জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর সকল পোস্ট

একটি দলিত ভাবনার কবিতা

একটি দলিত ভাবনার কবিতা

আজ দুপুরের বর্ণহীন ঘুম কিছুক্ষণ আগে
আমাকে কানে কানে বলে গেছে
বর্গাচাষীদের মতো বসন্তও এখন দলিত আছে!

আমার জানতে কিছুমাত্র বাকি নেই
বসন্তদের মতো আরও অনেকেই এখন দলিত…
যেমনঃ শব্দ পোড়া গন্ধ
বাতাসে জীবন্ত লাশের দুর্গন্ধ
এমন কি আমার প্রকাশিতব্য উপন্যাসের
পাণ্ডুলিপি “যে বসন্তে ফুল ফুটেনি” সেও…!!

আজ আমার কিছু প্রশ্ন থেকেও নেই…. লক্ষ
কারণ অন্য সবার মতো আমিও জানি, বেশি প্রশ্ন
থাকতে নেই
এতে আহত শব্দদের ক্রন্দসী হওয়ার ভয় আছে
নিহত বাক্যদের মর্গের বাতাস ভারী করার দুঃসহ
যোগ আছে!

তবুও আমি বলতে চাই….
যে একবার মরেছে, তার আর মরণের ভয় নাই!!

আগুন জ্বলে

আগুন জ্বলে

কিছুদিন পূর্বে কালের একাদশি হওয়ার কথাছিলো
বলা নেই, কওয়া নেই…..
আজ ধেয়ে আসছে হালের ষষ্ঠপদী
হঠাৎ আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি প্রাণের স্বরবর্ণের
ব্যাঞ্জনবর্ণের জমাট চতুর্দশী!

আমার সাথে আজকাল আমার বেশ যোগাযোগ আছে
নিকট কুটুমবাড়ির মতোন ঘনঘন যাতায়াত আছে
তবুও শিমুলের দিকে তাকালে আমি আমাকে চিনি না
কৃষ্ণচূড়ার দিকে তাকালেও……..না
তখন বর্ণমালারা কেমন যেনো ফোঁস ফোঁস করে উঠে!

তাদের অভিমানী রাতের প্রহর কিছুতেই কাটে না
আমারও ইনসমোনিয়া নামক পুরাতন রোগটা ফিরে আসে
তবে কি চন্দ্রবিন্দু, অনুস্বার ওরা আমাকেও ভালোবাসে?
আজকাল কবিতা লিখতে চাইলেই আমার অসহায়ত্ব বাড়ে
বর্ণমালারা বড়ো বড়ো চোখ করে বোধের কড়া নাড়ে
তবুও আমরা যেনো কেউ কারো নয়…. কারো নয়!
আমরা সবাই সবকিছু বুঝি
কেবল কেউ কারো ভাষা বুঝি না,বুঝতে চাইও না!

তবুও একাদশির পর দ্বাদশী, ত্রয়োদশী ছাড়াই চতুর্দিকে
দেদারসে চতুর্দশী হয়
নাটক পাড়ায় আলাদীনের চেরাগের স্বপ্ন মঞ্চস্থ হয়
ফাগুন এলেই আগুন জ্বলে
ফুলের মূল্যে মৌসুমী ভালোবাসাদের অবাক সূর্যোদয় হয়….!!

স্বর্গ বিলাস (ধারাবাহিক উপন্যাস)

০১
তখনো পাখি ডাকা শুরু করেনি। ভাঙেনি রাতের গোঙানি। তবুও প্রতিদিনের অভ্যাস মতো আজকেও ঘুম ছুটে যায় ছায়ার। দিনের আগে দিন শুরু হওয়ার আনন্দটা একেবারেই আলাদা।যে রোজ ভোরের পাখি হয়, সে ছাড়া অন্যকারো পক্ষে এর স্বাদ বুঝতে পারা শুধু কঠিনই নয়; একেবারে দুঃসাধ্য। এই আমেজের কেবল একটি উপমা দেওয়া যায়, যেমনঃ লবণ, কাঁচামরিচ,আদা,খাঁটি সরিষার তেল পরিমাণ মতো চিড়ামুড়ির সাথে মাখিয়ে মচমচে করে খাওয়া। ছায়া জানলার ছিটকিনি খুলে বাইরে একবার চোখ ঘুরিয়ে নেয়। এখনও ঘুটঘুটে আঁধার। বাসি,পঁচা জলের মতো আসক্তিহীন। তবুও এর একটা ভিন্ন ঘরানার জৌলুশ আছে। আদিমকালের মতো আটকোরা রুপ-যৌবন আছে। এখানেই মানুষের সাথে সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে বড় পার্থক্যটি খুঁজে পাওয়া যায়। তাঁর সবকিছুই এমনি নিখুঁত, এমনি অকৃত্রিম।
ব্রাশ হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে আসে চলে ছায়া। বারান্দা তো নয়, যেনো ইনডোর ক্রিকেট খেলার পিচ। যেমন ইচ্ছে ব্যাটিং, বোলিং করার মতো জায়গা আছে। বল কুঁড়ানোর জন্য ৩/৪ জন ফিল্ডারও দাঁড় করিয়ে দেয়া যাবে অনায়াসেই। যদিও বল বাইরে যাওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই। গ্রিলের বাঁধা ডিঙিয়ে বাইরে যাবে এমন সাহস কার? ছায়া বারকয়েক পায়চারি দিয়ে মর্নিংওয়াক সেরে নিলো। শরীরটা এখন আগের চেয়ে বেশ হালকা লাগছে। বারান্দার ঠিক মাঝ বরাবর চমতকার ফ্রেমে বাঁধানো একটি আয়না ঝুলছে৷ ছায়ার অনেককিছু না হলেও চলে কিন্তু আয়না ছাড়া চলেনা। এজন্য মেয়েবেলায় তাকে মজা করে আয়নামতি বলে খেপানো হতো।
ছায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে আর দেখছে৷ এ দেখা যেনো কিছুতেই শেষ হচ্ছেনা৷ নিজেই বুঝতে পারছেনা সে কি যুবতী না কিশোরী৷ দুই তৃতীয়াংশ একটা ফুটন্ত গোলাপ যেনো ছায়ার রুপের কাছে কিছুই না৷ নাক, মুখ, চোখ সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার পর ছায়া নিচের দিকে নামতে লাগলো। অবশেষে স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হলো, তার মতো সুডৌল বক্ষ পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কোনো মেয়ের নেই। জান্নাতের হুরদের থাকলেও থাকতে পারে। ছায়া বেশ কিছুক্ষণ নিজের চোখে, মুখে, গালে, থুতনিতে, বাঁশির মতো খাড়া নাকে হাত বুলিয়ে আদর করে। আয়নার সামনে নিজেকে আদর করতে ছায়ার বেশ লাগে। একটা সময় ছায়ার অবাধ্য হাত দুটি নিচে নামতে চায়। ছায়া সাথে সাথে হাত দুটিকে শাসন করে। সরিয়ে নেয়। এসব করতে করতে হঠাৎ ছায়া খেয়াল করে আজও তার অবাধ্য চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। ছায়া ওড়নার একপ্রান্ত দিয়ে জল মুছে নেয়। বুঝতে পারে তার মনটা এখন মোটেই ভালো নেই। একে যে করেই হোক ভালো করে তুলতেই হবে।
ছায়া আবার বাইরের দিকে তাকায়। কয়েকটা শেয়াল আর কুকুর একসাথে খেলা করছে। একটা আরেকটার মুখে মুখ ঘষে দিচ্ছে। নাকে নাক ঘাষ দিচ্ছে। লেজের দিকে আলতো কামড় দিচ্ছে। প্রকৃতির এই বিরুপ দৃশ্য দেখে ছায়া রোজকার মতো আজ আবারও আশা বেঁধে রাখে। ছায়া নিজেকে খুব ভালোবাসে। প্রত্যেক মানুষই তাই করে। ছায়া জানে মানুষের স্বভাবের, আচার আচরণের পরিবর্তন হয়। শিয়াল কুকুরের হয়না। ছায়া বিশ্বাস করে যে মানুষটিকে একদিন সে সুতীব্র ঘৃণা করতো, সেই মানুষটিকে সে এখন সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। এমনকি তার নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে।

একটি সীমান্তের ওপারের কবিতা

একটি সীমান্তের ওপারের কবিতা

কোনোদিন ঘুর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি
একটা কবিতা লেখার লোভ সামলানো আমার জন্য
এতোটা কঠিন হবে!
এটি সীমান্তের ওপারের একটি কবিতা
যে কবিতা বানের জলে ভাসতে ভাসতে দিগন্তরেখা
অতিক্রম করে গেছে
এ আমার সেই কবিতা
যে কবিতা অগণিত পাঠকের নাকের নোলক….
এ আমার সেই কবিতা!!

তোমাদের মুখেই শত সহস্রবার শুনেছি
মানুষের কোনো জাত থাকতে নেই— এরা কেবলই মানুষ
তোমাদের মুখেই লক্ষকোটি বার শুনেছি
মৃতের কোনো জাতপাত নেই
এরা কেবলই সীমাপ্তের ওপারে পাড়ি দেওয়া কবিতা!

তবে কি কবি মানুষ নন?
নাকি আমরা যারা কবিতার জাতপাত নিয়ে ঘোলাজলে
প্রবৃত্তির দাসত্ব কামিয়াব করছি
আমরাই অমানুষ……!!!?

হারাধনের একটি চারাগাছ

হারাধনের একটি চারাগাছ

আখাম্বা সময় একদিন একটা গাধা ছিলো….
এখন সে দুরন্ত টগবগে ঘোড়া হয়েছে;
ছায়াপথের মায়া ছেড়ে সে এখন
আমার এই শহরে এসে আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে!

তবুও আমি পিতলের মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ করি
ভাগ্যিস ভাগ্যের চাকা এখন যত্রতত্র ওড়ে
আর আমার বুভুক্ষু সময় কেবলই মাটি খুঁড়ে..!

এতোকিছুর পরেও
আমার হৃদয় ফুঁড়ে একটি কবিতার চারাগাছ
জন্ম নেয়; সেও জন্মান্তরে
পত্রিকার পাতার হাত ধরে বৈতরণী খুঁজতে চায়
আমি ছাড়া সবপাখিরা জানে
আমার সেই চারাগাছ বড় হতে চায়!
আমার সেই চারাগাছ আগাগোড়া জল চায়…!!

নিহত শব্দের পদাবলি

নিহত শব্দের পদাবলি

বেশ কিছুদিন নিহত হয় ….. আমার কেবলই কিছু
অভব্য অব্যয় পদের কথা মনে হয়
এই যেমন…. যদি, গদি, তবে, কিন্তু, এবং, বরং
এই জাতীয় আরও কিছু কিছু বেহায়া শব্দঝুড়ি!

একদিন ক বলতে ম বলে ফেলায় মস্তবড় প্রমাদেরা
আমোদ প্রমোদে মেতে উঠেছিলো
আর এখন যদি বলতে আমি পুরোদস্তুর গদিকে বুঝি
ভালোবাসা বলতে কেবল বর্ণমালার চোরাচালানকেই
বুঝি!

তবুও…….
আজকাল কিছু নিষ্পৃহ নীরবতা নীরবে নিষ্পেষিত
হয়
আমিও ফাঁকতালে ভালোবাসার চোরাকারবারি হই
তবুও কেউ কেউ তসবি হাতে তদবিরের নামজারি
করতে ব্যস্ত হয়
আমি ভুলেও আর বর্ণমালার কবিতা লিখি না!!

কে তবে জানে না….
যে অব্যয়ের বোধ জলে ফিরে গেছে,
সে আর কোনোদিন ফিরবে না, কোনোদিন না!
আবারও বলি মাতৃভাষার কদর বুঝে না কোন শালা?
তবুও কেনো নীরবে কাঁদে আমার প্রাণের বর্ণমালা?

প্রচ্ছদ

প্রচ্ছদ

দিনান্তে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যখন আমি ঘুমাই…….
তখনো কি আমি মানুষ?
নাকি আপাদমস্তক মানুষে মোড়ানো একজন ঘোড়া?

অনেক প্রশ্নের মতো এই প্রশ্নটিরও আমার কাছে কোনো জবাব নাই
এই যেমনঃ
শক্তি থাকলেই কি যে কাউকে চড় মারা যায়?
হাত থাকলেই পরস্ত্রীকে আদর করা করা যায়?
ক্ষমতা থাকলেই কি কারো অধিকার ভোগ করা যায়?
মুখ থাকলেই কি ধনুকের মতো মুখ বাঁকানো যায়?
ইত্যাদি… …. ইত্যাদি!!
অনেককিছুর মতো আজকাল ….
এসব প্রশ্নেরও আমার কাছে কোনো জবাব নাই!

আমি কেবল একলা আমার মতো……
তেলাপোকা, গিরগিটির মতো অন্ধকারে টিকে থাকতে চাই
আসন্ন বইমেলায় কোনো বইয়ের প্রচ্ছদ হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে চাই!!

“যে বসন্তে ফুল ফুটেনি” উপন্যাসের কিয়দংশ

“যে বসন্তে ফুল ফুটেনি” উপন্যাসের কিয়দংশ

পাপ নিয়ে আমার নিজস্ব একটি হাইপোথিসিস আছে। আমি মনে করি প্রতিটি মানুষ শিশু নিষ্পাপ অবস্থায় পৃথিবীর মুখ দেখে। আর এজন্যই শিশুদের ফুলের সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। ফেরেস্তার সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। আর এই জন্যই শিশুর শরীরের রঙ কালো হউক কিংবা ফর্সা হউক তার চেহারায় একটা পবিত্র এবং লাবণ্য সদা বিরাজমান থাকে। মূলতঃ তখন শিশুর অবয়বে সৃষ্টিকর্তার সৌন্দর্য জ্যোতি রূপে প্রকাশিত হয়। আমরা তখন শিশুদের আদর করে গালে হাত বুলিয়ে দিই, চুমোয় চুমোয় শিশুর গাল লাল করে দিই।

এরপর দিন যায়। মাস যায়। বছর যায়। শিশু কিশোর হয়। কিশোর যুবক হয়। যুবক পৌঢ় হয়। পৌঢ়ও একদিন বৃদ্ধ হয়। যতোদিন গড়ায় শিশুর মুখের কমনীয়তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। একটা সময় মুখ থেকে স্বর্গীয় সেই লাবণ্য উদাও হয়ে যায়। তখন আর চুমু দিতে ইচ্ছা করে না। ভালোবাসতে মন চায়না। এটাই পৃথিবীর রীতি। এভাবেই চলে এসেছে। এভাবেই চলতে থাকবে। আমার প্রশ্ন হলো, শিশুসুলভ কোমলতা বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মুখ থেকে বিলীন হয়ে যায় কেনো? আমার ধারণা, মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার পাপের মাত্রা এবং পাপের বোঝা বড় হতে থাকে। আর সেই পাপের ছায়া ছায়াবাজির মতো আমাদের মুখের পবিত্রতার স্থানটি দখল করে নেয়। তখন মানুষকে বিশ্রী দেখায়। কুৎসিত দেখায়। যে মানুষ যতো বেশি পাপ কাজ করে, তার মুখ ততো বেশি শ্রী হীন হয়। চেহারার দিকে তাকালেই পাপী পাপী মনে হয়।।

আসলে সৃষ্টিকর্তার চাওয়া কী? আমার ধারণা এবং বিশ্বাস সৃষ্টিকর্তা চান তিনি মানুষকে জন্মের সময় যেমন নিষ্পাপ অবস্থায় পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, প্রতিটি মানুষ মৃত্যুর সময় তেমনি নিষ্পাপ অবস্থায় তাঁর কাছে ফিরে আসুক। এই নিষ্পাপ অবস্থায় ফিরতে পারা মানেই পরমাত্মার সাথে মিলনের একমাত্র ১০০% গ্যারান্টি। তা না হলে জেল, জরিমানা অর্থাৎ দোযখের আগুনে কোটি কোটি বছর পুড়িয়ে পুড়িয়ে আত্মাকে পবিত্র করা হবে।

অতঃপর সেই পাপী আত্মাটি পরমাত্মার সাথে মিলনের উপযুক্ত হবে। যতো দিন না সে পাপমুক্ত হবে, ততোদিন তার শাস্তি চলতেই থাকবে। চলতেই থাকবে।।

নোলক

নোলক

পুনশ্চঃ আমি প্রাগৈতিহাসিক কালে ফিরে যেতে চাই
লেংটাবাবারা এখন সবচাইতে ভালো আছেন….
তাঁদের সত্য-মিথ্যার কোনো প্রকার রোগ-বালাই নাই..!

কোনো একজনের
পেছনে জানিয়া বুঝিয়া কবিতাকে লেলাইয়া দিয়াছিলাম
তিনি এখন ডিকশনারি কিনে অপ্রচলিত, দূর্বোধ্য, কঠিন কঠিন
শব্দ রপ্ত করেন
বড় কবিদের বই ঘোটা করে উপমা, অলংকার আপ্ত করেন।

আমি প্রাগৈতিহাসিক আমলের নোলকের কথা ভাবি…..
সেরের উপর শোয়া সের, দেড় সের এবং দুই সেরের কথা ভাবি
যে করেই হউক…
আমাকে কবি হতেই হবে…., আমি সেই কথাও ভাবি!!

—————–
পাদটীকাঃ সুপ্রিয় পাঠক কবিতাটি গুরুচণ্ডালী দোষে দুষ্ট।
——————————————————-

কবিতা

কবিতা

মাঝেমাঝে খুউব মন চায় কবিতা লিখে গোলা ভরে দিই
যেমন করে কিষাণি আউসের গন্ধ দিয়ে গোলা ভরে দিতো
আমিও তেমনি কিছু নগ্ন, অর্ধনগ্ন শব্দের চাষী হই
দেবোত্তর সম্পত্তির মতো কবিতাকে ভোগ করতে থাকি
ভোগ করতেই থাকি… করতেই থাকি. !!

পথের উড়ন্ত ধূলিকণাও জানে
এখন ভালোবাসা ছাড়াই প্রেমের দোকানদার হওয়া যায়
কোনো খরিদ্দার লাগে না!
খিলিপান চিবিয়ে চিবিয়ে উলংগ ঠোঁট লাল করা যায়
প্রজন্মপাখির ঘাড়ে বসে যা কিছু খুশি গিলানো যায়
ছারপোকাদের কোনো টিপসই লাগে না!

কবিতাদের কোনো ইচ্ছা অথবা অনিচ্ছা থাকতে নেই…
আমারও খুউব খুউব ইচ্ছে হয় বাবল গামের মতো…
যতোখুশি কবিতাকে চুষি.. চুষতেই থাকি….
চুষতে চুষতে যখন খুশি উচ্ছিষ্টগুলো ফেলে দিই দিকবিদিক…
সাগর
ভাগাড়
জলাধার..
ওরা সবাই সবকিছু ভাগাভাগি করে খেয়ে নিক..নিক!!!

রেবেকার রাত্রি লুট হয়নি

রেবেকার রাত্রি লুট হয়নি

রেবেকার রাত্রি লুট হয়নি
ঘুমের ঘোরে এমনি কতো দুঃস্বপ্নে রেবেকারা কেঁদে উঠেই
আমি ভাবছি আমরা যারা জেগে জেগে ঘুমাই তাদের কথা
তাদের কি রেবেকার মতো লুটেরাদের ভয় নেই?

আজকাল আকাশে কবিতা লেখা হয়
আজকাল বিষন্ন বাতাস মুদ্রণযন্ত্রের ভূমিকা পালন করে
আমি রাস্তার অথৈ নীরবতায় জবরদস্ত তাম্রলিপি দেখি!

কে জানেনা, মাটি আর শিলায় মল্লযুদ্ধ হয়না—-
শিলায় শিলায় ঠিকই আগুনের ফুলকি বের হয়!!

চন্দ্রবিন্দুর কষ্ট

চন্দ্রবিন্দুর কষ্ট

০১
কিছু কিছু কষ্ট বেদনার নামান্তর
মন পুড়ে না, কেবল পুড়ে অন্তর!

০২
কোথা হতে আসে চন্দ্রাবতী, কোথা হতে বিন্দু
বেদনার ভার বইতে পারে, কোথায় এমন সিন্ধু?

০৩
কুয়াশা আর কুআশা এরা দু’জন যমজ ভাই
হতাশ মানুষ ভাবে তার পাশে আর কেউ নাই!

০৪
যার বেদনা লুকানোর কোনো জায়গা নেই
যেজন তাকে বুকে তুলে নেবে, কবিতা সেই!

০৫
তবুও সূর্যরাজ কিছুতেই বুঝেনা চন্দ্রবিন্দুর কষ্ট
কবি হওয়ার কৌশল দেখে কবিতার মাথা নষ্ট!!

সেঁজুতির জন্য মন কাঁদেনা

সেঁজুতির জন্য মন কাঁদেনা

আজকাল কোনোকিছুতেই ..…জল পড়ে না
বিশ্বস্তরাত যেদিন প্রথম আজানুলম্বিত হয়েছিলো
এমন ভাব করেছিলো যে, সে আর কোনোদিন বুঝি শেষ হবেনা
সেদিন জল একটু টলমল হয়েছিলো বটে
তবে আমার প্রিয় গড়াই নদীর মতো উতলা হয়নি!

এই স্বার্থপর শহরের কাছে আমার কোনো ঋণ নেই
আমি বরং ভুলে গেছি আমার সেঁজুতির ভালোবাসা
শিখে গেছি খাঁচার পাখির মতো ভালো থাকা…..
এখানে শিশির ভেজা রোদ আর খদ্দরে ঘষাঘষি নেই
জন্মের পূর্বে যেমন ছিলাম, এখনও আমি আছি সেই!

তবুও মুছতে চায়না করপুটে লেগে থাকে আগামি
জন্মের দাগ
সেঁজুতি এখনও বুঝতে চায়না প্রবাদ
বুঝতে চায়না হিমশৈলের সাথে পাহাড়ের কেনো
এতোদিনের বিবাদ…!!

ছেঁড়াদ্বীপ কথা বলে

ছেঁড়াদ্বীপ কথা বলে

কিছু কিছু ছেঁড়া ভাবনা নিয়ে ছেঁড়াদ্বীপে গিয়েছিলাম
ওখানে কেবল মৃতপ্রায় প্রবাল আর মনমরা কেয়া
মাঝেমাঝে সমুদ্র ছিঁড়ে ওড়ে আসে আমার মতো কিছু
মনবিলাসী মানুষ..…..
তারা কেবল রতিবিলাসে দৌড়ে আসে
তখন ওদের কোনো হুশ থাকে না… হুশ!

তবুও ছেঁড়াদ্বীপের উদার আকাশ আর মুক্তমনা বাতাস
পংগপালের মতো ছুটে আসা মানুষদের স্বাগত জানায়
পাথরে, প্রবালে বসতে দেয়
নোনতা জলের আস্বাদন দেয়!

তবুও স্বার্থপর কিছু মানুষ ওকে ভালো থাকতে দেয় না
তারা তস্করের মতো ছেঁড়াদ্বীপের বুক ছিঁড়ে প্রবাল কুঁড়ায়
পলিথিন আর অপ্রকৃতিস্থ বর্জ্য পদার্থে পরিবেশের বারোটা বাজায়!

এতোটুকুই শেষ কথা নয়
আরো সাংঘাতিক ভয় আছে… ভয়
তবুও ছেঁড়াদ্বীপ নাসাকার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রোজরাতে
একবার করে ঘুমাতে যায়
তবুও ছেঁড়াদ্বীপ মানুষের মতো ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলে;
তার কথা ভাষ্য হয়—– বাতাসে ভেসে ভেসে
আমার কাছে মানুষের চেয়ে কুকুর ঢের বেশি আসে!!!

প্রার্থনা

প্রার্থনা

মাঝে মাঝে আমার দু’চোখ বিস্তারিত করে …
একটা চিরআরাধ্য আলো…. আসে আমার ভুবন জুড়ে
আমার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র লোকালয় তখন মহানন্দে ভাসে
সাথে সাথে আমি মাটিতে আধশোয়া হয়ে আনত হই
আমি যে আলোক ভালোবাসি, সেও আমায় ভালোবাসে!
এ সেই আলোক, যার শোভায় আলোকিত সবকিছু
তাঁর অনুগ্রহহীন কার সাধ্যি আছে, নেবে তাঁর পিছু?

আমার হাত আছে.. পা আছে, আছে মশার মতো চোখ
তাঁর অসংখ্য খানদানি চোখের একটি আমার হউক
তার সেইসব চোখে যদি আমার একটি চোখ থাকতো
তাঁর মুখ, তাঁর বুক যদি আমায় ইশারায় ডাকতো!
যে সর্বস্ব আলোক আমি আমার মাঝে মাঝেমাঝে পাই
সে আলোক সভায় আমি যেনো হাজিরা হররোজ দেখাই।

আমি যখন উপমাহীন শব্দের বাঁধন খুলে দিতে চাই
তখন আমি যেনো তাঁর থেকে কিছুটা হলেও সাড়া পাই
আমি যেনো আমার ঘরের বারান্দায় আকাশ ডাকি
নিজেকে তাঁর ভেবে তাঁর মতো থাকি… তাঁর মতো থাকি!