ইন্দ্রাণী সরকার এর সকল পোস্ট

পর্যবেক্ষণ ১

হাত ধরেছে ঝাউয়ের দুটি পাতা
আড়াল থেকে চোখ ভেজায় শূন্যতা

কিছু ফুলের তাতেও কড়া নজর
বইতে ছাপে আজ কি তাজা খবর

ওদের কোনো ঝাউয়ের পাতা নেই
হাজার হাজার শব ধরেছে খেই

ওদের গাছের নেইক কোনো বাগান
যেন ব্যবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান।

কোথায় তুমি ?

ওগো প্রিয় আমার, তুমি ছাড়া কেন
কিছুই আর ভাল লাগে না ?
শুধুই চেয়ে থাকি আকাশ পানে
উদাসী মেঘে হই আনমনা।

কৃষ্ণচুড়ার বনে লেগেছে আগুন
সে আগুন আমার মনে জ্বলে,
ছায়াঘন পথের ধারে থাকি বসে
তোমার ছায়া দেখতে পাবার ছলে।

আঁকাবাঁকা পথ ধরে চলতে থাকি
যদি পাই হঠাত তোমার দেখা,
নিশুতি রাত, ভালোবাসা কথা কয়
সবখানে তোমারি নাম আছে লেখা।

কাছে আসি

সুরে সুরে আর গানে গানে
চেয়ে তোমার চোখের পানে
আলতো ঠোঁটের নীরব ছোঁয়ায়
বলেছি চুপিচুপি ভালোবাসি।

যখন তুমি একলা বসে
চোখটি তোমার আধবোজা
ভাবছো জানি আমায় শুধু
তাই ত’ এত কাছে আসি।

কি যে আছে ঐ চোখের জাদু
এগিয়ে গিয়েও পিছিয়ে আসি
কূল পাই না চোখের ঝিলে
ডুবে গিয়েও আবার ভাসি।

পারি না যে তুমি ছাড়া কিছু
বুঝেও কেন তা বোঝো না
ছেড়ে যাবো যেদিন চিরতরে
ছড়িয়ে দিও ফুলের রাশি।

উপলব্ধি

অনুভূতি সবই অক্ষত ছিল
যতক্ষণ না পাঁচ ভূতে এসে কাড়াকাড়ি করে নি
অনুভূতি তেমনি ছিল
যতক্ষণ পেত্নীরা এসে তাকে গিলে ফেলে নি

দর্শকদের নিজেদের অনুভূতি নেই
পরের অনুভূতিতে হাতাহাতি সহানুভূতি
এ ত সবাই জানে এমন কি এজেন্টরাও
খালি তারা মানতে চায় না।

অনুবাদ কবিতা – আকাঙ্ক্ষা

নিশীথের স্বপ্নে তোমায় খুঁজি প্রিয়তমা
স্বপ্ন যতই দীর্ঘ হয় দিনের নিরাশ মুহূর্তগুলি
সংক্ষিপ্ত হয়ে আমায় উজ্জীবিত রাখে ।
অজস্র আলোর ফুলকিতে ছড়ানো ধূমকেতু
হয়ে এসে যাও সবার মাঝে নতুন পৃথিবীতে
সবাইকে আপন করে নাও আমার মত।
এবার তুমি স্বপ্ন থেকে সত্যি হয়ে এস
যেন তুমি আমার চুলে হাত বুলিয়ে দাও
আর আমার ভুরুতে চুমু এঁকে বল
কেন শুধু শুধু এত কষ্ট পাও ?
নিশীথের স্বপ্নে তোমায় খুঁজি প্রিয়তমা
স্বপ্ন যতই দীর্ঘ হয় দিনের নিরাশ মুহূর্তগুলি
সংক্ষিপ্ত হয়ে আমায় উজ্জীবিত রাখে।

My translation poem from the English version (in Shakespearean English) from “LONGING” by Matthew Arnold.

শেষ ইচ্ছা

নিশীথের স্বপ্নে তোমায় খুঁজে ফিরি প্রিয়তমা
বহুদূরে যখন আমি খুব ক্লান্ত, বিপর্যস্ত
তখন তোমার মায়ার আঁচল অনুভব করি।

বাইরে কালো ধোঁয়া, মানুষের কোলাহল,
খুব স্বল্প সময়ের এ বিশ্রাম।
এখনি যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে
তবু এইটুকু সময়ে তোমায় ভাবি।

সেই যে তোমার বসে থাকা জানলার পাশটিতে
আমার অপেক্ষারত, চোখেমুখে অল্প উদ্বেগ,
গাল দুটো উত্তেজনায় লাল, অল্প ভ্রূকুটি,
কোঁকড়া চুলে ঢাকা মুখটি যেন ফোটা পদ্ম।
কাছে আসতেই তোমার মুখের ভাব বদল
চোখের তারায় হাসির লুটোপুটি,
এগিয়ে এসে আমার হাত দুটি ধরে কাছে বসানো,
আঁচল দিয়ে মুখ মুছে তোমার অবাক তাকিয়ে থাকা;
এ সব কিছুই আমায় নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেয়
সাথে সাথে না পাওয়ার যন্ত্রনায় গলা বুজে আসে।

শোনো এই চিঠি লিখে গেলাম,
কেউ পৌঁছে দেবে তোমায়।
যদি ফিরে আসতে পারি আবার
নতুন স্বপ্নে জীবন গড়ে নেব।
আর যদি না ফিরি কথা দাও কখনো
চোখে জল যেন না আসে আমার ভাবনায়,
মৃত্যুর পরেও আমি ওই মুখে শুধু হাসিটুকু লিখে যেতে চাই।

তুলনা

নিজেরাই গড়েছে দেয়াল নিজেদের হাতে
ক্ষমতার লোভে আর তুলনার তফাতে
কেউ বদলায়, কেউ বদলায় না
না বদলানোর একটাই পথ

নিজেদের মলিনতা, স্বল্পতা ঢাকতে
শুধু লোক দেখানি তুলনা আর রক্ষকের ভূমিকায়
পাশে এসে দাঁড়ালে ত’ জনসমক্ষে প্রেমিক প্রমাণিত হয় না
তাই দূর থেকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে নানান ভঙ্গিমা

ঠুনকো আভিজাত্য, ঠুনকো ভালোবাসা
ঠুনকো অহম, শুধুই প্রাপ্তির আশা
হা হুতাশেই জীবন গেল লোকদেখানো ঢঙে
যার জীবন আসলেই গেলো সে কিন্তু নির্বিকার।

তোমার জন্য

স্মৃতিগুলো জমা ছিল মনের গভীরে
প্রেমের সিম্ফনি, ভ্যান গগের চিত্র
সবই জমা রেখেছি তোমার জন্য।

শুধু একবার আমায় স্পর্শ করে দেখো
কতটা ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছি।
তুমি একবার ছুঁয়ে দিলেই কবিতাগুলো
অঝোরে ঝরে যায় কাগজে কলমে।

শুধু একবার তোমার ওষ্ঠের অমৃতস্বাদ
দিয়ে আমার কবিতায় অমরত্ত্ব দাও।

আমি আলোর জোনাকি সেজে তোমার
মনের ঘরে তুমুল রোশনাই এনে দেব।
একবার ডেকে দেখো সব কিছু ফেলে রেখে
তোমার মনের আবাদী জমিতে আল্পনা
এঁকে দেবো তোমায় নতুন করে সাজাতে।

বিস্তীর্ন পথ

ওগো অপূর্ব প্রেমিক, মুখ তুলে দেখো
এক ক্লান্ত উদাসী দুপুরে বিস্তীর্ণ পথ
পেরিয়ে এসেছি আমি তোমারি দুয়ারে।
তোমার অস্তিত্ব কেবল আমার মনে
গভীর ক্ষতের মত নিয়ত জানান দেয়।

কি বলে বোঝাই কত চাই আমি তোমারে।
সঙ্গে বেলা অবেলার ভালবাসার ভ্রুণ,
যা তোমার স্পর্শে অঙ্কুরিত হযে নতুন
প্রজন্মের ভালবাসার উজান বওয়াবে।
ঘুম ঘুম চোখে পেরিয়ে এসেছি মাইলের
পর মাইল শুধু একা, ভীষণ একা, কেবল
তোমায় পাবার ইচ্ছে আমায় জড়াবে।

নৈঃশব্দের বুক চেরা আলোর জোয়ারে
তোমায় ভাসিয়ে তোমার বুকে কাঁপা কাঁপা
আঙুলে এঁকে দেব ‘ভালোবাসি ভালোবাসি।’
নিঃশ্বাসের প্রগাঢ়তায় ব্যাকুলতা বাড়তে
থাকা মুহুর্তে সমস্ত সৌন্দর্য্যের নিবন্ধনে
যাপিত আবরণ ছেড়ে ক্রমশ: কাছে আসি।

ঐশ্বর্য্য

আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র আজও
অপেক্ষায় থাকে সাগরের পারে
যখন রাণীর মুকুট থেকে কোহিনূর
খসে খসে পড়ে পথের ধূলায় মেশে
তার পায়ের নূপুরের মুক্তকণা
উচ্ছ্বল সমুদ্রের ফেনায় ছড়িয়ে যায়
নক্ষত্র এসে ধরে নেয় রাণীর হাত
কিন্তু দূরত্ব শুধু আলোকবর্ষ সমান
আলোক্পথে আঁকা থাকে উপসংহারহীন
গল্পের মত এক বিষাদময় ঐশ্বর্য্য।

আলেয়া

মেলানো যায় নি একটি সরবতা ও একটি নৈঃশব্দকে।
নৈঃশব্দটি ছিল নদীর ধারে তার একলা ঘরে সজ্জিত,
হালকা মেঘে ভেসে যেত তার সলাজ চোখের দৃষ্টি।
হঠাৎই ঈশান কোণে একটা ঝোড়ো বাতাসে
ধুলিস্যাত হয়ে সব ভেঙেচুরে ছড়িয়ে গেল।
অনিশ্চিতের ঢেউয়ে দোলে ময়ূরপঙ্খী নাও।
স্বর্ণ শুভ্র ওড়না আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত,
অদূরে ডাহুক পাখিরা ডানা ঝেড়ে নিল।
অন্ধকারে ভেসে যাওয়ার মুহুর্তে
রাতের অন্ধকারে আলেয়া
এক ফুঁয়ে নিভে গেল।

বসবাস

যমদূতেদের বসবাস নায়াগ্রার নিকটবর্তী খেলনার দোকানে।
যখন জলবিদ্যুতের ঘাটতি পড়ে
আর খেলনাগুলো অকেজো হয়,
তারা বালিতে ঘড়ি আঁকে।

নির্ধারিত সময় ও পাত্র পাত্রীর
ঠিকুজি কুষ্ঠি নিয়ে পাপ-পুণ্য বিচার করে।
বিচারকালে উদোর পিন্ডি ভুদো খেয়ে নেয়।

যমরাজ রোজ মাথার মুকুটটা হেলিয়ে ভেবে দেখেন
বাঁটখারার ওজনে কতটা বাস্তবতা।
নরকের হাওয়া কে কতটা খাবে দাড়িপাল্লায় নিত্য বিচার হয়।

আপন কানা পরেতে দৃষ্টি

ভালো থাকো সব ভালো থাকো মন
বাঘ সিংহ কেহ নহে এ শুধু মিছে ভ্রম
পড়েছি সবাই বাঁধা আপনার নাগপাশে
দেখাও দুমুঠো আশা বেঁধো না কো আর ত্রাসে।

কবে আছি কবে নেই চরিত্র থেকে যাবে
সবাই আছি নিরাপদ যে যার আপন ভবে
দেখনদারিতে ফেঁসে মোরা অন্তঃসার বিহীন
অন্যমনে প্রবেশি কিন্তু দেখি না নিজেরি গহীন।

চালসে কবিতা

অন্ধও নেই, বর্ষাও নেই, শুধু থাকে প্রিয় কবি
তুমি সিদ্ধার্থ বিবস্ত্র হও মিছরির ছুরিতে নবী।
বেরিয়েছে বই গোটা কতক আরও ?
ঝেঁটিয়ে ঝেঁটিয়ে কথা করো জড়
তব ভূমিকা কি? সংশোধন না কি বিভাজন ?
না কি একাই করবে মায়ের জলে অবগাহন ?
চোখেতে চালসে চশমা গলিয়ে
এদিকেতে চাও টেরিয়ে টেরিয়ে
খুঁজে নাও তব আপন প্রিয়া এদিকের পথ ছাড়ো
বেশি কিছু হলে যেতে হবে জেনো হরপ্পা মহেঞ্জদড়ো।

সাধ

এই সুন্দর স্বর্ণালী সকালে এখন
আকাশে হালকা কিছু মেঘের দেখা,
গাছে গাছে লাল হলদের ছোঁওয়া
তারি মাঝে পথ চলে আঁকাবাঁকা।
দূর হতে শুনি পাখির কুহু কূজন
মনকে দেয় শুধু মোর মাতিয়ে,
অদূরে সমুদ্রের ঢেউয়ের পর ঢেউ
বালির বুকেতে পড়ে আছড়িয়ে।
আকাশ চিরে বলাকার দল
মেঘের বুকে নকশা এঁকে দেয়,
সবুজ ঘাসের ‘পরে শিশিরকণায়
রামধনু রঙ আলোয় ঝলসায়।
মেঘেদের সাথে চলে যেতে চাই
অনেক দূরের আকাশ পেরিয়ে,
পাখিদের সাথে উড়ে যেতে চাই
সব বাঁধনের সীমানা ছাড়িয়ে।