বিভাগের আর্কাইভঃ জার্নাল ও ডায়েরী

চিঠির পত্র ৫

আসলে আমার সবাই চিঠি লেখা ভুলতে বসেছি তাই আমি ঠিক করেছি আমরা যারা ব্লগে আসি তারা যদি একজন অন্যজনকে চিঠি লিখি তবে তা কেমন হয়। মানে যে কেউ যদি আমার কাছে চিঠি লেখে (তা হোক কবিতা কিংবা গল্প অথবা সাধারণ বাজারের লিষ্ট বা টাকা চাহিয়া পুত্রের পত্র) আমি তার প্রতি উত্তর দেবো। যেমন আজ দেয়া হয়েছে। আপনারা যারা চিঠি লিখবেন তারা একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন যেমন, চিঠি -১, চিঠি -২ এই ভাবে। আর আমি উত্তর দেবো পত্র-১, পত্র-২ এই ভাবে। সুন্দর হোক ব্লগিং।

আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে শুরু করছি চিঠির পত্র এর ৫ম পর্ব। আজকের চিঠি নিয়েছি –রিয়া রিয়া এর “অপেক্ষা … ২৩ (চিঠি)
লেখা থেকে এবং আমি তার উত্তর দিতে চেষ্টা করছি।

চিঠি (রিয়া রিয়া এর লেখা)

প্রিয়মন,

অপেক্ষায় থাকি আমি রোজ, এ যেনো অনন্তকালের অপেক্ষা আমার তোর জন্য। অপেক্ষার রং কমলারসা, যেনো তোর ঠোঁটের স্বাদ। অপেক্ষার সন্ধ্যে নীল, তোর চোখের ছায়া। তুই ও কি অপেক্ষা করিস? বলনা করিস অপেক্ষা ? একেবারেই করিস না? জানতে ইচ্ছে করে ভীষণ, তোর অপেক্ষা আমার জন্য। এতো শুধু সময় পেন্ডুলাম। অপেক্ষা এখনও বাকি। অপেক্ষার দুপুর কাজলছাপ, তোর রুক্ষ চুলের মতো। অপেক্ষার মন ধোয়া রঙ, তোর নিঃশ্বাসে ডুব চান।

সময় নদী কুলকুল করে বয়ে আমার কাছে আকুল হয়ে দাঁড়ায়। আমার তখন তোকে ছুঁতে চাওয়ার ইচ্ছেরা প্রবল হয়। ইচ্ছেরা সব জাগে। নিবিড় ভাবে জড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করে তখন তোকেই। কুশের আসন ভিজিয়ে নিয়ে বসেছি তোর আরাধনায়, একটু ঘাস ভেজানো ঘ্রাণ। বুকের ভিতর উথাল পাথাল ঢেউ। আবার জন্মে আবার যদি ফিরি। তবে পাতার জন্ম নেবো, শুধু তোকে ছুঁয়ে থাকবো মন। হয়তো বাতাস হব।

আজ মন তোর কাছে গচ্ছিত। ভালবাসা দাঁড়িয়ে তোর চৌকাঠে।মনের বাঁধন খুলে গেছে সন্ন্যাস আবিরে। অপেক্ষার ঘোর লেগেছে আমার মনে, মাথার ভেতর অসংখ্য অলিগলিতে শুধু তোর আনাগোনা। সন্ধ্যে বেলায় ধূপের ধোঁয়ায় দেখি, অপেক্ষার নামতা। অসহ্য এ অপেক্ষা, অসহ্য এ শরীর, একবার তুই ছুঁয়ে দেখ। ইতিহাসের পাতায় সব দুঃখ হেলায় ফেলে সুখের শিখরে উঠবো। এইত, শুধু এইটকুই আমার রোজ নামচার পথ। স্বপ্ন বেয়ে আসতে পারি তোর কাছে যখন তখন। সন্ধ্যে কিংবা রাত। মন খারাপের রাতগুলোও তুইই থাকিস ঘিরে।

আজ না হয় ঘুমিয়ে পড়ুক তোর আর আমার রাত …

… ইতি,
আমার হারানো মন…
______________

আমার উত্তরঃ

ঘুমিয়ে পড়া রাতের আঁধার চোখের তারার সুখে
খুব সকালে জেগে উঠি স্বপ্ন মায়া বুকে।
তোর কারনে একলা লাগে বুকের গভীরে
মন খারাপের রাতগুলোও তুইই থাকিস আমায় ঘিরে।
গচ্ছিত যে ভালোবাসা দাঁড়িয়ে চৌকাঠে
কানাগলির গোলক ধাঁধায় হাঁটে পথে পথে।
জীবন কি আর ইচ্ছে মত সুখ শিখরে ওঠে
রোজ নামচার পথ গুলোতেই ফাল্গুনি ফুল ফোটে।

প্রিয়,
তোর চিঠি পেলাম পড়তে গিয়ে নিজেকে হারিয়েছি জীবনের ব্ল্যাকহোলে। হঠাৎ করে তোর এই আকুলতা আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। ভালো আছিস তুই?

বেলা অবেলার মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিষ্পলক চেয়ে দেখেছি, গাঢ় গভীর রাতের আসমানী রঙ; ছুয়ে দেখতে পারিনি কোনদিন সবুজের চাদরে জড়িয়ে থাকা শিশির বিন্দু, যতবার ভেবেছি ছুঁয়ে দেখবো ততবার সকালের রোদ তাকে টেনে নিয়েছে উষ্ণ উত্তাপে।

আমি জাতিশ্বর হয়ে জন্মানো বিষয়টি কোন দিনই চাই না, যা এ জীবনে হবে না পরবর্তী জীবনে আশা করে হয়তো মানসিক সুখ মেলে কিন্তু নিজের কাছে নিজের বিচার করলে অংকের ফলাফল তো শূন্যের কোঠায় দাঁড়াবে, আর সেই শূন্য থেকেই তোকে হারানোর শূন্যতা অনুভব…. কি দরকার মিছে শান্তনার….।

অপেক্ষায় আমিও থাকি প্রান্তিক উৎসবে; কখন আসবে তুমি খোপায় গুজে বেলী ফুলের মালা, চোখে কাজলের টান, পায়ে আলতা, হাতে কাঁকন আর কপালে সিঁদুর রঙের টিপ…. তোমাকে আকুল করে দাঁড়ানো কুলকুল নদী আমাকে পথ আটকে দাড়ায়, চাইলেই পারাপারের খেয়া খুঁজে পাই না। বুকের ভিতর উথালপাথাল ঢেউ ঝড়ো হাওয়া হয়ে উড়িয়ে নিয়ে যায় দেশ থেকে দেশান্তরে……।

তারপরও স্বপ্ন আবেশে ছুঁয়ে যাওয়া মন দিগন্তের দিকে চোখ মেলে ধরে, খুঁজে ফেরে হারানো সে দিন। আচ্ছা বলতো যে ‍দিন গেছে চলে তা কি একেবারেই গেছে ? সময়ের ভাঁজে ভাঁজে যে গন্ধ ছিলো তোর, শরীর জুড়ে তার থেকে বাইরে এসে দেখেছি চোখের চশমার কাঁচ শুধুই মোটা হয়েছে বারংবার।

পোড়া ধূপের ধোয়ার সুভাস এক সময় বিলীন হয়ে যাবে বাতাসে ভেসে ভেসে
পোড়া চোখের স্বপ্নগুলো এক সময় বাস্তবতার কাছে হার মেনে ফ্যাকাশে হবে
পোড়া মনের ক্ষতও এক দিন হালকা হয়ে যাবে জীবনের স্বাভাবিক নিয়মে……

আর আমিও হেঁটে যাবো দূর থেকে দূরে, আরো দূরে; যেখানে অভিশপ্ত কোন জীবনের জন্য কোন রংধনূ উঠবে না। ভালো থাকিস নিজের মত করে এক জীবনে যতটা ভালো থাকা যায়।

আমি
খেয়ালী….

A man stands illuminated in a field of lupine wildflowers looking at the Milky Way in Hope Valley, California.
A man stands illuminated in a field of lupine wildflowers looking at the Milky Way in Hope Valley, California.

চিঠির পত্র ৪

আসলে আমার সবাই চিঠি লেখা ভুলতে বসেছি তাই আমি ঠিক করেছি আমরা যারা ব্লগে আসি তারা যদি একজন অন্যজনকে চিঠি লিখি তবে তা কেমন হয়। মানে যে কেউ যদি আমার কাছে চিঠি লেখে ( তা হোক কবিতা কিংবা গল্প বা সাধারণ ) আমি তার প্রতি উত্তর দেবো। যেমন আজ দেয়া হয়েছে। আপনারা যারা চিঠি লিখবেন তারা একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন যেমন, চিঠি -১, চিঠি -২ এই ভাবে। আর আমি উত্তর দেবো পত্র-১, পত্র-২ এই ভাবে। সুন্দর হোক ব্লগিং।

আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে শুরু করছি চিঠির পত্র এর ৪র্থ পর্ব। আজকের চিঠি নিয়েছি –রিয়া রিয়া এর “ভুলে থাকা মন … ২২ (চিঠি)“।
লেখা থেকে এবং আমি তার উত্তর দিতে চেষ্টা করছি।

চিঠি (রিয়া রিয়া এর লেখা)
________________

প্রিয়মন,

মেঘ নদীতে হাওয়ায় পানসী বেয়ে অবশেষে আমার কাছে এলো তোর চিঠি। চিঠি খুলতেই একরাশ রজনীগন্ধার সুবাস ছুঁয়ে গেলো আমায়। খুঁজে পেলাম তোকে। ঝলমলিয়ে উঠলাম আমি।

জানিস, কাল রাতে বৃষ্টি এসেছিল, ঝড়কে সাথে নিয়ে। তুই তো জানিস এই রাতের বৃষ্টি আমার কত্তো প্রিয়। যখন ঝড় হচ্ছিলো, দৌড়ে গেলাম ছাঁদে। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম। প্রশান্ত মহাসাগরের কোন এক অজানা দ্বীপের গন্ধ এসে লাগলো আমার নাকে। সেই দ্বীপকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে নিয়ে নীচে নেমে এলাম। আর বৃষ্টি, ঝড়কে নিয়ে আমার শহর ঘুরে ঘুরে আমায় খুঁজে ফেরে…আমার ঘরের জানলাটা খোলা ছিল। তাই ওরা আসার সাথে সাথেও পর্দায় বাঁধা পিতলের ছোট্ট ঘুঙুরগুলোয় সুর তুলল “টুংটাং”।

আর জানিস, পড়ার টেবিলে যত্নমাখা বইগুলোকে পরম আদরে ছুঁয়ে দিলো বৃষ্টি, আর ঝড় রাখলো তার অগোছালো ছাপ। আয়নায় ছুঁয়ে দেখলো আমার প্রতিচ্ছবি …তারপর এঘর থেকে ওঘর গেল ..ওঘর থেকে সেঘর …থমকে দাঁড়াল বারান্দায়… সেই যেখানে আমি দাঁড়িয়ে থাকি রোজ, তোর কথা ভাবি। আর রেলিংয়ে হাত রেখে তোর প্রিয় গানগুলো গুনগুনিয়ে উঠি ; জানিস,ঠিক সেখানে, একেবারে সেখানেই বৃষ্টি হাত রেখে গুনগুনিয়ে নিলো বুঝি। ভীষণ হিংসে হচ্ছিল তখন আমার। তোর আর আমার গন্ধমাখা বারান্দা থেকে গন্ধ নিল মেখে…তারপর ভেসে গেল হাওয়ায়… আর ঠিক তখনই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো আয়নায় আমার প্রতিচ্ছবি… বৃষ্টি এল ঝমঝমিয়ে।

প্রতিদিনের চোখের জলে অনেকটা ধুয়ে গেছে মন। জানি তুই ভুলে গেছিস। জানি এখন আমি তোর কাছে গুরুত্বহীন। তাইতো ভীষণ অচেনা জানা আমি আজ তোর কাছে। আর আমি তোকে সেই কিছুদিন আগের মতোই ভেবে নিয়ে আবদার করে বসি। জানিস কখনো কারো কাছে আবদার করিনি। তোর কাছেই করতাম। আর কোন আবদার করবোনা কথা দিয়েছি তোকে। আসলে আমি ভীষণ বোকা তাই বারবার বোকার মতো ফিরে পেতে চাই পুরনো তোকে। আর তুই বারবার শব্দের তীর এক্কেবারে আমার বুকে বিঁধে দিস। কালও দিয়েছিস। রক্তাক্ত হয়েছি কাল ভীষণ। চোখে নেমেছে লবন জলের স্রোত। হয়তো ভুলে গেছিস তুই, বলেছিলাম তোকে যে আমি হারাবার ভয় পাই। বলেছিলাম তোকে জানিস আমার যা ভাগ্য, এত সুখ আমার সইলে হয়। এখন বুঝলি তো, যে আমার ভাগ্যে সুখ নেই।

জানি অনেক লেখার মতন এ লেখাও পাবে না তোর ছোঁয়া। তবু আজ মন বড় টলটলে দিঘী। তোর নতুন খেলার সাথীর সাথেই খেলায় মাতিস রোজ। আমি এখন পুরোনো,অচল। এখন এই সব দিনে একা। তুই আর আসিস না ছাদের সে কার্ণীশ বেয়ে, যেখানে কল্পনায় তোকে পেতাম। মেঘেরা তবু রোজ একবার করে এ শহরের শার্সীর আর্শীতে আর্জি জানিয়ে যায় আমাকে ভেজাতে চেয়ে। ভিজে যায় মন-চোখ।

তাইতো কাল গুঁড়ো গুঁড়ো বৃষ্টিরা এসেছিলো নিয়ে যেতে, বাধা পেয়ে চোখে জলের সাথে সুর তুলেছে। তোর কাছে এতটুকু আকাশ চাইতে গিয়ে অপমানিত হয়ে গুটিয়ে গিয়েছি নিজের কোলের ভিতরে। রাতের পর রাত নিজের কোলে কোল পেতে নিজেকে ঘুম পাড়াই আমি। আস্তে আস্তে বড় হয় দীর্ঘশ্বাস। তোর এখন, তোর প্রিয়ার সাথে নীল রঙা রাতভোর। আর আমি শিশির ভেজা কুয়াশার গন্ধের মতন একটু একটু করে মুছে যাই তোর মন থেকে।মুছে দিচ্ছিস তুই একটু একটু করে। কেউ বোঝেনা জানিস। কেউ না। তুইও না। না, তুইও আমাকে বুঝিস নি।বুঝতে চাস নি। হেঁয়ালির মতো উচ্ছিষ্ট হয়ে যাই আমি। উপাচারে যেমন অসম্মানিত ঈশ্বর, অবহেলায় তেমনি আমার বিসর্জন।

আজ আর আমি কোথাও নেই। আমি নেই জানিস তুই? মরে গেছি আমার আমি। এখানে, ওখানে, সেখানে, কোনখানেই আমি নেই। কোত্থাও নেই …

ভালো থাকিস রে মন। আকাশের তারাদের মতো ঝলমলিয়ে, খুব ভোরের রোদের মতোই সতেজ থাকিস। জানবি তুই ভালো থাকা মানেই আমার ভালো থাকা।

… ইতি,
আমার হারানো মন…
———————————————————————
———————————————————————

আমার উত্তরঃ

প্রিয় মন

মেঘপরীরা সত্যিই আজ আমার জানালায় এসে দাঁড়িয়ে, কতদিন পরে একটু শীতল বাতাস চোখের তারায়, বুকের মাঝে পরশ ‍দিয়ে গেলো, ভাবিনি কোন দিন মেঘ বলাকা হয় ডাকপিয়ন।

নারে এখন আর বৃষ্টি আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে এগিয়ে যেতে পারে না, ইচ্ছে করেই আড়াল করি কিংবা বন্ধী করি নিজেকে, বৃষ্টির জলে ভিজলে এখন খুব জ্বর হয়। তবে এটা সত্যি ঝড় বাতাসের সেই সোঁ সোঁ শব্দ এখনো আমাকে ভাবায়, টিনের চালে বৃষ্টির নূপুর আমাকে নিমগ্ন করে বিসর্জনের ভাবনায়। একটা সত্যি কথা জেনে রাখ সময়ের বিবর্তনে হীরেও কাঁচ হয়ে যায়; বা কলি গুলো ফুল হয়ে ওঠে। একটা কথা জানতে ইচ্ছে সেই ছোট বেলার মত এখনো কি পায়ে নূপুর পরিস?

ভালোবাসায় যেমন হিংসে থাকে তেমনি রাগ অভিমান থাকে, থাকে সম্মান আর এর মধ্যে কোন একটা বাদ হলে ভালোবাসা হয়ে যায় গুরুত্বহীন, কিন্তু ভালোবাসা গুরুত্বহীন হলেই যে ভালোবাসার মানুষটা গুরুত্বহীন হয় এমন কথা আমি বিশ্বাস করি না, ঠিক তেমনি গুরুত্বহীন হলেই যে মানুষ ভুলে যাবে তেমন কোন কথাও নেই। অভিমানীর চোখের জলের ভাসা – মুখের ভাষায় দুঃখ গুলো পাহাড় চূড়া থেকে ঝরনা হয়ে নদীতে মিশে যায়, আমি সেই নদীতে আমার কাগজের নৌকা ভাসাই; কাগুজে নৌকা গুলোও এক সময় ভিজে ভিজে চলে যায় নদীর পেটে; আমি আর আবেগী হতে পারি না, আমি আর তাকিয়ে থাকতে পারি না ডুবে যাওয়া নৌকার দিকে; কেন এমন হয় সেই উত্তরও জানা নেই। আজো ভেঙে যাওয়া চায়ের কাপে বা গ্লাসের শব্দকে ভুল করে তোর হাসি ভেবে চমকে উঠি।

তুই তো ভালো করে জানিস সেই ছেলেবেলা থেকে এখন অবধি যা কিছু আঁকড়ে ধরতে চেয়েছি সেই সব কিছুই চাঁদের আলোর মত হাতের ফাঁকফোকর গলে বেরিয়ে গেছে। সত্যি বলছি সবাই জানতো আমি দুঃখ পাইনি কিন্তু কখনোই কাউকে ভিতরের ক্ষত গুলো দেখাতে পারিনি, আজ তুই বললি বলেই তোকে জানালাম। আইযুব বাচ্চুর সেই গান টা খুব মনে পরে গেলো …
”হাসতে দেখ, গাইতে দেখ অনেক কথায় মুখর আমাকে দেখ,
দেখো না কেউ হাসির শেষে নীরবতা।”

আসলে যে আকাশ তুই আমার কাছে চেয়েছিলি সেই আকাশ কো্ন দিন আমারই ছিলো না; আর যে আকাশ আমার নিজেরই ছিলো না তা দেবার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি আমি কি করে তোকে দেবো; কিন্তু বোঝার ভুলে যে আকাশ আমার ছিলো সে আকাশে ডানা মেলে উড়ে দেখলি না… ফাঁকি দিয়ে কিছু হয়তো হাসিল করা যায় কিন্তু তা দিয়ে জীবন চালানো যায় না। আর আমি ফাঁকি দিতে পারিনি তোকে ..ক্ষমা করিস…ক্ষমা করিস… আমাদের সেই সর্ম্পককে।

আমি তোকে বুঝিনি এই বিষয়টি সত্যি নয়; তোর মত কেউ যদি তোকে বুঝে থাকে তা এই আমি আর সেই জন্যই আমি ফিরে চলেছি নিজের দেশে; ভালো সেজে থাকা আর ভালো হওয়া এক কথা নয় আমি ভালো সেজে একটি সমাজের কাছে হয়তো কিছুদিন ভালো থাকতে পারতাম কিন্তু ভালো হতে পারতাম না ; যেমনটি অন্য সবাই চায় কিংবা পারে…তার থেকে এই যাযাবর জীবন অনেক ভালো; জাহাজে জাহাজে ঘুরে বেড়াই ভিন্ন ভিন্ন দেশে মিশে যাই নানা বর্ণের নানা মানুষের সাথে; দেখি তাদের সুখ দুঃখ হাসি কান্না বুঝতে চেষ্টা করি মানুষের সত্যিকারের সুখের চাবি কোথায় থাকে।

আমার তো উল্টো মনে হয় ঈশ্বর, অবহেলায় নয় খুশিতে বিসর্জন নেন নিজের ইচ্ছায়; যাকে পূজোর থালায় নিবেদনই করা হয়নি সে উচ্ছিষ্ট হয় কি করে। অদ্ভুত তোর যুক্তি…; কোথায় যেন শুনেছি –
চলে যাওয়া মানে বিচ্ছেদ নয়, নয় বন্ধন খুলে ফেলার গাঢ় রজনী; চলে গেলেও আমার অধিক থেকে যাবে তোর না থাকা জুড়ে …।

ভালো থাকিস…
ভালো থাকিস নিজের মত করে
এক জীবনে যতটা ভালো থাকা যায়।
আমি
খেয়ালী….

6-house-night-869x580

চিঠির পত্র ৩

আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে শুরু করছি চিঠির পত্র এর ৩য় পর্ব। আজকের চিঠি নিয়েছি –রিয়া রিয়া এর “ভুলে থাকা মন … ২১ (চিঠি)”।
লেখা থেকে এবং আমি তার উত্তর দিতে চেষ্টা করছি।

চিঠি (রিয়া রিয়া লেখা)

প্রিয় মন,

আজ অনেকদিন পর ভীষণ একা লাগছে। যদিও চিরকালই আমি একা, তবু তুই তো ছিলিস কিছুক্ষণের জন্য হলেও। এখন আমি নেট-এ ভবঘুরের মতন ঘুরছি আর পাশে গান চলছে, গান আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী। ওই যে গানটা ” তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা”
…. .বাজছে এখন….রোজই শুনি …

মনটা আজ কেমন কেমন যেনো। হঠাৎ করে ইচ্ছে হল একটা চিঠি লিখতে। জানিসই তো চিঠি আজও আমার ভীষণ পছন্দের। এই SMS এর যুগেও। একটা মন কেমন করা ব্যপার আছে চিঠিতে। কিন্তু কি লিখি? হুম.. বলতো? ঠিক কি লিখি তোকে?

যে কথা কাউকে বলা হয়নি। যে কথা তোকেও বলা হয়নি। যা থাকে মনের গভীরের সব থেকে সুরক্ষিত কুঠুরিতে লুকনো সবার চোখের আড়ালে। সে সব কথা? শুনবি? না রে,থাক। সেগুলো আমার বড্ডো আপন কথা। যেগুলো এতদিন জেনেছিস, সেগুলো আমার পাড়ার সবাই জানতো। আশেপাশের বাড়ির,আমার ছোটবেলার বন্ধুরা, আমার আত্মীয়স্বজন সব্বাই। তুই নতুন জেনেছিস। আর আমার ভীষণ আপন কথা আমারই থাক।

হাসছিস বুঝি? ভাবছিস মেয়েটা বড্ডো বাজে বকে? ভাবছিস মেয়েটা বড্ডো গায়ে পড়া তো? মিনিমাম personality টুকুও নেই? তা হাস!! জানিস তো, “smiling is good for health”

কি জানিস, আমার যে এখন বড্ডো কথা বলতে ইচ্ছে করছে। জানিস এখন আমি ভীষণ শান্ত হয়ে গেছি, আর কোন দুষ্টুমি করি না। জানিস আজও আমি যত কথা নিজের সাথেই বলি। তবুও কিছু কথা তো তোর সাথেও বলতাম। যদিও জানি আর তোর কাছে পৌঁছোবে না আমার কোন চিঠি। আমাকে আমি চিনি। মরে যাবো তবুও তোকে আর কিছুই বলবো না। তবুও কত পাগলামী দেখ আমার মধ্যে, তবুও তোকেই রোজ একটা করে চিঠি লিখি, তারপর পুড়িয়ে ফেলি। যেন নিজের চিতা জ্বলতে দেখি সেই চিঠির সাথে। কতজনের এই সৌভাগ্য হয় বল? সেই অর্থে আমি বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী। নিজের চিতা নিজেই জ্বালাই।

সবকিছু সামলাতে সামলাতে বড় ক্লান্ত,বড় একা। বোললে হয়ত তোকেই বলা যেত সবটুকু। জানি তুইও এখন অন্য কোথাও একা। কেন জানিনা বসন্তের এই মিঠে গন্ধমাখা হাওয়ায় তোর খবর পেয়ে যাই ছাদের কোনা ঘঁষে দাঁড়ালেই। তোর-আমার দিনগুলো এখন অন্য কারোর, অন্য কারো সাথে ভাগ করে নিস হয়তো। ক্রমশঃ সরছি দূর থেকে দূরে। কতদিন হয়ে গেছে তোর কথা শুনিনি। কত গল্প জমে যাচ্ছে জানিস? কত কত সময় মনে মনে খুঁজি তোকে। বড় অসহায় লাগে। দূরে সরে গিয়েও অবলম্বন হয়ে আছিস তুই।

হয়তো বিশ্বাস করবি না, তোকেই শুধুমাত্র, হ্যাঁ তোকেই আমি আমার সবটুকু দিয়েছি। আর আজও আমার সবটা জুড়েই শুধুই তুই। তোকেই দেবো আমার যত ভাললাগা, মন্দলাগা। সেই কবেকার গ্রীষ্মের দুপুরের কুলপিমালাই আর ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মায়ের চোখ এড়িয়ে জমা জলে ভাসানো কাগজের নৌকোটাও তোর জন্যেই রেখে দিলাম। হাসি-কান্না-হীরে-পান্নায় মোড়া আমার দিনগুলো আজ থেকে শুধু একলা আমার নয় তোর সাথেও ভাগ করে নিলাম।

যত কথা তোর সাথে আমারই,আর কেউ জানবেনা সত্যি। টেলিপ্যাথি হোক নাহয় চুপিচুপি, ফিসফাস আবডালে, মনে মনে হরদম। এইখানে আছি আমি। সেই যে যেখানে একা রেখে গেছিস। সেখানেই আছি আজও। আর তুই! তুই? শুধু জল-ছায়াতে। খুব ভালো থেকে যাব আমি, শুধু তুই ভালো থাক। ভালো থাক তোর ঘর-বাড়ি, ভালো থাক তোর লোক-জন, ভালো থাক তোর কাজ, ভালো থাক তোর ভালোভাবে থাকারা। ভালো থাক একটুকু আমার থেকে যাওয়া! ভেবে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি রোজ।

এই দেখো কান্ডো !! বোলতে বোলতে কত্তো লম্বা একটা চিঠি হয়ে গেলো রে। জানি এখন তুই খুব busy? আমার জন্য সময় নেই তোর। ঠিক আছে আমি তবে চিঠিটা খামে মুড়ে রেখে দেব। আজ আর পোড়াবো না। কাল পুড়িয়ে ফেলবো।

আর হিমেল হাওয়ায় তোর উত্তরও খুঁজে পাবো। নীল আকাশের বুকে মেঘেদের আলপনা আঁকা রাজহাঁসেদের মতো নরম পালকের চিকন রঙে। খুঁজে নেবো তোর উত্তর।

ইতি
আমার হারানো মন….
———————————————————————
———————————————————————
আমার উত্তরঃ

উত্তর
প্রিয় মন
নীল আকাশের বুকে মেঘেদের আলপনা আঁকা রাজহাঁসেদের মতো নরম পালকের চিকন রঙে খুঁজে নেয়া ইচ্ছে খুশির সুখ কিংবা দুঃখের বাতাসে উড়ে বেড়ানো তোর উত্তর আমি ঠিকই পেয়ে যাই … ওই যে ওই গানটা আছে না …”ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো…”। সত্যি করে জানিনা আকাশের কোন ঠিকানা আছে কিনা থাকলে বেশ হতো; তোকে আর চিঠি গুলো পুড়িয়ে ফেলতে হতো না আর আমাকেও চাতক পাখি হয়ে সারাদিনময় একটু করুণা পানির জন্য আকাশে উড়তে হতো না।

কিছুদিন আগে শোনা একটি গান “আমি আগের ঠিকানায় আছি সময় করে এসো একদিন, দু’জনেই মুখোমুখি বসি কিছুক্ষণ’ শুনেছিস কিনা জানি না, আসলে জলছায়ার ছবি গুলো অতল জলে যখন হারিয়ে যায় তখনই টেলিপ্যাথি অনুভূতির থেকেও বড় গভীর অনুভুতি চোখের কোন থেকে ঝড়ে যায়, আমার আর ফেরা হয়না চুপিচুপি, ফিসফাস আবডালে, আড়ালে মনে মনে হরদম খুশির জোয়ারে তোমার আঙ্গিনায়।

ঠিকই বলেছিস জীবন ভাগাভাগি শুরু হয়েছিলো সেই কুলফি মালাই আর মার্বেল দিয়ে, আজ মনে হয় সেই দিনগুলোই ভালো ছিলো এখন হাতের তালুতে লুকিয়ে রাখা কুলফি গুলো গলতে গলতে ভোরের শিশির হয়ে রোদে শুকিয়ে যায় আর মার্বেল গুলো গড়িয়ে গড়িয়ে চলে গেছে বহুদূর, তারপরও পুরাতন টিনের বাস্কে জমিয়ে রাখা স্মৃতির পাতা গুলো একমাত্র অবসরের সঙ্গী হয়ে ছায়া হয়ে যায়।

নারে সবটুকু বলিস না বললেই ফুয়ে যাবে, কিছুতো জমে থাক না বলা কথায় চোখের মাঝে সেই আগের মতই। তোর মনে আছে কিনা জানি না সেই পড়ন্ত বিকেলে ছাদের কার্নিস ঘেষে দাড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা, তারপরও ফিরে যাবার সময় না বলা কথার কিছু আকুতি ঠিকই থেকে যেত… যা পারিনি বা পারোনি তা হয়তো আমাদেরই ছিলো না কোন দিন কিংবা কোন অ দৃশ্য সুতো আমাদের ঠিকই আলাদা করার জন্য তৈরী ছিলো। তোর আগুনে পোড়া চিঠির ধোঁয়া এখনো আমার আকাশে মেঘ ডেকে আনে যা কিনা শুধু আমিই বুঝতে পারি। চিন্তার চিতা সব মানুষই কিছুটা বহন করে তবে ভাবনা গুলো ভিন্ন, তুই যে ভাবে ভেবে নিজেকে পোড়াচ্ছিস আমি হয়তো তার উল্টো কিছু ভেবে হৃদয়ের ক্ষতকে খুঁচিয়ে ঘা করি।

এবার সত্যি হাসছি তোর কথায়, তোকে পাগলী তো সব সময়ই জানতাম, গায়ে পরা বিষয়টি আসলে মূল্যহীন যদি তেমনই হতো তাহলে তো জীবনের নদী ভিন্ন পথে চলে যেতে পারতো।

এই SMS এর যুগে তোর যদি প্রতিদিন মন খারপ থাকে তবেই আমি খুশি, কিছুটা স্বার্থপরের মতই খুশি, একটা চিঠিতো পাবো। কি লিখবি সে নিয়ে চিন্তা করিস না, আমার কাছে তোর লেখা বাজারের লিস্টটাও অনেক মূল্যবান যদিও কখনো বুঝতে চাইলি না আর আমিও বোঝতে পারিনি।

সত্যি বলতে কি আমরা প্রতিটি মানুষই একা যে যার স্থানে … নচিকেতার সেই গানটা ‘একা একা পথ চলা একা একা কথা বলা’ .. যে গানটা আমি প্রায়ই শুনি, আর ভাবি…ভাবি আর শুনি……। আজ আমিও বড়ো ক্লান্ত, বড় নিশ্চুপ নিয়ন আলো বিহীন কোন গ্রামের মত। অসমাপ্ত কোন পথের মতো, মরুভূমির বালু গুলোর মতো, তেপান্তরের মাঠের মতো, রাতের তারাদের মতো, একলা পাখিটির মতো কিংবা তোর মতো।

ভালো থাকিস নিজের মতো করে
এক জীবনে যতটা ভালো থাকা যায়।

আমি
খেয়ালী….

_MG_7639

আসলে আমার সবাই চিঠি লেখা ভুলতে বসেছি তাই আমি ঠিক করেছি আমরা যারা ব্লগে আসি তারা যদি একজন অন্যজনকে চিঠি লিখি তবে তা কেমন হয়। মানে যে কেউ যদি আমার কাছে চিঠি লেখে ( তা হোক কবিতা কিংবা গল্প বা সাধারণ ) আমি তার প্রতি উত্তর দেবো। যেমন আজ দেয়া হয়েছে। আপনারা যারা চিঠি লিখবেন তারা একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন যেমন, চিঠি -১, চিঠি -২ এই ভাবে। আর আমি উত্তর দেবো পত্র-১, পত্র-২ এই ভাবে। সুন্দর হোক ব্লগিং।

চিঠির পত্র ২

আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে শুরু করছি চিঠির পত্র এর ২য় পর্ব। আজকের চিঠি নিয়েছি –
নীল সঞ্চিতা এর “কিসের অপেক্ষায়” লেখা থেকে এবং আমি তার উত্তর দিতে চেষ্টা করছি।

চিঠি ….. (নীলের লেখা)
সেই সম্বোধনহীন চিঠি অনেকদিন পর আজ আবার লিখতে বসলাম তোমাকে। অসময়ের হঠাৎ বৃষ্টির এই সকালে টেবিলে ছড়িয়ে থাকা কাগজ কলমে চোখ পড়তেই মনে হল তোমাকে লিখি।

চারদিকে কেমন উদাস হাওয়ার ছুটাছুটি। ইট কাঠের শহরের উঁচু দালানের ফাঁকে দেখতে পাওয়া এক চিলতে আকাশের গায়ে কালো মেঘেদের উড়াউড়ি। তাকিয়ে থাকতে গিয়ে গুনগুন করি…

“মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা
মন খারাপ হলে কুয়াশা হয়, ব্যাকুল হলে তিস্তা।”

মন খারাপ ভাব দূর করার জন্য কফি বানিয়ে আনলাম আর তোমাকে লিখতে বসলাম তাতে চুমুক দেয়ার ফাঁকে। তুমিতো জানোই তোমাকে লেখার সময়টুকু কতটা উপভোগ করি আমি।

চারপাশটা বড্ড অদ্ভুত লাগে, জানো? এই যে দেখ আমার বারান্দায় টবের গাছের নতুন গজানো পাতাগুলো এই অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে ভিজে কেমন আনন্দে ঝলমল করছে। অথচ ঠিক তার উপরে কার্নিশে বসা একটা আধভেজা চড়ুইপাখি জড়সড় হয়ে বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় আছে। একটা রোদ ঝলমল দিনের অপেক্ষায় আছে।

“মেঘের দেশে রোদের বাড়ী পাহাড় কিনারায়
যদি মেঘ পিয়নের ডাকে সেই ছায়ার হদিস থাকে
রোদের ফালি তাকিয়ে থাকে আকুল আকাঙ্খায়
কবে মেঘের পিঠে আসবে খবর বাড়ীর বারান্দায়, ছোট্ট বাগানটায়।”

আমি কিসের অপেক্ষায় আছি বলতে পারো?

ভাল থেক।
নীল…

_____________________________

আমার উত্তরঃ

নীল,
তোমার গানের গলা বরাবরই অসাধারন ছিলো, কত দিন অলস বিকেলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তুমি আকাশ দেখে গান গাইতে আমি চুপি চুপি এসে মোড়াটা টেনে তোমার পিছনে বসে শুনতাম
.
সখি ভালোবাসা করে কয় …
.
তখনো তোমার গানে কোন সম্বোধন পাইনি, আজো খুঁজিনা কিছু চলমান পাতা না হয় সম্বোধনহীন থাক ক্ষতি কি?
.
এখনো তুমি আগেরই মত অপেক্ষায় থাকো একটি প্রহরের যেখানে বসে মন খারাপের ফুলগুলো খাতার পাতায় কবিতা হয়ে যায়, আচ্ছা বলতে পারো কতটা প্রভাবে মনের ক্ষত চোখের কোনে জ্বালা ধরায় কিন্তু বৃষ্টি আনে না। জানি এর উত্তরও তোমার অজানা। অথচ তুমি চাইলেই পেতে হাজার রংয়ের মেলায় জীবনের উল্লাস।

যে চড়ুই পাখি একা ভিজে কর্নিশে বসে থাকে বুঝতে হবে সে তার সঙ্গীর অপেক্ষায় পথচেয়ে আছে. এটাই চড়ই পাখির চরিত্র গত একটা দিক। কোথায় য়েন পাখির চরিত্র খুঁজতে গিয়ে পড়েছিলাম ঠিক মনে নেই তবে একটি বিষয় ঠিক মনে আছে পখি চরিত্রের মানুষ হয় মানুষ চরিতে পাখি মেলে না।
একটি ঝলমলে দিনের থেকে এখন বেশী প্রয়োজন একটি ঝলমলে মানুষের।

”মেঘবালিকা খুব উচাটন বাতাস কেন ধায়!
কোন বাতাসে কোন সে জীবন কোথায় নিয়ে যায়;
রোদ গুলো সব খাচ্ছে খুঁটে আমার শরীর রস
ভালোবাসা কম কি ছিলে ! হলে নাতো বশ।
অপেক্ষার প্রহর গুলো অধিক জ্বালাময়
যে কারনে পথ চাওয়া সেটাই তোমার ভয়।”

ভালো থেকো
এক জীবনে যতটা ভালো থাকা যায়।

খেয়ালী
১২/০৩/২০১৭
IMG_3346 copy (2)

আসলে আমার সবাই চিঠি লেখা ভুলতে বসেছি তাই আমি ঠিক করেছি আমরা যারা ব্লগে আসি তারা যদি একজন অন্যজনকে চিঠি লিখি তবে তা কেমন হয়। মানে যে কেউ যদি আমার কাছে চিঠি লেখে ( তা হোক কবিতা কিংবা গল্প বা সাধারণ ) আমি তার প্রতি উত্তর দেবো। যেমন আজ দেয়া হয়েছে। আপনারা যারা চিঠি লিখবেন তারা একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন যেমন, চিঠি -১, চিঠি -২ এই ভাবে। আর আমি উত্তর দেবো পত্র-১, পত্র-২ এই ভাবে। সুন্দর হোক ব্লগিং।

সাবধান!

সাবধান ! …

দস্যুরা তোমার সবকিছু ছিনিয়ে নেবে না। মনে রাখবে এই সমাজে দস্যুদের চেয়েও দুর্ধর্ষ মানুষ নামের প্রাণী আছে।
যারা তোমার জীবনের সবকিছুই গ্রাস করার জন্য সদা প্রস্তুত। স্বরণ রেখো, তোমার কোনো সহযোগিকেও ওরা ছাড়বে না।

চিঠির পত্র ১

আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে শুরু করছি চিঠির পত্র এর প্রথম পর্ব। প্রথম চিঠিপত্র সূত্র এখানে। আজকের চিঠি লিখেছেন আমাদের সকলের প্রিয় মুরুব্বী এবং আমি তার উত্তর দিতে চেষ্টা করছি।

চিঠি……(প্রিয় মুরুব্বী’র লেখা)

প্রিয়বরেষু খেয়ালী মন।
কেন লিখতে মন চায় !! উত্তর জানা নেই। যখন পথ পাই না খুঁজে, নির্বাণ খুঁজি লিখায়। কবিতা আমার অলিন্দ ও নিলয়। হয়কি- হয়না- খুঁজতে থাকে অনেকেই। আমি কথা বলি আমার চেতনায়, আমার ভাষায়, আমার কবিতায়। যদি কেউ শুনতে পায় সেই কথা, তবে- তারাই পড়বে আমার লিখা। সে যদি একজনও হয়।
আমি যেমন ছেড়েছি সব। … ছেড়েছি সব কিছু। তেমনি তুমিও ছেড়ে যাবে একদিন। যেতেই হবে তোমাকে। তারপর …। অনেকটা পথ অতিক্রান্ত হবে যখন, কোলাহল কিছু থামবে, বিশ্বাসের ভ্রান্তিবিলাস খসে পড়বে একে একে। শ্রাবণে কি, হাড়-হিম শীতে। একাকী শূন্যতার দিকে চেয়ে ধোঁয়াশার বুকে ভেসে উঠবে তোমার চোখে আমার মুখ।

তোমাকে যেতে হবেই। আরো অনেকটা পথ এগুতে হবে। যেমন আমাদের পূর্ব পুরুষদের চেয়ে অগ্রগামী এই আমি। অংশত এবং কিছুতো সত্য। প্রেমিক সজ্জন, বান্ধব- বান্ধবী। অভাব হবেনা নিত্য নতুন সহযোগীর। ঘিরে থাকবে ভরে থাকবে কদম্ব কামিনী। সেই সাথে Cristian Dior, Richi ও Gucci আরো কত কি।
ভালোবাসার কথা শোনাবে অনেকে, ভালোবাসবে না। মাথায় উঠাবে, পুজার ভান করবে, আছড়ে দেবে নানান প্রকার। ভালোবাসবে না।

তবু একজন মানুষ খুঁজি। সব সময় খুঁজি। খুঁজে খুঁজে মরি। আসরে, উৎসবে, আয়োজনে, সমাবেশে। এমনকি সান্ধ্যভ্রমণ ও প্রাতঃভ্রমণেও। খুঁজি শুধু একজন মানুষ। যার সংস্পর্শে নষ্ট হয়ে যাওয়া মূল্যবোধ ‘অরণ্যের’ মতো ফিরে পেতে পারি। মানুষের যা কিছু মর্যাদার যা কিছু অর্জন- পথ খুলে দিতে পারে যে নির্যাস। সেই সেই মানুষকে খুঁজি। কে দেবে আশ্বাস !! খুঁজে অহরহ। মুছে দিক সেই… এই ঘৃণা- অবিশ্বাস- সন্দেহ। পারস্পরিক ভেদ বিদ্বেষ। খোল- নলচে বদলে দেয় এমন মানুষ।

‘মৃত্যুই কেবল মৃত্যুই ধ্রুবসখা … যাতনা কেবল যাতনা সুচির সাথী।
অতএব কারো পথ চেয়ে লাভ নেই; বিরূপ বিশ্বে মানুষ নিয়ত একাকী।’
_________________________

আমার উত্তরঃ

প্রিয় মুরুব্বী
অসম্ভবের সম্ভবনা সবাই পারে না যারা পারে তারা সাধারণ নয়। আমি দেখেছি গভীর ভাবে উপলব্ধি করেছি আপনি পেরেছেন, এই পারা না পারার বিষয়টিও মনের চিলেকোঠার একটা আকাশ যে আকাশে শুধু নিজেকে নিয়ে ভেসে বেরানো যায়, খুঁজে পাওয়া যায় নিজের অস্তিত্ব। যেদিন লিখতে মন চাইবে না সেই দিন থেকে আপনি আর আপনিতে থাকবেন না, আর জনের হিসাবে না লিখে নিজের জন্য যে লেখা তৈরী হয় তাই সর্বাধিক জনপ্রিয়।
.
জীবনের সত্যি হলো ছেড়ে যাওয়া। আমার কেউই চিরস্থা্য়ী নই, তারপরও কথা থেকে যায়। চোখের আড়াল মনের আড়ালের থেকে বরাবরই ভিন্ন মাত্রা বহন করে, তুমি কিংবা আমি হয়তো ছেড়ে যাবো একে অন্যকে চোখের পাতা বুজে কিন্তু মনের পাতা চলমান ব্যক্তি কোন দিনই মুছে ফেলতে পারবেনা ভালোবাসার গভীরতা। তোমার সেই কথাটি অবশ্যই ঠিক যে, “একাকী শূন্যতার দিকে চেয়ে ধোঁয়াশার বুকে ভেসে উঠবে তোমার চোখে আমার মুখ।” কিন্তু আমার ক্ষেত্রে কথাটি ভিন্ন অর্থে উচ্চারিত হবে, যাকে ভালোবেসে বুক বেধেছি নীল সবুজের গহীনে তার জন্য গাঢ় অন্ধকারে হেঁটে যেতে পারি কিন্তু তাকে ভুলে নয়। হাতে হাত নাইবা থাকলো বুকের মাঝে সঞ্চিত হৃদ কম্পন তো থাকবেই।

প্রেম আর ভালোবাসা কখনো এক ভারে বিচার করা যায় না দুটোই আলাদা যেমন আমার জননী, আমার স্ত্রী, আমার মেয়ে, আমার ছেলে, আমার বন্ধু তুমি সবাইকেই আমি ভালোবাসি সবার সাথেই আমার হৃদয়ের বন্ধন তবুও অবস্থান গত কারনে সমুদ্রের গতিও বদল হয়, বাঁক নিয়ে যে নদী এগিয়ে চলে তার কি স্রোত তাকে না ?
.
ভুলে যেওনা আমার কোন না কোন সময়ের সুর রচয়িতা তুমিই ছিলে। যে গান আর সুর এক সাথে থাকে তাকে চাইলেও ছুরে ফেলা সম্ভব নয়। এমন কথা তোমার মুখে আনাও কি সম্পর্ক এর অবমাননা নয় !

অদ্ভুত বিষয় আজো তুমি মানুষ খোঁজ, কেনো খোঁজ, না নিজের জন্য নয় তাও মানুষের জন্য তোমার এই ধারাটা বেশ, কিন্তু আমি মানুষ খুঁজি না আমি মানুষের অনুভূতি গুলো খুঁজি ‍যদি কোনদিন কোন সময় কোন সমাজের সেই অনুভূতি খুজে বের করে সামনে নিয়ে আসতে পারি তবেই আর আমার মানুষ খোঁজার দরকার হবে না মানুষই আমাকে খুজে নেবে তাদের প্রয়োজনে।
.
মৃত্যু কেবল খোলস বদলের খেলা…জীবন যাতনা খোলসের কারসাজি
অতএব কারো হৃদয় খুঁজো না তুমি;প্রতিটি মানুষ আলাদা আলাদ পাখি।
সুর ভেঙে দিয়ে কাছে কিবা দূরে থাকো …ভাঙ্গা সুরেই নিত্য উদাসী মন
তোমার আমার যোজন দূরে বাস; দু’জনে দুজনার তবুও একাকী থাকি।
.
ভালো থেকো
ভালো থেকো জীবন সুখের উল্লাসে।

খেয়ালী
১০.০৩.২০১৭

FILE0291 copy

আসলে আমার সবাই চিঠি লেখা ভুলতে বসেছি তাই আমি ঠিক করেছি আমরা যারা ব্লগে আসি তারা যদি একজন অন্যজনকে চিঠি লিখি তবে তা কেমন হয়। মানে যে কেউ যদি আমার কাছে চিঠি লেখে ( তা হোক কবিতা কিংবা গল্প বা সাধারণ ) আমি তার প্রতি উত্তর দেবো। যেমন আজ দেয়া হয়েছে। আপনারা যারা চিঠি লিখবেন তারা একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন যেমন, চিঠি -১, চিঠি -২ এই ভাবে। আর আমি উত্তর দেবো পত্র-১, পত্র-২ এই ভাবে। সুন্দর হোক ব্লগিং।

মোবাইলেই সম্পাদনা করুন ছবি ও ভিডিও চিত্র

মোবাইল দিয়েই ছবি ও ভিডিও চিত্র সম্পাদনা বা এডিটিং? কথাটা শুনতে অবাক হলেও এখনকার স্মার্টফোনে মিলছে এই কাংখিত সুবিধা। সময়ের প্রয়োজনে হাতের মুঠোফোনকে প্রযুক্তিসম্পন্ন সেবা দিতে উদ্যোক্তা বা কোম্পানীগুলো তৈরি করছেন বিশেষ সফটওয়্যার বা অ্যাপস। কম্পিউটার বা মোবাইল হচ্ছে হার্ডওয়্যার বস্তু। এটিকে সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য ইনপুট করতে হয় সফটওয়্যার। তাই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে আরও বিকাশমান করতে মোবাইল ফোনকে কম্পিউটার ভার্সন করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে মাইক্রোসফট মোবাইল পাওয়া যাচ্ছে। এসব মোবাইলে কম্পউটারের মতো উইন্ডোজ ব্যবহার করে করা যাচ্ছে কম্পিউটারের মতোই কাজ। তাই এই অংশে মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য নিয়ে আসলাম কিভাবে মোবাইলে সহজেই ভিডিও ও ছবি এডিটিং করে আকর্ষনীয় রূপ নেয়া যায়। শখের ফটোগ্রাফি কিংবা ভিডিও গ্রাফিই হোক না কেন, তা যদি নিজের মতো করে নিজের হাতেই সম্পাদনা করা যায় সে আনন্দ হয়ে উঠে সীমাহীন।

যারা সংবাদপত্রে বা সাংবাদিকতায় পেশায় নিয়োজিত আছেন, তারা এখন ক্যামেরার স্থলে ভালো মানের মোবাইল অর্থাৎ স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন। আপনি কি জানেন? মোবাইলই এখন অল ইন ওয়ান! একের ভিতর অনেক!! মোবাইল ঘিরে আজ জার্নালিজম, ব্যাংকিং, ই-শপ, বিল পেমেন্ট, তথ্য আদান প্রদান, অডিও, ভিডিও, মাল্টিমিডিয়া, ইন্টারনেট, ইমেল, ভিডিও কনফারেন্স, লাইভ, ইবুক, অনলাইন, সোস্যাল নেটওয়ার্কিং যাবতীয় কর্ম সম্পাদন করা হচ্ছে এই মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে।

সংবাদমাধ্যমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ছবি ও ভিডিও সম্পাদনা। ছবি ও ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে সংঘটিত ঘটনার আলোকচিত্র প্রদর্শনে বাস্তবতা তুলে ধরা হয়। তাই প্রচলিত সংবাদমাধ্যমের বিকল্প গণমাধ্যম হিসেবে মোবাইল জার্নালিজম অর্থাৎ মোবাইল সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক ঘটনার ছবি ও ভিডিও মোবাইলে সংগ্রহ করা সম্ভব। সংগৃহিত ছবি বা ভিডিও মোবাইলে ধারণ করা হলেও এটার এডিটিং বা সম্পাদনার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। যেমন-মোবাইলে তোলা ছবিটির রেজ্যুলেশন, কালার সেটিং, কাটিং ঠিক করতে প্রয়োজন হয় এডিটিং এর। ঠিক এরকম ভিডিও চিত্রের ক্ষেত্রে।

ভিডিওটির কতটুকু অংশ দর্শকের সামনে তুলে ধরা হবে তার সময় নির্ধারণ, ভিডিও করার সময় হয়তো খন্ড খন্ডভাবে ধারণ করা হয়। সেটা কিভাবে এডিটিং এর মাধ্যমে ক্রপ বা কাটিংয়ের মাধ্যমে খন্ডখন্ড অংশগুলো একত্র করে একটি ভিডিও চিত্র করাই হচ্ছে সম্পাদনার কাজ। এক্ষেত্রে যারা মোবাইলে ছবি ও ভিডিও চিত্র করে থাকেন তাদের জন্য সুসংবাদই বলা যায়। আর যারা মোবাইল দিয়েই সংবাদমাধ্যমের কাজ সম্পন্ন করছেন তাদের জন্য এখন স্মার্টফোন বা টার্চ এন্ডুয়েড মোবাইল ফোনগুলোতে ফটোশপ অ্যাপস ব্যবহার করে এসব কাংখিত কাজগুলো করে দ্রুত সংবাদমাধ্যমপ্রেরণ করতে পারবেন এবং কাংখিত প্রয়োজনীয় কাজ করে রাখতে পারবেন।
স্মার্টফোনে ছবি তোলার জন্য যে ক্যামেরা রয়েছে তার চেয়ে অতিরিক্ত হাই রেজু্লেশন ক্যামেরার বিভিন্ন সফটওয়্যার বা অ্যাপস রয়েছে। এসব ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলো তাৎক্ষনিকভাবে এডিটিংয়ের মাধ্যমে আকর্ষনীয় করে তোলা যায়। আসুন দেখা যাক অ্যাপস দিয়ে ভিডিও ও ছবি এডিটিং করার দুটি প্রয়োজনীয় অ্যাপস বা সফটওয়্যার
ভিডিও এডিটর : InShot Inc
ভিডিও এর জন্য ইনশট In Shot Inc নামের একটি ভিডিও এডিটিং অ্যাপসটি চমতকার। অ্যাপসটি দিয়ে Video Editing, Music, Cut, Text, Crop, None Crop, Blur, Emoji ব্যবহার করে ভিডিওটি আকর্ষনীয় করে তুলতে পারবেন।

Photo Editor New Version 2017
যাঁরা ছবি সম্পাদনা করতে জানেন না বা ফটোশপ শিখতে আগ্রহী তাঁদের জন্য এ অ্যাপটি দারুণ কার্যকর হবে। এই ফটোশপ অ্যাপসটি দিয়ে ফটোশপের চমৎকার কিছু কাজ করা যাবে। অ্যাপসটিতে রয়েছে stickers, effect, enhance, frames, overlays, vignette, crop, focus, orientation, lighting, color, bluch, sharpness, splash, draw, text, redeye, whiten, blemish, and blur, blush, lipstick, concealer, mascara, blusher অনেক কিছু।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.photoeditor.newversionns
এছাড়া এখনকার স্মার্টফোনগুলোতে অটো সিস্টেমের ফটো এডিটর হিসেবে বিউটি প্লাস দেয়া রয়েছে। মোবাইলে ছবি তুলে ছবিটি বিউটিতে ক্লিক করে আকর্ষনীয় করে তোলা যায়। প্রয়োজনে গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে Photo/Image Editor লিখে সার্চ করলে চলে আসবে। এজন্য ইন্টারনেট ডাটা অবশ্যই থাকতে হবে। বিশেষ করে দিন যতই যাচ্ছে ততোই স্মার্টফোনগুলোতে রূপ দেয়া হচ্ছে কম্পিউটার ভার্সন। যার কারণে স্মার্টফোনগুলোকে বলা হচ্ছে মিনি কম্পিউটার।
তবে সংবাদমাধ্যমে মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রফেশনাল জার্নালিস্ট হিসেবে কাংখিত ফলাফল উপহার দিবে নিশ্চিত। অল ইন ওয়ান অর্থাৎ যার হাতে একটি স্মার্টফোন রয়েছে তার আর দ্বিতীয় উপাদান হিসেবে ল্যাপ্টপ, ডেক্সটপ ও আলাদা কোন ক্যামেরার প্রয়োজন পড়বে না। যেখানেই ঘটনা, সেখান থেকেই তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি করা যাবে যেকোন সংবাদ। আর সে সংবাদ পৌছে দেয়া যাবে কাংখিত স্থানে। আজ মোবাইল দিয়েই কাজ সারা যাচ্ছে সব কিছু।

উদ্যোক্তা ও চেয়ারম্যান
মোবাইল জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (মোজাব)

ব্রডব্যান্ডের ন্যূনতম গতি ১ এমবিপিএস হচ্ছে

ব্রডব্যান্ড গ্রাহকদের কমপক্ষে ১ এমবিপিএস ব্যান্ডউইডথ দিতে ইন্টারনেট সেবাদানকারীদের নির্দেশনা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

গত সোমবার ১লা এপ্রিল জারি করা নতুন নির্দেশনায় গ্রাহকদের পরিচয় নিশ্চিত করে ডাটা বা ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার কথাও বলা হয়েছে।

বিটিআরসির সিস্টেম এন্ড সার্ভিসেস-এর পরিচালক লে. কর্নেল মো. রকিবুল হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অপারেটরদের মোট পাচটি নির্দেশনা দেয়া হয়।

জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা ২০০৯ এর অনুচ্ছেদ ২-এ উল্লেখিত ব্রডব্যান্ডের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে বলা হয়েছে, “ইন্টারনেটে প্রচলিত গতির চাইতে বেশী গতিকে ব্রডব্যান্ড হিসেবে অভিহিত করা হবে। এর ন্যূনতম ব্যান্ডউইথ হবে ১ এমবিপিএস। গ্রাহকের জন্য ১ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ নিশ্চিত করতে হবে এবং এর চেয়ে কম ব্যান্ডউইথকে ‘ন্যারোব্যান্ড’ বলা হবে।”

ব্রডব্যান্ডের নতুন সংজ্ঞা গত ১৫ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হিসেবে ধরে নিতে আইএসপি ও বিডব্লিউএ অপারেটরদের নির্দেশনা দেয়া হয়। লাইসেন্সধারী ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) ও ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস অ্যাক্সেস (বিডব্লিউএ) অপারেটরদের এপ্রিলের ৩০ তারিখের মধ্যে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়।

বর্তমানে চালু বিভিন্ন প্যাকেজ, অফার ও মূল্যতালিকা নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন করে সাজাতেও বলা হয়েছে অপারেটরদের। নির্দেশনায় বলা হয়, বিটিআরসি প্রবর্তিত ‘গ্রাহক নিবন্ধন ফর্ম’ ব্যবহার করে গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিত করার পর ডাটা বা ইন্টারনেট সংযোগ চালু করতে হবে।

গ্রাহক নিবন্ধনে কোনো ধরনের ভুল/অসত্য/ত্রুটিযুক্ত তথ্য থাকার পরও ডাটা বা ইন্টারনেট সংযোগ চালু করলে তার সম্পূর্ণ দায়ভার অপারেটরদের বহন করতে হবে বলেও নির্দেশনায় জানানো হয়।

পহেলা এপ্রিল থেকে নতুন সংজ্ঞা অনুসারে নতুন করে সাজানো প্যাকেজ/অফার/ট্যারিফ এর মাধ্যমে ডাটা/ইন্টারনেট সার্ভিস ব্যবহার বা ক্রয় করার জন্য ব্যবহারকারীদের অনুরোধ করা হয়েছে।

ব্রডব্যান্ড সংযোগের স্থলে ‘ন্যারোব্যান্ড’ ব্যবহার/ক্রয়/পেমেন্ট না করার জন্যও গ্রাহকদের অনুরোধ করা হয়।

সংবাদ : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
Published: Updated: 02-04-2013 06:00:33.0

‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বনাম সালমান রুশদি

a

স্যার সালমান রুশদি
পেশা- ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক
জাতীয়তা- যুক্তরাজ্য
লেখার ধরন- জাদুকরী, বাস্তবতা
বিষয়সমূহ- সমালোচনা, ভ্রমণ কাহিনী
প্রভাবিত হয়েছেন- গুন্টার গ্রাস, Gabriel García Márquez, ভ্লাদিমির নবোকভ, জেমস জয়েস, জর্জ লুই বোর্গস, টমাস পিঞ্চন।

স্যার আহমেদ সালমান রুশদি ( দেবনগরী ভাষা: अहमद सलमान रश्दी ) ( জন্ম: ১৯শে জুন, ১৯৪৭) একজন ভারতীয়-বৃটিশ ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তিনি ১৯৮১ সালে প্রকাশিত তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য মিডনাইটস চিলড্রেন’-এর মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করনে। এই উপন্যাসটি বুকার পুরস্কার অর্জন করেছিল। তাঁর প্রথম দিককার উপন্যাসের অধিকাংশেরই কাহিনী বা পটভূমি রচিত হয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশকে ঘিরে। তাঁর লেখার ধরণকে “জাদুকরী বাস্তবতা” হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি “স্যাটানিক ভার্সেস” রচনার মাধ্যমে ধর্মানুরাগী জনতার সাথে বির্তকে জড়িয়ে পড়েন।

এ প্রসঙ্গে অন্যত্র সালমান রুশদি বলেছেন যে, “স্যাটানিক ভার্সেস” নিয়ে বিরূপ সমালোচনা বা হইচই হওয়াতে ভালো-মন্দ দুটোই হয়েছে। এতে অনেক মানুষ আকৃষ্ট হয়েছে বইটি পড়ার জন্য, কিন্তু এই হইচই বড় রকমের বাঁধা এই উপন্যাসের শিল্পমূল্য বোঝার জন্য। “স্যাটানিক ভার্সেস” বুকার পুরস্কারের জন্য চূড়ান্ত তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হলেও পুরস্কার পায় নি, যদিও বছরের সেরা উপন্যাস হিসেবে ‘হোয়াইটব্রেড এওয়ার্ড’ পেয়েছিল এবং পশ্চিমা সমালোচকদের বানানো শতাব্দীর সেরা একশটি বইয়ের তালিকায় উঠে এসেছে কয়েকবার।

The Satanic Verses Affair1
The Satanic Verses (1988)

দ্য স্যাটানিক ভার্সেস (ইংরেজি ভাষায়: The Satanic Verses) সালমান রুশদির চতুর্থ উপন্যাস যা ১৯৮৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এর কিছুটা ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মুহাম্মাদ এর জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত। তার পূর্বের বইয়ের মত এতেও রুশদি জাদু বাস্তবতা ব্যবহার করেছেন এবং সমসাময়িক ঘটনা ও মানুষের সাহায্যে তার চরিত্রগুলো তৈরি করেছেন। বইয়ের নামটি তথাকথিত স্যাটানিক ভার্স বা শয়তানের বাণী-কে নির্দেশ করে। কারও কারও দাবী মতে কোরআনের কিছু আয়াত শয়তান কর্তৃক অনুপ্রাণিত হওয়ায় দৈনিক প্রার্থনার সময় তৎকালীন মক্কার পেগান দেবতা, লাত, উজ্জাহ এবং মানাত এর পূজা হয়ে গিয়েছিল। এই আয়াতগুলোকেই শয়তানের বাণী বলা হয়। উপন্যাসটির যে অংশে শয়তানের বাণী সম্পর্কিত বিষয় আছে সে অংশটুকু প্রথম সহস্রাব্দের ইসলামী পণ্ডিত আল-ওয়াকিদি এবং আল-তাবরিরি-র সূত্র অনুসরণে লেখা।

যুক্তরাজ্যে বইটি প্রশংসা কুড়িয়েছে। ১৯৮৮ সালে এটি বুকার প্রাইজ এর চূড়ান্ত তালিকায় ছিল যদিও পিটার ক্যারির অস্কার অ্যান্ড লুসিন্ডা-র কাছে হেরে যায়। একই বছর উপন্যাসটি হুইটব্রেড অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। দ্য স্যাটানিক ভার্সেস একটি বিশাল বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল যখন রক্ষণশীল মুসলিমরা বইটিকে ব্লাসফেমি এবং তাদের বিশ্বাসের প্রতি ব্যঙ্গাত্মক হিসেবে আখ্যায়িত করে। কিছু মুসলিমের প্রতিক্রিয়ার সূত্র ধরেই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনী ১৯৮৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি সালমান রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেছিলেন।

১৯৮৯ সালে ইরানের ফতোয়া জারির পর থেকে অনেক ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্বব্যাপী মুসলিম দেশগুলো যেমন নিষিদ্ধ করেছে স্যাটানিক ভার্সেস, নিন্দা জানিয়েছে সালমান রুশদির বিরূদ্ধে, তেমনি লেখক, বুদ্ধিজীবী সহ নানা ধরনের মুক্তচিন্তার মানুষেরা এই ফতোয়ার বিরূদ্ধে কথা বলেছেন, লেখকের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন। এই ফতোয়ার জন্য সালমান রুশদি শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হলেও অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। হিতোশি ইগারাশি, যিনি স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাসটি জাপানিজ ভাষায় অনুবাদ করেন তাঁকে ছুরিকাঘাতে মেরে ফেলা হয় ১৯৯১ সালে। ইতালরি অনুবাদক ইতোরে ক্যাপ্রিওলোকে একই মাসে ছুরিকাঘাত করা হয়, যদিও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। নরওয়ের প্রকাশক উইলিয়াম নাইগার্ড অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আততায়ীর গুলি থেকে। ১৯৮৯ সালে বৃটেনে যে ট্রেন-বোমা ফাটানো হয়, তা ছিল সালমান রুশদিকে উদ্দেশ্য করে হিজবুল্লাহ’র আক্রমণ। যদিও ১৯৯৮ সালে ইরানের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ খাতামী জনসমক্ষে প্রতিশ্রুতি দেন যে তারা যেমন ‘রুশদিকে হত্যার ফতোয়া সর্মথন করেন না তেমনি এটি রহিতও করেন না’, সুতরাং এটি আজও বহাল আছে। সালমান রুশদি ঈষৎ মুচকি হাসি হেসে বলেন যে, এখনও অনেকটা ‘ভ্যালন্টোইন’স ডে’র মতো ফেব্রুয়ারী মাসের ১৪ তারিখে তাঁর কাছে বেনামে র্কাড আসে যাতে লেখা থাকে ‘আমরা এখনও ভুলি নি’। তিনি আরও বলেন এটা এখন সত্যিকারের ভয়-দেখানোর চেয়ে অনেকটা ‘রেটরিকের’ মতো হয়ে গেছে। তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই ‘মৃত্যুদণ্ড’ দেয়ার চেয়ে এটাকে অবজ্ঞা প্রর্দশন করলেই বরং সবার জন্য মঙ্গল হতো। মানুষের বিশ্বাস কেন এতো সহজে আহত হবে, ঠুনকো কাঁচের মতো ঝুরঝুরে হবে- যে ভিন্নমতকে খতমই করতে হবে, আমি আমার নিজের ভাষায় এভাবে বলি যে, ‘কারো যেমন ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে, তেমনি কারো তো নাস্তিকানুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে, অনুভূতি তো সবারই সমান!’

বৃটিশ লেখক সালমান রুশদি (১৯শে জুন, ১৯৪৭) হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তাঁর নিজের বাড়িতে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখতে পারেন। একযুগ আগে ভারত সরকার তাঁর এই বাড়িটি দখল করে নিয়েছিল। তবে ফেরার আগে এই বাড়ি বসবাস করার জন্য ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। তাঁর উকিল বিজয় শংকর দাস গত ১৯৯৭ এর নভেম্বরে এই রেষ্ট হাউজের পজেশন নেয়ার জন্য সোলানে গিয়েছিলেন। সোলান হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত একটি পার্বত্য এলাকা। সিমলা থেকে এর দূরত্ব তেমন বেশী নয়। মি. দাশ ইতিমধ্যেই টেলিফোন সংযোগ এবং বাসগৃহ সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন।
ভারতের সম্পত্তি নিয়ে মামলা মোকদ্দমা সহজে শেষ হয় না। তাই সিজ করা সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার আশায় রুশদি বেশ আনন্দ বোধ করছেন। তার প্রয়াত পিতার নামে এই ”আনিস” ভিলা দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে অব্যবহৃত ছিলো। লেখালিখির জন্য রুশদি এটি ব্যবহার করতে পারবেন। তিনি এখানেও না থাকলেও কিভাবে বাড়িটি রাখবেন তার প্ল্যান করেছেন।

”স্যাটানিক ভার্সেস” লিখার অপরাধে ১৯৮৯ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট আয়াতুল্লা খোমেনি তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড জারি করে ফতোয়া দেন। সেই সময় থেকেই রুশদি ভারতে আসতে পারেন নি। তখন মুসলিমদের বিক্ষোভ ও দাঙ্গার পর ভারতে তার উপন্যাস নিষিদ্ধ করা হয়।
এখনও ভারতে তার আগমনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হবার আশংকা রয়েছে। তবুও গত ১৭ বছর ধরে তিনি স্বদেশে ফিরে আসার জন্য লড়াই করে চলেছেন। ছয় বেডরুম বিশিষ্ট বাড়িটি বর্তমানে হিমাচল প্রদেশের সরকারের অধীনে রয়েছে। একটি স্থানীয় সরকারি অফিস হিসাবে এর ব্যবহার হচ্ছে। এই বাড়িটি আবার রুশদি পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেবার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দরকার হয়েছিলো।
৬০ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত সোলান শহরের অদূরে পাইন গাছের বনে ঢাকা ”আনিস” ভিলার সামনে রয়েছে পঁচিশ’শো গজের এক সুদীর্ঘ লন। ক্ষয়িষ্ণু পাথরের দালানের উপর ঢেউটিনের ছাদ, যা একসময়ে লাল রং করা হয়েছিলো। ছাদে রয়েছে চারটে ছোট গম্বুজ। সামনে এক প্রশস্ত বারান্দা। ভ্যালির বুকে এ এক সুন্দর ল্যান্ডমার্ক।

সোলানের ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর এবং ”আনিস” ভিলার প্রতিবেশী বি,এস নায়ান্ত বলেন- যদি রুশদি এখানে থাকতে চান তাহলে তারা খুশি হবেন। তিনি যদি শেষ পর্যন্ত আসার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আমরা তাঁর সবধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেবো। তার মতে ভিলার বর্তমান দাম তিন থেকে চার মিলিয়ন রূপী হবে।

রাজ্য কর্মকর্তারা ১৯৯০ সালে ”আনিস” ভিলার দখল নিয়েছিলেন। তাদের মতে ১৯৪৭ সালে দেশ পার্টিশনের সময় রুশদি পরিবার পাকিস্তানে চলে গেলে এই ভিলা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো। কিন্তু মি. দাসের মতে- বৃটেনে স্থায়ী হবার আগে এই পরিবার ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত বর্তমান মুম্বাইতে বসবাস করে। তখন লোকাল এডুকেশন অথরিটির কাছে বার্ষিক ২০০০ রুপির বিনিময়ে আনিস রুশদি বাড়িটি ভাড়া দেন। তিনি ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত আমৃত্যু এই সম্পত্তির দেখাশোনা করেন। ১৯৬৯ সালে এই সম্পত্তি তিনি তার সন্তানকে লিখে দেন।
যদিও আদালত ১৯৯৭ এর জুলাই মাসে রুশদির অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছেন কিন্তু নানা টানাপোড়নের কারণে এর দখল পেতে দেরী হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বকেয়া ভাড়া দাবি করছেন। আর রাজ্য সরকার প্লাম্বিং এর জন্য খরচ করা প্রায় ১,৫০,০০০ হাজার রুপি শোধ দেয়ার কথা বলেছেন। মি. দাস বলেন- রুশদি এখন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য এখানে উদ্যোগ নিতে বলেছেন।

satanicc

* ভালো অথবা মন্দ যেমন হোক … রেটিং চর্চা অব্যহত রাখুন। ধন্যবাদ।

কেন সমাজতন্ত্র ?

সমাজতন্ত্রের পক্ষে বিশ্বখ্যাত প্রগতিশীল বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের লেখা … অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে অদক্ষ কারো কি সমাজতন্ত্র বিষয়ে ধারণার প্রকাশ করা উচিত? অনেকগুলি কারণে আমি মনে করি করা উচিত।

প্রথমত, প্রশ্নটিকে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাক। এটা মনে হতেই পারে যে, জ্যোতির্বিদ্যা এবং অর্থনীতির মধ্যে পদ্ধতিগত কোনো পার্থক্য নেইঃ উভয় বিষয়ের বিজ্ঞানীরা সাধারণভাবে নির্দিষ্ট কিছু ঘটনার ব্যাখ্যার্থে গ্রহণযোগ্য কতগুলি সুত্র আবিষ্কারের চেষ্টা করেন, যাতে এই সব ঘটনাগুলির পারস্পরিক সম্বন্ধের ব্যাপারগুলি বোঝা যায়। কিন্তু আসলে এদের মধ্যে পদ্ধতিগত অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। অর্থনীতির ক্ষেত্রে সাধারণ সুত্র আবিষ্কার অনেক কঠিন কারণ অর্থনৈতিক ঘটনাসমূহ প্রায়শই এত বেশি নিয়ামক দ্বারা প্রভাবিত হয় যে তাদেরকে আলাদাভাবে পরিমাপ করা যায় না। তাছাড়া মানব ইতিহাসের তথাকথিত সভ্যপর্যায়ের শুরু হতে আজ পর্যন্ত যে অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে, তা এমন কিছু নিয়ামকের দ্বারা নির্ধারিত ও প্রভাবিত যেগুলি কোনোভাবেই স্রেফ অর্থনৈতিক নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইতিহাসের বেশিরভাগ জাতি তার অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধজয়ের উপর ঋণী। বিজয়ী জনগোষ্ঠী আইনগত এবং অর্থনৈতিকভাবে বিজিত দেশের সুবিধা ভোগকারী অবস্থানে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। নিজেদের জন্য সৃষ্টি করেছে ভূ-সম্পত্তির উপর একচেটিয়া অধিকার এবং স্ব-শ্রেণী হতে যাজক সম্প্রদায়কে নিয়োগ করেছে। এই যাজক সম্প্রদায় শিক্ষাব্যবস্থাকে কব্জা করার মাধ্যমে সামাজিক শ্রেণীভাগকে একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠানের রূপ দিয়েছে এবং এমন এক মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা করেছে যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসচেতনভাবেই মানুষের সামাজিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।

কিন্তু ঐতিহাসিক ভাবে আমরা বিগতকালের কথাই বলি, আমরা কোনোভাবেই মানব প্রবৃত্তির উন্নয়নের সেই স্তর থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি যাকে থোর্স্টেইন ভেব্লেন “the predatory phase” বলে আখ্যায়িত করেছেন। যত ধরণের অর্থনৈতিক ঘটনাসমূহ প্রত্যক্ষ হয় সবই এই কালের এবং এর থেকে প্রাপ্ত সুত্র সমূহ কালান্তরে গ্রহণযোগ্য নয়। যেহেতু সমাজতন্ত্রের আসল উদ্দেশ্য হলো মানব উন্নয়নের এই predatory phase কে সম্পূর্ণভাবে অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়া, তাই বর্তমানের অর্থনৈতিক বিজ্ঞান ভবিষ্যতের সমাজতান্ত্রিক সমাজকে খুব বেশি স্পষ্ট করতে পারে না।

দ্বিতীয়ত, সমাজতন্ত্র মূলত সামাজিক-নৈতিক একটি পরিণতির দিকে উদ্দিষ্ট। বিজ্ঞান কোনোভাবেই কোনো পরিণতির সৃষ্টি করে না, এমনকি ধীরে ধীরে সঞ্চারিতও করতে পারেনা, বড়জোড় পরিণতিতে পৌছানোর জন্য উপাদানের যোগান দিতে পারে। কিন্তু এই পরিণতিসমূহ কল্পিত হয় সুউচ্চ নৈতিক আদর্শের কিছু ব্যাক্তির দ্বারা। আর যদি এসব অপরিহার্য ও প্রচন্ড পরিণতিগুলি ইতোমধ্যে অর্জিত না হয়ে থাকে তবে,কিছু মানুষ এগুলোকে আত্মস্থ করে এবং সামনের দিকে নিয়ে যায়। এসব মানুষেরাই সমাজের সুস্থির বিবর্তনকে অর্ধসচেতন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

এসব কারণেই আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে যতে মানবিক সমস্যার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিসমূহকে অতিশায়িত করা না হয় এবং এটা মনে করা উচিত নয় যে শুধু মাত্র সুদক্ষ লোকেরাই সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিতকারী বিষয়াদি নিয়ে বক্তব্য দেয়ার আধিকার রাখে।

অনেকদিন ধরেই অসংখ্য মানুষ এই দাবি করে আসছেন যে সমাজ একটা সংকটের মধ্যে দিয়ে পার হচ্ছে, সমাজের স্থিরতা বা ভারসাম্য প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেছে। এটা এমন এক সময়ের বৈশিষ্ট যেখানে প্রত্যেক মানুষ তার সম্প্রদায় বা সংগঠনের প্রতি উদাসীন এবং ক্ষেত্র বিশেষে বৈরী হয়ে উঠে। আমার কথাকে বোঝানোর জন্য আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। সম্প্রতি আমি একজন বুদ্ধিমান ও বিদ্বান মানুষের সাথে আরেকটা যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলছিলাম। আমার মত ছিলো যে, আরেকটা যুদ্ধ মানুষের অস্তিত্বকে মহাসংকটে ফেলে দেবে এবং এই মন্তব্য করেছিলাম যে শুধুমাত্র কোনো আন্তর্জাতিক মহাসংস্থাই পারে এই মহাবিপদ থেকে সুরক্ষা দিতে। তখন ঐ ব্যাক্তি বলে উঠলেন, “মানবজাতির পরিণতি ধ্বংস, এটা থেকে আপনি এত বিপরীতে কেন?”।

আমি নিশ্চিত যে মাত্র এক শতাব্দী বা তারও কম সময় আগে কেউ এ ধরণের কোনো মন্তব্যই করতে পারতো না। যারা নিজের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ এবং সফল হবার কোনো আশাই রাখেন না তারাই এ ধরণের মন্তব্য করেন। এর উৎস এমন এক ধরণের বিষাদ পূর্ণ একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতা যাতে এ সময়ের বেশির ভাগ মানুষই ভুগছে। এর কারণ কি? এর থেকে মুক্তির কোনো উপায় কি আছে?

এ ধরণের প্রশ্ন উত্থাপন করা সহজ হলেও কোনো প্রকার নিশ্চয়তার সাথে এর উত্তর দেয়া কঠিন। যদিও আমি এটা সম্বন্ধে অবগত যে আমাদের চিন্তা ও চেষ্টাগুলো প্রায়শই অসংগতিপূর্ণ এবং অস্পষ্ট, তাদেরকে সহজ ও সাধারণ সুত্রের সাহায্যে প্রকাশ করা যায় না তবুও আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

মানুষ হলো একই সাথে বিচ্ছিন্ন ও সামাজিক। বিচ্ছিন্নভাবে সে নিজের ও তার আশেপাশের সবার অস্তিত্বকে রক্ষা করার চেষ্টা করে, নিজের ব্যক্তিগত ইচ্ছাগুলোকে পূরণ করার চেষ্টা করে, তার সহজাত সামর্থ্যের উন্নয়ন করে। আর সামাজিকভাবে সে তার আশেপাশের মানুষের স্বীকৃতি ও সম্প্রীতি লাভের চেষ্টা করে, তাদের সাথে আনন্দকে ভাগ করার চেষ্টা করে, তাদের দুঃখ লাঘবের চেষ্টা করে এবং তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের চেষ্টা করে। শুধুমাত্র এসব বিবিধ পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়েই মানুষের বিশেষ চরিত্র গড়ে উঠে। আর এসবের বিশেষ সন্নিবেশ নির্ধারিত করে একজন মানুষ তার অভ্যন্তরের ভারসাম্য কি মাত্রায় অর্জন করতে পারবে, সমাজের কল্যাণে কতটুকু অবদান রাখতে পারবে। এটা খুবই সম্ভব যে এই দুই পৃথক প্রচেষ্টার আপেক্ষিক শক্তি জন্মসূত্রে নির্ধারিত হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে তা বহুলাংশে তৈরী হয় মানুষ যে পরিবেশে বেড়ে উঠে তার দ্বারা, সে যে সমাজে বেড়ে উঠে তার কাঠামোর দ্বারা, ঐতিহ্যের দ্বারা, এবং কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের মূল্যায়নের মাধ্যমে। “সমাজ”এর বিমূর্ত ধারণাটি একজন ব্যক্তির কাছে তার সমসাময়িক ও পূর্বতন সবকিছুর সাথে তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্কের সমষ্টি। ব্যক্তি নিজে নিজে চিন্তা-চেষ্টা-অনুভব করতে পারে ও কাজ করতে পারে কিন্তু তার শারীরিক, বৌদ্ধিক ও আবেগিক অস্তিত্বের জন্য সমাজের উপর এত বেশি নির্ভর করে যে, সামাজিক কাঠামোর বাইরে তাকে চিন্তা করা বা বোঝা সম্ভব নয়। সমাজই তাকে সারা জীবন ধরে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, যন্ত্রপাতি, ভাষা, চিন্তার পদ্ধতি ও চিন্তার বিষয়ের যোগান দেয়; তার জীবন ধারণ সম্ভব হয় অতীত ও বর্তমানের নিযুত-লক্ষের শ্রমের দ্বারা যারা এই “সমাজ” নামের ছোট শব্দের পেছনে উহ্য।

ফলে এটা নিশ্চিত যে, সমাজের উপর নির্ভরতা প্রকৃতিতে পিঁপড়া ও মৌমাছির জন্য যেমন সত্য ও অলঙ্ঘ্য, তেমনি মানুষের ক্ষেত্রেও। পিঁপড়া ও মৌমাছির ক্ষেত্রে তাদের সমগ্র জীবন প্রক্রিয়াকে সুক্ষ্ণতম ভাগ পর্যন্ত বিশ্লেষণ করা যায় কিছু নির্দিষ্ট, জন্মসূত্রে প্রাপ্ত সহজাত প্রবৃত্তির মাধ্যমে আর মানুষের ক্ষেত্রে সামাজিক বিন্যাস আর পারস্পরিক সম্পর্কগুলি নির্দিষ্ট নয় এবং পরিবর্তনশীল। নতুন নতুন কল্পনার সৃষ্টিকারী মানুষের মস্তিষ্ক, ভাষিক যোগাযোগের আশীর্বাদের ফলে এমন উন্নয়নের সম্ভব হয়েছে যা জৈবিক প্রয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এই উন্নয়ন সুচিত হয় ঐতিহ্য, প্রতিষ্ঠান, সম্প্রদায়, ভাষা, বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশল অর্জনসমূহ এবং শিল্পকর্ম সমূহের দ্বারা। এভাবে বোঝা যাচ্ছে মানুষ কিভাবে তার জীবনকে নিজের কর্মের দ্বারা প্রভাবিত করে এবং এই প্রক্রিয়ায় সচেতন চিন্তা-চাহিদার ভূমিকা রয়েছে।

মানুষ জন্মের সময় উত্তরাধিকারসূত্রে যে শরীরতন্ত্র লাভ করে আমরা একে অবশ্যই অপরিবর্তনীয় ধরে নেবো এমনকি বিভিন্ন জৈবিক তাড়নাসমূহ যা মনুষ্য প্রজাতির বৈশিষ্ট্য। সেই সাথে তার জীবদ্দশায় সে লাভ করে মননতন্ত্র, যা সে আয়ত্ত করে সমাজের সাথে তার যোগাযোগ ও অন্য ধরণের প্রভাবের মাধ্যমে। এই মননই সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় এবং অনেকাংশে সমাজের সাথে ব্যক্তির সম্পর্ককে নির্ধারণ করে। আদিম রীতি-পদ্ধতি সমূহের তুলনামূলক অনুসন্ধানের মাধ্যমে আধুনিক নৃবিদ্যা আমাদের জানিয়েছে যে, মানুষের সামাজিক আচরণ বিভিন্ন রকম হতে পারে, এবং এটা নির্ভর করে সমাজে আধিপত্যকারী সংগঠনের উপর এবং বিরাজমান সাংস্কৃতিক মননের উপর। এর ফলে যারা মানবজাতির বৃহৎ অংশের উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তাদেরকে আমি আশাবাদী হতে বলবো কারণ মানব অস্তিত্বকে বাতিল ঘোষণা করা যায় না, নিজের শারীরিক অস্তিত্বের জন্য হলেও নিজেরা একে অপরকে হত্যা করবে না অথবা নিজেকে ধ্বংস করার মত নির্মম পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে না।

যদি আমরা নিজেদের প্রশ্ন করি যে, জীবনকে আরামদায়ক করার জন্য এই সামাজিক কাঠামো এবং মানুষের সাংস্কৃতিক আচরণ কিভাবে পরিবর্তিত হবে, আমাদের সবসময় কিছু বিষয় সম্বন্ধে সচেতন থাকতে হবে কারণ কিছু কিছু নিয়ামক আমরা কখনোই বদলাতে পারি না। আগেই বলা হয়েছে যে জৈবিক গঠনতন্ত্রের কোন কিছুই কোন ব্যবহারিক কারণেই পরিবর্তন করা যায় না। উপরন্তু বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে সংগঠিত প্রযুক্তি ও জনসংখ্যায় যে পরিবর্তনের ফলেও যে অবস্থার তৈরী হয়েছে তা টিকে থাকবে। তুলনামূলকভাবে ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে কোন জনগোষ্ঠীকে যদি অপরিহার্য দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হয় তাহলে এক ধরণের উৎপাদন যন্ত্র কেন্দ্রিক শ্রমবিভাগ আবশ্যক। সে অলস সময়ের অবসান ঘটেছে যখন ছোট গোষ্ঠীগুলোও নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলো। এটা খুব বেশি বাড়িয়ে বলা হবে না যে, মানবজাতির আজ তৈরী হয়েছে সমগ্র গ্রহজুড়ে উৎপাদক শ্রেণী ও ভোক্তাশ্রেণী।

এ পর্যায়ে আমি এখন সংক্ষেপে বলতে পারি এই সংকটের মূল ব্যাপারটা আমার কাছে কি মনে হয়? এ সংকট ব্যক্তির সাথে সমাজের সম্পর্কের সাথে জড়িত। ব্যক্তি অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় সমাজের উপর তার নির্ভরশীলতার ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন। কিন্তু সে এই নির্ভরশীলতাকে অস্তিবাচক সম্পদ হিসেবে দেখে না, জৈবিক বন্ধন ভাবে না, রক্ষাকারী শক্তি মনে হয় না বরং তার স্বাভাবিক অধিকার ও অর্থনৈতিক অস্তিত্বের প্রতি হুমকি মনে করে। সমাজে তার এমন অবস্থান তৈরী হয় যে, তার ইগোকেন্দ্রিক আকাঙ্ক্ষাগুলো সবসময় তুঙ্গে থাকে আর তার সামাজিক তাড়নাগুলি স্বাভাবিকভাবেই থাকে দুর্বল আর আস্তে আস্তে কমতে থাকে। মানুষ সমাজের যে স্তরেই থাকুক না কেন দিনে দিনে এই ক্রমহ্রাসমান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নিজের ইগোর জালে অনিচ্ছাকৃতভাবে বন্দী হয়ে মানুষ নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করে, একাকীত্ব লাভ করে আর জীবনের সহজ, স্বাভাবিক ও সাবলীল আনন্দলাভ থেকে বঞ্চিত হয়। মানুষ শুধুমাত্র সমাজের প্রতি আত্মনিবেদনের মাধ্যমেই ক্ষুদ্র ও ঝঞ্ঝাপূর্ণ জীবনের মানে খুঁজে বের করতে পারে।

আমার মতে সকল প্রকার অশুভের উৎস হলো আজকের পুঁজিবাদী সমাজে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্য। আমরা আমাদের সামনে দেখতে পাই এক বিশাল উৎপাদক শ্রেণী যারা তাদের যৌথ শ্রমের ফল থেকে পরস্পরকে বঞ্চিত করতে অবিরাম চেষ্টা করছে, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নয়, বরং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠিত আইনের মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, উৎপাদনের উপায় তথা ভোক্তাপণ্য উৎপাদনের জন্য যে সামগ্রিক উৎপাদক যন্ত্র ও মূলধন জাতীয় দ্রব্যের প্রয়োজন তা আইনিভাবে অধিকাংশেই মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি।

আলোচনার সুবিধার্থে এখন থেকে আমি যাদের উৎপাদনের উপায়ের উপর মালিকানা নেই তাদেরকে “শ্রমিকশ্রেণী” বলে আখ্যায়িত করব, যদিও এই শব্দটির যথার্থ প্রায়োগিক জায়গা নয়। উৎপাদনের উপায়ের উপর যার মালিকানা থাকে সে শ্রমিকের শ্রমকে কিনে নেয়ার মত অবস্থানে থাকে। উৎপাদনযন্ত্রে শ্রমিক নতুন দ্রব্য তৈরী করে যা পুঁজিবাদীর সম্পত্তিতে পরিণত হয়। এখানে ধর্তব্য হলো শ্রমিকের উৎপন্ন দ্রব্য ও তার মজুরির মধ্যে প্রকৃত মূল্যে নির্ণায়িত সম্পর্কের ব্যাপারটি। যেহেতু শ্রমচুক্তির ব্যাপারটি “বিনামূল্যে” নির্ধারিত হয়, তাই শ্রমিক যা গ্রহণ করে তা প্রকৃত মূল্যে নির্ণায়িত নয় বরং তার ন্যূনতম প্রয়োজন এবং পুঁজিপতির প্রয়োজন এবং শ্রমের যোগানের উপর নির্ভর করে। আমাদের অবশ্যই এটা বোঝা দরকার যে, শ্রমিকের মজুরি তার উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্য অনুযায়ী নির্ধারিত নয়।

ব্যক্তিগত সম্পত্তি অল্প কিছু ব্যক্তির কুক্ষিগত হতে থাকে। এর কারণ অংশত পুঁজির প্রতিযোগিতা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। ক্রমবর্ধিষ্ণু শ্রমবিভাগের ফলে ছোট ছোট উৎপাদন ইউনিটের জায়গায় বড় বড় ইউনিট গড়ে উঠে। এর ফলে তৈরী হয় এমন এক ব্যবস্থা যেখানে মূলধন জড়ো হতে থাকে সীমিত কিছু ব্যক্তির কাছে এবং এই শক্তিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সমাজের দ্বারা আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এটা অত্যন্ত স্পষ্ট কারণ নিজেদের প্রয়োজনেই পুঁজিপতিরা নির্বাহী বিভাগকে নির্বাচনের দ্বারা আলাদা রেখে, রাজনৈতিক দলগুলিকে আর্থিক ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে, প্রভাবিত করে এবং এদের মধ্যে থেকেই আবার বিভিন্ন নির্বাহী প্রতিনিধি নিয়োগ করে। এর পরিণতি হলো সমাজের এই সব প্রতিনিধিরা সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর স্বার্থ যথেষ্ট পরিমাণে রক্ষা করতে পারেনা। আর এ অবস্থায় এই সব পুঁজিপতিরাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সকল প্রকার প্রধান সংবাদ মাধ্যমকে, তথ্য উৎসকে নিয়ন্ত্রণ করে যেমন প্রেস, রেডিও, শিক্ষা। এর ফলে একজন ব্যক্তির পক্ষে নৈর্ব্যক্তিক উপসংহারে উপনীত হওয়া বা তার রাজনৈতিক অধিকার সমূহের সঠিক ব্যবহার দুষ্কর এবং কিছু ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়ে।

মূলধনের উপর ব্যক্তিগত মালিকানার ধারণা কেন্দ্রিক এই অর্থনীতির বিরাজমান অবস্থাকে দুটি মূল নীতির দ্বারা সুচিত করা যায়ঃ প্রথমত উৎপাদনের উপায় (মূলধন) ব্যক্তিগত মালিকানায়, মালিকেরা নিজের ইচ্ছামতো এর বিনিময় করে এবং দ্বিতীয়ত বিনামূল্যের শ্রমচুক্তি। অবশ্য এর ফলে প্রকৃতপক্ষে বিশুদ্ধ পুঁজিবাদী সমাজ বলতে কোন কিছু নেই। এটা বোঝা উচিত যে, শ্রমিকশ্রেণীকে তিক্ত রাজনৈতিক সঙ্ঘাতের মধ্য দিয়ে কিছু শ্রেণীর শ্রমিকের জন্য “বিনামূল্যের শ্রমচুক্তির” চেয়ে ভালো কোনো অবস্থায় পৌছে গেছে। তবে মোটের উপর এই অবস্থা “বিশুদ্ধ” পুঁজিবাদ থেকে খুব বেশি পৃথক নয়।

উৎপাদন করা হয় মুনাফার জন্য, চাহিদা অনুযায়ী নয়। এমন কোনো ব্যবস্থা নেই যে সমর্থ ও ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য সব সময় কর্মসংস্থানের সযোগ রয়েছে, একটা বিশাল “বেকার জনতা” সব সময়ই পাওয়া যায়। একজন শ্রমিক সব সময় তার কাজ হারানোর ভয়ে থাকে। যেহেতু বেকার এবং নিম্ন আয়ের শ্রমিকেরা মুনাফা জনক বাজারের তৈরী করে না তাই ভোক্তা দ্রব্যের উৎপাদন সীমিত আকারে ঘটে যার ফলাফল বিপুল দুর্ভোগ। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রায়শই সকলের শ্রমের বোঝা কমানোর চেয়ে বেশি করে বেকারত্বের সৃষ্টি করে। মূলধনের বন্টন ও সুষ্ঠ ব্যবহার না হবার ফলে যে ক্রমবর্ধমান হতাশার উদ্রেক হচ্ছে তার জন্য দায়ী হলো মুনাফাকেন্দ্রিক চিন্তা আর সেই সাথে পুঁজিপতিদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা। এই অসীম প্রতিযোগিতার ফলে ঘটে শ্রমের বিরাট অপচয় ও সামাজিক সচেতনতার প্রতি ব্যক্তির অনীহা যা আমি আগেই উল্লেখ করেছি।

ব্যক্তিমানুষের এই অনীহাকে আমি পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা মনে করি। সম্পূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা এই সমস্যা ভোগ করে। এক ধরণের অতিশায়িত প্রতিযোগিতামূলক ভীতি একজন ছাত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়, তাকে ভবিষ্যত জীবনের জন্য অর্জিত সাফল্যের সাধনার শিক্ষা দেয়া হয়।

আমি মনে করি এই সব ভয়াবহ সমস্যার দূর করা সম্ভব সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রতিষ্ঠা ও একই সাথে এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থার বিকাশ যার উদ্দিষ্ট হবে সামাজিক লক্ষ্যসমূহ অর্জনের দিকে। এ ধরণের ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপায় সমূহের মালিকানা থাকবে সমাজের হাতে এবং উপযোগের ব্যবহার ঘটবে সুষ্ঠু। একটি পরিকল্পিত অর্থনীতি যা উৎপাদনের সাথে সমাজের চাহিদার সমন্বয় সাধন করে, সকল কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে সঠিকভাবে কাজের বন্টন করবে এবং প্রত্যেক নর নারী ও শিশুর জীবন নির্বাহ নিশ্চিত করবে। প্রত্যেক ব্যক্তির শিক্ষা তার সহজাত প্রবৃত্তির উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজে ক্ষমতা ও সাফল্যের জায়গায় এক ধরণের দায়িত্ব বোধ তৈরী করবে।

এটা খেয়াল রাখতে হবে যে পরিকল্পিত অর্থনীতির মানেই সমাজতন্ত্র নয়। পরিকল্পিত অর্থনীতি ব্যক্তির দাসত্বের মধ্য দিয়েও অর্জিত হতে পারে। সমাজতন্ত্রে উত্তরণের জন্য কয়েকটি দুরূহ সমাজ-রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে: কিভাবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রীয়করণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, আমলাতন্ত্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হওয়া ও অনিয়ন্ত্রিত অবস্থা ঠেকানো যাবে? ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষা করে বিপরীতে কিভাবে গণতান্ত্রিক আমলাতন্ত্রের ক্ষমতা নিশ্চিত করা যায়?

সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য ও সমস্যা সম্বন্ধে স্পষ্টতা আমাদের এই পরিবর্তনের যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যেহেতু বর্তমানে এই সমস্যা গুলি নিয়ে মুক্ত ও অবাধ আলোচনার খুব বেশি সুযোগ নেই আমি মনে করি জনকল্যাণে এই পত্রিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

মূলঃ আলবার্ট আইনস্টাইন।
লেখাটি প্রথম ১৯৪৯ সালে Monthly Review তে ছাপা হয়।
তথ্য সংগ্রাহক: প্রিয় বন্ধু অজন্তা ইলোরা।

einstain যত সুন্দর করেই আমাকে বোঝানো হোক না কেনো … সমাজতন্ত্র আমার মাথায় সঠিক মাপের যোগে ফিট খায় না। ১৯৮৯ পরবর্তী সমাজতন্ত্রের দেয়াল সচক্ষে যেভাবে ধ্বসে যেতে দেখেছি তাতে এই তন্ত্রে বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস আমার কাছে দুটোই সমান। প্রিয় পাঠক এতক্ষণে নিশ্চয়ই বিরক্ত হয়েছেন পণ্যবাহী সর্পিল ট্রেনের মতো আমার এই পোস্ট দেখে। পড়া না হয় সামান্য দূরেই বসিয়ে রাখলাম। আমাকে ক্ষমা করবেন। কেন সমাজতন্ত্র’র এই নিবন্ধের চৌষট্টি বছর পর যদি আপনাকে এই সমাজতন্ত্র নিয়েই আপনার মতামত জানতে চাওয়া হয় আপনি কি বলবেন !!

সংবিধিবদ্ধ আশ্বাসবাণী:
মন্তব্য না করলেও ক্ষতি নেই। শুধু একটা লাইক অথবা রেটিং করলেই চলবে।

২০১৩ শুভ না অশুভ? পড়লে পড়ুন না পড়লে ক্ষতি নেই

2012-12-28 আগামী সোমবার যে খ্রিষ্টীয় বছরটি শেষ হবে, সেই বছরটি মহাজোট ওরফে আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য মোটেই সুখকর ছিল না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধী দলের আন্দোলন কাবু করতে না পারলেও দেশ পরিচালনায় নানা ব্যর্থতা, অব্যবস্থা, অদক্ষতা এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সরকারকে বেশ বেকায়দায় ফেলেছে।

২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেওয়ার অব্যবহিত পর পিলখানা ট্র্যাজেডি সত্ত্বেও শেখ হাসিনার সরকার দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছিল। বিরোধীদলীয় নেতা এখন যা-ই বলুন, সেটাই ছিল বাস্তবসম্মত। সেদিন পিলখানায় সেনা অভিযান চালালে আরও বেশি রক্তপাত হতো। পরবর্তী সময়ে জঙ্গিবিরোধী সফল অভিযান, নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন, কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিসহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। বিশ্বব্যাপী মন্দা সত্ত্বেও তিন বছর ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে রাখাও সরকারের সাফল্য হিসেবে বিবেচিত।

কিন্তু মেয়াদের চতুর্থ বছরে এসে কতগুলো ভুল পদক্ষেপ সরকারকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। বলা যায়, সরকার এখন সফলতা ও বিফলতার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। এ মুহূর্তে সামান্য ভুল যেমন সরকারের জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, তেমনি হিসাব করে পা রাখলে সংকট উত্তরণও কঠিন হবে না বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

২০১২ সালের যে ঘটনাগুলো সরকারের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেগুলো হলো: সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যা, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিল, মন্ত্রিসভার রদবদল নিয়ে টানাপোড়েন, কক্সবাজারে বৌদ্ধপল্লিতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, হল-মার্ক ও সোনালী ব্যাংক কেলেঙ্কারি, শিক্ষাঙ্গনে অশান্ত পরিবেশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং বিশ্বজিৎ দাসের খুন হওয়া।

গত ফেব্রুয়ারিতে সাগর-রুনি হত্যার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘাতকদের পাকড়াও করার ঘোষণা দিলেও গত ১০ মাসেও তা কার্যকর করতে পারেননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বদল হলেও খুনিদের ধরতে পারেনি সরকার। তদুপরি বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার ঘটনা ছিল বছরজুড়ে তপ্ত আলোচনার বিষয়।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক সতর্ক করে দিলেও সরকার যথাসময়ে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়; এমনকি ২৯ জুন বিশ্বব্যাংক চুক্তিটি বাতিল করার পরও নীতিনির্ধারকদের চৈতন্যোদয় হয়নি। তখন সরকারের মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জোর আওয়াজ তুলেছিলেন যে, বিশ্বব্যাংক ঋণ না দিলে জনগণের কাছ থেকে চাঁদা তুলে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন, ১৯৭১ ও ২০১২ এক নয়, শেখ হাসিনাও বঙ্গবন্ধু নন যে ‘যার যা আছে’ ডাক দিলেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়বে। অবশেষে বিশ্বব্যাংকের সব শর্ত মেনে নিয়ে এবং সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরিয়ে সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা শুরু করলেও বছরের শেষ নাগাদ তা কোনো সুফল দেয়নি। সর্বশেষ দুই আবুলকে সন্দেহের তালিকায় রেখে অভিযুক্ত বাকি সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। গ্রেপ্তার হয়েছেন সেতু বিভাগের সাবেক সচিব ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ ফেরদাউস। বিশ্বব্যাংক ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্তের ওপরই পদ্মা সেতুতে তাদের অর্থায়ন নির্ভর করছে।

মহাজোট সরকারের দুটি প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল: যুদ্ধাপরাধের বিচার ও পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন। যুদ্ধাপরাধের বিচার-প্রক্রিয়া মোটামুটি ভালোভাবেই চলছে। বছরের শেষে এসে স্কাইপ কেলেঙ্কারির পর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের পদত্যাগ সাময়িক ধাক্কা দিলেও দ্রুত আদালত পুনর্গঠন করে বিচার-প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু চরায় আটকে গেছে। এর মধ্যে অত্যাশ্চর্য কিছু না ঘটলে বর্তমান সরকারের আমলে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হওয়া কঠিন বলেই পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন।

গত বছর ও চলতি বছরের শুরুতে সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে খোদ সরকারি দলের সাংসদেরা সমালোচনায় মুখর হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভায় ঈষৎ পরিবর্তন আনেন। প্রথমে তিনি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে ভাগ করে ওবায়দুল কাদের ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে যথাক্রমে যোগাযোগ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার আগে ক্ষমতাসীন দলে এ দুই নেতাই সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলওয়ের কালো বিড়াল ধরার আগেই নিজে কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে দপ্তর হারান। বর্তমানে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে তিনি বিরোধী দলের রাজনৈতিক বক্তৃতা-বিবৃতির জবাব দানে ব্যস্ত।

বছরের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় আরেক দফা পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিলেও দলের ও মহাজোটের দুই প্রভাবশালী নেতা তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেনন সরকারের শেষ বেলায় মন্ত্রিত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে মন্ত্রিসভায় পরিচ্ছন্ন ও দক্ষ ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার শেখ হাসিনার দ্বিতীয় চেষ্টাও সফল হয়নি। নতুন মন্ত্রীদের কারও কারও বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আসতে শুরু করেছে।

বছরের শেষার্ধে এসে সরকারকে যে বিষয়টি সাঁড়াশির মতো চেপে ধরে, সেগুলো হলো: হল-মার্ক ও সোনালী ব্যাংক কেলেঙ্কারি। একটি অখ্যাত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেশের ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি করতে পেরেছে ব্যাংক কর্মকর্তা ও পর্ষদের যোগসাজশে। সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ঘন ঘন যাতায়াত নিয়ে খোদ সংসদীয় তদন্ত কমিটিই প্রশ্ন তুলেছে। পর্ষদের একজন সদস্য তিন কোটি টাকা উৎকোচের বিনিময়ে হল-মার্কের কাগজপত্র ধামাচাপা দিয়েছেন বলে পত্রিকায় খবর এসেছে। সরকারি ব্যাংকগুলোতে কী পরিমাণ দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে, তার ক্ষুদ্র একটি অংশই পত্রিকায় আসছে। পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে গতি আনতে পারবে, না জঞ্জাল বাড়াবে তা দেখার জন্য আমাদের আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।

২০১২ সাল জুড়েই উচ্চ শিক্ষাঙ্গন উত্তপ্ত ছিল, উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে অচল হয়ে পড়ে জাহাঙ্গীরনগর, বুয়েট, রুয়েট ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। থেমে থেমে আন্দোলন হয়েছে জগন্নাথ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকার প্রথমে সমস্যা উপেক্ষা করতে চাইলেও পরবর্তী সময়ে উপাচার্য বা সহ-উপাচার্যকে বিদায় দিতে বাধ্য হয়। এর পাশাপাশি সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দৌরাত্ম্য ও আত্মঘাতী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁদের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি সরকারের ভাবমূর্তি হিমাঙ্কে নামিয়ে দিয়েছে।

মেয়াদের মাঝামাঝি সরকার দলীয় সাংসদদের বেপরোয়া আচরণ লক্ষ করা গেলেও এখন অনেকই আগামী নির্বাচনের কথা ভেবে খামোশ হয়ে গেছেন। কিন্তু ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়’ ছাত্রলীগের মাস্তানি-সন্ত্রাসী তৎপরতা এতটুকু কমেনি। সরকার-সমর্থক এ ছাত্রসংগঠনটির সন্ত্রাস ও দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়ে যায় যে, নানা হুমকি-ধমকি সত্ত্বেও তাদের লাগাম টেনে ধরা যায়নি। যার সর্বশেষ উদাহরণ ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধের দিন পুরান ঢাকায় বিশ্বজিৎ দাস হত্যা। এ ঘটনা এতই নৃশংস ও নির্মম যে গোটা জাতিকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে।

এ রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে গত ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামু, উখিয়া, টেকনাফে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর সন্ত্রাসীদের হামলা ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ও বিহারে আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা দেশবাসীকে হতবাক করে দেয়। বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর সংঘবদ্ধ আক্রমণের ঘটনা এই প্রথম। ধারণা করা হয়, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর আক্রমণের প্রতিশোধ নিতে স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশে বৌদ্ধদের আক্রমণের লক্ষ্য করে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন, গোয়েন্দা বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়। এমনকি বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলায় অংশ নেন বলে অভিযোগ আছে।

তবে এসব বিপর্যয় ও বিতর্ক সত্ত্বেও ২০১২ সালে অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার কথা স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও গবেষণা সংস্থাগুলো। ইকোনমিস্ট, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, খালিজ টাইমস-এর মতো পত্রিকাগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যকে বিস্ময়কর হিসেবে অভিহিত করেছে; দেশের ভেতরে এবং বাইরের বিশ্লেষকেরাও মনে করেন, রাজনৈতিক ঝগড়া-বিবাদটা একটু কম হলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি আরও গতিশীল হতো; সেক্ষেত্রে ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মধ্য আয়ের দেশ হওয়া অসম্ভব নয়। তবে এ অগ্রগতির সঙ্গে বৈষম্যটা হ্রাস না পেলে এক দেশ দুই সমাজে পরিণত হবে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।

নানা টানাপোড়েন বিপর্যয়-বিপন্নতায় সরকার ২০১২ সালটি পার করেছে। ২০১৩ সালে তার জন্য কী অপেক্ষা করছে, পরিস্থিতি কীভাবে সরকার সামাল দেবে; সেটাই এখন দেখার বিষয়। ২০১৩ সালে সরকারের জন্য বড় তিন চ্যালেঞ্জ—সব শঙ্কা ও সংশয় কাটিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনা, আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে বিরোধী দলের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসা এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারকাজ শেষ করা।

সরকার এ তিনটি অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে প্রস্তুত আছে কি? যদি তারা যুক্তির ভাষায় চলতে চেষ্টা করে এবং নির্বাচনের ব্যাপারে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান বের করতে পারে, তাহলে ২০১৩ সালটি সবার জন্য শুভ হবে বলেই আমাদের ধারণা। আর যদি সরকার গোঁয়ার্তুমি করে কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে চায়, দলীয় মাস্তানদের নিবৃত্ত না করে, তাহলে দেশ কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হবে, যা সরকার ও দেশের জন্য শুভনা-ও হতে পারে।

লিখেছেন: সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক।
মূল পাতায় যেতে হলে লিঙ্ক এ ক্লিক করুন।
২০১৩ শুভ না অশুভ? দৈনিক প্রথম আলো।

57883_na

‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বনাম সালমান রুশদি

a

স্যার সালমান রুশদি
পেশা- ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক
জাতীয়তা- যুক্তরাজ্য
লেখার ধরন- জাদুকরী, বাস্তবতা
বিষয়সমূহ- সমালোচনা, ভ্রমণ কাহিনী
প্রভাবিত হয়েছেন- গুন্টার গ্রাস, Gabriel García Márquez, , ভ্লাদিমির নবোকভ, জেমস জয়েস, জর্জ লুই বোর্গস, টমাস পিঞ্চন।

স্যার আহমেদ সালমান রুশদি ( দেবনগরী ভাষা: अहमद सलमान रश्दी ) ( জন্ম: ১৯শে জুন, ১৯৪৭) একজন ভারতীয়-বৃটিশ ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তিনি ১৯৮১ সালে প্রকাশিত তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য মিডনাইট্‌স চিলড্রেন’-এর মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করনে। এই উপন্যাসটি বুকার পুরস্কার অর্জন করেছিল। তাঁর প্রথম দিককার উপন্যাসের অধিকাংশেরই কাহিনী বা পটভূমি রচিত হয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশকে ঘিরে। তাঁর লেখার ধরণকে “জাদুকরী বাস্তবতা” হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি “স্যাটানিক ভার্সেস” রচনার মাধ্যমে র্ধমানুরাগী জনতার সাথে বির্তকে জড়িয়ে পড়েন।

এ প্রসঙ্গে অন্যত্র সালমান রুশদি বলেছেন যে, “স্যাটানিক ভার্সেস” নিয়ে বিরূপ সমালোচনা বা হইচই হওয়াতে ভালো-মন্দ দুটোই হয়েছে। এতে অনেক মানুষ আকৃষ্ট হয়েছে বইটি পড়ার জন্য, কিন্তু এই হইচই বড় রকমের বাঁধা এই উপন্যাসের শিল্পমূল্য বোঝার জন্য। “স্যাটানিক ভার্সেস” বুকার পুরস্কাররে জন্য চূড়ান্ত তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হলেও পুরস্কার পায় নি, যদিও বছররে সেরা উপন্যাস হিসেবে ‘হোয়াইটব্রেড এওয়ার্ড’ পেয়েছিল এবং পশ্চিমা সমালোচকদের বানানো শতাব্দীর সেরা একশটি বইয়ের তালিকায় উঠে এসেছে কয়েকবার।

The Satanic Verses Affair1
The Satanic Verses (1988)

১৯৮৮ সালে ইরানের ফতোয়া জারির পর থেকে অনেক ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্বব্যাপী মুসলিম দেশগুলো যেমন নিষিদ্ধ করেছে স্যাটানিক ভার্সেস, নিন্দা জানিয়েছে সালমান রুশদির বিরূদ্ধে, তেমনি লেখক, বুদ্ধিজীবী সহ নানা ধরনের মুক্তচিন্তার মানুষেরা এই ফতোয়ার বিরূদ্ধে কথা বলেছেন, লেখকের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন। এই ফতোয়ার জন্য সালমান রুশদি শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। হিতোশি ইগারাশি, যিনি স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাসটি জাপানিজ ভাষায় অনুবাদ করেন তাঁকে ছুরিকাঘাতে মেরে ফেলা হয় ১৯৯১ সালে। ইতালরি অনুবাদক ইতোরে ক্যাপ্রিওলোকে একই মাসে ছুরিকাঘাত করা হয়, যদিও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। নরওয়ের প্রকাশক উইলিয়াম নাইগার্ড অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আততায়ীর গুলি থেকে। ১৯৮৯ সালে বৃটেনে যে ট্রেন-বোমা ফাটানো হয়, তা ছিল সালমান রুশদিকে উদ্দেশ্য করে হিজবুল্লাহ’র আক্রমণ। যদিও ১৯৯৮ সালে ইরানের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ খাতামী জনসমক্ষে প্রতিশ্রুতি দেন যে তারা যেমন ‘রুশদিকে হত্যার ফতোয়া সর্মথন করেন না তেমনি এটি রহিতও করেন না’, সুতরাং এটি আজও বহাল আছে। সালমান রুশদি ঈষৎ মুচকি হাসি হেসে বলেন যে, এখনও অনেকটা ‘ভ্যালন্টোইন’স ডে’র মতো ফেব্রুয়ারী মাসের ১৪ তারিখে তাঁর কাছে বেনামে র্কাড আসে যাতে লেখা থাকে ‘আমরা এখনও ভুলি নি’। তিনি আরও বলেন এটা এখন সত্যিকারের ভয়-দেখানোর চেয়ে অনেকটা ‘রেটরিকের’ মতো হয়ে গেছে। তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই ‘মৃত্যুদণ্ড’ দেয়ার চেয়ে এটাকে অবজ্ঞা প্রর্দশন করলেই বরং সবার জন্য মঙ্গল হতো। মানুষের বিশ্বাস কেন এতো সহজে আহত হবে, ঠুনকো কাঁচের মতো ঝুরঝুরে হবে- যে ভিন্নমতকে খতমই করতে হবে, আমি আমার নিজের ভাষায় এভাবে বলি যে, ‘কারো যেমন ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে, তেমনি কারো তো নাস্তিকানুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে, অনুভূতি তো সবারই সমান!’

বৃটিশ লেখক সালমান রুশদি (১৯শে জুন, ১৯৪৭) হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তাঁর নিজের বাড়িতে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখতে পারেন। একযুগ আগে ভারত সরকার তাঁর এই বাড়িটি দখল করে নিয়েছিল। তবে ফেরার আগে এই বাড়ি বসবাস করার জন্য ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। তাঁর উকিল বিজয় শংকর দাস গত ১৯৯৭ এর নভেম্বরে এই রেষ্ট হাউজের পজেশন নেয়ার জন্য সোলানে গিয়েছিলেন। সোলান হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত একটি পার্বত্য এলাকা। সিমলা থেকে এর দূরত্ব তেমন বেশী নয়। মিঃ দাশ ইতিমধ্যেই টেলিফোন সংযোগ এবং বাসগৃহ সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন।
ভারতের সম্পত্তি নিয়ে মামলা মোকদ্দমা সহজে শেষ হয় না। তাই সিজ করা সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার আশায় রুশদি বেশ আনন্দ বোধ করছেন। তার প্রয়াতঃ পিতার নামে এই ”আনিস” ভিলা দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে অব্যবহৃত ছিলো। লেখালিখির জন্য রুশদি এটি ব্যবহার করতে পারবেন। তিনি এখানেও না থাকলেও কিভাবে বাড়িটি রাখবেন তার প্ল্যান করেছেন।

”স্যাটানিক ভার্সেস” লিখার অপরাধে ১৯৮৯ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট আয়াতুল্লা খোমেনি তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড জারি করে ফতোয়া দেন। সেই সময় থেকেই রুশদি ভারতে আসতে পারেন নি। তখন মুসলিমদের বিক্ষোভ ও দাঙ্গার পর ভারতে তার উপন্যাস নিষিদ্ধ করা হয়।
এখনও ভারতে তার আগমনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হবার আশংকা রয়েছে। তবুও গত ১৭ বছর ধরে তিনি স্বদেশে ফিরে আসার জন্য লড়াই করে চলেছেন। ছয় বেডরুম বিশিষ্ট বাড়িটি বর্তমানে হিমাচল প্রদেশের সরকারের অধীনে রয়েছে। একটি স্থানীয় সরকারি অফিস হিসাবে এর ব্যবহার হচ্ছে। এই বাড়িটি আবার রুশদি পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেবার জন্য রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দরকার হয়েছিলো।
৬০ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত সোলান শহরের অদূরে পাইন গাছের বনে ঢাকা ”আনিস” ভিলার সামনে রয়েছে পঁচিশ’শো গজের এক সুদীর্ঘ লন। ক্ষয়িষ্ণু পাথরের দালানের উপর ঢেউটিনের ছাদ, যা একসময়ে লাল রং করা হয়েছিলো। ছাদে রয়েছে চারটে ছোট গম্বুজ। সামনে এক প্রশস্ত বারান্দা। ভ্যালির বুকে এ এক সুন্দর ল্যান্ডমার্ক।

সোলানের ডিষ্ট্রিক্ট কালেক্টর এবং ”আনিস” ভিলার প্রতিবেশী বি,এস নায়ান্ত বলেন- যদি রুশদি এখানে থাকতে চান তাহলে তারা খুশি হবেন। তিনি যদি শেষ পর্যন্ত আসার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আমরা তাঁর সবধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেবো। তার মতে ভিলার বর্তমান দাম তিন থেকে চার মিলিয়ন রূপী হবে।

রাজ্য কর্মকর্তারা ১৯৯০ সালে ”আনিস” ভিলার দখল নিয়েছিলেন। তাদের মতে ১৯৪৭ সালে দেশ পার্টিশনের সময় রুশদি পরিবার পাকিস্তানে চলে গেলে এই ভিলা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো। কিন্তু মিঃ দাসের মতে- বৃটেনে স্থায়ী হবার আগে এই পরিবার ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত বর্তমান মুম্বাইতে বসবাস করে। তখন লোকাল এডুকেশন অথরিটির কাছে বার্ষিক ২০০০ রুপীর বিনিময়ে আনিস রুশদি বাড়িটি ভাড়া দেন। তিনি ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত আমৃত্যু এই সম্পত্তির দেখাশোনা করেন। ১৯৬৯ সালে এই সম্পত্তি তিনি তার সন্তানকে লিখে দেন।
যদিও আদালত ১৯৯৭ এর জুলাই মাসে রুশদির অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছেন কিন্তু নানা টানাপোড়েনের কারণে এর দখল পেতে দেরী হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বকেয়া ভাড়া দাবি করছেন। আর রাজ্য সরকার প্লাম্বিং এর জন্য খরচ করা প্রায় ১,৫০,০০০ হাজার রুপী শোধ দেয়ার কথা বলেছেন। মিঃ দাস বলেন- রুশদি এখন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য এখানে উদ্যোগ নিতে বলেছেন। সে অনুযায়ী কাজ চলছে।

satanicc