ইন্দ্রাণী সরকার এর সকল পোস্ট

পরমধন্যা


পরমধন্যা

জল দাও আমায় জল দাও—
তৃষ্ণার্ত মনে সন্তর্পণে চোখ
রেখে মিটিয়েছি সাময়িক ক্ষুধা,
জোৎস্না শিবিরে ধংসস্তূপে
পড়ে থাকা অগণিত কথামালা।

বিশ্বাস মেনেছি চরিত্রহীনতায়,
লুকায়িত লোলুপ বাসনার জাল।
দাবী রাখে প্রাণদানে, তুচ্ছ সে
অজুহাত আত্মসমর্থনের প্রচেষ্টা।

স্রষ্টা যিনি তাঁর পদস্পর্শে ধন্য
জীবন তাকে কেবা দাবী রাখে
ভন্ডামির মুখোশে আবৃত মনন !
পরমধন্যা নতজানু হয় আশীর্বাদে
চাঁদের ত্রহ্যস্পর্শের অবসানে।

বেদুঈন মেয়ে

বেদুঈন মেয়ে

বেদুঈন মেয়ে হেঁটে চলে যায়
নরম পা দুটি পুড়ে বালুকায়।
শুধু খাঁ খাঁ রোদ ধূ ধূ মরুভূমি
ধন্য সে যে আজ নারীর পদ চুমি।

আলুথালু বেশ, রুখুশুখু চুল
ঘাগরি লুটায়, ঝরে খোঁপার ফুল।
ধ্যাবড়ান টিপ, ধ্যাবড়ান কাজল
রুনুঝুনু বাজে না পায়ের দুটি মল।

প্রখর রৌদ্রে মুখ তার রাঙা
ঘাড়ের ওপর খোঁপাটি আছে ভাঙা।
কুসুমিত দেহ অনাদরে ম্লান
হেঁটে চলে মেয়ে হাতে নিয়ে প্রাণ।

দয়িত বুঝি গেছে এই পথে একা
পায়ের চিহ্ন তার বালুপথে আঁকা।
চলে মেয়ে হেঁটে চিহ্ন আঁকা পথে
চোখের জল ঝরে গভীর বেদনাতে।

পাবে কি সে খুঁজে মনের বঁধুয়ারে
যে গেছে হারিয়ে বালুকার পাহাড়ে ?
সহসা মেয়ে বালিতে পড়ে লুটায়ে
মরুভূমির বুকের তপ্ত আশ্রয়ে।

চলে যাওয়া

চলে যাওয়া

যখন পাশে কেউ থাকবে না তখন তোমায় খুঁজে নেব
এই যে তুমি একাগ্র আজীবন অপেক্ষায় থাকো
একদিন না দেখলে দু চোখে জল ভরে আসে।

একদিন রামধনু আঁকা আকাশের নীচে
তোমায় রূপকথার গল্প শোনাবো,
একদিন জোছনা আলোকিত রাতে তোমার
চোখের ভাষার সব সৌন্দর্য্য জেনে নেব,
আকাশের হলুদ ছায়ায় তোমার স্মৃতি লিখে যাব।

তারপর চলে যাব অনেক দূর।

তুমি ঘুম ভেঙে জানবে অবাক
তোমার আমি তোমার কাছে সবটুকু জমা রেখে
চলে গেছি পথ প্রান্তর পেরিয়ে ভিন্ন কোনো লোকে ।

চিরসত্যের অনুসন্ধানে

চিরসত্যের অনুসন্ধানে

ধীরে ধীরে নক্ষত্রলোকে উজ্জ্বল
তারকাসমূহ প্রকাশে।
সৃষ্টির আদি রহস্য উন্মোচনে ব্যাপৃত মনন
এক নক্ষত্রলোক থেকে অন্য নক্ষত্রলোকে
ধাবমান অনন্ত জিজ্ঞাসা।

ভূমণ্ডলে চরাচর কৌতুহলে উত্সুক দৃষ্টি
কিসের পানে অনুধাবিত ?
কোমলতার প্রতীক কলঙ্কিনী চন্দ্রমা
সীমিত মাধ্যকর্ষণ সশক্তিতে পরিপূর্ণা।

সূর্যের আলোয় আলোকিতা অধরা মাধুরী
মুদ্রিত নয়নতারায় যোগিনীসম রূপলাবণ্য।
অনন্তলোকের যাত্রীর কারণে উন্মোচিত গৃহদ্বারে
পরিপূর্ণতায় পরিতৃপ্ত আত্মাসমূহের সহাবস্থান।

সুখসাগরে দ্রবীভূত অনন্তলোকের যাত্রীর
প্রশ্ন থেকে যায় চিরাচরিত সত্য উদঘাটনে।।

ভাবনায় ভাবনায়

ভাবনায় ভাবনায়

তোমায় ভেবে ভেবে সারাটা রাত কেমন করে যায়?
আমার ঘুমটাও কি তুমি নিয়ে গেলে?
এক অচেনা শহরে মনটা ছুটে যায়
মন কাকে খুঁজে বেড়ায় বুঝি না।
একা একা হয়রান হয়ে যাই।

তুমি আমার সেই স্বপ্নের রাজপুত্তুর যে বারে বারে
সামনে এসে দাঁড়াও আর কি যে বলো ?
এত বিশাল জায়গায় আমি যে
ভয় পেয়ে যাই একা একা
শুধু তোমায় ভেবে ভেবে ।

রাতের আকাশে তারার মালা ভেসে ভেসে যায়
তুমি এলে তোমার গলায় পড়াব বলে
রাতের আঁধারে আমার চোখদুটি
ভেসে যায় তোমার অপেক্ষায়
তুমি কি আসবে আজ হেথায় ?

আজকাল বড্ড বেশি মনে পড়ে তোমাকে যেন
বড্ড বেশি মনে পড়ে কোমল মায়ায়
ঘোর লাগা অন্ধকারে রোজ বিহনে
বড্ড বেশি মনে পড়ে স্বপ্নকথা
দেখা না দেখার কল্পরেখায়।

ভেজা স্বরলিপি

ভেজা স্বরলিপি

মন ভাঙার শব্দ পিনপতন নীরবতার থেকেও মুখর
ভাঙা কলসী জোড়া লাগিয়ে মেঘেদের শালীন হেঁটে যাওয়া।

যেমন ভাবে একদিন শকুন্তলা হারিয়ে যায় হরিণ পথ ধরে
মায়াবী রঙের জলছবি এখনো দেবদারুর পাতায় পাতায়।

শিউরে ওঠা ভালো লাগা, এ ভাবেই ভেসে যায় বৃষ্টিছায়া
ভেজা ভেজা খাতার স্বরলিপি কথাগুলো মুখর হয়নি কখনো।

নেই কাজ ত’ খৈ ভাজ

নেই কাজ ত’ খৈ ভাজ

যখন কোনো কাজ থাকে না টিকটিকি হয়ে যায়
উদোর পিণ্ডি ভুদো গিলে নেয়
“এ এন”রা যদি হয় “মেঘ”, ঘাড় ধরে তাদের “তারা” করে দেয়
আসলে কাজের অভাব, বদনামী স্বভাব
যে নেই সে আছে, যে আছে সে নেই।

রক্ষণশীল নীল একলা মাঠে ফায়ারওয়ার্কস এর আশায়
অভিধান নামায়, হাটে বিলি হয়

কচি হাতে সংসার ওঠে না, তাই গুণে গুণে “সঙ” সার সাজায়

চাঁদবিবি কোনোদিনই ঠিকমত প্রেমিকা প্রেমিকা মেলাতে পারে না
তাই অংকের স্যারের রোজ সম্মানীয় পদকপ্রাপ্তি।

আগামীর বার্তা

আহা কী সুন্দর এই মায়াবী বিকেল
আকাশটা কমলালেবু রঙে রাঙা
সূর্য প্রশান্তির সমুদ্রে যাচ্ছে ডুবে |
সমুদ্রের ওপর জাগে স্বর্গীয় নীরবতা
বনে বনে বাতাসের দোলায় ওঠে ঢেউ
মেঘেদের সারি সারি তোরণ আকাশে ভেসে ভেসে
যায় কোন্‌ দূর অজানায় !
দূরে বহু দূরে পাইনের মাথা
আকাশকে ছুঁতে চায় তার শাখা প্রশাখা দিয়ে,
যেন বলে ওঠে, ওগো মধুর এখনি যেও না চলে
অন্ধকারের মায়াজালে হারাবার আগে
দিয়ে যাও আরও কিছু আগামী দিনের শুভবার্তা
যার স্বপ্নে আমরা হবো আজ সুষুপ্ত |

অভিনবত্ব

অভিনবত্ব

শোনো রাজবংশীয় কবি
চোখে তুলসীপাতা রেখে বলছি
তোমার বিচার সর্বশ্রেষ্ঠ একথাই কব।

গলবস্ত্র হয়ে করজোড়ে বলছি
তুমি আর তোমার রাজা মহান।

পায়ে পুষ্পার্ঘ্য রেখে বলছি
মৃত্যুর পর পৃথিবীর সবাই
ওই চরণদুটির তলায় আশ্রয় নেব।

তোমাদের বিচার, রীতিনীতি, শিক্ষা
আমাদের দিয়েছে অভিনব জ্ঞান।

ভালোবাসি বলে তাই

আমি সাধারণ মানুষ দেবতা নই তাই সাধারণ মানুষরা আমার পরম বন্ধু, খুব কাছের মানুষ । আমার সুখ দুঃখে পাশে এসে দাঁড়ায়, দুটো কথা বলতে চায়, মনে অসম্ভব চিন্তা আমার জন্য। তাই এরা আমার হাসিমুখ দেখে খুশি হয় আমিও এদের মুখে হাসি দেখলে নিশ্চিন্ত হই।

ভালোবাসি বলে তাই
==================
কেন যে আসি কিসের টানে,
তা মনই জানে, সবাই করে
যায় বিচার, নিজের নিজের
মনে মনে, বৃথাই চেষ্টা সবাইকে
খুশি রাখার, কেউ বোঝে না
বিবেক দিয়ে কার কি মনের কথা।

কি জনি কি ভাব আমায় !
বেলা যায় চলে যায়,
যে কথা বারে বারে বলেছি
তা যেন সবই অসহায়।
যে মাপকাঠিতে করো বিচার
তা শুধু তোমারি মনে,
সবাইকে ছেড়েছি যদি ভাবো
তুমি তাও মনের কোণে।

তাই পায়ে পায়ে সরে যাই
তোমাদের পথ ছেড়ে,
ওরা ত’ বোঝে না কত স্নেহ
লুকোনো থাকে, শুধু শুধু
অপবাদ দিয়ে যায় মিছিমিছি।
ভালোবাসি বলে তাই,
না বলে যে যেতে পারি না,
পায়ে পায়ে শেকল জড়ানো,
তাকে সহজে খুলতে পারি না।

যদি হেসে দিয়ে দাও বিদায়,
চলে যাই তবে মৃদুমন্দ পায়।

মরা বাঁচার নকশীকথা

মরা বাঁচার নকশীকথা

কোজাগরী রাতে আমার উঠোনে
পা রেখে দেখি বন্যা হয়ে যায়
পূর্ণিমার চাঁদ আমার দু:খে
জ্যোছনা না এনে সুনামি আনে
আমি ঘোড়ার ডিম আর পাখির
জরায়ু নির্গত ছানা দুটিকে ধরে
বন্যাত্রাণকর্তাদের সাথে পিছু হাঁটি
জল নেমে গেলে আমার ঈশ্বরকে
স্মরণ করে কলমটা তুলে নিয়ে ফের
ছুঁচোর কেত্তন করতে মনোনিবেশ করি।

পৃষ্ঠপোষকতা

পৃষ্ঠপোষকতা

পৃষ্ঠপোষকতা সমানে সমানে হওয়াই বাঞ্ছনীয়

যেখানে দুই শরিকের সদ্ভাব আছে এমনি পর্যায়ে
এক পক্ষের পরিচয় গোপন করতে হয় না
অধিকারবোধের প্রশ্ন নেই

যেখানে কুশল সংবাদ বিনিময়ে শুধু ফাঁক থেকে যায়
অপর পক্ষের বেশির ভাগ কথাই অবাস্তব
আসল সত্য গোপনীয়

ইতিহাসে দেখা গেছে সেখানে পৃষ্ঠপোষকতার অর্থ মৃত্যু

অসূর্যম্পশ্য

অসূর্যম্পশ্য

ভীষণ শুষ্ক হয়ে আছি
এ মরু প্রান্তর
শাখা প্রশাখাবিহীন

শতপদ্মের নির্যাসটুকু নিয়ে
কোনোভাবে বাঁচি

আমার শ্মশ্রুগুম্ফ ছাড়িয়ে যায় আমার আয়ু,
নি:শব্দ হও
খাজনা দিয়ে যাও মোর
ভগিনীসম প্রিয়া
বিশ্বাস করো এ তনু গৌরাঙ্গ
পথে পথে লুটিয়েছে শুধু
তোমারি তরে

বাকিরা দেখেও দেখে নি
অসূর্যম্পশ্য আমি
খাজনা দিয়ে যাও
স্মৃতির লেহনে

না না খাজনা চেয়ো না
আমি তোমার রূপ চোখেও মাখি নি।

পরিকল্পনা প্রসূত

শনিগ্রস্তের মত বেঁচে আছি
সাথে চলেছে একরাশ ভুল
কালনাগিনী পাকে পাকে পেঁচিয়ে রেখেছে
আলটপকা ভুল করে ফেলেছিলাম
তারই খেসারত দিয়ে যাই

রুমাল এগিয়ে আসে
তবে কিছু মোছায় না সব গিলে নেয়
সারা শরীরে অবাস্তব খিদে
হাতড়ে হাতড়ে আলো জ্বেলে দেখি
ম্যাপের নক্সাটাই হারিয়ে ফেলেছি

যেখানে গন্তব্যস্থল বলে আজন্মকাল
হেঁটে যেতে চেয়েছিলাম
নিজ কৃতকর্মের দোষে সেখানে রেখে এসেছি
একমুঠো ছাই
তবুও বলব না হেরে গেছি।

মাত্র অনুলিপি

মাত্র অনুলিপি

পূর্ণিমার আলোয় ঋষি তাকিয়ে থাকেন সুদূর আকাশে
সেই দৃষ্টিতে ত্যাগ আর বৈরাগ্য পরিস্ফুট
পাশেই স্বাতী, অনুরাধা, পুষ্যা, রোহিনী আদি
বৈরাগ্যময় ঋষি একটি ঠিকানা দেওয়া পাখির চিন্তায় মগ্ন
পাশে তার শুষ্ক ইউক্যালিপটাস
সে রাতের শিকারী পাখিটির আশ্রয়স্থল
সামনে তার যেন একটি আয়না
সেই আয়নায় চোখ রেখে তিনি দেখেন
ঠিকানা না দেওয়া একটি দণ্ডায়মান মোমবাতি
রাত জাগা নক্ষত্ররা ভেড়া গোনে
পাঁচ, চার, তিন, দুই, এক
চরাচর ভেসে যায় এক অপূর্ব গরিমায়।