সৌমিত্র চক্রবর্তী এর সকল পোস্ট

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

সুচেতনা তোমাকে ২

হাঁড়ি-থালা আজ উল্টিয়ে রাখ্ সুচেতনা
বাইরে নিবিড় গ্রীষ্মদহণ আভাস
এখন নাহয় অরন্ধনই হোক
বাস্তুসাপেরা ছেড়েছে দখল খাস।

চাল বাড়ন্ত নোট বাড়ন্ত ঘরে
হাঁপানির টান দিন প্রতিদিন ডাগর
রাস্তা খন্দ মাছেদের মরা চোখ
চুরি হয়ে গেছে কুঁড়ের শ্লীলতা আগড়।
বাবুয়ানি যত বিপ্লব স্বাধীনতা
কাগজে কলমে ল্যাপিতে মাউসে বাঁধা
ফ্যান্সি প্রেমের কোণ ছাড়্ সুচেতনা
দেওয়ালে মিছিলে টেবিলে মোমেতে ধাঁধাঁ।

যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাটা যারাই খেলে
আরশোলা দেখে তারা করে হার্টফেল
সুচেতনা তুই নিজের পায়েই দাঁড়া
ভাঙতে পারবি আলতা সিঁদুর জেল!

সুচেতনা তোমাকে ১

দেখতে দেখতেই রোদ্দুরের বয়স বেড়ে যায়
মেঘরাও ক্রমশই বাচাল থেকে বিজ্ঞ হয়ে ওঠে
আর আমি জানলার একপ্রান্তে বসে একমনে
তোমার দিনপঞ্জী দেখার চেষ্টা করি সুচেতনা!

সকালের চায়ের কাপে নৈমিত্তিক খুন ধর্ষণ কিম্বা
রাজনৈতিক রাহাজানির ছায়া পড়ে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়ায়,
গত শীতে যারা মারা গিয়েছিল কোনো আগাম খবর ছাড়াই
আজ এই চরম উষ্ণতার দিনে তাদের পারলৌকিক।

পায়রার পায়ের পাতায় বাঁধা ছিল গতকাল
পেলব দুর্বল হাত মুচড়ে দেওয়ার কুকীর্তি
তোমার বিছানায় ছিটকে পড়ার দুঃসময়
পরজীবি উদ্ভিদের ধর্ষণের হুমকি, ইত্যাদি এবং ইত্যাদি।

সারা সারাদিন, সারাটা দিন রোদ্দুর হেসে খিলখিল
অথচ সন্ধ্যে হলেই নেমে আসে মদ্যপানের দুর্গন্ধ
রাত্রি নামলেই এক্সপ্রেসওয়ে থেকে গলির অন্ধকারে
লোহিত কণিকা মাখা বীভৎস শ্বাপদ দাঁতের আনাগোনা।

জানলার একান্ত কোণে বসে আমার সামনে তৈরী হয়
ছাদ ফুঁড়ে নেমে আসা ত্রিমাত্রিক কল্পছবির অভেদ্য ঝালর
প্রত্যেক ফালিতে ওঁত পেতে বসে থাকে মরণঘাতি বৃশ্চিক
আর তুমি হারিয়ে যেতে থাকো ভারী ঝালরের ভুলভুলাইয়ায়।

ভালো থাকা না থাকা

D1wkT2

ভালো থাকা না থাকা

বলেছিলে, ভালো থেকো।
কথা দিয়েছিলাম ভালো থাকব।

দুপুরের টানা ভাতঘুম শেষ হলে
ফুটপাথ গা ঝাড়া দিয়ে চলতে শুরু করলে
বসে থাকা অলস শালিখ টাল খায়
ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যায় পতপত।

ভাবনারা আজও ব্যালেন্স শেখেনি,
হাঁটতে হাঁটতে জিভ গলা শুকালেই
মরুভূমি উদয় হয় রসালো শহরেই।

যতই দিনরাত্রির স্ট্যাম্প পড়ে
খসখসে পুরনো চামড়ার লোমগলিপথে,
আদিম বহু ইচ্ছে চাগিয়ে
ভবিতব্য টেনে আনে সিজারের
পুর্বাহ্ন নির্দ্ধারিত হস্তরেখায়।

ঝুঁকে পড়তে পড়তেই আবিষ্কার করি
আমরা কেউ ভালো নেই
আপাত ভালোর খোলসের তলায়।

নীলাম

867_n

একে একে সুবেশী সুগন্ধি মানুষেরা আসছে, ঢুকছে বিশাল
কারুকাজ করা সিংহদরজার ঝলমলে উদরে
দেওয়ালের ওপারে পালক নরম সোফা, ইতস্ততঃ ঘুরে বেড়ানো অপর্যাপ্ত দামী খানাপিনা
এবং এক ঘূর্ণায়মান টেবিল সামনে রীতিমতো প্রটোকলদুরস্ত পোষাকের গম্ভীর
অর্থজন, তাঁর হাতে প্রাচীন কেতাদুরস্ত হাতুড়ি;
একে একে বিক্রি হবে নীতি, মূল্যবোধ, নিরাপত্তা, বিশ্বাস এবং এবং এবং
আস্ত এক জনগণমনতন্ত্রের বহুল বিজ্ঞাপন যুক্ত সারে জাঁহা সে আচ্ছা উপদ্বীপ
ভারতবর্ষ।

দহন ২

এত নিখুঁত কালো কেন?
আমার তো তালা খুললেই সকাল ছিল!
নিশ্ছিদ্র অমাবস্যায় কালোর মধ্যেও
বহু বিন্যস্ত স্তর,
আমাকে একটু ঘুম দাও –
আমাকে একটু সকাল দাও –
আমাকে একটু আলো দাও …!

ভালো থাকা না থাকা

ভালো থাকা না থাকা

বলেছিলে, ভালো থেকো।
কথা দিয়েছিলাম ভালো থাকব।

দুপুরের টানা ভাতঘুম শেষ হলে
ফুটপাথ গা ঝাড়া দিয়ে চলতে শুরু করলে
বসে থাকা অলস শালিখ টাল খায়
ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যায় পতপত।

ভাবনারা আজও ব্যালেন্স শেখেনি,
হাঁটতে হাঁটতে জিভ গলা শুকালেই
মরুভূমি উদয় হয় রসালো শহরেই।

যতই দিনরাত্রির স্ট্যাম্প পড়ে
খসখসে পুরনো চামড়ার লোমগলিপথে,
আদিম বহু ইচ্ছে চাগিয়ে
ভবিতব্য টেনে আনে সিজারের
পুর্বাহ্ন নির্দ্ধারিত হস্তরেখায়।

ঝুঁকে পড়তে পড়তেই আবিষ্কার করি
আমরা কেউ ভালো নেই
আপাত ভালোর খোলসের তলায়।

মেরা দেশ মহান

8641_n

বাহাত্তর বছর হল,
এখনো এক ছেঁড়া শালপাতা ঘিরে
ভাঙাচোরা পাঁচটুকরো অভুক্ত মুখ।
দীর্ঘ তুঘলকি অনাচার
দুশো বছরের তাঁবেদারি পার হয়ে
ভেবেছিলে একদিন তুমিও দেখবে চাঁদ
স্বচ্ছল মদির আনন্দমহলে,
গোপন অঙ্গসব ঢাকা পড়বে
স্বপ্ন পরীর সুগন্ধী ডানায় জড়ানো
রঙিন আচ্ছাদনে,
সারমেয় জীবন পেরিয়ে
প্রত্যেকের থাকবে এক নিজস্ব ক্ষুধাপাত্র।

শিশুও জানেনা তার কখন হাতবদল
একবেলা খাবারের বিনিময়ে,
যখন ইচ্ছা পুরুষালি প্রত্যঙ্গ বিচরণ করে
অনিচ্ছুক জরায়ু অতলে,
ধাতব নলের দাপটে
জঙ্গল পাতাও অকুলান হয়ে যায়।
রুক্ষ দিগন্ত শুধু আগুন ঝরায়
অট্টহাসে হা হা ঝংকারে,
হাহুতাশী খোলা প্রান্তরে
অজস্র ছিদ্র বেয়ে
ঘরে ঢোকে উত্তুরে কাঁপন;
জানোয়ারেরও গায়ে থাকে লোম আস্তরণ।

এমন কথা তো ছিলনা কখনো!
কথাসব বুদবুদ রঙধনু মেলে
মুহূর্তে এগিয়ে আসে, মুহূর্তে মেলায়।
বাহাত্তর বছর হয়ে গেল
লাম্পপোস্ট ফাঁকা রয়ে গেছে-
একখানা কালো মুখও ঝোলেনি সেখানে,
আগাপাস্তলা মানব হাটুরেদল
মসনদ আলো করে আছে।
শুধু হাড়জিরজিরে হাত বছরে দুদিন
আধমুঠো বোঁদেলোভী কন্ঠ মেলায়-
বন্দেমাতরম! মেরা দেশ মহান হ্যায়!
তারপর, আবার উপবাসের শ্বাদন্ত শীতকুয়াসায়।

রক্তপাতের কথা ও কাহিনী

Scre

মেয়েটা বলছিল
আমি শুনছিলাম…
ফোনের ওপারে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের ভয়ঙ্কর তান্ডব
বলতে বলতেই মেয়েটার গলা বুজে আসছিল
বলতে বলতেই মেয়েটা কাঁদছিল অনর্গল
মাত্র দশে বাবার কথা শোনেনি বলে দুটো ছোট্ট ছোট্ট পা
বেঁধে তাকে হেটমুন্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল পাক্কা এক ঘন্টা
তাকে ঝুলিয়ে রেখেছিল তারই ব্যক্তিত্ববান মধ্যযুগীয় বাবা
না, তার বাবা কোনোদিনই পুলিশ ছিল না
তার বাবা এক ডাক্তার
তার বাবা এক উকিল
তার বাবা এক শিক্ষক
মেয়েটা সেদিন একটুও কাঁদেনি
একবার সার্বজনীন খেতে বসে রোগাভোগা মেয়েটার
জামায় পড়েছিল এক টুকরো ভাত, তারস্বরে চিৎকার করে
পাড়ার সব্বাইকে জানিয়ে এই ম্লেচ্ছ মেয়ের বিচার চেয়েছিল
সেই ছোট্ট ফরসা রোগা মেয়েটার আশিবছরিয়া ঠাকুমা
খাবার থালায় লাথি মেরে বেড়ালছানার মতো ঘাড় ধরে
তুলে নিয়ে ছড়ানো অপর্যাপ্ত উঠোনে তাকে চোরের দাওয়াই
দিয়ে সিধে করতে চেয়েছিল বিদ্বজ্জন বাবা, তার বাবা উচ্চশিক্ষিত
সমাজকল্যাণ হয়েছিল সেদিন
সমাজ বেঁচেছিল অবক্ষয় থেকে
আশ্চর্য মেয়েটা, সেই ছোট্ট মেয়েটা
সেদিনও একটুও কাঁদেনি
আর সেই যে দুপুরে চোর পুলিশ খেলায় সামান্য আওয়াজে
দিবানিদ্রার চটকা ভেঙে গেছিল বলে তেরর সদ্য মেয়ে থেকে
মেয়েমানুষ হয়ে ওঠার সন্ধিক্ষণের দ্বিতীয় দিনে সদ্য কেটে আনা
কঞ্চির দাগ পিঠ কেটে পা কেটে কচি দুটো হাত কেটে ঝরঝর
রক্ত ঝরিয়েছিল তবুও ক্ষান্তি দেয়নি যে শিরোমণি, সে তারই বাবা
হতবুদ্ধি মেয়েটা
বোকা মেয়েটা
সেদিনও একটুও কাঁদেনি, অবেলায়
আজ ফোনের ওপারে থমকে থাকা প্লাবনে ভেসে যাচ্ছে
একমাত্র জীবন্ত গ্রহ, মাথার ওপরে মেঘ জমছে গাঢ়
বৃষ্টি নামবে অনেকদিন হাপিত্যেশ বসে থাকা গৃহস্থালীর শেষ উঠোনে
আজ মেয়েটা কাঁদছে তার বরের নির্বিকল্প মারে
ফোনের ওপারে মেয়েটা কাঁদছে
ফোনের এপারে কাঁদছে পৃথিবী
হতভাগা গ্রহটার বুক থেকে ঝরছে রক্ত
মেয়েটা এখন অ্যাসাইলামে আছে।

মান্যবরেষুরা

DSC_1

মান্যবরেষুরা নমস্কার!
যদিও ঠিক এই খেয়োখেয়ির
অকাল মরা বিকেলে
আমার মত সহজিয়া
চুনোপুটির সম্ভাষণ বিশেষ
কাজে লাগবে না আপনাদের
জানেন আপনারা।

ছোটবেলায় শুনেছিলাম বয়স
বাড়লে মানুষ প্রাজ্ঞ হয়
ছোটবেলায় পড়েছিলাম বিদ্যা
দদাতি বিনয়ম্; ছোটবেলা
বড়বেলা আমাদের সব বেলা
বড় বেশি ভুলভাল
চোরাবালির ওপরে ব্যালেন্সের খেলা।

মান্যবরেষুরা আপনারা রাজা
আপনারা রানী, আপনারা
দণ্ড আর আমাদের এক রত্তি
মুণ্ডের অখণ্ড কর্তৃত্বধারী,
আপনাদের বালখিল্যপণা
যথেচ্ছ কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, ভয়াল
লোভের কঙ্কাল চোখ বুজে দেখি।

মাইক্রো ফ্যামিলি আসার পর থেকেই
আমরা মেরুদণ্ডী প্রাণীর শৌখিন
মর্যাদা হারিয়েছি হাত ফসকে
এখন আমরা টিভিতে নিরুত্তাপ
একের পর এক দেখে যাই
যৌথ পরিবারের ভুতুড়ে কেচ্ছা
আপনাদের পারস্পরিক গালাগালি।

মান্যবরেষুরা এ দল ও দল
চুকিতকিত খেলতে খেলতে
আপনারাও ভুলে যান
একদিন বদলের কথা বলেছিলেন
একদিন অজস্র স্বপ্নের রঙিন
ফানুস উড়িয়ে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন;
সব ফানুস পুড়ে এখন জমাট অন্ধকার।

মনের খোঁজে

বলেছিলে মনকে বোঝাও।
এ কদিন, আঁতিপাঁতি ছানবিন।
ডাইরিতে কবিতার প্রত্যেক অক্ষর –
সপ্তদশী দিদিমার ফুলেল তোরঙ্গ –
ব্যাঙ্কভল্টের গোপন কোণ –
বোগেনভেলিয়ার গোড়ায় কোপানো মাটি –
পরিত্যক্ত অফিস ফাইল –
বিছানার নিচে কাগজের স্তুপ –
আলমারীর রহস্যময় ইশারার খাঁজ –
বারবিকিউয়ে জ্বলন্ত হৃদয় –
হাত পুড়ে গেছে শুধু
মন খুঁজে পাইনি কোথাও!
ও তো সেদিন জলতরঙ্গ বিকেলে
ফেলে এসেছি তোমার চিলতে বাসায় –
যা খুশি তুমিই বোঝাও!

ভালো থাকা না থাকা

D1wkT2

কই কোথাও কোনো পরিবর্তন নেই!
কাল তোমার সঙ্গে জোড়া সব সুতো
ছিঁড়ে ফেলার সেই কালো সন্ধিক্ষণে
ভেবেছিলাম সেই কালো রাত চিরস্থায়ী,
সকালের রোদ আর গাইবে না গুনগুন …
জীবন থমকে গিয়ে ভর্ৎসনা করবে …
বেহালার তার সব ছিটিয়ে এদিক ওদিক …
কই সকাল তো সেভাবেই এল
যেমন নৈমিত্তিক ভাবলেশহীন,
খবরের কাগজ থেকে অফিসের বস –
একে একে কাজের ফিরিস্তি –
মুখভার করা ব্যস্ত দুপুর –
শুধু এলোনা তোমার প্রভাতী মেসেজ
ভালো আছ …!

যুদ্ধ

জানি কিছু ভালো আছে মাত্রই
আলোকবর্ষ দূরে
আমাদের কালো আছে
আমাদের আলো আছে
আমরা তো শোক রাখি
মর্গ নিথরে।
কিছু যুদ্ধ জেতা যায়
বাকি যুদ্ধ হারি
বীরগাথা লিখে রাখি
তুলোট কাগজে
কিছু রক্ত
কিছু ঘাম
সময় যন্ত্রে কিছু
নক্সাকাটা বিশ্রাম
পশ্চাদপসরণেও থাকে
অন্ত যুদ্ধ জারি।

রাত্রি মোহে

এই যে নিটোল অন্ধকারের দেহ চিরে ছায়া আবছায়া গাছের পাতা ডাল পালা মাঝেমধ্যে স্থির মাঝেমাঝে মাথা দেহ ঝাঁকিয়ে কিসের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ করে চলেছে তারাই জানে। ছোটনাগপুরিয়া ধামসা আর মাদল হাড়িয়ার ধুনকি চালে একটানা ছন্দে বেজে রক্তের শ্বেতকণার সাবধানী সতর্কতা ফুঁয়ে উড়িয়ে লালবিন্দুদের যুদ্ধ মাতনে দুলিয়ে দিচ্ছে ধিনকা ধিনা … ধিনকা ধিনা … ভাল্লা হাতে চল শিকারে চল শিকারে …!

অন্ধকার গাঢ় হলেই আদিম মুন্ডা রমনীর ত্বক ঝলসে ওঠে তীব্র কামদহনে লাখ ওয়াটের ফ্লুরোসেন্ট আলোর ঝলকানিতে দেরে দ্রিম তুম না না তুম না না তুম না তুম না তুম দেরে না না দেরে না না…।
সরসর শব্দের মোলায়েম ছোঁয়ায় মাটিকে আদর করতে করতে … করতে করতে দুই গাছের মাঝের মাহে আগাছার ঝোপের ফাঁকে খাবারের সন্ধানে চলে যায় ভয়ংকর চন্দ্রবোড়া।

ঝমঝম ঝমঝম লম্বা কাঁটার বিটে মোৎসার্ট সিম্ফনি বাজিয়ে বেরিয়ে আসে নির্বিরোধী লাজুক পাঁশুটে সজারু।
অন্ত্র হজম করা আব্রহ্মান্ড খিদে মাথায় করে অন্ততঃ এক পিস বনমোরগের অসতর্ক সেকেন্ড কাজে লাগানোর খল চাহিদায় ইতিউতি তাকায় গুলবাঘ।
দেশি খাঁটি মহুয়ায় নাক পর্যন্ত নেশা করে মাহাতো রাখোয়াল লাল আটার রুটি আর লহর দাল পাকানোর সূক্ষ্ম ফাঁকে দেশোয়ালির উত্তুঙ্গ স্তনের চিন্তা করে বিরহগান ধরে তরুনী জঙ্গলরাতে, কাঁহা গইলি রে পিয়া হামার হেনে আকেলাপন মারে মোহে …

কাঠের ধিকিধিকি আগুনের হলদে লালচে নাচনের প্রতিবিম্ব প্রথম ফাল্গুনের না শীত না গরমেও ঘেমে ওঠা রাখোয়ালের নাক গাল চিবুকে আশ্চর্য ক্ষিপ্রতায় খেলা করে।
জঙ্গল রাত্রির নিজস্ব গায়ের গন্ধ অনেকটা অ্যাড্রিনালিনের ভেতরে গোঁজা অপ্রাকৃত কামান্ধ বাসের সমতুল বিকল্পহীন একক সম্রাট, অপরাজেয় কিন্তু ভয়াল।

ভালোবাসার চিঠি পুড়িয়ে তার ছাই অবশেষ উড়িয়ে সা রা রা রা রা রা হোলির মহাজাগতিক রঙ তৈরী শুরু হয়ে গেছে সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট তত্ত্বের উদ্গাতা জংলা ভূমের আনাচ কানাচে।
এই আকাশ কালো আর লালচে সিঁদুর খেলার মায়ায় একের পর এক আঁকে মোহমুদ্গর ছিন্ন করা নানান ছবি, যার আগেও নেই পিছেও নেই, নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ সৃষ্টি স্থিতি বিলয়ের একক ব্যক্তিত্ব।

এখানে অকারণ গাড়ীর ঝড়ের ধুলো নেই, পলি ভিনাইল ক্লোরিনের পুড়তে থাকা বিষগমণ নেই, একইসাথে পঞ্চপ্রেমের প্রেমহীন সঙ্গম নেই, মেকানিকাল হাসির তৈরী করা আস্তরণ নেই, আছে শুধুই দিগন্ত বিস্তৃত সত্যসন্ধান চরাচর আচ্ছন্ন করা ওহম শব্দব্রহ্মের কেন্দ্রস্থল।

রাখোয়াল মাহাতোদের বোধের ইসিজি করলে দেখা যাবে তার উত্থান নেই, পতন নেই, বক্রগতি নেই, সোজাসাপটা সরলরৈখিক, আপাত নজরে মনের অলিগলির অন্ধকারে হাঁটাচলা করা জটীল জীবের মনে হবে মৃত, কিন্তু এই আশ্চর্য সরল সাদাসিধে জগতের কল্পনাও তারা করতে পারবে না কোনোদিনই।
রাখোয়ালের পরকীয়া কিম্বা স্বকীয় বিভাজন বোধ নেই; তার প্রেম জ্যামুক্ত তীরের মত সোজা ছুটে গিয়ে বেঁধে, যার একপ্রান্তে সে আর অন্যপ্রান্তে দেহাতি ঘোমটা বিছানো মৈথিলি রমনী, মাঝে মহাশূন্য।

অম্বার চৌদ্দোশো তম উত্তরপুরুষ গর্ভের অতলে কোনোদিনই রোপিত না হওয়া বীজধানের খোঁজে মালেকাজানের কন্ঠের সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় অনাবিস্কৃত সদ্য যুক্ত হওয়া বিকট ব্ল্যাকহোলের আগ্রাসী পেটে।
-সাঁইয়া মোরি তুহি বিছর যায়ে বারেবার…হো সাঁইয়া মোরি …