আবু মকসুদ এর সকল পোস্ট

আশাবাদ

প্রতারিত সময়ের পিছনে
ছুটেছি অনেক
আমাকে বসিয়ে রেখে
সে গেছে হাওয়া খেতে

অপেক্ষায় তন্দ্রাঘোর
এলে বিগত মুদ্রা খরচে
হৃদয় তলীয়ে যায়
খোয়াবের দেশে বশীভূত
সময়, ঘোড়ার সওয়ারীর
মতো দিগন্ত মাড়ায়

গভীর ঘুমের পরে
পুনরুজ্জীবিত খোয়াবে
সময় ধরবো ভেবে
হাত বাড়াই, সময় ফসকে যায়

প্রতারণার কৌশলে পারদর্শী
সময় আমাকে ফাঁকি দিয়ে
পড়শি, দূর আত্মীয়
শত্রুর সাথে মিত্রতা পাকিয়ে
ভেংচি দেখায়

আহত আমি নিষ্ফল
আস্ফালনে আঙুল কামড়াই

একদিন সময় বশীভূত হবে
এই শান্তনায় আহত
আঙুলে মলম মাখাই

আশাবাদে মানুষ বাঁচে
আমিও আশার মানুষ

গুগলি কিংবা ফিরে যাওয়া ৪

নদী ভাঙ্গনের সাথে
দুঃখের সংযোগ আছে
বসতভিটা হারানোর শোকে
দুঃখের মিছিল প্রত্যক্ষ করেছি
শেষ পর্যন্ত শরিক হইনি
আমাদের বসতভিটা নদী ভাঙ্গনের
পরেও নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে
দুঃখ তবু ছেড়ে যায়নি

আমার দুঃখ আম, বেদরদি
নদীর জন্য দুঃখে ভাসি

আমের আহামরি স্বাদ ছিল
বলবো না, কিন্তু পেড়ে খাওয়ার
আগ্রহে গায়ের চামড়া
পুরু করেছি
গাছে চড়তে অক্ষম প্রতিজ্ঞাবদ্ধ
চামড়ার থোড়াই কেয়ার করেছি
ছাল উঠেছে রক্ত ঝরেছে
স্বাদ গ্রহণে ক্ষান্ত দেই নি

শহুরে পোলাপান আম চিনে না
কথিত কথা…
আমি চিনতাম, শহর
থেকে আম দূরে নয়
প্রমাণের জন্য বাড়ি যেতাম

নদীকূলে আমের অবস্থান
বাড়তি আগ্রহ ছিল
কখনো কখনো আমের উসিলায়
নদীবক্ষে ঝাপ

আম না নদী কোনটা প্রিয় ছিল
এখনো নিশ্চিত নই
আমনদী নদীআম
এখনো ঠোকর মারে

এখনো সকালের কাতর মন
নদী সংযোগে কাঁদে
বিকালের মায়াবী আলো
আমের নিমন্ত্রণে ডাকে

ফিরে যাই ফিরে যাই
আম নাই নদী নাই…

গুগলি কিংবা ফিরে যাওয়া ৩

এখন যেখানে জাঁদরেল বিল্ডিং
একদা একটা জলাধার ছিল
হাঁটুপানি, তবু প্রাণ ছিল
গামছা বিছিয়ে পোনামাছ
শিকারে কতটুকু পটু ছিলাম
এমন প্রশ্ন উহ্য থাকলেও
প্রাণপ্রাচুর্যের কমতি ছিল না

জলাধার আমাদের অধীন
অথবা আমরা তার বশীভূত ছিলাম
একে অপরের পরিপূরক
কিংবা আজন্ম গাঁটছড়ার চুক্তি

জলাধার ত্যাগিত হবে, আমরাও
পরিযায়ী জীবনে অভ্যস্ত হবো
কোনদিন ভাবিনি, জলাধারের
ভাবনা সূচীত না হলেও আমরা
বরখেলাফি কিংবা বিশ্বাসঘাতক

আমরা অক্ষম ছিলাম, দানব
ট্রাক যখন পীঠ উপুড় করে
পৃথিবী ঝাড়ছিল নিরাপদ দূরত্বে
অবলোকন করেছি, আর কিইবা
করার ছিল… রাক্ষুসী মানুষ
পুকুর নদী খাল গোগ্রাসে গিলে ফেলে
তাদের ক্ষুধা অফুরন্ত
এক একর জলাধার তাদের
ক্ষুধার কাছে কিছুই না

এই কপট বিল্ডিং এর নীচে
শৈশবে আঁটকে আছে, কেউ
খুঁড়তে চাইলে সব তথ্য সরবরাহ
করা হবে, কেউ কি আগ্রহী..!

বাসর

এজন্য আগুনের আয়োজন, প্রতীক্ষিত দিন
বসন্তের পরিপথে দীর্ঘ পরিভ্রমণ অন্তে
পুষ্পে সাজার দিন, প্রজাপতির পাখায়
ওড়াউড়ির সফল সমাপ্তি, মধুরেণসমাপয়েৎ

জলের কলসে জলাধার আঁটকে আছে
দুধের বাটিতে সরের ভেসে থাকা, মালাইয়ের
কুলফি একটু পরে চেখে দেখা হবে, আগুনের
উত্তাপ উপশমে বরফের ব্যাপক প্রয়োজন

বরফে বরফে ঠোকাঠুকি, চুমুকে চুমুকে
পান, তৃপ্তির অপর পারে মসলাদার
চায়ের ঘ্রাণ, পানের বাটিতে শক্তি বর্ধক
সাধনার বটিকায় পেরুনো পুলসিরাত

চামড়ার পোষাকে প্রস্তুত সাইবেরিয়ান হাঁস
সাঁতার শুরু হবে, সরোবরে নেমেছে হংসী

গুগলি কিংবা ফিরে যাওয়া ২

আমাদের স্মৃতিঘাটে
শ্যাওলা জমে ছিল
সন্তর্পণে জল ছুঁয়ে
পরিশুদ্ধ হয়েছি

আমাদের স্মৃতিমাঠে
ঘাস ছিল না
বুকের ঘাসে
ছুটেছি দাড়িয়াবান্ধা মাঠ
অভাবের ছিলনা
অবান্তর হাসফাস

আমাদের স্মৃতিস্কুলে
বাজে নি ছুটির ঘণ্টা
আক্ষেপ না করে
কাটিয়েছি অতিক্রান্ত সময়

আমাদের স্মৃতিবিকেলে
হল্লা ছিল, অকারণ
ছুটার পরে কলের
ঠাণ্ডা জলে ছিল
আয়েশের তৃপ্তি

ফিরে গেলে স্মৃতিদিনে
নিষ্কলঙ্ক ছায়া দেখি
নির্মল ছাপে দেখি
আসছে আজদাহা রাত

ভোরে সবকিছু বদলে যায়
সূর্যের উত্তাপে রাস্তার পিছ
উত্তপ্ত হলে শৈশব উবে যায়

অতীতের পথে চেয়ে
হাসফাস হয়তো জায়েজ
চাঁদের মায়াবী আলোয়
কাতরতা হয়তো মানায়

বাস্তব বড় রূঢ়
নিজের প্রয়োজনে
গিলে ফেলে সোনালী অতীত
নিজের প্রয়োজনে হয় ক্ষিপ্র ঈগল

মানিয়ে নিতে হয়
টিকে থাকার তরে
বেঁচে থাকার জন্য
করতে হয় ঈগল যুদ্ধ

স্মৃতিপারে নির্মল শৈশব তড়পায়
বাস্তবে নুনের অভাবে ঘটে
কারবালা কাণ্ড …

.
#গুগলি_কিংবা_ফিরে_যাওয়া_২

সমকাল

সমকাল

এই প্রজন্মের সাথে সখ্য হউক
পরের প্রজন্মের জন্য লিখে যাবো
অমর গাথা তেমন ইচ্ছে নেই

বর্তমান আমাকে পড়ুক, কাল কে
পড়ল জানা হবে না
কালকের জন্য আহাজারি অহেতুক

আমার পায়ের ছাপ একটু পরেই
মুছে যাবে, নতুন জুতায় মসৃণ
পথ অন্য কেউ মাড়াবে

এখনকার কেউ পায়ের ছাপ
ধরে পৌঁছাক, জলজ্যান্ত আমাকে
আবিষ্কার করে উদ্বেলিত হউক

মৃতের কফিনে কান্না লালায়িত করে না
জীবিত কেউ আমাকে ছুঁয়ে যাক

বর্তমানের গলায় পড়িয়ে দেই
ভালোবাসার মালা, জানাই
বোধে আসন গেড়েছে

তাকে জানাই
পাঠ করি প্রিয়তার মতো, তাকে পাঠে
রূপান্তরিত হই, তাকে জানাই
মানুষের রূপান্তরে তার
ভুমিকা অপরিসীম

করবিন

করবিন

ইতিহাস হয়তো লিখবে
বিভ্রান্ত জমানাতে
একজন করবিন ছিল

কিংবা লিখবে একজন
মানুষ ছিল, এমন মানুষ

যে নির্দ্বিধায় মানুষের মাঝে
হেঁটে যেতে পারতো
যার বুকে মানুষের হৃদয়
ছিল, যার প্রচেষ্টা ছিল
মানুষের চোখের কান্না মুছে দেয়া
মানুষের বুকের কান্না মুছে দেয়া

যার প্রচেষ্টা ছিল
প্রতিটি মানুষের অন্ন নিশ্চিত করা
প্রতিটি মানুষের বস্ত্র নিশ্চিত করা
প্রতিটি মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করা

যার প্রচেষ্টা ছিল
মানুষ তার প্রাপ্য সম্মান পাবে

ইতিহাস হয়তো একদিন লিখবে
বিভ্রান্ত জমানাতে একজন মানুষ ছিল
যে মানুষের কথা বলেছিল

ইতিহাস হয়তো একদিন সাক্ষ্য দেবে,
আমরা করবিনকে মানুষের কথা বলতে শুনেছি

Corbyn

History will probably write
In confused times
There was Corbyn

Or will write
There were a person, such person

In the midst of a poor people he walked
Whose heart is the heart of pure human being
whose effort was
To wipe away the tears of human eyes
Eliminating the cry of the human heart

Whose efforts were
Ensuring the food of every human being
Ensuring clothing for every human being
Ensuring the accommodation of every human being

Whose efforts were
People will get the respect they deserve

Maybe history will one day be written
There was a man in the confused world
The man who always spoke for humanity

History may one day testify,
We’ve heard Corbyn talk about people

গুগলি কিংবা ফিরে যাওয়া ১

দলই বাগানে গিয়েছিলাম
পরিত্যক্ত ছেলেবেলার খোঁজে
পেয়েছি, অত্যন্ত ভারী বিধায় উঠাতে পারিনি
ওজনদার ছেলেবেলা ওখানে পড়ে আছে
আমাকে তার কোন প্রয়োজন নাই

তখনকার কালে সাঁতার বিশেষজ্ঞ
হিসাবে খ্যাতিমান ছিলাম
ব্রজেন দাসের পরে সমীহে
উচ্চারিত হতো নাম
আমার গুরু কোর্ট মসজিদের পুকুর
এখন অস্তিত্ব নাই, গুরুর অভিশাপে
আজ নামহীন গোত্রহীন

আস্তুম উল্লার কাছে অনেক ঋণ
চায়ের অনেক টাকা পাওনা
পাঁচশিকা যোগার হতো না
বলে আস্তুমের স্ত্রীর কটাক্ষ
এখন আমি আড়াইশ টাকার
কফি পান করি তবু
আস্তুমের চায়ের স্বাদের
ধারেকাছেও যায় না

আবুলের আখনির চেয়ে
মজাদার অমৃত
জগতে আছে বলে তখনো মানি নি
এখনো মানি না
আবুলের সাথে আখনিও কবরস্থ হয়েছে
বিকল্প আবুলের
তিতকুটা বিরিয়ানির
প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ জাগে না

বকশী বেকারীর সজলদা
মকদ্দুস ভাই বলে
যেভাবে ডাক দিতেন
মনে হতো অগ্রজের
স্নেহ উপছে পড়ছে
চুরাশির বন্যায় তলিয়ে যাওয়া
বকশী বেকারী উঠে দাঁড়াতে পারে নি
সজলদা আকাশের তারা হয়ে
ক্রমাগত স্নেহের আওয়াজ দিচ্ছেন

আমি এড়িয়ে যাচ্ছি
অনেক কাজ বাকী
আছে, পিছনের ডাকে বারবার
ফিরে যাওয়া সম্ভব না

বিকেলের রোদে সকাল উঁকি দেয় ঠিক
কিন্তু সন্ধ্যার গতির কাছে হার মানে
আমিও পরাজিত সৈনিকের মতো
ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি

কুদালিছড়া

আমাদের ছোটবেলায় কুদালিছড়া মোটামুটি জীবন্ত ছিল, ক্ষীণ একটা স্রোত ধারা প্রবাহিত হতে দেখা যেতো… শৈশবে কুদালিছড়াকে কম অত্যাচার করি নি, লাফানো, ঝাঁপানো কাদা ছুড়াছুঁড়ি শৈশবে যত প্রকার বাঁদরামি করা যায় কুদালিছড়া বুকে প্রায় সবই করা হয়েছে… বাসা থেকে এক মিনিটের দূরত্বে থাকার কারণে আমাদের দিনের প্রায় অর্ধেক সময় কুদালিছড়ায় কাটাতাম…

ক্ষীণ স্রোত ধারায় ডুবে মরার ভয় ছিল না বলে আমাদের অভিভাবক তেমন দুশ্চিন্তা করতেন না… আমরা কুদালিছড়া শাষণ করতাম… আমাদের অত্যাচার কিংবা শাষণের জন্যই কি না, ক্ষীণ স্রোত ধারা একদিন আড়ালে চলে গেল… যে প্রাণ কিছু পরিমান হলে কুদালিছড়া ধারণ করছিল তাও একদিন নিঃশেষ হয়ে গেল… কুদালিছড়া মরে গেল…

আমাদের শৈশবেও প্রচুর বৃষ্টি হতো, এক টানা বর্ষণ, মাঠ-ঘাট ছাপিয়ে পানি বাসা বাড়িতে উঠে পড়ার উপক্রম হত… শেষপর্যন্ত বাসাবাড়ি রক্ষা পেত, কুদালিছড়া নিজের বুকে পানিকে ধারণ করে বাসাবাড়ি রক্ষা করত… গেরস্তের অমঙ্গল মানে নিজের অমঙ্গল এই ধারণার বশবর্তী হয়ে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে কুদালিছড়া মানুষের জানমাল রক্ষা করত…

শুধুমাত্র বৃষ্টি বাদলার কারণে বাসা বাড়িতে পানি উঠে গেছে এমন ঘটনা আগে কখনো দেখিনি, মৌলভীবাজারে বন্যা হয়েছে কিন্তু সেটা অতি বৃষ্টি কিংবা পাহাড়ি ঢলের কারণে… স্থানিক বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে সেটা আগে ঘটেনি…

এই কিছুদিন আগেও দু এক ঘন্টা বৃষ্টি হলে শহরের রাস্তাঘাট সবকিছু ডুবে যেত, কারণ কুদালিছড়া মৃত ছিল, তাকে মেরে ফেলা হয়েছিল… অযত্ন-অবহেলায় তাকে অযোগ্য করে রাখা হয়েছিল, গেরস্থ অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তাকে ভুলে গিয়েছিল… অন্যায্য অবহেলা কেউই সহ্য করে না কুদালিছড়াও সহ্য করেনি… তার প্রতি অবহেলার প্রতিশোধ সে নিয়েছে… গেরস্তের চোখে আঙ্গুল দিয়ে সে দেখিয়ে দিয়েছে আমি ক্ষুদ্র কিংবা তুচ্ছ নই, আমাকে অবহেলা করলে শান্তি স্বস্তি কিছুই পাবে না… স্বস্তিতে থাকতে হলে আমার যত্ন নিতে হবে, আমার পরিচর্যা করতে হবে…

কুদালিছড়া অনেক দিন থেকেই তার আকুতি জানিয়ে আসছে, কেউ কানে নিচ্ছে না বলেই সে ফুঁসছে… আশার কথা একজন ব্যক্তি কুদালিছড়ার দুঃখ বুঝতে সক্ষম হয়েছেন, তিনি কুদালিছড়ার প্রতি কৃত অবহেলা মুছতে উদ্যোগী হয়েছেন…

কুদালিছড়া তার পুরনো রূপে ফিরে এসেছে, আমাদের গেরস্থ প্রধান মেয়র ফজলুর রহমান কুদালিছড়ার আকুতি অনুভব করতে পেরেছেন… তিনি পুনরায় কুদালিছড়ার শুশ্রূষায় মনোযোগী হয়েছেন, তার শুশ্রূষায় কুদালিছড়া নিজের যৌবন, ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে… এখন সে আর আগের মত রাগান্বিত হয় না, গেরস্তের দুর্ভোগের কারণ হয় না… অযত্ন অবহেলা সে মাফ করে দিয়েছে…

ফজলুর রহমানের মতো গেরস্ত আমাদের প্রয়োজন, এমন সহৃদয় গেরস্ত থাকলে শুধু কুদালিছড়া কেন… কোন ছড়া খাল নালা নদী আমাদের দুর্ভোগের কারণ হবে না…

ফিরছি মায়ের ডাকে

ডাকছে কুদালিছড়া
ডাকছে আনসার মাঠ
ডাকছে কালেঙ্গা, ফাটাবিল
টিকর বাড়ির টিলা

ডাকছে মনু
পুনরায়
অবগাহনের জন্য

হাঁটুজলের নদীর সাথে
শেষবার যখন দেখা হয়েছিল
তখন তার রুগ্ন শরীর
ভগ্ন হৃদয়
শুশ্রূষার কথা
অনুভব করে
শুশ্রূষা দিয়েছি

নিয়ম করে প্রতিদিন
কপালে জলপট্টি
শরীরে
হাত বুলিয়ে দিয়েছি
তিতকুটা ঔষুধের পুরিয়া
দিয়েছি মুখে

শুশ্রূষায় সুস্থ হলে
তবেই ফিরেছি, প্রাণের নদী
ভালোই ছিল
কিন্তু একাকীত্বের অসুখ
পুনরায়
আসন গেড়েছে
দিন ভাল যাচ্ছে না

খবর পাঠিয়েছে, আমাকে
না দেখলে অসুখ সারবে না

একাকীত্বের অসুখ কতোটা
ভয়াবহ হতে পারে
অভিজ্ঞতা আছে
প্রবাসে, মহারাণীর দেশে
সুখ প্রাচুর্যে অতিবাহিত
সময়ে একাকীত্বের অন্ধকার
যখন হামলে পরে
আত্মবিধ্বংসী চিন্তা
মন মগজ আচ্ছন্ন করে ফেলে

এই মুহূর্তে
নদীর সুস্থতার চেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ অন্যকিছু ভাবতে
পারছি না, আমি ফিরছি

নদীর ডাকে ফিরে যাচ্ছি
মায়ের কাছে, নদী আমার মা
মা ডাকছে আমাকে ফিরতেই হবে…

নতুনের পুরাতন

নতুনের পুরাতন

জুতার দিকে তাকিয়ে
মনটা নিরস হয়ে গেল
মাত্র সাড়ে তিন বছরের পুরানো
এর মধ্যে উনচল্লিশ দিন
বিশ্রামও পেয়েছে
অসুস্থ হয়ে ঘরবন্ধি ছিলাম
গুনে গুনে উনচল্লিশ দিন

তখন
জুতার সাথে পায়ের
সংযোগ হয় নি
হাতের হয়েছে
তিন দিন অন্তর
পালিশের প্রয়োজনে

চল্লিশ দিনের পরে
জুতার সঙ্গী হয়ে পুনরায়
রাস্তায় হাঁটলে
কেমন যেন অস্বস্তি লাগে
কেমন যেন আগলা ভাব
আগের মতো গাঢ়
ভাব ভালোবাসার অভাব

চল্লিশ দিনের বিরহে
মন উঠে গেল কি না
সন্দেহ হলে
পায়ের দিকে
নিরস মনের আভাস মিলে

জুতা মহাশয় তার
নির্ধারিত সময় পার করেছেন
কিংবা সময়ের অধিক
সময় দিয়ে এখন নেতিয়ে
পরেছেন, আমি নিজেকে
উৎফুল্ল করার প্রচেষ্টায়
সামনের দোকানের শেলফে
নতুন জুতা দেখি
অনিচ্ছুক
চোখ নিম্নে ধাবিত হয়
কৃতজ্ঞতায় নুয়ে জুতার পায়ে
চুমু খেতে ইচ্ছা হয়
দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের সাথী
বিসর্জন দিতে হবে
ভাবতেই বুক কেঁপে উঠে
তবু নতুনের তরে পুরাতন
ত্যাগ করতে হয়, তাই নিয়ম

ছেলে আমাকে কবরে শুইয়ে যাচ্ছে
পুরাতন ত্যাগিত হলে
নতুন মহাসমারোহে
দাঁড়াবে
পাখি উড়বে, ফুল ফুটবে
নদী বইবে

হয়তো কখনো পুরাতন
জুতার কথা স্মরণ করে
মন খারাপ হবে
নতুন জুতার
উৎফুল্লতায় খারাপ মন
দক্ষিণের বাতাসে
উবে যাবে
নতুন এসে আসন গেঁড়ে বসবে
তারপর
হয়তো
আরো সাড়ে তিন বছর

সিধেশ্বরী বালিকা

মণিকুন্তলার মাঠে আবির মাখে প্রবীণ বৈষ্ণব
আবিরের লালিমা চৈতন্যে ঢেউ তুলে
সিধেশ্বরী বালিকা পেখম মেলে নাগরদোলায়
বহুকাল পরে পাহাড়ে কুড়াতে গেলে টুপির পালক
প্রবীণ বৈষ্ণবের ভূমণ্ডলে ধূপের গন্ধ জ্বলে

দিগন্তরেখায় বিশ্বের বিস্মৃতি কীর্তি গাঁথা
তেপান্তরের ওপারে যা ছিল আরোহী লতা
দুরতিক্রম্য মুগ্ধতায় জ্যোস্না বাবলি গায়
প্রবীণ বৈষ্ণব নাভিকুণ্ডে খুঁজে কস্তরি গন্ধ
সিধেশ্বরী বালিকা অপরাহ্ণের কীর্তনে বৈষ্ণবী সাজে

ধূপের বৈষ্ণব বিভোরে মাখে কৃষ্ণের টিকা
সিধেশ্বরী বালিকা প্রেমের খেলায় কখনো রাধিকা…

দিনের দ্বৈরথ

বিকেল তখন যাবো যাবো করছে
কিন্তু দিনের পাঞ্জা
মুক্ত হতে পারছে না
সূর্যের তাড়া তবু
বর্ধিতকরণ প্রক্রিয়ার
কমতি করছে না দিন
সূর্যের তর সইছে না
দিনের সাথে মল্লযুদ্ধে রাগ হচ্ছে

সূর্যের রাগের সাথে কিছু পরিচয়
আমাদের আছে, আমরা শঙ্কিত

দিনের সামনে হাঁটু গেড়ে করজোড়ে
প্রার্থনা করছি, সদয় হও সদয় হও
সূর্যের পরিক্রমা সম্পন্ন হউক
বিশ্রামের সময় তাকে উত্ত্যক্ত
করা আখেরে ভাল হবে না
দীর্ঘ আকাল দিনের অভিজ্ঞতা
কমবেশি আমাদের আছে

বিশ্রামের পরে পুবের
আকাশে সূর্যের উদয় না হলে
দিন কি শুরু হবে, দিনের শুরু
না হলে আমাদের কি হবে

অভুক্ত তিন দিনের পরে
কাল ভোরে মসজিদে
শিন্নি আসবে, সূর্যের তর
দৃশ্যমান আমরা অদৃশ্য
ক্ষুধায় কাতরাই

আমাদের ক্ষুধার দোহাই
হে মহামহিম দিবস সদয় হউন
সূর্যকে বিশ্রামে যেতে দিন
তার পুনরুত্থানে আমাদের
তিন দিবসের ক্ষুধা মিটতে পারে

রোহিঙ্গা

মানবতার অপর পাড়ে রোহিঙ্গা
নাফ নদী সাঁতরে ঝাঁকে ঝাঁকে
ঢুকছে অস্ত্র, ইয়াবা নেশা সামগ্রী

জনস্রোত থামতেই চাইছে না
প্রজননের অধিকারে উজাড়
আবাদি, অনাবাদী জমি, বনভূমি

মানবতা অনেক হলো, এইবার
ফিরে যাও, পিতৃভূমি তোমাদের
ডাকছে, মগের দেশে ফিরে যাও

অতিথি সৎকারে আমাদের সুনাম
বিশ্ববিদিত, হায়েনা তাড়ানোয়
খ্যাতিও কম নয়, মনে রেখো

ক্ষুদ্রের সমুদ্র দর্শন

ক্ষুদ্রের সমুদ্র দর্শন

সমুদ্রের কাছে গিয়ে জল না ছুঁয়ে ফিরে আসা কি পাপ! আমার তাই মনে হয়, সমুদ্রের কাছে গেলে ভীত হয়ে পড়ি, নিজের ক্ষুদ্রতার এমন উন্মুক্ত প্রকাশে শরীরে কাঁপুনি শুরু হয়! বিশাল জলাধারের কাছে গিয়ে যদি অবজ্ঞা দেখাই, তার গা না ছুঁয়ে ফিরি, সারাজীবন অভিশপ্ত থেকে যাবো।

সুনীলের কবিতায় পড়েছিলাম সারাজীবন বয়ে বেড়ানো অভিশাপের কথা, সমুদ্রের গায়ে থুথু ফেলার দুর্দান্ত সাহস আমার কোনদিন হবে না তবু তাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে আমি বিন্দুমাত্র ফাঁক রাখতে রাজি না যদি অভিশাপ দিয়ে দেয়!

সমুদ্রের বিশালত্ব নিজের কাছে ফিরে যেতে সাহায্য করে। নিজেকে যাচাই করা যায়। প্রতিদিনের যে অহমিকা আমরা বয়ে বেড়াই, বুকের মাঝে দর্পের যে আগুন সারাক্ষণ পুড়িয়ে মারে তা দপ করে নিভে যায় সমুদ্রের ছোঁয়ায়। নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়, মনে হয় কত ক্ষুদ্র জীবন নিয়ে বাহাদুরি।

এক ফুঁকে নিভে যাওয়া জীবনের বাহাদুরি নিয়ে কিছু সময়ের জন্য সমুদ্র দর্শনে গিয়েছিলাম। আমার শহর থেকে প্রায় ৭০ মাইল দূরে ক্লির্থপ্স শহরে, সমুদ্র দেবী আজ সুপ্রসন্ন ছিলেন না। তার ভাটা চলছিল নিজের জলকে আড়াল করে তিনি রোদ্র পোহাচ্ছিলেন। ৪/৫ ঘন্টা অপেক্ষা করলে তিনি জলে পরিপূর্ণ হবেন। এতো সময় সময় আমাকে দিচ্ছে না। বড় লোকদের ব্যাপারস্যাপারই আলাদা তারা সখ্যতা করে শুধু বড় লোকদের সাথে। সমুদ্র সূর্য, আকাশ, পাহাড়কে সখা ভাবে সব খাতিরদারি তাদের ঘিরেই। ক্ষুদ্রদের দেখেও দেখে না।

সমুদ্রে গিয়ে জলের দেখা না পাওয়া অসম্ভব না, জোয়ারভাটার খেলায় বিশাল সমুদ্রও অসহায়। বিশাল সমুদ্রের অসহায়ত্ব থেকে আমরা কি কিছু শিখতে পারি! অবশ্যই পারি! নিজেকে বিশাল ভেবে দর্প করো না, এক মুহূর্তে দর্প খর্ব হয়ে যাবে!

সমুদ্রে গিয়ে জল না ছুঁয়ে ফিরা আসা পাপ কিন্তু সমুদ্রই যদি জল লুকিয়ে ফেলে কি করা উচিৎ! আমি কোন অজুহাতেই পাপের অংশীদার হতে চাই না সিদ্ধান্ত নিয়ে সমুদ্রের বুকে প্রায় অর্ধ মাইল হেঁটে জল ছুঁয়ে তবেই ফিরেছি।

আশা করছি দেবী সমুদ্র তার ক্রোধ থেকে রক্ষা করবে, তুচ্ছাতিতুচ্ছের উপর ক্ষমতা দেখানো নিশ্চয় মহত্বের লক্ষণ না।