আমিনুল ইসলাম রুদ্র এর সকল পোস্ট

আমিনুল ইসলাম রুদ্র সম্পর্কে

মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র, জন্ম : ১৪ জানুয়ারি, ১৯৮১। ডাক নাম রুদ্র আমিন (Rudra Amin)। একজন বাংলাদেশ কবি, লেখক ও সাংবাদিক। নক্ষত্র আয়োজিত সৃজনশীল প্রতিযোগিতা-২০১৬ কবিতা বিভাগে তিনি পুরস্কার গ্রহণ করেন। জন্ম ও শিক্ষাজীবন মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র ১৯৮১ সালের ১৪ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার ফুলহারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোঃ আব্দুল হাই ও মাতা আমেনা বেগম। পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন কেটেছে খাগড়াছড়ি এবং বগুড়া সদর উপজেলায়। বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি থেকে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স সম্পন্ন করেন। কর্মজীবন মূল পেশা থেকে দূরে সরে গিয়ে তিনি লেখালেখি এবং সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি প্রায় সব ধরনের গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায়। বর্তমানে তিনি জাতীয় দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন এর ষ্টাফ রিপোর্টার ও অনলাইন নিউজপোর্টাল নববার্তা.কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি উইকিপিডিয়াকে ভালোবেসে উইকিপিডিয়ায় অবদানকারী হিসেবে উইকিপিডিয়া অধ্যয়নরত আছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : যোগসূত্রের যন্ত্রণা (২০১৫); আমি ও আমার কবিতা (২০১৬); বিমূর্ত ভালোবাসা (২০১৮); অধরা- সিরিজ কবিতা (২০২০) প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ : আবিরের লালজামা (২০১৭)। আমার সকল লেখা পড়তে ভিজিট করুন : রুদ্র আমিন

বিদায় দে মা ঘুরে আসি


বিদায় দে মা ঘুরে আসি
————————-
মা, তুমি বলে দাও; আমাকে আর তোমার প্রয়োজন নেই। আমি রক্ত দিয়ে আসি, ওদের রক্তের তেষ্টা পেয়েছে খুব। শুনলাম ওরা নাকি রক্ত চোষা জোঁকের চুষে খাওয়া রক্ত খেতে জোঁক চিবিয়ে খায়। মা, আমাকে বিদায় দাও; ওরা তোমার সামনে যখন আমাকে চিবিয়ে খাবে সেটা তোমার সহ্য হবে না, সহতে পারবো না তখন তোমার আকুতি, তোমার চোখের জল, তোমার নাড়ী ছেড়া চিৎকার।

মা, আমাকে বিদায় দাও। এভাবে বেঁচে থেকে কোনো লাভ নেই, এর চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো। আমি না হয় তোমার জন্য আরেকটি সুন্দর সকাল কিনে দিবো, তুমি ভোরের পাখিদের কিচির মিচির ডাকে প্রথম সকাল দেখবে, তোমায় দেখে হাসবে সূর্য, সবুজ বৃক্ষ, স্পর্শের অপেক্ষায় থাকবে দুর্বা ঘাসে শুয়ে থাকা শিশির।

মা, এদেশ আজ আর তোমার নেই, ঠিক আমিও আজ তোমার নই। পশু পাখির মতোই আজ তোমার সন্তানের প্রাণ, ক্ষমতার লোভে ইচ্ছে মতো বলী দ্যায় ওরা, ওদের রক্তের খুব প্রয়োজন। মা, তুমি কেঁদো না; স্বাধীনতা মরে গেছে, মরে গেছে মৃত্যু। মানুষের বিপদে আজ মানুষ পাশে দাঁড়ায় না, যতটুকু দাঁড়ায় সবটাই তার স্বার্থ। আজ মানুষের চেয়ে রাস্তার কুকুর অনেক ভালো, মানুষের বিপদে সে প্রতিবাদী হয়ে উঠে, চিৎকার করে, মানুষ তোলে ফটো।

মা, বলতে পারো; ওরা কি অমরত্ব নিয়ে এসেছে পৃথিবীতে? সত্যিই মা, মৃত্যু মরে গেছে। ভালো থেকো মা, আমি যাচ্ছি তোমার জন্য রোদেল সকাল কিনে আনতে।

ছোট গল্প – পাপীর সাজা


ছোট গল্প – পাপীর সাজা
===============
তুমিই ছিলে আমার প্রথম সিড়ি, যে সিড়ি বেয়ে আমি রঙীন স্বপ্ন দেখেছিলাম পৃথিবীর। আজও তুমিই হলে আমার পরবর্তী সিড়ি, যে সিড়ি বেয়ে আজ আমি প্রতিষ্ঠিত। আজ কী নেই আমার, অর্থ, যশ, খ্যাতি, সম্পত্তি, গাড়ি বাড়ি; সবই আছে, ক্যানো না আজ আমি প্রতিষ্ঠিত।

কিন্তু ভুলেই গিয়েছিলাম জোয়ার ভাটার কথা, অহংকারের কথা, নিজেকে হারিয়ে ফেলার কথা। অনেকটা বিরতির পর আজ ভাটার সামান্য ঢেউয়ের শব্দ আমাকে বিচলিত করে তুলেছে, বুঝতে পারছিলাম আমার নিন্মমুখী সিড়ির দৃশ্যপট। বাড়িতে ফেরার পর যখন তুমি আমাকে বুঝতে জিজ্ঞেস করতে বিবর্ণ মুখের বর্ণনা, আমি মুখ ফিরিয়ে তোমাকে আড়াল করে দিতাম। একাএকাই যুদ্ধ করে যাচ্ছিলাম।

হঠাৎ করেই আজ আবার তুমি এলে, শর্ত জুড়ে দিলে, শর্ত সাপেক্ষে উর্ধ্বমুখী সিড়ির দৃশ্যপট চোখে ভাসতেছিলো। শর্ত না জেনেই শর্ত মেনে নিলাম, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার কথা ভেবে। পুনরায় আলোকিত হতে শুরু করলো আমার সবটা স্বপ্ন।

তুমি ডাকলে শর্ত পূরণের দাবিতে, শর্ত শুনে শর্ত আমাকে ভেঙে চুরে চুরমার করে দিলো, বললে ছোট একটি শর্ত যা কিনা কাউকে খুন করতে হবে। শর্ত ভাঙতে পারছি না, আঘাত করছো পিছনের স্মৃতিকে, খুন সেও করতে পারছি না, বারংবার খুন করতে গিয়ে ফিরে আসছি, ভাবনায় প্রতিটি সিড়ির ধাপ মনে করিয়ে দিচ্ছিলো অতীতের ভুল সিদ্ধান্তের কথা। ভেবে ভেবে আজ নিজেকে জ্যান্ত মৃত মনে হচ্ছে।

হঠাৎ খুন না করেও খুনের দায়ে খুনের আসামী হলাম, তোমাকে বিশ্বাস করাতেই পারছিলাম না আমি খুন করিনি, অবশেষে বিশ্বাস করলে আমি খুনী নই। একদিন মুক্তি পেলাম, পুলিশকে জিজ্ঞেস করতেই বলে দিলেন, খুন আপনি করেননি, খুন করেছে আপনার স্ত্রী, একটি অডিও বার্তার স্বীকারোক্তি পেয়েই তাকে গ্রেফতার।

জেল থেকে বেড়িয়ে জানতে চাইলাম, তোমার শর্ত পূর্ণ হয়েছে; কিন্তু ক্যানো তুমি এমন করলে? জানতে পারলাম, আমার স্ত্রীও জিম্মি ছিলো তার কাছে, যার কাছে তাকে তুলে দিয়ে সিড়ির ধাপ খুঁজে পেয়েছিলাম, আজ তুমি বলে দিলে পাপ কখনোই পাপীকে ছাড়ে না। আজ তুমি আছো, কিন্তু তোমার পাশে কেউ নেই, শুধু কান্নাই তোমার সঙ্গী, তোমার স্ত্রীও আমার মতো অন্যের দ্বারা ব্যবহৃত।

অতঃপর ভালোবাসা…

🔲
কথা বলছি না বলে ভেবোনা বধির হয়ে গেছি, কিংবা প্রশ্নের
প্রত্যুত্তরে কিছু বলছি না বলে ভেবোনা অনুভূতিহীন হয়ে গেছি
যে পথে চলি, যে জমিনে লাঙ্গল দিয়ে মাটিকে ক্ষত-বিক্ষত করি
যে বৃক্ষের ছায়া নিয়ে ক্লান্ত পথিক শান্ত হয়, পুনরায় তাকেই
আঘাতের পর আঘাত করি, কই; কোনদিন শুনেছো প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর?
কিংবা দেখেছো?

দ্যাখোনি, ভাবোনি, কোনোদিন বুঝোনি, বুঝার চেষ্টাও করোনি
ভালোবাসা কতোটা আঘাত আর যন্ত্রণার নাম, তবে কি করে বুঝবে,
জানবে, বধিরের প্রত্যুত্তর কতোটা বিভীষিকাময়; বলো কি করে বুঝবে
কতোটা ভালোবাসার স্নায়ু একত্রিত হলে এতোটা যন্ত্রণা
বয়ে চলতে পারে ভালোবাসাকে ভালোবেসে…

অতঃপর,
তোমাকে ভালো না বেসে বৃক্ষ কিংবা পথকে ভালোবাসাই উত্তম।

চোখ

Chokh-Rudra Amin
চোখ

ও চোখে চোখ পরতেই ভুলে যাই যন্ত্রণাময় যান্ত্রিক জীবনের ইতিহাস
ভুলে যাই দগ্ধ হওয়া হৃদয়ের ক্রন্দন, ভুলে যাই পৃথিবীর পর পৃথিবীর কথা
ও চোখে চোখ পরতেই থমকে দাঁড়ায় প্রতারক, ভুলে যায় ঘোর রাত্রির অহংকার
ও চোখে চোখ পরতেই মৃতপ্রায় বসন্ত ফিরে পায় যৌবন, মায়া ও একটি ঘর

তবুও ক্যানো ও চোখ পোড়ায় অহর্নিশ একটি সকাল ও একটি রাত
ক্যানো লেপ্টে যায় নির্জন অন্ধকারের বিষাদের ছায়ায় একটি ভোর

অতঃপর ও চোখে চোখ পরতেই চৌচির মৃক্তিকা ফিরে পায় উর্বরতা
দুর্বা গুলো পরশ পায় বিশুদ্ধ শিশির দানার, ফোটে ঘাস ফুল, হাসে চন্দ্র সূর্য ও রাত।

প্রিয়ন্তী

প্রিয়ন্তী,
বেঁচে থাকার প্রত্যয় নিয়ে আগামীর পথ খুঁজো না
বৃক্ষকে দ্যাখো, কতোটা দাহতায় জল টগবগ করে
কতোটা সম্পর্কে মৃত্যুর যন্ত্রণায় ম্লান করে পৃথিবী
যদি বেঁচে থাকতেই চাও তবে মৃত্যুকে বেছে নাও,
সত্যকে মেনে নাও; সত্য সেও মৃত্যুর মতো চিরন্তন

আর জাগতিক ভালোবাসা,
সে উত্তাল সাগর জলের নীরব শব্দই বলে দিবে
কতোটা ঝড়ে তাবত লোনা জল মিষ্টি হয়। ঝড় ও বৃষ্টি,
আলো ও আঁধার, সুখ ও দুখ সবাই সবার সম্পূরক।

পৃথিবী একটি কবরের নাম

পৃথিবী একটি কবরের নাম

যেদিন আমি তোমাদের মত বুলেট গিলতে শিখে যাবো
মনে রেখো সেদিন আমিও বুলেট হয়ে রাঙানো ধরণী
একে একে গিলে খাবো তাবত পৃথিবীর জীব ও জড়
ক্ষুধার্ত হায়েনার মতো আমিও ভুলে যাবো বিচার বুদ্ধি।

এটাও বিশ্বাস করি,
যেখানে সংগত কারণ রেখেই পৃথিবীকে জানাবো বিদায়
সেখানে তুমিও একদিন আমারই মতো করবে হাহাকার,
যেভাবে সত্যকে মিথ্যে বলছো, মিথ্যেকে বলছো সত্য!

কি হাস্যকর পৃথিবী আর পৃথিবীর ক্ষমতা,
ভুল ক’রে হত্যা আর কতোদিন, এটা তো প্রথম নয়
প্রতিবার আঙ্গুল তুলে বলো, অপরাধীর বিচার হবে! কিন্তু
সাগর রুনি গেলো, তনু গেলো, আরও গেলো মিতু;
লিমন হারালো পা, বলতে পারো; কোথায় অপরাধী?

এরপর একরামুল, গাছ না কেটে ছাটাই হচ্ছে ডাল!
আচ্ছা বলতে পারো হত্যাই কি প্রকৃত সমাধান?
জানি কোনো সদুত্তর নেই তোমাদের, টিয়া পাখির মতো
কয়েকটি বুলী ছাড়া তোমাদের আর কি-ই-বা আছে?

মৃত্যুকে ভুলে গেলে মানুষ আর মানুষ থাকে না, তোমরা
আজ আর মানুষে মানুষ নেই, ভিন্ন প্রজাতির হিংস্র কোনো দানব।

শুনেছি কিছু মানবতাবাদীর মমতা হত্যার পরই জেগে ওঠে
ক্ষুধায় যেমন শিশু বাচ্চারা কেঁদে উঠে, পেট ভরলে নিরব হয়ে যায়,
আজকাল বুদ্ধিজীবীর বুদ্ধির প্রসারও তেমনি টকশোর চায়ে
যা কিছু বললেই তা দ্বিগুণ হয়ে যায় পরমাণুর অণুতে অণুতে!

অতঃপর, পৃথিবীর বুকে পৃথিবীই আরেক কবর।

অভ্র’র প্রতিদান-পর্ব-২

অভ্র'র প্রতিদান
রুমমেটদের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা অভ্র’র নিত্য দিনের রুটিন হয়ে গ্যাছে, আজও ঠিক তেমনটিই হলো। নিতু ফেরদৌস বাবু রিপন বেশ আনন্দেই আছে। আনন্দ হইচই করতে করতে নিউমার্কেট এলাকায়। প্রথমে ঘুরেঘুরে দেখছে কে কি কিনবে। টিনসেডের ছাউনী করা মার্কেটটি বেশ বড়সড়। টি-শার্টের দোকানে ঢুকে নিতু আর বাবু দু’জনে দুটি টি-শার্ট কিনে দোকানদারকে টাকা দিতে না দিতেই হঠাৎ করে পড়ন্ত বিকেল যেন চৈত্রের খা খা দুপুর হয়ে গেলো। মূহুর্তেই হইচই। লোকদের ছুটোছুটি, যে যার মতো ছুটে চলেছে। নিতু আর বাবু দৌড়ে বের হলেও ফেরদৌস আর রিপন এখনো বের হতে পারেনি। বাইরে থেকে নিতু আর বাবু দেখে যাচ্ছে মার্কেটের ভেতর থেকে কালো ধোয়ার বের হচ্ছে, যেন পৃথিবী গহীন অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে। চিন্তায় দুজনে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে। আহাজারি আর চিৎকারে নিরব হয়েছে প্রকৃতি। ততক্ষণে ফায়ার সার্ভিস এসে পৌছে কিন্তু তার আগের মার্কেটের অধিকাংশ দোকান পুড়ে ছাই। ফেরদৌস আর রিপনকে চিৎকার করে ডেকে চলেছে নিতু আর বাবু। কিন্তু জবাব আসছে না। ফায়ার সার্ভিসের জনবল ভেতর থেকে বিপদে আটকে পড়া মানুষ গুলোকে বের করতে শুরু করে দিয়েছে। এ্যাম্বুলেন্স এসে পৌছে কয়েক জোড়া।

নিতু আর বাবু দৌড়ে এ্যাম্বুলেন্স কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যদিও একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে। তাকিয়ে দেখছে তার বন্ধুদ্বয় বের হয় কি না। এক সময় প্রতিক্ষার পহর শেষ হয়, ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত ব্যক্তি ফেরদৌস আর রিপনকে একসাথে বের করে নিয়ে হাসপাতালে পাঠাতে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করে জেনে নিলো এই সব রোগী কোন কোন হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। মার্কেটের পাশেই মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল আর সেখানেই প্রেরণ করা হচ্ছে। নিতু আর বাবু সেখানে চলে গেলো, খুঁজে পেলো দুই বন্ধুকে। খুব বেশি একটা ক্ষতি হয়নি, ধোয়ায় দূর্বল হয়ে গেছে আর চাল থেকে ছুটে পড়া কাঠের আঘাতে পিঠে ব্যথা পেয়েছে দুজন। ডাক্তারের সাথে কথা বলে জেনে নিলো কোনদিন তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিবেন। ডাক্তার একদিনের কথা জানালেন।

এদিকে রুমমেটদের আসতে দেরি দেখে অস্থির অভ্র। হোস্টেল ইনচার্জ সাচ্চুর নিকট দৌড়ে গেলো অভ্র। হাপাতে হাপাতে উপস্থিত অভ্র, হাপানো দেখে সাচ্চু জিজ্ঞেস করলো-তোমার কি হয়েছে, তুমি এতো হাপাচ্ছো ক্যানো, আর এই সন্ধ্যার সময় তুমি এখানে। তুমি তো সচারচর এভাবে বের হওনা।
ভাইজান, ভাই—জান, নিতু, বাবু, রিপন, ফেরদৌস কেউ রুমে আসেনি।
ও এই ব্যাপার, এতো চিন্তা করছো ক্যানো এটা তো ওদের নিত্যদিনের রুটিন। ওরা যত দূরে থাকে ততই তো তোমার ভালো।
ভাইজান ওরা তো আজ মার্কেটে গেছে, আর আমি রেডিওতে সংবাদ শুনতে পেলাম নিউমার্কেটে আগুন ধরেছে, সেখানে অনেকেই আহত হয়েছে এবং কয়েকজন নিহতও হয়েছেন। আমার নিকট তো মোবাইল নেই যে ওদের খবর নিবো। আপনি একটু দেখবেন কি..
কি বলো,
হ্যাঁ ভাইজান, আমি শুনেই তো চিন্তায় আছি। একটু দেখুন তো
আচ্ছা অভ্র তুমি একটা কথার জবাব দিবে-
পরে জিজ্ঞেস করবেন আগে ওদের খবর নিন।
সেটা নিবো, আর ওরা সবাই দুষ্টু এতো চিন্তা করো না। এখনি মোবাইল করে জেনে নিচ্ছি।
বাবুর মোবাইল বেজে উঠলো, কি বলবে আর কি জানাবে এই ভেবে প্রথম কলটি কেটে গেলো, এবার সাচ্চু একটু চিন্তায় পড়ে গেলো, ভাবতে থাকলো তাহলে কি ওদের কোনো সমস্যা হলো, ভাবতে ভাবতে আবার কল দিলো– হ্যাঁ, বাবু? তোমরা কোথায়?
কেঁদে বলে ফেললো আমরা হাসপাতালে।
কি হয়েছে, হাসপাতালে ক্যামন করে।
ভাই, মার্কেটে আগুন লেগেছিলো, আর আমরা সেখানে ছিলাম, আমি এবং নিতু বের হলেও ফেরদৌস আর রিপন বের হতে পারেনি। ওরা আঘাত পেয়েছে আর বেশি ধোয়া থাকার কারনে শ্বাসকষ্টের সমস্যা। ডাক্তার বলেছেন কালকে বাসায় নিতে পারবো, কিন্তু আমাদের হাতে তেমন টাকা নেই। হাসপাতালের এবং ওষধের খরচ দিতে পারছি না। যা ছিলো কিভাবে যে টাকাগুলো হারিয়ে ফেলেছি বলতে পারছি না। হাসপাতাল থেকে বহন করে যাচ্ছে কিন্তু আগামীকাল পরিশোধ করে ওদের বের করতে হবে।
কি বলো, আর কত টাকা লাগতে পারেন?
হাজার দশেক লাগতে পারে ভাই, কিছুটু হাসপাতাল বহন করেছে।
এতো টাকা এখন কোথায় পাবো, ঈদের আগ মূহুর্তে, সবাই তো কেনাকাটা করে ফেলেছে, আমার হাতে তো এতো টাকা নেই, বড়জোড় হাজার দুয়েক হতে পারে।
অভ্র ইশারা দিয়ে বললো আমার নিকট আছে,
অভ্র’র ইশারা বুঝে, সাচ্চু বাবুকে বললো-তোমাকে পরে কল দিতেছি, দেখি কি করা যায়।
আচ্ছা অভ্র তোমার সমস্যা কি? তোমার কাছে আছে সেটা তো আমিও জানি, কিন্তু তোমার টাকা হিসেবী টাকা, কলেজ খরচ দিয়েছো পুরো বছরের, আর যা আছে সেটা তোমার চলাফেরা আর খাওয়া-দাওয়ার জন্য।
ভাইজান-পরের টা পরে দ্যাখা যাবে কিন্তু আগে বন্ধুর বিপদ থেকে তো রক্ষা করতে হবে।
তোমাকে কি তারা কেউ বন্ধু হিসেবে মানে?
না মানলেও কোনো সমস্যা নেই ভাইজান। তিনি সবই দ্যাখেন সবই বুঝেন। আমি যে আপনাকে টাকা দিবো সেটা কিন্তু ওদের কাউকে বলবেন না। আপনি বলবেন ছাত্র তহবিল থেকে সংগ্রহ করেছি।
কি বলো এসব, আমি মিথ্যে বলবো না
প্লিজ ভাইজান, আপনি মোবাইল করে বলেদিন, সকালে আপনি টাকা ব্যাবস্থা করে ওদের আনতে যাবেন।

—-চলবে

অভ্র-র প্রতিদান


আগামীকাল ঈদের ছুটি, খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রওনা হবো গ্রামে। কতোদিন মায়ের সাথে দ্যাখা হয় না। মা জানি কতোটা অস্থির হয়ে পথ গুনছে প্রতিদিন। মোবাইলে কথা বললেই মা কাদুকাদু স্বরে জিজ্ঞেস করে খোকা তোর ছুটি হবে কোনদিন? কতোদিন তোর দুষ্টুমিতে বিরক্ত হই না। তোর দুষ্টুমি খুব মিস করি।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে রাস্তা ভুল করে কখন যে মাঝ মাঠে চলে এসেছে বুঝতেই পারেনি নিতু। কলেজ মাঠটি ক্লাসরুমের সামনে হয়ে ভালোই হয়েছে, তা না হলে যে কি হতো কে জানে। চৈত্রের খবর নেই কিন্তু একি রোদ্দুর, মুখ মন্ডল জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে এমনটাই বলতে ছিলো নিতু। বা হাত উঁচু করে যেন প্রাচীর তৈরী করেছে, রোদ্দুর দহন একটু হলেও সহ্য হচ্ছে নিতুর। মাঠ পেরিয়ে সোজা ছাত্র হোস্টেলের সম্মুখে।

রুমে ঢুকতেই অবাক নিতু, ওর আগেই চলে এসেছে বাকি রুমমেটরা, সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে, নিজেদের পরিকল্পনা শেয়ার করবে। নিতুর বন্ধুদের মাঝে দূরের বন্ধু ফেরদৌস আর রিপন। নিতু আর বাবুর টিকেট আগেই কেটে রেখেছে। কিন্তু ফেরদৌস আর রিপন টিকেট পায়নি, ভেঙে ভেঙে যাবে, যখন যে গাড়ি পায়। ফেরদৌস, রিপন চল এখানে এভাবে কথা বলে লাভ নেই, দেখছিস না একজন টেবিল ছেড়ে উঠতেই চায় না কথাগুল নিতু বলেই উঠে দাঁড়ালো। ওর কি বাড়ি ঘর নেই, বাবা-মা নেই? এভাবে বলিস ক্যানো রে, দাঁড়া আমি কথা বলি, এমনিতেই ও সব কথার জবাব দেয়না তবুও জিজ্ঞেস করি বলেই ফেরদৌস অভ্র’র কাছে গেলো।

অভ্র তুই বাড়ি যাবি না, আমরা সবাই যাবো, আনন্দ করছি আর তুই টেবিল ছেড়ে উঠছিসই না। তোর সমস্যা কি? প্রশ্নের তো কোনো জবাবই দিতে চাস না। কথা শেষ করতে না করতেই নিতু বলে উঠলো, আরে ও তো একটা প্রতিবন্ধী। কোত্থেকে যে আসে এসব, আর ছাত্রাবাসে অন্যান্য রুম থাকতে আমাদের রুমেই এসে পড়লো এইডা……… অত্যাচার তো কম করিনি তবুও কোনো প্রতিবাদ নেই, ছাড় তো, ওর সাথে কথা বলে লাভ নেই। তার চেয়ে চল আমরা সবাই আজ ঘুরতে বের হই, কিছু কেনা-কাটাও পারলে করে ফেললাম। খুব ভোরেই রওনা হবো………নিতু, ফেরদৌস, বাবু, রিপন ঘুরতে বের হয়ে গেলো, যাওয়ার আগে অভ্রকে বলে গেলো..ঘর পরিস্কার করে রাখবি, এসে যেনো কোনো ময়লা না দেখি।

–চলবে

অধরার সুখ

কষ্ট যদি পেয়েই যাস
পড়ে শেষ চিঠি
উনুন মাঝে ফেলে দিস
আমার সকল স্মৃতি,

ভালোবাসলেই যদি দুঃখের পাহাড়
শ্বাস চেপে ধরে
আরও দুঃখ তুই ফেরি করে নিস
ভালোবেসে ঘরে,

চোখের জল বাঁধ ভেঙে তোর
এসেই যদি পড়ে
ঝরতে দিস শ্রাবণের ঢল
শেষ ইচ্ছের তরে।

আমি ফিরবো তোর সুপ্ত মননঘরে
ভালোবাসিস দুঃখ, সুখের আঘাত আপন করে
সুখের ঘরে থাকে সত্বীন, দুঃখের ঘরে দুঃখ
দুঃখ ছাড়া এই পৃথিবীর নেই কোনো সুখ।

শর্ট ফিল্ম “বেলী “

সবুজে ঢাকা সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা গ্রাম, মরিচাধরা পূর্ণ ও অর্ধপূণ নতুনের জলছাপ ছেয়ে আছে টিনের চাল। টিনের ঘরের পাশেই বেশ বড় বৃক্ষ। পুরাতন বৃক্ষের এতোটাই বয়স যে বৃক্ষের গায়ে শেওলা পড়া দেখে সেই অনুভব করা যাচ্ছে। বৃষ্টির কারণে শেওলা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছ, যেন তপ্ত মরুর বুকে একাকাশ জল।

প্রসস্থ রাস্তার পাশেই লোহার স্কয়ারবার ব্ক্স দিয়ে তৈরী প্রায় পাঁচ ফুট গেইট। রাস্তা থেকে এটাই বাড়িতে প্রবেশ করার মূল ফটক। তারপর উঠোন, আর উঠোনের একপাশে সবুজ বৃক্ষ, দুর্বা ঘাস। দেখে মনে হবে এ যেন সবুজে ঘেরা নিউজিল্যান্ড আর তার একপাশেই ঘাস ফুল, গাঁধা, গোলাপ আর সূর্যমুখী ফুলের বাগান।

মরিচাধরা ঘরটির অপর প্রান্তে মানে দক্ষিনা বাতাসের প্রবেশ পথ হিসেবে এটা জানালা আর জানালা ঘেষে বেলী গাছ। প্রায় সাত থেকে আট ফুট উচ্চতায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্রের খুব প্রিয় ফুল বেলী। বেলীর গাছের ফাঁকে সূর্যের হাসি এসে প্রত্যহ রুদ্রের স্বপ্নময় নিদ্রার পরিসমাপ্তি ঘটায়। এরপর শুরু হয় জানালার গ্রীল ধরে বেলীর ভালোবাসার স্পর্শ গ্রহণ। বক্ষটা প্রসারিত হতে হতে মনে হয় ত্রিশ ইঞ্চি হয়েছে প্রায় চল্লিশ। এমন করে শ্বাস গ্রহণ করে নিশ্বাস ফেলা।

প্রতিদিনের মতো আজও স্বপ্নের সাথে খেলা করেছে রুদ্র। ঘুম ভাঙার পর থেকেই সে ভীষণ অস্থির, প্রেসারের রোগীদের মতোই তার ভাব খানা শারীরিক অবস্থা। শরতের সকাল তবুও যেন মাথার উপর সূর্যের ছাতায় গ্রীষ্মের ঘাম ঝরছে তার শরীরে। দেখে বুঝাই যাচ্ছে ভালো কোনো স্বপ্ন দেখেনি।

নাস্তার টেবিলে রুদ্রের দেরি দেখে রুদ্রের মা ঘরে এসে হাজির। দেখে রুদ্রের পুরো শরীর বেয়ে জল পড়ছে মনে হয় কেউ একজন বালতি বোঝাই জল ঢেলেছে তার গায়ে। মা যে ঘরে প্রবেশ করেছে সেটা সে বলতেই পারছে না। বিচলিত মা তার সন্তানের স্পর্শ নিলেন।

কিরে বাবা, তোর কি হয়েছে? তুই এমন করছিস কেন? আর গোসল করার মতো শরীরের ঘাম বের হচ্ছে কেন তোর? খুব বেশি শরীর খারাপ মনে হচ্ছে তোর। চল, ডাক্তারের কাছে যাই। রুদ্র মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, মা আমি আজ খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছি।

কি এমন স্বপ্ন দেখেছিস বাবা, স্বপ্ন কি আর সত্যি হয়? বোকা ছেলে আমার। তা কি এমন স্বপ্ন দেখেছিস বাবা?

মা, স্বপ্নটা বলতেও খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। আমাকে এক গ্লাস পানি দিবে ? ক্ষমা করো তোমাকে এমন অনুরোধ করার জন্য। পানি ভর্তি গ্লাস হাতে নিতেই যেন শূন্য হয়ে গেলো পুরো গ্লাস। বাবা এবার বল, তারপর চল নাস্তা করবি।

মা, স্বপ্নে দেখি, আমি বেলী ফুল গাছ থেকে একটা ফুল ছিড়ে নিচ্ছি আর তখন বেলী গাছ আমাকে বলছে, “রুদ্র আমি তোমাকে এতো ভালোবাসি আর তুমি কি না ? তুমিই বলো তোমাকে কি না দেই, সকালে সতেজ ভালোবাসার স্পর্শ, যে ঘ্রাণে তোমার হৃদয় ভরে যায়, আমার ছায়া যা তোমার প্রাত নিন্দ্রা সুখময় হয়। এ সবই তো প্রত্যেক মা তার সন্তানকে মাটির ঘ্রাণের মতো মাতৃত্বের ঘ্রাণে মায়ের ভালোবাসা দিয়ে থাকে। আমিও তো ঠিক তেমনি তোমাকে দিই।

প্রতিটি বৃক্ষই তো মায়ের মতো, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে যায় তার সন্তানকে। শত আঘাতেও সন্তানের খারাপ চায় না মা। তবুও বলো প্রত্যেক সন্তান কেমন করে তার মায়ের বুক চিরে মাতৃত্ব ছিড়ে ফেলে সামান্য স্বার্থে। সেই ফুলটি হয়তো তার প্রেয়সীকেই সে দিবে তবে কেন প্রেয়সীকে মায়ের মাতৃত্বে স্থান দিতে পারে না। প্রত্যেকটি ফুল প্রতিটি মায়ের মাতৃত্বের ঘ্রাণ।

স্বপ্নের কথা বলেই যেন রুদ্র তার মায়ের কোলে ঢলে পড়লো, দু’ঠোঁটের বাঁধ ভেঙে কয়েকটি শব্দ উচ্চারিত হচ্ছে “মা আমি কোনো দিন তোমায় ছেড়ে যাবো না, এমন প্রেয়সীর কোনো প্রয়োজন নেই, যে প্রেয়সীর জন্য মাতৃত্বের বন্ধন ছিড়ে ফেলতে হয়।” মা, তুমি আমাকে কোনোদিন ছেড়ে যেও না। যতিদিন বেঁচে থাকবো মা, কোনোদিন তোমার অযত্ন অবেহলা দিবো না। ফুলের মতোই মতোয় নিঃস্বার্থ ভালোবেসে যাবো।

আমার স্বপ্ন গুলো

স্বপ্ন দেখি
মায়ার পৃথিবী ছেড়ে দিচ্ছি পাড়ি,
সাদা কাপড়ে
তবুও কবরের হয় না পূর্ণ আহাজারি।

স্বপ্ন দেখি
মৃত কোনো এক লাশের পাশে বসে রয়েছি
খাটিয়া বহন করতে হবে,
পরিশেষে খাটিয়া রাখে আমায় বেঁধে অদৃশ্য বন্ধনে
অশ্রু গড়িয়ে পরে, পাইনা খুঁজে ভুলের কিনারা, জানি ভুল করেছি
মায়ার এ পৃথিবীতে।

স্বপ্ন দেখি
হায়েনার দল দিচ্ছে তাড়া, কামঁড়ে ধরেছে আমায়
চোখের পথ আশে পাশে ধুধুমরুময়
যে কষ্ট তা কখনোই বোঝানোর নয়,
অতঃপর, দৃশ্যত পতিত বিছানার তলায়।

স্বপ্ন দেখি
মহাপ্লাবন চারিপাশ ধবংস করে আসছে
অন্ধাকার আর জলোচ্ছাস,
অলৌকিক কথার বিশ্বাসে যেই ধরেছি ছোট্ট গাছ এঁটে
ভাসছি কবরস্থানে, উড়ছি মহাপ্লাবনে কথার বিশ্বাসে,
ভোরের আলোতে খুঁজে ফিরি সেই ছোট্ট গাছ
অসহায়, আজও চিনতে পারিনি তাঁকে আমি।

ফুলহারা, ঘিওর, মানিকগঞ্জ-০৫০৫২০১৪।

রূপ

মিথ্যের কোনো ভয় নেই,
যত ভয় যত সংশয় আজকাল সত্যের
নিন্ম মধ্যবিত্তের…
মাস্তি করো, হুইস্কি বেয়ার সীসা টানো
উম্মাদনায় নিম্নাঙ্গ খুলে রাখো, কোনো ভয় নেই
উঁচুতলায় তোমরা থাকো, যা দেখার তোমরা দেখো
ফকির মিসকিন অনাথ যত…

মৃত্যুর কোনো ভয় নেই
সেটাও বলো
প্রশ্ন জাগে পৃথিবীর বুকে তোমরা কি জন্মেছিলে
মাতৃগর্ভ, পিতৃছায়া মনে হয় না বিশ্বাস করো
ক্ষণিক সুখে জ্ঞান হারিয়ে গর্ভ ভূ-খণ্ডে সন্তান ফেলো
পক্ষান্তরে, রূপ বদলে তোমার ঘরে তুমিই থাকো…

অতঃপর,
যখন নিভৃতে অশ্রুজলের লোনা স্বাদ গ্রহণ করো,
দৃষ্টির জলে ঢেউ খেলতে দেখো সত্যের বিজয়ী উল্লাস
বধির স্বরে তখন বলো, সত্য চিরদিন বেঁচে থাকে; মিথ্যের সম্মুখ।

ফরিদমার্কেট, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০, বিকেল:৩:১৫, ১৯০৫২০১৬

শান্তি নিবে, শান্তি

শান্তি নিবে, শান্তি
নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে
পল্লীর মেঠো পথে
ফসলের খেত জুড়ে
আজ শান্তির খবর দিবো;
শান্তি নিবে, শান্তি

এসো দেখো উপভোগ করো
স্বাধীনতা আবার পেয়েছি ফিরে,
ঘৃণায় কুঁকড়ে যাওয়া সোনার বাংলায়
রাজাকার দিয়েছি পুঁতে,
দীর্ঘ শ্বাস গ্রহণ করে দেখো
শুকিয়ে যাওয়া বেলী আবার
ঘ্রাণেঘ্রাণে মোহময় করেছে বাংলা সুখে
শান্তি নিবে, শান্তি

কেউ কাঁদে, কেউ হাসে
কারো কারো অশ্রুজল অতীত তুলেছে ডেকে
রাজাকার আলবদর হায়েনা নরপিচাশ
সোনার বাংলায় দিয়েছে পুঁতে,
গগণ ছোঁয়া মুষ্ঠি করা হাত যেন আবার বলে
স্বাধীনতা আবার পেয়েছি ফিরে
দম বন্ধ করে কে কে আছো বন্দি ঘরে, এসো
শান্তি নিবে, শান্তি

ঘৃণায় কুঁকড়ে যাওয়া সোনার বাংলায়
রাজাকার দিয়েছি পুঁতে।

উত্তরা, ঢাকা-১২৩০, রাত: ১২:৪০, ১১০৫২০১৬।

মা ও আমি

মা ও আমি

“মা”
দিবা হলো গত
আঁধার ঘিরে এলো
সোনামণি কোথায় তুই
হৃদয়ের জ্বালা শুরু হলো
আয় আয় সোনা তুই ঘরে ফিরে আয়
নিরব ছায়া নয়নে এলো প্রায়
তুই যে আমার আঁধার রাতের আলো
সাত রাজার ধন
তুই ছাড়া আমার কানন ধুধুমরুময়।

“আমি”
লুকিয়ে লুকিয়ে মা তোকে দূরাকাশে দেখি
কোথা হতে এসে যায় দু’নয়নে এতো নোনাবারি
মা, এ মন হারিয়ে যায় বাউরা সংশ্রবের মতো
মহাপ্রলয়ের মতো চুর্ণবিচুর্ণ ক’রে তোর আহাজারি
ছোট্ট এ প্রাণ মানেনা বান ভেঙে চুরমার বক্ষছাতি।

আলোকে দেখি আঁধার আসা-যাওয়ার এই সময়
সামান্য কিছুক্ষণে মা যদি তোর দ্যাখা না পাই
তাকিয়ে থাকি ঐ দূরাকাশের পানে খুঁজি তোমায়
মা, এ পৃথিবীর মায়া ছেড়ে দিতে পারি, জেনে রাখিস
যেমনটি তুই ঠিক তেমনটিও আমি, রক্তের কারসাজি।

মেয়ে

মেয়ে তুমি সাবধান হয়ে যাও, যে পুরুষ তোমায় রাজপথে বেহায়াপনা করতে সমর্থন করছে, তুমি ভাবছো সেই একমাত্র উত্তম পুরুষ; তবেই তুমি ঠকেছো। খুঁজে দ্যাখো অন্ধগলির কামঝরানোর কামড়া কিংবা নামিদামী তুলতুলে বিছনার ঘর, দেখবো; গতকাল সে তোমাকে রাজপথে বেহায়াপনা করতে সমর্থন করেছে, তার নখের আচড়ে ক্ষত বিক্ষত তোমার মতো আরেকজন। যে বুক ভরা যন্ত্রণা নিয়ে প্রতিদিন নিয়ন আলোয় নিজেকে হারিয়ে ফ্যালে, হয়তো একদিন তুমিও নিয়ন আলো খুব ভালোবাসবে! সময় হারিয়ে একদিন তুমিও বুঝবে, তারচেয়ে ভালো ফিরে এসো, দেখবে; পৃথিবী কতো সুন্দর।
________________________
উত্তরা, ঢাকা-১২৩০, ১৮০৪২০১৮, সকাল: ১১:৩৫।