রোদেলা নীলা এর সকল পোস্ট

প্রয়োজন খোঁজে তোমাকে

প্রয়োজন খোঁজে তোমাকে

আটপৌর জীবনের প্রতি সংকেতে
প্রয়োজনেরা তোমাকে খুঁজতে থাকে।
ঘুম চোখ আড়মোড়া ভেঙে খোঁজে
অচেনা শরীরের ঘ্রাণ,
বৃষ্টি জলছাট ভেজানো আদা মাখা এককাপ চা
বিষণ্ন চেয়ে থাকে তোমার মুখয়বে।
চলন্ত রাস্তায় আটকে যাওয়া তিন চাকা
চকিত ফিরে পায়- “ওড়নাটা সামলে বসো”
প্রয়োজন উঁকি দেয় চিরচেনা কণ্ঠস্বরে।
ঘামে ডোবা বীষবাষ্প অপেক্ষা করে –
শীতল দেশ থেকে এক মুঠো বরফপিণ্ড আসবে বলে।

একলা হতে থাকা বিকেল,
বাড়ি ফেরা ক্লান্ত সন্ধ্যা,
বুদ হতে থাকে তোমার আলিঙ্গনে।
ব্যস্ত সেমিনারে ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক,
ছোট চিংড়ি দিয়ে মাখানো উচ্ছে,
সীমান্ত তারকাঁটা উপেক্ষা করে
প্রয়োজন ছুটে চলে তোমায় নিমন্ত্রণে।
কথায় কথায় রাত বেড়ে দীর্ঘ হতে থাকে ,
নিঃসঙ্গ তারারা খুব কাছ ঘেসে জানিয়ে দিয়ে যায়-
তুমি থাকো সাত সমুদ্দুর ওই পাড়ে।

তবু কী অকারণ বারে বারে
খুব বেশী প্রয়োজন হয় তোমাকেই।

বুক রিভিউ উপন্যাসঃ খুঁজে ফিরি তারে

বুক রিভিউ উপন্যাসঃ খুঁজে ফিরি তারে
লেখকঃ জিল্লুর রহমান
প্রকাশকঃ নওরোজ কিতাবিস্তান, ০৫, বাংলাবাজার, ঢাকা।

বিষয়বস্তুঃ
আরশী মোবাইলের বাটন টিপলো, দুঃখিত এই মুহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, অনুগ্রহ পূর্বক কিছুক্ষণ পর আবার ডায়াল করুন। সে মোবাইলটা বিছানার ওপর ছুঁড়ে দিলো, তোমারই বা দোষ কী? তোমার সঙ্গে তো আমি নিজেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি, তুমিই বা নতুন করে সংযোগ দিবে কেনো ? তুমি কোথায় ফিরোজ ? কতদিন থেকে তোমাকে খুঁজছি, কতোবার তোমার মোবাইলে রিং দিয়েছি, কোনোদিন তোমাকে পেলাম না। তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন, তুমি আমাকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে, তুমি বলতে আমি যেদিন প্রমোশন পেয়ে অফিসার হবো সেদিন তুমিই সবচেয়ে বেশি খুশি হবে। আমি প্রমোশন পেয়েছি ফিরোজ, আগামী মাসে আমার একটা র‌্যাংক লাগবে, তুমি দেখবে না?

প্রমীর অকাল মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়ে রিমার মুখের দিকে তাকিয়ে ফিরোজ দ্বিতীয় বিয়ের কথা কোনোদিন ভাবেনি। নীলফামারী থেকে জয়পুরহাট বদলি হওয়ার পর সে যে বাসা ভাড়া নিয়েছিলো সে বাসারই মেয়ে আরশী তখন বগুড়া আযিযুল হক কলেজের অনার্সের ছাত্রী। প্রথমদিকে ফিরোজ যখন অফিসে থাকতো তখন আরশী প্রায় সময় দোতলায় চলে আসতো, রিমার সঙ্গে কথা বলে সময় কাটিয়ে দিতো। একদিন আরশীর সঙ্গে ফিরোজের পরিচয় হয়। আরশী যেন খুব তাড়াতাড়ি ফিরোজকে আপন করে নেয়। ফিরোজও যেন তাই। অল্পদিনের মধ্যে আরশীর ভালোবাসার কাছে ফিরোজের বয়স, সরকারি চাকুরিতে তার পদমর্যাদা সবকিছুই যেন সে ভুলে গিয়েছিলো।

এমন সময় জয়পুরহাট পুলিশ লাইনে মহিলা পুলিশে নিয়োগের সার্কুলার দেখে আরশী প্রথমে ফিরোজের কাছে পরামর্শ চায়। ফিরোজ প্রথমে আরো লেখাপড়া করার পরামর্শ দিলেও আরশীদের আর্থিক টানাটানির কথা জেনে তাকে চাকরির চেষ্টা করার জন্য উৎসাহ দেয়। ভাগ্যক্রমে আরশী মহিলা পুলিশ পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়। মহিলা পুলিশে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়ে আরশী প্রথমেই ফিরোজের পা ছুঁয়ে সালাম করে। তারপর রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে শুরু হয় ট্রেনিং। ট্রেনিং চলাকালে আরশীর সবসময় ফিরোজের কথা মনে হতো, তার মনে হতো ফিরোজই যেন তার সব। ফিরোজ জীবনেও ধীরে ধীরে প্রমীর স্থান দখল করে আরশী।

ট্রেনিং শেষে আরশীর পোস্টিং হয় রাজশাহী জেলার বাঘমারা থানায়। আরশী প্রথমে ভেঙ্গে পড়লেও ফিরোজ তাকে সান্ত্বনা দেয় এবং সব সময় তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। ফিরোজ প্রায় আরশীর সঙ্গে দেখা করার জন্য রাজশাহী যেতো, সারাদিন দু’জনে নব-দম্পতির মতো রাজশাহী চষে বেড়ানোর পর ফিরোজ আরশীর সংসারের প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনে দিয়ে জয়পুরহাট ফিরতো।

আরশীকে মহিলা আসামি নিয়ে প্রায়ই রাজশাহী যেতে হতো। সেখানে তার পরিচয় হয় কন্সটেবল নূরের সঙ্গে। তখন নূরের পোস্টিং ছিলো রাজশাহী মেট্রোপলিটন কোর্টে। ধীরে ধীরে দু’জনের মধ্যে প্রথমে সখ্যতা গড়ে উঠে, তারপর প্রেম। নূর আরশীকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখায়, আরশী নূরের দেখানো স্বপ্নে বিভোর হয়ে ফিরোজকে ভুলে যায়। আরশী আর ফিরোজের বিষয়টিকে আরশীর বোন-দুলাভাই অর্থ উপার্জনের একটা মোক্ষম সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে আরশীকে ফিরোজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে উৎসাহিত করে। ফিরোজ জয়পুরহাট থেকে বদলি হয়ে যায়।

নূর আরশীর সঙ্গে প্রতারণা করে। নূর-এর প্রতারণা আরশীর মনে ফিরোজের সঙ্গে তার আচরণের জন্য অপরাধবোধ জাগিয়ে তোলে। ফিরোজের সঙ্গে দেখা করার জন্য আরশী মনে মনে তাকে খুঁজতে থাকে। ইতোমধ্যে আরশীর প্রমোশন হয় এবং র্যাং ক পরানোর দিন নির্ধারিত হয়। ফিরোজের সঙ্গে দেখা করা আরশীর জন্য আরো প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। আরশী তার বান্ধবী রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত জেসমিনের সহযোগিতায় ফিরোজের হেডঅফিসের ঠিকানা বের করে। সেখানে যোগাযোগ করে জানতে পারে ফিরোজ কয়েক বছর আগে চাকরি থেকে রিজাইন করেছে। আরশী সেখান থেকে ফিরোজের ঠিকানা নিয়ে রওয়ানা হয় তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানায়।

চাকরি ছেড়ে দিয়ে এইচ.বি.এস পজিটিভ ভাইরাসে আক্রান্ত ফিরোজ কাউকে না জানিয়ে তার একমাত্র কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নির্ধারিত দিনে রিমার বিয়ে হয়। বিয়ের পরদিন রাতেই ফিরোজ অসুস্থ ‘ হয়ে পড়ে। তাকে জরুরি ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়।
দিনাজপুরে ফিরোজের বাড়ি খুঁজতে গিয়ে আরশী একভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলো, আঙ্কল ফিরোজ সাহেবের বাড়িটা কোনো দিকে ? প্লিজ যদি বলতেন?
তিনি অদূরে আঙ্গুল দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ফিরোজের বাড়িটাতো ঐদিকে কিন্তু ও তো-
কী হয়েছে আঙ্কল?
ও তোমার কে হয় মা?
আংকেল ফিরোজ সাহেব আমার পরম শ্রদ্ধেয় একজন মানুষ, তাঁর এক মেয়ে আছে নাম রিমা, তিনি আমাকে রিমার মতো স্নেহ করেন। ফিরোজ সাহেব আমার গার্জিয়ানের মতো, বন্ধুর মতো, তিনিই আমার সব।
ভদ্রলোক অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বললেন, তাহলে তো তুমি সব হারিয়েছো মা।
______________________________________

যারা ঘরে বসে খুঁজে ফিরি তারে সংগ্রহ করতে চান, এখানে ক্লিক করুন।

একটু সময় তোমার হাতে রাখো

একটু সময় তোমার হাতে রাখো

মন ছুঁয়ে যায়
ক্ষণ ছিঁড়ে যায়
তোকে পাবার ইচ্ছে ;
কঠিন সাধন
হাজার বারণ
সময় কেড়ে নিচ্ছে।

বৈশাখী রঙ গায়ে মেখে
হাঁটছি অনেক দূর ,
ওইখানেতে বসত তোমার
কইছে সমুদ্দুর।
মেঘের আঁচল গায়ে মেখে
থাকছো নীরব হয়ে,
সবুজ ঘেরা অরণ্য পথ
ক্লান্তি নিল বয়ে।

বলছি মাঝি ধীরে চলো,
সন্ধ্যে নেমে আসে ;
এমন তাড়া কেন তোমার,
কেও কি আছে পাশে ?
বলছি ভীষন অনুরোধে
এবার বসে থাকো,
একটু সময় আমার জন্য
তোমার হাতে রাখো।

বুক রিভিউ উপন্যাসঃ বিজয়িনী

বুক রিভিউ উপন্যাসঃ বিজয়িনী
লেখকঃ জিল্লুর রহমান
মূল্য: টাকা ১৫০.০০ মাত্র।
প্রকাশকঃ নওরোজ কিতাবিস্তান, ০৫, বাংলাবাজার, ঢাকা।

বিষয়বস্তুঃ
রাতের আঁধারে সবুজ যেদিন রাতে শঙ্কর মাধবপুর গ্রাম থেকে পালিয়ে এলো সেদিন শীতের রাত, ঘুটঘুটে অন্ধকার, শঙ্কর মাধবপুর গ্রাম থেকে রাজিবপুর পৌঁছাতে পায়ে হাঁটার পথ তিন কিলোমিটার, উঁচু-নিচু রাস্তা, ধু ধু বালুচর আর কাশবন। তারপর সোনাভরি নদী। মনের ভিতরে আছে কেউ দেখে ফেলার আশঙ্কা। এতকিছুর মধ্যেও সবুজের মনে হলো একবার যদি রেণুর মুখটা দেখে যেতে পারতো…

সালিসের ভয়ে, সালিসে অপমানের ভয়ে সে রাতের আঁধারে পালিয়ে এসেছে ঢাকায়। একটা চাকুরীও জুটেছে গার্মেন্টসে। কিন্তু গার্মেন্টসে চাকুরীতে তার মন নেই। তার মনের মধ্যে সবসময় রেণু, আর শুধু রেণু।

সেদিন সবুজ পালিয়ে যাওয়ার পর রেণুও চলে যায় নানার বাড়ি চিলমারী। ক’দিন যেতে না যেতেই শুরু হয় তার বিয়ের আয়োজন। রেণু নানার বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে হয় রিয়াজের সঙ্গে। রিয়াজ বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান। পাকা বাড়ি, অন্ন-বস্ত্রের অভাব নেই। ব্রহ্মপুত্রের চরে ক্ষুধা তৃষ্ণার সঙ্গে লড়াই করে বড় হওয়া রেণু এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহ বঁধু। তারপরও রেণুর মনে সুখ নেই। তার মন শুধু সবুজের জন্য ছটফট করে। এর মধ্যে ঘটে আরেক ঘটনা। রিয়াজ রেণুকে নিয়ে বেড়াতে আসে শঙ্কর মাধবপুর গ্রামে, শ্বশুরবাড়িতে। আর বেড়াতে এসেই হয় যত বিপত্তি। সে রেণুর প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জানতে পারে রেণুর সঙ্গে সবুজের হৃদয়ঘটিত সম্পর্কের কথা। সে রেণুকে তার বাবার বাড়িতে রেখে পরদিনই পালিয়ে যায়। রেণুও পরের নৌকায় ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে চলে যায় পিছনে পিছনে রেণু চলে যায় তার শ্বশুরবাড়ি কিন্তু সম্পর্কটা আর আগের মতো স্বাভাবিক হয় না। রেণুর ওপর শুরু হয় মানসিক নির্যাতন। নির্যাতন সইতে না পেরে রেণু তার বাবার বাড়ি চলে আসে। ক’দিন পরেই চলে আসে বিচ্ছেদের চিঠি, তালাকনামা।

রেণুর বড় বোন বানু। কিশোরী বয়সে তারও বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু সতীনের সংসারে টিকতে না পেরে সেও ফিরে এসেছিলো বাবার বাড়িতে সে অনেক আগের কথা। তারপর সে চলে যায় ঢাকা, সেখানে গার্মেন্টসে চাকুরী করে বাড়িতে মাসে মাসে টাকা পাঠায়, তাদের দুর্দিন কেটে যায়, সংসারে সুখ আসে। রেণু বাবার বাড়িতে ফিরে এলে সেও বানুর সঙ্গে ঢাকা গিয়ে বানুর সঙ্গে গার্মেন্টসে চাকুরী করে। দু’মেয়ের চাকুরীর টাকায় সংসার আরো সচ্ছল হয়।

বানু, রেণু আর ইতি। নুরুর তিন মেয়ে আর একমাত্র ছেলে মানিক। ইতি মেধাবী ছাত্রী। সে যখন ক্লাস ফাইভ পাস করে হাই স্কুলে ভর্তি হবে তখনো বানুর চাকুরী হয় নি, রেণু শ্বশুরবাড়িতে। তখন তাদের টানাপোড়নের সংসার। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক সঙ্গতির অভাবে নুরু তার লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু শঙ্কর মাধবপুর হাই স্কুলের হেড মাস্টারের পরামর্শ আর আশ্বাসের ফলে সে ইতিকে ক্লাস সিক্সে ভর্তি করে দেয়।

ইতি আর মানিক যমজ। নুরুর একমাত্র ছেলে, বানু, রেনু, ইতির একমাত্র ভাই হওয়ায় সে বড় হয়েছে অনেক আদর যত্নে। ক্লাস ফাইভ পাস করার পর সে জিদ ধরলো রাজিবপুর হাই স্কুলে ভর্তি হবে। নুরু তাকে রাজিবপুর হাই স্কুলেই ভর্তি করে দিলো। কিন্তু রাজিবপুর ভর্তি হওয়ার পর সে লেখাপড়ায় আরো পিছিয়ে গেলো।
ছেলে সন্তানের জন্য নুরু আর ফুলির সংসারে একে একে তিন মেয়ে হয়েছে, মেধাবী হওয়ার পরও ইতির লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে মানিককে রাজিবপুর হাই স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে অথচ সেই অবহেলার মেয়ে ইতি এ-প্লাস পেয়ে এস.এস.সি পাস করলো আর মানিক পাস করলো বি গ্রেডে।

সবুজ তার মামাতো ভাইয়ের কাছে সব খবর নিয়ে শেষ পর্যন্ত রেণুকে খুঁজে পেয়েছে। শুধু খুঁজে পাওয়াই নয়, সে রেণুকে বিয়ে করেছে। ইতি আর মানিকের রেজাল্ট এবং সবুজের সঙ্গে রেণুর বিয়ে সব মিলিয়ে নুরু আর ফুলির সংসারে আজ আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে। বানু, রেণু আর সবুজ ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়েছে ডে কোচে। বটতলায় কোচ থেকে নেমে ভ্যানে চড়ে সবাই নদীর ঘাটে এলো। নদীর ঘাটে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলো না। কিছুক্ষণ পরেই নৌকা ছেড়ে দিলো।
নৌকা যখন সোনাভরি পার হয়ে শঙ্কর মাধবপুর ঘাটে এসে ভিড়ল তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। সবাই নৌকা থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করলো। সোনাভরির পাড় থেকে রেণুদের বাড়ি কয়েক মিনিটের পথ। বাজারের পাশে একটা মসজিদ থেকে তখন ফজু মাতব্বর নামাজ পড়ে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো একসঙ্গে কয়েক জনকে পেছন থেকে আসতে দেখে সে দাঁড়ালো। সবাই কাছে যেতেই ফজু মাতব্বর জিজ্ঞেস করলো, কে? তোমরা কে?

শঙ্কর মাধবপুর গ্রামের শালিসের ধারক এবং বাহক ফজু মাতব্বরকে দেখে সবুজের রেগে ফেটে পড়লো। সে ফজু মাতব্বরের কাছে গিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক সুরে বললো, স্লামুয়ালায়ক মাতব্বর সাহেব। ওয়ালেকুম আসসালাম। তুমি সবুজ না? সবুজ আরো কাছে গেলো, হ্যাঁ আমি সবুজ। তুমি না গ্রাম ছেড়ে চলে গেছিলে?আবার এসেছে? হ্যাঁ, আবার এসেছি। শালিস বসাবেন নাকি? রেণুও এসেছে। রেণু সামনে এসে দাঁড়ালো। ফজু মাতব্বর একবার রেণুর আরেকবার সবুজের দিকে আপাদমস্তক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, তোমরা বিয়ে করেছো? সবুজ রেণুর কাঁধের ওপর একটা হাত রেখে বললো, হ্যাঁ। রেণু এখন আমার বউ। ফজু মাতব্বর আর কোনো কথা বললো না। সে মাথা নত করে চলে গেলো।

ইন্দ্রাবতী… তোমায় স্পর্শ করবো বলে

ইন্দ্রাবতী ; তোমায় স্পর্শ করবো বলে

সাতরঙা জল ছুঁয়ে দেখবো বলে
সে কী আয়োজন আমার ;
কখনো নীল শাড়ির ভাঁজ খুলে দেখছি,
কখনোবা আকাশি রঙের শাড়িটা।
আচ্ছা, আকাশ যখন সমুদ্রে হেলে পড়ে
তখন গোধূলি আলোর কোন আভার খেলা
তোমাকে মুগ্ধ করে বলতে পারো ?

তুমি কথায় কথায় বলো – নীল পড়ো,
সেটা বোশেখ হোক, কিংবা বসন্ত ;
নীলে তোমার আছে তীব্র আকর্ষন।
ইন্দ্রাবতীর গা ছুঁয়ে সাতখানা জলপ্রপাত
কিভাবে ধেয়ে চলে,
তা দেখবার কী ব্যকুল প্রতীক্ষা আমার !

তাই যখনি সুযোগ পাচ্ছি একটা একটা করে শাড়ি
গুছিয়ে নিচ্ছি লাল ট্রাভেল ব্যাগে ;
কে জানে ; হয়তো রংধনুর মিষ্টি আলো
তোমার মনকে খানিক হলেও বদলে দিতেও পারে।
কিন্তু, বেরসিক ডাক্তার এক গাদা অষুধ লিখেই খালাস ;
এত্তো এত্তো ইনহেলার নিয়ে কী চব্বিশ ঘন্টা
কাটিয়ে দেওয়া যায় !

শ্বাসনালীর সাথে হৃদপিণ্ডের দারুণ রকম যুদ্ধ চলছে,
কিছুতেই অক্সিজেন যাচ্ছে না শরীরে ;
তাহলে বোধ করি সাতরঙা জল দেখা হবে না এ জন্মে।
এই শহরের বিষবাষ্পে ভেসে আছে কালো কার্বন
একটু একটু করে সময় কুড়িয়ে নিচ্ছি,
একটু একটু করে কাজ গুছিয়ে নিচ্ছি,
আমি চিত্রকুটের জল স্পর্শ করবো।

আমায় তুমি নিয়ে চলো ছিয়ানব্বই মিটার উঁচুতে,
আমি তোমার হাত ছোঁব না,
আমি তোমার ঠোঁট ছোঁব না,
কথা দিলাম ;
আমি তোমার ব্যক্তিগত বাঁধা হবো না।

কেবল আমার পাশে মূর্তি হয়েই দাঁড়িয়ে থেকো,
আমি একটিবার অমন ঝরতে পারা জলস্রোতিনী
ছুঁয়ে দেখতে চাই।
________________________________

নাম দিয়েছি স্বাধীনতা

নাম দিয়েছি স্বাধীনতা

সৃষ্টির আদিমলগ্নে
মূর্তমাণ অবিশুদ্ধ মানবতা ঠাসা শরীরে
হাত রেখে জানতে চাই ;
বুক খোলা দরজার অন্ধকার ঘরে উঁকি দিয়ে
দেখতে ইচ্ছে করে –
ওখানকার বীভৎসতার ইতিহাস।

কান পেতে রাখি ;
আহত পাখির আর্তনাদ আমার শেষ ইন্দ্রিয় কাঁপিয়ে দিয়ে যায়।
বিজ্ঞানের আশীর্বাদে সেই করুণ চিৎকার
নতুন রূপে ফিরে আসে যান্ত্রিক কাঠামোতে।
অবিকল তা আগের মতোই,
শুধু সময় চলে গেছে বেশ।
পুনরায় দাঁড়াই আরশির স্বচ্ছ কাঁচে ;
অবলোকন করি খোলা আকাশের নীচে
শুয়ে থাকা নগ্ন দেহ,
অপবাদের ধারাভাষ্যে ভেসে যায় মৃত রমণীর লাশ।

মেহেদি রাঙ্গানো দু’টো হাত কেবল নরমাংসের
ক্ষুধা বহন করে ;
ওখানে কোন মুহূর্তের জন্য আকুলতা থাকে না,
ওখানে থাকেনা উত্তাপ ছড়ানো যৌবন ;
ঘুঙুর পরানো পা কেবল পরিধি জড়ানো ঘেরাটোপে
ঘুরতে থাকে অবিরত।
পৃথিবী জয়ের উল্লাসে নর পতিরা উৎসবে মাতে ;
ছিঁড়ে কুঁড়ে খায়,
উৎসাহী বাণী লিখে চলে ইথারে।
তাই আধুনিকতার সমস্ত জানালা বন্ধ করে
আদিমতার কুৎসিত চাদর মুড়িয়ে পরে থাকে বাস্তবতা,
যার নাম দিয়েছি—স্বাধীনতা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখকদের বই নিয়ে ‘সতীর্থ’ বইমেলা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখকদের বই নিয়ে ‘সতীর্থ’ বইমেলা

কবি ও গল্পকার এবং শব্দনীড় ব্লগার রোদেলা নীলা‘র পুরনো এবং নতুন বই পাওয়া যাবে সতীর্থ বইমেলা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বইমেলায়।

নির্বাণ প্রকাশের আয়োজনে দ্বিতীয় বারের মতো আগামী ১২, ১৩, ১৪ এবং ১৫ এপ্রিল রোজ শুক্র, শনি, রবি এবং সোমবার; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্ত্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সতীর্থ বইমেলা ২০১৯।

সতীর্থ বইমেলায় থাকছে বিভিন্ন প্রকাশনী হতে প্রকাশিত জাহাঙ্গীরনগরের বর্তমান ছাত্র, সাবেক ছাত্র এবং শিক্ষকদের বই। ১২, ১৩, ১৪ এবং ১৫ এপ্রিল প্রতিদিন সকাল ১০ টায় মেলা শুরু হয়ে চলবে রাত ৯ টা পর্যন্ত।

বইমেলার পাশাপাশি গতবছরের মতো এবারো থাকছে কবিতা পাঠ, গান এবং উচ্চাঙ্গ সংগীত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে ১২ তারিখ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত।

আপনারা সবাই আমন্ত্রিত।

“নিমগ্ন গোধূলি” কাব্য গ্রন্থ থেকে নেওয়া কিছু অংশ

ভালোবাসা পরিমাপ করবার মতো কোন
থার্মোমিটার নেই আমার কাছে;
যেটুকু আছে তা শুধুই তোমার শরীরের
উষ্ম আলিঙ্গন ;
যার প্রতিটি ভাঁজে মেখে আছে আমার সফেদ
মৃত্তিকার তীব্র পরাজয়,
মানবীর অহর্নিশ হেরে যাওয়া।

আমার অপেক্ষা আর তোমার উপেক্ষা ;
দু’য়ে মিলে কোন দিন যদি মাপক যন্ত্র
আবিষ্কার করতে পারো,
সেই দিন দেখে নিও –এ বিশ্বের সমস্ত আবিষ্কার
হার মেনে যাবে আমার আকুলতার কাছে।
শ্রাবণের তানপুরা হয়ে হয়তো বাজবেনা
বাদলের পদধ্বনি ;
তবু এক গোধূলি লগ্নে আমি এখানেই ঠায়
দাঁড়িয়ে থাকবো –
কোন এক অব্যর্থ মাপক যন্ত্র আবিষ্কারের প্রতীক্ষায়।।
_________________________________

জুড়ে থাক দু’টো করতল

জুড়ে থাক দু’টো করতল

একদিন খুব বেশি ঝড় হবে এই যাদুর শহরে ;
নিয়ন বাতিগুলো একটু একটু করে নিভে যাবে।
সেদিন রাস্তায় থাকবে না কোন ট্র্যাফিক,
অনন্ত শ্রাবণ মাথায় করে ডুবে যাব গহীন অরণ্যে।
তুমি সেইদিন এসো এই গভীর উপত্যকায়,
নিঃসংগ মুঠো জুড়ে ভরা থাকবে দু’টো করতল।

কেবল বোঝে তোমাকেই

কেবল বোঝে তোমাকেই

অদৃশ্যতা বুঝিনা ;
বুঝিনা বাস্তবতা ;
স্বপ্ন আর সত্যের অবিনশ্বর সেতুর
মূর্তিমান কংক্রীট কেবল বোঝে তোমাকেই।

ব্যবধান বুঝিনা ;
বুঝিনা অনিশ্চয়তা ;
কল্পনার মাঝ সমুদ্র পাড় ভাঙা
নির্লজ্জ যৌবন কেবল বোঝে তোমাকেই।

নিয়ম বুঝিনা ;
বুঝিনা বারন ;
অতৃপ্ত বাসনার চল্লিশোর্ধ্ব পাহাড় ডিঙানো
উর্বরা ঝরণা কেবল বোঝে তোমাকেই।
____________________________

এক যুগ ধরে আমি তোমাকে দেখি না

এক যুগ ধরে আমি তোমাকে দেখি না

এক যুগ হয়ে গেল তোমাকে দেখি না ;
তোমাকে না দেখতে দেখতে তোমার মুখ
অচেনা হয়ে যাবে,
তোমার কণ্ঠ না শুনতে শুনতে তোমার স্বর
অচেনা হয়ে যাবে,
সত্যিই কি তুমি আমার সবচেয়ে অচেনা মানুষটি
হতে যাচ্ছো?

সত্যিই কি আমাদের সময়গুলো তুমি ভুলে যাচ্ছো?
তুমিইতো বলেছিলে ব্ল্যাক স্ক্রিনে তুমি আমার শরীরের তরতাজা ঘ্রাণ পাও ;
তুমিই শিখিয়েছিলে –
এক সহস্র কিলোমিটার দূরে থেকেও শুধুমাত্র
চোখ বুজলেই কতোটা সহজে কাছে আসা যায়।
তুমি কি আমাকে ভুলে থাকা শেখাচ্ছো?
তোমার জন্য অপেক্ষা করে সাইলেন্ট বিহীন স্যামস্যাং ;
তোমাকে একবার দেখবে বলে সাইনইন হয়ে থাকে ফেসবুক আর ভাইবার।

আরো কোন এপ্লিকেশন জানা থাকলে বলে দাও
যার মধ্য দিয়ে আমি কেবল তোমাকেই দেখতে পাবো,
আরো কোন ভয়েজ মেইল থাকলে শিখিয়ে দাও ;
জানতে পারবে প্রতিটা মুহূর্তে কতোটা শুকোয় কণ্ঠ কেবল
তোমার সাথে মুখর হবে বলে।

এত্তো মানুষ চারদিকে ;
তবু কথা বলতে না পারার তৃষ্ণা
আমি মেটাতে পারছি না।
আমি আরো কিছুটা জীবন তোমার পাশে বসে
কাটিয়ে দিতে চাই,
তোমার ব্যস্ত ড্রাইভিং,
হারানো গানের সুরে একলা আমিই না হয় ভেসে যাব।
তাই ভেবে দেখো ;
একটা যুগ ধরে আমি তোমাকে দেখি না।

________________________
নস্টালজিয়া জেঁকে বসেছে দেখছি …

প্রলুব্ধ হও হে পুরুষ

প্রলুব্ধ হও হে পুরুষ

কলঙ্ক বুঝি আজ বড়ই বেয়াড়া,
স্থাবর-অস্থাবর হিসেব না কষেই তোমাকে চাইছে অনিমেষ।
বোতাম সমেত সাজানো জামার হুড খুলে ফেলতে ইচ্ছে করছে এক নিমিষেই ;
এসো, আমি বিহঙ্গী হয়ে বিচরন করি তোমার লোমশ শরীরে,
তুমি হও রাজ-হংস, উর্বরা জমিনে করো অবাধ চাষাবাদ।

কবিকে আর কবিতায় ডুবে থাকতে দিও না,
ছিঁড়ে ফেলো সমস্ত শব্দ বিন্যাস,
মাত্রা আর ছন্দের গবেষণা না করে থাকো আমাতে নির্বাসনে।

কাব্যের চরণ দূরে ঠেলে রাখো, ওষ্ঠে তোল সফেদ দু’বাহু –
নিঃসঙ্গ জেগে থাকা এক জোড়া ঠোঁট।
তোমার বুকে বুদ হয়ে বুনো গন্ধ শুঁকি –
মানবীকে নিয়ে চলো উন্মাতাল উন্মাদনায়।

প্রলুব্ধ হও হে পুরুষ –
বিশেষজ্ঞ পাঠক হয়ে থেকো না;
অজস্র ভুল বানানে আর কখনো কবিকে খুঁজতে যেও না।

_____________________________
ছবি কৃতজ্ঞতা : রাকেশ দা, দৈনিক মানব কণ্ঠ।

স্মৃতিতে নিমগ্ন গোধূলি

স্মৃতিতে নিমগ্ন গোধূলি

তুমি হও উড়ন্ত মেঘ দল ;
আমি পায়রা হতে চাই মিছে,
ধানশালিকের ঠোঁটে প্রকম্পিত ছোট পোনাদের দল;
চিবুকে মেখে নেই তার রক্ত আভরন।

তুমি দাও কাঁটা ;
আমি ভুল করে তুলে নেই নীলপদ্ম।
তোমার আরশীতে খেলা করে বিস্তীর্ণ হিমালয়,
এখানে আছে ছোট্ট কুঁড়েঘর-
প্রতিদিনের কর্মক্লান্ত অনবসর।

তোমার পৃথিবী ছেয়ে আছে নানান রঙের
আলোর ঝলকানিতে ;
এখানে দীনতা কেবল,
মান হারানো বিষণ্নতা।
মাঘী রাত্রিতে তুমি জ্যোৎস্না বিলাসী ;
আমি স্বপ্নের পায়ে পায়েল পড়াই।
বাস্তবতার খোলা শরীরে তুমি সূঁই গাঁথতে পারো বেশ ;
আমি ভাবি এলোমেলো, সঙ্গতিহীন।
তোমার কাছে যা শুধুই গোধুলি কাব্য ;
আমার কাছে এক প্রকাণ্ড জলাশয়।।

____________________________________________
ছবিতে আমার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আর স্মৃতিতে নিমগ্ন গোধূলি।

চেনা শহর

চেনা শহরের বড় রাস্তাগুলো আজকাল খুব বেশি অচেনা লাগে।

হাতিরপুলে কোন কালেও হাতির দেখা না মিললেও ফুচকা আর চটপটির আসর বসতো হাতির মতো বিশালাকার আয়তনে। কলেজ ফেরা এক দঙ্গল উচ্ছল তরুণীর চোখে তখন স্বপ্ন আকাশছোঁয়া। লেখা পড়া শেষ করে কেউবা ডাক্তার আর কেউবা আর্কিটেক্ট হবার ইচ্ছেয় মশগুল, আবার এও দেখা গেছে শুধু ভালো বর পাবার আকাঙ্ক্ষায় বিভোর অনেকে ৷

রুমানা বড়লোক ঘর পেয়েছে কীনা জানিনা, মৌসুমী ঠিকঠাক চলে গেছে সিডনীতে আর এদেশে সরকারি চাকরি করেও আনিকার কাছে মনে হয়েছে সন্তানের কোন ভবিষ্যৎ নেই এখানে, সে দিন রাত এক করে প্রবাসে ঘাম ঝরাচ্ছে।
আমরাও তো কাজ করেই চলেছি নিরন্তর, সকাল থেকে রাত ; কী অফিসে ; কীবা বাড়িতে। আলাদা করে কোন দিন নেই আমাদের জন্য, সেই একই রকম হুড়োহুড়ির মধ্য দিয়ে দিনের শুরু। বৈচিত্র্য ঝরানো বৃষ্টি এই ফাগুন দিনেও জলে ভেজায়, কাঁদায় মাখামাখি করে কোন রকম অফিসে ঢুকতেই লেইট কাউন্ট হয়, মাস শেষে বেতনের গলায় ছুঁড়ি।

ফিরতি পথে সূর্যের সাথে আর দেখা হয় না, কখনো সে আড়ি নিয়ে গেছে দূর পশ্চিমায় ; শহরের হেজাক বাতিগুলো আরো বেশি জ্বলন্ত, ট্র্যাফিক তখন বেপরোয়া ভীষন। রসায়নে ডুব সাঁতার কাটা এই সাহসী জনতা অবিরত ভাসতে থাকে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারে শরীর এলিয়ে।

আমাদের আসলে পালাবার কোন পথ খোলা নেই, বিনোদন খুঁজতে চাওয়া উৎসব প্রিয় মানুষ তাই বারুদে মিশে যায়। সব কিছুই এখন ভাগ্যের কাছে সঁপে দিয়ে নির্বিকার হেঁটে চলাই নিয়ম, মুখ ফোসকে কখনও কীযে বেরিয়ে আসে সেই আতংক সারাক্ষণ ওত পেতে থাকে।

আমার বন্ধুদের মতো আমি বিদেশ বিভূঁইয়ে নিবাস করতে পারিনি, মাস শেষে লক্ষ টাকাও ঘরে তুলতে পারিনি আর পারিনি মানিয়ে নিতে কী নিয়মে কীবা অনিয়মে। নিজের সামনে মাথা উঁচু করে থাকা যতোই সন্তোষ এনে দিক, মাস গেলে কিন্তু ওই অর্থটার ওপর নজরখানাই বেশি ত্বরান্বিত হয়। তাই, বাড়ি ফেরা পথিক মন দু’হাতের মুষ্ঠিতে সময়কে ধরে রাখবার প্রাণান্ত চেষ্টায় মগ্ন।

চায়ের কাপে অপেক্ষা

চায়ের কাপে অপেক্ষা

পাশে অলস পড়ে থাকে সেল ফোন ;
ঘন্টার পর ঘন্টা !
হঠাত টুং করে আওয়াজ হতেই আমি চমকে উঠি ;
হুম, নোটিফিকেশন এসেছে ;
কিন্তু সেগুলো আমার পেইজ থেকে।
গত দশ বছরের ডিজিটাল দুনিয়াতে আর কিছু কামাই না করি ;
কয়েক খানা পেইজের সুপার এডমিন পোস্টটা ঠিকঠাক
দখল করে রেখেছি।
জানি, দখল করে থাকার মধ্যেও যোগ্যতা আছে,
কিন্তু সেই যোগ্যতা কেবল আমার প্রফেশনে ;
বাস্তবিক অর্থে কাওকে দখল করবার কোন যোগ্যতাই
আমার কোন কালেও ছিল না।

মাঝে মধ্যে এমন উদ্ভট ইচ্ছেরা এই অসময়ে যখন উঁকি ঝুঁকি
মারার চেষ্টা করে,
তাকে আমি কঠিন ভাষায় পরাস্ত্র করি।
ভীষন রকম সন্দেহ বাতিক হয়েছে আমার ;
কাউকেই আর বিশ্বাস করতে পারছি না আগের মতোন।
কিছুটা সময় কথার খেলায় মেতে ওঠার পরেই মনে হতে থাকে –
এই গল্পটা বুঝি সে আরো একটি মেয়ের সাথেও করছে,
সেই একই আবেগ, একই কণ্ঠ ;
ব্যাস, সীমানা রেখায় শেষাংক টেনে দিলাম।

আমার আসলে মুঠোফোনের কাছ থেকে চাইবার মতোন কিছু নেই ;
সেখানে কোন মিসকল হয়ে থাকলো কীনা,
সেখানে মন ভালো করে দেবার মতোন কোন বার্তা এলো কীনা ;
কিচ্ছু না।
আমার শুধু একটাই কষ্ট ;
মন খারাপের সন্ধ্যেগুলো ধূলোয় মিলিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত,
মিরপুর স্টেডিয়ামের গলি ঘেষে আর ফুচকা খাওয়া হয় না।
অফিস ফেরার পথে লাভ রোডের তে’মাথায় বসে
মাল্টা দেওয়া গরম কাপে ঠোঁট ভেজাতে পারিনা।

চা’য়ের অবসরে ঝড় ওঠাবার জন্যেও বুঝি একজন বিশ্বস্ত বন্ধু লাগে !!

______________________________
“চায়ের কাপে অপেক্ষা” অপেক্ষা করছে পাঠকের জন্য।
স্টল নং -২৮৯, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯।