চারু মান্নান এর সকল পোস্ট

সন্ধ্যাবতীর জলছবি

সন্ধ্যাবতীর জলছবি

কোথায় সে যে হারিয়ে গেল?
কত কাল আগে? পরে, তার হদিস মেলা ভার
সকাল সাঁঝে সজনে ডালে
পাকপাখালির চঞ্চলতার বিভ্রমে;
সে তো চঞ্চল চপলা! সন্ধ্যাবতীর কৈশর বেলা।

সাঁঝ আলোয় ডোবার ধারে নয়ন তারা হাসে
আধো আলোর লুকোচুড়ি মেখে;
জোনাক জোনাকি আলোর প্রদীপ জ্বেলে
কত সুরের গান বাজে পোকা মাকড়ের
সাঁঝ ঘনালে সন্ধ্যাবতীর মৃত্তিকা শরীর জুড়ে।

শুনশান মিহি শব্দে মাথার সিঁথানে
আঁধার রাতে ছায়া অপসরা জেগে থাকে
সোনার কাঁঠি রুপো কাঁঠি ছোঁয়াবে বলে;
তোমার বিরহ যাতনা রাতের মর্মর আঁধার জুড়ে
কল্পনা বানে নিত্য পোড়ায়, সন্ধ্যাবতীর জলছবি।

১৪২৪/৬ জ্যৈষ্ঠ/গ্রীষ্মকাল।

জননী আমার!

জননী আমার!

তোমার মায়ার আঁচল
আজ আকাশ জোড়া ধসূর রৌদ্র
হাওয়ার তাপে নিত্য পোড়ায়;
না পাই কোথাও তোমার মমতার
ছায়া তল!

যোজন যোজন ঘুরে ফিরে
মমতা ভরা তোমার মুখ খানি
দেখিতে না পাই সমুখে আমার।
তুমি যে হারিয়ে গেলে
সন্ধ্যার তারা মতো ঐ আকাশের
নক্ষত্র বেলায়।

দিনে রৌদ্রে পোড়া,
তোমার মায়ার আঁচল হারা!
রাতভর নক্ষত্র পাড়ায় হাতরিয়ে মরি
তোমারই মুখখানি দেখিবারে।
যত দূর যায় চোখ; পরতে পরতে
খুঁজে খুঁজে মরি নক্ষত্রের ভাঁজে ভাঁজে
তুমি বিনে ঘুম নাহি আসে
ঢেলে দাও, জননী আমার!
আশ্রয় ছুঁয়ে বেঁচে উঠি বারং বার।

৩১, বৈশাখ/গ্রীষ্মকাল/১৪২৪

কেন যে ভুলে গেলে?

কেন যে ভুলে গেলে?

কেন যে ভুলে গেলে?
যাতনা দিয়ে প্রাণে
আমলকি বনে সেই বেদনায়
নিত্য ঝির ঝিরে বায়
ঝরে সদা বিরহী পত্র।

সাঁঝ ঘনালে
জোনাক স্বজন ঝাঁক বেঁধে
আলোর মশাল জ্বালে
সেই যাতনায় আঁধার রাত
জোছনার মায়া খুঁজে।

এমনি যাতনা সয়ে সয়ে
কত, কত কাল?
গেল পেরিয়ে সুখ দুখের বানে
প্রচ্ছদ সেই একই তুমি!
রইলে বুকে যাতনা চেপে।

১৪২৪/২৮, বৈশাখ/ গ্রীষ্মকাল।

অহর্নিশি যে কবিতা আঁকে

অহর্নিশি যে কবিতা আঁকে

অহর্নিশি যে কবিতা আঁকে
চিত্র ধুলোর বানে।

সে এক নন্দন প্রথায়!
যাকে শুধোয়;
বললে তুমি মুচকি হেসে
সে তো প্রেম অাক্ষান!
যাতনা, বিরহে, উৎফুল্ল, সুখে
স্মৃতির ভারারে; এখন শুধু
যাতনা সয়ে সয়ে বাঁচে।

সেই তো মুখ ফিরেলে
আদি অন্ত না ভেবে।

কোজাগরি চাঁদ যাতনা সুঁপে
আঁধার রাতের মর্মমূলে;
ভাবেনি সে তো কোন কালেই!
রাত ফুরাবে হেসে।
যদ্যবি আঁধার গেল টুটে
নিঃস্ব বিরহ বাজে বুকে,
আলোর স্নানে শুদ্ধ ভেবে গানে
সাত রং মোহে আবার স্বপ্ন বুনে।

১৪২৪/২৫, বৈশাখ/গ্রীষ্মকাল।

সব কিছুতে বন্ধ্যা সময়

সব কিছুতে বন্ধ‌্যা সময়

সব কিছুতে বন্ধ‌্যা সময়
শুধু পাখির ছানাটি উড়বে উড়বে বলে
ডানার ঝাঁকুনি ছড়ায়;
আকাশে বাতাসে নীলাদ্রি স্বপ্নঘন
উম্মাতাল মাতাল হাওয়া,
সর্বনাশা মাতাল নেশায় উড়ে
উড়ে উড়ে ঐ মেঘের
ছত্র ছায়া!
জলের ছোঁয়ায় ঢেউ খেলে যায়।

আদি অন্ত যেন একাকার
রৌদ্র পোড়ায়; মগন মৌনতায়
সূত্র ধরে আঁকা পথ
এখন বিভ্রান্তির অনুযোগে ভূগে।

কই, সেই তো বললে!
হারিয়ে গেল সময়;
সময়ের এখন ফুরাবার পালা
নিত্য নতুন পথ পুনঃজন্ম বার বার
কালের পথে সেইতো, অনির্বাণ।

১৪২৪/২৪, বৈশাখ/গ্রীষ্মকাল।

জলছবি

জলছবি

জলছবি ভাসে
জলের ঘ্রাণে, উম্মাতাল ঢেউয়ে
থিতিয়ে যায় নীল জলের কাঁপন
কদাচিৎ জোছনা মুখো বিদ্রুপ
আঁটে জলের সিঁথানে।

বাতাস ছুঁইয়ে যায়
উতল জলের ঢেউ, জোছনা ছায়া মাখে
গভির রাতের ভ্রূম যাতনা।
সবে তার ঘুম টুটে যায়
রাতের মোহ মায়া সোদা টানে;
জলে তার অন্যরকম জলছবি!
জোছনা ছায়ায় দোল খেলে যায়।

ধূসর প্রান্তরে,
একা একা আঁচল উড়ায় শুন্য বলয়ে
আঙ্গিকে তার তারই জলছবি
জলের ঘ্রাণে!
আপ্লুত বদনে মিইয়ে যায়
মিলিয়ে যায় সন্তপর্ণে।

১৪২৪/১২, বৈশাখ/গ্রীষ্মকাল।

জলজ ঘ্রাণে জেগে ওঠা

জলজ ঘ্রাণে জেগে ওঠা

জলজ ঘ্রাণে জেগে ওঠা,
পানকৌড়ির মতো
এই মাত্র জলের তল ছুঁয়ে!
নিঃশ্বাস ফুরিয়ে যাবার আগেই;
কদর্য কোলাহলে ফিরে আসা।
বাসন্তিকা,
প্রলেপ মাখা সুকোমল গায়ে
সবে শুরু রোদের প্রদাহ!

তুমি ফিরবে বলে
দ্যাখো, কাদা জলে নয়নতারা ফুটেছে
জলজ ঘ্রাণে কেমন সতেজ হয়ে উঠেছে!
এখন নন্দন কথা দ্রোহ
ঋতুর বিদ্রুপ এরিয়ে চলে।

তুমি ফিরবে বলে,
সুরেলা মেঘের দলে মৃদঙ্গ বাজে
আমলকির সবুজ পাতায় ঝিরঝিরে হাওয়া
দূর নীলিমায় ভালোবাসার স্বপ্ন বুনে।

১৪২৪/১০, বৈশাখ/গ্রীষ্মকাল।

যাপিত নগর কোলে

যাপিত নগর কোলে

বোশেখের রৌদ্র তাপে
পুড়ে গেল সব ওম; বসন্ত ভালোবাসায়
যতটুকু ছিল রসাল তরতাজা!
তাও চুঁয়ে চুঁয়ে নিঃশেষ
মাটির শরীরে যেন ধুলোর আকরে কঙ্কাল।

চৌচির মাটি ফেটে
কড়া রোদে পোড়া; তৃঞ্চায় কাকের ঠোঁট
হা করে রয়, যত্রতত্র জলের ফোটার খোঁজ
ডাবের কাটা খোলে কাকের ঘাড় গুলে যায়
ডাবের শাঁস খুঁটে খুঁটে জল সেচা গলায়।

তেমনি পুড়ছে,
নগর মোদের আলিশান দালান কোঠা
ঝকঝকে রং এর প্রলেপে তামাটে রং বুনেছে
রৌদ্র মেঘের ছায়ায়!
ঝকঝকে ফুটপাতে কৃঞ্চচুড়ার বাহারি ছায়ার দর্পণ
সোনালু ফুলের হলুদ বাহার যেন;
বির্নিমানে পথিকের নির্মোহ পথ চলা।

যদি ভুলে যেতে চাও, যাপিত নগর কোলে
ফেলে আসা দগ্ধপুরান, খতিয়ান মুছে ফেলে
পোড়া বাঁকি যতটুকু এখন! থাক স্বপ্নে জিইয়ে
নগর যে বাঁচতে শেখায়, পোড়া যন্ত্রণা সয়ে।

১৪২৪/৭, বৈশাখ/গ্রীষ্মকাল।

কোন সে বায়ু অতীত ছিল?

কোন সে বায়ু অতীত ছিল?

কোন সে বায়ু অতীত ছিল?
তারে চেনা দায়!
নিত্য তার আসা যাওয়া
অতীত কথা কয়।

দেহ ছেড়ে পালিয়ে গেলে,
কোন সে রূপে যায়?
মেঘ উড়িয়ে ঝড়ের বেগে
কোন সে বায়ু গায়।

পিছন ফিরে বায়ুর কদম
ধীর লয়ে চলে,
কে বা তারে উতল করে?
আশ্রয় বুনে দেহে।

উজান, ভাটি, উপর, নিচে
মাত্রা ধরে রয়,
অসীম মায়ায় শূন্যে ভুমে
কোন সে রূপে রয়?

০৫, বৈশাখ/গ্রীষ্মকাল/১৪২৪

কেন জানি নিত্য পুড়ি দুঃখবোধে!

কেন জানি নিত্য পুড়ি দুঃখবোধে!

কেন জানি নিত্য পুড়ি দুঃখবোধে!
আঁজলা ভরা জল,
চুঁয়ে চুঁয়ে নিঃশেষ নিমেষেই;
আঁকড়ে ছিল যতসামান্য
তলানির মানদন্ডে অতিসামান্য!
তৃঞ্চাবোধে পুড়ে, নীল হারিয়েছে আসমান
কদাচিৎ ধূসর বিদ্রুপ আঁচল উড়ায়
মেঘের কার্নিশে।

ফিরবে বলে, তোমার গারস্থ্য ছামানা
উন্মূখ চেয়ে চেয়ে প্রহর গুনে।
মুখিয়ে থাকে চঞ্চল বাতাস,
গ্রীষ্মের তাপদাহ!
ঈশান কোনে কালো মেঘের গর্জন।

গুমোট গরমে,
মেঘেদের তীব্র ছুটাছুটি
মেঘে মেঘে মেঘের ছায়ায়
রৌদ্রের লুকোচুরি।

০৪,বৈশখ/গ্রীষ্মকাল/১৪২৪

প্রেম আর অপেক্ষা

প্রেম আর অপেক্ষা

খেয়াঘাটের মাঝির মতো
পথিকের জন্য দিনভর চেয়ে থাকা।
ভাটায় জল শুকালে
জোয়ারের জন্য চেয়ে চেয়ে

অনাবিল বৃষ্টির স্পর্শের জন্য
উদাস মেঘে চাতকির মতো
হয়নি একটু করুনা তারও!
পঞ্চমী চাঁদ ডুবা আঁধারে
জোনাকির কাছে আশ্রয় চেয়ে
রাতের প্রণয়ে গভিরতা বাড়ে।

ফিরবে বলে,
তোমার পথ চেয়ে চেয়ে দিনমান
কলঙ্ক বুকে চোখে সর্ষেফুল বুনে।
যতটুকু ছিল ছিন্ন প্রেম তোমার!
বন্দকি চিরকূট আঁধার, দিনে দিনে
তাও যাচ্ছে ক্ষয়ে কালি কাগজের
ধূসর প্রত্যয়; নোনা ধরা চুনসুরকির
বিপন্ন দেয়ালের মতো খসে পরে
বিলাসি প্রেমের সাক্ষি বুনে।

১৪২৩/২৩, চৈত্র/বসন্তকাল।

ধুলোর আস্তর ঝেরে বেড়িয়ে আসে

ধুলোর আস্তর ঝেরে বেড়িয়ে আসে

ফটো এ্যালবাম
গুচ্ছিত ছিল যত স্মৃতি; পুরানো আকড়
পাতা উল্টালেই যেন ইতিহাস কথা কয়।
প্রজন্ম পরম্পরা
যেন পিতামহের আদেশ; বাসি হয় না আজও
কত কত চিরকুটের বন্ধ্যা বাহক?
অথচ দিন বদলের কাল
সেই বাহক টানেনি কখনও; খুঁজিতে তারে
আপাত মস্তক জুড়ে খতিয়ানে নাম নাই তার।

বাদ বাকিরা ফেরারি
চিরকুটে কোন চিহ্ন আঁকা নেই; তাই ফিরে নাই
চন্দনের গন্ধ নিয়ে উড়ে যায় মেঘের ছায়ায় বাতাস।
উত্তরাধিকারি নই
ফটোর দায়ভার তা কালের পরম্পরা; ইতিহাসের পুচ্চ
ধুলোর আস্তর ঝেরে বেড়িয়ে আসে, তেল রং পোট্রেট।

১৪২৩/২২, চৈত্র/বসন্তকাল।

খুঁজে ফেরে আবারও

খুঁজে ফেরে আবারও

খুঁজে ফেরে
ক্ষুধার চাতুর্য্য জন্ম কাঁদার কোলে
আদর সোহাগ কত কত চুম্বন!
ঠোঁটে, গালে, কোপলে; ঐ চাঁদ মামারও
টিপ চাইতে আহল্লাদে
জননী কোলে স্বর্গধাম।

খুঁজে ফেরে আবার
যৌবনের প্রদাহ বিদ্রুপ; ক্ষুধার সাথে
যোগ হয় ভোগের চাতুর্য্য!
বিলাসী স্বপ্নভ্রম; কাঁদায়, পোড়ায়, অহর্নিশি
শঙ্খচিলের খসে পরা পালকের মতো
স্বপ্ন বিলায় রৌদ্রে পুড়ে।

খুঁজে ফেরে আবারও
যাতনা এবার শরীরে জেঁকে বসে
সাথে ক্ষুধাও; যাপতি বোধ!
হয় চিতায় পুড়ে
না হলে বিলাসী ভোগে অন্তধাম!
ক্ষুধার জ্বালায় আত্মহনন।

১৪২৩/২১, চৈত্র/বসন্তকাল।

পথের যাতনায় পথিক

পথের যাতনায় পথিক

চাইতে তারে
দূর বহু দূর ঘুরে
কত তেপান্তরের গা পেরিয়ে?
হাসি কান্নার;
হাওয়ার তালে তালে
ঋতু বয়ে যায় মৃদু লয়ে।

তারে খুঁজতে
পাপ পূণ্যের আঁধার সংসয়
পূণ্য জ্বলে নক্ষত্র বিভাসে
আঁধারে খুঁজি তারে কিসের তরে?
যদি মঙ্গোলা’লোকে
বসবাস তারই;
তয় কেন হাহুতাশে রক্ত খুনে?

খুঁজিতে খুঁজিতে তারে
দিন যে ফুরালো, আর কত পথ?
যেতে হবে র্নিমোহ শূন্য লয়ে!
মুছে কিসে? পথের যাতনায় পথিক

১৪২৩/২০, চৈত্র/বসন্তকাল।

কেতাদুরস্ত নাগরিক

কেতাদুরস্ত নাগরিক

নগর জুড়ে এখন,
দক্ষিণা হাওয়ায় মাখে বসন্ত প্রলেপ; মেঘের ছায়ায়
বসন্তের রৌদ্র ঘুরে বেড়ায়।

বনে বনে সেই কোকিলের ডাক,
ঝোপ ঝাড়ের মাতাল বুনে যায়; ইটসুরকির নগরে
ফুটপাতে বুকুলের ঝোপে সেই একই ডাক।
নন্দন কু-হু কু-হু যখন সেই স্বর
বহুতল ভবনের মসৃণ গাত্রে; প্রতিধ্বনিতে ছড়িয়ে পরে
নগরের অলি গলিতে ভোর, সাঁঝে।

অমোঘ নেশায় বাতাবিলেবুর সবুজ
ছত্রে ছত্রে চৈত্র রোদের; আলো ছায়ার আলপনা আঁকে
যখন হেঁটে চলে সভ্য নগরে, কেতাদুরস্ত নাগরিক।

থুমকে দাঁড়িয়ে যায় পথে,
কোথা হতে ভেসে আসে? এমন নন্দন সুর!
শৈশব, কৈশর, স্মৃতির আড়মোড়া ভাঙ্গে
কেতাদুরস্ত নাগরিক বুনে যায়; মেঠো পথে ধুলো মাখা পথিক।

১৪২৩/১৯,চৈত্র/বসন্তকাল।