সাঈদ চৌধুরী এর সকল পোস্ট

খাওন (একটি ভিন্নধর্মী উপলব্ধি)

মানুষের অসাধারণ কিছু গুণাবলির মধ্যে খাবার খাওয়া একটি গুন। খাবার খাওয়ার সময় মুখের অঙ্গ ভঙ্গিগুলো আমি খুব তীক্ষ্ণ ভাবে অবলোকন করি। কি যতন করে যে তার খাবারগুলো মানুষ চর্বন করে তা সত্যিই বিস্ময়কর। প্রথম যখন প্লেটে কেউ ভাত নেয় তখনই দেখবেন মুখের অবয়বটা সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে যায়। তরকারি কয়েক প্রকারের থাকলে সবার আগে দেখে নেয় তার পছন্দের কোনটা। ওটা একটু পরে খাওয়া হবে। শুরু হয় চামিচ দিয়ে যেকোন এক ধরণের তরকারি নেওয়া থেকে। খাবার চর্বনের সময় ঠোঁটের ভাঁজের পরিবর্তন, গালে খাবার আটকে যাওয়ার পর জিহবা দিয়ে ভিতর থেকে এনে তা আবার চিবানো এবং কোন বাড়তি কিছু তরকারির সাথে যোগ করে খাওয়ার স্বাদ বাড়ানো যেন এক অসাধারণ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে।

লেবু নেওয়ার সময় দেখবেন মুখের পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য। যখন লেবু চিপে রস বের করে ভাতে মাখানোর সময় হয় তখন ঠোঁটের আকুতিই বলে দেবে এখানে টকের উপস্থিতি আছে বলেই তার ঠোঁটের ভাঁজটা এমন ! তারপর ঝাল বা কাঁচা মরিচ খাওয়ার সময় ঠোঁট একটু চোখা করে ভেতরের দিকে বাতাস টান দেওয়াও আলাদা প্রশান্তি আছে।

ডাল বা তরল কিছু দিয়ে খাবার যখন শেষ করার মুহূর্ত আসে তখন যেন আলাদা আনন্দ । পুরো প্লেট থেকে রস নিয়ে তা চেটে খাওয়া ! তারপর একটু পানি ও শান্তির ঢেকুর ! আমার মনে হয় মানুষ যতগুলো সময় একেবারে পবিত্র হয়ে ওঠে তারমধ্যে খাবার খাওয়ার সময়টা অন্যতম। এই অন্যতম পবিত্র হয়ে ওঠার সময়টিকে উদযাপন করুন এবং প্রতিটি খাবারই স্বাদ নিয়ে গ্রহন করুন দেখবেন মনের প্রশান্তিতে আলাদা কিছু যোগ হয়েছে।

অথবা যখন আপনার কোন খাবারই মন ভরাতে পারেনা তখন একজন সুবিধা বঞ্চিত মানুষের খাওয়ার আকুতির কথা ভাবুন দেখবেন খাবার ভালো লাগছে এবং আপনি আর খাবার অপচয়ও করছেন না। শিক্ষার জায়গা অনেক এবং আনন্দেরও। আসুন প্রতিটি শিক্ষা নেই আনন্দের কাছাকাছি গিয়ে।

বাবা মা-ও একদিন শিশু হবে

শিশুবেলায় বাবার আঙ্গুল ধরে ঘুরে বেড়ানোর কথা মনে হলেই মনে পড়ে আমার বৃদ্ধ দাদার কথা। দাদা বৃদ্ধ অবস্থায় আমার বাবার সাথে খুব বেশী ঘুরে বেড়াতে চাইতেন। দাদা প্রায়ই কথা বলতে শুরু করলে আর থামতেন না। বাবা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। কখনও কখনও একবারে মধ্য রাত পর্যন্ত দাদা কথা বলেই যেতেন। স্মৃতিচারণ, সাংসারিক, জীবনে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক ঘটনা সব কিছুই থাকতো এই আলাপচারিতার মধ্যেই। আমার কাছে খুব আশ্চর্য মনে হত যে বাবা সারা রাত ধরে দাদার একই কথা শুনে যায় তবুও কখনও বিরক্তি বোধ করে না এর কারণ কি আসলে !

উত্তর পাওয়ার জন্য অনেকগুলো বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। দাদা এবং দাদু মৃত্যুর পর বুঝতে পেরেছি শূণ্যতা আর অনুভূতির কতটা গাঢ়ত্ব। বৃদ্ধকালে দাদা এবং দাদু দুজনেই একেবারে শিশুর মত হয়ে গিয়েছিলেন। যাই করতেন সব কিছু বাবাকে জিজ্ঞেস করে করতেন। বাবা অনেক সময়ই দেখতাম দাদার বিছানা থেকে ময়লা পরিষ্কার করে দিচ্ছেন এবং আমার মাও সাহায্য করছেন। এত কিছুর পরও দাদা দাদু প্রায়ই একাকী আলাপ করতে এবং বলতেন সেই তারুণ্য ভরা জীবনের গল্পগুলো। এক সময় একজনের মৃত্যুর পর যখন অন্যজন খুব বেশী একা হয়ে যান তখন দেখলাম শিশু আচরণের একেবারে চুড়ান্ত পর্যায়।

ঠিক এই সময়টাতে প্রতিটি মানুষই একদিন আসে। কিন্তু প্রতিটি মানুষই কি আমার দাদা দাদুর মত সঙ্গ পায় ? অনেক প্রতিষ্ঠিত পরিবার গুলোর এখন একক পরিবার হিসেবে থাকতে পছন্দ করছে। বাবা মাকে তারা ঝামেলার মনে করে। একটি পরিবারে যেখানে সন্তান আছে কিন্তু বাবা মা নেই এ বিষয়টি যে অভাবের, তাড়নার তা যেন ভাববার মানুষই পৃথিবীতে এখন আর নেই। আরেক ধরণের পরিবার আছে যারা বাবা মা এর সাথে একসাথে থাকলেও বাবা মায়ের খবর রাখতে যেন খুব অমনোযোগিতা ! তেমনি একটি বাস্তব দেখা গল্প বলি।

আমাদের বাড়ির কাছেই একজন মানুষ যিনি খুব বেশী প্রতিষ্ঠিত সমাজে। রাজনীতির সাথেও খুব বেশী সংশ্লিষ্টতা আছে তার। সে হিসেবে প্রতি ঈদে যাকাতের কাপড় নেওয়ার জন্য প্রচুর পরিমান মানুষের সমাগম ঘটে তার বাড়িতে। শাড়ি লুঙ্গি দিয়ে সবার মন জয় করে নেন খুব তাড়াতাড়িই। মানুষ দোয়া করে যায় আর তার মুখে দেখি অনাবিল হাসি !

তার মা বৃদ্ধ অবস্থায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। এক সময় একটি ছোট্ট ঘরে তার মাকে আমরা বেঁধে রাখতেও দেখেছি ! কি সেই মর্মান্তিক দৃশ্য ! চিৎকার করে কান্না আর অভিশাপের চরম হাহাকার দেখে হৃদয়ে দাগ কেটে যেতো বার বার ! প্রতিবেশীরা কিছু বললে তাদের উপরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতেন তিনি।
আচ্ছা যখন এই লোকটি খুব ছোট ছিলেন তখন মা কিভাবে বড় করে তুলেছেন ? আমার ছোট্ট বাচ্চাটির জন্য রাতে ঘুমোতে পারি না, তার আবদার রাখার জন্য মধ্য রাত্রিতে দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে চাঁদ দেখাতে হয়, যখন হাঁটা শুরু করলো একাধারে দু-ঘন্টা ধরে তার হাতে ধরে ধরে হাঁটাতে হত, একটু মন খারাপ হলেই আমার কোলেই অর্ধেক রাত কাটিয়ে দেয় আরও কত কি ! এরকম তো প্রতিটি শিশুই বাবা মা কে ঘিরেই বেড়ে ওঠে। তারপর শিশুরা বড় হয় আর বাবা মায়েরা হয়ে ওঠেন শিশু !

যখন বাবা মায়েরা শিশু হয়ে ওঠেন তখনই যেন ঘোর বিপত্তি। এই বিপত্তি গুলোই প্রবীণদের জীবনকে ঠেলে দেয় অসহায়ত্বের দিকে। বৃদ্ধাশ্রমে না গিয়েও বয়স্ক মানুষেরা অনেকেই আছেন ঘরে বন্ধী হয়ে। দেখার কেউ নেই, কথা শোনার কেউ নেই, নেই মান অভিমানের কোন পরিসমাপ্তির মানুষও !

আপনি যখন পূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত তখনই হয়ত আপনার বাবা মা আপনার শিশু জীবনে ফিরতে শুরু করবে। এটাই চিরাচরিত নিয়ম। আমাদের শিশু জীবনে আমরা যেমন বাবা মাকে ধরে ধরে দাঁড়াতে শিখি তেমনি আমাদের বাবা মায়েরাও আমাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার সময় যেন আমরা পাশে থাকি এটাই বড় কর্তব্য। ধর্মগত দিক আর বাস্তবিক দিক যেভাবেই যাই না কেন পিতামাতার স্থান সবার উপরে। সুতরাং এখনি আমাদের মানবিকতার উন্নয়ন ঘটানোর সময়।

পারিবারিকভাবেই শিক্ষা দিয়ে সন্তানকে বড় করুণ যে সন্তানই বাবা মায়ের শেষ আশ্রয়স্থল। আগে থেকেই শিশুদের বোঝাতে হবে একটা সময় বাবা মাকেই আবার সন্তানের দায়িত্বে থাকতে হয় বা হবে। সঠিক শ্রদ্ধার জায়গায় যদি বাবা মাকে স্থান দেওয়া যায় তবে বৃদ্ধ অবস্থায় বাবা মা কে সন্তানেরা নিজেদের শিশুদের মতই আদরে লালন পালন করতে থাকবে।

আমার বাবা দাদার সাথে যে আচরণ করতেন তা আমার প্রায়ই মনে হয় আর আমি শুদ্ধ হই। একারণেই যৌথ পরিবার প্রথাও প্রয়োজন যাতে করে একজনকে দেখে অন্যজন অনুপ্রাণিত হয়। বয়স্ক মানুষ একটি বাড়ির সবচেয়ে মূল্যবান মানুষ হিসেবে বসবাস করবে এটাই আমাদের চাওয়া।

চাঁদ

চাঁদ উঠেছে
এই চাঁদটিই হাজার বছর ধরে উঠে যাচ্ছে
সম্রাট বাবর এই চাঁদটিকে দেখেই মনের কোণে যুদ্ধের মানচিত্র আঁকতেন
শাহজাহান গড়েছেন এই চাঁদের আদলেই তাজমহল
বিশ্বাস করা যায়
মাইকেল মধুসূদন দত্ত, নজরুল আর বঙ্কিমের বাংলাদেশে

এই চাঁদই সাহিত্যের সবটুকু রস দিয়েছে
অবাককর তথ্য হল এই চাঁদে ভ্রমণ করেই প্রথম মানুষ অসাধ্য সাধনের
দুয়ার খুলতে শুরু করেছে বলা হয়
কোটি বছরের স্বাক্ষী হয়ে জ্বলে থাকা চাঁদটি
প্রতিবার পূর্ণিমায় বার্তা দেয়
আমি কোটি বছর জ্বলেও দেখো ভালোবাসার আলো ছড়াতে পারি
প্রতি অমাবস্যায় একটি কথা বলে যায়
ভালোবাসার পর যে অন্ধকার হয়
তাকেও আমি খুব করে উদযাপন করি !

চাঁদ, গ্রহ ধরে নিয়ে যদি বলি
তবে সেটা একটি উপাদান হতে পারে মহাবিশ্বের
কিন্তু যদি বলি “চাঁদ” একটি মহাকাব্য
তবে কি তা শুধু সাহিত্যের কাব্যিকতা দেবে
নাকি আদম-হাওয়া থেকে শুরু করে আজ অবধি
সকল মানুষের মিলনের, বিরহের, অবারিত আনন্দের,
দ্রোহের, বিগ্রোহের, অশান্ত হৃদয়ের অথবা অঝোর ধারার কান্নার
স্বাক্ষী হয়ে থাকা কোন জ্বলন্ত পিণ্ড হবে ?

চাঁদের রহস্য আর বট বৃক্ষের রহস্যের যেখানটাতে মিল
প্রতিটি পূর্ণিমা রাতে আমি সেই বিন্দুতে ফিরি
যত কষ্টই হোক পথিক যেমন বটের ছায়া খোঁজে
তেমনি বিরহী মানুষ গুলোও চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে
“ও চাঁদ, তুই আমার সবটুকু দুঃখ নিয়ে যা”
আমি তাই নিঃসঙ্গ বিকেলে একবার হলেও মনের অজান্তে
পূব আকাশে খুঁজি
হয়ত এই একটু পরই এক ফালি চাঁদ আমাকে আলো দেবে
আমি নিরেট সাদা হাল বাওয়া জমিতে বুক চিতিয়ে শুয়ে
চাঁদের আলোয় নিজেকে সঙ্গীহীন ভেবে
চাঁদের একান্ত সঙ্গ নেবো
আর ভাববো তুমি, আমি, চাঁদ এক সরল রেখা পরিবেষ্টন করে
বিন্দুতে মিলিত হয়ে ভালোবাসার বৃত্ত হয়েছি…

ভাত

যখন আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে তখন টাকা দিয়ে কি করবেন তার একটা ফর্দ তৈরী করা হয়। সেখানে ভ্রমণের একটা অংশ থাকে, গিফটের একটা অংশ থাকে, অংশ থাকে কিছু মানুষকে আনন্দ দেওয়ার। কতশত ইচ্ছের সাথে যোগ হয় টাকা দিয়ে জলসাঘরে ভালোবাসা কেনা, সুস্থতা কেনার প্রয়োজনীয়তা আর কত যে ছালাম পাওয়ার দাম্ভিকতা তৈরী হয় তারও একটি ফর্দ মনে মনে ঠিক করে মানুষ !

কেউ কেউ রাতে ভাত খেতে পারে না। প্রবল অসুস্থ। বসে থেকে থেকে ডায়বেটিকস হয়েছে। টাকার অধিক ব্যাপ্তিতে ব্লাড প্রেশারও হাই থাকে। কোন রকম খেয়ে রাত কাটিয়ে দিতে পারলেই যেন শান্তি। তাই কি আর হয় ? মধ্য রাত্রিতে উঠে খোলা আকাশের দিকে চেয়ে ভাবতে হয় আপন মানুষগুলোর দূরে চলে যাওয়ার দুঃখ, নিজের মানুষের অবহেলার দুঃখ আরও কত কি ! সব কিছুর পরও তার কাছে যা আছে তা হল টাকা। বিশ্বাস করা যায় টাকা দিয়েই ভাত কিনতে হয় ! বিশ্বাস তো করতেই হবে আমাদের।

বিপরীতে খুব রোগাক্রান্ত একজন মানুষ। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। প্রতিদিন সকাল হয় শুধু পরের দিনের ভোর দেখার প্রত্যাশায়। তার কাছে ভাতের আকাঙ্ক্ষা নেই। সে স্যালাইনে বাঁচে। তার বাঁচা, শরীরে রক্ত প্রবাহ আর চোখের দৃষ্টি সবকিছুই চলে অন্য মানুষের দেয়া সাহায্যে। কিন্তু এই মানুষটিরও পরিজন থাকে। এরও একটি শিশু থাকতে পারে, শিশুটির বাবার কাছে আকুতি থাকতে পারে, একটা খেলনা দেখে দৌড়ে গিয়ে বাবার কাছে এসে বলতে পারে “বাবা আমাকে খেলনাটা কিনে দাও”! বাবার উত্তর তখন কি এই সন্তানের কাছে ? সন্তান বাবার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে বেডের কাছে বসে থাকে। স্ত্রীও বসে থাকে। স্ত্রী বোঝে তার স্বামী রক্ত শূণ্য হয়ে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। তারপরও স্ত্রী পাশে থাকে।

কিন্তু স্ত্রী সন্তান কেউ ভাত খেতে পারে না ! যে টাকা মানুষ চিকিৎসার জন্য সহায়তা করে সে টাকায় চিকিৎসাও হয়না ! ভাতের টাকা আসবে কোথা থেকে ? অন্যের ভাত খাওয়া দেখে শিশুটি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, সে হিসেব কষতে শুরু করে ভাত খাওয়ার অধিকার হীনতার স্তর বিন্যাসের ! কলা আর বন রুটিতে তাদের দিনগুলো কাটিয়ে দেওয়ার পরও যে ভালো দিন না আসার চরম বাস্তবতা মেনে নেওয়ার মত কঠিন সত্য মেনে নিয়ে ছেলেটির মা ছেলেটির মুখে বুকের দুধ ঠেলে দেয় ! ছেলেটি ভাতের তেষ্টায় অচেতন হয়ে যতক্ষণে ঘুমের ঘোরে চলে যায় তখন ততক্ষণে মায়ের নিজের ক্ষুধা নিবারণ শুধুই একজন মানুষের বাঁচার আকুতিতে নিঃশেষে বিভাজ্য।

একদিকে শহরের লক্ষ লক্ষ টাকার বিল্ডিংয়ের কাচের চাকচিক্য অন্যদিকে টাকা গচ্ছিত না রেখে তা দিয়ে ভ্রমণ করে দেশ দেশান্তর ঘুরে জীবনের মানে খোঁজা মানুষগুলো আর ঠিক তার পাশ ঘেঁষেই হা-ভাত ওয়ালা মানুষ বড় বেশী অপ্রয়োজনীয় একটা অংশ বলা যায় ….

অপ্রাপ্তির কাব্য

যতবার বিবাগী হয়েছি
ততবার ভেবেছি, নির্ভরতার সময় তোমাকে হেলা করে চলবো…!
যতবার কাছে এসেছো
ততবার অতীত ভুলে তোমার মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছি
আর ভ্রান্তি নিয়ে অনুভব করেছি
ভালোবাসা অতীতের কষ্ট, ঘৃণা বিদুরিত করে
আলিঙ্গনে সাড়া দেওয়ায়,
আর নিজের হৃদয়ে লাজহীতার দাগ কেটে দেয়…!

ধুলোর শহরে বঞ্চিতরা

ধুলোর শহরে বাতাস আসে বেশী
পরিস্কার চোখগুলো অন্ধ হয়ে যায়
গ্লাস লাগানো কিছু চোখ আরও স্পষ্ট দেখে তখন
নগ্ন হয়ে দৌড়ানো ভীতু নারী, শিশুদের আহাজারি
আর অভাবগ্রস্থ ঘরে সামান্য সোনার চিকচিকে আলোর ঝলকানি
গ্লাস লাগানো চোখগুলোর নিজস্ব সম্পদ বলে বিবেচিত হয়
হাতের থাবায় সব যায় তাদের গ্রাসে!
একটা সময় ঝড় থেমে যায়
সুনসান নিরবতায় সবটুকু হারানো মানুষগুলো
বালি লাগা লাল চোখে জলহীন দুঃখে ডোবে
পাশে পড়ে থাকে বাসা হারানো
অসহায় কাক আর কবুতরগুলো
ধুলোর শহরে মায়া কমেনি, আইন শৃঙ্খলিত হয়নি
শুধু ঝড় আসে বলে এলোমেলো হয় সব
বিবৃতির কাগজের ঠোঙ্গা হাতে দৌড়ে বেড়ায়
ঝাল মুড়ি ওয়ালা, ফেরিওয়ালা আর কিছু বঞ্চিত মানুষ সকল..!

ভাঙ্গন

যেখানটায় তোমার চাওয়া
সেখানে অামি বড়ই অচল
সময় যখন চেয়েছিলে
তখন ছিলেম টাকার পাগল

যখন অামি সময় দিচ্ছি
তখন বলছো গহনা চাই
গহনার জন্য টাকা লাগে
সময় অার তখন নাই

পাশের বাড়ির ভাবীর জামাই
ভাবীকে খুব অাদর করে
তোমার সাথে রিকশায় উঠলে
তুমি থাকো অচীন পুরে,,,

এক সাথে হলেই দুজন
অভিযোগের ডালি খোলে
কখন দুজন ভালোবাসবে
সময় যে বড় অসহায়- রে

ভাঙ্গছে মন ভাঙ্গছে সংসার
বোঝা পড়ায় অসমতা
বিয়ে ভাঙ্গার রেকর্ড হল
ঢাকা এখন বড় অভাগা

কালকে প্রথম অালোর শিরোনাম ছিলো ঢাকায় প্রতি এক ঘন্টায় একটি বিয়ে ভাঙ্গ। সে সূত্রেই লেখাটি।

সবাইকে ঈদ পরবর্তি শুভেচ্ছা

ফানুস হয়ে ওঠা ও হারানো দিনে ফেরার আকুতি

দিন যায়
পছন্দের তালিকায় যোগ হয় হরেক রকম জিনিস
আগে লাটিম কেনার জন্য মন আকুবাকু করতো
এখন মন চায় বিমানে উড়ে
সদূর দূরে কোন সাগর পাড়ে বসে সময় কাটাই..
কখনও কখনও এমন হয়
মনে হয় সব কিছুর বিনিময়ে
পারলে পুরো আকাশটাকে নিজের করে নেই,
ইচ্ছে হয় রিকাশায় বসে শহর ঘুরতে
তারপর ক্যম্পাসে বসে বন্ধুদের সাথে বাদাম চিবুতে…
এমন আরও অনেক ভাবনা যখন মনের কিনারে
তার অর্থ শুধু এই
তুমি হাহাকার করে শুধু পেছনের দিনগুলোকেই খুঁজে বেড়াচ্ছো
তুমি বার বারই
ফিরে যাচ্ছো সেখানে
যেখানে তুমি কেবল মাত্র জীবন শুরু করতে শুরু করেছিলে…!
এখন অনেক রঙিন সময় আসে
এখন ঈদের চাঁদ রাতের দিন
সামান্য কিছু টাকা দিয়ে একটা জামা কিনতে হয়না,
হয়না অপেক্ষা করতে
কখন বাবা নিয়ে যাবে মার্কেটের ভীড়াক্রান্ত দোকানে..
তবুও কেনই জানি সেই স্বাদ আর আকুতিটা নেই,
কেনই যেন এখন ভালোবাসা প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষাও নিদারুণ সময়ে বাঁধা..!
খুব মনে পড়ে,
বাবার সাথে হাটে যাওয়ার ঈদের আগের দিনগুলোর কথা
হাটগুলো তখন অন্য রঙে সেজে যেতো
হাটের এক পাশটা জুড়ে থাকতো আলতা আর চুলের ফিতার দোকান
অন্যপাশে বেহাতির মিষ্টি গন্ধ !
তখনকার সময়গুলোর এক প্যাকেট সুপার বিস্কুট আর পাইনএপেলের স্বাদ
যেন এখনকার এক পৃথিবী স্বাদের চেয়েও বেশী ছিলো …
এক হাতে বাবার আঙ্গুল ধরে থাকা
আর অন্যহাতে কোরবানির পশুর রশি ধরে টানাটানি
বাড়ি এলে সবাই মিলে একসাথে আনন্দে মেতে ওঠা…
কিছুর বিনিময়েও আর ফেরা যাবেনা কভু সেই হারানো দিনগুলোতে
খুব কৃত্তিম আলো যেভাবে জেকে বসেছে
তার তীক্ষ্নতা যেন আর ভেদ করার নয়
কৃত্তিম হতে হতে এখন আমরা যেন ফানুসের মত
হালকা প্রজ্জ্বলিত কোন বস্তুর মধ্যে আবৃত এক
অচল পঁয়সার সমার্থক শব্দ সম….

ভালোবাসা কুড়োনো

রাজপথে বিন্দুসম ধুলোরও একটি গন্তব্য আছে
সেও নদী হয়ে সাগরে অথবা সাগর থেকে বালুচর হয়ে
অন্যকোন দেশের রাজপথে এসেছে ।
বিচিত্র জীবনের নিয়মের মধ্যে শুধু হেঁটে চলা
আর পথ কুড়োনো,
স্থানান্তর হওয়া আর কিছু একটা খুঁজে বেড়ানো
এই খুঁজে বেড়ানোর স্পষ্টতর নামই হচ্ছে “ভালোবাসা”….
কেউ বাঁচতে চায় ভালোবাসে, কেউ ভালোবাসার জন্য বাঁচে
আর অভাগীরা ভালোবাসাকে ভাগ্য বলে মানে …!

কিশোরী ও দিন হারানোর কাব্য

অযথাই ক্লান্ত দুপুরগুলোতে তোমাকে মনে পড়ে
পাশে না থাকলেও তোমাকে মনে পড়ে বলে
শূণ্য আকাশের দিকে তাকিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি

পেন্সিল বক্স হাতে কোন কিশোরীরক দৌড়ে স্কুল যেতে দেখলে
তোমার কথা খুব মনে পড়ে
কেবল কলম শক্ত করে ধরতে পারা মেয়েটি কিভাবে
সাজিয়ে গুছিয়ে মনের কথাগুলো লিখতে চাইতো আমাকে নিয়ে…
আমি এখন অনুভবের মালায় গাঁথি
সারা জীবনের ভালোবাসার বৃক্ষের বীজটুকু ছিলে তুমিই…

কোন সকালে শিউলি কুরোনো মেয়েকে দেখলে
তোমার হাতে জড়ানো শিউলি মালার কথা মনে পড়ে যায় অযথাই
মনের অজান্তেই তুমি মালা দিয়ে
আমার হাতকে তোমার হাতের সাথে জড়াতে
সেখানে কোন নগ্ন অনুভূতি ছিলোনা
যেটা ছিলো তা হল একসাথে দৌড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন
আমার ভাঙ্গা সাইকেলে করে নিয়ে তোমাকে ধানক্ষেতের চিকন আল বেয়ে
জড়িয়ে ধরে ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন…
এ সামান্য স্বপ্নটুকু এখনও আমাকে জাগিয়ে রাখে
আমি এখনও তোমার মধ্যেই ডুবে থাকি কিশোরী…

অপূর্ণ আলিঙ্গন

মনের অজানা সুখগুলোর তাড়নও কষ্টের
সুখ আছে তবুও তা স্পর্শ করা যায় না
তারকা রাজ্জিকে দেখে আলোর তৃপ্তি কতটা মেটে বল?
থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলা আলোতে
যে সুখ খুঁজেছি তাতে অন্ধকার জয়ের কতটা প্রত্যাশা থাকে বল ?
নষ্ট মন সুখকেও উদযাপন করতে পারে না !
সলতের আলোতে যার বাসর হয়
সে ও যে স্পন্দনে রাত্রি যাপন করে,
হোটেলের বেলকোণিতে উদ্যাম আনন্দ কম্পন শেষ করে
এক কাপ চা হাতে এই মাত্র দাড়ানো যুগলও
একই সুখের স্পন্দনে থাকে…
ফারাগ শুধু তারতম্যে, ফারাগ শুধু অনুভবের দোলাচলে
নতুবা পৃথিবীর সব এক কেন্দ্রীভুত
সবাই মিলে মানুষ গর্ভে ধারণের প্রতিযোগীতায় লিপ্ত
রাত নামে, প্রতিটি ঘরে সুখের অতৃপ্তি নিয়ে
আজও বাসর হবে, আজও নতুন কোন ভ্রুণ অত্রিক্রম করবে বাঁধার পাহার
তারপর হয়ত আসবে একটি পূর্নাঙ্গ মানুষ…
অথচ দুজনের মনে আকাশ সম অতৃপ্তি
আরও একটু বেশী আলিঙ্গন হতে পারতো বোধ হয়….!

পার্থক্য

বন্দরে আলোকিত চাঁদের নীচে
শ্রমিকের ঘাম ভেজা কষ্ট থাকে
প্রহর গুনে গুনে শ্রমিকের মজুরি নেওয়ার দিনে
চাঁদের আলো ঘামের প্রতিটি কণাকে
তারকা রাজির ঝলকানি দেখায়
সুখগুলো মুষ্টিবদ্ধ হয়, সারা মাস ঘুরে যে কটা টাকা
তাতে শুধুই কাটার আঘাত
হিসেবের তাড়নায় যখন ক্ষত বিক্ষত বন্দরের পূর্ণিমা চাঁদ
অপর পাশে বড় বড় জাহাজের বেল কোণিতে
করুণ ভায়োলিনের সুর
হয়ত নতুন যে প্রেমিকা এসেছিলো মালিকের জীবনে
তা অন্যের বিছানা সঙ্গী বলেই
একজন ভায়োলিন শোনে বিছানা সঙ্গী হারানোর দুঃখে
অন্যজন ঘামে ভেজা টাকা গোনে
বাড়ির কচি ডগা সম স্ত্রীর সুখের অণ্য যোগাতে পারবেনা বলে!
বন্দরে নতুন জাহাজ আসে, বানিজ্য হয়
উর্বর হয় কত মানুষের ঘরের ধরণে
নিত্য যার আসা যাওয়া
সে শ্রমিক শুধু গোনে জীবনের চাকা চালানোর মত কয়েকটা টাকা
চাঁদ ওঠে, অসীম সাগরে চাঁদে মিলে যায় বহু দূরে
শ্রমিক বেটা নিজেকে মেলায় অসম হিসেবের দোলাচলে….