বিভাগের আর্কাইভঃ জার্নাল ও ডায়েরী

প্রয়াণের ষষ্ঠ বার্ষিকীতে শিল্প সাহিত্যের জাদুকর হুমায়ুন আহমেদ

আজ (১৯ জুলাই) বাংলার নন্দিত কথাশিল্পী ও চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। দেখতে দেখতে কেটে গেল জন নন্দিত এই কথাশিল্পীর প্রয়াণের ছয় ছয়টি বছর। ২০১২ সালের আজকের এই দিনে ক্যান্সার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি নিউইয়র্কের বেলভ্যু হাসপাতালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান জোছনার গল্প কথক কিংবা হিমু-মিসির আলির এই স্রষ্টা। তার মৃত্যু শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী সব বাঙালির হৃদয়ে গভীর শোকের অন্ধকার ছড়িয়ে দিয়েছিল।

মাত্র ৬৪ বছরের জীবনে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর কীর্তি রেখেছেন শিল্প-সাহিত্যর প্রায় প্রতিটি শাখা প্রশাখায়। বাংলা সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র ও গান পালাবদলের এ কারিগর ১৯৭২ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ দিয়ে নিজের অস্তিত্বের সাক্ষর রাখেন। তার ‘নন্দিত নরকে’ আর ‘শঙ্খনীল কারাগার’ পাঠ করে আবিষ্ট হয়েছিলেন, সেই আবেশ আজও কাটেনি বাংলা ভাষার পাঠকদের। তিনি তাঁর সাহিত্য দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ রেখেছেন বাংলার মানুষকে, তিনি জয় করে গেছেন একেবারে সাদামাটা বাঙ্গালীর মন কে, আবার উন্নত ঐশ্বর্যিক বাঙ্গালিয়ানাকে। নিজেকে তিনি যেভাবে বাংলা কথাসাহিত্যের অঙ্গনে, টেলিভিশন নাটক আর চলচ্চিত্রাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন তা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক বিরল । তিনি এদেশের সৃজনশীল সাহিত্য প্রকাশনাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন বিপুল পাঠকপ্রিয়তা সৃষ্টির মাধ্যমে। ভারতীয় বাংলা গল্প, উপন্যাসে নিমগ্ন পাঠকদের বাংলাদেশি লেখকদের বই পড়তে বাধ্য করেছিলেন তার আশ্চর্য জাদুকরী গল্পের জালে জড়িয়ে। মোহাবিষ্ট পাঠক হুমায়ূন আহমেদের রচনায় মধ্যবিত্ত জীবনের হাসি-কান্নার এমন নিবিড় পরিচয় পেয়েছেন, যেখানে তাদের নিজেদেরই জীবনের ছবি প্রতিবিম্বিত। এক হুমায়ুন আহমেদের পথ ধরে এগিয়ে এসেছেন অসংখ্য প্রতিভা, অসংখ্য মানুষ তার হাত ধরে হয়েছেন অনন্য, একেবারে সাদামাটা মানুষকে তিনি বানিয়ে দিয়েছেন নন্দিত চিত্রতারকা!তাদের অনেকেই হয়েছেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী। আমরা তাঁর সৃষ্টিতে খুঁজে পাই অসাধারণ সব নৈপুণ্য, অনন্য নৈসর্গিক দৃশ্য, জোছনা, খুঁজে পাই আমাদের জীবনের নানান সব ব্যঞ্জনা।
হুমায়ূন আহমেদের অনন্য সৃষ্টি হিমু! সে এক অসাধারণ চরিত্রের নিরন্তর পথ চলা… এক ভিন্ন মেজাজ, ভিন্ন স্টাইল, ভিন্ন রঙ রূপ এর অপূর্ব সমন্বয়, যা আমাদের দেশের বেশিরভাগ তারুণ্য কে ছুঁইয়ে গেছে, আজো ছুঁইয়ে আছে আর আগামী দিনে একিই প্রভাব নিয়ে এই চরিত্রটি টিকে থাকবে।
এদেশে দর্শকনন্দিত নাটকগুলোর একটি বড় অংশ তার সৃষ্টি। তার ছায়াছবিও সমাদৃত হচ্ছে সমানভাবে। প্রয়াণের ছয় বছর পরও বাংলা শিল্প-সাহিত্যের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে চলছে তাঁরই আধিপত্য, তারই রাজত্ব, তারই জয়জয়কার! এখনো সমান তালে সমান ছন্দে বিরাজ করছে হুমায়ুন প্রভাব যা রবীন্দ্র নজরুলের পর আর কেউই খাটাতে সক্ষম হয়নি। হুমায়ূন আহমেদ এর পুস্তুক প্রকাশকদের মতে তার নতুন বা পুরনো সব গ্রন্থই সর্বোচ্চ বিক্রিত বইয়ের তালিকায় স্থান করে নেয়। এই হিসেব মতে হুমায়ুন আহমেদ কে আধুনিক শিল্প সাহিত্যের রিদম বলা ভুল হবেনা।
বাংলা টেলিভিশনের জন্য একের পর এক দর্শকনন্দিত নাটক রচনার পর ১৯৯০-এর গোড়ার দিকে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। তাঁর পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’ মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। ২০০০ সালে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ও ২০০১ সালে ‘দুই দুয়ারী’ দর্শকদের দারুণ গ্রহণযোগ্যতা পায়। ২০০৩-এ নির্মাণ করেন ‘চন্দ্রকথা’।
এছাড়া ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন ছায়াছবি ‘শ্যামল ছায়া’ , ২০০৬ সালে ‘সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র’ বিভাগে একাডেমী পুরস্কারের জন্য বাংলাদেশ থেকে যেটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এবং বেশ কিছু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। একিই বছর মুক্তি পায় ‘৯ নম্বর বিপদ সংকেত’। ২০০৮-এ ‘আমার আছে জল’ চলচ্চিত্রটি তিনি পরিচালনা করেন। ২০১২ সালে তাঁর পরিচালনার সর্বশেষ ছবি ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ মুক্তি পায়। যা দেশ-বিদেশে প্রচুর আলোচনায় আসে। তাঁর চলচ্চিত্রের মৌলিক গানগুলো তিনি নিজেই রচনা করেন, যার বেশিরভাগই পায় তুমুল জনপ্রিয়তা।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। ডাক নাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার ছোটভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।
তিনি ১৯৬৫ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে স্নাতক ও ১৯৭২ সালে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ৯০ দশকের মাঝামাঝি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে লেখালেখিতে পুরোপুরি মনোযোগ দেন।
১৯৭৩ সালে প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁর নাতনি গুলতেকিন খানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন হুমায়ূন আহমেদ । হুমায়ূন এবং গুলতেকিন দম্পতির চার ছেলে-মেয়ে। তিন মেয়ে নোভা, শীলা ও বিপাশা আহমেদ এবং ছেলে নুহাশ হুমায়ূন। দীর্ঘ ৩২ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটিয়ে ২০০৫ সালে ডিভোর্সের মাধ্যমে তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এরপর তিনি অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন। এ দম্পতির দুই ছেলে- নিষাদ ও নিনিত হুমায়ূন।

লেখকঃ দাউদুল ইসলাম
কবি ও প্রাবন্ধিক।

ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে ল্যোভ

জার্মান জাতীয় দলের কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ। ইতালী ও ব্রাজিলের পর তাঁর সামনেই এখন পরপর দু’বার বিশ্বজয়ের হাতছানি। নিজেকে ‘ভবিষ্যৎদ্রষ্টা, যোগাযোগের কেন্দ্র ও জন সংযোগকারী’ ভাবতেই পছন্দ করেন।

বারো বছর কেটে গেছে। প্রায় যতটা সময় আঙ্গেলা ম্যার্কেল জার্মানির চ্যান্সেলর, ততটা সময়ই তিনি দেশটির জাতীয় দলের কোচ। সেই চুক্তি আরো বেড়েছে। এই বিশ্বকাপের পরের বিশ্বকাপ অর্থাৎ ২০২২ সাল পর্যন্ত কাগজে কলমে অন্তত তিনি দলের সবচেয়ে গুরুদায়িত্ব পালন করবেন। এরই মধ্যে দেশের কাছ থেকে পেয়েছেন ফেডারেল ক্রস অফ মেরিট-এর সম্মান। জিতেছেন ফিফার বর্ষসেরা কোচের উপাধি। দু’বার জিতেছেন বিশ্বের সেরা জাতীয় কোচের পুরস্কার। তাই তাঁকে এবার এগিয়েই যেতে হবে, কারণ নতুন কিছু পাবার জন্য নয়। বরং কিছু যেন হারাতে না হয় সেইজন্যে।

৫৮ বছর বয়সি ল্যোভ। বলেন ‘‘২০১৪ সালের বিশ্বকাপ একটি অর্জন ছিল, কিন্তু মাইলফলক নয়”। তাই তিনি এমন কিছু অর্জন করতে চান, যা ইতিপূর্বে একমাত্র ইতালীর কোচ ভিটোরিও পোৎসোই পেরেছিলেন পরপর দুবার বিশ্বকাপ জয় করতে।

জার্মান বেতারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ল্যোভ বলেন, ‘‘সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন সহজ কথা নয়। প্রচুর পরিশ্রম দরকার”। ‘‘আপনি যখন সাফল্য পেতেই থাকেন, তখন আপনি কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলতে পারেন। এমনকি সাফল্য পাওয়ার ক্ষুধাও আপনার মধ্যে কমে যেতে পারে। পড়তে বেশি সময় লাগে না”। ল্যোভ মনে করেন তাঁর দলের এখনো অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো দলে প্রচুর সম্ভাবনা দেখি। এদের সঙ্গে কাজ করতে এবং আরো দক্ষ করে গড়ে তুলতে আমি খুব উদ্দীপ্ত বোধ করি”।

জাতীয় দলের কোচ হিসেবে তাঁকে ক্লাব ফুটবলের মতো প্রতি সপ্তাহের চাপ তাঁকে নিতে হয় না। ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ বা বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তেই শুধু চাপ থাকে। এই ফাঁকে তিনি মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে এগোতে থাকেন।

‘‘আমরা সবসময়ই উদাহরণ তৈরি করতে চাই। তাই আমাদের চোখ ভবিষ্যতের দিকে। মাঝে মাঝে এমন সব পরিকল্পনা মাথায় আসে, যা এখন পাগলের প্রলাপ বলে মনে হতে পারে। তবে আমরা জানি যে, একদিন সেটিই করব।”

বিশ্বকাপের দাবিদার চার দল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন ও ব্রাজিলের বিপক্ষে ভালো করতে পারেনি তারা। তিনটি ড্র ও একটি পরাজয় এই ফল দেখে দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স কিছুটা হতাশাব্যঞ্জক মনে হলেও সকলেই জানেন যে, জার্মানি হলো টুর্নামেন্টের দল। সেখানেই তারা ভালো করে। ল্যোভ ২০১৮ র বিশ্বকাপের পরিকল্পনা শুরু করেছেন অন্তত দু’বছর আগে। ‘‘পরিকল্পনা ছাড়া সাফল্য আসবে না। পরিষ্কার ধারণা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে গেলেই কেবল অনেক দূর পৌঁছানো সম্ভব।”

ল্যোভ বোঝেন, ব্যর্থতার জন্য খুব কম সুযোগই ছাড়তে হবে। তবে শেষ পর্যন্ত ভাগ্যকেও সুপ্রসন্ন হতে হবে। তাই ‘ফিঙ্গার ক্রস্ড’।

সুত্র: অনলাইন।

প্রবাসী

কতদিন তাকাইনি তোর চোখে চোখ রেখে। আঁচল পেতে দিসনি বসতে ভালোবেসে। তোর কীবা দেবো দোষ! আমারই তো আসা হয়নি তোর ছায়ার পাশে। তোর বুকে শান্ত স্নিগ্ধ নদীর জল বয়ে চলে নিরবধি। শ্যামল আবেশে সন্তানদের ঘুমিয়ে রাখিস পরম ভালোবেসে। ভোর হতেই পাখিদের গান শুনিয়ে জাগিয়ে দিস পরম মমতায়। কথা বলছি তোর এক অবাধ্য ছেলে। যার অনেক লোভ ছিলো আকাশ ছোঁয়ার। তাই তোর মায়ার বন্ধন ছিঁড়ে হই দেশান্তরি। হিমালয়ের ওপারে, সাগর নদী পেরিয়ে পৃথিবীর ঠিক মধ্যবিন্দুতে পৌঁছে যাই আরো সুখের আশায়। চাই আরো সুখ, চাই আরো চাই…চাই… এ চাওয়ার কি শেষ আছে! পেয়েছি যা কিছু হারিয়েছি তার চেয়ে বেশি কিছু। এখন আর গল্প হয়না, ভালোবাসা হয়না, কথা হয় প্রতিনিয়ত যন্ত্রদানবের সাথে।

মনে পড়ে নিশুতি রাতে কথা হতো তোর সাথে। সন্তানদের ঘুম পাড়িয়ে গান শোনাতি নীরবে নিঃশব্দে। সে গান শুনতে কতদিন ঘুমাইনি। ক্লান্ত হইনি কোনদিন। তোর বুকে আমার স্বাধীনতা ছিলো। যা খুশি তাই করেছি। কারো কিচ্ছু বলার সাহস ছিলো না। যত্রতত্র ঘুরে বেড়িয়েছি। তোর ছায়া ছিলো নিরবধি।

ইংরেজ শাসন দেখিনি, দেখিনি পাক হায়নার কালোথাবা। হয়তো তাই বুঝতে পারিনি তোর গভীর ভালোবাসা। এজন্য পাঠিয়েছিস তোর অবোধ সন্তানকে আজ দেশান্তরে। এখন আর ঘুম ভাঙ্গেনা পাখির গানে। হিমেল বাতাসে মন জুড়ায়না কোমল আবেশে। বাতাসের শব্দ শুনে ঘর-দোর বন্ধ করে দেই ধুলি ঝড়ের কিংবা উনুনের তাপের শঙ্কায়। হয়তো ভাবছিস তোর সন্তান কোন কারখানার শ্রমিক হয়েছে নাকি। না মা, তা নয়। এখানকার পরিবেশই এমন। তোর শ্যামল রূপের মত রূপ এখানে নেই। আছে শুধু ধুঁধুঁ মরুভূমি। তোর ভালোবাসার মত ভালোবাসা পায়না বলে তার সন্তানগুলোও তেমন।

যা তা বলে যাচ্ছি, আর তুই বসে বসে হাসছিস তাই না! বুঝি, বুঝি সবই বুঝি। আসলে এটি আমার প্রাপ্য ছিল। বুঝার দরকার ছিল পরাধীনতা কাকে বলে?

প্রতিপদে পদে এখানে আমরা পরাধীন। ওদের দেয়া ছোট্ট একটা পরিচয় পত্র অনেক মূল্যবান। আমার চেয়েও ওটার মূল্য অনেক অনেক বেশি। সাথে না রাখছি তো কেল্লাফতে। যেখানে খুশি সেখানে যখন তখন তোর বুকে চষে বেড়ানোর মত সেতো কল্পনার অতীত। এখন আর দুঃখও হয়না। সব সয়ে গেছে।

তোর যে সন্তান আমার মতো পরাধীনতার অর্থ বুঝে না পাঠিয়ে দিস সযতনে, শিখিয়ে দেবো হাতে কলমে। যে বর্ণ বৈষম্য, জাতিভেদ বুঝে না তাও শিখে নিতে পারবে বিনে পরিশ্রমে। যে নিয়ম মানতে শেখেনি, নিয়মের প্রতি বিনয়ী করে নেবো সহসা।

তোর ননির পুতুলগুলো পছন্দসই খাবার না পেয়ে মায়ের দেয়া খাবারের থালা ছুঁড়ে দিয়েছিলো আকাশে সে আজ এক টুকরো পাউরুটি মুখে গুজে দিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে পরম আনন্দে। এক থলে বাজার নিয়ে হেঁটে আসতে যার আত্মসম্মানে বাজতো সে আজ অন্যের ভারী বস্তা কাঁধে নিয়ে হরহামেশা পাড়ি দেয় কয়েক মাইল। তপ্ত রোদে ঠাঁই দাঁড়িয়ে অন্যের রাস্তা তৈরি করে দিতে তার মোটেও কষ্ট হয়না। দ্বিতল বহুতল প্রাসাদ গড়ে তোলে অন্যের জন্য। মহাকালের যাত্রীও হয় অকালে।
তোমার অবোধ সন্তানটি এখনো রাত জাগে তোমার অপেক্ষায়। এখনো পথে চলি নিরবধি। দেখা হয় তোমার দেশান্তরি আরো কিছু সন্তানের সাথে। কেউ খোলা আকাশে তপ্ত মরুর বুকে, কেউ দেখি একটু সূর্যের আড়াল নিতে সেই সরু গলিতে দেয়ালে হেলান দিয়ে একটু জিরিয়ে নিতে।

এরা হয়তো এসেছে মানবিক দীক্ষা নিতে, এরা মানুষ হয়েছে। ক্লান্তি আছে কিন্তু চিহ্ন মুছে দিতে চায় চোখে মুখে। তাইতো মুখ তুলে নিত্যকার সেরা মিথ্যাটি আজো বলে- এইতো আছি, বেশ ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ।

দুর্ধর্ষ ২৯শে এপ্রিল

২৯ এপ্রিলের পরদিন সকালের কথা-
সমস্ত বাগান লণ্ডভণ্ড!
লণ্ডভণ্ড না বলে নিঃচিহ্ন বলাই যথার্থ হবে,
শেকড় শুদ্ধ উপড়ে ভেসে গেছে প্রতিটি বৃক্ষের বসত ভূমি!
কিছু ফুল ফুটেছিল বসন্ত গুণে, কিছু ছিল বারোমাসি
আর কিছু একান্তই প্রাকৃতিক…
আচ্ছা ফুলের কি আত্মা থাকে?
ফুলের আত্মারা এখন কোথায়? এই প্রলয়ঙ্করী ঝড়, জলৌচ্ছাস
ওরা কি পারতো না ফুলেদের বাঁচিয়ে রাখতে?

রাস্তার ওপারে একঘর উদ্বাস্তুর বাস ছিলো-
কোথা থেকে যেন এসেছিলো গত বৈশাখে, পুরুষটার দু হাতে দু’কন্যা
সমুদ্রের মত চোখ তাদের, ঘেরুয়া বসনের রমণী টা নিশ্চই তাদের মা
এক হাত বুকে চেপে পীযুষ শিশুটিকে কাঁধে ঘুম পড়িয়েছে অন্য হাতে
প্রাগৈতিহাসিক কালের একটি একতারা
ওরা বেশ ক্ষুধার্ত ছিলো, পিপাসায় কাঠ হওয়া মুখ রোদের মত ঠা ঠা করছিলো
গ্রামের কেউই তাদের চিনে না- অথচ, কেউ জল,কেউ গরম ভাত
কেউ কেউ বন্দোবস্ত করছিলো তাদের রাত কাটাবার…
ওরা ঠিক আছে তো?

মাঠ আর নদী মিলে মিশে একাকার জলে, থইথই জল
মস্ত বড় বড় গাছ, পাখির বাসা, মুরগীর খোঁয়াড় আর অগণিত মৃত দেহ
যেভাবে নদী আর প্রান্তর একাকার
যেভাবে জল,মল, রক্ত, বর্জ্য একাকার
সেভাবে মৃতদেহরা একাকার; কি মানুষ , কি পশু- জন্তু জানোয়ার
কোথাও কোন স্থল অবশিষ্ট নাই,
ক্লান্ত- পরিশান্ত জলের স্রোত, তীব্রতাও আছে এখনো
থেকে থেকে ভেসে আসছে আহাজারি, চিৎকার!…

সে দিন সূর্য উঠেছিলো
কিন্তু নিজেকে বারবার লুকচ্ছিল আড়ালে
লজ্জায় হোক কিংবা কোন দ্বিধায়- আসলে কেউ কারো চোখে তাকাচ্ছিলো না!

বিধ্বস্ত মনে আমি বারবার প্রার্থনায় নিমগ্ন হয়ে চাইলাম
চেষ্টা করলাম চোখের দু’ফোটা জল মিশিয়ে দিতে জলোচ্ছ্বাসের সাগরে
দু চোখের পাতায় কম্পন বোধ করলাম, তারপর চোখ বন্ধ করলাম…
অন্তঃকর্ণ ফেটে যাচ্ছিলো সীমাহীন গর্জনে…
কোথাও হতে ভেসে আসা আর্তনাদ
পচন ধরা লাশের উপর অসংখ্য শকুনের উন্মাদ নৃত্য
কাঁক গুলো ততক্ষণে তৃপ্ত উদর পূর্তি শেষে…তবুও
রাজি নয় ভাগের খাবার হাত ছাড়া করতে

একটি লাল বেনারসি ভেসে উঠে আসে, মেহেদী রাঙ্গা হাত
চুলের গোছায় গুজে থাকা বেলি ফুলের মালা
অবিশ্বাস্য এক নিষ্পাপ চেহারা, ঠিক যেন সাগর তলা হতে মুক্তো উঠে এসেছে
যেন এখুনি মুচকি হাসবে অথবা লজ্জায় লাল…

এত সব মানুষ, এত জীবন… সবাই শুয়ে আছে…ঘুমিয়ে আছে
যে দিকে তাকিয়েছি দেখেছি- নিঃস্পন্দ দেহ
যে দিকে ছুটে গিয়েছি দেখেছি পথ- অপথ এক হয়েছে সব
কোথাও কোন ধর্ম দেখিনি, কোন বাচ বিচার দেখিনি
গর্তের পর গর্ত খোঁড়া হয়েছে যে টুকু অবশিষ্ট ছিলো স্থলভাগ
নারী পরুষ, শিশু বৃদ্ধ একসঙ্গে সমাধিস্থ হয়েছিলো!
সমাধিস্থ হয়েছিলো গরু বাছুর জীব জন্তুর
আর কেউ কেউ তাও পায়নি…
স্রোতের তোড়ে ভেসে গিয়েছে, অথবা জমির অভাবে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে!

পৃথিবীর কোন সুগন্ধিই সে দিন দুর্গন্ধের মুখোমুখি হতে পারেনি
তাছাড়া গন্ধের তোয়াক্কা না করে জীবন খুঁজছিল জীবন
চিৎকারে আর ক্ষিপ্রটায় শিশু খুঁজছিল মাতৃকোল, একটু সহনীয়তা;
রাতের অন্ধকার ছিলো জলের মত
সাইক্লোন সেন্টার গুলো গিজগিজ করেছে কোথাও কোন ঠাঁই নাই…
অগাধ… অঠাই সর্বত্র! অবর্ণনীয় এক আঠালো বাতাস- থমথমে
ওভাবেই রাত্রি নামে- সকাল নামে…

……তারপর এক নিদারুণ মহামারী
জলের দাগ চিনে চিনে দুর্ভিক্ষ ঢুকে গিয়েছিলো প্রতিটি গৃহে- জমিনে;
আমরা তখন জীবন বুঝতাম না, মরণ বুঝতাম না
আমরা কেবল ক্ষুধা বুঝতাম, বই বুঝতাম- যা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে আছে
আমরা জামা বুঝতাম- বাবার হাতে মোয়া বুঝতাম…

একেক টা দিন যুদ্ধগ্রস্থ, বিধ্বস্ত
বাবারা অন্নের সন্ধানে মরিয়া, আর মায়েরা খড় কুড়ো যা পায়…
এভাবে ঘুরে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বিগত হলো- দেড় যুগ
আজো আমার কানে বাজে সহস্র কণ্ঠের দুর্বল আর্তনাদ, বাঁচার মিনতি
আজো উড়ে যাওয়া আত্মারা ফিরে ফিরে আসে অমোঘ প্রত্যাশায়…

Daudul Islam ২৯ই এপ্রিল ২০১৭

২৯ এপ্রিল ১৯৯১ ইতিহাসের ভয়াল প্রলয়ংকরী দিন। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছিল স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। রাতের অন্ধকারে মুহূর্তের মধ্যে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল উপকূলীয় এলাকা। দেশের অন্যান্য এলাকার মত পাহাড়-সাগরবেষ্টিত চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা সেদিন ঘূর্ণিঝড়ের ছোবলে বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় কক্সবাজার, মহেশখালী, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, পতেঙ্গা, সীতাকুণ্ড, কুতুবদিয়া, চকরিয়াসহ বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা। সর্বোচ্চ ২২০ কিলোমিটার গতিবেগে বয়ে চলা ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয় দেশের ১৫ জেলার ২৫৭ টি ইউনিয়ন। মারা যায় লাখ, লাখ মানুষ। এখনও বাতাস বইলে চট্টগ্রামের উপকূলীয় জনগণ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। ১৯৯১ সালে ঘটে যাওয়া সেই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের কথা উপকূলবাসী তথা দেশের মানুষের কাছে অম্লান হয়ে রয়েছে। ২৯ এপ্রিল এই ভয়ংকর রাতে হাজার হাজার মানুষ হারিয়েছে পরিবার পরিজন। আপনজনদের সাথে ভেসে গেছে মাথা গোঁজার ঠাঁই। এ ঘূর্ণিঝড়ে দেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় এলাকা কুতুবদিয়া। শুধু কুতুবদিয়া সেদিন আনুমানিক ৪৫ হাজার মানুষ নিহত এবং কয়েকশ’ কোটি টাকার সম্পদ বিলীন হয়েছে। ২৯ এপ্রিলের সেই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ২৫ হাজার নারী-পুরুষ প্রাণ হারায়। পাশাপাশি হাজার হাজার গবাদি পশু প্রাণ হারায়। সম্পদের ক্ষতি হয় প্রায় হাজার কোটি টাকার।

সেই মহাপ্রলয় এর ২৭ বছর পর ও আমাকে সেই রাতের ভয়ংকর স্মৃতি আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। সেই রাতে আমাদের ঘরে আমি আরর আমারর বাবা ছাড়া বাকীরা সবাই ফেনী নানার বাড়িতে ছিলো। আমাদের তখন টিনের ঘর। টিনের ছাউনি টিনের বেড়া, ফলে বাতাসের তাণ্ডবনৃত্য আর গাছগাছালির প্রচণ্ড আঘাতে অবর্ণনীয় ভীতি কাজ করেছিল। এরর মধ্যে উঠোনের একটি আমগাছ, এক্টি নারকেল গাছ উপড়ে পড়ে। আমরা ভয়ে ছিলাম কারণ আমাদের ঘরের চার দিকে নারকেল সুপারি আরর আমগাছে ভরা ছিলো।
পরদিন সকালে বাতাস কমে আসে,
কিন্তু আশপাশের অন্যান্য বাড়িঘর আর অন্যান্য ক্ষয় ক্ষতি গুলো দৃশ্যমান হয়ে উঠছিল।

মহান আল্লাহ পাকের দরবারে সেই দিনের কাছে আমরা পানহা চাই। আর পার্থণা করি তাদের জন্য যারা সে দিন প্রাণ হারিয়েছেন।
সে সব বোব পশুর জন্য যারা ভয়াবহ মৃত্যুকে বরণ করেছে বন্দী অবস্থায়।
আর পানহা চাই
আগামীর জন্য
আল্লাহ যেন সবাই কে হেফাজত করেন। তার রহমতের
আশ্রয়ে ঠায় দেন।

লেখক: দাউদুল ইসলাম
২৯শে এপ্রিল২০১৮
মিরসরাই।

আমার ভণ্ড উপন্যাসের কিছু অংশ

আমার ভণ্ড উপন্যাসের কিছু অংশ

তুমি বারবার সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টিকর্তা করছো। তোমার কবি-সাহিত্যিক হওয়ার স্বপ্ন কোনোদিন পুরণ হবে না।
কেনো?
তুমি জানো না কবি-সাহিত্যিক হতে হলে নাস্তিক হতে হয়। লোকেরা তোমাকে আস্তিক বলে গালি দিবে।
দিক।
তোমার বই কেউ পড়বে না।
না পড়ুক।
তোমাকে আনকালচারড বলবে।
বলুক।
তোমার কাছে কেউ মেয়ে বিয়ে দিবে না।
না দিক।
এই পর্যন্ত যেতেই একটা রিকশা কোথা থেকে উড়ে আসলো। আমার উপর প্রায় উঠিয়েই দিয়েছিলো। হার্ডব্রেক করে হাসতে হাসতে বললো, স্যার আপনিও যেমুন, আমিও তেমুন। লাইগা গেলে কারো দোষ অইতো না। আফনেরও না। আমারও না। এতো রাইতে রাস্তায় কি করেন স্যার? রাইতের মজা লন বুঝি?
এইবার আমি কথা না বলে থাকতে পারলাম না। বললাম, আমি রাইতের মজা লই কেমনে বুজলা?
স্যার আমি হইলাম রাইতের মানুষ। রাইতের মানুষ দেখলেই আমি চিনতি পারি। চলুইন স্যার কোনোদিক তাইক্যা ঘুইরা আসি। আপনার কোনো টাকা পয়সা দেওন লাগবো না।
আমি কিছু না বলে রিকশায় উঠে বসলাম। ড্রাইভার আবার বললো, জানেন স্যার আমি দিনে রিশকা চালাই না। শুধু রাইতের খেপ মারি। রাইতের স্বাদ যে পাইছে, হেই বুঝে স্যার। আর যে পাইছে না, হের দুনিয়া আন্ধার। একটা বিড়ি খাইবেন স্যার?

তেঁতুলিয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে থাই জাতের পেয়ারা চাষাবাদ করে স্বাবলম্বি আতাউর

তেঁতুলিয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে থাই জাতের পেঁয়ারা চাষাবাদ শুরু করেছে আতাউর। সরেজমিন গিয়ে জানা যায় তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের কলোনীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আতাউর রহমান, বয়স অনুমান ৪৮ বছর, পেশায় একজন ট্রাক্টর ট্রলি চালক। যুবক বয়সে তিনি ৮ থেকে ৯ বছর চৌরাস্তা বাজারে খুচরা ও পাইকারী চাউলের ব্যবসা করেন। এই ব্যবসায় ক্রমান্বয়ে লোকসানের মুখ দেখে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে স্থানীয় মালিকের অধীনে কিছুদিন ট্রাক্টর-টলি চালিয়ে সংসার পরিচালনা করেন। কিন্তু সড়ক দূর্ঘটনা সহ অন্যান্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে এপেশায় তাঁর মনে স্বস্থি ফিরেনি। আর তখন থেকেই মনের পরিকল্পনা সবুজ নার্সারির পাশাপাশি অন্য কোন বাণিজ্যিক ফলের বাগান করার। যেই কথা সেই কাজ। পরবর্তীতে বাড়ির পাশে সম্পুর্ন নিজ উদ্যোগে একখণ্ড জমিতে দিনাজপুর থেকে আম সহ অন্যান্য চারার বীজ দিয়ে নার্সারী চাষ শুরু করেন। তাঁর নার্সারি থেকে উৎপাদিত চারা বিক্রি করে সংসার চালান। কিন্তু নার্সারী ব্যবসায় মন্দা দেখে লাভজনক হিসেবে শুধুমাত্র নার্সারিতে সুপারির চারা করেছেন। পরে দর্জিপাড়া নামক স্থানে ৫০ শতক জমি ৫ বছর মেয়াদের জন্য ৫০ হাজার বর্গা নিয়ে রাজশাহী শহর স্থান থেকে ৪শত থাই জাতের পেয়ারা চারা রোপন করে একটি বাগান সৃজন করেন।

আতাউরের পৈতৃক নিবাস তেঁতুলিয়া উপজেলার ২নং তিরনই হাট গ্রামের রওশনপুর গ্রামে। শৈশবে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া শোনা করেন। পরবর্তীতে মাধ্যমিক সহ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা থাকলেও সংসারে অভাব অনটনের কারণে পড়া শোনা করতে পারেনি। কিশোর বয়সে পাবনায় সোলার/ডিপ টিউবয়েল কোম্পানীতে চাকুরি নিয়ে পিতার সংসারে সহায়তা করেন। সেখান থেকে ফিরে ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক পারিবারিক প্রস্তাবে দর্জিপাড়া গ্রামে তেঁতুলিয়া হাসপাতালের চতুর্থশ্রেনীর কর্মচারী মোছা. মালেকার সংগে বিবাহে আবদ্ধ হন। পারিবারিক জীবনে দুই ছেলে সন্তানের জন্য। বড় ছেলে ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। ছোট ছেলে তেঁতুলিয়া ডিগ্রী কলেজে পড়েন।

তিনি নার্সারি চাষাবাদ ও পেঁয়ারা বাগান করার বিষয়ে কোন প্রতিষ্ঠানে পড়া-শোনা কিংবা সরকারি-বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেনি। এছাড়া প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য তাকে কেউ কোন দিন উৎসাহ প্রদান করেনি। সম্পুর্ন নিজ উদ্যোগে ও অন্যান্য বাগান মালিকদের কাছে জেনে শুনেই নার্সারী ও বাণিজ্যিকভাবে পেঁয়ারা বাগান সৃজন করেন। পেয়ারা বাগানে তার খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এ মৌসুমে তার পেয়ারা বাগানে প্রতিটি গাছে ভাল ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে পোকা মাকড়ের হাত থেকে সুরক্ষার জন্য গাছের পেয়ারায় পলিব্যাগ পড়িয়েছেন। প্রাকৃতিক আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাগানের ফলন্ত পেয়ারা প্রায় দেড় থেকে দু’লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে জানান।

পেয়ারা চাষী আতাউরের মতে, চারা সংগ্রহ ও রোপনের উপর্যুক্ত সময় হলো ফাল্গুন ও চৈত্র মাস। ভাল ভাবে জমি তৈরির পর চারা রোপন করে পরিচর্যার পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে তিন থেকে চারবার গাছের গোড়ায় সেচ দিতে হবে। পেয়ারা বাগানে রোগ বালাই তেমন রোগ বালাই নাই। তাঁর বাগানের চারপাশে বসতবাড়ি ও কিছু বাঁশ ঝাড় থাকার কারণে ব্যাপক হারে মশক পোকার আক্রমন করে। ফলে প্রতি সপ্তাহে কিছু কিছু পেয়ারা গাছে তাকে স্প্রে করতে হয়েছে বলে জানান।

চাষী আতাউরের অভিযোগ-তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের মধ্যে বাণিজ্যিক ভাবে পেয়ারা বাগান সৃজন করেছি। কিন্তু উপজেলা কৃষি বিভাগের কোন কৃষি কর্মকর্তা বা ব্লক সুপারভাইজার বাগানে আসেনি। এছাড়া কৃষি বিভাগের কাছে কোন পরামর্শ কিংবা সহযোগিতা পায়নি। এই চাষী মনে করেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও পেয়ারা বাগান সৃজনের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করে ও সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা দিলে বাগানের পরিধি বৃদ্ধি বাণিজ্যিক ভাবে পেয়ারা চাষাবাদে বেশ সফলতা অর্জন করতে পারবে। এছাড়া এলাকায় বেকার যুবক ও নারীদের নার্সারি সহ নানা ধরনের ফলজ ও ফলদ বাগান সৃজনে সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহন করলে দেশের বেকারত্ব ঘুচাবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন- তেঁতুলিয়া উপজেলার আবহাওয়া ও উর্বর জমি বিভিন্ন ফসল ও ফল উৎপাদনের উপযোগী। ইতোমধ্যে উপজেলায় বেশ কিছু এলাকায় থাই জাতের পেয়ারা বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। পেয়ারা চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় চাষীরা খন্ড খন্ড জমিতে পেয়ারা বাগান করছে। তবে আতাউরের বাগানের কথা আগে শুনি নাই; সময় করে দেখতে যাব। এই কৃষিবিদের মতে, সরকারিভাবে পেয়ারা চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে সুদ বিহীন ঋণ সুবিধা দিলে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে।

যুগ যুগ বেঁচে থাকুন আশার বাতি ঘরে

শুভ জন্মদিন প্রিয় “মুরুব্বী”

আলো জ্বালাতে সবাই পারে
ইলেক্ট্রিক বোর্ডের নির্দিষ্ট সুইচ অন করে দিলেই আলো জ্বলে উঠলো
কিংবা দিয়াশলাই মেরে বাতি জ্বালানো-
কিন্তু খুব কম সংখ্যক মানুষ আছেন যারা আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করতে পারে,
তারা জানে আলো জ্বলানোর নেপথ্যের কাজ গুলো,
জানে এবং নিপুন হাতে সেই কাজ গুলো করে দেয় বলেই আমরা সহজে সুইচ টিপে আলো জালাতে সক্ষম হই।
আর আপনি হচ্ছেন আলোকরনের সেই নেপথ্যের মানুষ।

অনেক অনেক ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় মুরুব্বী
আমার সালাম ও আন্তরিক শুভেচ্ছা…… যুগ যুগ বেঁচে থাকুন আশার বাতি ঘরে…

চিঠির পত্র ১১

আসলে আমার সবাই চিঠি লেখা ভুলতে বসেছি। তাই আমি ঠিক করেছি আমরা যারা ব্লগে আসি তারা যদি একজন অন্যজনকে চিঠি লিখি তবে তা কেমন হয় !! মানে যে কেউ যদি আমার কাছে চিঠি লেখে (তা হোক কবিতা কিংবা গল্প অথবা সাধারণ বাজারের লিষ্ট বা টাকা চাহিয়া পুত্রের পত্র) আমি তার প্রতি উত্তর দেবো।

যেমন দেয়া হয়েছে। আপনারা যারা চিঠি লিখবেন তারা একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন যেমন, চিঠি -১, চিঠি -২ এই ভাবে। আর আমি উত্তর দেবো পত্র-১, পত্র-২ এই ভাবে। সুন্দর হোক ব্লগিং।

আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে শুরু করছি চিঠির পত্র এর ১১তম পর্ব। এবারের চিঠি নিয়েছি – শাফি উদ্দীন এর লেখা “চিঠি (১)” থেকে এবং আমি তার উত্তর দিতে চেষ্টা করছি।

চিঠি (১)

প্রিয় আলেয়া,
অনেক দিন হয় তোমার খবর থেকে আমি বঞ্চিত। সেই গ্রীষ্মকালীন ছুটি হলো! আশা করি মহান আল্লাহর অশেষ দয়ায় ভালো আছ। এরপর যা বলতে চাই আলেয়া, আমি প্রাণের গোপন গহিন থেকে, ভালোবাসি তোমাকে। কেনো ভালোবাসি তোমাকে তা কী জানো? বিষয়টি আমি খোলাসা করেই বলি, তুমি শোনো। আমি চোখে দেখেছি তোমার আল্লাহ ভীতি, অপূর্ব ও অতুল তোমার চলা-ফেরায় ও ওঠা-বসায় বলিষ্ঠ নীতি। শুধু কী তাই? পোশাকে-আশাকে তোমার যে অতুল পবিত্রতা তা প্রসংশনীয় এবং সর্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য। সব কিছু মিলিয়ে, আমি যার পর নাই মুগ্ধতা নিয়ে আছি তোমার প্রতি। দেখেছি তোমার জ্ঞানদ্বীপ্ত চোখের স্বচ্ছ জ্যোতি। এর পর আরো যা বলতে চাই তা হলো, নিজের আত্মশক্তিকে ও মর্যাদাকে সংযমি রাখতে চাই বিধায়, যতটা সম্ভব নিজেকে তোমার কাছে থেকে আড়াল করে রাখি! এভাবেই তোমাকে কাছে পাওয়ার সদিচ্ছাকে হিসেবের স্বচ্ছ খাতায় পাকা করে রাখি তাও মনে মনে এবং একান্ত সংগোপনে, এমন কি অন্যদেরও চোখের আড়ালে।

আলেয়া, সেদিন তুমি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তোমার বক্তব্যের সময় যখন সূরা ফাতিহার চমৎকার ব্যাখ্যা দিচ্ছিলে এবং নামাজে আল্লাহর সাথে কথপকথনের বিষয়টি বিষদভাবে মনের মাধুরি মিশিয়ে তুলে ধরছিলে, তখন দেখলাম উপস্থিত প্রায় সকল লোকই যেন মহান প্রভুর আসক্তিতে অশ্রুসিক্ত হয়ে কাঁদতে ছিলো! লোকগুলো ভাবছিলো, এ দুনিয়া আর ক’দিনের? এক্কেবারেই ক্ষণস্থায়ী! তাই মানুষ এই দুনিয়ার লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষের কলুষতা বা ক্লেদাক্ততা এবং সম্পদের অলিক প্রত্যাশা দূর করে সম্পদ না পাওয়ার অতৃপ্তি মন থেকে সমুলে মুছে ফেলে পবিত্রতা আনার প্রত্যাশায় মগ্ন ছিলো। এ কারনেই তোমার প্রতি আমার প্রেমের আসক্তি এতটা দৃঢ়-গ্রাঢ়-প্রগাঢ়। এখানেই শেষ নয় আলেয়া, এরপর আরো যা দেখলাম, তুমি জান্নাত-জাহান্নাম নিয়ে যখন বক্তব্য উপস্থাপনা বা অবতারণা করছিলে তখনও লোকগুলো আল্লাহ ভীতি ছাড়া অন্য কিছুই অন্তরে ধারণ বা পোষণ করতে পারে নি! তুমি এত মহৎ গুণের অধিকারী! এর পরও কী বলতে পার যে তোমার ন্যায় অশেষ গুণবতীকে আমি ভালো না বেসে নিজেকে দূরে সরে রাখতে পারি? না পারি না।

প্রিয় আলেয়া, আমি তোমাকে চলার পথে দূর এবং কখনো কখনো খুব কাছে থেকে যতটুকু পরখ করেছি, তাতে দেখেছি তুমি সদা সর্বদা মুখে উচ্চারণে ‘সুবহানাল্লাহী’,‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘লা-ই-লাহা ইল্লাল্লাহু’ বলে মহান আল্লাহর দরবারে সতত একমাত্র তাঁরই প্রসংশা কর, ফলে তোমার মনে তিলমাত্র হতাশা বা নিরাশা নেই। সবচে’ তোমার প্রতি আমার অগাধ-অফুরন্ত ভালোবাসার উৎস স্বরুপ বললে অত্যুক্ত হবে না যে, তুমি যেভাবে আল্লাহর উপর আত্মসমর্পণ কর তা তুলনাহীন ও অনন্য! মহান আল্লাহর উপরেই সম্পূর্ণ ভরসা। দোয়া করি মহান আল্লাহ যেন তোমোকে পূর্ণ হেদায়াত দেন, অন্তরে তাকওয়া আরো বাড়িয়ে দেন এবং বরকতময় জীবন দান করেন।

ইতি শাফি।
________

_MG_7720

আমার উত্তরঃ

আমার প্রাণপ্রিয় সখা,
তুমি আমার ছালাম নিও, আশা করি মহান আল্লাহ তালার অসীম রহমতে তুমি ভালো আছো, আমি প্রতিদিন ৫(পাঁচ) ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে মহান আল্লাহর দরবারে তোমার ভালো কিছুর জন্য দোয়া চাই, যাতে তুমি তোমার পবিত্র মন নিয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারো। আমি জানি তুমি পরকালে গভীর বিশ্বাস করো, তাই তোমার প্রতিদিনের প্রতি নামাজে আমাদের জন্য যে দোয়া করো তাহা মহান আল্লাহতালা ঠিকই শুনতে পান এবং তার অশেষ কৃপায় আমার সবাই ভালো আছি।

তুমি হয়তো জানো না তোমার অগোচরে তোমারই মত আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। শুধু মাত্র তোমাকেই ভালোবাসি বলেই আমি নিজেকে তোমার রূপে গড়তে চেয়েছি, আমার মনে হয় রাব্বুল আলামিন আমার সেই ইচ্ছে পুরোন করেছে, আমি জানি ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম এবং তার প্রতিটি বিষয়ই বিজ্ঞান সম্মত, যদি আমার সেই বিষয় গুলো মেনে চলি তবে সব ধরনের বালা মসিবত থেকে মহান আল্লাহ তালা আমাদের তার রহমতের কিঞ্চিৎ হলেও দান করবেন, আমিন।

আমার প্রতি তোমার যে খেয়াল আমি তা কোন দিন কাউকে এভাবে করতে দেখিনি, আশাকরি আমাদের পরবর্তী জীবনেও তুমি এমন ভাবে আমাকে দেখে রাখবে। অনেকেই মনে করে ইসলাম মানা মানেই নারীদের বাহিরে বের হওয়া বন্ধ কিন্তু আমি তোমার মধ্যে সেই কুসংস্কার কখনো দেখিনি, আমি দেখেছি তুমি ধর্মেও সংস্কার গুলো খুব যত্ন সহকারে মেনে চলো কিন্তু কোন ধরনের কোন গোড়ামী তোমার মধ্যে নেই আর আমি তাই নিজের অবস্থানে থেকে প্রতিটি পবিত্র কাজে নিজেকে নিয়োজিত করি, যা শুধু মাত্র তোমার দোয়াতেই সম্ভব হয়েছে।

তোমাকে অনেক দিন দেখিনা, খুব দেখেতে ইচ্ছা করে। এই আধুনিক যুগে যদিও দূরত্ব গুলোকে খুব কাছে নিয়ে আসতে সুযোগ করে দিয়েছে তারপরও রক্ত মাংসের প্রাণের মানুষটিকে কাছে পাওয়া আর লাইভ চ্যাটিং এক জিনিস নয়।

সেই ছেলে বেলায় মা খালাদের মুখে শুনেছি কখনো মুরুব্বীদের নাম মুখে নিতে নেই। আমি জানিনা এটা সংস্কার না কু-সংস্কার কিন্তু আমি বিষটিকে যত্নের সাথে নিজের মধ্যে লালন করেছিলাম, ভাবতাম যখন আমার কেউ হবে আমিও তাকে কখনো নাম ধরে ডাকবো না। আমি বিশ্বাস করি সম্মান দিলে অবশ্যই তা ফেরত পাওয়া যায়। হয়তো এখনকার যুগে এই বিষয় গুলো অনেকের কাছে অচল পয়সার মত মনে হতে পারে কিন্তু আমি তো জানি তুমি সেই অচল পয়সাকেই এন্টিকস্ (অদ্ভুতদর্শন অলংকার) করে তুলে রাখো যা সচল পয়সার থেকে দামি।

অবশেষে তোমার কথা দিয়েই শেষ করছি তুমি সব সময় আল্লাহর উপর আত্মসমর্পণ করে যে সুখ অনুভব করো তাকে কোন কিছুর সাথে তুলনা করতে পারিনা, মহান আল্লাহর যেন তোমার মনের সকল ইচ্ছা গুলো রঙিন করে সাজিয়ে দেন। আশা করি মহান আল্লাহ তোমাকে পূর্ণ হেদায়াত করবেন, অন্তরে তাকওয়া আরো বাড়িয়ে দেবেন এবং বরকতময় জীবন দান করবেন।

ইতি তোমার

খেয়ালী আলেয়া।

শৈশব বাক্সঃ ৩ অটোগ্রাফঃ

সেলেব্রেটিদের সাথে ফটোগ্রাফ বা অটোগ্রাফ কোনটাতেই কোন কালে কোন আগ্রহ ছিল না। এখনও নেই। নাক উঁচু মেয়েদের এসবে আগ্রহ থাকে না।

বিষয় সেটা না। বিষয় হলো- তখন রীতিমতো সুনীল সমরেশ আর শীর্ষেন্দুর যুগ চলছে। সুনীল বাবু এসেছেন জাতীয় কবিতা উৎসবের অতিথি হিসেবে। এক আপুর তার অটোগ্রাফ চাই-ই চাই। আমাকে সাথে নিয়ে গেলেন। আমি একটু দূরে একটা গাড়ীতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। অটোগ্রাফ ও ফটোগ্রাফ শিকারীদের কাণ্ডটা দেখছি। হঠাৎ লেখক গাড়ীর দিকে এগুতে লাগলেন, বুঝলাম লেখকের গাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। যেমনি সরে যেতে নিয়েছি অমনি শুনতে পেলাম – ওই মেয়েটিকে আসতে দাও। আমি ‘হা’ হয়ে গেলাম এবং ‘হা’ হয়েই তার দিকে এগিয়ে গেলাম। নাম-টাম জিজ্ঞেস করে হাত বাড়ালেন আমি ‘হা’ হয়েই ব্যাগ থেকে একখানা নোট প্যাড তার দিকে বাড়িয়ে দিলাম।

জীবনের একমাত্র ও শেষমাত্র অটোগ্রাফ।

(পুনঃশ্চ জীবনে একটা অটোগ্রাফ নেবার ইচ্ছে ছিল এবং এখনো আছে। শচীন টেন্ডুলকারের।)

চিঠির পত্র ১০

আসলে আমার সবাই চিঠি লেখা ভুলতে বসেছি। তাই আমি ঠিক করেছি আমরা যারা ব্লগে আসি তারা যদি একজন অন্যজনকে চিঠি লিখি তবে তা কেমন হয় !! মানে যে কেউ যদি আমার কাছে চিঠি লেখে (তা হোক কবিতা কিংবা গল্প অথবা সাধারণ বাজারের লিষ্ট বা টাকা চাহিয়া পুত্রের পত্র) আমি তার প্রতি উত্তর দেবো।

যেমন দেয়া হয়েছে। আপনারা যারা চিঠি লিখবেন তারা একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন যেমন, চিঠি -১, চিঠি -২ এই ভাবে। আর আমি উত্তর দেবো পত্র-১, পত্র-২ এই ভাবে। সুন্দর হোক ব্লগিং।

আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে শুরু করছি চিঠির পত্র এর ১০ম পর্ব। এবারের চিঠি নিয়েছি – দাউদুল ইসলাম এর লেখা “আজকের এই বিকেল… এই সন্ধ্যা… উৎসর্গ করলাম তোমার জন্য … ” থেকে এবং আমি তার উত্তর দিতে চেষ্টা করছি।

চিঠি

প্রিয়তমা……
আমার প্রতিটি বিকেলের মত আজো পশ্চিমা আকাশ লালিমায় ছেয়ে আছে, খরস্রোতা নদীটি হা করে আছে অস্তমিত সূর্যকে গিলে নিতে, আয়েশি ভঙ্গিতে পাখিদের নীড়ে ফেরার আয়োজন কিংবা বাতাসে কুয়াশার ধূম্র মিলেমিশে প্রকৃতিতে ফেলছে শান্ত অবয়ব…এই সবই ঠিক আছে, কেবল একটাই ব্যতিক্রম আজ আমার বুকের অন্দর মহলে চলছে অসম তাণ্ডব লীলা।

হৃদপিণ্ডের দপ দপ বেড়েই চলেছে; আমি জানি এসব ক্ষয় অবক্ষয়ের গল্পে তোমার মন বিচলিত হবে, অস্থির হবে, জানি শিকল বাঁধা হরিণীর মতন তুমি ছটফট করবে। তবু তোমাকে জানাতে হবে … সহস্র মন খারাপ রাত্রির নিঃসঙ্গ দহন সয়ে সয়ে আমি দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছিলাম জীবন। কারণ দহন তাপে তোমার উষ্ণতা খুঁজে পাই;

বিনিদ্র যন্ত্রণায় আমি সয়ে গেছি কারণ যন্ত্রণার অভ্যন্তরে তোমার সহিষ্ণু প্রেম অনুভব করি। পোড়া মাটির গন্ধে আমার অভিযোগ নাই; কারণ মাটি পুড়ে আমি নির্মাণ করি তোমারই প্রতিমা……তুমি জানতে আমি যেই ভাবেই হোক বেঁচে রবো, যেমনই হোক হার না মানার মানুষ আমি।

তুমি জানতে আঘাতের ভয়ে আমি পেছনে তাকাবো না, কটাক্ষের মুখে আমি বিব্রত হবো না! আর জানতে যে প্রলয়ের তাণ্ডবে সুনামির সাথে যদি তলিয়েও যাই তবে যেমন করেই হোক আমি উঠে দাঁড়াবো………
পাবোনা জেনেও
ছোঁবোনা জেনেও
আমি বার বার হাত বাড়াবো তোমারই পাণে…
আর-
এসব জানতেই বলেই তুমি মুক্ত বিহঙ্গীর মতো উড়ে বেড়ানোর নেশায় বুদ হয়ে গেলে। বৃক্ষ হতে বৃক্ষে, প্রান্ত হতে প্রান্তরে উড়ে বেড়ানোর নেশায় ডুবে রইলে…
শুধু জানতে না যে নেশায় ডুবছো তার থেকে উঠে আসার কোন রাস্তা নাই, ফেরার কোন পথ নাই।

অথচ আমি নিজেকে সাজাতেই ধরেছিলাম তোমার হাত। অসহায় ডানা ভাঙ্গা পাখির মতো তোমার চোখে চোখ রেখেছিলাম সুন্দর দিক নির্দেশনার আশায়। সহস্র শব্দের আশ্রম ভেবে নিজের সমস্ত কবিতা বুকের আগল থেকে তুলে তোমার হাতে দিয়েছিলাম…।

অথচ মানুষ হবো বলে সে দিন আমি কবি হতে চাইনি, আমি চাইনি যে বহুদূর উড়ে এসে প্রজাপতিরা আমার আঙ্গুলের ডগায় আশ্রয় নিক, তুমিই আমাকে কবিত্ব দিলে, প্রজাপতির আশ্রমের ডাল বানালে!

তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নাই।
যে দিন ঝর্না স্নানে সিক্ত হতে হতে নিজের বুকের কপাট উন্মুক্ত করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলিঙ্গনে আমাকে নিবিষ্ট করেছিলে, আমি সে দিনই পরিপূর্ণ জীবন পেলাম। বসন্তের স্ফুটিত তাবৎ পুষ্প গুলোয় বিলিয়ে দিয়েছিলাম আজন্ম ভালোবাসা। তোমার অমর্ত্য চুম্বনে পেয়েছিলাম পরিতৃপ্ত জীবনের স্বাদ, দুনিয়ার মায়া মমতা, কোমলতা …আর পেয়েছিলাম এক অনবদ্য স্পন্দন !

তুমি ফিরও বা না ফিরো
আজকের এই বিকেল এই সন্ধ্যা তোমার জন্য উৎসর্গ করলাম!
আর অনন্তের আক্ষেপে ছুঁড়ে দিলাম জ্বলন্ত দিয়াশলাই……

ভালো থেকো।
ইতি
– তোমারই আমি।
_______________

096444_n

আমার উত্তরঃ

শুধুমাত্র ছোট একটা জ্বলন্ত দিয়াশলাই কাঠি দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া যায় তাবত পৃথিবী সুখে গড়া সংসার; জীবনের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্ষয় অবক্ষয়ের মাঝে হৃদয় পোড়ার ঘ্রাণ ক’জনেই বা খোঁজে।

গাঢ় চৈত্রের দুপুরে ঝিঁঝিঁ পোকার ঝিম ধরা ডাকে ক্লান্ত ভাতঘুম চোখে দরজার কলিং বাজলো এই সময়টায় সাধারণত কেউ আসে না, ইচ্ছা অনিচ্ছার দোলাচলে দরজা খুলে দাঁড়াতেই ডাকপিয়ন ধরিয়ে দিলো খামে ভরা তোমার চিঠি। এক অজানা শিহরণে ছুঁয়ে গেলো কিছু ভালোলাগা ভালোবাসা। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম অদ্ভুত সুন্দর তোমার গোটাগোটা হাতে লেখা আমার ঠিকানাটার দিকে।

খাম খুলে তাড়াহুড়া করে সবাই যে ভাবে সব চিঠি পরে আমি তেমন করে কোন দিন তোমার চিঠি পরিনি, আজো পরবো না; হয়তো কোন ‍দিনই পড়বো না, এটা নিয়ে তোমার লেখা দশটি চিঠি হলো, প্রথম চিঠিটা বাদে আর কোন চিঠি কোন দিন খুলে পরিনি মানে পড়া হয়নি। নিশ্চয়ই তোমার প্রশ্ন জাগছে কেন- কি কারন ! সত্যি করে বলি আমি তোমার চিঠি পরলে নিজেকে গুছিয়ে গুটিয়ে রাখতে পারতাম না, কেউ না জানুক আমি জানি কি অসাধারন তোমার চিঠির উপস্থাপন, কি মায়াবী করে তুমি লিখতে পারো।

আমি জানি আমার প্রতি তুমি কোনদিন কোন অভিযোগের অঙ্গুল তুলবে না, তুলবে না কারন তুমি আমাকে ভালোবাসো, আর তুলেই বা কি হবে আমি তো ফিরে যেতে পারবো না সেই অমর্ত্য মৃত চুম্বনে; যেখানে সব স্বপ্নের সমাধি পেরিয়ে সব শব গুলো বসে থাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলিঙ্গনে নিজেকে নিবিষ্ট করতে।

জীবনের জলপ্রপাতে যে স্ফটিক জল দেখতে পাই ভুল করে সেই কবিতার ব্যাখ্যা নিজের দিকে দাঁড় করিয়ে কবিকে ভালোবাসা যায় কিন্তু পাখির নীড় ঝড় বাতাসের বিপরিতে কতটা অসহায় তা যুগল পাখি মাত্রই জানে। আমার প্রজাপতির জীবনে কারো হাতের তালুতে ঝুলেও বা কতদিন বাঁচতে পারি।

আমি জানি শত বিপদ মোকাবেলা করেও তুমি তোমার লক্ষ্যে অবিচল থাকবে, আমাকে পেতে তোমার এই বিনিদ্র যন্ত্রণায় অভ্যন্তরে সহিষ্ণু প্রেম আমি গভীর ভাবে অনুভব করি অথচ চোখ মেলে তাকাতে পারি না, হাতকে প্রসারিত করতে পারি না, মুখে হাসি নিয়ে তোমার দিকে ছুটে যেতে পারি না।

প্রিয়তম আমার; যে ভালোবাসার ছোঁয়ায় তুমি আমাকে রাঙিয়ে দিয়েছিলে, যে ভালোবাসার আলিঙ্গনে শীতল হিমালয় থেকে জলধারা বয়েছিলো, যে উষ্ণ চুম্বনে জীবনের পরিপূর্ণ স্বাধ নিয়ে আমি দূর থেকে দূরে হারিয়ে যাচ্ছি, সেই ধরা ছোঁয়ার বাইরের ভালোবাসায় তোমাকে যা দিকে পেরেছি তা কোন দিন আর কাউকে দেয়া হবে না।

তুমি অপেক্ষার প্রহর গুলো দীর্ঘ করোনা
তুমি আশার করতলে চোখে জল এনো না
তুমি নীরব ভাষার আহবানে খুঁজো না আমায়
যে পথ চলেছে তোমার সন্ধ্যা তারার পথে
সেখানে নিরব বিষণ্নতায় আমি প্রহর গুনি
অনাহুতা জীবনের।

ভালো থেকো নিজের মত করে
এক জীবনে যতটা ভালো থাকা যায়।
আমি তোমারি ?
খেয়ালী।
________

চিঠির পত্র ৯

shutterstock_DD 9

আসলে আমার সবাই চিঠি লেখা ভুলতে বসেছি। তাই আমি ঠিক করেছি আমরা যারা ব্লগে আসি তারা যদি একজন অন্যজনকে চিঠি লিখি তবে তা কেমন হয় !! মানে যে কেউ যদি আমার কাছে চিঠি লেখে (তা হোক কবিতা কিংবা গল্প অথবা সাধারণ বাজারের লিষ্ট বা টাকা চাহিয়া পুত্রের পত্র) আমি তার প্রতি উত্তর দেবো।

যেমন দেয়া হয়েছে। আপনারা যারা চিঠি লিখবেন তারা একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন যেমন, চিঠি -১, চিঠি -২ এই ভাবে। আর আমি উত্তর দেবো পত্র-১, পত্র-২ এই ভাবে। সুন্দর হোক ব্লগিং।

আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে শুরু করছি চিঠির পত্র এর ৯ম পর্ব। এবারের চিঠি নিয়েছি – মামুনুর রশিদ এর লেখা “মৃত ব্যাক্তির চিঠি” থেকে এবং আমি তার উত্তর দিতে চেষ্টা করছি।

চিঠি

প্রিয় পৃথিবী,

আমার একটু অভিশাপ নিস! যেহেতু ভালবাসতে শিখি নি এখনো। তাই মন্দোবাসার গল্পই শুধু শোনাতে পারি। প্রকৃতিতে এখন বসন্তকাল। চারদিকে কত রঙের ফুল ফুটছে, মৌমাছি দল মধু পান করে উড়ছে… কীভাবে মৈথুন করে করে গান গাইছে বসন্তের! কিন্তু আমি অনুভূতিহীন। এসব মিছিলে যাই নি কোনদিন। আমার আকাশে মেঘগুলো তৃষ্ণার্ত হতে হতে কখন ফুরিয়ে গেছে বাতাসে। টের পাই নি। আফসোস! কখনো বৃষ্টি হয়ে তোর মাটি ছুঁতে পারি নি। অথচ তুই ভীষণ বৃষ্টিপ্রেমী! তোর আঙিনায় বুনো ঘাসগুলো কারো বৃষ্টিতে ভিজে ওঠে কি না— এলো চুলগুলো দোলনায় দোলে কি না— নির্জন কোন বৃক্ষের ডালে। এখনো তুই হাসতে পারিস কি না! কাঁদতে শিখে গেছিস কি না! এসব প্রশ্ন করবো না— যদি পাপ হয়, যদি তোর আঁচড় লাগে! একদিন সমস্ত পাপ আমার জন্য রেখে দিও ঈশ্বর। যেহেতু আমার কোন ধর্ম নেই! যখন তোর নিষ্পাপ হাত দু’টি ছুঁয়েছিলাম, মনে হলো প্রথমবার মৃত্যু এসে ছুঁয়ে গেল। এতো সুখের সে মরণ! তারপর থেকে কত লক্ষ বার যে মরেছি গোপনে— হিসেব নেই। মৃতব্যাক্তির প্রেমে কেউ কি পড়ে?

প্রিয় পৃথিবী আমার! কিছুই দেখি না চোখে, শুধু ভেসে আসে লক্ষ কোটি গান— কীভাবে একই সুরে তুই গেয়ে চলেছিস বসন্তের সব গান! তবু ঝুলে থাকি সীমাহীন শূন্যতায় কীসব রোগে! মৃত্যুর পর কোথাও সমাধি হয় নি আমার। দেবদাসের জন্য কেউ কেঁদেছিল কি না? হ্যাঁ, পারু কেঁদেছিল। কিন্তু আমার জন্য কেউ না কাঁদে পাহাড়ি ঝর্ণার মতো। কেউ কোন প্রশ্ন না রেখে নির্জন পথের মতো চলে যাওয়া যাক। অথচ এখন বসন্ত কাল। তোর জন্য অনন্ত আগুন চাই… শীতকালে আমি ঝরে গেছি। হলুদ পাতার খোঁজ কেউ কি রাখে? তবু তোর নুপূরের শব্দে আমার বুকে নকশা জেগে ওঠে কিসের? জানি না, মর্মর করে ভেঙে যাব কিন্তু টের পাবে না কেউ। ভূতের ভয় আছে তোর নিশ্চয়? আমি এখন একটা ভয়ংকর ভূত। বলতে পারিস ভূতের রাজা! সুযোগ পেলে তোর ঘাড়ে ঠিক চেপে বসবো!

কীসব আবোল-তাবোল বকে চলেছি! আসলে এগুলোর এক চন্দ্রবিন্দুও সত্যি না। তুই তো জানিস, আমি কতটা মিথ্যেবাদী! তবু ঘোরের ভেতর অম্লান থাকে ক্রীতদাসের হাসি। শেষ বলে কিছু নেই, শুরু হোক…

ইতি
কেউ নই।

আমার উত্তরঃ

জীবনের অভিশাপ কখনো কখনো বয়ে আনে সু-বাতাস; যে বাতাসে ভালোবাসতে না পারা লোকদেরও শিহরিত করে।

আমাকে যারা বসন্ত উৎসবে সাজিয়েছে আজ, কালকে তারাই বিসর্জিত করবে বৈশাখী ঝড়ে, জীবন বদলে কোন সুখ নেই রে তা তুমি মানুষ থেকে মৃত হও আর আমি বসন্ত থেকে শরৎ।যে শরতে মৌমাছি দল মধু পান করে উড়ছে সেই মৌমাছিই বুকে হুল ফুটাবে জৈষ্ঠ মসের গরমে, আমি পৃথিবী আমার বুকের মাঝে যে রক্ত বৃষ্টি ঝড়ে পরে তাও আমার.. শেষের কবিতার শেষে…

”তোমাকে যা দিয়েছিনু সে তোমারই দান গ্রহন করেছো যত ঋণী তত করেছো আমায়”
আমি পৃথিবী বলেই নিশ্চুপ মৌনতায় দেখতে পাই’ বোবা কান্নায় ভিজে যাওয়া চোখের ঘাসফুল, কষ্টের খুশিতে হাসতে থাকা হাসনুহেনা, বন্ধনহীন জীবনধারায় ঝরনার ছুটে চলা, গন্তব্যহীন অচল মুদ্রার মত পাহাড়ের স্থির কষ্ট নিয়ে জেগে থাকা কিংবা বিহ্বল খুশিতে যে ভালোবাসা ছুঁয়ে দিয়েছিলো তোমাকে, সেই ভালোবাসার গভীরে জমে থাকা পাপবোধ। কালের নিরব স্বাক্ষী নিয়ে আমার মত নির্ঘুম কেউ জেগে থাকে না। আমি হয়তো তোমার মত মৃত নই কিন্তু জীবিত কি আছি? তুমি তবু একটা পর্যায়ে চলে গেছো আর আমি জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে তোমাদের ক্ষতগুলো দেখে যাই অপারগতার সনাতনী ধর্ম ছুঁয়ে; যে ছোঁয়ায় জীবন ফিরে পায় সেই কুসুম কুসুম প্রেম আমি দিতে পারিনি কোনদিন কাউকে, নিতে পারিনি প্রেমিক পুরুষের প্রথম ছোঁয়ায় যে কম্পিত শিহরণ জাগে সেই অনুভুতি। ভুতের ভুতনি বা প্রেত্নি হয়তো একদিন হবে পৃথিবীর কে কি হবে ….

তোমার মত আবোল তাবোল আমিও লিখে রেখে গেলাম তোমাদের ভুত সমাজের কাছে; পূর্ণ বা অপূর্ণ বলে যে কথা দিয়ে তোমরা মানব বা মৃত মানব হয়ে সুখ বা দুঃখ খুঁজে পাও তাতে তোমাদের অনুভূতীর প্রকাশ হয়… আমি অনুভূতিহীন অনুগত দাস এই জাগতিক সংসারে… এ এক সত্যি কথা শেষ বলে কিছু নেই, শুরু হোক… শুরু হোক নব রুপে নতুন দিনের পথ…

ভালো থাকিস নিজের মত করে
এক জীবনে যতটা ভালো থাকা যায়।
আমি
খেয়ালী…. পৃথিবী।

চিঠির পত্র ৮

958_xlarge

আসলে আমার সবাই চিঠি লেখা ভুলতে বসেছি। তাই আমি ঠিক করেছি আমরা যারা ব্লগে আসি তারা যদি একজন অন্যজনকে চিঠি লিখি তবে তা কেমন হয় !! মানে যে কেউ যদি আমার কাছে চিঠি লেখে (তা হোক কবিতা কিংবা গল্প অথবা সাধারণ বাজারের লিষ্ট বা টাকা চাহিয়া পুত্রের পত্র) আমি তার প্রতি উত্তর দেবো।

যেমন দেয়া হয়েছে। আপনারা যারা চিঠি লিখবেন তারা একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন যেমন, চিঠি -১, চিঠি -২ এই ভাবে। আর আমি উত্তর দেবো পত্র-১, পত্র-২ এই ভাবে। সুন্দর হোক ব্লগিং।

আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে শুরু করছি চিঠির পত্র এর ৮ম পর্ব। এবারের চিঠি নিয়েছি – আনু আনোয়ার এর লেখা “শূণ্য বিষণ্ণ” থেকে এবং আমি তার উত্তর দিতে চেষ্টা করছি।

শূণ্য বিষণ্ণ চিঠি।

বেলা শেষে উদাস পথিক ভাবে,
সে যেন কোন অনেক দূরে যাবে –
উদাস পথিক ভাবে।

‘ঘরে এস’ সন্ধ্যা সবায় ডাকে,
‘নয় তোরে নয়’ বলে একা তাকে;
পথের পথিক পথেই বসে থাকে,

গত কালের সন্ধ্যাটা আমার কিছুতেই কাটছিল না। কোন সন্ধ্যাই আমার কাটে না। প্রতিটি সন্ধ্যার গোধূলি বেলা আমার কাছে কেমন এক অজানা অক্ষরের বেদনা নিয়ে হাজির হয়। রাস্তার সোডিয়াম বাতির সাথে সাথে যখন সমস্ত বাড়ি ঘর আর বহুতল বিপনিবিতান গুলো রঙ-বেরঙের আলোয় ঝলমল করে উঠে আর শহরের কাক গুলো যখন কা কা করতে করতে দলবেঁধে ঘরে ফিরে আমার শুধু মনে হয় আমার কোথাও যাবার নেই। এতো আলো এত কথার ঝনাৎকারের মাঝে আমি দূর দিগন্তে দাঁড়িয়ে বৃক্ষ এক। কোন আড্ডা কিংবা রেস্তোঁরায় যাই না। একা একা এদিক সেদিক হেঁটে হেঁটে আর কাটছিল না সময়গুলো। কাল সন্ধ্যার পরেই তাই ট্রেনে চেপে বসলাম। সারারাত আমার একটুও ঘুম হয় নি। পাশের যাত্রীটি মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যে আমার গায়ের উপর এসে পড়ছিল। সারারাত নির্ঘুম আমি যেন একটু ক্লান্ত হইনি। বরং বিশ্বাস কর, বহুদিন পর আমি যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। আমার মত নিতান্ত নির্জীব ঘরমুখো একটা জীবের পক্ষে এ যেন এক বিরাট ঘটনা। মনে আছে একবার তুমি আমাকে বলেছিলে,’’ তুমি কি কোন দিন আমাকে দেখতে আসবে!” আমার মত উদাসীন উজবুকের পক্ষে এ যে অভাবনীয় সে তুমিও টের পেয়েছিলে। অথচ দেখ সেই উজবুকই গতকাল সারারাত না ঘুমিয়ে তোমার দেশে হাজির হয়েছে। আমরা যখন ক্লাস শেষে একসাথে বাসায় ফিরতাম তুমি অনবরত কথা বলতে। তোমার এত গল্প ছিল আর এত সুন্দর তোমার বলা আমি কেবল শুনেই যেতাম। তাছাড়া এমনিতেই কথা বলি কম। গুছিয়ে কথা বলা শিখিনি কোন দিন। তাই তোমার কথাগুলো আমার কাছে যেন পুষ্প হয়ে ফুটত।

কাল যখন আর কিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না, চেপে বসেছি মেইল ট্রেনে। মনে হচ্ছিল একদিন, শুধু এক সন্ধ্যায় যদি মুখোমুখি বসি। দরকার নেই নদীর ধার, কাশবন। দিগন্ত জোড়া কোন মাঠ, বটবৃক্ষ এসবও দরকার নেই কিছুতেই। শুধু একসন্ধ্যা, মুখোমুখি কোথাও। ফুটপাত, টং দোকান, আটপৌরে যেকোন জায়গায়।

সমস্ত বন বাদাড়, ধানক্ষেত পাড়ি দিয়ে সকাল বেলা নেমে সোজা তোমার ঠিকানায়। এসে দেখি আমার প্যারাডাইস লস্ট। তুমি নেই আর আগের ঠিকানায়।

আমার উত্তরঃ

সন্ধ্যা শেষে সবাই যখন ঘরে;
আঁধার কালোয় ভুবন গেছে ছেয়ে,
একাকি চাঁদ একলা পথিক খোঁজে
পথের পথিক রাতের রাতার সাথী;
সবাই কি আর ভিন্ন জগত বোঝে:
একলা জগত একলা মানুষ
একলা চলা গাঁয়
একলা রাতে চাঁদের আলোয়
নিবির হতে চায়।

প্রিয় আমার,
কেউই একই ঠিকানায় কখনো থাকে না, প্রয়োজনে কিংবা প্রয়োজন ছাড়াও মানুষ ঠিকানা বদল কারে, ভুল ঠিকানায় কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় চলে যায় তার দ্বায় কার. পথিকের পথের না আটপৌড়ে শাড়ি চুড়ির।

স্বাধীনতার অপর নাম গন্ডির মধ্যে অবাধ চলাফেরা, মন চাইলেই তুমি সময় বদলের জন্য ঝুলে যেতে পারো আপ কিংবা ডাউন ট্রেনে, ভাবতে পারো স্বাভাবিকতার বাইরে ফুটপাতে ঝালমুড়ি, ফুচকা, চটপটি সেই সৌভাগ্য কিন্তু সবার হয় না; এই দিক দিয়েও কিন্তু তুমি খুব ভাগ্যবান।

সেই গানটা মনে পরে পরে গেল
আমি আগের ঠিকানায় আছি সময় করে এসো এক দিন দুজনে কিছুক্ষণ বসি মুখোমুখি… শুনেছো কি না শুনলে শুনে দেখ ভালো লাগবে। গানের কথাটা এই জন্য বলছি গানটি একটি স্বপ্ন মনে হয় আমার কাছে ; যা হবার নয় তাই নিয়ে স্বপ্ন…

আমি পার্বতী নই আর তুমি দেবদাস; তবে আমি দেবদাসী হয়ে দেবতার খোঁজে আজো আমি ডালাতে ফুল তুলে মন্দিরে মন্দিরে হেঁটে চলি খালি পায়ে; শক্ত বা নরম মাটি কিংবা পাথর আমার অনুভূতিতে যে আঘাত করে তার চেয়ে অনেক আঘাত পাই পিছন ফিরে তাকালে সময় কিংবা তোমার স্মৃতি রেখায়। গুছিয়ে কথা না পারার জন্য যেটুকু কথা কম বলতে সেই সময়ের না বলা কথার ওজন গুলো আজো বয়ে চলি পথ থেকে পথে।

তোমার মত আমারও সব সন্ধ্যাই কাটে নির্মল একা এক প্রার্থনার ঘরে তোমার মতই আমারো প্রতিটি সন্ধ্যার গোধূলি বেলা কেমন এক অজানা অক্ষরের বেদনা নিয়ে হাজির হয়, পার্থক্য শুধু তুমি খোলা আকাশে আর আমি মৃত্যু নিয়ে জেগে উঠি বন্ধীশালায়।

তোমাকে জীবনানন্দ দাশের একটি কবিতার কিছু লাইনি লিখে শেষ করছি….

”আমরা হেঁটেছি যারা নির্জন খড়ের মাঠে পউষ সন্ধ্যায়,
দেখেছি মাঠের পারে নরম নদীর নারী ছড়াতেছে ফুল
কুয়াশার; কবেকার পাড়াগাঁর মেয়েদের মতো যেন হায়
তারা সব; আমরা দেখেছি যারা অন্ধকারে আকন্দ ধুন্দুল
জোনাকিতে ভ’রে গেছে; যে-মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ–কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে; ”
______________________________

ভালো থেকো
এক জীবনে যতটা ভালো থাকা যায়
খেয়ালী।

চিঠির পত্র ৭

আসলে আমার সবাই চিঠি লেখা ভুলতে বসেছি। তাই আমি ঠিক করেছি আমরা যারা ব্লগে আসি তারা যদি একজন অন্যজনকে চিঠি লিখি তবে তা কেমন হয় !! মানে যে কেউ যদি আমার কাছে চিঠি লেখে (তা হোক কবিতা কিংবা গল্প অথবা সাধারণ বাজারের লিষ্ট বা টাকা চাহিয়া পুত্রের পত্র) আমি তার প্রতি উত্তর দেবো।

যেমন দেয়া হয়েছে। আপনারা যারা চিঠি লিখবেন তারা একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন যেমন, চিঠি -১, চিঠি -২ এই ভাবে। আর আমি উত্তর দেবো পত্র-১, পত্র-২ এই ভাবে। সুন্দর হোক ব্লগিং।

আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে শুরু করছি চিঠির পত্র এর ৭ম পর্ব। এবারের চিঠি নিয়েছি – ছন্দ হিন্দোল‘র লেখা ”ছেঁড়া পাতা“ থেকে এবং আমি তার উত্তর দিতে চেষ্টা করছি।

ছেঁড়া পাতা

শ্রাবণের মেঘে ঢাকা আকাশ বর্ষণ মুখর
রিম ঝিম বরষে।
ফুলে ফুলে ঢাকা হাস্নু হেনার ঝাড়
সুবাসিত আন্দোলিত হরষে।
মনে পড়ে ফেলে আসা
সেই সব দিন।
বয়সের ভারে ক্ষয়িষ্ণু, ম্রিয়মাণ,
দৃষ্টি হয়েছে ক্ষীণ।
তবুও মনে পড়ে যেন
সেদিনের স্মৃতি।
মাটি ও মায়ের সাথে
বিজড়িত বিস্তৃতি।
বৃষ্টিতে ভিজে মাছ ধরা,
বন বাদাড়ে ঘোরা, গাছে চড়া।
বন্ধুদের সাথে শাপলা তোলা
সাঁতার কাটা নৌকা চড়া।
পাখির বাসায় হানা দেওয়া,
ফড়িং প্রজাপতির পেছনে ছোটা।
ছেড়া ছেড়া স্মৃতি গুলো এখনো জ্বলজ্বলে
যেনো রঙ্গিন পদ্ম ফোটা।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে
অনেক কিছুই আজ বিলীন।
মনে হয় স্মৃতির পাতা মুছে যাবে
হয়ে যাবে লীন।
আজ বড় সাধ হয় নতুনের সাথে ভাগ করে নেই
আমার স্মৃতি কথা।
বুক ভরা আশা নিয়ে ছেড়ে দিলাম
আমার ছেঁড়া পাতা।
এটাই আমার নতুনের কাছে লিখা চিঠি।
উত্তর পেলে খুশি হব।

যদিও গতানুগতিক চিঠি থেকে ভিন্ন …
শুভেচ্ছা ও শুভকামনায়
ছন্দ হিন্দোল
________

venus17

আমার উত্তরঃ

প্রিয় সিনিয়র
ছন্দ হিন্দোল।

আজ আকাশে তারার মেলা
নিয়ন জ্বলা রাত
ফুলবাগানে এক কোনেতে
অষ্টাদশীর চাঁদ।
ছেড়া পাতায় জুড়ে দিলাম ভালোবাসার নাম
স্মৃতি তোমার ভাগাভাগি; আমাদের সম্মান।
স্মৃতিরা হয় ইতিহাস আমাদের বিশ্বাস
তাকে নিয়ে এগিয়ে চলা আমাদের আবাস।
বনবাদাড় মন ঘুরে যায় পাইনা সেই স্বাধ বুকে
আমারা থাকি বন্ধিশালায় তোমরা ছিলে সুখে।
নৌকা চলা, মাছ ধরা বা ঘুড়ি ওড়ানোর দিন
মোদের কাছে স্বপ্ন সে সব যতই হই নবীন।
তোমার স্মৃতি খাচ্ছে পুড়ে ভাবছো বসে তাই
আমরা নবীন সে সব দিনের গল্প শুনে যাই।
শুধুই ভাবি এখন কেনো আসে না সেই ক্ষন
বন্ধ ঘরের চিলেকোঠায় ডুকরে ওঠে মন।
মায়ের সাথেই থাকি মিশে ভালোবাসা আর ভয়ে
মাটির ঘ্রান পাইনা কোন যাচ্ছে জীবন ক্ষয়ে।

ইতি
আমারা নতুন..
খেয়ালী…
__________

চিঠির পত্র ৬

আসলে আমার সবাই চিঠি লেখা ভুলতে বসেছি। তাই আমি ঠিক করেছি আমরা যারা ব্লগে আসি তারা যদি একজন অন্যজনকে চিঠি লিখি তবে তা কেমন হয় !! মানে যে কেউ যদি আমার কাছে চিঠি লেখে (তা হোক কবিতা কিংবা গল্প অথবা সাধারণ বাজারের লিষ্ট বা টাকা চাহিয়া পুত্রের পত্র) আমি তার প্রতি উত্তর দেবো।

যেমন দেয়া হয়েছে। আপনারা যারা চিঠি লিখবেন তারা একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন যেমন, চিঠি -১, চিঠি -২ এই ভাবে। আর আমি উত্তর দেবো পত্র-১, পত্র-২ এই ভাবে। সুন্দর হোক ব্লগিং।

আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে শুরু করছি চিঠির পত্র এর ৬ষ্ট পর্ব। আজকের চিঠি নিয়েছি – দীলখুশ মিঞা‘র লেখা থেকে এবং আমি তার উত্তর দিতে চেষ্টা করছি।

চিঠি

দীলখুশ মিঞার পক্ষ থেকে লাল গোলাপের শুভেচ্ছা।
হাই হ্যালো।
পর সমাচার এই যে, ইহা আমার দ্বিতীয় চিঠি, এর আগে আমার পাঠানো চিঠির কোন উত্তর পাই নি। যা হোক আবারও লিখলাম, হু এবারও যদি চিঠির উত্তর না দেন তবে মনে বড় দুঃখ পাবো। আর সেই দুঃখে আপনাদের এই চিঠি চলাচালি পোষ্টে এসে কড়া ভাষায় চিঠি লিখেই যাব।

আপনাদের এই পোষ্টে আমি জানিয়ে যাই, একটি বিখ্যাত লেখার ভূমিকা। আপনাকে জানাতে হবে লেখাটি কার এবং কেন আমি এ ধরনের উদ্যেগে এমন চিঠি আপনাদের লিখলাম। ভূমিকাটি নিম্নরূপ।

“এই রচনাটির একটু ভূমিকা আবশ্যক। ১৯৩৬ সালে একটি বাঙ্গালী যুবক লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়িতে যায়। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে গাওয়ার স্ট্রিটের ভারতীয় আবাসটি জার্মান বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত হইলে আত্মীয়বর্গের নির্বন্ধাতিশয্যে যুবকটি ভারতবর্ষে ফিরিয়া আসে। স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রীপসের আলোচনার প্রাক্কালে বিলাতের একটি প্রাদেশিক পত্রিকা তাহাকে তাহাদের নিজস্ব সংবাদদাতা নিযুক্ত করিয়া দিল্লীতে পাঠান। লন্ডনে অবস্থানকালে এই পত্রিকায় সে মাঝে মাঝে প্রবন্ধ লিখিত।

দিল্লীতে যাইয়া যুবকটি তাহার এক বান্ধবীকে কতগুলো পত্র লেখে। বর্তমান রচনাটি সেই পত্রগুলি হইতে সংকলিত …
এই স্বল্প পরিসর পত্র রচনার মধ্যে লেখকের যে সাহিত্যিক প্রতিভার আভাস আছে, হয়তো উত্তরকালে বিস্তৃত সাহিত্য চর্চার মধ্যে একদা তাহা যথার্থ পরিণতি লাভ করিতে পারিত। গভীর পরিতাপের বিষয়, কিছুকাল পূর্বে এক আকস্মিক দুর্ঘটনায় তার অকালমৃত্যু সেই সম্ভাবনার উপরে নিশ্চিত যবনিকা টানিয়া দিয়াছে।”
এই বইয়ের একটি অংশও দিলাম যাতে চিঠি উত্তর দিতে আপনার সুবিধা হয়।

“পুরুষের জীবনে আজ গৃহ ও গৃহিনীর প্রয়োজন সামান্যই। তার খাওয়ার জন্য আছে রেস্তোরা, শোয়ার জন্য হোটেল, রোগে পরিচর্যার জন্য হাসপাতাল ও নার্স। সন্তান সন্ততিদের লালন পালন ও শিক্ষার জন্য স্ত্রীর যে অপরিহার্যতা ছিল, বোর্ডিং স্কুল ও চিলড্রেন্স হোমের উদ্ভব হয়ে তারও সমাধা হয়েছে। তাই স্ত্রীর প্রভাব ক্রমশঃ সঙ্কুচিত হয়ে ঠেকেছে সাহচর্যে। সে পত্নীর চাইতে বেশিটা বান্ধবী। সে কর্ত্রীও নয়, ধাত্রীও নয়, -সে সহচরী।

নারীর পক্ষেও স্বামীর সম্পর্ক এখন পূর্বের ন্যায় ব্যাপক নয়। একদিন স্বামীর প্রয়োজন মুখ্যতঃ ছিল ভরণ, পোষণ ও রক্ষণাবেক্ষনের। কিন্তু এ যুগের স্ত্রীরা একান্তভাবে স্বামী-উপজীবিনী নয়। দরকার হলে তারা আপিসে খেটে টাকা আনতে পারে।
তাই স্বামীর গুরুত্ব এখন প্রধানতঃ কর্তারুপে নয়, বন্ধুরুপে।”

আপনার ভালো হোক।
______________

আমার উত্তরঃ

FB_IMG_1484908836924

দীলখুশ মিঞা আপকা খুশ বচনে আমি মুগ্ধ ।

আমি প্রথমেই আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি এই জন্য যে, আমি তার প্রথম চিঠিটির উত্তর দিতে পারিনি, যা আমার উচিৎ হয়নি সত্যি বলতে কি আমার পথচলাটা অন্য সবার মত নয়, সময় করে সময় বের করা আমার খুব কষ্টের সেই কষ্টটা যত না মনের তার থেকে অধিক অর্থে অর্থের। আমি সহজ ভাবেই আমার সমস্যা সবার সামনে তুলে ধরি বা পরিষ্কার করি, যা আমি করিনি বা পারিনি তার দায় আমার, কিন্তু বিব্রত হইনা এটা ভেবে “আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ। তাতে আছে গতির আনন্দ, নেই যতির আয়েশ।”

প্রতিটি মানুষের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে; আমারো আছে সেই দিক দিয়ে বিচার করলে অনেক ভাগ্যবান থাকেন, যারা সকল কিছু জানেন কিংবা বোঝেন এবং বুঝেও টোকা দিয়ে পরখ করতে চান জীবনের কলসীতে কার কতটা জল বহন করার ক্ষমতা আছে। আসলে “প্রেম ভালো, বিদ্বেষ দুঃখের কিন্তু সবচেয়ে মারাত্মক ইন্ডিফারেন্স- যে কাছেও টানে না- দূরেও ঠেলে না- শুধু ভুলে থাকে।” বা ভুলে যাবার অবকাশ থেকে বঞ্চিত রাখে।

প্রিয় দিলখুশ
আপনার কড়া ভাষার চিঠি আমাকে ভীষন ভাবে টানবে সত্যি কিন্তু হয়তো নিতে পারবো না বলেই উ্ত্তর দেয়াটা জরুরী হয়ে দাঁড়ালো। মনে পরে গেল বিনয় মুখোপাধ্যায় এর লেখা একটা বইয়ের বইয়ের শেষের প্যারাঃ প্রেম জীবনকে দেয় ঐশ্বর্য, মৃত্যুকে মহিমা। কিন্তু প্রবঞ্চিতকে দেয় কি? তাকে দেয় দাহ। যে আগুন আলো দেয় না অথচ দহন করে, সেই দীপ্তিহীন অগ্নির নির্দয় দাহনে পলে পলে দহন হলেন কাণ্ডজ্ঞানহীন হতভাগ্য চারুদত্ত আধারকার।।

এই লেখকের কিছু লেখা পরার সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো, সৌভাগ্য এই জন্য যদি না জানতাম তবে কড়া কথা শুনতে হতো… তাও আবার কাছের লোকের কাছে। আমি দূরের মানুষের কথা দূরে সরিয়ে রাখি যদি সেই অবসর পাই তবে হয়তো খুলি তার ঝাঁপি; দেখি সব পচা আপেলের মাঝে দু একটা পাথরকুচি গাছ আছে কিনা আর কাছের মানুষের কথা থাকে আমার চোখের তারায় চলতে ফিরতে যাকে বন্ধ করা সম্ভব নয়; যদি কখনো ছোট কোন বালুকণা এসেও দাঁড়ায় ভাবি চোখ তো ফেলে দিতে পারবো না বা বন্ধ করেও রাখতে পারবো না।

একটা বিষয় আমার বেশ ভালো লেগেছে, তাহলো আপনার নাম.. যদিও “মানুষের নামের যদি কেবলমাত্র সনাক্তকরণ ছাড়া আর কোন প্রয়োজন না থাকত, তবে নামের বদলে সংখ্যা ব্যবহারের দ্বারাই তা অনায়াসে চলতে পারত। তা হলে মেয়ের জন্ম মাত্রেই মা তার নামনিত্তবাচন নিয়ে ভাবনায় পড়তেন না। নিত্য নতুন নামকরণের অনুরোধ জানিয়ে রবীন্দ্রনাথের কাছে চিঠি আসত না।

আমি বেশ কিছু দিন আগে বাংলাদেশের এক রাজনৈতিক নেতার একটা বই পরেছিলাম, বইটা তিনি লিখেছিলেন যখন তিনি জেলে ছিলেন, অনেকের কাছে বইটি তেমন গ্রহন যোগ্যতা পায়নি, কিন্তু আমার কাছে বইটি অসাধারন লেগেছে, কারন জেলখানার মধ্যের অাসামীদের সাথে বিশেষ করে মহিলা আসামীদের সাথে কি ধরনের ব্যাবহার করা হতো তা নিয়ে বিষদ আলোচনা হয়েছে। আপনার সুবিধার জন্য আরো বলে রাখি বইটি যিনি লিখেছেন তিনি এক জন মহিলা।

কখনো সম্ভব হয় বইটি পড়ে তার রিভিউ করলে অনেক খুশি হবো দিলখুশ ভাই।

ভালো থাকিস নিজের মত করে
এক জীবনে যতটা ভালো থাকা যায়।

আমি
খেয়ালী ….
_________

নোটঃ শেষে এসে ধারাটা একটু পালটে দিলাম… কাছের মানুষকে আপনি বলাটা একটু কষ্টকর লাগে।