দীপঙ্কর বেরা এর সকল পোস্ট

দীপঙ্কর বেরা সম্পর্কে

আমি বাংলা ভালোবাসি। বাংলাকে ভালোবাসি।

নিজের জন্য

তুমি ঠিক কি চাইছ, তাই তো বুঝতে পারছি না?

বাঁচতে চাই।

তার জন্য এত মন খারাপ ফন্দি ফিকির
কিংবা পৃথিবী ছেড়ে পালাই পালাই ভাবছ কেন?

কিন্তু ওরা যে আমাকে বাঁচতে দিচ্ছে না।

ওহ! আচ্ছা! এতক্ষণে বুঝলাম
তুমি আসলে ওদের জন্য বাঁচো
তাই তোমার এত চিন্তা।
তুমি নিজে মরে ওদেরকে বাঁচাতে চাও।
ধ্যাত, তোমার সঙ্গে কথা বলে শুধু সময় নষ্ট।

আমার সঙ্গে কথা বলা মানে তোমার সময় নষ্ট?

তা নয়তো কি? প্রতিটি মুহূর্ত যেখানে শুধু আমার।
শুধু আমার। সেখানে পরের জন্য লড়াই করতে পারি,
কিন্তু বাঁচব নিজের জন্য।

কিন্তু কিভাবে?

যেভাবে জীবন জীবনের কথা বলে
নিজে নিজের কথা বলে।

তার মানে তুমিও কি আমাকে বাঁচতে দিতে চাও না?

তাত তো আমি বলতে পারব না।
সে তো ভাববে তুমি।
বাঁচা তো শুধু তোমার নিজের বাঁচা।
তোমার নিজের চাওয়া।
এ পৃথিবীতে সেটাই তোমার নিজস্ব অধিকার।

বুঝলাম। আমার জন্য আমার বাঁচা।
আমি বাঁচবই।

পড়াশুনা

অনেকদিন পরে সুদীপ্তর সঙ্গে দেখা হল। ও বলল ও এখন ভারত সরকারের যোজনা কমিশনে কাজ করে।
পিছনের বেঞ্চিতে বসত। পড়া পারত না। মোটামুটি রেজাল্ট করে কলেজে গেল। আমিও মাস্টার ডিগ্রির পরে একটা কাজ যোগাড় করে সংসারী।
জিজ্ঞেস করলাম, এইসব পোষ্টে যেতে হলে কি করতে হয়? ও বলল – কি আবার? পড়াশুনা করলেই এরকম অনেক রাস্তা খোলা থাকে।
বাড়ি ফিরে দেখলাম ছেলে পড়ছে। মেয়েকে বললাম – আমি চা করছি। তোরা পড়তে বস।
মিসেস আমার দিকে তাকিয়ে ছেলেকে যোগ বিয়োগ শেখাতে লাগল।
আমিও চায়ে চুমুক দিয়ে অনেকদিন পরে একটা বই টেনে নিলাম।

প্রশ্ন

ইরা যখন বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তখন আমরা ভেবেছিলাম ও নিশ্চয়ই কোন ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে।
ওর বাবা মা মুখ দেখাতে পারল না। সারা পাড়ায় ঢি ঢি পড়ে গেল। তবে কোথাও কোনো ইরার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ছেলে বন্ধুর কেউ খোঁজ পেল না। পাড়ায় রটে গেল নিশ্চয়ই খারাপ পাড়ায় উঠেছে।
প্রায় বছর পাঁচ সাত পরে ইরা বাড়ি ফিরে এল। একা।
অভিজ্ঞ হলধর ওর বাবাকে বলল – এতদিন পরে ফিরল, তাও মেয়েকে ঘরে তুললে? কোন প্রশ্ন করলে না?
ইরার বাবা বলল – ও যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হত, তাহলে কি এই প্রশ্ন উঠত?

সেবক

তার লক্ষ্য ছিল টাকা আয় করা
অনেক না হোক কিছু তো অবশ্যই,
তাতে সে সফল।
এখন সে বড় বড় পদের
বাবুদের সাথে ওঠা বসা করে,
যেকোন দামী জিনিস কিনে অনায়াসে ঘর সাজায়
ইচ্ছে অনিচ্ছের সমস্ত শখ পূরণ করে,
কারণে অকারণে চমক লাগিয়ে দেওয়ার মত পার্টি দেয়
সামাজিক সাংস্কৃতিক যে কোন উৎসব আনন্দে
মঞ্চের আশেপাশে থাকে এবং মঞ্চেও ওঠে।

এ রকম সে
স্কুলে যায় কলেজে যায় দরখাস্ত করে কণ্ট্রাক্ট নেয়
বুঝিয়ে দেয় বুঝে নেয়
টাকা আয় করার লক্ষ্য তার স্থির থাকে।

ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষক লেখক এবং অন্যান্য
সবাই আমরা ‘সে’ হয়ে যাচ্ছি।

কিন্তু সমাজ তীর্থ
সেবক খুঁজছে
আপনার সঙ্গে যদি এরকম কারোর দেখা হয়
পাঠিয়ে দেবেন প্লিজ।

আজ কাল বড় হতে পারে সবাই

আজকাল বড় হতে পারে সবাই।

মুটে মজুর লেবার ভিখারী রিক্সাওয়ালা ঠেলাওয়ালা
এমন কি টো টো কোম্পানির যে কোন ম্যানেজার
যে কেউ যখন তখন বড় হতে পারে।

এ সমাজের দৃষ্টিতে
বড় হওয়া মানে তো বড়লোক হওয়া
বিলাস বহুল বাড়ি গাড়ি নামীদামী পোশাকপরিচ্ছদ ও দেখনদারি,
এসব তো যে কেউ যখন তখন হতে পারে।

তাই আজকাল বড় হতে পারে সবাই।

এর জন্য ধান্ধার বুদ্ধি লাগে
এধার ওধার ওধার এধার সরানো ধরানো লাগে
ওকে দিয়ে একে বলা আর একে নিয়ে ওকে চলা
আর কিছু টিক্স লাগে তবে তা হয়তো পলিটিক্স নয়।

কিন্তু কখনই পড়াশুনা লাগে না
গুচ্ছের গাদা গাদা বই পড়তে লাগে না
পড় পড় বলতে থাকা বাবা মায়ের বকাঝকা লাগে না
দিন নেই রাত নেই টিউশনের দৌড়াদৌড়ি লাগে না
দু এক নম্বরের টানাপোড়েন লাগে না
ডিগ্রী লাগে না
ক্যাম্পাসিং লাগে না
কম্পিটিশনের টেনশনে ঢুকতে হয় না
ভোর থেকে লাইন দিয়ে ভেরিফিকেশন লাগে না;
কোন ফর্ম ফিলাপ নেই, দাদা কাকা মামা মেসোর সেটিং নেই;
কিংবা এসবে ব্যর্থ হলেও ভাবনার কিছু নেই।

পেছনে কি বলবে জেনে কোন লাভ নেই,
সামনে সবাই বলবে এবং বলতে বাধ্য হবে
‘এই হল গিয়ে বড় হওয়া’।

তাই আজকাল বড় সবাই হতে পারে।

তারপর একদিন এরকম বড় হতে হতে
পৃথিবীতে শুধু বড় বড় বিলাসবহুল বাড়ি গাড়ি
নামীদামী পোশাকপরিচ্ছদ ও দেখনদারি পায়ের শব্দে
সকাল হবে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হবে
তারপর সন্ধ্যে নেবে আসবে
কিন্তু সবুজের গন্ধে
সূর্য আর উঠবে না নীল আকাশে।

কর্মচারী

আপনার কি জানা আছে পার্শ্ব কর্মচারী কেন নিয়োগ করা হয়? আপনার কি জানা আছে কেন বিভিন্ন পোষ্টে কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করা হচ্ছে? আপনার কি জানা আছে কেন বিভিন্ন অবস্থান বেসরকারী হয়ে যাচ্ছে? আপনার কি জানা আছে কেন সিভিক কর্মচারী নিয়োগ করা হচ্ছে? আপনার কি জানা আছে চারিদিকে কেন অনেকক্ষেত্রে আর তেমন কোন পার্মানেন্ট পোষ্টের কর্মচারী নিয়োগ করা হচ্ছে না?
এত সবকিছুর একটাই উত্তর, কাজ। আপনি আপনার কাজ করুন। কোথাও না কোথাও পার্মানেন্ট হিসেবে আপনি কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন। আপনি আপনার কাজে যতটা ফাঁকি দেবেন ঠিক ততটাই ভবিষ্যতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আর পার্মানেন্ট নিয়োগ হবে না।
যে কাজ পার্মানেন্ট কর্মচারী নিয়োগ করে পাচ্ছে না সেই কাজ সিভিক পার্শ্ব বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করে পাচ্ছে। কিংবা আরো বেশি ও আরো ভাল কাজ পাচ্ছে। তাই খামোখা পার্মানেন্ট কর্মচারী নিয়োগ করে বেশি টাকা খরচ করা উচিত হবে কি? আপনি কি বলেন?
তাই আপনি পার্শ্ব সিভিক বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী হলে আপনি আপনার সমগোত্রীয় পার্মানেন্ট কর্মচারীকে প্রশ্ন করে দেখেছেন কি ” ভাই, তুমি তোমার কাজ নিয়মিত ও ফাঁকি না দিয়ে কর কি?” পার্মানেন্ট তো আপনার পাশের টেবিলে কাজ করে। আপনি ভাল করেই জানেন, ও পার্মানেন্ট তাই সবার আগে ফাঁকি দেওয়া শিখে নিয়েছে। কিন্তু আপনি কাজ চলে যাওয়ার ভয়ে আপনার দায় এড়াতে পারেন না। বরং বেশি করে কাজ করতে হয়। বেশি সিনসিয়ারিটি দেখাতে হয়। তাই নয় কি?
তাহলে ভাই, তোমাকে যদি পার্মানেন্ট কর্মচারী করে দেওয়া হয় তাহলে তুমিও যে ভাই তাই করবে। ফাঁকি দেবে, দায়বদ্ধতা থেকে দূরে সরে যাবে। তাহলে? তার চেয়ে বাড়ির মালিক বা সরকার বা যে কোন কনসার্ন কাকে চাইবে? তুমিই বলো, কাকে চাইবে? পার্মানেন্ট কর্মচারী নাকি সিভিক পার্শ্ব বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী। তাই সবার আগে কাজ চাই। কাজ। নিষ্ঠার কাজ।
কেন না আমি সিভিক পার্শ্ব বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল হওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ যতটা না দায়ী তার চেয়ে একশগুণ দায়ী আমার পূর্ববতী পার্মানেণ্ট কর্মচারী। তাদের না কাজ করার, ফাঁকি দেওয়ার, কাজ পেন্ডিং রাখার, স্কুলে না পড়ানোর, সমাজে নিরাপত্তা না দেওয়ার প্রবণতার জন্য আজ আমরা এই পথে। তার মানে আমার ভবিষ্যৎ ছেলেমেয়ের কাজ না পাওয়া বা পার্শ্ব সিভিক ও কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী হওয়ার জন্য আমিই দায়ী, আমরা দায়ী।
তাই কর্তৃপক্ষকে দোষ না দিয়ে পার্মানেন্ট কর্মচারীদের কাছে আমাদের পক্ষ থেকে জোরালো আবেদন, কাজ করুন। কাজ। যার যতটুকু কাজ ততটুকুই করুন। ফাঁকি দেবেন না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের, আমাদের ছেলেমেয়ের কাজের নিশ্চিত নিরাপত্তা ছিনিয়ে নেবেন না। কাজ করুন। কাজ। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করুন।
তবে কাজ কিন্তু হয়। কোনো কাজ বসে থাকে না। পড়ে থাকে না। সরকারী বেসরকারী কিছু উদাসীনতায়, কিছু অনুদান পাইয়ে দেওয়ার বাহানায়, কিছু তোষণনীতির জন্য যাই হোক করে কিছু কাজ চালানো হয়। ফলে সেখানে এই রকম সিভিক পার্শ্ব বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করে কাজ চালানো হয়। তখন জনমানসের আর কিছু করার থাকে না।
তবু প্রত্যেকের নিষ্ঠার সঙ্গে করা কাজ কোথাও না কোথাও তার ছাপ ফেলে যায়। সেখানে একশ শতাংশ না হলেও মোটামুটি সত্তর আশি শতাংশ কর্মচারীকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। তাহলে তার প্রতিফলন অবশ্যই নিয়োগে দেখা যাবে। যেখানে এই শতাংশ চল্লিশ পঞ্চাশে নেমে যাবে সেখানে সরকার বা মালিক বা কনসার্ন এইভাবে সিভিক পার্শ্ব বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করেই কাজ চালিয়ে নেবে।
তাই সবার কাছে বিনীত অনুরোধ, কাজ করুন। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করুন। আমাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের নিজেদের ছেলেমেয়েদের কাজ পাওয়ার জন্য নিজে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করুন।
সরকার বা মালিক বা কোন কনসার্ন শুধু টাকা বাঁচানোর জন্য পার্শ্ব বা সিভিক বা কনন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করে না। ভাল কাজ পাওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে এমন পন্থা বেছে নেয়। আজ যারা কাজ হারানোর জন্য আন্দোলন করছে। একদিন তারাই বা তাদের সমগোত্রীয় কর্মচারী কিভাবে পাবলিককে, পরিসেবা পাওয়ার অধিকারীকে ঘুরিয়েছে, কিভাবে কমিশন না নিয়ে কোন কাজ করে নি, কিভাবে পার্সেন্টেজের দিকে হাত বাড়িয়ে থাকত সেসব মনে করলেই বুঝতে পারবে কেন কাজ চলে যাচ্ছে।
অবাক করা ব্যাপার হল, পার্শ্ব সিভিক বা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী কিন্তু নিয়মিত নিয়োগ হচ্ছে। তাতে হাজার হাজার লাখো লাখো দরখাস্ত জমা পড়ছে। কই, টাকায় পোষাচ্ছে না তাই আমরা কেউ দরখাস্ত করব না। তা তো হচ্ছে না।
তাহলে? কেন না কাজ নেই। মানুষের সংখায় মানুষ দিন দিন বাড়ছে। আগামী প্রজন্ম আসছে। আসবে। এমএ, এম এসসি, এম বি এ, বি টেক, এম বি এ, পি এইচ ডি প্রতিদিন বাড়ছে। বাড়তেই আছে।
আপনি পি এইড করলেও যদি কোথাও আপনি নিয়োজিত না হন তাহলে আপনি প্রফেসার বা লেকচারার নন। আপনি এমএ বিএড কিন্তু কোন স্কুলে নিয়োগ না হলে আপনি শিক্ষক নন। আপনি ম্যানেজমেন্ট পড়লেও কোন কনসার্নে না নিয়োজিত হলে আপনি কোন পদাধিকারী নন। তাই ডিগ্রীর সাথে সাথে নিয়োগও প্রয়োজন।
কিন্তু আবার ভেবে দেখুন কোথাও কোন প্রতিষ্ঠান কনসার্ন বা সরকারী সিস্টেম বন্ধ থাকছে না। চলছে। স্কুল চলছে। কলেজ চলছে। হাসপাতাল চলছে। পরিবহণ চলছে। করপোরেট চলছে। নতুন নতুন কনসার্ন খুলছে। সেখানে পারমানেন্ট এবং তার সাথে পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ হচ্ছে। কার কাছে কাজ বেশি পাচ্ছে সেটা সেই কনসার্ন দেখছে। টাকা পয়সা কোথায় বেশি খরচ হচ্ছে সেটা তারা দেখছে না। কেন না ভাল কাজের জন্য একটু বেশি খরচ হলে সেই খরচ তারা প্রোডাক্ট থেকে কিংবা সিস্টেম থেকে তুলে নেবে। তাই তারা দেখছে কম টাকায় বেশি কাজ কিভাবে কোথায় পাওয়া যায়। আমি আমার বাড়ির কাজেও তাই দেখি। আপনিও দেখেন।
তাই দেখবেন কিছু হোটেল হাসপাতাল বাজার চলতি প্রোডাক্ট তাদের দাম কিছুতেই কমায় না। আপনার মনে হবে একই বিরিয়ানি এখানে এত দাম কেন? একই খাওয়ার মশলা এখানে এমন কি দেয় যে এত দাম নিচ্ছে? ওরা জানে দাম একটু বেশি এটা বড় কথা নয়। বড় কথা হল দায়বদ্ধতা। সেখানে কোন কম্প্রোমাইজ চলে না।
এই দায়বদ্ধতার বড়ই অভাব দেখা যাচ্ছে পার্মানেন্ট কর্মচারীর মধ্যে। সে প্রাইভেট হোক কিংবা সরকারী বা কোন কনসার্ন। সব ক্ষেত্রে পারমানেন্ট কর্মচারী যত দায়বদ্ধতা থেকে সরে আসবে তত এভাবে পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ হবে।
পার্মানেন্ট ভাবে, আমি কাজ করি কিংবা না করি আমার কিছু করতে পারবে না। আমি কাজে দায়বদ্ধ থাকি কিংবা না থাকি, আমি কিছু দুর্নীতি বা অন্য অন্য উপার্জন করলেও আমার কিছু করতে পারবে না। বড় জোর একটু আধটু ট্রান্সফার করবে কিংবা এটা ওটা করে হ্যারাসম্যাণ্ট করবে। তাতে আমার বয়েই গেছে। আমার মাইনে পেনশন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা তো পাকা। আমার কিছুটি করতে পারবে না। আমিই বস। অফিসের ডেকোরাম, অফিসারের উচ্চবাচ্য মানছি না মানব না। কাজও করব তথৈবচ। এরকম ভাবনার পার্মানেন্ট কর্মচারী দিন দিন বাড়ছে। ফলে কাজের জন্য, সরকারী বেসরকারী অবস্থান আরো উন্নত করার জন্য মালিক সরকার বা কোন কনসার্ন বাধ্য হয়ে পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করছে।
ভরসা ছিল। তাই কিছুদিন আগে পর্যন্ত এভাবেই নিয়োগ হতো। সরকারী বেসরকারী সমস্ত প্রতিষ্ঠানে নিশ্চিত নিরাপত্তার ভিত্তিতে কর্মচারী নিয়োগ করা হতো। কেন না কর্মচারীর পূর্ণ নিরাপত্তা দিলে তবে সেই কর্মচারী পূর্ণ আস্থার সঙ্গে কাজ করবে। কাজ পাওয়া যাবে একশ শতাংশ দায়বদ্ধতা যুক্ত। তারপর এল ইউনিয়ন লিডার মেম্বার মিটিং মিছিল ধর্মঘট আরো চাই আরো চাই মুনাফা ইত্যাদি। ফলে কাজের ভিত্তিতে ঢুকে পড়ল না-কাজের নানান বাহানা।
কত কষ্ট করে, মামা কাকা দাদার সোর্স করে, অনেক খরচাপাতি করে, কত বিনিদ্র রাত জেগে তবে এই চাকরি পেলাম। আর কি পড়াব? আর কি নিরাপত্তা দেব? আর কি পরিবহণ করব? আর কি পরিসেবা দেব? আর কি পাবলিক সিমপ্যাথি দেখাব? যা হয় হোক তাতে আমার কি? মাস গেলে আমার একাউণ্ট ভরবে নিশ্চিত। তাই কাজ কাজের মত চলছে, চলুক। আমি আমার চাকরি পাওয়ার জন্য যা কষ্ট করেছি তা উসুল করে নেব। আয়েশ করে, যতটা পারি মুনাফা আদায় করে নেব।
এরকম ভাবনা হলে তাহলে কি করে হবে?
এই প্রশ্নের আমিও উত্তর খুঁজি। আপনিও খোঁজেন। এমন কি তিনিও খোঁজেন। সবাই চায়। পারমানেন্ট কর্মচারী হলে সত্যিই নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। তাই পারমানেন্টকে তার দায়বদ্ধতা আরও বেশি করে নিতে হবে। তবেই না মালিক সরকারী বা কনসার্ন তার কর্মচারী পারমানেন্ট নিয়োগ করবে।
আমার পারমানেন্ট কর্মপদ্ধতি আগামী সমাজ গড়ার অন্যতম দিক দিশা। আমার হাতে সামাজিক মূল্যায়ণের ভবিষ্যৎ সূচনা। এরকম ভাবনা সমস্ত পারমানেন্ট কর্মচারীকে ভাবতে হবে। তবেই পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ করা বন্ধ হবে। না হলে আরো বেশি করে পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী নিয়োগ হবে। তারপর এই সব পার্শ্ব সিভিক কিংবা কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারী আরো আন্দোলন করবে। তবে লাভ কিছু হবে কি?

আমার ভাল আমি চাই?

আমার ভাল আমি কি চাই? তাহলে আমি কেন মদ খাই? বিড়ি সিগারেট খৈনি গুটখা খাই? এগুলো খেলে কি কি অসুবিধা হয় তা আমি জানি। আমরা সবাই জানি। তাও খাই। আবার না খেলে কোন অসুবিধা হয় না এটাও জানি।
আবার এই নেশার জিনিস খেলে পরবর্তীতে যে যে অসুবিধা হতে পারে সেসবই এসব না খেলেও হতে পারে এই দোহাই দিয়ে আমি খাই। আমি অসুবিধায় পড়ি। আমাকে বাঁচাতে এসবের গায়ে সর্তকবাণী অন্যকে (সরকারকে) লিখতে হয়। smoking is injurious to health. তামাক ক্যান্সারের কারণ।
আমার ভাল আমি চাই বলে এইসব নেশা করে যে অসুবিধায় পড়ি, অসুস্থ হয়ে পড়ি তাতে বাড়ির লোককে, পাশের বাড়ির লোককে, আত্মীয়কে আমি অসুবিধায় ফেলি।
আমার ভাল আমি চাই বলে আমি হেলমেট না পরে মোটর সাইকেল চালাই। সিটবেল্ট না লাগিয়ে গাড়ি চালাই। কানে হেডফোন গুঁজে রাস্তা পারাপার হই। আমাকে বাঁচাতে অন্যকে (সরকারকে) আইন প্রনয়ন করতে হয়। Safe drive Save life.
আমার ভাল আমি চাই বলে ছাত্র জীবনে আর একটু ভাল করে পড়ি নি? পড়ায় ফাঁকি দিয়েছি। আমার ক্যারিয়ার তৈরি করতে অন্যকে (আমার বাবা মা শিক্ষক পাড়া প্রতিবেশী) বার বার বলতে হয় ‘পড়, পড়। বাবা পড়’। যেখানে শুধু আর একটু বেশি পড়লেই কাজ হয়, আর একটু বেশি পড়া অভ্যাস করলেই জীবনে অনেক কিছু সহজেই পাওয়া যায় সেখানে না পড়ে বা পড়ায় ফাঁকি দিয়ে আজ আমি যেখানে পৌঁছেছি তার জন্য প্রশাসনকে দোষ দিই ‘আমাকে কেন কোন কাজ দিল না’?
কাজের জায়গায় কম কাজ করে ফাঁকি দিয়ে বেশি মুনাফা আশা করেছি। আমার ভাল আমি চাই বলে অন্যকে হরদম ঠকানো শিখে গেছি। অন্য আবার অন্যকে এবং আমাকে লাগাতার ঠকায়। কেন না সেও ‘আমার ভাল আমি চাই’ ভালই শিখে গেছে।

তার মানে কি? তার মানে আমার ভাল আমি চাই না। যদি ‘আমার ভাল আমি চাই’ও কিন্তু তাকে বাঁধন দিয়ে ধরে রাখতে পারি না। কি করে যেন তার মধ্যে অনৈতিক ঢুকে পড়ে। সে অযাচিত জীবনে পা রাখে। পরচর্চা থেকে পরকীয়ায় মাথা গলিয়ে ফেলে।
তাই আমার ভাল আমার চাওয়ার জন্য অন্যের স্নেহময়, আইনানুগ, সম্পর্কের ঘেরাঢোপ দরকার। যাতে আমি অনৈতিক কিছু করে ফেললে কেউ যেন বাধা দেয় – না। তুমি এটা ঠিক করছো না।
অযাচিত কোন কিছুর দিকে আমি হাত বাড়ালে কেউ যেন আমার সেই হাত চেপে ধরে – এটা তুমি করতে পারো না। তোমাকে এর কৈফিয়ৎ দিতেই হবে।
পরচর্চা পরকীয়াতে সে যেন মর্যাদা হয়ে দাঁড়ায় – প্লিজ, আমাদের কথা অন্তত একবার ভাবো। প্লিজ।
তখনই আমার ভালো আমি চাইতে পারব।
তাই আমার ভালোর জন্য আমাকেই এদের মর্যাদা দিতে হবে।
শ্রদ্ধার পরিপূর্ণ মর্যাদা বাবা মাকে দিতে হবে। কথা শুনতে হবে।

সুখটান

বাবা তখন বাঁশের দরজার ঠেস দিয়ে আমেজ করে বিড়ি ধরিয়ে মাকে বলছে – বুঝলে গোপলার মা, এতক্ষণে মাথা থেকে যেন ভারটা নামল। সংসারের জোয়াল বলে কথা।

মা দাঁড়িয়ে ছিল। পাশে বসল। মুখে মিষ্টি হাসি। আমি একটু দূরে মাদুর পেতে হ্যারিকেনের সামনে অ্যালজেব্রা করছি। বাবার কাছে চলে এলাম। বললাম – বাবা, আমারও একটা অঙ্ক অনেকক্ষণ হচ্ছে না। মাথায় ভার হয়ে চেপে আছে। মা, আমাকেও একটা বিড়ি দাও। মাথার ভার নামাই।

উপরের সংলাপটি কাল্পনিক। কেন না ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি বড়দের সামনে বিড়ি সিগারেট মদ ইত্যাদি নেশা করতে নেই। অবশ্য বড়রা বড়দের সামনে তো অবশ্যই এমন কি ছোটদের সামনে কিংবা সবার সামনে বিন্দাস ধূমপান বা অন্যান্য নেশা করতেই পারে।
আমি যেহেতু ধূমপায়ী নই তাই অনেকের মুখে শুনেছি বিড়ি সিগারেট খেলে টেনশন কমে যায়। আরো স্বচ্ছ ভাবনা আসে ইত্যাদি ইত্যাদি। তো আমি নিজে দু একবার এবং অনেকবার দু একটা ট্রাই করে দেখেছি। কিছুটি হয় না। একদম বাজে কথা। শুধু বাহানা। সেই প্রবাদের মত – ভাই, আমি বেশি খাই না। শুধু দু দিন খাই। যেদিন বৃষ্টি হয় আর যেদিন বৃষ্টি হয় না।
আসলে সে সবদিন খায়। যে কোন বাহানায় খায়।
আসলে সে নয় আমরা অনেকেই আমাদের ভালো আমরা চাই না। ধূমপানের কোন উপকারিতা নেই। সবাই জানে। ধূমপান না করলেও কোন অসুবিধা নেই। তাও সবাই জানে। তবু খায়। কেন খায়? এমনকি সরকার থেকে সিগারেটের খাপে লেখা আছে “smoking is injurious to health”। তাও খায়। তার মানে আমার ভাল আমি চাই না বলে অন্যে এরকম লিখে দিলেও আমি শুনতে চাই না।
কেন শুনতে চাই না? কেননা আমি উদাহরণ টানি, ওই রাম একটাও সিগারেট বিড়ি খেত না তাও তার ক্যানসার হল। হেঁপো রোগীর মত শালা কেশে কেশে মরল। যার হবে তার এমনিই হবে। চল, টান মার গাঁজার মত। আরে বাবা, একটু সিগারেট বিড়ি খাব না, নেশা ভাঙ করব না তাহলে আর পুরুষমানুষ কি? ছাড় তো ওসব, ওরকম বলে। কিছু হবে না। আর যদি হয়ও যখন হবে তখন দেখা যাবে।
এই যখন হবে তখন দেখা যাবে সময়ে তার পরিবার যে অসুবিধার মধ্যে পড়ে তা তারা বা আমরা একবারও ভাবি না। বরং সিগারেট বিড়িতে টান দেওয়ার সময় ভাবি, বেশ করেছি আমি আমার নিজের পয়সায় নেশা করেছি তোর বাপের কি?
কিন্তু বাপের যে কি কে জানে? যখন হাটে বাজারে অলিতে গলিতে গাঁয়ে গঞ্জে রাজপথে মাঠের ধারে লাইন দিয়ে দেখি; আর কিছু থাক না থাক একটা পান বিড়ি গুটখার দোকান বা ঝুপড়ি আছেই আছে। দোকানদারের মুখ দেখা যাচ্ছে না। সামনে কত বাহারি রঙের গুটখার প্যাকেট আর সিগারেট বিড়ির তামাক গন্ধ। অনেকক্ষণ ঘুরলাম এককাপ চাও পেলাম না। চল ভাই, একটু জল খেয়ে একটা সুখটান দিয়ে নিই।
চাই না তাও হাতের কাছে যখন পেয়ে গেলাম দিয়েই দিই একটান। কি আর হবে? এই একটু একটু কি আর হবে ভাবতে ভাবতে অনেক টান আঙুলের ফাঁকে বার বার এসে যাচ্ছে। এখানে বোধ হয় সবচেয়ে বেশি পান বিড়ি সিগারেটের দোকান।
কতজন এই বিড়ি সিগারেট ও নেশা বস্তু তৈরিতে ব্যস্ত। সে কাঁচা মাল থেকে উৎপাদন পাইকারী খুচরো ও একেবারে শেষে সুখটান পর্যন্ত কত মানুষ করে খাচ্ছে সংসার চালাচ্ছে। আবার উল্টো করে দেখলে দেখা যাবে যারা এর সাথে যুক্ত (কাঁচামাল থেকে সুখটানকারী) তাদের অনেকেই বড় বড় রোগের বাহক ও সেইসাথে রোগ ছড়ানো হোস্ট। তাদের পেছনে আবার বড় খরচ। তার মানে যারা করে খায় তাদের ব্যয় আরও বেশি।
সরকার খুব রেভিনিউ পায় এবং বলে এইসব সংসারের কর্মসংস্থান করে দিতে পারব না। তাই আইন করে তোলা সম্ভব নয়। কিন্তু রেভিনিউয়ের অনেক বেশি এই টিবি ক্যানসার ও অন্যান্য মারাত্মক রোগের পেছনে সরকারের খরচ তার চেয়েও বেশি। তা দেখছে না। তাই সরকারের সৎ ইচ্ছে না থাকলে শুধু মানুষের সচেতনতায় যা নির্মূল করা সম্ভব নয়।
কেন না মানুষ হল দ্রুত মানসিক ভঙ্গুরশীল। যে কোন আঘাতে সে যেমন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে তেমনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাতে সে যাই তাই করে ফেলতে পারে। আগে পিছে কোন কিছুই ভাবে না।
তাই অনেককেই দেখেছি সিগারেট বিড়ি খাওয়া দিনে যার এক দুই বাণ্ডিল লাগত পরবর্তীতে সে একটা সময় একটাও খায় না। আবার কেউ কিছুদিন ছেড়ে দিল আবার খেতে শুরু করল। কিছুজন তো কোন কথাই শোনে না খায় শুধু খায়। আসলে পুরোটাই মানসিক ব্যাপার। ছেড়ে দেওয়া ধরা পুরোটাই নিজস্ব ব্যাপার। মানসিকভাবে সব মানুষই যেহেতু ভঙ্গুরশীল তাই প্রশাসনিক সৎ ইচ্ছা খুব জরুরী।
কেন না বিড়ি সিগারেট গুটখা মদ গাঁজা ইত্যাদি সমস্ত নেশার কোন উপকারিতা কোন ভাবেই নেই। সবই মানুষের বদ রুচির সৃষ্টি ও বহিঃপ্রকাশ। তাকে বন্ধ করার একটাই উপায় হাতের কাছে না পাওয়া। হাতের পাওয়া যাবে না তখনই যখন উৎপাদন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা অথবা বন্ধ করা। সেটা প্রশাসন থেকে আইন করে সম্ভব।
না হলে আমি যেমন পেলে দু একটা টান দিয়েই দিই। একটা দুটো খেলে কি আর হবে? আমি বুঝি তাই আমি নিয়ন্ত্রণে থাকি। কিন্তু যে পারে না সে টান দিয়েই যায় টান দিয়েই যায় টান দিয়েই যায়…।
তাহলে? ভাবুন। আমিও একটা সুখটান দিয়ে ভাবছি।

প্রেম শারীরিক

প্রেম সম্পূর্ণরূপে শারীরিক। শরীর বা অবয়ব নেই তো প্রেম নেই। অস্তিত্ব থাকতেই হবে এবং তা পরস্পরের কাছাকাছি আকর্ষিত হওয়ার মাধ্যমেই প্রেম।
রামের সঙ্গে রাধিকার প্রেম। মানে তারা পরস্পরের প্রতি শরীরগতভাবে আকর্ষিত। তাই প্রেম। তা যদি না হত, যদি মনের ব্যাপার হত তাহলে লুকিয়ে দেখা করার ইচ্ছে হয় কেন? শুধু তো মনের মিল তাহলে ব্যাপারটা প্রকাশ্যই হোক। শরীর বাদ দিয়ে যদি প্রেম হতো তাহলে রামের সঙ্গে ফতিমার প্রেম তাদের ফ্যামিলি কিংবা সবাই মেনে নিত। বিবাহিত স্বপ্না তার স্বামীর পরকীয়া প্রেম মেনে নিত।
কিন্তু মানে না বা মানা যায় না তার কারণ ফতিমার ফ্যামিলি জানে এবং স্বপ্নাও জানে, আজ না হোক কাল ওরা শারীরিক মিলনে লিপ্ত হবেই হবে।
যে কোন প্রেমিক বা প্রেমিকা তার দয়িতার বিয়েতে আপত্তি করবে না। ভাববে অন্য কারো সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে তো কি হয়েছে প্রেম তো আমাকেই করে। তা কিন্তু হয় না। বরং প্রেমিক প্রেমিকা ভাবে আমি ছাড়া আমার দয়িতার শরীর আর করো যেন না হয়। কেন না প্রেম শারীরিক তাই।
মনে মনে প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে ওঠে ‘কি আমার সঙ্গে প্রেম আর অন্যলোককে বিয়ে, এ আমি কিছুতেই মেনে নেব না।’ কেন না প্রেম শারীরিক। আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রেম করার আসল উদ্দেশ্য হল বিয়ে করা। অর্থাৎ শারীরিক সম্পর্কের ছাড়পত্র পাওয়া। প্রায়ই শোনা যায় বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস। তার আগে প্রেমের মাধ্যমে সেই সহবাসের পথ প্রশস্ত করা।
প্রেম বাদ দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক আকছার ঘটে। কিন্তু শরীর বাদ দিয়ে প্রেম একটাও নেই। শরীর বাদ দিয়ে প্রেম যদি হতো তাহলে পৃথিবীতে প্রায় আশি নব্বই শতাংশ মারামারি হানাহানি কমে যেত।
আমাদের সামাজিক পরিকাঠামোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখাশুনা করে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন হয়। সেই শারীরিক সম্পর্ক থেকে গড়ে ওঠে প্রেম। কিন্তু কোন অসুবিধা নেই। হাজার হাজার লাখো লাখো এরকম বিয়ে করে অনেকের গভীর প্রেম। কোনভাবেই তা বিনষ্ট হয় নি। কেন না প্রেম শারীরিক।
কলেজের সেরা সুন্দরী মেয়েটি প্রেম করে আর ছাড়ে। কিংবা অনেকেই তার পেছনে ঘুর ঘুর করে। কিন্তু খারাপ দেখতে কালো মেয়েটির অনেক গুণ। তবু কেউ তাকে প্রেমের অফার দিচ্ছে না। কেন না প্রেম শারীরিক তাই।
বেশ্যাখানায় বারবার যেতে যেতে মেয়েটির সাথে রামুদাদার প্রেম হয়ে গেল। কিন্তু পাশের বাড়ির গুণবতী সুন্দরী মেয়েটি রামুদাদাকে পাত্তা দিত না। কাছে ঘেঁষতে দিত না তাই তার সাথে আমাদের অত ভাল ছেলে রামুদাদার প্রেম হল না। কেন না প্রেম শারীরিক তাই।
গল্পে উপন্যাসে গানে কাহিনীতে কবিতায় প্রেম লিখতে পড়তে ভাবতে বেশ ভালই লাগে। কিন্তু ওই পর্যন্ত। বাস্তবের যুক্তির কোন মিল নাই। শরীর চাই, না হলে প্রেমের কোন মূল্য নাই। পরিণতিও নাই। কিংবা প্রেম নাই।
টিন এজে কত ছেলে কত মেয়ে শুধু প্রেম করে নষ্ট হয়ে গেল। পড়াশুনায় পিছিয়ে পড়ল। কেন না প্রেম শারীরিক তাই। যদি মনের ব্যাপার হতো তাহলে সরল সুন্দর টিন এজ মনে সুন্দরের ছাপ ফেলত। সে পড়াশুনায় এবং পড়াশুনা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে এগিয়ে যেত। তা কিন্তু হয় না। কেন না প্রেম করা মানে তার মনের মধ্যে শুধু দয়িতার শরীর ভাবনা ঢুকে গেল। বিপরীত এই শরীরের নেশা তাকে আর পড়াশুনা গান বাজনা আঁকা খেলাধূলা কোথাও কোনভাবে গভীর মনোযোগ দিতে দিল না। ফলে টিন এজ প্রেম করেই পিছিয়ে পড়ল। কেননা প্রেম শারীরিক তাই।
আমাদের পাড়ার বলরাম দাদা বহুবার সোনাইয়ের শরীর কাছে পাওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। চোখে চোখ মিলিয়েছে। অনেকবার ডেকেছে একা একা পার্কে। কিন্তু সোনাই বড্ড সেকেলে। যাকে বিয়ে করবে তার জন্য শরীর গুছিয়ে রেখেছে। বলরাম বলেছে – আমি তো তোমাকেই বিয়ে করব। তাতে সোনাই বলেছে – তাহলে বিয়ের পরে। তার আগে কাছে ঘেঁষবে না। ফলে সোনাইয়ের সঙ্গে বলরামের প্রেম গড়ে ওঠেই নি। অনিন্দিতার সঙ্গে এখন বলরামের প্রেম। বেশ জোরালো। কেন না প্রেম শারীরিক তাই।
আচ্ছা আপনাকে বলছি, আপনি কি কোন দেখতে শুনতে খারাপ, একেবারে পঙ্গু কিংবা কোন তৃতীয় লিঙ্গ কারো সাথে প্রেম করবেন? সে তো তার শারীরিক গঠনে পিছিয়ে থাকলেও মন তো সবার আছে। সেই মন সুন্দর থেকে সুন্দরতর সুন্দরতম হতেও পারে। হয়ও। আপনি কি তাদের সাথে প্রেম করবেন? করবেন না। কেন না প্রেম শারীরিক তাই।

পরীক্ষা

একাডেমিক পরীক্ষা হলে তিন ধরনের পরীক্ষার্থী থাকে।
এক, যারা পুরো বই পড়ে পরীক্ষা দিতে আসে না। শুধু মাত্র সাজেশনের উপরে ভরসা করে।
দুই, যারা সম্পূর্ণ বই পড়ে পরীক্ষা দিতে আসে। কিন্তু সঠিক উত্তর দিতে বার বার গুলিয়ে ফেলে।
তিন, যারা সম্পূর্ণ বই ও রেফারেন্স পড়ে আসে এবং সঠিক উত্তর লেখে।
পরীক্ষা হলে এই তৃতীয় শ্রেণির পরীক্ষার্থী কখনই দশ পনের শতাংশের বেশি হয় না। তাই একাডেমিক পরীক্ষায় কখনই কোন ছাত্রছাত্রীকে খুব কম বা ফেল করার মত প্রশ্ন অনুযায়ী নম্বর দেওয়া উচিত নয়। আর প্রশ্ন যেন মোটামুটি সহজ ও প্রাঞ্জল হয়। ঘোরানো প্যাঁচানো প্রশ্ন না করাই উচিত। যেখানে এই নম্বরের উপর ভিত্তি করে কোন শিক্ষার্থী তার ভবিষ্যৎ গড়ে। যার পাওয়া উচিত সে যেন সর্বোচ্চ নম্বর পায়।
তাহলে সেই পরীক্ষার্থীর মধ্যে ব্যক্তি কনফিডেনস গড়ে উঠবে। ভবিষ্যতে সে অনেক বড় কিছু করতে পারবে।
যদি সে একটু কঠিন ঘোরানো প্যাঁচানো প্রশ্নের জন্য ভালো নম্বর না পায় তাহলে ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু পড়ার সুযোগ সে পাবে না। দেখা গেছে, এ রকম বহু ছাত্রছাত্রী আছে যারা দশম দ্বাদশে ভালো নম্বর পায় নি কিন্ত যাই হোক করে ভালো কিছু পড়াশুনা করার সুযোগ পেয়ে গেল। তারপর সেই ছাত্রছাত্রী বিশ্ব জয় করেছে। এবং সব দিক দিয়ে সেরা হয়েছে।
কোন ছাত্রছাত্রী যদি এই একাডেমিক নম্বরের জন্য কোন ভালো সুযোগে থেকে বঞ্চিত হয়ে যায় তাহলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছু হতে পারে না।
সহজ করে বলা যায় একবার জয়েন্টে সাফল্য পাওয়া অনেক ছাত্রছাত্রী একাডেমিক পরীক্ষায় দু একটা বিষয় অনুপাতে ৭৫ শতাংশ নম্বর পায় নি ফলে সে সারা জীবনের জন্য ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়া থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল। সেইসব ছাত্রছাত্রী খারাপ পরীক্ষার্থী তা কিন্তু বলা যায় না। বরং বলা যেতে পারে সেবার প্রশ্নপত্র ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে কঠিন করে করা হয়েছিল। মোট পরীক্ষার্থীর প্রায় ২০/২৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী প্রায় প্রতি বছর এই রকম অবস্থার মধ্যে পড়ে।
মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র একাডেমিক নম্বরের উপর ভিত্তি করে কোন কাজ পাওয়া সম্ভব নয়। বরং একাডেমিক পরীক্ষার নম্বরের উপর ভিত্তি করে কাজ পাওয়া যাবে এরকম বৃত্তিমূলক পড়াশুনা করতে পারে। যা সম্পূর্ণরূপে অন্যধারার পড়াশুনা। তাই একাডেমিক পরীক্ষায় কঠিন ঘোরানো প্যাঁচানো প্রশ্ন করা উচিত নয়।

আদর্শ

আমি আমার মা বাবার কোনকিছুই গ্রহণ করি নি।

আমার মা বাবা কখনও স্কুলে যায় নি
আমি এখন মস্ত বড় ডিগ্রিধারী,
আমার বাবা চাষী আমি চাকুরে,
জমিজমার ভরসায় আমার মা বাবা
আমাদের মানুষ করেছেন
আমি ওসব বেচে দিয়েছি,
আমার মা বাবা সংসার আবর্তে থেকেছে
কোথাও কখনো বাইরে বেড়াতে যায় নি
আমি নিজে এবং সপরিবারে হিল্লী দিল্লি ঘুরে বেড়াই,
আমার মা বাবাকে পাড়া পড়শি ছাড়া কেউ চেনে না
আমার আবার বেশ নাম ডাক,
আমার বাবার হাত পা ফুটিফাটা
মায়ের হাত খসখসে
আমাদের হাত পা গাল সব ক্রিমমাখা চকচকে,
আমার মা বাবা সংসার ছাড়া
আর অন্যকিছু কখনও ভাবে নি
আমার ভাবনা আমার সংসার ছাড়াও
অনেক কিছু ভাবে।

এভাবে আমি আমার মা বাবার চিন্তা ভাবনা ও আদর্শের
আজ মস্ত বড় কর্পোরেট
কিন্তু গ্রহণ করি নি কোন কিছুই
না বাক্য না কর্ম না ব্যবধান,
ছাপিয়ে যেতেও পারি নি
মনুষ্যত্বের কণামাত্র।

কবিতার রঙ্গমঞ্চ

– আপনার পেশা কি? মানে আপনি কি করেন?
প্রশ্নের উত্তর দিতে চায় নি কবি। উল্টে কবি সম্মেলন মঞ্চে কবিতা পড়ে শোনাল – দুমুঠো ফুটিয়ে খাব। এক পৃথিবী লিখব। সবার হৃদয়ে আকাশ আঁকব।
কবিতা পড়া শেষ করে আর আমার কাছে এসে বসল না। তাই তার পাশে এক সুন্দরী মহিলা কবি বসেছিলেন তিনিও ধীর পদক্ষেপে তার সিট ছেড়ে উঠে গেলেন।
সেখানে কবির পাশে আর সিট ফাঁকা নেই। কবি তিনিকে দেখে পাশের ভদ্রলোককে কিসব বললেন। তাতে ভদ্রলোক তিনিকে দেখে কবিকে বললেন – শিওর। আসুন। বসুন।
ভদ্রলোক উঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে সিট খুঁজতে লাগলেন। আমি হাতছানি দিয়ে ডাকলাম। ভদ্রলোক এসে আমার পাশে বসলেন । বললেন – ধন্যবাদ।
আমি হেসে জিজ্ঞেস করলাম – আপনি কি করেন?
– আমি শিক্ষক।
– কবি নন?
ভদ্রলোক হো হো করে হেসে ফেলল। শব্দ একটু জোরে হয়ে গেল। তাই লজ্জা পেয়ে বললেন – কবি সম্মেলনে এসেছি তাই কবি তো অবশ্যই। শুধু কবিতা লেখা বা গল্প লেখার পেশা, অনেকটা জীবনকে ফাঁকি দেওয়ার মত। তবে আমি শিক্ষকতা করি। আর অবসরে এসব চর্চা করি।
আমি মনে জোর পেলাম। বললাম – আপনার সঙ্গে আমার জমবে। তার মানে কবিতা গল্প লেখার জন্য আপনি আপনার কর্মকুশলতায় কোন ফাঁকি দেন নি। তাই তো?
ভদ্রলোক আমার দিকে তাকালেন। বললেন – তা কী করে হয়? আমি শিক্ষকতায় ফাঁকি দিলে আগামী শিক্ষা সমাজ ফাঁকিতে পড়বে। কিন্তু ছাত্রছাত্রী ঠিক তার পড়াশুনা করে নেবে। তাই প্রশাসন পদ্ধতি চাইবে আর শিক্ষক নিয়োগ করে কি হবে?
আমি কবির সাথে হাত মেলালাম। সামনে বসা নিজেদের মধ্যে প্রায় মুখে মুখ লাগিয়ে গল্প করা সেই কবি ও কবিনীকে দেখিয়ে বললাম – ওই দেখুন, কবি ও তার উদ্দেশ্য। কিছু শুনছে কী?
আমার পাশে বসা কবিও হাসলেন। বললেন – আমিও তাই ভাবি কতভাবে কবিতা লেখা হয়।
– তাই তো। এবার শোনা যাক কবিতার রঙ্গমঞ্চের কিছু কবিতা।

মায়ের হাতের রান্না

আমি পেটুক নই
তবে খেতে তো হয়
তাই যেটুকু খাই
তখন আমার মায়ের হাতের রান্না
এখন মা নেই তাই বউয়ের হাতের রান্না
তৃপ্তি ভরে খাই।

এর বাইরে হোস্টেলে থাকার সময়
নেমতন্ন বাড়ি কুটুম বাড়ি এবং হোটেল রেস্টুরেন্টে
খেতে হয়েছে
এখনও খেতে হয়
কিন্তু তৃপ্তি করে খাওয়া বলতে
আমার মায়ের হাতের
আর আমার বউয়ের হাতের রান্না।

এই খাওয়া যে যত বেশি খেয়েছে
সেইই পেয়েছে
মায়ের মত এই পৃথিবীর অসীম সুখ
অপার আনন্দ আর আন্তরিক অনন্ত হৃদয়।

ফেসবুকের লাইক কমেন্ট সাহিত্যের গুণমান নির্ধারণ করে না

বিতর্ক – বিপক্ষে
______________

কোন লেখা কিংবা ভাবনা অথবা ছবি আমরা কেন ফেসবুকে পোস্ট করি? লাইক কমেন্ট পাওয়ার জন্য। তাহলে লাইক কমেন্ট লেখার গুণমান নির্ধারণ করবে না কিভাবে? ছবির মর্যাদা বাড়াবে না কিভাবে?

যে লাইক কমেন্টের জন্য হা-পিত্যেশ করে বসে থাকি, লেখাটি পোস্ট করে একটু পরে পরে ফেসবুক খুলছি আর বন্ধ করছি শুধু লাইক কমেন্ট দেখার জন্য, ধন্যবাদ জানানোর জন্য সেখানে লেখার গুণমান কিভাবে নির্ধারিত নয়?

যে লেখে সেইই জানে তার লেখা কেমন। পোস্ট করার সাথে সাথে তার লেখায় লাইক কমেন্টের উপর সে আন্দাজ করতে পারে লেখাটি কেমন। নেট খরচ করে না পড়ে লেখায় কমেন্ট বা লাইক দেয় দু চার শতাংশ। তাও মুখ চেনা কিংবা পরিচিতির জন্য। বাদ বাকী অনেকেই না পড়ে লাইক দিলেও কমেন্ট করে না।

তাছাড়া কমেন্টের মধ্যে কিছু কমেন্ট অসাধারণ দারুণ খুব ভালো ইত্যাদির বাইরেও কিছু বিরূপ কমেন্ট থাকে। যা দেখে লেখক ঠিক বুঝে নেয় তার কী করা উচিত। বেশির ভাগ লেখক নিজেদের ইয়ে ভাবে। তারা যা লেখে তাই ঠিক এবং সেরা। সেসব হাতে অবশ্য গোনা। যারা সবে শিখছে লিখছে আর ভালো লিখতে চায় তাদের জন্য এই ফেসবুকের লাইক কমেন্ট আশীর্বাদের মত। চেনা নেই জানা নেই শুধু লেখা পড়ে নেট খরচ করে যে একটা লাইক দিল একটা ছোট্ট কমেন্ট ‘দারুণ’ লিখল সে আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয়।

আর একটু বিরূপ কমেন্ট করলে আরও বেশি আনন্দ হয় যে তিনি লেখাটি পুরো পড়েছেন তাই আমাকে লেখক হিসেবে গ্রাহ্য করেন না। বা আমার লেখাটি সাহিত্য নয়। কিংবা লেখাটিতে কোন লাইক কমেন্ট নেই তার মানে আমি আমার লেখাটি সাহিত্যের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি নি। তাহলে গুণমানের হিসেবে লাইক কমেন্ট একশত ভাগ এগিয়ে।

আর যারা সুখ্যাত বিখ্যাত লেখক সাহিত্যের ধারণ বাহক মনে করেন তারা লাইক কমেন্টের আশা যেমন করেন না, তেমনি তাদের বই বিক্রি নিয়েও তারা ভাবেন না। তারা লিখতেই থাকেন। আর ফেসবুকে পোস্ট করেন অথবা করেন না।

ব্যর্থ হয় না

কোন নারীর জীবনে কোন ব্যর্থতা নেই।

কোন না কোনভাবে কোন পুরুষ
কিংবা অন্য কোন নারী
তাকে সীমানা ঘেরা আকাশ দেখায়
আকাশে ঘন কালো মেঘ ভাসায়
মেঘের নীচে কাক শকুনের আড্ডা জমায়
বিধি নিষেধের রুক্ষ শুষ্ক হাওয়ায়
তাকে ঘোরায় পাক খাওয়ায়।

যেটুকু মাটির উঠান ও পথ চলতি কাদা থাকে
তাকেই কংক্রিটের সংস্কার বানাতে কেটে ফেলে গাছ
ফসলের ক্ষেত ফুলের বাগান।

তবু মেয়েটি নারী হয়
সমস্ত কুয়াশা ছিন্ন করে
যেটুকু দাঁড়ায় যতটুকু দাঁড়ায়
সবটাই সে মানুষ হয়ে যায়
কোন না কোনভাবে সৃষ্টিতে হাত লাগায়।

সৃষ্টি কখনও ব্যর্থ হয় না
কোন নারী কখনও ব্যর্থ হয় না।