চারু মান্নান এর সকল পোস্ট

আমার সন্ধ্যাবতী গাঁও

আমার সন্ধ্যাবতী গাঁও

এমন আষাঢ়ে,
ঝর ঝর ধারায় বর্ষার ঢল!
কাদা জলে সোদা মাটির গন্ধে ভরে
আমার সন্ধ্যাবতী গাঁও; ভিজে সারা
যেন সজনে ডালে বসা কাকভেজা কাক।

ঘরের চালে ঝর ঝর বৃষ্টি
গরিয়ে পরা থৈ থৈ জলে,
উঠান ভাসে যায়রে!
কুয়াতলায় কলাবতীর ঝাড়ে বৃষ্টির ছোঁয়া
লাল দলের ফুলে,
এ কোন মৌনতা দোল খেলেরে!

শুকনা ডোবা ছিল
এখন জলে ভরা; আগাছাদের ডুব সাঁতার!
হেলেঞ্চা দল তার বিছিয়েছে ডগা
জলের লাগাম টেনে টেনে; স্বচ্ছ জলে
ঝাঁক ঝাঁক ব্যঙগাচি সাঁতার কাটে দল বেঁধে!
একদল হাসের ছানা নির্মল শুদ্ধ স্নানে মাতে।

১৪২৪/২৭, আষাঢ়/বর্ষাকাল।

পঞ্চম০১

পঞ্চম০১

আষাঢ়ে জোছনা

আষাঢ়ে জোছনা,
সোদা মাটির গন্ধে ভেসে উঠে
দুপুর রাতে! রাত নিঝুম, ঝম ঝম
থেমে থেমে ঝির ঝির বৃষ্টি ঝরা রাত।

জোছনার গহিন অঙ্গ যানান দেয়
কাদা জলের চিক চিকে রহস্য;
পথিক পথে পা রাখতে
কাদায় ডুবে যায় আচানক দৌনতায় বেবস!
জোনাক জোনাকিরা আগেই বেবস হয়ে
ঘাসের আঁড়ালে ঝিমিয়ে রয় জলকাদা মেখে।
লাউ মাচায় জোছনার লুকোচুরি
ঝিলমিলিয়ে বৃষ্টির মৌনতা বিলায়।

বাঁশ ঝাড়ে,
বাদল রাতের মৌনতা ভাঙ্গে ঝড়ো বাতাস
পাতার ফাঁকে জোছনার লুকোচুড়িরতে
বাঁশঝাড় যেন ভুতুরে আস্তানা সাজে।
জোছনা আলোয় ভেসে উঠে
একঝাঁক সাদা বক নির্জিব ভিজে ভিজে
জোছনার আলো গায়ে মাখে।
======

যেন সবুজ সুরম্য নগর

যেন সবুজ সুরম্য নগর
বর্ষার জলে ভিজে সিক্ত, সুরম্য ফুটপাতের ইটের ফাটলে
বেশ সবুজাভা আগাছার দৌরাত্য।
শুষ্ক বালির গহনে
বীজের দৌরাত্য সোদা ফুটবার, তাইতো জলের সিক্ততায়
অঙ্কুরোদগম বীজের মৌনতার মিছিল।
দুর্বোধ্য পাচিলের ফাটলে,
কবে কোন বীজ? পাখির ঠোঁটে গরিয়ে ছিল নিমিত্তে
তাই আজ পাচিলের গা জুড়ে সবুজ অঙ্গন।

ঘাসের আঁড়ালে লুকিয়ে ছিল
যে লজ্জাবতী লতা, তা বেশ উদ্যান গহনায় সাজে
ফুটপাতের কাঠ বাদামের শিকড় জুড়ে।
=====

পথিক ভ্রম

পথের বাঁকে,
আজ কোন পথে?
পথিক চলতে পথে ক্লান্ত! বর্ষার জলে ভিজে
পথ ডুবেছে ভেসে গেছে জনারন্য
সুবোধ ফসল ভেসে গেছে; আঙিনা ডুবে
সজনে গাছটায় গড়ায় জল পচন ধরে
মরে ভেসে যায় বানের জলে।

তাই পথিক ভ্রমে ভাসে
পথের দিশায় নন্দন ধ্রুবতারায় আশায়
চেয়ে চেয়ে পথের নিশানা খুঁজে ফিরে।
আর কত পথ? দিতে হবে পারি
আদি অন্ত পথিক না জানে!
=====

জলজ আঁধারে

বর্ষার বাদলে ক্ষণজন্মা চাঁদ
ভেসে উঠল আজ আকাশ ভরা মেঘের
জলজ আঁধার ঠেলে;
যেন তোমার সেই জলছবি! কত বার!
বার বার হারিয়েছে জলের মিহি ঢেউয়ে
পালিয়েছে সিক্ততায় কেঁপে কেঁপে
যদি পাছে হারিয়ে যায় সব!

কিন্ত এই যে বিরহী আষাঢ়ে, জোছনা দ্যাখো!
ঠিক তোমার উল্টো!
যতই জড়াও না মনের ভাঁজে
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায় লাজে; পালিয়ে যায় না মোটে
ভাব না একবার তারে সই করে মনে,
বুঝবে, তখন যাতনা আমার
সবটুকু যায় ভেসে জলজ আঁধারে।
=========

কৈশর বিহঙ্গ

কৈশর বিহঙ্গে,
কতই না যাতনা আমার সয়েছো মা?
জলে ডুবে ডুবে ভেসে ভেসে
তোমার কথা ভুলে! কৈশর সখ্য লয়ে।

পারিনি তখন বুঝিতে
কত যাতনা দিয়েছি তোমায়?
শক্ত হাতে ধরেছ হাত, গামছায় মুছায়ে মাথা
পাছে বাছার অসুখ করে খাসা।

কষ্ট কখন গেছে;
মিহি মলমের মালিশের মতো মিশে
ভাতের নোলা হাতে
হাসি মুখে খাইয়েছো
ভিজে আঁচল মাখা গায়ে।
========
১৪২৪/২৪, আষাঢ়/বর্ষাকাল।

বর্ষা এলো সাঁঝে

বর্ষা এলো সাঁঝে

এমন বর্ষায়
জলের ছোঁয়ায়! স্বপ্ন, রাঙা রসে
মেঘে মেঘে যায়রে উড়ে
ঐ যে সুদূর পানে।

ষ্ফটিক দানায়
জল ছল ছল! বিরহ ডাকে সারা
জলের ঢেউ উছলে পরে
সিক্ত হাওয়ার উজান ঠেলে।

মেঘ বালিকা মেঘে মেঘে
ঝর ঝর ধারায় ঝরে! সাত রং এ
রংধনু ঐ পুব আকাশে
মেঘের গায়ে আলোর খেলায় নাচে।

বর্ষা এলো সাঁঝে
সিক্ত আলোর! মিঠাই সাজে
বাদল সাঁঝে জলের আঁধার
গাঁও ঢেকেছে মেঘে।

১৪২৪/২২, আষাঢ়/বর্ষাকাল।

বর্ষার জলে বুনো গন্ধ

বর্ষার জলে বুনো গন্ধ

বর্ষার জলে হিজল ডুবেছে
ডুবেছে নলখাগড়ার বনও
রিমঝিম বাদলে ডাহুক ডাহুকি
পাখা ঝাপটায় জলের নন্দন রিদমে
এলো মেলো হাওয়ায় ভেসে আসে
বর্ষা জলের বুনো গন্ধ;
চুড়ই জোড়া পালক ফুলিয়ে
তারই মৃদু নেশায় ঝিমায় ঝুল কার্নিশে
এমনি কাক ভেঁজা বাদলে।

বানের ভাসান নতুন জলে
পানকৌড়ি ডুবে ডুবে সারা,
ঠোঁটে তার গেঁথে দুলে;
নতুন জলে চকে চকে
সোনালি রাঙা শাড়ি পড়া পুঁটি মাছ;
আগাছার ঝোপঝাড় ডুবেছে বানে
দুই একটা ডগা জলের স্রোতে
তির তির করে কাঁপে;
হিজল পাতার হলুদ অঙ্গে সবুজ শেওয়া।

১৪২৪/২১, আষাঢ়/বর্ষাকাল।

ঈদের সপ্তক

ঈদের সপ্তক

বাঁকা চাঁদের ঐ যে হাসি

আত্মশুদ্ধির এমন মাসে
আত্মার সুখে সবাই হাসে,
মাগফিরাতের সুবোধ টানে
দো’য়া মাগি মোরা দু’হাত তুলে।

বাঁকা চাঁদের ঐ যে হাসি
সপ্তাবর্ণা আকাশ জুড়ে,
ফিরে এলো বছর ঘুরে
মিলনের ঐ শিকড় জুড়ে।

বাঁকা চাঁদের মিষ্টি বর্ণ
সোনামুনিরা যেন সোনালী স্বর্ণ,
আসবে নেমে ঈদের খুশি
মুসলমানদের ঐ ঘরে ঘরে।
=========

মায়া

এমনি মোহ মায়ায় ছুটছি সবাই শিকড়ের টানে। যে জন্ম সুধা। মাটির আপ্লুত সোদা টান। মায়ার বাসুমতি মাতুত্বের শৈশবের মায়া। মায়ার টান মাতার, পিতার, পিতামোহের। যে মায়ায় ধুলোমাখা শরীর নিয়ে উঠেছি কোলে; পা টলে, পরে যায় আবার আঙ্গুল চেঁপে সোজা হয়ে দাঁড়াবার বারং বার যাতনা সয়ে। অম্লমুধুর সুধা পানে, এ কোন অমৃত সুখ আনে?
=======

যদি আস ফিরে

যদি আস ফিরে,
দেখে যেও, সেই শৈশবের
খড়ের চালের বাড়ি।
উননের চালটা চালকুমড়ার গাছে ঢাকা
উনুনের দরজায় ঝুলে আছে
বুনো ধুমার ফালি।

উঠানের চার পাশ বেশ ক্ষয়ে গেছে
মাটি ধুসে গেছে;
ডালিম গাছটার
শিকড় বেড় হয়ে এখন একহারা।
কুয়াতলায়,
ইটের শরীর খসে খসে ক্ষয়ে গেছে
কলসের তলায় বেশ গভীর খন্দক।

বাড়ির আশে পাশে
পথ ঘাটের বেশ পরিবর্তন
আগের সেই উঠানের সমুখের পথটি এখন
মুছে গেছে;
বৌ কথা কও সজনে গাছটা আর নেই
কুয়াতলার কুয়ার পানি শুকে গেছে।
=======

মনে পরবে তোমায়

মনে পরবে তোমায় খুব
কৈশর প্রাণ ছোঁয়া বলে কথা!
জানি আসবে না কখনও
ফিরবে না আর
তোমার ব্যাতয় সোনালী পুরভা
এখন যে যাচে; নন্দন মোহ
এ মোহ ছাড় বার নয় যাপিত কালে
যদি পার মুছে ফেল!
চন্দনার মূর্হুতগুলো মনে করে করে
সাঁঝের লালিমায় যখন
জেগে উঠে ডাহুক ডাহুকী
সোদা মাটির গন্ধ স্নানে।
========

নিত্য বুনো প্রেম স্বেচ্ছায় বিলায়

যে ঝুল বারান্দায়,
আকাশ সঙ্গ! নিত্য বুনো প্রেম স্বেচ্ছায় বিলায়
সেই সান্নিধ্যে জেগে ছিলে বহুকাল।
এখনতো মেঘ প্রলাপ
বৃষ্টির ছোঁয়া আপ্লুত করে! নিরিবিলি দিনে রাতে
বহ্নিশিখার হাওয়ার মতো।

আপ্লুত মেঘ ঢলে পরে,
আদি অন্ত না জেনে! সিক্ততায় ডুবে মারে আকুলতা
যে ছোঁয়ায় আজও বাঁচা।

সেও তো বাঁচে
মেঘ বালিকার প্রবণচনায়! আক্ষরিক সুখ খুঁজে খুঁজে
নিঃস্ব সেই মেঘের বন্ধু বনে যায়।
=========

বহুকাল ধরে জেগে

বহুকাল ধরে জেগে
কেন জানি গুমোট?
আমার অতলান্তিক ঘর বাস।

নন্দন তার মোহ
ছুঁয়ে থাকে ক্লান্ত;
তাই বোধ হয় দূর্নিবার প্রদাহ
নিত্য পোড়ায় চিতার মোহ মায়ায়।
খিড়কি সোদা বন্ধ রাখি
যদি আলো ডুকে যায়
অপঃরাহ্নের!

যদি চোখের পাতা মুদে আসে
নন্দন মায়া যায় পালিয়ে;
বহুকাল ধরে জেগে
সমাপ্তির ইতিকথা টানব বলে।
=======

পথে চলি আর না চলি

পথে চলি আর না চলি। পথে যাই আর না যাই। তবুও আমি পথের ধুলায় নিত্য মাখি। পিছন ফিরে তাকাতেই, বালুয়ারি ধুলা আমার চোখে মুখে বৃষ্টির ছোটার মতো আপ্লুত করে। বালুয়ারি ঝেরে বেরিয়ে আসি নতুন পথের নিশায়। যদিও নতুন পথের দিশা কন্টকমুক্ত নয়। তয় পথের আলোয় জীবন বাঁচে। পথে চলা তাই মোহ মায়া খুঁজে ফিরে আপন দ্বারে।
==========
১৪২৪/০৮, আষাঢ়/বর্ষাকাল।

এমনি বিনাশ যেন হে স্বপ্নচারী

এমনি বিনাশ যেন হে স্বপ্নচারী

ডানা ভাঙা ফড়িং এর দুরদশা দেখে
সবুজ ঘাস ব্যথিত মনে বলে,
বেশ তো উড়তে আমার ফুলে বসে বসে!
রং লাগা ডানায় আমার ফুলের রং
হাওয়ায় খেলতো বেশ;
নেচে উঠত মাদল হাওয়ায় আমার চিকন ডগা।

তুই আজ নেতিয়ে শরীরে আমার
ধুকপুক জানে;
জানি চলে যাবি আপন মনে!
অথচ উড়তে গেলে কারো বাড়ন
শুনিসনি কখনো! হাওয়ার মাতাল নেশায়
তুই তো মেতে ছিলি দুলে দুলে
আত্ম গরিমায় ছিলি তুঙ্গে; আপন হারা

মৃত‌্যু যখন এমনি
শতরঞ্জির জাল বিছানো; তবে কেন?
ভুলে যাস, নন্দন চূঁড়ায় ঠাঁই মেলা ভার
উড়তে উড়তে বিষম কাল পাহারায়
এমনি বিনাশ যেন হে স্বপ্নচারী।

১৪২৪/০৭, আষাঢ়/বর্ষাকাল।

বুঝিতে বুঝিতে ক্ষয়ে যায়

বুঝিতে বুঝিতে ক্ষয়ে যায়

দিনে দিনে আমার আমিত্ব
যাচ্ছে মিইয়ে, পথের ধুলো মতো
আবার বৃষ্টি জলে যাচ্ছে ক্ষয়ে; সনাতন নিয়মে
নতুন নতুন পরিভাবায় টুটে যায় নিত্য
জলের গায়ে বৃষ্টির ফোটার মতো মিইয়ে যায়।

পাপ পূণ্য যাপিত কালের নিত্য সঙ্গ
বুঝিতে বুঝিতে ক্ষয়ে যায়; শুন্য থলি
তলানিতে সর্বনাশের চিহ্ন রয়ে য়ায়
মিইয়ে যায় সনাতন রশির টানে
তার টান ধরে জোয়ার ভাটার; উজানে খেয়ামাঝি
শক্ত দাঁরে বৈঠা ধরে ভাটার আগে ফিরবার তরে।

তীরে ফিরে
আবার ফিরবার সঙ্গ
অপেক্ষায় পথ চেয়ে রয় পথিক,
ভাটির অঙ্গে সিধেছে তার পথের দিশা
ভানুমতির মেঘের অঙ্গে বহু রুপের জঙ্ঘা
খসে পরে তার রুপঅঙ্গ;
কামুকি বৃষ্টির নিমিত্তে
মিইয়ে যায়
মিলিয়ে যায়
নিঃস্ব; নিঃসঙ্গ সপ্তবর্ণা।

১৪২৪/০৫,আষাঢ়/বর্ষাকাল।

একাকার এক বিবর্তন কালের আঁধার

একাকার এক বিবর্তন কালের আঁধার

বার বার আমার শূন্যতা
আমাকে ফেরায়; নতজানু কালের প্রদাহ
তোমার শূন্যতা তোমায়।

এমনি বিনিসুতার মালা
চাইতে তোমায় নিক্তি নিয়ে ঢলে পরা সাঁঝ
যতই গিঁট বাঁধে! শুদ্ধতায়
তা, আবার সেই শূন্যতায় মিলায়।

বৃষ্টি ছোঁয়া মুর্চ্ছনা
মিছেমিছি কাঁদায় তোমায়, বির্মষ জলছবি
বাদল দিনের সিক্ততায়
বেদনায় জোড়ায়; সেও তো মু্ছে যায়
আবার তোমার সেই শূন্যতায় ফেরা।

নীল হারা আকাশ রৌদ্রে পোড়া
আমার তোমার শূন্যতা!
একাকার এক বিবর্তন কালের আঁধার।

১৪২৪/৩, আষাঢ়/বর্ষাকাল।

নতুন সহবোধ

নতুন সহবোধ

জানি তুমি এই পথ মাড়াবে না কখনও
কারন, এই পথ এখন বন্ধ্যা
আগাছায় ডুবেছে পথের শরীর!
পথের নিশানাটুকু মুছে গেছে, ক্ষয়ে গেছে
নিজে নিজেই।

তোমাকে এই পথে বেশ বেনান
অচেনা আস্তরে যেন পুরনো কিছু প্রলাপ
সেঁটে রেখেছে!
সবুজ লকলকে ডগার ঘাস ফুল;

নতুন সহবোধ
ছাই রঙ্গা মেঘের সাথে আমরণ
ছন্নছাড়া এক জীবন ব্যাপ্তি!
বৃষ্টির ফোটায় কড়া নারে; শুদ্ধ স্পর্শ
আমলকি বন মলিনতায় ভাসে
এ কোন মুছে যাওয়া রীতি?
ভুলের প্রক্ষালনে,
বার তুমি কেন ফিরে আসো?

১৪২৪/২৫,জ্যৈষ্ঠ/গ্রীষ্মকাল।

এমন দিনে ভুতু সোনা

এমন দিনে ভুতু সোনা

জ্যৈষ্ঠ মাসের ভেপসা গরম
কাঁঠাল পাকায় মজে,
পাকা আমের বোটা খুলে
গাছের তলায় পরে।

লিচু পাকে গাছের ঝোপায়
শেয়াল চেয়ে রয়,
কুকুরটার ঐ ডাক শুনে
লেজ গুটে পালায়।

এমন দিনে ভুতু সোনা
মামার বাড়িতে নাই,
শহুর মুখো পাকা ফলে
শেষ ভরসা তাই।

১৪২৪/১৫, জ্যৈষ্ঠ/গ্রীষ্মকাল।

পাপ পূণ্যের বৃত্তে ঠাঁই

পাপ পূণ্যের বৃত্তে ঠাঁই

পাপ পূণ্যের বৃত্তে ঠাঁই
হামাগুড়িতে ধীর লয়ে যায়;
পাপ থাকে সদা তটস্থ!
বৃত্তের শরীর ঘিঁসে
আচমকা সুযোগ পেলে;
সর্বনাশে যায় মিশে।

পূণ্য সেতো লুকিয়ে রয়
বৃত্তের গহিন জলের শুদ্ধ ঝিনুক কোলে;
মুক্তা বিলাবে বলে।

তীর্থ বিনে ধরাধামে
পূণ্যের নিকাশ কেমনে মিলে?
সর্বনাশে হারা জীবন
পাপ পূণ্যের দোলা চলে।

১৪২৪/১৪, জ্যৈষ্ঠ/গ্রীষ্মকাল।

কাঠবিড়ালী মগ ডালে

কাঠবিড়ালী মগ ডালে

ফলের দেশে ফলের মাস
রং ছড়াল হেসে,
পাকা ফলের গন্ধ ভারি
জিহবায় জল আসে।

জাম জামরুল লিচু আম
তাল কাটলে সাঁচ,
কাঁঠাল কাম রাঙা করমচা
ঝালে মাখা কাঁচাআম।

রৌদ্র পোড়া বোশেখ মাসে
গাছে আম পাকা,
বাদুর ঝুলায় লিচু ঝুলে
টসটসে রসে পাকা।

কাঠ বিড়ালী মগ ডালে
ঠোঁট রাঙা জামে,
জারুল বনে শিয়াল মামা
ফুলের গন্ধে ভাসে।

১৪২৪/১৩, জ্যৈষ্ঠ/গ্রীষ্মকাল।

যে ছিল নৈশব্দে চাওয়ার দ্রোহ

যে ছিল নৈশব্দে চাওয়ার দ্রোহ

তুমি ছিলে দর্পণে
আচ্ছাদিত নন্দন লীলাভূমে নৈশব্দে
দর্পণ সমুখে এদিক ওদিক ঘুরে
দেখেছিলে তোমাকে; শ্রীসূরম্য অপরুপ লাবন্য
টোল গহন জুড়ে চিবুক বিন্যাশ
কদাচিত তিল ছিল বাম ঠোঁটের কোনে।

দর্পণ সদা চমকিত
বিহব্বল উল্লাসে মজেছে তারই রুপে
ক্ষণকালের তরে; বিভ্রুমে কেটে যায় কিছু কাল
ফিরে পায় তারই নিঃস্ব রুপে!

রুপ হারা দর্পণ
বিরহ নন্দন রুপে; পোড়া মেঘের ছায়ায় মিলায়
একদিন ছিলে তুমি এমন দর্পণে
কত কত অবয়ব মুছে গেল?
চেয়ে চেয়ে দেখে যাতনা বুকে
সেই অবয়বটিই যাচে!
যে ছিল নৈশব্দে চাওয়ার দ্রোহ।

১৪২৪/১১ জ্যৈষ্ঠ/গ্রীষ্মকাল।

সনাতন সেই শৈশব মুর্তিমান আজও জীবন সাজায়

সনাতন সেই শৈশব মুর্তিমান আজও জীবন সাজায়

ঐ যে সন্ধ্যাবতী গাঁও,
অগোছালো ছিল বেশ, রাস্তাঘাট বিদঘুটে
জল কাদায় ঠাসা।
বাড়ি ঘরের নেই শ্রী, মাটির দেয়ালে
খরের চাল! চালে সবুজ লাউয়ের ডগায়
যেন ছামিয়ানা ছাওয়া।

উঠানে সজনে গাছটায় লতানো সবজির
আগাছা ধরে আছে পেঁচিয়ে;
পুঁই মাচায় চড়ুই ঝাঁকের খুনসুঁটি
দক্ষিণমুখি মাটির বারান্দায়,
এলোমেলো বাতাসের অনামি ছোঁয়া
অনাবিল প্রশান্তির নিবির আশ্রয় যেন।

গরুর গাড়ির চাকায় কাদার প্যাক
উঁচু নিচু কাচা মাটির পথে; পায়ে হাঁটা বেশ বিদ্রুপের
তবুও নন্দন সুখে ছিল ঠাসা!
সনাতন সেই শৈশব মুর্তিমান আজও জীবন সাজায়

১৪২৪/ ১০, জ্যৈষ্ঠ/গ্রীষ্মকাল।

কালের দর্পণ খাঁজের ভাঁজে সাজে

কালের দর্পণ খাঁজের ভাঁজে সাজে

যুগে যুগে নতুন নতুন স্বপ্ন জোগান
সেখানে বিস্তর চিন্তার খোরক বটে,
নতুন নতুন ধারার উপলব্ধিতে বাঁচার প্রয়াস।

অতীতে এটা ভুল ছিল, এই রকম হওয়া চাই!
তাই তো স্বপ্ন বোনা, মিথ ভুলে যাই।

স্বপ্ন দ্যাখো,
বাঁচার এই উত্তাল মহা সাগরে!
উতল ঢেউয়ে;
তোমার ডিঙ্গা জলে ভরে টুইটুম্বর
হাল ছিঁড়ে গেছে
ফেরার পথের নিশানা বেভুল দিশাহারা।
নক্ষত্র আলোয়,
মুছে যাওয়া তারারা মুচকি হাসে
প্রত্যহ খসে পড়ে
মাস্তুলে উজান হাওয়ার টান অনুভবে।

একি দ্রোহ নিত্য
বাঁচার সমীরুণে আঁজলা ভরা জলে
মিথে মিথে,
কালের দর্পণ খাঁজের ভাঁজে সাজে।

১৪২৪/০৮, জ্যৈষ্ঠ/ গ্রীষ্মকাল।