ভুলে গেছি সেদিনের সেই সব সুখ দুঃখের কথা —
যেদিন পশ্চিমের আকাশটা লাল আবীর মেখে সেজেছিলো,
কালবৈশাখী সন্ধ্যা আকাশটা কালো চাদরে ঢেকে দিয়েছিলো,
সেঁজুতি ফুলের গন্ধে ক্রমশঃ ডুবে যেতে থাকা উপলব্ধিগুলো
মহাসমুদ্রের প্রবল ঢেউয়ের মতো জেগে উঠেছিলো নতুন করে।
এখন আমার ফুলের তীব্র গন্ধে আমার মাথা ধরে যায়..
পশ্চিমের আগুন রাঙা আকাশটার দিকে তাকাতে ভুলে যাই।
কালো আকাশটা যেন মুখোশ পড়া দুঃস্বপ্নের মত তাকিয়ে থাকে।
নৈঃশব্দের পথ ধরে কারা যেন সন্তর্পণে হেঁটে চলে যায় অজানা দেশে।
বিবর্ণ স্মৃতির পাতা উল্টে দেখতে থাকি সেই চেনা নামটির মলিন প্রতিচ্ছবি।
ইন্দ্রাণী সরকার এর সকল পোস্ট
পরিচয়
মোমের কোনো ভঙ্গি নেই
তাই স্তব্ধতারও নিজস্ব
কোনো আকার নেই
পরস্মৈপদীতে বেঁচে থাকা
পিতৃমাতৃপরিচয়ও ভুলে থাকা
পিলসুজের ঘি ফুরিয়ে যায়
অন্যত্র পাবার সংস্থান করি
আসলে পরিচয় নামক অলংকার
বহুদিন আগে থেকেই
জলাঞ্জলি দিয়েছি
শ্বাদন্ত বার করে বা লুকিয়ে
ধারালো চোখে একলা তরবারির
খোঁজে নিম গাছ হয়ে যাই
তেমনি তেঁতো তেমনি মধুর।
পরবাসী প্রেমিকের ইচ্ছা
নিশীথের স্বপ্নে তোমায় খুঁজে ফিরি প্রিয়তমা
বহুদূরে যখন আমি খুব ক্লান্ত, বিপর্যস্ত
তখন তোমার মায়ার আঁচল অনুভব করি।
বাইরে কালো ধোঁয়া, মানুষের কোলাহল,
খুব স্বল্প সময়ের এ বিশ্রাম।
এখনি যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে
তবু এইটুকু সময়ে তোমায় ভাবি।
সেই যে তোমার বসে থাকা জানলার পাশটিতে
আমার অপেক্ষারত, চোখেমুখে অল্প উদ্বেগ,
গাল দুটো উত্তেজনায় লাল, অল্প ভ্রূকুটি,
কোঁকড়া চুলে ঢাকা মুখটি যেন ফোটা পদ্ম।
কাছে আসতেই তোমার মুখের ভাব বদল
চোখের তারায় হাসির লুটোপুটি,
এগিয়ে এসে আমার হাত দুটি ধরে কাছে বসানো,
আঁচল দিয়ে মুখ মুছে তোমার অবাক তাকিয়ে থাকা;
এ সব কিছুই আমায় নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেয়
সাথে সাথে না পাওয়ার যন্ত্রনায় গলা বুজে আসে।
শোনো এই চিঠি লিখে গেলাম,
কেউ পৌঁছে দেবে তোমায়।
যদি ফিরে আসতে পারি আবার
নতুন স্বপ্নে জীবন গড়ে নেব।
আর যদি না ফিরি কথা দাও কখনো
চোখে জল যেন না আসে আমার ভাবনায়,
মৃত্যুর পরেও আমি ওই মুখে শুধু হাসিটুকু লিখে যেতে চাই।
Based on a favorite English love story between a combatant and his love….
ভানুসিংহের পদাবলী
ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি কাব্যগ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথ কৈশোর ও প্রথম যৌবনে “ভানুসিংহ” ছদ্মনামে বৈষ্ণব কবিদের অনুকরণে কিছু পদ রচনা করেছিলেন। ১৮৮৪ সালে সেই কবিতাগুলিই ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী নামে প্রকাশিত হয়। কবিতাগুলি গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে বিভিন্ন সময়ে ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। কবিতাগুলি রচনার ইতিহাস পরবর্তীকালে জীবনস্মৃতি গ্রন্থের ভানুসিংহের কবিতা অধ্যায় বিবৃত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
পদাবলী শব্দের অর্থ :
পদাবলী শব্দের উৎস জয়দেবের ‘মধুরকোমলকান্তপদাবলী’। ‘পদসমুচ্চয়’ অর্থে পদাবলী শব্দের প্রয়োগ প্রথম পাওয়া যায় সপ্তম শতাব্দীতে, আলঙ্কারিক আচার্য দণ্ডী-র কাব্যাদর্শে। বাংলায় সুদীর্ঘ কাল ধরে পদাবলীকে যোগরূঢ় অর্থে গানের পর্যায়ভুক্ত করবার প্রচলন চলে আসছে। পদাবলী ভারতীয় গীতিকবিতার সমৃদ্ধ ভাণ্ডারের মধ্যে অন্যতম। বৈষ্ণব সাহিত্যের অন্তর্গত এই গীতিকবিতাগুলি রাধাকৃষ্ণের প্রেম বিষয়ক। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৈষ্ণব মতের আধিপত্যের সময় সেই অঞ্চলের বৈষ্ণব পদকর্তারা মিথিলা অঞ্চলের লৌকিক ভাষা মৈথিলীতে বৈষ্ণব পদ রচনা শুরু করেন। পরবর্তী কালে মৈথিলীর সঙ্গে অন্যান্য লৌকিক ভাষার সংমিশ্রণে একটি কৃত্রিম সাহিত্য সৃষ্টির ভাষার উদ্ভব হয় যা ব্রজবুলি নামে পরিচিত। বৈষ্ণব পদাবলিতে প্রাচীন সংস্কৃত কাব্য প্রভাবিত ছন্দের প্রাধান্য দেখা যায়, ভান বা ভানিতা অর্থাৎ পদের মধ্যে পদকর্তার নামের উল্লেখ বৈষ্ণব পদাবলীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
প্রাচীন বৈষ্ণব কবিদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তরুণ রবীন্দ্রনাথ আনুমানিক ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সকালের মধ্যে ‘ভানুসিংহ’ এই ছদ্মনামে যে ২১ টি পদ রচনা করেন, তাই ভানুসিংহের পদাবলী নামে পরিচিত। আঙ্গিক ও সুর সংযোজনার বিচারে এই পদাবলী রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীত সৃষ্টির এক অন্যতম বিশিষ্ট সম্পদ।
‘জীবন-স্মৃতি’ র ‘ঘরের পড়া’ পরিচ্ছেদে কবি জানিয়েছেন, অক্ষয়চন্দ্র সরকার ও সারদাচরণ মিত্র সম্পাদিত প্রাচীন কাব্যসংগ্রহ সেই বয়সেই তার বিশেষ প্রিয় ছিল। ১২৮১ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ মাস থেকে এই পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে মাসে মাসে বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, গোবিন্দদাস, রামেশ্বর প্রমুখ প্রাচীন বৈষ্ণব কবির পদাবলী টীকা সহ প্রকাশিত হতে থাকে ১২৮৩ অবধি। কবি জানাচ্ছেন, বাড়ির গুরুজনেরা এগুলির গ্রাহক হলেও নিয়মিত পাঠক ছিলেন না বলে এগুলো জড়ো করে আনতে বালক কবিকে বেশি কষ্ট পেতে হত না। জ্যতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে এই সংগ্রহের অনিয়মিত ভাবে প্রকাশিত খণ্ডগুলি আসত। গুরুজনদের পড়া হলে বালক কবি এগুলো সংগ্রহ করে নিতেন। বিদ্যাপতির দুর্বোধ্য বিকৃত মৈথিলী পদগুলি অস্পষ্ট বলেই বেশি করে কবির মনোযোগ টানত। কবি টীকার ওপর নির্ভর না করে নিজে বুঝবার চেষ্টা করতেন, বিশেষ কোনো দুরূহ শব্দ ও ব্যাকরণের বিশেষত্বগুলি কবি তার বালক বুদ্ধি অনুসারে যথাসাধ্য নোট করে রাখতেন একটা ছোট বাঁধানো খাতায়। এই খাতার নোট অবলম্বনে রচিত বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ, প্রাচীন কাব্য সংগ্রহ – বিদ্যাপতি, প্রাচীন কাব্য সংগ্রহ – উত্তর প্রত্যুত্তর, বিদ্যাপতির পরিশিষ্ট, প্রভৃতি ভারতী পত্রিকায় যথাক্রমে ১২৮৮ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ, ভাদ্র এবং কার্তিক সংখ্যায় পত্রস্থ হয়।
‘জীবন-স্মৃতি’ র ‘ভানুসিংহের কবিতা’ পরিচ্ছেদ থেকে জানা যায় প্রাচীন কাব্যসংগ্রহের মৈথিলীমিশ্রিত ভাষা বালক রবীন্দ্রনাথের কাছে দুর্বোধ্য ছিল বলেই তিনি বিশেষ আগ্রহ ও অধ্যবসায়ের সাথে তার মধ্যে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন।
সূচনা :
রবীন্দ্রনাথ গ্রন্থের সূচনায় লেখেন:
অক্ষয়চন্দ্র সরকার মহাশয় পর্যায়ক্রমে বৈষ্ণব পদাবলী প্রকাশের কাজে যখন নিযুক্ত হয়েছিলেন আমার বয়স তখন যথেষ্ট অল্প। সময়নির্ণয় সম্বন্ধে আমার স্বাভাবিক অন্যমনস্কতা তখনো ছিল, এখনো আছে। সেই কারণে চিঠিতে আমার তারিখকে যাঁরা ঐতিহাসিক বলে ধরে নেন তাঁরা প্রায়ই ঠকেন। বর্তমান আলোচ্য বিষয়ের কাল অনুমান করা অনেকটা সহজ। বোম্বাইয়ে মেজদাদার কাছে যখন গিয়েছিলুম তখন আমার বয়স ষোলোর কাছাকাছি, বিলাতে যখন গিয়াছি তখন আমার বয়স সতেরো। নূতন-প্রকাশিত পদাবলী নিয়ে নাড়াচাড়া করছি, সে আরো কিছুকাল পূর্বের কথা। ধরে নেওযা যাক, তখন আমি চোদ্দয় পা দিয়েছি। খন্ড খন্ড পদাবলীর প্রকাশ্যে ভোগ করবার যোগ্যতা আমার তখন ছিল না। অথচ আমাদের বাড়িতে আমিই একমাত্র তার পাঠক ছিলুম। দাদাদের ডেস্ক্ থেকে যখন সেগুলি অন্তর্ধান করত তখন তারা তা লক্ষ্য করতেন না। পদাবলীর যে ভাষাকে ব্রজবুলি বলা হোত আমার কৌতুহল প্রধানত ছিল তাকে নিয়ে। শব্দতত্ত্বে আমার ঔৎসুক্য স্বাভাবিক। টীকায় যে শব্দার্থ দেওয়া হয়েছিল তা আমি নির্বিচারে ধরে নিই নি। এক শব্দ যতবার পেয়েছি তার সমুচ্চয় তৈরি করে যাচ্ছিলুম। একটি ভালো বাঁধানো খাতা শব্দে ভরে উঠেছিল। তুলনা করে আমি অর্থ নির্ণয় করেছি। পরবর্তীকালে কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ যখন বিদ্যাপতির সটীক সংস্করণ প্রকাশ করতে প্রবৃত্ত হলেন তখন আমার খাতা তিনি সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে পেরেছিলেন। তার কাজ শেষ হয়ে গেলে সেই খাতা তাঁর ও তাঁর উত্তরাধিকারীর কাছ থেকে ফিরে পাবার অনেক চেষ্টা করেও কৃতকার্য হতে পারি নি। যদি ফিরে পেতুম তা হলে দেখাতে পারতুম কোথাও কোথাও যেখানে তিনি নিজের ইচ্ছামত মানে করেছেন ভুল করেছেন। এটা আমার নিজের মত। তার পরের সোপানে ওঠা গেল পদাবলীর জালিয়াতিতে। অক্ষয়বাবুর কাছে শুনেছিলুম বালক কবি চ্যাটার্টনের গল্প। তাঁকে নকল করার লোভ হয়েছিল। এ কথা মনেই ছিল না যে, ঠিকমত নকল করতে হলেও শুধু ভাষায় নয়, ভাবে খাঁটি হওয়া চাই। নইলে কথার গাঁথনিটা ঠিক হলেও সুরে তার ফাঁকি ধরা পরে। পদাবলী শুধু কেবল সাহিত্য নয়, তার রসের বিশিষ্টতা বিশেষ ভাবের সীমানার দ্বারা বেষ্টিত। সেই সীমানার মধ্যে আমার মন স্বাভাবিক স্বাধীনতার সঙ্গে বিচরণ করতে পারে না। তাই ভানুসিংহের সঙ্গে বৈষ্ণবচিত্তের অন্তরঙ্গ আত্মীয়তা নেই। এইজন্যে ভানুসিংহের পদাবলী বহুকাল সংকোচের সাথে বহন করে এসেছি। একে সাহিত্যের একটা অনধিকার প্রবেশের দৃষ্টান্ত বলেই গণ্য করি। প্রথম গানটি লিখেছিলুম একটা স্লেটের উপরে, অন্তপুরের কোণের ঘরে––
গহনকুসুমকুঞ্জমাঝে
মৃদুল মধুর বংশি বাজে।
মনে বিশ্বাস হল চ্যাটার্টনের চেয়ে পিছিয়ে থাকব না। এ কথা বলে রাখি ভানুসিংহের পদাবলী ছোটো বয়স থেকে অপেক্ষাকৃত বড়ো বয়স পর্যন্ত দীর্ঘকালের সূত্রে গাঁথা। তাদের মধ্যে ভালোমন্দ সমান দরের নয়।
রচনা :
কৈশোরে রবীন্দ্রনাথ অক্ষয়চন্দ্র সরকার ও সারদাচরণ মিত্র সম্পাদিত প্রাচীন কাব্য সংগ্রহ গ্রন্থের মধ্যযুগীয় মৈথিলি কবিতাগুলির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। জীবনস্মৃতি গ্রন্থে ভানুসিংহের প্রথম কবিতা রচনার যে ইতিহাসটি বর্ণিত হয়েছে তা নিম্নরূপ:
“একদিন মধ্যাহ্নে খুব মেঘ করিয়াছে। সেই মেঘলাদিনের ছায়াঘন অবকাশের আনন্দে বাড়ির ভিতরে এক ঘরে খাটের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া একটা শ্লেট লইয়া লিখিলাম ‘গহন কুসুমকুঞ্জ-মাঝে’। লিখিয়া ভারি খুশি হইলাম।” রবীন্দ্রনাথ ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী উৎসর্গ করেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী কাদম্বরী দেবীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে। উৎসর্গপত্র থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথের নূতন বৌঠান কাদম্বরী দেবী তাঁকে ভানুসিংহের কবিতাগুলি ছাপাতে অনুরোধ করেন। উল্লেখ্য, এই গ্রন্থ প্রকাশের পূর্ববর্তী বছরেই আত্মহত্যা করেছিলেন কাদম্বরী দেবী। পরবর্তীকালে ভানুসিংহের পদগুলিতে কবি প্রচুর সংশোধনী আনেন।
ভানুসিংহের পদাবলী :
সূচীপত্র
১- বসন্ত আওল রে। ২- শুন লো শুন লো বালিকা। ৩- হৃদয়ক সাধ মিশাওল হৃদয়ে। ৪- শ্যাম রে, নিপট কঠিন মন তোর। ৫- সজনি সজনি রাধিকা লো। ৬- বঁধুয়া, হিয়া-পর আও রে। ৭- শুন, সখি, বাজই বাঁশি। ৮- গহন কুসুমকুঞ্জ-মাঝে। ৯- সতিমির রজনি, সচকিত সজনী। ১০- বজাও রে মোহন বাঁশি। ১১- আজু, সখি, মুহু মুহু। ১২- শ্যাম, মুখে তব মধুর অধরমে। ১৩- বাদরবরখন, নীরদগরজন। ১৪- সখি রে, পিরীত বুঝবে কে। ১৫- হম, সখি, দারিদ নারী। ১৬- মাধব না কহ আদরবাণী। ১৭- সখি লো, সখি লো, নিকরুণ মাধব। ১৮- বার বার, সখি, বারণ করনু। ১৯- হম যব না রব, সজনী। ২০- কো তুঁহু বোলবি মোয়। ২১- মরণ রে তুঁহুঁ মম শ্যামসমান।
অনুবাদ কবিতা ২
মৃত্যুর বিজয়
– উইলিয়াম শেক্সপিয়ার।
আমার মৃত্যুর পর তুমি আর শোক প্রকাশ করো না
যখন তুমি মৃত্যুর ঘন্টাধ্বনি শুনতে পাবে,
পৃথিবীকে জানিয়ে দিও তখন আমি এই নিষ্ঠুর পৃথিবীকে
ছেড়ে মাটির তলার বাসিন্দার সাথে থাকবো বলে চলে গেছি।
এই পংক্তিগুলি পড়ার সময় লেখকের কথা মনে করো না;
আমি তোমায় এত ভালোবাসি যে আমি চাই না
আমার চলে যাবার পর তুমি আমার কথা ভেবে দুঃখ পাও।
আমার শরীর ধুলোমাটিতে মিশে যাবার পর
তুমি যখন এই কবিতাটি দেখবে,
আমার তুচ্ছ নাম কাউকে বলতে যেও না।
আমার প্রতি তোমার ভালোবাসাকে
আমার জীবনের মতই নিঃশেষ করে দিও।
এই বিজ্ঞ মনুষ্যজাতি যেন তোমার দুঃখের
কারণ জানার জন্য অনুসন্ধান না করে আর
তোমার আমার সম্পর্ক নিয়ে বিদ্রুপ না করে
আমার মৃত্যুর পর।
The Triumph of Death
– W. Shakespeare.
NO longer mourn for me when I am dead
Than you shall hear the surly sullen bell
Give warning to the world that I am fled
From this vile world, with vilest worms to dwell.
Nay, if you read this line, remember not
The hand that writ it; for I love you so,
That I in your sweet thoughts would be forgot
If thinking on me then should make you woe.
O if, I say, you look upon this verse
When I perhaps compounded am with clay,
Do not so much as my poor name rehearse,
But let your love even with my life decay;
Lest the wise world should look into your moan,
And mock you with me after I am gone.
________________
অনুবাদ কবিতা
অনুবাদক : ইন্দ্রাণী সরকার।
অনুবাদ কবিতা ১
ভালোবাসার তত্ত্ব
– পি. বী. শেলী।
যেমন ঝরনা নদীতে মেশে
আর নদী সাগরে মেশে
স্বর্গের বাতাস এক সুমধুর
ভাবনায় মিশে যায়;
এই পৃথিবীতে কিছুই একা নয়
এক ঐশ্বরিক নিয়মানুযায়ী
সব কিছুই অন্যের সাথে সংযুক্ত —
তবে কেন আমি তোমাতে মিশে যাই না ?
চেয়ে দেখো, পর্বতমালা স্বর্গকে চুম্বন করে
জলের ঢেউ একে অপরকে আঁকড়ে থাকে;
সুর্য্যের আলো পৃথিবীকে ছুঁয়ে থাকে,
আর চাঁদের আলো সমুদ্রকে চুম্বন করে,
যদি এই সমস্ত চুম্বন মহিমান্বিত হয়,
কেন তুমি আমায় চুম্বন দাও না ?
______________________
Love’s Philosophy
– Percy Bysshe Shelley
The fountains mingle with the river,
And the rivers with the ocean;
The winds of heaven mix forever
With a sweet emotion;
Nothing in the world is single;
All things by a law divine
In another’s being mingle–
Why not I with thine?
See, the mountains kiss high heaven,
And the waves clasp one another;
No sister flower could be forgiven
If it disdained its brother;
And the sunlight clasps the earth,
And the moonbeams kiss the sea;–
What are all these kissings worth,
If thou kiss not me?
________________
অনুবাদ কবিতা
অনুবাদক : ইন্দ্রাণী সরকার।
চাতকিনী
জখম তারারা মৃত্যু মৃত্যু খেলা শেষে
শ্মশানে বসে থাকা চাতকিনীর দিকে উড়ে যায়
জ্যোৎস্নায় দুলে ওঠা পাহাড়ের আল
চাতকিনী…
তারা দুই বা চার চোখ মেলে ফরেনসিক কবিতা লেখে
নিজের কাহিনী ধামাচাপা রেখে, অন্যের ঝুড়ি খুলে
সাপের হিসেব করে….
কিছু ব্যকুলতা ঝরে পড়ে, নিজেকে চেনার কালে,
সেখানে বিনাশিকতার নতুন রচনা তৈরি হবে…
চোখ দুটো ক্রমশ: উপরের দিকে উঠতে উঠতে
ফানুসের মত আকাশে উড়ে যায়
জ্যামিতির বই খুলে দেখে হাইপারবোলার ব্যাসার্ধ কি?
পার্টিকল ডায়নামিক্স-এর প্রজেক্টাইল প্রক্ষেপ করে
জ্যোছনার আলো আজো অধরা….
খালি ঠোঁট টেপা বা দন্তবিকশিত হাসি অন্যের জানলায়
মুখব্যাদান করে চেয়ে থাকে।
নিশি জাগা বালিকাকে
মরে যাই তার বিষাদমাখা মুখ
প্লাবিত জোছনায় সে হারিয়েছে সুখ
দূরে দাঁড়িয়ে রমণী একাকিনী প্রতীক্ষায়
বেশভূষা, পরিজন আদি সবই দিয়েছে বিদায়
চাঁদনী মুখ তার ভাসে অপার্থিব প্রেমের প্রত্যাশায়
নিশিজাগা পাখিরা বিষণ্ন তার নিশি রাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়
আকাশে ভাঙা গড়া চাঁদ মেঘের তোরণে ভেসে ভেসে যায়
টুপটাপ শব্দে ঝরা পাতারা জলের ঢেউয়ে নৌকা যত ভাসায়
হে নারী জেনে রেখো, যদি সে কোনদিনও দিয়ে থাকে কথা তোমায়,
চোখে রেখে চোখ তোমার ব্যথায়, ফিরে আসবেই তোমার চোখের পাতায় ..
অস্তরাগের আড়ালে তুমি
জানি না কেন কাল অস্তরাগের
আকাশটাকে দেখে
আমি সমাহিত হয়ে গেলাম|
পেঁজাতুলোর মতো মেঘগুলো
সিঁদুরে লাল রঙা
নতুন করে তাদের চিনলাম।
মাঝে মাঝে নীলের উঁকি ঝুঁকি
সুদূর দিকচক্রবালে
হারালাম মন আবার হারালাম।
সন্ধ্যের রঙে ঐ বনবিথী রাঙা
নিকষ কালো আঁধার
চুপিচুপি তোমায় তাই ভাবলাম।
নাগরিক
ওরা কি শুনেছিল ঘুম ভাঙা সকালে
এক মৃত্যুপুরীর আহ্বান ?
দেশভক্ত নাগরিকের দল
কবে জানি একটা মৃত কুকুরের লাশ নিয়ে
পঞ্চায়েত ডেকেছিল
কুকুরটির সনাক্তকরণে তার পরিচয়
পদিন কাগজে কলমে সম্পাদক
প্রথম পাতায় ছেপে দেন
তার আজীবন দেশভক্তির কথা পড়ে
মানুষও লজ্জা পেল
কিছু মনখারাপ আর বিদ্রুপের রং তুলি নিয়ে
এক চিত্রকর সমাজের হিংসা আর দ্বেষ
ক্যানভাসে এঁকে তাতে আগুন জ্বেলে দেয়
তারপর সবাইকে ডেকে বলে
কুশপুত্তলিকা দাহ করছি
এর পর থেকে কলহ, দ্বেষ সব ধুয়ে মুছে
থাকবে শুধু দেশভক্ত আর দ্বেষবিবর্জিত নাগরিক
ভিন্নতায় প্রবাহিত গতিহীন সময়
দুর্বলতা কাটিয়ে নাগরিক জীবন
পুনরায় স্বত:স্ফূর্ত ধারায় প্রবাহিত হয় …
অস্তিত্ত্বহীনতা
ভীষণ অস্তিত্ত্বহীনতার মাঝে তোমায় দেখি
গবেষণামূলক তথ্যগুলির ভিত নাড়িয়ে
তোমার একলা চেয়ে থাকা
বারে বারে সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে হাত ছুঁয়ে থাকা
কথা বলতে চেয়েও সামাজিক নিয়ম অনুসারে স্তব্ধতা
লুব্ধকের বিরাণ অসংবদ্ধতার নীরব দর্শক থেকে
মৃত কোকিলের পুনরুজ্জীবনে বসন্তের চলমানতার বার্তা
সবই ত’ তোমার জানা
তুমি ত’ বোঝো গতানুগতিক সমীকরণে আমায় বাঁধা যায় না…
সম্পর্ক
যে কিছু লোক ভ্রান্ত গবেষণা করে সময় কাটায়
আমি তাদের থোড়াই কেয়ার করি
যাদের নিজেদের জীবনের হিসেবে গরমিল
তারাই ঘন ঘন মুখব্যাদান করে
অন্যের জীবন নিয়ে অর্থহীন পদ্য লেখে
তাও এই একটি দিকে লক্ষ্য রেখে বছরের পর বছর
না আছে কোনো লজ্জা, না আছে কোনো ঘেন্না
তাদের কেয়ার করি না দেখাতেই এখন এলাম
একটু পরেও আসা যেত কিন্তু তাতে সময়-ঘড়িতে
নিজেকে সুরক্ষিত করে,
সুরক্ষা কিসের?
ঘড়ির সময় ঠিক হোক কি না হোক কে দেখে?
নর্দমা খুঁচিয়ে মুক্ত যারা তোলে,
তারা সময় ঠিক থাকলেও অন্য কিছু দেখে।|
তুমি এসেছিলে নিজের ইচ্ছায়
সাথে ছিলে নিজের ইচ্ছায়
চলে গেছ নিজের ইচ্ছায়
দিদির সম্মানহানি কোনদিনও কর নি
তাই এই বলতে এলাম এতদিন পর সুখের মুখ দেখেছ
আগের সময়টা বড় কষ্টের ছিল
যদিও গোপনীয়তা রক্ষায় কোনো ত্রুটি করো নি
তবুও দিদিভাই-য়ের মন সবই বুঝে নিত
ঘরে লক্ষী এসেছে তাকে সুখে রাখো
এ আমি আগেও বহুবার তোমায় বলেছি
ইরেজারে মুছে দেব তোমায়, একটু সময় লাগবে খালি
যেমন বাকিরা সযত্নে ইরেজারে মুছে দেয়
আমার একটু সময় লেগে যায়
এ মুখো আর কোনদিনও হোও না
শেষ বন্ধন বলে কিছু নেই মানুষের জীবনে
মানুষ পুত্র কন্যা শোক থেকেও পুনরুত্থান করে
যে দুই তথাগত তাদের আশির্বাদী হস্তে এত কটা বছর করুণা বিলিয়েছে
যে কিছু সুন্দর মন তাদের আশির্বাদী কলমে রোজ খোঁচা দেয়
যাবার সময় এমনিতেই হয়ে এসেছিল
তোমার যাওয়াটা একটা উপলক্ষ্য মাত্র
ফিরে আসা ?
নিশ্চয়
হেঁট মুখে চলে যাবার লোক আমি নই
আমি মানবতায় বিশ্বাসী
যখন মানবতা আমায় ডাক দেবে আমি ফিরতে বাধ্য
তাই ফিরে ফিরেই আসব
তবে কোনো সম্পর্ক পাতাতে আর নয়
কাদের সঙ্গে সম্পর্ক, যার সম্পর্ককে মুনাফা করে ?
তাকে হাতিয়ার করে নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধি করে ?
যারা সম্পর্ক পাতাতে এসে একরাশ ইগো ঢালে
নিজেদের দুর্বলতা আর অক্ষমতা ঢাকার জন্য ?
সে ভুল আর কেউ করে না কি ?
তবুও যারা সুস্থ সম্পর্কে বিশ্বাসী সেই মুষ্টিমেয় কজনের জন্য
থাকবে নিত্য যাওয়া আসা।
অলৌকিক
বিভিন্ন রূপ ও পরিচয়ে এসে যায়
অদ্ভুত সব চরিত্রের সমাবেশ
অলৌকিক নদীজল সরে সরে যায়
সংগ্রামের মাঠে ওড়ে
একরাশ কালো ধুলো
লাল শাড়ি সবুজ জামায়
ঘিরে থাকে মাঠ
অবাক রাজা খলখলিয়ে হাসে
চোখ মুখ ঢাকে কাপড় আঁচলে
ফলের ঝুড়িতে বেচে যাওয়া ইজ্জত
যত্নে কুড়োয় ভিজে শাড়ির আঁচল।
অবকাশ
আজ গোধূলির আলোয় ভেবেছিলাম
তোমায় দেখতে পাব
সব স্বপ্ন সব অভিমান ভেঙে যাবে
আঁধার ভরা এক রাতের কাছে।
তোমার চোখে জ্যোছনা আঁকবো বলে
এক একটা রাত কেটে যায়
আমার নীল ক্যানভাসে শুধু হিজিবিজি
আঁকিবুঁকি সার হয়।
এলোমেলো চিন্তারা আজকাল নৈশব্দের
পথ ধরে হেঁটে চলে যায় অনেক দূর
নীল প্রজাপতির পাখনায় লেগে আছে
রক্তের দাগ, আহত সে।
তোমার স্পর্শ আজ স্বপ্নের মতো
অনেক দূরে মিশে গেছে
তারকাখচিত কোন আকাশে।
পথ হারানো
পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছ?
এ প্রশ্ন কি শুধু কপালকুন্ডলার?
না কি বনলতা সেনের ডাগর
দুটি চোখে একই পশ্নের ঝিলিক?
হয়তো দুর্গেশনন্দিনীর তিলোত্তমা
এই একই প্রশ্ন করেছিল জগত সিং কে।
আসলে যুগযুগান্তের সব প্রেমিকার
একই প্রশ্ন তাদের ভালোবাসাকে।
নবকুমার, জীবনানন্দ, জগত সিং আরও
কতজন যেন একই মায়ার বন্ধনে বাঁধা !
যার নাম আবার সেই চার আখরের
ছোট্ট অমুল্য শব্দটি “ভালোবাসা”।
কিন্তু কি ভীষন যাতনাদায়ক সে!
যে জন মরেছে তার জ্বালা সেই
শুধু জানে আর জেনেও তাকে
ধরে রাখে, ছাড়তে ত ‘ পারে না।
কেউ লেখে কবিতা, কেউ খায় শরাব,
কেউ শুধু রাতভোর জেগে থাকে হায়!
এ যেন বিষবৃক্ষে জন্মান অমৃতফল।
কোথায় পাব সেই চিন্তামনিরে যিনি
বিল্লমঙ্গল ঠাকুরের চোখ খুলে দেন
পরমাত্মা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পদে।
আর বিল্লমঙ্গল তাঁর চোখদুটি দিলেন
ভগবানের পায়ে যাতে অন্তরের চোখে
তিনি দেখতে পান সেই বনমালীকে !
একে যেন কবিগুরুর ভাষায় বলা যায়
“চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে,
অন্তরে আজ দেখব যখন আলোক না হি রে।”