আনিসুর রহমান এর সকল পোস্ট

আনিসুর রহমান সম্পর্কে

এই যে আমি, এই আমার কি সত্যিই কোন অস্তিত্ব আছে ? বোধ করি অস্তিত্ব এবং অস্তিত্বহীনতার এ প্রশ্ন প্রমান নির্ভর নয় । কেননা অতিশয় নগন্য এ অস্তিত্ব উপেক্ষণীয় এই সুবিশাল কর্মযজ্ঞে । কিন্তু সেই মহা শক্তিতে একাত্ব এই সকল কিছুই সর্বদা বিরাজমান । বর্তমান অবস্হান ক্ষনিকের রুপান্তরিত অবস্থা মাত্র । অস্তিত্ববান সকল কিছুই দৃশ্যমান নয় । তবুও অস্তিত্বই চিরন্তন। অন্যথায় অস্তিত্ব হীনতা থেকে অস্তিত্বের সৃষ্টি সম্ভব কি ? অসীম অসংজ্ঞায়িত ∞

আত্মচিন্তন-৮

পথ ও পথিক

একমতে একসাথে একপথে সবাই দলবদ্ধভাবে চলতে শুরু করলেই তাতে চলার পথ সঠিক হয়ে যায় না । পথের শেষে গন্তব্য ভূল প্রমানিত হলে তা পথিকের জন্য যেমন বিপদজনক তেমনি পথের শুরুতেই পথ চেনা পথিকের একার জন্যও তা কম কষ্টের নয় । কারন পথ চেনা পথিককে চলতে হয় একা । ভুল হোক আর সঠিক হোক মানুষ একা চলতে পারে না । মানুষের চলার পথ বড়ই বন্দুর ! নিঃসঙ্গ মানুষ বড় অসহায় !

পথ বড় না পথিক বড় ? এ প্রশ্নের উত্তর জটিল মনে হলেও অনিস্পন্ন নয় । পথিকই বড় । কেননা পথিক যেমন অগ্রপথিকের অবদানে পূর্বে রচিত পথ দিয়ে চলে নির্ঝঞ্জাট, তেমনি কোন কোন পথিকই আবার জীবন বাজি রেখে নতুন পথের রচনা করে পরবর্তী পথিকদের জন্য । নিজেই হয় অগ্রপথিক । পথিক বিনা পথ নিরর্থক, যেন জনহীন অরণ্য । কিন্তু পথ বিনা পথিক নয়, কেননা পথিকই পথ তৈরি করে ।

শুধুমাত্র পরিচিত পথে হাঁটলে জীবনকে যেমন জানা হয় না, তেমনি চেনা হয়না নিজেকেও । নতুন পথ আবিস্কারের সব প্রচেষ্টাই সার্থক হয় না । যে পথিক নতুন পথের রচনা করে পরবর্তী পথিকদের জন্য তাকে বিসর্জন দিতে হয় আত্মস্বার্থ, কখনো কখনো সমস্ত জীবন । কিন্তু তবুও পথের বুকে পদ চিন্হ একে একে চলা দূর্বার, দূর্দম পথিক এগিয়ে চলে গহীন অরণ্যে দিক নির্ণয়ের নেশায় । একদিন অন্ধকারের শেষে আলোকিত পথের দিশা পাবে বলে অহোরাত্রি এই ছুটে চলা !

ভালোবাসা উৎসরিত নৈতিকতা

ভালোবাসা উৎসরিত নৈতিকতা

অত্যন্ত সহজ ভাবে বললে, ভালো’কে ভালো এবং খারাপ’কে খারাপ বলতে পারা বা চিহ্নিত করতে পারাই নৈতিকতা। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে বিষয়টা আপেক্ষিক। শুধু মাত্র আপাত ভালো’কে ভালো মানুষ আর খারাপ’কে খারাপ মানুষ বলাটা যথাযথ নৈতিকতার পরিচয় বহন করে না। দরকার মানুষকে বোঝা।

প্রত্যেকটা মানুষের সাথে জড়িয়ে আছে কিছু দায়িত্ব। সে দায়িত্ব ভালোর জন্য ভালোর, খারাপের জন্য ভালোর, ভালোর জন্য খারাপের এবং খারাপের জন্য খারাপের যে কোন রকম হতে পারে। এই দায়িত্ব বোধ ও আবার ভালো খারাপ দু’রকমই হতে পারে। অথবা হতে পারে দুইয়ের মিশ্রণ। মানুষের সব রকম কর্মকাণ্ড প্রকাশ্য নয়। প্রকাশ্যে ভালো মানুষ হতে পারে অন্তরালে খারাপ অথবা অন্তরালে ভালো কাজ করা একজন ও প্রকাশ্যে খারাপ হিসেবে পরিচিত হতে পারেন।

একজন মানুষ আসলে কতটা ভালো অথবা কতটা খারাপ তা তার নিজের চেয়ে ভালো কারো জানা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে কোন মানুষের পক্ষেও খুবই রহস্যময় এবং জটিল বিষয় এটা বোঝা যে তিনি আসলে কতটা ভালো বা কতটা খারাপ। কারন ভালো বা খারাপ মানুষ মূল্যায়ণের আদর্শ মাপকাঠি যে আদর্শে তৈরি তা সব মানুষের কাছে আদর্শ নয় এবং কোন নির্দিষ্ট আদর্শ সব মানুষের কাছে সুনির্দিষ্টও নয়। আর তাই নৈতিকতার সংজ্ঞাও সব মানুষের কাছে এক নয়।

মানুষের ক্ষেত্র ব্যাতিত অন্য সকল বিষয়ের নৈতিকতাও মানুষের উপরেই নির্ভরশীল কেননা তা মানুষেরই সৃষ্টি। মানুষ নিজেদের জন্য যথাযথ আদর্শ স্থির করতে না পারলেও পারিপার্শ্বিক সকল কিছুর মূল্যায়নের জন্য একাধিক বা বহুবিধ আদর্শ তৈরী করতে সমর্থ হয়েছে যা তারা নিজেদের জন্য সুবিধাজনক ভাবে প্রয়োগ করতে সচেষ্ট।

এই ব্যক্তি আদর্শ এবং বস্তু বা বিষয়ের আদর্শের এই ব্যবধানই তৈরী করেছে মানুষের সাথে মানুষের বৈষম্য ও দ্বন্দ্ব। তাই আদর্শের প্রকৃত অর্থে সর্বজন স্বীকৃত কোন আদর্শ মানদণ্ড নেই।

কিন্তু এ জগতে মাত্র একটাই বিষয় চিরন্তন আর তা হচ্ছে ভালোবাসা। কারন ভালোবাসা সর্বজন স্বীকৃতির মুখাপেক্ষী নয় বরং নিজেই সর্বজনীন। মানুষ ভালোবাসা ব্যতীত মৃত।

নৈতিকতার জন্ম হোক মানুষের প্রতি মানুষের এবং আপনজনের, পরিবারের, সমাজের, দেশের, পৃথিবীর তথা মহাবিশ্বের প্রতি মানুষের ভালোবাসা থেকে।

ভালোবাসা উৎসরিত নৈতিকতাই শাশ্বত !

সীমানা

সীমানা

আমরা সবসময় দূরে দূরে থাকি,
আরও সত্যি করে বললে
আমিই সব সময় বহু দূরে থাকি।

কেননা আকাশ থেকেই সমগ্র ভূমন্ডল
একই সাথে দেখা যায় সবটুকু !
সময় পরিভ্রমনের সাথে সাথে ।

অথবা পাহাড়ের সুউচ্চ চুড়া থেকে
একটু তাকালে নীচে, বহুদূরে !
শুধু এ মর্তালোক নয় আকাশ ও বদলে যায় যেন ।

আর গভীর সাগর থেকে উপকুল
যেন এক তটরেখা শুধু
বিপরীতে সমুদ্র, সেতো এক সীমাহীন জলের জগৎ !

এহেন দূরত্ব থেকে মানবের অস্তিত্ব
কখনো কি খুঁজে কেউ আশ্রয় চেয়ে ?
যেখানে সকল বন্ধন, নিমিষেই নির্মোহ হয়ে ওঠে !

যতবারই চেয়েছি ভেদিতে সে সুক্ষ সীমানা
ততবারই ঠুকতে হয়েছে মাথা
সীমানা প্রাচীরে !

তাই যদি সীমানার সীমা ছেড়ে দূরে চলে যাই কভূ
তখনও কি আটকাবে মোরে সেই সে সীমানা ?
সে কিসে ?

৭ ডিসেম্বর, ২০১৬

সংযম, ত্যাগ, আনন্দ (ঈদ) ও সুখ

সংযম, ত্যাগ, আনন্দ (ঈদ) ও সুখ

রোজা বা শাওম শব্দের অর্থ সংযম তথা বিরত থাকা। সংযম এবং ত্যাগ শব্দ দুটি একে অপরের পরিপূরক এবং ত্যাগের প্রাথমিক স্তর হচ্ছে সংযম সাধনা।

ঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ এবং আনন্দ ও সুখ শব্দ দুটি একে অপরের পরিপূরক। আনন্দ হীন জীবন কখনই সুখের নয়। সুখি হওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে আনন্দিত হওয়া।

এ থেকে আমরা ত্যাগ ও সুখের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক খুঁজে পাই।

ত্যাগ দুই প্রকার হতে পারে, মানুষের সুখের জন্য ত্যাগ ও সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের জন্য ত্যাগ। তবে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে ত্যাগের পূর্বে আমাদের অবশ্যই সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ত্যাগ তথা সৃষ্টির সেবা করতে জানতে হবে অন্যথায় সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভ সম্ভব নয়।

মানুষের জন্য ত্যাগ মোটেই সহজ সাধ্য ব্যাপার না। আত্ম স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে অন্যের জন্য ত্যাগের মধ্যে সত্যিকারের সুখ আছে বলেই ত্যাগ স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। ত্যাগী ব্যাক্তি মুখাপেক্ষী নয় কোন প্রতিদানের।

কিন্তু অনেক সময় ত্যাগ করা যতটা কঠিন তার চেয়ে বেশী কঠিন হয়ে ওঠে ত্যাগার্থে স্বীয় ক্ষয় ক্ষতি মেনে নেয়া।

ত্যাগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ত্যাগী ব্যাক্তি ঠিকই বুঝবেন তিনি কার জন্য, কি এবং কেন ত্যাগ করছেন কিন্তু যার জন্য ত্যাগ করা হচ্ছে তিনি কোন দিনই বুঝবেন না তার জন্য সত্যিকার অর্থে কি ত্যাগ করা হয়েছে এবং তা কতটা কষ্ট সাধ্য ছিল।

ত্যাগের ফল ত্যাগীর জন্য কষ্টের হলেও ভোগীর জন্য সব সময়ই মিষ্টির। তাই ত্যাগীর সারা জীবনের কষ্টের দান অস্বীকার করতে ভোগীর এক মুহূর্ত সময় ও ভাবনার প্রয়োজন হয় না।

ভোগী কর্তৃক ত্যাগীর ত্যাগের এই অস্বীকৃতি কখনও কখনও ত্যাগী ব্যাক্তির নিকট ত্যাগের সুখের চেয়েও বহুগুন কষ্টের হয়ে উঠতে পারে। আর তখনই ত্যাগ হারায় তার মহিমা ও সার্থকতা।

প্রকৃত ত্যাগ তো সেটাই যা সত্যিকার অর্থেই কোন রকমের কোন প্রতিদান প্রত্যাশা করে না। মানুষের অগোচরে মানুষের জন্য ত্যাগই যথার্থ ত্যাগ। নিরবে নিভৃতে প্রতিনিয়ত এই ত্যাগীদের জন্যই পৃথিবী এত সুন্দর ও সুখের।

রোজার সংযমের ও ত্যাগের শিক্ষা এবং ঈদের আনন্দ আমাদের জীবনে বয়ে নিয়ে আসুক অফুরন্ত সুখ ।
এই কামনায় –

“সবাইকে ঈদ মোবারক”

আত্মচিন্তন-৭

আত্মচিন্তন-৭

এই যে আমরা, আমাদের কি সত্যি কোন অস্তিত্ব আছে ?

বোধ করি অস্তিত্ব এবং অস্তিত্ব হীনতার এ প্রশ্ন প্রমাণ নির্ভর নয়। কেননা অতিশয় নগন্য এ অস্তিত্ব উপেক্ষণীয় এই সুবিশাল কর্মযজ্ঞে। কিন্তু সেই মহা শক্তিতে একাত্ম এই সকল কিছুই সর্বদা বিরাজমান। বর্তমান অবস্থান ক্ষনিকের রুপান্তরিত অবস্থা মাত্র। অস্তিত্ববান সকল কিছুই দৃশ্যমান নয়। তবুও অস্তিত্বই চিরন্তন সত্য। অন্যথায় অস্তিত্ব হীনতা থেকে অস্তিত্বের সৃষ্টি সম্ভব কি ? অসীম অসংজ্ঞায়িত ∞

আত্মচিন্তন-৬

আত্মচিন্তন-৬

জীবনের প্রত্যেকটি ঘটনার পেছনে অসংখ্য ছোট বড় ঘটনা থাকে যা আমরা কোনদিনই সব জানতে পারি না । ঘটনা ঘটার আগেই বা ঘটার সময় বুঝতে পারলে জীবন এত ঘটনা বহুল হতো না নিশ্চয়ই !
তবুও, এতসব ঘটনা ঘটে বলেই হয়তো জীবন এত সুন্দর !!!
তাই নয় কি ?

প্রকৃতি এবং সময়

প্রকৃতি এবং সময়

এখানে সকলই স্থবির
কালের সূচনা যেই থেকে
সেই থেকে যেন এই প্রকৃতির নীড় ।
অথচ রাত, ভোর, সকাল, দুপুর
সকলই আবর্তিত, তবু অবিকল
শুধু এই জলের নূপুর ।

তবে কি ? আহা ! এমন সকাল
বদলে নিজেকে বারে বারে
জন্ম দিয়েছে শুধু, সেই শুরুতেই
এই ধাবমান মহাকাল ?

অথচ এ শাশ্বত জানি
কোন এক কালহীন কালে
অন্তহীন অন্ধকার হঠাৎ ফুরালে,
জন্ম নিয়েছে এই
সুকোমল মধুময় আলো-
বহু রেখা একে দিয়ে
সময়ের ভালে ।

কিন্তু এসব কথা
আমি কিইবা বুঝি ?
ক্ষণিকের এ জীবনে
দুদণ্ড সুখ যদি খুজি,
পাখিদের জলকেলি দেখে দেখে
একটা জীবন যদি যায়, কেটে যায়
কিবা ক্ষতি হায় !

সময়ের হিসেব কি
ক্ষণিক জীবন ব্যাপী
কিছু রাখা যায় ?
মহাকালে একদিন
একটা জীবন হীন
কিবা আসে যায় ?

অথচ এ অন্তহীন অকুল সময়
একে একে লিখে রাখে
ঝরে পরা পাতাদের
কত শত কথা ?
কত কচি পত্র পুস্প
বিকশিছে সুষমায়
দূর করে কত শত ব্যথা !

অতৃপ্ত এ জীবনে
যদি কিছুক্ষণ কাটে
জলে ভেসে ফুলেদের সাথে,
অথবা শিশুর মত
শীতে হিম কুয়াশায়
আলো জ্বালা উষ্ণ প্রভাতে

তবে এ জীবন তাহা
পারবে কি বয়ে নিতে
কালান্তে প্রাণ থেকে প্রাণে ?
বহু কাল পরে কেহ
শুনবে কি প্রতিধ্বনি
আজিকের সুর কোন গানে ?

১০ জানুয়ারী, ২০১৬

নিকটদূর

নিকটদূর

যদি দূরে থাকো
শত সহস্র আলোক বর্ষ
নক্ষত্র রাজির চেয়েও দূরতর
কোন এক প্রানহীন গ্রহে,
তবে প্রাণপনে চাই শুধু
অতি ক্ষীণ রশ্মি ধারায়
অতৃপ্ত অবগাহন !

যদি কাছে আসো
এমনকি সবচেয়ে নিকটতম স্পষ্ট দৃষ্টির চেয়েও বেশী নিকটতর
তবে প্রানপনে চাই শুধু মুক্তি
তোমা হতে বহুদূরে,
যদিও নেশায় বুদ্ হয়ে থাকি
কোন এক গভীরতর ঘোরে
এ কেমন অসহনীয় সুখের প্লাবন !

২৮ এপ্রিল, ২০১৬

আত্মচিন্তন‬-৫

জীবন অনিশ্চিত এবং এই অনিশ্চয়তাই জীবনের সৌন্দর্য। কিন্তু জীবনের এই সৌন্দর্য সবসময় সুখকর হয় না। সুখ এবং সৌন্দর্যের এ দ্বন্দ্ব চিরকালের। সুখকে সৌন্দর্যপূর্ণ করে তোলা এবং সৌন্দর্যকে সুখময় করে তোলাই মানুষের চিরন্তন প্রত্যাশা। এ প্রচেষ্টার সফলতাই জীবনের সার্থকতা। কিন্তু সে পথ বড়ই দুর্গম !

মানব চেতনা

একটা স্বপ্ন চুরি হয়ে যায়
রাতের আধারে,
একটা দূর্বল জাতি
বেঘোরে ঘুমায়
মস্তিষ্কে অবাঞ্ছিত উত্তাপ নিয়ে ।

মাঝরাতে ঘুমভেঙ্গে যায়-
জেগে উঠে শরীর তার
আদিম কামনা নিয়ে,
অতঃপর আবার বেঘোরে ঘুম
তৃপ্ত ক্লান্ত শরীর
এবং ঘুমন্ত মস্তিস্ক নিয়ে ।

ভোর হয়, জেগে উঠে শরীর আবার
কিন্তু জাগে না মগজ তার,
কেননা বহুকাল কেটে গেছে-
মগজ ধোলাই আর সম্মোহনে,
চুরি হয়ে গেছে যত অতীত ইতিহাস ।
এবং স্মৃতি যত জমে ছিল
পূর্ব পুরুষের উর্বর মগজে
কিম্বা শরীরের প্রত্যেকটি ডি. এন. এ তে ।

নাকি এরই মাঝে ছিনিয়ে নিয়েছে কেউ
আমার স্বাধীনতা !
আমার ঘুমন্ত মস্তিস্ক,
অনিয়ন্ত্রিত প্রবৃত্তি,
আর কামনা ও লোভের
কিম্বা দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে ?

কেউ কি কেড়ে নিল আমার মুখের ভাষা !
সেকি এই গত রাতে ?
নাকি বহুকাল আগেই কেউ-
ঢুকে গেছে মগজে আমার,
একটি একটি করে মুছে দিতে
আমার মায়ের বুলি ?
অথবা অন্য ভাষার শব্দের প্রতিস্থাপন
আমার অকেজো অথবা জীবন্মৃত
মস্তিস্কের ভাজে ভাজে ?

বুঝতে পারিনা কিছুই
কেননা ঘুমন্ত মস্তিস্ক নিয়ে
তন্দ্রায় কতটুকু ভাবা যায় আর ?
শরীরের ঘুম নেই
আছে শুধু ক্লান্তি আর অবসাদ।
তাইতো মুখের আহারই শুধু
পরিশ্রান্ত শরীর যোগায় ।

আর মনের খোরাক ?
ছিন্তাই হয়ে যাওয়া মন তো বোঝে না !
পরগাছার মত এই বেচে থাকা,
আহা ! কি সুখের ! নির্ভার,
মাথায় তো অন্তত কোন চিন্তার বোঝা নেই
এই ভেবে সুখে থাকি
সুখে রাখি প্রভুদেরও
নেই তো যাতনা,
হারালে ও দোষ কি মানব চেতনা !

২৬ মে, ২০১৭

দূরত্ব

তোমার বহু দূরে চলে যাওয়া
অতঃপর সেই দূর্গম দূরত্ব !

কি করে সে নিজেই নিজেকে অকস্মাৎ হাওয়ায় মেলালো
এবং তোমাকে করে দিল নিকটতমা আমার এতটাই যেন !
অস্থিমজ্জায় পৌষের কম্পমান শীতের অনুভূতি,
কিম্বা গ্রীষ্মের উলম্ব সূর্যের দুঃসহ উত্তাপে প্রাণ ত্যাগী তৃষ্ণায় নয় ।

বরং তা যেন জ্বর হয়ে বয়ে যায়
আমার প্রতিটি ধমনীতে-
যদিও আমি পুড়ছি আগ্নেয়গিরি থেকে উৎক্ষিপ্ত বিগলিত উত্তপ্ত লাভার ন্যায়,
তবুও এন্টার্কটিকার হিমবাহ দিয়ে যায় আমাকে এমন শীতল ও শিথিলতম অনুভব !

যা আমাকে সহস্র শতাব্দী মমি করে রাখতে পারে সুখের উপমায় ।

৮ এপ্রিল, ২০১৬

ব্লগ ভাবনা

আমি লক্ষ করেছি আমাদের এই শব্দনীড়ে এমন একজন লেখক আছেন যিনি ব্লগে খুব বেশী পুরাতন নন। ইতিমদ্ধে তার অনেকগুলো লেখা প্রকাশিত হয়েছে, তিনি অনেক লেখকের মন্তব্য পেয়েছেন কিন্তু নিজে কখনো কোন লেখককে মন্তব্য করেননি। এমনকি কারো মন্তব্বের প্রতিউত্তর ও করেননি একবারের জন্যও। কিন্তু তার লেখা বহুল পঠিত। কেন ? কারন তিনি ভালো লেখেন।

আমার মনে হয় একটা ব্লগকে জনপ্রিয় এবং একটা আদর্শ মানে উন্নিত করার জন্য ভালো লেখার কোন বিকল্প নাই। এ ব্যাপারে সবাই একমত হবেন এতে আমার কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু আমার মনে হয় এটাকে যদি একটু ঘুরিয়ে বলি যে ভালো লিখা প্রকাশিত হওয়ার কোন বিকল্প নাই তাহলে কি ভুল বলা হবে ?

ভালো লিখতে আমরা সবাই চাই, কিন্তু আমরা ভালো লিখি কি না এটা আমরা বুঝতে পারি যখন কেউ আমাদের লিখা পড়ে মন্তব্য করেন। আমরা মন্তব্য করি কম। এর মানে হয় আমরা পড়ি কম, নয়তো ভালো না লাগলে মন্তব্য করি না।

শব্দনীড়ে দেখে আসছি সকল মন্তব্য সবসময় ইতিবাচক। সবসময় ইতিবাচক মন্তব্য করতে হবে এমন কোন নিয়ম কি ব্লগ নীতিমালার কোথাও আছে ? একটা ব্লগ তখনি জমে উঠতে পারে যখন সেখানে প্রকাশিত লিখা নিয়ে আলোচনা হয়, সমালোচনা হয়, আড্ডা হয়। আমরা শুধু একটু প্রসংশা বাণী লিখেই কর্তব্য শেষ করি কিন্তু তাতে নিজেও আনন্দ পাই না, অন্যকে আনন্দ দিতেও পারি না। কিন্তু আমার মনে হয় লেখক ও পাঠকের আনন্দ ছাড়া ব্লগ জমে না।

সুপ্রিয় লেখক, একবার ভাবুন তো ভালো লিখেও যিনি খুব একটা মন্তব্য পান না তিনি কোন অনুপ্রেরণায় আরও ভালো লিখবেন ? কি ভাবেই বা নিজেকে যাচাই করবেন ? অন্যদিকে অনেক ভালো লেখকদের মত অতটা ভালো না লিখেও যিনি একই রকম মন্তব্য পান তিনি কি করে নিজের লেখার ছোট ছোট ভুল ত্রুটি সংশোধন করে লেখার মান উন্নয়ন করবেন ? তাহলে আমরা কি নিজেরাই ভবিষ্যতের একজন সম্ভাবনাময় লেখকের ক্ষতি করছি না ? যা আমাদের কারই কাম্য নয়।

শব্দনীড়ে কবিতা বেশী লিখা হয় এ নিয়ে আমার কোন বিরোধ নেই। একটা ভালো কবিতা একজন দার্শনিকের জন্ম দিতে পারে। জন্ম দিতে পারে একজন দেশপ্রেমিকের। এবং মানব অনুভুতির যে কোন দিক উঠে আসে বলে একটা কবিতা যে কোন একজন মানুষকে সঠিক উপলব্ধি দিয়ে যে কোন সময় একজন অতিমানবে রুপান্তর করতে পারে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে সাহিত্যের অন্য সকল শাখাও কোন দিক দিয়ে কোন অংশে কম যায় না। আমাদের অন্যান্য সকল বিভাগকেও লিখা দিয়ে সচল রাখতে হবে। নাকি ধরে নিবো বাংলা সাহিত্য এই প্রযুক্তির যুগে এসে ইউনিডিরেকশনাল হয়ে যাচ্ছে ? আমার বিশ্বাস আপনি যেহেতু ভালো কবিতা লিখেন, সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় আপনার কলমের রেখা বাংলা সাহিত্যকে কবিতার সাথে সাথে আরও অনেক ভালো কিছু দিতে পারবে।

কিছু ভাবছেন ? হ্যাঁ, তাহলে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল এর কথাই ভাবুন।

শেষ কথা, আমার মনে হয় আমাদের শব্দনীড় শুধু লেখকরাই পড়ে না, নিবন্ধিত লেখক ও পাঠকের বাইরেও অনেক অনিবন্ধিত পাঠকও আছেন প্রতিনিয়ত আমাদের সাথে। তাদের ভালো লাগা ও শব্দনীড়ের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হলে আমাদের শব্দনীড়ে শুধু মাত্র শিল্প উত্তীর্ণ লিখাই প্রকাশিত হওয়া উচিত। তা না হলে লেখক পাঠক সবাই আগ্রহ হারাবে। তখন ?

কিন্তু কিভাবে শুধুমাত্র শিল্প উত্তীর্ণ লিখা পাওয়া যেতে পারে বা প্রকাশিত হতে পারে ? সেই প্রসঙ্গে আরেকদিন !!!

আমি আমার এই লেখাতেও আপনাদের তীব্র সমালোচনা আশা করছি। তার আগে যে কোন রকম অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য সকলের কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থী !

আত্মচিন্তন-২

সম্পর্ক তৈরী হয়। শেষ হয় না কখনো। বিভিন্ন সম্পর্কের মানুষ গুলো বিভিন্ন সময় ঘুরে ফিরে আসে বিভিন্ন রুপে। আমাদের শুধু অপেক্ষা করতে হয় সবাইকে নতুন রুপে দেখবার। প্রতিটা সম্পর্ক প্রতিদিনই নতুন। সম্পর্কের প্রকৃতি পালটানো সম্পর্কগুলোও প্রতিদিন নতুন হয় যেমন নতুন হয় প্রকৃতি না পালটানো সম্পর্কগুলো। কেন ? কারন সম্পর্ক পাল্টায় না কখনো, পাল্টায় মানুষ !!!