আমিনুল ইসলাম রুদ্র এর সকল পোস্ট

আমিনুল ইসলাম রুদ্র সম্পর্কে

মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র, জন্ম : ১৪ জানুয়ারি, ১৯৮১। ডাক নাম রুদ্র আমিন (Rudra Amin)। একজন বাংলাদেশ কবি, লেখক ও সাংবাদিক। নক্ষত্র আয়োজিত সৃজনশীল প্রতিযোগিতা-২০১৬ কবিতা বিভাগে তিনি পুরস্কার গ্রহণ করেন। জন্ম ও শিক্ষাজীবন মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র ১৯৮১ সালের ১৪ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার ফুলহারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোঃ আব্দুল হাই ও মাতা আমেনা বেগম। পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন কেটেছে খাগড়াছড়ি এবং বগুড়া সদর উপজেলায়। বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি থেকে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স সম্পন্ন করেন। কর্মজীবন মূল পেশা থেকে দূরে সরে গিয়ে তিনি লেখালেখি এবং সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি প্রায় সব ধরনের গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায়। বর্তমানে তিনি জাতীয় দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন এর ষ্টাফ রিপোর্টার ও অনলাইন নিউজপোর্টাল নববার্তা.কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি উইকিপিডিয়াকে ভালোবেসে উইকিপিডিয়ায় অবদানকারী হিসেবে উইকিপিডিয়া অধ্যয়নরত আছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : যোগসূত্রের যন্ত্রণা (২০১৫); আমি ও আমার কবিতা (২০১৬); বিমূর্ত ভালোবাসা (২০১৮); অধরা- সিরিজ কবিতা (২০২০) প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ : আবিরের লালজামা (২০১৭)। আমার সকল লেখা পড়তে ভিজিট করুন : রুদ্র আমিন

মৃত্যুানন্দ

মৃত্যুানন্দ

এদিক দ্যাখে ওদিক দ্যাখে
দ্যাখে আলো আঁধার,
ভয় যে লাগে মনের কাঁধে
ধরলো বুঝি এবার।

এই বুঝি দেয় বড়শি টান
নাটাই ছাড়া সুতোয়,
কেমন করে চলবে এ প্রাণ
ঢাকনা ছাড়া সময়।

এই যে মারে এক আবার
ঐ যে মারে আরেক,
একই সময় অসম মারে
ক খ গ ঘ অমুক।

পায়ের ওপর পা দিয়ে ফের
আচ্ছা রকম হাঁটি,
সব ভুলে যাই বাছবিচার আর
বিবেক-বুদ্ধি-সতী।

আজ যখন কালকে দেখি
প্রশ্ন জাগে কত,
সাচ্চা জবাব দেয়না কেউ
জানতে চাই যত।

দলে দলে দল ভারি হয়
কাড়াকাড়ির ভাগায়,
দেখেও যেন কেউ দেখেনা
শূন্য বাড়ির সভায়।

ধর্ম ভুলে কর্ম করি
লোভ-লালসায় আবার
সত্য ভুলে মিথ্যের ঘরে
বসত তোমার আমার

এমন করে আর কতোদিন
থাকবে বেঁচে প্রাণ
সময় এলে মরণ পাখির
খুলবে যে জবান

এসো সব ধর্ম বুঝে কর্ম করি
আসুক মরণের ফরমান
দেখবে হাসি মুখে মৃত্যালিঙ্গন
কতোটা পূণ্য মান।

ডাক

ডাক

এই ডাক সেই ডাক নয়, যেখানে উম্মুক্ত আকাশকে সাক্ষী রেখে পদপৃষ্ঠ করে দুর্বাঘাস হবে কবিতা পাঠ। এই ডাক সেই ডাক নয়, যেখানে আলোচনার নামে হবে সমালোচনা; এই ডাক সেই ডাক, যেখান দূষিত রক্তের হবে পোস্টমর্টেম।

ভয় পাচ্ছো? কিসের এতো ভয়, তুমি কি বলতে পারো আগামীকাল দ্যাখা হবে? তবে কেন বলো, বাঁচতে চাইছো ভঙ্গুর পৃথিবীতে। এতো পৃথিবী নয়, কবরের ভেতর আরেক কবর। ভেবে দ্যাখো, পিতামহ- মাতামহ, কারো ভাই-ভগ্নী? আজ তুমিও আছো আমিও আছি, একদিন তুমিও অতীত আমিও হবো।

এই ডাক সেই ডাক নয়, এই ডাক রোদেল সূর্যোদয়ের ডাক, এই ডাক অন্ধ আইনের জ্ঞান চক্ষু ফিরিয়ে দেয়ার ডাক। এসো, রাজপথে নেমে এসো, গুলির ভয় করছো? ভেবোনা তারাও মানুষ। তারাও আজ মুক্তি চায়। একজন দু’জন নয় কোটিতে কোটিতে নেমে এসো, দেখবে সূর্য পশ্চিম থেকে নয় পূর্ব দিক থেকেই উদিত হচ্ছে।

এসো স্বপ্ন দেখি সুন্দর ভোরের, সোনালী দিনের রোদেল আলোর।

বাজি

বাজি

নীল খামেতে স্বপ্ন আমার
সাদা নীলে বাসা,
মনের ভেতর ঝিঁঝিঁ পোকা
তবুও জাগে আশা।

দু’চোখেতে আকাশ আমার
বুক পকেটে ভালোবাসা,
স্বপ্নগুলো মনের ভেতর
সে খায়রে বাঘডাসা।

মাথার ভেতর এটম আমার
ঠোঁটে-মুখে বাজি
হাতের উপর রাখলে হাত
মরতে আমি রাজি।

এবং মানুষ! (উৎসর্গ : জায়েদ হোসাইন লাকী)

আমি মানুষ
আমি কত্তো সুন্দর এক মানুষ
আমার আছে দুটি হাত, আছে দুটি চোখ
চোখ মেললেই দেখি আমার মায়ের মিষ্টি মুখ
আমি হাতের উপর হাত রেখে খুঁজে পাই স্বর্গ সুখ

আমি মানুষ
মানুষের মাঝে অবহেলার, মানুষের মাঝে নিন্দুক
জন্ম যেমন মৃত্যু তেমন আমি এক পৃথিবীর এক মুখ
কখনো সুখে, কখনো হতাশায়, কখনো বা মহুয়ার মদে
আমি ব্যাচেলর ব্যালকনির আকাশসম উম্মুক্ত এক বুক

আমি মানুষ
আছে সব, তবুও কিচ্ছু নেই, আপন হুশে আমি বড্ড বেহুশ
ভুলে যাই পিতা-মাতা, ভুলে যাই স্ত্রী সন্তান ঠিক এর উল্টোও
আমি আশরাফুল মাখলুকাত; মরাকে আমি জ্যান্ত করি জ্যান্তকে করি মরা

আমি মানুষ
সত্তা ভুলে মত্তা থাকি ধর্ম ভুলে বানাই ধর্ম, পরিচয় দিই আমি এক মস্ত বড় নাস্তিক
মাটি ফুড়ে আমার অঙ্কুরোদগম, মাটি ফুড়েই হবে গমন বলি কত রকম
নিঃশ্বাস যখন মাকড়শার জালে, চোখে সহস্র ছানি, খুঁজে ফিরি তখন জীবনের আলো
প্রভু তুমি আছো বুঝে গেছি আমি…

আমি মানুষ
পৃথিবীর বুকে ক্ষমতার বলে সৃষ্টিকে করি অবিশ্বাস, স্বার্থের দরুণ
ধর্মের পর ধর্ম, কর্মের পর কর্ম করি পরিবর্তন, অবশেষে তবুও আমি মানুষ
অমানুষ কিংবা নামানুষে মানুষ!

ফিরে এসো হে মানুষ
দ্যাখো আমি কত সুন্দর, কত সুন্দর পৃথিবী, সবুজ শ্যামলে ভরা পল্লীর প্রান্তর
একবার, একবার মা-কে মা বলে দ্যাখো পৃথিবীর বুকে নেই কোনো অসুখ
আমি মানুষ, মানবিকতায়, শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞানে-গুণে সৃষ্টিকে করি জয়
এসো বুকে হাত রেখে বলি আমিও মানুষ!

উত্তরা, ঢাকা-১২৩০, ২৯১০২০১৭ রাত: ০০:১০।

কবর

কবর খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, অনেকদিন কবরস্থানের পাশে দাঁড়িয়ে কবরের উপরিভাগের দিকে আনমনে তাকিয়ে থেকেছি, কবর খুঁজে পাওয়া হয়নি, পথিক হয়ে পথিকের নিকট জানতে চেয়ে জেনেছি, মৃত্যু হলেই করবের সন্ধান পেয়ে যাবে, কিন্তু তখন কি বুঝতে পারবো কিংবা অনুভব করতে পারবো এটাই কবর?

আজ ক্যানো জানি শহুরে জীবন-যাপনকেই কবর জীবন মনে হয়, ইট-পাথর আর কংক্রিটের দেয়াল কি কবরের চেয়ে কম? এখানে অনেক মানুষের বসবাস, তবুও কেউ কাউকে চিনতে পারিনা, কোনো ভালোবাসা নেই, চুল, নক, হাত পা কাউকেও আপন মনে হয় না, সবাই দিনদিন বড্ড স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে।

আজ বৃষ্টি হবে, তলিয়ে যাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম সহ আরও অনেক শহর, একদিন হয়তো পল্লীও হারিয়ে যাবে, ক্যানো না মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব হয়ে যদি হারিয়ে যেতে পারে তবে প্রকৃতির কি দোষ!

অতঃপর, পৃথিবীটাই একটা কবর, কবরের ভেতর কবর…

দেনমোহর

দেনমোহর

আইনুল, নাম এবং কর্মে অনেকটাই মিল রেখে চলেছেন, ভালো চাকরি করেন, মাসিক বেতন প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা, হয়তো গায়ের রঙ একটু ছাই রঙের, তাতে কি মেয়েটার বয়স দিন দিন বেড়ে চলে, যেহেতু ছেলে পক্ষের পছন্দ হয়েছে এখন আর দ্বিমত করে লাভ নেই। যে দিনকাল যাচ্ছে, মেয়ের চঞ্চলতা দিনে দিনে সহ্যের বাহিরে চলে যাচ্ছে, এখন তাকে বেঁধে দিতে পারলেই বেঁচে যাই।-

দুপক্ষের মাঝে কথা পাকাপাকি হয়েছে, মেয়ে পক্ষ ছেলেকে (বর) বেশ কিছু ঘরের প্রসাধনী দিবেন, ধরতে গেলে ঘর সাজিয়ে গুছিয়ে, ছেলের বাবার এমন চাহিদা ছিলো না তা সত্তেও, ছেলের বাবা আপত্তি ছিলো শুধু দেনমোহরের টাকার পরিমান কমানোর জন্য, হ্যাঁ সেখান থেকেও অনেকটা কমিয়ে পাঁচ লক্ষ পঁচিশ হাজার পাঁচশত পাঁচ টাকা করা হয়েছে…

মেয়ের বাবা মেয়ের সাথে ছেলে পক্ষের সাথে যে সকল কথা হয়েছে সবটুকুই বলে দিলেন, মেয়ের কথা বাবা তোমরা যা ভালো মনে করো তাই হবে, আর ঠিক তাই হলো, কিন্তু ছেলের বাবা ছেলেকে যখন দেনমোহরের কথা উল্লেখ করলেন তখন ছেলে বললো,

বাবা, এতো টাকা আমি কোথায় পাবো, আমার কাছে এখন তো আর এতো টাকা গচ্ছিত নেই, আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না, পাঁচ ছয়মাস সময় নাও, দেখি কি করা যায়, দেনমোহর ছাড়া বিয়ে করা উচিত হবে না। এমন কথা শুনে মকবুল সাহেব বললেন, আইনুল বাবা, তোমার দাদাও আমাকে এমন করে বিয়ে দিয়েছিলেন, শুনেছি আমার দাদার অবস্থাও তোমার মতো হয়েছিল, স্বামী স্ত্রী যদি দুজনার মাঝে সবটুকু মেনে নিতে পারে আর একজন আরেকজনকে ক্ষমা করতে নিতে পারে তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা না। এভাবেই তো চলছে বাবা আইনুল।

বিয়ে হলো, বাসর রাত, স্বামী স্ত্রী যখন নিজেদের মাঝে মধুর সময় অতিবাহিত করবে, তখনি ঘটলো সমস্যা, স্ত্রী দেনমোহর ছাড়া তার স্বামীকে শর্ত দিলেন আমাকে স্ত্রী করবে না, আমার প্রাপ্য আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে তারপর আমাকে স্পর্শ করবে।

এভাবেই কেটে গেলো প্রায় একটি বছর, আইনুল বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে রইলো, আর এই একটি বছরের শেষ সময়ে আইনুল লটারির মতো নিজেকে উন্নতি করে নিলেন। বিয়ের একবছর পূর্ণ হলো, ঠিক সেই রাতেই আইনুল দেনমোহর পূর্ণ করে দিলেন, কিন্তু মধুর বাসর আর তার কপালে জুটেনি, তার স্ত্রী মুন্নী তার সাথ ঘর করবেন না, তিনি তার পছন্দের ছেলের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন গত একটি বছরে, ছেলেটি আইনুলের পাশের গ্রামের, কসমেটিকস এর দোকান করেন মুহিব, দেখতে বেশ ভালো উচ্চতা যেমন গায়ের রঙও ঠিক তেমন। অনেক অনুনয় বিনয় করেও আইনুল তার স্ত্রীকে রাজী করতে পারলেন না, দুটি পরিবারের কথাও তিনি বুঝালেন, কিন্তু না, তার স্ত্রী বলেছে তার পরিবার থেকে কোনো সমস্যা নেই, ক্যানো না, তিনি বলেছেন তার স্বামী আইনুলের শারিরীক সমস্যা আছে, একটি বছরে একটি বারের জন্যেও সে তাকে স্পর্শ করেনি…

–আসছে…..

পারস্পরিক মূল্যবোধ

পারস্পরিক মূল্যবোধ

আজ যাকে দুঃখ বলে ডাকি
তাকে বারংবার সুখের কাছেই খুঁজে পাই!
আবার যাকে সুখ বলে বুঝি
সেও দেখি দুঃখের বাড়ির পাহারাদার!
চাঁদ সুরুজের মতো যখন
কাঙ্খিত সুখ সম্মুখ হেসে বেড়ায় বুকে বুক মিলিয়ে
ঠিক তখনি হারিয়ে ফেলি দু’টোর বাতিঘর নিমিষেই
অতঃপর, সুখ বলে কিছু নেই, দুঃখটাই সুখ;
আঁধার যেখানে নেই আলো সেখানে ম্লান, অসহায়, অনাথ।

আড়াই রুম!

আড়াই রুম!

কে কেমন আছেন, আমি এই তো আছি বেশ
আমার আড়াই রুমের সোনার বাংলাদেশ
কেউ-বা বলে মহা কষ্টে, কেউ-বা বলে বেশ
মনটা আমার বিশ্বজোড়া ক্লান্তির নেই রেশ
আমি এই তো আছি বেশ…

সবুজ ধানে দোল খেলানো, পল্লী বউয়ের কেশ
দোয়েল কোয়েল ময়না টিয়া চেনায় বাংলাদেশ
কেউ-বা বলে মহা কষ্টে, কেউ-বা বলে বেশ
এই তো আছি বেশ, আমার আড়াই রুমের দেশ

অবয়ব (পর্ব-৫)

অবয়ব (পর্ব-৫)

সাব্বির হোটেলে বন্ধুদের রেখেই একা একা বাসায় রওনা হলো, কলিং বেল চাপতেই সাব্বিরের মা দরজা খুলে দিলেন, ছেলের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন..
বাবা তোকে আজ এতো ক্লান্ত দেখাচ্ছে ক্যানো? তোর কি কিছু হয়েছে?
– না, মা; তেমন কিছুই নয়, একটু ঘুরাঘুরি বেশি হয়ে গেছে আজ তাই, বন্ধুরা জোর করলো খুব তাই ওদের কথা অমান্য করতে পারিনি। বাবা কি ঘুমে?
হু, ঘুমিয়ে পড়েছে
– আমি গোসল করে খাবার টেবিলে আসছি, তুমি ভাত টেবিলে রাখো।

গোসল শেষে পোষাক আষাক পরিবর্তন করে খাবার টেবিলে এসেছে সাব্বির, চেয়ার টেনে বসে প্লেট টানছে এমন সময় তার মা বলে উঠলো..

বাবা, ভালো একটা সংবাদ আছে, এক মেয়ের সন্ধান পেয়েছি, ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া, মেয়ের বাবা মায়ের সাথে কথা হয়েছে, আগামীকাল তাদের বাসায় যেতে বলেছে, আমরাও বলেছি যাবো। কালকে তোকে বাসায় থাকতে হবে কিন্তু, তোকে সাথে করে মেয়ে দেখতে যাবো,
– ঠিক আছে মা, কখন রওনা হবে?
ওখানে গিয়ে দুপুরের খাবার খাওয়ার কথা বলেছে মেয়ের বাবা, খুব জোর করেছে, আমাদের পাশের বাসায় তোর যে কানিজ আন্টি থাকে তার খালাতো বোন, তিনিও আমাদের সাথে যাবেন।
– কি বলো মা, কানিজ আন্টির যে ফ্যাশন, আল্লায় জানে তুমি কোথায় নিয়ে যাবে…
তোর এতো শত কথা বলার প্রয়োজন নেই, তুই রেডি থাকবি, যেখানে নিয়ে যাই সেখানে যাবি
– ঠিক আছে মা, তোমরা যা ভালো মনে করো তাই করো, আমি দ্বিমত করছি না

পরেরদিন যথা সময়ে সাব্বির ও তার পরিবার এবং কানিজ আন্টিকে সাথে নিয়ে মেয়ে দেখতে মেয়েদের বাড়িতে পৌছেছে, কানিজ আন্টি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে, ড্রয়িং রুমে নিয়ে বসতে দিলেন, জোর করে আগে খাবার খাওয়ার বন্দোবস্ত করলেন, খাওয়া-দাওয়া শেষ হলেই নাকি মেয়ে দেখার পর্ব শুরু করবেন, সাব্বির এদিক ওদিক তাকাচ্ছে দেখে কানিজ আন্টি সাব্বির কাছে এসে বললেন,

বাবা (সাব্বির) খাওয়া-দাওয়া শেষ করো, তারপর মন ভরে দেখে নিও, এখন কারো দ্যাখা হবে না

খাওয়ার পর্ব শেষ এবার মেয়ে দেখার পালা, মেয়ে ডাকা হলো, মেয়ের মা মেয়েকে সাথে করে নিয়ে আসলেন, সবার সামনে বসলেন, মেয়ের মুখ দেখে সাব্বিরের শরীর ঘেমে যাচ্ছে, মনে মনে বলতে লাগলো
– এ আমি কি দেখলাম, কাকে দেখছি, এতো সেই মেয়েটি যাকে আমি হোটেল আমারি-তে দেখেছি, সাব্বিরের পিতা-মাতা গল্পে মশগুল, মেয়েকে দেখে তাদের বেশ পছন্দ হয়েছে বুঝতে পারছে সাব্বির, সাব্বিরের মা ডাকতেই সাব্বির যেন আকাশ থেকে পড়ছে, ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো– কি কি কি…
আরে তুই কি কি করছিস ক্যানো, মেয়েকে কি তোর পছন্দ হয়েছে? আমাদের তো পছন্দ হয়েছে..

খুব কষ্ট করে সাব্বির তার মাকে বললো মা, আমি মেয়ের সাথে একটু একা কথা বলতে চাই, এমন কথা শুনে মেয়ের মা বললেন
– হ্যাঁ বাবা অবশ্যই তুমি কথা বলতে পারো, জুই মা সাব্বিরকে সাথে করে তোমার ঘরে নিয়ে যাও, দুজনে কথা বলে নাও, তোমাদেরও তো পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার আছে..

সাব্বির জুঁইয়ের সাথে তার ঘরে প্রবেশ করলো,
যাক তাহলে তোমার নাম জুই, সেদিন জানা হয়নি আজ জানতে পারলাম, দ্যাখো ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সেই তুমি আর আমি, যাই হোক এখন তুমিই বলো আমি কি করতে পারি? তোমাকে কি আমার বিয়ে করা উচিত হবে? সেদিনও বলেছি আমার পিতা-মাতার কথায় আমি অবাধ্য হয়নি কখনো তাই তোমাকেই বলছি, তুমিই বলো তোমাকে বিয়ে করা কি আমার উচিত হবে? যদি না হয়ে থাকে তাহলে তুমি বলে দিও, ক্যানো না আমি তোমাকে সবার সম্মুখ এনে বাকি জীবনটা নষ্ট করে দিতে চাই না।

রনি, বন্ধু তুই আমাকে কি বুঝাতে চাইছিস…
বন্ধু এমন ঘটনায় আমি ফেসে গেছি, যা তোর জীবনে ঝড় বয়ে নিয়ে আসতে
কি বলিস?
হ্যাঁ,
কি হয়েছে, কিভাবে হয়েছে, বলবি তো…
দোস্ত রাত হয়েছে, ক্ষুধা লেগেছে, সকালে বলবো.. আমি আজ ক্লান্ত…সকাল পর্যন্ত একটু অপেক্ষা কর…

–চলবে–

অবয়ব (পর্ব-৪)

অবয়ব (পর্ব-৪)

সাব্বির নামের একছেলে আমার মতো বন্ধুদের তাড়নায় পড়ে অন্ধগলির বাসিন্দা হয়ে যায়, দলবেঁধে একসাথে কয়েকজন বন্ধু তাকে নিয়ে হোটেল আমারি-তে হাজির হয়, এক এক জনের জন্য এক একটি কামড়া ভাড়া করে, ঐ বন্ধুর দল সাব্বিরের জন্য ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া স্মার্ট এবং রূপবতী এক পরিকে হোটেলে নিয়ে আসে, সে নাকি পড়ালেখার ফাঁকে বাড়তি উপার্জন করে, আধুনিক সমাজের সাথে তাল মেলাতে তার সহপাঠি অনেকেই এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। মেয়েটির নাম জুই বলেছিলো তার বান্ধবী, তার বান্ধবী লতার মাধ্যমেই তার সাথে যোগাযোগ, অবশ্য লতাদের চেয়ে তার রেট বেশ চড়া এবং কাটসাট কথাবার্তা, সাব্বির যেন পাগল হয়ে যায় দ্যাখা মাত্র এজন্যই তার বন্ধুরা বেশি টাকা খরচ করে তাকে নির্বাচন করেছে। সবাই তো আর এমন উঁচু তলার নামিদামি হোটেলে আসতে পারে না।

যাই হোক, সাব্বিরকে তার কামড়ায় দিয়ে বন্ধুরা যার যার কামড়ায় চলে যায়, জুইকে আগেই তার কামড়ায় দেয়া হয়েছিল, কামড়াটা জুঁইয়ের আগে থেকে পছন্দের, এজন্য সাব্বিরকে শুধ তার রুম নাম্বার বলে দেয়া, অবশ্য তার পাশের রুমেই সবার অবস্থান ছিলো। সাব্বির নিজ কামড়ায় ঢুকে হতবাক হয়ে যায়, এতো সুন্দর একটা রুম, উত্তর এবং দক্ষিণের জানালার পাশে বাহারি কৃত্রিম গাছ, দক্ষিণ দিকটায় দাঁড়িয়ে বাহিরে প্রকৃতি দেখছে কোনো এক সুন্দরী, পেছন থেকে তার কেশের ঢেউ দেখে সাব্বির অভিভূত, মনে মনে ভাবছে এমন কেশী মেয়ে যদি আমার জীবন সঙ্গীনি হতো তাহলে সত্যি ধন্য হতাম।

সাব্বিরের প্রবেশ বুঝতে পেরে জানালার পর্দা টেনে বিছানায় এসে বসে পড়লো জুই, চুল দেখে যেমন অভিভূত হয়েছে ঠিক তার সম্মুখ দেখেও হতবাক সাব্বির, শক খাওয়ার মতোই মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হঠাৎ উচ্চ শব্দে সাব্বিরের ধ্যান ভেঙে গেলো, এবার তার হাত-পা কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছে, আর সে অবাক এতো সুন্দর একজন মেয়ে নিজেকে এভাবে নিঃশেষ করে দিচ্ছে দিনের পর দিন, মেয়েটির পরিচয় জানতে চাইলে তার প্রত্যুত্তর শুনে সাব্বির তো পাগল বনে যাওয়ার অবস্থা।

আচ্ছা আমার পরিচয় নিয়ে আপনার কি উপকার হবে, আমার পরিচয় দেয়ার সময় নেই, আমার পরিচয় এই বর্তমান, ভবিষ্যৎ বলতে পারবো না, ঠিক অতীতও না, আমার সময়ের অনেক মূল্য, যে জন্য আমাকে এখানে আনা হয়েছে সেই কাজ শেষ করে আমাকে বিদায় দিলে উপকার হয়, অযথা কথা বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই, তিন ঘন্টার জন্য আমাকে কেনা হয়েছে, সময় শেষ হওয়া মাত্র আমি আপনাকে চিনতে পারবো না, পরে যে উত্তেজিত হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করবেন সেটার কোনো সুযোগ নেই, এখানের সবাই আমাকে চেনেন এবং জানেন, বরং আপনাকে কেউ চেনেন না, অতএব সময় নষ্ট করে নিজের ক্ষতি চাইবেন না, বলেই বুকের উপর থেকে ওড়নাটা সরিয়ে বলতে লাগলো…

-আসুন, আপনার যা চাহিদা পূর্ণ করুন,
-যদি বলি আমি আপনার সেই সকল ক্রেতার মতো আমি নই, তবে?
– এমন কথা অনেকেই বলে, অনেক দেখেছি, প্রেমিকা রেখে হোটেলে ফূর্তি করতে, আর প্রেমিকার নিকট গিয়ে হুজুর, যেন ভাজা মাছটা উল্টো খেতে জানেন না,
-শুধু পুরুষকেই এমন দোষারোপ করলেন, নিজের কথা একবার ভাবুন, আমার মতো মনে হয় আপনি ভালো পরিবারের একজন মেয়ে, শুনেছি ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করেন, মনে হয় আপনি আপনার এই ব্যবসার কথা আপনার পরিবারকে বলেছেন কিংবা তারা জানেন? শুনুন দোষ দিতে হলে দুজনকেই দিন, একহাতে তালি বাঁজে না মনে রাখবেন। আমি আবারও বলছি আমি অন্যদের মতো নই, হ্যাঁ এখানে এসে অবশ্যই পাপ করেছি, কিন্তু সেটাও বন্ধুদের বুঝানোর জন্য।

-বুঝেছি আপনি সাধু তাই তো? আমার মতো মেয়ে ভাড়া করে নিয়ে এসেছেন নামিদামী হোটেলে, এমন কত মানুষ দেখলাম জীবনে, তা এতো ভালো আপনি এসব কাজে না এসে বাড়িতে বিয়ের কথা বলছেন না ক্যানো?

আমার জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে, আশা করছি অতি শীঘ্রই বাবা-মায়ের পছন্দ অনুযায়ী কাউকে বিয়ে করে নিবো, প্রার্থনা করি আপনার মতো যেন কাউকে তিনি আমার কপালে না জুটিয়ে দেন, বিয়ের জন্য অবশ্য বাবা-মা উঠে পড়ে লেগেছেন।

-তাহলে ক্যানো এখানে এসেছেন?

আপনাদের মতো মানুষের সাথে পরিচিত হতে, আর জানতে এর থেকে বেশি কিছু নয়, কিন্তু আমার বন্ধুদের জোরে, আমি তাদের বলেছি যেখানেই আমাকে নেয়া হোক না ক্যানো আমি আমার মতোই থাকবো, কিন্তু তারা বলেছে তোকে এমন একজন মেয়ের সাথে থাকতে দিবো যে তোকে অজানা স্পর্শ দিয়ে দিবে,
আর তুই তাকে দেখে পাগল হয়ে গোপন সুখ পেতে নিজেকে হারিয়ে ফেলবি,

– শুনন ভালো মানুষ, আমি নষ্ট মানুষ হলেও কিন্তু আমার কিছু নীতি আছে, কাজ না করে আমি পারিশ্রমিক নেই না। এজন্যই আপনাকে বলছি আমার সময় নষ্ট করবেন না, বলেই জুই সাব্বিরের হাতটি টেনে নিজের উপর ফেলে দিলেন, যেমন ভাবে পড়েছিলেন তেমনি উঠে দাঁড়ালেন আর বললেন–

আপনি আমাকে স্পর্শ করেছেন বেশ ভালো এর থেকে আর বেশি কিছুর আশা করবেন না, আমি আমানতের খেয়ানত করতে রাজি নই, একটা কথা ভেবে দেখুন..আপনি যা করছেন হয়তো কোনোদিন আপনারও সংসার হবে আর আপনি আপনার স্বামীর যে আমানত নষ্ট করেছেন তেমনি আপনার স্বামীও তো আপনার আমানত নষ্ট করতে পারে? কিংবা আপনার স্বামী আমার মতো হলে আপনি সৃষ্টিকর্তার নিকট কিভাবে নিজেকে হাজির করবেন? যাই হোক আপনি চলে যেতে পারেন,

রনি তুই কি বলতে চাইছিস, এতো প্যাঁচাল ভালো লাগে না?
আরেকটু ধৈর্য ধর বন্ধু, খুব একটা বেশি নেই, আসল ঘটনা তো শেষে বন্ধু, আর একটু ধৈর্য ধরে শোন ভালো লাগবে
তাহলে তাড়াতাড়ি বল..
শোন….

চলবে

অবয়ব (পর্ব-৩)

অবয়ব (পর্ব-৩)

সময় ঘনিয়ে আসছে, শুক্রবার দ্যাখা করতে যাবো সুর্পনাদের বাসায়, তাদের বাসার ঐ করিম সাহেব কে জানতেই হবে, সুর্পনা এমন কাজ করতেই পারে না, এমন হতেই পারে না। সুর্পনা ক্যানো আমার সাথে এমন ব্যবহার করবে? হঠাৎ করে হারিয়ে গিয়েছিলো সুর্পনা, কংক্রিটে ঢাকা শহরে এসে নিজেকে সামলিয়ে সবেমাত্র চলতে শুরু করেছি স্বাভাবিক জীবনে, সুর্পনার দেয়া যন্ত্রণাকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম ক্যানো তাকে আবার দেখতে পেলাম আর ক্যানইবা তার জীবনে অন্য একজনের স্পর্শ খুঁজে পাচ্ছি। নাহ্‌ আমার ধারণা হয়তো ভুল, সুর্পণা এমন হতেই পারে না।

এসব কথা ভাবতে ভাবতে তানিম নিজেকে পুনরায় আউলা ঝাউলা করে ফেলেছে, খেতে গেলে খেতে পারছে না ঠিক মত, ঘুমাতে গেলে ঘুমাতে পারছে না, চোখের পাতা বন্ধ করলে যেমন, খোলা রাখলেও তেমন, সুপর্ণা আর সুপর্ণা। হঠাৎ তানিমের বাসার কলিং বেল বেঁজে উঠলো, আচমকা উঠে দাঁড়ালো তানিম।
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে তানিম বলতে লাগলো, কে? কে?
– দরজার ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো, আমি,
আমি কে?
– আরে আমি রনি, দরজাটা খুলবি তো আগে।
দরজা খুলে দেয়া হলো, রনি ঘরে ঢুকেই বিছানার উপর ছাঁদের দিকে তাকিয়ে শুয়ে পড়লো, কিরে তুই এই সময়ে, আর এভাবে হাপাচ্ছিস ক্যানো, পুলিশের তাড়া খেয়েছিস নাকি?
– একটু সময় দে, আমার কথা শুনলে তুই নিজে নিজেকে সামলাতে পারবি না, ঠান্ডা পানি থাকলে একটু দে আগে গলাটা ভিজিয়ে নিই।
ক্যান তুই নিয়ে খেতে পারিস না? কোথায় কি করে এসে এখানে নবাব সাহেব হাপাচ্ছেন, কত বলেছি বাজে নেশা বাদ দেয়, এসব ভালো না, প্রেম হারালে কি নিজেকে তাই এভাবে নষ্ট করতে দিতে হবে নাকি?

– তুই কিন্তু বেশি কথা বলছিস, নিজেও তো প্রেম হারিয়ে থাকতে পারিস নি, কোথায় কাকে দেখে এখন নিজেকে পাগল বানিয়ে ফেলেছে আবার অন্যকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে, এই কয়েকদিন কি তুই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখেছিস? পাগল ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না তোকে..

ঠিক বলেছিস, আমি পাগল হয়ে গেছি, কাকে দেখলাম, আর দেখে কি শুনলাম, কোনোটাই মেলাতে পারছি না…আচ্ছা তোর বিয়ের খবর কি? আক্কেল নাকি তোর বিয়ের কথা বলতেছে…

– দ্যাখ, এসব কথা বাদ দিতে বলেছি, আজকের ঘটনা শুনলে বিয়ের কথা কিংবা ভালোবাসার কথা তুই নিজেও ভুলে যাবি, মেয়ে মানুষ কি এমন হয়?
কি হয়েছে একটু খুলে বলবি?
– বলবো, তুই আগে একটু ঠিক হয়ে নে আর আমি একটু ঠান্ডা হয়ে নেই, বলার জন্যই তো তোর বাসায় আসলাম.. দোস্ত ফ্যানটা একটু জোরে ঘুরানোর ব্যবস্থা করবি, সত্যি বলছি ঘাম বের হচ্ছে তো হচ্ছেই..

আচ্ছা আমি ফ্যানের স্প্রিড বাড়িয়ে দিচ্ছি, তুই ঠান্ডা হয়ে আমার রুমে আয়।
ড্রয়িং রুমে প্রায় আঁধা ঘন্টা বিছানায় শুয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালো রনি, হাটি হাটি পা পা করে তানিমের রুমে প্রবেশ করলো..কিরে তুই কি এখন ঠিক?
– তবুও ক্যামন যেন লাগছে বন্ধু, স্বস্তি পাচ্ছি না। যে ঘটনা ঘটেছে তাতে স্বস্তি থাকা সম্ভব না।

আচ্ছা এবার বল তো দেখি এমন ঘটনা ঘটলো তোর, প্রায় যে ঘটনা ঘটে সেখানে আজ আবার কত বড় কে জানে? হোটেলে গিয়ে তো খুন খারাপি করিস নি? কিংবা কোনো নারীকে পেটাসনি?
– আরে নাহ্‌, এই প্রথম কোনো নারীকে স্পর্শ ছাড়াই হোটেল থেকে বের হয়ে এসেছি,
কি বলিস, তুই এতো ভালো হয়ে গেলি কি করে, আর তোর প্রতিশোধ কি শেষ হয়ে গেছে? যাক তবুও ভালো যে তোর শুভ বুদ্ধি উদয় হচ্ছে। কতবার তোকে বুঝিয়েছি এসব ভালো না, এটাকে প্রতিশোধ বলে না, নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা ছাড়া আর কিছুই না।

– সাধুর মতো কথা বলিস নাতো, ভালো লাগেনা ওসব কথা,
তাহলে কি বলবো, কি ঘটনা ঘটেছে সেটাই তো বলিস না তুই,
– আমি বললে তুই সহ্য করতে পারবি কিনা সেটা চিন্তা করতেছি, কিংবা এখানে বিশ্বাসেরও ব্যাপার আছে, আচ্ছা তোর কাছে কি সুপর্ণা কোনো ছবি আছে?
ক্যানো ছবি দিয়ে কি করবি,
– দরকার আছে থাকলে দ্যাখা, খুব জরুরী

বোস, দেখাচ্ছি বলে তানিম তার ড্রয়ার থেকে সুপর্ণার ছবি বের করে দিলো, সুপর্ণার ছবি হাতে নিয়ে রনি কি যেন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো

কিরে এভাবে কি দেখছিস? দেখে তো মনে হচ্ছে ছবি খেয়ে ফেলবি
– বন্ধু, একদিন একটি গল্প শুনেছিলাম, আর সেটা বাস্তব নয় বলে জানিয়েছিলো গল্প বললেওয়ালা। তোকে সেই গল্পটি শুনাবো তারপর কি ঘটেছে সেটা বলছি,

তা ঝটপট বলে ফেলতো… ন্যাকামো আর ভালো লাগছে না। তুই শুধু একটু কথাকে হাজার কথার মধ্যে প্যাচাতে থাকিস।
-তাহলে শোন,

—-চলবে

নলবুক সাহিত্য

নলবুক সাহিত্য

কি আশ্চার্য রক্তের ঘ্রাণ পারফিউমে মৌ মৌ করছে
কলা গাছের শরীরে তাকাতেই দেখি মানবের ত্বক
আর ভালোবাসা চিন্তা করতেই দেখি উভয়চর প্রাণী
আজ আর আশ্চার্য হই না কিংবা বিচলিত, ক্যানো না
পশু হত্যার চেয়েও আজ মানব হত্যা অতি সহজ, ঠিক
যেন কাব্যিকতার মুখোশে আজকের সাহিত্যের নলবুক।

অবয়ব (পর্ব-২)

অবয়ব (পর্ব-২)

তানিম ভাবতেই পারছে না সে এতোদিন কাকে দেখে এসেছে, ভাবতে ভাবতে মাথাটা আউলা ঝাউলা করে দিচ্ছে, কে এই করিম সাহেব যে সুর্পণার বাড়িতে আছে? আমি কাকে দেখলাম তাহলে, এতো বছরের সম্পর্ক, এতোটা কাছাকাছি থেকেছি দুজন, এখনো গায়ের ঘ্রাণ অনুভব করতে পারি আর তাকে চিনতে আমার ভুল হবে! না তা কখনোই সম্ভব নয়।

আচ্ছা কে এই করিম সাহেব, বয়সটা তার অনেক ভারি মনে হলো, আমার থেকেও কম করে হলেও দশ পনের বছরের বড় হবেন, আর সুর্পণা তো আমার থেকে তিন বছরের ছোট ছিলো, এতো রুপবতী, সুর্দশনা, আধুনিক মেয়ে কি এতো বয়স্ক একজন পুরুষকে বিয়ে করবে? আর করবেই বা ক্যানো, কোন দিক থেকে তার কমতি ছিলো, অর্থ-সম্পদ, টাকা-কড়ি কোনোটাই তার কম ছিলো না। নাহ্‌ আর ভালো লাগছে না, আমার দ্যাখা তো ভুল হতে পারে না। করিম সাহেব তো বললেন আগামী শুক্রবার দ্যাখা করার জন্য, আমার কোনো ভুল হচ্ছে না তো।

নানা প্রশ্ন আজ কুরে খাচ্ছে তানিমকে, আর কুরে খাবেই না ক্যানো, যার এতো কাছে থেকেও তাকে দেখে ভুল করবে।

করিম সাহেব সোফায় গম্ভীর হয়ে বসে আছেন, ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করলেন করিম সাহেবের স্ত্রী, হঠাৎ করেই থমকে গেলেন, তাকিয়ে আছেন স্বামীর দিকে, ভাবতেই পারছেন না এতো চঞ্চল প্রাণবন্ত একজন মানুষ হঠাৎ করে এতো গম্ভীর হয়ে গেলো কি করে। পঁচিশ বছরের সংসার জীবনে এমনটি তো কখনোই দেখেননি, আজ আবার কি হলো। হাটিহাটি পা পা করে এগিয়ে দিয়ে করিম সাহেবের পাশে গিয়ে বসলেন কর্ণিয়া।

আসলে করিম সাহেবের স্ত্রীর নাম কর্ণিয়া, আদর এবং ভালোবাসায় তিনি কণা বলেই ডাকেন। এক সন্তানের জননী তিনি। মেয়েটির স্বভাব ঠিক মেয়ের মতো হয়েছে বলে প্রায় সময় করিম সাহেব খোটা দ্যান কর্ণিয়াকে। তিনি হাসি মুখে সবটাই উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এটা আমাদের ভালোবাসার রক্ত, অর্ধেকটা তোমার মতো আর বাকিটা আমার মতো।

-আচ্ছা করিম তোমার কি হয়েছে? অনেকক্ষণ যাবৎ বাসায় এসেছি আর তুমি দেখি বুঝতে পারোনি, তা তোমার কি হয়েছে? এতো গম্ভীর লাগছে ক্যানো? এতো বছরের সংসার জীবনে যা দেখিনি আজ তোমাকে দেখে ক্যামন জানি ভয় ভয় লাগছে। কি হলো কথা বলছো না ক্যানো, এই বয়সে কি কারো প্রেমে পড়লে নাকি? না আদর করবো কোনটা?

-করিম সাহেব উত্তেজিত হয়ে বললেন, তোমার প্রেমিকা এসেছিলো, আমাকে প্রশ্ন করে আমি এইবাড়িতে কি করি, এই বাড়িতো তার থাকার কথা কিন্তু আমি ক্যানো? তোমরা দুজন নাকি অন্তরঙ্গ মানুষ ছিলে, চুটিয়ে প্রেম করেছো কয়েক বছর, এই বাড়ি যে তোমার সেটা সে কি করে জানলো? তার প্রেমিকার বাড়ি বলে সে দাবি করে এটা তারও বাড়ি।

-তোমার মাথাটা কি খারাপ হয়ে গেলো নাকি? তোমার সাথে আমার পরিচয় ইউনিভার্সিটি জীবন থেকে, তবে এর ভেতর আমি কার সাথে লুকিয়ে প্রেম করলাম, প্রেম যদি করেই থাকি তবে ক্যানো এতোবছর পর? যাই হোক সেই বেয়াদব কি বলেছে?

-আমি তাকে শুক্রবার বাসায় আসতে বলেছি, বলেছি আপনার প্রেমিকার সাথে সরাসরি কথা বলুন, আমরা শুক্রবার ফ্রী থাকবো

-সে কি আসবে বলেছে?
-হ্যাঁ, সে আসবেই, তার নাকি আসতেই হবে।
-তাহলে কি আর করা, তুমি অন্তত শুক্রবার পর্যন্ত মন খারাপ করে থেকো না, তাকে আসতে দাও দেখি কে সে

চলবে….

অবয়ব

অবয়ব

পথের বাঁকে মনের ফাঁকে
লুকোচুরির মেলা
জোয়ার ভাটার রঙ তামাশা
জীবন নদের খেলা।

বৃক্ষরসে দৃষ্টির আলো
মোহে আলিঙ্গন
আঁধার মাঝে কেবা সাদা-কালো
অবুঝ এ মন।

হাসির মাঝে গোলাপ ফোটে
ভালোবাসায় মন
দুখের মাঝে কেউবা সুখী
কোরে সুখ বর্ণন।

জগতে সত্য কথা কেউ বলিনা
জিজ্ঞাসিতে ক্যামন
মুচকি হেসে কিবা নত শিরে
বলি ভালো প্রিয়জন

কি আজব এই জগৎ সংসার
রঙীন সাদা-কালো
নিজের পায়ে কুড়াল মারি
তবুও বলি ভালো!

অধরা

অধরা,
আজ তুমি সুখী, ক্যানো না আমি অক্ষম আর চরিত্রহীন, আর তাইতো
বুঝো গ্যাছো স্বাধীনতা কি ও কি তার অনুভূতি, স্বাদ, আহলাদ
একবার ভেবে দেখেছো? কিছুদিন আগেও দা-মাছ সম্পর্ক ছিলো দু’জনার
নিজেকে পরাধীন ভাবতে, পাখিদের দিকে তাকিয়ে উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের
মতো করে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে, তারপর চোখ দুটো মাটিতে রেখে বিরবির করতে
তখন হয়তো আমাকে অভিশাপ আর ভৎসনা করতে, মরে গেলে বেঁচে যাই!

সৃষ্টিকর্তা তোমার কথাই কবুল করেছে, ভিন্ন ভিন্ন গ্রহের মানুষে আজ দু’জনা
হায়রে ভালোবাসা, ভালো লাগা; তুই এতো কিছু বুঝিস শুধু বুঝিস না সম্পর্ক কি!
তুই স্বাধীনতাকেও অধিকার বলে দাবি করিস, অন্ধগলির বন্ধ কুটিরে সুখ খুঁজিস

অধরা,
সত্যিই ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস; তোমার স্পর্শ পাবো ভাবতেও পারিনি
অন্ধকারই বুঝি তোমার স্বাধীনতা, তোমার সুখ; যৌন তৃপ্তিই কি সংসারের সব?
এতোদিন যাকে অক্ষম বলে এলে আজ তাকেই পুরুষত্বের হির্ষা দিলে…

অতঃপর, অাঁধার কখনোই আলো হতে পারে না….