর ছোঁয়া হাতেরা আলিঙ্গনে খেলা করে চারপাশ ;
ফাল্গুনের উড়ন্ত রাত্রি আগুন হয়ে ঝরে পড়ে দু’জনার শরীরে।
সেখানে আমার কোন আনাগোনা নেই, বসতি নেই, ঘর নেই;
তবু আত্মার মাঝে আত্মা ঠিকি জায়গা করে নেয় অনায়াসে।

চৈত্রের খাঁ খাঁ রোদ্দুর অপেক্ষা করে আর এক পেয়ালা সবুজ চায়ের জন্যে,
জানি সম্ভব হবে না কোন দিন।
তবু অপেক্ষারা ক্লান্ত হতে হতে প্রতীক্ষায় নিজের খোলস আবৃত করে,
কালবোশেখির ঘন্টা বাজে দম দমা দম দম, বাজে মাদল, বাজে ঢাক ;
সেই সাথে ভীষন তীব্রতায় বাজতে থাকে বুকের কাঁপন।

তোমার উড়োজাহাজে গোধুলি সন্ধ্যা বেঁধে দেই–তুমি ফিরে যাও,
সাইক্লোনের তীব্র থাবায় লণ্ড ভণ্ড হই একা দাঁড়িয়ে থাকা আমি।
তুমি না হয় সুনামী হয়েই ফিরে এসো কোন এক শ্রাবণ সন্ধ্যায়,
অঝর ধারা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে।

আমি সেই দিন না হয় ভিজবো,
দরজাটা খোলাই থাক, ওকে বন্ধ করো না কেউ ভুলেও।

কর্ণ কুহর থেকে হৃদপিণ্ড অব্দি

আমার শহরে তোমার চলে যাবার ঘন্টা ধ্বনি
বেজে উঠুক খুব সন্তর্পণে।
অলিন্দ থেকে নিলয়,
কর্ণ কুহর থেকে হৃদপিণ্ড অব্দি ;
চলে যাবার শব্দ যেন না পৌঁছায়।
ইথারের তরঙ্গ ঘেসে ভেসে আসা অনাবিল কণ্ঠ
আমি নিজ হাতে গলা টিপে হত্যা করেছি ;
আঁজলা ভরা আকাঙ্ক্ষাকে
কড়া চোখের ইশারায় দমিয়ে রেখেছি,
বন্ধ করে দিয়েছি এলোমেলো করে দেওয়া
সব ক’টা দরজা-জানালা,
এ পথে হেঁটে আসবার কোন যৌক্তিকতা আর অবশিষ্ট নেই,
আমি এও জানি;
যুক্তিরও অনেক বাইরে ছিল ক্ষণ মুহূর্তের এই ভালোবাসা,
তাইতো পরাস্ত প্রেম বাস্তবতার কাছে নতি স্বীকার করলোই যখন,
এই শহরে তোমার আর থাকবার কোন প্রয়োজন নেই।।

ধরে থাকা অসমর্থতা চলে যাওয়া পথ

অর্থের পিঠমোড়া ঝকঝকে ক্ষণ ;
পাইনি খুঁজে আজো নিশ্চিত ভোর,
দূর পথ অপেক্ষার প্রতীক্ষিত চোখ ;
নিয়মের মারপ্যাঁচে শূণ্য বাসর।

ধরে থাকা অসমর্থতা চলে যাওয়া পথ ;
উপহাস বুকে বাঁধা নিয়ত আঁধার,
যাও যদি দূরে যাও ডাকবো না আর
পরাভূত হৃদয়ের নেই কোন ভার।

তরুছায়া সবুজাভ ঘেরা এ অরণ্য

আমার ব্যস্ত নীলে
তুমি একটুখানি অবসর ;
আমার যন্ত্রণার ভূমিতে
তুমি প্রশান্ত সরোবর।।

তপ্ত রাতের লহমায় মিশে থাকা
বুভুক্ষু জীবনের শ্রেষ্ঠ ব্যঞ্জন তুমি ;
তরুছায়া সবুজাভ ঘেরা এ অরণ্য
স্পর্শহীন দু’আত্মা শুষ্ক জলাভূমি।।

এটা একটি গান হলেও হতে পারতো

মায়াবীনি রাত –
তুই দূরে থাক ;
প্রিয় আজ কাছে আর আসেনি।।
না বলা কথার জ্বালা,
ভুল করে গাঁথা মালা –
ছিঁড়ে যাওয়া সুর কেও সাধেনি।।

নিশ্চুপ চাঁদিমা মিটি মিটি জ্বলছে ;
জানিনাতো আনমনে কতো কথা বলছে –
রাত জাগা ভোর আরতো আসেনি,
প্রিয় ,সেতো আজ ভালো আর বাসেনি।।

বোশেখের বাতাসেরা তাণ্ডবে গাইছে ;
নীড়ফেরা পাখিরা কার ছোঁয়া চাইছে ?
ভাঙ্গা মন তাকে আর ডাকেনি,
প্রিয়, সেতো কাছে আর আসেনি।।

——————————————————-

এলেবেলে কাব্যকথা

১.
বৈশাখী রঙ গায়ে মাখি ;
সূর্য স্নানে যাই।
আর কতোবার ডাকবো পাখি ;
তোমার দেখা নাই।

২.
বাহির আমায় টানে ভীষন,
ঘর এখানে থাকে না।
হাত বাড়ালে রিক্ত ফাগুন,
মন সেখানে বাঁধে না।

৩.
পাল তুলেছে মেঘের বুকে ;
বৃষ্টি কেঁদে যায়।
জল ছোঁয়া মন হাওয়ায় মেশে ;
একটু দেখা চায়।

৪.
আকাশ ছেয়ে মেঘ করেছে ;
বৃষ্টি ছুঁতে চাই ।
মন পবনে পাল তুলেছে ;
তোমার দেখা নাই।

৫.
তুমি যদি এক দিতে আজ ;
আমি দিতাম দুই।
অপূর্ণ থাক স্বপ্ন চাওয়া
কষ্ট বুকেই থুই।।

বুক রিভিউ : ট্রেন টু ভিলেজ (কিশোর উপন্যাস)

বুক রিভিউ
ট্রেন টু ভিলেজ (কিশোর উপন্যাস)
লেখকঃ জিল্লুর রহমান
প্রকাশকঃ নওরোজ কিতাবিস্তান, ০৫, বাংলাবাজার, ঢাকা।

বিষয়বস্তুঃ
ওরা কোনো দিন গ্রাম দেখেনি। ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছে, ঢাকায় বড় হয়েছে, একক পরিবারে। ফলে ওদের জীবনের গণ্ডি বলতে বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে সীমিত। তাই কিশোর বয়সে ওদের যেসব বিষয় জানা প্রয়োজন ছিলো সেগুলো জানা হয়নি। রকির বাবা যখন বললো গ্রাম থেকে তার তাইতো ভাই আসবে তখন রকি আর রিতু দু’জনে হা করে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।

গ্রাম থেকে তুলি এলো মিউজিক কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করতে, তার কাছ থেকে গ্রামের গল্প শুনে রকি গ্রামে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হলো । কিন্তু একা যাবে কীভাবে ? বাবা-মা কেউ রাজি হলো না, তাদের সময় নেই। রকি তার গ্রামে যাওয়ার আগ্রহের কথা বললো তার ফ্রেন্ড টনি, জেমস আর তিথিকে। তিথিতো শুনেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লো, ওয়াও। আমিও যাচ্ছি তোদের সঙ্গে।

কিন্তু গ্রামে যেতে ওদের অনেক বাধা। জেমস বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান বলে তারা জেমসকে যেতে দিলো না। তিথির গ্রামে যাওয়ার পথে বাধা হলো সে মেয়ে বলে। শুরু হলো তিথির হ্যাঙ্গার স্ট্রাইক। অবশেষে তারও একটা যাওয়ার উপায় বের হলো। এমনিভাবে অনেক বাধা বিঘ্ন পেরিয়ে ওরা গ্রামে গেলো। সেখানে গিয়ে পরিচিত হলো অনেক নতুন ঘটনার সাথে। মাইক্রোবাস থেকে নামতেই একটা পাঁঠা দেখে রকি আর টনির মধ্যে একজন বলতে শুরু করলো ভল্লুক, আরেকজন বললো। মাইক্রোবাস দেখে পাঁঠা জোরে দৌড়ে আসতেই রকি আর টনি দু’জনে দৌড় দিলো। ওদের এই কাণ্ড যেনো গ্রামের মানুষের মধ্যে একটা হাসি-ঠাট্টার বিষয় হলো।

বিকেলে তুলি যখন রিতু আর তিথিকে মেহেদি পাতা তোলার জন্য ডাক দিলো তখন দু’জনে খুব খুশি হলো কিন্তু রিতু মেহেদি পাতা তোলার জন্য হাত বাড়াতেই তিথি জোরে চিৎকার করে বললো, হাত দিস্ না রিতু কাঁটা বিঁধবে। সখের বশে তিথি সন্ধ্যায় শাড়ি পরলো। আর শাড়ি পরে উঠান থেকে আঙিনায় নামতেই সে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলো। পরদিন এই ছয় জনের একদল এ্যাডভেঞ্চার প্রিয় কিশোর-কিশোরী গেলো ধর্মপুর ফরেস্টে, জঙ্গল দেখতে। জঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-পালা আর পশু-পাখির ছবি তুলতে তুলতে রকি আর তিথি পথ হারিয়ে ফেললো।

তিথি ভুলে মোবাইলফোন বাড়িতে ছেড়ে এসেছে আর ছবি তুলতে তুলতে রকির মোবাইল ফোনেও চার্জ শেষ হয়ে গেছে। দু’জনের শরীরও অনেক ক্লান্ত। এখন কীভাবে জঙ্গল থেকে বের হবে সে চিন্তায় দু’জনে অস্থির হয়ে পড়লো। রকির মাথায় একটা বুদ্ধি এলো, সে জোরে জোরে টনি, টনি বলে ডাকতে শুরু করলো কিন্তু জঙ্গলের অনেক গভীরে চলে আসায় ওদের ডাক টনি, তরু, তুলি, রিতুর কান পর্যন্ত পৌঁছালো না। ওরা নিরাশ হয়ে ক্লান্ত অবসন্ন দেহ নিয়ে পথে পথে ঘুরছিলো। এমন সময় জঙ্গলের পথ দিয়ে একপাল শুয়োর দেখে দু’জনে ভয়ে কেঁপে উঠলো। ওরা একগুচ্ছ ঘন ছোট গাছের আড়ালে লুকালো। গভীর জঙ্গলের দু’জন অপরিচিত কিশোর-কিশোরীকে দেখে শুয়োরের পালকে তাড়া করে এগিয়ে এলো ফিলীপ মারন্ডী। সে রকি আর তিথিকে আশ্বস্ত করলো, অভয় দিলো এবং দু’জনকে পথ দেখিয়ে জঙ্গল থেকে বের করে মাইক্রোবাসের কাছে পৌঁছে দিলো।

পরদিন সন্ধ্যায় আড্ডা হলো তুলির দাদু লতিফ সাহেবের সঙ্গে। লতিফ সাহেব পঁচাত্তর বছর বয়সের একজন উচ্চশিক্ষিত, জ্ঞানপিপাসু এবং প্রযুক্তি চিন্তা জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ। শহুরে এই চার কিশোর-কিশোরী তার ফেসবুকে এ্যাকাউন্ট, ট্রেন টু ভিলেজ গ্রুপ, ব্লগে লেখা দেখে অবাক হলো। ওরা যেনো খুঁজে পেলো পঁচাত্তর বছর বয়সের এক চিরসবুজ বালককে। লতিফ সাহেবও অবাক হলেন যখন তিনি জানতে পারলেন ওরা কোনোদিন গ্রাম দেখেনি, গ্রামে ওদের কোনো আত্মীয়-স্বজনও নেই। এতদিন শেকড়ের টান, নাড়ির টান, মাটির টান বলে যে কথা তিনি বলতেন এই কিশোর-কিশোরীদের সে রকম কোনো টান নেই। ফুপা সম্পর্ক কাকে বলে ওরা জানেনা তখন তিনি শুধু অবাকই হলেন না কিছুটা হতবাক হলেন।

তিনি এই কিশোর-কিশোরীদের বোঝালেন এমনিভাবে গ্রামের সঙ্গে শহরের মানুষের সম্পর্ক ধীরে ধীরে ছিন্ন হচ্ছে, গ্রামের মানুষের সঙ্গে শহরের মানুষের বৈষম্য বাড়ছে। আর কয়েক প্রজন্ম পর হয়তো দেখা যাবে গ্রামের মানুষ আর শহরের মানুষ দু’টো আলাদা প্রজাতির মানুষে পরিণত হয়েছে। লতিফ সাহেব ওদের শোনালেন তার ইচ্ছার কথা, গ্রামের অপরূপ শোভা, গ্রামের মানুষের কৃষ্টি-কালচার বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার জন্য, মানুষে মানুষে এই সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে সমাজকে স্থিতিশীল করার জন্য। তিনি তাদের শোনালেন, দেশপ্রেমিক কিশোর ক্ষুদিরামের দেশ্রপ্রেমের কথা, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা।

ট্রেন টু ভিলেজ একটি চমৎকার কিশোর উপন্যাস, গ্রন্থটি সংগ্রহে রাখতে পারেন।

রোদ সারাদিন মেঘের বুকেই ভাসে

রোদ সারাদিন মেঘের বুকেই ভাসে

থামতে বলেছিলে থেমে গেছি,
হয়তো সময় লেগেছিল খানিক বেশী।
চলে আসা মানে যে ফিরে আসা নয় ;
তুমি জানো,আমিও জানি।
তবু তোমাকে থামতে বলিনি কোন দিন,
যতো অশ্বক্ষমতায় ছুটে চলোনা কেন ;
একদিন ঠিক টের পাবে-
রোদ সারাদিন মেঘের বুকেই ভাসে।
আমি জ্যোস্না হয়ে আসবোনা
তোমার রাতের আকাশে।।

আটপৌর মাখামাখি

আটপৌর মাখামাখি

তোমাকে রেখেছি আজ
মেঘ কালো রোদ্দুরে ;
শ্যাওলা জড়িতে থাকা
পুরনো স্নান ঘরে।

তোমাকে রেখেছি এই
বাসমতী চাল ঝরে ;
আধ ফোটা মশুরী
দু;ফোটা ডাল ভরে।

তোমাকে রেখেছি দেখো
পূর্ণতা ঢাকা পাঁজরে ;
এলেবেলে মাখামাখি
শুদ্ধ এ চাদরে।

তোমাকে রেখেছি মেখে
আটপৌর সময় ধরে,
সময়ের আহবানে
মননে ও শরীরে।।

—————————–