দাউদুল ইসলাম এর সকল পোস্ট

দাউদুল ইসলাম সম্পর্কে

সব সময় নিজেকে বলি- মানুষ হবি যদি- অন্ধকার ঘরে যখন একা থাকবি তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করে নিস তুই কতটা মানুষ। কতটা তোর সভ্যতা কতটা তোর ভদ্রতা! স্নান ঘরে যখন একা শাওয়ারের নিচে দাঁড়াস- তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করিস কত টা আছে তোর মনুষত্বের রুচি! জিজ্ঞেস করিস কতটা তুই ভদ্র, সভ্য!

বুকের ভেতর লাল গালিচা

313

কলিজার ভেতর লাল গালিচা বিছাইছি।
আইসবা?

কামরাঙা ফুলের এক জোড়া ঝুমকা,
এক জোড়া বকুলের নূপুর,
আর
একখানা শঙ্খমালা গাঁথি রাখছি আইসবা?
আমি দোতারা বাজাইলে তুমি গান ধইরবা,
চন্দ্রমল্লিকার বাগে জোছনা বইবে,
ডানা মেলে ভাসবা। আইসবা ?

আমি দিয়ে যাইতে চাই-
হাজার বছরের পুঁথির শ্লোক,
আউশ ধানের গন্ধ মাখা কবিতার তিথি,
বৈশাখের ঢোলক, তাল পাতার পাখা।…
আইসবা? জলে
রোদের তেজ মাখা মায়া দোলে,
দেখি-
পদ্ম পাতার তলে পোনা মাছের খোঁট।

আমি চাই তোমার কাঁচের চুড়িতে ঝড় উঠুক,
শরমে আঁচলে ঢাকো মুখ, কাঁপুক লাজুক লিরিক দুটি ঠোঁট!
কি কও… আইসবা তুমি?
উথাল পাতাল ঢেউর তালে মিশাইয়াছি আরক্ত গোলাপের স্রোত…
তোমার নামে ভাসাইয়া দিছি আপন অন্তর্যামী।

বি ব র্ত ন বা দ

3179

আমরা প্রতিদিন স্বাগত জানাচ্ছি বিবর্তনবাদকে, প্রতি মুহূর্তে গত হচ্ছে আমাদের বর্তমান, প্রতি নিয়ত গমন করছি নবীন পটে। আমরা যা শিখেছি পাঠক্রমে, যা কিছু আমাদের মুখস্থ, জানা অজানায় , ঘুরে ফিরে হাজির হচ্ছি স্মৃতিপটে!… সোজা পথ হেঁটে যাচ্ছি,

হেঁটে যাচ্ছি বাঁক- বক্র, ভিন্ন সীমানায়…

সব ছেড়ে একাকী পৌঁছে যাচ্ছি একান্ত ঠিকানায়। সব বুঝেও ভুলে যাচ্ছি চিরন্তন বাণী, আপন চোখ বুজে ডুব দিচ্ছি নিষিক্ত রাতের বুকে, অন্ধকার রহস্যে, গোলকধাঁধায়! অশনি জেনেও হাত বাড়াচ্ছি স্বৈরিণীর ডাকে! যেমন খুঁজে বেড়াচ্ছি অজানা সুখ শশিকান্ত নির্বাণে, বিপন্ন অসুখে, শরীরী সঙ্গমে, স্থবির অক্ষে…

মুহূর্ত গুলো এমনিই- পলকে পলকে বিগত হয়ে যায়, স্মৃতি হয়ে যায়, তিক্ত স্বাদে মিশে যায় স্খলনের একেক একটি ফোঁটা…পুনরায় খুঁজে বেড়াই পুরনো কোন ভোর- শিশির সিক্ততায়

কবিতার মত নরম রোদ্দুরের হাসি, খুঁজে বেড়াই ঝড়ো হাওয়া, নিগূঢ় সন্ধ্যা যাপন!

ব্যাকুল রাতে

3101

ধূম্রজালে
বুঁজে আছে পথ
বক্র নীলে
নিঃসীম জলদি
অন্তিম শয়নে
রিক্ত তরণী
বিমর্ষ নদী..

বিষাক্ত নখ
আদিম বুকে
এঁকে দেয় কষ্টের আঁচড়!
অনুক্ত আর্তনাদ
ছুঁয়ে যায়
দীঘল ক্রোধ দিগন্ত অবধি!

আহত মন
পরতে
পরতে
অগাধ শূন্যতা…

নিরঞ্জন মিথ
ব্যাকুল রাতে
বেরিয়ে পড়ে
অজানা পথে
অনিশ্চিত ভবিষ্যত!

ক্ষুধা না লজ্জা

315

বিকেলের বিষণ্ণ চোখ থেকে ঝরে পড়ে লাল অশ্রু
মাটি শ্রমিকের কোদালে এঁটে থাকা মাটি, চিটচিটে বগলে
ছেঁড়া ব্লাউজে প্রতীয়মান সংগ্রামী ইতিহাস!
যুদ্ধ কোন খেলা নয়, স্নান ঘাটে ভেসে যাওয়া বুকের পঙ্কজল
অথবা গুমরে উঠা অন্ত্রের ক্ষুধা… হাহাকার

ক্ষুধা বোঝেনা কবিতা
ক্ষুধা বোঝে গ্রাস, ভোগ…… ক্ষুধা বোঝে সঙ্গম

যুবতীর রক্তিম ওষ্ঠে গোধূলির হাসি
আকাশের বুক চিড়ে উঁকি দেয় মেঘের স্তন!
কোথাও কেউ বুঝতে চায়না ক্ষুধা না লজ্জায়
কিসের ভারে নুয়ে যায় -নদী সংলগ্ন কাশ বন!!

© কাব্যগ্রন্থ ” অচিন বুদবুদ” থেকে।

হিজড়াবৃত্তি

315

আমরা আমাদের স্বতন্ত্র ভাবনা গুলোকে হত্যা করছি স্বৈর নীতির কষাঘাতে।
স্বপ্নগুলো বিক্রি করা হয়েছে সে-ই কবে;
বাস্তবে
আমরা বন্দি হয়ে আছি জন্ম জন্মান্তর।.. তবে
কেউ কেউ বেচে আছে
বিকৃত রুচিবোধের কাছে নিজেকে বিক্রি করে!
না না আমি একদমই বেশ্যালয়ের কথা বলছি না।
বেশ্যালয় তো সেখানে চলে
যেখানে পুরুষ হয়ে উঠে অরাধ্য
আমরাতো অনেক আগেই মেনে নিয়েছি নিজেদের হিজড়া রূপ!…
অ পুরুষ
আর অ নারীতে
জন্ম নিচ্ছে আমাদের বিকলাঙ্গ প্রজন্ম!…
তবুও খবর আসে
এক পুরুষে পুড়ছে অজস্র আত্মা
যারা পুষে রেখেছে তাদের স্বতন্ত্র সত্তা।

© নতুন পাণ্ডুলিপি

তোমাকে চিনেছি আমি

315

তোমাকে চিনেছি আমি
ভোরের শিশির
নৈশব্দের দীর্ঘশ্বাস তুমি
কান্না নিরবধির

ছুঁয়েছো কবির অন্তর
আতপ্ত হাতে
যৌবনন্ধ দাবীর দুর্মার
অনল নেভাতে,

প্রজ্বলিত চিত্তে বেমালুম
হই মুখোমুখি
সুডোল বুকের উষ্ণতার
দিয়েছো ফাঁকি!

নাকি এমনিই তোমার
স্বভাব? মমতার
হাতছানিতে পোড়াও কাবাব।
সারা রাত
নির্ঝর শিশির প্রপাত,
আমি চিনেছি তোমাকে-
বুকের ভেতর বেহিসাব আঘাত।

দায়মুক্তি

305

দায়মুক্তি দিলাম
উড়ে যা পরিযায়ী, নাইবা পেলাম ফিরে
দূর অতীতের ধানসিঁড়ি,
আলের পথে ওম মাখা ঘাসফুলের যৌবন;
যে বুকে তীক্ষ্ণ ঠোঁট ঠুকে ঠুকে
অজস্র কবুতর করেছে শস্য আহরণ-
ধরে নিলাম অসংখ্য রক্ত কণার মত
সঞ্চয়েতে ঠায় নিয়েছে একটি ধ্রুপদী চুম্বন!

আত্মখুনী

3110

প্রায়শই অভিযোগ শুনি
করোটিতে আগুন ধরিয়ে আমি নাকি আত্মখুনি!
গনগনে আগুনে
অনেকেই তো ঢেলেছো জ্বালানি
পুড়িয়েছ অসংখ্য রজনী, জ্বলজ্বলা মদ,
মনে মনে আজো ঢালছো দহনের রসদ!..

অভিযোগের বিপরীতে
কখনোই করা হয়নি অভিবিয়োগ!
যদিও
পোড়া লাভা স্রোতে ডুবেছে সবুজ উদ্যান
ডুবেছে অবুঝ হৃদয়, বিগলিত জ্যোতস্না রাত
প্রাণের অভ্যন্তর
ডুবে গেছে অসংখ্য স্বপ্ন; কবিতার শহর…

স্বরে অভিস্মরে
অন্ধকারের ভেতর কাটিয়েছি দিন
গহীন ডুব সাতারে…

শাণিত তরবারি

314

বহুকাল পুরোনো তরবারি টি
শান দিচ্ছি নুনে জলে
ধারালো বুকটি চকচক করছে
ঝিলিকমারা চোখে
ব্যাক্ত করছে শাণ ধার
আসলে-

এবার সে চলতে চাইছে
চলতে চাইছে রক্তের অববাহিকায়
প্রাণের প্রকোষ্ঠে
এবার ছড়েছে তার কতল কর্মক্ষুধা
শাণের সোপানে
খুনের কলা কৌশলে
বলি হোক জগত সংসার
বলি হোক রক্তবিষ
ঘৃণ্য অহংকার!…

প্রাণপাত

30

বৃথা রক্তপাত,
বৃথা এই ঘাত প্রতিঘাত-বিষাদের জ্বালা
অশ্রুস্নাত
কাজলা চোখে চোখ পড়তেই
ভুলে যাই সব
সমস্ত বিবাদ!
স্বর্ণচাঁপা রোদ্দুর
মিষ্টি গন্ধে ভুলে যাই দহন জ্বালা
এলোমেলো চুলে
সনির্বন্ধ মশগুলে
অনায়াসে ডুবে যায় উষ্ণীষ রাত…
চিত্ত উন্মাদ
নির্ঝর
কুয়াশার চাদরে অংকিত চিত্র
মত্তযৌবন
প্রাণপাত!..

কার জন্য …

1yy

কার জন্য ঘুম ভাঙ্গে
কার বিহনে জ্বর আসে অঙ্গে?

কোঁকড়ানো ভেজা চুলে স্নিগ্ধা লাগে বলে
কার জন্য স্নান করো সাত সকালে?

কার জন্য জন্য খুঁজো নীল টিপ
সাঁঝের বেলায় কার অপেক্ষায় জ্বালাও প্রদীপ।

কার সাথে ডুবো নিবিড় কথোপকথনে?
ভুলে যাও সকালের নাস্তা দুপুরের খাবার গ্রহণে।

কার বুকে আঁকো স্বপ্ন! বিনিদ্র রাতের শেষ প্রহরে
কার সুখের জন্য হাত তোল মহান প্রভুর দরবারে!

কার আদর্শে মুগ্ধ হও, লোভ মোহ নির্বিশেষ
কার কপালে রাখো বিশুদ্ধ চুম্বন? একান্ত ভালোবেসে!

কার হাতে তুলে দাও অলেখা কবিতার পংত্তিমালা
কার বিরহে ভোগ করো অদৃশ্য আগুনের দহন জ্বালা!

তুমি কার চোখে রাখো চোখ
কার চোখে খুঁজো বাকী জীবনের অমর্ত্য সম্ভোগ!

কোন সুখে ভুলেছ চিরায়ত ক্ষুধা
কোন আলোকে এতো অবিশ্বাস আমায়?জাগিয়েছো দ্বিধা!

কোন মর্মে ছেড়েছো আজন্ম লালিত ধর্ম
আমাকে অস্বীকার করে কাকে বানিয়েছো জীবনের বর্ম?

আমি সেখানেই আছি যেখানে তুমি রেখেছো দাড় করিয়ে।

পরমা উত্তাপ

300

তীর ভাঙ্গা আর্তনাদ শুনে
কস্তুরী প্রাচীর ঢেউর অভিমুখে মেলে ধরে বুক
কর্তৃত্ব রুখে দেয়ার মত-সে এক বিপ্লবী চেতনা
জলের শৃঙ্খলে হানা দেয়া এক অসীম তৃপ্তি, সুখ…

অথচ; যতক্ষণ জল ততক্ষণ সমুদ্র
ততক্ষণই তার শিল্প-অস্তিত্ব!
কে না জানে- ভাঙনে পরিধি বাড়ে, কখনো দূরত্বও
ওপারে…পলি মন্থনের উৎসব
নির্জন ধ্যানে বালির প্রাসাদে ডিমে তা দেয় জননী কচ্ছপ!

সন্ধ্যার পাঁজরে জোনাকির কলরব
জড়তাহীন চুম্বন- প্রদীপ্ত পল্লব
তাড়া খাওয়া জল ফড়িঙেরা ব্যস্ত শিল্প রক্ষার চন্দ্রিমা পূজায়
গহ্বরে……অজস্র শঙ্খের সঙ্গম- ক্রিয়া কলাপ
বিচলিত চাঁদ- শৈলপ্রপাত; মেঘের আগলে পরমা উত্তাপ
যুগল কবিতার মত মহেন্দ্র সংলাপ, অনুপম সুধা
ক্ষুধা-পিয়াস ভুলে শিকারি মৎস্য
নির্জন প্রবালের খাঁচে-খোঁজে মৌ-মিত উৎস!

সত্য-টাই চরম মিথ্যা

3103

এখানে কোন আড়াল রেখোনা
অথবা
ধর্মের দেয়াল!..
কেউ তো আড়াল চায়নি
দ্যাখো নক্ষত্রের ছায়া
শিউলির ঘ্রাণ
কিংবা দেখতে পারো বৃষ্টি
সকাল
সূর্যস্নান
শুদ্ধ ধরা
এরা কেউই
তথাকথিত বিভাজন সৃষ্টি করেনি
কেউইনা!..

আমরাই মুর্খ
রুক্ষ্ম দেমাক আর-
সীমাহীন সীমাবদ্ধতা নিয়ে
মুখে ফেনা তুলি ধর্ম বয়ানে!

অথচ
কেউ কখনো খুঁজে দেখেনি আত্মার আলো
বর্ণিত সত্য!
সত্যকে জানা অব্দি
সত্য-টাই চরম মিথ্যার মত কুঁকড়ে থাকে
আসলে কে কাকে ডাকে
কে কাকে দ্যাখে
সত্য অনুধাবনের পর
মানুষের কেবল-
বোবা হবার যোগ্যতা অবশিষ্ট থাকে!..

নাড়ীজ অক্ষর

31

ঘুমিয়ে আছি
অনাদিকাল থেকে
ঘুমের বুকে..
অতল যাপনের তৃপ্তিতে, বিভোর সুখে..
ঘুম ঘুম চোখে জাগি মাঝে মধ্যে
ক্ষুধার ‘খ’
তৃষ্ণার ‘ত’
আর মোহের ‘ম’ কে মেখে মেখে
এই আমি গমন করতে থাকি পরম মধুসূদনে
অনন্ত উদ্যানে
তলাতে থাকি….
যতক্ষণ না পারদের ফোয়ারা হতে
জন্মনিচ্ছে আত্মস্থ জোয়ার, ত্রিমাত্রিক নদ..
কলকল ধ্বনি
যতক্ষণ না শুনি প্রণয়কলহের অমৃত স্মর-
প্রাগৈতিহাসিক নিস্তব্ধতা ভেঙে
নশ্বর কবিতার বুকে উঠে আসা নাড়ীজ অক্ষর!..

পিঙ্গল নয়নে

29

মদ্যপ নই
তবু বারবার মাতাল হই পিঙ্গল নয়নে
জানি অ-ঠাই
তবু উদ্ধার পাবার লোভে ঝাঁপ দিই অথই আগুনে!..
উন্মাদ হই
যদিও জানি, ফুল হলেও বিষাক্ত হেমলক
মরণ ফাঁদ! তবুও
ওষ্ঠে জেগে রয় আমূল তৃষ্ণা, অগাধ বিষাদ!