চারু মান্নান এর সকল পোস্ট

সময় কালের সেই যে সন্ধ্যাবতি গাও

সময় কালের সেই যে সন্ধ্যাবতি গাও

সে কি এখনও উচ্ছ্বলতায় হাসে? অযথা এমনি এমনি। নকল সুরে পাখিদের ডাকে ব্যঙ্গ করে, হো হো করে হেসে আটখানা। পুকুর ঘাটে সদা তৎপর সাঁতার হইহুল্লুর। বৌ ঝিদের আদরের পঞ্চসখি ছিল যে! নদের নন্দনপুরে। সময় কালের সেই যে সন্ধ্যাবতি গাও। যে গাঁয়ে ছিল তারই নাড়িপোতা, শৈশব, কৈশর, যৌবন।

কনকাঞ্জলি লেপনে সেই যে বিদায় নিয়ে চলে গেল! সে কি আর ফিরেছে কখনও? যদি ফিরে আসো কখনও! দেখে যাও, নন্দন পুর এখন স্মৃতিভ্রম। আলখেল্লায় বাহারি, নেই কোন চিহ্ণ আর তোমার মায়া মাখা বন্য অতীত! তয় এসেছে নতুন বসন্ত। দক্ষিণা খোলা হাওয়া বয় নির্লিপ্ত।

21, ফাল্গুন/বসন্তকাল/১৪২৩

সে কি ভুলেছে সবই?

সে কি ভুলেছে সবই?

সে কি ভুলেছে সবই?
যাতনা অভিমান ছিল যত
যৌবনে সোদা গহনজুড়ে; সাপের খলস
খসে পড়ার মতো!
বার বার যন্ত্রণায় পুড়েছি কি শুধুই একা একা?
পলাশ শিমুলের ঝরে পড়া পাঁপড়ি
বিধুঁর বেদনায় ধুলো মাখে গায়; ছুঁয়ে যায়
দক্ষিণা বায়ু! উদাস মেঘ উড়ে যায়
নীলের পর্দা উড়িয়ে।

ঝুল বারান্দায় নিলাজ হাওয়া
বার বার ছুঁয়ে করেছে এলোকেশ, সুবর্ণ মুখটি
ঢেকেছে কিয়াদংশ; আঙ্গুল চেপে সরিয়ে কেশ
মেঘের পরে নীলের দো’টানায়
পড়েছে ভুলে, আচমকা ভাবনা কড়া নারে।

২০শে ফাল্গুন/বসন্তকাল/১৪২৩

জলের ফোটায় এ কোন বৃত্ত?

জলের ফোটায় এ কোন বৃত্ত?

জলের ফোটায়
এ কোন বৃত্ত?
ঝর ঝর ঝরনার
অহমিকা আঁকে; বৃত্তের
প্রপাতে মরমী শরীর যেন
আত্মজা আবিষ্ট,
গুঞ্জন মাখে।
সুদূর পরাহত যাতনা যত
কালের অঙ্গে অঙ্গে
জল সিঞ্চনের মতো
নপুর ঝঙ্কার বুনে।

ভুলে থাকা রমনীয় মার্ধুয্য
বসন্ত ঢেলেছে তারই গায়ে
যত পার কবিতা বিলাও
পাপ পণ্যের জনম
খুঁড়ে খুঁড়ে।

08,ফাল্গুন/বসন্তকাল/1423

বন বিঁথিকা

বন বিঁথিকা

নিত্য কালে বন বিঁথিকা, ঋতুর ভাঁজে ভাঁজে সাজে। কখনো নাঙা। কখনো সবুজ পত্র পল্লবে। আবার ফুলে ফুলে সারা। আবার ফলের গন্ধ ভাসে ঋতুর মর্মগুনে। মন মাতালো পলাশ শিমুল, দক্ষিণা হাওয়া গায়। আগুন ঝরা পলাশ বনে, মন উদাস হয়।

বন বিঁথিকায়, ঝরা পাতার মর্ম বেদন; আঁধার রাতে জোনাক জ্বলে। জোছনা বিভাস এক ফালি, বন বিঁথিকায় স্বপ্ন বুনে। হাজার তারার রাত্রি যখন; বন বিঁথিকার সিঁথান জুড়ে রুপো কাঁঠি।

04, ফাল্গুন/1423/বসন্তকাল।

প্রভাতফেরীর গান

প্রভাতফেরীর গান

শোকের বসন
মা জননীর, চেতনার অন্যেষণ
ফাগুন এলেই, বাজে প্রাণে
প্রভাতফেরীর গান।

এলো মেলো
দক্ষিণা হাওয়া, লাগল পলাশ বনে
রং এর ফাগুন, জ্বাললো আগুন
চেতনা বিনির্মাণে।

২১শে এলো বইমেলা
নতুন বইয়ের গন্ধ, পৃথিবী জুড়ে মা জননীর
একই বুলির ছন্দ, অ আ খ র ব্যঞ্জনায় বাজে
প্রভাতফেরীর গান।

১৪২৩/০৩, ফাল্গুন/বসন্তকাল।

সন্ধ্যাবতী গাঁও

সন্ধ্যাবতী গাঁও

ঐ দেখা যায়, ঐ যে তোমার গাঁও। উজান পথে ঐ দিগন্ত পাড়ে। সন্ধ্যাবতী গাঁও। দক্ষিণা বায় কলাপাতা কাঁপা গাঁও। উজান পথের একটু খানি বাঁক পেরুলেই। উঠানে সেথা গরুর বাতান, খড় ভূষি খায়। লাউ এর মাচায়, সাদাফূল দুলে।

সন্ধ্যাবতী গাঁও। তোমারই শৈশব, কৈশর যৌবন আঁধার মাখা গায়। গরুর লাল বাছুরের, অদম্য ছুটাছুটির কৈশর। ডোবার ধারে, বরশিতে মাছ ধরা, ফড়িং ডানার, প্রজাপতির পিছে ছোটে ছোটে, যৌবন পায়ে, পদাবলী আঁকা সন্ধ্যাবতী গাঁও।

1423/02, ফাল্গুন/বসন্তকাল।

শুন্য হাতে পেতেছে দু’হাত

শুন্য হাতে পেতেছে দু’হাত

শুন্য হাতে পেতেছে দু’হাত। কর্দয্য আঁধারে। রাতের তিমিরে। ভরা অমাবশ্যায়। চাঁদ উঠবে না আজ। তাই তো রাতের মহারনের বিদ্রুপ আঁটে শুন্য মহা শুন্যে। যে খানে জীব জড় প্রভেদ বিফল। এক চিলতে আলোর মোহলীলা।

আঁধারে চেয়ে চেয়ে, চক্ষু আজ আঁধারে ঢেকেছে। এ যে আঁধার রাতের কারুকাজ। চম্পক বনে, যে টুকু ফুলের বিভাস ভাসে, সে টুকুও আজ হরিলুটের প্রদাহে আক্রান্ত। সন্তর্পনে পা টিপে টিপে আঁধার মুচকি হাসে।

শূণ্যতার মোহবৃত্তে

শূণ্যতার মোহবৃত্তে

ঐ ঘুড়ি উড়ে, মাঘের বেলা শেষ। কৃষকের ক্ষেতের আইলে। দুরন্ত কিশোর জটলা। বাতাসের উজানে। লাল নিল। আরও কত রঙ? আকাশ মাতায় উচ্ছ্বলতায়।

উত্তরের সিক্ত হাওয়া, জটলা বাঁধে ঘুড়ির গায়ে। শঙ্খচিল ঘুড়ির মাথার উপরে, ম্রিয়মান মৌণতায় ঘুড়ে। সাথি হারা বির্বণ সুখ হাতরায়। শূণ্যতার মোহবৃত্তে।

১৪২৩/২৩, মাঘ/শীতকাল।

এক দিন ছিল সে তো! লজ্জাবতীর সহচর

এক দিন ছিল সে তো! লজ্জাবতীর সহচর

এক দিন ছিল সে তো! লজ্জাবতীর সহচর। সরষে ক্ষেতে, হলদ পাঁপড়ি ঝড়া আবিরে, লজ্জাবতী যেন চুপসে সারা। মাড়িয়ে গিয়ে ছিল কাঠবিড়ালীর খুনসুঁটির মত্ততা।

সেই মত্ততাই, একদিন কাল হল তারই। চাওয়ার অসিম সাহসই একদিন প্রেম স্বপ্ন ভাসাল। লজ্জাবতীর আদল খুলে, ঠোঁট লেহনে হাসাল। লজ্জাবতীর পাতার শিরা উপশিরায় এ কোন কুঁকড়ে যাওয়া অমানিশায় হারাল?

শিশির ভেজা কাঁপানো জল মুছে, আলোর নৃতে আড়মোড়া ভাঙে। যেন নদীর মোহনার কোলাহল। জাগে সুখ, জাগে বিস্ময়, উজার খরায় নামে বর্ষা। চুঁয়ে পড়া জলে, মৃত্তিকা সোদা ভিজে, বীজের অনাহারি সিক্ততায় অঙ্কুরোদগম।

১৪২৩/১৯, মাঘ/শীতকাল।

চন্দ্রাবতীর পদ্য বুনুনে

চন্দ্রাবতীর পদ্য বুনুনে

যত কথা ঐ আকাশে!
লুকিয়ে রয় নক্ষত্রের খাঁজে খাঁজে
চুপি চুপি, চন্দ্রাবতীর পদ্য বুনুনে।

গ্রহন লাগা রাতে যদি!
স্বপ্নগুলো সব যায় পালিয়ে বনে
একলা রাত; শূণ্যে হাত পেতে
দাড়িয়ে রয় পৃথিবীর সিঁথানে।

অমোঘ নেশার ভ্রম টুটে যায়
আমলকির বনে বাতাসের গানে।
শিশির চুঁইয়ে জল গড়িয়ে পরে
এ কোন বিষাদ যাতনা?

১৪২৩/১৭,মাঘ/শীতকাল।

আজ সারা দিন আকাশ দেখা হল না

আজ সারা দিন আকাশ দেখা হল না

আজ সারা দিন,
আকাশ দেখা হল না!
দেখছি,
ভোর হল সকাল হল
টান টান শরীরের আড়মোড়া ভেঙ্গে
দাঁতব্রাশ
মুখ ধৌত; তার পর নাস্তা
ফিট ফাট,,টাটা বাই বাই
অফিসের জন্য পালাই!
যান বাহন পাড়ি,
ঠিক ঠাক অফিসে ফিরি
এই যে ঢুকা, চেয়ার আর ডেস্ক
স্যার সাতটা বাজে;
টনক নড়েছে এবার, সাঁঝ ঘোর একটু যেতে হবে
নীলক্ষেত! রং তুলি আর ড্রইং খাতা
মেয়ের স্কুলের ফরমাইস
রাস্তার নিয়ন আলোতে
ভেসে যায় আকাশ নীলের
মৌণতা।

১৬, মাঘ/শীতকাল/১৪২৩

সোনাতন জল হাওয়া

সোনাতন জল হাওয়া

সোনাতন ঘূর্ণি,
বালুয়াড়ীতে উত্থলিত ঝড়
কালের বির্বতনে,
বার বার ফিরে আসে;
যেমন ফিরেছে,
পরিযায়ি ঝাঁক ঝাঁক পাখি!
হাওয়র, বিল, ধানের ক্ষেত,
বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ
বনবাদারে কোলাহল।

উত্তরের ক্ষেপ,
জল ছুঁয়ে হাওয়া
ঢেউয়ে বিলি কাটে;
হাসের ছানাদের ডুব সাঁতারে
ঢেউয়ের জট টুটে,
পদ্ম পাতায় ঠাঁয় বসে
সোনামুখো ব্যঙ
জলমাকড়ষা জলের উপর
উচ্ছ্বলতায় হাঁটে।

ডুব সাঁতারে পানকৌড়ি
শীতের জলে কাঁপে,
নেতিয়ে পড়া পাখার পালক
মেলে ধরে রৌদ্র ওমে,
হেথায় সেথায়!
জল কাঁপাল হাওয়া,
দেখতে তারে
এলোমেলো ছন্নছাড়া।

১৪২৩/১৪, পৌষ/শীতকাল।

চেতনার পুনঃবিন্যাস

চেতনার পুনঃবিন্যাস

মাঝে মাঝে,
মোহমন্ত্রে আবিষ্ট
মোহগ্রস্থ; সময় ক্ষণ মিলে না
এমনি এমনি কি সব ঘটে?
ঘটে যাওয়ার পর
চেতনা যানান দেয়;
এ কি সর্বনাশ?
আর যদি আনন্দের কিছু ঘটে
সুখে বুক ভরে,
চেতনা ফিরে না পিছে
এমনি হওয়ার ছিল বলে;
তৃপ্তি খুঁজে ফিরে।

রৈখিক রেখা,
টানতে টানতে সাদা পাতার
কোণ ধরে উপরে উঠে যায়!
সিমানা পেরুনোর অপেক্ষায়
রেখার সমাপ্তির টান!
এতটুকু রেখায়,
বিচিত্র সব আঁকিবুঁকি ধরে থাকে
মিল অমিলের, বিচিত্র বর্ধণ!
প্রলেপ ছোঁয়া রং তুলির; মৃত্তিকায়
সবুজ ঘাসে, চেতনার পুনঃবিন্যাস।

১৪২৩/১৩, পৌষ, শীতকাল।

আকাশের নীল বদলেছে খানিক

আকাশের নীল বদলেছে খানিক

যত দূর চোখ যায়,
আকাশের নীল বদলেছে খানিক
কুয়াশায় ঢাকা চাদরে
আস্তরণে বিভেদ জুটেছে; শুধু আঁধার
উপর নিচে,
সমুখে পিছে, ডানে বামে।
কুয়াশায় আলোর খেলায়
মৃদঙ্গ বাজে, পুচ্চ নাচায় দোয়েল
ডোবার কাদা জলে শালিকের ঝাঁক
পৌষের আমেজে।
নলখাগড়ার বনে,
ডাহুক ডাহুকি কুয়াশার জলে ভিজে
মাঝে মাঝে গা ঝাড়া দিয়ে
উঠছে, যুগোল আহ্লাদে।

সময় বদলায়,
পৌষ সেই একই; ঋতুর মৌনতায় বাঁচে
ভুঁইয়ের আইল পথ মিলিয়ে গেছে
হাজারও পদভারে।

১৪২৩/০৭, পৌষ/ শীতকাল।

সেই পৌষে

সেই পৌষে

সেই পৌষে,
খড়ের পালায় আগুন জ্বলছিল
পিঠা পোড়ানোর আগুন, কুয়াশার শীতে
ওম নেয়া দু’হাতের তালু পিষে।
তাবর ভোর জুড়ে,
সে কি উল্লাস! কিশোর, বুড়ো, ছোটদের
চালের আটায় ঝাল মরিচ মিশিয়ে
এক ধরনের ঝালের পিঠা।
কুয়াশায় ঢাকা চারিদিক
সূর্য ওঠার ঢেড় বাঁকি, পোলই, চাকের, জালে
বিলে দল বেঁধে মাছ ধরার
আয়োজনে সবাই শরিক।

আজকের পৌষে,
লেপ মুড়িতে ঘুম ভাঙ্গে সকাল আটার পরে
পরিপাটি জীবন, চা, রুটি বাবু আনা
অফিসের পথে চির চেনা বিড়ম্বনা।

১৪২৩/০৬, পৌষ/ শীতকাল।