শান্ত চৌধুরী এর সকল পোস্ট

শান্ত চৌধুরী সম্পর্কে

নিঃসঙ্গতা যখন ঠুকরে খায় দুমড়ে মুচড়ে কাবু করে দেহের বাহীর ভিতর প্রবল সংজ্ঞাহীন অবগাহন। ১ সেপ্টেম্বর, ১৭ ভাদ্র বাংলা ( জন্ম তারিখ )।

ভালোবাসা ৭ (তুমি আমি)

মেঘ কালো কেশ
চোখ জোড়া হরিনি।
ঠোঁটে গোলাপ মাখা
অপরূপ রূপবতী।

মিতালী করি, গভীর আশা
ভালোবাসার জলকেলি।
অপলক দু চোখে নারী
স্বপ্নের নীল পরি।

কবিতারা সুরের পালে
নাগরিক ঐকতান।
কোন এক মেলায়
নাটাই ঘুড়ি তোমার বন্ধনা।

ক্লান্তির বিরামহীন প্রভাতে
সময় মিছামিছি।
কোন এক বিকেলে
তুমি আমি মুখোমুখি।

দু’জনে পথে প্রান্তর মিলিয়ে
অপলক সিমাহীন।
ভালোবাসায় মুগ্ধ-প্রেমময়তা
তুমি আমি, ভালোবাসা।

ভালোবাসা ৬ (তোমার জন্য)

প্রতিকি অনশন করবো
আজ তোমার জন্য।

পাখিদের নিয়ে গণমিছিল করবো
তোমার জন্য।

বট বৃক্ষের মাস্তুলে বসে থাকা হুতুম
পেঁচা হবো তোমার জন্য।

বিজলীর দ্যুতি হয়ে ভস্ম হবো
তোমার জন্য।

এক চিলতে রোদের ভিজে বর্ষা হবো
তোমার জন্য।

নির্ঘুম রাতের তারা হবো
তোমার জন্য।

আমি আনবরত আদি আদিম হবো
তোমার জন্য।

হাজার বছরের পথ পাড়ি দিয়ে
উত্তাল উচ্ছ্বাসে মিলিয়ে যাবো
তোমার জন্য।

ভালোবাসা ৫

তোমাকে সেদিন দেখেছি
লাল রক্তজবা খোপায় গেঁথে
গিয়েছিলে বাসন্তী উৎসবে।
তোমার প্রেমময় দৃষ্টি ছিল
শুধু অচেনা একটি মুখে।
তুমি শুধু ভালোবাসা বিলোতে
আল্লাদে-উষ্ণতায়।
তোমার চোখ দুটি ছিলো
চিরহরিণী কাজল মাখা
ঠোঁটে ছিল লাল লিপিস্টিক।
দক্ষিণা হাওয়ায়
উড়ছিলো তোমার কালো চুল।
শাড়ির আচলে ছিল রোমান্টিক
হাতের ছোঁয়া । ভালোবাসা
ছিলো তোমার শিরা
উপশিরায় প্রবাহমান।
তুমি ছিলে
ভালোবাসা ও আমাতে।

ভালোবাসা ৪

বহু দিন বহু পথ গিয়েছে বয়ে
বলিতে চাই ওগো প্রিয়
ভালোবাসি আমি তোমাকে।

রোদের নাগরদোলা
পুস্পপল্লবে ঘেরা
বাগান বিলাস।

উল্লাসে-উৎসবে প্রজাপতির মেলা
বিরামহীন ভালোবাসা বিলিয়ে।
ভালোবাসি আমি তোমাকে।

ভালোবাসা ৩

তুমি যত কাল বলো
ভালোবাসি।
যত দিন বলো
ভালোবাসি।

যত বার বলো
ভালোবাসি।
তার চেয়ে বেশী
আমি, তোমাকে
ভালোবাসি।

তোমার জন্য বুকের জমিন
আবাদ করি।

তোমার জন্য সমস্ত ভাবনা
ধ্যান, জ্ঞান, সাধনা।

তুমি আমার স্বপ্ন বিলাস
তুমি আমার ভাবনার
অন্ত:করণ।
তুমি আমার
অন্ত:পুর,
স্বপ্নের দৃষ্টি বিলাস।

তোমার মায়াময় শোভা
তোমার মায়াময় দৃষ্টি
তোমার স্পর্শ,
অভিপ্রায়।

আমার ভাবনা বিলাস
আর পূর্ণ অন্তরঙ্গ
উচ্ছ্বাস।

ভালোবাসা ১

কতটা ভালোবাসলে, ভালোবাসা বলে?
কতটা রক্ত ক্ষরণ হলে ভালোবাসা হয়।
জীবনের অণু অধ্যায়, প্রান্তের শেষ
বেলায়ও ভালোবাসার মাপকাঠি।

অজস্র কাক ভোরের নগরীতে ভালোবাসার
ডানা ঝাঁপটায়, চুমু খায় অনবরত।
নব দীপ্ত সূর্যালোকে ফুলের পাঁপড়ি গুলো
অন্তহীন ভালোবাসায় ঝরে পড়ে।

মৃদু শৈল্পিক আবেশ,
রং তুলিতে একে ভালোবাসার ছবি।
জীবন পথের অংক কষে,
নির্মলা অনুভূতি।

ভালোবাসা,ভালোবাসা, ভালোবাসা
স্বৈর্গীক অনুপম, মনের নিপুণ কারুকাজ,
দু’মনের শাণিত বাঁধন।
ভালোবাসি আমি তোমাকে।

জোছনায় সিক্ত মেঘ মালা,
ক্ষুদ্র, ধ্রুবতারা ভালোবাসায় মিশ্রিত।
আদিকালের শুভ্র মহা অধ্যায়,
ভালোবাসা অনুরাগে প্রস্ফুটিত হয়।

ভালোবাসা ২

সাইবেরিয়া থেকে সুন্দরবন
উৎপল শুভ্রতায় মিশে
নোঙর করে সামুদ্রিক
ম্যানগ্রোভ সিক্ত
সমুদ্র স্নান।

পরশ খোঁজে
ভালোবাসার উজান-ভাটিতে
প্রেয়সীর লাল বেনারশী
অথবা একটু শরীরী
পারফিউমের ঘ্রাণ।

ভালোবাসার আদান-প্রদান
বেওয়ারিশ জলাভূমি।
মমতায় উদ্বেলিত
স্বর্গের মোহমায়া।

নির্বাসিত করে
জীবনের সুখ তরঙ্গ।
ভালোবাসা-ভালোবাসা
অন্তরঙ্গ-দেহ স্পর্শ
ভালোবাসা দু’জনে।

প্রস্থান

এক সন্ধ্যায় আমি চলে যাবো
পাখিদের নীড়ে ফিরে যাওয়ার মিছিলে।
কিচিরমিচির স্লোগ্যান মুখোরিত সূর্যাস্তে
বেলা শেষের আন্তরীক্ষ অভ্রতায় ডুবে।
পুরনো প্রচীরের দেয়ালে তৈলচিত্রের
মতো ফেঁকাসে অস্তর্নিহিত আধাঁরে।

নাগরিক ঈশ্বর

এই নগরে ঈশ্বর নেই !
ঈশ্বরের ছায়া মানব পিতা
ভুলের উপর দাঁড়িয়ে আছে
অধিকার নামের প্রহসন।

বিলাসিতা, উৎসব স্বপ্নের মতো
পূর্ণতার অন্তপুরে
এই নগরে আছে যান্ত্রিক
আর কংক্রিটের নগর পিতা ।

নাগরিক তুমি কে ?
তোমার পরিচয় কি ?
তুমি জলে ডুবে মরো
তুমি আগুনে পুড়ো
আমার তাতে কি !

অভাব অনটন
আমার নিত্য সঙ্গী
বিলাসিতা আমার স্বপ্ন।
কথিত স্বপ্নবাজ অন্ধকারে
ডুবে যায় গুপ্ত চরের বালির মতো।

কেউ বেঁচে থাকলো কি থাকলোনা!
আমার চাই সম্পদ,
আমার চাই অট্টালিকা, প্রাসাদ,
নারীর উষ্ণ শরীর
দু’পেয়ালা উস্কি মাদক
জমকালো উৎসব মুখোর সন্ধ্যা।

নাগরিক তুমি কে ?
তোমার জন্মসূত্র কি ?
তোমার জন্মের বিলাসিতা স্বপ্নে দেখ
তুমি শ্রমিক, তোমার যোগ্যতা শ্রম
বিনিময়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকো।

আমার স্বপ্নের যাত্রা অনেক বড়
ইউরোপ, আমেরিকায় দ্বিতীয় নাগরিক
প্রেসিডন্ট প্রাসাদে চোখ।

তুমি কেন নাগরিক অধিকার চাও ?
তুমি বেঁচে থাকো, না হয় মরো।
আমার প্রাচুর্য চাই’ই চাই
আমি ঈশ্বর, আমি পিতা।

তুমি শুধু স্বপ্নের মাঝে বাঁচো
আর আমার অন্তরালে
ভোগ বিলাসিতার দর্শক হয়ে
যাযাবর অথবা ফেরারী।

দহন

কবিতার ফরমেট এমন হবে ( ছবির মতো )

নির্ঘুম রাত জাগা
বাতাসে ভাসমান-গ্লানির দহন।
তখনও যৌবনের নগ্নতায়
প্রত্যাশার ঢেউ প্লাবন।

দহন ক্লেদে ভেসে
ইচ্ছের পরিসমাপ্তি।

প্রিয়তমার উষ্ণদেহ
শুভ্রতা মেখে নিরুদ্দেশ।
ললাটে লেপটে থাকা
তপ্ত প্রণাম।

প্রিয়তমা।

উন্মাদ ইচ্ছে গুলো
গহন রাত্রিতে চুমু খায় জানালায়
নক্ষত্র বিনিদ্র চোখ
আমার দহনে পূড়ে প্রেমার্দ্র

দহন।

চাষার বচন ( কাব্যগ্রন্থ ) বই আলোচনা

বই আলোচনা
🔷চাষার বচন

মাসুদ পথিক

মানবতা যেখানে উকি দেয় সেখানে কবিরা বিলিয়ে দেয় জীবনের সবটুকু সুখ। কবিতা ছুঁয়ে যায় মানবতা, কবিতা ছুঁয়ে যায় প্রতিবাদ, কবিতা ছুঁয়ে যায় দেশপ্রেম, কবিতা ছুয়ে যায় ভালোবাসা।

📖 উৎসর্গ
কাঁদা খুঁড়ে খুঁড়ে —— এইএক পাখি কাদাখোঁচা
রক্তের ভেতর চলছে তাঁর —— ইতিহাস খোঁজা
দেশরত্ন শেখ হাসিনা
শ্রদ্ধাভাজনেষু

📖 দুনিয়ার প্রথম ধানচাষির নাম আমি পাইনি
শুনেছি মানুষ ও গরুর আলজিভের অন্ধ সে কাহিনী

কবির কবিতায় প্রথমত উৎসর্গ ও ভূমিকা উঠে এসেছে মানব জীবনের সংগ্রামী রূপ ও জীবনধারা। অন্য আলোকে কবিতাকে কবি ফুটিয়ে তুলেছেন কবির নিজস্বতায়। জীবন থেমে থাকেনা, সংগ্রাম আর আত্মবিসর্জনেই মানব জীবনের সফলতা, যার দৃষ্টান্ত বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত বিশ্ব শান্তির রোলমডেল জননেত্রী বঙ্গোত্তম শেখ হাসিনা মহান মানবতার কন্যাকে
কবি বইটি উৎসর্গ করেছেন ।

📖 জন্ম রহস্য
আমার জন্ম বিষণ্ণতার গর্ভে, তবে-তো
আমার মায়ের নাম ‘বিষণ্ণ দেবী’ কিংবা ‘বিষণ্ণ বেগম’!

গ্রামবাসী বলে, এইডা একটা জাউরার পুত
এমন-কি আমার মায়ের নাম ‘কান্না’-ও বলে লোক

কবি মানবতাকে স্পর্শ করেছেন রহস্যচ্ছলে জন্ম পরিচয় যেখানে মুখ্য বিষয় কবি প্রচলিত নিময়ের বাইরে মানবকে করেছেন মহা মানব।

📖 পংক্তিমালা (অংশ বিশেষ)

🔶ফল
তবে কি পতিত পালকের উৎস
গন্তব্যের দিকে হারিয়ে যাওয়া কোন পাখি না?

বনের ভেতর ঢোকার মুখেই বাড়িখানা;
বাতাসে উড়ছে হৃৎপিণ্ড জোড়া,
গমনপথে জলীয় কণা কত-না!

🔶হিরামন
যায় আসে যাত্রী ও ঘাটের মাঝিরা, কে আমার পিতা?
বাতাসে কিছু কানকথা…. এই অন্ধকার কি আমার ধাত্রী

🔶কফিন
প্রিয় উৎকণ্ঠা প্রদীপ হাতে দাঁড়াত এসে তুলসী তলে
একদিন কূপির পাশে প্রিয় শাদা জোছনার গলে

🔶চলচ্চিত্র অ্যান্ড স্থিরচিত্র
এবং গ্রাম মানেই এখন
কিছু স্থিরচিত্র চলন
ইমেজের ডায়াগ্রাম,

আর মধ্যেবিত্তের নস্টালজিয়া
রক্তে লুকানো হীনম্মন্য’তার

🔶বেজন্মা ধান
ফলে, খেতে খতে ঘুরে সুতানলী সাপ,
বাতাশে বেহুলা শরীরের ম্রিয়মাণ উত্তাপ
কুড়িয়ে চলে যায় গাঙুরের ছোট মেয়ে,
কিছু গিমা শাক কিছু স্মৃতির পরাভব

আর ঝরাধান থাকেই পুনর্জন্মের চেষ্টায়,
মাটিতে কখন পড়বে বৃষ্টির লিবিডো ছাঁট
নিষিক্ত হবে ধান, দেহ-নদীর পিছল ঘাট

🔶অন্ধচাষা
আমি চাষা অন্ধ ভূ-তল
একতারাতে ধরবে ফল
বাঁধছি যখন বীজের মন
গোলা ভরবে এই-না ধন

🔶বায়োলজি
নিচের তলায় দূর্বাঘাস, বুকে ডাকে জোড়াহাঁস

🔶চাষার বিজ্ঞাপন
যতই ভাবো আদিম আমি কী তার কিছুই জানি না
আমিই তো করেছি সৃজন সেই প্রথম বীজের গোপন ভাষা?

🔶চাষার বংশধর
আমরা চাষার বংশধর
বাড়ি মাইজের চর
গাঙে পাইছে ঘর
গাঙে খাইছে ঘর …

📖 কাব্যের নান্দনিকতায় কবি ফুটিয়ে তুলেছেন মানব প্রেম, কৃষক, শ্রমিক, রাখাল, মানব জীবনের প্রকারভেদ, উপলদ্ধি করেছেন মানবিক শক্তির ভাবনা সংগ্রামী জীবন, অঞ্চলিক জীবনধারা। ভিন্ন ও শৈল্পীক কবির কলমের আঁচড় মানুষের আবেগ সামাজিক চিন্তা সামাজিক উৎস থেকে সম্প্রসারিত করেছেন মানবিক পথে।

📖 জীবনের জয়গান

❇️ভালোবাসার স্টেশন
এই একহারা রেলপথ
গ্রামের পেছনে দিয়ে, বহুদূর
তোমার অতীতের দিকে বেঁকে গেছে
আমার চিঠির বুকে নিচু মেঘ, রক্তের টানা আছে;
স মা ন্ত
রাল

❇️পারসেপশন
কে-না জানে পাহাড় মানেই খুব উঁচু;
মসৃণ নয়
আমি তো জেনেছি পারসেপশন
এক মায়াবী অব্যয়
এইসব দূরত্বের গাঁয়ে কতো-না একান্ত
ক্ষত বেঁচে রয়

❇️বীজের সীমানা
প্রেম ও স্বপ্ন বুকে ঈশ্বর কেবল ওঠে নাক ডেকে, তাহার
আর আঁকে, দু’জনের মাঝে বিধি ও সীমার বাদাড়।

❇️সখা
ধানের সাথে বুনছি মনের কথা যত
আর দুই জীবনের ক্ষত ….

❇️উঁবু হয়ে মজেছি কাজে
শুধু তোমার নামে লাঙল চালাই
শুধু তোমার মনে লাঙল চালাই

দেহ তোমার মাটির ঢেলা
পথ হারালাম সন্ধ্যাবেলা
লাঙল ছোট কাদার সুখে
ফলবে বাধার মুখে

হাজার বছর মাঠের মাঝে
উঁবু হয়ে মজেছি কাজে

❇️সখী তোর গোপন শালুক
ভাবি আজ কুড়ানোর সুখে; খুব গোপনে ছুঁয়ে যাব গোপন
যেখানেই হাত রাখি কেবল দেখি; হায় লাজুল এ মন

এ-কী! সখী তোর কেমন মন; শাদা শাপলায় রাখা এক ধন

❇️একটি গ্রামীন প্রেমের গল্প
বাড়ি না-ফেরা এক রাখাল এর নাম দিয়ে গেছে ‘বৃন্দাবন’

❇️আমার স্মৃতিবালা
চল, আমরা পেরিয়ে যাই এইসব দৃশ্য তুলে সঙ্গমের ঢেউ।

📖 নিপীড়িত মানুষের মনের ভাষা কবিতা।প্রাণের আকুতি কবিতা। প্রতিবাদের হাতিয়ার কবিতা। কখনও দেশ ও জাতির অমোঘ নির্দেশ করে কবিতা।
সুন্দর ও সরলতার বীজ কবিতা। কবি মাসুদ পথিক তার কবিতায় জীবন ও বাস্তবতার শৈল্পীক কারুকাজে কবিতাকে সতন্ত্র নতুনত্বে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। আধুনিক কবিতায় কবির সতন্ত্র সত্তা কবি স্থান করে নিবে পাঠক মহলের মনে।

চাষার বচন
মাসুদ পথিক
প্রচ্ছদ এঁকেছেন চারু পিন্টু
প্রকাশ : ডিসেম্বর ২০১৬
শ্রকাশনীঃ
শ্রাবণ প্রকাশনী
১৩২ আজিজ সুপার মার্কেট (২য় তলা)
শাহবাগ, ঢাকা-১০০০
মূল্যঃ ২৫০ টাকা ।

লেখকঃ
শান্ত চৌধুরী
কবি, প্রাবন্ধিক, সংগঠক
গুলশান-ঢাকা
যোগাযোগঃ [email protected]

কালের নটরাজ ( কাব্যগ্রন্থ ) বই আলোচনা

বই আলোচনা

কালের নটরাজ (কাব্যগ্রন্থ)

কামরুল ইসলাম

আমি মহাকালের নটরাজ
ভূমি থেকে উত্থিত শিবের অগ্নিবাণ, দ্রোহী শুদ্র চণ্ডাল
আফ্রিকার লুমুম্বা, স্পার্টাকাস, রাশার লেনিন
আমিই শৌর্যসাধক, বীরত্ব আমার নাম
কালের মহিমায়, মহানিনাদের নৈপুন্যে
প্রেম ও শক্তির প্রদীপ জ্বালাই।

💢বাস্তবতার অনুধাবন অনুপম ভাষাশৈলী স্বতন্ত্র পঙ্ক্তিমালা কবিতায় লক্ষনীয়।

নটরাজের বার্তাঃ
হে কালজয়ী মানব ! তোমার জন্য শুভ বার্তা
বিশ্বব্যাপী নতুনেরে করে আবর্তন …..

নটরাজ মানবভূমির রূপ পরিদর্শের বিশ্বব্যাপী পরিভ্রমনে পরিব্যাপ্ত, ক্রমান্বয়ে বিশ্বরূপে আবগাহন…

বিশ্বরূপঃ
মহাসাগরের জলস্রোত ঘূর্ণিজল, উৎকণ্ঠার অবসাদে নটরাজ, শিল্পের উদ্যান ফসলি স্বপ্ন উঁকি দেয় জলের বুঁদবুদে, …… বিশ্বরূপের মঙ্গলপ্রদীপ-অফুরান নিবেদনে। (পৃষ্ঠা ১১-১৪)।

💢কবির কবিতায় চৌকষ শব্দচয়ন সতন্ত্র ধারা মনকে ভরিয়ে তোলে। রোমান্স, প্রেম, বিরহ জীবন ও জগতের বাস্তব প্রকাশ কবিতার পঙ্ক্তিমালায়।

নটরাজঃ
এ ভর আয়োজন বিমর্ষ হেমলকে নটরাজ দাহিত স্বপ্ন বাসরে চেয়ে থাকে বিশ্ব পটভূমির ওপর- এ কোন বিশ্বরূপ ! যে রূপে অবগাহিত, তা কী নটরাজের বিশ্বালয়!

গানঃ
এমন ভূবন তারে খুঁজে ফিরি, যে আছে প্রাণে প্রাণে মনের তারে প্রাণে প্রাণে খুঁজি, এ ভূবনে … ওগো দাও সেই পূণ্যভূমি, মানবের পূণ্যভূমি ওগো, খুঁজে ফিরি যে আছে প্রাণে প্রাণে ।

মর্ত্যবিহারঃ
উষসীর রূপের মর্ত্যবিহার নটরঙ্গিনী, আঁচলজুড়ে লাবন্য নুয়ে পড়ে-রৌদ্রের ভেতর মুঠো আলোয় ভরে থাকে বিস্ময়, নয়নের শোভায় প্রভাতের রূপে-সপ্তগ্রামের নগর …..

আয়োজনঃ
সন্ধ্যের খোলা আকাশ, পড়ন্ত রোদের প্রতিশ্রুতি, সজীব স্বতন্ত্র সত্তায় গভীর স্বপ্ন নিয়ে গড়ে তোলে অনুরাগ ….. শতাব্দীর তারার মেলায়-নটরঙ্গিনীর উৎসব।

নীলসন্ধ্যাঃ
বিমর্ষ অনুভূতির মায়াশ্রমের প্রেমলীলায় মগ্ন নটরাজ ও নটনন্দিনী।

চাঁদের নটরঙ্গঃ
নীলপদ্মের ভ্রমে শূন্যরূপে নটরাজ,রূদ্ররূপে করে গ্রস …. যদি জানতে-রূদ্রের অনলে চাঁদ,অপরূপার নটরঙ্গে। (পৃষ্ঠা ১৫-২৪)।

💢বিশ্বব্যাপী অস্তির সময় নাগরিক জীবনের বাস্তব উপলদ্ধি ও পূর্ণ সারসংকলন পরিলক্ষিত হয় কবিতায়, শক্তি ও প্রেমের প্রতিক নটরাজের উত্থান মঙ্গলময় ধারার নতুন সমন্বয়ে কবিতাকে করেছে প্রাণবন্ত।

মানচিত্রঃ
চারদিকে শুকনো পাতার শিস, ভ্রমনের গুঞ্জন
গাঙশালিক ভুলেছে পথ, পথের ঠিকান
ঘাসের ওপর ফড়িং প্রজাপতি, মাঠে মাঠে ঘাস
আমি নীরব শান্ত, শতকলের ঘুমন্ত নটরাজ, দ্বারের প্রহরী
আকাশজুড়ে মেঘ আর নীলিমার ভস্ম, পড়ে থাকে ঈগলের মানচিত্র।

নবীন আলো ক্রমশঃ মেলে ধরে প্রেম
বীণার সুরে অধীর অনুরাগ
তবু ঐ রূপখানির ভেতর নোনাজল
ভেঙেছে দেয়াল…..
ধূসর স্বপ্ন অভিসারে।

কেতকীঃ
আচার্যের ধর্ম কুটির অন্তরলোকের সৌন্দর্যলোক অষ্টাঙ্গিক মার্গে
পরিশোধিত, জীবনের মোহিত আবেশে সম্যক দৃষ্টিপ্রাপ্ত…..

অশনি বাহনঃ
জলে জলে তরঙ্গ-ভঙ্গে কলধ্বনির উচ্ছ্বাসে নটিনী
নৃত্যপটিয়সী, মৃদঙ্গের তাল-বেতাল উতাল উন্মত্তে
শাদাটে নীলে নীলে নিরন্তর ভাসমান উদাস আরতি
পরম রঙের জ্বলন্ত পূর্ণিমায় হিপ্লোলিটাসের অঞ্জলি।

নির্বসিত প্রেম অলয় মৈনাক পর্বত, নটরাজের ভ্রমবশতঃঅবজ্ঞায়
নটিনী প্রলয়িনীর রূদ্ররূপে….

নটিনীর প্রেমঃ
নটরাজের স্বপ্ন অনুভূতিতে নটিনীর কালচক্র অনুভূত, কালে কালে
এই চক্র নবকালের উদ্বোধনে সহায়তার প্রতীকরূপে আবির্ভূত….

ফাগুণের রূপেঃ
ফাগুণের রূপে, শূন্য পেয়ালা, তবু শূন্য নয়
অপরূপের রূপ, নিরন্তর সব পিয়াসে মগ্ন হয়
বসন্তের নারী, ফুল উদ্যান, সরাব যত সবি
জন্ম মোর ফাগুণে, উন্মত্ত ফাগুণের কবি।

এসো ধ্বংস করিঃ
মঙ্গল প্রভাতের সেই অনন্দধ্বনিতে তুমি ওঠো
সহস্র বছরের অভিশপ্ত নোনাজল, সেবন করো
দ্রোহে দ্রোহ কর আঘাত, ওরা ধ্বংস হোক।

অনুভূতিঃ
প্রশান্তির সূর্য উড়েছিল
ও-বেলায়
স্বপ্ন দোলে
দিকভ্রান্ত নাবিকের….

প্রলয়ের বাদ্যঃ
ততক্ষণে তটে তটে বিদ্রোহ,
মরা গাঙে পড়ে থাকে শাদা বক …
যদি কিছু হতে না পারি, তবে দ্রোহী হবো
ধ্বংস প্রলয়ের বাদ্য বাজাবো নিরন্তর।

পৃথিবীর বুকে সব প্রেম
শত রূপে শত ভাবে,
তবু নিরবধি
মানবের তরে মানব হয়ে….

নটিনীর অভিলাষঃ
ওগো মহাকালের নটরাজ। শক্তির পূজারি নটরঙ্গিনী তোমারি দ্বারে
পূজার অর্ঘ্য লও, এসো শক্তির যুদ্ধাস্ত্রে, এসো ভালোবাসায়, এসো প্রেম-প্রদীপে
মহাকালের নব সূত্রপাতে এসো, ধ্বংস করো বৈষম্যের আঘাত।
আমি যে প্রেমের সারথী, মহাকালের প্রেমবীণায় এসো
জীবনের জয়গানে এসো, এসো সৃষ্টি প্রলয়ের আনন্দযজ্ঞে।

গানঃ
এমনও প্রেম দিও নাগো তুমি
এমনও ভরা দিনে
নিশিদিন ভাবি তোমারে, ওগো প্রিয়
এমনও প্রেম দিও না গো তুমি

আমিই নটরাজঃ
আমিই সর্বকালের নটরাজ
যুগ থেকে যুগান্তরে, শতক থেকে শতকে
রোদ ও ছায়ার মতো বারবার ফিরে আসি
বীরত্বের মহাযজ্ঞে, সৃষ্টি প্রলয়ের বাঁশি বাজাই
মহাধূমকেতু হয়ে প্রেয়সীর ললাটে, এঁকে দেই
শান্তির বার্তা ! মহাশান্তির বিশ্বালয়। (পৃষ্ঠা ২৪-৬৭)

💢কবি, প্রাবন্ধিক, সংগঠক কামরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের নতুন ধারার কবি, বিশেষ করে তার রোমান্টিক কবিতা, গান, গদ্য কবিতায় রয়েছে নতুনত্ব। আধুনিক কাব্যমালা, শব্দবিন্যাস, জীবনও বাস্তবতার অনুপম কথাচিত্র উপস্থাপন করেছেন কবিতার ক্যানভাসে, কবিতায় এঁকেছেন জীবনচিত্র। নিজস্ব শব্দচয়ন, বিষয়বস্তুর এক নিপুণ গাঁথুনিতে কবিতাকে করে তুলেছেন রঙিন। ঐক্যতান, প্রেম, বিরহের সতন্ত্র সত্তা আধুনিক কবিতার পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নিবে খুব সহজেই।

কালের নটরাজ
কামরুল ইসলাম
প্রচ্ছদ এঁকেছেন চারু পিন্টু
প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
প্রকাশকঃ মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন
একাত্তর প্রকাশনী
৭৮ দক্ষিণ সায়েদাবাদ
ঢাকা-১০০০
মূল্য : ১৫০ টাকা।

লেখকঃ
শান্ত চৌধুরী
কবি, প্রাবন্ধিক, সংগঠক
যোগাযোগঃ [email protected]

তুমি ও প্রকৃতি


তুমি ও প্রকৃতি

তোমাকে একটি বিকেল দিবো
তুমি তোমার মতো করে সাজিয়ে নিও
প্রজাপতি, ফুল, পাখি, নির্মলবায়ূ।
একগুচ্ছ বৃষ্টি বিলাস, বৌণহাঁস, ডাহুক, বক
হিজল বনের শুভ্রলাল ফুলের বাড়ি
সবুজ সতেজ দূর্বাঘাস, ঘাসফড়িং।

ফুলগুলো তোমার উঠোনে সুগন্ধ বিলোবে
পাখির কিচিরমিচিরে মুখোরিত হবে
তোমার চারপাশ, বৃষ্টি স্রোতের পরশে
ভিজে যাবে লাল হিজলের ফুল।
বিকেলের উত্তাল প্রবাহ শিহরণ
মায়াময় স্বপ্নের তুমি
ডুবে যাবে প্রকৃতির মাঝে।

মেঘ-সূর্যের লুকোচুরি বিলাসে
মুগ্ধ হবে তোমার খেয়াল
পানকৌড়ির মতো সাতার কাটবে
রৌদ্রের পরশে, প্রজাপতির রঙিন ডানায়
সুখের আল্পনা এঁকে। নিস্তব্ধ,নিঝুম
প্রকৃতির রূপে বিমোহিত তুমি।

বিকেলের সব রঙ তোমার মাঝে মিশে
এঁটেল, বেলে মাটির মতো প্রকৃতি নিপুণ
আত্মসুখে মাতাবে উপভোগ্য রূপ।
তুমি ডুবে যাবে, বিকেলের স্বার্ণালী সোপানে
প্রকৃতির সবরূপ মিলিয়ে যাবে তোমাতে।
তোমাকে একটি বিকেল দিবো,
তুমি তোমার মতো করে
সাজিয়ে নিও সুখের পরশে।

কবির অস্তিত্বে কবিতা


ভাবনার দিগন্ত।

আমার অস্তিত্ব জুড়ে কবিতা
আমি কবিতাকে ছুঁয়ে যাই।
কবিতাকে আঁকড়ে ধরি
কবিতাকে রাখি অন্তহীন।

আমার অস্তিত্ব জুড়ে কবিতা
কবিতার অস্তিত্ব জুড়ে খুঁজি মানুষ।
কবিতার অস্তিত্ব জুড়ে খুঁজি প্রেম
কবিতার অস্তিত্ব জুড়ে খুঁজি মানবতা।

আমার অস্তিত্ব জুড়ে কবিতা
কবিতা অবিনশ্বর।
কবিতা সৃষ্টির উল্লাস
কবিতা মহাকালের মহাকাব্য।

কবিতার অস্তিত্ব জুড়ে সোনালী চত্বর
কবিতার অস্তিত্ব জুড়ে সৃষ্টিশীলতা।
কবিতার অস্তিত্ব জুড়ে খেয়াল
কবিতার অস্তিত্ব জুড়ে দেয়াল।

আমার অস্তিত্ব জুড়ে কবিতা
কবিতার অস্তিত্ব জুড়ে কবি।
কবিতার অস্তিত্ব জুড়ে দেশপ্রেম
কবিতার অস্তিত্ব জুড়ে প্রতিবাদ।

আমার অস্তিত্ব জুড়ে কবিতা
কবিতার অস্তিত্ব জুড়ে মুক্ত বিহঙ্গ
কবিতার অস্তিত্ব জুড়ে শ্লোগান।
কবিতার অস্তিত্ব জুড়ে বিজয়
কবিতার অস্তিত্ব জুড়ে স্বদেশ।

শহুরে রাত ও দুঃখ বিলাস

আঁধারের ছিটাফোঁটা নেই কোথায়ও
আলো ঝলমলে রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের স্পষ্ট
অবলীলায় মৃদুমন পথচারী
কোথায়ও কোলাহল নেই,সময়-ঘণ্টা
অবিরাম অবিনশ্বর রাতের মায়ায় ডুবে যায়।

কিছু মানুষ রাত জেগে!
ঘর নেই, সংসার নেই
সংগ্রামী জীবন নেই
আছে শুধু বেঁচে থাকার জগদীশ্বর প্রচেষ্টা।

জীবনে যখন চাওয়া পাওয়া বলে কিছু থাকেনা
স্বপ্নের কোন রঙ থাকেনা
নষ্টালজিক ধূসর রাতে নোঙ্গর করে
কল্পনার রঙ মেঘলা আকাশে ভেসে যায়
দূরের নক্ষত্রে,আর অবশিষ্ট সুখ যাপিত হয় দুঃখ বিলাস।

বেওয়ারিশ কুকুর গুলো এপার-ওপার করে
কখনও পথচারীর সঙ্গী হয়!
কখনও আবার পালিয়ে বেড়ায়!
দৃশ্যমান অদ্ভুত নিজস্ব তায় স্থায়ী রাত
স্বপ্নের চূড়ায় হাবুডুবু খায়
পার্টি সেন্টার,নাইটক্লাব, পানশালা,
ভদকা, হুইস্কি উৎসব।
কিছু মানব লুটে নেয় অবলীলায় সর্বত্র।

(অসমাপ্ত)