হাসনাহেনা রানু এর সকল পোস্ট

ঝিনুক মনের স্বপ্ন

তোমাকে দিলাম সখের এক নীল সমুদ্র
জলের ভিড়ে সীমাহীন অথৈ জলে
ঢেউ আছে যত গুনো,
খোলা দৃষ্টির পাশে
অসম্ভব মৌনতায় হঠাৎ একটা তরঙ্গ উঠলো ভেসে,
ও ঝিনুক চোখের দু’ ফোঁটা অশ্রু
মুক্তোর মতো টলমল করছে!
আমার ঝিনুক মনের স্বপ্ন ছুঁয়ে
ইচ্ছে সমুদ্র সাঁতার কাটছে।

সমুদ্র বক্ষে উত্তাল গর্জনটুকু আমার
শূন্য দৃষ্টিতে ঝুলে থাকা
আকাশের কোলে দু’ একটি অনুজ্জ্বল নক্ষত্র
নীল আকাশ দুঃখ,
এক মুঠো শাদা ঘাস ফুল
আর কাগজের নৌকো!

তোমার সমস্ত গোলাপ প্রিয় যত!
জসিমউদ্দিনের নকশি কাঁথা
রঙিন স্বপ্ন,
আলতা রাঙা বিকেল
সুদূরের নক্ষত্র;

আশ্বিনের খোলা আকাশে ভেজা চাঁদটা ও তোমার,

আমি শুধু মেঘ অরণ্যের বুনো ফুলের গন্ধে —
পেন্সিলে আঁকা দুঃস্বপ্ন হয়ে:
দুঃখময় দিনগুলোর সাথে
বুনো প্রজাপতির ডানায় উড়ে উড়ে মিশে যাব…
সুদূরের উত্তরের বাতাসে।

20.07.2020

চারুনীড়ের শব্দ নীড়

তুমি কবিতা: অপরূর্প নারীর মতন —
পরেছ শাড়ি, শুভ্র বসনার শ্বেত চন্দন
মেখেছ জ‍্যোৎস্না প্রসাধনী
তোমার নিঃশ্বাসের দৌরাত্ম্যে সকালের রৌদ্র ভাঙ্গে, —
কাজল চোখের তারায় নিবিড় সন্ধ্যা নামে ….!

তুমি কবিতা- স্নিগ্ধ ভোরের ঠোঁটে লেগে থাকা- ধোঁয়া ওঠা চায়ের ঘ্রাণে ……
শত শব্দের;
হলুদ পাতার বিবর্ণতার ভারে নুয়ে পড়ে
চারুনীড়ের শব্দ নীড়. …. !

মননে : তোমার সবুজ প্রেম
ঠোঁটে গোলাপ হাসি ,
তুমি নদী —– কখনো নীরব দীর্ঘ রাত্রি ..
তোমার বুনো চাহনির আড়ালে
সবুজ ভাঁজ ভাঙ্গে;
তুমি দ‍্যাখো তার প্রতিচ্ছবি —–
আমার চোখে,

দ‍্যাখো এই সেই চির সবুজ যৌবনের হাতছানি ……

তুমি কবিতা;
পরেছ আকাশ নীল শাড়ি
তোমার রূপের মাধুরীতে
নীল আকাশ
মেঘে মেঘে ঢেউ ভাঙ্গছে !

তোমায় দেখে মুগ্ধ পৃথিবী
ফেরাতে পারেনা দৃষ্টি —
রাতের শিশিরে এক সমুদ্র অরণ্য ভিজছে ,

ভিজেছে এ মন : ততখানি !

20.07.2020

ইকারুসের স্বপ্ন ডানা

পৃথিবীটা অনেক সুন্দর
কিন্ত হলে কী হবে
আমিতো সুন্দরের রং ছড়াতে পারিনি
কী করে ছড়াবো,
আমি কষ্ট বিলাসী
কষ্ট ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারিনা,
কষ্টরা আমার চারপাশ শীত সকালের এক ফালি মিষ্টি রৌদ্দুরের মতোই ছুঁয়ে থাকে-।
পৃথিবীর কত কিছুই তো সুন্দর
আমার সুখগুলো কুড়িয়ে নিয়ে গেছে,
কোন এক সুখী স্বপ্ন বিলাসী মানুষ:
আমি তাকে স্পর্শ করতে পারি না
সে এখন অনেক দূরের নক্ষত্র হয়ে গেছে,
যার জন্য আমার এত অপেক্ষা
সেই বুঝল না!
নিবিড় রাত্রি,
তুমি আমায় ছেড়ে যেও না
নির্জন বিমর্ষ পৃথিবী!
তোমার বুক জুড়ে কেবলই বেড়ে ওঠে
গভীর নৈঃশব্দ্য, আর নৈঃশব্দ্যতার কঠিন দীর্ঘশ্বাস:
তোমার সঙ্গে আমি বাঁধা পড়ে আছি
বালিয়াড়ি পাখি হয়ে –
আমি তোমার চোখ সমুদ্রে, ডানা মেলে উড়বো
ইকারুসের ডানায় একমুঠো রৌদ্রের গন্ধ: ইচ্ছে ঘুড়ি স্বপ্ন এঁকে এঁকে
অনাবৃত নীল আকাশ চলে গেল তোমার দখলে;
নীরব নৈঃশব্দ্যে কেটে যাই আমার সময়,
আমার দ্বারা কিছুই হবে না
আমি কিছু পারিনা,
কবিতা জানে
রাত্রি জানে
আকাশ,
নক্ষত্র, চাঁদ জানে
শ্বাশত সুন্দর হে-
শুধুই তুমি জানলে না!

আজ একটা কবিতা লিখবো

কতদিন অপেক্ষা করছি, আজ একটা বিশেষ কবিতা লিখবো
কৃষ্ণচূড়ার তলায় দাঁড়িয়ে কথা দিয়েছিলাম।
অসাধারণ ১৪ টা বিকেল সাক্ষী ছিল
লিখবো লিখবো করে আর লেখা হয়নি,
কি করে লিখবো?
প্রতিটা বিকেলেই ভাবি আজ ঠিক লিখবো
কিন্তু সে আজ কি করে যেন গতকাল হয়ে যায়,
কবিতা আর লেখা হয়না:
১৪ বিকেলের প্রথম বিকেল ছিল অসাধারণ,
আমি কবিতা লেখার জন্য নীল ডায়েরি নিয়ে বসেছি, তখন টিভির পর্দায় শিরোনাম দেখলাম অষ্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চলে দাউ দাউ আগুন জ্বলছে
উফ্ সেকি ভয়াবহ আগুন;
সেই আগুন বিকেল সত‍্যিই শেষ হলো না শুধু
সাথে খুন হলো আমার কবিতা লেখার অদম‍্য ইচ্ছে শক্তি,
আমি হাল ছাড়িনি তখনো।
দ্বিতীয় বিকেলে আমি নিষ্প্রভ রোদ হাতের মুঠোয় নিয়ে খেলতে শুরু করলাম,
ঠিক তখন দেখি অষ্ট্রেলিয়ার দশ হাজার উট প্রকাশ‍্যে গুলি করে হত্যা করেছে!
উটগুলো বেশি পানি খায়, এটাই ওদের অপরাধ ছিল!
উটগুলো যদি আমার বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিত:
ওরা প্রাণে বেঁচে থাকত;
আমার মন খারাপ ছিল অনেক দিন।
ঠিক সেই মুহূর্তে করোনা মহামারী ছোবল মেরেছে বিশ্বের প্রতিটি অলিগলিতে; সেই থেকে মন ভাল নেই।
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে
বিচ্ছিন্ন হচ্ছে মানুষ
ছিন্ন ভিন্ন হচ্ছে জনজীবন;
আমি ফিরে এসেছি চৌদ্দ বিকেলের কাছে
করোনা মুহুর্ত গুলোয় মেঘের খোলস ছিঁড়ে বেরিয়ে আসিনি এক ফোঁটা বৃষ্টি ও!
কি অদ্ভুত ব্যাপার
বিশ্বের অবয়ব পাল্টে গেছে:
দিন ঢেকেছে রাতের অন্ধকারে
রাত ঢেকেছে দিনের পালকে,
সবুজ পাতা হলদেটে হয়েছে
ঘোলাটে হয়েছে দিনের আলো
ফিকে হয়েছে চাঁদ; নক্ষত্র’র বড় কষ্ট!
পৃথিবী ভাল নেই ব‍্যথিত বড় বেশি
কি করে থাকে?
পৃথিবীর মানুষ মেরে সাবাড় করছে করোনা;
সাদা আকাশ নীলে নীলারণ্য হয়ে উঠেছে
মেঘের সাদা চোখে বৃষ্টির ফোঁটা
এক করোনার সাদা বারান্দায় সার সার কবিতার লাশ;
কবিতা আজ স্বেচ্ছা বন্দি, আবার কেউ নির্বাসনে!

আমরা শতকোটি শতাব্দীর পিছনে ফিরে গিয়েছি
কি ছিল সেখানে?
ও, মাঝেমধ্যে এমন মহামারী নাকি পৃথিবীকে আগেও ছোবল মেরেছে,
সে মারতেই পারে,
তাই বলে কি এখনই পৃথিবীর সব মানুষ মেরে সাবাড় করতে হবে ?
তুমি ফিরে যাও করোনা
একশো কুড়ি শতাব্দী পরে এসো!
আজ আমি একটা কবিতা লিখবো
আমার কবিতার ডায়েরিতে অসম্ভব মৌনতায় একটা একটা করে তখন বিকেল বাড়তে থাকে!

18.07.2020

মেঘ পোড়া মন

আমি দেখেছি স্রোতে ভাসা শ্যাওলা
কচুরিপানার যাযাবর জীবন,

বালুকাবেলায় একলা দাঁড়িয়ে —–
দেখেছি জীবন সমুদ্র :
আমি বসে আছি সেই
পুরোনো কফিশপের কর্ণারের টেবিলে,
তুমি আমার উল্টো দিকে
ভীষণ অস্থিরতায় ভূগছো-
হয়তো কার ও অপেক্ষায় —–

আমি একা —
সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই,
এক নিঃশব্দ আঁধারের বুকে আমি
ডুবে আছি,
সমুদ্র উন্মাতাল আমারই দৃষ্টি ছুঁয়ে
জলের গভীরে,
উন্মত্ত হাওয়া বইছে
রাত বাড়তে থাকে,
আমি বেঁচে আছি এক রকম
বলতেই হবে ;

কিছুক্ষণ আর তোমার দিকে আমার মন নেই,
সমুদ্র নিয়ে ভাবছি
হঠাৎ অজানা সুন্দরীর কটাক্ষ কিংবা
লাস্যময়ীর কফিশপ কাঁপানো
অট্টহাসিতে আমি চমকে উঠলাম,
যেন রাতের চাঁদটা তোমার পাশে
নেমে এসেছে —

চাঁদ আর ঐ লাস্যময়ী মুখটা একাকার
সে এক নরম সুন্দরী,
যার নরম তুলতুলে রক্তাত্ত শরীর,
টিপ দিলে রক্ত ছুটবে,
অহঙ্কারে মেয়েটি সোজা হয়ে দাঁড়াতে
পারছে না,
আর আমি
ক্রমাগত এক সমুদ্র বিষণ্নতায়
ডুবে যাচ্ছি,

জানতাম আমার এভাবেই মৃত্যু হবে,
বড় কঠিন সে মৃত্যু যন্ত্রণা
বেঁচে থেকেও মরে যাওয়া
এর নাম মৃত্যু —–!
আমি ভীরু হরিণীর মতো নিজেকে
গুটিয়ে নিয়েছি শামুকের মোড়কে —– !

পৃথিবীর সমস্ত আকাশ আজ থমথমে
নীল-
গাঢ় স্তব্ধতার কঠিন অন্ধকারে ঢেকে গেছে
রাত্রিবেলা,
আমি রাত্রির গভীরতায় তলিয়ে যাচ্ছি
ক্রমশই;
আমি যাচ্ছি,
আমি যাব
চিরকাল
মৃত্যুর কাছে যে আমার অপেক্ষা রয়েছে,

মেয়েটির মার্বেল মার্কা দু’টি চোখ,
স্বপ্নের মতোই দেখতে লাগছে,
আর দু’ ঠোঁটের ভাঁজে হাসিতে
সুচিহ্নিত গোপন শিশির মুক্তা ধরে
আছে,
মেয়েটির উগ্রতা আর প্রসাধনের মধ্যে তুমি
কেবলই ডুবে যাচ্ছিলে,
নারীর যৌবনের খাপ ছাড়া তলোয়ারের মতোই-

রাত্রিবেলা কফিশপে নীল, নিয়ন বাতি
জ্বলছে
সাথে চমৎকার সুরের মূর্ছনা —–
আমি বিশুদ্ধ বিশ্বাস পান করছি বসে বসে,
তুমি মেয়েটির হাত ধরে আমার টেবিলে
আমি তখন প্রচন্ড সূর্যের দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছি,
অথচ তখন রাত্রিবেলা:
দিনের ক্লান্তি শেষে
রাত্রির নিবিড়তায় আমিও বড় বেশি ক্লান্ত,
হঠাৎ যেভাবে একদিন এসেছিলে,
আবার আমার আকাশ গাঢ় নীলিমায় ঢেকে চলে গেলে,
মানুষের মন তো !
খেয়ালী হয় এমন,

আজ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
পথ গেছে দু’ দিকে বেঁকে,
কতটা অভিমানে ভিজছি আমি…

জানি আর কাছে এসে এ চোখের
বেদনার — মেঘ জল মুছে দিয়ে
বলবে না কখনোই —–
দূর ..! অযথাই সমুদ্রে বৃষ্টি পাত হচ্ছে,
এতো নরম তুলতুলে গালে ;
গোলাপ বাগানে
সারা রাত্রি জেগে জেগে শিশির ঝরছে,
এ রাত্রির আহবান কান্নার মতোই লাগছে,
কেন কাঁদছ?
আমি তো আছি,
যাইনি কোথাও — —–
এ সত্যিই !
আমায় ছুঁয়ে দেখো —
এসো আমরা অবরুদ্ধ সমুদ্রের বুকে
বরফ কুচি ভাঙ্গি —
মানুষের মন তো বিচিত্র কিছুই নয়,

রাত্রি ও স্তব্ধতা এক নয়
নিঃসঙ্গতা ও একাকীর মতো ও নয়,
ও আমার বান্ধবী,
ভালবাসার দাবিদার তো নয়
আমাদের ভালবাসা সাদা বিছানায়
ঘন নীল ঘুমে,
কখনই না,

অরণ্যের কিছু পাখি উড়ে এসেছে
রাত্রির ডানায়,
রাত্রি ডুবে যাচ্ছে গভীর সমুদ্রের বুকে,
আমি তখন লুকায়িত সমুদ্রের কান্না দেখি—

কিছুক্ষণ পরেই দেখি দৃশ্য বদলে যাচ্ছে
এক এক করে,
তোমার নরম মাখনের মতো প্রিয় বান্ধবীটি
এক ঝাঁক যুবকের সাথে নৃত্য করছে
কফি বারে —
আমার দৃষ্টি প্রসারিত হয়ে উঠল,
মেয়েটি সাদা গাউন পরে নৃত্য করছে
মেয়েটি খুব কৌশলী ও জটিল,
অনেকটা দূর্বোধ্য কবিতার মতোই —

তুমি আঙুর লতা বাগানের উপচে পড়া
শিশির স্নানে ভিজতে ভিজতে বললে,
ও পর্দার ওপাশে আড়ালের মেয়ে
অরুন্ধতী সেন :
আজ আরও গাঢ় হওয়ার কথা
শব্দ আর পাতাদের ..।

মনে আছে তুমি ‘ এক গুচ্ছ পাতা বাহার
স্বপ্ন সাজিয়ে নিয়ে,
মনের গভীরে–
এসেছিলে বেলা শেষে শেষ বিকেলে – ?
বিশ্বাস করো,
এখন ও প্রত্যেকটা দিন নতুন
ভাবে শুরু হয় —-
প্রত্যেকটা দিনের গল্প
আলাদা –
তুমি আমার ভোরের আলো,
প্রতিটি সোনালি ভোরের ডানায় ভর করে
আমি তোমার সাথে,
শুদ্ধ আগামীর বুকে হেঁটে যাব,
আবার এমন রাত্রি কবে আসবে ?

এক চিলতে রোদ উঠোনে

কবিতায় কতদিন সূর্য নিয়ে খেলেছি এই আমি
শীত সকালের চঞ্চলা রোদ উঁকি দিয়ে গেছে অরণ‍্যের সবুজাভায় ,
একটা নীল প্রজাপতি উড়ে এসেছিল পৌষের দীর্ঘ রাত হাতে নিয়ে :
প্রজাপতির সেকি ভীষণ
মন খারাপ ছিল —
আমি কোন একদিন প্রজাপতিকে কথা দিয়েছিলাম,
ওকে নিয়ে একটা বক সাদা ধবধবে জ‍্যোৎস্নার পালকে ভেজা কবিতা লিখবো।
লিখি লিখি করেও আজ অবধি লেখা হয়ে ওঠেনি।
প্রজাপতি হতে পারতো আমার লেখা আগামীর কবিতা
কিম্বা এই প্রজন্মের কোন গল্প ;
শীত বিকেলের এক দুর্দান্ত কোন ঘটনা বহুল উপন্যাস ও হতে পারতো।
আহা ! নীল বিষন্ন প্রজাপতি —
আর অভিমান করে থেকো না ,
তুমি এখন ডানা মেলে উড়ে যাও আমার শীত বিকেলের
মেঘলা মনের ছায়া – রৌদ্রের গন্ধ মাখা কবিতায় ;
এ কবিতা শুধু তোমার জন্য।

এক আকাশ দুঃখ ব‍্যথা

এই এক আকাশ মেঘ
এক আকাশ জ‍্যোৎস্নাধারা, এক পৃথিবী ঢেকেছে
দহন দুঃখ কথা:
আমার মন ছুঁয়েছে
বিরহ ব্যথা,
রৌদুরে আমি কোনদিন রাখিনি এ হাত
অবিশ্বাস্য আষাঢ়ের বৃষ্টিতে ভিজছি সারারাত
এ মন ভিজে সারা;
ভিজছে ঝিরঝির বৃষ্টিতে কাশবন
ভিজছে দারুচিনি দ্বীপ
ভিজেছে একমুঠো স্বপ্ন প্রহর!

ইচ্ছে নদীর স্রোতে ভেসে গেছে দুঃখ পাখির স্বপ্ন
এখানে আকাশ অসীম নীলিমায় ঢেকেছে;
নক্ষত্ররা এক অদ্ভুত অনুভূতির বিস্ময়!
স্মৃতি গুলো নতুন আকাশে ডুবতে ডুবতে
মেঘ হয়ে ঝরে গেছে বৃষ্টির ফোঁটায় কত কত রাতে
পাহাড়ের বুকে;
আকাশ এখন ভীষণ একা
নিঃসঙ্গ নক্ষত্রদের নীল চোখে অপার কষ্টের শূন্যতা।

এক অবাক মেয়ে

এই নিবিড় মিষ্টি বিকেলের এক পশলা বৃষ্টি এনেছে কদম ঘ্রাণ
পাশে পড়ে আছে একমুঠো কামিনী স্বপ্ন খাম,
স্নিগ্ধ ভোরের স্পর্শে সতেজ হয়েছে দূর্বা ঘাস
আমার মন ব্যাকুল হয়েছে ততটাই:
অবাধ বৃষ্টিতে ভিজবো এই শ্রাবণে
বৃষ্টি বিলাস করব শহর ছেড়ে একটু দূরে!

একদিন আমার স্বপ্ন ছিল কদম ফোঁটা মেঘের
সে মেঘ কাজল হয়ে থাকবে
নেশা ভরা মায়াবী ডাগর চোখের ভাঁজে,
এ দু’টি হাত কাঁকন প্রতি,
দু ‘চোখে ব‍্যথা ঢেকে কাজল আঁকত
দু ‘পায়ে বাঁধত নূপুর;
শ্রাবণ বিকেল এসেছে কত
অথচ আমার বৃষ্টি বিলাসী স্বপ্ন পূরণ হয়নি আজও:
ধান সিঁড়ি নদীর জলে পা ডুবিয়ে অপেক্ষায় থাকি
অচেনা কার ও
শ্রাবণ বৃষ্টি ভেজা বিকেলে কদম ঘ্রাণ নিয়ে
সে আসবে আমার অচেনা শহরে!
টুপটাপ বৃষ্টির সাথে
আমার হাত ধরে হাঁটবে দূরের পথে।

কাঁঠালি চাপা গন্ধে হারাবে
এক অবাক মেয়ে
সে মেয়ের পলক পড়বে না দুষ্টু চোখে
সেই অচেনা তোমার মুখের দিকে অবাক চেয়ে;
হয়ত কোন কোন ভালবাসা এভাবেই স্বপ্ন আঁকে
সেই অবাক মেয়ের ঋদ্ধ মন ছুঁয়ে!

আমি ছিলাম

অনন্ত আকাশের নীল ছুঁয়ে
চারুকলা মেঘের বুকে,
অপেক্ষার জানালায় চোখ রেখে
তুমি অবাক চোখে অপলক দেখছিলে,
মেঘের ভাঁজে ভাঁজে
এক আশ্চর্য নীলের খেলা!
জান কি! সে আকাশে
আমি ছিলাম ওই এক পরশা নীল

এক নির্জন সন্ধ্যায় আবেগে স্বপ্ন মেখে
প্রথম যৌবনের উত্তাল তরঙ্গে,
কামনার আগুনে পুড়ে পুড়ে
তাকে খুব করে কাছে পেতে চেয়েছিলে,
জান কি! সে সন্ধ্যায়
আমি ছিলাম ওই এক টুকরো স্বপ্ন

এক শ্রাবণ রাতের আকাশে
তৃষ্ণার এক খণ্ড মেঘ গলে,
রুমঝুম নূপুরের ছন্দে নেমেছিল বৃষ্টি,
তুমি বৃষ্টি বিলাসে মেতে উঠেছিলে
জান কি! সে রাতে
আমি ছিলাম ওই এক পশলা বৃষ্টি

কোন এক স্নিগ্ধ ভোরে ফুটেছিল ভালবাসার উদ্যানে
রাতের ফুল ভোরে
শুভ্র কোমল থোকা থোকা হাসনাহেনা;
তোমার হৃদয়ের গোপন ফুলদানিতে,
সাজিয়ে রেখেছ বড় যত্ন করে
জান কি! কে সে
আমি ছিলাম সে হাসনাহেনা ফুল

এক পূর্ণিমা রাতে তোমার পৃথিবী রঙিন করে
জ‍্যোৎস্নার নরম মোম আলো ছড়িয়েছিল,
জান কি! সে রাতে
আমি ছিলাম ওই জ‍্যোৎস্না

এক শীত সকালে কুয়াশার শুভ্র উষ্ণতার চাদর জড়িয়ে
দূর্বা ঘাসের বুকে নগ্ন পায়ে হাঁটছিলে,
হঠাৎ এক চিলতে হাসি দেখে চমকে উঠেছিলে,
জান কি! সে বিন্দু বিন্দু ঘাস শিশিরে
আমি ছিলাম ওই হাসি

পড়ন্ত বিকেলে পাহাড়ের বুক চিরে
নেমেছিল নূপুরের ছন্দে ঝর্ণা ধারা,
তুমি স্পর্শ করে বলেছিলে, এত পাহাড়ের কান্না
জান কি! সে শেষ বিকেলে
আমি
আমিই ছিলাম ওই কান্না!

আকাশ তোমার সব কথা বল

আকাশ তুমি বল, আকাশ আজ তোমার সব কথা বল,
আমি শুধু চুপচাপ শুনব
আজ আমি নিঃশব্দ:
বলব না একটা কথাও

তোমার নিঃসঙ্গতার কথা বল
তোমার একাকীত্বের কথা বল,
তোমার মন খারাপের কথা বল
তোমার ভাললাগা, মন্দ লাগা
তোমার দহনের কথা
আজ আমি তোমার সব কথা শুনব!
বলব না একটা কথাও
আজ আমি শুধুই স্রোতা
আজ আমি নিঃশব্দ!

আকাশ তোমার এলোমেলো দিনযাপনের কথা বল
তোমার কষ্টের কথা বল:
তোমার একাকীত্ব জীবন ক‍্যামন করে পাড়ি দাও ?
চন্দ্র সূর্যের গ্রহণের কথা বল
নিঃসঙ্গ নক্ষত্রের কথা বল,
নীল কষ্ট; নীল আকাশ,
আজ তোমার সুখ অসুখের সব কথা বল
বিরহী আকাশ তুমি কিছুই গোপন কর না!

তোমার কালো মেঘ ডানায় ঝরে ঝরে পড়ে অভিমানী বৃষ্টির ক্ষত;
কাল বৈশাখী তোমার বুক চূর্ণ বিচূর্ণ করে কেঁপে কেঁপে উঠে প্রবল গর্জনে ফেটে পড়ে
তখনো তুমি ভেঙ্গে পড় না ক‍্যামন সুস্থির থাক
এক সমুদ্র কষ্ট দহন বুকে চেপে;
এ সবাই পারে না
তুমি পেরেছ আকাশ
এটাই তোমার পূর্ণতা!

গহীনের শব্দ

মধ্যরাতে আমি জেগে থাকি একা –
নিঃসঙ্গ রাত সমুদ্র হয়ে ডাকে,
আমি খড়কুটো ভেসে যাই নীল জলে
বহুদূর যাই অসীমের দিকে যাই,
অস্তিত্বের নরম শরীর ছুঁয়ে
সহসাই দেখি নিঃসঙ্গতা চোখ
সমুদ্র চোখ
রাতের শরীরে চোখ:

চোখের শরীরে আমি শুধু নীল ছায়া
সেই চোখে ভেসে আমি বহুদূর যাই,
সেই চোখে খুলি শরীরের যত ভাঁজ …
সেই চোখে ভেসে রাতটাও ক্ষীণ
আর আমি ততখানি
শূন্য প্রায়!

নীলস্পর্শ

নিঃসঙ্গতার মুখোমুখি বসে আছে ইয়ানা —
ওর বিপরীত পাশে আহান
দু’জনই অচেনা, অপরিচিত
কেউ কাউকেই চেনে না
আমি বসে আছি কর্ণারের টেবিলে
কফিশপ ঢাকা শ‍্যামলী আদাবর।

ইয়ানা নির্মাণ করছে বিষণ্ন অতীত
এক জীবনে যা ছিল তার কাছে সুখ, স্বপ্ন বা স্বর্গ !
সময়ের ব‍্যবধানে আজ তা তিক্ত –
ওর দৃষ্টি ছুঁয়ে আছে সেই প্রতিচ্ছবি:
যাকে সে একবছর আগে হারিয়ে ফেলেছে
না, ঠিক ও হারায়নি,
হারিয়ে গেছে।
কেউ নিজে থেকে হারালে প্রতিপক্ষের আর কিবা করার থাকে –
এক নিমিষেই ওর মনের আকাশ মেঘে ঢেকে গেছে
সহসাই সে মেঘে বৃষ্টি নামলো !
নিঃশব্দে কাঁদছে ইয়ানা
ভিজে যাচ্ছে ও……

নির্জন দুপুর অকারণে সময় বয়ে যায়
তবু বসে আছি সাথে এক ভাবি
আমাদের দু’জনের দুই ছেলে জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড ক‍্যাম্পে অবস্থান করছে
মন পড়ে আছে ছেলের কাছে।

আমরা দুপুরের লাঞ্চ সেরে কফিশপে ঢুকেছি
ইয়ানা লাগাম ছাড়া এক রঙিন প্রজাপতি যেন
কেন যে কষ্ট বিলাস করছে মেয়েটা একা বসে এক টেবিলে ?
ডানাভেজা দু’টো আঁখি ওর, অনেকটা নেশার মতো !
বৃষ্টিবিনম্র মুখটা ওর টলমল করছে
সারা মুখ জুড়ে চাপা অভিমানের অনুভূতি গুলো বৃত্তের ছক ভেঙ্গে বক্ররেখায় হেঁটে হেঁটে চলে গেছে অনেক দূরে
এতটাই দূরে যেখান থেকে আর কেউ কোনদিন ফেরে না।

আহান গোপনে গোপনে ইয়ানাকে দেখছে
ও নানা বাহানায় কফিশপে সময় পার করছে
কখনো বার্গার, স‍্যান্ডউয়িস, কফি, আইসক্রিম অর্ডার করে
আমার পাশের ভাবির চোখের তারায় নীল পরীর দুষ্টু চাহনি:

ইয়ানার টেবিলে ফাস্টফুডের অনেক গুলো আইটেম পড়ে আছে
ও অন‍্যমনষ্ক ভাবে সেল ফোন নিয়ে নাড়াচাড়া করছে
হয়তো ফেসবুকে দৃষ্টি নিমগ্ন ওর।

হঠাৎ বিপরীত পাশের টেবিল থেকে আহানের আগমন ঘটে –
ইয়ানার টেবিলে,
হাই আমি আহান ! প্রায় তোমাকে এই টেবিলে বিষণ্ন মন নিয়ে বসে থাকতে দেখি। কি হয়েছে তোমার? আমাকে বলা যাবে ?

ইয়ানা তখন পিপাসায় নিমগ্ন হয়ে জলরং নির্জন এক কড়া দুপুর ভাঙ্গছে সুডৌল ডিম্বাকৃতি লাল নীল গ্লাসের নেশার রঙিন পানিতে:
কিছুক্ষণ ও রঙিন পানির নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে –

আহান বলে, এ‍্যাই” নীল টিপ” নীল নয়না মেয়ে ? এসব করছ কি তুমি ?
ওগো নীল নয়না মেয়ে, তোমার ঐ “নীল টিপ” আমাকে বন্ধুত্বের আমন্ত্রণ জানিয়েছে –
পূর্বের সব হিসেব কাটাকাটি,
হুম, যাহা বলছি সত্যি বলছি –
সত‍্য বহি মিথ‍্যা বলিব না:
অযাচিত তুমি শুধু শুধুই বিরহের সঙ্গে বসবাস করছ;
সময়ের আয়নায় নিজেকে একবারও কি দেখেছো ?
কি হাল হয়েছে তোমার?
তোমার জীবন থেকে অয়ন চলে গেছে,
আহান তো আছে। এক অয়নের জন্য তোমার জীবন ব‍্যর্থ হতে পারে না!
এ আমার কথা:
আমি তোর বেস্ট বন্ধু হয়ে কাছে এসেছি –
প্লিজ! একটু বোঝার চেষ্টা কর ….

ইয়ানা একটা কথাও বলে না –
কিছুক্ষণ পর আহান হাত বাড়িয়ে ইয়ানার হাত স্পর্শ করলো
মূহুর্তে ইয়ানার আকাশ নীল রঙের আবরণে ঢেকে যায় !
ইয়ানা আহানের হাত চেপে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে –
ইয়ানার পরিহিত নীল রং থ্রিপিস

নীল রং এমনিতেই ভীষণ আকর্ষণীয়!
স্থান বিশেষে আহানের নীলস্পর্শ হয়ে উঠে আর ও
দুর্নিবার …
আহান ইয়ানাকে দু’হাতে ধরে নিয়ে ধীরে ধীরে কফিশপ ত‍্যাগ করার জন্য স্লাইডিং ডোর ঠেলে একপা, দু’পা বাড়ায় সামনের দিকে।
বুঝতে পারলাম, ওরা পূর্বে পরিচিত; মান অভিমান
চলছিল !
ঠিক তাও নয়,
এক বন্ধুর ব্রেকআপ পরবর্তী কষ্ট গুলো অন‍্যবন্ধু অনুভব করার চেষ্টা করছে –
হয়তো এটাও ঠিক নয়।

ভেঙ্গে পড়া জীবনে তবু ওরা …
জল ফড়িং এর বিষণ্ন ডানায় স্বপ্ন ওড়াই;
আজন্ম বেঁচে থাকুক ওদের লালিত স্বপ্ন: –

আমার পাশের ভাবির দুচোখে তখন বিস্ময় ঝরে ঝরে পড়ে –
আর আমি ডায়েরি লেখায় ততটাই নিমগ্ন !

শেষ শরতের কাশকন্যা

এই শরতের দ্বিতীয় বসন্তে নীড়ের মাথায় অদ্ভুত একটা ভাবনা চেপেছে দূরের কোন এক কাশবনে ঘুরতে যাবে। ও ঠিক করল, ওর খুব কাছের বন্ধু বিপ্লবকে সঙ্গে নেবে। এত বন্ধুর ভীড়ে এক বিল্পব ওর খুব কাছের বন্ধু। ও হঠাৎ বিপ্লবকে ফোন করল, হ্যালো হ্যালো বিপ্লবের সেল ফোনে নীড়ের নম্বরটা ভাসছে। ফোন রিসিভ করল বিপ্লব হ্যালো নীড়! ক্যামন আছিস? নীড় ছোট্ট উত্তর দিল ভাল। আমার একটা রিকুয়েস্ট রাখবি? বিপ্লব একটু চমকে যায়। বলে, কি রিকুয়েস্ট বল? এভাবে বলছিস কেন? আজ পর্যন্ত তোর কোন কথাটা আমি রাখিনি বল? নীড় বলল, হুম শোন না । শরৎ প্রায় যায় যায় করছে। তুই আমাকে একটা বিকেল দিবি? আমরা সে বিকেলের হাত ধরে দূরের কোন কাশবনে হাঁটতে যাব।

হেসে ওঠে বিপ্লব, ওহ এই কথা। কেন দেব না? চল না কবে যাবি? নীড় বলল, তবে আর দেরী কেন? আজই চল না বিকেলেই বেরিয়ে পড়ি। আজ? বিপ্লব বলল, ওকে ম্যাডাম বিকেল চারটায় আমরা যাচ্ছি তাহলে। নীড় লাইনটা কেটে দিল।
– ওরা বিকেল চারটায় স্বপ্নপুরী যাওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করল। শহর ছেড়ে অনেক দূরে। বিপ্লব বাইক নিয়ে এসেছে। যেতে যেতে পথে হালকা বৃষ্টি হল। ওরা দু’ জনেই বৃষ্টিতে ভিজেছে। বিপ্লব বলল, এই নীড় অনেক দিন বৃষ্টিতে ভেজা হয় না। আজ তোর সঙ্গে বৃষ্টি বিলাস করছি বেশ লাগছে। নীড় বলল, হুম বিপ্লব তুই দেখছি বেশ রোমান্টিক হয়েছিস। কবে থেকেরে। বিপ্লব হেসে ওঠে বলল, কেনরে এ যাবৎ আমাকে কি তোর আন রোমান্টিক মনে হয়েছে? এই নীড়, এত কিছু থাকতে তোর হঠাৎ কাশবনে ঘোরার শখ হল কেন? ঘুরতে যাওয়ার আরও অনেক জায়গা ছিল। নীড় বলল হুম, তা হয়ত ছিল। কিন্ত তুই কি জানিস, শরৎ হল দ্বিতীয় বসন্ত। কাশফুল শুভ্রতার ডানায় থোকা থোকা সাদা মেঘের আঁচল বিছিয়ে শরতের আবির্ভাবে আমার মনটা উচ্ছ্বাসিত হয়ে ওঠে। ঠিক কাশফুলের মতো।

আমার মনটাও নরম হয়ে যায়। ও তুই বুঝবি না বিপ্লব। আগে চল কাশবনে তারপর দেখ কি মায়াময় সৌন্দর্যের কারুকার্যের উচ্ছ্বাস লেগে আছে প্রতিটি কাশফুলের ছড়ায় ছড়ায়। আরে আমিতো রীতিমতো কাশরাজ্যে স্বপ্ন বিলাসী কাশ মহল বানানোর কথা ভাবছি। কিন্ত কি জানিস সে স্বপ্ন মহলে মনের মানুষ নেই। আমি বড় একারে!

বিপ্লব হেসে ওঠে, আরে তুই তো আস্ত একটা “কাশকন্যা” শরৎ প্রকৃতির ঠোঁটে। নরম কাশফুলের মতোই সাদা তোর মন। ওরা এক ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে গেল স্বপ্নপুরী কাশ অরণ্যে। রোদ, বৃষ্টি আর হাওয়ায় দুলছে কাশবন। বিপ্লব কাশবন আর নীড়কে আলাদা করতে পারে না। নীড় আজ পরেছে কাশফুলের মতোই শুভ্র পোশাক। স্বপ্নপুরীর দিগন্ত জোড়া মাঠের পর মাঠ কাশবন। বিস্ময়ে অভিভূত হয়েই সেদিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বিপ্লব। নীড় কাশবনে পা রেখেই ভীষণ উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে, ওয়াও বিপ্লব! স্বর্গ যদি কোথাও থেকে থাকে তো এখানেই আছে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

বিপ্লব বলল, সত্যিই নীড় আজ আমি না আসলে খুব খু-উ-ব মিস করতাম এমন হৃদয় কাড়া অপূর্ব দৃশ্য। নীড় বলল, তুই আসবি না মানে? তোকে হাজার বার আসতে হত। তুই ছাড়া আমি অচল জানিস না? তুই ছাড়া এমন দৃশ্য আমি একা দেখবো নাকি? জানিস তো ভীষণ একটা বোরিং লাইফ পার করছিরে। মাঝে মধ্যে তোর সঙ্গ ভীষণ ভাল লাগে। তুই ছাড়া আমার আর কে আছে বল তো?
বিপ্লব বলল, কেনরে তুই না কাইফিকে ভালবাসিস? উত্তরে নীড় বলল, নারে তোর জানায় ভুল আছে। ওটা আমি তোকে বানিয়ে বলেছি। আর তুই তো ক্যাইসাকেই ভালবাসিস বিপ্লব। বিপ্লব বলল, নারে তোর জানাতে ও ভুল আছে। আমিও তোকে বাড়িয়ে বলেছি। তবে ঠিক কোনটা বিপ্লব! আমি তোকে ভাল কথা শেষ করতে পারে না বিপ্লব। ওর গলাটা কেঁপে কেঁপে থেমে গেল। হাতটা বাড়িয়ে দে নীড় । মুহুর্তে নীড়কে কাছে টেনে দু’ হাতে ওর চিবুক উন্মোচন করে বলল, তুই কি আজও আমায় বন্ধু ভাবিস। নাকি বন্ধুর চেয়ে একটু খানি বেশি। এক ঝটকায় নীড়কে বুকে টেনে নিল বিপ্লব। ও বুকে পড়ে নীড় ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। এই একটা সত্য কথা বলতে তুই এতটা সময় নিলি। বিপ্লব বলল, বাহরে! দেরী হলেও আমি তবু তো বলেছি। তুইতো সেটুকুও পারলি না। বোকা মেয়ে। বিপ্লব ফিসফিস করে বলল,

ডেকেছিস কেন এই নিরালায়?
কিছু কি বলবি আমায়? বল না
বল
আমি শুনবো
তোর সব কথা
কি বলবি আমায়?
কেন এত লুকোচুরি খেলা
আর নয় লুকোচুরি ধাঁধাঁ
বরং খোলামেলায় বল
দৃঢ় উচ্চারণে
আমার প্রেমে অঙ্কুরিত
কাশকন্যা তুই
ভালবাসার ফ্রেমে বাঁধা
তোকেই শুধু চাই
বল না
শেষ শরতের কাশকন্যা
আমি শুধুই তোর
তোকেই ভালবাসি
ভালবাসি ভালবাসি কি যে
ভীষণ মিষ্টি কাশফুল ঘ্রাণের মতোই
ভালবাসি !

নিজের বিস্ময় আড়াল করে দ্রুত নিজেকে সামলে নিল নীড়। পর মুহুর্তে বলল, উফ্ আমার কথা ছাড়। এতক্ষণ তুই আমার কথাই বললি। তুই তখন কি যেন বলতে যেয়ে থেমে গেলি। বল না সোনা । যে কথা আজও আমার শোনা হয়নি। হ্যাঁ, বলব বলেই তো হাজার বিকেল থেকে এই একটি বিকেল তুলে রেখেছি তোর জন্য নীড়। কাছে আয় না পাখি আরও কাছে । বিপ্লব নীড়ের কানে ফিসফিস করে বলল, আমি তোকে ভালবাসি নীড় । তুই শুধুই আমার কাশকন্যা। নীড় স্থির চোখে বিপ্লবের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে উচ্চারণ করল …

অনেক পথ খুঁজেছি তোকে
কোথাও পাইনি
তুই ছিলি কোন সে অতল
কাশফুলের আদরে
শুভ্রতার আঁচলে
তুই কি ছিলি মিশে জনম জনম ধরে
তিন সত্যিই বলছি
আমি ভালবাসি তোকেই
শরৎ ও একদিন ফিরে আসে নীড়ে
তুই চিরদিন পাশে থাক
আমায় গহীন অরণ্যে কাশকন্যা করে রাখ
দিক্- দিগন্তে ইথারে ভেসে ভেসে
মিষ্টি মধুর কাশঘাণ বার মাস
ছড়াব তোর হৃদয়ে;
তোর সংস্পর্শে ভিজে যাক এ গহন বুক
তুই আমার শরৎ প্রকৃতির সবটুকু সুখ
এ অন্দরে বহু আগেই তোর অনুপ্রবেশ
তোর মতো আমিও আছি তোর
স্বপ্নের ভেতর.!

নীড়ের চোখে জল চিকচিক করে ওঠে। বিপ্লব ওর চোখে চোখের জল মুছে দিতে বলে, তবে কাঁদছিস কেন? আমি তোর। শুধু তোর। নীড় ছল ছল চোখে বলে, জানি। এ জন মুছিস না, এ আমার আনন্দ অশ্রু! তোকে আমার করে পাবার। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। চল আজ আর হাতে সময় নেই। ফেরা যাক। গন্তব্যে ফেরার জন্য
ওরা হৃদয়ের গহীনে পা বাড়ায়।

যে গল্পের শেষ নেই

যে গল্পের শেষ নেই

আমাকে এক সমুদ্র জল দাও
এক আকাশ নীল দাও,
এক পাহাড় অরণ্য দাও
এক অরণ্য গোলাপ দাও
এক শরতের কাশফুল দাও,
আমি তোমায় স্বপ্ন দিতে পারি

আমাকে এক রাতের শুভ্র জ্যোৎস্না দাও
রাতের আকাশের সব নক্ষত্র আমার হাতে খুলে খুলে দাও,
একটা শ্রাবণের রাত দাও
পূর্ণিমা রাতের মায়াবী চাঁদ দাও
নৈঃশব্দ্য নীরব রাতের মৌনতা দাও,
আমি তোমাকে একটু ভাললাগা অনুভূতি দিতে পারি।

আমাকে এক অরণ্য বেলী দাও
একটা শ্রাবণের বিকেল দাও,
আমাকে এই শরতের থোকা থোকা মেঘের
ভেলায় ভাসিয়ে দাও
সবুজ দিগন্ত আমার হাতে তুলে দাও,
ভোরের ঠোঁটে ঘাস বুকে ঘুমিয়ে থাকা শিশির দাও
প্রথম সকালের একমুঠো রৌদ্দুর দাও
আমাকে ফুল, পাখি, প্রজাপতি দাও
আমি গভীর রাতে ফোঁটা এক বৃক্ষ
ভালবাসা মাখা হাসনাহেনা দেব তোমাকে!

চেয়েছি যা, পাইনি কিছুই- শুধু ব‍্যথা পেয়েছি মনে মনে

সমুদ্রের ঢেউ ভেঙ্গে ভেঙ্গে দিগন্ত ছুঁয়ে যাওয়া
সবুজ ব- দ্বীপের অচেনা এক ছবি এঁকেছি –
জীবনে ফেলে আসা ডায়েরির সাদা পাতায়:
আমি জলে ভাসা ফুল
কচুরিপানা, স্রোতের শ‍্যাওলায় ভেসে যাওয়া সময়ের খেয়াযানে এ জীবন করেছি দান !

সন্ধ্যা তারার চোখ গলে এলোমেলো বাতাসে প্রতিদিন ঝাঁক ঝাঁক বুনো বালিহাঁস উড়ে যায় সুদূর প্রবাসে,
আমাকে ডাকে ওদের চলার পথের সঙ্গী হতে
আমি যেতে পারি না, বিরহী কষ্টরা হুহু করে বেড়ে যায় এ বুকে;
পাহাড়ি পথের পাশে বুনো গোলাপের ঝাড়ে আমার এক বিকেলের অপেক্ষা আছে।

এখন কবিতার নতুন দিন শুরু হয়েছে
শব্দরা নিত‍্য নতুন পোশাক পরছে; আমি কবিতাকে পৃথিবীর দ্বার প্রান্তে পৌঁছে দিতে চেয়েছি !
গভীর রাতের জমকালো পার্টিতে হুইস্কির গ্লাসে কবিতা বরফ টুকরো হয়ে ভেসে ওঠে:
কবিতা তখন অভিমানে শ্রাবণের সেতার বাজায়;
সুরের মূর্ছনায় আধো ঘুম আধো জাগরণে কবিতা রঙিন নেশাময় স্বপ্ন হয়ে ওঠে –

নিঃসীম নৈঃশব্দ্য জুড়ে ব‍্যালকনির দক্ষিণা জানালা গলে
ভেসে এলো একা একা এক গভীর রাত্রি : আমার ঘুম কাতুরে স্বপ্ন ঘুমে –
আমি তাকে চিনতে পারি,
একদা পৃথিবীর কোলাহল ছেড়ে ভিন্ন দেশে সমুদ্র স্নানে মেতে উঠেছিল নীরব এক দীর্ঘ রাত্রি।
এ রাত্রিটা সেই রাত্রি
বারবার আমার কবিতার কাছে এসেছে হাজার ভীড় ঠেলে,
তুষারে ঢাকা ছিল একটা দুরন্ত কবিতার লাশ !

“ফেরার পথে একগুচ্ছ ঘাসফুল কবিতার শব বুকে নিয়ে ভীষণ কাঁদছিল:
একটা নীল ঘাসফুল শবের বাহু আঁকড়ে ধরে কাঁদছে কী ভীষণ!”

এই কবিতাটা নাকি ভীষণ রোমান্টিক আর স্মার্ট ছিল
এখনই শবের মুখে ভদ্র আর কোমল ভাব দৃশ্যমান হয়েছে,
ওদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে একটা সাদা সারস,
চোখে মুখে অবিশ্বাসের ছায়া অদৃশ্যমান ! মনে মনে ভাবছে দূর ! এদের হলো টা কী ? এতো আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু কবিতা,
রিকোর্দো ? দ‍্যাখো আমি এসে গেছি তোমার বন্ধু ডোরা;
সাদা ঘাসফুল বলল,বোকার মত ওকে ডাকছো কেন?
দ‍্যাখো ও মারা গেছে, এটা শব কোন জীবন্ত কবিতা নয়। তুমি ভুল করছো ?
হঠাৎ ডোরা চমকে যেয়ে বলল, কী বলছ? এটা একটা ডেডবডি ?
আমি আর এসবের মধ্যে জড়াতে চাই না ।
পুলিশ আসবে পোষ্টমর্টাম হবে যেতে হবে লাশ কাটা ঘরে –

ওহ্ বাবা ! কত ঝক্কি ঝামেলা –

নীল ঘাসফুল বলল, এ‍্যায় তুমি না রিকোর্দোকে বন্ধু বলে দাবি করলে ? অথচ এখন তুমি…. ভ‍্যাবাচ‍্যাকা খেয়ে গেল ডোরা বলল, হ‍্যাঁ, রিকোর্দোর শবটা কেমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে না ? আরে ওতো আমাকে না পেয়ে সুইসাইড করেছে বিশতলা হাওয়ায় ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে। কে বলেছে ওকে মরতে ? ডোরা কুঁকড়ে কাঁদতে কাঁদতেই বলল, কিছুই পাইনি চেয়েছি যা —- শুধু ব‍্যথায় পেয়েছি মনে মনে !