যাযাবর জীবন এর সকল পোস্ট

নীরবতাও ভালোবাসার ভাষা

তুই আমায় প্রায়শই জিজ্ঞাসা করিস
– এই, বলো না আমি দেখতে কেমন?

আমি চুপ করে থাকি;

তুই মন খারাপ করে বলিস
– আজো চিনলে না আমায়?

আমি চুপ করে থাকি
আর মনে মনে বলি
– তুই কেমন, জানিস?
– কামিনী চিনিস?

সহজ সরল শুভ্র সাদা
তীব্র গন্ধা জটিল ধাঁধাঁ

আরে নারী!
আমার কি সাধ্য? তোরে চিনতে পারি;

তুই আমায় প্রায়শই জিজ্ঞাসা করিস
– আচ্ছা! ভালোবাসো আমায়?

আমি চুপ করে থাকি;

তুই মন খারাপ করে বলিস
– আজো মন পেলাম না তোমার;

আমি চুপ করে থাকি
আর মনে মনে বলি
– ভালোবাসা চিনিস?
– সাগর দেখেছিস?
– আকাশ দেখিস?

নীল নীল, গভীর নীল
ভালোবাসা বড্ড জটিল

ওরে নারী!
আমার হৃদয় নীল, ভালোবাসায় আমি বড্ড আনাড়ি
আমার চোখ লবণ, আমি কি ভালোবাসতে পারি?

একদিন দেখিস!
– আমি ঠিক তোকে চিনে নেব, অন্য কোনো ফুলের রূপে
– তুই যেভাবে চাস;
তবে কি জানিস?
– কামিনী আমার প্রিয় ফুল;

– একদিন দেখিস ঠিক তোকে ভালোবাসবো, মুখে মুখে
– তুই যেভাবে চাস;
তবে কি জানিস?
– নীরবতাও ভালোবাসার ভাষা।

যাযাবর জীবন

যাযাবর জীবন

আমার এখানে কাক ভোর
ঝুম ঝুম ঝুম ঝুম শব্দ ঘুম ভাঙিয়ে দিলো
জানালার পর্দা সরিয়ে দিতেই ঝুল বারান্দা পেরিয়ে সাগর পর্যন্ত বৃষ্টির পর্দা,
এক অপার্থিব দৃশ্য;
তুই নিশ্চয়ই গভীর ঘুমে,
বৃষ্টি তোকে নাড়া দেয়?
মন ভেজায়?
চোখ তো শুধু দেখে, বৃষ্টি অনুভব করে কি?
অনুভব তো করে মন,
তোর মন আছে?
তবে ভালোবেসে দেখা তো আমার মতন করে!

তুই মেঘ দেখিস
আমার বৃষ্টি স্নান
তোর বৃষ্টি দর্শন
আমার বুকের খাঁচায় ভালোবাসার ভাঙন;

একবার ভালোবেসে দেখ আমার মতন
সারাজীবন ভিজবি লোনা জলে,
সমুদ্র কি আর এমনি এমনি হয় রে?
কত কত ভালোবাসার কান্নাই না সে বুকে ধরে।

youtu.be/XJhLdME-u1Q

সেই সোনালী ভোরের কথা মনে আছে কি?

সেই সোনালী ভোরের কথা মনে আছে কি?

তুই সাগর পাড়ে হেঁটে হেঁটে ঝিনুক কুড়োচ্ছিলি
আর বার বার পূবের আকাশে তাকাচ্ছিলি রাঙা সূর্যের অপেক্ষায়
পানির ভেতর থেকে ডিমের কুসুমটা তোকে ছুঁয়ে দিতেই তুই পরী হয়ে গেলি,
আমি হয়ে গেলাম বালি;

তারপর প্রতিদিনই আকাশে সূর্য ওঠে
সাগরে লাল ডিমের কুসুম হলুদ হতে হতে পুড়ে সাদা হয়ে যায়,
সূর্যোদয় কোথায়?
সূর্য গরম হয়, আমাকে পোড়ায়;

তুই ঝিনুক কুড়োলে তবেই না সূর্যোদয়
নতুবা ভোর তো প্রতিদিনই আসে,
আমায় পুড়িয়ে কালো করে;

কত মানুষ আমায় মাড়িয়ে যায়!
সাগর বেলায়,
আমি অপেক্ষায় থাকি;
কোন এক ধুসর ভোরে তুই আবার আসবি সাগর তীরে
হেঁটে হেঁটে ঝিনুক কুড়োবি সেই সেদিনের মত,
সাগর থেকে ডিমের কুসুম লাল হয়ে উঠতেই আমি সময় থামিয়ে দেব একেবারে
তোর পরী হওয়ার আগে,

তারপর তুই আমি ভিজব
সূর্যে
চাঁদে
সাগরে
প্রেমে
দুজন দুজনে
থেমে যাওয়া সময়ে;

এই যাহ!
খোলা জানালা দিয়ে হলুদ কুসুম চোখে যেতেই স্বপ্নটা পুড়ে গেলো ভোরের সূর্যে,
স্বপ্নগুলো মাঝে মাঝে বড্ড পুড়ে যায়
কিংবা আমায় পোড়ায়।

একদিন সূর্যাস্ত তারপর সব মাটি

একদিন সূর্যাস্ত তারপর সব মাটি

একদিন তুই ছিলি একদিন প্রেম
তুই আমার ছিলি আমি তোর ছিলেম

একদিন অভিমান দূরত্ব তত
দোষ ছিলো না তোর আমার ছিলো যত

একদিন তুইআমি একদিন বিচ্ছেদ
দূরে দূরে দূরত্ব, সম্পর্কের শবচ্ছেদ

একদিন পাহাড় ছিল একদিন ঝর্ণা
একদিন নদী হলো তারপর লোনা

একদিন জীবন ছিল একদিন হাটিহাটি
একদিন সূর্যাস্ত তারপর সব মাটি

কজন স্বপ্নকন্যার সাথে স্বপ্নকথন

কজন স্বপ্নকন্যার সাথে স্বপ্নকথন

অনেক দিন দেখা হয় নি
দেখতে ইচ্ছে করছে খুব;

তুমি তো ডাক না;
ডাকি তো;
মনে মনে ডাকলে আমি শুনতে পাই না তো;
তুই যে কান দিয়ে শুনিস, তাই মনের ডাক শুনতে পাস না;

তুমি শুনতে পাও?
আমি মুখের ডাক কানে শুনি
মনের ডাক মনে;
ইশশ, তাইলে ভালোবাসা বোঝ না কেন?
কে বললো বুঝি না? তুই যখনই আমায় মনে করিস আমি তখনই তোর মনে;

থাক, আর ভোলাতে হবে না, চলো আজ দেখা করি গোধুলি বিকেলে;
উঁহু, আজ পূর্নিমা
চল চাঁদের আলোয় ডিনার করি, ছাদ বিহারে;
না গো, আজ কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না,
শুধু দেখা করব, চোখের দেখা;

তাহলে মোমের আলোয় এক কাপ চা? চুমুর সাথে?
এটাতে অন্তত না করিস না;

ওপাশ থেকে উত্তর আসে না;

অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর ঘুমের চন্দ্রপুকুরে সূর্যের আলো ঢিল ছুড়তেই চোখ খুলে উঠে বসলাম,
কোথায় তুই?
শূণ্য ঘরে আমি একা
জানালায় বাতাসের ঝাপটার গুনগুন
আমার কানে বাজছে,
চা চুমু, চা চুমু, চা চুমু;

মাঝে মাঝে অদ্ভুত স্বপ্নগুলো জ্যোৎস্নার হাহাকারে মাখানো থাকে।

ফিলিং ইমোশনাল

ফিলিং ইমোশনাল

আজ খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোকে
কত কত দিন হয়ে গেছে বল তো! দেখি নি তোকে;

একটু চেয়ে দেখ চারিদিকে,
গাছে গাছে কেমন আগুন লেগেছে
পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়া লাল হয়ে আছে;
তোর মনে লাল লাগে না?
বড্ড কেমন হয়ে গিয়েছিস ইদানীং
হিজাবে নিজেকে ঢেকে রেখে,
আচ্ছা! আমার সামনে আসলে কি চেহারায় নেকাব টানবি?
দেখব কিভাবে তোকে?
চুমু খেতে দিবি? আগের মত করে;

দুপুর বেলাটা বড্ড খারাপ সময়
কোন কারণ ছাড়াই মন খারাপের বৃষ্টি নামে
মনের ডালে ভাবের চালে;

কোথায় জানি একটা কোকিল ডাকছে
হবে হয়তো আমারই মত কোন এক পাগল কোকিল;
জানিস! কোকিলটাকেও আমার বড্ড ঈর্ষা হচ্ছে
কুহু কুহু ডেকে ডেকে ঠিক খুঁজে নেবে তার সঙ্গিনীকে,
আর আমি?

কোকিলের মত কণ্ঠ কই রে আমার?
তোকে গান শোনাতে,
খাঁ খাঁ দুপুর রোদে
মনে মেঘ নিয়ে আমি ভাবতে থাকব তোকে
আর একা একা জপতে থাকব,

ইচ্ছে করেছে
বড্ড ইচ্ছে করছে
দেখতে তোকে।

বিষ

বিষ

সূর্য উঠলেই দিবস
সূর্য ডুবলেই রাত্রি,
তবুও কেও কেও মেতে ওঠে বিশেষ দিবসে, হয়ে অবশ;

ভ্যালেন্টাইন – ভালোবাসা দিবস,
কি এক অদ্ভুত নামই না দিয়েছ তোমরা!
কি সব অদ্ভুত কাণ্ড কারখানাতেই না মেতে থাক সার দিন ব্যাপী!

ফুলওয়ালা, গিফট শপগুলোর রমরমা ব্যবসা
খাবার দোকানগুলোতে গিজগিজে ভিড়
বিশেষ কিছু হোটেলে তো এ দিনে কামরা পাওয়াই ভার,
প্রেমিকার পোয়াবারো
প্রেমিকের পকেটে ছুড়ি,
সারাদিন বেলেল্লাপনা আর নানা ছুতোয় শরীর ছোঁয়াছুঁয়ি;

যত না ভালোবাসা
তার থেকে বেশী লোক দেখানো মাতামাতি,
কত নতুন প্রেমিক প্রেমিকা
কত নতুন নতুন জুটি!
তবে আজকাল বেশির ভাগই দেখি
এর ওর বৌ এর সাথে
এর ওর জামাই এর অশ্লীল ছোটাছুটি,
আর দিবসের উছিলায় শরীর ছোঁয়াছুঁয়ি;

সারাদিন ব্যস্ত ভ্যালেন্টাইন পার করে
রতিক্লান্ত দুজন ঘরে ফেরে, দু দরজা দিয়ে
বাতি নিভিয়ে সারাদিনের ভ্যালেন্টাইন মনে মনে
অথবা ক্লান্ত দুচোখে ঘুম জড়িয়ে আসে, দুজন দুপাশ ফিরে;
মধ্যে কোলবালিশ, একা একা ভালোবাসার কথা বলে,
কি সুন্দর ভালোবাসা! বিশেষ এক দিবসে;

আরে বাবা! প্রেমের আবার বিশেষ দিন আছে না কি?
নাকি দিবসের দরকার হয় ভালোবাসতে হলে?
শরীরে শরীর নামতেই হয়? ভালোবাসা নামক বিশেষ এক দিবসে?
কই? আমার তো প্রতিদিনই ভ্যালেন্টাইন,
মনে মেতে তোতে তোতে;

আমি বোধহয় ভালোবাসাই শিখি’নি রে!

আমি পরিধি খুঁজি

– কি করছিস ভোর সকালে?
– সূর্যের অপেক্ষা, তুমি কি করছ?
– আলোর অপেক্ষা;
– সে তো একই হলো,

– না রে, এক হয় কিভাবে?
সূর্য তো একটা বিন্দুমাত্র, বৃত্ত আলোকিত করে,
তুই কেন্দ্রে চেয়ে থাকিস, আমি পরিধি খুঁজি
তুই চাঁদ দেখিস, আমি চাঁদনি
তুই ভালোবাসা দেখতে চাস, আমি অনুভব করি;

তুই আমাকে পেতে চাস, হাতে ছুঁয়ে ছুঁয়ে
একবার আমার হৃদয়ে ঢুকেই দেখ না!
ডুবে যাবি তোতে তুইময় হয়ে।

আয়নার এপাশে আমি

আয়নার এপাশে আমি
ওপাশে তুই
বড্ড ইচ্ছে করে
একটু তোকে ছুঁই

আয়নার এপাশে অন্ধকার
ওপাশে জ্যোৎস্না
হাত বাড়িয়েও
তোকে ছোঁয়া হলো না

আয়নায় কার প্রতিবিম্ব?
অস্পষ্ট ধোঁয়া ধোঁয়া
নীল নীল ভালোবাসায়
হলো না তোকে ছোঁয়া

রাত গভীর হয়
আয়না কথা কয়
এখানে অন্ধকার
শুধুই হতাশার

আমি আয়নায় দেখি তোকে
আয়নায় ভালোবাসি
আয়নায় তোকে এঁকে এঁকে
আয়নার কবিতা লিখি

একদিন দেখিস
ঠিক ঢুকে যাব আয়নায়
তোকে জড়িয়ে নেব
আয়না ভালোবাসায়

এক নিশিকন্যার সাথে স্বপ্ন

এক নিশিকন্যার সাথে স্বপ্ন

সে রাতটা ছিল অন্যরকম
এক নিশিকন্যার সাথে স্বপ্ন আলাপন

শীতের রাত
অফিসে বেশ খানিকটা রাত হয়ে গিয়েছিল কাজে
রাস্তাটা ঢেকেছিল ঘন কুয়াশার সাজে

অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও কোন রিক্সা না পেয়ে
অগত্য পথ হাঁটা,
বেশ খানিকটা এগোনোর পর গলিপথ থেকে শীর্ণ এক যুবতী
বেরিয়ে এসে পা মেলালও পথের সাথে
স্যার কি একা?

একটু চমকে তাকালাম
বুঝে গেলাম নিশিকন্যা,

বেশ মজাই পেলাম
উত্তর দিলাম
হ্যাঁ, গো মা;

সম্ভাষণে একটু চমকে গেল বোধহয়
মুহূর্তে সামলে নিলো
স্যার যে কি বলেন!
আজ কোন রোজগার হয় নি,
আমার ঘর আছে
কিছু সময় কিনতে চাইলে চলেন;

বড্ড রাগ হলো
এবার ভালো করে তাকালাম
জীর্ণ শীর্ণ কাপড়
কৈশোর পার হয়ে মাত্র যৌবনে পা দিয়েছে হয়তো
এ বয়সেই?
কি জানি!
পরিস্থিতি? পেটের দায় নয়তো!

পকেট হাতড়ে দেখলাম মাত্র একশ টাকা দুটি আর কিছু খুচরা নোট
দুশো টাকা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম
এটা রাখ, আমার কাছে আর নাই
থমকে দাঁড়িয়ে বলল,
ভিক্ষা করি না স্যার
শরীর বেচি, ভাত খাই;

এবার থমকানোর পালা আমার
আসলে চমকালাম,
মনে মনে বললাম
বাহ! বেশ তো!
আমার কাজের বিনিময়ে খাদ্য
নিশিকন্যার কামের,
সে শরীর বেঁচে
আমি শ্রম,
ধ্যাত!
কি সব উল্টোপাল্টা ভাবছি!
মনের ভ্রম;

আমি চুপ করে আমার পথে হাঁটা ধরলাম
লক্ষ্য করলাম সেও আসছে পেছন পেছন
এবার দাঁড়িয়ে পড়ে বললাম
টাকা নাও, পিছু ছাড়
সে হেসে দিয়ে বলল
ভয় পাবেন না স্যার
এ রাস্তাটা বড্ড ফাঁকা
আমি ঐ সামনের মোড়টা পর্যন্ত যাব
আপনার সাথে
একটু ভয় ভয় লাগে এ রাস্তায় একা;

হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞাসা করলাম
বাড়িতে কে আছে তোমার?
উত্তর দিলো
ভাঙা চৌকি, মাটির উনুন
দুটো হাড়ি, একটা প্লেট
একটা গ্লাস
আর পেটে রাজ্যের ক্ষুধা;

বাবা-মা, ভাই-বোন?
হেসে উত্তর দিল
তারা তো কবেই দিয়েছে আমায় বিসর্জন!

বড্ড মন খারাপ হলো
বড় রাস্তার মোড়ে চলে এসেছি
রিক্সা পেয়ে উঠে বসলাম
আবার টাকা সাধলাম, নিলো না;
পেছন থেকে বললো
সাবধানে যাবেন স্যার
ভালো থাকবেন;

এগিয়ে চলছে রিক্সার চাকা
কুয়াশার রাত
রাস্তাঘাট বড্ড ফাঁকা;

অনেক রাতে বাড়ি ফিরলাম
খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম;

…………………

হঠাত দেখলাম
চাঁদের রাত
বিশাল ফাঁকা মাঠে একটা বেঞ্চ
আমি বেঞ্চে বসা
সামনে মাটিতে বসা, নিশিকন্যা ;

স্বপ্নে স্বপ্নে দুজনার কথোপকথন –

নিশিকন্যা! তুমি স্বপ্ন দেখ?

বাবু! লাল পানির নেশায় রঙিন স্বপ্ন দেখা তোমাদের অধিকার
আমি শুধু দেখি প্রতিদিন নতুন নতুন খরিদ্দার;

প্রেম হয় নি কখনো কারো সাথে?

না গো বাবু,
প্রেম তো মনের
প্রেম শুধু তোমাদের,
নিশিকন্যারা শরীরের
আমাদের কিছু হলে পেটে ক্ষুধা হয়, অনাকাঙ্ক্ষিত বাচ্চা হয়
আর খুব বেশী কিছু হলে, এইডস হয়;

কখনো ভালোবাসো নি কাওকে?

বেসেছি তো বাবু!
শরীর’কে
পেটকে
ক্ষুধাকে,
তোমরা আমাদের ভালোবেসে যাও আঁচড়ে আঁচড়ে, কামড়ে কামড়ে
আমরা শুধু পেট ভরাই, ক্ষুধা ভালোবেসে;

ধ্যাত! আমি সব ভালো ভালো কথা জিজ্ঞাসা করছি
আর তোমার সব উল্টোপাল্টা উত্তর
ভালো করে কথা বলতেও পার না?
যাও তোমার সাথে আর কথাই বলব না;

নিশিকন্যা হেসে উত্তর দেয়
প্রেম?
ভালোবাসা?
না গো বাবু, না!
ওসব আমাদের থাকে না
ওসব আমাদের থাকতে হয় না,

আমার কি আছে জানো?

আমার আছে একটি পেট, আর একরাশ ক্ষুধা
পুরুষের লালসা দেখার দুটি চোখ
তাদের শীৎকার আর অশ্রাব্য গালি শোনার দুটি কান
বোবা তিনটি মুখ
আর দুটি স্তন

এইটুকু নিয়েই নিশিকন্যাদের জীবন;

আচ্ছা বাবু, আমি গেলাম, তুমি ঘুমাও
বলে সে বিদায় নিলো;

তারপর আমিও ঘুমিয়ে গেলাম রাতের কোলে,
স্বপ্নগুলো বড্ড অদ্ভুত, তাই না!

আলোর খুব কাছে অন্ধকার

দিন থেকে একটু সরে রাত
সূর্য ঢেকে রাখে চাঁদ
আলোর খুব কাছে অন্ধকার
মাঝে সন্ধ্যার হাহাকার
ভালোবাসার উল্টো পাশেই ঘৃণার বাস
ঈর্ষায় প্রেমের সর্বনাশ
জীবন আর মৃত্যুর ফারাক কত?
কেন অহংকার আর দাম্ভিকতা এত এত?

ক্ষুধার সীমা নেই, পেটের ও চোখের
অথচ পেটে আঁটে কতটুকু?
সীমা নেই লোভের, স্বার্থের
সম্পর্ক? সে আবার কি!
সীমা নেই ভালোবাসা কিংবা ঘৃণার
অথচ একটু জড়িয়ে ধরা, একটি চুমু
ভালোবাসার এক পৃথিবী;

চাহিদা অসীম
অথচ সীমিত জীবনরেখা
চোখ খুলে রাখা আর ঘুমিয়ে যাওয়া, চিরনিদ্রায়;
তাহলে কেন বিভাজন?
কেনই অহংকার আর দাম্ভিকতা?
সুন্দর জীবন? একটু সহানশীলতা।

কোথাও সরল কোথাও আঁকাবাকা

কোথাও সরল কোথাও আঁকাবাকা

দীর্ঘ রাস্তা
ভাঙাচোরা
কোথাও সরল কোথাও আঁকাবাকা
তুই, আমি আর বাসের চাকা;

অন্ধকার হয়ে আসতেই বাসের ভেতর অন্ধকার
চাদরের ভেতর হাতে রাখলি হাত
বাহুতে নাকের ঘষা,
আমি সরে বসতে যেতেই আরও ঘন হয়ে আসলি;

উল্টো দিন থেকে ক্ষণে ক্ষণে গাড়ির হেডলাইটের আলো
তোর চোখে তাকাতেই চমকে উঠলাম আমি

কামনা লিখা থাক্র চোখে
কাম মনে
উত্তাপ বোঝে প্রেমিক

ইশশ! আগে জানলে পুরো বাসটাই রিজার্ভ করে নিতাম,
কিছু কিছু রাত না হয় স্বপ্নবাসর;

রাস্তা পিষ্ট হচ্ছে বাসের চাকায়
নিদারুণ ঘর্ষণ মাথার ভেতর
অনুভবে আর অনুভবে

একদিন দেখিস, ঠিক এক হব দুজনে……

নীল তো ভালোবাসারই রঙ

পাখির ডানায় রোদ
রোদের ডানায় পাখি
আমার ডানায় তুই
তোর মনে আমি
তোকে নিয়ে মনউড়াল
অনেক দূরে তুই

তোর কান্না সাগর
আমার নীলাকাশ
তুই কান্নায় ভাসিস
আমার উড়ে চলা
চোখে স্বপ্ন মনে তুই
ভালোবাসার কথা বলা

একদিন ভালোবাসতে বাসতেই অনেক দূরে উড়ে যাব আমি
ফিরে না আসলে কান্নায় ডুববি তুই
তারপর আকাশ আর সাগর মিশে যাবে নীলে
ঐ বহু বহু দূরে

নীল তো ভালোবাসারই রঙ
তাই না রে?

হিংসার রাত

😫 – হিংসার রাত

কুয়াশায় ভিজছে অন্ধকার রাত
তুই পা রাখতেই আলোকিত ছাদ;

তুই চাঁদে ভিজছিস ছাদে
আমি ভিজে যাচ্ছি হিংসায়;

কুয়াশা ছুঁয়ে যাচ্ছে তোকে
ছুঁয়ে দিচ্ছে রাত
ছুঁয়ে দিচ্ছে চাঁদনি
ছুঁয়ে যাচ্ছে চাঁদ
হিংসে তোকে কুয়াশা
হিংসে তোকে চাঁদ
হিংসে তোকে চাঁদনি
হিংসে তোকে ছাদ;

ওম ওম ভালোবাসায়
সবাই ছুঁয়ে আছে তোকে
ফাটা ফাটা ঠোঁট আমার শীতার্ত রাতে
আর মন পুড়ছে হিংসায়।

এক একটা সময়ের এক এক অনুভব

এক একটা সময়ের এক এক অনুভব
জীবনের অধ্যায়গুলো কখনো সরব কখনো নীরব;

একটা সময় জীবন মানেই বাবা-মা
একটা সময় বন্ধু-বান্ধব
একটা সময় যৌবনের আগমন
একটা সময় বিপরীত লিঙ্গে আকর্ষণ
একটা সময় শুধুই যৌবনের
নিয়ন্ত্রণহীন বল্গাহরিণের
একটা সময় ভালোবাসার
একটা সময় চোখ স্বপ্ন
একটা সময় তাকে ছাড়া সব ফাঁকা
একটা সময় কঠিন জীবন
জীবন মানেই টাকা টাকা
একটা সময় থিতু হওয়ার
একটা সময় ঘর সংসার
একটা সময় সবাই আপন
স্বার্থ এলেই খুব দুশমন
একটা সময় সবাই পর
যেতেই হয় রে মাটির ঘর;

আমি জীবন দেখেছি,
পাহাড় থেকে মরুভূমি হয়ে সাগর
ঝর্না থেকে গড়িয়ে লোনা জল
দিনের নিচে চাপা পড়া রাত
সাদার সাথে অমাবস্যা মেলানো কালো
সুখ সুখ চেহারায় বুকচেরা কান্না
আরও কত কি?

তোমরা যাকে জীবন বলো
আমি বলি স্বপ্ন
এক সময় ঘুম থেকে জেগে দেখব
শুয়ে আছি সাড়ে তিন হাত ঘরে;

তারপর?
আবার একটা নতুন জীবন শুরু হবে?

আচ্ছা! কি দেখব ওখানে?
কেও থাকবে কি পাশে?
সেখানে অন্ধকার থাকবে নাকি আলো?
বাবা, মা, ভাই, বোন?
স্ত্রী সন্তান পরিজন?

এই যে এত এত ভালোবাসা
এত এত অনুভব,
কাকে বলব সেখানে?

কত কত প্রশ্নই না ক্রমাগত মাথায় ঘোরে,
কি আছে আর কি নেই সেখানে?
খুব জানতে ইচ্ছে করে;

অনেকগুলো সময় পারি দিয়ে এসেছি
এবার যেতে হবে মাটির ঘর।