আবু মকসুদ এর সকল পোস্ট

বিজয়_দিবসের_প্রাক্কালে

index

দীর্ঘদিন এক দল ক্ষমতায় থাকলে আগ্রাসী মনোভাব চলে আসে, স্বৈরাচারী চিন্তা ধারণা প্রাধান্য পেতে শুরু করে। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও তাই দেখা যাচ্ছে। যেকোনো উপায়ে বিরুদ্ধমত দমন করতে আওয়ামী লীগের তোড়জোড় দেখে মনে হয় স্বৈরাচারে ঘায়েল হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নাই, আওয়ামী লীগ একমাত্র দল যারা এখনো কিছু পরিমাণ বাঙালি, বাঙালিত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে, লালন করে।

তবু আমার মনে হয় বিরতির প্রয়োজন, কিছুদিন অবসর নিয়ে প্রত্যাবর্তন দেশের জন্য মঙ্গল হতে পারে। দীর্ঘদিনের একঘেয়েমি থেকে মুক্ত হয়ে পুনরায় শুদ্ধ পরিচর্যা নিয়ে হাজির হওয়া যেতে পারে। মুশকিল হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিরতিতে দায়িত্ব নেওয়ার মতো দল বাংলাদেশে নাই। আওয়ামী লীগ শত শতাংশ দেশপ্রেমিক দল এটা আওয়ামী লীগ দাবি করবে না কিন্তু এর বিপরীতে এক শতাংশ দেশ প্রেমিক দল বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না। ক্ষুদ্র দল যারা আছে খুঁজলে হয়তো তাদের মধ্যে দেশের প্রেম পাওয়া যেতে পারে কিন্তু তারা এত ক্ষুদ্র যে দেশের ভার বহনে অক্ষম। মেজরের দল যখন এতিমে রূপান্তরিত, খাম্বা যখন পুরোপুরি রাজাকার মুখি তখন তাদের ঘাড়ে দেশের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া আত্মহননের শামিল হবে। একজন সুস্থ চিন্তার মানুষ সজ্ঞানে পুনরায় রাজাকারদের ক্ষমতায় দেখতে চাইবে না।

আপাতত আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নাই, তবে তাদের স্বৈরাচারী মনোভাবের জন্য বিরুদ্ধ মত দমনে কঠোরতার জন্য দিনে দিনে অজনপ্রিয়তায় ধাবিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে আরো বেশি শুদ্ধতার চর্চা করতে হবে, শত মতে বিশ্বাসী হয়ে শত ফুট ফুটতে দিতে হবে।

আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় এই একঘেয়েমির মন্দ থেকে কিছু ভাল জিনিস ও পরিস্ফুট হচ্ছে। আওয়ামীলীগের দীর্ঘ শাসনে রাজাকারের ছানাপোনা বশীভূত হয়ে যাচ্ছে, ভোল পাল্টে সুবোধ বালকের মতো হয়ে যাচ্ছে। এই সেদিনও যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে আজ সে বঙ্গবন্ধুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এই সেদিন যে মেশিনম্যানের ইজ্জত রক্ষা জান কোরবান করত আজ সে ফেসবুক লাইভে বিজয়ের কবিতা পড়ে, আজ সে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে।

যদিও জানি এসবই সাময়িক, সময় বদলে গেলে সাপের ছোবল ঠিকই মারবে। তবু তাদের আপাত বশীকরণ মন্দ লাগছে না। বগলে ছোরা নিয়ে মোস্তাক হাটে, সময়ের অপেক্ষায়। এখন তাদের নিচু মাথা দেখতে মন্দ লাগে না। রাজাকারের মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা আওয়ামী সাফল্য, দীর্ঘ ভ্রমণ জনিত একঘেয়েমি, ক্লান্তি ঝেড়ে আওয়ামী লীগ পুনরায় জেগে উঠুক। মানুষের মুক্তির কথা বলুক, মানুষকে মুক্তির পথ দেখাক।

শেষযাত্রা

আঁধার টের পাই, টের পাই
সংকুচিত হয়ে আসছে সময়
বিস্তৃত প্রান্তরের বিকেল, কতদিন
হাঁটা হয় না। কতদিন ঘাসের গালিচায়
শোয়ে বলা হয় না মনের কথা।

তার সাথে সাক্ষাতের আগে, নিজের
নিজের প্রস্তুত প্রণালী পুনরায় যাচা
হয় না। টিউশনির টাকা জমিয়ে হয়েছিলাম
সুগন্ধি বাজারের খরিদদার,
দীর্ঘদিন নাকে পাইনি তার খোশবু।

এক বৃক্ষের কাছে নতজানু হয়ে
নিজেকে উগরেছিলাম, গোপনীয়তার
শর্তে প্রকাশ করেছিলাম বিরহ বেদনা।
নির্লজ্জ বৃক্ষ বিশ্বাস হীন রাতে
সব বলে দিয়েছে। সকালের ঘাটে
মুখ দেখাতে পারিনা। সবাই করুণার চোখে
তাকায়। সবাই ঘৃণার চোখে তাকায়।

অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ঘায়েল হয়েছি,
পরাজিত বাহু কণ্ঠনালি চেপে ধরেছে।
সময়ের অন্ত হচ্ছে, জীবনের অন্ত হচ্ছে।

ব্যবধান

প্রবীণের আড্ডায়
শুধুই খেদ। উচ্ছন্নে
যাওয়া সময়ে
কোনো সুখবর নেই।
ক্যারাম বোর্ডের পাশে
বালকদের শোরগোল
অর্থব বৃদ্ধরা জানলো না
জীবনে মানে।

উড়ুউড়ু বালিকা বয়স
বালিশের খোপে রাখা
গোলাপি চিঠির মর্ম
দাদীজান কতটুকু জানে!
মুখে পান দাদীজান
কাশের জঙ্গলে চিরুনি
চালাতে চালাতে নাতনিরে
মতিভ্রম শিখায়।

চলে গেছে যে দিন
আসলেই ভাল ছিল
রোজ শুনি প্রবীণের
আহাজারি।
ক্যারামের লাল ঘুটি
বালক কে ডেকে বলে
সামনে রঙিন দিন
এইবার দাও ছুট।

সময় সময়ের মত
দেখার আলাদা চোখ
নবীনের নব উদ্যম
প্রবীণের ভিন্ন মাপজোক।

লিখে_রাখি_করোনাকাল_৩৪

অন্ধকার কারাগারে থমকানো সময়ে
হতাশার ঢেউ উঠছে, প্রানোজ্জল বৃক্ষের
শাখা থেকে ঝুপ ঝুপ করে
ঝরে পড়ছে পাতা, ত্যাগিত
বৃক্ষের অপরিণামদর্শী দৃশ্য
অবলোকন করে পাখিরা দূরত্বে
অবস্থান করছে। খালের জল
শুকিয়ে যখন দেখা যাচ্ছে বুকের ভাঁজ,
তখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া
মানুষ সুড়ঙ্গ খুঁড়তে লেগে গেছে।

যেভাবে হোক ধারাবাহিতা রক্ষা
করতে হবে, মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে
অন্ধকার ভেদ করে ছিনিয়ে আনতে হবে
আলো। সুড়ঙ্গ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে
হতাশা গভীর থেকে গভীরতর হবে
তবু হাল ছাড়া যাবে না।
দীর্ঘ সুড়ঙ্গের অপর পারে
থাকে ঝলমলে আলো। কালো
মেঘের আড়ালে হাসে প্রফুল্ল সূর্য।

আমাদের পৌঁছাতে হবে, দেখা যাচ্ছে
ক্ষীণ আলো। অন্ধকার আশায় রূপান্তরিত হচ্ছে,
গ্রহণ সময়ের পরে আসে পয়মন্ত সময়।
উত্তাল সমুদ্রে হার না মানা মানুষ
তীর দেখতে পাচ্ছে, আসছে স্বস্তির সময়।

লিখে_রাখি_করোনাকাল_৩৩

নাকে আঘাত করে বীভৎস রাতের গন্ধ।
জলাধারের জল পরিত্যক্ত ছিল
লাওয়ারিশ সারমেয় তাদের অতিরিক্ত
ঠ্যাং তুলে জলের সমতা রক্ষা করতো
সেই জলের জন্য মানুষের আহাজারি।
বুভুক্ষ মানুষের হাড় ক্ষয়িষ্ণু রক্তে পুড়ছে
মানুষ অসহায়, বিগতের স্বপ্নে স্বস্তি নেই
বর্তমান খুবলে খাচ্ছে, স্বপ্নের পারে
আস্তানা গাড়ছে বিকট অন্ধকার।
মনে হচ্ছে বিপ্রতীপ সময় কঠিন
প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ। মনে হচ্ছে অমাবস্যা
গিলে ফেলেছে গ্রহণের চাঁদ।
মনে হচ্ছে মানুষের জ্যোৎস্না আর ফিরবে না।

অনেক_ধ্বংসের_পরে

দিন দিগন্তে ফিরবে
বিভ্রান্ত চোরাবালি শেষে
পরিষ্কার হচ্ছে পথের দিশা
নাগালে আসছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা
নদী ফিরে পাবে গতি
পলিবাহী শরীর টানতে টানতে
ক্লান্ত, দু’দন্ড অবসরের পরে
চূড়ান্ত প্রশান্তি, ডাক দিচ্ছে সময়।

ক্ষয়ে ওঠা রাস্তায় পুনরায় পড়বে
প্রলেপ, বুকের গভীরে যে গর্ত সৃষ্টি
হয়েছিল, তার অন্ত হচ্ছে,
আসছে উপশম কাল।
বৃক্ষ ফিরে পাবে সবুজ, ডালে
ঝরবে পাখির পালক।

আকাশের আমন্ত্রণে মাথা উঁচু
করে সূর্য ভেদ করবে।
ফিরছে মানুষের কাল
দুর্যোগ শেষে বাতাসের সাথে
মিতালি হবে, নিরন্ন সময়ের পরে
পয়মন্ত পথে হাঁটবে মানুষ।

আঁধার ঢেকেছিল মানুষের মুখ
হঠাৎ ধাক্কায় বৃন্তচ্যুত হয়েছিল,
পায়ের নীচে জমিনের অবিশ্বাসী
তাণ্ডবে মানুষ পথ হারিয়েছিল।
দূরবর্তী তীরে দেখা যাচ্ছে ভোরের আলো
তরী ভিড়ছে, ভিড়ছে মানুষের জাগরণে।

প্রিয়_স্বদেশ

প্রিয় স্বদেশ তুমি কী অসুস্থ?
কেমন যেন বিমর্ষ দেখাচ্ছে,
তোমার দুচোখ ঘোলাটে।

এই চোখ দীঘির গভীর জলের মত ছিল,
যখন ইচ্ছা অবলীলায় ডুব দিয়েছি।

তোমার কণ্ঠনালি কী শুকিয়ে গেছে, কেমন
আওয়াজ বেরুচ্ছে না।

অথচ তোমার গমগম আওয়াজে
চৈত্রের মাঠ ফেটে জল উদগীরণ হয়েছে,
প্রবল খরায় তোমার চিৎকারে ভীত
মেঘরাজ তড়িঘড়ি নিজের মেয়ে
বৃষ্টিকে পাঠিয়েছে।

তোমার দুহাতে কালশিটে দেখা যাচ্ছে
হাত নাড়াতে খুব কষ্ট হচ্ছে কী?

এই হাত লাঙ্গলের ফলা ধরে সেঁধে
গেছে মাটির গভীরে, সবুজ ফসলে
ভরে উঠেছে ভোরের উঠান।

তোমার দুই পা স্থবির কেন? কী
কারণে আজ চলৎশক্তিহীন!

দুই পায়ে হেঁটে বিশ্ব বিজয় করেছ
দুনিয়ার তাবৎ পাপী তোমার পায়ে
লুটোপুটি খেয়েছে।

প্রিয় স্বদেশ তোমার বুকে আঘাতের
চিহ্ন কেন? কোন গুপ্ত ঘাতক
বিদীর্ণ করেছে তোমার হৃদয়?

এই হৃদয় বিশালতায় হিমালয় ছুঁয়েছিল
উষ্ণ হৃদয়ের তুমি হয়ে উঠেছিলে
মায়ের প্রতীক।

প্রিয় স্বদেশ কে সেই মাতৃ ঘাতক
কে সেই পাষাণ হৃদয়?
কোন মর্ষকামী ইবলিশ উচ্ছেদের ইচ্ছায়
একে একে খুলে নিচ্ছে পড়নের কাপড়!

প্রিয় স্বদেশ সুস্থতায় ফিরে এসো
পাপীদের নির্মূলে পুনরায় আওয়াজ তোলো
মুক্তিকামীর জয় হোক, অত্যাচারী নিপাত যাক
বিশুদ্ধতায় ভরে উঠুক তোমার চারপাশ।

দুয়ারে_আইসাছে_পালকি_৪

অন্যের গলগ্রহ হয়ে বেঁচে থাকা
কেমন কষ্টের জানতে শীলার
মুখোমুখি বসুন, জিজ্ঞেস করে জেনে নিন
কিভাবে কাটে প্রতিদিন…
জেনে নিন অবজ্ঞা, অপমানের অপর
পারে যে জীবন শীলা বহন
করে বেড়াচ্ছে তা কতটুকু জীবন

সাত বছর থেকে শীলা বাবা বিহীন
জীবন কাটাচ্ছে, মা আছেন বটে
কিন্তু না থাকার মতো, মামার দাপটের
কাছে মা নিতান্ত অসহায়, মামার
আশ্রয়ে এবং দয়ায় মা মেয়ের
১৭ বছর কেটেছে, কেটেছে কিনা
নিশ্চিত না, তবে ১৭ বছর পর্যন্ত
মা মেয়ে বেঁচে আছে যেহেতু
সময় পেরিয়েছে বলা যেতে পারে

চব্বিশের শীলা অত্যাচার, অপমান
অবহেলা সহ্য করেও টিকে থেকেছে
একধরণের জেদ শীলাকে টিকে
থাকতে দিয়েছে, কিংবা শীলা চ্যালেঞ্জ
নিয়েছে জীবনকে শেষ পর্যন্ত দেখতে হবে

চ্যালেঞ্জে শীলা প্রায় জয়ের মুখোমুখি
মামার রক্তচক্ষু থেকে মুক্তি, মা মেয়ের
জন্য বরাদ্দকৃত গুদামঘর থেকে মুক্তি

শীলার চাকরি হয়েছে, মোটামুটি সম্মানজনক
বেতন, মাকে নিয়ে হয়তো আলাদা থাকা যাবে
অন্যের দয়ার বিপরীতে কুঁকড়ে যাওয়া জীবনকে
হয়তো বিদায় জানানো যাবে, আত্মমর্যাদা
ফিরিয়ে আনার কিংবা মর্যাদার প্রথম ধাপে
পা ফেলা হয়তো যাবে, চাকরি দিতে পারে
মুক্তির স্বাদ, জীবনের সাথে পরিচয়ের সুযোগ

শীলার চাকরি হয়েছে, তার ভিতরের অনুভূতি
আমরা দেখতে পাচ্ছি অথবা পাচ্ছি না
কিন্তু আমরা যেটা দেখছি সেটা হচ্ছে উচ্ছ্বসিত
মেয়ে মায়ের কাছে ফিরবার জন্য তড়িঘড়ি করছে,
ঘরে ফিরে মাকে সুসংবাদ দিতে হবে
ওদিকে গুদামঘরে মা অপেক্ষায়,
মেয়ের ফিরার অপেক্ষায়,
মেয়ে ফিরবে, মুক্তির সংবাদ নিয়ে ফিরবে

কিন্তু মেয়ে ফিরবে না, সে ফির‍তে পারবে
না, কারণ মায়ের জন্য সামান্য কিছু মিষ্টি
কিনে রিকশায় চড়ার দু মিনিটের মধ্যে
একটা ট্রাক শীলার রিক্সাকে ধাক্কা দেবে
রিক্সা ওয়ালা হয়তো বেঁচে যাবে কিন্তু
শীলার মৃত্যু হবে, পথ চলতি এক চিকিৎসক মৃত্যু
নিশ্চিত করবেন, লোকজন ভীড় করবে
কিছুটা সমবেদনার কথা শোনাবে
তার অকাল প্রয়াণ নিয়ে হাহাকার করবে
কিছুক্ষণ আফসোসের পরে সবাই ফিরবে
নিজস্ব গুদামে, শীলা কখনো ফিরবে না

শীলার মৃত্যু হয়েছে, তার এখন পর্যন্ত
জীবনের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে গল্প
এগোনো যায়, তার জীবনে আরো কিছু
ব্যথা, বেদনা, কষ্ট যোগ করে মর্মান্তিক রূপ
দেয়া যায়, আপনাদের মনে তার জন্য
আরো কিছু সহানুভূতি জাগানো যায়,
কি প্রয়োজন, এতে কি কোন লাভ হবে…

আমরা গল্পের উপসংহার টানছি অহেতুক
টেনে লম্বা করে আপনাদের সময় নষ্ট করছি না

মামার গুদামঘরে ১৭ বছর কাটিয়েছে
আরো কয়েকদিন হাসপাতালের মর্গে কাটাবে
শীলা জীবনকে দেখার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল
তার চ্যালেঞ্জের পরিসমাপ্তি এখানেই…

লজ্জিত

মাটির সাথে মিশে থাকা শরীর
এক নারীর। নিথর দেহ, থমকে গেছে
স্পন্দন। উদগত কর্মের শেষে
ফিরে গেছে জনাকয় মানুষ।

মুখে তৃপ্তির ঢেকুর। বিশ্বজয়ের
আনন্দে খাবলেছে মাংস।
নারী মিশে আছে মাটির সাথে,
বীভৎস দৃশ্য দূরে দাঁড়িয়ে
উপভোগ করছে ভ্রাতৃ সম্প্রদায়।

শুধু এক কুকুর মানবিক দায়ে
প্রচণ্ড লজ্জিত হয়েছে।

শীত

শীত এসে গেছে। বৃক্ষের পাতা,
ঝরার বেদনায় মর্ষিত। শাখা
নদী গুলো মাতৃ নদী থেকে
ক্রমে হচ্ছে বিচ্ছিন্ন। পাখির
পালক খসে জমা হচ্ছে ঘাসের
বিছানায়, বিরহী ঘাস দীর্ঘমেয়াদী
আড়ালের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

পিচ রাস্তা গুলোর মনে অম্বরে
ডানা মেলার যে ইচ্ছা জাগ্রত
হয়েছিল, আপাতত সে ইচ্ছার
বিরতি। দূরের দিগন্ত হিমালয়ে
কানামাছি খেলবে, এভারেস্টের
চূড়ায় লিখে রাখবে বিস্তারকথা।
কত অবহেলায় দিন গুজরান করতে
হয়, অভিযোগ আমলে নিয়ে সদাশয়
হিমালয় দিগন্ত সনে বন্ধুত্ব পাতাবে।
অবেলার শীতে দিগন্তের দীর্ঘদিনের
স্বপ্ন পরিত্যাগে বাধ্য করছে।

শীত এসে গেছে উচ্ছল তরুণী
কাপড়ের পুরুত্বের খোঁজে ট্রাঙ্ক
তোলপাড় করছে, মিহি কাপড়
ফেলে দিচ্ছে বিগতের আস্তাকুঁড়ে ।
বুকের বোতাম খোলা যুবক
পুলওভার আঁকড়ে ধরছে, তীব্র
হাহুতাশ বক্ষ বিদীর্ণ করছে।

শীত এসে গেছে, কম্বলের ওমে
বাড়ছে জনসংখ্যা। ওজন স্তরের
বিপরীতে শ্রাবণ প্রাধান্য পাচ্ছে।
শীত এসে গেছে, মানুষের উত্তপ্ত
মুখে ঠাণ্ডা লেগে জবান পরবর্তীত
হচ্ছে। শীতায়িত মানুষ লেপের ওমে
নিজেদের প্রবাহিত করছে।
দরজার বাইরে থেমে গেছে প্রবাহিত
নদী, থেমে গেছে বিবিধ স্মারক।

দুয়ারে_আইসাছে_পালকি_১১

ঝগড়াটা না হলেও পারতো
এমন কোন মারাত্মক বিষয় ছিল না
মামুলি বিয়ের দাওয়াতের ঝগড়া
এ পর্যন্ত গড়াবে, জীবন বদলে দেবে
জীবন ধ্বংস করে দেবে, একটা জীবনের বাতি
নিভিয়ে দেবে, এটা কী কেউ ভেবেছিল

তিনটা প্রাণ আর কোনদিন এক হবে না
এক উড়ে গেছে, দুইজন
দুই দিকে মোড় নিয়েছে
ফিরবার কোন সম্ভাবনা নেই
ফিরে আর কী হবে, জীবন থেমে
গেলে জীবনকে ডেকে লাভ হয় না
ডাকাডাকির প্রয়োজন ফুরিয়েছে
পুনরায় গতিশীল হবে না

সামান্য ঝগড়া
এমন অসামান্য বিপর্যয় নিয়ে আসবে
কেউ ভাবে নি, ভাবনা চিন্তা করে
বিপর্যয় আসে না, বিপদ আসে না
মৃত্যুও আসে না, এ মৃত্যুও
হঠাৎ এসেছে, পরিকল্পনা ছাড়া,
এ মৃত্যুতে কারো তেমন দায় নেই

সত্যি কী নেই, দায়মুক্তি কী মিলে
গেছে, না মিলে নি, কোনদিন মিলবে না

দুটি প্রাণ যতদিন শ্বাস নেবে, বিষাক্ত নেবে
পর্যাপ্ত অক্সিজেন সত্বেও
দুটি প্রাণের নিঃশ্বাস তড়পাবে
দুটি প্রাণ আর কোনদিন সজীবতা পাবেনা

মুক্তি হবে না, মুক্তি মিলবে না
আজন্ম সাজা ভোগ করতে করতে
চির ঘুমে যেতে হবে
এ সাজা ভয়াবহ সাজা
এ সাজার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়

পুলিশের লকআপে এই প্রথম
পূর্বের কোন অভিজ্ঞতা নেই
লকআপে হিটার আছে
তবু তীব্র শীতের মত কাঁপছি
আমার জন্য যে বসার জায়গা, বেশ আরামদায়ক
তবু বসতে পারছি না, দাঁড়িয়ে থাকতেও
ভালো লাগছে না, অস্থির সময় যাচ্ছে
আর কি কোনদিন স্থির হতে পারব

আমাকে এখনো প্রশ্ন করা শুরু করেনি
হয়তো তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে
হয়তো আরও তথ্য জোগাড় করছে
এখানে অতিরিক্ত তথ্যের কিছু নেই
সবকিছু ফকফকে স্বচ্ছ
লুকানোর কিছু নেই
সবকিছু স্বীকারে আমি প্রস্তুত
অস্বীকারের কিছু কি এখানে আছে
স্বীকার অস্বীকারের এখন আর
কিছুই হবে না, বদলাবে না কিছুই

এদেশে ফাঁসির সাজা নেই
যত দুর্ধর্ষ অপরাধী হোক না কেন
মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবে না
আজীবন সাজা মৃত্যুদণ্ডের চেয়েও ভয়াবহ
আমি মৃত্যু চাইলেও তারা দিতে পারবে না

আমি চাই এই অবস্থার অন্ত হোক
আমি চাই চূড়ান্ত সাজা, ফাঁসি, মৃত্যু
আমাকে গাড়ির নিচে ফেলে পিষে ফেলা হোক
আমাকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হোক
বিশ তলা বিল্ডিং থেকে নিচে ছুড়ে ফেলা হোক
আমাকে পানিতে চুবিয়ে মারা হোক

আমি জানি এসবের কিছুই হবে না
আমি জানি এর চেয়েও ভয়াবহ সাজা
আমাকে ভোগ করতে হবে

আমার স্ত্রীকে তারা আনেনি
সে এখন কোথায় আছে জানিনা
হয়তো তার আত্মীয়স্বজন তাকে ঘিরে রেখেছে
অথবা সে অচেতন অবস্থায়
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে

আমি কিন্তু চেতন হারাইনি
কিংবা হারিয়েছে বুঝতে পারছিনা
বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে
কোন কথা মুখ থেকে বেরোচ্ছে না
চেষ্টা করেও কিছুই বলতে পারছি না

আমার মাথা স্থির না অস্থির
আমি শান্ত না অশান্ত, চেতনে না অচেতন
এই মুহূর্তে আমি কেমন নিজেও জানিনা

তবু সুস্থির সময়ের চিন্তায়
একটু ফিরে যেতে চাই
ফিরে যেতে চাই সকালের নাস্তার টেবিলে
একটা বিয়ের কার্ড, দাওয়াত
স্ত্রীর খালাতো বোনের বিয়ে
আপন খালা নয় মায়ের চাচাতো বোন

বিয়ের কার্ড মাঝেমধ্যে আসে
সম্ভব হলে উপস্থিত হই
বেশিরভাগ সময় আমাদের ছাড়াই
বিয়ে চূড়ান্ত পরিণতিতে গড়ায়
অর্থাৎ আমাদের উপস্থিতে
বিয়ের কোনো হেরফের হয় না

আমরা উপস্থিত না হলেও
বর কনে কবুল বলবে, অতিথিরা
ভোজনে মাতবে, চারশো অতিথি
দশ সহস্রাধিক সেলফি উঠাবে
আমাদের অনুপস্থিতিতে কোন বিয়ে
আটকে গেছে বলে শোনা যায়নি

এ বিয়েতে না গেলেও চলে, তিনশো মাইলের দূরত্ব
দূরত্বের কথা চিন্তা করে একটু নারাজি জানালাম
দূরত্ব ছাড়াও আরও একটা কারণ আছে
এ পরিবারকে আমি কিছুটা অপছন্দ করি
অপছন্দের কারণ তাদের দেখানোপনা অর্থাৎ
তারা যা নয় তারও বেশি সেজে নিজেদের হাজির
করা, অতিরিক্ত সবকিছু আমার অপছন্দ
কথার পিছনে যদি কোন বস্তুই না থাকে
কথাগুলি যদি ঠাটবাটে মিলিয়ে যাওয়ার জন্য হয়
তাহলে এসব কথা পছন্দ না হওয়া সমুচিত মনে করি

আমার এসব মনে করা স্ত্রীর পছন্দ নয়
তার ধারণা আমি ইচ্ছে করে তার আত্মীয়-স্বজনকে
অবহেলা করি, তাদের সমকক্ষ হতে পারিনি বলে
তাদের ঈর্ষা করি, আমি আসলে খুব ছোট মনের মানুষ

স্বামী স্ত্রীর ঝগড়ায় নীরবতা পালনই শ্রেয়
বেশিরভাগ সময় তাই করি
কোন কোন ঝগড়া মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে
আমি কিছু সময়ের জন্য বিরতি নেই
অথাৎ ঘর থেকে বেরিয়ে যাই
ফিরলে দেখা যায় ঝড় থেমে গেছে

এ ঝগড়ায় তাই করলে হতো বিরতি অথবা নীরবতা
কিন্তু তার কিছুই আজ করিনি
স্ত্রীর সাথে সমানতালে ঝগড়া করে গেছি
ছোট ছোট বাক্য যখন তীরের আঘাত
দেয়া শুরু করে তখন পাল্টা আঘাত
করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই
ছোট ছোট বাক্য জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে
যুক্তিবিদ্যায় পারদর্শিতা দেখাতে
দুজনেই একের পর এক যুক্তি ঝেড়ে যাচ্ছি
নিজেদের দুর্বল স্থানগুলো প্রকাশিত হচ্ছে
একজনের জন্য অন্যের জীবন পুরোপুরি
নষ্ট হয়ে গেছে তা উল্লেখ করতেও ছাড়ছি না

আঘাত পাল্টা আঘাত চলছে
কেহ নাহি ছাড়ে সমানে সমান
ঝগড়া মাত্রা ছাড়াচ্ছে, মেজাজ নিয়ন্ত্রণ রাখা
কষ্টসাধ্য হচ্ছে, বিস্ফোরণ হলো বলে
আমি রাগের মাথায় চায়ের কাপ
মেঝেতে ছুড়ে মেরেছি
স্ত্রী ও কম যায় না, ভাঙ্গা ভাঙ্গিতে সমান পারদর্শী
বুঝাতে সেও চায়ের কাপ ছুড়ে মেরেছে

এবং তার মোক্ষম তীর নিয়ে
ময়দানে হাজির হয়েছে, একটা হেস্তনেস্ত করে
বাড়ি ফিরবে, আজ কোন পরাজয় নয়
যে কোনভাবেই বিজয়ী হতে হবে

প্রত্যেক যুদ্ধে আমাকেই পিছু হটতে হয়
রণে ভঙ্গ দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হয়
কিন্তু আর কত, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে
ঘুরে দাঁড়ানো লাগে, এ যুদ্ধে জিততে হবে

“তুমি কমজাত কুকুরের জন্য আমার জীবন নষ্ট
তোমার জন্য আত্মীয় স্বজনের কাছে
মুখ দেখাতে পারি না, তোমার ছোটলোকি স্বভাবে
সমাজে মাথা কাটা যায়, আমার বাবা
উন্মাদ নাহলে তোমার মত ইতরের সাথে
আমার বিয়ে দেয়, তোমার মতো কুকুরের
সাথে সংসার করার চেয়ে
গলায় দড়ি দিয়ে মরা ভালো”

“আমি কুকুর, কমজাত, ইতর
তাহলে দেখো ইতরামি কাকে বলে
গলায় দড়ি কিভাবে দিতে হয়
আসো দেখিয়ে দেই”

বলে প্রচণ্ড ক্রোধে স্ত্রীর দিকে এগিয়ে যাই
হঠাৎ মাঝখানে এসে দাঁড়ায় আমাদের একমাত্র মেয়ে
মেয়ে আমাদের দুজনের সাঁকো
তাকে উপলক্ষ করেই আমরা বাঁচি
আমাদের কুরুক্ষেত্রে সবকিছু বিনাশ হলেও
মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে পুনরায় শুরু করি
রাজকন্যা আছে বলেই আমাদের রাজ্য আছে
যে কোন কিছুর বিনিময় রাজ্য ধরে রাখবোই

গত কিছুদিন ধরে স্বামী-স্ত্রী একটা স্বপ্ন দেখছি
মেয়েকে গ্রামার স্কুলে পড়াবো, নয় বছরের মেয়ে
পড়ালেখায় অত্যন্ত ভালো, প্রাইমারি স্কুলে
আর মাত্র দু’বছর, মাধ্যমিকে যাতে ভালো স্কুল পায়
সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি, গ্রামারের চান্স পেলে
জীবন বদলে যাবে, আমরা মেয়ের জন্য
বদলানো জীবনের স্বপ্ন দেখি, একজন প্রাইভেট টিউটর
ঠিক করা হয়েছে সামনের সপ্তাহ থেকে
প্রতি সপ্তাহ দুঘন্টা করে পড়াবে, পড়ালেখায়
ভালো মেয়ে বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণে
বিচ্যুত তো হবে না বলেই এখন থেকে
কোমর বেঁধে লেগেছে, গ্রামার স্কুলে সে পড়বেই

আমাদের ঝগড়ায় মেয়ে অনুপস্থিত থাকে
আমরা চেষ্টা করি, মেয়ের সামনে ঝগড়া এড়িয়ে যেতে
আজ সম্ভব হলো না, মেয়ের স্কুল বন্ধ
উপরে হোমওয়ার্ক নিয়ে ব্যস্ত ছিল
মা-বাবার ঝগড়া শুনে নিচে নেমে এসেছে

আমি জানি পুরুষের পরাজয়
যুক্তি, তর্ক, চিৎকারে পরাস্ত হয়ে
যখন শারীরিক নির্যাতনের পথ বেছে
তখন পুরুষ পরাজিত হয়
কোন সভ্য পুরুষ নারীর গায়ে হাত তুলে না
নারীকে আঘাত করার চেয়ে অসভ্য, আমানবিক
আর কিছু হতে পারে না
নারী নির্যাতনকারী অভব্য মানুষ
পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট

সবই আমার জানা, কিন্তু
যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়িয়ে সভ্যতা, ভব্যতার
চিন্তা করে না কেউ, তখন যুদ্ধ জয়ই মুখ্য
যে ভাবে হোক জয়ী হতে হবে

মা-বাবার মাঝখানে মেয়ে এসে দাঁড়ায়
মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই
পা পিছলে যায়, কাপের ভাঙ্গা কাঁচ
আর চা গড়িয়ে যাওয়ায় মেঝে পিচ্ছল
টাল সামলাতে না পেরে মাথা টেবিলের সাথে ধাক্কা খায়

তাৎক্ষণিক ঝগড়া থামিয়ে কোনো সুরাহা হয় না
রক্তে মেঝে লাল হয়ে গেছে
সতের মিনিটের দীর্ঘ অপেক্ষার পর এম্বুলেন্স আসে
হাসপাতালে পৌঁছানোর পূর্বেই
আমাদের রাজ্য উজার হয়ে যায়
মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ

রাজ্য উজারের পূর্বেই
ঝগড়া থামিয়েছিলাম কিন্তু
রাজকন্যা পছন্দ করে নি
অভিমানী হয়ে সে দেশান্তরে গেছে

আমরা বেঁচে আছি, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত
হয়তো বেঁচে থাকব
কন্যা হত্যার অভিশাপ নিয়ে
আমাদের বেঁচে থাকতে হবে

গায়ের_লোক

আমরা গায়ের লোক, কচি ধানের
বাতাসে বুক হালকা লাগে। দোয়েলের

ডাল পাল্টানো খেলায় আমরা অভ্যস্ত
দূরের নাও যখন ছাওয়ের নীচে

বউয়ের ঘোমটা খুলে, কৌতুহলী চোখ
লাজরাঙা মুখ দেখে। দুরন্ত বাছুর

আল বাধে শুয়ে শুয়ে কাটায় প্রতিক্ষার
প্রহর, মায়ের খাবার সাঙ্গ হলে মিলবে

দুধের নহর। আমাদের ধূলিপথ দিগন্ত
বেড়াতে যায়। অসময়ে ঝড় সবকিছু

তছনছ করে দিলেও আমরা ঘুরে দাঁড়াই
প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে বাঁচতে হয়।

আমরা গায়ের লোক, গায়ের কাদামাটি
মেখে পথ চলি। গায়ের পথের পাতা গুল্ম

খেয়ে খিদে মিটাই। আমরা গায়ের লোক সুখে
ঘুমাই। সুখনিদ্রা শেষে ভোর জেগে উঠি।

ঘৃণা

আমি ঘৃণা বংশের লোক
কালজয়ী গল্পের পরতে পরতে
যে ঘৃণা, অন্তরালে
আমার বংশের অবদান আছে

গল্পের ইবলিশকে ঘৃণায় হারিয়েছি
পদকে পদকে পরিপূর্ণ শোকেস

পাঠক আমাকে সযত্নে পরিহার করে
আমি কি আহত হই, হই বটে
ঘৃণার শরে বিদ্ধ করতে পারলে
রাগের উপশম হতো
দূর থেকে ছাইভস্ম করতে থাকি

ঘৃণিত আমাকে
একলা ফেলে পাঠক হাঁটে
অচ্ছুত কোন জন্তু যেনো
জন্তুই, গল্পের গরল
উদগীরণে মন মগজ
অসুর হয়েছে
ভাল চিন্তার বিপরীত
টান, ঘৃণায় ভেসে যাই

ঘৃণার আড়াল থেকে
গল্পিত কেউ ডাক দিতো
দৌড়ে যেতাম
একবিন্দু ভালোবাসায়
বদলে যেতে পারতাম

ঘৃণিত আমাকে পথপাশে
দেখেও গল্পের করুণা উদ্রেক
হয় না, নিজেদের ঘৃণিত গল্পে
সবাই ভীষণ ব্যস্ত

মৃত_নদী

মৃত নদীতে চাঁদের খুঁজে যায়
যে মানুষ, প্রতিবিম্বে নিজেকে না দেখে
হতাশ হয়, মৃত নদীতে চাঁদ থাকে না
থাকে চাঁদের কঙ্কাল, কঙ্কালে
প্রতিভাত হয় না মানুষের মুখ

রূপবতী নদীর নিদানে মানুষ
পর হয়, নদীলগ্নতা বিস্মৃত হয়
দূর গঞ্জের মনোহারি দোকানের কিম্ভুত
আয়না তাদের হাতছানি ডাকে
জলের মিত্রতা ভুলে বেভুল মানুষ
বিভ্রম আলোয় হারায়, নদীর মাতৃগন্ধে
আড়ষ্ট তারা অবলীলায় মুছে ফেলে
মায়ের আদর, নদীর আঁচলে
নিশ্চিন্তে মুখ মোছা বিশ্বস্ত মানুষ
অবিশ্বাসী হয়, পরকীয়া পাপে
জড়াতে জড়াতে ঝেড়ে ফেলে
নদী সিক্ত শরীর, অদ্ভুত চামড়ায়
শরীর মুড়িয়ে নিজেকে পণ্য করে
নদী ত্যাগি মানুষ ত্যাগিত জীবনে
ফির‍তে পারে না, জীবনের অসফল
সংকল্পে নদী আর ভুমিকা রাখে না
মৃত নদী ধীরে ধীরে মানুষ হত্যা করে
মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে নদী হয় হন্তারক

নদী তীরের টং ঘরে ছিল যে সোনালী
অতীত; আধ কাপ চা’য়ে টগবগ করতো
যে যৌবন, বৃদ্ধের দাড়িতে পানের টইটুম্বুর
রস, এক বিড়িতে আধ ডজন সুখটান
বিড়ি আজ নিভে গেছে, মৃত নদী
নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ভাটিপাড়ায়
বসত গেড়েছে, মৃত নদী উজানের
সখ্য ভুলেছে, মৃত নদীর কোন কাজ
থাকেনা, নদীর কোন স্মারক থাকেনা

তবু কোন কোন নদী গ্রস্ত মানুষ
মৃত নদীতে খুঁজে জীবনের গান, বিভ্রম
সময়ের পরে কোন কোন মানুষ
চাঁদের প্রতিবিম্বে খুঁজে সোনালী অতীত
মানুষ হতাশ হয়, মানুষের বুকে
থেকে যায় চাঁদের আলোয় দেখা হতাশার নদী

স্বপ্ন

স্বপ্নে ভাগ্য বদলে যায়…
প্রতিরাত স্বপ্নের প্রতিক্ষা করি
সুবহে সাদেকের পূর্বে
মঞ্জিল পেয়ে যাবো…

ঘুম ভেঙ্গে গেলে
অধরা আলোয় স্বপ্ন
মিলিয়ে যায়, জীবন যুদ্ধ
বাস্তবের মুখোমুখি করালে
বিছানা বিলাস অবান্তর মনে হয়
নিজ কর্মে ব্যাপৃত মানুষ
অলীক স্বপ্নের মোহগ্রস্ততা
ঝেড়ে ফেলে
দিনের শুরু
শেষ স্বপ্নে বাধাপ্রাপ্ত হয় না

স্বপ্নের মলম, তাবিজ
মনে কাঙ্ক্ষা জাগায়
ঘুম পরী সিথানে দাঁড়িয়ে
ক্লান্তি তাড়াচ্ছে, এমন ভাবনা

মোহগ্রস্ত করে ঠিক, তবে
ঘুমের বাইরে যে জগত
স্বপ্নের বিপরীত, প্রকৃত জগত
তাতেই মানুষ বাঁচে, রঙিন
জগতের হাতছানি
মাড়িয়ে যে মঞ্জিলে পৌঁছায়
সেই প্রকৃত স্বপ্নবাজ

স্বপ্ন তার হাতে ধরা দেয়
সে-ই স্বপ্নকে স্বপ্ন দেখায়