আনিসুর রহমান এর সকল পোস্ট

আনিসুর রহমান সম্পর্কে

এই যে আমি, এই আমার কি সত্যিই কোন অস্তিত্ব আছে ? বোধ করি অস্তিত্ব এবং অস্তিত্বহীনতার এ প্রশ্ন প্রমান নির্ভর নয় । কেননা অতিশয় নগন্য এ অস্তিত্ব উপেক্ষণীয় এই সুবিশাল কর্মযজ্ঞে । কিন্তু সেই মহা শক্তিতে একাত্ব এই সকল কিছুই সর্বদা বিরাজমান । বর্তমান অবস্হান ক্ষনিকের রুপান্তরিত অবস্থা মাত্র । অস্তিত্ববান সকল কিছুই দৃশ্যমান নয় । তবুও অস্তিত্বই চিরন্তন। অন্যথায় অস্তিত্ব হীনতা থেকে অস্তিত্বের সৃষ্টি সম্ভব কি ? অসীম অসংজ্ঞায়িত ∞

নাটাই ঘুড়ি

নাটাই ঘুড়ি

আপনরা পর হয়ে যায় এভাবেই
যেভাবে দেখছি তোমায়,
একটু একটু করে
দূরে চলে যেতে !

আফসোস নেই কোন
কেননা আমিতো জানি
কি করে টানতে হয় সুতো,
কি করে ছাড়তে হয় ঘুড়ি
তার অবারিত সীমানার মাঝে !

কিন্তু জানোনা তুমি
কেমনটা বাধা পড়ে আছো,
সে কথা নাটাই শুধু জানে
তুমি আর উড়ে উড়ে যাবে কোন খানে ?

১১ মে, ২০১৭

মৌনতায় প্রত্যাগমন

একদা নীরবতা ভাঙ্গতেই অতিশয় উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলাম !

মৌনতা যেন মুক করে তুলেছিল আমার সমগ্র সত্তাকে
এবং আমি এতটা বধির হয়ে গিয়েছিলাম যেন,
পৃথিবী এবং সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের কোথাও কোন শব্দ ছিল না আমার জন্য ।
কোন ভাষা ছিল না কোন কিছু বুঝবার কিংবা বোঝাবার,
নির্ঝরের নি:শব্দ উৎপত্তি অত:পর সশব্দ বয়ে চলার মাহাত্ব
এবং সেই সব সুর ও লহরীমালা
নিরর্থক ছিল যেন যুগ যুগ ধরে,
কেননা আমার বধিরতা আমাকে আবিষ্ট করে রেখেছিল
কোন এক গভীতর ঘোরে !

অত:পর অকষাৎ নিজেকেই নিজের সশব্দ কষাঘাত
এবং ধ্বনির অনুপ্রবেশ কর্ণকুহরে
আমাকে সচকিত করে তোলে যেন,
জড় স্থির তনু মনে শব্দের আন্দলোন
আমাকে ভীষনই চঞ্চল করে তোলে !

বেসামাল সময়ের সাথে সাথে গতিময় জীবন
যেন স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া জলজ উদ্ভিদের মতোন,
অথবা ঘুর্ণিঝড়ের মাঝে একখানা খোলা চিঠি
এবং তার অশ্রুত শব্দমালার হারিয়ে যাওয়া,
জীবনের এই কোলাহল
পুনরায় আমাকে ভীষনই অশান্ত করে তোলে !

শ্রবন অযোগ্য শব্দত্তর তরঙ্গ
আমাকে আবারও বধির করে তোলে যেন,
নিয়ে যায় শব্দেতর তরঙ্গ বিলাসে
যেখানে নীরবতার ভাষা শুধু নীরবতাই বোঝে !

১৭ মে, ২০১৬

গা বাঁচিয়ে চলি

(একটি অরাজনৈতিক কবিতা)

দিন দুপুরে গভীর রাতে
চারিদিকে চলছে যখন
যুদ্ধ, বোমা, চাপাতি আর গুলি,
নিজের কাজে ব্যস্ত ভীষন
প্রতিক্রিয়ায় নইতো কৃপন
আমি কি আর গা বাঁচিয়ে চলি ?

বর্ণ এবং জাতীভেদে
মানুষ যখন মরছে কেঁদে
নিজের জাতই সবার সেরা বলি,
মনের মাঝে শান্তি নিয়ে
নিজের সমাজ রক্ষা করি
আমি কি আর গা বাঁচিয়ে চলি ?

দেশের টাকা যখন লোপাট
সিন্দুকেতে চাবি এঁটে
আমার ঘরে বন্ধ কপাট,
কোথায় কাহার কত আছে
সাবধানেতে হিসেব কষতে বলি
আমি কি আর গা বাঁচিয়ে চলি ?

ধর্ষিতা হয় যখন তনু
আমি ভীষন চিন্তিত হই
দুষ্টু লোকের কান্ড কি সই !
সংযমী হও আবাল বৃদ্ধা
ফর্সা, কালো সব মেয়েকে বলি
আমি কি আর গা বাঁচিয়ে চলি ?

২৪ মার্চ, ২০১৬

একজন ক্লিনারের স্বপ্ন- দুই

দ্বিতীয় পর্ব

আলমগীর ভালো ভাবেই পৌছুলো রাতে । কিন্তু রাত একটু বেশী হয়ে গিয়েছে তার ঝিনাইগাতি পর্যন্ত পৌছাতে । তার বাড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে আধ কিলোমিটার দূরবর্তী এক গ্রামে । ঠিক বাড়ি নয়, মাথা গুজার ঠাই । একটা ছোট্ট টিনের ছাপরা । একটা ঠিকানা । গ্রামের নাম আহমেদ নগর ।

পকেট থেকে মোবাইলটা একটু ভয়ে ভয়ে বের করে আলমগীর সময় দেখবে বলে । রাত বারোটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি । সে দারিয়ে আছে বাস স্ট্যান্ড থেকে বের হওয়ার রাস্তায় । চারিদিক অন্ধকার । উপজেলা শহর । এত রাতে সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে । কোন ভ্যান গাড়ি এখন আর পাওয়া যাবে বলে তার মনে হচ্ছে না । কিন্তু আলমগীরের তর সয় না । বাড়িতে নিশ্চয়ই তার অসুস্ত বাবা ও বয়স্কা মা অনেক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে তার জন্য। আজ তাদের অনেক খুশির দিন । সে হাটতে শুরু করে । ভয়টা তার আরও একটু বারে যখন সে অন্ধকারে একটা দোকানের পেছন থেকে তিনটা আগুনের ফুল্কি তার দিকে আসতে দেখে দ্রুত । ভুত টুত নাকি ? একটু পড়েই তার সমবয়সী তিনটা ছেলের অবয়ব তার কাছে স্পষ্ট হয়। তাদের হাতে সিগারেট । কাছে আসতেই বিকট একটা গন্ধ তার নাকে আসে । তার বুঝতে বাকি থাকে না এটা গাজার গন্ধ। মহাখালিতে সে যে বস্তিতে থাকে সেখানে এ দৃশ্য হরহামেশাই দেখতে হয় তাকে । অজানা আশংকায় তারাতারি সে মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে দেয় তার পেছনের দিকে । ছেলেগুলা কাছে আসে । কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে জাপটে ধরে তিনজন । একজন তার মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে । পকেটে হাত দেয় দুই দিক থেকে দুইজন । আলমগীরের দম বন্ধ হয়ে আসে । ওরা কিছু পায় না । ছেড়ে দেয় । দুজন সামনে এগিয়ে যায় দু কদম । আলমগীর স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে । আবার ফিরে আসে ওরা । আলমগীরের হাতের ব্যাগ টা নিয়ে যায় হ্যস্কাটানে । পুরো ঘটনাটা ঘটে যায় নিশব্দে, এক মুহূর্তের মধ্যেই । যাবার সময় একজন শুধু বলে দৌড় দে । ভয়ে দৌড় দেয় আলমগীর ।

অনেক দূর চলে এসেছে সে । হাপিয়ে উঠে । হঠাৎ তার মনে পড়ে ফেলে আশা মোবাইলটার কথা । সে ভয়ে ভয়ে দাড়ায়। দাড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ । দূরে একটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করে ডাকছে । দৌড়ে এগিয়ে আসছে তাড় দিকে । সে কুকুর ভয় পায় । কিন্ত এবার তার আর ভয় লাগে না । তার মনে হয় কুকুরের চেয়েও মানুষ ভয়ংকর । কুকুর প্রভু ভক্ত প্রাণী । সে নিথর দাড়িয়ে থাকে । কুকুরটা আরও কাছে আসে । নিশ্চল আলমগীর । কুকুরটা তার পায়ের কাছে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে । উঠে দাড়ায় । তারপর ঘেউ ঘেউ করতে করতে ঘুরপাক খেতে থাকে তার চারদিকে । এতক্ষণ পর সে দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে । এগিয়ে যেতে থাকে পেছনের দিকে । পেছনে পেছনে যেতে থাকে কুকুরটা ।

তার মোবাইলটা তার কাছে অনেক প্রিয় । স্মার্ট ফোন । এটা তার অফিসের বড় স্যার তাকে দিয়েছে তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে । তার অনেক দিনের সাধ পূর্ণ হয়েছে মোবাইলটা পেয়ে । অনেক কাজের জিনিস এই মোবাইল । অফিসের কাজে ফোন করা ছাড়াও গুগল ম্যাপ দেখে ঢাকার বিভিন্ন স্থান ও অফিসের ঠিকানা সে গুগল ম্যাপ দেখে বের করে । এ রহস্য সবাই বুঝতে পারে না । অফিসের স্যাররা ভাবে ষোল বছরের এই পিচ্চি ছেলে সারা ঢাকা কিভাবে চিনে ? ভীষণ স্মার্ট । আলমগীর ও নিজেকে স্মার্ট ভাবতে পছন্দ করে । কিন্তু সেটা তার একটা ফেসবুক আই ডি আছে এজন্য নয় । তার মত কয়টা ছেলে পাঠ্য পুস্তকের পি ডি আফ ভার্সন মোবাইলে রেখে অফিসের কাজের ফাকে ফাকে পড়াশুনা করে ? আলমগীরের মুরাদের কথা মনে পড়ে । সে বলে মুরাদ স্যার । সে কৃতজ্ঞতা বোধ করে আবারো । বুদ্ধিটা আমাকে মুরাদ স্যার না দিলে হয়তো আমি কোনদিন জানতেই পারতাম না মোবাইলটা আমার এত বড় উপকারে আসবে একদিন । তার বুক পকেটে ছোট ছোট চিরকুট লিখে রাখার কথাও মনে পড়ে যায় এবার । তার মুরাদ স্যারের এই বুদ্ধিটাও তাকে অনেক অংক ও প্রশ্নোত্তর বুঝতে সাহায্য করেছে। কৃতজ্ঞতায় ও বিনয়ে তার কান্না পায় এতক্ষণে । আলমগীর হাউ মাউ করে কাদে । কাদতে থাকে । কেদে বুকটা হাল্কা করে সে। তার ব্যাগে থাকা ছোট ভাইটার জন্য খেলনা বা মায়ের জন্য যে সামান্য সংসার খরচের টাকা সে নিয়ে এসেছিলো সেটা হারানোর জন্য সে কাদেনাই এতক্ষণ । কারন সে এই অল্প বয়সেই শিখে গেছে মানুষ কিছুই হারায় না যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার মনবল না হারায় ।

সে এতক্ষণ চেষ্টার পর ঠিক তার আগের জায়গায় এসে দারিয়েছে বলে তার মনে হল । অন্ধকারে সে কি তার মোবাইলটা খুজে পাবে ? সে দুই তিন পা পিছিয়ে যায় । প্রথমে বসে পড়ে । তারপর উপুর হয়ে মাটিতে হাতরাতে থাকে অন্ধকারে !

একজন ক্লিনারের স্বপ্ন – প্রথম পর্ব

৬ মে, ২০১৭

( চলবে )

একজন ক্লিনারের স্বপ্ন-এক

আজ সকাল থেকে মুরাদের মনটা খুব ভালো । ঘুমটা যদিও অনেক সকালে ভেঙ্গে গেছে কিন্ত তবুও তার অপূর্ণাঙ্গ ঘুমের ক্লান্তিটা কেন যেন আজ তাকে আচ্ছন্ন করে রাখতে পারেনি । মন মেজাজ ফুরফুরে । খুশি খুশি একটা ভাব মনের মধ্যে । মাথাটা অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক হাল্কা মনে হচ্ছে । এই অনুভূতিটা তাকে কিছুক্ষণ যাবত ভাবাচ্ছে । কেন এমন লাগছে ? ভাবতে ভাবতে মনের মধ্যে একটা ভয় তার অস্তিত্ব জানান দেয়ার জন্য আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুম থেকে জেগে উঠতে চাইছে বলে তার মনে হল । সে আরও বেশী ভয় পেয়ে গেল । তার হঠাৎ মনে হল এমন একটা সুন্দর সকাল সে অনেক দিন পর আজ পেয়েছে । এই সব কি ভাবছে সে ? যদিও বিছানা ছাড়ার পর পনেরো মিনিট যাবত সে বসে আছে চেয়ারে কিন্তু তার মনে হল এই মাত্র তার ঘুমটা পুরোপুরি ভাঙ্গলো । সে ভালোভাবে চোখ খুলতেই দেখল তার হাতে টুথ ব্রাশ ।

ইদানিং তার মাঝে মাঝেই এমন হয় । মাঝে মাঝে ঘুম থেকে উঠে তার মনে হয় তার বয়স এখন দেড় কি দুই বছর । কিছুক্ষণ খুব অসহায় বোধ করে সে । আগের দিনের কোন কথা মনে করতে পারে না সে। ঘুম থেকে জেগে ছোট বাচ্চারা যেমন কাদে তার ও তেমন কাদতে ইচ্ছে করে । বুকটা ভারী হয়ে আসে । তারপর হঠাৎ সে নিজেকে সাতাশ বছরের এক পুরনাঙ্গ যুবক হিসেবে আবিস্কার করে । কিছুটা লজ্জা এবং অনেকটা ভয় তাকে দ্রুত স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে । যদিও তার এই সমস্যা অনেক দিন আগে থেকেই হচ্ছে তবে ইদানিং কেন যেন বেড়ে গেছে কিছুটা । সে কি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে ?

নাহ ! এটা অসুস্থতা হলে এতদিন পড়াশুনা, কাজ কর্ম, চাকরি এগুলো কনটাই সে এত ভালোভাবে করতে পারত না । এই ছোট্ট জীবনে তার প্রাপ্তি খুব কম নয় । তাও আবার নিজের চেষ্টা ও পরিশ্রমে অর্জিত সব । কেউ তাকে দুই পয়সার সাহায্য করে নাই কোনদিন । এমনকি কোন পরামর্শ দিয়েও নয় । অবশ্য সে এসব আশা ও করে না কখনো । এসব ভেবে নিজেকে সান্তনা দেয় মুরাদ । সান্তনাও না । সে আসলে গর্ব বোধ করে । তার মধ্যে নিজের জীবন নিজের মত করে গড়ার মত একটা দুর্দম শক্তি আছে বলে । তার জীবন অন্যের পছন্দ ও খেয়াল খুশি মত চলে না । স্বাধীনচেতা সে । নিজের ইচ্ছে ও পছন্দের মূল্য তার কাছে অনেক বেশি । নিজের মত চলে জীবনকে উপভোগ করে সে । সে ভাবে এটাইতো স্বাধীনতা । এটাই তো সুখ । এটাই তো জীবনের আসল মানে । এটাই আসলে জীবন ।

দাত ব্রাশ ও গোসল করে তাকে দ্রুত অফিস যাবার জন্য তৈরি হতে হয় । নাস্তা করার সময় সে বেসির ভাগ দিন সকালে পায় না । সকাল সাতটা ত্রিশ মিনিটে তার অফিসের গাড়ি ইত্তেফাক মোড়ে অপেক্ষা করে । ড্রাইভার মামুন খুবই নিয়ম তান্ত্রিক মানুষ । সাড়ে সাতটা বাজার পর দুই মিনিটের বেশী সে অপেক্ষা করে না কোনদিন । কোন আদেশ কিম্বা অনুরোধ কিছুই কাজ করে না মামুনের উপর । সে একজন কর্পোরেট অফিসের ড্রাইভার । এটা তার জন্য অনেক বড় একটা গর্বের ব্যাপার । সারাদিনের এই একটা মাত্র সময় নিজের ক্ষমতাটুকুর পুরোপুরি সৎ ব্যবহার করে সে । তার উপর ট্রান্সপোর্ট সুপারভাইজার এর কড়া নির্দেশ । অনিয়ম হলে চাকরি নিয়ে টানাটানি । মুরাদের মনে হয় অফিস টাইম সকাল নয়টা হলেও তার অফিস আসলে সাড়ে সাতটায়ই শুরু হয়ে যায় । একদিন কোন ভাবে গাড়ি মিস করলে তাকে দুইশো পঞ্চাশ টাকা সি এন জি ভাড়া গুনতে হবে । যদিও এটা তার জন্য কোন বড় বিষয় না । এমনটি তার আগে প্রায়ই হতো । কিন্তু সে বিগত দুই বছর যাবত এই ব্যাপারে অনেক সতর্ক । একটা মানুষ তার মাঝে মাঝে লেট করে অফিস যাবার বদ অভ্যাসটা হঠাৎ করেই পালটে দিয়েছে । অথবা মানুষটার জন্য সে নিজেকে পালটে ফেলতে পেরেছে কিছুটা । মুরাদ এখন বুঝে টাকা মানুষের অনেক বেশী দরকার । যার আছে তার থেকে যার নাই তার কাছে টাকার মূল্য অনেক অনেক বেশী । কখনো কখনো জীবনের চেয়েও বেশী ।

গাড়িতে উঠে প্রতিদিনই মুরাদের মামুনকে এ সি ছাড়তে বলতে হয় । না বললে সে কোন দিনই নিজে থেকে ছাড়বে না । গাড়ীর গ্যাস বাঁচিয়ে কিছুটা বাড়তি ইনকাম করে নেয়ার ধান্দা মামুনের । মনে হতেই মুরাদ বিরক্ত হয় । না, তাকে তো আজ বিরক্ত হওয়া চলবে না । আজ তার ভালো দিন । নিজেকে মনে করিয়ে দেয় মুরাদ । বৈশাখ মাসের শুরুতে দিন দুই ঝর বৃষ্টির পর ভীষণ গরম পরেছে আজ । গাড়ীর সিটটা একটু হেলিয়ে নিয়ে মাথাটা কাত করে সে । গরমটা আজ একটু বেশী তাই না ? প্রশ্ন করে মুরাদ । ড্রাইভার মামুন মুরাদ গাড়িতে উঠার পর থেকে একটা কথাও বলে নাই । মুরাদের প্রশ্নের উত্তর সে এবার ও দিল না । ভাবুকের মত শুনলো শুধু । এ সি অন হল । বঙ্গবাজারের আগ পর্যন্ত গাড়িতে সে একা । এই সময়টা অন্যান্য দিন গাড়িতে উঠেই সে প্রথমে তার বাবাকে একটা ফোন দেয় । তার পর ভাই, বোন ভাতিজা, ভাতিজি, ভাগিনা, ভাগিনি, চাচা, ফুফু, মামা, খালা এদের মধ্যে থেকে অথবা অন্য যাকে দরকার তাকে ফোন করে । সারাদিন অফিসের কাজের ব্যস্ততায় কারো খোজ নেয়া হয়ে উঠে না । দিন শেষে মন মেজাজ চরম খিটখিটে হয়ে যায় । এই রকম অবস্থায় কারো সাথে কথা বলার মন মানষিকতা থাকে না ।

আজ মুরাদ ভাবলো সে প্রথম ফোনটা দিবে আলমগীরকে । ছেলেটা রাতে ভালো ভাবে শেরপুর পৌছুলো কি না খোজ নেয়া হয় নাই । কি ভুলো মন তার !

৫ মে, ২০১৭

( চলবে )

নামঞ্জুর প্রেম

নামঞ্জুর প্রেম

তোমাকে যতবারই
বলেছি ভালোবাসি
উহার সব ভূল
সব ভূল !

চেয়েও যাহা কিছু
পারিনি বলতে
তাহাই নির্ভূল
নির্ভূল !

মুখেতে বলে বলে
হয়না ভালোবাসা
এটাই সত্য
সত্য !

না বলে বুক ফাটে
তোমার চৌকাঠে
এ নহে কথ্য
কথ্য !

বুঝিয়া লও যদি
বুকেতে এক নদী
উত্তাল স্রোতধারা
স্রোতধারা !

মুখেতে বলে বলে
বলাটি শেষ হলে
হবনা দিশেহারা
দিশেহারা !

তারচেয়ে সেই ভালো
বলাটি নাই হলো
থাকুক মনে মনে
মনে মনে !

বুকের গভীরেতে
ভালো যে বাসি তাহা
বাজুক ক্ষনে ক্ষনে
ক্ষনে ক্ষনে !

এটাই শান্তি
নেইতো ভ্রান্তি
হৃদয় গহীনে
গহীনে !

আমি যে ভালোবাসি
না থাক মুখে হাসি
তবু তো কহিনে
কহিনে !

২৫ এপ্রিল, ২০১৭

কসমো (সায়েন্স ফিকশান-প্রথম পর্ব)

কসমো’র বয়স আজ ত্রিশ এ পড়লো। এই দিনটা তার কাছে বিশেষ একটা দিন।

যদিও এই সময়ের মানুষ গুলো বিশেষ দিন বলতে কিছু বোঝে না। আসলে বোঝে না বললে খুব ভুল বলা হবে। এই সময়ের মানুষদের মন ও মস্তিষ্ক প্রযুক্তির কল্যাণে ও সময়ের সাথে সাথে এতোটাই বিবর্তিত যে বিশেষ দিন বলতে কোন দিনের সাথে তাদের কোন বিশেষ আবেগ অনুভুতির সম্পর্ক নাই যেমনটি ছিল আজ থেকে এক শতাব্দী বা তারও বেশী আগে।

যদিও কসমো জানে একশো বছর আগে ঠিক এই দিনে কি কি ঘটেছিল পৃথিবী নামক এক প্ল্যানেটে। কিন্ত ঠিক এই কারনে ও তার কাছে দিনটা বিশেষ দিন হয়ে উঠেনি। দিনটি বিশেষ কারন কসমো জানে ঠিক আজকের দিনে একটা বিশেষ ঘটনা ঘটেছিল তার প্রপিতামহের জীবনে।

জীনতত্ত্ব নয়। নয় টাইম ট্রাভেল। এমনকি শব্দ তরঙ্গের ড্যাম্প অসিলেসন অ্যান্ড রেসিডুয়াল এনার্জি রিট্রিভাল থিউরিও নয়। নয় ফসিল তত্ত্ব। যদিও এসব থিওরেম এর উপর কসমো’র আছে অগাধ দখল। কিন্তু সে জানে বিজ্ঞান অনুমান কে প্রমাণ করে এবং প্রমাণের উপর আবার অনুমান, আবার প্রমাণ। কোন কোন অনুমানকে শতভাগ প্রমাণ কারা গেছে ভাবা হলেও তার উপর অনুমান কোনদিন থেমে থাকেনি। তাই সে আজও মানব জাতির অতীত ইতিহাস এবং ভবিষ্যৎ এনালিসিস করার জন্য সবচেয়ে বেশী প্রাধান্য দেয় সব ধরনের মুদ্রিত বইকে যার খুব অল্প সংখ্যকই পৃথিবীতে অবশিষ্ট আছে দ্যা ওয়ার অব নলেজ এর পড়ে।

(চলবে)

আত্মসমর্পণ

talpatar_putul-1b

আমার সকল যুদ্ধ যখন তোমার সাথে
কি আর সাধ্য যুদ্ধ করার শূন্য হাতে ?
অস্ত্র গুলো রখলে জমা অস্ত্রাগারে
কেউ কি তখন সেনাপতির ধারটি ধারে ?

যতই সাজাই গোলাবারুদ রনক্ষেত্র
বৃষ্টি যখন ভিজিয়ে যায় তোমার নেত্র
আমি তখন শূন্য মাঠে বজ্রাহত !
কেউ কি পারে করতে আঘাত তোমার মত ?

সৈন্য যারা গড়বে দেয়াল দুর্ভেদ্য
গড়লে সন্ধি তাদের সাথেই অবিচ্ছেদ্য
তখন আমি কোথায় পালাই ? নিস্তার নাই !
এক পায়েতে ভর করা তালপাতার সেপাই !

চারিদিকে বাজছে যখন রণ বাদ্য
দুহাত দিয়ে কান ঢাকার কি আছে সাধ্য ?
ঢাল তলোয়ার ছাড়া এক নিধীরাম সর্দার
কে আর তখন ধারে বল তার কোন ধার ?

জানতো কি কেউ এমনি হবে ষড়যন্ত্র ?
সকল শক্তি বিকল করবে তন্ত্র মন্ত্র !
নীল নকশার গোপন নথি রয় কি গোপন ?
যুদ্ধ যদি করতে পারে শত্রু আপন !

২০ এপ্রিল, ২০১৬

কথা’র কথা

সব কথা শেষ করে দিতে পারি
অহর্নিশি বলে বলে বলে,
অথবা কিচ্ছুটি না বলেই
নিমেষেই কেটে দিতে পারি সব কথার শিকড় ।

কথারা শষ্য দানার মত
উর্বর হয় যবে মনের জমিন
অনুকুল আলো, হাওয়া, জলে,
কথারা শেকড় ছাড়ে
হৃদয় অতলে ।
এবং কথার গাছ ডাল পালা নিয়ে
বেড়ে ওঠে কচি, গাঢ় সবুজে সবুজে ।

কথারা মৃত হয়ে যায়
ঝরে পড়ে শীতের শুস্ক পাতার মতন
তখনও মর্মর ধ্বনী বাজে বুকের ভিতরে,
তবে সব ধ্বনি কথাতো নয়
কথা গাছ মরে গেলে কথারা বাড়েনা আর
শুধু থেকে যায় এক বিপন্ন প্রশ্ন চিন্হ
অব্যক্ত বিস্ময় নিয়ে
হৃদয় গভীরে !

১০ ডিসেম্বর, ২০১৬

কথা

কথারা ফুল হয়ে ফোটে
কথারা সুবাস ছড়ায়,
কথারা কলি থেকে ঝরে পড়ে কভূ
কথারা ধুলায় লুটায় ।

কথারা টক, ঝাল, মিষ্টি, তেতো
কথারা পাকা কিবা কাচা,
কথারা কথা নয় কখনও কখনও
কথারা ঠিক করে মরা কিবা বাঁচা ।

১০ ডিসেম্বর, ২০১৬

ঘোর

ঘোর কাটেনা
তাইতো এমন
রাত কাটেনা
দিন কাটেনা
ভোর কাটেনা
ঘোর কাটেনা !

ঘোর কাটেনা
তাইতো এমন
অমাবশ্যা
গহন রাতে
চাঁদ হাসেনা
ঘোর কাটেনা !

ঘোর কাটেনা
তাইতো এমন
কদম ফোটা
বাদলা দিনে
সব ভিজে যায়
মন ভেজেনা
ঘোর কাটেনা !

ঘোর কাটেনা
তাইতো এমন
মধ্য দুপুর
ক্ষরতাপে
সব পুড়ে যায়
মন পুড়েনা
ঘোর কাটেনা !

ঘোর কাটেনা
তাইতো এমন
শিশির স্নাত
স্নিগ্ধ ভোরে
সুর্য হাসে
মন হাসেনা
ঘোর কাটেনা !

১৬ জুন, ২০১৬

গদ্য ও পদ্য কবিতা

পদ্য এবং গদ্য কবিতার মধ্যে কোনটা কবিতা আর কোনটা কবিতা নয়, আমি মনে করি এ যুদ্ধ অবান্তর। কারন কবি যেমন কবিতা তৈরী করে তেমনি পাঠক ও তৈরী করে। কিন্তু পাঠক কবি ও তৈরী করে না আবার কবিতা ও তৈরী করে না।

কিন্তু সেটাই কবিতা যেটা পাঠকের বোধগম্য হয় এবং ভালোবাসা অর্জন করতে পারে। সুতরাং এই দুই পক্ষের মিথস্ক্রিয়ায় একটা কবিতা আসলে কবিতা হয়ে উঠে। কবিতাতে ছন্দ থাকতেই হবে এমন কোন ধরা বাঁধা নিয়ম নাই। কবিতার ভাবই আসলে নির্ধারণ করে দেয় সেটা গদ্য হবে না পদ্য আর এটা কবি মাত্রই উপলব্ধি করেন। গদ্য বা পদ্য নির্ধারণ করে না সেটা কবিতা কি না। গদ্য কবিতা কবিতার মর্যাদা না পেলে সেটা বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা পেত না।

আমার মনে হয় এই দুইয়ের মিশ্রণেও কবিতা হতে পারে। কবিতার প্রাণ হচ্ছে তার ভাব ও অনুভুতি। গদ্য বা পদ্য শব্দ চয়ন কবিতার আশ্রয় মাত্র।

প্রকৃতি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

আজ হতে কোন এক দিন
যদি, এ ধরণীতল
তুমি আমি হীন
হয়ে যায়, শূন্য বিরান
প্রকৃতির এই গান
সেদিন কি হয়ে যাবে ম্লান ?

অথবা সেদিন কোন যন্ত্র মানব
বুঝবে কি এই ভাষা প্রকৃতির ?
কবি ও যেখানে নীরব।
সেই দিন কোন এক শিল্পির তুলি
পারবে কি এঁকে দিতে
এ রাঙ্গা গোধূলি ?

মানুষ যতটা নিখুত নয়, ততোটাই
বারংবার যদি মোরা চাই
তবে কি মূল্য বল আর,
নির্ভুল হতে চাওয়া,
ভুলে ভরা মানব সত্ত্বার ?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি,
কোন এক দিন কেড়ে নেয়
এই মোর আবেগের নদী
তবে কি দোষ দিব তার ?
যদি আমি নাই থাকি আর !

২৩ জানুয়ারী, ২০১৬

গোলক ধাঁধা

এক জীবনের গোলক ধাঁধা দিলাম তোমায়
যখন আমি থাকবোনা আর
মিলিয়ে নিও
আমার থাকা, না থাকা আর
থেকেও না থাকার মাঝে
মিল অমিলের ব্যাবধানটা !
মিলিয়ে নিও ।

১৬ মার্চ, ২০১৭