কাজী রাশেদ এর সকল পোস্ট

এক নতুন সকালের প্রতীক্ষায়

অনেকদিন ভোরের আকাশ দেখি না।
একটা নতুন ভোরের অপেক্ষা জীবনকে
করেছিলাম তুচ্ছ। স্বপ্নগুলোকে জমা রেখে,
ভয় আর বাধাকে উপেক্ষা করে, পথে নেমেছিলাম এক নতুন ভোর আনবো, এই ছিলো লক্ষ্য, এই ছিলো জীবনের অভীষ্টতা।

ভোরের প্রতি ছিলো এক অকল্পনীয় টান,
একটা ভোরের জন্য কতো রাত বিনিন্দ্র
কেটে গেছে দিনের পর দিন,
কেটে গেছে প্রহরের পর প্রহর।
শুধু একটা ভোর,
শুধু একটা নতুন সুর্য।

কৈশোরের এক রাতে,
ভোর না হতেই দুই বোন কে
সাথে নিয়ে বেড়িয়ে পরেছিলাম
মফস্বল শহরের এক পীচঢালা পথে,
অনেক হেটে হেটেও ভোর আসে নি
আমাদের সেই যাত্রা পথে,
ফিরে এসেছিলাম ঘরে,
ফিরে এসেছিলাম বাবা মার বকুনির ঘেরে,
তবু আজো প্রতিক্ষায় সেই এক নতুন ভোরের,
সেই এক নতুন সকালের।

নতুন সকালের এই নিরন্তর প্রতীক্ষায়,
কালো পঁচাত্তর আসে,
রক্তাক্ত বিরানব্বই আসে,
আসে নির্মম একুশে আগষ্ট
আসে আবার ১৭ই আগষ্ট।
শুধু লজ্জা, বেঈমানী আর হিংসা
ফিরে ফিরে আসে ত্রাস, আসে সন্ত্রাস,
তবু আসে না নতুন সুর্য,
তবু আসে না নতুন সকাল।

এ যুগের তালেব মাষ্টার

আমি একজন সাইফুদ্দীন, অথবা রাম,
স্যাম, যদু বা মধু নাম দিলেই চলে,
বাংলাদেশের হাজার লাখো
স্কুল কলেজের এক দরিদ্র মাষ্টার,
যার কপালে এম পি ও জোটে না,
কারো বা নাম এলেও পয়সা মিলে না।
আমি এ যুগের হতভাগা তালেব মাষ্টার ।
আবু বকর সিদ্দীক স্যারের চিরচেনা তালেব মাষ্টার,
ইংরেজ স্কুল ইন্সপেক্টরের তিন পা অয়ালা কুকুর,
একপায়ের খরচ সমান তাঁর বেতন,
এই ডিজিটালে কিছুই আসে না হাতে,
যদি না আমি হই কোন দল – উপদল।
মাঝে মাঝে ডিজিটালের কেরামতি,
দল বে-দলের লাঠালাঠি,
সংসারের হাড়িতে শুধুই পানি,
দিন যায় দিন আসে,
শিক্ষাভবন থেকে হাইকোর্ট,
কখনো রিক্সা চালাই,
কখনো বা মাল উঠানামা,
খেতে তো লাগে এই শহরে,
বেঁচে থাকার নিত্য প্রয়োজনে।

২১শে আগষ্টঃ পরাজিতদের নৃশংস হামলা

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লিগ কে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলার করার মতো ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ছাড়া আর কোন রাজনৈতিক দল গঠন হয় নি। তাই স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতি তে আওয়ামী লীগ কে টিকে থাকার জন্য ষড়যন্ত্র আর খুন খারাবীর মোকাবেলা করতে হয়েছে।

আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে অব্যহতি পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র, নানা মুখী শুভ অশুভ শক্তির সমীকরণ। নানা শত্রুর সমীকরণ বলয়ে আওয়ামী বিরোধী চক্রান্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। অতীতে হয়েছে এখনো চলছে। এই অশুভ তৎপরতা কখনো থেকে না। যেমন হয়েছে ৫৪ সালে, ৭১ সালে তা নিয়ে যায় স্বাধীনতা সংগ্রামে, মুক্তি সংগ্রামে। এর পরে ৭৫ এর মর্মান্তিক ১৫ই আগষ্ট ছিলো পৃথিবীর ইতিহাসে ঘৃণিত এক ইতিহাস। রাতের অন্ধকারে একদল বেইমানের দল জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করে৷ এই হত্যাকাণ্ডের সাথে শুধুমাত্র কিছু বিপথগামী সামরিক অফিসারই ছিল না, এক প্রতিশোধ স্পৃহা কাজ করেছে। এই প্রতিশোধ স্পৃহা ছিলো মার্কিনীদের, পাকিস্তানি সরকারের আর এ দেশীয় কিছু পরাজিত দালালদের। এখানে যোগ হয়েছে ডান বামের জন সম্পৃক্ততা হীন কিছু রাজনৈতিক নেতা ও দলের। যারা আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধাচরণ করে এসেছেন কিন্তু কোন গন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন নাই।

এরপরের ইতিহাস আরো জঘন্য৷ ২১ বছর ধরে এদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃতি করা, স্কুল কলেজে মিথ্যা ইতিহাস পড়ানো, দেশ কে ধর্মের নামে পাকিস্থানী করন করা। এই কাজে বিচারপতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায় কাজ করে গেছেন। এমনকি ৯০এর স্বৈরাচার পতনের ফসল যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তারাও একই পথ অবলম্বন করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ কে ক্ষমতায় ফিরতে বাধার সৃষ্টি করেছে।

প্রায় ২১ বছর পর ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ইতিহাস বিকৃতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করে, ইতিহাসের জঘন্য তম আইন ইন্ডেমনিটি বিল বাতিল করে বংগবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পথ প্রসস্ত করে। এইসব ইতিহাস সবাই জানে।কিন্তু আওয়ামী বিরোধী এবং জাতির জনক এর পরিবারকে ধ্বংস করার যে ষড়যন্ত্র তা কিন্তু থেমে থাকে নি। আজো সেই চক্রান্ত চলছে।

২১শে আগষ্ট সেই চক্রান্তের এক নারকীয় দিন। এইদিন ততকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতির জনকের কন্যা, আজকের প্রধানমন্ত্রী এবং সেই সময়ের বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ভাগ্যক্রমে তিনি অক্ষত থাকলেও মারা যায় প্রায় উনত্রিশ জন। আহত হন শতাধিক। শেখ হাসিনা নিজেও অসুস্থ্য হয়ে পরেন। এই কুখ্যাত হামলার পরেও আরো কয়েকবার হামলা চালানো হয়েছে। সারাদেশে টার্গেট করে আওয়ামী লীগের নেতা, সাংসদ, মন্ত্রী, বুদ্ধিজীবি, লেখক কবি, প্রকাশক, মুক্তমনা ব্লগারদের হত্যা করে জাতিকে, আওয়ামী লীগ কে পংগু করার এক অশুভ চক্রান্তে আজো ততপর একটা চক্র। এই চক্র ৭১ এর পরাজিত শক্তি, এই চক্র পচাত্তরের পুরানো ঐক্যবদ্ধ শক্তি। যারা আন্দোলন দিয়ে আওয়ামী লীগের পতন ঘটাতে পারে না।

এক্ষেত্রে আবারো এক পুরানো কথা বলতে হয়, আওয়ামী লীগ যখন জিতে তখন সে একা জিতে, আর যখন হারে তখন সবাইকে নিয়ে হারে।

তুমি একজন, শুধু তুমি

তুমি অপ্সরা বা কোন চোখ ধাধানো সুন্দর,
একথা বলবো না কখনোই, সে হবে মিথ্যা,
আমি তোমাকে নিয়ে মিথ্যের বেসাতি বা
তোমাকে নিয়ে বলতে চাই না কোন গল্প।
তুমি তোমার মতো করে এসেছো,
আমি আমার মতো করে পেয়েছি তোমায়।

তুমি খুব সাধারন, একেবারে রবি ঠাকুরের
আটপৌরে নায়িকার মতো সাধারন,
সাধারন হবার সব কিছু নিয়ে তুমি হয়ে
গেছো একেবারে অসাধারন।
তুমি যতো ফিরিয়ে দাও আমায়,
ফিরিয়ে দাও আমার সীমানায়,
আমি ততোবার তোমার কাছেই
হই সমর্পিত, তোমাতেই আকন্ঠ।

তুমি খুব সহজেই বলে দাও,
সোজা কথায় জানিয়ে দাও,
তুমি কতো দুঃষ্প্রাপ্য,
তুমি কতোদুরের নক্ষত্র,
তুমি অই নীল আকাশ,
তুমি ধরাছোঁয়া ছাড়া এক পরশ পাথর।

তোমার বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচল,
কেঁপে উঠে আমার ধরিত্রী,
বন্দী করি আমি নিজেকে
নিষেধের অবিনস্ত্য বেড়াজালে।

জানি তুমি এক অধরা,
জানি তুমি এক শুধুই স্বপ্ন।
মাঝে মাঝে তোমার নিরবতা,
মাঝে মাঝে তোমার চুপ থাকা,
আমাকে করে তুলে এক বেপরোয়া
মাতাল, ভুলে যেতে থাকি নিজেকে,
ভুলে যেতে থাকি নিজের সীমানা।

তোমার পুজার ছলে

তোমাকে এড়াতে চাই, যদিও ভালবাসি।
ভালবাসি তোমাকে ততোটাই
সারা জীবনে যতোটুকু নিশ্বাস,
যতোটুকু অক্সিজেন নিতে পারি।
ঠিক ততোটাই তোমাকে ভালবাসি,
ভালবেসে ভালবেসে কাটিয়ে দিতে চাই,
বার বার তোমার কাছেই ফিরে যেতে চাই,
ফিরে যাই মনে মনে,
ফিরে যাই কাছাকাছি।
তারপরেও কাছে যেতে চাই না,
তারপরেও মাছের মতো জীবন,
ভেসে বেড়াবো ভালবাসার অথৈ জলে,
অথচ জলের ছোয়ায় ভিজাবো না মন।
তোমাকে ইশ্বরী ভেবে আজকাল পুজায়
মগ্ন হই, আরাধ্য করি,
মনের ধুপ ধুনোয় পুজো করি
তোমাকে ভুলে থাকার ছলনায়।
আমার ভালবাসার জলে ভাসা জীবনে,
এক নক্ষত্রের মতো আমার আকাশে,
তুমি থাকো জ্বল জ্বলে ধ্রুবতারা,
পুব দিকে উঠে আমাকে পথ দেখাও,
আমাকে একা এই জটিল জং ধরা ভুবনে
আলোর দিশারী হয়ে অন্ধকারে আলো দাও,
আলো দাও প্রতি ক্ষনে, প্রতি ক্ষনে।

ভালোবাসার পাপে পুর্ণ

কবি ওমর আলীর মতো
আমিও একবার থুথু ফেলেছিলাম নদীর
বুকে, লজ্জাহীন ভাবে তাকিয়ে ছিলাম
ফেসবুকে পাঠানো এক নারীর দিকে,
আমি কি পাপে পুর্ণ হয়েছি?

কবি সুনীলের মতো পৃথিবী ঘুরে একশত
নীল পদ্ম খুজে না এনেই তোমার পায়ে
ভালবাসার অর্ঘ দিতে চেয়েছি প্রতিদিন
আমি লোভের মায়ায় পড়েছি?

ভালবাসার রঙ না জেনেই দিয়েছি
লাল গোলাপ,
বুকের মাঝে নিয়েছি এক সাগরের বিক্ষুব্ধ ঢেউ,
আছড়ে পড়া মনের উপকুলে, আমি কি ভুল করেছি?

তোমার গ্রীবার বাঁকে আলো আঁধারী,
চোখের মনিতে লুকিয়ে রাখা বানী,
ঠোটের কোলে ঝুলে থাকা হাসি,
বিপ্লবের তারার মতো জ্বলজ্বলে এক তিল
গালিবের ইচ্ছের কথা মনে করিয়ে দেয়।।

কি কথা তাহার সাথে

আমাকে আর টানে না কোন ডাক,
কোন ইশারা বা কোন সবুজ আলো।
তোমার অন্তরজালের সবুজবাতি
সারাদিন, সারারাত জ্বলে থাকে।
তুমি ব্যস্ত থাকো তোমার প্রিয়জনের কথায়,
আমি সারাটা সময় চেয়ে থাকি।

চেয়ে থাকি সকাল থেকে রাত,
রাত থেকে ভোর, সময় চলে যায় এভাবেই।
মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হয়
তোমার সাথে কি কথা, কি গান, কি তান বেজে যায়।
কি এমন যাদুতে তুমি ভুলে যাও আমার কথা,
ভুলে যাও ভালবাসার কথা।

রাত পার হয় জেগে,
ভোর আসে হাটি হাটি,
শুরু হয় আরো একটা একদিন।
কথা হয়, তাও একফোঁটা শিশিরের মতো
বিশাল জলরাশীর বুকে।

কত কথা থেকে যায় গভীরে,
কত কথা থেমে যায় কথার মাঝে।
অবহেলার পাহাড় জমে,
সমুদ্রের জলোচ্ছাসে
ভেসে যায়, না বলা কথা।
প্রতিদিনের অবহেলায় কুড়ে কুড়ে
খেয়ে যায় আমার বিশ্বাস অবিশ্বাস।

১৫ই আগষ্ট জাতীর শোক এবং লজ্জার দিন

পনেরোই আগষ্ট, বাংগালীর জীবনে এক শোকের মাস, এক পরাজয় আর লজ্জার দিন। বাঙ্গালী ভালোবাসার মুল্য দিতে জানে না, বাঙ্গালী বিশ্বাসের কোন দাম দিতে জানে না এই কথা গূলোকে প্রমাণ করে দিয়ে বাঙ্গালীর জীবনে এক মহা সত্য হয়ে ১৫ই আগষ্ট প্রতিবছর আসে। শোকে মুহ্যমান হলেও সেই সাথে এক চরম আত্মগ্লাণি বাংগালীকে কুড়ে কুড়ে খায়। একটি জাতির স্বাধীনতা আর জাতীয় চেতনা প্রতিষ্টায় একজন মানুষের নেতৃত্ব কতো খানী হতে পারে বংগবন্ধু ছিলেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আর একজন মানুষ কতোখানি তার জাতিকে ভালোবাসতে পারেন তারও উজ্জল দৃষ্টান্ত বংগবন্ধু। তার পক্ষেই সম্ভব পাকিস্থানী হানাদারদের রাইফেলের মুখে বলা আমি বাঙ্গালী, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার দেশ। একমাত্র তিনিই বলতে পেরেছেন আমি বাংলাকে ভালোবাসি, আমার শক্তি আমার দেশের মানুষের ভালোবাসা। ঠিক একই সাহস আর বিশ্বাস নিয়েই ১৫ই আগষ্ট রাতে খূনীদের সামনে উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন “তোরা কি চাস?”

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডকে জায়েজ করতে সেই সময় সাধারন মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়েছিলো বংগবন্ধু সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা। লুঠপাট, ব্যাংক ডাকাতি, অগ্নিকান্ড আর ঘুম খুনের নানান কিচ্ছা কাহিনী। একদিকে জাসদ আর গোপন বামপন্থী দলসমুহের সশস্ত্র লড়াই, গন শত্রু নিধনের নামে সারা দেশে গলা কাটার মহোৎসব, অন্য দিকে ৭১ সালে পরাজিত শত্রুদের প্রতিশোধের লেলিহান শিখা। মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র আত্মসমর্পণ করা হলেও রাজাকারদের অস্ত্র থেকে যায় নিরাপদ ভান্ডারে। রাতারাতি অনেক রাজাকার আত্মরক্ষার্থে যোগ দিতে থাকে জাসদের গনবাহিনী আর গোপন বাম দলগুলোর পতাকা তলে। তাদের ছত্রছায়ায় থেকে তাদের নামে চালাতে থাকে নানা অপকর্ম। অন্যদিকে জাসদ নেতৃবৃন্দ বা গোপন বাম দলগুলোর নেতৃবৃন্দ মনে করতে থাকেন সাধারন মানুষ দল বেধে তাদের দলে যোগ দিয়ে বিপ্লবকে তরান্বিত করছে।

গত ১৩ই আগষ্ট দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে নিযুক্ত বিট্রিশ রাষ্টদুতের এক লিখিত প্রতিবেদন থেকে সেই সময়ের বাংলাদেশের সামগ্রীক চিত্র নিয়ে এক সরকারী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই সরকারী নথি থেকে জানা যায় সেই সময় অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সামগ্রীক অবস্থার উন্নতি সাধন হচ্ছিলো। শুধু তাই নয় বাকশাল গঠন এবং সেই বাকশালের সুফল দেশের প্রায় ত্রিশ শতাংশ ভুমিহীনের মধ্যে কিভাবে কাজ করবে এবং পরীক্ষামুলক সমবায় সিস্টেমে বিভিন্ন জায়গায় ভুমিহীন কৃষোক এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের মাঝে কি পরিমান উতসাহ সৃষ্টি হয়েছিলো তার বিবরন পাই। একটা যুদ্ধ বিধস্ত দেশ কিভাবে ঘুরে দাড়াতে পারে তার এক বিশেষ দৃষ্টান্ত বংগবন্ধু বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পারতেন এ কথাও বিট্রিশ রাষ্টদুত তার সরকারকে অভিহিত করেছিলেন। বিট্রিশ রাষ্টদুত বলেছেন বংগবন্ধু প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন তলা বিহীন ঝুড়ি নয়, একটি খাদ্যে সয়ং সম্পুর্ণ দেশ হবে বাংলাদেশ। ১৯৭৮ সালের মধ্যে দেশ কে খাদ্যে সয়ংসম্পুর্ণ করার পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছিলেন বংগবন্ধু।বিট্রিশ রাষ্টদুত খুব দৃঢ়তার সাথে বাংলাদেশের ঘুরে দাড়াবার কথা বলেছিলেন এবং বিট্রিশ সাহায্য অব্যাহত রাখার সুপারীশ করেছিলেন।

বংগবন্ধুর দোষ ছিলো দুটো, এক তিনি বাংলাদেশ কে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীন করেছিলান দ্বিতীয়টা হলো তিনি শুধু সংবিধানে সমাজতন্ত্র কথাই সংযোজন করেন নাই, তিনি তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তার এই দুই পদক্ষেপ মার্কিন সামাজ্যবাদ, পাকিস্তান এবং তাদের এদেশীয় দালালদের ভালো লাগে নি। ভালো লাগেনি সেই সময়ের চীনা পন্থী বাম রাজনীতিক দের। ভালো লাগে নি আওয়ামী লীগের ভিতর ঘাপ্টি মেরে বসে থাকা মুজিব সরকারের পাকিস্তানী কনফেডারেশনের স্বপ্ন দেখা কিছু বেঈমানের। তাই তারা তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে উঠে পড়ে লাগে। এই ষড়যন্ত্রে যোগ দেয় পাকিস্থান থেকে ফেরত আসা কিছু সামরিক বেসামরিক আমলা। পাকিস্তানের মাতিতে মুক্তিযুদ্ধ কালীন সমইয়ে আরামে থেকে যুদ্ধার পর দেশে এসে পদোন্নতি আর সুযোগ সুবিধা আদায়ে হয়ে উঠেন তৎপর। তাদের অসন্তুষ্টিকে উপরের চক্র কাজে লাগায় খুব সফলভাবে।

বংগবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশ কে পিছনে নেওয়ার যে কাজ সেই কাজ খুব দক্ষতার সাথে শুরু করেন জেনারেল জিয়া। তার সুবিধা ছিলো তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার এবং যেড ফোর্সের অধিনায়ক। এই তিন পরিচয় কে উর্দ্ধে তুলে ধরে তিনি পিছনে থেকে কল কাঠি নাড়তে থাকেন। এবং সুযোগ পেয়েই প্রাণ রক্ষাকারী বন্ধুকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। পরবর্তী ইতিহাসো সবাই জানেন। বাংলাদেশ একে একে তার সমাজতান্ত্রিক ভিত্তি, গনতান্ত্রিক ভিত্তি, আর ধর্মনিরেপেক্ষতার ভিত্তি থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। সংবিধানে বিসমিল্লাহ আর পরবর্তীতে রাষ্ট ধর্ম বিল পাশ হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্থানী পরাজিতদের আশা ষোলকলা পুর্ণ হতে থাকে। একে একে রাষ্ট ক্ষমতার অংশীদার হয়ে এদেশের স্বাধীনতা বিরোধীরা জাতিয় পতাকা উড়িয়ে মুলত আমাদের স্বাধীনতাকেই ব্যঙ্গ করতে থাকে।বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ এবং অকার্যকর রাষ্টে পরিনত করার অংশ হিসেবে জংগীবাদ এবং জংগি গোষ্টীগুলো কে রাষ্টীয় পৃষ্টোপোষকতা দেওয়া শুরু হয়। জাতীর জনকের কন্যা শেখ হাসিনা কে হত্যার উদ্দেশ্যে চলতে থাকে প্রাণনাশী আক্রমন। ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলা সেই প্রাণনাশী চক্রান্তের অন্যতম। হত্যা করা হতে থেকে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক নেতা, ধর্মীয় নেতাদের।

বংগবন্ধু কে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে থাকে জগাখিচুড়ী মার্কা এক রাজনৈতিক দল যাদের জন্ম হয় সামরিক ছাউনীতে, যাদের পিছনে শক্তি যোগায় স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, আর ক্ষয়ে যাওয়া বাম ভুল রাজনীতি।

বাংলার ইতিহাস থেকে শেখ মুজিব কে মুছে দেওয়ার যে হাস্যকর প্রয়াস নিয়েছিলো সেই পদক্ষেপে আজ নিজেরাই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। জীবিত জাতির পিতা আজ সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে তারুন্য আর বিদ্রোহের প্রতীক হয়ে। আজ যে যবক মাঠে নামে তার ন্যায্য দাবী আদায়ে তার বুকেও থাকে শেখ মুজিবের প্রতিচ্ছবি। প্রতিবাদী যুবক সাহসের সাথে উচ্চারন করে আমার বুকে গুলি করো না, আমার বুকে আছে শেখ মুজিব। গুলি যদি করতেই হয় আমার মাথায় করো।

ভুল ছিলো শুধুই আমার

তূমি কখনো আমার অথবা কাছের হবে
এমন কথা মনে আসে নি এমন মিথ্যে কথা
কিম্বা অস্বীকার করা কিছুতেই পারি না,
লুকিয়ে রাখার মতো গ্রহ তো তুমি নও!
অন্ধকার জীবন থেকে যখন আলোর পথে,
হাতছানি এলো তোমার ইশারায়,
ভুল বুঝে হলেও তোমাতেই উজার হলো
আমার ভালোবাসা, প্রেম আর বিশ্বাস।
অথচ কি বোকা আমি, তোমার ইশারা
ছিলো, প্রশ্রয় ছিলো সবই ছিলো শুধু
আমাকে বুঝ দেওয়া আর ভালো করার
ভালো মানুষী এক নির্মল ভালো লাগা।
তোমাতে ডুবে যাওয়া এক মানুষ আমি,
ভালো হওয়া আর ভালোবাসা পাওয়ায়
উম্মুখ এক মাতাল হাওয়া, ঘুর্ণিপাকের
ঘুর্নিতে আবারো এক ভুল পথের পথিক।
তোমাতে মগ্ন আমি, তোমাতেই পুর্ণ,
এমন মহতী ক্ষনে সত্যের বড়ো বড়াই,
সত্যের চাপা পড়ায় জীবন এখন আরো
আরো দুর্বিসহ, জীবন এখন শুধুই পালায়।

সময় আমাকে দিচ্ছে না সময়

অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয় না, তোমার ওখানেও না।
কথা ছিলো বেশ কিছুটা সময় নিয়ে,
কাজের তাড়া কে ছুটি দিয়ে,
তোমার কাছেই চলে যাবো।

বাতাসের সাথে, নীল আকাশের সাথে
আর তোমার হাতে হাত রেখে
মাঝে মাঝেই হারিয়ে যাবো কারণে অকারণে।

যাওয়ার ইচ্ছেটা প্রায়ই
ভীষন ভাবে মনে করিয়ে দেয়,
হাতের কাজগুলো তাড়াহুড়োয় গুছিয়ে নেই,
তবু তোমার ওখানেই যাওয়া হয় না আমার।

তোমাকে ভুলে যাওয়া কখনোই হলো না,
কাজে অকাজে মনে পরে।
অনেক কিছুই আজকাল ভুলে
যেতে পারি নিয়ম – অনিয়ম,
শুধু ভুলা হয় না তোমাকেই।

একদিন সমস্ত ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে
তোমার কাছেই চলে যাবো,
যেতেই হবে, শুধু সময় আমাকে দিচ্ছে না সময়।

ছাপোষা চাকুরে

হরিপদ কেরানী না হলেও
আমি এক সামান্য ছাপোষা চাকুরে।
ভোরের সুর্যের সাথে সকালের টানাটানি,
বাস ধরবার হেস্ত নেস্ত পেরিয়ে,
ঠিক আটটায় পৌছে যাওয়ার নিত্য যুদ্ধে
লেগে থাকি জীবন থেকে জীবনে।

প্রেম বলো, গান বলো, আর ভালো লাগা,
ছাপোষা চাকুরের মনের গহীনেই থেকে
যায়, থেকে যায় সিনেমার পোষ্টারে,
মাইকের ভেসে আসা গানে আর কল্পনায়।

জমির আলি অথবা হরিদাস পালের সুখ
দুঃখ, হাসি কান্না মিশে থাকে রোজকার
হাজিরা আর ওভারটাইমের পাঞ্চকার্ডে।

মিনিটের দেরীতে কাটা পরে হাজিরা,
কাটা পরে দৈনন্দিন বেতন, ভালোবাসা বা
ভাল লাগা দৌড়ে পালায় দূর, বহুদুর।

চাকরী যাওয়া আর নতুন করে পাওয়া
এটুকুতে ভর করে চলে জীবিকার ট্রেন,
তারপরেও আসে প্রেম, আসে ভালো লাগা,
জীবনের ক্যানভাসে রঙ লাগায়
আরো এক ছাপোষা নারী।

সেও বড়ো ক্ষনকালের, বড়ো স্থুল,
কাজের গতির সাথে কমে বাড়ে
দুজনের ভালবাসা, কাছে আসা।
জন্ম নেয় আরো এক প্রজন্ম,
আরো এক ছাপোশা চাকুরে,
হয়তো বা নারী কিম্বা পুরুষ।

তুমি আকাশ ছাড়িয়ে অন্য এক আকাশ

আমি আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখি,
স্বপ্ন দেখি পাহাড় ডিংগিয়ে,
আমি আকাশটাকে নামিয়ে আনি
আমার কাছাকাছি হাতের মুঠোয়,
আমার এই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন,
তোমাকেও ছুঁতে চায় ভীষন এক অহমিকায়।

আমি আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নে বিভোর
এক বদ্ধ পাগল,
তোমাকেও ভেবে নেই আকাশ,
কিম্বা কোন এক নক্ষত্র রাশি,
তোমাকেও ভেবে নেই যেকোন
এক পাওয়া না পাওয়া
জোতস্না বিলানো চাঁদ, অথবা
শরতের মেঘ ভাসা নীলাম্বরী আকাশ। জোতস্না বিলাতে বিলাতে যে
চাঁদ সংগ দেয় আমাকে,
যে মেঘ উড়ে চলে আমার পথ ধরে
দিক দিগন্তের সীমানা ছাড়িয়ে।

তুমি যে সেই চাঁদ, সেই মেঘ,
সেই নীল আকাশ ছাড়িয়ে আরো দূর
কোন গ্রহ বা গ্রহপঞ্জির অজানা আকাশ,
তুমি যে আমার কাছে এক
শুধুই দিবাস্বপ্ন,
ভুলে যাই, ভুলে যাই,
বার বার ভুলে যেয়ে আবার
তোমাতেই বাড়াই হাত,
তোমাতেই দেই ভালোবাসার নৈবদ্য।।

উই ওয়ান্ট জাস্টিস

আমার সন্তান,
সহোদরের মৃত্যুতে রাজপথ নিয়েছে নিজের হাতে,
উই ওয়ান্ট জাস্টিসে মুষ্টিবদ্ধ হাত
তুলে আকাশ করে কম্পিত,
আমি তখন ক্ষমতার মসনদ খোজার ধান্ধায়
ঘুরি ফিরি অলি গলি রাজপথ।

আমি তখন পুরানো শকুনের খোজে
হাত বাড়াই অন্ধকারে।
আমার সন্তান,
হাতে হাত রেখে দৃঢ় হতে দৃঢ়
হতে থাকে অনিয়মের খোজে,
আমার সন্তান,
ক্ষুধা ভুলে পথে নামে রাস্তায়
দেখাতে যতো বুড়ো ভাম এই আমাদের।

আমি দেখি,
আমি শুনি,
আমি বিস্ময় নিয়ে
চেয়ে থাকি আমার সন্তানের সাহসে,
আমি অবাক বিস্ময়ে হতবাক হই,
আমাদের প্রচলিত এই লাইসেন্স বিহীন চলাচলে।

লাইসেন্স নেই পুলিশের,
লাইসেন্স নেই আমলার,
লাইসেন্স আর ফিটনেস বিহীন আমার নেতা,
আমার মন্ত্রী মহোদয়।

আমি লজ্জিত,
আমি লজ্জায় করি মাথা নত।
আমি ক্ষমতার চোরাপথ খুজি
এই লাইসেন্স খোজার সুযোগ সুবিধায়।
আমি লন্ডভন্ড করে দিতে উদ্ধত
সন্তানের সৎ সাহস,
আমি গুড়িয়ে দিতে চাই
সহোদর হত্যার দাবীতে উই ওয়ান্ট জাস্টিস।

জাতীয় বাজেটে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জন্য মাত্র ০.০০১ ভাগ বরাদ্দ

কিছুদিন আগে এক স্মরণসভায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস দেশের সংস্কৃতির দূরবস্থা নিয়ে আক্ষেপ করেছিলেন। তিনি বলেন, “একটা জাতির পরিচয় প্রকাশ পায় তার সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে। আমরা সবাই সংস্কৃতি নিয়ে চিল্লাচিল্লি করি, অথচ সংস্কৃতির উন্নয়নে আমাদের কোনই মাথা ব্যথা নেই। জাতীয় বাজেটের মাত্র দশমিক শূন্য এক শতাংশ বরাদ্দ পায় সংস্কৃতি খাত! এই ন্যূনতম বাজেট দিয়েই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং এর উন্নয়ন সাধন করতে হয়।

এই যখন অবস্থা তখন দেশ যে গোড়ামী আর অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে ক্রমান্বয়ে এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এবারো আমাদের জাতীয় বাজেটে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ মাত্র দশমিক শূন্য এক শতাংশের (০.০১) মতো।

এবার শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে, মোট ৬৭,৯৪৪ হাজার কোটি টাকা। সরকারকে এর পরেই খরচ করতে হবে সুদ পরিশোধে, এর পরিমাণ প্রায় ৫১,৩৪০ হাজার কোটি টাকা। এর পরেই আছে অন্যান্য বিবিধ খাত ৪২,০৫৬ হাজার কোটি টাকা, এই অন্যান্য খাত থেকেই বরাদ্দ দেয়া হয় সংস্কৃতির জন্য। অর্থাৎ সংস্কৃতি খাতে টাকার হিসাবে বরাদ্দ হলো মাত্র ৪২১ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সংস্কৃতি খাতে গত বছরের চেয়েও কম বরাদ্দ ধরা হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪১৭ কোটি টাকা। গত অর্থ বছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিলো মাত্র ৪২৫ কোটি টাকা। সে তুলনায় নতুন বাজেটে কমেছে চার কোটি টাকা।

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা বাজেট প্রস্তাবে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ অর্থের মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৪ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ১৯৩ কোটি টাকা।

নতুন বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুুল মুহিত বলেন, ‘দেশজ সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিকাশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সমকালীন শিল্প-সাহিত্যের গবেষণা এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের সরকার কাজ করছে। সংস্কৃতি ও শিল্পচর্চাকে তৃণমূল পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জন্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকাসহ সকল বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাংস্কৃতিক অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। এ ধারা আগামীতেও আমরা অব্যাহত রাখব।

বিজ্ঞ অর্থমন্ত্রীর সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য উপরোক্ত কথা গুলো শুধুই সান্ত্বনার, সে কথা সহজেই বুঝা যায়। এখানে বলে রাখা দরকার সরকার শিক্ষা খাতে যে বিপুল পরিমানে বরাদ্দ দিয়েছেন তার একটা বিশাল অংশ মাদ্রাসা শিক্ষা খাতে ব্যয় করা হয়। যা কিনা আমাদের দেশের সংস্কৃতির সাথে যায় না। তাহলে দেখা যাচ্ছে সংস্কৃতি খাতে মাত্র দশমিক শুন্য এক শতাংশের নীচে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে এই সংস্কৃতিকে রুখতে মাদ্রাসা শিক্ষা খাতে ব্যয় করছেন প্রায় দশ শতাংশের মতো। আহা কি সংস্কৃতি প্রেমী সরকার এবং তার অর্থমন্ত্রী।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন এক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের, এক অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি সমৃদ্ধ সোনার বাংলার। সেই বাংলাদেশ আজ সাম্প্রদায়িক কুপমুণ্ডকতার আধার হয়েছে। সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজাতীয় সংস্কৃতিতে ভরে গেছে। আরবীয় সংস্কৃতিতে সয়লাব বাংলাদেশের প্রতিটি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে এমনভাবে জেকে বসেছে যে মানুষ এখন আর বাংলাদেশের টিভি, গান, নাটক বা চলচিত্র দেখছে না।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ না করলে ভয়াবহতা বুঝানো যাবে না। বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্মেলনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন হয়েছে “ছেড়ে দে নৌকা, আমি যাবো মদিনা”। এর পরে আর কোন কথা থাকতে পারে বলে মনে করি না।

বরঞ্চ এদেশের মা বোনেরা বাধ্য হয়ে নানা জটিলতায় ভরা, নানা ভ্রান্ত চিন্তাধারায় তৈরী ভারতীয় সিরিয়াল, সিনেমা বা গানের অনুষ্ঠানে আসক্ত হচ্ছে।

আমাদের সাংস্কৃতিক মান আজ সবচেয়ে নিন্ম পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। যে দেশে সংস্কৃতির জন্য জাতীয় বাজেটে দশমিক দশমিক এক শতাংশ সে দেশের সাংস্কৃতিক মান শুন্যের কোঠায় আসাটাই স্বাভাবিক। সস্তা ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট আর আজগুবি যৌন সুরসুরি মার্কা, রূপবান মার্কা রঙ্গীন নাটক চলচ্চিত্র ছাড়া নির্মাতাদের কাছ থেকে আর কিই বা আশা করতে পারা যায়?

বেলা অবেলায় শুধু তুমি

আমার বেলা-অবেলার প্রহর গুলো,
আমার সারাদিনের ভালো লাগার ইচ্ছেগুলো
তোমাকে নিয়েই কেটে যায় বহতা নদীর মতো।
কখনো আসে গ্রীষ্মের প্রখরতা, কখনো বা আষাঢ়
শ্রাবনের ঝর ঝর, শরতে মেঘের আনোগোনা
সব তোমাকে ঘিরে,
শুধু তোমাকেই ঘিরে।

দূর পাহাড়ের গায়ে হোচট খাওয়া মেঘেদের ঝরে পরা,
হঠাত বাধায় উপচে পরা খরশ্রোতা নদীর পানি
অথবা তোমার হঠাত আসার সম্ভাবনায় চমকে যাওয়া মন,
সব কিছু নিয়ে আমার বেলা অবেলায় কেটে যাওয়া
দিন রাত, তোমাকে খুঁজে,
শুধু তোমাকেই খুঁজে।

পাহাড় অথবা সমতল, বন্যা অথবা খরায়,
শীত কিম্বা বসন্তে সারাবছর, সারামাস
তোমার অপেক্ষা আমাকে আরো তীব্র টানে,
আরো সুরে-অসুরে আমার সকল বেদনায় বাজে
সুর বাজে গান, আমি তোমাতে মিশে যাই,
শুধু তোমাতেই মিশে যাই।