শান্ত চৌধুরী এর সকল পোস্ট

শান্ত চৌধুরী সম্পর্কে

নিঃসঙ্গতা যখন ঠুকরে খায় দুমড়ে মুচড়ে কাবু করে দেহের বাহীর ভিতর প্রবল সংজ্ঞাহীন অবগাহন। ১ সেপ্টেম্বর, ১৭ ভাদ্র বাংলা ( জন্ম তারিখ )।

সুখের দুঃখ

কিছু কিছু সুখের মাঝেও দুঃখ লুকিয়ে হাসে, কাল্পনিক অনুভূতি থেতো করে দেয় জীবনের বেদনা গুলো। বিবর্ণ পানসে জীবনটা বন্দী চার দেয়ালে, শীতল এয়ার কন্ডিশনের হাওয়া। মাঝে মাঝে সব কিছুই ঝাপসা মনে হয়। রিলাক্সজেবল ডুপ্লেক্স ফ্লাটে রঙিন দেয়ালে নামিদামী শিল্পীর আঁকা জলছবি ফ্যাকাশে হয়ে ভাসে। পুরো দিগন্ত বন্দী হোম থিয়েটারে, কাল্পনিক সুখ। গাঢ় নীল আকাশ-রোদ-ঝড়-বৃষ্টি-পাখি-ফুল-প্রজাপতি উড়ে নিমেষেই পাশে বসে মুহূর্তে স্মার্ট স্যাটেলাইটে।
ঝাঁঝাল স্বাদের ওয়েন হুইস্কি নোনতা জলে দেহসলিল আড্ডায় মাতে। সুখের নীড়ে পূর্ণ জোছনা বিলাস ধাঁধার মতো মনে হয়, জোছনা জানালার গ্লাসের সাথে মিতালী করে, পূর্ণ জোছনায়। টেবিলের খাবার গুলো ঠাণ্ডা হয়ে বার বার; ওভেনের তাপে স্বাদ হীন, রুচি। ল্যান্সক্লুজারের কালো গ্লাস বন্ধ শ্বা-শ্বা, খুব দ্রুত প্রকৃতির ধুলো পিছু ছুটে। শুধু সুখ আর সুখ, দু চোখে ঘুম নেই, রাতের নির্জনতা নেই। ভরা দুপুরে প্রকৃতির কোলাহল নেই, মেঘের ঘনঘটা নেই, পাখির কিচিরমিচির নেই, প্রজাপতির উড়োউড়ি নেই, আছে শুধু সুখ, অন্তরীণ সুপ্ত সুখ বিলাস।

শহুরে বৃষ্টি


শহুরে মেঘের বাড়ি

শহুরে কোলাহলে নেমে গেছে নীরবতা
ঘরে ফেরা মানুষ গুলো কাক ভেজা।
পিচঢালা পথে জমে আছে কাদাজল
মুহূর্তের মুষলধার বৃষ্টি কান্নায়
ডুবে গেছে নগরী।

হাতিরঝিল ছুঁয়ে বৃষ্টি নেমেছে
উত্তাল এলোমেলো ঝড়ো হাওয়া
দৃষ্টির আড়ালে।
ক্লান্তদেহ, দূরভাবনার বৃষ্টি
গাঢ় অন্ধকারে ডুবে গেছে নগরী।
ল্যাম্পপোস্ট নিভে গেছে
বিদ্যুৎবিহীন রাস্তায়।
শূন্যতায় ডুবে গেছে
নাগরিক কোলাহল।

এলোমেলো ধমকা হাওয়া
উচ্ছ্বাস নেই, প্রাঁজল বিরহে
পথিক নীরবে দাঁড়িয়ে।
দু’একটি পাখির নীড়ে
ফিরে যাওয়ায় ব্যস্ত বাহুবলে।
বৃষ্টি ভিজা ঘাসফড়িং
ছোটাছুটি করে,
স্নিগ্ধ বকুলের ঘ্রাণে।

নগরীর বৃষ্টি প্রিয় মানুষ নেমেছে
বৃষ্টি ভেজার মিছিলে
প্রাণচঞ্চল, উৎসবে।
সবুজ পাতার শিশির
ছুঁয়ে নাগরিক অবসরে।

কালের খেয়া

নিঃশব্দ নিশ্চুপ পথের বাঁকে
এলোমেলো ভাবনার মিশে
দ্রুত চলো হারিয়ে যাই
সমুদ্রের প্রমত্ত উচ্ছ্বাসে।

হাঁটি হাঁটি পা পা করে
জোৎস্নায় ভিজে
নির্ঘুম রাতের আড়াল।

কোন এক মায়ার ছলে
নিঃসঙ্গ গাঙচিল
উড়ে উড়ে।
আহত হৃদয় চুপিসারে
আকুতি করে সুবর্ণচরে
অনন্ত অভিমানে।

হেঁটে যাই


ভবঘুরে

হেঁটে যাই রৌদ্র শুভ্রতায় ঘেমে
কখনও বৃষ্টি বর্ষণে কাশফুল ছুঁয়ে
কখনও শঙ্খচিল, বুনোহাঁস হয়ে
নির্জন আঁধার জোনাকির
মৃদু আলো ……

রক্তজবা লাল রঙের মিষ্টতা ছুঁয়ে
উর্বর প্রশান্তির কোন কালো কেশী
রমণীর চুল ছুঁয়ে।

বিকেলের সূর্যস্নানে পাখিদের
নিবাসে ফিরে যাওয়ার মিছিল
তখনও মোহমুক্তি অথবা
ফেরারী।

নীল আকাশ শুভ্র শাদা মেঘের ভেলা
পরিনত একটি অধ্যায়
থেকে নেই পথ চলা।

মেঠোপথ অলকগুচ্ছ
এক পা, দু’পা করে
সারি সারি ঝাউবনের
সবুজ ছুঁয়ে
অনিকেত পথচারী
বেলাভূমি অথবা পূর্ণ
শ্রাবণের একরাশ সিক্ততা ছুঁয়ে।

চিঠি বিরহ ১

প্রিয় মৌমিতা,
এক গুচ্ছ লাল গোলাপের শুভেচ্ছা যেনো। কেমন আছো তুমি? অনবরত আমাকে ভুলে। অনেক সুখের নদীজলে সাঁতার কাটছো বুঝি। তোমার সুখ গুলো আমার কাছে হিরের টুকরোর মতো। তুমি আরাম আয়েশ করো, সুখ সুধায় হারাও, আমি তাই কামনা করি।

মৌমিতা, যে দিন তোমার শেষ চিঠি পেলাম সে দিন থেকে আমি যেন কেমন হয়ে গেছি। লাল গোলাপ দেখলেই ও স্থানে আর দাঁড়াতে পারি না, তোমাকে খুঁজতে থাকি, গোলাপের পাঁপড়িতে। রজনীগন্ধার সুভাস নাকে এলেই তোমার বাড়ীর উঠানে পায়চারি করি। যুগ যুগ ধরে তোমার জন্য অপেক্ষার প্রথম পরশে ফিরে যাই। বৃষ্টির শীতল জলে কাক ভিজে জড়িয়ে হেঁটেছি মেঘনা নদীর তীরে, সেই হারানো দিন গুলোতে ফিরে যাই। তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালবাসনি?

অভিনয় করে গেছো আমার সাথে, নাটক, সিরিয়ালের নায়িকার মতো। সত্যিই তুমি সব পার, তুমি তো আমার নায়িকা। তোমার জন্য বকুল তলার ঘুঘু পাখি গুলো অপেক্ষা করে প্রতিদিন, সকাল-সন্ধ্যা সাঁঝ বেলায়। আমার বিরহের সাথী হয় পাখি গুলো। তুমি চলে গেলেও ওরা আমার বিরহের গল্প শুনে রোজ রোজ। সেই হিজলের লাল ফুল গুলো মলিন হয়ে ঝরে পড়ে বিরহের বিকেলে। আমি চেনা পথের পথিক ঠাঁয় দাড়িয়ে থাকি তোমাকে দেখবো বলে, আর তুমি আমার কথা ভুলে দূরের কোন পথে হাট।

আমি তোমাকেই ভালোবেসে নিঃসঙ্গ একাকী দুঃখের প্রবল স্রোতে ভেসে ভেসে তোমাকেই খুঁজি। আর তুমি? সুখে থাকো তুমি প্রিয়া। যদি তোমার কখনও সময় হয় এক পলক চোখ বুলিয়ে যেও। তোমাকে দেখার সাধ অপূর্ণ। তোমাকে দেখবো অপলক দু’নয়নে, প্রজাপতি যেমন ফুলের পাঁপড়িতে অভিরাম চোখ বুলিয়ে যায়, আকাশ যেমন মাটির সাথে মিতালি করে, আমি তোমায় ভালোবেসে।


ক্লিক : শান্ত চৌধুরী। সূর্যের প্রস্থান।

ঝরাপাতা ও আমি

ঝরাপাতা বড় অবেলায় তোমার সাথে দেখা হলো। আজ বিকেলের ক্লান্তির পরশে তোমার বুকে বসে পরি, টু শব্দটি করনি, একবার ও আমাকে কিছু বলার সময় হলো না ? আমি বড়ই অভাগা তোমার রূপযৌবনে পাশে বসিনি বলে। সবুজ চিরকুট আমার বুকের ভেতরে গেথে মলিন বিকেলের বন্দনা করি আর তুমি অভিমানে নিস্তব্ধ। ঝরাপাতা বিকেলের প্রান্ত পরশে নিবো আলোর ধূসর আভায় আমি হারিয়ে খুজি স্নিগ্ধ রস। ক্লান্তির বিষাদে আমি পুড়ে আংড়া হই তথনও তুমি নীরব। আমার বিদায় বিষাদের অবগাহনে ক্ষতের সৃত লালা ঝরে, তখনও তুমি অপলক দৃষ্টি বোলাও। ঝরা পাতা আমার ভিতর-বাহির বেদনার নীল চোবলে ক্ষত-বিক্ষত, তুমি ধূলোবালি, বৃষ্টিজল কাদা, সূর্যের তীব্রতা সয়ে পূবালী বাতাসে হাড়াও আমার সঙ্গী হয়ে। ঝরাপাতা দেখা হবে আগামী জন্মে তোমার পরম ভালোবাসার আলিঙ্গনে, কষ্টের অনল নিভিয়ে, সুখ শান্তি শোভায় যৌবনের রূপমুগ্ধতায়।

জল জোছনার কাব্য

জোছনা রাত দিগন্ত আলোয় ঝলমল প্রকৃতি সেজে
আছে আপন নিয়মে।ঝিঁঝি পোকা গুলো অনবরত
গান গেয়ে যাচ্ছে।দু’একটা রাতজাগা পাখি উড়ে উড়ে
জোছনায় ভিজে,বৃক্ষগুলো মৃদু হাওয়ায় দোলে,স্নিগ্ধ
উষ্ণতা কিছু মিষ্ট ফুলের ঘ্রাণ চারপাশ।

সমুদ্রের হুঙ্কারে এলোমেলো তট সৈকত,জলস্রোতের
প্রেমদীপ্ত জোছনা এ যেন প্রকৃতি আর জোছনার
প্রেম। জল জোছনার প্রেমলিলা,ঝাউ বন ছুঁয়ে স্নিগ্ধ
প্রশান্তি আর শুভ্রতায় মিশে স্বর্গের উপনিবেশ।

নীল জোছনা এলোমেলো হাওয়া, প্রমত্ত উচ্ছ্বাস
প্রান্তিক প্রবাহ শিহরণ উত্তেজিত তরঙ্গ ভেলা,সীমাহীন
দূরত্বে ডুবে যায় বিলাসী খেয়া।মেঘ দূত উড়ে উড়ে
জোছনা বিলাসে ভিজে যায় শৈল্পীক অনুভবে।

দূরের মিটিমিটি দীপ্তিময় ঝলমল ক্যানভাস,
মাঝিমাল্লা ডিঙিনৌক স্রোত-প্রবাহে অদৃশ্য হয়ে
ভেসে যায়, ঝিলমিল বালুকা বেলায় উপচে পড়ে
জোছনা দ্যুতি স্পর্শ করে ভালোবাসার যুগল মহাকর্ষ।

বর্ষার চিঠি

প্রিয়তমাষু
হিজলের বন ছুঁয়ে ঝিরিঝিরি বর্ষণে সেদিন তুমি এসে ছিলে। কেয়া, কদমের পাপড়ীতে মিশে। শালিক, শ্যামারা উৎসবে মেতে ছিলো অনেক দিন পরে। তোমার কাজল কালোকেশী চুল ছুঁয়ে গিয়েছিল বৌণ-পানকৌড়ির বুক, ডাহুকের রেশমতুলি। বটবৃক্ষ নুয়ে পরে ছিল তোমার রূপমাধুরীতে। তুমি এসেছিলে বর্ষণমুখর সন্ধ্যায়। প্রশস্ত মাঠের জলে ভরা যৌবনে, এসেছিলে শাপলা-শালুকে মিশে। স্রোতশীল জল, মাঝিমাল্লার ভাসমান নৌকায় ভেসে অথবা পাড়ার ছেলে কিশোরের জলকেলি খেলায়, ভরা বর্ষার ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শীতল দক্ষিণা বাতাসে, কদমের ঘ্রাণে বৃষ্টি ভেজা খামে।

মনের স্টেশন (গান)

মনের নেই কোন স্টেশন
ছুটে চলে যখন তখন
ফেরারী মন ফেরারী সময়
ধূসর সময়ে হারিয়ে যায়।

নিস্তব্ধ নিরানন্দ নীলাকাশ
কিছু প্রজাপতি উড়ে উড়ে যায়
মুগ্ধতা ছড়িয়ে বাগান বিলাস
মনের নাটাই ঘুড়ি উড়ায়।

মানেনা মন বাধা-ব্যবধান
ছুটে চলে নিরবধি আপন স্টেশন
ফেরারী সময় ফেরারী মন
দূরে বহু দূরে ছেড়ে কোলাহল।

যখন সন্ধ্যা নামে

যখন সন্ধ্যা নামে ….
আবিরের রঙে হারায় ধূসর বিকেল।
অনবরত পাখিদের কলরব
নীড়ে ফিরে যাওয়ার স্লোগান।
শেষ বিকেলের সূর্যটা
লাল আগুনের লেলিহান দিয়ে
শাসাতে চায় ধরাকে।

মেষনার স্রোতশীল নদীর
জলে,বালিহাঁস খেলে যায়।
দু’একটা কাঠবিড়ালির ছুটাছুটি
এগাছের ডাল ছেড়ে ওগাছে।
মাঝিমাল্লারা অাপন নিবাসে
ফিরে যাওয়ায় মত্ত।

কিছু জেলে ছোট ডিঙ্গিনাওয়ে
ভেসে ইলিশের জাল
ফেলে অপেক্ষার প্রহরে।
গায়ের বধু ব্যস্ত হয়ে পরে
রান্নাবান্না শেষ করে
সন্ধ্যা রাতের প্রদীপ জ্বেলে।

জোনাকগুলো নিভুনিভু আঁধারে
আলো জ্বেলে হারিয়ে যায়
রাতের আধাঁরে।
যখন সন্ধ্যা নামে
নীড়ে ফিরে যাওয়ার ছুটাছুটি
অনবরত অনন্ত আদি।

উপলব্ধি

অনুভূতি যখন থেঁতো হয়ে যায়, কাব্যরা তখন পায়চারি করে। নিখুঁত আলপনায় জড়ো হয় কাশফুলে, উড়ে যায় বেদনাতুর কোন স্পর্শের আড়ালে। কাবিনের জমিনে করে জীবনের চাষাবাদ, ফুলের অনাবিল সুবাস, অজস্র কলরব। শেষ ট্রেনের যাত্রী অনন্তের পথে, তখনও নির্মলা সৌজন্য।

দু’একটি কাঠ-ঠোকরা অনুপম কারুকার্যে আপন নিবাস সাজায়, হুতুম প্যাঁচা অবিচল আঁধারে। নক্ষত্রের নিপুণ চিত্রে ঊর্মিমালী, বেলাভূমিতে জাপটে পড়ে সীমাহীন হুংকারে। থেমে নেই কেহ আজো উচ্ছ্বাস আমোদ সৃষ্টি প্রণোদনায়। হেমন্তের ঝরাপাতার মরমর কুহেলিকার সাইরেন, একটি অনুভূতি যন্ত্রনা অথবা যৌবনের।